বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

রোদনভরা ঈদ

দেখো দেখো ঐ আকাশের বুকে
এক ফালি চাঁদের মুখ;
মাহে রমজানের ঐ রোজা শেষে
দিতে এলো ঈদের সুখ।

এবারের ঈদখানি একটু যে ভিন্ন
এখন তো করোনাকাল;
আম্পানেও আবার সব লণ্ড ভণ্ড
হৃদয় সবার টালমাটাল।

হবে না এবার, কোনো করমর্দন
হবে না এবার কোলাকুলি;
আসবে না কাছে, আত্মীয় স্বজন
হবে না রসালাপ প্রাণখুলি।

না কোথাও আড্ডা বা ঘোরাঘুরি
বাড়িতে সবে সারাদিন;
না ছুটাছুটি. না আনন্দ আহামরি
এ ঈদখানি যেন ছন্দহীন।

ঈদের খুশি কখনো হয় না বেশি
যদি না বেঁচে রয় প্রাণ;
করোনা নিয়ে গেছে সকল হাসি
ঘরবাড়ি ভাঙ্গলো আম্পান।

এমনি ঈদ আসবে চলেও যাবে
যেন সময়ের এক বিধান;
হয়ত: কাল ক্ষুব্দ পৃথিবী হাসবে
হবে আমোদ হবে জয়গান।

May 22, 2020

বাংলাদেশ তুমি প্রবাসী লাশদের মাতৃভূমি না

নিজেকে অসহায় ভাবছেন? একবার ভেবে দেখুন প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেমন আছে এই করোনার মধ্যে। কত প্রবাসী মারা গেছেন জানেন তো? একটু ভাবুন তো পরিবারের সবাই বাংলাদেশে আর মাত্র একজনই জীবিকার সন্ধানে দেশের বাইরে ছিল। আজ সেই নেই অথবা সেই করোনায় আক্রান্ত! অসহায় কে? আপনি, নাকি নিঃসঙ্গ সেই প্রবাসী। মধ্যপ্রাচ্যে জেলে আছে ২৯ হাজার প্রবাসী যারা সবাই বৈধভাবে এসে অবৈধ হয়েছে। আর আসতে সুদ ও ধার কর্জ করেই বিদেশে আসতে হয়। একজন লোক আসার সময় সরকার কোন অর্থনৈতিক সাহায্যই করে না। সব কিছু নিজেকে করতে হয়। প্রতারক দালালের কথা শতকরা ৯৮টাই মিথ্যা। বিদেশ এসেই সে চরম বাস্তবতা ও কঠিন প্রতিকূলতার মুখে পড়ে। আছে মালিকদের বর্বর আচরণ। অনেকে এসেই কাজ পায় না, বৈধ ওয়ার্ক পারমিট পায় না। হয়ে পড়ে দিশাহারা, হয়ে পড়ে অবৈধ। তবে মনে একটাই চিন্তা থাকে কিছু টাকা রোজগার করতে পারলেই সুদটা পরিশোধ হবে। ঘর ভিটা রক্ষা করতে পারলে দেশে গিয়ে না খেয়েও পরিবার নিয়ে থাকতে পারবো। কিছু টাকা পাঠালে এনজিও আব্বাকে কোমরে রশি লাগবে না। আর তখন কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ছে। আমও গেল ছালাও গেল। সরকার কি আছে সংযোগ এতে। না নাই।

যারা অনেক বছর কাজ করেছে তারাও আজ দিশাহারা। যৌথ পরিবারে বোন বিয়ে, ভাইদের লাইন, ঘরবাড়ি দালান করা আস্তে আস্তে মা বাবা বুড়া হয় তাদের ঔষধ খরচ। এইদিকে নিজেই বুড়া, দুই পা খাড়ায় আর মাঝের …… । তখন বিয়ে, কোন রকম বাচ্চার বাবা হলেও বউ আইফোন পেয়ে ফিরিত করে টাউনে ঘুরে ঘুরে। এর মাঝে ওয়ার্ক পারমিট কোম্পানি করে না কারণ কোম্পানি দেওলিয়া, সরকারি ফিস বাড়িয়েছে বলেও অনেক কোম্পানি পারমিট করে না। হয়ে পড়ে লোক অবৈধ। তবে একসময় এই লোকই কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে। এই টাকা পরিবার খরচ করলেও বিদেশ হতে দেশেই গিয়েছে টাকাটা।

কিছু লোক চাকরী করে, ব্যবসা করে, ২০/২৫ বছর প্রবাস করে আজ ক্লান্ত, দেশে কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছে। ভাগ্য সহায় ছিলো। এখন এই মহামারিতে বিদেশে মরে লাভ কি। বাঁচলে পরিবার নিয়ে বাঁচবো মরলে একসাথে মরবো। তাই ভয়ে নিজ দেশে গিয়েছে এটা তার অপরাধ নয়। আগে বলেছি বিদেশ আসতে সরকার কিছুই সাহায্য করে না। সব লোকের দেশে মরার অধিকার অবশ্যই আছে। নতুন লোক যারা বিদেশ এসেই অবৈধ হয়ে গেল তারা চলে গিয়ে ভালো করেছে। তারা এমনি জিন্দা লাশ। হাজার হাজার শ্রমিক ছাটাই হবে ভবিষ্যতে। যারা কোটি কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে এতে পরিবার, দেশের সরকার উপকৃত হয়েছে। আমি দেশের নাগরিক আমি দেশে আসবোই, সরকার কিভাবে আমাকে সুরক্ষিত করবে সেটা সরকার ভাববে। আমি দেশের ক্ষতি করি নাই অতএব সরকার আমার ক্ষতি করতে পারেন না।

ইউরোপে মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের মত যাইতে পারে না। অনেক টাকার বিনিময় সাগর, পাহাড়, বন- জঙ্গল পার হয়ে তারপর যায়। আপনরা জানেন কত বাঙ্গালী সাগর মহাসাগরে ভেসে গিয়েছে। কত লোক তুর্কী বরফে আর আফ্রিকার জঙ্গলে সলিল সমাধি হয়েছে। এত কষ্ট করে গিয়ে কেউ ফেরত আসতে চাইবে না। আর আমাদের দেশ হতে উন্নত দেশে জীবনমান অনেক অনেক উন্নত। এমন আরাম ছেড়ে দেশে গিয়েছে শুধু পরিবার নিয়ে মরতে। বৈধ কাগজ না থাকলে চিকিৎসা পেতে অনেক কষ্টকর। অনেকের ডায়াবেটিস সহ আরো জটিল রোগও আছে। টাকা সব নয় জীবনে টাকা অনেক কামাই করেছি এবার দেশে গিয়ে মা কিংবা মেয়ের কোলোই মরি। তাই মহামারীর প্রথমে প্রবাসীদের হুমড়ি খেয়ে মাতৃভূমিতে যাওয়া। আর দেশ তুমি দিলা বেশ।

৬৮জন বাঙ্গালী সৌদিতে মারা গিয়েছে। ৩০২১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এখন আর অভিবাসী নাগরিকদের পরিচয়ও প্রকাশ করছে না। বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে দাফনও হয়নি বহু লাশের। বাবা মা হারিয়েছে সন্তান, ভাইবোন হারিয়েছে প্রিয় ভাই, ছেলেমেয়ে হারিয়েছে বাবা, আর বউটা হয়েছে বিধবা। যার লাশ কিংবা কবর স্বপ্নেও আসবে না। আপনি কষ্ট করে অন্যান্য দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী লাশের হিসাবটা নিবেন। আর তাদের গালি দিবেন কারণ একজন ইটালী প্রবাসী দেশকে গালি দিয়েছে কারণ প্রবাসীরা ফকিরের বাচ্চা। আর জীবিত যারা আছে দেশে গেলে বিমান বন্দরে আনসার দিয়ে পাছায় দুইটা বেত মেরে বলবেন এই দেশ তোমার না।

এসে গেলো মাহে রমজান

এসে গেলো মাহে রমজান
সংযম শিক্ষার মাস;
শিখি পরিশুদ্ধির মন্ত্রবিধান
অন্তরে যে অহং বাস।

ঝেড়ে ফেলি অশুভ অনাচার
গড়ি আদর্শ জীবন;
সংযম সাধনায় সৃষ্টিকর্তার
কাছে করি সমর্পণ।

ক্ষুধা তৃষ্ণার কি কষ্ট জ্বালা
গরীবেরা সহ্য করে;
ধনীরা না খেলে সারাবেলা
কষ্টটা বুঝতে পারে।

দরিদ্রে করো সততই দান
ওরা ক্ষুধার্ত অনাহারী;
বিনিময়ে দিবে প্রভু মহান
সর্বসুখে জীবন ভরি।

সারা মাসের সংযম সাধন
হোক সকলের পাথেয়;
যদি রপ্ত করি সারা জীবন
রবে না কিছুই অজেয়।

এ রমজানে পাপ পঙ্কিলতা
উপবাসে হই পরিমল;
নামুবে মানুষ মানুষে মমতা
স্নেহ ভালোবাসার ঢল।

Sunday, April 26, 2020

করোনা আমাদের যা শেখাতে পারে

ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেওয়া অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা থেকেই বলছি আমরা আবারও শিখবোনা। ইতিহাসের শিক্ষার পূণরাবৃত্তির অংশ হিসেবেই আমরা দেখলাম পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যখন জীবন ও মৃত্যু’র সন্ধিক্ষণে সেই সময়েও শত শত ত্রাণ দাতাগণ ত্রাণের বস্তাগত বস্তু চুরিতে মহা-ব্যস্ত! না তাদের সামাজিক দায়িত্ব, না তাদের মানবিক মূল্যবোধ, না তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ না তাদের দেশত্ববোধ এহেন কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিবেককে বাঁধা দেবে এমন কোন উপলক্ষ্য ত্রাতা হয়ে তাদের সামনে উপস্থিত হয়নি।

আমরা সবাই জানি এই অতিমারি করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য করুণাময়ের করুণা ছাড়া আমাদের সামনে আপাতত কোন উপায় নেই, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা বিজ্ঞানীদের কৃপায় প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক হাতে পাচ্ছি। এই সময়ে করোনা আমাদের নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভালোমত শিখিয়েছে-

• বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নীতিনির্ধারকগণ যারা সাধারণ সময়ে দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগলে চিকিৎসা বাবদ পৃথিবীর সেরা সেরা হাসপাতালে চিকিৎসার সেবা গ্রহনের সুযোগ পান, শুধু সুযোগ পান বল্লে ভুল হবে বরং চিকিৎসা বাবদ যে অর্থ পেয়ে থাকেন তা অবশ্যই প্রকৃত খরচের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। তারমানে তিনি যদি সুস্থ্য হয়ে গৃহে ফিরতে পারেন তার দূরারোগ্যটাই তার জন্য একটি লাভজনক পণ্যে পরিণত হয়। ***করোনা শিখিয়েছে না সেটা সব সময় সম্ভব নয়। সুতরাং তোমার দেশের চিকিৎসা সেবাকে সার্বজনীন করো, উন্নত করো।

• ***করোনা শিখিয়েছে যেখান থেকে খুশি, যা খুশি, যে ভাবে খুশি, যে কোন প্রাণী হত্যা করে খাবে আর সামান্য কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করবে, সেটা হবে না। তোমরা এখন তোমাদের, হাত মুখ, জিহ্বাকে সংযত করো আর পদযুগলকে সচল করো।

• *** তোমরা অর্থ লালসায় বিশ্ব বাণিজ্য দখল দরিদ্র তৈরীর এক অশুভ প্রতিযোগিতায় নামবে, সেখানে ধরনীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার কথা একদম ভুলে যাবে তা হবে না, প্রকৃতি বুঝিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি কিভাবে তার ভারসাম্য রক্ষা করবে।

• নিজেদেরকে যে সকল দেশ অসীম ক্ষমতার অধিকারী বলে জাহির করতে চান তাদের বোধহয় বোঝবার সময় এসেছে, ১,৮২২ বিলিয়ন ডলার দৃশ্যমান শত্রু মোকাবিলা করার জন্য যে বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে তার বাজার মূল্য শুণ্য যদি ***করোনার মত অদৃশ্যমান শত্রু মোকাবিলার কোন প্রস্তুতি না থাকে। যদিও বস্তুত শত্রু মোকাবিলার নামে হয় নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয় অথবা অজাতশত্রু মানুষগুলোকে অপ্রয়োজনীয় অজুহাতে বিভাজিত করে শত্রু বানানো হয়।

•করোনা পরিস্থিতি যে বিষয়টি সবচেয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছে তা হলো, আমরা সাধারণ মানুষ অসাধারণ মর্যাদায় কিছু ভাঁড়কে দেশের দায়িত্বভার তাদের হাতে তুলে দিয়েছি এবং এই ভাঁড়দের সেই দায়িত্ব দিয়ে আমরা বিরাট গৌরব বোধ করি।

•করোনা আমাদের শিখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির নামে হিংসা বিদ্বেষ শেখানোর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ভবিষ্যতের ভাঁড় তৈরী করার কোন মানেই হয়না বরং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় রিসার্চে তাদেরকে মনোনিবেশ করান অথবা ল্যাবে বসান তাতে ভবিষ্যতে আপনিও আপনার অতিপ্রিয়জনরা নিরাপদে থাকবে, ভালো থাকবে।

সর্বশেষে বলতে চাই, আমাদের এখন সময় এসেছে, আমাদের প্রতিদিনের আয়ের একটি অংশ খেলা-ধুলা, বিনোদনে খরচের পাশাপাশি ল্যাবে বিনিয়োগ করার মানশিকতা গড়ে তুলতে হবে।
রাজনীতিবীদ নামক ভাঁড়দের দালাল, আত্মীয়, চাটুকারী ইত্যাদি লজ্জাজনক পরিচয় দেওয়ার চেয়ে একজন অপরিচিত মানবতাবাদী মানুষের শুভাকাঙ্খী পরিচয়ে গৌরবান্বিত বোধ করুন অথবা একজন সৎ কৃষক, সৎ দিনমজুরের পরিচয় দিয়ে গৌরবান্বিত বোধ করুন।

মানবতা যেন হারিয়ে যাচ্ছে, মহামারী শেষে আরো বেড়ে যাবে

সন্তান বাবার মৃত লাশ হাসপাতালে রেখে চলে যাওয়া আমাদের দেশেরই ঘটনা। তাও আবার পেনশানের টাকা উঠাতে যেন কোন সমস্যা না হয় তার জন্য বাবার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে যায়। মাকে রাতের আধারে গভীর জঙ্গলে রেখে চলে যায় নিজ সন্তান। প্রতিবন্ধী একজন লোককে বাসায় একা ফেলে চলে যায় স্ত্রী ও সন্তান।
আর এই সন্তানকে মা পেটে নিয়ে এক একটা হিমালয় পাড়ি দেয় নয় মাসে। সন্তানের প্রস্রাবে ভিজা বিছানায় রাতের পর রাত যাপন করে শীত কিংবা ভরা বর্ষায়ও। আল্লাহ পর মাথা নত করতে হলে মায়েরই তা প্রাপ্য।

বাবা এই সন্তানের সুখের জন্য পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ছুটে চলছে। কত বাবা যে বরফের পাহাড় এবং ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে আল্লাহ এবং সন্তানের নাম মনে করেছে তার হিসাব কোন দিনই হবে না। কত বাবা যে মধ্যপ্রাচ্যে বর্বর আরবের লাথি আর থাপ্পড়ে সন্তানের মুখ কল্পনা করে নীরবে চোখের জলে বুক ভিজিয়েছে তার হিসাব কখনো হবে না। করোনায় আক্রান্ত সন্তানকে বাবাই কাঁধে নিয়ে ছুটেছে। আরে একদিন আপনি নিজেই মা হবেন, বাবা হবেন। আর তখন ফিরে পাবেন কর্ম ফল। আল্লাহর কাছে শোকর আমরা মা বাবা নিয়ে সুখেই আছি। নেই মা তোমার বিধাতা। সন্তান যদি এমন আচরণ করে তাহলে অন্য লোক কেমন আচরণ করবে। এইতো ভাবতেই পারি না। কারণ করোনা পরিবর্তিত বিশ্ব হবে নিজে খাই নিজে বাঁচি।

আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং আইন ও ফিন্যান্সের চেয়ারম্যান এমিলিয়াস অ্যাভগোলিয়াস বলেছেন, ‘বৈশ্বিক মন্দার মাঝে বিশ্বে দ্রুত চাকরি হারাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। বিলিয়ন ডলার ব্যবসা ও শিল্প সংরক্ষণে ব্যয় করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত কোটি’ কোটি লোক চাকরি হারাতে পারে।’
আমিও আশংকা করছিঃ
বাংলাদেশেও এর প্রভাব হয়তো কোন অংশেই কম পড়বে না। প্রবাসী যারা করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্যই হোক আর নাড়ীর টানেই হোক দেশে এসে গিয়েছে তারাও বাংলাদেশের বোঝা হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি লক্ষ কোটি লোক চাকরি হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করবে। এমনিতে কয়েক মিলিয়ন শিক্ষিত বেকার আছে। ওদিকে রোহিঙ্গা তো আছেই। আমরা দুর্যোগের যেত সামনে যেতে চলেছি, তা অতি ভয়ানক। তবুও আমরা সেই একমাত্র মালিকের কাছেই সবকিছু থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ্‌ তুমি আমাদের করোনার হাত থেকে বাঁচিয়ে দাও এবং করোনা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ থেকেও রক্ষা করো।

এখন কি করা যেতে পারেঃ (উদাহরণ )
আমি একটি লন্ড্রিতে কাজ করতাম, লন্ড্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, চাকরী নেই। এখন কি করবো?

উত্তরঃ আপনি লন্ড্রিতে কাজ করতেন, তার মানে আপনি আয়রন এবং ওয়াশিং এর কাজ জানেন। এখন আপনার চাকরী দরকার, পরিবার চালাতে টাকা দরকার। হাতে টাকা নাই। কি করবেন? আয় রোজগারের জন্যে কিছু একটা তো করতেই হবে। ঘরের কোন একটি অপ্রয়োজনীয় জিনিস (টেলিভিশন) বিক্রী করে দিন। হ্যাঁ, ধার না নিয়ে বিক্রী করে দিন। ধার আরও ভয়ানক। না খেয়ে থাকলেও ধার করবেন না। টিভি বেচে দিয়ে একটা ওয়াশিং মেশিন কিস্তিতে নিয়ে আসুন। আপনার মহল্লার লোকজনকেে এসএমএস করে দিন। আপনি তাদের বাসা থেকে কাপড় নিয়ে গিয়ে ওয়াশ করে ফেরত দিবেন। ফেসবুকে e-dhopa নামের পেজ করে নিন। এলাকায় প্রমোশন চালান। ডাক্তার এবং পুলিশের ইউনিফর্ম ফ্রী ধুয়ে দিন। ইমোশনাল গেম খেলুন, মার্কেটিং কিভাবে করা যায়, ভাবুন। ২-৩ মাস যাওয়ার পর, দেখবেন, কাজ বাড়বে। তখন, ভেবে দেখবেন, চাকরীতে ফিরবেন, নাকি ব্যবসা করবেন।

মনে রাখবেন, টাফ টাইম, অনেক সমস্যা, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, নতুন বিজনেস আইডিয়া সামনে নিয়ে আসে। এই টাফ টাইমে মুভি দেখে, গেম খেলে সময় নষ্ট না করে, নিজেকে নিয়ে ভাবুন। বিকল্প কী করা যেতে পারে। আপনি কি কি কাজ জানেন? কি কি স্কিল আছে? কোনটা করলে এখন পয়সা পাবেন? ভাবুন, ঠান্ডা মাথায়। আপনার সমস্যার চমৎকার সমাধান বের হবে, আপনি নিজেই সেটা বের করতে পারবেন। হতে পারে, তা আমার দেয়া সমাধানের চেয়েও অনেক গুণ ভালো।

যদি কোন সমাধান মাথায় না আসে তাহলে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারেন। জমিতে শাকসবজি করা যেতে পারে। মনে রাখবেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। এখনি পুকুরে মাছ চাষ করা শুরু করেন। মহিলারা হাঁস মুরগি পালন করা বাড়াতে হবে। তাহলে নিজের প্রয়োজনীয় ডিম এবং মাংসের যোগান হবে। বেশী হলে বিক্রি করা যাবে। বুঝা দরকার সময় খুব খারাপ আসছে সামনে। হে আল্লাহ আমাদের সঠিক ও সুন্দর পথ দেখিয়ে দিন।
সরকারের প্রতি আবেদনঃ

———————————————————————
অনেক আগে পড়ে ছিলাম সমাজতন্ত্রের দেশ ভেনেজুয়েলা কথা । তারাক একদম গ্রামে যেখানে কৃষি উৎপাদন বেশী ঠিক সেখানে সরকারীভাবে ূকোল্ড স্টোর গঠে তুলেছে। কৃষি মৌসুমে একেবারে কৃষকের জমি হতে সরকার উৎপাদিত পণ্য ন্যায্য দামে খরিদ করে স্টোরে জমা রাখে অফ মৌসুমের জন্য। এবং একই সময় শহরেগুলোতেও ন্যায্য দামে সরবারাহ করে । এতে যেমন কৃষক সঠিক দাম পায়। শহরের মানুষও নতুন শাক সবজি পায় কম দামে । আবার পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় অফ মৌসুমেও ঠিকভাবে সরবারাহ দিতে পারে সরকার যার কারণে দাম থাকে হাতের নাগালে। এতে কৃষক খুশী জনসাধারণও খুশী। আমাদের দেশে কৃষক হতে কম দামে জমি হতে পণ্য কিনে একদল প্রতারক । তারা মজুদ করে আবার সুবিধামত তারাই চড়া দামে শহরে বিক্রি করে। লোকশান কৃষকের আর পণ্যের দাম বেশী বলে গালি সরকারের। মুনাফা মধ্যস্থতা ভুগীর । আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ বলে ভেবে দেখবেন মাননীয় সরকার ।

বৈশাখ তুমি দুঃসময়ে এলে

আবারো এসেছে ফিরে ‘নববর্ষ’ ঘুরে ফিরে
হাজারো স্বপ্ন সকল হৃদয় বুকে
যত দুঃখ কষ্ট ব্যর্থতা গ্লানি
চলো ধুয়ে মুছে তাকে
নতুন কেতন উড়িয়ে, নিই সবে বরণ করে।

এ বৈশাখে সড়কে প্রান্তরে নেই সে উৎসব
তবু এসেছো মুমূর্ষকে জাগাবে বলে
এবার পণ্য মেলা, প্রভাতী গান
হয়নি ঐ রমনার বটমূলে
আতঙ্কে মানুষ, করোনার ভয়ে সুনসান সব।

বৈশাখ তুমি দুঃসময়ে এলে তবু করব বরণ
নাই বা খেলাম এবার ঐ পান্তা ইলিশ
নাই বা জুটলো গরীবের নুন পান্তা
পুড়া-মরিচ আলুভর্তা নিরামিষ
গৃহে বন্দী তবু করব নতুন বছর উদযাপন।

যদিও আমরা এখন বন্দী ঘরে, হয়তঃ পরে
তোমায় পারবো দিতে উষ্ণ সম্ভাষণ
আবার হবে জ্বলজ্বল ভর্তা দুপুর
দল বেঁধে সবে গাইবো গান
ফিরবে প্রাণে উত্তাপ, আবার আসিলে ফিরে।

এসেছো শুধু তুমি, আসেনি তো বৈশাখী ঝড়
তবু গোটা বিশ্বটাই ল্ন্ডভন্ড যেন
ক্ষুদ্র এক করোনা ভাইরাসে
যাকে দেখি নি কখনো
তাই তো জনবিরল গ্রাম শহর, মনে ভয় ডর।

সকল জীবন ঢের আনন্দ খুশিতে ভরে উঠুক
সকল পাপ আবর্জনা উপড়ে ফেলে
অশ্রুবাস্প হুতাশা দূরে ঠেলে
সকল নিগড় ভেঙ্গে ফেলে
আলোক বর্তিকা হয়েই, ১লা বৈশাখ ফিরুক।

১লা বৈশাখ, ১৪২৭ / April 14,2020

নেই সে বারুদের গন্ধ

যুদ্ধ দেখেছি মানুষে মানুষে
যুদ্ধ হয়েছে দেশে ও দেশে
এ বিশ্বযুদ্ধ মানুষে অদৃশ্যে;

নেই সে বারুদের উগ্র গন্ধ
তবু গোটা পৃথিবী যেন স্তব্দ
মানুষ ঘর বন্দী, কারারুদ্ধ।

আকাশেও উড়ছে না বিমান
অদৃষ্ট বোমায় নিঃশেষ প্রাণ
অস্থির মানুষ চোখ মুখ ম্লান;

পৃথিবীর সব শক্তিধর দেশ
মারণাস্ত্রের যেথা নেই শেষ
সব বিকল নেই আর লেশ।

ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাস
বিঞ্জানের সে অর্জন উচ্ছ্বাস
গলা টিপেই করছে বিনাশ;

প্রকৃতির মগজে জ্ঞান সুপ্ত
মুহূর্তেই কাবু বিশ্ব, কম্পিত
এত দক্ষ তার সৈন্য সামন্ত।

নিরর্থক সকল দম্ভ, বড়াই
জীবনের যত চরাই উৎরাই
প্রাপ্তি শুধু ঐ মাটির ঘরটাই।

করোনাময় চৈতী দিন

এখান থেকে দেড়শ মাইলের মাথায় আমাদের উঠানে এখন পারদের মত থই থই করছে চাঁদের আলো। গাছগুলো এখন ভারী ঘুমে। চৈতি হাওয়া শিস দিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা কিছুক্ষণ পরপর বাড়ি যাব যাব বলে সংকল্প জানান দিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। বাড়ি যাওয়ার পথে একদল লোক বাঁশ বেঁধে দিয়ে একযোগে সেলফি তুলে। তারপর দোকানের মালামাল নিয়ে যাওয়ার পথে মুদিকে ওরা ঠ্যাঙায়। করোনার বিধ্বস্ত সময়ে এসব হয়। মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। পাখিরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ তখন আবার ঘুমায়। কেউ কেউ ভাবে এত ঘুমিয়ে কি হবে। খবরটা দেখি। তখন তারা খবর দেখে। খবরে লাশের হিসেব। আঙুলে গুনে গুনে দেখি খবর ঠিক আছে কিনা। তখন আমরা আবার ঘুমিয়ে পড়ি। গাছেরা শিস দেয়। তাদের নিচে বেজিরা লাফায়। বেজিদের লাফালাফিতে বিরক্ত হয় স্বেচ্ছাসেবীর দল। ত্রানের ছবিতে বেজি দেখা গেলে সেটা ভাল দেখায় না। বেজিরা এখন তবু নিশ্চিন্ত। দুপায়ের উপর ভর করে তারা নাচে। বাচ্চাদের কার্টুনের মত। বাচ্চাদের এখন আর কার্টুন ভাল লাগছে না। তারা বেজিদের দেখেও সন্তুষ্ট না। তারা বাইরে যেতে চায়। বাইরে করোনা ভাইরাস ডাংগুলি খেলছে রাজপথে। ভ্যাম্পায়ারের মত ওঁত পেতে আছে। রক্ত খাবে। রক্ত আরো অনেকে খায়। অনেকের রক্ত গরম হয়ে যায়। ত্রাণ নেয়ার সময় অভাবী লোকেরা ঠিকমত ছবি না তুলতে পারলে তখন আরো মেজাজ খারাপ হয়। তখন তাদেরকে কষে চড় দিলে তারা ঠিকমত ক্যামেরার দিকে তাকাতে পারে। তারা আঙুলে গুনে হিসাব মিলাতে পারে না বেশি ভয়ঙ্কর ভাইরাস নাকি ভাইরাসের সময়ের ত্রাতারা। তারা নিচের দিকে তাকিয়ে ত্রাণের বস্তা হাতে নিয়ে বাড়ি চলে যায়। বাড়ি গিয়ে তারা আবার আঙুলে গুণে হিসেব করে। না লাশের সংখ্যা না, লকডাউনের। হিসেব করতে করতে তারা না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠলে সকাল। সকালের ঘাসে শিশির জমে। অনেক জায়গায় এখন ঘাস। সমুদ্রে ডলফিন। রাস্তায় বানর। না খেয়ে আছে অনেক কুকুর। কুকুরদের খাবার দিচ্ছে পাকিস্তানে। সে ছবি বাংলাদেশের পত্রিকায়। পত্রিকা হাতে মানুষ ঘরে বসে বসে ঝিমায়। ঝিমানি শেষে তারা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে বাতাসে কাপড় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেটা আনার জন্য নিচে যাবে কি না সে সিদ্ধান্ত নিতে নিতে তাদের দেরী হয়ে যায়। তখন মনে হয় বাজারে যাওয়া দরকার ছিল। বাজারে অনেক মানুষ। মাস্ক পরা। সবাই আজকাল মাস্ক পরে। নামাজীদের ছবি তোলার সময় সাংবাদিকরাও মাস্ক পরে। দশজন নামাজীর বিপরীতে কুড়িজন সাংবাদিকের ছবি যে তুলেছে সে মাস্ক পরেছে কিনা জানা যায় না। মাস্ক না পরলে করোনা ফুটে না। তবে স্বজনের লাশ রাস্তায় ফেলে দিলে সেটাতে করোনা ফুটে। স্বজনকে রেখে পালিয়ে গেলে কিংবা নিজেই পালিয়ে গেলে তাতেও করোনা ফুটে। মা যখন একা ১৪০০ কিলো পাড়ি দিয়ে সন্তানকে নিয়ে আসে তাতেও করোনা ফুটে। অনেক কিছুতেই করোনা ফুটে। চাল চুরিতে। হাহাকারে। মেম্বরীতে, চেয়ারম্যানীতে। কিন্তু ভারতীয় আর্মির বুলেট যখন ৩ বছরের দীবা আর ২ বছরের আইমানের বাবা আইজাজ আহমদকে মেরে ফেলে তাতে মোটেও করোনা থাকে না। যা থাকে তা করোনার চেয়ে ভয়াবহ। সেই ভয়াবহতার ভীড়ে তোমাকে থই থই করা চাঁদের আলোর খবরটা দিতে ভুলে যাই।

নভেল করোনাভাইরাস থেকে আমরা অনেককিছু শিখেছি!

২০১৯ সালের শেষদিকে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এই পৃথিবীতে যমদূত হয়ে হাজির হয়েছে, আমাদের কিছু শিক্ষা দিতে। আবার একসময় হয়তো বেশকিছু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এই বিশ্ব থেকে বিদায় নিবে। কিন্তু এই সুন্দর পৃথিবীতে থেকে যাবে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিহত করার কিছু শিক্ষা। যেই শিক্ষা দিকনির্দেশনা বিজ্ঞ চিকিৎসকরা আমাদের বারবার শেখাচ্ছে। আমরাও সেই শিক্ষা অনুসরণ করে চলতে থাকবো, পৃথিবী নামক গ্রহটা যতদিন বেঁচে থাকবে; ততদিন। তবে এই শিক্ষাটা নভেল করোনাভাইরাস আমাদের নতুন করে নতুনভাবে জীবন বাঁচতে সাহায্য করেছে বলে আমি মনে করি।

এর কারণ হলো, করোনাভাইরাস থেকে নিজে এবং নিজের পরিবারবর্গ-সহ দেশ ও দশকে বাঁচাতে বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শগুলো শুধু এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে বাঁচতেই নয়, এই দিকনির্দেশনাগুলো একজন মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার একটা সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা।

এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস আবির্ভাব হবার আগে থেকে যদি আমরা বিশ্ববাসী এসব দিকনির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতাম, তাহলে এই মরণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্ববাসীকে এতো কাবু করতে পারতো না। আর এই ভাইরাসে এতো মানুষের মৃত্যু হতো না। কথায় আছে, “চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে!” আমাদের অবস্থাও হয়েছে তেমনই।

সারাবিশ্বে প্রায় কোটি মানুষের প্রাণহানির পর আমাদের বুদ্ধি বাড়লো। আগে থেকে শুধু বিজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া নিয়মকানুনগুলো শ্রবণই করেছিলাম, কিন্তু মেনে চলতে পারিনি। এখন উপায়ন্তর না দেখে সময় হারিয়ে রাষ্ট্রের বিজ্ঞ চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শগুলো ধনী গরিব বস্তিবাসী কৃষক কৃষাণী সবাই মেনে চলতে বাধ্য হয়েছি। এটা আমাদের আগামীদিনের জন্য এই সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার একরকম সুশিক্ষা।

করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে বিজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া পরামর্শগুলো যদি আমরা যথাযথভাবে মেনে চলতে পারি, তা হবে আগামীদিনের জন্য সুন্দর পৃথিবী গড়া এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকা।

বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শগুলো নিম্নরূপ:
১। সাবান দিয়ে বারেবারে হাত ধোয়া।
আমরা বাঙালি জাতি। এদেশের বিত্তবান ছাড়া খেটে-খাওয়া মানুষের বারেবারে হাত ধোয়ার অভ্যাস আমাদের কোনও সময়ই ছিল না। এই অভ্যাসে অভ্যস্ত আমরা গরিব কাঙালিদের কোনও সময়ই হয়েছিল না। কিন্তু এখন তা বাধ্যতামূলক! এটা আমাদের জন্য একরকম প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা।

একসময় এদেশের গরিব মানুষ তথা কৃষক কৃষাণীরা খেতে খামারে কাজ করে চাষের জমির সামনে থাকা ডোবা নালায় কোনরকম হাত ধুয়ে চাষের জমিতে বসেই মনের আনন্দে পেঁয়াজ কাঁচামরিচ ডলে পান্তাভাত মেখে খেয়ে ফেলতো। আর এখন এই প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে ভালো করে থালাবাসন-সহ হাত ধুয়ে খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে খাবার খাচ্ছে।

আগে যেখানে সারাদিনে মাত্র দুই একবার কোনরকম হাত ধোয়া হতো, আজ সেখানে করোনাভাইরাসের ভয়ে অন্তত দিনে কয়েকবার ভালো সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছে। কিছুদিন আগেও দেখেছি হাট-বাজারে, রাস্তা-ঘাটে, মাছ বিক্রেতা পঁচা মাছ বিক্রি করছে। বেচাকেনার মাঝেই হাত না ধুয়েই খাবার খেয়েছিল। মাংস বিক্রেতা মাংস বিক্রি করার সময় রক্তাক্ত হাত নিজের লুঙ্গিতে মুছে সেই হাত দিয়ে খাবার খেয়েছিল। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লা ভর্তি ড্রেন থেকে ময়লা উঠাচ্ছিল, তাঁরা হাতপা না ধুয়েই কোনরকম হাত মুছে খাবার খেয়েছিল। এতে কোনও রোগব্যাধি গরিব মানুষের ধারেকাছেও আসেনি। যদিও রোগব্যাধি হয়েছিল, তা শারীরিক অসুস্থতা মনে করে কিছু ট্যাবলেট গিলে খেতো। তবে ইদানীংকালের প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস তা বুঝিয়ে দিলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা হলো ঈমানের অঙ্গ এবং সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের মূল চাবিকাঠি।

২। মুখে মাস্ক পড়া।
কিছুদিন আগে থেকে রাস্তাঘাটে দেখেছি, কিছু ভদ্রলোক মুখে নরম কাপড়ের খাফ লাগাতো। যেটাকে বর্তমান সময়ে বলে মাস্ক। যাঁরা এই মাস্ক ব্যবহার করতো, তাঁরা রাস্তাঘাটে চলার মাঝে অনেকের মুখপানে চেয়ে নিজেরাই লজ্জা পেতো। আর এখন ধনী গরিব বস্তিবাসী সবার জন্য মাস্ক হয়ে গেলো বাধ্যতামূলক। মোটকথা মাস্ক ছাড়া কোন অবস্থাতেই ঘর থেকে বেরুতে পারবে না।

অনেক ধার্মিক মানুষই বলেছিল, “আমি খোদা বিশ্বাসী! আমার নাকে নাক পশম আছে। যা দিয়ে বাতাস ছেঁকে দেহের ভেতরে ঢুকায়। কাজেই মাস্ক আমার দরকার নেই। আমার নাকই কাপড়ের মাস্ক থেকে বেশি সুরক্ষিত।”

এখন নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়ে সেসব ধার্মিক মানুষগুলো ভয়ে থরথর। সেই ভয়ে তাঁদের নাকে মুখে লাগানো থাকে একটা মাস্ক। দুই পকেটে থাকে দুইটা। মোটকথা মাস্ক ছাড়া নিজের নাকের প্রতিও কারোর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। সবকিছু পরিবর্তন করে দিলো বর্তমান সময়ের প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। এটাও আমাদের জন্য সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার একটা শিক্ষা। এই শিক্ষাটা আমরা অর্জন করেছি করোনাভাইরাস থেকে, আর বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ থেকে।

৩। সাথে অন্তত গুটিকয়েক রুমাল রাখা, নাহয় টিস্যু পেপার রাখা। কারণ শরীরের ঘাম আর নাক কান গলা মোছার জন্য।
এদেশে এমন লোক দেখেছি, জীবনে একজোড়া জুতাও কিনেনি। একজোড়া জুতো যদি অতি কষ্টে কিনেছে, সেই জুতা জোড়া ধুয়েমুছে ঘরে রেখে দিয়েছে। জুতো পরেছে, কোথাও কোনও নিমন্ত্রণে আমন্ত্রিত হলে। রুমাল তো ছিল অনেকের কাছে স্বপ্নের ব্যাপারস্যাপার। এখনও এই বঙ্গদেশে এমন লোক আছে, কোনও বিয়েসাদীর নিমন্ত্রণে গেলে নিজের জামার পকেটে করে একটুকরো ছেড়া কাপড় সাথে নিয়ে যায়, হাত নাক মুখ মোছার জন্য। এই ছেড়া কাপড়ের টুকরাই হলো ওই লোকের জন্য মূল্যবান রুমাল। বিয়ের নিমন্ত্রণ খেয়ে কিছু দান দক্ষিণা দিয়ে দু’একটা টিস্যু পেপার পকেটে করে বাড়ি নিয়ে আসে।

আজ এই করোনাভাইরাসের আলামতের দিনে ধনী গরিব সবাই রুমাল অথবা টিস্যু নামের সাদা কাগজ সবার পকেটেই দু’একটা সাথে থাকেই। ছোটবেলা শুনেছি নিজের পকেটে একটা চিরনি অথবা একটা রুমাল অথবা একটা কলম থাকা মানে ভদ্রতার বহিঃপ্রকাশ। আর বর্তমানে এই ভদ্রতা শিখিয়ে দিলো প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। যদিও এই প্রাণঘাতী ভাইরাস লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তবুও এই শিক্ষাটা কিন্তু বর্তমান সময়ের প্রাণঘাতী করোনাভাইরসের একটা অবদান।

৪। সবসময় নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
কিছুদিন আগেও দেখা গেছে যেখানে সারাদিন শ্রমজীবী মানুষ জীবিকার সন্ধানে সবসময় ময়লা আবর্জনার সাথে যুদ্ধ করেছিল। কেউ ঝালমুড়ি বিক্রি করেছিল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। লেইস ফিতার গাট্টি কাঁধে করে ধুলো বালি ভরা শহরের অলিগলিতে ঘুরেছিলে। আজ তাঁরাও নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রেখে মুখে মাস্ক লাগিয়ে হাতে গ্লাভ লাগিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। চা বিক্রেতা ওয়ান টাইম কাপ ব্যবহার করে চা বিক্রি করছে। দোকানের সামনে পরিস্কার করে রাখছে। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে হাজার মানুষের সামনে যত্রতত্র প্রস্রাব করা থেকে বিরত থাকছে। অযথা যেখানে সেখানে থুথু ফেলাও বন্ধ করছে ভাইরাসের ভয়ে। যাতে কোনও প্রকার প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রমণ না করে। এটাও আমাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য একরকম শিক্ষা।

৫। হাঁচি-কাশি দেয়, এমন মানুষ থেকে অন্তত তিনফুট দূরে থাকা।
হাঁচি-কাশি, সর্দি-জ্বর হলো আমাদের দেশের নিত্যনৈমিত্তিক সাধারণ রোগ। যা সচরাচর ছেলে বুড়ো সকলেরই হয়ে থাকে। এই সাধারণ সর্দিকাশি হলে অন্তত কয়েকদিন অপেক্ষা করে তারপর নিকটস্থ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতো। ডাক্তার হিস্টাসিন প্যারাসিটামল অথবা নাপা নামের কয়েকটা ট্যাবলেট রোগিকে দিয়ে দিতে, রুগি তা সেবন করেই ভালো হয়ে যেতো। আর এখন এমন প্রাণঘাতী ভাইরাসের আবির্ভাব দেখা দিয়েছে, এই ভাইরাসের প্রথম লক্ষ্মণই হলো সর্দি-কাশি, সর্দি-জ্বর। তাই কারোর সর্দি-জ্বর বা সর্দি-কাশি হলে তাঁর কাছ থেকে সবাই অন্তত দশহাত দূরে থাকে। কোনও অবস্থাতেই এই রুগির সামনে কেউ যেতে চায় না, করোনা ভাইরাসের ভয়ে। এমনকি নিজ পরিবারের কারোর সর্দি-জ্বর হলেও থাকে গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্যে একঘরে রাখা হয়। যার নাম হোম কোয়ারেন্টি। মানে সবাই নিরাপদে থাকা। এটাও আমাদের শিখিয়ে দিলো বর্তমান সময়ের প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এবং ভাইরাস প্রতিহত করার বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ।

৬। দরকার হলে প্লাস্টিকের গ্লাভস পরিধান করা।
আগে এদেশের অনেকেই প্লাস্টিকের গ্লাভস নামের বস্তুটিকে কেউ চিনতোও না। এই গ্লাভস নামের বস্তুটিকে চিনত কেবল ডাক্তাররা। এখন এই গ্লাভস যে কী, তা ছোট বড় সবাই চিনে এবং জানেও। ব্যবহারও করে থাকে। এই গ্লাভস নামের বস্তুটিকে চিনিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। গ্লাভস হাতে পরাও নিজেকে সুরক্ষিত রখার একটা শিক্ষাব্যবস্থা।

৭। প্রতিদিনের ব্যবহার করা কাপড়চোপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলা।
এই দেশের অনেক লোকই আছে, যাঁরা এক কাপড়-চোপড় দুই-তিন-দিন পর্যন্ত লাগাতার ব্যবহার করে। তারপর কমদামি পঁচা সাবান দিয়ে, নাহয় সোঁটা দিয়ে সিদ্ধ করে ধুয়ে নেয়। প্রতিদিনের ব্যবহার করা কাপড়-চোপড় এদেশের গরিব মানুষেরা প্রতিদিন কোনমতেই ধোয় না। কিন্তু এখন এই নভেল করোনাভাইরাসের ভয়ে প্রতিদিনের ব্যবহার করা কাপড়চোপড় প্রতিদিনই ধুয়ে নিচ্ছে। এই ধোয়া শিখিয়ে দিলো প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এবং ভাইরাস প্রতিহত করার পরামর্শদাতা বিজ্ঞ চিকিৎসকরা। এখন থেকে এই শিক্ষাটা যদি আমরা ধনী গরিব সবাই রপ্ত করতে পারি, তাহলে আগামীতে এর চেয়েও ভয়াবহ রোগজীবাণু আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। কাজেই এই শিক্ষাটাও অর্জন হলো করোনাভাইরাস প্রতিহত করার মাধ্যমে।

৮। ঘরদোর সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
এদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরদোর আর কতটুকুই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থাকে? কিন্তু এখন, রাস্তার পাশে বস্তিঘরও নিয়মিত পরিস্কার করে রাখছে, করোনাভাইরাসের ভয়ে। আগে যেই ঘরের ভেতরে বাইরে সবসময়ই মাছি ভনভন করতো, আজ সেখানে সেসব ময়লার আবর্জনায় সিটি করপোরেশন থেকে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিচ্ছে। রাস্তায় ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে সকাল দুপুর বিকাল। আর মশা নিধন করার ঔষধ তো প্রতিদিনই ছিটানো হচ্ছে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা সিটি করপোরেশন ময়লার গাড়ি দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে সকাল দুপুর। এমন সুন্দর কার্যক্রম যদি সবসময়ের জন্য বহাল থাকে, তাহলে আমরা নগরবাসী আগামীতে সুন্দর একটা নতুন নগরী দেখতে পাবো। সিটি করপোরেশনের এমন উদ্যোগ শুধু নগরবাসীকে নভেল করোনাভাইরাস থেকে বাঁচাতেই। এটাও সুন্দর নগরী গড়ার একটা শিক্ষাব্যবস্থা। তা কেবল নভেল করোনাভাইরাস থেকেই এই শিক্ষা অর্জিত।

৯। যেখানে সেখানে কফ, থু থু না ফেলা।
কথায় আছে, “আমরা যেখানে খাই, সেখানেই থুথু ফেলি।” রাস্তার পাশে হাজার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করি। মলমূত্র ত্যাগ ত্যাগ করি। কে এলো আর কে দেখলো, তার কোনও হুঁশ জ্ঞান আমাদের নেই। সেই বিষাক্ত প্রস্রাব রাস্তায় চলাফেরা করা মানুষে পায়ে দলিয়ে চলাফেরা করতো।

কিন্তু ইদানীংকালে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ার পর থেকে এসব অভদ্র মানুষেগুলোর কুঅভ্যাসগুলো কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর এসব শহরের আনাচে-কানাচে দেখা যায় না। এক হিসেবে আমরা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের উন্নত নাগরিক হয়ে গেছি। শিক্ষাটা পেয়েছি নভেল করোনাভাইরাস থেকে।

আশা করা যায় যদি কিছুদিনের মধ্যে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস আমাদের দেশ থেকে চিরতরে বিদায় নেয়, তাহলে নভেল করোনাভাইরাস থেকে অর্জন করা শিক্ষা আমাদের জীবন চলার চলার মাঝে অনেক কাজে লাগবে। সবই শিখেছি নভেল করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে গিয়ে। জয় হোক মানবতার। মহান স্রষ্টা সবার সহায় হোক। করোনাভাইরাস দূর হোক।

নিতাই বাবু
১০/০৪/২০২০খ্রী:

১০ টাকায় ১ কেজি চাল

তিন দিন হলো চুলা জ্বলে না রহিমা বানুর।
ঘরে এক মুঠো চাল নেই। দুই মেয়ে আর এক ছেলে ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে।

মহামারি করোনা ভাইরাস এর জন্য সরকার সব কিছু লক ডাউন করছে। মানুষের বাসায় কাজ করে চলতো সংসার। এখন সেটাও বন্ধ।

এর ভিতর কোথা থেকে শুনছে ১০ টাকা কেজি চাল দিচ্ছে। টাকা বলতে হাতে মাত্র ৫৫ টাকা।
তবুও এক বুক আশা নিয়ে গেলো চাল নিতে।

কাদের মোল্লা জানালো সব চাল শেষ। অনেক অনুয় বিনয় করেও রহিমা বানু এক মুঠোও চাল পেলো না।

ভেজা চোখে যখন হেঁটে আসছিলো তখন কিছু ছেলে রাস্তায় স্লোগান লিখছিলো
” শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ । “

কেটে যাবে বিপদ

কেটে যাবে বিপদ খুব শীঘঘির
থাকি না হয় কিছুদিন ঘরে;
কেহ যদি যাও, যেথা তবে ভিড়
সংক্রমণ যেন ততটা বাড়ে।

নিত্যই চলছে করোনার কামান
শঙ্কিত আমরা বিশ্ববাসী;
অস্ত্র এখন থাকি সবাই সাবধান
তবেই মুখে ফুটবে হাসি।

দৃশ্যত: সকলে দূরে দূরে থাকি
রহিব হৃদয়ের কাছাকাছি;
দেশটাকে যেন খুব ভালো রাখি
আমরা, যে যেথায় আছি।

কত কষ্ট খেটে খাওয়া মানুষের
ঘরে কিছু নেই, হাহাকার;
এক নিদারুণ বাস্তবতা সময়ের
এহি ক্ষণ পাশে দাঁড়াবার।

এক ঝাঁক হাইকু ৪৩

(জাপানে প্রচলিত ‘হাইকু’ জাপানি কবিতা)
বিষয়: করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯

এক
ভয় পেয়ো না
সতর্ক থেকো; উবে
যাবে করোনা।

দুই
আমরা ঘরে
কোভিড-১৯ তাই
জ্বালায় মরে।

তিন
আর গুজব
নয়। ভালোই আছি
আমরা সব।

চার
মৃত্যু মিছিল
গৃহে বন্দী মানুষ
স্তব্ধ নিখিল।

পাঁচ
সতত হাঁচি
মুখ ঢেকে। আমরা
সবাই বাঁচি।

ছয়
থুথু ও কাশি
ফেল না যথা তথা
বালাই বেশী।

সামাজিক দূরত্ব ও সৌদির কোকো কোলার বিলবোর্ড

সৌদি আরবে, কোকা কোলা কোম্পানির পানিয় বিক্রয় কমে যাওয়া বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই বিপনণ বিভাগ, প্রমোশন বিভাগ ও অন্যান্যরা মিলে কি ভাবে বিক্রয় বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে মিটিং-এ বসলেন। মিটিং এ বসে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রমোশন বিভাগ এমন একটি বিজ্ঞাপন তৈরী করবে; যে বিজ্ঞাপনের কারণে সৌদি আরবে কোকো কোলা বিক্রয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

যথারীতি, সৌদি আরবের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বিল বোর্ড বসিয়ে দেওয়া হলো, এবং যেখানে দেখানো হলো,
প্রথম ছবিতে : একজন মানুষ খুবই ক্লান্ত বোধ করছেন, ক্লান্তির কারণে নড়াচড়া করতে পারছে না।
দ্বিতীয় ছবিতে : তার হাতে একটি কোকো কোলার বোতল দেওয়া হলো।
তৃতীয় ছবিতে : কোকো কোলা পান করে লোকটি চাঙ্গা হয়ে গেলো।

বিল বোর্ড বসিয়ে দেওয়ার পর তারা খুবই আশাবাদী হলেন, এই বিল বোর্ডের কারণে তাদের বিক্রয় সংক্রান্ত সমস্যা কেটে যাবে। বাস্তবে দেখা গেলো উল্টো চিত্র, যা বিক্রয় হচ্ছিলো তাও বন্ধ হয়ে গেলো। স্বাভাবিক ভাবে তারা আবারও কারণ অনুসন্ধান করার জন্য মিটিং ডাকলেন। মিটিং-এ উঠে আসলো যে, সৌদী আরবের মানুষ ডান দিক থেকে পড়ে। অর্থাৎ তাদের বিজ্ঞাপনের অর্থ দাঁড়ালো একজন চাঙ্গা মানুষ কোকা কোলা পানের ফলে ক্লান্ত হয়ে গেলো।

কোরণার সংক্রামক রোধ করার জন্য স্বাভাবিক প্রচারেই সামাজি দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলো। বলা হলো নামায মসজিদে না পড়ে বাড়িতে পড়া যেতে পারে। এইসব প্রচারের মধ্যেই হুজুররা ষড়যন্ত্র খুজে পেলেন। তারা ওয়াজ করতে শুরু করলেন ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্যই এইসব প্রচার করা হচ্ছে। ইসলামে ছুঁয়েছে (সংক্রামক) রোগ বলতে কিছু নেই।

অতঃপর ব্যাপক ভাবে চিন, ইটালি, স্পেনের (তখন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকোপ ছড়ায়নি) উদাহরণ দেওয়া হলো। এইবার হুজুররা গজব বলে চালিয়ে দিতে লাগলেন এবং বল্লেন, বাংলাদেশে করোনা আসবে না। নামায পড়লে কোরনা হবে না।

অতঃপর করোনা দেশে আসলো; লোকজনও করোনার ভয়াবহতা বুঝতে শুরু করলো। সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকার, অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষনা করলো। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মসজিদে নামায না পড়ে বাড়িতে পড়তে বল্লো।

এইবার মানুষ সত্যিই ভয়ে পেতে লাগলো; ভয় ও দীর্ঘ ছুটি পেয়ে মানুষ ঢাকা ছাড়লো। ছুটির কারণে বাস, ট্রেন, বিমান লঞ্চ-ফেরির ভীড় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্যোগকে কৌতুকে পরিণত করে ফেল্লো। মিডিয়া ও ইন্টারনেটের কারণে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলো মানে মানুষ সত্যিই ভয় পেতে শুরু করলো।

ঢাকা ফেরত ও লোকাল মানুষ ভয় কাটানোর জন্য বেশি বেশি মসজিদে যাওয়া শুরু করলো। মসজিদের এই ভীড় সামাজিক দূরত্বের উদ্যোগ আবারও কৌতুকে পরিণত করলো।

মানুষ নিজের বাড়ীটাকে পবিত্র করার সুযোগটাকে হাতছাড়া করলো।

আমরা হারবো না

আবারো যুদ্ধ আমরা হারবো না
প্রতিপক্ষ কোভিড-উনিশ
তোরা সব্বাই ঘরে থাকিস
পালাতে বাধ্য ভয়াবহ করোনা।

আমরা বাঙালী হারতে জানি না
আসুক না কোভিড-উনিশ
কিছু ছুঁলেই হাত ধুয়ে নিস
দেখিস, পালাতে বাধ্য করোনা।

বাঙালীরা কিছুতেই পায় না ভয়
জানিস এ কোভিড-উনিশ
মুখে যার গাদা গাদা বিষ
সামাজিক দূরত্ব ওর পছন্দ নয়।

তোরা তাই দূরে দূরেই থাকিস
হৃদয়খানি হবে লাগালাগি
কষ্টগুলো করিস ভাগাভাগি
দেখবে, উধাও কোভিড-উনিশ।

যারা তবে দিন আনে দিনে খায়
ওদের ঘরে নেই ভাত
যারা পারিস বাড়াস হাত
দেখিস করোনা কি দ্রুত পালায়।

উদ্দেশ্য একটাই, মুক্তি চাই

দুচোখে ঘুম নেই। প্রতিদিনই কাটছে হতাশা আর ব্যাঞ্জনায়। ভেবেছিলাম হয়তো খুব শীঘ্রই চলমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবো আমি, আমার মত হাজারও মানুষ। এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে গ্রামে এসেছিলাম। কিন্তু না। সারা দিন-রাত ঘর বন্দী থাকতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় ইচ্ছে হয় একটু দোকান-পাট থেকে ঘুরে আসি। দোকানে গেলে অনেক মানুষ আছে যাদের সাথে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলা যাবে। আর তারই মাঝে একটু খানি স্বস্তি খুঁজে নিবো। কিন্তু না সেটা আর হয়ে উঠছে না। এটাকে বাধ্যতামূলক বলবো নাকি পরিস্থিতির শিকার বলবো আমি জানি না। কিন্তু ঘুরে ফিরে কথা একটাই যাওয়া যাবে না কোথাও। সময় যত গড়াচ্ছে আমার মন ততই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই মনটা যেন পাতালের দিকে তলিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে সেটার অতল আঁধারে।

মোবাইলে জুম্মন সাহেব আমাকে এ সকল কথাই বলেছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম, আপনি ধৈর্য রাখুন জুম্মন সাহেব। গতকাল যে তরকারি দিয়ে ভাত খেয়েছিলেন আগামী দিন একই তরকারি দিয়ে ভাত খাবেন তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। জুম্মন সাহেব বলেন সেটা অবশ্য ঠিক। কিন্তু মাহমুদ কি করে বোঝাই আমার কাছে এমন পরিস্থিতে ঘরবন্দী হয়ে থাকাটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এক রোগ থেকে রক্ষা পেতে গিয়ে কখন আরও কয়টা রোগ এসে দানা বাধে কে জানে! আমি জুম্মন সাহেবকে আর কিছুই বোঝাতে যাই নি। কারন আমার অবস্থা তার মতই। তারপরও একটি মাধ্যম আছে বলে এখনও হাল ছাড়ি নাই। আর সেটা
হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ। আল্লাহর দয়ায়, এ দুটোই আমার নিত্যদিনের পথচলার সঙ্গী। এখানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার আলোকে বিভিন্ন পেশা-শ্রেনীর মানুষ বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রদান করে থাকেন। আর সেগুলোর মাঝে নিজের ভাবনাগুলোকে মিলানোর চেষ্টায় মশগুল থাকি।

গত দুইদিন ধরেই মনটা খুব স্থবির হয়ে আছে। পত্রিকায় আজকের শিরোনামগুলো কেমন যেন বিষন্নতায় পূর্ণ। শিরোনামের ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রতিটি বিস্তারিত লেখাগুলো দুঃখ ভরাক্রান্ত আবেগ আর আতঙ্কে ভরা। যেমন- একটা ছেলে আত্মহত্যা করে। কারন ছেলেটির মা বাহিরে যেতে তাকে বাধা দিয়েছিলো। এতে ছেলেটি বড্ড ক্রোধান্বিত হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রন হারিয়ে অবশেষে এই বোকামীপনাটা করে বসে। এতে তার কি কোন লাভ হয়েছে? মাঝে দিয়ে বেচারী মা’কে কষ্টে ফেলে দিল সে। আবার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন না মানায় বড় ভাই আর তার বউ মিলে ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে। এখন তারা জেলে। আবার দুজন কৃষক লকডাউনে কিভাবে দিন পার করবে কিভাবে সংসার চালাবে এই ভেবে আত্মহত্যা করে। দুধ কিনতে বের হওয়া এক যুবক পুলিশের লাঠির আঘাতে মারা গিয়েছে। আবার এক দোকানি মাস্কের দাম কম করে বিক্রয় করায় পাশের দোকানদার তার নাক মুখ ফাটিয়ে দেয়। আহারে মানুষ! কতটা কষ্টকর এই ঘটনা আর প্রেক্ষাপটগুলো। আমার বড্ড অসহ্য লাগে।

গতকাল আবার একজন মহিলা এসিল্যান্ড বাবার বয়সী তিনজন বৃদ্ধলোককে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। কারন তারা ঘর থেকে রোজগারের আশায় বের হয়েছিলো আর তার ওপর তাদের কারোরই মুখে মাস্ক ছিলো না। এ দুটোই ছিলো তাদের অপরাধ। কতটা নিম্ন মস্তিস্কের মানুষ এই মহিলা। তার মুখে ওয়াক থু।

আজ সারা পৃথিবীর মানুষ কত অসহায়! প্রাণ থাকতেও নিষ্প্রাণ প্রতিটি চেহারায় এক দিগন্ত মুমূর্ষুতার ছাপ স্পষ্ট। বুকফাটা হাহাকারে পরিপূর্ণ প্রতিটি মন মনন। কেউ কি কখনও ভেবেছিলো গতকাল তারা যেমন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলো আজ তাদেরকে এমন ভয়ানক একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে? আমরা মানুষ। আমরা খুবই আত্মকেন্দ্রিক। এক্ষেত্রে ধনী গরীব কোন ভেদাভেদ নেই। এই বিলাসিতার মাঝে থেকে আমরা নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ হারিয়ে ফেলি কিংবা ভুলে যাই। আমরা ভুলে যাই এই সমাজের নিকট, সমাজের প্রতিটি পেশা-শ্রেনীর মানুষের নিকট আমরা দায়বদ্ধ। হয়তো সামাজিকভাবে নয়তো অন্য যে কোনভাবে। আমরা ভুলে যাই মানুষের প্রতিফল তার কর্মের ওপর নির্ভরশীল। যে যেমন কর্ম করবে সে তদ্রুপ ফল ভোগ করবে। আর করোনা আমার কাছে তেমনি একটি প্রতিদান আল্লাহর পক্ষ থেকে। এটা গোটা বিশ্বকে নিশ্চুপ করে দিয়েছে। ইস্রায়েলের আগ্রাসন, মিয়ানমারের আগ্রাসন, এ আই এস আই এস এর আগ্রাসন, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন, ভারতের আগ্রাসন সহ সব ধরনের অমানবিক আগ্রাসন থামিয়ে দিয়েছে করোনা।

তাই সবরকম ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মানবতার স্বার্থে প্রত্যেকে এখন যার যার অবস্থান থেকে খুঁজে চলেছে মুক্তির সোপান। দিন-রাত এক করে গোটা পৃথিবী একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। সকলের উদ্দেশ্য একটাই, মুক্তি চাই।