বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

অটিজমঃ বিকশিত হোক সব প্রতিভা

16489

অটিজম হচ্ছে স্নায়ুর বিকাশজনিত মানসিক ও শারিরীক একটি রোগ। যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্থ করে। অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হয়। ২০২২ সালের অটিজম দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, “এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি। অর্থাৎ অটিস্টিক ব্যক্তিদের জন্য আমাদের এমন পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যেন তারা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে সমাজের আর দশজনের মতো তাদের প্রতিভা বিকশিত করতে পারে। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই এই রোগ সম্পর্কে অসচেতন। তাই এই রোগ সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই জরুরী।

অটিজম সমস্যা কীঃ
অটিজম হচ্ছে শিশুদের স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা সম্পর্কিত একটি রোগ। যে রোগে আক্রান্ত হলে একটি শিশু তার সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়। তার চারপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বা ইশারা ইংগিতের মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পারে না। মোটকথা যে সমস্যা একটি শিশুকে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে অপূর্ণ করে তাকে অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলে। যদিও অটিজমকে অনেকে মানসিক রোগ মনে করে কিন্তু এটা মানসিক রোগ নয়।

কী কারণে অটিজম হতে পারেঃ
অটিজম স্নায়ুবিকাশ জনিত রোগ হলেও এই রোগের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো কারণকে দায়ী করা যায় না। তবে গর্ভাবস্থার কিছু কিছু বিষয়কে অটিজমের কারণ হিসেবে দেখা হয়। গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা করা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত ঔষধ সেবন, মায়ের ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস। গর্ভকালীন সংক্রমণ যেমনঃ মাম্পস, রুবেলা, মিসেলস ইত্যাদি হওয়া।

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মায়ের সাথে পরিবারের সম্পর্কের ঘাটতি থাকা, দুশ্চিন্তা করা, বিষণ্ণতায় থাকা, মৃগীরোগ, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, বাইপোলার ডিসঅর্ডার সিজোফ্রেনিয়া, হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার ইত্যাদিকেও অটিজমের কারণ হিসাবে দেখা হয়।

অটিজমের লক্ষণ সমূহঃ
খুব ছোট থেকেই অটিজমের লক্ষণ গুলো শিশুদের মধ্যে প্রকাশ পায়। বিশেষকরে শিশু তার এক বছর বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা বা বোল উচ্চারণ করতে না পারা। দেড় বছরের মধ্যে একটি শব্দও বলতে না পারা। দুই বছরের মধ্যে দুই বা তিন শব্দের অর্থবোধক বাক্য না বলা। কিংবা কিছু শেখার পর আবার ভুলে যাওয়া। কিংবা বাচ্চা যদি তার পছন্দের বস্তুর দিকে ইশারা ইংগিত করতে না পারা। বাচ্চার বয়স অনুযায়ী সামাজিক আচরণ করতে না পারা ইত্যাদি হচ্ছে অটিজমের খুবই প্রাথমিক কিছু লক্ষণ।

উপরোক্ত প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর পাশাপাশি যদি দেখা যায় আসলেই শিশুর ভাষা শিখতে সমস্যা হচ্ছে, বা একেবারেই মা–মা, বা–বা, চা–চা, ইত্যাদি এই জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করতে পারছে না। সেইসাথে কারো চোখের দিকে চোখ রাখতে পারছে না। বা নাম ধরে ডাকলে সাড়া দিচ্ছে না। কিংবা সমবয়সী কারো সাথে মিশতে পারছে না বা মিশতে চাইছে না। কেউ আদর করতে চাইলে তা নিতে না পারা। হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া। অন্যের শোনা কথা বারবার বলা। বা যেকোনো বিষয়ে একই আচরণ বার বার করা হচ্ছে অটিজমের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এইসব লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে শিশুকে অতিদ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

পারিবারিক ভূমিকাঃ
অটিজম আক্রান্ত শিশু ও ব্যক্তির সুস্থতার জন্য পরিবার ও সমাজের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন পরিবারের অকৃত্রিম ভালোবাসা। তাই রোগ নির্ণয়ের সাথে সাথে পরিবারকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। এই রোগ থেকে একমাত্র বাবা-মাই তার সন্তানকে যতটুকু সম্ভব সুস্থ করতে পারে। তাই বাবা-মাকে অটিজমের উপর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিতে হবে যাতে শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তনের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

একইসাথে স্কুলে ও বাড়িতে শিশুকে যাবতীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে করে শিশুটি সামাজিক ও পারিবারিক রীতিনীতি শেখার চেষ্টা করতে পারে। বিশেষকরে সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিশুকে সবার সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দিতে হবে।

এছাড়াও যে কাজ গুলো শিশু করতে আগ্রহী এবং যা সে ভালো করে করতে পারে, তাকে সেই কাজ বেশী বেশী করার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। বিশেষ করে ছবি আঁকা, গান গাওয়া, খেলাধুলা ইত্যাদির প্রতি তার আকর্ষণ বাড়াতে হবে। সেইসাথে শুরু থেকেই শিশুকে মূলধারার স্কুলে পাঠাতে হবে। যাতে সে নিজেকে সকলের সাথে মিশতে উপযোগী করতে পারে। একইভা‌বে স্কুলের শিক্ষক, চিকিৎসক এবং থেরাপিস্ট সকলকে একযোগে চিকিৎসার জন্য কাজ করতে হবে।

সামাজিক ভূমিকাঃ
পরিবারের পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুদের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা ও কর্মকাণ্ড তাদের সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে সামাজিক লাঞ্চনা এবং অবহেলার কারণে পরিবার থেকেই অটিস্টিকদের সবার থেকে আড়াল রাখে। যা শিশুদের সুস্থ হওয়ার অন্তরায়। তাই আড়াল না করে সামাজিকভাবে এই রোগীদের প্রতি ভালোবাসা ও আস্থা দেওয়া উচিত। যাতে তারা সামাজিকভাবে সকলের সাথে মেলামেশার সুযোগ পায়।

সেইসাথে তাদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা, হেয় প্রতিপন্ন বা অবাঞ্ছিত করা কখনোই উচিত নয়। সামাজিকভাবে তাদের অযোগ্যতাকে কখনোই প্রকাশ করা উচিত নয়। বরং তাদের নূন্যতম কাজেরও প্রসংশা এবং বাহবা দিতে হবে। যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরে তাদের গ্রহনযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। এতে করে তারাও সমাজের একটি অংশ হয়ে উঠতে পারবে। আর এভাবেই সকলের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা পেলে একটি অটিস্টিক শিশু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

রাষ্ট্রীয় ভূমিকাঃ
অটিস্টিক শিশুদের উন্নতির জন্য রাষ্ট্রের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হলো জনগণের মধ্যে অটিজম নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ অটিজম সম্পর্কে ধারণা পায়। সাধারণ মানুষেরা যখন অটিজম সম্পর্কে জানতে পারবে, তখন তারা রোগের শুরুতেই শিশুদের চিকিৎসা দিতে পারবে।

সচেতনতার পাশাপাশি অটিজমের চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। একইসাথে প্রতিটি হাসপাতালে অটিজম কর্ণার তৈরি করে চিকিৎসা দিতে হবে। ডাক্তারি চিকিৎসার চাইতে প্রশিক্ষণই এই রোগের মূল চিকিৎসা, তাই প্রতিটি শহরে অটিস্টিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।

যদিও ইতিমধ্যে সরকারি পর্যায়ে অটিজম নিয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷ যেমনঃ সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে মিরপুরে চালু হয়েছে ‘অটিজম রিসোর্স সেন্টার’৷ সেই সাথে যারা অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করেন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, অটিস্টিক শিশুদের অবস্থা পরিমাপ সহ আরও অন্যান্য প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠন করা হয়েছে ‘সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন’৷ এছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতালে রয়েছে ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’ ইত্যাদি।

বিকশিত হোক সব প্রতিভাঃ
২০২২ সালের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, “এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি।” অর্থাৎ অটিস্টিকদের জন্য এমন পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের দেওয়া উচিত, যাতে তারাও তাদের সুপ্ত প্রতিভা গুলো জনসমক্ষে নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারে। আর এভাবেই অটিজম আক্রান্তরা যাতে ধীরে ধীরে সুস্থ জীবনে ফিরে এসে কর্মক্ষেত্রেও প্রবেশ করতে পারবে। অটিস্টিকরা সমাজ এবং পরিবারের বোঝা নয়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সহযোগিতায় পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ পেলে একজন অটিস্টিকও হয়ে উঠতে পারে সমাজ এবং দেশের সম্পদ। অটিস্টিকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভার উন্নতি করে চাইলে কর্মক্ষেত্রেও যোগদান করতে পারে।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তাদের নিষ্প্রভ প্রতিভাকে বিকশিত করে সুস্থ সবল মানুষে রূপান্তরিত করাই হচ্ছে এই বছরের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। আর এভাবেই একজন অটিস্টিক যদি তার প্রতিভা বিকশিত করে সমাজের মূল ধারার সাথে মিশে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে সেটাই হচ্ছে বড় পাওয়া। সেই সাথে সকলের সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ধীরে ধীরে অটিস্টিকরা সুস্থ হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারলে, তা পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য হবে বড় পাওয়া

তাই আমাদের উচিত অটিস্টিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা। যদিও এই কাজে প্রচুর বাঁধা এবং প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবুও সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে এক সময় না এক সময় অবশ্যই সফলতা আসবে। সকলের সহযোগিতা আছে বলেই এখন অটিস্টিকরা পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। যদি এই সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখা যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই অটিস্টিকরাই হয়ে উঠবে দেশের সম্পদ।

অটিজম কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের একক সমস্যা নয়। অটিজম একটি জাতীয় সমস্যা। তাই এই সম্পর্কে সর্বস্তরের সচেতনতা খুবই জরুরী। সেই সাথে অনেক ক্ষেত্রে অনেক শিশু অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ নিয়ে জন্ম নিলেও সময়ের সাথে সাথে তা দূর হয়ে যায়। তাই কোন শিশু স্বভাবগতভাবে একটু বেশি অস্থির, চঞ্চল, রাগী ও জেদী প্রকৃতির হয়ে থাকলে তাকে অটিস্টিক মনে করা উচিত হবেনা। তাই প্রতিটি শিশুর প্রতি পরিপূর্ণ যত্নবান হওয়া উচিত। যাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ শিশুর মধ্যে প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২৮ মার্চ, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

চিঠি বিরহ (২)

প্রিয়তা
কেমন আছো ? আজো কি সেই আগের মতো লালগোলাপ খোপায় গাঁথ। তোমার রেশমী কোমল চুল গুলো ছেড়ে পায়চারী করো। সকালের সোনা রোদে ছুটে যাও বকুল তলায়। আমাকে তোমার মনে পড়ে কি প্রিয়তা?

তোমার দেয়া সেই রুমালটায় আজো তোমার গায়ের গন্ধ শুকে যাই। মনে হয় তুমি আমাকে জড়িয়ে আছো বটবৃক্ষের মতো। তোমার দেয়া স্মৃতি গুলো বার বার আমার মাঝে তোমাকে বিচরণ করে। মনে পড়ে সেই কবে কার ভরা বর্ষার ডাকাতীয়ার জলে নৌকায় করে ঘুরে বেড়িয়েছি তোমার বুকে শুয়ে। মৌনতা ভেঙ্গেছে তোমার কোমল আদর মাখা আহ্বানে, তোমার সুরে সুরে মিলিয়ে ছিল ডাহুকের পাল, আমি অপলক তোমার পানে চেয়ে চেয়ে কাটিয়েছি দিয়েছি সময়।

তুমি এখন হয়তো আর আমার কথা মনে করোনা ? অনেক সুখে হয়তো মানব কীট আমাকেই ভুলে গেছো। স্বামী, সন্তান সুখের সংসার অনেক ভালোই আছো। আমি সেই আগের মতো বকুল তলায় যাই, পাখিদের সাথে কথা বলি, রাতের প্রদীপ জোনাকি ভিড়ে মাঝে মাঝে জেগে থাকি, চাঁদের মৃদু জোছনায় তোমাকে খুঁজি। বুকের মাঝে একটুকরো ভালোবাসার রঙে তোমার ছবি আঁকি। অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিটি প্রহর হউক তোমার প্রজাপতির রঙীন পাখার মতো। আমি তোমার ভালোবাসার সুখে ! দুঃখের সাগরে ভেসে যাই অনবরত। তুমি ভালো থেকো, অনেক সুখে থেকো, আমি তোমার সুখেই হারাবো দুঃখ পালে। তোমার ভালোবাসার জনম ভিখারি।

চিঠি বিরহ ( চিঠি )

প্রিয় মৌমিতা,
কদিন হলো তোমার সাথে যোগাযোগ নেই। কেমন আছো তুমি? স্বামী সুখের সংসার আর নতুন পরিবেশ, সব মিলিয়ে ভালোই আছো? তোমার বাড়ির উঠোনের বকুল গাছটি আজো আছে? নাকি আমার মত অবহেলা অনাদরে মিলিয়ে গেছে? বকুলের ঘ্রাণ আজো আমায় আন্দোলিত করে, তোমায় খুঁজে যাই বকুলের ঘ্রাণে, মনে হয় তোমার শরীরী ঘ্রাণ, কতরাত ভোর হয়েছে বকুলের ছায়ায়। ছায়া ঘেরা শিরিষ গাছের ডালে কি বনমালীর দল কিচিরমিচির ডাকে? নাকি ওরাও তোমার মতো অভিমানে দূরের কোন যাত্রী হয়েছে। অথচ ওরাই ছিলো সময় অসময়ে। অন্ধকারে জোনাক গুলো কি এখন দল বেদে আসে উঠোনে, নাকি সোডিয়ামের উছল আলোয় হারিয়ে গেছে ? কতরাত ওরা আমাদের সঙ্গী ছিল তার হিসেব নেই। প্রভাতের সোনালী স্নিগ্ধ শিতল উষালগ্নে তোমার সাথে দেখা হতো শিউলি তলায়, প্রাণের তৃষ্ণার জলে ডুবে যেতাম অনাবিল উচ্ছ্বাসে। অজর বৃষ্টিজলে কদমের পাপড়ী ভাসিয়ে পুকুর জলে, ডাহুকের মতো ভিজেছি কাকভেজা। অথচ কদিন হলো, তুমি নিমিশেই সব ভুলেছো। যে তুমি আমাকে ছাড়া বাঁচবেনা বলে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছো, সবি ছিলো আমার সাথে ছলনা, আমি তোমাকে ছাড়া নিঃশব্দ বেঁচে আছি। রঙহীন স্বপ্নের ধূসরে মিলিয়ে গেছি। জীবনের বিবর্ণ সময়ের স্রোতে।

সময় অসময়ে জীবন নগর স্টেশন থেমে নেই, দুঃখের স্মৃতিভ্রম সৌজন্য শেষ প্রান্তিকযাত্রী আমি অনাদি কালের সাক্ষী।

আত্মোপলব্ধিবোধের খোঁজ

ভিখেরী দুয়ারে খাড়া
ভিক্ষা দিয়া বিদায় কর –
ও আমার ঘরের মালিকরে ….
ক্ষুধায় ভিখেরী মরলে কলঙ্ক তোর। ( উকিল মুন্সি)

জন্ম, মৃত্যু বিয়ে এই তিন অবধারিত সত্য। তবুও আমরা এগুলোকে অতিক্রম করতে চাই। ছোট ছোট সুখ দুঃখের সমষ্টিই জীবন। আশা আর হতাশার সংমিশ্রণই জীবনের সব আবেদন। আশার সাথে হতাশার আজীবন বন্ধুত্ব। তবে আমি হতাশ নই। জীবনে পেয়েছি অনেক হারিয়েছি খুব কম। যা হারিয়েছি তা ও ইচ্ছাকৃত। তাই দুঃখবোধ নেই। সংসার তো মায়াময় মোহ।এই মোহের ঘোরেই তো প্রতিটি জীবন দিনাতিপাত করছে। জীবন সব সময় জীবনের নিয়মে চলে কি? তাই এখন অন্তর্দহনে মর্মমূলেই নিজেকে খোজার চেষ্টা করছি। তাই হয়তো একটু অমনোযোগী নিয়মিত গণ্ডি থেকে। যা আপন ভেবেছি তা কি সত্যিই আমার আপন ? নাকি আমিই আমার নই ? তাই তো সাধকের বাণীতে নিজেকে খুঁজি ………

“তুমি আমার আমি তোমার
ভেবেছিলাম অন্তরে –
কেন ভালবেসে ছেড়ে গেলে আমারে
সোনা বন্ধুরে।
তুমি বন্ধু সুখে থাক এই মিনতি করি
নিদান কালে কে হবে মোর পাড়ের কাণ্ডারী” ?
( আত্মোপলব্ধিবোধের খোঁজ)
———-

পলাশ
১১/০৩/২০২২
দোহা, কাতার।

ঈমান কী?

1646757

“ঈমান” কী? এটা জানতে হলে আগে “ইসলাম” কী জানতে হবে। ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানে আনুগত্য করা। এই পরিপূর্ণ বিধানকে মুখে স্বীকৃতি, অন্তরে বিশ্বাস এবং কাজে পূর্ণ করাই হচ্ছে ঈমান। যার সহজ অর্থ হলো ইসলামের বিধানকে মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং সেইমতে কাজ করাই হচ্ছে ঈমান। যে এই কাজ অর্থাৎ ঈমান এনে ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল হয় তাকে বলা হয় মুসলিম।

ঈমানের ব্যাখ্যাঃ
ঈমান একটি গাছের তিনটি অংশের মতো অর্থাৎ শেখড়, মূল বৃক্ষ আর অসংখ্য শাখাপ্রশখা, ফুল-ফলে ইত্যাদিতে বিভক্ত। ঈমানের একটি অংশ হলো অন্তরের বিশ্বাস মাটির নীচে মূলের মতো। যা কেউ দেখে না। দ্বিতীয় অংশ মুখের স্বীকৃতি মূল কান্ডের মতো যা বাইরে থেকে দেখা যায়। তৃতীয় অংশ হলো আমল যা গাছের শাখাপ্রশখা মতো। যা দেখে গাছকে পরিপূর্ণ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত দেখায়।

কিছু কিছু বিশ্বাসের সমষ্টিকে ঈমান ধরা হয়। যেমন আল্লাহ্, মালাইকা বা ফিরিশতা, নবী রাসুল, সমস্ত আসমানী কিতাব, তকদীর, এবং মৃত্যুর পর উত্থান ও কিয়ামত ইত্যাদির সামগ্রিক বিশ্বাসই হচ্ছে ঈমান। একমাত্র আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করা, তাঁর বিভিন্ন কাজে লিপ্ত মালাইকাদের বিশ্বাস, আল্লাহ্ এই পর্যন্ত যত কিতাব পাঠিয়েছেন তাতে বিশ্বাস, এইপর্যন্ত যত নবী রাসুল (আঃ) পাঠিয়েছেন তাদের প্রতি বিশ্বাস, তকদীর তথা ভাগ্যে বিশ্বাস, মৃত্যুর পর উত্থান এবং কিয়ামতের হিসাব নিকাশের বিশ্বাসের সাথে মুখের স্বীকৃতি দেওয়াই হলো ঈমান।

ঈমানের মূলে কালেমাঃ
ঈমানের মূল ভিত্তি হলো কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” যে এই কালেমা পরিপূর্ণভাবে বুঝে বিশ্বাস এবং আমল করে তবেই তার ঈমান পূর্ণ হবে। সুতরাং ঈমান হলো বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানের আমল। কালেমাতে আল্লাহকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হলো আল্লাহর জাত, সিফাত এবং ইবাদতে কারো অংশীদার গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে কোনো কিছুতেই শরীক করা যাবে না। এটাই হচ্ছে মূল ঈমান। যা আমরা অনেকেই জানি বা বুঝি না। শুধু মুখে ও অন্তরে স্বীকার করে সালাত সিয়াম হজ্জ্ব যাকাত পালন করলেই ঈমানদার নয়।

বরং আল্লাহকে এবং তাঁর বিধানকে এমনভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি ছাড়া দুনিয়ায় আর কেউ তাঁর মতো নয়। অর্থাৎ তিনি যা পারেন তা কেউ পারেন না। এবং তাঁর বিধান ছাড়া আর কোনো বিধানে মাথা নত করা নয়। তিনি যা প্রাপ্য (ইবাদত) তা আর কেউ পেতে পারে না। এটাই হচ্ছে ঈমানের মূল বিষয়।

সুতরাং ঈমান হচ্ছে অবিচল বিশ্বাসের নাম। ওহীর মাধ্যমে জানা সকল সত্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। যেকোনো বিষয়কে শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে মেনে নেওয়া। সত্যের সাক্ষ্যদান এবং আরকানে ইসলাম পালন। নিজেকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে সমর্পণ করে শরিয়ত ও উসওয়ায়ে হাসানাকে গ্রহণ করা। ইসলামের বিধিবিধানের প্রতি আস্থা, ভালোবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা করা, পরিপূর্ণ তাওহীদ এবং শিরক বর্জিত বিশ্বাস করাই ঈমান। ঈমান শুধু গ্রহণ নয়, বর্জনও বটে। সত্যকে গ্রহণকরা আর বাতিলকে বর্জন করা। বিদ্রূপ ও অবজ্ঞা অস্বীকারের চেয়েও কুফরকে ঘৃণা এবং এর পরিনামকে ভয় করা ইত্যাদি।

ঈমানের ফল হচ্ছে আমলঃ
যারা কালেমা পড়ে নিজেদের ঈমানদার ঘোষণা দিবে। তাদের ঈমান পরিলক্ষিত হবে আমলের মাধ্যমে। গাছ যেমন শাখাপ্রশাখা পত্রপল্লব ছাড়া শুধু মূল এবং কান্ড দ্বারা পরিপূর্ণ হয় না। ঠিক তেমনি আমল ছাড়া মুখে স্বীকৃতি এবং অন্তরে বিশ্বাস দিয়ে ঈমানদার দাবি করা যায় না।

কারণ যারা মুনাফিক তাদের আমল নেই। তারা বাহিরে দেখায় আল্লাহকে স্বীকার করে কিন্তু সেই বিধান অনুযায়ী চলে না বা আমল করে না। অধিকাংশ মুসলমান আল্লাহকে স্বীকার করে। সালাত আদায় করতে হবে তাও জানে। কিন্তু কখনো সালাত আদায় করে না । তাহলে তারা কীভাবে ঈমানদার থাকলো? সুতরাং তারা কখনোই পরিপূর্ণ ঈমানদার নয়। প্রকৃত ঈমানদার হলো তারাই যারা আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে মানে বিশ্বাস করে এবং আমল করে।

ঈমানের স্বাদঃ
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে ঐ বৈশিষ্ট্যগুলো কারণে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। সে বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে- (ক) যার নিকট আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল (সাঃ) অন্য সবকিছু হতে সর্বাধিক প্রিয় হবে। (খ) যে ব্যক্তি কোনো বান্দাকে কেবল আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসবে। (গ) যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে কুফরি হতে মুক্তি লাভের পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে এভাবে অপছন্দ করে, যেভাবে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (সহীহ্ বুখারী: ২০, সহীহ্‌ মুসলিম:৪৩)

সুতরাং তারাই ঈমানের স্বাদ পাবে যারা সত্যিকারে আল্লাহ্ এবং রাসুলের (সাঃ) প্রতিষ্ঠিত বিধানের উপর পরিপূর্ণ অবিচল থাকতে পারবে মৃত্যু পর্যন্ত। সুতরাং মুখে বা অন্তরের স্বীকৃতি দিয়ে ঈমানদার হওয়া যাবে না। যে পর্যন্ত না সেই ঈমানকে আমল দ্বারা পরিপূর্ণ করা না হবে।

ঈমান বাড়ে কমেঃ
আল্লাহ বলেন,
“যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় (আল্লাহর) কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। “[ সুরা আনফাল ৮:২]

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ্‌র কিতাব ঈমানদারদের সামনে পড়া হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। এটা খুবই স্বাভাবিক। যখন কেউ ঈমান আমল ইহকাল পরকালের কথা শোনে তখন তাদের অন্তরে আল্লাহর প্রশান্তি এবং ভয় এসে আমলের ইচ্ছা জাগ্রত হয়। আবার যখন দুনিয়ার বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হয়ে যায় তখন সেই ইচ্ছায় ভাটা পরে যায়। সুতরাং মানবিক কারণেই মানুষের মধ্যে ঈমানের এই হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে।

ঈমান কীভাবে কমেঃ
বিভিন্ন কারণে মানুষের ঈমান কমে যায় বা যেতে পারে। যেমনঃ

১) আল্লাহর গুণাবলী নিয়ে চিন্তা চেতনা গবেষণা ইত্যাদি না করা। আমরা প্রতিনিয়ত শত হাজার পাপ করছি। এই পাপের কারণে তিনি আমাদের পাকড়াও না করে ছেড়ে দিচ্ছেন। এই যে ছেড়ে দিচ্ছেন বলে আমাদের একটি ধারণা হয়ে গেছে যে, আল্লাহ্ বোধহয় মানুষকে শাস্তি দিতে পারেন না। মনে হয় তাঁর সেই ক্ষমতা নেই (নাউযুবিল্লাহ)। এই ধরনের উদাসীনতা, তাঁর ক্ষমতার প্রতি চিন্তাহীনতা ইত্যাদি আমাদের ঈমান কমিয়ে দেয়।

২) আল্লাহর বিধান নিয়ে গবেষণা না করার কারণেও ঈমান কমে যায়। আমাদের কী কী পাপের জন্য কী কী শাস্তি হতে পারে। আল্লাহ আমাদের জন্য কী কী বিধান দিয়েছেন। কী কী বিধান মেনে চলা উচিত, কী কী অবাধ্যতার কারণে দুনিয়া আখিরাতে কী কী শাস্তি হতে পারে ইত্যাদি চিন্তা ভাবনা না করার কারণেও আমাদের ঈমান কমে যায়।

৩) অতিমাত্রায় পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া ঈমান কমে যাওয়ার লক্ষণ। জেনে না জেনে আল্লাহর বিধিবিধান তোয়াক্কা না করে যে পাপ গুলো আমরা করি, সেইসব পাপের কারণেও আমাদের ঈমান কমে যাচ্ছে। এই ঈমান কমে যাওয়ার ফল হচ্ছে আমাদের আমলের কমতি। আর আমল ছাড়া ঈমান কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা যে আল্লাহকে মানি এবং ভয় করি তার প্রমাণ হচ্ছে তাঁর বিধি -বিধান মেনে চলে তাঁর ভালোবাসার জন্য আশা করা।

ঈমান বৃদ্ধির উপায়ঃ
পবিত্র কুরআনের আলোকে আমরা জানি যে, ঈমানের হ্রাস বৃদ্ধি হয়। সুতরাং ঈমান বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় উপকরণ রয়েছে। যেমনঃ

১) আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলী নিয়ে গবেষণা করা। আমরা যদি সত্যিকারে বুঝতে পারি আল্লাহ্ কত অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন। তাহলে অবশ্যই আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ্‌র বিভিন্ন গুণ ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করলে আমাদের বিশ্বাস মজবুত হবে এবং ঈমান বৃদ্ধি পাবে।

২) আল্লাহর নিদর্শন দেখে গবেষণা করে ঈমান বৃদ্ধি করা। আমরা যদি আল্লাহর বিবি বিধান, আল্লাহর সৃষ্টি জগৎ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা বা চিন্তা-ভাবনা করি তাহলেও আমাদের ঈমান বাড়বে। এইসব গবেষণা করলে আল্লাহকে আরও জানতে তথা ইসলামকে জানতে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। সেই আগ্রহ আমাদের ঈমান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

৩) সৎ আমল করা। আল্লাহকে ভয় এবং সন্তুষ্টি লাভের আশায় বেশী বেশী নেক আমল করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। যার ভিতরে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সৎ আমল বা ভালো কাজ করার প্রবণতা থাকবে, নিঃসন্দেহে তার ঈমান অন্যদের চেয়ে বেশী হবে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা গেলো যে, ঈমান কখনোই শুধুমাত্র স্বীকৃতির বিষয় নয়। যদি স্বীকৃতির বিষয় হতো তাহলে সকল নামধারী মুসলিম এবং মুনাফিকরাও ঈমাদার বলে গণ্য হবে। অথচ আল্লাহ বলেন –

“নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তোমরা তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না।” [ সুরা নিসা ৪:১৪৫ ]

অর্থাৎ শুধু মুখে ঈমান আনলেই মুমিন হওয়া যাবে না। যতক্ষণ না তা কাজে কর্মে পরিলক্ষিত না হবে। কেননা আল্লাহ্ বলেন,

“অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরক ও করে। ” (সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ১০৬)

অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস রেখে তাঁর সাথে শিরক করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে স্বীকার করে আবার শিরকও করে তাহলে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ বলেন,

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। “(সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৪৮)

অতএব আমাদের কালেমার প্রকৃত অর্থ এবং ব্যাখ্যা (তাওহীদ, শিরক, বিদআত ইত্যাদি) জেনে পরিপূর্ণভাবে বুঝে বিশ্বাস এবং সেই অনুযায়ী আমল করেই ঈমানদার হওয়া লাগবে।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
৩ মে, ২০২১
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

বেদনাবিধুর বসন্ত

274179

হৃদয় হন্তারক
চক্ষু!…
পলকে নিক্ষেপ করলো তীর, ফাগুনের সোমত্ত শিমুল- পলাশের বুকে!
আহ… রক্ত
রুদ্ধশ্বাসে
থমকে আছে
বসন্ত দুপুরে রোদ্দুর উষ্ণতা মাখা দখিনা বাতাস
মন কাড়ে না কোকিলের কুহু ডাকে;
জানি
সে-ও দেখে
বেদনাহত প্রজাপতির বারো হাজার চোখের ধূ ধূ
তিক্ত স্বর জাগা নীলকণ্ঠ
অবাক লাগে- ফুলের অভিসারে প্রজাপতির মৃত্যু!
অ লেখা কবিতার মর্মরে
মৌন বিলাপের সুর।….

অন্তিম সমাধিতে গহন লাগা চাঁদ
অন্তরে
চির প্রেমের অতৃপ্ত হাহাকার, বেদনাবিধুর বসন্ত!…

কাছাকাছি (গান)

যদি এই পথচলা থেমে যায়
তবে যেনো আমি আছি
তোমারই কাছাকাছি।
অজানা কোন ফুলের
পাপড়ীতে মিশে
তোমারই পাশাপশি।

হয়তো তুমি ব্যস্ত তখন
তোমারই খেয়ালে।
রঙীন স্বপ্ন গুলো এঁকে যাও
মনেরই দেয়ালে।
আমি তোমার স্পর্শে
তোমার ছাঁয়ায়।
তুমি ডুবে যাও আপরূপ
তোমার কায়ায়।

আনমনে কোন এক বিকেলে
উদ্দেশ্যহীন অভিযান।
তোমার স্পর্শে ভুলে যাবো
সব অভিমান।
হয়তো তুমি ব্যস্ত তখন
তোমারই খেয়ালে।
রঙীন স্বপ্ন গুলো এঁকে যাও
মনেরই দেয়ালে।

যুদ্ধ ২

274572

বিগত শতকের গোড়ার থেকেই বদলে যাচ্ছিল আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সমীকরণ। পাল্টে যাচ্ছিল সেই প্রাচীন সিল্ক রুট নীতির বাণিজ্যিক গতিপথ। প্রাচীন রাশিয়াতে অভ্যুত্থান, ইউরোপের দেশগুলোতে একের পর এক বিভিন্ন শাখায় আবিষ্কার, ক্রমশঃ অবক্ষয়িত সামন্তবাদের শ্বাস উঠতে শুরু করেছিল। তখনই বিশ্বজুড়ে আবার একটা মহামারীর কবলে পড়ল মানুষ।

“The 1918 influenza pandemic was the most severe pandemic in recent history. It was caused by an H1N1 virus with genes of avian origin. Although there is not universal consensus regarding where the virus originated, it spread worldwide during 1918-1919. In the United States, it was first identified in military personnel in spring 1918. It is estimated that about 500 million people or one-third of the world’s population became infected with this virus. The number of deaths was estimated to be at least 50 million worldwide with about 675,000 occurring in the United States.”

সদ্য চার বছর ধরে চলা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। ১৮৫৫ র বিধ্বংসী প্লেগ দেখেছি পৃথিবী। যা সামলাতে প্রায় পঞ্চাশ বছর লেগেছিল। কিন্তু তার ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই সামন্তবাদের প্রতি ধাক্কা এবং সেই সীমানা দখলের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ল তখনকার ঔপনিবেশিক বিশ্ব। জার্মানিকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সব দেশ, আমেরিকা, এশিয়ার কিছু দেশ জড়িয়ে গেল যুদ্ধে। চার বছর তিন মাস দু সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধের ফল জার্মানির পরাজয়।

কিন্তু সীমানা দখল বা সম্পদ দখলের এই যুদ্ধের ধাক্কা সামলানোর আগেই আছড়ে পড়ল স্প্যানিশ ফ্লু নামের জীবাণু। কাতারে কাতারে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। আর একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গেল উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো। একে সামাল দেওয়ার জন্য চললো একের পর এক পরিকল্পনা। নতুন উপনিবেশ করার জায়গা আর নেই। সুতরাং পরাজিতের সম্পত্তি দখল করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা। অথচ সব আশার আগুনে জল ঢেলে দিয়ে ১৯৩২ থেকে পৃথিবী পড়ল ভয়ঙ্কর আর্থিক মন্দার কবলে।

‘The Great Depression lasted from 1929 to 1939 and was the worst economic downturn in history. By 1933, 15 million Americans were unemployed, 20,000 companies went bankrupt and a majority of American banks failed.’

এই লেখা যখন লিখছি তখন একটা যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে। ঝলসে উঠছে রাত ও দিনের আকাশ। না আমাদের দেশে নয়। কিন্তু আজকের গ্লোবালাইজেশনের যুগে পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে যুদ্ধ বাধলে তার প্রভাব সারা গোলোক জুড়েই পড়ে। এখানেও পড়বে। আর সেদিনও তাই পড়েছিল উন্নত দেশগুলোর বাজারে।

সত্যি বলতে কি, ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসা বাজার উন্নত দেশগুলোর অর্থব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিল সেদিন। একদিকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া তার বাজারে নিষিদ্ধ করেছিল উন্নত দেশের প্রবেশ। অন্যদিকে উপনিবেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ, স্বদেশ প্রিয়তার ধোঁয়া উন্নত দেশের সামগ্রী বিক্রি সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসা অস্ত্র বিক্রি, তারপর ক্রমান্বয়ে গাড়ি বিক্রি, ওষুধ বিক্রি, কাপড় বিক্রি প্রায় তলানিতে ঠেকে গেছিল সেদিন। আর এক দিকে হিটলারের মত এক উন্মাদের একই ধরনের অর্থনৈতিক উন্নতি কামনার লোভ মস্ত সুযোগ এনে দিল উন্নত দেশদের। সামন্ততান্ত্রিক প্রভাব তখন প্রায় শূন্য। দেশের সব ধরনের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে ক্রমবর্ধমান পুঁজিবাজার। ফলে আর্থিক মন্দা সামাল দেবার জন্য সৃষ্টি হলো আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের।

সেদিনের সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ আজকের রাষ্ট্রসংঘের মতই ধৃতরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়েছিল। সত্যি বলতে কি বরাবর এটাই দেখা গেছে যে সব রাষ্ট্রের এই মিলিত সংঘ আসলে শক্তিশালী দেশের স্বার্থে তাদের অঙ্গুলিসঞ্চালনে চলে। আর তাই সেদিন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কিছুই করার ছিল না। যুদ্ধ হলো। উন্মাদ হিটলারের পতন হলো। পৃথিবীর তিন চতুর্থাংশ দেশ তখন বিধ্বস্ত সব দিক থেকেই। আবারও সেই আগের ভাগাভাগি। আবারও দুর্বল দেশের ওপরে সবলের লুট। সব ঠিক চলছিল। বাদ সাধলো ফের সেই আর্থিক মন্দা।

(চলবে)

যুদ্ধ ১

274572

আমরা চাই বা না চাই, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কারণ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো শুধুমাত্র বাজার ছাড়া আর কোনো মান্যতা রাখে না প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর কাছে। আর চোখ বুজে থেকে কেউ রাশিয়ার পক্ষে, কেউ ইউক্রেনের পক্ষে গলা ফাটিয়ে এটা ভাবতেই পারেন যে এই যুদ্ধ মাত্র দুটো দেশের আভ্যন্তরীণ সম্মানের প্রশ্ন থেকে শুরু ও শেষ। কিন্তু আসল ব্যাপার অত্যন্ত জটিল। আর শুধু এই যুদ্ধই নয় আজ পর্যন্ত সংঘটিত যে কোনো যুদ্ধের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অর্থনৈতিক লোভ।

একবার পিছনের দিকে তাকানো যাক। গোলাপের যুদ্ধ বা ক্রুশেডের যুদ্ধের মত বহু বছর ধরে চলা প্রাচীন যুদ্ধের আসল উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক দখলের সীমানা বাড়ানো, যার মাধ্যমে নিজের নিজের দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড় করানোর চেষ্টা। তখন উপনিবেশ থেকে যে সম্পদ লুঠ হতো তা নিজের পক্ষে আনার জন্যই ওইসব যুদ্ধের অবতারণা। আর সেই যুদ্ধ শুরু, চলা ও শেষের পেছনে ছিল রাজশক্তি। কিন্তু এই অবস্থা বদলে গেল বিংশ শতকের থেকে।

(চলবে)

একটা গরম কাপড় চাই

শীতের প্রকোপ বাড়ছে-
একটা গরম জামার বড্ড অভাব আজ,
শীতের তীব্রতায় মরমর দশা,
বেঁচে থাকার আয়োজনের সমীকরণ খুবই জটিল,
গৃহস্থের বাড়িতে সারাদিন খেটে তবেই আহার জুটে।
আদরের ছোট্ট মাণিকের খুবই কষ্ট,
মক্তব ঘরে যাওয়াতে জবুথুবু অবস্থা-
পরনের কাপড়েরই ঠিক নেই,
বড্ড শীতের প্রকোপ-বাছাধন নাজেহাল।
একটা গরম কাপড় চাই,
করজোড়ে মিনতি করছি আজি,
অবোধ বাছা আমার জানে না-
সমাজের ফাঁকফোকর,যত অবিচার।
হে দয়াবান স্রষ্টা,
কতিপয় মানুষে রহম করো-
তবেই মিলিবে গরম কাপড়,
বাছাধনের আর হবে না কষ্ট।
একটা গরম কাপড়ের বড্ড অভাব-
বড়ো বাবুদের শীত নিবারণে কত আয়োজন,
পশমি কাপড়ের নানা ধরণের জামা-
কম্বল সম্বল করে সহাস্য বিচরণ।
আমার বাছাধনের একটা কাপড় চাই,
গরীবের সংসারে জুটে না-রুটি,
বাবু মহাশয়,
একটু দয়া করো-পুরানো কিংবা নতুন,
গরম কাপড় হলেই বাঁচে বাছা,
এই শীত যাক চলে,
আগামীতে বেঁচে রইলে গৃহস্থের কাজের অর্থে-
কিনিবো গরম কাপড় বাছার তরে,
তবে দয়াময়ের দরবারে এই মিনতি,
আগামী শীত পর্যন্ত বাছাধন মোর যেন বেঁচে রয়।

Children of the stars

270205

আমাদের এই সৌরজগৎ
সৃষ্টি হয়েছে আজ থেকে
প্রায় (৪.৫) সাড়ে চারশ কোটি বছর পূর্বে।

এই সৌর জগত সৃষ্টি হয়েছে
বড় একটি হাইড্রোজেন নীহারিকা থেকে
ইংরেজিতে যাকে আমরা
প্রোটো সোলার নেবুলা বলে থাকি
আর বাংলায় গ্যাসীয় নীহারিকা বলি।

তারমধ্যে কিছু হিলিয়াম ছিল
তার মধ্যে কিছু ভারী মৌল পদার্থ ছিল
এই ভারী মৌল পদার্থ বলতে জ্যোতিষবিদ রা বলেন হিলিয়াম এর ওপরে থাকে
কার্বন, অক্সিজেন, প্লাটিনাম, লোহা…

ভারী পদার্থ হলো
নীহারিকার মধ্যে আগে বড় তারা ছিল
আর সেই তারাগুলো বিস্ফোরিত হয়
এবং বিস্ফোরিত হওয়ার আগে
সেই মৌল পদার্থগুলো সৃষ্টি হয়েছে
মানে একটি সংশ্লেষণ হয়েছে।

সূর্যের মধ্যে যে সমস্ত মৌলিক
পদার্থগুলো পাই সেগুলো এসেছে
পূর্বের ঘটে যাওয়া সুপারনোভা থেকে
পৃথিবীতে আমরা যা দিয়ে গঠিত
যেমন কার্বন, অক্সিজেন,নাইট্রোজেন
হাইড্রোজেন ইত্যাদি।

প্রকৃতির যত শক্তি যত উৎস
ওই একই নক্ষত্র, যে কারণে আমরা সাইডাস,
মানে হল আমরা নক্ষত্রের সন্তান
উল্কাপিন্ডের মাধ্যমে বয়ে আসা নক্ষত্রের সন্তান।

নিউক্লিয়ার ফিউশন এর মাধ্যমে
আমাদের এই সূর্যের যেভাবে উৎপত্তি হলো।
আমরাও সেরকমই একটি
ফিউশন এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছি।

কিন্তু সেটা অনেক জটিল কঠিন
স্তর পেরিয়ে নানা রকম প্রক্রিয়ার পর
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আজকের আধুনিক মানুষ।
পশুপাখি জীব জড়
যা কিছুই রয়েছে তার সবকিছুই
ওই নক্ষত্রের মৌল উপাদান।

আমরা সৃষ্টি হয়েছি
বেঁচে আছি এবং বেঁচে থাকছি
এমনকি এই সভ্যতার ভবিষ্যতেও বেঁচে থাকবে
এটা সম্ভব হয়েছে সূর্যের নির্দিষ্ট
একটি জায়গায় অবস্থানের কারণে।

সূর্যের ও একটি গল্প রয়েছে
যাকে একটি মুক্ত স্তবক বা যেটাকে বলা যায়
ওপেন ক্লাস্টার এখানেই সূর্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সেই সমস্ত তারার সংশ্লেষিত পদার্থ থেকে বা আগের সুপার্ণভা থেকে।

পৃথিবীর বয়স কিংবা মহাবিশ্ব সৃষ্টি
অথবা যাকে আমরা গ্যাসীয় নীহারিকা বলে থাকি
যে সমস্ত উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বুকে পতিত
হয়েছে তা থেকেই আমাদের
এই মহাবিশ্বের বয়স নির্ধারণ করা হয়।

ডিফারেন্সিয়াল রোটেশনে
সূর্য যেভাবে ঘুরে চলছে
এই ঘূর্নয়ন না থাকলেও পৃথিবী নামক
ইউনিক একটি জায়গায় আমরা
কোনভাবেই সৃষ্টি অথবা অবস্থান করতে পারতাম না।

পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের জন্য
যেভাবে ঋতু বদল ঘটে। সেভাবে
এখানে আমাদের জীবনের বদল ঘটেছে
সময়ের বদল ঘটেছে
এবং প্রকৃতির বদল এর মাধ্যমে
আমরা আজ এই পর্যায়ে অবস্থান করছি।

শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ

FB_IMG_1639609864663

আজ ১৬ই ডিসেম্বর।
বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দের দিন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আজকের এই দিনে ছোট্ট বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে পৃথিবীর বিশাল মানচিত্রে নিজের জায়গা টুকু অর্জন করে নিয়েছিল।
-এই কথা গুলো আমরা সবাই জানি।
জানি সেদিন মূল্য স্বরূপ ঝরাতে হয়েছিল অগণিত বুকের তাজা রক্ত।
আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।
বাংলায় কথা বলতে পারি।
দেশটা ত স্বাধীন কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা কতটুকু স্বাধীন?
আজও আমরা পারিনা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। আজও পারিনা বুক ফুলিয়ে সত্য কথা বলতে। আজও আমরা বর্ণ, শ্রেণি আর শক্তির পূজারী।
আজও আমাদের চোখে কুসংস্কারের চশমা আঁটা। আজও আমাদের বিবেক অন্ধকার কারাগারের মোটা শিকলে বন্ধি ।
ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো আছে কিন্তু নেই তার প্রতিফলন। মুখের বুলিতে বুলিতে আজ অমার্জিত শব্দের সাবলিল প্রয়োগ।
মুমূর্ষু আদর্শ কবরের প্রতিক্ষায়। ভাঙনধরা সমাজে একতার স্থলে পারস্পরিক বিরোধ আর নিন্দার ছড়াছড়ি। ভালো কাজ চক্ষুগোচর না হলেও ভুল ধরিয়ে দেওয়ার মত মানুষ অগণিত।
কখন মিলবে এসব থেকে মুক্তি?
স্বাধীনতা অর্জন করেছি বুকের রক্ত দিয়ে এখন রক্ষা করব কিভাবে?
আরেকটি শুভ দিন আর স্বাধীনতার প্রতিক্ষায়-
শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ।
শুভ হোক আগামীর যাত্রা।

স্টেশন চত্বরের গল্প

দ্রুত বেগে চলে যায় ট্রেন নানান গন্তব্যপথে,
যাত্রা বিরতিতে মানুষের কোলাহল-
প্রাণহীন বগি গুলো-
জীবন্ত সত্তার গল্প বয়ে বেড়ায়।
অভুক্ত কতক প্রাণের শক্তিহীন দেহ গুলো লুটিয়ে পড়ে,
স্টেশনের বেঞ্চি গুলোর ঠিক হাত দশেক দূরে-
বাহারি পদের খাবারের পসরা বসিয়েছে সর্বত্র,
লুটিয়ে পড়া দেহ গুলোর প্রবেশে বাঁধা।
সকিনা,জমিলাদের হাত গুলো স্থির নেই,
বড়ো বাবুদের যদি একটু দয়া হয়-
দুচারি খুচরো পয়সায় শিঙাড়া কেনা যাবে,
বৃদ্ধ মজিদ মিয়া পয়সা পায় না,অবহেলিত।
এক ঝাঁক কচি সোনাদের দুরন্তপনা-
নানান কথা নানান অঙ্গভঙ্গি,
কেউ কম যায় না কারো সাথে-
গল্প গুলো চলন্ত ট্রেনের মতো চলছে অবিরাম।
হাজারো স্বপ্নের কতক মানুষের চোখ যুগলে দেশ,
উদাস বালকের কবিসত্তা লাভ-
কিংবা নব প্রেমিক-প্রেমিকার খুনশুটি-
চায়ের দোকানের ছেলেটা চিৎকার করছে-
এই গরম চা,গরম চা!
গল্প থামে না-
সম্বলহীন করিম চাচার সব হারানোর গল্প,
কিংবা-
জমিরনের স্বামীর অত্যাচারের ইতিহাস।
মানুষের গল্প জমিয়ে রাখে প্রাণহীন স্টেশনটা,
নতুন ভোর হয়,
আবার গল্পের শুরু-
প্রেম,বিরহ,ব্যর্থতা কিংবা মানুষের,
স্টেশন চত্বরটা একটা পাণ্ডুলিপি-
বেরসিক কবি সত্তারে নানান গল্প শুনিয়ে বেড়ায়-
ঝক ঝক শব্দে আবার ট্রেনের আগমন-
আবার গল্পের শুরু-
অবিরাম বকবক চলছে-
গল্প চলছে!

স্বেচ্ছাচার

পথ হারিয়ে বসে আছি ক্লান্ত মৃতপ্রায়,
দুই দিন ধরে অভুক্ত!
সমাজের খোঁজ নেই-
বিচার বসেছে চুরির,
সভ্যজনে উচ্চবাচ্য কঠিন দণ্ডের বিধান করো,
ইহাতে মগেরমুলুক,ক্ষমতানুযায়ী মান্যবর-
প্রকাশ্যে ক্ষমতার চর্চা-নির্বোধ মানুষের আদালত!
যদু যায় মধুর দলে ভ্রান্তমতে মতাদর্শ,
ভয়ে ভয়ে আছে সাবু-দণ্ডিত মিথ্যাপবাদে,
সমাজ চলছে তোষামুদে-দালালের আড্ডাখানা!
দু’পয়সার আহারে খুনের পসরা-
বড় জাতের দাম বেশি নামমাত্রে ছোটজাত,
নেতারাই সর্বসহা,সর্বত্র তাদের বিচরণস্থল-
আমাদের খোঁজ নেই-যাত্রা নিরুদ্দেশ,
যত্রতত্র ক্ষমতার বাহাদুরি স্বেচ্ছাচার সর্বত্র,
মানবিক মানুষ নেই-লোভী নির্দয়,
কবিতার কথা শেষ হয়ে যায়,
অপরাধ আনন্দেই বাড়ছে-দলাদলি।
রুচিহীন মানুষের আহারে শতপদ,
অভুক্ত রুটিহীন-বহুকালব্যাপী।
মানুষের সমাজে মানুষই দাস,
স্বেচ্ছাচার ছড়িয়ে মানুষের গৃহে।

অবেলায় এসো না

অবেলায় কেনো এলে তুমি?
আজ,
অশান্ত নগরে লাশের গাড়ির যত্রতত্র সাইরেন,
কথা বলার অভিযোগে দণ্ডিত মানুষের দেহ পরিবহণে,
নীতির মানুষের শঙ্কা বাড়লো মরণের-
কোটি টাকার সওদায় প্রত্যক্ষদর্শীরা চুপ।
বড় অবেলায় এলে তুমি,
যেখানে ভাসমান মানুষের দাম নেই,
দলিত শ্রেণির নিত্য মরণে-
খবরের কাগজে শিরোনাম”নর্দমায় অজ্ঞাত লাশ”!
আমাদের দেখা ভোর গুলো হতাশার,
মানুষের রক্তের দাগে রঞ্জিত রাজপথ,
অগ্নিকাণ্ডে অচেনা হয়ে যাচ্ছে পরিচিত দেহের গড়ন-
তবুও ভোর হয় কষ্টের-মরণের।
মরণোন্মুখ এই বেলায় কেনো এলে?
এখানকার কাশের বনেতেও রক্তের দাগ,
সাদা ফুল গুলো রক্তের জমিনে পতিত,
এখানে ভোর হয় স্বজনের আহাজারিতে-
প্রতিটি পাড়ায় শোকের মাতম।
অবেলায় কেন এলে?
এখানকার জনপদে নগ্ন মানুষের অস্ত্র হাতে বিচরণ,
বুড়িয়ে যাওয়ার কাল গুনছে ষোড়শীরা,
নেশায় মত্ত পুরুষের দেহগুলো উন্মাদ!
এই বেলায় কেনো এলে?
অশান্ত নগরে লাশের গাড়ির সাইরেন বাজছে,
আত্মীয়দের খোঁজ নেই-
কথা বলার অভিযোগে দণ্ডিত মানুষের লাশের-
গোরে সমাপিত করতে মরণের শঙ্কা-
মানুষের বড্ড অভাব এখানে।
এই বেলার চলে যাও কোনো সভ্যদের লোকালয়ে,
বসবাস করো তুমি এসো না এখানে-
যদি কোনো দিন শান্ত হয় আমাদের নগর গুলো,
তবে,
এসো শত ফুলের বরণ মালায়,
তোমার আগমনের উৎসব মানাবো।