বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

গোলাপ ফুলের ভেষজ গুণ

গোলাপ ফুল সবজি বা ফলের ক্যাটাগরিতে পড়েনা। কিন্তু এটি বিভিন্ন ধরণের রান্নায় বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও ব্যথা সারাতে, বমি বমি ভাব, অবসাদ ভালো করতে সাহায্য করে গোলাপ ফুল। কারণ এতে এস্ট্রিঞ্জেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। সৌন্দর্য থেকে শুরু করে প্রাচীনকাল থেকেই স্বাস্থ্য সচেতনায় গোলাপের চর্চা হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই গোলাপ ফুল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। গোলাপের পাঁপড়ি হোক বা কুঁড়ি-সবই খাদ্য গুণে ভরপুর।

গোলাপের পাঁপড়িতে ৯৫% পানি আছে। তাই এর ক্যালোরি কাউন্ট অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন সি। প্রাচীনকালে চীনদেশে বদহজমের সমস্যায় গোলাপের পাঁপড়ি খাওয়া হত। নারীদের ঋতু সমস্যাতেও গোলাপের পাঁপড়ি উপকারী।

গোলাপের মনমাতানো গন্ধ অ্যারোমা থেরাপির কাজ করে। গোলাপ ফুল খেলে শরীর ভেতর থেকে তরতাজা মনে হবে।

সংগৃহীতঃ ইত্তেফাক/সালেহ্
অনলাইন ডেস্ক: ০৪ মার্চ, ২০১৭ ইং ১০:৪৮ মিঃ

খোলা চিঠি ২

প্রিয়তমা;
এবার তুমি ইচ্ছে মৃত্যুর অভিশাপ দাও,
তারপর আমি তোমার কৃষ্ণচুড়ার বনে কোকিল হয়ে আসবো….
নয়তো কালো মেঘ হবো,বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে যাবো তোমার মরুভূমি মন….
হয়তো,সে মনে দিতে পারবো সবুজ.. নয়তো স্যাঁতসেঁতে মনে পিচ্ছিল খেয়ে ফিরে যেতে পারবো তুমিহীন আমার পুরানো অতীতে…..

খোলা চিঠি ১

নীলান্তি;
ঘড়িতে যখন ৫ টার কাটা ছুই ছুই, তখন তুমি বেলকুনিতে এসে দাড়িও…
আমি তোমায় পড়ন্ত বিকেলের সোনালী আলোয় সাজাবো, মেহেদী রাঙা দুটি হাতে তুলে দিয়ে যাবো আমার কবিতার খাতা….
যেখানে একদিন তুমি খুজে নিও আরেক বিশ্ব,আর তোমার নিরবতার কষ্ট, সেদিন হয়তো তুমিও বুঝতে পারবে আমাকে…….
পারবে তো খুজে নিতে…..! দূরে, হাজার লোকের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া এক অদ্ভুত মানুষটাকে……!

চাপলি কাবাব

যা যা প্রয়োজনঃ ৫০০গ্রাম কিমা, ৩/৪টা কাচামরিচ, ৩/৪টা শুকনা মরিচ, ১ টেবিল চামচ আদা, ১ টেবিল চামচ রসুন, ৩/৪ টা এলাচ, ২/৩টা লবংগ, ২/৩টুকরা দারচিনি, ৫/৬টা গোল মরিচ, ১/২ চা চামচ জয়ফল গুড়া বা পেস্ট এবং এর চার ভাগের এক ভাগ যৈত্রি পেস্ট, ১ চা চামচ ভাজা জিরা গুড়া, ১ টেবিল চামচ কাচা পেপে পেস্ট, আধা কাপ বেসন (কড়াইতে ছেকে নেয়া), ১ চা চামচ কেওড়া জল, একটা লেবুর রস, ২/৩ টেবিল চামচ তেল, স্বাদ অনুযায়ি লবন।
এই সব কিছু এক সাথে মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিন যেন কোন দানা বা চাকা না থাকে। আপনার পছন্দ অনুযায়ি ডিমের আকারে পাতলা কেক করুন। তাওয়ায় তেল দিয়ে ছেকে ভেজে নিন। চাটনি বা সস দিয়ে পরিবেশন করুন।

Easy Meat Ball/ ইজি মিট বল


উপকরণঃ
১। যে কোন মাংসের কিমা ২৫০ গ্রাম
২। কর্ণফ্লাওয়ার ২ টেবিল চামচ
৩। পিয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ
৪। কাচামরিচ কুচি স্বাদমত
৫। আদা রসুন পেস্ট ১ চা চামচ
৬। জয়ফল যৈত্রি গুঁড়া আধা চা চামচ
৭। গোল মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ
৮। পুদিনা পাতা পেস্ট আধা চা চামচ
৯। বেকিং পাউডার আধা চা চামচ
১০। ডিম ১টা
১১। লবণ স্বাদমত
১২। ভাজার জন্য তেল প্রয়োজনমত
প্রণালিঃ
১। তেল বাদে উপরের সমস্ত উপকরণ একত্রে মিশিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে।
২। নিজের পছন্দমত বল তৈরি করে ডোবা তেলে ভেজে একটা বড় পেয়ালায় কিচেন পেপারে রাখুন।
২। তেল টেনে নিলে সস দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

হাবিজাবি চিন্তা ও আমি

আমি হারিয়ে যেতে চাই পথ আর পদচারণায় মুখর যান্ত্রিক নগরের চোরা গলিতে, নয়তো ভাবুক চোখে দেখতে চাই খোলা আকাশ মুক্ত পাখি আর তোমাদের মতো স্বার্থপর সুন্দরী ললনাদের…..
তারপর একদিন ঘরে ফিরে,ক্লান্ত শরীরে কাঁপাকাঁপা হাতে কলম তুলে ডায়েরীর পাতা খুলে লিখে রাখবো নামহীন পতিতাদের বিবরন। নয়তো কাটাকুটির খেলায় বাদ দিবো ১৬ কলা পূর্ণ কিছু স্বার্থান্ধ প্রেমিকাদের নাম…..
এরপর ঘুম ঘুম চোখে হাতে তুলে নিবো এ্যালকোহলের গ্লাস, জলন্ত সিগারেটের ধুকধুকে আগুনে রাঙিয়ে নিবো আমার নির্বাসিত জীবনটাকে…
একদিনের জন্য, শুধু একবারের জন্য মানিব্যাগে জমিয়ে রাখা প্রাক্তন প্রেমিকার চিঠি খানা পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো… সেই ঘুম, হাজার বছরের পুরানো ঘুমের মতোই সরিয়ে দিবে আমাকে… হাজার মানুষের চোখে করে রেখে যাবে উন্মাদ অদ্ভুত…..

বি দ্রঃ → মাদককে না বলুন।
→ বিরহ বা প্রেম, সবই বাস্তবতার সাথে তুলনা করুন।
→ বাস্তবতায় আসল।

বিভিন্ন চাটনি

১। মরিচের চাটনি, কাচা বা শুকনাঃ
১০/১২ টা মরিচ বাটা পেস্ট বা গুড়া, এক টাবিল চামচ চিনি, প্রয়োজন মত লবন, তিন চা চামচ রসুন, দুই টেবিল চামচ ভিনিগার বা লেবুর রস, অল্প কিছু তেল।
কড়াইতে তেল গড়ম হলে ভিনিগার বাদে সব কিছু (গুড়া মরিচ হলে একটু পানিতে গুলে নিবেন) মিশিয়ে এক কাপ পানি দিয়ে ভুনে নিন, ঘন হয়ে এলে ভিনিগার দিয়ে আরো একটু জ্বাল দিয়ে নামিয়ে নিন, টক করতে চাইলে আরো একটু ভিনিগার বা লেবুর রস দিন।

২। দৈএর চাটনিঃ
টক দৈ এক কাপ, এক টেবিল চামচ চিনি, এক চা চামচ লবন, দুই চা চামচ কাচা মরিচ বাটা বা এক চা চামচ শুকনা মরিচের গুড়া, এক চা চামচ বিট লবন। সাথে একটু পুদিনা পাতা বেটে দিতে পারেন। সব কিছু মিশিয়ে এক সাথে গুলে নিন। স্বাদের তারতম্য অনুযায়ী উপাদানের পরিমান কম বেশি করে নিবেন। গুড়া শুকনা মরিচের পরিবর্তে আস্ত শুকনা মরিচ তাওয়ায় ছেকে নিয়ে গুড়া করে নিতে পারেন এতে স্বাদ এবং ঘ্রাণ সুন্দর হয়।

৩। জলপাইর চাটনিঃ (১)
৮/১০টা কাচা জলপাই কেটে বিচি ছাড়িয়ে বেটে নিন, ৩/৪টা কাচা মরিচ বাটা বা শুকনা মরিচ তাওয়ায় ছেকে নিয়ে বেটে গুড়া করে নিবেন, লবন প্রয়োজন মত, এক চামচ চিনি। সব কিছু মিশিয়ে নিলেই চাটনি হয়ে গেল।

জলপাইর চাটনিঃ(২)
১০/১২টা জলপাই সামান্য হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করে বিচি ছাড়িয়ে চটকে নিন, চিনি লবন মিশিয়ে সামান্য তেলে আধা চা চামচ পাচ ফোড়ন ছেড়ে দিয়ে জলপাই ভুনে নিন। এবারে এগুলি ঠান্ডা হলে তাওয়ায় ছ্যাঁকা কয়েকটা শুকনা মরিচ গুড়া করে মিশিয়ে নিন। আপনার স্বাদ অনুযায়ী লবন চিনির পরিমান কম বেশি করে নিতে পারেন।

এভাবে কাচা আম, কামরাঙ্গা, কাচা বা পাকা তেতুল এবং করমচার চাটনিও বানাতে পারেন। পাচঁফোড়নের পরিবর্তে রসুনও দিতে পারেন, সাথে কিছু পুদিনা বা ধনে পাতাও দিতে পারেন।

৪। পুদিনা পাতার চাটনিঃ
৩/৪ আটি পুদিনা পাতা ডাটা সহ ধুয়ে পাটায় বাটা বা ৫/৬ চা চামচ রেডি পেস্ট, টক করার জন্য তেঁতুল, জলপাই, কাচা আম, লেবু বা টক দৈ যে কোন একটা কিছুর এক টেবিল চামচ, পরিমান মত লবন, এক টেবিল চামচ চিনি, এক চা চামচ আদা রসুনের পেস্ট, এক চা চামচ বিট লবন। সব কিছু এক সাথে মিশিয়ে নিলেই চাটনি হয়ে গেল।

৫। নারকেলের চাটনিঃ
এক কাপ কুরানো নারকেল, এক চা চামচ আদা রসুন, সামান্য লবন, দুইটা কাচা মরিচ, ২/৩টা ধনে পাতা, এক টুকরা লেবু। লেবু বাদে সবকিছু এক সাথে পাটায় মিহি করে বেটে পরে লেবু চিপড়ে মিশিয়ে নিলেই নারকেলের চাটনি হয়ে গেল। যে কোন খাবারের সাথে এই চাটনি পরিবেশন করা যায়। বিশেষ করে খাবার আগে বা সকালের নাস্তার সাথে।

৬। রসুনের চাটনিঃ
এক কাপ টক দৈ, দুই টেবিল চামচ মিহি করে বাটা রসুন, হাতের কাছে পেলে দুইটা রসুন পাতা বেটে দিতে পারেন না পেলে ক্ষতি নেই, কাছে থাকলে দুই টেবিল চামচ মেয়োনিজ, সামান্য গোল মরিচের গুড়া, সামান্য সরষে বাটা, পরিমান মত লবন। সব কিছু এক সাথে মিশালেই রসুনের চাটনি হয়ে গেল। কখনো এর সাথে একটু ভাজা জিরা গুড়াও মেশাতে পারেন। রমজানের ইফতারিতে অত্যন্ত প্রিয় হতে পারে এই চাটনি সমূহ।

হালিম


যা যা প্রয়োজনঃ
মাংশ ৬০০ গ্রাম, ভাঙ্গা গম ১০০ গ্রাম, পোলাউর চাউল ১০০ গ্রাম, মসুর, মটর, ছোলা এবং খেসারীর ডাল ১০০ গ্রাম করে ৪০০গ্রাম,(মুগ বা মাস কলাইর ডাল দিবেন না) আদা ২টেবিল চামচ, রসুন ১ টেবিল চামচ, টক দৈ ১০০ গ্রাম, ১০/১২ টা পিয়াজ কুচি, ১০/১২টা কাচামরিচ, ৫/৬টা শুকনা মরিচ, ৩/৪টা এলাচ, ছোট ২/৩ টুকড়া দারচিনি, ৩/৪টা লবংগ, ৮/১০টা গোল মরিচের গুড়া, ঘি বা তেল ৫০ এমএল, বেরেস্তা ৫০ গ্রাম, সামান্য জয়ফল ও যৈত্রির গুড়া, হলুদ আধা চা চামচ, ধনে ১ চা চামচ, জিরা ১ চা চামচ, লবন প্রয়োজন মত।

যে ভাবে রান্না করবেনঃ
বেরেস্তা বাদে সব উপাদান এক সাথে মিশিয়ে বড় ডেকচি ভড়ে পানি(অন্তত ৪ লিটার তবে আপনার এতো প্রয়োজন না হলে উপরের উপকরন গুলি অর্ধেক নিয়ে ২ লিটার পানি নিবেন) দিয়ে জ্বাল দিন, ফুটে উঠলে জ্বাল কমিয়ে দিন। ঘন ঘন নাড়বেন নতুবা ডেকচির তলায় লেগে যাবে। পানি শুকিয়ে যখন ঘন হয়ে আসবে মাংশ ছাড়া ছাড়া হয়ে যাবে, চাল ডাল গম সব মিশে যাবে তখন নামিয়ে নিবেন।যদি বেশি ঘন হয়ে যায় তাহলে আরো একটু গড়ম পানি ঢেলে আবার কিছুক্ষন জ্বাল দিন, আপনার পছন্দ মত ঘন হলে নামিয়ে নিন। পেয়ালায় পরিবেশনের সময় উপরে একটু বেরেস্তা ছিটিয়ে দিবেন।

আগামীর বার্তা

আহা কী সুন্দর এই মায়াবী বিকেল
আকাশটা কমলালেবু রঙে রাঙা
সূর্য প্রশান্তির সমুদ্রে যাচ্ছে ডুবে |
সমুদ্রের ওপর জাগে স্বর্গীয় নীরবতা
বনে বনে বাতাসের দোলায় ওঠে ঢেউ
মেঘেদের সারি সারি তোরণ আকাশে ভেসে ভেসে
যায় কোন্‌ দূর অজানায় !
দূরে বহু দূরে পাইনের মাথা
আকাশকে ছুঁতে চায় তার শাখা প্রশাখা দিয়ে,
যেন বলে ওঠে, ওগো মধুর এখনি যেও না চলে
অন্ধকারের মায়াজালে হারাবার আগে
দিয়ে যাও আরও কিছু আগামী দিনের শুভবার্তা
যার স্বপ্নে আমরা হবো আজ সুষুপ্ত |

চিংড়ি মাছের কাটলেট


উপকরনঃ
১। খোসা ছাড়ান চিংড়ি মাছঃ ২৫০গ্রাম
২। পিয়াজ কুচিঃ ৩ টেবিল চামচ, খুব মিহি করে কুচি করবেন
৩। আদা পেস্টঃ ১/২ চা চামচ
৪। রসুন পেস্টঃ ১/৪ চা চামচ
৫। কাচা মরিচ কুচিঃ ১ টেবিল চামচ
৬। গোল মরিচ গুড়াঃ ১/২ চা চামচ
৭। ধনে পাতা কুচিঃ প্রয়োজন মত
৮। ডিমঃ ১টি
৯। ব্রেড ক্রাম্বঃ প্রয়োজন মত
১০। কর্ণ ফ্লাওয়ারঃ ১ টেবিল চামচ
১১। সয়া সসঃ ১ চা চামচ
১২। লবনঃ ১ চা চামচ
১৩। স্বাদ লবনঃ সামান্য
১৪। লেবুর রসঃ ১/২ চা চামচ
১৫। ভাজার জন্য তেলঃ প্রয়োজন মত

কি ভাবে বানাবেনঃ
১। চিংড়ি মাছ কুচি করে কেটে নিন
২। ২ টেবিল চামচ ব্রেড ক্রাম্ব এবং ডিম সহ সব উপকরণ এক সাথে মিশিয়ে মাখিয়ে নিন, বেশি পাতলা হলে আরো কিছু ব্রেড ক্রাম্ব মিশিয়ে নিন
৩। আপনার পছন্দ মত ডিজাইন করে কাটলেট বানিয়ে একটা প্লেটে তেল মেখে কাটলেট গুলি নামিয়ে রাখুন
৪। কড়াই বা ফ্রাই প্যানে তেল গড়ম হলে একটা একটা করে ব্রেড ক্রাম্ব মেখে ডুবো তেলে বাদামী রঙ করে ভেজে একটা শুকনো প্লেটে টিস্যু পেপার বিছিয়ে তাতে নামিয়ে রাখুন।
৫। টমাটো কেচাপ, চিলি সস বা আপনার বানানো যে কোন চাটনি দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন
** চিংড়ি মাছ চিংড়ি মাছ এর পরিবর্তে কয়েক পদের সবজি নিলেই মিক্স সব্জির কাটলেট বানাতে পারেন। ইফতারিতে খুবই পুষ্টিকর এবং মুখরোচক।

স্মরণার্থী

স্মরণার্থী

এক
কাল রাত্তিরে বাড়ির বাথরুমে ঢুকছি, ফটাস করে হাওয়াই চপ্পলের ফিতে গেল ছিঁড়ে। আর প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় এক মাইক্রো সেকেন্ডের মধ্যে আমার মাথা প্রশ্ন করল, সেফটিপিন?

চৌকাঠে ঝিম হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম দু’তিন মিনিট। মাটির ১২০ ফুট নিচে থেকে ভেসে উঠেছে “নিরাপত্তাকাঁটা” শব্দটা, আর মন কাঁকরবালি খুঁড়তে খুঁড়তে হু হু করে নেমে যাচ্ছে আরও অন্তত ২৬০ ফুট, আর্সেনিকহীন দ্বিতীয় স্তরের জলে — যেখানে শালুকপাতার মতো থাক-থাক সাজানো আমার শৈশব, স্কুলের পেতলের থালাঘন্টা, আমার আধপেটা রাতগুলো।

হাওয়াই চপ্পলের সঙ্গে শরণার্থী জীবনের সম্পর্ক নিয়ে কোনো না কোনো দিন প্রেমের এপিক লেখা হবে আমি জানি। মনে পড়ছে সদ্য চাকরি পেয়ে অডিট টিমে পোস্টিং হয়েছে, সবাই শিয়ালদায় একসাথ হই, তারপর গাড়ি নিয়ে অকুস্থলে রওনা। তো একদিন স্টেশানের “অনুসন্ধান-এ পৌঁছোতেই সিনিয়ার কোলিগ বললেন, ঠিক বুঝেছিলাম, এই যে ভিড়ের ঝাঁকটা বেরলো, এ চন্দনের ট্রেন না হয়েই যায় না।
— কী করে বুঝলেন!
— আমি তো প্যাসেঞ্জারের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। এইট্টি পার্সেন্ট হাওয়াই চটি মানেই বনগাঁ লোকাল।

দুই
আমরা রাবারের চপ্পল ফটফটিয়ে কলেজে বা সিনেমায় যেতাম; বিয়েবাড়ির ড্রেস হল ডেকরনের প্যান্টে টেরিলিনের ফুলহাতা শার্ট ইন করা এবং পায়ে বল-সাবানে মাজা হাওয়াই চপ্পল। আর ঝিঁঝিঁব্যাঙল্যাটামাছশামুককেঁচোখচিত ছোটবেলার সেই বিমানবিধ্বংসী বর্ষাকালে সবুজ শ্যাওলা অবুঝ এঁটেলমাটির ওপর দিয়ে আমরা যেভাবে আছাড়বিমুক্ত ছুটে যেতে পেরেছি পায়ে প্লেন চটি, ততটা স্বচ্ছন্দ ডোবায় জলে জলঢোঁড়া হয়ে দেখাক তো!

কিন্তু কখনও কখনও ওই এঁটুলি মাটিই চটির আত্মাকে ছাড়তে চাইতো না, তখন তাকে খিঁচকে সরাতে গেলেই উৎপটাং ব্যাপার। পা বেরিয়ে এসেছে, নগ্ন-একপদ বুদ্ধদেব চেঁচিয়ে উঠল:

— মা? ও মা! চটি ছিঁড়ে গেছে। সেপ্টিপিন নিয়ে আসো।

হন্তদন্ত এক ঘোরশ্যামা অনেকখানি লম্বা হেতু রান্নাঘর থেকে ঘেঁটি-নিচু বেরিয়ে আসে। দুহাতের শাঁখাপলা-সমৃদ্ধ কবজি হাতড়ায়।

—না রে মনা, সেপটিপিন তো নেই!

— ধুস, তোমরা যে কী করো না! এখন কী ক’রে ইশকুলি যাবো?

দাঁড়া দেখতিছি, ব’লে মা আমার মুখ থেকে চোখ সরিয়ে বাড়ির দক্ষিণে লিচুগাছের ওপর বসা দোয়েলপাখির দিকে তাকায়, ওপরটি দিয়ে নিচের ঠোঁট আস্তে চেপে ধরে। আর বুকের শাড়ির নিচে চালান করে দেয় হাতদুটো।

এমন কতোবারই হয়েছে, কিন্তু তখন তো আমি ক্লাস এইট ছিলাম না, সমঝদার ছিলাম না। ঝটকা দিয়ে মুণ্ডু ঘোরাই।
— লাগবে না। তুমি বরং আমারে পাঁচ নয়া দাও, ইশকুল ছুটির পরে চটিসারা-র কাছ থেকে সেলাই ক’রে নিয়ে আসবানে।

মা প্রথমে বিমূঢ় হয়, তারপর তার মু্খের সাগরতীরে “আচ্ছা, বুঝেছি”-র গোলাপি সূর্য উঠতে থাকে! নিজের শিশুসন্তান পরিণত ও যত্নবান পুরুষে বদলে যাচ্ছে টের পেলে আনন্দ আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজের নারীসত্তার দিকেও কি আর একবার ফিরে তাকায় সেই মা?

— অ মিনু, তোর কাছে সেপটিপিন থাকলি অ্যাট্টা নিয়ে আয় তো!

খোপের পড়ার ঘর থেকে বাড়ানো-হাত দিদি নেমে আসে, তার দিকে মা এক অসীম রহস্যভরা মুখে তাকায়।
— আমারে না, ভাইরে দাও। উনি আমার সেপটিপিন নেলেন না।

হাঁটু গেড়ে বসে চটির ফিতেয় রিফুকর্ম শুরু করি আর বেশ বুঝতে পারি অন্ধকার আকাশে তরোয়াল ছুটে যাওয়ার মতো দুই নারীর সংকেতময় চোখ আমার এলোমেলো মাথার চুলে অনেক নরম তারা ঝরিয়ে দিচ্ছে।

মা দিবসঃ ইতিহাস – ইতিবৃত্ত

মা দিবস ( Mother’s Day) হল একটি সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান যা মায়ের সন্মানে এবং মাতৃত্ব, মাতৃক ঋণপত্র, এবং সমাজে মায়েদের প্রভাবের জন্য উদযাপন করা হয়। এটি বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে উদযাপন করা হয়।
বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা যায়। এ গুলোর অনেকই প্রাচীন উৎসবের সামান্য প্রামাণিক সাক্ষ্য, যেমন, সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উত্সব যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে, অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান মাদারিং সানডে অনুষ্ঠান উদযাপন। কিন্তু, আধুনিক ছুটির দিন হল একটি আমেরিকান উদ্ভাবন যা সরাসরি সেই সব অনুষ্ঠান থেকে আসেনি। তা সত্ত্বেও, কিছু দেশসমূহে মা দিবস সেই সব পুরোনো ঐতিহ্যের সমার্থক হয়ে গেছে।
ছুটির দিনটি ক্রমে এত বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়ে যে এটির স্রষ্টা আনা জার্ভিস এটিকে একটি “হলমার্ক হলিডে” অর্থাৎ যে দিনটির বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা অভিভূত করার মতো, সেই রকম একটি দিন হিসাবে বিবেচিত করেন। তিনি শেষে নিজেরই প্রবর্তিত ছুটির দিনটির নিজেই বিরোধিতা করেন।

ইতিহাসঃ
———
একটি গোষ্ঠীর মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত।
প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল, যদিও সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত।
মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হত। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও “প্রধান গির্জার” সম্মানে। প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হত প্রতিকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মত মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে।
জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত “মাদার্স ডে প্রক্লামেশন” বা “মা দিবসের ঘোষণাপত্র” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত হোই-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব আছে, হোই-এর এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

ঘোষণাঃ
——–
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস স্থাপন করেন মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন্ (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) এবং “মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার” আর “মা দিবস” এইসব শব্দবন্ধের বহুল প্রচার করেন।
মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে “মা দিবস” হিসাবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে। আর তখন থেকেই এই দিনে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৪৬টি দেশে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয় হয়। কথিত আছে, ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ, কেননা সেখানে প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসাবে পালন করা হতো। তবে সতের শতকে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটান মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। মায়ের সঙ্গে সময় দেয়া আর মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল তাঁর দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উহলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। মা দিবসের উপহার সাদা কার্নেশন ফুল খুব জনপ্রিয়। আর বাণিজ্যিকভাবে, “মা দিবস” বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্ড আদান-প্রদানকারী দিবস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে “মা দিবস”-এ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ফোন করা হয়।

আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও আচারানুষ্ঠানঃ
———————————–
বেশিরভাগ দেশেই মা দিবস হল একটি সাম্প্রতিক রীতি, যা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনটির রীতি অনুসারে চলে এসেছে। যখন অনান্য বহু দেশ ও সংস্কৃতি এটিকে গ্রহণ করে তখন এই দিনটিকে একটি অন্য মাত্রা দেওয়া হয়, বিভিন্ন পর্বের (ধর্মীয়, ঐতিহাসিক বা পৌরানিক) সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, এবং একটি একদমই অন্য দিন বা বিভিন্ন দিনে এটিকে পালন করা হয়।
কিছু কিছু দেশে বহু আগে থেকেই মাতৃত্বের প্রতি উত্সর্গিত কয়েকটি অনুষ্ঠান ছিল এবং সেইসব অনুষ্ঠানে মার্কিন মা দিবসের মত মায়েদের কার্নেশন (গোলাপী ফুল) এবং আরো অন্য উপহার দেওয়া হত।
অনুষ্ঠান পালনের রীতিটি অনেক রকম। অনেক দেশে মা দিবস পালন না করলে এটিকে প্রায় একটি অপরাধ গণ্য করা হয়। অনেক দেশে আবার মা দিবস একটি স্বল্প-পরিচিত উত্সব যা মূলত প্রবাসী মানুষেরা পালন করে থাকে বা বিদেশী সংস্কৃতি হিসাবে মিডিয়া সম্প্রচার করে থাকে।

বিভিন্ন ধর্মে মাঃ
—————
ইসলাম ধর্মে ‍মা-
আল কুরআনে বলা হয়েছে আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। একটি হাদীসে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত (স্বর্গ)।

হিন্দু ধর্মে ‍মা-
সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে- উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যরে গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যরে গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”

ক্যাথলিক ধর্মে, দিনটি বিশেষভাবে ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার পূজায় সমর্পিত।

বিভিন্ন দেশে মা দিবসঃ
——————–
আফ্রিকীয় দেশসমূহঃ
বহু আফ্রিকীয় দেশ ব্রিটিশ প্রথানুযায়ী মা দিবস পালন করে, যদিও আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মধ্যে মায়েদের সম্মানে এমন অনেক অনুষ্ঠান এবং উত্সব আছে যা আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠার বহু যুগ আগে থেকেই চলে আসছে।

বলিভিয়াঃ
বলিভিয়ায় ২৭শে মে মা দিবস পালিত হয়। অধুনা কোচাবাম্বা শহরে ১৮১২ সালের ২৭শে মে সংঘটিত করনিলার যুদ্ধের স্মৃতিস্মারক হিসবে এই দিনটিকে মা দিবসরূপে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয় ৮ই নভেম্বর, ১৯২৭ সালে। এই যুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত অনেক মহিলাকে স্পেনীয় সৈন্যবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে।

চীনঃ
চীনের মা দিবস ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কার্নেশন সেখানে জনপ্রিয়তম উপহার এবং সবথেকে বেশি বিক্রিত ফুল। ১৯৯৭ সালে দরিদ্র মায়েদের সাহায্য করার জন্য, বিশেষ করে পশ্চিম চীনের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মায়েদের কথা মানুষকে মনে করানোর জন্য, এই দিনটিকে চালু করা হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র, পিপিল’স ডেইলি’র একটি নিবন্ধে ব্যাপারটির বিষয়ে লেখা হয় যে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও, চীনের মানুষ বিনা দ্বিধায় এই দিনটিকে গ্রহণ করেছে কারণ এটি একদমই এই দেশের রীতি মাফিক – মানে গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা”।

গ্রিসঃ
গ্রীসে, যিশু কে মন্দিরে পেশ করার ইস্টার্ন অর্থডক্স ফিস্ট ডের সঙ্গেই পালন করা হয় মা দিবস। যেহেতু থিওটকস ( ঈশ্বরের মাতা) যিনি এই ফিস্টের (ভোজ) বিশিষ্ট চরিত্র এবং তিনিই যিশু কে জেরুসালেমের মন্দিরে এনেছিলেন, তাই জন্য এই পরবটি মায়েদের সঙ্গে সংযুক্ত।
ইরানঃ
২০ জুমাদা আল-থানি, মহম্মদ (সঃ) -এর কন্যা ফাতিমা(রাঃ)র জন্মবার্ষিকীর দিন ইরানে পালন করা হয় মা দিবস।

জাপানঃ
প্রাথমিক ভাবে শোয়া যুগ -এ রানী কজুন -এর (রাজা আকিহিতো’র মা) জন্মদিনটিকেই মা দিবস হিসাবে পালন করা হত জাপান। এখন এটি একটি জনপ্রিয় দিন। বিশেষত কার্নেশন আর গোলাপ উপহার হিসবে দেওয়া হয় এই দিন।

নেপালঃ
বৈশাখ(এপ্রিল) মাসে হয় “মাতা তীর্থে অনুসি ” বা “একপক্ষব্যাপী মাতৃ তীর্থ যাত্রা”। এই উত্সবটি পালিত হয় অমাবস্যার সময় যার জন্য এটির নাম “মাতা তীর্থে অনুসি “। “মাতা” মানে মা, “তীর্থ” মানে তীর্থযাত্রা। উত্সবটিতে মৃত মায়েদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং জীবিত মায়েদের উপহার দেওয়া ও সম্মান জানানো হয়। কাঠমান্ডু উপত্যকার পূর্বদিকে অবস্থিত মাতা তীর্থে যাওয়া এই উত্সবের একটি অঙ্গ।
এই তীর্থযাত্রাটি ঘিরে একটি কিংবদন্তি আছে। প্রাচীন কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মা দেবকী ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। তিনি বহু জায়গা ঘুরে বাড়ি ফিরতে ভীষণ দেরী করেন.ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মায়ের অবর্তমানে খুবিই দুঃখিত হয়ে ওঠেন। উনি তখন মা কে খুঁজতে বেরিয়ে অনেক জায়গায় খোঁজেন কিন্তু খুঁজে পান না। শেষে যখন তিনি “মাতা তীর্থ কুন্ড”- তে পৌঁছন তখন তিনি মা কে দেখতে পান পুকুরে স্নানরত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আনন্দিত হয়ে ওঠেন মা কে খুঁজে পেয়ে এবং মা কে তিনি মায়ের অবর্তমানকালীন সব দুঃখের কথা বলেন। মা দেবকী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বলেন “আহা! তাহলে এই স্থানটিকে আজ থেকে প্রত্যেক সন্তানের তাদের ছেড়ে আসা মায়েদের সঙ্গে মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক”। সেই থেকে এই জায়গাটি মৃত মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত প্রাপ্তির এক দ্রষ্টব্য ও পবিত্র তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। এও কিংবদন্তি আছে যে এক পুন্যার্থী পুকুরের জলে নিজের মায়ের প্রতিকৃতি দেখে প্রায় জলে পরে মারাই যাছিলেন। এখনও সেখনে পুকুর ধারটিতে লোহার বেঁড়া দেওয়া আছে। পুজার্চনার পরে পুন্যার্থীরা সেখনে নৃত্য, গানের মাধ্যমে নিজেদের মনোরঞ্জন করে। কিংবদন্তিগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখার অবকাশ নেই যেহেতু এগুলো প্রাচীন পুঁথির অনুযায়ী লোকমুখে চলে আসা সব ঘটনা সব।

থাইল্যান্ডঃ
থাইল্যান্ডে মা দিবস পালিত হয় থাইল্যান্ডের রানীর জন্মদিনে।

রোমানিয়াঃ
রোমানিয়া-তে দুধরনের আলাদা ছুটির দিন আছে: মা দিবস আর মহিলা দিবস।
ইউনাইটেড কিংডম এবং আয়ারল্যান্ডঃ
ইউনাইটেড কিংডম ও আয়ারল্যান্ড-এ , ইস্টের সানডে(২৭শে মার্চ, ২০০৯)-র ঠিক তিন সপ্তাহ আগে, লেন্ট-এর চতুর্থ রবিবার মাদারিং সানডে পালিত হয়.খুব সম্ভবত ষোড়শ শতকের বছরে একবার নিজের মাদার চার্চ বা প্রধান গির্জায় যাওয়ার খ্রিস্টীয় রেওয়াজ থেকেই এর উত্পত্তি. এর মূল তাত্পর্য হল যে মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে মিলিত হবেন.অনেক ঐতিহাসিক -এর মতে যুবতী শিক্ষানবিশ-দের এবং অন্য যুবতীদের তাদের মালিকরা কাজ থেকে অব্যহতি দিত তাদের পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য। ধর্মনিরিপেক্ষিকরণের ফলে এখন এই দিনটি মূলত মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর দিন যদিও বহু গির্জা এটিকে এখনও সেই ঐত্তিহাসিক ভাবে দেখতেই পছন্দ করে যেখানে থাকে যিশু খ্রিস্ট -এর মা মেরি ও “মাদার চার্চ”-এর মত ঐতিহ্যবাহী রীতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
মাদারিং সানডে সর্বাগ্রে পড়তে পারে ১লা মার্চ(যে বছরগুলিতে ইস্টের পরে ২২শে মার্চ) ও তারপর পড়তে পারে ৪ঠা এপ্রিল(যখন ইস্টের ২৫শে এপ্রিল পরে)।

ভিয়েতনামঃ
ভিয়েতনামে মা দিবসকে বলা হয় লে ভূ-লান এবং চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী সপ্তম মাসের পঞ্চদশ (পনেরো) দিনে এটি পালিত হয়। যাদের মায়েরা জীবিত তারা ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানায় আর যাদের মায়েরা পরলোক গমন করেছেন তারা প্রার্থনা করে মৃত মায়েদের আত্মার শান্তি কামনা করে।

মা দিবসের বাণিজ্যিকিকরণঃ
————————-
সরকারী মা দিবস পালনের ন’ বছরের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে পরে যে আনা জার্ভিস নিজেই এই তাত্পর্য পাল্টে যাওয়া দিনটির ঘোর বিরোধী হয়ে যান এবং নিজের সমস্ত সম্পত্তি ও জীবন দিনটির এইরকম অবমাননার প্রতিবাদে ব্যয় করেন।
মা দিবসের বানিজ্যিকরণ ও দিনটিকে বানিজ্যিক স্বার্থে কাজে লাগানোর প্রতিবাদে আনা তার সময়ে বহু সমালোচনা করেন। তিনি সমালোচনা করেন হাতে লেখা চিঠি না দিয়ে কার্ড কেনার নতুন প্রথাকে যেটিকে তিনি আলসেমি হিসাবে গন্য করতেন। ১৯৪৮ সালে আনাকে গ্রেপ্তার করা হয় মা দিবসের বানিজ্যিকরণের প্রতিবাদ করা কালীন এবং অবশেষে বলেন যে তিনি “ভাবেন যে এই দিনটির সূচনা না করলেই ভালো হত কারণ এটি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনের বাইরে…
মা দিবস এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্যিকভাবে সবথেকে সফলতম পরব. ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের মতে রেস্টুরেন্টে ডিনার করার অন্যতম জনপ্রিয় দিন হল মা দিবস।

সূত্রঃ বাংলা উইকপিডিয়া

অসমাপ্ত বিকেল

একটি অসমাপ্ত বিকেল থমকে আছে
শঙ্খচিলের সোনালি ডানায়____!
একটি গোধূলি সন্ধ্যা রোদ্রের চিলেকোঠায় বন্দি,
মাসকাবারি আলোক ফ্রেমে____!
পুকুরের তরঙ্গ জলে অস্হির স্তবিরতায় রূপান্তর__
বেলজিয়ামের আয়নায় মুখ ও মুখোশ ছবি
অথৈ ভাবে ভাবান্তর চারপাশ ঘিরে ।

হঠাৎ করে’ই গাছের আড়ালে
দেখা গেলো একটি কচি হাত___!
ছায়া মানবীর হাত____!
নিঃস্তব্দ স্তব্দতায় নিঃসঙ্গ একা হাত,,!
ইশারায় ডাকে খোলা আকাশটাকে,
আর কত দূর তুমি__!

নিয়ে যাও আমায়______
এই কুয়াশা ভাঙ্গা নিতম্ব ঝড়ের
নির্মম ঝঞ্ঝা থেকে ।

১০/০৪/১৮

লোভ

(গি দ্য মোঁপাসা একজন ফরাসি সাহিত্যিক। খুব ছোটবেলায় তাঁর লেখা একটি ছোট গল্পের বংগানুবাদ পড়েছিলাম যা আমার মনে এখনো দাগ কেটে আছে। আমার আজকের গল্পটা সেই গল্পের ছায়া অবলম্বনে আমার মতো করে লিখার চেষ্টা করছি)।

কলি অপূর্ব সুন্দরী একজন মেয়ে, বয়স হবে ২০ কি ২১। কলির বাবা একজন স্বল্প বেতনের সরকারী কর্মচারী। কলি বুঝে আর জানে সে অপূর্ব সুন্দরী আর তার জন্য খুব অহংকার কাজ করে তার মধ্যে। সে কখনো মেনে নিতে পারেনা নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা আর দৈন্যতা। বরাবর সে চেয়েছে বড়লোক পরিবারের মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে। কলির চাহিদা পূরণের জন্য তার মা-বাবাকে করতে হয় অনেক কষ্ট, কলি কোনদিন ও ছাড় দেয়না তার ছোট বোন মলির কথা চিন্তা করে। বড্ড জেদি আর স্বার্থপর মেয়ে কলি।

কলি লেখাপড়ায় বিশেষ মনোযোগী না আর তা হবেই বা কেনো। সে তো জানে সে মহা সুন্দরী, পাড়ার ছেলেরা তার জন্য সব পাগল ভালো বিয়ে ওর এমনিতেই হবে। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর ভালো কোথাও চান্স না পেয়ে সে তার বাবাকে চাপ দিতে লাগলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য। কলির গরীব বাবা উপায় না পেয়ে দেশের কিছু জমি বিক্রি করে আনলো মেয়ের প্রথম সেমিস্টারের টাকা দেয়ার জন্য আর চেষ্টা করছিলো আরো কিছু জমি বিক্রি করার পরের সেমিস্টারের টাকা দেয়ার।

এর প্রায় ৫ কি ৬ মাস পর কলিদের পরিবারে ঘটে গেলো এক বড় দুর্ঘটনা। কলির বাবা হঠাত্ করে মারা যান। কলির মা আফরোজা পড়ে যান বিশাল বিপাকে। কি করে চালাবেন তিনি সংসার, সরকারী বাসা ছেড়ে ভাড়া বাসায় দুই মেয়ে নিয়ে কেমন করে থাকবেন এই ঢাকা শহরে! আফরোজার ভাই আফতাব এসে তাদের নিয়ে গেলেন দেশের বাড়ি নরসিংদিতে। মলিকে ভর্তি করে দিলেন সেখানে স্কুলে। কিন্তু কলি তার কি হবে? যা হবার তাই কলির বাবা মফিজ মিয়ার পরিবার রাজি হলোনা আর কোন সম্পত্তি দিতে তাদের কথা আগেই তাদের ভাগের জমি বেচে টাকা নিয়ে গিয়েছে মফিজ। অগত্যা পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেলো কলির। আফতাব উঠে পড়ে লাগলেন কলির বিয়ে দেয়ার জন্য।
কলি খুব সুন্দরী বলে আফতাবের কষ্ট হলোনা ভালো পাত্র পেতে। ইশতি নামের এক ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হলো কলির। মাস্টার্স পাস ছেলে, একটা ভালো ওষুধ কোম্পানিতে রিপ্রেসএন্টেটিভের চাকরি করে। যে আয় তার কলিকে নিয়ে ঢাকা শহরে খেয়ে পরে ভালোই থাকবে। কলির এই বিয়েতে তেমন মত ছিলোনা। তার তো স্বপ্ন ছিলো অনেক বড়লোকের ব উ হবে, দামি কাপড় গয়না পরবে কিন্তু ইশতির সাথে বিয়ে হলে তো মামুলি জীবন কাটাতে হবে। কি আর করা উপায়ন্তর না দেখে ইশতিকেই বিয়ে করলো কলি।
ইশতি ভদ্র ছেলে, নম্র। কলিকে খুব ভালোবাসে। তবে কলির কাছে এই বিয়েটা একটা সমঝোতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ইশতি সামর্থ্যনুযায়ী কলিকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়, কাপড় কিনে দেয় তাতে কলির সন্তুষ্টি আসেনা। দুইজন মানুষের ঘরের কাজ তাও সে করে না পাছে তার রং কালো হয়ে যায়, হাতের আংগুলে কড়া পড়ে যায় পাছে চেহারাতে ক্লান্তির ছাপ আসে!

এমন করে চলে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলি। এমন সময় ইশতি একদিন অফিস থেকে এসে বললো যে তাদের কোম্পানির মালিক সব স্টাফদের জন্য একটা বড় পার্টি দিবেন কোম্পানির অনেক লাভ হয়েছে বলে।
ব্যস শুরু হয়ে গেলো কলির চিন্তা। এতো বড় পার্টি আর এমন হোটেলে সে কোনদিন ও যায়নি। সে এতো সুন্দরী এটাই হবে সুযোগ সবার কাছে নিজেকে প্রকাশ করার। সে ইশতিকে বললো মার্কেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ইশতি নিয়ে যেতে চাইলো নিউমার্কেটে তাতে কি আর কলির মন ভরে।

অগত্যা সে গেলো তার এক বান্ধবীর বাসায় তার নাম ফারাহ, যে কয়দিন ভার্সিটিতে পড়েছিলো ফারাহর সাথে তার বন্ধুত্ব তৈরী হয়েছিলো। কলি ফারাহকে তার সমস্যার কথা খুলে বললো। ফারাহ আলমারি থেকে তার ভালো কিছু শাড়ি আর গয়না বের করে দিলো কলিকে।
ফারাহ: তোর যেটা ভালো লাগে তু দেখে নে।
এর মধ্যে ঝকমক করছে একটা গলার হার আর একজোড়া কানের সেট দেখে খুব লোভ হলো কলির। সেটটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে খুব দামী। সে হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো আর এও খেয়াল করলো ফারাহ কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে কলির সেটা নেয়া দেখে। কলি বেশ বুঝতে পারলো সবকিছুর সাথে এটাও বের হয়ে গিয়েছে অজান্তে তবে ফারাহ দিতে চাচ্ছেনা।
কলি বেশ লোভী সে ভাবলো নিবো যখন ভালোটাই নেই একদিনের জন্যই তো।
কলি: আমি কি এটা নিতে পারি, ঠিক দিয়ে যাবো ফেরত। তুই ভাবিস না একদম।
ফারাহ (একটু ইতস্তত করে): ঠিক আছে নে তবে আমার খুব শখের জিনিস রে। তোর ভাইয়া আমার ম্যারেজ ডেতে গিফট করেছে, সাবধানে পরিস।

কলি: তুই ভাবিস না এটার কোন ক্ষতি হবে না।
এরপর কলি চলে গেলো সব নিয়ে। অনুষ্ঠানের দিন পার্লার থেকে সেজে আসলো আর ফারাহর জিনিসগুলো পরলো। অপূর্ব লাগছিলো কলিকে, একেবারে নায়িকা। সেই পাঁচতারকা হোটেলে সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছিলো কলিকে, সবাই তো অবাক ইশতির বউ এতো সুন্দর এ যেন গোবরে পদ্মফুল।
সব বড় বড় লোকরা কলির সাথে কথা বলতে চাইছিলো, কলি বোকা তাদের মনোবাসনা বুঝতে না পেরে তাদের সাথে খুব করে গল্প করছিলো। ইশতি সব বুঝতে পেরে রাতের ডিনার শেষ হওয়ার কিছু পরেই অসুস্হতার নাম করে কলিকে নিয়ে বাসায় আসলো। আর কলির কি রাগ তাতে।

বাসায় এসে কাপড় আর গয়না ছাড়তে ছাড়তে কলি গলায় হাত দিয়ে দেখে হারটি নেই। চিত্কার দিয়ে উঠলো। ইশতি পাগলের মতো ছুটে গেলো হয়তো ক্যাবেই পড়ে গিয়েছে। আবার ছুটে গেলো হোটেলে সে পেলোনা, ক্যাবের নাম্বার জানেনা, অন্ধকারে ড্রাইভারের চেহারাটাও মনে নেই। ভীষণ বিপদে পড়ে গেলো তারা।

তার একদিন পর ফারাহ ফোন দিয়ে বললো জিনিসগুলো ফেরত দিতে কারণ সামনে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে লাগবে সব। কলি আর ইশতি উপায় না দেখে অনুষ্ঠানের কলির এক ছবি নিয়ে গেলো জুয়েলার্সের দোকানে। জুয়ালার্সের লোক বললো ছবি দেখে যে যে সোনা আর হীরা দিয়ে তৈরী এই হারের দাম পড়বে মজুরি সহ তিন লাখ টাকার মতো। ওদের তো মাথায় বাজ। তাও তারা রাজি হয়ে গেলো, এক সপ্তাহের মধ্যে বানিয়ে দিতে হবে তো। অনেক কষ্টে আড়াই লাখে রাজি হলো দোকানদার।
ইশতি অনেক সুদে তাড়াতাড়ি করে একটা লোনের জোগাড় করলো। তারপর গয়না আর বাকি সব জিনিস কলি ফেরত দিয়ে আসলো ফারাহকে। কিন্তু লোনের টাকা দেয়ার জন্য কলিকে করতে হলো অনেক ত্যাগ। খরচ কমানোর জন্য কাজের মানুষ ছাড়িয়ে দিলো নিজেই সব কাজ করে এখন, রেস্টুরেন্টে যাওয়া তো দূর বাসায় সপ্তাহে দুইদিন মাছ বা মাংস রান্না হয়, গত দুই ঈদে নিজে কোন কাপড় নিতে পারেনি এমনকি খরচ হবে বলে তারা বাড়ি পর্যন্ত যায়নি। এমন করে কেটে গেলো দুই বছর। লোনটা ও শেষ প্রায় আসলে সুদের জন্য এতো দেরি হচ্ছে।
ফারাহর সাথে ইচ্ছা করেই যোগাযোগ আর রাখেনি কলি ভয়ে পাছে ফারাহ কোনভাবে টের পায় আসল ঘটনা। এমন একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো কলি। ফারাহ তাকে দেখে গাড়ি থামাতে বললো ড্রাইভারকে।
ফারাহ: আরে কলি কেমন আছিস? একি চেহারা তোর? কোন যোগাযোগ রাখিস না, ফোন করলে ধরিস না কি হয়েছে তোর?
কলি: নারে তেমন কিছুনা। তুই কেমন আছিস?
এমন টুকটাক কথার পর ফারাহ কলিকে জোর করে নিয়ে গেলো কফি শপে। তারপর জানি কি মনে করে কলি সব বললো ফারাহকে। ফারাহ শুনে তো অবাক।
ফারাহ: একি করেছিস তোরা। আমি বলেছি জিনিসটা দামি তবে এটা অনেক দামি ইমিটেশনের গয়না। তোর ভাইয়া বোম্বে থেকে এনেছে। এইসব জু্য়েলারি নায়িকারা পরে। এটা তো সোনাও না বা হীরা না। একবার কানের দুল দিয়ে চেক করে নিতে পারতি। আমাকে কেনো তুই সাহস করে বললিনা?
কলির মাথায় বাজ পড়লো। না জেনে, বুঝে সে নিজে কষ্ট করলো আর ইশতি ও কত কষ্ট করে তার ভুলের জন্য। রিক্সাতে না উঠে, বাসে না চড়ে হাঁটে, খাবারের কষ্ট করে, বাড়ি যায়না খরচের ভয়ে। কলি আজ বুঝতে পারলো তার এতো দিনের ভুল। তার লোভ, অতিরিক্ত মাত্রায় অপ্রয়োজনীয় উচ্চাংক্ষা তার এই পরিণতির জন্য দায়ী। বড় লোভী মানুষ সে, লোভের কারণে সে তার মা-বাবা, বোন, স্বামী সবাইকে কষ্ট দিয়েছে। এটা তার প্রাপ্য ছিলো।
এতোদিন পর সে অনুধাবণ করলো যে কথাটা আসলে মিথ্যা নয়- লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।

আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৮৯ তম জন্মদিন


আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৮৯ তম জন্মদিন

আজ ৩ মে। আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৮৯ তম জন্মদিন। ১৯২৯ সালের ৩ মে জননী পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় জন্ম নেন। ৪২ সালে এসএসসি, ৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। সেটা ১৯৪৫ সাল।এরপর ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড শেষ করেন। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেন।

তাঁর কর্মজীবন কেটেছে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করে । ১৯৯১ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।

আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর ছেলে শাফী ইমাম রুমী শহীদ হন। কী দুর্ভাগ্য জননীর ! মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বামী শরীফ ইমামও মারা যান। ৭১ সালে স্বামী আর সন্তান হারানো জননী স্বাধীনতা উত্তর এদেশের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তির উল্থানের পক্ষে তিনি ছিলেন প্রথম কাতারের সৈনিক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর উপন্যাস বা দিনলিপি যাই বলিনা কেন, একাত্তরের দিনগুলি ছিলো একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মায়ের দৃঢ়তা আর আত্মত্যাগের অনন্য উদাহরন।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে লেখক জাহানারা ইমামের আত্মপ্রকাশ। প্রথমে তাঁর পরিচয় ছিলো একজন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে। ছোটদের জন্যে খুব প্রয়োজনীয় কয়েকটি বই তিনি অনুবাদ করেন। বইগুলো পাঠক সমাদৃত হয়। তবে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনা করেই তিনি পৌঁছে যান পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জাহানারা ইমাম লেখালেখিতে ব্যস্ত সময় কাটান এবং তাঁর প্রধান গ্রন্থগুলি এ সময়ে প্রকাশ পায়।

গল্প, উপন্যাস ও দিনপঞ্জি জাতীয় রচনা মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: অন্য জীবন (১৯৮৫), বীরশ্রেষ্ঠ (১৯৮৫), জীবন মৃত্যু (১৯৮৮), চিরায়ত সাহিত্য (১৯৮৯), বুকের ভিতরে আগুন (১৯৯০), নাটকের অবসান (১৯৯০), দুই মেরু (১৯৯০), নিঃসঙ্গ পাইন (১৯৯০), নয় এ মধুর খেলা (১৯৯০), ক্যানসারের সঙ্গে বসবাস (১৯৯১) ও প্রবাসের দিনলিপি (১৯৯২)। জাহানারা ইমাম সাহিত্যকর্মের জন্য স্বাধীনতা পদক (১৯৯৭), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কমর মুশতরী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১), আজকের কাগজ হতে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কার (বাংলা ১৪০১ সনে), নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা (১৯৯৪), রোকেয়া পদক (১৯৯৮) প্রভৃতি পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ডেট্টয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালে ৬৫ বছর বয়সে জাহানারা ইমাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র শফি ইমাম রুমী গেরিলা বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কয়েকটি সফল অপারেশনের পর তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হন এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে শহীদ হন। জাহানারা ইমাম পরিচিতি পান ‘শহীদ জননী’ হিসেবে।
শহীদ জননীর নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠন করা হয়- ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এর পাশাপাশি ৭০ টি সংগঠনের সমন্বয়ে সেবছরই ১১ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। যার আহবায়কও ছিলেন জননী জাহানারা ইমাম।

এরপরের ঘটনা বড়ই নির্মম ! যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আমাদের জননীকে রাস্তায় নামতে হয়েছিলে। ততদিনে তাঁর সারা শরীরে দুরারোগ্য ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যায়। একদিকে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের রাজনৈতিক বান্ধব দলের মানূষরুপী পশুদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া, অন্যদিকে রাস্ট্রপক্ষের মদদপুষ্ট হয়ে সরাসরি আক্রমন করে বসে ৭১ সালের হায়েনাদের দল- গোলাম আযম নিজামী গং। জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে মামলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহীতার। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, জাতী হিসেবে কী অকৃতজ্ঞ, অসভ্য আর বর্বর আমরা !

অবশেষে, রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা মাথায় নিয়েই আমাদের জননী জাহানারা ইমাম ২৬ জুন ১৯৯৪ সালে দেশের বাইরে মিশিগানে ইন্তেকাল করেন। আজ তাঁর জন্মদিন। মাগো, তুমি যেখানে যে অবস্থায় আছো- ভালো থেকো মা ! শান্তিতে থেকো ! পারলে আমাদের মত অকৃতজ্ঞ জাতীকে ক্ষমা করে দিও মা ! তুমি জানো মা, তোমার দেখিয়ে দেয়া পথে এখনও আমরা হাঁটছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে হাজারো মানুষ আজ সোচ্চার। মনে রেখো মা, এদের বিচার হবেই এ মাটিতে… এ আমাদের দৃপ্ত শপথ।।

মা কে নিবেদিত আমার কবিতা:

মাতৃত্বের ক্যান্সার ।। দা উ দু ল ই স লা ম
**************

অ ঠাঁই রক্ত নদীর বুকে জেগে উঠা চর
নাম তার বাংলাদেশ !
রক্তের লাল, উত্তাল জোয়ার পেলে দুর্মর
বাঁধ ভেঙ্গে মিশে বিশাল সমুদ্রে
নাম তার বঙ্গোপসাগর!

ক্ষরণের যন্ত্রণা নিয়ে যে কিশোরী
নিজে ঢেকেছে সবুজের চাদরে
নাম তার সুন্দরবন!

মরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
যে পাখিটি আজো উড়ে স্বাধীনতার নেশায়
তার নাম দোয়েল!

গর্জনে তর্জনে উত্তাল সাইক্লোনে
যে জননী অতন্দ্র প্রহর গুনে
তারায় তারায় খুঁজে যুদ্ধে যাওয়া সন্তানের মুখ
নাম তার রেসকোর্স ময়দান!

পূর্ণিমার মায়াবী জ্যোৎস্নায়
নাকের নোলক, কপালের টিপ, পায়ে আলতা সাজায়
দীর্ঘশ্বাসে বুকের গোপন ব্যথায় কুরে কুরে খায় যে নারীর
নাম তার বীরাঙ্গনা!

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ও
মিটেনি রক্তের তীব্র তৃষ্ণায় আকণ্ঠ রাজাকার!
বেজন্ম চেতনায় ফিরে এসেছে দস্যু হানাদার
মায়ের আঁচলে বেড়ে উঠা মানব সন্তান
মায়ের সম্ভ্রম লুণ্ঠনে কাঁপেনি দানবীয় হাত তার!

বিজয় বিজয় করে যতোই করো চিৎকার
শুনে রাখো হে বাংলার পতাকা
তোমার অস্তিত্বে বেড়ে উঠেছে নির্মম ক্যান্সার!

( লিখাটির তথ্যসূত্র বিভিন্ন ওয়েব সাইট, সংবাদ পত্র, ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত)