বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

সাদকাতুল ফিতরের আদ্যোপান্ত

165076

ইসলাম আমাদের সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। রমাদানের এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদ-উল -ফিতর। ধনী-গরিব সকলে মিলে যেন সমানভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে তার জন্য ইসলাম ব্যবস্থা করেছে সাদাকাতুল ফিতর নামে একটি দানের খাত। এই দানকে বলা হয় সাওমের কাফফারা বা যাকাত। আজ আমরা ফিতরা নামে যে দানের পদ্ধতি ইসলামে রয়েছে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ইনশা-আল্লাহ।

সাদকাতুল ফিতর কী

ফেতরা আরবী শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) ইত্যাদি নামে পরিচিত। সদকা মানে দান, ফিতর মানে রোজার সমাপন বা শেষ। ফিতর বা ফাতুর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্যকেও বোঝানো হয় যা দ্বারা সাওম পালনকারীরা তাদের সাওম ভঙ্গ করেন।

সুতরাং সাদকাতুল ফিতরা হলো ঐ সব খাদ্যবস্তু দান করা যা দ্বারা সিয়াম পালনকারী তাদের সাওম ভঙ্গ করতেন। সোজা কথায় ফিতরা হলো এমন খাদ্যসামগ্রী দান করা যা দ্বারা গরীব দুঃখীরা ঈদের দিনে খেয়ে খুশী হয়। আর এই দান প্রতিটি সাওম পালনকারীকেই প্রদান করতে হবে।

সাদকাতুল ফিতর কেন দিতে হয়

ইসলামে সম্পদের পবিত্রতার জন্য যেমন যাকাত (দান) দিতে হয়, ঠিক তেমনি রমাদানের সিয়ামের পবিত্রতার জন্য সাদকাতুল ফিতর (দান) দিতে হয়। আরও সহজ করে বললে বলতে হয়, পবিত্র রমাদানে সিয়াম পালন করতে গিয়ে প্রতিটি মানুষেরই অবচেতনমনে কোনো না কোনো ভাবে সিয়ামের অনেক সাধারণ ভুলত্রুটি (যেমনঃ সাওমে অবাঞ্ছনীয় অসারতা, গীবত করা, অশ্লীল কথাবার্তা, গালাগালি করাসহ নানান ছোটখাটো সগিরা গুনাহ) হয়ে থাকে। সিয়াম পালন করতে গিয়ে সেই ত্রুটি-বিচ্যুতিরই ক্ষতিপূরণ ও সংশোধনী হচ্ছে সাদকাতুল ফিতর। যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত দানের একটি ইবাদত। যাকাত যেমন অর্থ-সম্পদকে পবিত্র করে, ঠিক তেমনি ফিতরাও সাওমকে পবিত্র করে।

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে,
“সদকাতুল ফিতর দ্বারা সাওম পালনের সকল দোষত্রুটি দূরীভূত হয়, গরিবের পানাহারের ব্যবস্থা হয়।” -আবু দাউদ

উপরোক্ত হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে সদকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য শুধু ‘গরিবদের ঈদের খুশিতে শরিক করা’ বলে যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে সেটা মিথ্যা। বরং এই দানের ফলে আমাদের সিয়াম সমূহের কাফফারা আদায় হয়। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার স্বরূপ হিজরীর দ্বিতীয় সালে শা’বান মাসে বিধিবদ্ধ হয়।

কাদের উপর ফিতরা ওয়াজিব

ফিতরা সেই মুসলিমের উপর ফরয যে ব্যক্তির ঈদের রাত ও দিনে নিজের এবং পরিবারের আহারের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে। আর এই সাদকা হিসাবের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষকেই হিসাবে রাখতে হবে।

একটি পরিবারে স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট, বড়, বাচ্চা, ধনী ও গরীব, শহরবাসী ও মরুবাসী সিয়াম পালনকারী, ভঙ্গকারী ইত্যাদির মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এক কথায় এ দান পরিবারের সকল সদস্যকে হিসাবে রেখে, পরিবারে যতজন সদস্য আছে ততজনের ফিতরা আদায় করতে হবে। সাদকাতুল ফিতর ফরয হওয়ার জন্য যাকাতের সমপরিমাণ নিসাব হওয়া শর্ত নয়। যেহেতু তা ব্যক্তির উপর ফরয, সম্পদের উপর নয়।

সদকায়ে ফিতর আদায়ের সময়

সাদকাতুল ফিতর আদায়ের ফজিলতপূর্ণ সময় হলো ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে ঈদের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত। ঈদের দু একদিন পূর্বেও ফিতরা আদায় করা জায়েয। কেননা সাহাবায়ে কেরাম এরূপ করেছেন। ঈদের নামাজের পর সদকায়ে ফিতর আদায় করা শুদ্ধ নয়।

ইবনু উমার (রাঃ) বলেন,
“নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) লোকেদের ঈদের নামাযের জন্য বের হওয়ার পূর্বে ফিতরার যাকাত আদায় দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।”(বুখারী ১৫০৯)

সুতরাং ঈদের দিন ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম।

ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে,

‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে তা আদায় করে দেবে তবে তার সদকা গ্রহণযোগ্য হবে, আর যে নামাজের পর আদায় করবে তার সদকা সাধারণ দান বলে গণ্য হবে।’ (বর্ণনায় আবু দাউদ)
অর্থাৎ কেউ ঈদের জামাতের পর ফিতরা আদায় করলে তা সাধারণ দানে পরিনত হবে। সাদকাতুল ফিতরের যে নেকী, সেই নেকী আর পাওয়া যাবে না।

তাই ফিতরার খাদ্য ঈদের সালাতের আগেই বন্টন করা ওয়াজিব। ঈদের সালাত পর্যন্ত দেরি করা উত্তম নয়। বরঞ্চ ঈদের এক বা দুই দিন আগে আদায় করলেও অসুবিধা নেই। আলেমদের বিশুদ্ধ অভিমত হলো, ফিতরা আদায় করার সময় শুরু হয় ২৮ শে রমাদান থেকে। কারণ রমাদান মাস ২৯ দিনও হতে পারে। আবার ৩০ দিনও হতে পারে। তাই ঈদের আগে দিলে গরিব দুঃখীরা আগে থেকেই ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ ফিতরা ঈদের একদিন বা দুই দিন আগে আদায় করতেন। এছাড়া ফিতরা আদায়ের সময় যাতে সংকীর্ণ না হয়, সেইজন্য ঈদুল ফিতরের সালাত সামান্য দেরীতে পড়া উত্তম। এতেকরে ফিতরা আদায়ের যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।

কে ফিতরা পাবে
কারা ফিতরা পাওয়ার যোগ্য বা কোন কোন প্রকারের লোক ফিতরা নিতে পারবে? এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে।

একদল আলেম মনে করেন, যারা সাধারণ সম্পদের জাকাতের হকদার তারাই সাদকাতুল ফিতরার হকদার। তাদের দলিল হলো, ফিতরাকে রাসুল সাঃ যাকাত ও সাদাকা বলেছেন। তাই যেটা সম্পদের যাকাতের খাত হবে, সেটা ফিতরারও খাত হবে। সাদাকার যেই খাত আল্লাহ সূরা তওবায় উল্লেখ করেছেন সেই খাদ সাদাকাতুল ফিতরের জন্যও হবে।

সুতরাং সেই হিসাবে আট প্রকারের লোক হলো, আল্লাহ্ বলেন,
“যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ আত তাওবাহ, আয়াতঃ ৬০)

অন্য এক দল আলেম মনে করেন, সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেবল ফকির মিসকিনদের হক, অন্যান্যদের নয়। তাদের দলিল হলো,

ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস, তিনি বলেন,
“আল্লাহর রাসূল ফিতরের যাকাত (ফিতরা) ফরজ করেছেন রোজাদারের অশ্লীলতা ও বাজে কথা-বার্তা হতে পবিত্রতা এবং মিসকিনদের আহার স্বরূপ .. ’ (আবু দাউদ, যাকাতুল ফিতর নম্বর ১৬০৬/ হাদিস হাসান, ইরওয়াউল গালীল নম্বর ৮৪৩)

সুতরাং উপরোক্ত হাদিসেই স্পষ্ট আছে যে, মিসকিনদের তথা,গরীব, দুঃস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্থকেই ফিতরা প্রদান করা যাবে।

উপরোক্ত মতকে সমর্থন জানিয়েছেন ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনুল ক্বাইয়্যূম, শাওকানী, আযীমাবাদী, ইবনু উসাইমীনসহ আরো অনেকে। ( মাজমুউ ফাতাওয়া ২৫/৭৩,যাদুল মাআদ ২/২২, নায়লুল আউত্বার ৩-৪/৬৫৭, আওনুল মা’বূদ ৫-৬/৩, শারহুল মুমতি ৬/১৮৪)

অধিকাংশ আলেম উলামাদের মতে এই মতটিই অধিক সহীহ কারণ,

এই মতের পক্ষে স্পষ্ট দলিল বিদ্যমান। আর প্রথম মতটি একটি কিয়াস (অনুমান) মাত্র। আর দলিলের বিপরীতে কিয়াস বৈধ নয়।

ফিতরাকে যাকাত সম্বোধন করলেও উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যেমনঃ ফিতরা এমন ব্যক্তির উপরও ওয়াজিব যার বাড়িতে সামান্য কিছু খাবার আছে মাত্র। কিন্তু যাকাত কেবল তার উপর ফরজ যার নিসাব পরিমাণ অর্থ- সম্পদ রয়েছে। যাকাত বাৎসরিক জমাকৃত ধন-সম্পদের কারণে দিতে হয়।আর ফিতরা সাওমের ত্রুটি বিচ্যুতির কারণে দিতে হয়। এসব কারণে ফিতরা ও যাকাতকে কখনোই এক মনে করা যাবে না।

এছাড়া সাদাকা শব্দটি দানের ব্যাপক অর্থ ব্যহৃত হয়। যেকারণে ফিতরাকে সাদাকা বলা হয়েছে। তাছাড়া যাকাত, ফিতরা এবং সাধারণ দানকেও সাদাকা বলা হয়। সুতরাং সাদাকা বললেই যে তা যাকাতকে বুঝাবে তা নয়।

যেমন রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, ‘কুল্লু মা’রুফিন সাদাকা’ অর্থাৎ প্রত্যেক ভালো কাজ সদকা। তবে নি:সন্দেহে প্রত্যেক ভালো কাজ যাকাত নয়। তবুও রাসুলুল্লাহ সাঃ তা সাদাকা বলেছেন। তাই ফিতরাকে সাদাকা বলার কারণে তা যাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

এছাড়া উল্লেখ্য যে, ফিতরার খাদ্যসমূহের মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা অন্তর্ভূক্ত নয়। তবে মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম যদি ফকীর মিসকিনদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তারা ফিতরার হকদার হবেন। বরং তারা অন্যান্য ফকীর মিসকীনদের থেকেও বেশি হকদার হবেন। কেননা এরা দ্বীনের শিক্ষা অর্জনে ও অন্যকে শিক্ষা দানে নিয়োজিত, যে গুণটি অন্যান্য ফকীর মিসকিনদের নেই।

কী দিয়ে ফিতরা দিতে হয়
আমাদের উপমহাদেশে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা হলেও হাদিসে খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায়ের কথা এসেছে।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

“রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা সাদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা‘ খাদ্য (গম) বা এক সা‘ খেজুর বা এক সা‘ যব বা এক সা‘ পনির অথবা এক সা‘ কিসমিস দান করতাম। আমরা অব্যাহতভাবে এ নিয়মই পালন করে আসছিলাম। অবশেষে মুআবিয়াহ (রাঃ) মদিনায় আমাদের নিকট আসেন এবং লোকেদের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, আমি শাম দেশের উত্তম গমের দু’ মুদ্দ পরিমাণকে এখানকার এক সা‘র সমান মনে করি। তখন থেকে লোকেরা এ কথাটিকেই গ্রহণ করে নিলো। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি কিন্তু সারা জীবন ঐ হিসাবেই সদকাতুল ফিতর পরিশোধ করে যাবো, যে হিসাবে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে তা পরিশোধ করতাম।(সুনানে ইবনে মাজাহ-১৮২৯, বুখারী ১৫০৫, ১৫০৬, ১৫০৮, ১৫১০, মুসলিম ৯৮৫, তিরমিযী ৬৭৩, নাসায়ী ২৫১১, ২৫১২, ২৫১৩, ২৫১৪, ২৫১৭, ২৫১৮, আবূ দাউদ ১৬১৬, ১৬১৮, আহমাদ ১০৭৯৮, ১১৩০১, ১১৫২২, দারেমী ১৬৬৩, ১৬৬৪, সহীহ আবী দাউদ ১৪৩৩, ইরওয়াহ ৩/৩৩৭, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ্।)

উপরোক্ত হাদিস দ্বারা সুস্পষ্ট যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে ফিতরা আদায়ের নির্দেশ হচ্ছে, খাদ্যদ্রব্য (যেমনঃ গম), খেজুর, যব, পনির, কিসমিস। এই পাঁচটি নিয়মিত খাদ্য দ্বারাই রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সময়ে ফিতরা আদায় করা হতো। আর খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় হচ্ছে সুন্নাহ পদ্ধতি।

ফিতরার পরিমাণ
আমাদের দেশ ও উপমহাদেশে খাদ্যদ্রব্য গমকে হিসাবে ধরে ফিতরার টাকা নির্ধারণ করা হয়। উপরের উল্লেখিত হাদিসেও এসেছে কী পরিমাণ খাদ্য দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক “সা” খাদ্যশস্য সাদকাতুল ফিতর হিসাবে দিতে হবে। “সা” হচ্ছে তৎকালীন সময়ের এক ধরনের ওজনের পরিমাপক।

মাঝারি দেহের অধিকারী মানুষের হাতের চার “মুদে” এক ‘সা’ হয়। (অর্থাৎ দুই হাতের কব্জি একত্র করে মুনাজাতের মতো একত্রিত করে তাতে যতটুকু ফসল নেয়া যায়, ততটুকুকে বলা এক “মুদ “। মুদ দ্বারাই আরবে দানা জাতীয় শস্য মাপা হয়।একাধিক শস্য যদি এক-‘সা’ এক-‘সা’ মেপে কেজি দিয়ে ওজন করা হয়, তাহলে এক শস্যের ওজন অপর শস্যের ওজন থেকে কম-বেশী হবে। তাই কোনো নির্দিষ্ট ওজন দ্বারা সা নির্ধারিত করা সম্ভব নয়।

রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহ হচ্ছে তৎকালীন প্রচলিত খাদ্যদ্রব্যের এক সা দ্বারা একজনের ফিতরা আদায় করা। সেই হিসাবে আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত খাদ্যদ্রব্য হচ্ছে চাউল এবং আটা। সুতরাং সুন্নাহ হলো চাউল বা আটা দ্বারা এক সা করে একজনের ফিতরা আদায় করা। বর্তমানে আমাদের দেশে এক “সা”তে আড়াই কেজি চাউল হয়।

সা নিয়ে মতভেদ
আমাদের উপমহাদেশে অর্ধ সা গম বা আটার পরিমাপের অর্থ দ্বারা ফিতরা নির্ধারন করা হয়। যদিও হাদিসে পাঁচটি খাদ্যদ্রব্যের এক সা দেওয়ার কথা এসেছে। অর্ধ সা ফিতরা দেওয়ার ফতোয়াটি মুয়াবিয়ার রাঃ। যা আগের উল্লেখিত হাদিস থেকে বুঝা যায়। একইসাথে গম দ্বারা এই সা এর পরিমাণ হলো ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম যা ইরাকের প্রচলিত সা। আর মদিনার সা দিয়ে গমের পরিমাণ হলো ২ কেজি ৪০০ গ্রাম। সুতরাং মদিনা এবং ইরাকের সা এর পার্থক্য রয়েছে।

একইসাথে হাদিসে এসেছে এক সা দেওয়ার কথা। যা রাসুলুল্লাহ সাঃ এবং ইসলামের চার খলিফা পর্যন্ত বলবৎ ছিলো। পরে মুআবিয়া ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা নির্বাচিত হন এবং ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনা থেকে দামেস্কে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপরে দামেস্ক থেকে মদিনায় গম আমদানি হতে থাকে। সে সময় সিরিয়ার গমের মূল্য খেঁজুরের দ্বিগুণ ছিল। তাই খলিফা মুয়াবিয়া কোনো এক হজ্জ বা উমরা করার সময় মদীনায় আসলে মিম্বরে বলেন, আমি অর্ধ সা গমকে এক সা খেজুরের সমতুল্য মনে করি। লোকেরা তার এই কথা মেনে নেয়। এর পর থেকে মুসলিম জনগনের মধ্যে অর্ধ সা ফিতরার প্রচলন শুরু হয়।

উপরোক্ত কারণ গুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, এক সা মদিনার পরিমাপেই একটি ফিতরা আদায় করতে হবে। কেউ যদি ইরাকের সা এর পরিমাপ ধরে মুয়াবিয়ার ফতোয়া অনুযায়ী অর্ধ সা দিয়ে ফিতরা দেয়, তাহলে তা সুন্নাহ সম্মত হবেনা। কেননা উপরের উল্লেখিত হাদিসে সাহাবী আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)সহ তৎকালীন অনেকে মুয়াবিয়ার ফতোয়াকে মেনে নেয়নি।

টাকা দিয়ে ফিতরা
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা বিভিন্ন কারণে সমস্যাযুক্ত। যারফলে বিভিন্ন আলেম উলামারা খাদ্যদ্রব্যের হিসাব করে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ে ঐক্যমত্য পোষণ করেন। আমাদের উপমহাদেশে গমের এক সা ৩ কেজি ৩০০ কে দুই ভাগ তথা অর্ধ সা হিসাব ধরে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গমের বা আটার মূল্য ধরে সর্বনিম্ন ফিতরা দেওয়া হয়। একইভাবে খেজুর, কিশমিশ, পনির, যব দ্বারাও টাকার পরিমান করা হয়।

যদিও এক পক্ষ এই টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়কে জায়েজ নয় বলে সম্বোধন করেন। তাদের যুক্তি হলো, রাসুলুল্লাহ সাঃ সময়েও মুদ্রার প্রচলন ছিলো। মুদ্রা দিয়ে ফিতরা আদায় জায়েজ হলে তিনি তা মুদ্রা দিয়েই দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। যেমন যাকাতের ক্ষেত্রে দিয়েছেন। একইসাথে ফিতরা আদায়ে লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো মিসকিনদের ভালো খাওয়া দাওয়া করানো। সেই কারণে টাকা নয় বরং খাদ্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করতে হবে। যেমন হাদিসে সুস্পষ্টভাবে এসেছে।

অন্য পক্ষের যুক্তি হলো, বর্তমান পরিস্থিতি একজন মিসকিন তার ফিতরা সংগ্রহ করতে গেলে দু চারজনের বেশি সংগ্রহ করতে পারবে না ওজনের কারণে। একইসাথে শুধু খাদ্য দিয়েই একজন মিসকিন জীবনযাপন করতে পারেন না। তার প্রয়োজনীয় সবকিছু পূরণ করতে হলে টাকার প্রয়োজন। একইসাথে টাকা বহন করতে সুবিধাজনক। টাকা দিয়ে ঐ মিসকিন তার পছন্দের খাদ্য কিনে খেতে পারবে।

একজন মিসকিন যদি খাদ্য ফিতরা সংগ্রহ করে, তাহলে তার অতিরিক্ত খাদ্য জমা হয়ে যাবে। যা তাকে কম দামে দোকানে বিক্রি করতে হবে। এটা তারজন্য লোকসান। সুতরাং খাদ্যদ্রব্য নয় সময়ের পরিস্থিতির কারণে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা যুক্তিযুক্ত। যা অধিকাংশ মুসলিমের ঐক্যমত্যের কারণে ইনশা- আল্লাহ্ তা কবুল হবে।

শুভংকরের ফাঁকি
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি পাঁচ প্রকার খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা যাবে। যা তৎকালীন আরবের প্রধান খাদ্য ছিলো। সেই হিসাবে যে অঞ্চলের যে খাদ্য প্রধান সেই খাদ্য দিয়েই ফিতরা দেওয়া সুন্নাহ। যদিও আমাদের উপমহাদেশে হাদিসে বর্ণিত পাঁচ প্রকারের খাদ্য (যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম) এর পরিমাপ করে ফিতরার টাকা নির্ধারিত হয়।

সেই হিসাবে উন্নত মানের খেজুরের দাম বর্তমান সময়ে সবসময়ই বেশী হয়। এরপরের স্থান রয়েছে পনির যার মূল্য খেজুরের চাইতে কিছু কম। এভাবে কিসমিস, যব এবং গম। যা হাদিসে উল্লেখিত খাদ্যদ্রব্য।

আমাদের উপমহাদেশে গমের অর্ধ সা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম ধরে সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারন করা হয়। যে হিসাব দিয়েই ধনী গরিব, সচ্ছল, অসচ্ছল, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবাই ফিতরা আদায় করে। যা যৌক্তিক কারণে কখনোই সঠিক নয়। কেননা সামর্থ্য অনুযায়ী ফিতরা দিতে হবে।

প্রতিবছর গমের হিসাব ধরে ফিতরা টাকা প্রকাশিত হওয়ার কারণে অধিকাংশ মুসলমানই জানেনা যে তাকে আসলেই কত টাকা ফিতরা দেওয়া উচিত। যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সকল খাদ্যদ্রব্যের টাকা নির্ধারিত করে দিলেও, প্রচারিত হয় শুধুমাত্র সর্ব নিম্ন ফিতরা টাকা ৬০/৭০/৮০ টাকার মতো। যা একজন রিকশাওয়ালা, দিনমজুরসহ খুবই সামান্য আয়ে চলে এমন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য।

রাসুল সাঃ এর সুন্নাহ থেকে সরে এসে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের কারণে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যিনি ফিতরা দিচ্ছেন তিনি সুন্নাহ মানছেন না। কারণ যিনি নিচ্ছেন তিনি খাদ্য না নিয়ে টাকা নিতে আগ্রহী। যারফলে যারা ফিতরা নিচ্ছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনেকভাবে।

যদি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহ অনুযায়ী খাদ্য দিয়ে যেমনঃ নূন্যতম চাউল দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হলে, যিনি ফিতরা দিবেন তিনি নিজেই খুঁজে খুঁজে তা দিয়ে আসবেন। এবং এটাই সুন্নাহ। এক্ষেত্রে ফিতরা গ্রহীতাকে কষ্ট করে মানুষের দুয়ারে যেতে হবে না।

এছাড়াও একজন ফিতরা গ্রহীতা যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য পাবে, সেই খাদ্য সে এমন কারো কাছে বিক্রি করবে যে কম আয়ের মানুষ। এতেকরে দুই শ্রেণীই উপকৃত হতে পারে। তাছাড়া সারা উপমহাদেশে গমের দামে ফিতরা দেওয়ার কারণে একজন দানকারী খুবই সামান্য টাকাই ফিতরা দিচ্ছে। যা অন্যান্য খাদ্য দিয়ে দিতে হলে আরো অনেক বেশীই দিতে হতো। একইভাবে কম দেওয়ার কারণে ফিতরা গ্রহীতাও কম টাকা পাচ্ছে।

একজন মিসকিন যদি পুরো একটি ফিতরা পেতো তাহলে সে নূন্যতম ২০/৩০ টির চাইতেও বেশী ফিতরা পেতো। যা চাউল দিয়ে হিসাব করলেও (২কেজি৫০০ গ্রাম ধরে) ৫০ /৭৫ কেজি হতো। যার মূল্য ৩০০০/৪৫০০ টাকা হতো। অথচ এখন ঘরে ঘরে গিয়ে ফিতরা আদায় করতে গিয়ে ১০ /২০ টাকার বেশী পায় না। যার সর্বমোট হিসাব করলে ১০০০ /১৫০০ টাকার বেশী কখনোই সম্ভব নয়।

নূন্যতম হিসাব ধরে যদি একজন গ্রহীতা তিন থেকে চার হাজার টাকা পেতে পারে। তাহলে বেশী হিসাব ধরে ফিতরা দিলে কত টাকা হতে পারে। আর আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্যই অর্ধাংশ লোক বেশী মূল্যের ফিতরা দেওয়ার উপযোগী।

এই কারণে দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দাতা সঠিক নিয়মে ফিতরা না দেওয়ার কারণে পরিপূর্ণ নেকী পাচ্ছে না। আর গ্রহীতা কম পাওয়ার কারণে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়ছে। এভাবেই দ্বীন পালন করতে গিয়ে আমরা শুভংকরের ফাঁকিতে পড়ে গেছি। সুতরাং আমাদের উচিত সুন্নাহ পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করা যাতে আল্লাহ্ থেকে পরিপূর্ণ নেকী পাওয়া যায় এবং গরিব দুঃখীদেরও অসচ্ছলতা দূর হয়।

সাদকাতুল ফিতরের উপকারিতা
ক) এই দান যেহেতু সাওম পালনের ভুল- ত্রুটির জন্য, সেহেতু এই দানের বিনিময়ে আল্লাহ্ আমাদের গোনাহ গুলোকে মিটিয়ে দেন।

খ) রাসুলুল্লাহ সাঃ হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। তিনি সমাজে সাম্যাবস্থা তৈরি করার জন্য এই সাদকার প্রচলন করেছেন। যাতে ধনী গরিব দুঃস্থ অসহায় সকলে মিলে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।

গ) এছাড়াও আল্লাহ আমাদের শারিরীক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু দান করেছেন। যার কারণে আমরা বেঁচে থেকে সুস্থ শরীরে এক মাস সিয়াম পালন করতে পারলাম। সুস্থতা এবং আমল করতে পারার কারণে আল্লাহ্ নিকট শুকরিয়া স্বরুপ হলো এই ফিতরা। যা দেহের যাকাত নামেও পরিচিত।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, প্রতিটি ব্যক্তিকে ঘরের সকল সদস্যদের ফিতরা দিতে হবে, যার ঘরে দুই তিন বেলার পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। একইসাথে খাদ্যদ্রব্য দ্বারাই ফিতরা আদায় সুন্নাহ। তবে পরিস্থিতির কারণে টাকা দিয়েও ফিতরা আদায় করা যাবে। তবে তা অবশ্যই সামর্থ্য অনুযায়ী দিতে হবে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্নাহ পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করা।

তথ্য ইন্টারনেট থেকে

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

১৬ এপ্রিল, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
[email protected]

সরস্বতী বন্দনা

1551

পরাবাস্তবতা, অতিবাস্তবতা, ভ্রম, বৈকল্য আদি সংহারিনী
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা জ্ঞানপ্রদায়িনী
তব আশির্বাদে রেখো সম্পৃক্ত হৃদিপদ্মে সদা বিচরণকারিণী
শুভ্রকান্তি মাতা দেবী সরস্বতী পদ্মলোচনা বীণাপুস্তকধারিণী
ঘুচাও দু:স্বপ্ন, ঘুচাও মোহ, ঘুচাও অন্ধ তামস জগত ব্যাপিয়া
প্রণমি তোমায় এই শুভদিনে বাগ্দেবী জ্যোতির্ময়ী হরিপ্রিয়া

পুরনো রেললাইন এখন বেগম নাগিনা জোহা সড়ক

অনেকদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল পুরোনো রেলপথ নতুন করে মহাসড়ক হওয়ার কথা। কথাটি কারোর মুখের কথা নয়, খোদ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা। জারিকৃত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় গত ২৫ মে (মঙ্গলবার) ২০২১ইং। এদিন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলার খানপুর হতে হাজীগঞ্জ গোদনাইল হয়ে ইপিজেড পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি ভাষা সৈনিক “বেগম নাগিনা জোহা সড়ক” নামকরণ করা হয়েছে।

IMG0504

এই সড়কটি আগে ছিলো রেলপথ বা রেললাইন। রেললাইনটি দেশ স্বাধীন হবার আগে শুধু নারায়ণগঞ্জ গোদনাইলস্থ বর্তমান নাম বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.) বা সংক্ষেপে “কো-অপারেটিভ” জুট প্রেসের জন্যই রেললাইন স্থাপন করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এখানে সরকারের খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখার কাকগুলো গোডাউন ছিলো। কোনও দুর্যোগের কারণে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দিলে এখানকার গোডাউন থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা-শহরে জরুরি খাদ্য সরবরাহ করা হতো।

IMG0504M
ছবিটি গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি আদর্শ বাজারের একাংশ।

বলে রাখা ভালো যে, “বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.) জুট প্রেসে বর্তমানে সরকারের কোনও খাদ্য মজুদ রাখার গোডাউন নেই। এখন এখানে পাট মজুদ রাখার অনেকগুলো গোডাউন আছে এবং পাট বেলিং করার জুট প্রেস আছে। তবে এমন সরকারি মালামাল মজুদ রাখার গোডাউন শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে আরও দুটি আছে। একটি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ‘বিশ্ব গোডাউন’ নামে পরিচিত। কেউ কেউ বলে ‘সাইলো’। আরেকটি নারায়ণগঞ্জ নগর খানপুর সংলগ্ন বরফকল নামক স্থানে।”

তো যাইহোক, মূল কথায় ফিরে আসি!
তখনকার সময়ে এখানে (কো-অপারেটিভ বা বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.)-এ থাকা গোডাউনে মজুদ থাকা খাদ্যসামগ্রীও আনা হতো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। সেসময়ে এখানে থাকা গোডাউন গুলোতে খাদ্য ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করার একমাত্র উপায় ছিলো নৌপথ। নৌপথ ছাড়া আর অন্য কোনও পথে এখানকার এসব গোডাউন থেকে কোনও মালামাল আনা যেতো না, মালামাল নেওয়াও যেতো না।

এতে সরকারের খরচ হতো অনেক এবং মালামাল সরবরাহের কাজেও লেগে যেতো দীর্ঘ সময়। তাই তৎকালীন সরকার সময় ও খরচ বাঁচতে এখানে খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখা ও দ্রুত সময়ে ডেলিভারি দেয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া রেলস্টেশন থেকে খানপুর, তল্লা, হাজীগঞ্জ, পাঠানটুলির ভেতর দিয়ে “বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.)” পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করে রেলপথে খাদ্যসামগ্রী-সহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া শুরু করে।

তারপর এই সংস্থার সন্নিকটে থাকা গোদনাইলস্থ “বিজেএমসি” জুট প্রেস কর্তৃপক্ষও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দ্রুত সময়ে কম খরচে পাট আনা-নেওয়ার জন্য রেল সংযোগ স্থাপন করে। পরবর্তীতে এশিয়ার সেরা আদমজী জুট মিলস কর্তৃপক্ষও তাদের সুবিধা মাথায় রেখে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে, রেল কর্তৃপক্ষ আদমজী জুট মিলেও রেল সংযোগ দিয়ে দেয়।

তারপর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার “সাইলো” বা “সেলো” বা ‘বিশ্ব গোডাউনে’র জন্যও রেল সংযোগ স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে অনেক বছর পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.), বিজেএমসি, আদমজী জুট মিলস ও সাইলো বা সেলো বা বিশ্ব গোডাউন’এ পণ্যবাহী রেল নিয়মিত যাতায়াত করতো।

দেশ স্বাধীন হবার পরও ১৯৮৬-৮৭ সাল পর্যন্ত এই রেলপথে পণ্যবাহী রেল চলাচল করতে নিজেও দেখেছি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর আর এই রেলপথে পণ্যবাহী রেল চলাচল করতে আর দেখা যায়নি। কিন্তু রেললাইন ঠিকই থেকে যায়।

তারপর আস্তে আস্তে যখন দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে আর নারায়ণগঞ্জ শহরে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান হুহু করে বাড়তে থাকে, তখনই দেশের বিভিন্ন জেলা-শহর থেকে কর্মজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায় আসতে শুরু করে। আসতে থাকা কিছু মানুষ থাকতে শুরু করে ভাড়া বাসায়, কিছু মানুষ থাকতে থাকে রেল লাইনের পাশে বস্তি বানিয়ে।

বিভিন্ন জেলা-শহর থেকে আসা মানুষের সাথে কিছু স্থানীয় বাসিন্দারাও যার যার বাড়ির সামনে রেল লাইনের পাশে পরিত্যক্ত জায়গা ও জলাশয় দখলে নিয়ে যারযার মতো করে ঘরবাড়ি দোকানপাট গড়ে তুলতে শুরু করে। এভাবে একসময় নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া হতে সিদ্ধিরগঞ্জ বিশ্ব গোডাউন পর্যন্ত পুরো রেললাইনের দুই পাশ বেদখল হয়ে পড়ে এবং রেল লাইনের পাশে গড়ে ওঠা ঐসব বস্তি ঘরগুলো পরিনত হয় একেক জনের একেকটা বাড়িতে। সেসব ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট নিজেদেরই মনে করে থাকতে থাকে বছরের পর বছর।

এতো বছর পর যখন গত ২৫ মে (মঙ্গলবার) ২০২১ইং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে নতুন সড়কের নামকরণ-সহ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, তখনই রেল লাইনের জায়গা দখল করা ব্যক্তি মালিকদের মাথায় পড়ে বজ্রপাত। কারো কারোর আগামী দিনের সমস্ত স্বপ্ন মুহূর্তে হয়ে যায় ধূলিস্যাৎ। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে। কাউকে আবার বলতে শোনা যায়, “এ দেশে ভিনদেশ থেকে আসা মানুষেরা বাসস্থান পায়, অথচ আমরা দেশের ভূমিহীন নাগরিকরা হচ্ছি উচ্ছেদের শিকার। যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের মাঝে শতশত বাড়ি বিতরণ করছে, সেখানে আমাদের উচ্ছেদ করে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে সাগরে।”

তো যে যা-ই বলুক, এতে কারোর তো কিছুই করার নেই। কারণ, গতবছর থেকে অর্থাৎ ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই রেল কর্তৃপক্ষ চাষাঢ়া হতে সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী ইপিজেড পর্যন্ত রেললাইনের দুপাশ মাপ-জোপ করে লাল চিহ্ন দিয়ে দেয়। তারপর মাইকিং করে লাল চিহ্নিত জায়গা ও জলাশয় খালি করতে বলা হয়। এর কিছুদিন পরপরই খানপুর সংলগ্ন চাষাঢ়া চাঁনমারি থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত শুরু হয় উচ্ছেদ। অপরদিকে আদমজী ইপিজেড থেকে ২নং ঢাকেশ্বরী বাজার সংলগ্ন পর্যন্তও শুরু হয় উচ্ছেদ। উচ্ছেদের পরপরই দুই সাইটে দ্রুতগতিতে চলতে থাকে নতুন সড়কের নির্মাণ কাজ। বাদ থেকে যায় গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি, পাঠানটুলি, রসূলবাগ পর্যন্ত।

নতুন সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রথমে করা হয় মাইকিং। তারপর হাতে হাতে বিলি করা হয় নোটিশ। বেঁধে দেয়া হয় ২২/০৩/২০২২ইং তারিখ পর্যন্ত সময়সীমা। গত ২৩/০৩/২০২২ ইং তারিখ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও উচ্ছেদ করতে পারেননি। আবার দেয়া হয় ৭দিনের সময়। তারপরও অনেকেই যার যার দখল করা জায়গার মায়া ছাড়তে পারছিলেন না।এরপর গত ০১/০৪/২০২২ইং তারিখ বেলা তিনটা থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এখন পুরো রেল লাইনের দুপাশে বসবাস করা অনেকেই বলছে, “কী আর করা! সরকারের জায়গা তো সরকার নিবেই, এটাই তো নিয়ম!”

আর সেই নিয়মেই চলছে দ্রুতগতিতে উচ্ছেদ অভিযান ও ভাষা সৈনিক “বেগম নাগিনা জোহা সড়ক” এর নির্মাণ কাজ। আশা করা যায় আগামী বছরই এই সড়ক দিয়ে দিন-রাত যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে মনে হয়।

উল্লেখ্য, ভাষা সৈনিক “বেগম নাগিনা জোহা” ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং প্রাক্তন গণপরিষদ ও সংসদ সদস্য, স্বাধীনতা (মরণোত্তর) পদকপ্রাপ্ত এ কে এম শামসুজ্জোহার সহধর্মিণী এবং নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা এ কে এম শামীম ওসমান’র মা।

খাদ্য উৎসব ও কেনাকাটার উন্মাদনাঃ রমজানে সংযত হোন

salo_15

রমজানে সংযত হোন। বর্জন করুন খাদ্য উৎসব ও কেনাকাটার উন্মাদনা। খাবার বা ভুরিভোজের চেয়ে এই এবাদত টা জরুরী। খাদ্য উৎসবের চাপে আমরা ভুলেই যাই যে ইফতার ও সেহেরী একটা এবাদত!
নবীজি সা: বলেছেন–
ইফতারের আগ মূহূর্ত হচ্ছে দোয়া কবুলের উত্তম সময়। আল্লাহ এ। সময় অন্তত একটা দোয়া কবুল করবেনই।

তাহলে কেন আমরা এই সুযোগ গ্রহণ করবো না?
সারা বছর গুনাহগারি করেছি
অনন্ত এই রমজান মাসে সেটা কিছুটা তো মাপ করাতে পারি।
দুনিয়ার মিথ্যা নেতাদের খুশি করতে আমাদের তোষামোদ আমাদের চেষ্টার কোন অভাব নাই। এসব নেতারা কি করবে?
বড় জোর দু দিন আরাম আয়েশ করা ছাড়া আর কোন উপকারে আসবে না।
আমাদের উচিত অন্তত রমজান মাসে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া-
কারন –
আল্লাহই একমাত্র রিজিক দাতা।
আল্লাহই একমাত্র সম্মান দাতা।
আল্লাহই একমাত্র আশ্রয় দাতা।

আসুন রোজাকে আরেকটু ভাল করে জেনে নিই-
রোজার ব্যাপারে কয়েকটি ভুল ধারণা :

ইসলামের যে নির্দেশনাগুলো শত শত বছর ধরে প্রতিপালিত হতে হতে একসময় সংস্কৃতিরও অংশ হয়ে গেছে, রোজা তার একটি। তবে সংস্কৃতি করণের এই প্রক্রিয়ায় মাঝে মাঝে এখানে ঢুকে গেছে নানারকম অবিদ্যা বা ভুল ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি। ধর্মের মূল নির্যাস থেকে যেমন তা সরে গেছে, তেমনি আচারসর্বস্ব এই চর্চার ফলে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে রোজার শারীরিক মানসিক, আত্মিক উপকার থেকে। তেমনি কিছু ভুল ধারণা নিয়েই এ সংকলন-

রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয়
সাধারণ একটি ধারণা হলো রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয়। দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এই ভয়ে কেউ কেউ রোজা রাখেন না, বিশেষ করে যারা নিজেদেরকে মনে করেন, শারীরিকভাবে দুর্বল। অনেকে হয়তো রমজানের প্রথম কয়েকদিন রাখেন। পরের দিকে আর রাখেন না। আবার বিরতি দিয়ে রোজা রাখার প্রবণতাও আছে কারো কারো।

অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে, রোজা এনার্জি লেভেলকে বাড়িয়ে দেয়। বরং এই যে সবসময় খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে থাকা- বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে নিজের অজান্তেই আপনি আপনার দেহকে ঠেলে দিচ্ছেন ভয়ঙ্কর কিছু শারীরিক ঝুঁকির দিকে! ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলা যাক।

আমাদের দেহে আইজিএফ-১ হরমোন নামে এক ধরনের গ্রোথ হরমোন আছে যার কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোষ তৈরি করে দেহকে বাড়ন্ত রাখা। এসময় পুরনো কোষের মেরামত বা ক্ষয়পূরণের চেয়ে নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়াই বেশি সক্রিয় থাকে।

আপনি যত বেশি খাবেন, বিশেষত প্রোটিন জাতীয় খাবার, তত বেশি আপনার দেহ আইজিএফ-১ তৈরি করবে। সবসময় যখন এমন একটা অবস্থা থাকে, অর্থাৎ কোনো বিরতি বা বিশ্রাম ছাড়া প্রতিনিয়ত নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়া- এই সুযোগেই দেহে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের মতো মারণ ব্যাধিগুলো। কয়েক ধরনের ক্যান্সার, যেমন, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের সাথে বিজ্ঞানীরা উচ্চমাত্রার আইজিএফ-১ এর যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা বলেন, এই অবস্থাকে পাল্টে দিতেই তাই মাঝে মাঝে খাবার থেকে দেহকে অব্যাহতি দেয়া দরকার। একটা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ঝুঁকি পূর্ণ মাত্রায় দেহে আইজিএফ-১ হরমোন আছে, এমন একজন মানুষ মাত্র তিন দিন উপবাস করে তা নামিয়ে ফেলেছেন অর্ধেকে! ডাক্তাররা তাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তার প্রবল। কিন্তু আইজিএফ-এর মাত্রা কমে যাওয়ায়, এখন কমে গেল সে ঝুঁকিও।

সেহরিতে বেশি করে খেতে হবে
আমরা কেউ কেউ মনে করি, এত বড় একটা দিন রোজা রাখতে হবে! যত বেশি খেয়ে নেয়া যায়, তত ভালো! ফলে সেহরিতে রাখি ভূরিভোজের ব্যবস্থা – গরুর গোশত, মাছ, মুরগি, ভাত-সবজি, দুধ, ফল, চা-কফি, ডেজার্ট ইত্যাদি দিয়ে এলাহি কাণ্ড। অথচ সুস্থ রোজার চর্চায় এর চেয়ে ভ্রান্তির আর কিছু নেই।

প্রথমত, রোজা রেখে আপনি পানি খেতে পারছেন না। আর প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রক্রিয়াজাত করতে দেহে লাগে প্রচুর পানি। ফলে সেহরিতে এসব খাবার যত বেশি খাবেন, আপনার তৃষ্ণা পাবে বেশি, অস্বস্তিবোধ হবে বেশি।

দ্বিতীয়ত, সুস্থ থাকার সাথে আসলে বেশি খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ১০৫ বছর বয়সী ফৌজা সিং। সবচেয়ে বেশি বয়সী ম্যারাথন দৌড়বিদ হিসেবে বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী। ২০১৩ সালে অবসর নেয়ার আগে হংকংয়ের যে ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় শেষবারের মতো ফৌজা সিং অংশ নেন, সেখানে ১০ কিমি দৌড়েছেন তিনি মাত্র ১ ঘণ্টা ৩২ মিনিটে, ১০২ বছর বয়সে! আজ পর্যন্ত তার দেহে কোনো অপারেশন হয়নি, হৃদরোগ নেই তার, কখনো তিনি কোনো ওষুধ খান নি।

এই সুস্থ দীর্ঘজীবনের রহস্য কী? কোনো বিশেষ খাবার-দাবার? না, বরং পাঞ্জাবের এক সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে আসা ফৌজা সিংয়ের খাবার খুবই সাধারণ – কাঁচা ফল, সবজি, নিরামিষ। কিন্তু তার রহস্যটা হলো খাবারের পরিমাণ! একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে যে পরিমাণ খায়, ফৌজা সিং খান তার অর্ধেক। অর্থাৎ একটি শিশু যে পরিমাণ খায়, অনেকটা সে পরিমাণ!

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যে রোজা ক্ষতিকর
ডায়াবেটিস রোগীদের যেহেতু নিয়ম করে খেতে হয়, তাই ডায়াবেটিস থাকলে রোজা রাখা যাবে কি না- এ নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।

তার আগে আমাদের একটু বুঝতে হবে, ডায়াবেটিস মানে কী? খুব সহজ ভাষায় বললে, আপনার ডায়াবেটিস হওয়া মানে হলো, আপনার জন্যে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন আর আপনার দেহ তৈরি করতে পারছে না। আর এটা তখন হয়, যখন প্রচুর খাওয়া-দাওয়ার কারণে অতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরি হতে থাকে এবং নিয়মিত তা পেতে পেতে অলস এবং তৃপ্ত কোষগুলো একসময় ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়।

কিন্তু আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এজিংয়ের নিউরো সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রধান ড. মার্ক ম্যাটসন তার এক গবেষণায় দেখেন উপবাস বা খাবার না খাওয়া এক্ষেত্রে চমকপ্রদ কিছু ফল দেখাচ্ছে। তার এ গবেষণায় তিনি ইঁদুর ব্যবহার করেছিলেন। ইঁদুরগুলোকে তিনি দুভাগ করেন। এক ভাগকে মাঝে মাঝে না খাইয়ে রাখতে লাগলেন। আর এক ভাগকে নিয়মিতভাবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এবং চিনি মেশানো পানি দিয়ে গেলেন। দেখা গেল মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকার ফলে সংশ্লিষ্ট ইঁদুরগুলোর দেহে ইনসুলিনের সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়ছে। আর এতে করে তাদের কোষগুলো সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে এবং বেড়েছে মেটাবলিজম। আর যে-দেহে এ অবস্থা বিরাজ করে, সে-দেহে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যায়।

আলসার থাকলে রোজা রাখা যায় না
আলসার রোগীদের একটা ধারণা আছে যে, তারা রোজা রাখতে পারবেন না। কারণ রোজাতে দীর্ঘ না খাওয়া, তাদের আলসার বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু কোনো কোনো আলসার, যেমন, পেপটিক আলসারের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসাই হলো রোজা। কারণ খাওয়ার পর একজন মানুষের পাকস্থলীতে যে এসিড নিঃসরণ হয়, রোজার সময় তা কমে যায়। কারণ তখন সে না খেয়ে থাকে। যে কারণে রোজা রাখলে পেপটিক আলসারের রোগীদের সমস্যাগুলো অনেক কমে যায়।

রোজার মাসে খাবারের কোনো হিসাব নাই
একটা ধারণা সাধারণভাবে প্রচলিত আছে যে, রোজার মাসে খাবারের কোনো হিসাব নাই। অর্থাৎ রোজা রাখার পর ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত একজন মুসলমান হালাল হলে যে-কোনো খাবার- যত খুশি খেতে পারে, আকণ্ঠ পান করতে পারে। ধর্মে তাকে এই ছাড় দেয়া হয়েছে। আর এই অবিদ্যা প্রসূত ধারণারই ফসল হলো – অন্য সময় আমরা যা খাই, রোজার সময় তার চেয়ে বেশি খাই। অন্য সময় যদি দুবেলা খাই (কারণ অনেকেই নাশতা বা দুপুরের খাবার যে-কোনো একটা খুব হালকা করেন), তো রোজার মাসে খাই তিনবেলা। ইফতারে ভূরিভোজ, তারপর ডিনার এবং শেষরাতে ভরপেট সেহরি। রোজার মাসে আমাদের খরচ বেড়ে যায়, বাড়ে দ্রব্যমূল্য। আর ব্যবসায়ীরাও এ সুযোগে আয়োজন করেন রমজান ফেস্টিভাল, ইফতার ফেস্টিভাল (!) ইত্যাদি। অর্থাৎ খাদ্য সংযমের একটি পবিত্র ধর্ম বিধানকে আমরা রূপান্তরিত করেছি খাদ্য উৎসবের আয়োজনে!

কিন্তু ধর্ম কি তা বলে? রমজানের যে আরবি প্রতিশব্দ ‘সিয়াম’- সেই সিয়ামের আক্ষরিক অর্থই হলো ‘সংযম’। এবং এ সংযম শুধু খাবার বা পানি থেকে সংযম নয়, এটা চিন্তায়, কথায়, আচরণে – সবক্ষেত্রেই। কাজেই যুক্তি বলে, রমজানের এই একমাসের সংযম চর্চা একজন মানুষের ভোজন প্রবণতাকে কমাবে, তার বাড়তি ওজন কমবে, কমবে খাওয়াবাবদ তার খরচ। যদি তা না হয়, তাহলে বুঝতে হবে রোজার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই তার ভ্রান্তি আছে।

ইফতার আর সেহরি পার্টি!
পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার শিকার হয়ে আমরা অনেকেই এখন পণ্যদাস। পণ্য দিয়েই আমরা মাপি আমাদের স্ট্যাটাস, ভালো থাকা, খারাপ থাকা ইত্যাদি। এর এ প্রক্রিয়ারই নতুন সংযোজন হিসেবে এখন আমরা হয়ে উঠছি ভোজনদাস। বুফে ডিনার, বুফে লাঞ্চ, দামী আইসক্রিম শপ, পিজা আর ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে বন্ধুবান্ধব পরিবারকে নিয়ে যাওয়া আর ফেসবুকে সে ছবি আপলোড করাই আমাদের কারো কারো স্ট্যাটাস বাড়ানোর উপায়!

ইফতার আর সেহরি পার্টি এই ভোজনদাসত্বেরই আরেকটি ধর্মীয় ভার্সন! অর্থাৎ ধর্মের নামে হলেও এ পার্টিগুলোতে খাবার-দাবার নিয়ে যে বিলাসিতা হয়, তার সাথে কি ধর্মের মিল আছে! নবীজী (স) কীভাবে ইফতার করতেন!

হযরত আনাস ইবনে মালিকের (রা) বর্ণনা থেকে জানা যায়, নবীজি (স) ইফতার করতেন তাজা খেজুর দিয়ে। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। আর যদি তাও না পাওয়া যেত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে। এরপর তিনি মাগরিবের নামাজ পড়ে নিতেন।

আর ভোজন দাসত্বের সাম্প্রতিক সংযোজন হলো সেহরি পার্টি। অভিজাত এলাকার হোটেলগুলো এখন সেহরির সময় খোলা থাকে! ব্যাপারটা এমন নয় যে, বাসায় রান্না করার সুবিধে নেই, তাই হোটেলে সেহরি খেতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের জন্যে এটা। বরং এটা তথাকথিত অভিজাত বিলাসবহুল হোটেল-রেস্টুরেন্টের কথা যেখানে দলবেঁধে সেহরি খাওয়ার নামে বিপুল অর্থ খরচ করে এসে একশ্রেণীর মানুষ তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন এই ভেবে যে, তার স্ট্যাটাস বাড়ানো গেছে!

হযরত আনাস ইবনে মালিকেরই আরেকটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, একবার নবীজী (সঃ) সেহরির সময় তাকে বললেন, আনাস আমি রোজা রাখার নিয়ত করেছি। আমাকে কিছু খাবার দাও। আনাস (রা) তখন তাকে কয়েকটি খেজুর আর একটা পাত্রে পানি দিলেন! নবীজী (স) তাই খেলেন।

তার উম্মত হিসেবে তার বিধিবিধান অনুসরণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
আসুন সবাই সবার জন্য প্রার্থনা করি- আল্লাহ সকলের সহায় হোন।

দাউদুল ইসলাম।

অটিজমঃ বিকশিত হোক সব প্রতিভা

16489

অটিজম হচ্ছে স্নায়ুর বিকাশজনিত মানসিক ও শারিরীক একটি রোগ। যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্থ করে। অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হয়। ২০২২ সালের অটিজম দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, “এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি। অর্থাৎ অটিস্টিক ব্যক্তিদের জন্য আমাদের এমন পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যেন তারা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে সমাজের আর দশজনের মতো তাদের প্রতিভা বিকশিত করতে পারে। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই এই রোগ সম্পর্কে অসচেতন। তাই এই রোগ সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই জরুরী।

অটিজম সমস্যা কীঃ
অটিজম হচ্ছে শিশুদের স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা সম্পর্কিত একটি রোগ। যে রোগে আক্রান্ত হলে একটি শিশু তার সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়। তার চারপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বা ইশারা ইংগিতের মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পারে না। মোটকথা যে সমস্যা একটি শিশুকে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে অপূর্ণ করে তাকে অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলে। যদিও অটিজমকে অনেকে মানসিক রোগ মনে করে কিন্তু এটা মানসিক রোগ নয়।

কী কারণে অটিজম হতে পারেঃ
অটিজম স্নায়ুবিকাশ জনিত রোগ হলেও এই রোগের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো কারণকে দায়ী করা যায় না। তবে গর্ভাবস্থার কিছু কিছু বিষয়কে অটিজমের কারণ হিসেবে দেখা হয়। গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা করা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত ঔষধ সেবন, মায়ের ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস। গর্ভকালীন সংক্রমণ যেমনঃ মাম্পস, রুবেলা, মিসেলস ইত্যাদি হওয়া।

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মায়ের সাথে পরিবারের সম্পর্কের ঘাটতি থাকা, দুশ্চিন্তা করা, বিষণ্ণতায় থাকা, মৃগীরোগ, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, বাইপোলার ডিসঅর্ডার সিজোফ্রেনিয়া, হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার ইত্যাদিকেও অটিজমের কারণ হিসাবে দেখা হয়।

অটিজমের লক্ষণ সমূহঃ
খুব ছোট থেকেই অটিজমের লক্ষণ গুলো শিশুদের মধ্যে প্রকাশ পায়। বিশেষকরে শিশু তার এক বছর বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা বা বোল উচ্চারণ করতে না পারা। দেড় বছরের মধ্যে একটি শব্দও বলতে না পারা। দুই বছরের মধ্যে দুই বা তিন শব্দের অর্থবোধক বাক্য না বলা। কিংবা কিছু শেখার পর আবার ভুলে যাওয়া। কিংবা বাচ্চা যদি তার পছন্দের বস্তুর দিকে ইশারা ইংগিত করতে না পারা। বাচ্চার বয়স অনুযায়ী সামাজিক আচরণ করতে না পারা ইত্যাদি হচ্ছে অটিজমের খুবই প্রাথমিক কিছু লক্ষণ।

উপরোক্ত প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর পাশাপাশি যদি দেখা যায় আসলেই শিশুর ভাষা শিখতে সমস্যা হচ্ছে, বা একেবারেই মা–মা, বা–বা, চা–চা, ইত্যাদি এই জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করতে পারছে না। সেইসাথে কারো চোখের দিকে চোখ রাখতে পারছে না। বা নাম ধরে ডাকলে সাড়া দিচ্ছে না। কিংবা সমবয়সী কারো সাথে মিশতে পারছে না বা মিশতে চাইছে না। কেউ আদর করতে চাইলে তা নিতে না পারা। হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া। অন্যের শোনা কথা বারবার বলা। বা যেকোনো বিষয়ে একই আচরণ বার বার করা হচ্ছে অটিজমের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এইসব লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে শিশুকে অতিদ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

পারিবারিক ভূমিকাঃ
অটিজম আক্রান্ত শিশু ও ব্যক্তির সুস্থতার জন্য পরিবার ও সমাজের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন পরিবারের অকৃত্রিম ভালোবাসা। তাই রোগ নির্ণয়ের সাথে সাথে পরিবারকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। এই রোগ থেকে একমাত্র বাবা-মাই তার সন্তানকে যতটুকু সম্ভব সুস্থ করতে পারে। তাই বাবা-মাকে অটিজমের উপর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিতে হবে যাতে শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তনের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

একইসাথে স্কুলে ও বাড়িতে শিশুকে যাবতীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে করে শিশুটি সামাজিক ও পারিবারিক রীতিনীতি শেখার চেষ্টা করতে পারে। বিশেষকরে সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিশুকে সবার সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দিতে হবে।

এছাড়াও যে কাজ গুলো শিশু করতে আগ্রহী এবং যা সে ভালো করে করতে পারে, তাকে সেই কাজ বেশী বেশী করার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। বিশেষ করে ছবি আঁকা, গান গাওয়া, খেলাধুলা ইত্যাদির প্রতি তার আকর্ষণ বাড়াতে হবে। সেইসাথে শুরু থেকেই শিশুকে মূলধারার স্কুলে পাঠাতে হবে। যাতে সে নিজেকে সকলের সাথে মিশতে উপযোগী করতে পারে। একইভা‌বে স্কুলের শিক্ষক, চিকিৎসক এবং থেরাপিস্ট সকলকে একযোগে চিকিৎসার জন্য কাজ করতে হবে।

সামাজিক ভূমিকাঃ
পরিবারের পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুদের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা ও কর্মকাণ্ড তাদের সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে সামাজিক লাঞ্চনা এবং অবহেলার কারণে পরিবার থেকেই অটিস্টিকদের সবার থেকে আড়াল রাখে। যা শিশুদের সুস্থ হওয়ার অন্তরায়। তাই আড়াল না করে সামাজিকভাবে এই রোগীদের প্রতি ভালোবাসা ও আস্থা দেওয়া উচিত। যাতে তারা সামাজিকভাবে সকলের সাথে মেলামেশার সুযোগ পায়।

সেইসাথে তাদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা, হেয় প্রতিপন্ন বা অবাঞ্ছিত করা কখনোই উচিত নয়। সামাজিকভাবে তাদের অযোগ্যতাকে কখনোই প্রকাশ করা উচিত নয়। বরং তাদের নূন্যতম কাজেরও প্রসংশা এবং বাহবা দিতে হবে। যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরে তাদের গ্রহনযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। এতে করে তারাও সমাজের একটি অংশ হয়ে উঠতে পারবে। আর এভাবেই সকলের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা পেলে একটি অটিস্টিক শিশু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

রাষ্ট্রীয় ভূমিকাঃ
অটিস্টিক শিশুদের উন্নতির জন্য রাষ্ট্রের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হলো জনগণের মধ্যে অটিজম নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ অটিজম সম্পর্কে ধারণা পায়। সাধারণ মানুষেরা যখন অটিজম সম্পর্কে জানতে পারবে, তখন তারা রোগের শুরুতেই শিশুদের চিকিৎসা দিতে পারবে।

সচেতনতার পাশাপাশি অটিজমের চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। একইসাথে প্রতিটি হাসপাতালে অটিজম কর্ণার তৈরি করে চিকিৎসা দিতে হবে। ডাক্তারি চিকিৎসার চাইতে প্রশিক্ষণই এই রোগের মূল চিকিৎসা, তাই প্রতিটি শহরে অটিস্টিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।

যদিও ইতিমধ্যে সরকারি পর্যায়ে অটিজম নিয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷ যেমনঃ সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে মিরপুরে চালু হয়েছে ‘অটিজম রিসোর্স সেন্টার’৷ সেই সাথে যারা অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করেন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, অটিস্টিক শিশুদের অবস্থা পরিমাপ সহ আরও অন্যান্য প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠন করা হয়েছে ‘সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন’৷ এছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতালে রয়েছে ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’ ইত্যাদি।

বিকশিত হোক সব প্রতিভাঃ
২০২২ সালের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, “এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি।” অর্থাৎ অটিস্টিকদের জন্য এমন পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের দেওয়া উচিত, যাতে তারাও তাদের সুপ্ত প্রতিভা গুলো জনসমক্ষে নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারে। আর এভাবেই অটিজম আক্রান্তরা যাতে ধীরে ধীরে সুস্থ জীবনে ফিরে এসে কর্মক্ষেত্রেও প্রবেশ করতে পারবে। অটিস্টিকরা সমাজ এবং পরিবারের বোঝা নয়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সহযোগিতায় পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ পেলে একজন অটিস্টিকও হয়ে উঠতে পারে সমাজ এবং দেশের সম্পদ। অটিস্টিকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভার উন্নতি করে চাইলে কর্মক্ষেত্রেও যোগদান করতে পারে।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তাদের নিষ্প্রভ প্রতিভাকে বিকশিত করে সুস্থ সবল মানুষে রূপান্তরিত করাই হচ্ছে এই বছরের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। আর এভাবেই একজন অটিস্টিক যদি তার প্রতিভা বিকশিত করে সমাজের মূল ধারার সাথে মিশে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে সেটাই হচ্ছে বড় পাওয়া। সেই সাথে সকলের সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ধীরে ধীরে অটিস্টিকরা সুস্থ হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারলে, তা পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য হবে বড় পাওয়া

তাই আমাদের উচিত অটিস্টিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা। যদিও এই কাজে প্রচুর বাঁধা এবং প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবুও সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে এক সময় না এক সময় অবশ্যই সফলতা আসবে। সকলের সহযোগিতা আছে বলেই এখন অটিস্টিকরা পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। যদি এই সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখা যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই অটিস্টিকরাই হয়ে উঠবে দেশের সম্পদ।

অটিজম কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের একক সমস্যা নয়। অটিজম একটি জাতীয় সমস্যা। তাই এই সম্পর্কে সর্বস্তরের সচেতনতা খুবই জরুরী। সেই সাথে অনেক ক্ষেত্রে অনেক শিশু অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ নিয়ে জন্ম নিলেও সময়ের সাথে সাথে তা দূর হয়ে যায়। তাই কোন শিশু স্বভাবগতভাবে একটু বেশি অস্থির, চঞ্চল, রাগী ও জেদী প্রকৃতির হয়ে থাকলে তাকে অটিস্টিক মনে করা উচিত হবেনা। তাই প্রতিটি শিশুর প্রতি পরিপূর্ণ যত্নবান হওয়া উচিত। যাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ শিশুর মধ্যে প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২৮ মার্চ, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

চিঠি বিরহ (২)

প্রিয়তা
কেমন আছো ? আজো কি সেই আগের মতো লালগোলাপ খোপায় গাঁথ। তোমার রেশমী কোমল চুল গুলো ছেড়ে পায়চারী করো। সকালের সোনা রোদে ছুটে যাও বকুল তলায়। আমাকে তোমার মনে পড়ে কি প্রিয়তা?

তোমার দেয়া সেই রুমালটায় আজো তোমার গায়ের গন্ধ শুকে যাই। মনে হয় তুমি আমাকে জড়িয়ে আছো বটবৃক্ষের মতো। তোমার দেয়া স্মৃতি গুলো বার বার আমার মাঝে তোমাকে বিচরণ করে। মনে পড়ে সেই কবে কার ভরা বর্ষার ডাকাতীয়ার জলে নৌকায় করে ঘুরে বেড়িয়েছি তোমার বুকে শুয়ে। মৌনতা ভেঙ্গেছে তোমার কোমল আদর মাখা আহ্বানে, তোমার সুরে সুরে মিলিয়ে ছিল ডাহুকের পাল, আমি অপলক তোমার পানে চেয়ে চেয়ে কাটিয়েছি দিয়েছি সময়।

তুমি এখন হয়তো আর আমার কথা মনে করোনা ? অনেক সুখে হয়তো মানব কীট আমাকেই ভুলে গেছো। স্বামী, সন্তান সুখের সংসার অনেক ভালোই আছো। আমি সেই আগের মতো বকুল তলায় যাই, পাখিদের সাথে কথা বলি, রাতের প্রদীপ জোনাকি ভিড়ে মাঝে মাঝে জেগে থাকি, চাঁদের মৃদু জোছনায় তোমাকে খুঁজি। বুকের মাঝে একটুকরো ভালোবাসার রঙে তোমার ছবি আঁকি। অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিটি প্রহর হউক তোমার প্রজাপতির রঙীন পাখার মতো। আমি তোমার ভালোবাসার সুখে ! দুঃখের সাগরে ভেসে যাই অনবরত। তুমি ভালো থেকো, অনেক সুখে থেকো, আমি তোমার সুখেই হারাবো দুঃখ পালে। তোমার ভালোবাসার জনম ভিখারি।

চিঠি বিরহ ( চিঠি )

প্রিয় মৌমিতা,
কদিন হলো তোমার সাথে যোগাযোগ নেই। কেমন আছো তুমি? স্বামী সুখের সংসার আর নতুন পরিবেশ, সব মিলিয়ে ভালোই আছো? তোমার বাড়ির উঠোনের বকুল গাছটি আজো আছে? নাকি আমার মত অবহেলা অনাদরে মিলিয়ে গেছে? বকুলের ঘ্রাণ আজো আমায় আন্দোলিত করে, তোমায় খুঁজে যাই বকুলের ঘ্রাণে, মনে হয় তোমার শরীরী ঘ্রাণ, কতরাত ভোর হয়েছে বকুলের ছায়ায়। ছায়া ঘেরা শিরিষ গাছের ডালে কি বনমালীর দল কিচিরমিচির ডাকে? নাকি ওরাও তোমার মতো অভিমানে দূরের কোন যাত্রী হয়েছে। অথচ ওরাই ছিলো সময় অসময়ে। অন্ধকারে জোনাক গুলো কি এখন দল বেদে আসে উঠোনে, নাকি সোডিয়ামের উছল আলোয় হারিয়ে গেছে ? কতরাত ওরা আমাদের সঙ্গী ছিল তার হিসেব নেই। প্রভাতের সোনালী স্নিগ্ধ শিতল উষালগ্নে তোমার সাথে দেখা হতো শিউলি তলায়, প্রাণের তৃষ্ণার জলে ডুবে যেতাম অনাবিল উচ্ছ্বাসে। অজর বৃষ্টিজলে কদমের পাপড়ী ভাসিয়ে পুকুর জলে, ডাহুকের মতো ভিজেছি কাকভেজা। অথচ কদিন হলো, তুমি নিমিশেই সব ভুলেছো। যে তুমি আমাকে ছাড়া বাঁচবেনা বলে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছো, সবি ছিলো আমার সাথে ছলনা, আমি তোমাকে ছাড়া নিঃশব্দ বেঁচে আছি। রঙহীন স্বপ্নের ধূসরে মিলিয়ে গেছি। জীবনের বিবর্ণ সময়ের স্রোতে।

সময় অসময়ে জীবন নগর স্টেশন থেমে নেই, দুঃখের স্মৃতিভ্রম সৌজন্য শেষ প্রান্তিকযাত্রী আমি অনাদি কালের সাক্ষী।

আত্মোপলব্ধিবোধের খোঁজ

ভিখেরী দুয়ারে খাড়া
ভিক্ষা দিয়া বিদায় কর –
ও আমার ঘরের মালিকরে ….
ক্ষুধায় ভিখেরী মরলে কলঙ্ক তোর। ( উকিল মুন্সি)

জন্ম, মৃত্যু বিয়ে এই তিন অবধারিত সত্য। তবুও আমরা এগুলোকে অতিক্রম করতে চাই। ছোট ছোট সুখ দুঃখের সমষ্টিই জীবন। আশা আর হতাশার সংমিশ্রণই জীবনের সব আবেদন। আশার সাথে হতাশার আজীবন বন্ধুত্ব। তবে আমি হতাশ নই। জীবনে পেয়েছি অনেক হারিয়েছি খুব কম। যা হারিয়েছি তা ও ইচ্ছাকৃত। তাই দুঃখবোধ নেই। সংসার তো মায়াময় মোহ।এই মোহের ঘোরেই তো প্রতিটি জীবন দিনাতিপাত করছে। জীবন সব সময় জীবনের নিয়মে চলে কি? তাই এখন অন্তর্দহনে মর্মমূলেই নিজেকে খোজার চেষ্টা করছি। তাই হয়তো একটু অমনোযোগী নিয়মিত গণ্ডি থেকে। যা আপন ভেবেছি তা কি সত্যিই আমার আপন ? নাকি আমিই আমার নই ? তাই তো সাধকের বাণীতে নিজেকে খুঁজি ………

“তুমি আমার আমি তোমার
ভেবেছিলাম অন্তরে –
কেন ভালবেসে ছেড়ে গেলে আমারে
সোনা বন্ধুরে।
তুমি বন্ধু সুখে থাক এই মিনতি করি
নিদান কালে কে হবে মোর পাড়ের কাণ্ডারী” ?
( আত্মোপলব্ধিবোধের খোঁজ)
———-

পলাশ
১১/০৩/২০২২
দোহা, কাতার।

ঈমান কী?

1646757

“ঈমান” কী? এটা জানতে হলে আগে “ইসলাম” কী জানতে হবে। ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানে আনুগত্য করা। এই পরিপূর্ণ বিধানকে মুখে স্বীকৃতি, অন্তরে বিশ্বাস এবং কাজে পূর্ণ করাই হচ্ছে ঈমান। যার সহজ অর্থ হলো ইসলামের বিধানকে মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং সেইমতে কাজ করাই হচ্ছে ঈমান। যে এই কাজ অর্থাৎ ঈমান এনে ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল হয় তাকে বলা হয় মুসলিম।

ঈমানের ব্যাখ্যাঃ
ঈমান একটি গাছের তিনটি অংশের মতো অর্থাৎ শেখড়, মূল বৃক্ষ আর অসংখ্য শাখাপ্রশখা, ফুল-ফলে ইত্যাদিতে বিভক্ত। ঈমানের একটি অংশ হলো অন্তরের বিশ্বাস মাটির নীচে মূলের মতো। যা কেউ দেখে না। দ্বিতীয় অংশ মুখের স্বীকৃতি মূল কান্ডের মতো যা বাইরে থেকে দেখা যায়। তৃতীয় অংশ হলো আমল যা গাছের শাখাপ্রশখা মতো। যা দেখে গাছকে পরিপূর্ণ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত দেখায়।

কিছু কিছু বিশ্বাসের সমষ্টিকে ঈমান ধরা হয়। যেমন আল্লাহ্, মালাইকা বা ফিরিশতা, নবী রাসুল, সমস্ত আসমানী কিতাব, তকদীর, এবং মৃত্যুর পর উত্থান ও কিয়ামত ইত্যাদির সামগ্রিক বিশ্বাসই হচ্ছে ঈমান। একমাত্র আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করা, তাঁর বিভিন্ন কাজে লিপ্ত মালাইকাদের বিশ্বাস, আল্লাহ্ এই পর্যন্ত যত কিতাব পাঠিয়েছেন তাতে বিশ্বাস, এইপর্যন্ত যত নবী রাসুল (আঃ) পাঠিয়েছেন তাদের প্রতি বিশ্বাস, তকদীর তথা ভাগ্যে বিশ্বাস, মৃত্যুর পর উত্থান এবং কিয়ামতের হিসাব নিকাশের বিশ্বাসের সাথে মুখের স্বীকৃতি দেওয়াই হলো ঈমান।

ঈমানের মূলে কালেমাঃ
ঈমানের মূল ভিত্তি হলো কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” যে এই কালেমা পরিপূর্ণভাবে বুঝে বিশ্বাস এবং আমল করে তবেই তার ঈমান পূর্ণ হবে। সুতরাং ঈমান হলো বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানের আমল। কালেমাতে আল্লাহকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হলো আল্লাহর জাত, সিফাত এবং ইবাদতে কারো অংশীদার গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে কোনো কিছুতেই শরীক করা যাবে না। এটাই হচ্ছে মূল ঈমান। যা আমরা অনেকেই জানি বা বুঝি না। শুধু মুখে ও অন্তরে স্বীকার করে সালাত সিয়াম হজ্জ্ব যাকাত পালন করলেই ঈমানদার নয়।

বরং আল্লাহকে এবং তাঁর বিধানকে এমনভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি ছাড়া দুনিয়ায় আর কেউ তাঁর মতো নয়। অর্থাৎ তিনি যা পারেন তা কেউ পারেন না। এবং তাঁর বিধান ছাড়া আর কোনো বিধানে মাথা নত করা নয়। তিনি যা প্রাপ্য (ইবাদত) তা আর কেউ পেতে পারে না। এটাই হচ্ছে ঈমানের মূল বিষয়।

সুতরাং ঈমান হচ্ছে অবিচল বিশ্বাসের নাম। ওহীর মাধ্যমে জানা সকল সত্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। যেকোনো বিষয়কে শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে মেনে নেওয়া। সত্যের সাক্ষ্যদান এবং আরকানে ইসলাম পালন। নিজেকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে সমর্পণ করে শরিয়ত ও উসওয়ায়ে হাসানাকে গ্রহণ করা। ইসলামের বিধিবিধানের প্রতি আস্থা, ভালোবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা করা, পরিপূর্ণ তাওহীদ এবং শিরক বর্জিত বিশ্বাস করাই ঈমান। ঈমান শুধু গ্রহণ নয়, বর্জনও বটে। সত্যকে গ্রহণকরা আর বাতিলকে বর্জন করা। বিদ্রূপ ও অবজ্ঞা অস্বীকারের চেয়েও কুফরকে ঘৃণা এবং এর পরিনামকে ভয় করা ইত্যাদি।

ঈমানের ফল হচ্ছে আমলঃ
যারা কালেমা পড়ে নিজেদের ঈমানদার ঘোষণা দিবে। তাদের ঈমান পরিলক্ষিত হবে আমলের মাধ্যমে। গাছ যেমন শাখাপ্রশাখা পত্রপল্লব ছাড়া শুধু মূল এবং কান্ড দ্বারা পরিপূর্ণ হয় না। ঠিক তেমনি আমল ছাড়া মুখে স্বীকৃতি এবং অন্তরে বিশ্বাস দিয়ে ঈমানদার দাবি করা যায় না।

কারণ যারা মুনাফিক তাদের আমল নেই। তারা বাহিরে দেখায় আল্লাহকে স্বীকার করে কিন্তু সেই বিধান অনুযায়ী চলে না বা আমল করে না। অধিকাংশ মুসলমান আল্লাহকে স্বীকার করে। সালাত আদায় করতে হবে তাও জানে। কিন্তু কখনো সালাত আদায় করে না । তাহলে তারা কীভাবে ঈমানদার থাকলো? সুতরাং তারা কখনোই পরিপূর্ণ ঈমানদার নয়। প্রকৃত ঈমানদার হলো তারাই যারা আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে মানে বিশ্বাস করে এবং আমল করে।

ঈমানের স্বাদঃ
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে ঐ বৈশিষ্ট্যগুলো কারণে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। সে বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে- (ক) যার নিকট আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল (সাঃ) অন্য সবকিছু হতে সর্বাধিক প্রিয় হবে। (খ) যে ব্যক্তি কোনো বান্দাকে কেবল আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসবে। (গ) যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে কুফরি হতে মুক্তি লাভের পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে এভাবে অপছন্দ করে, যেভাবে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (সহীহ্ বুখারী: ২০, সহীহ্‌ মুসলিম:৪৩)

সুতরাং তারাই ঈমানের স্বাদ পাবে যারা সত্যিকারে আল্লাহ্ এবং রাসুলের (সাঃ) প্রতিষ্ঠিত বিধানের উপর পরিপূর্ণ অবিচল থাকতে পারবে মৃত্যু পর্যন্ত। সুতরাং মুখে বা অন্তরের স্বীকৃতি দিয়ে ঈমানদার হওয়া যাবে না। যে পর্যন্ত না সেই ঈমানকে আমল দ্বারা পরিপূর্ণ করা না হবে।

ঈমান বাড়ে কমেঃ
আল্লাহ বলেন,
“যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় (আল্লাহর) কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। “[ সুরা আনফাল ৮:২]

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ্‌র কিতাব ঈমানদারদের সামনে পড়া হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। এটা খুবই স্বাভাবিক। যখন কেউ ঈমান আমল ইহকাল পরকালের কথা শোনে তখন তাদের অন্তরে আল্লাহর প্রশান্তি এবং ভয় এসে আমলের ইচ্ছা জাগ্রত হয়। আবার যখন দুনিয়ার বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হয়ে যায় তখন সেই ইচ্ছায় ভাটা পরে যায়। সুতরাং মানবিক কারণেই মানুষের মধ্যে ঈমানের এই হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে।

ঈমান কীভাবে কমেঃ
বিভিন্ন কারণে মানুষের ঈমান কমে যায় বা যেতে পারে। যেমনঃ

১) আল্লাহর গুণাবলী নিয়ে চিন্তা চেতনা গবেষণা ইত্যাদি না করা। আমরা প্রতিনিয়ত শত হাজার পাপ করছি। এই পাপের কারণে তিনি আমাদের পাকড়াও না করে ছেড়ে দিচ্ছেন। এই যে ছেড়ে দিচ্ছেন বলে আমাদের একটি ধারণা হয়ে গেছে যে, আল্লাহ্ বোধহয় মানুষকে শাস্তি দিতে পারেন না। মনে হয় তাঁর সেই ক্ষমতা নেই (নাউযুবিল্লাহ)। এই ধরনের উদাসীনতা, তাঁর ক্ষমতার প্রতি চিন্তাহীনতা ইত্যাদি আমাদের ঈমান কমিয়ে দেয়।

২) আল্লাহর বিধান নিয়ে গবেষণা না করার কারণেও ঈমান কমে যায়। আমাদের কী কী পাপের জন্য কী কী শাস্তি হতে পারে। আল্লাহ আমাদের জন্য কী কী বিধান দিয়েছেন। কী কী বিধান মেনে চলা উচিত, কী কী অবাধ্যতার কারণে দুনিয়া আখিরাতে কী কী শাস্তি হতে পারে ইত্যাদি চিন্তা ভাবনা না করার কারণেও আমাদের ঈমান কমে যায়।

৩) অতিমাত্রায় পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া ঈমান কমে যাওয়ার লক্ষণ। জেনে না জেনে আল্লাহর বিধিবিধান তোয়াক্কা না করে যে পাপ গুলো আমরা করি, সেইসব পাপের কারণেও আমাদের ঈমান কমে যাচ্ছে। এই ঈমান কমে যাওয়ার ফল হচ্ছে আমাদের আমলের কমতি। আর আমল ছাড়া ঈমান কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা যে আল্লাহকে মানি এবং ভয় করি তার প্রমাণ হচ্ছে তাঁর বিধি -বিধান মেনে চলে তাঁর ভালোবাসার জন্য আশা করা।

ঈমান বৃদ্ধির উপায়ঃ
পবিত্র কুরআনের আলোকে আমরা জানি যে, ঈমানের হ্রাস বৃদ্ধি হয়। সুতরাং ঈমান বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় উপকরণ রয়েছে। যেমনঃ

১) আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলী নিয়ে গবেষণা করা। আমরা যদি সত্যিকারে বুঝতে পারি আল্লাহ্ কত অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন। তাহলে অবশ্যই আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ্‌র বিভিন্ন গুণ ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করলে আমাদের বিশ্বাস মজবুত হবে এবং ঈমান বৃদ্ধি পাবে।

২) আল্লাহর নিদর্শন দেখে গবেষণা করে ঈমান বৃদ্ধি করা। আমরা যদি আল্লাহর বিবি বিধান, আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা বা চিন্তা-ভাবনা করি তাহলেও আমাদের ঈমান বাড়বে। এইসব গবেষণা করলে আল্লাহকে আরও জানতে তথা ইসলামকে জানতে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। সেই আগ্রহ আমাদের ঈমান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

৩) সৎ আমল করা। আল্লাহকে ভয় এবং সন্তুষ্টি লাভের আশায় বেশী বেশী নেক আমল করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। যার ভিতরে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সৎ আমল বা ভালো কাজ করার প্রবণতা থাকবে, নিঃসন্দেহে তার ঈমান অন্যদের চেয়ে বেশী হবে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা গেলো যে, ঈমান কখনোই শুধুমাত্র স্বীকৃতির বিষয় নয়। যদি স্বীকৃতির বিষয় হতো তাহলে সকল নামধারী মুসলিম এবং মুনাফিকরাও ঈমাদার বলে গণ্য হবে। অথচ আল্লাহ বলেন –

“নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তোমরা তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না।” [ সুরা নিসা ৪:১৪৫ ]

অর্থাৎ শুধু মুখে ঈমান আনলেই মুমিন হওয়া যাবে না। যতক্ষণ না তা কাজে কর্মে পরিলক্ষিত না হবে। কেননা আল্লাহ্ বলেন,

“অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরক ও করে। ” (সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ১০৬)

অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস রেখে তাঁর সাথে শিরক করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে স্বীকার করে আবার শিরকও করে তাহলে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ বলেন,

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। “(সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৪৮)

অতএব আমাদের কালেমার প্রকৃত অর্থ এবং ব্যাখ্যা (তাওহীদ, শিরক, বিদআত ইত্যাদি) জেনে পরিপূর্ণভাবে বুঝে বিশ্বাস এবং সেই অনুযায়ী আমল করেই ঈমানদার হওয়া লাগবে।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
৩ মে, ২০২১
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

বেদনাবিধুর বসন্ত

274179

হৃদয় হন্তারক
চক্ষু!…
পলকে নিক্ষেপ করলো তীর, ফাগুনের সোমত্ত শিমুল- পলাশের বুকে!
আহ… রক্ত
রুদ্ধশ্বাসে
থমকে আছে
বসন্ত দুপুরে রোদ্দুর উষ্ণতা মাখা দখিনা বাতাস
মন কাড়ে না কোকিলের কুহু ডাকে;
জানি
সে-ও দেখে
বেদনাহত প্রজাপতির বারো হাজার চোখের ধূ ধূ
তিক্ত স্বর জাগা নীলকণ্ঠ
অবাক লাগে- ফুলের অভিসারে প্রজাপতির মৃত্যু!
অ লেখা কবিতার মর্মরে
মৌন বিলাপের সুর।….

অন্তিম সমাধিতে গহন লাগা চাঁদ
অন্তরে
চির প্রেমের অতৃপ্ত হাহাকার, বেদনাবিধুর বসন্ত!…

কাছাকাছি (গান)

যদি এই পথচলা থেমে যায়
তবে যেনো আমি আছি
তোমারই কাছাকাছি।
অজানা কোন ফুলের
পাপড়ীতে মিশে
তোমারই পাশাপশি।

হয়তো তুমি ব্যস্ত তখন
তোমারই খেয়ালে।
রঙীন স্বপ্ন গুলো এঁকে যাও
মনেরই দেয়ালে।
আমি তোমার স্পর্শে
তোমার ছাঁয়ায়।
তুমি ডুবে যাও আপরূপ
তোমার কায়ায়।

আনমনে কোন এক বিকেলে
উদ্দেশ্যহীন অভিযান।
তোমার স্পর্শে ভুলে যাবো
সব অভিমান।
হয়তো তুমি ব্যস্ত তখন
তোমারই খেয়ালে।
রঙীন স্বপ্ন গুলো এঁকে যাও
মনেরই দেয়ালে।

যুদ্ধ ২

274572

বিগত শতকের গোড়ার থেকেই বদলে যাচ্ছিল আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সমীকরণ। পাল্টে যাচ্ছিল সেই প্রাচীন সিল্ক রুট নীতির বাণিজ্যিক গতিপথ। প্রাচীন রাশিয়াতে অভ্যুত্থান, ইউরোপের দেশগুলোতে একের পর এক বিভিন্ন শাখায় আবিষ্কার, ক্রমশঃ অবক্ষয়িত সামন্তবাদের শ্বাস উঠতে শুরু করেছিল। তখনই বিশ্বজুড়ে আবার একটা মহামারীর কবলে পড়ল মানুষ।

“The 1918 influenza pandemic was the most severe pandemic in recent history. It was caused by an H1N1 virus with genes of avian origin. Although there is not universal consensus regarding where the virus originated, it spread worldwide during 1918-1919. In the United States, it was first identified in military personnel in spring 1918. It is estimated that about 500 million people or one-third of the world’s population became infected with this virus. The number of deaths was estimated to be at least 50 million worldwide with about 675,000 occurring in the United States.”

সদ্য চার বছর ধরে চলা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। ১৮৫৫ র বিধ্বংসী প্লেগ দেখেছি পৃথিবী। যা সামলাতে প্রায় পঞ্চাশ বছর লেগেছিল। কিন্তু তার ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই সামন্তবাদের প্রতি ধাক্কা এবং সেই সীমানা দখলের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ল তখনকার ঔপনিবেশিক বিশ্ব। জার্মানিকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সব দেশ, আমেরিকা, এশিয়ার কিছু দেশ জড়িয়ে গেল যুদ্ধে। চার বছর তিন মাস দু সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধের ফল জার্মানির পরাজয়।

কিন্তু সীমানা দখল বা সম্পদ দখলের এই যুদ্ধের ধাক্কা সামলানোর আগেই আছড়ে পড়ল স্প্যানিশ ফ্লু নামের জীবাণু। কাতারে কাতারে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। আর একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গেল উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো। একে সামাল দেওয়ার জন্য চললো একের পর এক পরিকল্পনা। নতুন উপনিবেশ করার জায়গা আর নেই। সুতরাং পরাজিতের সম্পত্তি দখল করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা। অথচ সব আশার আগুনে জল ঢেলে দিয়ে ১৯৩২ থেকে পৃথিবী পড়ল ভয়ঙ্কর আর্থিক মন্দার কবলে।

‘The Great Depression lasted from 1929 to 1939 and was the worst economic downturn in history. By 1933, 15 million Americans were unemployed, 20,000 companies went bankrupt and a majority of American banks failed.’

এই লেখা যখন লিখছি তখন একটা যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে। ঝলসে উঠছে রাত ও দিনের আকাশ। না আমাদের দেশে নয়। কিন্তু আজকের গ্লোবালাইজেশনের যুগে পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে যুদ্ধ বাধলে তার প্রভাব সারা গোলোক জুড়েই পড়ে। এখানেও পড়বে। আর সেদিনও তাই পড়েছিল উন্নত দেশগুলোর বাজারে।

সত্যি বলতে কি, ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসা বাজার উন্নত দেশগুলোর অর্থব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিল সেদিন। একদিকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া তার বাজারে নিষিদ্ধ করেছিল উন্নত দেশের প্রবেশ। অন্যদিকে উপনিবেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ, স্বদেশ প্রিয়তার ধোঁয়া উন্নত দেশের সামগ্রী বিক্রি সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসা অস্ত্র বিক্রি, তারপর ক্রমান্বয়ে গাড়ি বিক্রি, ওষুধ বিক্রি, কাপড় বিক্রি প্রায় তলানিতে ঠেকে গেছিল সেদিন। আর এক দিকে হিটলারের মত এক উন্মাদের একই ধরনের অর্থনৈতিক উন্নতি কামনার লোভ মস্ত সুযোগ এনে দিল উন্নত দেশদের। সামন্ততান্ত্রিক প্রভাব তখন প্রায় শূন্য। দেশের সব ধরনের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে ক্রমবর্ধমান পুঁজিবাজার। ফলে আর্থিক মন্দা সামাল দেবার জন্য সৃষ্টি হলো আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের।

সেদিনের সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ আজকের রাষ্ট্রসংঘের মতই ধৃতরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়েছিল। সত্যি বলতে কি বরাবর এটাই দেখা গেছে যে সব রাষ্ট্রের এই মিলিত সংঘ আসলে শক্তিশালী দেশের স্বার্থে তাদের অঙ্গুলিসঞ্চালনে চলে। আর তাই সেদিন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কিছুই করার ছিল না। যুদ্ধ হলো। উন্মাদ হিটলারের পতন হলো। পৃথিবীর তিন চতুর্থাংশ দেশ তখন বিধ্বস্ত সব দিক থেকেই। আবারও সেই আগের ভাগাভাগি। আবারও দুর্বল দেশের ওপরে সবলের লুট। সব ঠিক চলছিল। বাদ সাধলো ফের সেই আর্থিক মন্দা।

(চলবে)

যুদ্ধ ১

274572

আমরা চাই বা না চাই, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কারণ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো শুধুমাত্র বাজার ছাড়া আর কোনো মান্যতা রাখে না প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর কাছে। আর চোখ বুজে থেকে কেউ রাশিয়ার পক্ষে, কেউ ইউক্রেনের পক্ষে গলা ফাটিয়ে এটা ভাবতেই পারেন যে এই যুদ্ধ মাত্র দুটো দেশের আভ্যন্তরীণ সম্মানের প্রশ্ন থেকে শুরু ও শেষ। কিন্তু আসল ব্যাপার অত্যন্ত জটিল। আর শুধু এই যুদ্ধই নয় আজ পর্যন্ত সংঘটিত যে কোনো যুদ্ধের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অর্থনৈতিক লোভ।

একবার পিছনের দিকে তাকানো যাক। গোলাপের যুদ্ধ বা ক্রুশেডের যুদ্ধের মত বহু বছর ধরে চলা প্রাচীন যুদ্ধের আসল উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক দখলের সীমানা বাড়ানো, যার মাধ্যমে নিজের নিজের দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড় করানোর চেষ্টা। তখন উপনিবেশ থেকে যে সম্পদ লুঠ হতো তা নিজের পক্ষে আনার জন্যই ওইসব যুদ্ধের অবতারণা। আর সেই যুদ্ধ শুরু, চলা ও শেষের পেছনে ছিল রাজশক্তি। কিন্তু এই অবস্থা বদলে গেল বিংশ শতকের থেকে।

(চলবে)

একটা গরম কাপড় চাই

শীতের প্রকোপ বাড়ছে-
একটা গরম জামার বড্ড অভাব আজ,
শীতের তীব্রতায় মরমর দশা,
বেঁচে থাকার আয়োজনের সমীকরণ খুবই জটিল,
গৃহস্থের বাড়িতে সারাদিন খেটে তবেই আহার জুটে।
আদরের ছোট্ট মাণিকের খুবই কষ্ট,
মক্তব ঘরে যাওয়াতে জবুথুবু অবস্থা-
পরনের কাপড়েরই ঠিক নেই,
বড্ড শীতের প্রকোপ-বাছাধন নাজেহাল।
একটা গরম কাপড় চাই,
করজোড়ে মিনতি করছি আজি,
অবোধ বাছা আমার জানে না-
সমাজের ফাঁকফোকর,যত অবিচার।
হে দয়াবান স্রষ্টা,
কতিপয় মানুষে রহম করো-
তবেই মিলিবে গরম কাপড়,
বাছাধনের আর হবে না কষ্ট।
একটা গরম কাপড়ের বড্ড অভাব-
বড়ো বাবুদের শীত নিবারণে কত আয়োজন,
পশমি কাপড়ের নানা ধরণের জামা-
কম্বল সম্বল করে সহাস্য বিচরণ।
আমার বাছাধনের একটা কাপড় চাই,
গরীবের সংসারে জুটে না-রুটি,
বাবু মহাশয়,
একটু দয়া করো-পুরানো কিংবা নতুন,
গরম কাপড় হলেই বাঁচে বাছা,
এই শীত যাক চলে,
আগামীতে বেঁচে রইলে গৃহস্থের কাজের অর্থে-
কিনিবো গরম কাপড় বাছার তরে,
তবে দয়াময়ের দরবারে এই মিনতি,
আগামী শীত পর্যন্ত বাছাধন মোর যেন বেঁচে রয়।

Children of the stars

270205

আমাদের এই সৌরজগৎ
সৃষ্টি হয়েছে আজ থেকে
প্রায় (৪.৫) সাড়ে চারশ কোটি বছর পূর্বে।

এই সৌর জগত সৃষ্টি হয়েছে
বড় একটি হাইড্রোজেন নীহারিকা থেকে
ইংরেজিতে যাকে আমরা
প্রোটো সোলার নেবুলা বলে থাকি
আর বাংলায় গ্যাসীয় নীহারিকা বলি।

তারমধ্যে কিছু হিলিয়াম ছিল
তার মধ্যে কিছু ভারী মৌল পদার্থ ছিল
এই ভারী মৌল পদার্থ বলতে জ্যোতিষবিদ রা বলেন হিলিয়াম এর ওপরে থাকে
কার্বন, অক্সিজেন, প্লাটিনাম, লোহা…

ভারী পদার্থ হলো
নীহারিকার মধ্যে আগে বড় তারা ছিল
আর সেই তারাগুলো বিস্ফোরিত হয়
এবং বিস্ফোরিত হওয়ার আগে
সেই মৌল পদার্থগুলো সৃষ্টি হয়েছে
মানে একটি সংশ্লেষণ হয়েছে।

সূর্যের মধ্যে যে সমস্ত মৌলিক
পদার্থগুলো পাই সেগুলো এসেছে
পূর্বের ঘটে যাওয়া সুপারনোভা থেকে
পৃথিবীতে আমরা যা দিয়ে গঠিত
যেমন কার্বন, অক্সিজেন,নাইট্রোজেন
হাইড্রোজেন ইত্যাদি।

প্রকৃতির যত শক্তি যত উৎস
ওই একই নক্ষত্র, যে কারণে আমরা সাইডাস,
মানে হল আমরা নক্ষত্রের সন্তান
উল্কাপিন্ডের মাধ্যমে বয়ে আসা নক্ষত্রের সন্তান।

নিউক্লিয়ার ফিউশন এর মাধ্যমে
আমাদের এই সূর্যের যেভাবে উৎপত্তি হলো।
আমরাও সেরকমই একটি
ফিউশন এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছি।

কিন্তু সেটা অনেক জটিল কঠিন
স্তর পেরিয়ে নানা রকম প্রক্রিয়ার পর
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আজকের আধুনিক মানুষ।
পশুপাখি জীব জড়
যা কিছুই রয়েছে তার সবকিছুই
ওই নক্ষত্রের মৌল উপাদান।

আমরা সৃষ্টি হয়েছি
বেঁচে আছি এবং বেঁচে থাকছি
এমনকি এই সভ্যতার ভবিষ্যতেও বেঁচে থাকবে
এটা সম্ভব হয়েছে সূর্যের নির্দিষ্ট
একটি জায়গায় অবস্থানের কারণে।

সূর্যের ও একটি গল্প রয়েছে
যাকে একটি মুক্ত স্তবক বা যেটাকে বলা যায়
ওপেন ক্লাস্টার এখানেই সূর্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সেই সমস্ত তারার সংশ্লেষিত পদার্থ থেকে বা আগের সুপার্ণভা থেকে।

পৃথিবীর বয়স কিংবা মহাবিশ্ব সৃষ্টি
অথবা যাকে আমরা গ্যাসীয় নীহারিকা বলে থাকি
যে সমস্ত উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বুকে পতিত
হয়েছে তা থেকেই আমাদের
এই মহাবিশ্বের বয়স নির্ধারণ করা হয়।

ডিফারেন্সিয়াল রোটেশনে
সূর্য যেভাবে ঘুরে চলছে
এই ঘূর্নয়ন না থাকলেও পৃথিবী নামক
ইউনিক একটি জায়গায় আমরা
কোনভাবেই সৃষ্টি অথবা অবস্থান করতে পারতাম না।

পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের জন্য
যেভাবে ঋতু বদল ঘটে। সেভাবে
এখানে আমাদের জীবনের বদল ঘটেছে
সময়ের বদল ঘটেছে
এবং প্রকৃতির বদল এর মাধ্যমে
আমরা আজ এই পর্যায়ে অবস্থান করছি।