বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

কবিতা

অনিশ্চিত

নির্বাকের উত্তরীয় পরেই যজ্ঞিডুমুরের তলায় ঘুমিয়ে থাকি একরাশ বাক্যস্থিত স্বপ্নে
যখন ঘুম ভাঙে তখন পূবের চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে ছুঁয়ে আসে
কখনো মধ্যরাতে বিষ্ময় জাগে, ঘুম ও স্বপ্ন মারামারি করে
কখনো তিলক স্পর্শ করে করোটির ব্যথা
আগের শীতের মতো রুক্ষদলীয়!
একযোগে একরকম চলতে চলতে ওরা ক্লান্ত শরীরে
ওরাও তীব্র জ্বালায় পীত হৃদয়ে লালচে ফোস্কা ফলায়
এভাবেই একদিন ঘাস হয়ে পায়ের নিচে
পিঁপড়ের সাথে আঁতাত করি ফরমিক এসিডের এক ফোঁটা আমায় ঢেলে দাও পোড়া গায়ে!

চা শ্রমিকদের আন্দোলন এবং কিছু প্রাসঙ্গিকতা

305 চা বর্তমানে বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। সকাল-বিকাল কিংবা যে কোনো অবসন্ন সময়ে এককাপ চা মানুষের শরীরে সঞ্চারিত করে নতুন আমেজ। মুহূর্তেই মন-প্রাণ চাঙা হয়ে ওঠে।

তবে এই চা রাতারাতি জনপ্রিয় হয়নি। এর রয়েছে দীর্ঘ বিবর্তনের ইতিহাস। যতটুকু জানা যায়, চীনের অনুকরণেই ভারতবর্ষে প্রথম চা চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তাই পরীক্ষামূলকভাবে চা-বীজ, চারা ও যন্ত্রপাতির পাশাপাশি চীন থেকে দক্ষ শ্রমিক আনে তারা। কিন্তু বিদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে বনাবনি না হওয়ায় অবশেষে শ্রমিক আমদানি বন্ধ করে দেশীয় শ্রমিক দিয়েই চা-বাগানের কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানি। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় চা চাষের পরিকল্পনা শুরু করে। আসামে চায়ের একটি জাত আবিষ্কার করার পর ওই এলাকায় চা চাষে তারা বিশেষভাবে মনোযোগী হয়ে ওঠে। এভাবে দার্জিলিং, আসাম, সিলেটে কয়েকটি চা বাগান প্রতিষ্ঠা হয়।

আর বাংলাদেশে চায়ের চাষাবাদ প্রথম শুরু হয় ১৮৪০ সালে। চট্টগ্রামে কুণ্ডুদের বাগান নামে সেই চা বাগান অবশ্য সাফল্যের মুখ দেখেনি। এরপর ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিন বছর পর সেই বাগান থেকে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পঞ্চগড় এবং চট্টগ্রাম জেলায় ১৬৭টি নিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কর্মক্ষম চা বাগান।

স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক অন বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রি বুক-২০১৯ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এসব চা বাগানে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ জন। অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন এবং চা-জনগোষ্ঠীর মোট মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৭২ হাজার ১২৫ জন। কিন্তু এই শ্রমিকরা সবসময়ে এই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন না। এখনো স্থানীয় বাঙ্গালিদের সঙ্গে তাদের ভাষা বা সংস্কৃতির দিক থেকে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের সর্বশেষ দলটিকে নিয়ে আসা হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর সিলেট ও চট্টগ্রামের চা শ্রমিকরা পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যান। এরপর তাদের বংশধররাই এখনো বাংলাদেশের চা বাগানগুলোয় কাজ করে যাচ্ছেন।

এইসব চা শ্রমিকদের সাম্প্রতিক কর্মবিরতি তথা আন্দোলন দীর্ঘদিনের নিপীড়ন, শোষণ এবং বঞ্চনার ফল। আধুনিক বিশ্বে দাঁড়িয়ে… সভ্যতা এবং মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো ধনিক শ্রেণীর মুখের উপর এ যেন চপেটাঘাত মাত্র। এখনও চা শ্রমিকরা অনেকাংশে ১৮৪০ সালের মুজুরি কাঠামোয় পারিশ্রমিক পান। এরচেয়ে অমানবিক আর কী হতে পারে? ভাবা যায় দৈনিক ১২০ টাকা! মাসে ৩৬০০ টাকা! তাও আবার শর্তযুক্ত। অর্থাৎ ২০ কেজি চা পাতা তোলার নিরিখ পূর্ণ করতে হবে! অন্যথায় টাকা কর্তন হবে। আবার এই ১২০ টাকাও নির্ধারণ হয়েছে ২০১৯ সালে। তখন বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আবার মজুরি বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। সেখান থেকেই ক্ষোভ দানা বাঁধতে বাঁধতে আজকের এই অবস্থা, ধর্মঘট ছাড়া শ্রমিকদের আর কোনো পথ খোলা ছিল না। দীর্ঘ আন্দোলনের পর এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ১৭০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।

আমরা মনে করি, এই ১৭০ টাকাও জীবনযাত্রার মানের সাথে কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। যদিও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দোহাই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি, এই অন্যান্য সুবিধা কতটা অপ্রতুল। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চা শিল্পের গুরুত্ব এবং ব্যাপকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই শিল্পকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, চা শ্রমিকরা বাঁচলে চা শিল্প বাঁঁচবে এবং চা শিল্প বাঁচলে চা বাগান মালিকরা বাঁচবে। আর তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। তাই চা শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা জরুরি।।

বিজ্ঞাপন

দুটো ডলারের জন্যে তুমি হাত
পাতছো, কর্পোরেট কচ্ছপের কাছে-
মাত্র কয়েকশ’ ডলারের জন্যে,
তুমি সারমেয় হয়ে বসে আছো
ভাড়াটে ইমিগ্রেশন দালালের পায়ের কিনারে…
মাঝে মাঝে হয়ে যাচ্ছো
মুরগী বিক্রেতার খামারী ফড়িয়া!

আর যাকে গলা টিপে হত্যা করতে
চাইছো,
তার কাছ থেকেও ভিক্ষে করে চেয়ে নিচ্ছো ফুলপেজ বিজ্ঞাপন।

কী অদ্ভূত সরীসৃপ আজ জড়িয়ে
ধরেছে তোমার গলা!
কয়েকটি মরা কাকের পালক,
তোমার জীবন্মৃত সমাধি ঢেকে
দেবে বলে, শল্লা-পরামর্শ করছে
তোমার কাছে দাঁড়িয়েই,

আর তুমি কামেল’স বিরিয়ানীর
পাতলা ডালের হালকা বিজ্ঞাপনী
সমর্থনপত্র ফেসবুকে লিখতে লিখতে,
ধরছো ফ্লাশিংগামী ট্রেন!

বায়বীয় সম্পাদক হে! তোমার তো
ভুলে যাবার কথা নয়,
কবিতার শক্তির কাছে কত পরাশক্তিই মেনেছে হার,
এভাবেই মিথ্যার প্রতি ঘৃণা ছড়িয়েছেন আল্যেন গীনসবার্গ,
আমিরী বারাকা থেকে
নমস্য শামসুর রাহমান !

মুহূর্তের ডাক!

আমি মাবিয়া, আমার তেমন ভাবে বড় কোনও বর্ণনা না দিলেও চলবে। কারণ নিজেকে বর্ণনা করতে গেলে দেখা যাবে তখন মূল কথায়ই আসা হবে না। তবে এই টুকু বলতে পারি আমি অন্য সব সাধারণ মানুষদের থেকে একটু বেশি সাধারণই বটে।

আসলে কেও যদি আমাকে হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করে আমার জীবনের সব থেকে খুশির মুহূর্ত কি? তবে সত্যি বলতে আমি একটু ঘাবড়ে যাই। আমি তখন কিছুক্ষণ ভাবি। ভাবতে ভাবতে জীবনের একটু পেছনে চলে যাই। আমার অতীতের মুহূর্তগুলো বইয়ের পাতার মতো ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকি। আসলে কি, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার মধ্যেও কিন্তু একটা সুন্দর মুহূর্ত আছে। অজান্তেই এর মধ্যে কতো ঘটনা এই মস্তিস্কের মনে পরে যায়। যেমনটা এখানেরই উদাহরণ দিলাম। লিখাটা লিখার আগে মুহূর্ত খুঁজতে যেয়ে কতো সুন্দর মুহূর্তের সাথে পুনর্মিলনী করে নিলাম। মনটা তাই ভালো লাগছে।

যাই হোক আমার সুন্দর মুহূর্তটা একটু তুলে ধরি। জীবনে অনেক সুন্দর মুহূর্ত আছে তবে তুলে ধরার জন্য বেছে নিলাম আমার প্রথম মেলায় যাওয়া আমার দাদির সাথে। খুব ছোট্ট ছিলাম আমি। জীবনে তখন দুঃখের বলতে কোন অনুভব বা অনুভূতি ছিল না। চোখের সামনের যা আসত সবই সুন্দর ছিল।

আমি আমার দাদির হাত ধরে ছিলাম যেন কোন ভাবেই ভিড়ের মাঝে হারিয়ে না যাই। রঙ বেরঙ এঁর জিনিস গুলো আমার চোখকে মুগ্ধ করে দিলো। আমি প্রচণ্ড অবাক হয়ে এদিক সেদিক দেখেও যেন দেখার শেষ করতে পারলাম না। এতো মানুষ ছিল আমার চারো পাশে। সবার ভিড়ের মাঝে হঠাৎ দূরে একটা অদ্ভুত শব্দের বেশ বড় একটা বস্তু দেখতে পেলাম।

দাদি! দাদি! দাদি! আমাকে ঐ বড় বস্তুটার দিকে নিয়ে যাও না প্লিজ। আমি আমার দাদির হৃদয়। হাঁটা ধরলাম বলা মাত্র। আমার ছোটো ছোটো পা হাঁপাতে হাঁপাতে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলল। আমার খুশি ছিল আকাশ সমান। আমি এখন যেমন ছোট্ট বাচ্চাদের খুশি মুখটার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি সেদিন দাদিও হয়তো আমার দিকে বার বার তাকিয়ে হাসছিল। বাচ্চাদের মনটা কতো পবিত্র হয় তাই না? নতুন কিছু একটা দেখলেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।

সে দিন আমার সাথে ঠিক এমনটাই হয়ে ছিল। আস্তে আস্তে আমি গেলাম, হ্যাঁ! আমার জীবনের প্রথম অন্যতম খুশির মুহূর্ত। বড় একটা হা করে বস্তুটা ঘুরতে দেখছি আর তার অদ্ভুত শব্দে বুকের হার্ট বিট যেন ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। ভয় হচ্ছে খুব শব্দের উপর। কিন্তু বস্তুটার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে।

“এটাকে নাগর দোলা বলে” দাদি বলল আমাকে। আমি তেমন করে দাদির কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম না। আসলে কানের সামনে বাহারি শব্দের সাথে দাদির প্রতিটা কথা গুলো শুধু বাতাস এঁর মতো কথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে আমার কাছে আস্তে পারছিল না।

হঠাৎ বস্তুটা থেমে গেল! আমি কৌতূহলী… নষ্ট হয়ে গেল নাকি? ভাবছিলাম আর দাদি আমাকে বস্তুটার সামনে নিয়ে যেয়ে বসিয়ে দিলো। আমার সাথে আরো তিনটা মানুষ। আমি তাদের বেশি একটা মনোযোগ দিলাম না।
হঠাৎ লোকগুলো হাত দিয়ে বস্তুটাকে ঘুরানো শুরু করল। চোখের এক পলকেই আমি আকাশ এঁর দিকে উঠে গেলাম। আমি অবাক! হুট করে নিছে নেমে যাচ্ছি আবার হুট করে আকাশ এঁর দিকে উঠে যাচ্ছি।

এতো সুন্দর কেনো অনুভূতিটা? আমি নিজেই হতভম্ভ! উপরে উঠলেই সারাটা মেলা দেখা যায়। জমকালো আলোতে বাহারি রঙ্গের জিনিস গুলো আমার চোখকে ধাঁধিয়ে দিলো! পৃথিবী কি এতোই সুন্দর?

সব কিছুর মাঝে একটা অপরূপ হাসি নিয়ে আমার দাদি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ কতোটা বছর হয়ে এলো নাগর দোলায় চড়তে পারি কিন্তু এই হাসিটা আর দেখতে পাই না!

ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ

639581

ঈমান ভঙ্গের কারণ
ঈমান হচ্ছে আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাস বিভিন্ন কারণে বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়ে যায়। আর ঈমান নষ্ট হওয়া মানেই ঈমান ভঙ্গ হওয়া। আজ আমরা কী কী কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে তা জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

প্রাককথাঃ
ঈমান ভঙ্গের কারণ জানতে হলে আগে পরিপূর্ণ ঈমান” কী সেটা জানত হবে। আর পরিপূর্ণ ঈমান কী জানার আগে “ইসলাম”কী সেটা জানা উচিত।

ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানে আনুগত্য করা। এই পরিপূর্ণ বিধানকে মুখে স্বীকৃতি, অন্তরে বিশ্বাস এবং কাজে পূর্ণ করাই হচ্ছে ঈমান। যার সহজ অর্থ হলো ইসলামের বিধানকে মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং সেইমতে কাজ (আমল) করাই হচ্ছে ঈমান। যে এই কাজ অর্থাৎ ঈমান এনে ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল হয় তাকে বলা হয় মুসলিম।

সুতরাং ঈমানের অর্থ হলো আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্ সম্পর্কিত সকল বিষয়ের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস। এই বিশ্বাস মূলত তিন ভাবে তথা বিশ্বাসগত, কর্মগত এবং উক্তিগত ভাবে ভঙ্গ হয়ে থাকে। এখন আমরা পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে প্রধানত কী কী কারণে ঈমান ভঙ্গ তথা বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় তা জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

১) শির্ক করাঃ

আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করার কারণে যেকোনো ঈমানদার তার ঈমান হারিয়ে ফেলে। শির্ক অর্থ হলো আল্লাহ্‌র সাথে অন্যান্য ইলাহ বা উপাস্য সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র সমকক্ষ অন্য কাউকে মনে করা স্বীকার করা বা কাজে প্রমাণিত করা।

বিভিন্নভাবে শির্ক হয়ে থাকে।

ক) ইবাদতের শির্কঃ

আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কাউকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ মনে করে তার ইবাদত করা হচ্ছে ইবাদতের শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র জন্য যেমন সিজদা, সিয়াম, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করা হয়। ঠিক তেমনি অন্য কোনো উপাস্যকে যেমনঃ দেবদেবী, আল্লাহ্‌র কোনো বান্দার (পীরের) জন্য বা অন্য কারো (অলি, আউলিয়ার) উদ্দেশ্যে একইভাবে ভাবে জীবিত বা কবরের ব্যক্তির জন্য সিজদা, সিয়াম, মান্নত, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করা হচ্ছে সুস্পষ্ট শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
” আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না। তাহ’লে নিন্দিত ও (আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে ” (বানী ইসরাঈল ৩৯)।

অন্য আয়াতে রাসুল সাঃকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ বলেন,

“(হে নবী!) আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকবেন না। তাহ’লে আপনি শাস্তিতে নিপতিত হবেন ” (শু‘আরা ২১৩)।

আল্লাহ্ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন আল্লাহর সাথে শরিক করা যাবে না। শুধু তাইনয় আল্লাহ্ সরাসরি তাঁর রাসুলকেও নির্দেশ দিয়েছেন শরিক না করার জন্য। অথচ সকল নবী রাসুলগন হচ্ছেন নিষ্পাপ।

আল্লাহ্ এটা এইজন্যই বললেন যাতে মানুষ শির্কের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। অথচ অনেকে শির্কের সম্পর্কে না জানার কারণে বিভিন্ন পীর অলি আউলিয়াদের দরবারে গিয়ে সিজদা, মান্নত, তাওয়াফ, কুরবানি ইত্যাদি করছে। যদিও এইসব ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।

খ) আল্লাহর সিফাতের সাথে শির্কঃ

আল্লাহ্‌র গুণাবলীতে অন্য কাউকে গুণান্বিত করা। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র যা করার ক্ষমতা আছে তা তাঁর অন্য কোনো বান্দা বা অন্য কেউ করতে পারে এমন বিশ্বাস রাখা হচ্ছে আল্লাহর সিফাতের সাথে শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতা হচ্ছে কাউকে জীবন দেওয়া, নেওয়া, সুখ দুঃখ , সন্তান, বিপদে উদ্ধার ইত্যাদি। এখন কেউ যদি আল্লাহর কোনো বান্দার বা অন্য কারো এমন ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে তাহলে তা হবে শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
“(হে নবী!) বলুন, তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা ভাল ও মন্দের মালিকও নয়” (রা‘দ ১৬)

“আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।” [ আশ শূরা ৪২:৪৯, ৫০ ]

“আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন দুর্দশা (দুঃখ কষ্ট) দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোন কল্যাণ (সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য) দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (সূরা আনআম ৬:১৭)

উপরোক্ত আয়াত গুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সবকিছুর উপরই আল্লাহর ক্ষমতা। তিনিই একক এবং একমাত্র ক্ষমতাবান। তিনিই মানুষকে দুঃখ, দূর্দশা, সুখ, শান্তি, সন্তান ইত্যাদি প্রদান করেন।

তিনি তাঁর ক্ষমতা কাউকে প্রদান করেননি যে অন্য কেউ তা দিতে পারবেন যেমন আল্লাহ্ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। সুতরাং কোনো বান্দা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নিকট আল্লাহর ক্ষমতাসীন কিছু চাইলে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

গ) আল্লাহর রাজত্বের সাথে শির্কঃ

আল্লাহ্‌ মানুষ সৃষ্টির সাথে তাদের জীবনযাপন করার জন্য বিভিন্ন বিধিবিধানও তৈরি করে দিয়েছেন। ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। যে বিধান বা সংবিধান দিয়ে মুসলমানগণ তাদের সকল সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাজ কর্ম পরিচালনা করবে।

এখন যদি কেউ আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে নতুন কোনো দুনিয়াবী বিধান (বাধ্যতামূলক না হলে আপোষে) মেনে নেয় বা প্রতিষ্ঠা করে বা করার জন্য সাহায্য করে তাহলে তা হবে আল্লাহর রাজত্বের সাথে শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
“জেনে রেখো সৃষ্টি যেহেতু তার (আল্লাহর) সুতরাং সমগ্র সৃষ্টির উপর ক্ষমতা ও একমাত্র (আল্লাহর) তার”( সূরা আরাফ ৫৪”)।
অন্য আয়াতে বলেন,

“আল্লাহ ব্যতীত বিচার ফায়সালা ও শাসন করার ক্ষমতা কারো নেই”। (সূরা নাম আনাম ৫৭)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এহ ঘোষণা দিচ্ছেন যে, সবকিছুর মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্। এবং তাঁর সৃষ্টির উপর তাঁর বিধিবিধানেরই ক্ষমতা চলবে। দুনিয়ার কারো কোনো বিধান বা সংবিধান এখানে প্রযোজ্য নয়। যদি আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করে তবে তা হবে শির্ক।

২) কারো মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়াঃ

আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দেন যে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি তাঁর বান্দাদের শোনেন এবং দেখেন। তাঁর বান্দাদের যেকোনো প্রয়োজনে তিনি সাড়া দেন। তারপরও কেউ যদি আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে বা বিপদে উদ্ধার হতে আল্লাহর কোনো বান্দাকে মাধ্যম ধরে বা উছিলা মনে করে, তবে তা হবে শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
“যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তবে আল্লাহর উপর ভরসা কর” (মায়েদাহ ২৩)।

” বলুন, (হে নবী!) আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে ” (যুমার ৩৮)।

অর্থাৎ যারা ঈমানদার তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করবে। যারা সরাসরি আল্লাহ্কে ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর কাছে মাধ্যম বানাবে তারা গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে ঈমানহারা হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“তারা আল্লাহকে ব্যতিত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না,উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, ‘এইগুলি আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’ বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যা তিনি জানেন না?তিনি মহান, পবিত্র’ এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি উর্দ্ধে।”(সূরা ইউনুস ১০: আয়াত ১৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
“জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে।’ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না।” (সূরা যুমার : ৩)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, যারা আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া বা পাওয়ার জন্য অন্য কাউকে মিডিয়া বা মাধ্যম লাগাবে বা প্রয়োজন মনে করবে। তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে শির্ক। অর্থাৎ যিনি আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী হিসাবে কাউকে মাধ্যম মানবেন তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

অর্থাৎ আল্লাহর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় তথাকথিত পীর অলি আউলিয়া ইত্যাদির দরবারে গিয়ে তাদের নাম করে সিজদা মান্নাত কুরবানি করা হচ্ছে শির্ক। যা ঈমানদারের ঈমান নষ্ট করে শির্কে লিপ্ত করে।

৩) মুশরিক কাফিরদের কাফির মনে না করাঃ

কেউ যদি স্বীকৃত মুশরিক কাফিরদের কাফির মনে না করে তাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে তাদের খারাপ মনে না করে, তাহলে ঐ ব্যক্তির ঈমান চলে যাবে।

আল্লাহ সুস্পষ্ট বলেন,
‘নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র’ (তওবা ২৮)।

“নিশ্চয়ই আহলে কিতাবদের(ইহুদী, খ্রিস্টানদের) মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং শিরক করে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং এরাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট সৃষ্টি” (বায়্যিনাহ ৬)।

অতএব আল্লাহর ঘোষণা চূড়ান্ত যে, ইহুদী, নাসারা, মুশরিক (যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করে) তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তাদের ব্যাপারে কখনোই কাফির নয় (তারাও আল্লাহর বান্দা তারাও ভালো কাজে নাজাত পাবে) এমন সন্দেহ করা যাবে না। কেউ এমন করলে তার ঈমান থাকবে না।

৪) ইসলামের বিধানকে অচল মনে করাঃ

আল্লাহর দেওয়া বিধিবিধানকে প্রাগৈতিহাসিক পুরোনো অচল ইত্যাদি মনে করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। অর্থাৎ আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুলের দেওয়া বিধিবিধান না মেনে অন্য কোনো দুনিয়াবী বিধি বিধান সংবিধান মেনে চলা এবং ঐটাকেই যথার্থ মনে করা।

সোজা কথায় বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামী শাসনতন্ত্রের প‌রিবর্তে মানব সৃষ্ট গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মেনে চলা হচ্ছে ঈমান বিধ্বংসী কাজ। যারা আপোষে কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ইসলামী বিধি বিধান মানবে না এবং দুনিয়াবী বিধি বিধান প্রতিষ্ঠা করবে এবং মানবে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার নারী-পুরুষের সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে ” (আহযাব ৩৬)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
“যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ (ইসলাম) প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের (রাসুলের সুন্নাহর) বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান”। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১১৫)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর কাছে ইসলাম ব্যতীত কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছু মানে, ভালো লাগে বা মানানোর জন্য অন্যকে উৎসাহিত বা চাপ দেয়, তাহলে তার ঈমান বাতিল হয়ে যাবে। যেমন বর্তমান যুগের গনতন্ত্রের রাজনীতি। যেখানে প্রতিনিয়ত ইসলামী আইন বাতিল করে ইসলাম বিরোধী আইন হচ্ছে।

৫) ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ করলেঃ

যদি কোনো ঈমানদার ইসলামের কোনো একটি বিধান অপছন্দ করলে সাথে সাথে তার ঈমান চলে যাবে। কোনো অবস্থাতেই কেউ ই ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ করতে পারবে না।

আল্লাহ্ বলেন,
“আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়।” [ আল বাকারা ২ :৮]

“আর যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পসন্দ করে না। অতএব তাদের কর্মসমূহ আল্লাহ ব্যর্থ করে দিবেন’ (মুহাম্মাদ ৮-৯)।

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, ঈমান এনে বা না এনে আমল সমূহ বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় অপছন্দ করা। উক্ত বিষয়ে ঈমানদার হয়ে আমল করলেও অপছন্দ করার কারণে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ কারো পর্দার বিধান ভালো লাগে না যদিও সে পর্দা করে। অথবা কারো জিহাদের কথা ভালো লাগে না অথবা পুরুষদের একাধিক বিয়ের অনুমতিও ভালো লাগে না। যদি কারো বিশ্বাস এমন হয় তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

৬) দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করাঃ

কোনো ঈমানদার ইসলামকে নিয়ে বা ইসলামের কোনো বিধি বিধান কাজ আমল নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করলে তার ঈমান চলে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’?”[ আত তাওবাহ্ ৯:৬৫]

“তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দেই, তবে অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।[ আত তাওবাহ্ ৯:৬৬ ]

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ স্পষ্ট করে দিলেন যে, আল্লাহ্, আল্লাহর রাসুল ও তাঁর আয়াত নিয়ে কেউ যদি খেল, তামাশা, বিদ্রুপ, মজা ইত্যাদি করে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে। যেমনঃ অনেকে দাড়ি রাখা, টাকনুর উপর প্যান্ট পড়া, বিভিন্ন বিদআতী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়া নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। যা কখনোই উচিত।

আল্লাহ্ আরো বলেন,
“সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি” (ইউনুস ১১)।

তারা আল্লাহ্ না চাইলে কখনোই হিদায়াত পাবে না। দুষ্টুমিতেই জীবন পার হবে। সুতরাং তাদের সাথে চলাফেরা যোগাযোগ রাখা যাবে না। এব্যাপারে আল্লাহ্ক বলেন,

“আর (আল্লাহ্) কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)।

তাদের বন্ধু রূপেও গ্রহণ করা যাবেনা। তাদের থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

আল্লাহ্ বলেন,
‘হে মুমিনগণ! আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। আর যখন তোমরা ছালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা মনে করে। কারণ তারা নির্বোধ’ (মায়েদাহ ৫৭-৫৮)।

সুতরাং দ্বীন নিয়ে যারাই হাসি ঠাট্টা করবে তাদের থেকে তৎক্ষণাৎ দূরত্ব সৃষ্টি করতে হবে। কেননা দ্বীন নিয়ে তামাশাকারীরা হচ্ছে মুনাফিক। আর মুনাফিকদের জায়গা হচ্ছে জাহান্নামে।

৭) জাদু টোনা বা কুফরী কালাম করাঃ

আল্লাহর উপর বিশ্বাসের পরিবর্তে কেউ যদি জাদু টোনা বা শয়তানী কুফরি কাজের মাধ্যমে কিছু পেতে চায় বা কারো ক্ষতি করতে চায় তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ ঈামান খারিজের কাজ। কুফরি কাজের দ্বারা যত ভালো কাজই হোক না কেন। ইসলামে সকল প্রকার জাদু টোনা করা হারাম।

আল্লাহ্ সূরা বাকারার ১০২ নংং আয়াাতে বলেন,

“আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরী করো না। এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা অবশ্যই জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা জানত।”

অতএব যারাই এইসব করে তাদের আর ঈমানের অস্তিত্ব থাকেনা। আজ উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষই কুফরি কালামে লিপ্ত।

৮) ইসলামের বিপক্ষে কাফিরদের সাহায্য করাঃ

কোনো ঈামানের দাবিদার যদি ইসলামের বিপক্ষে কাফির মুশরিকদের সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

আল্লাহ্ সূরা আত তাওবাহ্ ২৩ নং আয়াতে বলেন,

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম। ”

অন্য আয়াতে বলেন,

“তোমাদের মধ্যে যে তাদের (বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না ” (মায়েদাহ ৫১)।

অতএব কখনোই বিধর্মীদের আন্তরিকভাবে বন্ধু করা যাবে না যতটুকু দুনিয়ায় প্রয়োজন। সেইসাথে যারা ইসলামের বিপক্ষে বা কোনো মুসলিমের বিপক্ষে বিধর্মীদের সাহায্য সহযোগিতা করবে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

৯) কাউকে দ্বীন ইসলাম এবং শরীয়তের ঊর্ধ্বে মনে করাঃ

কেউ যদি রাসুলুল্লাহ সাঃএর আনীত শরীয়তের বিধি বিধান মানার চাইতে অন্য কোনো পীর বুজুর্গের দেওয়া (শরীয়ত বহির্ভূত) কাজ করে বা করাকে জায়েজ মনে করে তাহ‌লে তাঁর ঈমান থাকবে না। কেননা শরীয়তের ঊর্ধ্বে কেউ নেই। ইসলামে যা কিছু চলবে সবই রাসুলুল্লাহর নির্দেশ এবং সম্মতিতে।

এখন কেউ যদি পীর অলি আউলিয়াকে শরীয়তের উৎস ধরে (স্বপ্নের বার্তা, কাশফ) সেইমতো বিভিন্ন বিধি বিধান চালু এবং পালন করে তাহ‌লে তার ঈমান থাকবে না। কেননা ইসলামে একমাত্র অনুসরণ হচ্ছে রাসুলুল্লাহ।

আল্লাহ্ বলেন,

“(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।” (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ আরো বলেন,

“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের(শরীয়ত বহির্ভূত কারোর) অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর”। ( আল আরাফ : ৩)

অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে একমাত্র রাসুলের অনুসরণ করতে হবে। রাসুলের প্রদর্শিত পথ ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করা যাবে না।

১০) শরীয়তের বিধিবিধানে কম বেশী বা নতুনত্ব সৃষ্টি করাঃ

কেউ যদি মনে করে আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুল কতৃক আনীত ইসলামের বিধানে নতুন করে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করলে ভালো হবে। অথবা কেউ যদি রাসুলুল্লাহর দেওয়া শরীয়তের নির্ধারিত বিধি বিধানে (ঈমান, আকিদা, আমলে) কম বেশী বা নতুনত্ব ( বিদআত) সৃষ্টি করে বা জায়েজ মনে করে এবং সেইমতো আমলেও করে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

নতুনত্ব আনা বা বাদ দেওয়ার মধ্যে তারা রাসুলুল্লাহ রিসালাতকে অস্বীকার করে। এর দ্বারা আল্লাহ্ যে তাঁর রাসুল সাঃ দ্বারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেটা মিথ্যা হয়ে যাওয়া। অথচ আল্লাহ্ বলেন,

‘যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিকে সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান’ (নিসা ১১৫)।

এটা দ্বারা সুস্পষ্ট যে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকে একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাঃএর অনুসরণে দ্বীন ইসলামে জীবনযাপন করতে হবে।

কেননা আল্লাহ্ বলেন,

” আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম” (সূরা মায়িদা ৫ : ৩)।

১১) ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম তালাশঃ

কেউ যদি আল্লাহর দ্বীন ইসলামকে ছেড়ে অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে তাদেরও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মকে গ্রহণ করবে তার কোন আমল গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। (আলে ইমরান ৮৫)।

অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ছাড়া আর কোনো ধর্মই আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। সুতরাং ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম কেউ পালন করলে তাকে অবশ্যই জাহান্নামের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।

১২) দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াঃ

কেউ যদি দ্বীন ইসলামের বিধি বিধান বা আমল সমূহকে বোঝা মনে করে তা থেকে বিরত থাকে তাহলে তার ঈমান থাকবে না।

আল্লাহ্ বলেন,

“আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে, যাকে স্বীয় রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়ার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।।[ আস সেজদাহ্‌ :২২ ]

অর্থাৎ যেসব ঈমাদারদের আল্লাহর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ঈমান এবং আমল করতে বলা হয় তখন তাদের দ্বীনের হুকুম আহকামকে বোঝা মনে করে। তখন তারা দ্বীনের বিভিন্ন বিধি নিষেধ এবং আমল থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। এইসব ব্যক্তিদের ঈমান আর অবশিষ্ট থাকে না।

আল্লাহ্ আরো বলেন,

“আমার স্মরণ (ঈমান, আমল, জিকির ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ (কষ্টে পতিত) হবে এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? আমিতো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল। অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব’ (ত্ব-হা ১২৪-১২৬)।

অতএব দ্বীন ইসলাম থেকে আল্লাহ্ থেকে কেউ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তার ঈমান বিনষ্ট হবে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামী আক্বীদাহ ও তাওহীদ গ্রহণের পর যদি কেউ উপরোল্লিখিত বিষয়গুলিতে নিপতিত হয়, তবে সে ঈমান হারা হবে বা মুরতাদ হয়ে যাবে। তার উপর মুরতাদের হুকুম (মৃত্যুদন্ড) ওয়াজিব হবে। যা কার্যকর করার মালিক হচ্ছেন দেশের সরকার। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই দন্ড কার্যকর করার অধিকার রাখে না।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

উড়ন্ত পত্র

Pics

প্রিয় মাধবীলতা!

খুব ভালো আছো দেখে আমি খুব কষ্ট মার্জিত তৃপ্তি নিয়ে পার করে দিচ্ছি বিষায়িত এক একটা সময়। তোমার প্রতি আমার অজস্র অন্যায় হয়েছে বলে এখন কিছু বলি না। বলার সে সাহস নেই। তবে এতোটুকু বুঝি খুব বেশি আবার ভালবেসেছিলাম তোমাকে। কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশে গলদ ছিল বলে আমি তোমার দৃষ্টিতে খুবই জঘন্য এবং নর্দমার কীট হিসেবে লালন হচ্ছি।

জানো আমি এমন একটি কষ্টের সাথে লড়ছি যা আমায় প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত করে। মস্তিষ্কের ভিতর সমস্ত অনুভূতিকে লন্ডভন্ড করে চলে। কষ্টটা কোথায় জানো?
খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি তোমার চোখে যারা বাচ্চা ছেলে, আর ঐসব ছেলেদের স্টোরি কিম্বা পোস্ট থাকে মুভির সেক্সুয়াল সিন। আবার এইসব বাচ্চা ছেলে গুলি যখন বলে বড় আপুদের সাথে কথা বলার সুবিধা আলাদা। তারা প্রেম করে সেনসুয়াল করে। কারণ তারা বিবাহিত।

আর এইসব ছেলেরা যখন আমার প্রিয়জনের ছবিতে লাভ রিয়েক্ট, লাভ কমেন্ট এবং ঐ ছেলেদের কমেন্টের প্রতিউত্তরেও যদি সেইম দেওয়া হয় তখন আমি একজন বড্ড উন্মাদ হয়ে যাই। যা থেকে পরিত্রাণে প্রতিদিন আমার চার পাঁচ প্যাকেট সিগেরেট লাগে সাথে তো বিয়ার কিম্বা মদ না হলে আমি নিজেকে দাবিয়ে রাখতে পারি না।

মাধবীলতা! আমি তোমাকে কিচ্ছু বলবো না। হস্তক্ষেপও করবো না কোনো কিছুতে। তবে ঐসব ছেলেদের আমার খুব ঘেন্না হয় বলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। তোমার প্রতি আমার কোনো ধরণের সন্দেহ নেই, সন্দেহ করার অবকাশও নেই। তবে কষ্ট ভরে আছে আমার প্রতিটি মুহূর্ত। তোমার অগোচরে আমি আমাকে টর্চার করে যাচ্ছি। করে যাবো। নিজেকে শেষ করে দিবো। তবুও তোমাকে আমি বলবো না, এইসব ছেলেদের লায় দিও না। তোমার যদি ভার্চুয়ালি ওদের সাথে মিশে মন ভালো থাকে, তবে তুমি ভালো থেকো।

আমি নিজেকে শেষ করে দিয়ে গুটিয়ে নিবো। বেশিদিন এই পৃথিবীর থাকার আর ইচ্ছে নেই। রাখাল আর বাঘের গল্পের মত আমিও একদিন বাঘের পেটে ঢুকে যাবো। কেউ টের পাবে না। ততদিন আমি আমার ভালবাসার সকল বিন্দু তোমাকে দেওয়ার চেষ্টা করবো। ভালো থেকো।

ইতি
এক উন্মাদ মাতাল

আমরা কি খোদাদ্রোহী নমরুদ?

IMG_220a

অনেক সময় দেখা যায় আমরা অনেকেই নিজেকে বীরপুরুষ, সিংহপুরুষ বলে দাবিও করে থাকি। কিন্তু যতই বীরপুরুষ আর সিংহপুরুষই হই-না-কেন, আমরা সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার পরে দুই রকমের বীরের কাছে সবসময়ই পরাস্ত। একটি হলো প্রাকৃতিক মৌসুমি বীর ‘শীত’। অপরটি হলো মশা বা মশক। তো মৌসুমি বীর শীত নিয়ে নাহয় অন্যদিন আলোচনা করবো। আজকে আলোচনা করছি মশা নিয়ে।

‘মশা’ হলো মহান স্রষ্টার সৃষ্টি এক ক্ষুদ্র প্রাণী। যার নাম ‘মশা’। এই মশাকে মহান স্রষ্টার নিজস্ব সৈনিকও বলা হয়। কেননা, খোদাদ্রোহী নমরুদকে ধ্বংস করার জন্যই নাকি এই ক্ষুদ্র প্রাণী মশার সৃষ্টি। যা ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়।

নমরুদ ছিলেন একসময়ের অত্যাচারী বাদশাহ। যিনি নিজেকে স্রষ্টা দাবি করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু বাধ সাধে হযরত ইব্রাহিম (আ.)। যিনি ছিলেন মহান স্রষ্টার অনুসারী। নমরুদ তার মুল্লুকে থাকা জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আর অত্যাচার নির্যাতন করে নিজেকে একটু গুছিয়ে আনতে পারলেও, হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে কিছুতেই বশে আনতে পারছিলেন না। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-ছিলেন একনিষ্ঠ খোদা প্রেমী বা খোদা ভক্ত। এটা কিছুতেই অত্যাচারী নমরুদ সহ্য করতে পারছিলেন না। একবার হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে শাস্তিমূলক আগুনের কুণ্ডলীতেও ফেলেছিলেন, এই অত্যাচারী নমরুদ। কিন্তু মহান স্রষ্টার অশেষ কৃপায় আগুনের কুণ্ডলী থেকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। এতে অত্যাচারী নমরুদ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর উপর আরও জ্বালাময়ী হয়ে উঠেন। তখন খোদা প্রেমী হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব হলো, খোদার সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা প্রকাশ।

শেষপর্যন্ত তা-ই হলো। যুদ্ধের দিনক্ষণ ঠিক হলো। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, “তোমার খোদা থাকে কোথায়”?
হযরত ইব্রাহিম (আ.) বললেন, “আমার খোদা আসমানে থাকে”।
তারপর অত্যাচারী নমরুদ শয়তানের পরামর্শ নিয়ে আকাশে উঠার বুদ্ধি বের করলো। অবশ্য এর আগে অনেক উঁচু এক মিনার তৈরি করেছিলেন, নমরুদ। মিনারের উঁচু মাথায় উঠে আকাশের কূলকিনারা না পেয়ে সেই চেষ্টা বাতিল করে। একসময় নমরুদ কর্তৃক মিনারটিও ভেঙে পড়ে, মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারায়। এবার শুরু হলো অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদের ভিন্নরকম শয়তানি বুদ্ধি!

বুদ্ধি হলো চারটে শকুনের সাথে একটি বাক্স রশি দিয়ে বাঁধবে। তারপর নমরুদ বাক্সে উঠবে। আর শকুনের মাথার সামনে একটুকরো করে গোসত ঝুলিয়ে দিবে। এতে শকুনগুলো গোসতের লোভে সামনে এগুতে থাকবে, আর বাক্স সহ নমরুদ আকাশে উঠতে থাকবে। আকাশে উঠে খোদার সাথে যুদ্ধ করে আসার সময় শকুনের মাথার সামনে থাকা গোসতের টুকরোগুলো আবার শকুনের পায়ের নিচে বেধে দিবে। এতে শকুনগুলো গোসতের লোভে বাক্স সহ নমরুদকে নিয়ে নিচে নামতে থাকবে। এই হলো অত্যাচারী বাদশা নমরুদের শয়তানি বুদ্ধি। এমন যাত্রাও নমরুদের বিফল হয়।

অবশ্য শকুনের সাথে বাক্স বেধে নমরুদ আকাশে ঠিকই উঠেছিল। খোদাকে উদ্দেশ্য করে তীরও নিক্ষেপ করেছিল। (এই তীর নিক্ষেপ করা নিয়েও একটা কাহিনী আছে, তা আরেকটা লেখায় প্রকাশ করবো।) খোদাকে উদ্দেশ্য করে নমরুদ আকাশের উপরে তীর নিক্ষেপ করে যখন খুশিতে হাহা করে হাসতে ছিলো, তখনও খোদা প্রেমী হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর একই কথা, “আমার খোদাকে তুমি কোনও অবস্থাতেই মারতে পারবে না। আমার খোদা না থাকলে এই পৃথিবীর কিছুই থাকবে না। তুমিও না, আমিও না। চন্দ্রসূর্য, গ্রহতারকা, আকাশ বাতাস কিছুই থাকবে না।

কিন্তু অত্যাচারী নমরুদ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কথায় বিশ্বাসী নয়! নমরুদ খোদার সাথে ভুমিতে সামনাসামনি যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার খোদার সৈন্য সংখ্যা কত? উত্তরে হযরত ইব্রাহিম (আ.) বললে, “তা আমার জানা নেই!”

তা জানা থাকুক আর না থাকুক, অত্যাচারী নমরুদ খোদার সাথে যুদ্ধ করবেই করবে।

এদিকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) খোদার কাছে ফরিয়াদ করে বলতে লাগলো, “হে খোদা, তুমিই বলো–আমি এখন নমরুদকে কী বলতে পারি! নমরুদ তোমার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চায়”!
উত্তর এলো, “তুমি নমরুদকে বলো তাঁর সৈন্যদল নিয়ে তৈরি হতে। যুদ্ধ হবে খোলা মাঠে”।
তারিখও নির্ধারণ করা হলো।
একসময় অত্যাচারী নমরুদকে হযরত ইব্রাহিম (আ.)- বলে দিলে, “অমুক তারিখে আমার খোদা তোমার সাথে যুদ্ধ করবে। তা হবে বড় একটা খোলা মাঠে। তুমি তোমার সৈন্যদল নিয়ে তৈরি হও”।
অত্যাচারী নমরুদ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মুখে এই কথা শুনে দিনতারিখমত তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে এক খোলা মাঠে গিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলো।
হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে বললো, “তোমার খোদার সৈন্য কোথায়? তাড়াতাড়ি আসতে বলো। আমি এবং আমার লালিত সৈন্যদল তোমার খোদার সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে আছি”।
এমন সময় মাঠের চারদিক কালো অন্ধকার নেমে আসতে লাগলো। নমরুদ ভাবতে লাগলো, হয়ত আকাশে মেঘ জমেছে। কিন্তু না, এই অন্ধকার আকাশের মেঘ নয়!

কালো অন্ধকারের সাথে বিকট শোঁ শোঁ শব্দ শুরু হয়ে গেলো। নমরুদের সৈন্যদল চোখে কিছু দেখতে-না-দেখতেই শুরু হয়ে গেলো কোটিকোটি মশার আক্রমণ। অত্যাচারী নমরুদের লক্ষলক্ষ সৈন্যের নাক, কান দিয়ে মশা মস্তকে ঢুকতে লাগলো। এভাবে অত্যাচারী নমরুদের সৈন্যবাহিনীর মস্তকে মশা ঢুকে, সৈন্যদের মাথার মস্তক খেয়ে খালি করে ফেললো। অনেক সৈন্য মশার ভয়ে পালাতে শুরু করে দিল। কিছু সৈন্য নমরুদের আশপাশে অবস্থান করছিল। যেহেতু নমরুদ ছিলেন একজন বাদশাহ, তাই।

খোদার প্রেরিত সৈন্যদের কমান্ডার ছিলো এক লেংড়া মশা। কমান্ডার লেংড়া মশা নমরুদের নাক দিয়ে মস্তকে ঢুকে কামড়াতে লাগলো। একপর্যায়ে মশার কামড় সহ্য করতে না পেরে অত্যাচারী নমরুদ অবশিষ্ট সৈন্যদের হুকুম দিলেন, তার মাথায় আঘাত করতে। সৈন্যবাহিনী তাদের পায়ের জুতা দিয়ে নমরুদের মাথায় আঘাতের পর আঘাত করতে লাগলো। মাথায় জুতার আঘাতে নমরুদের একটু শান্তি পেতো। মাথায় আঘাত করা থেমে গেলেই নমরুদের অশান্তি শুরু হতো। শুরু হয় মস্তিষ্কে মশার কামড়ের তীব্র যন্ত্রণা। আবার শুরু হয় নমরুদের মাথায় সৈন্যদের পায়ের জুতার আঘাত। এভাবে একসময় অত্যাচারী নমরুদ কমান্ডার লেংড়া মশার কামড়ে আর তার নিজস্ব সৈন্যবাহিনীর জুতার আঘাতে মৃত্যুবরণ করে। মশার কামড় হলো অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদের পাপের শাস্তি।

এখন কথা হলো, মহান সৃষ্টিকর্তা সত্যি সত্যি যদি অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদকে খতম করার জন্যই মশা এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকে, তাহলে সেই মশা এখন আমাদের দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আক্রমণ করছে কেন? এতে কী বোঝা যাচ্ছে? এতে বোঝা যাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের আমরা সকল মানুষই এখন খোদাদ্রোহী নমরুদ?

হ্যাঁ অবশ্যই অবশ্যই আমরা খোদাদ্রোহী নমরুদ! কারণ মহান সৃষ্টিকর্তা হয়তো আগেই জানতেন যে, এই নমরুদের মতো চলমান পৃথিবীতে আরও আরও নমরুদ পয়দা হবে। যার কারণে মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টি মশার ডিউটি শেষ হবার পরও নমরুদ সম আমাদের জন্যই মশা এই পৃথিবীতে রেখে দিয়েছিল। যতদিন না আমরা সত্যিকারের মানুষ না হতো পারবো, ততদিন খোদার সৈনিক মশা আমাদের সেই খোদাদ্রোহী নমরুদ মনে করে আমাদের আক্রমণ করবেই। কারণ বর্তমানে আমরা ঐ নমরুদের চেয়েও কুখ্যাত নমরুদ।

বি:দ্র: লেখায় কোনও অসংগতি প্রকাশ পেলে সমালোচনা না করে মন্তব্যের বাক্সে গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে জানালে কৃতার্থ থাকবো।

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।

নারী ও পুরুষ

“নারী শরীরের প্রতি পুরুষের লোভ থাকে, সকলেই জানি। কিন্তু নারীদেরও পুরুষ শরীরে লোভ থাকে পুরো সমান-সমান। উভয়েই যখন উভয়ের পরিপূরক,
তাহলে এতো হ্যাংলামি কেন” ?

মুসাফির গৌতম
২৪/০৪/২২

সাদকাতুল ফিতরের আদ্যোপান্ত

165076

ইসলাম আমাদের সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। রমাদানের এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদ-উল -ফিতর। ধনী-গরিব সকলে মিলে যেন সমানভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে তার জন্য ইসলাম ব্যবস্থা করেছে সাদাকাতুল ফিতর নামে একটি দানের খাত। এই দানকে বলা হয় সাওমের কাফফারা বা যাকাত। আজ আমরা ফিতরা নামে যে দানের পদ্ধতি ইসলামে রয়েছে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ইনশা-আল্লাহ।

সাদকাতুল ফিতর কী

ফেতরা আরবী শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) ইত্যাদি নামে পরিচিত। সদকা মানে দান, ফিতর মানে রোজার সমাপন বা শেষ। ফিতর বা ফাতুর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্যকেও বোঝানো হয় যা দ্বারা সাওম পালনকারীরা তাদের সাওম ভঙ্গ করেন।

সুতরাং সাদকাতুল ফিতরা হলো ঐ সব খাদ্যবস্তু দান করা যা দ্বারা সিয়াম পালনকারী তাদের সাওম ভঙ্গ করতেন। সোজা কথায় ফিতরা হলো এমন খাদ্যসামগ্রী দান করা যা দ্বারা গরীব দুঃখীরা ঈদের দিনে খেয়ে খুশী হয়। আর এই দান প্রতিটি সাওম পালনকারীকেই প্রদান করতে হবে।

সাদকাতুল ফিতর কেন দিতে হয়

ইসলামে সম্পদের পবিত্রতার জন্য যেমন যাকাত (দান) দিতে হয়, ঠিক তেমনি রমাদানের সিয়ামের পবিত্রতার জন্য সাদকাতুল ফিতর (দান) দিতে হয়। আরও সহজ করে বললে বলতে হয়, পবিত্র রমাদানে সিয়াম পালন করতে গিয়ে প্রতিটি মানুষেরই অবচেতনমনে কোনো না কোনো ভাবে সিয়ামের অনেক সাধারণ ভুলত্রুটি (যেমনঃ সাওমে অবাঞ্ছনীয় অসারতা, গীবত করা, অশ্লীল কথাবার্তা, গালাগালি করাসহ নানান ছোটখাটো সগিরা গুনাহ) হয়ে থাকে। সিয়াম পালন করতে গিয়ে সেই ত্রুটি-বিচ্যুতিরই ক্ষতিপূরণ ও সংশোধনী হচ্ছে সাদকাতুল ফিতর। যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত দানের একটি ইবাদত। যাকাত যেমন অর্থ-সম্পদকে পবিত্র করে, ঠিক তেমনি ফিতরাও সাওমকে পবিত্র করে।

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে,
“সদকাতুল ফিতর দ্বারা সাওম পালনের সকল দোষত্রুটি দূরীভূত হয়, গরিবের পানাহারের ব্যবস্থা হয়।” -আবু দাউদ

উপরোক্ত হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে সদকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য শুধু ‘গরিবদের ঈদের খুশিতে শরিক করা’ বলে যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে সেটা মিথ্যা। বরং এই দানের ফলে আমাদের সিয়াম সমূহের কাফফারা আদায় হয়। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার স্বরূপ হিজরীর দ্বিতীয় সালে শা’বান মাসে বিধিবদ্ধ হয়।

কাদের উপর ফিতরা ওয়াজিব

ফিতরা সেই মুসলিমের উপর ফরয যে ব্যক্তির ঈদের রাত ও দিনে নিজের এবং পরিবারের আহারের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে। আর এই সাদকা হিসাবের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষকেই হিসাবে রাখতে হবে।

একটি পরিবারে স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট, বড়, বাচ্চা, ধনী ও গরীব, শহরবাসী ও মরুবাসী সিয়াম পালনকারী, ভঙ্গকারী ইত্যাদির মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এক কথায় এ দান পরিবারের সকল সদস্যকে হিসাবে রেখে, পরিবারে যতজন সদস্য আছে ততজনের ফিতরা আদায় করতে হবে। সাদকাতুল ফিতর ফরয হওয়ার জন্য যাকাতের সমপরিমাণ নিসাব হওয়া শর্ত নয়। যেহেতু তা ব্যক্তির উপর ফরয, সম্পদের উপর নয়।

সদকায়ে ফিতর আদায়ের সময়

সাদকাতুল ফিতর আদায়ের ফজিলতপূর্ণ সময় হলো ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে ঈদের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত। ঈদের দু একদিন পূর্বেও ফিতরা আদায় করা জায়েয। কেননা সাহাবায়ে কেরাম এরূপ করেছেন। ঈদের নামাজের পর সদকায়ে ফিতর আদায় করা শুদ্ধ নয়।

ইবনু উমার (রাঃ) বলেন,
“নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) লোকেদের ঈদের নামাযের জন্য বের হওয়ার পূর্বে ফিতরার যাকাত আদায় দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।”(বুখারী ১৫০৯)

সুতরাং ঈদের দিন ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম।

ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে,

‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে তা আদায় করে দেবে তবে তার সদকা গ্রহণযোগ্য হবে, আর যে নামাজের পর আদায় করবে তার সদকা সাধারণ দান বলে গণ্য হবে।’ (বর্ণনায় আবু দাউদ)
অর্থাৎ কেউ ঈদের জামাতের পর ফিতরা আদায় করলে তা সাধারণ দানে পরিনত হবে। সাদকাতুল ফিতরের যে নেকী, সেই নেকী আর পাওয়া যাবে না।

তাই ফিতরার খাদ্য ঈদের সালাতের আগেই বন্টন করা ওয়াজিব। ঈদের সালাত পর্যন্ত দেরি করা উত্তম নয়। বরঞ্চ ঈদের এক বা দুই দিন আগে আদায় করলেও অসুবিধা নেই। আলেমদের বিশুদ্ধ অভিমত হলো, ফিতরা আদায় করার সময় শুরু হয় ২৮ শে রমাদান থেকে। কারণ রমাদান মাস ২৯ দিনও হতে পারে। আবার ৩০ দিনও হতে পারে। তাই ঈদের আগে দিলে গরিব দুঃখীরা আগে থেকেই ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ ফিতরা ঈদের একদিন বা দুই দিন আগে আদায় করতেন। এছাড়া ফিতরা আদায়ের সময় যাতে সংকীর্ণ না হয়, সেইজন্য ঈদুল ফিতরের সালাত সামান্য দেরীতে পড়া উত্তম। এতেকরে ফিতরা আদায়ের যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।

কে ফিতরা পাবে
কারা ফিতরা পাওয়ার যোগ্য বা কোন কোন প্রকারের লোক ফিতরা নিতে পারবে? এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে।

একদল আলেম মনে করেন, যারা সাধারণ সম্পদের জাকাতের হকদার তারাই সাদকাতুল ফিতরার হকদার। তাদের দলিল হলো, ফিতরাকে রাসুল সাঃ যাকাত ও সাদাকা বলেছেন। তাই যেটা সম্পদের যাকাতের খাত হবে, সেটা ফিতরারও খাত হবে। সাদাকার যেই খাত আল্লাহ সূরা তওবায় উল্লেখ করেছেন সেই খাদ সাদাকাতুল ফিতরের জন্যও হবে।

সুতরাং সেই হিসাবে আট প্রকারের লোক হলো, আল্লাহ্ বলেন,
“যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরাঃ আত তাওবাহ, আয়াতঃ ৬০)

অন্য এক দল আলেম মনে করেন, সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেবল ফকির মিসকিনদের হক, অন্যান্যদের নয়। তাদের দলিল হলো,

ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস, তিনি বলেন,
“আল্লাহর রাসূল ফিতরের যাকাত (ফিতরা) ফরজ করেছেন রোজাদারের অশ্লীলতা ও বাজে কথা-বার্তা হতে পবিত্রতা এবং মিসকিনদের আহার স্বরূপ .. ’ (আবু দাউদ, যাকাতুল ফিতর নম্বর ১৬০৬/ হাদিস হাসান, ইরওয়াউল গালীল নম্বর ৮৪৩)

সুতরাং উপরোক্ত হাদিসেই স্পষ্ট আছে যে, মিসকিনদের তথা,গরীব, দুঃস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্থকেই ফিতরা প্রদান করা যাবে।

উপরোক্ত মতকে সমর্থন জানিয়েছেন ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনুল ক্বাইয়্যূম, শাওকানী, আযীমাবাদী, ইবনু উসাইমীনসহ আরো অনেকে। ( মাজমুউ ফাতাওয়া ২৫/৭৩,যাদুল মাআদ ২/২২, নায়লুল আউত্বার ৩-৪/৬৫৭, আওনুল মা’বূদ ৫-৬/৩, শারহুল মুমতি ৬/১৮৪)

অধিকাংশ আলেম উলামাদের মতে এই মতটিই অধিক সহীহ কারণ,

এই মতের পক্ষে স্পষ্ট দলিল বিদ্যমান। আর প্রথম মতটি একটি কিয়াস (অনুমান) মাত্র। আর দলিলের বিপরীতে কিয়াস বৈধ নয়।

ফিতরাকে যাকাত সম্বোধন করলেও উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যেমনঃ ফিতরা এমন ব্যক্তির উপরও ওয়াজিব যার বাড়িতে সামান্য কিছু খাবার আছে মাত্র। কিন্তু যাকাত কেবল তার উপর ফরজ যার নিসাব পরিমাণ অর্থ- সম্পদ রয়েছে। যাকাত বাৎসরিক জমাকৃত ধন-সম্পদের কারণে দিতে হয়।আর ফিতরা সাওমের ত্রুটি বিচ্যুতির কারণে দিতে হয়। এসব কারণে ফিতরা ও যাকাতকে কখনোই এক মনে করা যাবে না।

এছাড়া সাদাকা শব্দটি দানের ব্যাপক অর্থ ব্যহৃত হয়। যেকারণে ফিতরাকে সাদাকা বলা হয়েছে। তাছাড়া যাকাত, ফিতরা এবং সাধারণ দানকেও সাদাকা বলা হয়। সুতরাং সাদাকা বললেই যে তা যাকাতকে বুঝাবে তা নয়।

যেমন রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, ‘কুল্লু মা’রুফিন সাদাকা’ অর্থাৎ প্রত্যেক ভালো কাজ সদকা। তবে নি:সন্দেহে প্রত্যেক ভালো কাজ যাকাত নয়। তবুও রাসুলুল্লাহ সাঃ তা সাদাকা বলেছেন। তাই ফিতরাকে সাদাকা বলার কারণে তা যাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

এছাড়া উল্লেখ্য যে, ফিতরার খাদ্যসমূহের মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা অন্তর্ভূক্ত নয়। তবে মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম যদি ফকীর মিসকিনদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তারা ফিতরার হকদার হবেন। বরং তারা অন্যান্য ফকীর মিসকীনদের থেকেও বেশি হকদার হবেন। কেননা এরা দ্বীনের শিক্ষা অর্জনে ও অন্যকে শিক্ষা দানে নিয়োজিত, যে গুণটি অন্যান্য ফকীর মিসকিনদের নেই।

কী দিয়ে ফিতরা দিতে হয়
আমাদের উপমহাদেশে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা হলেও হাদিসে খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায়ের কথা এসেছে।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

“রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা সাদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা‘ খাদ্য (গম) বা এক সা‘ খেজুর বা এক সা‘ যব বা এক সা‘ পনির অথবা এক সা‘ কিসমিস দান করতাম। আমরা অব্যাহতভাবে এ নিয়মই পালন করে আসছিলাম। অবশেষে মুআবিয়াহ (রাঃ) মদিনায় আমাদের নিকট আসেন এবং লোকেদের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, আমি শাম দেশের উত্তম গমের দু’ মুদ্দ পরিমাণকে এখানকার এক সা‘র সমান মনে করি। তখন থেকে লোকেরা এ কথাটিকেই গ্রহণ করে নিলো। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি কিন্তু সারা জীবন ঐ হিসাবেই সদকাতুল ফিতর পরিশোধ করে যাবো, যে হিসাবে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে তা পরিশোধ করতাম।(সুনানে ইবনে মাজাহ-১৮২৯, বুখারী ১৫০৫, ১৫০৬, ১৫০৮, ১৫১০, মুসলিম ৯৮৫, তিরমিযী ৬৭৩, নাসায়ী ২৫১১, ২৫১২, ২৫১৩, ২৫১৪, ২৫১৭, ২৫১৮, আবূ দাউদ ১৬১৬, ১৬১৮, আহমাদ ১০৭৯৮, ১১৩০১, ১১৫২২, দারেমী ১৬৬৩, ১৬৬৪, সহীহ আবী দাউদ ১৪৩৩, ইরওয়াহ ৩/৩৩৭, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ্।)

উপরোক্ত হাদিস দ্বারা সুস্পষ্ট যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে ফিতরা আদায়ের নির্দেশ হচ্ছে, খাদ্যদ্রব্য (যেমনঃ গম), খেজুর, যব, পনির, কিসমিস। এই পাঁচটি নিয়মিত খাদ্য দ্বারাই রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সময়ে ফিতরা আদায় করা হতো। আর খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় হচ্ছে সুন্নাহ পদ্ধতি।

ফিতরার পরিমাণ
আমাদের দেশ ও উপমহাদেশে খাদ্যদ্রব্য গমকে হিসাবে ধরে ফিতরার টাকা নির্ধারণ করা হয়। উপরের উল্লেখিত হাদিসেও এসেছে কী পরিমাণ খাদ্য দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক “সা” খাদ্যশস্য সাদকাতুল ফিতর হিসাবে দিতে হবে। “সা” হচ্ছে তৎকালীন সময়ের এক ধরনের ওজনের পরিমাপক।

মাঝারি দেহের অধিকারী মানুষের হাতের চার “মুদে” এক ‘সা’ হয়। (অর্থাৎ দুই হাতের কব্জি একত্র করে মুনাজাতের মতো একত্রিত করে তাতে যতটুকু ফসল নেয়া যায়, ততটুকুকে বলা এক “মুদ “। মুদ দ্বারাই আরবে দানা জাতীয় শস্য মাপা হয়।একাধিক শস্য যদি এক-‘সা’ এক-‘সা’ মেপে কেজি দিয়ে ওজন করা হয়, তাহলে এক শস্যের ওজন অপর শস্যের ওজন থেকে কম-বেশী হবে। তাই কোনো নির্দিষ্ট ওজন দ্বারা সা নির্ধারিত করা সম্ভব নয়।

রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহ হচ্ছে তৎকালীন প্রচলিত খাদ্যদ্রব্যের এক সা দ্বারা একজনের ফিতরা আদায় করা। সেই হিসাবে আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত খাদ্যদ্রব্য হচ্ছে চাউল এবং আটা। সুতরাং সুন্নাহ হলো চাউল বা আটা দ্বারা এক সা করে একজনের ফিতরা আদায় করা। বর্তমানে আমাদের দেশে এক “সা”তে আড়াই কেজি চাউল হয়।

সা নিয়ে মতভেদ
আমাদের উপমহাদেশে অর্ধ সা গম বা আটার পরিমাপের অর্থ দ্বারা ফিতরা নির্ধারন করা হয়। যদিও হাদিসে পাঁচটি খাদ্যদ্রব্যের এক সা দেওয়ার কথা এসেছে। অর্ধ সা ফিতরা দেওয়ার ফতোয়াটি মুয়াবিয়ার রাঃ। যা আগের উল্লেখিত হাদিস থেকে বুঝা যায়। একইসাথে গম দ্বারা এই সা এর পরিমাণ হলো ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম যা ইরাকের প্রচলিত সা। আর মদিনার সা দিয়ে গমের পরিমাণ হলো ২ কেজি ৪০০ গ্রাম। সুতরাং মদিনা এবং ইরাকের সা এর পার্থক্য রয়েছে।

একইসাথে হাদিসে এসেছে এক সা দেওয়ার কথা। যা রাসুলুল্লাহ সাঃ এবং ইসলামের চার খলিফা পর্যন্ত বলবৎ ছিলো। পরে মুআবিয়া ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা নির্বাচিত হন এবং ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনা থেকে দামেস্কে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপরে দামেস্ক থেকে মদিনায় গম আমদানি হতে থাকে। সে সময় সিরিয়ার গমের মূল্য খেঁজুরের দ্বিগুণ ছিল। তাই খলিফা মুয়াবিয়া কোনো এক হজ্জ বা উমরা করার সময় মদীনায় আসলে মিম্বরে বলেন, আমি অর্ধ সা গমকে এক সা খেজুরের সমতুল্য মনে করি। লোকেরা তার এই কথা মেনে নেয়। এর পর থেকে মুসলিম জনগনের মধ্যে অর্ধ সা ফিতরার প্রচলন শুরু হয়।

উপরোক্ত কারণ গুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, এক সা মদিনার পরিমাপেই একটি ফিতরা আদায় করতে হবে। কেউ যদি ইরাকের সা এর পরিমাপ ধরে মুয়াবিয়ার ফতোয়া অনুযায়ী অর্ধ সা দিয়ে ফিতরা দেয়, তাহলে তা সুন্নাহ সম্মত হবেনা। কেননা উপরের উল্লেখিত হাদিসে সাহাবী আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)সহ তৎকালীন অনেকে মুয়াবিয়ার ফতোয়াকে মেনে নেয়নি।

টাকা দিয়ে ফিতরা
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা বিভিন্ন কারণে সমস্যাযুক্ত। যারফলে বিভিন্ন আলেম উলামারা খাদ্যদ্রব্যের হিসাব করে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ে ঐক্যমত্য পোষণ করেন। আমাদের উপমহাদেশে গমের এক সা ৩ কেজি ৩০০ কে দুই ভাগ তথা অর্ধ সা হিসাব ধরে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গমের বা আটার মূল্য ধরে সর্বনিম্ন ফিতরা দেওয়া হয়। একইভাবে খেজুর, কিশমিশ, পনির, যব দ্বারাও টাকার পরিমান করা হয়।

যদিও এক পক্ষ এই টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়কে জায়েজ নয় বলে সম্বোধন করেন। তাদের যুক্তি হলো, রাসুলুল্লাহ সাঃ সময়েও মুদ্রার প্রচলন ছিলো। মুদ্রা দিয়ে ফিতরা আদায় জায়েজ হলে তিনি তা মুদ্রা দিয়েই দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। যেমন যাকাতের ক্ষেত্রে দিয়েছেন। একইসাথে ফিতরা আদায়ে লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো মিসকিনদের ভালো খাওয়া দাওয়া করানো। সেই কারণে টাকা নয় বরং খাদ্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করতে হবে। যেমন হাদিসে সুস্পষ্টভাবে এসেছে।

অন্য পক্ষের যুক্তি হলো, বর্তমান পরিস্থিতি একজন মিসকিন তার ফিতরা সংগ্রহ করতে গেলে দু চারজনের বেশি সংগ্রহ করতে পারবে না ওজনের কারণে। একইসাথে শুধু খাদ্য দিয়েই একজন মিসকিন জীবনযাপন করতে পারেন না। তার প্রয়োজনীয় সবকিছু পূরণ করতে হলে টাকার প্রয়োজন। একইসাথে টাকা বহন করতে সুবিধাজনক। টাকা দিয়ে ঐ মিসকিন তার পছন্দের খাদ্য কিনে খেতে পারবে।

একজন মিসকিন যদি খাদ্য ফিতরা সংগ্রহ করে, তাহলে তার অতিরিক্ত খাদ্য জমা হয়ে যাবে। যা তাকে কম দামে দোকানে বিক্রি করতে হবে। এটা তারজন্য লোকসান। সুতরাং খাদ্যদ্রব্য নয় সময়ের পরিস্থিতির কারণে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা যুক্তিযুক্ত। যা অধিকাংশ মুসলিমের ঐক্যমত্যের কারণে ইনশা- আল্লাহ্ তা কবুল হবে।

শুভংকরের ফাঁকি
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি পাঁচ প্রকার খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা যাবে। যা তৎকালীন আরবের প্রধান খাদ্য ছিলো। সেই হিসাবে যে অঞ্চলের যে খাদ্য প্রধান সেই খাদ্য দিয়েই ফিতরা দেওয়া সুন্নাহ। যদিও আমাদের উপমহাদেশে হাদিসে বর্ণিত পাঁচ প্রকারের খাদ্য (যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম) এর পরিমাপ করে ফিতরার টাকা নির্ধারিত হয়।

সেই হিসাবে উন্নত মানের খেজুরের দাম বর্তমান সময়ে সবসময়ই বেশী হয়। এরপরের স্থান রয়েছে পনির যার মূল্য খেজুরের চাইতে কিছু কম। এভাবে কিসমিস, যব এবং গম। যা হাদিসে উল্লেখিত খাদ্যদ্রব্য।

আমাদের উপমহাদেশে গমের অর্ধ সা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম ধরে সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারন করা হয়। যে হিসাব দিয়েই ধনী গরিব, সচ্ছল, অসচ্ছল, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবাই ফিতরা আদায় করে। যা যৌক্তিক কারণে কখনোই সঠিক নয়। কেননা সামর্থ্য অনুযায়ী ফিতরা দিতে হবে।

প্রতিবছর গমের হিসাব ধরে ফিতরা টাকা প্রকাশিত হওয়ার কারণে অধিকাংশ মুসলমানই জানেনা যে তাকে আসলেই কত টাকা ফিতরা দেওয়া উচিত। যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সকল খাদ্যদ্রব্যের টাকা নির্ধারিত করে দিলেও, প্রচারিত হয় শুধুমাত্র সর্ব নিম্ন ফিতরা টাকা ৬০/৭০/৮০ টাকার মতো। যা একজন রিকশাওয়ালা, দিনমজুরসহ খুবই সামান্য আয়ে চলে এমন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য।

রাসুল সাঃ এর সুন্নাহ থেকে সরে এসে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের কারণে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যিনি ফিতরা দিচ্ছেন তিনি সুন্নাহ মানছেন না। কারণ যিনি নিচ্ছেন তিনি খাদ্য না নিয়ে টাকা নিতে আগ্রহী। যারফলে যারা ফিতরা নিচ্ছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনেকভাবে।

যদি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহ অনুযায়ী খাদ্য দিয়ে যেমনঃ নূন্যতম চাউল দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হলে, যিনি ফিতরা দিবেন তিনি নিজেই খুঁজে খুঁজে তা দিয়ে আসবেন। এবং এটাই সুন্নাহ। এক্ষেত্রে ফিতরা গ্রহীতাকে কষ্ট করে মানুষের দুয়ারে যেতে হবে না।

এছাড়াও একজন ফিতরা গ্রহীতা যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য পাবে, সেই খাদ্য সে এমন কারো কাছে বিক্রি করবে যে কম আয়ের মানুষ। এতেকরে দুই শ্রেণীই উপকৃত হতে পারে। তাছাড়া সারা উপমহাদেশে গমের দামে ফিতরা দেওয়ার কারণে একজন দানকারী খুবই সামান্য টাকাই ফিতরা দিচ্ছে। যা অন্যান্য খাদ্য দিয়ে দিতে হলে আরো অনেক বেশীই দিতে হতো। একইভাবে কম দেওয়ার কারণে ফিতরা গ্রহীতাও কম টাকা পাচ্ছে।

একজন মিসকিন যদি পুরো একটি ফিতরা পেতো তাহলে সে নূন্যতম ২০/৩০ টির চাইতেও বেশী ফিতরা পেতো। যা চাউল দিয়ে হিসাব করলেও (২কেজি৫০০ গ্রাম ধরে) ৫০ /৭৫ কেজি হতো। যার মূল্য ৩০০০/৪৫০০ টাকা হতো। অথচ এখন ঘরে ঘরে গিয়ে ফিতরা আদায় করতে গিয়ে ১০ /২০ টাকার বেশী পায় না। যার সর্বমোট হিসাব করলে ১০০০ /১৫০০ টাকার বেশী কখনোই সম্ভব নয়।

নূন্যতম হিসাব ধরে যদি একজন গ্রহীতা তিন থেকে চার হাজার টাকা পেতে পারে। তাহলে বেশী হিসাব ধরে ফিতরা দিলে কত টাকা হতে পারে। আর আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্যই অর্ধাংশ লোক বেশী মূল্যের ফিতরা দেওয়ার উপযোগী।

এই কারণে দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দাতা সঠিক নিয়মে ফিতরা না দেওয়ার কারণে পরিপূর্ণ নেকী পাচ্ছে না। আর গ্রহীতা কম পাওয়ার কারণে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়ছে। এভাবেই দ্বীন পালন করতে গিয়ে আমরা শুভংকরের ফাঁকিতে পড়ে গেছি। সুতরাং আমাদের উচিত সুন্নাহ পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করা যাতে আল্লাহ্ থেকে পরিপূর্ণ নেকী পাওয়া যায় এবং গরিব দুঃখীদেরও অসচ্ছলতা দূর হয়।

সাদকাতুল ফিতরের উপকারিতা
ক) এই দান যেহেতু সাওম পালনের ভুল- ত্রুটির জন্য, সেহেতু এই দানের বিনিময়ে আল্লাহ্ আমাদের গোনাহ গুলোকে মিটিয়ে দেন।

খ) রাসুলুল্লাহ সাঃ হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। তিনি সমাজে সাম্যাবস্থা তৈরি করার জন্য এই সাদকার প্রচলন করেছেন। যাতে ধনী গরিব দুঃস্থ অসহায় সকলে মিলে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।

গ) এছাড়াও আল্লাহ আমাদের শারিরীক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু দান করেছেন। যার কারণে আমরা বেঁচে থেকে সুস্থ শরীরে এক মাস সিয়াম পালন করতে পারলাম। সুস্থতা এবং আমল করতে পারার কারণে আল্লাহ্ নিকট শুকরিয়া স্বরুপ হলো এই ফিতরা। যা দেহের যাকাত নামেও পরিচিত।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, প্রতিটি ব্যক্তিকে ঘরের সকল সদস্যদের ফিতরা দিতে হবে, যার ঘরে দুই তিন বেলার পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। একইসাথে খাদ্যদ্রব্য দ্বারাই ফিতরা আদায় সুন্নাহ। তবে পরিস্থিতির কারণে টাকা দিয়েও ফিতরা আদায় করা যাবে। তবে তা অবশ্যই সামর্থ্য অনুযায়ী দিতে হবে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্নাহ পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করা।

তথ্য ইন্টারনেট থেকে

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

১৬ এপ্রিল, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
[email protected]

সরস্বতী বন্দনা

1551

পরাবাস্তবতা, অতিবাস্তবতা, ভ্রম, বৈকল্য আদি সংহারিনী
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা জ্ঞানপ্রদায়িনী
তব আশির্বাদে রেখো সম্পৃক্ত হৃদিপদ্মে সদা বিচরণকারিণী
শুভ্রকান্তি মাতা দেবী সরস্বতী পদ্মলোচনা বীণাপুস্তকধারিণী
ঘুচাও দু:স্বপ্ন, ঘুচাও মোহ, ঘুচাও অন্ধ তামস জগত ব্যাপিয়া
প্রণমি তোমায় এই শুভদিনে বাগ্দেবী জ্যোতির্ময়ী হরিপ্রিয়া

পুরনো রেললাইন এখন বেগম নাগিনা জোহা সড়ক

অনেকদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল পুরোনো রেলপথ নতুন করে মহাসড়ক হওয়ার কথা। কথাটি কারোর মুখের কথা নয়, খোদ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা। জারিকৃত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় গত ২৫ মে (মঙ্গলবার) ২০২১ইং। এদিন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলার খানপুর হতে হাজীগঞ্জ গোদনাইল হয়ে ইপিজেড পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি ভাষা সৈনিক “বেগম নাগিনা জোহা সড়ক” নামকরণ করা হয়েছে।

IMG0504

এই সড়কটি আগে ছিলো রেলপথ বা রেললাইন। রেললাইনটি দেশ স্বাধীন হবার আগে শুধু নারায়ণগঞ্জ গোদনাইলস্থ বর্তমান নাম বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.) বা সংক্ষেপে “কো-অপারেটিভ” জুট প্রেসের জন্যই রেললাইন স্থাপন করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এখানে সরকারের খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখার কাকগুলো গোডাউন ছিলো। কোনও দুর্যোগের কারণে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দিলে এখানকার গোডাউন থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা-শহরে জরুরি খাদ্য সরবরাহ করা হতো।

IMG0504M
ছবিটি গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি আদর্শ বাজারের একাংশ।

বলে রাখা ভালো যে, “বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.) জুট প্রেসে বর্তমানে সরকারের কোনও খাদ্য মজুদ রাখার গোডাউন নেই। এখন এখানে পাট মজুদ রাখার অনেকগুলো গোডাউন আছে এবং পাট বেলিং করার জুট প্রেস আছে। তবে এমন সরকারি মালামাল মজুদ রাখার গোডাউন শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে আরও দুটি আছে। একটি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ‘বিশ্ব গোডাউন’ নামে পরিচিত। কেউ কেউ বলে ‘সাইলো’। আরেকটি নারায়ণগঞ্জ নগর খানপুর সংলগ্ন বরফকল নামক স্থানে।”

তো যাইহোক, মূল কথায় ফিরে আসি!
তখনকার সময়ে এখানে (কো-অপারেটিভ বা বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.)-এ থাকা গোডাউনে মজুদ থাকা খাদ্যসামগ্রীও আনা হতো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। সেসময়ে এখানে থাকা গোডাউন গুলোতে খাদ্য ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করার একমাত্র উপায় ছিলো নৌপথ। নৌপথ ছাড়া আর অন্য কোনও পথে এখানকার এসব গোডাউন থেকে কোনও মালামাল আনা যেতো না, মালামাল নেওয়াও যেতো না।

এতে সরকারের খরচ হতো অনেক এবং মালামাল সরবরাহের কাজেও লেগে যেতো দীর্ঘ সময়। তাই তৎকালীন সরকার সময় ও খরচ বাঁচতে এখানে খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখা ও দ্রুত সময়ে ডেলিভারি দেয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া রেলস্টেশন থেকে খানপুর, তল্লা, হাজীগঞ্জ, পাঠানটুলির ভেতর দিয়ে “বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.)” পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করে রেলপথে খাদ্যসামগ্রী-সহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া শুরু করে।

তারপর এই সংস্থার সন্নিকটে থাকা গোদনাইলস্থ “বিজেএমসি” জুট প্রেস কর্তৃপক্ষও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দ্রুত সময়ে কম খরচে পাট আনা-নেওয়ার জন্য রেল সংযোগ স্থাপন করে। পরবর্তীতে এশিয়ার সেরা আদমজী জুট মিলস কর্তৃপক্ষও তাদের সুবিধা মাথায় রেখে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে, রেল কর্তৃপক্ষ আদমজী জুট মিলেও রেল সংযোগ দিয়ে দেয়।

তারপর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার “সাইলো” বা “সেলো” বা ‘বিশ্ব গোডাউনে’র জন্যও রেল সংযোগ স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে অনেক বছর পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.), বিজেএমসি, আদমজী জুট মিলস ও সাইলো বা সেলো বা বিশ্ব গোডাউন’এ পণ্যবাহী রেল নিয়মিত যাতায়াত করতো।

দেশ স্বাধীন হবার পরও ১৯৮৬-৮৭ সাল পর্যন্ত এই রেলপথে পণ্যবাহী রেল চলাচল করতে নিজেও দেখেছি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর আর এই রেলপথে পণ্যবাহী রেল চলাচল করতে আর দেখা যায়নি। কিন্তু রেললাইন ঠিকই থেকে যায়।

তারপর আস্তে আস্তে যখন দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে আর নারায়ণগঞ্জ শহরে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান হুহু করে বাড়তে থাকে, তখনই দেশের বিভিন্ন জেলা-শহর থেকে কর্মজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায় আসতে শুরু করে। আসতে থাকা কিছু মানুষ থাকতে শুরু করে ভাড়া বাসায়, কিছু মানুষ থাকতে থাকে রেল লাইনের পাশে বস্তি বানিয়ে।

বিভিন্ন জেলা-শহর থেকে আসা মানুষের সাথে কিছু স্থানীয় বাসিন্দারাও যার যার বাড়ির সামনে রেল লাইনের পাশে পরিত্যক্ত জায়গা ও জলাশয় দখলে নিয়ে যারযার মতো করে ঘরবাড়ি দোকানপাট গড়ে তুলতে শুরু করে। এভাবে একসময় নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া হতে সিদ্ধিরগঞ্জ বিশ্ব গোডাউন পর্যন্ত পুরো রেললাইনের দুই পাশ বেদখল হয়ে পড়ে এবং রেল লাইনের পাশে গড়ে ওঠা ঐসব বস্তি ঘরগুলো পরিনত হয় একেক জনের একেকটা বাড়িতে। সেসব ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট নিজেদেরই মনে করে থাকতে থাকে বছরের পর বছর।

এতো বছর পর যখন গত ২৫ মে (মঙ্গলবার) ২০২১ইং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে নতুন সড়কের নামকরণ-সহ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, তখনই রেল লাইনের জায়গা দখল করা ব্যক্তি মালিকদের মাথায় পড়ে বজ্রপাত। কারো কারোর আগামী দিনের সমস্ত স্বপ্ন মুহূর্তে হয়ে যায় ধূলিস্যাৎ। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে। কাউকে আবার বলতে শোনা যায়, “এ দেশে ভিনদেশ থেকে আসা মানুষেরা বাসস্থান পায়, অথচ আমরা দেশের ভূমিহীন নাগরিকরা হচ্ছি উচ্ছেদের শিকার। যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের মাঝে শতশত বাড়ি বিতরণ করছে, সেখানে আমাদের উচ্ছেদ করে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে সাগরে।”

তো যে যা-ই বলুক, এতে কারোর তো কিছুই করার নেই। কারণ, গতবছর থেকে অর্থাৎ ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই রেল কর্তৃপক্ষ চাষাঢ়া হতে সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী ইপিজেড পর্যন্ত রেললাইনের দুপাশ মাপ-জোপ করে লাল চিহ্ন দিয়ে দেয়। তারপর মাইকিং করে লাল চিহ্নিত জায়গা ও জলাশয় খালি করতে বলা হয়। এর কিছুদিন পরপরই খানপুর সংলগ্ন চাষাঢ়া চাঁনমারি থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত শুরু হয় উচ্ছেদ। অপরদিকে আদমজী ইপিজেড থেকে ২নং ঢাকেশ্বরী বাজার সংলগ্ন পর্যন্তও শুরু হয় উচ্ছেদ। উচ্ছেদের পরপরই দুই সাইটে দ্রুতগতিতে চলতে থাকে নতুন সড়কের নির্মাণ কাজ। বাদ থেকে যায় গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি, পাঠানটুলি, রসূলবাগ পর্যন্ত।

নতুন সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রথমে করা হয় মাইকিং। তারপর হাতে হাতে বিলি করা হয় নোটিশ। বেঁধে দেয়া হয় ২২/০৩/২০২২ইং তারিখ পর্যন্ত সময়সীমা। গত ২৩/০৩/২০২২ ইং তারিখ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও উচ্ছেদ করতে পারেননি। আবার দেয়া হয় ৭দিনের সময়। তারপরও অনেকেই যার যার দখল করা জায়গার মায়া ছাড়তে পারছিলেন না।এরপর গত ০১/০৪/২০২২ইং তারিখ বেলা তিনটা থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এখন পুরো রেল লাইনের দুপাশে বসবাস করা অনেকেই বলছে, “কী আর করা! সরকারের জায়গা তো সরকার নিবেই, এটাই তো নিয়ম!”

আর সেই নিয়মেই চলছে দ্রুতগতিতে উচ্ছেদ অভিযান ও ভাষা সৈনিক “বেগম নাগিনা জোহা সড়ক” এর নির্মাণ কাজ। আশা করা যায় আগামী বছরই এই সড়ক দিয়ে দিন-রাত যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে মনে হয়।

উল্লেখ্য, ভাষা সৈনিক “বেগম নাগিনা জোহা” ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং প্রাক্তন গণপরিষদ ও সংসদ সদস্য, স্বাধীনতা (মরণোত্তর) পদকপ্রাপ্ত এ কে এম শামসুজ্জোহার সহধর্মিণী এবং নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা এ কে এম শামীম ওসমান’র মা।

খাদ্য উৎসব ও কেনাকাটার উন্মাদনাঃ রমজানে সংযত হোন

salo_15

রমজানে সংযত হোন। বর্জন করুন খাদ্য উৎসব ও কেনাকাটার উন্মাদনা। খাবার বা ভুরিভোজের চেয়ে এই এবাদত টা জরুরী। খাদ্য উৎসবের চাপে আমরা ভুলেই যাই যে ইফতার ও সেহেরী একটা এবাদত!
নবীজি সা: বলেছেন–
ইফতারের আগ মূহূর্ত হচ্ছে দোয়া কবুলের উত্তম সময়। আল্লাহ এ। সময় অন্তত একটা দোয়া কবুল করবেনই।

তাহলে কেন আমরা এই সুযোগ গ্রহণ করবো না?
সারা বছর গুনাহগারি করেছি
অনন্ত এই রমজান মাসে সেটা কিছুটা তো মাপ করাতে পারি।
দুনিয়ার মিথ্যা নেতাদের খুশি করতে আমাদের তোষামোদ আমাদের চেষ্টার কোন অভাব নাই। এসব নেতারা কি করবে?
বড় জোর দু দিন আরাম আয়েশ করা ছাড়া আর কোন উপকারে আসবে না।
আমাদের উচিত অন্তত রমজান মাসে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া-
কারন –
আল্লাহই একমাত্র রিজিক দাতা।
আল্লাহই একমাত্র সম্মান দাতা।
আল্লাহই একমাত্র আশ্রয় দাতা।

আসুন রোজাকে আরেকটু ভাল করে জেনে নিই-
রোজার ব্যাপারে কয়েকটি ভুল ধারণা :

ইসলামের যে নির্দেশনাগুলো শত শত বছর ধরে প্রতিপালিত হতে হতে একসময় সংস্কৃতিরও অংশ হয়ে গেছে, রোজা তার একটি। তবে সংস্কৃতি করণের এই প্রক্রিয়ায় মাঝে মাঝে এখানে ঢুকে গেছে নানারকম অবিদ্যা বা ভুল ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি। ধর্মের মূল নির্যাস থেকে যেমন তা সরে গেছে, তেমনি আচারসর্বস্ব এই চর্চার ফলে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে রোজার শারীরিক মানসিক, আত্মিক উপকার থেকে। তেমনি কিছু ভুল ধারণা নিয়েই এ সংকলন-

রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয়
সাধারণ একটি ধারণা হলো রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয়। দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এই ভয়ে কেউ কেউ রোজা রাখেন না, বিশেষ করে যারা নিজেদেরকে মনে করেন, শারীরিকভাবে দুর্বল। অনেকে হয়তো রমজানের প্রথম কয়েকদিন রাখেন। পরের দিকে আর রাখেন না। আবার বিরতি দিয়ে রোজা রাখার প্রবণতাও আছে কারো কারো।

অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে, রোজা এনার্জি লেভেলকে বাড়িয়ে দেয়। বরং এই যে সবসময় খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে থাকা- বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে নিজের অজান্তেই আপনি আপনার দেহকে ঠেলে দিচ্ছেন ভয়ঙ্কর কিছু শারীরিক ঝুঁকির দিকে! ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলা যাক।

আমাদের দেহে আইজিএফ-১ হরমোন নামে এক ধরনের গ্রোথ হরমোন আছে যার কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোষ তৈরি করে দেহকে বাড়ন্ত রাখা। এসময় পুরনো কোষের মেরামত বা ক্ষয়পূরণের চেয়ে নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়াই বেশি সক্রিয় থাকে।

আপনি যত বেশি খাবেন, বিশেষত প্রোটিন জাতীয় খাবার, তত বেশি আপনার দেহ আইজিএফ-১ তৈরি করবে। সবসময় যখন এমন একটা অবস্থা থাকে, অর্থাৎ কোনো বিরতি বা বিশ্রাম ছাড়া প্রতিনিয়ত নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়া- এই সুযোগেই দেহে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের মতো মারণ ব্যাধিগুলো। কয়েক ধরনের ক্যান্সার, যেমন, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের সাথে বিজ্ঞানীরা উচ্চমাত্রার আইজিএফ-১ এর যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা বলেন, এই অবস্থাকে পাল্টে দিতেই তাই মাঝে মাঝে খাবার থেকে দেহকে অব্যাহতি দেয়া দরকার। একটা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ঝুঁকি পূর্ণ মাত্রায় দেহে আইজিএফ-১ হরমোন আছে, এমন একজন মানুষ মাত্র তিন দিন উপবাস করে তা নামিয়ে ফেলেছেন অর্ধেকে! ডাক্তাররা তাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তার প্রবল। কিন্তু আইজিএফ-এর মাত্রা কমে যাওয়ায়, এখন কমে গেল সে ঝুঁকিও।

সেহরিতে বেশি করে খেতে হবে
আমরা কেউ কেউ মনে করি, এত বড় একটা দিন রোজা রাখতে হবে! যত বেশি খেয়ে নেয়া যায়, তত ভালো! ফলে সেহরিতে রাখি ভূরিভোজের ব্যবস্থা – গরুর গোশত, মাছ, মুরগি, ভাত-সবজি, দুধ, ফল, চা-কফি, ডেজার্ট ইত্যাদি দিয়ে এলাহি কাণ্ড। অথচ সুস্থ রোজার চর্চায় এর চেয়ে ভ্রান্তির আর কিছু নেই।

প্রথমত, রোজা রেখে আপনি পানি খেতে পারছেন না। আর প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রক্রিয়াজাত করতে দেহে লাগে প্রচুর পানি। ফলে সেহরিতে এসব খাবার যত বেশি খাবেন, আপনার তৃষ্ণা পাবে বেশি, অস্বস্তিবোধ হবে বেশি।

দ্বিতীয়ত, সুস্থ থাকার সাথে আসলে বেশি খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ১০৫ বছর বয়সী ফৌজা সিং। সবচেয়ে বেশি বয়সী ম্যারাথন দৌড়বিদ হিসেবে বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী। ২০১৩ সালে অবসর নেয়ার আগে হংকংয়ের যে ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় শেষবারের মতো ফৌজা সিং অংশ নেন, সেখানে ১০ কিমি দৌড়েছেন তিনি মাত্র ১ ঘণ্টা ৩২ মিনিটে, ১০২ বছর বয়সে! আজ পর্যন্ত তার দেহে কোনো অপারেশন হয়নি, হৃদরোগ নেই তার, কখনো তিনি কোনো ওষুধ খান নি।

এই সুস্থ দীর্ঘজীবনের রহস্য কী? কোনো বিশেষ খাবার-দাবার? না, বরং পাঞ্জাবের এক সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে আসা ফৌজা সিংয়ের খাবার খুবই সাধারণ – কাঁচা ফল, সবজি, নিরামিষ। কিন্তু তার রহস্যটা হলো খাবারের পরিমাণ! একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে যে পরিমাণ খায়, ফৌজা সিং খান তার অর্ধেক। অর্থাৎ একটি শিশু যে পরিমাণ খায়, অনেকটা সে পরিমাণ!

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যে রোজা ক্ষতিকর
ডায়াবেটিস রোগীদের যেহেতু নিয়ম করে খেতে হয়, তাই ডায়াবেটিস থাকলে রোজা রাখা যাবে কি না- এ নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।

তার আগে আমাদের একটু বুঝতে হবে, ডায়াবেটিস মানে কী? খুব সহজ ভাষায় বললে, আপনার ডায়াবেটিস হওয়া মানে হলো, আপনার জন্যে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন আর আপনার দেহ তৈরি করতে পারছে না। আর এটা তখন হয়, যখন প্রচুর খাওয়া-দাওয়ার কারণে অতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরি হতে থাকে এবং নিয়মিত তা পেতে পেতে অলস এবং তৃপ্ত কোষগুলো একসময় ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়।

কিন্তু আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এজিংয়ের নিউরো সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রধান ড. মার্ক ম্যাটসন তার এক গবেষণায় দেখেন উপবাস বা খাবার না খাওয়া এক্ষেত্রে চমকপ্রদ কিছু ফল দেখাচ্ছে। তার এ গবেষণায় তিনি ইঁদুর ব্যবহার করেছিলেন। ইঁদুরগুলোকে তিনি দুভাগ করেন। এক ভাগকে মাঝে মাঝে না খাইয়ে রাখতে লাগলেন। আর এক ভাগকে নিয়মিতভাবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এবং চিনি মেশানো পানি দিয়ে গেলেন। দেখা গেল মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকার ফলে সংশ্লিষ্ট ইঁদুরগুলোর দেহে ইনসুলিনের সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়ছে। আর এতে করে তাদের কোষগুলো সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে এবং বেড়েছে মেটাবলিজম। আর যে-দেহে এ অবস্থা বিরাজ করে, সে-দেহে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যায়।

আলসার থাকলে রোজা রাখা যায় না
আলসার রোগীদের একটা ধারণা আছে যে, তারা রোজা রাখতে পারবেন না। কারণ রোজাতে দীর্ঘ না খাওয়া, তাদের আলসার বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু কোনো কোনো আলসার, যেমন, পেপটিক আলসারের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসাই হলো রোজা। কারণ খাওয়ার পর একজন মানুষের পাকস্থলীতে যে এসিড নিঃসরণ হয়, রোজার সময় তা কমে যায়। কারণ তখন সে না খেয়ে থাকে। যে কারণে রোজা রাখলে পেপটিক আলসারের রোগীদের সমস্যাগুলো অনেক কমে যায়।

রোজার মাসে খাবারের কোনো হিসাব নাই
একটা ধারণা সাধারণভাবে প্রচলিত আছে যে, রোজার মাসে খাবারের কোনো হিসাব নাই। অর্থাৎ রোজা রাখার পর ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত একজন মুসলমান হালাল হলে যে-কোনো খাবার- যত খুশি খেতে পারে, আকণ্ঠ পান করতে পারে। ধর্মে তাকে এই ছাড় দেয়া হয়েছে। আর এই অবিদ্যা প্রসূত ধারণারই ফসল হলো – অন্য সময় আমরা যা খাই, রোজার সময় তার চেয়ে বেশি খাই। অন্য সময় যদি দুবেলা খাই (কারণ অনেকেই নাশতা বা দুপুরের খাবার যে-কোনো একটা খুব হালকা করেন), তো রোজার মাসে খাই তিনবেলা। ইফতারে ভূরিভোজ, তারপর ডিনার এবং শেষরাতে ভরপেট সেহরি। রোজার মাসে আমাদের খরচ বেড়ে যায়, বাড়ে দ্রব্যমূল্য। আর ব্যবসায়ীরাও এ সুযোগে আয়োজন করেন রমজান ফেস্টিভাল, ইফতার ফেস্টিভাল (!) ইত্যাদি। অর্থাৎ খাদ্য সংযমের একটি পবিত্র ধর্ম বিধানকে আমরা রূপান্তরিত করেছি খাদ্য উৎসবের আয়োজনে!

কিন্তু ধর্ম কি তা বলে? রমজানের যে আরবি প্রতিশব্দ ‘সিয়াম’- সেই সিয়ামের আক্ষরিক অর্থই হলো ‘সংযম’। এবং এ সংযম শুধু খাবার বা পানি থেকে সংযম নয়, এটা চিন্তায়, কথায়, আচরণে – সবক্ষেত্রেই। কাজেই যুক্তি বলে, রমজানের এই একমাসের সংযম চর্চা একজন মানুষের ভোজন প্রবণতাকে কমাবে, তার বাড়তি ওজন কমবে, কমবে খাওয়াবাবদ তার খরচ। যদি তা না হয়, তাহলে বুঝতে হবে রোজার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই তার ভ্রান্তি আছে।

ইফতার আর সেহরি পার্টি!
পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার শিকার হয়ে আমরা অনেকেই এখন পণ্যদাস। পণ্য দিয়েই আমরা মাপি আমাদের স্ট্যাটাস, ভালো থাকা, খারাপ থাকা ইত্যাদি। এর এ প্রক্রিয়ারই নতুন সংযোজন হিসেবে এখন আমরা হয়ে উঠছি ভোজনদাস। বুফে ডিনার, বুফে লাঞ্চ, দামী আইসক্রিম শপ, পিজা আর ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে বন্ধুবান্ধব পরিবারকে নিয়ে যাওয়া আর ফেসবুকে সে ছবি আপলোড করাই আমাদের কারো কারো স্ট্যাটাস বাড়ানোর উপায়!

ইফতার আর সেহরি পার্টি এই ভোজনদাসত্বেরই আরেকটি ধর্মীয় ভার্সন! অর্থাৎ ধর্মের নামে হলেও এ পার্টিগুলোতে খাবার-দাবার নিয়ে যে বিলাসিতা হয়, তার সাথে কি ধর্মের মিল আছে! নবীজী (স) কীভাবে ইফতার করতেন!

হযরত আনাস ইবনে মালিকের (রা) বর্ণনা থেকে জানা যায়, নবীজি (স) ইফতার করতেন তাজা খেজুর দিয়ে। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। আর যদি তাও না পাওয়া যেত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে। এরপর তিনি মাগরিবের নামাজ পড়ে নিতেন।

আর ভোজন দাসত্বের সাম্প্রতিক সংযোজন হলো সেহরি পার্টি। অভিজাত এলাকার হোটেলগুলো এখন সেহরির সময় খোলা থাকে! ব্যাপারটা এমন নয় যে, বাসায় রান্না করার সুবিধে নেই, তাই হোটেলে সেহরি খেতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের জন্যে এটা। বরং এটা তথাকথিত অভিজাত বিলাসবহুল হোটেল-রেস্টুরেন্টের কথা যেখানে দলবেঁধে সেহরি খাওয়ার নামে বিপুল অর্থ খরচ করে এসে একশ্রেণীর মানুষ তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন এই ভেবে যে, তার স্ট্যাটাস বাড়ানো গেছে!

হযরত আনাস ইবনে মালিকেরই আরেকটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, একবার নবীজী (সঃ) সেহরির সময় তাকে বললেন, আনাস আমি রোজা রাখার নিয়ত করেছি। আমাকে কিছু খাবার দাও। আনাস (রা) তখন তাকে কয়েকটি খেজুর আর একটা পাত্রে পানি দিলেন! নবীজী (স) তাই খেলেন।

তার উম্মত হিসেবে তার বিধিবিধান অনুসরণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
আসুন সবাই সবার জন্য প্রার্থনা করি- আল্লাহ সকলের সহায় হোন।

দাউদুল ইসলাম।