বিভাগের আর্কাইভঃ জীবন

সেই ৩০শে মে!

nn মে মাস ১৯৮১। আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। আমি নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজের ছাত্রী ছিলাম এবং আমার সিট মহিলা কলেজেই পড়েছিলো। তখন দেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আমি রাজনীতি বুঝতাম না, ছাত্র রাজনীতিও বুঝতাম না। জিয়াউর রহমানকে অপছন্দ করতাম, কারণ বড়োদের মুখে শুনতাম যে বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জিয়াউর রহমান জড়িত এবং বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা মুছে তিনি বিসমিল্লাহ যোগ করেছেন। সংবিধানে বিসমিল্লাহ যোগ করার অর্থ, রাষ্ট্রের মুসলমানি হয়ে যাওয়া, অন্য ধর্মের নাগরিকের অধিকার খর্ব হওয়া, মনের দিক থেকে দুর্বল হয়ে যাওয়া।

পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পর এমনিতেই বাংলাদেশে আওয়ামীপন্থী জনগণ মানসিকভাবে কুঁকড়ে গেছিলো। এরপর যখন জিয়াউর রহমান সাহেব সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা কেটে বিসমিল্লাহ যোগ করে দিলো, তাতে প্রতিবেশী মুসলমানদের খুব উল্লসিত হতে দেখে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে ভয়, ক্ষোভ, সন্দেহ, অবিশ্বাস জন্ম নিতে শুরু করে। আমরা জানতাম, সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা থাকলে রাষ্ট্রের সকল ধর্মের অনুসারীদের সর্বক্ষেত্রে সম অধিকার থাকে, রাষ্ট্রের জনগণ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়।

কিন্তু জিয়াউর রহমান ধর্ম নিরপেক্ষতা কেটে বিসমিল্লাহ যোগ করার পর থেকেই যেনো আমরা বাঙালি পরিচয় হারিয়ে মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান আলাদা নামে পরিচিত হয়ে গেলাম। এবং অবশ্যই বিসমিল্লাহর জোরে মুসলমানরা এক দেশের এক মাটির সন্তান হয়েও আমাদের চোখে ‘ সুপিরিয়র’ হয়ে গেলো। কথা আরো আছে, জিয়াউর রহমান শুধু রাষ্ট্রের গায়ে বিসমিল্লাহ লাগিয়ে ক্ষান্ত হননি, পাকিস্তানের অনুকরণে আমাদের জাতীয়তা ‘বাঙালি’ মুছে দিয়ে বাংলাদেশী করে দিলেন। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান মুছে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ করে দিলেন। ফলে অলিখিতভাবেই শিক্ষাঙ্গনে, কর্মক্ষেত্রে, কমপিটিটিভ পরীক্ষায় অমুসলিম ক্যান্ডিডেটরা মেধা থাকা সত্ত্বেও শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের বৈষম্যের কারণে অনেক পেছনে পড়ে থাকতো।

তখন কেউ কল্পনাই করতে পারতো না, অমুসলিম কেউ এসএসসি এইচএসসিতে প্রথম দ্বিতীয় স্থান পাবে! বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্টেও দেখা যেতো, প্রচন্ড মেধাবী কোনো শিক্ষার্থী ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়ার দাবীদার, কিন্তু অমুসলিম নামের কারণে তাকে শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে দেয়া হতো না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমানের শাসনকালে দেশে যে পরিবেশ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তাতে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু নামে দুটো প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছে। সংখ্যাগুরুরা নিজেদের যতই সুপিরিয়র ভাবতে শুরু করলো, সংখ্যালঘুদের মাঝে ততই ইনসিকিউরিটি, ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স জন্ম নিতে শুরু করলো।

হীনমন্যতাবোধ নিয়ে আর যাই হোক, শান্তিতে অথবা স্বস্তিতে বাঁচা যায় না। সংখ্যালঘুদের হীনমন্যতাবোধ নিয়ে বাঁচার কষ্টটা জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। উঠতি তারুণ্যে এমন পরিবেশ পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমানকে পছন্দ করার কোনো কারণ ছিলো না আমার। রাজনীতি না বুঝেও জিয়াউর রহমান যে ভিলেন ছিলেন, সেটা বুঝতাম।

১৯৮১ সালের মে মাসের কথা বলছিলাম, আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। খুব সম্ভবত বাংলা অথবা ইংলিশ পরীক্ষা ছিলো সেদিন। মহিলা কলেজ কেন্দ্রে বসে পরীক্ষা দিচ্ছি। হঠাৎ কলেজ করিডোরে কিছু চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। ব্যাপার বুঝে ওঠার আগেই পাশের তোলারাম কলেজের কিছু ছাত্র জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দিতেই আমাদের হলরুমে প্রবেশ করলো। তারা নিজেদের পরিচয় দিলো ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে, নেতৃত্বে ছিলো শামীম ওসমান ( তরুণ নেতা)। জিয়াউর রহমানের কোনো একটা কালা কানুনের বিরুদ্ধে সংক্ষেপে বক্তৃতা দিলো, এরপর বললো, পরীক্ষা দেয়া যাবে না। এবার এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল।

আমাদের খাতাগুলো দ্রুত গতিতে টান দিয়ে নিয়ে ইনভিজিলেটরের কাছে দিয়ে ওরা পাশের রুমে চলে গেলো। আমি খুব থ্রিল ফিল করছিলাম, তাৎক্ষণিকভাবে খুব খুশি হয়েছি পরীক্ষা দিতে হলো না বলে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মাথাতেই আসেনি এটা এইচএসসি পরীক্ষা, পরীক্ষা দিতে না পারলে এক বছর লস হয়ে যাবে, বছর লস করলে আমার বাবা আছাড় দিবে আমাকে। আমি ভাবছিলাম, জিয়াউর রহমানের আমলে ছাত্রলীগ বলে কেউ আছে তাইই তো জানতাম না। এরা কোথা থেকে এলো, আর কী সাহস এদের! কয়েকটা ছেলে ঘরে ঢুকে আমাদের পরীক্ষা বন্ধ করে দিলো!

বাসায় যেতে যেতে ভয় পাচ্ছিলাম বাবার কাছে কি জবাব দেবো। মনে মনে বলছিলাম, আমার তো কোনো দোষ নেই। এক বছর লস হয়ে যাবে! বাবাকে বুঝিয়ে বলতে হবে, এই এক বছর আরো ভালো করে পড়তে পারবো, পরের বছর ডাবল ভালো রেজাল্ট হবে! বাসায় ফিরে শুনি, পরীক্ষার হলে গোলমালের সংবাদ অনেক আগেই তারা পেয়ে গেছে। ওরা নাকি খোঁজ নিতে জনে জনে জিজ্ঞেস করছিলো, আমরা সুস্থ আছি কিনা।
আমাকে বাসায় আস্ত ফিরতে দেখে বাবা মা’কে নিশ্চিন্ত হতে দেখে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

পরীক্ষা দিতে হবে না, আমার এই আনন্দ বিকেলেই নিরানন্দ হয়ে গেলো। জানা গেলো, এইচএসসি পরীক্ষা চলবে। আজ যে পরীক্ষা দেয়া গেলো না, তা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমাদের সিট নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে ঢাকা কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে। আমার সকল আশার গুড়েবালি, সকল থ্রিল ওখানেই ঠান্ডা। উলটো পরীক্ষার হল নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা কলেজে নেয়াকে মরার উপর খাঁড়ার ঘা মনে হলো।

বিকেলবেলায় মুখ কালো করে ঢাকা রওনা দিলাম। আমার দাদা ঢাকা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টারে থাকেন। ঠিক হলো, ঢাকায় দাদার বাসায় থেকেই পরীক্ষা দিতে হবে আমাকে।

সেদিন ৩০ শে মে, ঢাকা কলেজের পরীক্ষার হলে কেমিস্ট্রি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করিডোরে শিক্ষকদের দ্রুত হাঁটাহাঁটি, শিক্ষকদের মধ্যে ফিসফাস, গুঞ্জন! আমাদের রুমের ইনভিজিলেটর রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় গেলেন। লেখা থামিয়ে আমি বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ দরজার কাছাকাছি বেঞ্চে বসা এক পরীক্ষার্থী বলে ফেললো, জিয়াউর রহমানকে মেরে ফেলছে। মেয়েটির কথা শেষ হওয়ার আগেই ইনভিজিলেটর ত্রস্ত পায়ে রুমে ঢুকে দ্রুত বললেন, আজ পরীক্ষা হবে না, তোমরা তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাও।

আবার উত্তেজনা, থ্রিলিং ব্যাপার। পরীক্ষা দিতে হবে না। তখনো ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারছিলাম না। বরং ক্লাসরুমের অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর মুখ ভয়ার্ত দেখা গেলেও আমার কেনো জানি ভয় বা দুঃখ হচ্ছিলো না!
মনে হয়েছিলো, “এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিলো। উচিত শিক্ষা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার ফল হাতে নাতে পেয়েছে।”

কারো অপমৃত্যুতে আমার মতো সাধারণ মানবিক বোধসম্পন্ন কারোর মনে স্বস্তি আসার কথা নয়! তবে আমি যে সময়ের কথা বলেছি, ওটা ছিলো আমার উঠতি তারুণ্যের শুরু। মানবিকতা বোধ জাগ্রত হওয়ার বয়স, অসাম্প্রদায়িক চেতনা শেখার বয়স। সেই বয়সে আমি বুকে বয়ে বেড়াচ্ছিলাম বঙ্গবন্ধুর (পরিবারসহ) নির্মম হত্যাকাণ্ডের দুঃসহ স্মৃতি, বুকে সৃষ্টি হচ্ছিলো সংবিধানে বিসমিল্লাহ যুক্ত হওয়ার ফলে আমার অমুসলিম পরিচয়ে অনিরাপত্তা বোধ— এবং এর সাথে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিটি জিয়াউর রহমান। ঐ বয়সে তাই জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার ঘটনায় ঐটুকুই মনে হয়েছিলো, যেমন কর্ম তেমন ফল”! ওটাই ছিলো ঐ বয়সের ধর্ম।

** আমার পরীক্ষা বাতিলের আনন্দ আবারও নিরানন্দ হয়ে গেছিলো। দুই দিন পরেই আবার পরীক্ষা শুরু হয় এবং হুড়মুড়িয়ে শেষও হয়। তবে পর পর দুই বার পরীক্ষা বাতিল হয়েও বাতিল হলো না, পরীক্ষা কেন্দ্র আমার কলেজ থেকে টেনে ঢাকা কলেজে নিয়ে যাওয়ার ধকল আমি নিতে পারিনি, ফার্স্ট ডিভিশন হারিয়ে সেকেন্ড ডিভিশন পেয়ে কোনোমতে বাবার সামনে দাঁড়িয়েছি! এটাও আমার প্রাপ্য ছিলো, পরীক্ষা দিতে বসেও যে মেয়ে রাজনীতির হিসেব নিকেশ করে, তার তো পরীক্ষায় পাশই করার কথা ছিলো না! যেমন কর্ম তেমন ফল পেয়েছি।**

**জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার ঘটনায় আজও আমার শোক হয় না। জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম উদারতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
নিজে হাতে বঙ্গবন্ধুর বুকে গুলি ছোঁড়েন নাই, তবে বঙ্গবন্ধুর বুক গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়ার ম্যাপ এঁকে দিতে উনি প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন। উনি ক্ষমতায় যেভাবেই যাক, ক্ষমতায় গিয়েই হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করিয়েছেন। উনি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে বাঙালি, ধর্ম নিরপেক্ষতা মুছে দিয়ে বাংলার জনগণকে শতভাগে বিভক্ত করেছেন।

বাংলাদেশ আজ কোথায় পৌঁছানোর কথা, জিয়াউর রহমানের স্বার্থলোভী, কুচক্রীপনার পাঁকে পড়ে বাংলাদেশ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে! সেই যে সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা কেটে বিসমিল্লাহ যোগ করে বাংলাদেশের সংবিধানের বুকে, অমুসলিম নাগরিকদের বুকে চিরস্থায়ী ক্ষত করে দিলেন, এরপরে কত রাজা এলো, কেউ আমাদের সেই ক্ষত সারানোর চেষ্টা করলো না। উলটো পরের রাজা এসে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম করে দিলো। এরপরেও কত রাজা এলো, বাংলাদেশটা আর আগের মতো হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টানের হলো না, বাংলাদেশটা মুসলমানেরই রয়ে গেলো। অথচ মুক্তিযুদ্ধটা করেছিলো বাংলার মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

আর স্বাধীনতার বাহান্ন বছর পরেও মাতৃভূমিতে একই মায়ের সন্তান হয়েও আমরা মুসলমানদের বৈমাত্রেয় ভাই বোন হিসেবেই জীবন কাটিয়ে গেলাম।

**বঙ্গবন্ধু আজ নিজের গ্রামের মাটিতে বাবা মায়ের পাশে নিদ্রিত আছেন, আর জিয়াউর রহমানের লাশেরই হদিস পাওয়া যায়নি। দেশের সাথে, দেশের জনগণের সাথে এমন বেইমানি করেছেন যিনি, তাঁর পরিণতি তো এমনই হওয়ার কথা। **

ইচ্ছে করে

nii

ইচ্ছে করে আকাশে উড়ে যেতে,
পারি না পাখির মতো ডানা নেই বলে!
ইচ্ছে করে সব বিলিয়ে দিতে,
তা-ও পারি না কিছুই নেই বলে!

ইচ্ছে করে ভূমিহীনদের ভূমি দিতে,
পারি না নিজের ভিটেমাটি নেই বলে!
ইচ্ছে করে দুখীদের সুখ দিতে,
তা-ও পারি না কপালে সুখ নেই বলে!

কোনো কান্নাই চিরস্থায়ী নয়

আর ক’টা সিঁড়ি পেরুলেই ছাদ। ছাদে থৈ থৈ জোছনা। হঠাৎ থামতে হলো। পেয়ারা গাছের ব্যারিকেড ভেঙে ছলকে আসছে এক টুকরো আলো।

ছলকে আসা আলোর রেখাপথে ঝিকমিক করছে অতি মিহি সুতো, অথবা চোখের ভুল। খুব সাবধানে কাছাকাছি যেতে ভুল ভাঙলো। ছোট্ট এক মাকড়সা জাল পাতছে।

একটা ধাপ উঠলেই জালটা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। আমার প্রবল arachnophobia বা মাকড়সাভীতি আছে। তবে এমন ছোট মাকড়সা ভীতি জাগায় না, এই জাল অনায়াসে ছিন্নভিন্ন করে যেতে পারি।

কি যে হলো, জোছনা দেখার পরিবর্তে ছোট্ট মাকড়সার জাল বুনন দেখতে শুরু করলাম। জাল তার আশ্রয়, খাদ্য সংগ্রহের ফাঁদ, বিশ্রামের ঘর।

সেও কখনো সখনো হয় তো আশ্রয় হারায়, ক্ষুধায় কাতর হয়। নতুন ঘর বাঁধতে ক্লান্ত শরীরে আবার জাল বুনতে শুরু করে।

জাল ছিড়ে ছাদে যেতে ইচ্ছে করলো না। ওর রাত ভালো কাটুক। পথ ভুলে দুই একটা ছোট পোকা ওর ফাঁদে আটকে যাক। পোকাদের সংসারে কান্নার রোল উঠুক।

পৃথিবীতে কোনো কান্নাই চিরস্থায়ী নয়। বিচ্ছেদ দিগন্তে যায়, বিরহ তত দীর্ঘ নয়।

.
০৫০৭২৩

একরকম শূন্য হাতে ভুটান ফ্রুন্টসলিং ভ্রমণ করেছিলাম

niii

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় একবার আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে ভারত গিয়েছিলাম। সময়টা ছিল ১৯৯৩ সাল। যেদিন বেনাপোল বর্ডার পাড় হয়ে ওপার বনগাঁ পৌঁছেছিলাম, সেদিন ছিলো পহেলা বৈশাখ ১৪০০ বঙ্গাব্দ।

সেদিনের ওই যাত্রায় আমরা ছিলাম চারজন। আমি, আমার বন্ধু ও বন্ধুর দুই বোন। বনগাঁও থেকে রাত দশটার ট্রেনে চড়ে দমদম নামলাম। রাত তখন প্রায়ই বারোটা। তারপর আমার বন্ধুর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর বাড়িতে গেলাম, রাত কাটানোর জন্য। সেই বাড়িতে রাত কাটিয়ে পরদিন ভোরবেলা দমদম থেকে শিয়ালদা। শিয়ালদা নেমে একটা অটো চেপে সোজা বন্ধুর বাসায়।

ওই বন্ধুর বাড়িতে রাত যাপন করে খুবই ভোরবেলা আবার দমদম রেলস্টেশনে এলাম, শিয়ালদহ যাবার জন্য। যখন দমদম রেলস্টেশনে এলাম, তখনও শিয়ালদাগামী ট্রেন দমদম রেলস্টেশনে পৌঁছায়নি। এই ফাঁকে আমার বন্ধু স্টেশন থেকে চারটে টিকেট সংগ্রহ করে ফেলল। ট্রেন আসতে তখনও মিনিট কয়েক বাকি ছিল।

একসময় শিয়ালদাগামী ইলেকট্রনিক ট্রেন দমদম স্টেশনে এসে দাঁড়ালো। দমদম স্টেশনে নামার মতো যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামলো আমরা চারজন শিয়ালদহ’র উদ্দেশে ট্রেনে ওঠে সিট নিয়ে বসলাম। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর যথাসময়ে ইলেকট্রনিক দ্রুতগামী ট্রেন শিয়ালদহ গিয়ে পৌঁছালো। আমরা ট্রেন থেকে নেমে চলে গেলাম রেলস্টেশনের বাইরে।

শিয়ালদহ রেলস্টেশনের বাইরে গিয়ে একটা অটো চেপে চলে গেলাম, বাঘা যতীন সংলগ্ন বন্ধুর ভাড়া বাসায়। বন্ধুর ওখানে ছিলাম, প্রায়ই একমাসের মতো। কিন্তু আমি যেই কাজের আশায় বাংলাদেশ থেকে ভারত গিয়েছিলাম, সেই কাজ আর হলো না। বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, বন্ধুর এখান থেকে জলপাইগুড়ি বড়দি’র বাড়ি চলে যাবো। শেষাবধি তা-ই হলো।

বন্ধুর ভাড়া বাসায় মাসেক খানি অবস্থান করার পর চলে গেলাম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলার বীরপাড়া। জলপাইগুড়ি বীরপাড়া আমার বড় দিদির বাড়ি। একসময় এই বীরপাড়া পুরোটাই ছিলো চা-বাগান। এই চা-বাগানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ছোট্ট একটা বাজার। সেই বাজারের নাম হয়, “বীরপাড়া” বাজার। বীরপাড়া বাজার ঘেঁষেই তৈরি হয়েছিল, ভুটানের গুমটু যাবার রাস্তা।

ভুটান গুমটু যাবার রাস্তার এপাশ-ওপাশ দু’পাশে থাকা চা-বাগান ঘেঁষে জনবসতি গড়ে উঠেছিল তুলনামূলকভাবে। সেইসাথে যখন লোকসংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন চা-বাগানের কিছু অংশ হয়ে পড়ে বেদখল।
আমি যখন সেখানে গিয়েছিলাম, তখন দেখলাম চা-বাগান ঘেঁষা বড় দিদির বাড়ি। যেখানে বড় দিদির বাড়ি, সেই জায়গার নাম, রবীন্দ্র নগর কলোনী। এই রবীন্দ্র নগর কলোনী ছাড়াও আরও কয়েকটা মহল্লা আছে। সবগুলো মহল্লাই একসময় চা-বাগান ছিলো।

বর্তমানে চা-বাগানের বেদখল হয়ে পড়া জায়গা ব্যক্তিমালিকানাধীন। মানে যিনি ওই জায়গায় দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছে, তিনিই ওই জায়গার মালিক। শোনা যায় প্রত্যেকেই চা- বাগান কোম্পানি হতে নামমাত্র মূল্যে দখলকৃত জায়গা দলিলের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করে নেয়। সে হিসেবে বড় দিদির বাড়িটাও নিজেদেরই কেনা সম্পত্তি।

যাইহোক ৩০ বছর আগে যখন আমি বড় দিদির বাড়ি গিয়েছিলাম, তখন আমার বড় দিদি আমাকে চিনতে পারছিলেন না। কারণ আমার বড় দিদির যখন বিয়ে হয়েছিল, তখন আমি ছিলাম মাত্র দেড় বছরের এক কোলের শিশু। আমার বড়দি’র বিয়ে হয়েছিল ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে। আমার জামাই বাবু বড় দিদিকে নিয়ে সপরিবারে ভারতে চলে আসে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে। সেই আসা-ই-আসা, আর কখনো তারা বাংলাদেশে যায়নি। সেই দেড় বছরের আমি বড় দিদির বাড়ি গিয়েছিলাম, ত্রিশ বছর বয়সে। না চেনার কারণই ছিলো ওটাই। অবশ্য পরিচয় দেওয়ার পর খুব ভালো করেই চিনেছিল।

বড় দিদির ওখানে গিয়ে মাসেক খানেক ঘুরে-ফিরে সাথে নেওয়া টাকা-পয়সা শেষ করে উপায়ান্তর না দেখে ভাগিনাদের সাথে গ্যারেজে কাজ করা শুরু করি। গাড়ির গ্যারেজে কাজ করার সুবাদে ওখানকারই অনেক ড্রাইভারে সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছিলো।

যেখানে যাবার মন চাইত, ভাড়া ছাড়াই সেখানেই চলে যেতাম। গিয়েছিলাম ভুটান গুমটু, সামসি, শিলিগুড়ি, জল্পাইগুড়ি, সিকিম যাবার ভারত-সিকিম মেইন সংযোগস্থান সেবক’র মতো সুন্দর-সুন্দর জায়গায়।। কিন্তু যাবো যাবো বলেও কাজের চাপে যাওয়া হচ্ছিল না, ভুটান ফ্রুন্টসলিং।

ভুটানের ফ্রুন্টসলিং আমার বড় দিদির বাড়ি বীরপাড়া থেকে মাত্র বিশ টাকার ভাড়া। বীরপাড়া থেকে ফ্রুন্টসলিং যেতে সময় লাগতো, দু’ঘন্টার মতো। এতো সামনে থেকেও সেখানে যাওয়া হচ্ছিল না।

একদিন সকালে খাওয়া-দাওয়া করে আর গ্যারেজে যাইনি। এদিন সকালে জামা-কাপড় পড়ে কারোর কাছে কিছু না বলে বীরপাড়া বাসস্ট্যান্ডে চলে গেলাম। আমার সাথে টাকার অংক ছিলো মাত্র দুইশো টাকার মতো।
বীরপাড়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে একটু ঘুরা-ঘুরি করে দেখলাম পরিচিত কোন বাস আছে কি-নাই। ঘুরে-ফিরে খানিক পর দেখি আমারই পরিচিত একটা গাড়ি জয়গাঁও যাবার জন্য যাত্রী সংগ্রহ করছে। বাস কাউন্টার থেকে মাইকে বলা হচ্ছে, “জয়গাঁ জয়গাঁ”। আমি ভাবতে লাগলাম জয়গাঁ আবার কোথায়?

এই ভেবে বাসের সামনে যেতেই বাস ড্রাইভারের সাথে দেখা। ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো, “মামা তুমি কোথায় যাবে?”
বললাম,“ফ্রুন্টসলিং ঘুরতে যাবো, মামা!”
ড্রাইভার বললো, “আমি-ও-তো গাড়ি নিয়ে জয়গাঁ যাচ্ছি, মামা। তো যাবে যখন গাড়িতে উঠে আমার সিটের পেছনের সিটে বসে থাকো। কিছুক্ষণ পরই গাড়ি নিয়ে জয়গাঁ’র উদ্দেশে রওনা দিবো।”
বললাম, “আমিতো ফ্রুন্টসলিং যাবো মামা।”
ড্রাইভার বললো, “আরে মামা জয়গাঁ আর ফ্রুন্টসলিং একই জায়গায়। জয়গাঁ হলো ভারত-ভুটান বর্ডার। জয়গাঁ ভারতের আর ফ্রুন্টসলিং হলো ভুটানের একটা শহর। যাও যাও গাড়িতে উঠে আমার পেছনের সিটে বসো।”

ড্রাইভারের কথা শুনে আমি তা-ই করলাম। গাড়িতে উঠে ড্রাইভারের পেছনের সিটে বসলাম। একটু পরই গাড়ি ফুন্টসলিঙের উদ্দেশে ছুটে চললো।
বিরতিহীন গাড়ি। কোথাও থামা-থামি নেই। গন্তব্য ছাড়া যাত্রীও ওঠা-নামা করতে পারে না। গাড়ি চলছে-তো-চলছেই। প্রায়ই দু’ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম, ভারত-ভুটান সীমান্ত ঘেঁষা জয়গাঁও ফ্রুন্টসলিং বর্ডার।

বাস থেকে নেমে ভুটান ফ্রুন্টসলিং প্রবেশের সুবিশাল গেইটের সামনে একটা চা’র দোকানে গেলাম। আমার সাথে বাসের ড্রাইভার হেলপারও ছিলো। সবাই মিলে আমরা ছিলাম চারজন। চারজনেই চা-বিস্কুট খেলাম। দাম দিলাম আমি। কারণ বাসে তো ফ্রি এসেছি, তাই।

চা-বিস্কুট খাওয়ার পর ড্রাইভার তার হেলপারকে বললো, ‘“গাড়িতে বীরপাড়ার যাত্রী ওঠাও!”
আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “মামা তুমি কখন যাবে?” বললাম, “একটু ঘুরা-ঘুরি করে জায়গাটা দেখে বিকেলে রওনা দিবো, মামা।”

আমার কথা শুনে বাসের ড্রাইভার আমাকে সেখানকার আইন-কানুন সম্বন্ধে বুঝিয়ে বললো, “যা-ই করো, আর ফ্রুন্টসলিঙের ভেতরে যেখানেই যাও, সন্ধ্যার আগে আগে ভুটানের গেইট পাড় হয়ে ভারতের ভেতরে চলে আসবে। কারণ সন্ধ্যার সাথে সাথে ভুটানের বর্ডার গার্ড ফোর্স এই সুবিশাল গেইটটা বন্ধ করে দেয়। গেইট বন্ধ হয়ে গেলে তুমি যদি ফ্রুন্টসলিঙের ভেতরে থেকে যাও, তাহলে তোমাকে আটক করে জেলে ভেরে রাখবে। তাদের আইনে যে-ক’দিন সাজা হয়, তা-ই ভোগ করে বের হতে হবে। কাজেই সন্ধ্যার কথাটা তুমি মাথায় রেখে ঘুরা-ঘুরি করবে।”

আমি বাস ড্রাইভারের নির্দেশাবলী মাথায় রেখে বললাম, “ঠিক আছে মামা, তা-ই হবে। আমার জন্য চিন্তা করবেন না।”
বাস ড্রাইভার কয়েকজন যাত্রী সংগ্রহ করে বীরপাড়ার উদ্দেশে রওনা হলে, আমি আস্তেধীরে ভুটান ফ্রুন্টসলিঙের সুবিশাল গেইট পাড় হয়ে সোজা ফুন্টসলিঙের ভেতরে চলে গেলাম। গেইটে চার-পাচজন সিপাহী ছিলো। কিন্তু আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করেনি যে, আমি কোথাকার এবং কোথা-ই-বা যাচ্ছি।

দেখলাম তারা এপার-ওপার হওয়া কাউকে কিছুই জিজ্ঞেস করছে না। গেইট দিয়ে অনবরত ভারত ভুটানের লোক আসা-যাওয়া করছে, নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে যার-যার নিজের মতো করে। এতে কারোর জন্য কোনও জেরার সম্মুখীন হতে হয় না। জিজ্ঞাসা আর চেক থাকে তখন, যখন ভারত থেকে গাড়িগুলো ফ্রুন্টসলিঙের ভেতরে ঢুকে।

মাঝে-মাঝে ভারত থেকে বিভিন্ন মালা-মাল বোঝাই বড়-বড়ে (লড়ি) ট্রাক ফ্রুন্টসলিং দিয়ে ভুটানে প্রবেশ করে। এই গাড়িগুলোর দিকেই থাকে সুবিশাল গেইটে সিপাহিদের তীক্ষ্ণ নজর!

এছাড়া সিপাহিরা মানুষজন আসা-যাওয়ায় কাউকে কিছুই বলে না। আমাকেও কিছু বলেনি। আমি হাঁটতে-হাঁটতে ফ্রুন্টসলিঙের বেশখানিক ভেতর চলে গেলাম, নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে!

ফ্রুন্টসিলিং, ভুটানের একটা বানিজ্যিক শহর। এই ফ্রুন্টসিলিং শহরটা পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। ভারতের অংশ জয়গাঁও। এই জয়গাঁও আর ফ্রুন্টসলিং সমান উঁচু দেখা গেলেও, ফ্রুন্টসলিং জয়গাঁও’র চেয়ে অনেক উঁচু!
ফ্রুন্টসলিং আর জয়গাঁ একসাথেই মিলে-মিশে পাশা-পাশি। জনবসতি আর ছোট-বড় বিল্ডিং, শপিংমল থাকার কারণে জয়গাঁ আর ফ্রুন্টসলিং পাহাড় মনে হয় না। কিন্তু সমতল ভূমি থেকে জয়গাঁ আর ফ্রুন্টসলিং অনেক উঁচুতে। সমতল ভূমি থেকে জয়গাঁ আর ফ্রুন্টসলিং কতখানি উঁচুতে, তা বোঝা যায় ফ্রুন্টসলিঙের ভেতরে গেলেই।

ফ্রুন্টসলিঙের ভেতরে একটা বড় বৌদ্ধবিহার আছে। বৌদ্ধবিহারের সামনেই বড় ড্রামের মতো আছে। এই ড্রামটাকে বলা হয়, প্রার্থনা ড্রাম বা প্রার্থনা চাকা বা ঢোল। সেই ড্রামে বৌদ্ধদের ধর্মীয় শাস্ত্র-গ্রন্থের মন্ত্র ❝ওম মানি পদমে হুম❞ লেখা থাকে।

এই প্রার্থনা ড্রামের সামনে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মাথা নিচু করে দু’হাত জোড় করে ভক্তি করে। তারপর প্রার্থনা ড্রাম কয়েকবার ঘুরায়, আর মুখে মন্ত্রপাঠ করে।

বৌদ্ধ ধর্মে প্রার্থনা ড্রাম ঘুরানোর মানে হলো, ❝মানুষের হৃদয়কে করুণা ও ভালবাসায় পূর্ণ করতে সহায়তা করা। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বিশ্বাস করে যে, নিজের হৃদয়ে আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে ঢোল ঘোরানো মানে প্রভুর হৃদয়ের সাথে নিজের হৃদয় স্থাপন করা। তাদের ধারণা এই প্রার্থনা ড্রাম বা চাকা বা ঢোল ঘুরানোর ফলে প্রভুর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে এই ধরাধামে বেঁচে থাকা যায়।❞

এই বৌদ্ধবিহারের সামনে দিয়েই ভারত থেকে ভুটানের রাজধানী থিম্পু পর্যন্ত হাইওয়ে। ভারত-ফ্রুন্টসলিং টু থিম্পু হাইওয়ে ঘেঁষে একটা খালের মতো আছে। এটা আসলে খাল বা নর্দমা নয়! এটা ভুটানের কোনোএক পাহাড়ের ঝর্ণা। খালের মতো দেখতে সেই ঝর্ণা দিয়ে দিনরাত যেভাবে পানি নামে আসে, তা দেখেও মনে ভয় হয়!

ভয় হয় এই কারণে যে, ওই পানিতে নেমে কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। পানিতে নামার সাথে-সাথে তীব্র স্রোতে মুহূর্তেই টেনে নিয়ে যাবে, অন্য কোথাও। এই পাহাড়ি ঝর্ণা ভুটানের কোন পাহাড় থেকে উৎপন্ন, তা-ও আমার অজানা থেকে যায়। শোনা যায় এই ঝর্ণার প্রবাহিত খালের পানি থেকে ভারত-ভুটান যৌথভাবে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে, এই ফ্রুন্টসলিঙে।

ঝর্ণার পানি প্রবাহিত হওয়া খালটা ফ্রুন্টসলিং টাউন থেকে অনেক নিচে। এই ঝর্ণা খালের ওপারে যেতে ছোট একটা ব্রিজ আছে। খাল পাড় হয়ে যাওয়ার পর চোখে পড়লো, একটা কুমিরের খামার। কুমিরের খামারটাও অনেক বড়। দিনের বেলা খামারের চারপাশ দর্শনার্থীদের ভীড় থাকে।

দেখলাম, সেই খামারে কুমিরগুলো কিন্তু পানিতে থাকে না। থাকে শুকনো জায়গায়। পানির সামান্য ব্যবস্থা শুধু ছোটো একটা পুকুরের মতো। সেই কুমিরের খামারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কুমিরগুলো দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে এই ফ্রুন্টসলিঙে ছুটে আসে। লোকের ভীড় থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

আর অনেক দর্শনার্থীদের সাথে আমিও ঘুরে-ফিরে খামারের সামনে অনেকক্ষণ সময় কাটালাম। তারপর ঝর্ণার খালটা পাড় হয়ে ফ্রুন্টসলিং টাউনের উপরে উঠে গেলাম। মনের আনন্দে ঘুরতে থাকলাম, ফ্রুন্টসলিং টাউনের এপাশ থেকে ওপাশ।

ফ্রুন্টসলিং টাউন খুবই সুন্দর! আমি যতক্ষণ সময় ফ্রুন্টসলিং টাউনে ছিলাম, ততক্ষণ আমার মনে হয়েছিল আমি গণচীন অথবা হংকঙের কোনোএক শহরে ছিলাম। উঁচুনিচু রাস্তা। রাস্তার পাশেই ছোট-বড় শপিংমল, বার, নামি-দামি হোটেল, আর বাহারি ফুল ও ফলের দোকান। ফ্রুন্টসলিং টাউনের এক কোণে প্রতিদিন বিকেলবেলা স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার্থে সন্ধ্যাকালীন বাজারও মেলে।

সেই বাজার রাত আটটা অবধি চলে। রাত আটটার পরপরই টাউনের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আর ভারত-ভুটান বর্ডার গেইট বন্ধ হয় সন্ধ্যার একটু পরই।

ফ্রুন্টসলিং টাউনের বাইরেও জয়গাঁও সপ্তাহে দু’দিন স্থানীয়দের হাট মেলে। সেই হাটের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ভারতীয়। সপ্তাহিক এই হাটে ভুটানি ব্যবসায়ীও আছে। তাদের ব্যবসা নিজের জায়গায় ফলানো তরিতরকারি, নিজেদের গাছের সুপারি, পাহাড়ের ঝোপঝাড় থেকে নানারকম শাকসবজি আর তরতাজা ফলের।

হাটবারে ভুটানিরা জয়গাঁও আসে অনেক দূরদূরান্ত থেকে। ফ্রুন্টসলিঙে গাড়ি চলাচলের জন্য একটামাত্র রাস্তা যা, ভারত-ভুটান হাইওয়ে নামে পরিচিত। এছাড়া ফ্রুন্টসলিং টাউনের আশ-পাশ দিয়ে ভুটানি স্থানীয়দের চলাচলের জন্য আর কোনও রাস্তা চোখে পড়েনি। তারা হাটবারে যার-যার বাড়ি-ঘর থেকে পায়ে হেঁটেই আসে।

ফ্রুন্টসলিঙে আর জয়গাঁও ঘুরে-ফিরে বুঝেছি, তাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে ফল জন্মায়। ফলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলন হয় কমলা। এর সাথে আপেল, আঙুর-সহ আরও নানারকম ফলও দেখা যায়। বেশিরভাগ বিক্রেতা ভুটানি মহিলা।

তারা ভারতের ভেতরে জয়গাঁও এসে ফল বিক্রি করে। আবার সন্ধ্যার আগে তাদের গন্তব্যে ফিরে যায়। কেউ কেউ ভারতের জয়গাঁও হাটে এসে বাজার-সদাইও করে নেয়।

এছাড়াও ভুটানের জনগণ সবসময়ের জন্যই ভারতে আসা-যাওয়া করতে পারে। আবার ভারতের জনগণও একইভাবে আসা-যাওয়া করে থাকে। ভুটানিরা শুধু আসা-যাওয়াই নয়, ভুটানিরা ভারতে এসে কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করে প্রতিদিন।

অনেক ভুটান নাগরিককে ভারত এসে স্থায়ীভাবে বসবাসও করতে দেখেছি। ভারতের ভেতরে তাদের বসবাস সবচেয়ে বেশি ভারত-ভুটান সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাগুলোতে। তবে তুলনামূলকভাবে বেশি বসবাস গুমট আর ফ্রুন্টসলিং ঘেঁষা জয়গাঁও এলাকায়।

ভুটানি জনগণ খুবই মিশুক। তারা খুব সহজেই একজন মানুষকে আপন করে নিতে পারে। তাদের আচার-ব্যবহারও মনে রাখার মতো। তা বোঝা গেলো দুপুরবেলা ফ্রুন্টসলিঙের ভেতরে থাকা একটা খাবারের হোটেলে ঢুকে।
হোটেলটা বেশি একটা বড়সড় নয়। কিন্তু এই হোটেলে দিনের সারাটা সময় থাকে কাস্টমারের ভীড়। হোটেলের ক্যাশে বসা একজন যুবতী মহিলা। হোটেল বয় বলতে যাদের দেখলাম, তারা সবাই মহিলা। হোটেলের মালামাল সংগ্রহ করে আনার জন্য হয়তো পুরুষ কর্মচারী থাকতে পারে। কিন্তু হোটেলের ভেতরে কোনও পুরুষ দেখা যায়নি।

হোটেলের ভেতরে গিয়ে বসার জন্য আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু বসার সুযোগ হচ্ছিল না। একজন মহিলা কর্মচারী আমাকে ফলো করে সামনে এসে তাদের ভাষায় কি যেন জিজ্ঞেস করছিল। তার কথার উত্তর যখন আমি দিতে পারছিলাম না, তখন হোটেলের মহিলা বুঝতে পারলো আমি তার ভাষা বুঝিনি। তারা শুধু তাদের ভাষাই নয়, তারা ভারতের সবকটা প্রদেশের ভাষা জানে এবং যখন যেই ভাষার দরকার-সেই ভাষায় কথা বলে।

তাই আমি যখন তার কথার উওর দিতে পারছিলাম না, তখন ওই মহিলা আমাকে বাংলায় জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি ভাত খাবেন?”
আমি বললাম, “ইচ্ছে ছিলো ভাত খাওয়ার। কিন্তু কী করে খাবো? লোকের ভীড়ের জন্য তো ভেতরে যেতে পারছি না।”
আমার কথা শুনে ওই মহিলা বললো, “একটু অপেক্ষা করুন, আমি ব্যবস্থা করছি।”

দশ মিনিট পরই হোটেলের ভেতর থেকে ওই মহিলা আমাকে হাতে ইশারা দিয়ে ভেতরে ডেকে নিয়ে একটা সিটে বসিয়ে দিয়ে বললো, “কী খাবেন? মাছ না সবজি?” বললাম, “মাছ ভাত খাবো!”

দুই মিনিটের মধ্যেই একটা স্টিলের থালায় করে খাবার নিয়ে এসে আমার সামনে দিয়ে চলে গেলো। আমি খাবার দেখে অল্পক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম! থালার মাঝখানে অপ্ল দুমুঠো চিকন চালের ভাত। ভাতের চারদিকে সাজানো আছে সবজি কাটা আর তরকারির ছোট-ছোট বাটি।

এ-সবের মাঝে ডাল ছিলো তিন রকমের তিনটে বাটি, ভাজি এক বাটি। আর রুই মাছের তরকারি এক বাটি।

এসব দেখে আমি খাওয়ার ভা-ও পাচ্ছিলাম না। পাশে বসা কাস্টমারদের খাওয়া দেখে তাদের মতো করে খেলাম। তাদের রান্না করা তরকারিগুলো খেতে খুবই ভালো লেগেছিল।

খাওয়া-দাওয়া সেরে ক্যাশের সামনে যেতেই ওই মহিলা ক্যাশের সামনে গিয়ে তাদের ভাষায় খাবারের মূল্যের পরিমাণ বলে দিয়ে চলে গেলো। আমি আমার পকেট থেকে ভুটানি একশো টাকার একটা নোট বের করে ক্যাশে দিলাম। ক্যাশে বসা মহিলা আমাকে আশি টাকা ফেরত দিলো। আমি টাকা হাতে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে সোজা ফ্রুন্টসলিং ত্যাগ করে জয়গাঁও চলে এলাম।

জয়গাঁ এসে দেখি চারটে বাজতে লাগলো। পকেটে টাকা ছিলো প্রায়ই একশো ষাট টাকার মতো। বীরপাড়া যেতে বাস ভাড়া বিশ টাকা খরচ হলেও আরও বেশ ক’টা টাকা আমার কাছে থাকে।

এই ভেবে এক ভুটানি ফল বিক্রেতার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “এক ঝুরি কমলার দাম কত?”
মহিলা ফল বিক্রেতা বললো, “একশো টাকা।”
আমি আশি টাকা দিতে চাইলে ফল বিক্রেতা মহিলা আমাকে আশি টাকায় এক ঝুরি ফল দিয়ে দিলো। এক ঝুরি ফল মানে ষোল হালি কমলা।

ফলের ঝুরি নিয়ে বাস কাউন্টারে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। স্ট্যান্ডে একটামাত্র বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাস ড্রাইভার আমার পরিচিত ছিলো না। এই বাস-ই বীরপাড়ার শেষ বাস। যাত্রী সীমিত! বাসে উঠে সিটে বসলাম। আরও কিছু যাত্রী উঠলো। এর কিছুক্ষণ পরই বাস বীরপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলো। সন্ধ্যার পরপরই পৌঁছে বীরপাড়া। সেখান থেকে কমালার ঝুরি হাতে নিয়ে চলে গেলাম দিদির বাড়ি।

বড় দিদি ফলের ঝুরি দেখে মাথায় হাত রেখে বললো, “এতো, কমলা খাবে কে-রে? কোত্থেকে এনেছিস, শুনি?” বললাম, “ফ্রুন্টসলিং গিয়েছিলাম, দিদি। হাতে কিছু টাকা ছিলো। তাই ঝুরি-সহ কমলাগুলো নিয়ে এলাম। এগুলো আশ-পাশের বাড়ির ছেলে-মেয়েদের হাতে কিছু দিয়ে নিজেরা খাবেন।”

আমার কথামতো বড়দি তা-ই করলো। নিজেদের জন্য কিছু কমলা রেখে, আমার বেয়াই বাড়ি-সহ আশেপাশে থাকা আরও বাড়িতে বাদবাকি কমলা বিতরণ করলো। এভাবেই শেষ হলো ফ্রুন্টসলিং থেকে আনা এক ঝুড়ি কমলা, আর শেষ হলো আমার শূন্য হাতে ভুটান ফ্রুন্টসলিং ভ্রমণের গল্প।

আসুক বৃষ্টি হঠাৎ করে

chh

আসুক বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি
ঝরুক বৃষ্টি ধরায়
আর পারি না থাকতে সুখে
গ্রীষ্ম মাসের খরায়।

পুড়ে যাচ্ছি জ্বলে যাচ্ছি
৫০ ডিগ্রি তাপে
নাখোশ বুঝি প্রভু তুমি
মরছি অনুতাপে।

দাও না বৃষ্টি, ঝরাও বৃষ্টি
ওগো দয়াল আল্লাহ্
করো ভারী পাপ কমিয়ে
বান্দার পূণ্যির পাল্লা।

আয় না বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে
আকাশ হতে নেমে
সূর্যের তাপে জনজীবন
থমকে আছে থেমে।

নাই রে শান্তি ধরার উপর
নেইকো সুখ আর অল্প
তাঁর নিয়ামত ছাড়া ধরায়
হয় না সুখের গল্প।

দয়া করো মাবুদ আল্লাহ
দাও ঝরিয়ে বৃষ্টি
হোক না প্রভু একটুখানি
সুখ আরামের সৃষ্টি।

আয় রে বৃষ্টি আয়রে ত্বরা
দে ভিজিয়ে মাটি
সাজুক ধরা সজীবতায়
আজকে পরিপাটি।

সৎপথেই থাকো

chh

হালাল আয়ের প্রতিই থাকুক নজর, যতটুকুই হোক প্রাপ্তি
যত মন্দ ভাবনা, হারাম রোজী রোজগারের আজই হোক সমাপ্তি;
শুদ্ধ পথের আয়ে রহমত থাকে প্রভুর, করো অনুভব,
সেই তো নিমেষেই নাই হয়ে যেতে হবে, কী হবে থাকলেই অথৈ বিত্ত বৈভব?

জগতের সেরা ইসলাম ধর্ম
মুসলিম তুমি করো সৎ কর্ম
নামাজ ছাড়া বলো কী করে খুলবে জান্নাতের তালা,
ভালো কর্মতেই সাজাও তোমার জীবন ডালা।

অযথাই বলো না কথা সব মন্দ
অশ্লীল বাক্যালাপে পাবে কেবল জাহান্নামের গন্ধ;
কেবল সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকো, ঈমান রাখো শক্ত
দুনিয়ার ক্ষমতা নয়, হও প্রভুর ইবাদতের ভক্ত।

কী আছে বলো এই জীবনে, আয়ূ আর ক’দিন
এত সহায় সম্পদ এত চাকচিক্যতা থাকা সত্ত্বেও
জীবনে নেমে আসে সহসা অসুখের দুর্দিন;
ডাক্তার কবিরাজ তো বাড়াতে পারে না আয়ূ,
তুমি কিছুই নও এখানে, বন্ধ হলেই স্নায়ূ।

মনের কোণে জাগাও বোধোদয়ের রেখা
মনে রেখো এত আপনজন পাশে তবুও তুমি আমি সবাই একা
একাই গোরের আঁধারে থেকে যেতে হবে
পুণ্যিতে আমলনামা থাকলে ভরা…… ফেরেশতারা মিহি সুরে কথা ক’বে।

আমাদের পথ চলা হোক ভালোর পথে, যেখানে নেই অল্পও পাপ
যেটুকু পাপ করে ফেলেছি, যেন হয় অচিরেই অনুতাপ
ক্ষমা চেয়ে নিতে পারি তাঁর কাছে, তিনি তো করুণাময়
সব পাপ ক্ষমা করবেন নিশ্চয়ই আমার দয়াময়।

আত্মমর্যাদা

riaa Self Dignity বা আত্মমর্যাদা বোধ শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। তবে আমাদের ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবনে এর গুরুত্ব কতখানি তা হয়ত অনেকেই অনুমান করতে পারিনা। আত্মমর্যাদা এমন একটি ব্যাপার যা প্রথমে নিজের ভেতর উপলব্ধি করতে হবে। যখন আপনি নিজে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী ভাবতে পারবেন কেবল তখনই আপনার আত্মমর্যাদা দৃঢ় হবে।

১. আপনি কোন এক অনুষ্ঠানে গেলেন, আর আপনার কোন এক আত্মীয় বসলো “তুই না একদম বোকা, ক্যাবলা।” আর আপনি এই কথা শুনে নিজে তো কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেনই না, উল্টো চুপচাপ বিশ্বাস করে ফেললেন কথাগুলো সত্যি। খুব হীনমন্যতায় ভুগতে লাগলেন, অসহায় বোধ করতে লাগলেন। ভেবে ভেবে হয়রান হয়ে গেলেন, আপনি আনস্মার্ট, বোকা, ইত্যাদি। শুধু এটুকুই ভাবলেন না, আদৌ আপনি সেরকম কি না। খেয়ালই করলেন না, নিজের অজান্তেই কখন যেন আপনাকে বিচার করবার অধিকারটুকুও তাদের দিয়ে দিয়েছেন বুঝতেই পারলেন না। তাহলে এই ‘আমি’ যদি পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সবার সামনে না দাঁড়াতে পারি, নিজেকে সবসময় নিজের সম্পর্কে নেগেটিভ ভাবতে থাকি, তার জন্য দায়ী কে? – এই আমিই।

মনে রাখবেন প্রতিটি জীবন এক একটা লড়াই। কারো বেশি, কারো কম। হয়তো আপনার লড়াই ভীষণ ছোট থেকেই, প্রতিকূল আবহে লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। কখনোই আপনি সব্বাইকে ডেকে ডেকে বা স্বল্প পরিচয়ে বলতে যাবেন না আপনার জীবনের লড়াইয়ের গল্প। এতে আপনি করুণার পাত্র হবেন। আপনাকে দেখে, বা আপনার সাথে কথা বলে কখনোই যেন কেউ আঁচ না করতে পারে আপনার জীবনের ব্যক্তিগত কথা। দৃঢ় মানসিকতার হোন। আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া কখনোই কাউকে বুঝতে দেবেন না আপনার ব্যক্তিগত জীবন। আপনাকে যারা সত্যিই জানবে তারা করুণা নয় রেসপেক্ট করবে আপনাকে।

“To hide feelings when you are near crying is the secret of dignity.”

২. ছোটবেলা থেকেই কিন্তু আমরা অন্যের দেয়া সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত হয়ে অভ্যস্ত। এই যেমন ছোটবেলায় কাউকে যদি বলা হয় “তুই দেখতে ভাল না” “ইশ তুই কালো, মোটা, তুই অলক্ষ্মী, তুই সংসারের জঞ্জাল।” সে নিজেকে ভাল করে আয়নায় দেখেও না, অন্ধের মত বিশ্বাস করে ফেলে-সে সুন্দর নয়, সে হয়তো সত্যিই অলক্ষ্মী। কেউ যদি বলে ফেললো, “তোকে দিয়ে কিছু হবে না”- ব্যস, ওটাই বানিয়ে ফেলি জীবনের একমাত্র বিশ্বাস, কোনদিন হয়ত কিছু একটা করে দেখানোর চেষ্টাও করিনা। আমার অমূলক ঐ বিশ্বাসটা কখন যেন আমার চিন্তাটাকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে, বুঝতেই পারিনা। নিজের চারপাশ দেখুন। আপনি এই বিশ্বের উৎকৃষ্টতম সৃষ্টি না হলেও নিকৃষ্টতমও নন। আপনি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এবং কারো না কারো চোখে অবশ্যই আপনি সুন্দর। আর আয়নায় নিজেকে দেখুন এবং মনে মনে বলুন :-

“May be I am not the best but certainly I am not the worst.”

৩. কেউ আপনার মন ভেঙেছে? কেউ আপনার প্রেম নিয়ে খেলছে? কেউ আপনাকে ঠকাচ্ছে? কখনই নিজেকে দোষারোপ করবেন না। মনে করুন যে যাবার সে চলে যাবেই। কিংবা ধরুন যে আপনার প্রেম, ভালবাসা নিয়ে খেলছে, প্রতিদিন আপনাকে মিথ্যে বলে ঠকাচ্ছে। তার জন্য মন খারাপ করবেন না। আবর্জনা আমরা আবর্জনার স্তূপেই ফেলে রাখি, তার অবস্থান ও সেইরকম জায়গায় রাখুন। জানবেন যে আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে সে কখনোই আপনাকে ছেড়ে যাবেনা। শত ঝড় ঝঞ্ঝাতেও সে আপনার হাতই ধরে থাকবে। আর যে চলে গেছে, বা প্রতারণা করছে, জানবেন, তার আপনাকে গ্রহণ করার মত ক্ষমতা-ই নেই। যতটুকু ভালবাসা আপনার হৃদয়ে রয়েছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও আপনার জন্যও ততটা ভালোবাসা জমা রয়েছে। সারাদিনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেকে সময় দিন। নিজেকে ভালোবাসুন। শুধু আপনি যেমন, আপনি যা-সে জন্য। তাই নিজের সম্পর্কে উচ্চতর ধারণা, নিজেকে নিঃশর্ত ভাবে ভালবাসা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় আমাদের জীবনে। মনে রাখবেন :-

“The best kind of people are the ones that come into your life and make you see sun where you once saw clouds. The people that believe in you so much, you start to believe in you too. The people that love your simply for being you. The once in a lifetime kind of people.”

৪. নিজের কাজের ইতিবাচক সমালোচনা করুন, ভিতরের নেতিবাচক স্বত্বাকে গুরুত্ব কম দিন। দেখবেন নিজের সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়ে গেছে। সারাদিনে অন্তত একবার এমন কিছু করুন, যা আপনি করতে সত্যিই ভালবাসেন। যে কাজটি আপনি করবেন, সম্পূর্ণ আপনারই জন্য, আপনার আত্ম উপলব্ধির জন্য। সব কাজে সবটুকু সাফল্য আসবেই-এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। বরং নিজের ভুল গুলোকে শুধরে নিয়ে সেগুলোকে বিশ্লেষণ করুন। নিজেকে প্রশংসা করতে ভুলবেন না কিন্তু।
জানবেন :-

“Nothing is more important than how YOU feel and think about yourself.”

৫. অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করার প্রবণতা থেকে থাকলে তা আজই বাদ দিন। আমরা এক একজন মানুষ এক একরকম, সবার ই আলাদা আলাদা ইতিবাচক দিক আছে বলেই মানুষ বৈচিত্র্যময়। তাই না? আরেকজন জীবনে কি পেল, আমি কি পেলাম না, আরেকজন কি হল আমি কি হলাম না, বা তার জীবনে কি আছে আমার কি নেই, এসব চিন্তা মাথায় আনার আগে একবার ভেবে দেখুন, আপনি কি পেয়েছেন, আপনি কি হয়েছেন আর আপনার কি আছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন, এবং আপনি যা , তার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন। নিজের প্রতি সম্মান দেখানোর এটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। মনে রাখবেন, আপনার জীবন নামক এই গাড়িটার steering কিন্তু সম্পূর্ণ আপনারই হাতে।

“Politeness is a sign of dignity, not subservience.”
_______________________________

বিশ্ব বাবা দিবস ও নিজের কিছু কথা

nita

ঘোষিত বাবা দিবস উপলক্ষে দেখা যায় বাবা’র প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা। শোনা যায় পৃথিবীর ছাদের সম জন্মদাতা পিতার গুনগান।

দেখা যায় প্রিয় বাবার সাথে কত রকমের কতো ছবি। সেসব ছবি দেখে বোঝা যায়, স্বর্গীয় বা জান্নাতি, জীবিত বা মৃত বাবার প্রতি সন্তানের উজাড় করে দেয়া ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা ভালোবাসা! তো যাই হোক, আমার জন্মদাতা পিতা বা বাবা মৃত্যুবরণের সময়ে বা এরও আগে-পরে হাতে হাতে মোবাইল অথবা ক্যামেরা ছিল না। ছিল, জরুরি কোনও কাজে ব্যবহারের জন্য নিজের দু’একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি তোলার সনাতনী পদ্ধতির স্টুডিও।

সেসব স্টুডিওতে গিয়ে যাদের ছবি দরকার হতো, কেবল তারাই তাদের কাজের জন্য কয়েকটা সাদা-কালো ছবি তুলেছিলেন। এছাড়া তখনকার সময়ে অনেকেরই নিজের ছবি তোলা হতো না। তাই তাদের মৃত্যুর পর তাদের নিজ ঘরেও ছবি টাঙানো হতো না। একারণে আমার মা-বাবার ছবিও আমার বা আমাদের পরিবারের কারোর কাছে তাদের ছবি সংগ্রহে নেই। তাই এই বিশ্ব বাবা দিবসে আমার স্বর্গীয় বাবার ছবি পোস্ট করে বাবার স্মরণে ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা নিবেদন জানাতে পারলাম না।

এই বিশ্ব বাবা দিবসে বাবার স্মরণে ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, জন্মদাতা পিতার সমাধি স্থানের ছবি দিয়ে। মানে আমার বাবাকে যেই শ্মশানে দাহ করা হয়েছিল, সেই শ্মশান ঘাটের ছবি দিয়ে বিশ্ব বাবা দিবসে বাবার প্রতি ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও বাবার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

সেই সাথে এই পৃথিবীর মৃত আর জীবিত, স্বর্গীয় বা জান্নাতি সকল বাবার প্রতি জানাচ্ছি, ভক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। পৃথিবীর সকল স্বর্গীয় বা জান্নাতি বাবা পরপারে শান্তিতে থাকুক। জীবিত সকল বাবা সুখে-শান্তিতে থাকুক, এই কামনা করি।

মধ্যরাত্রির বোবাকাহিনী

2719606

০১
রাত তখন সবেমাত্র পাকতে শুরু করেছে। কয়টা বাজে কি বাজে না, কিছুই আমার ঠাহরে নেই। হাতে কোনো হাতঘড়ি নেই। দেয়ালেও কোনো ওয়ালঘড়িও নেই। আমার চারপাশে কেবল সুনশান কিছু নীরবতা আছে। আমার রুমমেট ফরহাদ, আতাউর, শাহজাহানের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দযোগে অসম প্রতিযোগিতা আছে। আর আছে অকালে যৌবন খোয়ানো আমার এই সময়ের শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা নরসুন্ধা। সে ঘুমিয়ে আছে, না জেগে আছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। উঠতি শীতের রাত্রি হওয়ায় হালকা কুয়াশার ধুয়াশা আছে। আর যাদের কথা না বললেই নয়, উনারা হলেন আকাশের কিছু মিটিমিটি নক্ষত্ররাজি। উনাদের কেউ কেউ হাসছে। আর কেউ কেউ জোনাকির সাথে পাল্লা দিয়ে গাইছে।

ছাত্রাবাসে আমার পড়ার সিস্টেমটা কিছুটা ব্যক্তিক্রম ছিল। আমার রুমমেটরা যখন পড়তো, তখন আমি চুপচাপ শুয়ে থাকতাম। ওরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে জোরে জোরে পড়তে পছন্দ করতো। পড়তে পড়তে ওদের মুখ দিয়ে ফেনা ছুটতো। সেই ফেনা রিডিং টেবিলের আনাচে-কানাচের শোভা বর্ধন করতো! একই লাইন বারবার তোতাপাখির মতোন মুখস্ত করতো। যদিও ওদের পড়তে মোটেই বিরক্ত লাগতো না, তবে শুনতে আমার মাঝেমাঝেই বেশ খারাপ লাগতো। তবুও তখন আমি অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিতাম। অতঃপর ওদের পড়া যেখানে শেষ হতো, সেখান থেকেই আমার পড়া শুরু হতো। আমি একটি বই সামনে নিয়ে বসে বসে অথবা শুয়ে শুয়ে রিডিং পড়তাম। এই পড়ার কোনো সাউন্ড নেই। এমন কি আমার ঠোঁট দুটি পর্যন্ত নড়তো না। আমার চোখ দেখে আর আমার মন পড়ে। অতঃপর পরীক্ষার খাতায় আমি আমার মতো করে নিজের ভাষায় লিখি। এই হলো আমার চিরায়ত প্রথা বিরুদ্ধ পড়ার রীতি।

যে বীজতলা সময়ের কথা বলছি, তখন আমি গুরুদয়াল সরকারী কলেজে একাদশ শ্রেণির সিঁড়ি ডিঙাতে ব্যস্ত। আজ বাদে কাল এগজামিন। কলেজের ওয়াসিমুদ্দিন মুসলিম ছাত্রাবাসের ৫ নং কক্ষে আমরা এই চারজন থাকি। আমার সিটটি একেবারে নরসুন্ধার বুক ঘেষে। আমি আর নুরসন্ধা যখন খুশি ইচ্ছে মতো কথা বলি। সুখ-দুখ ভাগাভাগি করি। এখন রাত ২ টা ২১ মিনিট। হঠাৎ কী মনে করে তিন আঙুল সময় আগে বন্ধ করা জানালাটি খুলে দিলাম। খুলে দিতেই শীতল হওয়া আর নরসুন্ধার চাঁদ মুখ আমাকে ঘিরে ধরল। কেন জানি না একলাফে আমার চোখ নরসুন্ধার বুক বরাবর গিয়ে থামল। এরপর যা দেখলাম, তখন আমি বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস কিছুই করতে পারলাম না। ভয়ে যত দ্রুত পারা যায় জানলাটি নিঃশব্দে বন্ধ করে দিলাম।

০২
আমার চোখকে ছানাবড়া করে দিয়ে নরসুন্ধার ঠিক মাঝ বরাবর থেকে তিন কি চারজন অথবা পাঁচজন মানুষের সমান লম্বা একজন মানুষ নদীর ভেতর থেকে উঠে এলেন। গায়ে জামা আছে কি নেই, চোখ দুটি আগুনের মতো লাল কি কয়লার মতো কালো…এতোটা দেখার মতো সময় আমি পাইনি। কেবল এইটুকু দেখেছি উনি পানির উপর দিয়ে শান্ত পদবিক্ষেপে আমার ছাত্রাবাসের দিকে ধীরে ধীরে ধাবিত হচ্ছেন। এই জাতীয় অনেক রমরমা ঘটনা, দূর্ঘটনা এর আগে কেবল লোকমুখে বয়ান শুনেছি। কিন্তু কোনোদিন স্বচক্ষে দেখার মতো সৌভাগ্যি আমার হয়নি। অতঃপর মনকে পাষাণে বেঁধে শপথ নিলাম, হিমালয় পর্বত ভাঙে ভাঙুক, আমি এর শেষ দৃশ্য পর্যন্ত অবলোকন করবো।

তখনো আমার জানা ছিলো না ছাইচাপা করে যেমন আগুন নিভানো যায় না, চোখ বন্ধ করলেই যেমন বিপদ দূর হয়ে যায় না, তেমনি আমি জানলা বন্ধ করেও তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারিনি। তবে আমি তখনো চেয়ারে বসা। সামনে খোলা বই। বুকের ভেতর একটা টোলপড়া ভাব। পড়বো কি পড়বো না, জানলা আবার খুলবো কি খুলবো না.. সিদ্ধান্ত নিতে না নিতেই আমার জানলায় ঠক ঠক করে সাড়ে তিনবার আওয়াজ হলো। এই সাড়ে তিনের ব্যাখ্যা হল, প্রথম তিনটা সমান সমান জোরে আর শেষেরটা একটু কম । কিছু বুঝতে বাকি থাকবে এতোটা গাধা আমি নিজেকে মনে করি না। ভয়ে আমার জীবন নদী শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছিলো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত আজন্ম পিপাসা। তবুও আমি অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে চেয়ার থেকে একচুলও নড়লাম না।

জানলার বাইরে থেকে আর কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না। এতক্ষণ যা দেখেছি, যা শুনেছি… এসব কিছুকে মনের ভুল বা হ্যালোসিনেশন ভেবে উড়িয়ে দিবো বলে যখনই ঠিক করলাম, ঠিক তখনি আমার কাছে মনে হলো কেউ যেনো জানলার পাশ থেকে সরে যাচ্ছে। তবে অবশ্য-ই সে সরে যাওয়া শব্দহীন, নৈঃশব্দের বাতিঘরের মতোন। বুঝা যায় কিন্তু ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। অনুভবের সিঁথিতে সাঁতার কাটা যায়। তবুও আমার মন থেকে আচ্ছন্ন আচ্ছাদন বিদূরিত হলো না। কেবল মনে হতে লাগলো, এখানেই শেষ নয়। খেলা সবে শুরু।

০৩
আমার জানলার পাশ থেকে কয়েকটা রুম ঘুরে দরজায় আসতে মিনিট দুই মতো লাগার কথা। অথচ ঠিক ১১ সেকেণ্ড এর মাথায় রুমের দরজার আবার সেই সাড়ে তিনবার ঠক ঠক শব্দ হল। শব্দের হার্জ একই সমান। জানলায় হওয়া শব্দের চেয়ে একচুল কম বা বেশি নয়। এবার আমার পায়ের তলা থেকে নগদ মাটি সরতে শুরু করেছে। তবে এখন আর আগের মতো বুকের ভেতরের টোলপড়া ভাবের গল্পটি নেই। এই জায়গাটিতে সমস্ত আকাশ-পাতাল এসে ভর করেছে। আমার রুমমেট বন্ধুরা তখনো ঘুমের সাগর পাড়ি দিচ্ছেন। আর আমি একা একা এই শ্বাপদসংকুল পথ পাড়ি দিচ্ছি। তবুও আমি একবার সাহস করে দরজার দিকে তাকালাম। এরপরের দৃশ্য নমরুদের অগ্নিকুণ্ডের চেয়ে কোনোওংশে কম ভয়ংকর নয়। আমি একেবারে হিম হয়ে গেলাম।

আমার রুমের পাকা দেয়াল ভেদ করে একটি হাত অবলীলায় ভেতরে চলে এলো। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার সামনে জ্বলতে থাকা একমাত্র সোডিয়াম লাইটটি ধপ করে নিভে গেলো। এক লোকমা সময়ের হাজার ভাগের একভাগের চেয়েও কম সময়ে আমার সমস্ত পৃথিবীটা অন্ধকারের অতল গহব্বরে তলিয়ে গেলো। আমি সাথে সাথে ইন্না লিল্লাহহি অইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া শুরু করে দিলাম। বুকের ভেতরটা আয়লার মতো ধড়পড় করছিলো। বিপদের গন্ধ পেলে আমার বাম চোখ সাধারণত পিটপিট করে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এখনো সে পিটপিট করা শুরু করছে না। তবে কি এতোক্ষণ যা ঘটলো তার কিছুই ঘটেনি? সবকিছু আমার পরীক্ষা উৎকণ্ঠিত মনের ভুল? আবার আমি ইন্না লিল্লাহ পড়তে পড়তে সাহসী হয়ে উঠলাম। পুরো হোস্টেল অঘোরে-বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আমার রুমমেটদের নাক ডাকার প্রতিযোগিতা এখনও সমান তালে চলছে।

আমি কাউকে ডাক দিলাম না। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে একটি পাতাঝরা সময়ের জন্য কানকাটা আবদ্ধ জানলাটি খুলে দিলাম। কোথাও কেউ নেই। সবকিছু স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশিই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। শান্ত সমাহিত নরসুন্ধার টুনটুনি জল। বাইরে থেকে কিছুটা আলো এসে ডাকাতের মতো আমার রুমে ঢুকলো। সে আলোয় যেনো সমস্ত আন্ধার দুনিয়া ক্ষণিকের জন্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। আমি ভয়ে ভয়ে লোমকূপ খাড়া হওয়া সময়ের পোস্টমর্টেম করছিলাম। তদুপরি একপা, একপা করে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। ওয়ালে কোনো ফোঁকর নেই। লাইটের সুঁইচ ঠিক ঠিক বন্ধ করা। কে বন্ধ করলো—-এই সহজ প্রশ্নটি আমার কাছে এই মুহূর্তে বিশ্বজগতের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন বলে মনে হতে লাগলো। তাহলে কি এতোক্ষণ যা ঘটেছে সব সত্য?

০৪
কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক এই জলজ্যান্ত সত্যকে অস্বীকার করার মতোন বিশ্বাসঘাতক আমি নই। হয়ত কোনোদিন হতেও পারবো না। আমি জানি, এই ঘটনা অস্বীকার করা মানে তো চাঁদ, সূর্যকে অস্বীকার করা। আকাশ, বাতাসকে অস্বীকার করা। তারচেয়েও বড় কথা, এই ঘটনা অস্বীকার করা মানে আমার নিজেকে অস্বীকার করা। আর কিছু সম্ভব হলেও এ আমার পক্ষে কোনোদিন সম্ভবপর নহে। কারণ এই ঘটনার সাক্ষী আমার শরীরের প্রতিটি লোমকূপ। এখনো তারা দাঁড়িয়ে অসংকোচ সাক্ষ্য প্রদান করে যাচ্ছে। কেন জানি আমার মন বলছিল এখানেই শেষ নয়। মূল দৃশ্য এখনো বাকি আছে।

দরজা খোলার মতো সাহস আমার নেই। তবুও ফাঁক ফোকর দিয়ে দেখার প্রচেষ্টা করলাম পাশের রুমের লাইট জ্বালানো কিনা। অতীব আশ্চর্য কথা ৬ নাম্বার রুম থেকে আলো আসছে। তার মানে কারেন্ট আছে। কেবল আমার রুমে নেই। সুইচটি অন করবো সে সাহসও পাচ্ছি না। অন করলে জ্বলবে কি জ্বলবে না আমার সে বিশ্বাসে মস্তবড় একটি ফাটল ধরেছে। তবুও ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে আমার বিশ্বাসের সহিত আরো বিশ্বাস যুক্ত হল। আমি একবার পড়ার টেবিলের বসি। আরেকবার খাটে আধশোয়া হয়ে ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করি। অন্ধকার আমার চিরদিন ভালো লাগে, তবে সেদিনের অন্ধকার মোটেই ভালো লাগছিলো না। একেবারে বিচ্ছিরি, হতচ্ছারি এবং বীভৎস লাগছিলো। এই অজৈব অন্ধকারের সাথে আমার কোনো পরিচিতি নেই অথবা কোনোদিন ছিলোও না।

এমন সময় যেমনটি আমি আশংকা করছিলাম, ঠিক তেমন কিছু ঘটার মহাসংকেত পেলাম। আশেপাশের কোথাও থেকে একটি চরম গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছে। এমন গোঙানি আমি জীবনে কোনোদিন শুনিনি। কেউ শোনেছে কিনা তাও জানি না। গোঙানিটি এমন যে, কোন মানুষকে গলা কেটে হত্যা করার সময় অথবা কোনো পশুকে জবাই করার সময় যেমন ঘড়ঘড় আওয়াজ বের হয় ঠিক তেমন।

০৫
ভীষণ ভয়ে আমি কুঁকড়ে গেলাম। এবার আর একা একা সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখাতে গেলাম না। রুমমেটদের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুললাম। ওরা যে আমার চেয়ে বেশি ভীতু একথা আমার জানা ছিলো না। অসমসাহসী, অকুতোভয় পালোয়ান ফরহাদ বলল,
এ নিশ্চয় কাউকে গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে। দরজা খুলবি না, খবরদার।
ফরহাদকে সাথে সাথে সমর্থন জানিয়ে আতাউর বলল, একদম ঠিক কথা বলেছিস। এই মধ্যরাতে ঝামেলায় জড়ানোর কোনো মানেই হয় না।
কেবল শাহজাহান, যে সাধারণত চুপচাপ থাকে; কারো সাথে কোনো বীরত্ব ফলায় না….সে বলল,
ঘটনা যা-ই হোক না কেন, আমাদের ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা উচিত। মানুষ হলে আমরা তা এড়িয়ে যেতে পারি না।
আমি তখন তাড়াতাড়ি করে বললাম, তুই ঠিক বলেছিস সাজু। সাজু শাহজাহানের ডাক নাম। ভীতুর ডিমগুলো যাক আর না যাক; চল আমরা দু’জন গিয়ে দেখি কোথাকার জল কোথা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
যেই কথা সেই কাজ। শাহজাহান আর আমি দরজা খুলে তাড়াতাড়ি বের হলাম। আমাদের বের হতে দেখে ফরহাদ ও আতাউর আর নিজেদের ধরে রাখতে পারলো না। ওরাও এসে আমাদের সাথে যোগ দিলো। তখন যে আরও রহস্য লুকিয়ে ছিলো কে জানতো?
আমাদের কাছে মনে হতে লাগলো শব্দটি ডানে, বামে, সামনে, পেছনে সবদিক থেকে আসছে। কী মহামুশকিল!
এমন গোঁলক ধাঁ ধাঁ এবং ভোজবাজির বেড়াজালে আমি জীবনে পড়া তো দূরের কথা কোনোদিন কল্পনাও করিনি।

০৬
আমি এবার আয়াতুল কুরশি পড়া শুরু করে দিলাম। মনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ভয়টি এখন আর নেই। আমি ওদের পূর্বেকার কোনো কথাই বললাম না। হঠাৎ আমার কাছে মনে হলো গোঙানির আওয়াজটি ৯ নম্বর রুম থেকে আসছে। এই রুমে জুয়েল থাকে। নিকলীতে বাড়ি। আমার বাড়ি থেকে আড়াই মাইল পূর্বদিকে। হাওর এলাকা। জুয়েল ছেলে হিসাবে মন্দ না। তবে সে একটু বেশিই ছনমনে।

কিছুক্ষণ দরজায় ধাক্কাধাক্কি করার পরও না খোলায় শেষ পর্যন্ত আমরা দরজা ভেংগে ফেললাম। ঘটনার নায়ক আসলেই জুয়েল। ওর সমস্ত মুখ থেকে লালা নির্গত হচ্ছে। জবাই করা পশুর মতো হাত-পা ছুড়ছে। একেবারে মারা যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত। এই সময়ে আমরা দরজা না ভাঙলে কি ঘটতো আল্লাহ মালুম। রুমে সে একা। রুমমেটরা কেউ নেই। আমি ওকে ছুঁয়ে দিতেই পানি পানি বলে একটা চিৎকার দিলো। ফরহাদ একজগ পানি এনে দিলো। জুয়েল এমনভাবে পানিটা খেলো যেনো জগে মাত্র একচুমুক পানি ছিলো। আমরা তাজ্জব বনে গেলাম। এক নিশ্বাসে পানিটুকু খেয়েই সে আবার মরার মতো লুটিয়ে পড়লো। রাত তখন অনেকাংশ পেকে গেছে। তিন কী সাড়ে তিন হতে পারে।

কী মনে করে আমি একবার বাইরে থাকালাম। আমাদের ছাত্রাবাসের যে অংশে টি ভি রুম, তার পেছনে একটি বিশাল গাছ। গাছটির নাম আমার জানা নেই। আমার চোখ প্রথমেই সেদিকে গিয়ে চড়ক গাছে পরিণত হলো। কিছুক্ষণ আগে যিনি নরসুন্ধা থেকে উঠে এসেছিলেন, সেই তিনি তিরতির করে গাছটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। কোনোরকম হাতের ব্যবহার ছাড়াই তিনি হেঁটে হেঁটে গাছটিতে উঠে গেলেন। এরপর অদৃশ্য হয়ে গেলেন। আমি যেনো নিজের চোখকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কাউকে কিছু বললামও না। নীরবে-নিভৃতে সবকিছু বদহজম করলাম।

কিছুক্ষণ পরে জুয়েলের জ্ঞান ফিরে আসলে জানা গেলো তাকে বোবা ধরেছিলো। তালগাছের মতোন লম্বা একটা লোক তার বুকের উপর চেপে বসে ধারালো ছুরি দিয়ে তার গলা কাটছিলো। এই যে সে এতো চিৎকার, চেঁচামেচি করছে গলা দিয়ে কোনো আওয়াজই বের হচ্ছে না।

০৭
আমার গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারতো। যদি না এ বিষয়ে আমার কোনো পাদটীকা না থাকতো। উদ্ভুত ঘটনাটি শুধু বাস্তবের কাছাকাছিই নয়। একেবারে বাস্তবিক। আমি নিশ্চিত আমার স্মৃতি আমার সাথে কোনো ধরণের প্রতারণা করেনি। বেঈমানি করেনি।

এখন প্রশ্ন হলো, এই ঘটনাটির ব্যাখ্যা কী? নরসুন্ধা নদ থেকে উনার উঠে আসা, জানলায়, দরজায় ঠকঠক শব্দ করা, লাইট অফ করে দেওয়া পুরোটাই হ্যালোসিনেশন কিংবা আমার ভ্রমদৃষ্টি? নাকি অন্যকিছু? তাছাড়া বোবা ধরা নতুন কিছু নয়। আমিও বেশ কয়েকবার এর শিকার হয়েছি। এ নিয়ে সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা যেমন আছে। তেমনি ভৌতিক ব্যাখ্যাও কম নেই। এই রহস্যের জট কি কোনোদিন খুলবে? হয়ত খুলবে; নয়ত খুলবে না!!

ব্যর্থতা, জীবন এবং অন্যান্য!

FB_IMG_1687356295959

জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে ভরসা দেবার মত মানুষের দরকার পড়ে। মানুষটা যখন নিজেকে আর বিশ্বাস করতে পারে না, নিজের ভেতরে অবিশ্বাসের সুতো জাল বুনতে শুরু করে করে তখন এমন একজন মানুষের দরকার পড়ে। মানুষটা হতে পারেন আপনজন কেউ কিংবা অপরিচিত কেউও। বয়ঃসন্ধিকাল পার করে যৌবনে পদার্পণ করার সময়টা বড্ড খারাপ। ক্রমশঃ জীবনের সমস্যাগুলো ঘনীভূত হতে শুরু করে কিন্তু তখন আর বাবা-মাকে সেগুলো বলা যায় না।

সে সময়টাতে যখন আর কারো সাথে শেয়ার করবার মত উপায় থাকে না কিংবা শেয়ার করবার মত মানুষ পাওয়া যায় না তখনই মনের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করে আত্মহননের পথ বেছে নেবার চিন্তা। যান্ত্রিকতা মানুষকে সামাজিকভাবে কাছে আনার চেষ্টা করলেও মানুষকে সেভাবে আপন করে তুলতে শেখাতে পারেনি।বিশ্বাস করতে শেখায়নি। অবিশ্বাসের জালে আবদ্ধ করে রেখেছে সবকিছু। এসময়ে এসে কারো মনের দুঃখ কিন্তু মনের আক্ষেপ শোনার মত মানুষ খুঁজে পাবার চেয়ে ডুমুরের ফুল খুঁজে বের করাটা বোধ হয় সহজ!

জীবনের একটা পর্যায়ে এসে হাল ছেড়ে দেবার প্রবণতা মানুষের নতুন কিছু নয়। খেই হারিয়ে ফেলা জীবনটাকে আবার নতুন করে তুলে ধরতে দরকার হয় তেমনই কিছু মানুষের। কাঁধে হাত রেখে আশ্বাসের দরকার হয়। নতুন করে বাঁচবার প্রেরণা যোগাতে এমন কিছু মানুষের একটু কথা শোনা কিংবা তাকে কিছুটা সময় দেওয়াটাই অনেকটাই যথেষ্ট। প্রতিবার পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে কিংবা এডমিশন টেস্টের পর এভাবে নতুন করে চেষ্টার সাহস দেওয়া মানুষের অভাবে অনেক জীবন বিপথে চলে যায় কিংবা আত্মহননের পথেও এগিয়ে যায়।

সাফল্য ব্যর্থতা মিলিয়েই জীবন। সাফল্যের সময় পাশে থাকার চাইতে ব্যর্থতার সময় পাশে থাকাটা প্রেরণা যোগায় নতুন সফলতার পথে হাঁটতে! ব্যর্থতার জন্য তিরস্কার নয়, একটু পাশে দাঁড়ান মানুষটার। হাজার রাত জাগার রাতের চেষ্টার পরেও যখন মানুষটা ব্যর্থ,তখন তার কষ্টটা আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা লাগাবার মতো মানুষের অভাব নেই। কিন্তু ক্ষত সারিয়ে তোলার মানুষটার এ সমাজে বড্ড অভাব!

আশা ভালোবাসার জীবন

ni জন্মের পর গর্ভধারিণী মায়ের ভালোবাসা থেকেই একজন মানুষের মনের মণিকোঠায় ছোট পরিসরে ভালোবাসার জন্ম হয়। একসময় ছোট্ট ভালোবাসা অনেক বড় হয়ে ভালোসার গভীরে চলে চলে যায়।

ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে নিজ সংসারে। ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে সমাজের মানুষের মাঝে। ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে দেশ ও দশের মাঝে। সেই ভালোবাসা থেকেই ভালোবাসতে থাকে স্রষ্টার সৃষ্টিকে।

আবার সেই ভালোবাসা থেকেই শতসহস্র ছোটবড় আশা জন্ম হতে থাকে। সেই আশাই একজন মানুষকে একসময় সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেয়।

কেউ প্রেমে সফলতার আশা করে। কেউ লেখাপড়া করে বিদ্যান হবার আশা করে। কেউ মহাসাগর পাড়ি দিতে আশা করে। কেউ দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার আশা করে। কেউ চাঁদের দেশে যাবার আশা করে।

কেউ ভিনগ্রহে জীবের সন্ধ্যানে মহাকাশের এই গ্রহ থেকে ওই গ্রহে ঘুরে সফলতার আশা করে। কেউ মহাসাগরের তলদেশ থেকে মণিমুক্তা কুড়ানোর আশা করে। কেউ মানুষকে নিঃস্ব করে নিজেই বিশ্বের বড় ধনীব্যক্তি হওয়ার আশা করে।

সেসব আশা কারোর সফল হয়। আবার কেউ আশা থেকে নিরাশ হয়ে নিজেই ধংস হয়ে যায়।

কিন্তু পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর মনের মণিকোঠায় জমে থাকা আশা ভালোবাসা চিরতরে ধংস হয় না। একজন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও বেঁচে থাকার আশা করে।

মোটকথা এই পৃথিবীর খারাপ ভালো সব মানুষই আশা আর ভালোবাসা মনে ধারণ করেই বেঁচে থাকে জন্ম থেকে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। আমিও বেঁচে আছি আশা ভালোবাসা নিয়ে। বেঁচে থাকুক পৃথিবী, বেঁচে থাকুক স্রস্টার সকল প্রেরিত জীব।

.
নিতাই বাবু
১৪/০৬/২০২৩ইং।

তোমায় আমি

ind

তোমায় আমি শ্মশানের অখণ্ড নীরবতা এনে দেব
তোমায় আমি কাঁঠাল চাঁপার সুগন্ধে ভরিয়ে নেব
তোমার আহত শরীর ওষধি প্রলেপে শুশ্রূষা করব
তুমি শুধু তোমার আশীর্বাদী হস্ত এ ভাবে না বলে
না কয়ে আমার বিরান দালান হতে সরিয়ে নিও না।

মা-বাবার আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ে ও কিছু অলৌকিক ঘটনা

out.

আমার বিবাহের তারিখ, ১৪ জুন ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ, পহেলা আষাঢ়, ১৩৯৩ বঙ্গাব্দ। বিয়ে করেছিলাম, মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখাঁন থানাধীন সুবচনী সংলগ্ন নয়াবাড়ি গ্রামের এক দরিদ্র হিন্দু পরিবারের মেয়ে।

১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে আমার একমাত্র মেয়ে অনিতা’র জন্ম হয়। মেয়ে অনিতা ভূমিষ্ঠ হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটির ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে। তখন আমার গর্ভধারিণী মা জীবিত ছিলো। বাবা ছিলেন পরপারে।

আমি তখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ১০নং ওয়ার্ড গোদনাইলস্থ কো-অপারেটিভ মহিউদ্দিন স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিলে নামমাত্র বেতনে চাকরি করি। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর পেয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে গেলাম।

গিয়ে দেখি আমার স্ত্রী হাসপাতালের সিটে সন্তান পাশে রেখে শুয়ে আছে। মা স্ত্রীর সিটের পাশে বসা। আমি সামনে যাওয়ার সাথে সাথে মা হেসে বললো, “এতক্ষণে এলি? আয় দেখ তোর সুন্দর একটা মেয়ে হয়েছে।”

মেয়ের কথা শুনেই আমি কেঁদে ফেললাম! আমার দু’চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছিল। মা আমার কাঁদা দেখে এক ধমক দিয়ে বললো, “এ-ই, কাঁদিস কেন? মেয়ে হয়েছে বলে কাঁদছিস? কাঁদবি না, বলছি! যিনি মেয়ে দিয়েছে, তিনিই উদ্ধার করবে। নেয়, মেয়েকে কোলে নিয়ে আশীর্বাদ কর।”

মায়ের কথা শুনে তখনও আমার কান্না থামছিল না। আমি কেঁদে কেঁদে মেয়েকে কোলে নিয়ে বললাম, “মা, আমি মনে হয় মেয়ে বিয়ে দিতে পারবো না। যেই চাকরি করি, তাতে তো সংসারের খরচই হয় না। মেয়ে বড় হলে বিয়ে দিবো কীভাবে? বিয়ে দিতে হলে তো সোনা-দানা, টাকা-পয়সার দরকার হয়, তা কি আমি জোগাড় করতে পারবো, মা?”
এই বলেই আরও জোরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম!

মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে বললো, “পারবি বাবা। তুই এ-নিয়ে চিন্তা করিছ না। দেখবি একভাবে-না-একভাবে তোর মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে।”

মায়ের কথায় শান্তনা পেলাম। মায়ের কথা মেনে নিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। বিধাতার উপর ভরসা রেখে মা আর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসায় এলাম। মনোযোগ-সহকারে কাজ করতে লাগলাম। বেতন যা পেতাম, তা দিয়েই মা-সহ বোন মরা এক ভাগ্নি আর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলতে থাকলাম। এরইমধ্যে আমার গর্ভধারিণী মা স্বর্গে চলে গেলেন।

এরপর ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে আমার একমাত্র ছেলে তপন’র জন্ম। ওরা ভাই-বোন দুই বছরের ছোট-বড়।ওরা হাঁটি হাঁটি পা পা করে একসময় ওরা বড় হতে লাগলো। মেয়ে স্কুলে ভর্তি হওয়ার দুইবছর পর চেলেকেও স্কুলে ভর্তি করানো হলো।

অনিতা যখন নবম শ্রেণি পাস করে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হলো, তখনই মেয়ের বিয়ের ঘর আসলো। বরের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার বৌলতলি বাজার সংলগ্ন করপাড়া গ্রামে। এতো দূর থেকে যে, মেয়ের ঘর আসবে তা আমাদের স্বামী-স্ত্রীর দুজনের কল্পনার বাইরে ছিলো।

আমি তখন সিরাজগঞ্জ বেলকুচি এক টেক্সটাইল মিলে চাকরি করি। তখন আমার স্ত্রী নিকটস্থ এক ফোন-ফ্যাক্স’র দোকান থেকে প্রতি মিনিট ৮টাকা রেটে সিরাজগঞ্জ বেলকুচি আমার মালিকের নাম্বারে কল করে। যখন আমার স্ত্রী আমার মালিকের ফোন নাম্বারে ফোন করে, তখন আমি মিলের বাইরে ছিলাম।

আমি মিলের বাইরে থাকার কারণে আমার স্ত্রী মালিকের কাছে সমস্ত বিষয় জানায়। আমি মিলে আসলে আমার মালিক আমাকে স্ত্রীর ফোনে বলা সমস্ত কথাগুলো আমাকে জানিয়ে দেয়। আমি মেয়ের মেয়ের ঘর আসার কথা শুনে রীতিমতো অবাক আর হতাশায় পড়ে গেলাম! ভাবতে লাগলাম, কী করি!

তারপর আমাকে যেই লোক বেলকুচি নিয়ে চাকরি দেয়, সেই লোকের কাছে মেয়ের ঘর আসার কথা জানালাম। ওই লোক ছিলো আমার শাগরেদ। তার নাম ছিলো, টিপু সুলতান। বাড়ি ছিলো কুষ্টিয়া জেলার কয়া গ্রামে। ওই লোক আমাকে সবসময় ওস্তাদ ওস্তাদ বলে ডাকতো। টিপু আমার কথা শুনে আমাকে বললো, “ওস্তাদ এ-তো খুশির খবর! মিষ্টি খাওয়াতে হবে।”

বললাম, “মিষ্টি তো খাওয়াবই, এখন আমি নারায়ণগঞ্জ যাবো কী করে, টিপু? আমার হাতে টাকা নেই। কিন্তু যেতে হবেই।”
শাগরেদ টিপু বললো, “আমি আপনাকে ১০০০টাকা দিয়ে দিচ্ছি, আপনি আগামীকালই নারায়ণগঞ্জ চলে যান। সেখানে গিয়ে মেয়ের বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেলেন। প্রয়োজনে আমাকে কল করবেন, আমি আপনার মেয়ের বিয়েতে কিছু করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।”

টিপু’র কথা মেনে নিয়ে পরদিন সিরাজগঞ্জ বেলকুচি থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হলাম। আমার সাথে টাকা ছিলো শাগরেদ টিপু’র দেয়া মাত্র ১০০০টাকা। তা নিয়েই নারায়ণগঞ্জের মাটিতে পা রাখলাম। বাসায় গেলাম। মেয়েকে দেখে যাওয়ার বিস্তারিত ঘটনা জানলাম। স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করলাম, কী আছে আর কী লাগবে, ছেলে পক্ষের দাবিদাওয়া কী কী?

স্ত্রী বললো, “ছেলে পক্ষের কোনও দাবিদাওয়া নেই। যা পারি আর যেভাবেই পারি বিয়ের অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে শেষ করে মেয়ে উঠিয়ে দিতে পারলেই হলো। তারপরও অনিতা আমাদের একমাত্র মেয়ে। আবার হিন্দু বিয়ে বলে একটা কথা আছে। সামান্য সোনা-দানা না দিয়ে কি মেয়ে বিদায় করা যাবে। সোনা-দানার মধ্যে আমার কষ্টের টাকায় মেয়ের জন্য একজোড়া কানের দুল আছে মাত্র। এটা ছাড়াও মেয়ের নাকের লাগবে, হাতের চুড়ি লাগবে, পলা লাগবে, গলার লাগবে, হাতের শাঁখা সোনা দিয়ে বাঁধাই করে দিতে হবে। তারপর আছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার খরচাদি।”

স্ত্রীর কথা মনোযোগ সহকারে শুনলাম! ভাবলাম, কী করা যায়! ভেবেচিন্তে পরদিন খুব ভোরবেলা আমার জন্মদাতা বাবাকে যেই শ্মশানে দাহ করেছি, সেই শ্মশানের উদ্দেশে ঘর থেকে রওনা হলাম। শ্মশান ঘাটটি হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন বন্দর থানাধীন ১নং ঢাকেশ্বরী কটন মিলস্ ঘেঁষা শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়। যাওয়ার পথেই দোকান থেকে দুটো মোমবাতি আর এক প্যাকেট আগরবাতি কিনে নিলাম।

২নং ঢাকেশ্বরী গুদারাঘাট থেকে খেয়া নৌকায় নদী পার হয়ে চলে গেলাম, ১নং ঢাকেশ্বরী শ্মশানঘাট। শ্মশানে গিয়ে যেই চুলায় বাবাকে দাহ করা হয়েছিল, সেই চুলার সামনে দুটো মোমবাতি আর আগরবাতিগুলো জ্বালালাম। মোমবাতি আগরবাতি জ্বালিয়ে হাতজোড় করে শ্মশানের চুলার সামনে বসলাম। চুলার সামনে বসে হাতজোড় করে নিজের মেয়ের বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন করার জন্য জন্মদাতা পিতার আশীর্বাদ চেয়ে কান্নাকাটি করলাম। তারপর শ্মশানের চুলার সামনে থাকা কিছু ধুলোবালি হাতে নিয়ে গায়-মাথায় মেখে চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিজের বাসায় ফিরে এলাম।

তারপরদিন গেলাম গর্ভধারিণী মাকে যেই শ্মশানে দাহ করেছি, সেই শ্মশান ঘাটে। শ্মশানঘাট হলো, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় শ্মশানঘাট, মাসদাইর নামক স্থানে। সেই শ্মশানে গিয়ে বাবার শ্মশানে যেভাবে যা করেছি, মায়ের শ্মশানেও হাতজোড় করে মায়ের আশীর্বাদ চেয়েছি। যাতে আমার মেয়ের বিয়ের কার্যসম্পাদন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারি।

এরপর থেকে নিজের পরিচিত ব্যক্তিবর্গের কাছে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে যথেষ্ট সহযোগিতার আশ্বাস পেলাম। নিজের বড় বোনের স্বামী জামাইবাবু মেয়ের বিয়ের কথা শুনে হাতের পলা দিবে বলে জানিয়েছে। বড় বোন তার বড় মেয়ের বাড়ি গিয়ে তাদের নেমন্তন্ন করে আসতে বললে, বড়দাকে সাথে নিয়ে গেলাম বড় ভাগ্নীর বাড়িতে। নেমন্তন্ন করলাম ওদের সবাইকে।

বড় ভাগ্নী নেমন্তন্ন পেয়ে আমার মেয়ের গলার হার বানিয়ে দিবে বলে জানিয়ে দিলো। এভাবে কেউ টাকা, কেউ কাপড়, কেউ থালাবাসন, কেউ লেপ- তোষক দিয়ে সাহায্য করার আশ্বাস দিলে, একসময় মেয়ের বিয়ের দিনতারিখ পাকাপাকি করে ফেলি।

বিয়ের দিনতারিখ পাকাপাকি হলেও বিয়ের আনুষাঙ্গিক নিয়মনীতি পালনীয়-সহ বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী আর নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের খাওয়া-দাওয়ার খরচাদি বাদ থেকে যায়। এসব আনুষাঙ্গিক নিয়মনীতির খরচাদি সামাল দেয়ার জন্য এক এনজিও সমিতি থেকে ৪০০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা উত্তোলন করি।

সেই টাকা থেকে মেয়ের বিয়ের কাপড়-চোপড়-সহ বিয়ের টুকিটাকি যা লাগে তা কেনাকাটা করে রেডি রাখি। বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী-সহ নিজেদের আত্মীয়স্বজন মিলিয়ে প্রায় ২০০ লোকের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনও করে ফেলি। সিরাজগঞ্জ বেলকুচিতে থাকা আমার শাগরেদ টিপু সুলতানকেও ফোনে নেমন্তন্ন করে বিয়ের দিন যেভাবেই হোক আসতে বলি।

বিয়ের পাঁচদিন কাকি থাকতেই বৃষ্টি আর বৃষ্টি! বৃষ্টি আর থামছিল না। সেই বৃষ্টিতে যেই মহল্লায় থাকতাম সেই মহল্লা বন্যার মতো প্লাবিত হয়ে গেলো। বিয়ের বাকি দুইদিন। আমি আমার মা-বাবা’র স্মরণে কান্নাকাটি করে বিয়েতে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য প্রার্থনা করতে থাকি। একসময় বৃষ্টি থামলো। মহল্লায় জমে থাকা বৃষ্টি জল শুকিয়ে গেলো। ঝামেলা বাঁধে বিদ্যুৎ।

তখন সারাদেশে প্রচুর লোডশেডিং চলছিল। এমন লোডশেডিং চলছিল যে, একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে আবার কখন আসবে তার কোনও নিশ্চয়তা ছিলো না। আবার বিদ্যুৎ আসলে কতক্ষণ থাকবে, তারও কোনও গ্যারান্টি ছিলো না।

এমন অবস্থাতেই আমার মেয়ের বিয়ে। তা দেখে আমি শুধু আমার গর্ভধারিণী মা আর জন্মদাতা পিতাকে স্মরণ করতে থাকলাম। মনে মনে প্রার্থনা করে বলতাম, “মা, এভাবে বিদ্যুৎ চলে গেলে মেয়ের বিয়ের সময় বিঘ্ন ঘটবে। তুমি মা আমার সহায় হও। বাবাকে স্মরণ করেও একই প্রার্থনা করতাম।”

এর ফলস্বরূপ তাঁদের আশীর্বাদে মেয়ের বিয়ের অধিবাসের দিন বিদ্যুৎ যাওয়া বন্ধ হলো। মানে বিয়ের আগেরদিন থেকে। এই যে বিদ্যুৎ যাওয়া বন্ধ হলো, মেয়ের বিয়ের পরদিন মেয়েকে বিদায় দেয়ার পর বিদ্যুৎ গেলো! তা দেখে মহল্লার সবাই বলতে লাগলো, “অনিতার বাবা মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে জেনারেটর চালু রেখেছে।”

মোটকথা বিশেষ করে বিদ্যুতের ব্যাপারে সবাই অবাক হয়ে গেলো! আমার মা-বাবার আশীর্বাদস্বরূপ এমন আরও অলৌকিক কাণ্ড ঘটতে লাগলো। তারমধ্যে অবাক হবার মতো একটা কাণ্ড ঘটলো, ধুতরা গোটা। যা ছাড়া আর হিন্দু বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন করা যায় না।

❝হিন্দু বিয়ে কার্যসম্পাদনের সময় নানারকম ফুল-ফল, কলাগাছ, ধান, দুর্বা, বেল-তুলসী-সহ আরও আরও অনেককিছুর প্রয়োজন হয়ে থাকে। তারমধ্যে একটি হলো, বিয়ের কার্যসম্পাদনের সময় ৮টি ধুতরা গোটার দরকার হয়। ওই ধুতরা গোটা মাঝখানে কেটে দুভাগ করে তার ভেতরের বিচিগুলো ফেলে ঘি’র প্রদীপ জ্বালানো হয়। ওই ধুতরা গোটা ছাড়া বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন হবে না। মোটকথা ওই বিয়ে অসম্পন্নই রয়ে যাবে।❞

বিয়ের আগেরদিন অধিবাস শেষে বিয়ের দিন সকালবেলা যথারীতি পুরোহিত বাসায় এসে বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন করার যা যা দরকার তা গোছাতে লাগলো। সবকিছু ঠিকটাক গোছগাছ করার পর বাকি থাকলো, ৮টা ধুতরা গোটা। পুরোহিত ধুতরা গোটা আর খুঁজে পাচ্ছিল না।

পুরোহিত ধুতরা গোটা হাতের কাছে না পেয়ে তাড়াতাড়ি ৮টা ধুতরা গোটা সংগ্রহ করতে বললে, আমার বড়দা ধুতরা গোটা সংগ্রহ করার জন্য ঘর থেকে বের হলো। এই ধুতরা গোটা সংগ্রহ করার জন্য আমার বড় দাদা প্রথমে পুরো মহল্লার আনাচে-কানাচে থাকা ঝোপঝাড় জঙ্গলে তল্লাশি চালালো। মহল্লার কোথাও ধুতরা গোটা না পেয়ে গেলো, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়, লক্ষ্মণখোলা গ্রামে।

লক্ষ্মণখোলা পুরো গ্রামের আনাচে-কানাচে ঘুরে ধুতরা গোটা না পেয়ে গেলো নিকটস্থ দাসেরগাঁও গ্রামে। সেখানেও ধুতরা গোটা পেলেন না। গেলো, ১নং ঢাকেশ্বরী কটন মিলে। সেখানেও ধুতরা গোটা পাওয়া গেলো না। বড় দাদা ধুতরা গোটা না পেয়ে মন খারাপ করে নিরাশ হয়ে বাসায় ফিরে এলো। আমি তখন বাসায় ছিলাম না। আমি একটু দূরের মহল্লার একটা চায়ের দোকানে ছিলাম।

বড়দা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে সেই চায়ের দোকানে গিয়ে আমার পাশে মন খারাপ করে বসলো। আমি বড়দা’র মনটা খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করলাম, “দাদা তোর মনটা খারাপ কেন?”
বড়দা মলিন স্বরে বললো, “ধুতরা গোটা পাইনি। শীতলক্ষ্যা নদীর এপার-ওপার দুপাড়ের অনেক অচেনা জায়গায়ও খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও একটা ধুতরা গোটা পাওয়া গেলো না। এখন তোর মেয়ের বিয়ে কি করে হবে, সেই চিন্তাই করছি।”

বড়দা’র কথা শেষ হতেই আমি চা-দোকানদার জহির মিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, “জহির ভাই ক’দিন আগে আপনার বাসার সামনে কয়েকটা ধুতরাগাছ দেখেছিলাম। সেগুলো কি এখনো ঠিক জায়গামতো আছে?”
আমার কথা শুনে চা-দোকানদার বললো, “দাদা গত পরশুদিন ওই গাছগুলো তুলে ফেলেছি। একটু কষ্ট করে গিয়ে দেখুন তো গাছগুলো আছে কি-না?”

দোকানদার জহির ভাইয়ের কথা শুনে দু’ভাই মিলে তাড়াতাড়ি জহির ভাইয়ের বাসার সামনে গেলাম। গিয়ে দেখি ধুতরাগাছগুলোর পাতা সামান্য শুকিয়ে গেছে। কিন্তু কয়েকটা ধুতরা গোটা দেখা যাচ্ছে। ধুতরা গাছের সামনে গেলাম। গাছগুলো ওলোট পালোট করে দেখি গাছগুলোতে ৮টা ধুতরা গোটাই আছে। একটা কমও নয়, একটা বেশিও নয়। তা দেখে সাথে সাথে গাছগুলো থেকে ধুতরা গোটাগুলো ছিড়ে বড়দা’র হাতে দিয়ে জহির ভাইয়ের বাসা থেকে বেরিয়ে চায়ের দোকানে এলাম।

দোকানে আসার সাথে সাথে চা-দোকানদার জহির ভাই জিজ্ঞেস করলো, “দাদা পেয়েছেন?”
বললাম, “হ্যাঁ দাদা, আমার মা-বাবার আশীর্বাদে আমার যেকটা গোটার দরকার, সেকটাই গাছগুলোতে ছিলো। আমি সেগুলো ছিড়ে নিয়ে এসেছি। আমি এখন একরকম চিন্তামুক্ত!”
আমার কথা শুনে চা-দোকানদার জহির ভাই-সহ কাস্টমার আরও অনেকেই অবাক হয়ে গেলো।

এর আগে অবাক হয়েছিল, আমার বড়দা! ধুতরাগাছ থেকে এক-এক করে যখন ধুতরা গোটাগুলো ছিড়ে আমার দাদার হাতে দিচ্ছিলাম, তখনই আমার বড়দা বলতে লাগলো, “এ কী অলৌকিক কাণ্ড! কত জায়গায় ঘুরে কোথাও একটা ধুতরা গোটা পাইনি। শেষমেশ এখানে আসে মরা গাছে ৮টা ধুতরা গোটা পেয়েছি। দরকারও ছিলো এই ৮টা ধুতরা গোটা, পেয়েছিও ৮টা। ছিলও ৮টা। সবই বিধাতার ইচ্ছা!”

তারপর চা দোকান থেকে দুইভাই চা পান করে বাসায় গিয়ে ৮টা ধুতরা গোটা বিয়ে কার্যসম্পাদন সম্পন্ন করার পুরোহিতের হাতে দিলাম। পুরোহিত সেগুলো হাতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো, “এখন আর কোনও টেনশন নেই, সবকিছু ঠিকটাকমত আছে।” বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন করতে আরও কোনও ঝামেলায় পড়তে হবে না।” বিয়ের লগ্ন রাত ১১টায়।

রাত ১০.৩০মিনিটের সময় বরযাত্রী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ১০নং ওয়ার্ড গোদনাইলস্থ চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্’র আটপাড়া এসে হাজির হলো। ঢাক-ঢোল, সানাই বাজিয়ে বরযাত্রীদের স্বাগত জানিয়ে বিয়ের আসরে আনা হলো। তারপর একদিকে শুরু হলো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, অন্যদিকে চলছিল খাওয়া-দাওয়ার পর্ব।

বরযাত্রী-সহ নিজের আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত শুভাকাঙ্ক্ষী মিলে প্রায় ২৫০জন লোকের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব একসময় শেষ হলো। বিয়ের প্রথম পর্যায়ের পর্ব শেষে হতে রাত ভোর হয়ে গেলো। সকালবেলা বাসি বিবাহের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন হয়ে গেলে জামাই মেয়ে-সহ বরযাত্রীরা তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়। তখন দিনের ১১টা।

মেয়ে-সহ বরযাত্রীদের বিদায় করার কিছুক্ষণ পরই গোদনাইল এলাকা থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। এর পরই শুরু হলো আবার বৃষ্টি। মেয়ের জন্য আমরাও কাঁদছি, আমাদের সাথে যেন আকাশও কাঁদছিল! এই ছিলো আমার মা-বাবার আশীর্বাদস্বরূপ আমাদের একমাত্র মেয়ের বিয়েতে কিছু অলৌকিক ঘটনা। যা কখনোই ভোলার মতো নয়।

তাই আমি এখনো যেকোনো আপদে-বিপদে মা-বাবার শ্মশানে গিয়ে দুটো আগরবাতি আর মোমবাতি জ্বালিয়ে হাতজোড় করে তাঁদের আশীর্বাদ চাই। তাঁদের আশীর্বাদের আমার সমস্যার সমাধান হয়।

ইটারনাল ইকোস: এ টাইম ওডিসি”

দ্বিতীয় পর্ব।
ইটারনাল ইকোস: এ টাইম ওডিসি”

চ্যাপ্টার ১১: এপিক ব্যাটেলস
– সিরিয়ালটিতে অ্যাকিলিস এবং হেক্টরের মধ্যকার কিংবদন্তি দ্বন্দ্ব সহ মহাকাব্য যুদ্ধের ক্রম দেখানো হয়েছে।
– দলটি যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং উভয় পক্ষের জন্য বিধ্বংসী পরিণতি প্রত্যক্ষ করে।

চ্যাপ্টার ১২: ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ
– দেবতা এবং দেবী সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, প্রায়শই ঘটনাগুলিকে চালিত করে এবং নশ্বরদের প্রভাবিত করে।
– দল এই ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ নেভিগেট করতে এবং ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।

চ্যাপ্টার ১৩: বিশ্বাসঘাতকতা এবং ষড়যন্ত্র
– বিশ্বাসঘাতকতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা গ্রীক এবং ট্রয় উভয় উপদলকে আঘাত করে।
– যুদ্ধ প্রতিরোধ করার জন্য তাদের মিশন রক্ষা করার সময় দলটিকে অবশ্যই ষড়যন্ত্র উন্মোচন করতে হবে।

চ্যাপ্টার ১৪: ট্রয়ের পতন
– তাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, দলটি যুদ্ধ এড়াতে ব্যর্থ হয় এবং অবশেষে ট্রয়ের পতন ঘটে।
– তারা ধ্বংস এবং প্রাচীন বিশ্বের উপর এর গভীর প্রভাবের সাক্ষী।

চ্যাপ্টার ১৫: বর্তমানে ফিরে যান
– দল বিশৃঙ্খলা এড়াতে পরিচালিত করে এবং তাদের নিজস্ব সময়ে ফিরে আসে।
– তারা তাদের অভিজ্ঞতা, শেখা পাঠ এবং সমসাময়িক সমাজের জন্য প্রভাব প্রতিফলিত করে।
(পরবর্তী ক্রমগুলি গ্রীক এবং ট্রয় যুদ্ধের বিভিন্ন দিক অন্বেষণ করতে থাকবে, ঐতিহাসিক নির্ভুলতা, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী উপাদান এবং দার্শনিক প্রতিফলন। হেলেন, প্যারিস, অ্যাকিলিসের মতো দ্বন্দ্বের সাথে জড়িত বিখ্যাত সদস্যদের প্রদর্শন করে)

সিকোয়েন্স ১৬: দ্য আফটারম্যাথ
– দলটি গ্রীক ও ট্রয় সমাজে যুদ্ধের পরবর্তী পরিণতি এবং এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি নিয়ে আলোচনা করে।
– তারা সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং সংঘর্ষের স্থায়ী উত্তরাধিকারের উপর প্রভাব বিশ্লেষণ করে।

সিকোয়েন্স ১৭: দ্য ওডিসি
– মহাকাব্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, দলটি ওডিসিয়াসের যাত্রা অনুসরণ করে যখন তিনি যুদ্ধের পরে দেশে ফেরার চেষ্টা করেন।
– তারা পৌরাণিক প্রাণীদের মুখোমুখি হয়, পরীক্ষার সম্মুখীন হয় এবং অধ্যবসায় এবং মানব আত্মা সম্পর্কে মূল্যবান পাঠ শিখে।

চ্যাপ্টার ১৮: মিথ এবং বাস্তবতা
– দলটি গ্রীক এবং ট্রয় যুদ্ধের সময় মিথ এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতার মধ্যে অস্পষ্ট রেখাগুলি অন্বেষণ করে।
– তারা কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বের উত্স অনুসন্ধান করে, অতিরঞ্জিত গল্প থেকে ঐতিহাসিক সত্যের পাঠোদ্ধার করে।

সিকোয়েন্স ১৯: ট্রয় হর্স
– দলটি ট্রয় হরসের উদ্ভাবনী কৌশল এবং ট্রয়ের পতনে এর প্রধান ভূমিকার সাক্ষী।
– তারা যুদ্ধে প্রতারণার প্রভাব এবং এর স্থায়ী তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করে।

সিকোয়েন্স ২০: একটি মিটিং অফ মাইন্ডস
– দলটি প্রাচীন গ্রীস এবং আধুনিক সময়ের বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী, পণ্ডিত এবং ঐতিহাসিকদের একটি সমাবেশের আয়োজন করে।
– তারা মানব সভ্যতার উপর গ্রীক এবং ট্রয় যুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে চিন্তা-উদ্দীপক আলোচনায় জড়িত।

সিকোয়েন্স ২১: যুদ্ধের খরচ
– সিরিয়ালটি সৈন্য, বেসামরিক ব্যক্তি এবং পিছনে ফেলে যাওয়া পরিবারগুলির ব্যক্তিগত গল্পে বিভক্ত হয়ে সংঘাতের মানবিক মূল্যকে অন্বেষণ করে।
– দলটি ব্যক্তি এবং সমাজের উপর বিধ্বংসী টোল যুদ্ধের প্রতিফলন করে।

সিকোয়েন্স ২২: ট্র্যাজেডি এবং ট্রায়াম্ফ
– দলটি যুদ্ধের বিখ্যাত ট্র্যাজিক পরিসংখ্যানের মুখোমুখি হয়, যেমন ক্যাসান্দ্রা এবং প্যাট্রোক্লাস।
– তারা তাদের গল্পের মধ্যে পড়ে, ভাগ্য, আভিজাত্য এবং বীরত্বের জটিলতার থিমগুলি অন্বেষণ করে।

সিকোয়েন্স ২৩: ডিভাইন জাজমেন্ট
– দলটি নশ্বরদের উপর দেবতাদের বিচারের সাক্ষী, ঐশ্বরিক ন্যায়বিচার এবং শাস্তির ধারণাগুলি অন্বেষণ করে।
– তারা মানবিক বিষয়ে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের নৈতিক প্রভাবের সাথে লড়াই করে।

সিকোয়েন্স ২৪: হিরোসের পতন
– দলটি অ্যাকিলিস, হেক্টর এবং অ্যাগামেমনন সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দুঃখজনক মৃত্যুর সাক্ষী।
– তারা মৃত্যুর ভঙ্গুরতা এবং গৌরবের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির প্রতিফলন করে।

সিকোয়েন্স ২৫: লিগ্যাসি লাইভস অন
– দলটি পরবর্তী সভ্যতার উপর গ্রীক এবং ট্রয় যুদ্ধের স্থায়ী প্রভাব পরীক্ষা করে।
– তারা অন্বেষণ করে যে কীভাবে দ্বন্দ্বগুলি শিল্প, সাহিত্য, দর্শন এবং যুদ্ধকে আগত শতাব্দীর জন্য আকার দিয়েছে৷

অবশিষ্ট চ্যাপ্টারগুলি গ্রীক এবং ট্রয় যুদ্ধের বিভিন্ন দিক অনুসন্ধান করতে থাকবে, ঐতিহাসিক ঘটনা, পৌরাণিক উপাদান এবং দার্শনিক প্রতিফলনকে একত্রিত করে। গল্পটি একটি শক্তিশালী উপসংহারে শেষ হবে, ইতিহাসের থিম, মানব প্রকৃতি এবং এই প্রাচীন দ্বন্দ্বগুলির কালজয়ী প্রতিধ্বনিকে একত্রিত করে।

গল্পের শিরোনাম: “ইটারনাল ইকোস: এ টাইম ওডিসি”

gt

গ্রিক ও ট্রয়ের পরবর্তী ইতিহাস কি আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে আপনি কেন maximum মানুষ অবগত নয় কিন্তু আমিও অবগত নই কিন্তু আমার কল্পনা প্রবণ মন নিজস্ব ভাবনার দ্বারা নতুন করে এই লেখাটি তৈরি করেছি।

হেলেন কে নিয়ে রচিত গ্রিকও ট্রয়ের যুদ্ধ শেষ পরবর্তী হিস্ট্রি সম্পর্কে আমরা আজও জানিনা তাই অনেক ভেবেচিন্তে অনেকদিন গবেষণার পর লেখার কাজে হাত দেই উক্ত মিথলজিক্যাল স্টোরি আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষ লিখবে বা তৈরি করবে সেটাও কখনো কল্পনায় আসেনি তবুও লেখাটির তৈরি করতে শুরু করি। তবে এর শেষ কোথায় আমি জানিনা তারপরেও ফেসবুকে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু কিছু প্রকাশ করব। তারপর ভিত্তি করেই আজকের পর্বটি …

চ্যাপ্টার ১: ভূমিকা এবং প্রস্তাবনা
– গল্পটি কিংবদন্তি গ্রীক এবং ট্রয় যুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দিয়ে শুরু হয়, যা দুটি সভ্যতার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রদর্শন করে।
– কথক একটি রোমাঞ্চকর দুঃসাহসিক কাজের মঞ্চ তৈরি করে যা সময়কে অতিক্রম করে এবং বিভিন্ন যুগের ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে একত্রিত করে।

সিকোয়েন্স ২: টাইম গেট
– ডাঃ আলেকজান্ডার থর্ন, একজন উজ্জ্বল বিজ্ঞানী, একটি লুকানো পোর্টাল আবিষ্কার করেন যা সময়ের মধ্য দিয়ে ভ্রমণের অনুমতি দেয়।
– তিনি ট্রোজান যুদ্ধের সময় প্রাচীন গ্রীসে একটি অভূতপূর্ব যাত্রা শুরু করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের একটি দলকে একত্রিত করেন।

সিকোয়েন্স ৩: দ্য গ্যাদারিং
– ডঃ থর্ন দলটিকে একত্রিত করেন, যার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক, ভাষাবিদ এবং কৌশলবিদ।
– তারা তাদের নিজস্ব সময়ে ফিরে যেতে পারে তা নিশ্চিত করার সময় ইতিহাস পরিবর্তনের ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে আলোচনা করে।

চ্যাপ্টার ৪: ট্রয় আগমন
– দলটি সফলভাবে টাইম গেট দিয়ে ভ্রমণ করে এবং প্রাচীন ট্রয়ে পৌঁছে।
– তারা গ্রীক এবং ট্রোজানদের মধ্যে উত্তেজনা প্রত্যক্ষ করে, সরাসরি সংঘর্ষের সম্মুখীন হয়।

সিকোয়েন্স ৫: গ্রীক হিরোদের সাথে দেখা
– দলটি কিংবদন্তি গ্রীক যোদ্ধাদের মুখোমুখি হয়, যার মধ্যে অ্যাকিলিস, ওডিসিয়াস এবং অ্যাগামেমনন রয়েছে।
– তারা যুদ্ধের তাৎপর্য এবং উভয় সভ্যতার উপর এর পরিণতি নিয়ে আলোচনা করে।

চ্যাপ্টার ৬: ট্রয় দৃষ্টিকোণ
– দলটি প্রিয়াম এবং হেক্টর সহ ট্রোজান নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে, তাদের ভবিষ্যতের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
– তাদের লক্ষ্য একটি সংলাপ তৈরি করা যা ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে পারে।

চ্যাপ্টার ৭: অমর মহামানবদের হস্তক্ষেপ
– দলটি আবিষ্কার করে যে গ্রীক পুরাণের দেব-দেবীরা সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
– তারা জিউস, এথেনা এবং অ্যাফ্রোডাইটের মতো দেবতাদের মুখোমুখি হয়, যাদের দ্বন্দ্বের জন্য তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য রয়েছে।

সিকোয়েন্স ৮: দ্য পাওয়ার স্ট্রাগল
– দলটি গ্রীক এবং ট্রয় উভয় শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র উন্মোচন করে।
– অনিবার্য যুদ্ধ প্রতিরোধ করার জন্য তারা একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে।

সিকোয়েন্স ৯: দ্য ট্র্যাজিক লাভ স্টোরি
– সিরিয়ালটি প্যারিস, একজন ট্রোজান রাজপুত্র এবং গ্রীক রাজা মেনেলাউসের স্ত্রী হেলেনের মধ্যে রোম্যান্সের বর্ণনা দেয়।
– দলটি প্রেমের জটিলতা এবং দ্বন্দ্বে এর ভূমিকা অন্বেষণ করে।

চ্যাপ্টার ১০: ভবিষ্যদ্বাণী
– দলটি একটি ভবিষ্যদ্বাণী শিখেছে যা ট্রয়ের পতন এবং গ্রীকদের বিজয়ের পূর্বাভাস দেয়।
– তারা নশ্বর এবং অমর উভয়ের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়ে ভাগ্যের গতিপথ পরিবর্তন করার চেষ্টা করে।

সংক্ষিপ্ত।
সম্পূর্ণ লেখাটি পাঠ বাই পার্ট প্রকাশ হবে।