বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

সাহিত্যে নকলবাজ যারা

চুরি এবং সিনাচুরি। দুটি শব্দই আমাদের পরিচিত। নকল করে সাহিত্যে আত্মপ্রকাশের প্রচেষ্টা নতুন নয়। যারা নকল করে, করার চেষ্টা করে, এদের ‘অমেধাবী মূর্খ’ বলেন বিজ্ঞজনেরা। আমি তাদের বলি ‘সাহিত্যের সারমেয়’, আমি ওদের বলি ‘সাহিত্যতস্কর’। ইদানীং আমাদের চারিপাশে এমন তস্করের সংখ্যা বেড়েছে। পিএইচডি’র থিসিস থেকে শুরু করে, কবিতা – গান অনেক কিছুই চুরি হয়ে যাচ্ছে।

আমাদের কিছু ‘বোদ্ধা’ আছেন, তারা বলেন – ‘আরে খারাপ কিছু তো করছে না, সাহিত্য করছে। তাকে একটু সমর্থন দিয়েই যাও না।’ আমি সেই ‘বোদ্ধা’দের সবিনয়ে দুটি প্রশ্ন করতে চাই।
১। কা’কে সমর্থন দিতে হবে? সাধনা, চর্চা, অধ্যবসায় ছাড়া যে লেখালেখিতে এসে অন্যের মৌলিক লেখা চুরি করলো, সমর্থন দেব তাকে? কেন দেব? কোন নীতিতে দেব?

২। সাহিত্যের নামে যারা জঙ্গলের জাঙ্গাল তৈরি করছে- তারা মূলত তো সাহিত্যে দূষণ তৈরি করছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা মানে, দূষণকে সমর্থন করা। কেন করবো? এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামের আগে – ‘কবি’, ‘গীতিকার’, ‘সাহিত্যিক’ তকমা লাগানো অনেক একাউন্ট চোখে পড়ে। এরা কারা? কি তাদের কর্ম? কি তাদের পরিধি? এর উত্তর অনেকে না জেনেই, তাদের বাহবা দেন। যারা বাহবা দেন, তাদেরকেও যদি আমি ‘মূর্খের পাহারাদার’ বলি – তবে কি ভূল বলা হবে? আমরা হতাশ হয়ে দেখছি, যে গীতিকার আজ থেকে ৪৫ বছর আগে যে গানটি লিখেছেন, আজ কেউ এসে সেই গানের স্তবক প্রায় পুরোই নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। অথচ তার গান লেখার বয়স পৌনে তিন বছর! ভাব, চিত্রকল্প, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, শব্দচয়ন, সুর, সাধনা – মিলিয়ে প্রথম যিনি গানটি লিখেছেন, তিনিই এর জনক। কেউ এসে তিন লাইন চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার মতলব টি কি? এদের যারা মদত দেন, তাদের উদ্দেশ্যই বা কি?

শুধু তাই নয়, এই সময়ে আমরা দেখছি, যে অন্যের গান চুরি করেছে, সে’ই আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে অভদ্র, অশোভন, বিকৃত, কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলছে। আর আমাদের কেউ কেউ তা দেখে মজা লুটছেন! একটি গান প্রথম যিনি লিখেছেন, গানটির পদকর্তা তিনি। তুমি তা চুরি করবে, আবার মূল পদকর্তাকে গালিগালাজও করবে- এটা তো হতে পারে না।

আমি সবিনয়ে যে কথাটি বলতে চাই, যারা সৃষ্টিশীল ভাবনায় নিজেদের ব্রত রাখেন সময় এসেছে তারা সবাইকে প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। না হলে, আজ একজনের শব্দভাণ্ডার, পংক্তি, চরণ, গান চুরি হয়েছে। কাল আপনার হবে। সাধনা কঠিন বিষয়। সাধনায় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে না থাকলে, শব্দ কাউকে ক্ষমা করে না। কথাটি যেন আমরা ভুলে না যাই।

©
নিউইয়র্ক / ০৩ অক্টোবর ২০২০

মনসা মঙ্গল কাব্য …. জয় জয় মা মনসা মা মনসার গল্প (সমাপ্তি পর্ব)

মনসা মঙ্গল কাব্য …. জয় জয় মা মনসা
মা মনসার গল্প (সমাপ্তি পর্ব)

তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

দক্ষিণ বঙ্গে অধিকাংশ গ্রামগুলির সার্বজনীন থানে মনসা দেবীর মূর্তি পূজার একটা বেশ বড়সড় রীতি রিয়াজ পালন করা হয়ে আসছে বহু পূর্বপুরুষ ধরে। যদিও সেখানে দেবাদিদেব মহাদেব (পঞ্চনন্দ), বনবিবি, শীতলা, লক্ষ্মী, কালি, চণ্ডী, বারা ঠাকুর সহ আরো আট দশটা দেব দেবীকে পূজা করে গ্রামের মানুষ। কিন্তু তার সত্বেও সার্বজনীন মন্দিরের বাইরেও এমন কিছু কিছু থান বা মন্দির রয়েছে যেগুলোতে শুধুমাত্র মনসা দেবীর মূর্তি ব্যাতিত আর অন্য কোনো দেব দেবীর মূর্তি পূজা করা হয় না অর্থাৎ ব্যক্তিগত ভাবে শুধুমাত্র মনসা দেবীর জন্য বহু মনসা মন্দির রয়েছে। সেগুলি মনসার থান নামে পরিচিত।

দক্ষিণ বঙ্গের চাষাবাদ যুক্ত পল্লী গ্রামাঞ্চল গুলিতে এ জাতীয় মনসা মন্দির সচরাচর বহু পরিমাণে দেখা যায়। কোনো স্থানে একবার মনসা মন্দির প্রতিষ্ঠিত হলে সেই স্থান দিনের পর ভক্তদের সমাগম বাড়ে কিন্তু কমে না। শুধু তাই নয় সেই মন্দির নির্মাণের উপাদান প্রথমে মাটির দেওয়াল ও খড়ের ছাউনি হলেও দিনের পর দিন অজস্র ভক্তের গুপ্ত ব্যা ধি তথা নানান রোগ নিরাময় ও অন্যাান্যি বহু সুখ সমৃদ্ধির মূলে দেবীর মহিমাকে দায়ী করে তাঁকে স্বর্ণ, রৌপ্য ও নানান গহনাদি দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়।

পাড়ার বয়স্ক মোড়ল মতিব্বরদের উপস্থিতিতে সকলকে সাক্ষী করে ব্যাকক্তিগত জায়গায় সৃষ্ট পূজনীয় স্থানকে মনসা দেবীর মন্দিরের নামেই উৎসর্গ করে জমির মালিক পক্ষ। এরপরে ধুমধাম করে জাগ্রত করা হয় পুরোহিতের পূজার নানান সাংস্কৃত মন্ত্রে। গ্রামের কুমারী, সধবা ও বিধবা মহিলারা প্রতিনিয়ত সকাল সন্ধ্যায় এইসব থানে বা মন্দিরে ভোগ লাগাতে শুরু করে।

বহু ক্ষেত্র সমীক্ষায় দেখা গেছে অধিকাংশ মনসা দেবীর থানের সন্নিকটে রয়েছে সিজ মনসার গাছ। এই গাছকে দক্ষিণাঞ্চলের মনসা ভক্তদের একাংশ স্বয়ংসিদ্ধ মনসা দেবীই জ্ঞান করে। বহু স্থানে কিছু পুরানো মনসা মন্দির রয়েছে। যেখানে সিজ মনসার গাছ গুলি প্রচণ্ড বড় এবং তার নিচের অংশ গুঁড়ির আকারে পরিণত হয়েছে। তাই মনসা দেবীর মুর্তি পূজার সঙ্গে সঙ্গে সীজ মনসার ডাল পূজার প্রচলনও রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মনসা ভক্তদের একদল অনুগত ভক্তরা বলেন যে সমস্ত গৃহে মনসা মূর্তি নাই তাঁরা সীজ মনসার কান্ড কাদায় প্রতিষ্ঠিত করে যদি পূজা দেয় তবে সেই পূজাতেও এই দেবী সন্তুষ্ট হয়।

মনসা রূপী এই সীজ মনসার ডালের সামনে পূজার নানান নৈবেদ্যাদি সাজিয়ে পূজার আয়োজন করা যেতে পারে। বস্তুত মনসা মূর্তি ও সীজ মনসার কান্ড পূজার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। খ্রিষ্টীয় একাদশ দ্বাদশ শতাব্দী হতে পল্লী বাংলার গ্রামাঞ্চল গুলিতে গৃহস্থের নিজের আরাধ্য দেবীর পূজার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে আসছে এই মনসা। এই দেবীর ভাক্তাসনে সুপ্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয়তার যে কারণ গুলি মানা ‌হয় তা বিস্তারিত তথ্যে উপস্থাপন করা হল;

1. অখণ্ড বাংলায় আর দশ বিশটি লৌকিক দেবদেবীর মতো খ্রিষ্টীয় একাদশ দ্বাদশ শতাব্দীতে মনসা দেবীর উত্থান হয়েছিল সমগ্র দক্ষিণ বঙ্গ তথা বাংলার লোক সমাজে। প্রতিটি লোক দেব দেবীর বাহনের ন্যায় এই দেবীর প্রধান অনুচর কাল বিষাক্ত সর্প। যার কামড়ের হাত থেকে রক্ষার্থে অতি সহজেই তার পূজার জনপ্রিয়তা কয়েক দশকের মধ্যে তুঙ্গে উঠে যায়। তার ভক্তরা স্বেচ্ছায় নয় বরং ভয়ে ভয়ে দেবীকে বেশি পূজা দেয় কেবলমাত্র কাল সর্পের কামড়ের হাত থেকে সপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের রক্ষার্থে।

2. প্রতিটি লোক দেবী দেবীর উত্থানের পিছনে একটি মহান উদ্দেশ্য থাকে। গ্রামের মোড়ল মতিব্বরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় এই সব দেব দেবীর মূর্তি রাখার প্রধান উদ্দেশ্য বহিরাগত শত্রুদের আক্রমণ থেকে সমগ্র গ্রাম কে রক্ষা করা। অনুরুপ কালসর্পমূর্তি বিশেষ মনসা দেবীর এই ভয়ঙ্কর মূর্তি প্রতিষ্টার পিছনে এটাই মহান উদ্দেশ্য।

3. শিবের অসাধ্য হাম, বসন্ত, গুটি বসন্তের মতো কতকগুলো রোগের প্রকোপে অষ্টাদশ, উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে গ্রামের পর গ্রাম মড়ক দেখা দিত। যার ফলশ্রুতিতে উজাড় হয়ে যেত সমগ্র গ্রামের নিরপরাধী মানুষ। এই সমস্ত রোগের কোনো চিকিৎসা তো ছিলই না বরং বলা হত শীতলা, মনসা ও বিবি মায়ের মতো কিছু দেব দেবীর ব্রত ও পূজা পার্বনের কর্মকাণ্ডে ভুল ত্রুটি হলে তার পরিবর্তে রুষ্ট হয়ে দেবদেবীরা এসব অনিষ্ট দুরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি করেন। তাই ভক্তি সহকারে ধুমধাম করে তাদের পূজা ও সন্তুষ্টিতে এহেন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এমন ধ্যান ধারণায় শীতলা বনবিবির ন্যায় মনসার ও সামাজিক গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

4. মনসা ভয়াল, ভয়ঙ্কর সর্পের দেবী রূপে জগতে পূজিতা হয়ে আসছে। কিন্তু মনসা মঙ্গল কাব্যের একেবারে শেষ মূহুর্তে আমরা এই দেবীর একটু বিপরীত চরিত্র খুঁজে পায়। চাঁদ বনিকের সমস্ত বিষয় সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার কাহিনী বঙ্গের কোনোও নারীর অজানা নয়। বেহুলার সতীত্ব ও সত্য বচন রক্ষার্থে চাঁদ সওদাগর মনসাকে বাম হাতে পূজা দেয়। চাঁদ সওদাগরের মনসা পূজার পরিবর্তে মনসা যখন সন্তুষ্ট হয়ে লক্ষীন্দর সহ ছয় পুত্রের জীবন ফিরিয়ে দিল, তার প্রিয় বন্ধু শঙ্কর গারুরীর জীবন ফিরিয়ে দিল, সপ্ত ডিঙ্গার প্রতি ডিঙ্গা জলে ভাসিয়ে দিল এবং মহাজ্ঞান মন্ত্র সহ হাতি শালের হাতি, ঘোড়া একে একে সব ফিরিয়ে দিল এসমস্ত ঘটনায় আমরা কাহিনীতে আমরা মনসার ভক্ত বাৎসল্য রূপ খুঁজে পাই। সেই হারানো কাঙ্ক্ষিত সুখ সমৃদ্ধি ও শান্তি পুনরায় ফিরে পাওয়ার অবিশ্বাস্য আশায় দক্ষিণ বঙ্গে মনসার দেবীর পূজা খুবই শীঘ্রই জনপ্রিয়তা লাভ করে।

5. মনসার প্রধান অনুচর কাল সর্প। যা বংশবৃদ্ধি ও বংশগতির ধারাবাহিকতার অগ্রগতির বিশেষ প্রতীক। স্নেহ বাৎসল্য়ময়ী এক পুত্র সন্তানের বা কন্যার সন্ততির জননী হওয়ার আশা বা বাসনা প্রতিটি সধবা রমনীর মনে থাকে। সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, ব্যা থা বেদনায় সে মনসার কাছে আকুণ্ঠ ভরে প্রার্থনা করে শুধুমাত্র একটি পুত্র বা কন্যাহ পাওয়ার আশায়।

6. দেবী ভাগবত বা দেবী পুরাণে দুই হিন্দু দেবীর সন্ধান পাওয়া যায় যাদের প্রধান বাহন শ্বেত হংস। এই দুই দেবীর একদিকে মা স্বরস্বতী ও অন্য দিকে মা মনসা। যদিও দেবী স্বরস্বতী বৈদিক যুগের সুরের আরাধ্য দেবী। তার প্রধান বাহন হংস হলেও এযুগের লোক দেবী মনসারও প্রধান বাহন হংস। হিন্দু সম্প্রদায়ের আর দশ বিশটি দেব দেবীদের ভিন্ন ভিন্ন বাহন দেখা গেলেও শ্বেত হংস সচরাচর নম্র, ভদ্র ও শ্বেতশুভ্র শান্তির পথিক। পঙ্কিল সলিলে হংস যেমন তার প্রয়োজনীয় খাদ্যেবস্তু গ্রহন করে অপ্রয়োজনীয় খাদ্য্বস্তু পরিত্যা্গ করে। তৎরূপ ভক্ত বাৎসল্য ময়ী এই মনসা ভক্তদের মন কেই ভালোবাসে, কোনো পূজার বাহ্যিক আড়ম্বরে নয়। তাই তার ভক্তদের একাংশ বিনম্র ভক্তি ও শ্রদ্ধায় তাঁকে পূজা করে।

7. দক্ষিণাঞ্চলের লোক সঙ্গীতের আসরে এক শ্রেণীর সঙ্গীতজীবি সম্প্রদায়ের কাছে এই দেবীর গুরুত্ব অসীম। মনসামঙ্গল কাহিনীর মূল মাহাত্ম্য কথা মনসার গান আজ বাংলার কোণায় কোণায় প্রচলিত রয়েছে। পূর্বে এই পালাগান সিঙ্গেল পাঁচালির মতো করে গান ও অভিনয়ের প্রথা প্রচলন থাকলেও বর্তমানে শ্রোতাদেরকে রসাপ্লুত ও দৃষ্টিগোচরে অত্যঁন্ত আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য যাত্রাপাঁচালির প্রচলন শুরু হয়েছে। এহেন লোক শিল্পীরা বছরে প্রায় সত্তর, আশি, এমনকি একশো পালা পর্যন্ত মনসা, শীতলা ও বনবিবির গান করে তাদের সংসার খরচ বহন করে আসছে। তাই এদিক দিয়ে এই দেবীর সামাজিক গুরুত্ব অনেক খানি।

(গ্রন্থঋণ :-বাংলা মঙ্গল কাব্যেওর ইতিহাস – ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য ও সুন্দরবনের লোকদেবতা – ড . দেবব্রত নস্কর।)

মনসা মঙ্গল কাব্য …. জয় জয় মা মনসা মা মনসার গল্প (চতুর্থ পর্ব)

মনসা মঙ্গল কাব্য …. জয় জয় মা মনসা
মা মনসার গল্প (চতুর্থ পর্ব)

তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

মনসা শব্দটি ভারতীয় অর্বাচীন অনার্য ভাষা গোষ্ঠী হইতে এসেছে। মনসা নামটি অলুক সমাস। এখন অনুসন্ধান করে দেখা প্রয়োজন নামটি এসেছে তো এসেছে কোথা থেকে।

দক্ষিণ ভারতের লোক সংস্কৃতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় দ্রাবিড় সভ্যতার নিম্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষরা আজও বহু সর্পের দেব দেবীর পূজা করে আসছে। যেমন- নাগাম্মা, বালাম্মা, মুদামা ইত্যাদি। নাম গুলি শুনে মনে হয় দাক্ষিণাত্য তেলেগু ভাষায় রচিত বিশেষ সর্প রূপের জাগ্রত দেবীই হবে। নাগাম্মা মা সর্প ও বালাম্মা ইহার কন্যা। প্রতিটি সর্পদেবীর আঞ্চলিক ভেদে নানান মাহাত্ম্যও রয়েছে। যেমন নাগাম্মা দেবীর কাহিনী পুতুল নাচ, সামাজিক পালাগানের মধ্যে দিয়ে আজও বর্ণনা করে চলেছে অন্ধ্রপ্রদেশের একশ্রেণীর স্ত্রী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের দল। শুধু অন্ধ্রে নয় চেন্নাই সহ দক্ষিণের সমগ্র গ্রামাঞ্চল তথা শহরাঞ্চলেও বহুজাতিক সর্পের দেবীর পূজার প্রচলন রয়েছে।

কর্নাটকের মহীশূরে মুদামা নামে এক বিশেষ ধরনের সর্প দেবীর পূজার প্রচলন রয়েছে আজও। সমগ্র দক্ষিণের নারী সমাজ আজও দেবী রূপে ইহাকে পূজা করে। দাক্ষিণাত্যে প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ববিদরা ভাস্কর্য খোদায় করা এই দেবীর বহু মূর্তির সন্ধান পেয়েছে। এই সর্প দেবীর মূর্তি অন্যান্য সর্পদেবীর মূর্তির তুলনায় একটু আলাদা। এই মূর্তির বিশেষত্ব হলো ইহার উদরের নিম্ন ভাগ সর্পাকৃতি ও উদর থেকে মস্তক পর্যন্ত কন্যাকৃতি। অর্থাৎ আধা নাগিনী ও আধা নারী মূর্তি বিশেষ মূর্তি।

আবার নাগাম্মা, বালনাগাম্মা, মুদামা ভিন্ন দক্ষিন ভারতের কানাড়া প্রদেশে মঞ্চাম্মা নামে এক দেবীর পূজার ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। ইহার মাহাত্ম্য হল ইহার কোনো মানবী রূপী দেবী মূর্তি বা রূপ নাই। মনে মঞ্চাম্মা এক অদ্ভুত অদৃশ্য সর্পের নাম। এই সর্পটি স্বর্গের নাগ জাতিগোষ্ঠীর একাংশ বলে মনে করা হয় বলে সর্পটির উপর দেবীত্ব আরোপ করা হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন স্থানে এই মঞ্চাম্মা দেবীর পূজার আয়োজন করে ভক্তরা। বল্মীক রূপ এক স্তুপ বা ঢিবির সামনে পূজার নৈবেদ্যাদি ফুল, পুষ্পচন্দনে সুসজ্জিত করে পূজা দেওয়া হয় এই দেবীকে।

এখন অনুসন্ধান করে দেখা প্রয়োজন বাংলার অনার্য সভ্যতার ভাষাগোষ্ঠীর শব্দভাণ্ডারে সৃষ্ট এই মনসা নামের সঙ্গে ইহাদের মিল কতখানি। উপরিউক্ত যে সর্প দেব দেবীদের নাম গুলি দেওয়া হয়েছে তার প্রতিটি নাম দেখে ও উচ্চারন বুঝে স্পষ্ট বলা যেতে পারে ইহাদের প্রতিটি নাম স্ত্রী লিঙ্গ অর্থাৎ দেবীমাতা। তেলেগু, তামিল, বা কন্নড় যে ভাষায় দেবী গুলির নাম যে ভাবেই সৃষ্টি হউক না কেন প্রতিটি দেবীর নামের উৎপত্তি গত ও ব্যাকারণ গত মাধূর্য আছে। মনে মঞ্চাম্মা দক্ষিন ভারতের সর্পের দেবীর নাম। আবার আমাদের বাংলার সর্পের দেবীর নাম মনসা। দক্ষিণ ভারতের এই দেবী বাংলাদেশের বুকে নাম একটু বদলে মঞ্চাম্মা’থেকে মনসা আম্মা রূপে পরিবর্তন হওয়া অসম্ভব নহে। শুধু মঞ্চা-এর চা এর পরিবর্তে সা শব্দটি উচ্চারণ করিলে মনসা উচ্চারণ হতে পারে। এখন বিচার করা প্রয়োজন যে, যদি এই তথ্যের ভিত্তিতে মনসা নামটি এসে থাকে তবে এই নামের বার্তা বাহক কে বা কারা ? একমাত্র সর্পদের নিয়ে খেলা দেখাতে দেখাতে বেদিয়া সাঁপুরের দল এর বার্তা বাহক হতে পারে। কিন্তু এই তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট করে বলা যায় না যে এই তথ্য সম্পূর্ণ সত্য। যদিও এককালে বেদে সাপুড়ের দল সারা দেশে ভ্রমণ করতে করতে সাপ খেলা দেখাত।

আবার নাগাম্মা রুপী দক্ষিন ভারতের সর্প দেবীর সঙ্গে মনসা দেবীর সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বিচার করে দেখলে কিছু কিছু মিল ও অমিল পরিলক্ষিত হয়। নাগাম্মার প্রকৃত রুপ যেহেতু আধা নাগিনী ও আধা কন্যা তাই মনসার সঙ্গে ইহার পার্থক্য রয়েছে। শুধু তাই নয় বৈসাদৃশ্যের দিক দিয়ে আরোও কিছু কিছু পার্থক্যও রয়েছে। মনসা মঙ্গল কাব্যের কাহিনী ও দক্ষিণ ভারতের এই প্রতিটি সর্প দেবীর মাহাত্ম্য কাহিনীও সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এখন দক্ষিনবঙ্গে মনসা ও তার অন্যতম প্রধান বাহন সর্পের কয়েকটি লোক বিশ্বাস সম্পর্কে দেওয়া হল। যেগুলি খুব আন্তরিক ভাবে মান্যস হয়ে আসছে কয়েক দশক আগে থেকে।

মনসার বাহন সাপ সম্পর্কে দক্ষিণবঙ্গে গ্রাম্যদ সমাজে প্রচলিত কিছু যাদুকরী লোকবিশ্বাস

১. সর্পের দেবী মনসার স্বপ্নবরে ঘর সংসার সুখী হওয়ার জন্য গুপ্তধন, রত্নসম্পদের সুযোগ সন্ধান সম্পর্কিত কিছু আবেগপ্রবণ লোক গল্পের প্রবাদ প্রচলন এই সমাজে রয়েছে। সর্পের মাথার মণি সাত রাজার ধন। তাই তাকে প্রসন্ন করতে পারলে অনেক বেশি রত্ন সম্পদের মালিক হওয়ার অবিশ্বাস্য আশায় বুক বাঁধে নারীপুরুষ নির্বিশেষে গ্রামের সবাই।

২. দেবী মনসাকে দুধ-কলা ও অন্যান্য নৈবেদ্যাদি দ্বারা পূজা দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারলে তার কৃপায় নিজদের শাঁখা সিঁদুর সতীসাবিত্রী ও বেহুলার ন্যায় চির অক্ষয় থাকবে এরকম একটা কল্পনাও সচরাচর করা হয়।

৪. বিষাক্ত সাপে কাটা রোগীর দেহে পুনরায় প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র এই দেবীর। মনসামঙ্গলে তার রূপ চিত্রায়ণ হয়েছে। তাই অন্যান্য লোক দেবীর পূজা অপেক্ষা এই দেবীর পূজায় বাস্তবিক জীবন সুস্থ সবল ও বিপদমুক্ত থাকার একটা মানসিক তৃপ্তিও অনুভব করা হয়।

৪. বিষধর সর্পের কোনো প্রকারে একবার মৃত্যু ঘটলে কোনো কোনো জায়গায় তার বিষদাঁত ভেঙে তা সংগ্রহ করে রাখার রীতি নীতি রয়েছে। পরে ওই বিষদাঁত টি মাদুলি ও কবচে ভরা হয়। এই মাদুলি ও কবচ বয়োঃ জ্যাষ্ঠ মানুষদের বাতের ব্যাথা হলে তাকেই পরিয়ে দেওয়া হয়। বাতের ব্যাথা থেকে চির মুক্তি লাভের আশায় আশায়।

৫. যারা নিত্যই বিষধর সর্পের স্বপ্ন দেখে, বহুমূত্র ব্যাধির স্বীকার, পরিণত কৈশোরেও বিছানায় ঘুম ঘোরে মূত্রত্যাগ করে তাদের অধিকাংশই সাঁপুরে, বাজিকরদের স্মরণাপন্ন হয়। বাজিকরেরা যখন গ্রামে গঞ্জে সাপের খেলা দেখিয়ে বেড়াত তখন তাদের ঝোলাতে নানান রোগ নিরাময়কারী ঔষধের সম্ভার থাকত। প্রতিটি রোগের মাদুলি ও কবচের ব্যবহার। অর্থাৎ এই সুযোগে সাঁপুরে বাজিকরদের দল ঔষধ বিক্রি করার একটা ফাঁদ পেতে বসে।

৬. প্রতিটি বাড়িতে একটি করে বাস্তুসাপ থাকে। এই সাপ কারো ক্ষতি করে না। গ্রামের প্রতিটি মানুষ বাস্তুর মঙ্গল কামনার্থে এই সাপের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।

৭. কোনো সাপের একবার মৃত্যু ঘটলে তাকে দাহ করার রীতি দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সর্বত্র প্রচলিত রয়েছে। এক্ষেত্রে বাস্তুসাপ মারা গেলে অনেক গৃহস্থ ভক্তরা ক্ষৌরকর্ম, শ্রাদ্ধ শান্তি ও মস্তক মুণ্ডনও পর্যন্ত করে থাকে। তবে কারো আঘাতে কোনো বিষধর সর্পের মৃত্যু ঘটলে মূলত তার বংশোদ্ভূতদের দ্বারা প্রতিশোধ নেওয়ার এক ভৌতিক লোক বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। গ্রামের মানুষের বিশ্বাস বিশেষত তার চোখ ও স্মৃতিতে ওই আঘাতকারী ব্যাক্তির প্রতিচ্ছবি অঙ্কিত হয়ে যায়। তাই সাপের মুখমণ্ডল দাহ করে দিলে এর থেকে চীর মুক্তি পাওয়া যায়।

৮. রাত্রে এলোমেলো বিছানায় বিষধর সাপের কামড়ে গ্রামের অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। তাই গ্রামের মানুষের লোক বিশ্বাস মনসা ও তার স্বামীর নাম স্মরণ করে বালিশে ‘আস্তিমাতা ‘টোকা দিলে আর এরূপ অনিষ্ট ঘটে না।

৯. বিনের আওয়াজে মনসার বাহন কালসর্প খুবই নেশা গ্রস্থ হয় এমন এক অদ্ভুত ধারণা আজও বেদেদের একদল গ্রামে গঞ্জে ঘুরে খেলা দেখিয়ে প্রমাণ করে বেড়ায়। শুধু তাই নয় ধূনার গন্ধেও সে ঝিমিয়ে পড়ে। তাই তার পূজার পূণ্যমূহুর্তে কোনোরূপ ধূনা ব্যযবহারের রীতি নাই। এসবের ব্য্বহারে তিনি রুষ্ট হন বলে পুরোহিতদের একদলকে বলতে শোনা যায়।

১০. হেঁতালের গন্ধে কালসর্প ঝিমিয়ে পড়ে। তাই তার পূজার পূণ্য লগ্নে হেঁতালের ব্যবহৃত ছড়ির পরিবর্তে কঞ্চির ছড়ি ব্য বহার করে কাঁসা বাজানোর রীতি রিয়াজ আজও কমবেশি চোখে পড়ে।

১১. সাপে কাটা রোগীর দেহে প্রাণ বিয়োগ হলে সেই দেহে কেবলমাত্র মনসার সাধনায় সিদ্ধ গুনীন, বদ্যি ও ওঝারাই প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারেন- এই কথা আজও নিরক্ষর মানুষের মনে বিশ্বাস। ওঝা ও গুনীনরা এই দেবীর আশির্বাদ ধন্য মানস বা বরপুত্র। তাদের কাছে সাপে কাটার যাবতীয় ঔষধের সম্ভার রয়েছে। তাই গ্রামের মানুষ বিজ্ঞানের ধারাপাত অপেক্ষা মনসা ও তার আশির্বাদধন্যা ওঝা, বদ্যি্দেরকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

১২. সর্পে দংশিত রোগীরা মারা গেলে তাদের পোড়ানোর রীতি দক্ষিনবঙ্গের লোক সমাজে নাই। সমাধি দেওয়া হয় এই কারনে রোগীর দেহে পুনরায় প্রাণ ফিরে পাওয়ার অবিশ্বাস্য আশায়, বিশ্বাসে ও কল্পনায়।

১৩. লোক সমাজে প্রবাদ প্রচলন রয়েছে যে সাপে কাটা রোগীদের প্রাণ দেহের মধ্যে থেকে যায়। বিষের জ্বালায় নীল হয়ে যায় সমস্ত শরীর। শ্বাস প্রশ্বাস রুদ্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য মৃতদের আগুনের সৎকারে মৃতদেহ চীর ভষ্মীভূত হয়ে যায় শ্মশানে। কিন্তু সাপে কাটা রোগীদের মৃতদেহ গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়ার রীতি রয়েছে। তার একটি মাত্র কারন কোনো সহৃদয় ওঝা বা গুনীনের সান্নিধ্যে এসে যদি আবার পুনঃজন্ম লাভ করে এমন কিছু কাঙ্ক্ষিত আশায়।

১৪. সাপের বিষ থেকে যে (SAVS) স্নেক এন্টি ভেনম সিরাম তৈরি করা হয় তা দিয়ে সাপে কাটা রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। তাই একটি বুদ্ধিজীবী মানুষের চিন্তা ভাবনায় বিষাক্ত সাপকে হত্যা না করে বরং তাঁকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

১৫. সাপ বংশের ধারক বাহকের প্রতীক। নিঃসন্তান মাতাপিতা একটি সন্তান কামনায় এই দেবীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে ভক্তি দিয়ে পূজা করে, ছলনা দেয়, গণ্ডী দেয় ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

মনসার বন্দনা গান

গ্রামের সার্বজনীন মন্দির গুলির মহোৎসব পর্বে মনসা দেবীর উত্থান ও পূজা পার্বণের পুণ্য লগ্নে সমগ্র উনবিংশ, বিংশ শতাব্দী থেকে আজও গ্রামের সধবা মহিলাদের একদল সমবেত কণ্ঠে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মঙ্গল ঘট বসিয়ে এক সুন্দর লোক সুরের আঙ্গিকে মনসার বন্দনা গান গায় দশহরার ব্রত পালন করে। প্রতিটি গ্রামের সার্বজনীন থান বা মন্দিরে সমগ্র গ্রামের মাঙ্গলিক লোক দেবী রূপে দীর্ঘকাল যাবৎ ভক্তদের কাছে থেকে মনসা পূজা নিয়ে আসছে। তাই বৎসরান্তে এক দুই বার তার মহিমা কীর্তন পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে মানসিক সুখ শান্তি অনুভব করে দক্ষিণ বঙ্গে এই দেবীর অনুগত ভক্তরা। লোক সঙ্গীতের আর অন্যান্য শৈলীর মতো মনসার পাঁচালীগান বা অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে যাত্রা পাঁচালী পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে তারা দেবীর গুণকীর্তনে আনন্দে মাতে।

মনসার পাঁচালী গান‌ সম্প্রদায়ের শিল্পীরা দেবী মাহাত্ম্য কীর্তনের পালায় অনুপ্রবেশের পুণ্য মূহুর্তে পুরুষ ও মহিলা চরিত্রের সমস্ত নরনারীরা সর্বপ্রথমে ‘আশাবারী’ খনন করে দেবীকে আনয়ন করে। লোক সমাজের প্রতিটি গৃহস্থের ধারণা এই সময় মনসা দেবী জাগ্রত হয়ে তার অনুগত ভক্তদের কৃপা করেন। সেই কৃপা বর্ষনের সামান্য করুণা লাভের আশায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলাদের একদল গন্ডি দেয় থানের চতুর্দিকে। অন্যা ন্যু জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষরা এই পবিত্র সঙ্গীতানুষ্ঠানেও কমবেশি উপস্থিত হয়। সেই পুন্যত ক্ষণে শিল্পীরা মহানন্দে মনসা বন্দনা পরিবেশনের মধ্যো দিয়ে দেবীর চরণে নিবেদন রেখে সকলে উচ্চৈঃস্বরে গাইতে থাকে ;

জয় জয় মা মনসা, জয় বিষহরি গো।
বন্দনা করি মাগো মা মনসার চরণে।।
তার পরে বন্দনা করি মহাদেবের চরণে। জয় জয় মা মনসা
তার পরে বন্দনা করি ভগবতীর চরণে।জয় জয় মা মনসা
তার পরে বন্দনা করি মা কালীর চরণে। জয় জয় মা মনসা
ও মা – – –
মাগো আকাল বন্দন পাতাল বন্দন বন্দনা করলাম,
আমি গুরুদেবের চরণে। জয় জয় মা মনসা
তার পরে বন্দনা করি তেত্রিশ কোটি দেবতা। (জয় জয়)

www.youtube.com/watch?v=FFOg9JkLN8Q

আমাদের কথা শুনো না শুনলে মরো না হয় দেশ ত্যাগ করো পছন্দ তোমার

ছয় মাসও হলো না গাজীপুরে বুয়েট হতে পাস করা একজন ইঞ্জিনিয়ারকে কিছু টাকার বিনিময় ভাড়া করা গুণ্ডা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। উনার অপরাধ নিম্ন মানের কাজ করায় উনি বিল আটকে রেখে ছিলেন এই জন্য নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ রাস্তায় ফেলে যায়। পরিবারের রোজগার করা মানুষটার মরণে এখন পরিবারকে অভাব-অনটনে সীমাহীন কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। সন্তানদের লেখাপড়ায় নেমে আসবে চরম বিপর্যয়। কারণ সৎ লোকের অবৈধ সম্পদ গচ্ছিত থাকে না। হাজারো খুন হওয়া মানুষের সন্তানেরা জীবনের শুরুতে বাংলাদেশের এমন ঘৃণিত রূপ দেখে বড় হচ্ছে।

কয়েকদিন আগে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের আরো একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মেরে রক্তাক্ত করেছেন কিছু গুণ্ডা। উনার অপরাধ পুঠিয়ায় ভূমি অফিস নির্মাণে ঠিকাদার নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

প্রশ্ন হলো কারা এই কাজ করতেছে। সহজ উত্তর যাদের এখন অপরিসীম ক্ষমতা আছে। যারা রডের বদলে বাঁশ দিয়ে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ -কালভার্ট ও সরকারী অফিস- আদালত করতে চায় এবং বিল নিতে চায় রডের চেয়ে দ্বিগুণ, তারাই। যে দেশে পেশাদারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গুণ্ডার হাতে ডাণ্ডার মার খেয়ে রক্তাক্ত হতে হয় এবং একদল হায়নার হাতে মরণের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় সে দেশে কে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইবে আর সৎ থাকতে চাইবে। হলেও প্রচুর প্রভাবশালী হতে হবে থাকতে হবে রাজনৈতিক যোগাযোগ।

এই লোকগুলি যদি আজ পুলিশ হতো, যদি ম্যাজিস্ট্রেট হতো তাহলে কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস করতো না। আমরা অহরহ দেখছি পুলিশ কর্মকর্তা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নাকে রশি লাগিয়ে ঘুরায়। বিচার না হতে হতে আজ এমন হয়েছে যে পুলিশ সাধারণ লোককে ধরে নিয়ে পরিমাণ মত চাঁদা না ফেলে ক্রস ফায়ার করতেছে। ঠিকাদার রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে নিম্ন মানের কাজ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দেশটা যেন চোর ডাকাত পুলিশ খেলায় মত্ত। আর আম জনতা নিয়ে চুপ থাকছে। এই চুপ থেকেও নিরাপদ থাকা যাচ্ছে না। গ্রামে গঞ্জে আজ মাদকের হাট বাজার বসে প্রতিবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। চোখের সামনে যুব সমাজ মাদকের নেশায় পৃথিবীকে রঙ্গীন দেখছে রাজনৈতিক ছায়া তলে। প্রতিবাদী হতে হলে শিরোনামের একটা অপশন পছন্দ করতে হবে।

আলোচিত খুন আলোচিত গুম আলোচিত ধর্ষণ ও আলোচিত খলনায়ক

মেজর সিনহাকে চারটা নাকি ছয়টা গুলি করেছে তা নিয়ে বিতর্ক করে কি লাভ এখন। তাকে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে এটাই সত্য। আর এই হত্যা করেছে দেশের আইন শৃঙ্খলা যারা রক্ষা করে তারাই । গুলি করেছে এসআই পদবি লিয়াকত (যে কিনা ছাত্র জীবনে শিবির করতো বলে প্রচার করা হচ্ছে , আহ ! হাসি আর হাসি )। সিনহা গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে । ইস ! কি ভয়ানক কষ্ট করছে তখন। তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার আত্মা তখন কেমন করেছে এতদিনে সিনহা হয়তো জেনে গিয়েছে । বাবা ছেলেকে কাছে পেয়ে হয়তো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলছে এ কেমন অবিচার দেশটাতে অথচ এই দেশের জন্যই অস্ত্র হাতে মরণপণ লড়াই করেছি । ধর্মীয় লেবাস কাজে লাগিয়ে পাশের রাষ্ট্রে সম্পদ পাচারকারী প্রদীপ ( যে কিনা বিএনপি করে প্রচার করা হচ্ছে আবারও হাসি আর হাসি) মাটিতে পড়ে থাকা মেজরকে পা দিয়ে চেপে ধরে। ইস !এক ভয়ানক জালিমকে রাষ্ট্রীয় পদক দেওয়া হয়ছে আরেক — এসপি ডিজি হয়তো অন্য কারো সুপারিশে । সাবেক এসপি আল্লাহ বকস আবার সিনহাকে হত্যার পর আইনী পরামর্শ দিয়েছেন । এই আল্লাহ বকসের ভাই বিএনপির আমলে পুলিশের আইজি ছিলেন ।

তবে এবার বিচার হতে পারে কারণ প্রদীপ আর লিয়াকত বিরোধী দলের লোক। তারা আওয়ামী লীগকে ধোকা দিয়েছে এত দিন। আর সাক্ষী বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসা সিফাত আর শিপ্রা। ভয়ের কোন কারণ নেই সিফাত ও শিপ্রা সত্য বলে মরণ হোক আরেকবার । তোমরাতো সিনহার সাথে ওইদিন রাতেই মরে গিয়েছো ।
মেজরের মা কান্না করে এবং ছেলের জন্য কাঁদবে মরণ পর্যন্ত । মাননীয প্রধানমন্ত্রী ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার করবে ওয়াদা করেছেন । প্রিয় মা এখন ধৈর্য্য ধারণ করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই আপনার , এই বাংলাদেশে। পিলখানায় ৫৭জন সেনা হত্যার বিচার হয়নি । আবরার হত্যার বিচার হয়নি। নারায়ণগঞ্জের ত্বকি ও টেন হত্যার বিচার হয়নি । তাইতো বিচার কাঁদে আকাশে বাতাসে।

প্রিয় মেঘ । ভালোবাসা তোমাকে । মা বাবা ছাড়া বড়ই কষ্টের জীবন তোমার । অল্প বয়সে মা বাবা খুন হতে দেখছো তুমি। জানি তাদের কথা মনে করে কান্না করো তুমি । তোমাদের মত এমন আরো হাজারো মেঘ কিংবা মা কেঁদেই চলেছে । তোমার মা বাবাকে খুনের পর ৪৮ ঘন্টার ভিতর আসামি ধরবে বলে ছিল রাষ্ট্র । এইটা এখন ইতিহাস । আশ্বাসের পর আশ্বাসে বছর ঘুরে বহু বছরে পড়েছে , তুমি এখন বড় হয়েছো সব বুঝতে শিখেছো । বিচার পাওনি বলে বাংলাদেশকে ঘৃণা করো না।

ইলিয়াস আলী বিএনপির নেতা । কে বা কারা ধরে নিয়ে যে গেল আজও ফিরে আসেনি । অবশ্যই অনেক খুন গুম হয় এবং হয়তো ভবিষ্যতে আরো হবে । তবে যেসব খুন গুম দেশকে নাড়া দেয় তাদের একজন ইলিয়াস আলী। তার স্ত্রী সন্তান অনেক দেনদরবার করলো জীবিত ইলিয়াসকে ফিরে পাওয়ার জন্য। রাষ্ট্র আশ্বাসও দিয়ে ছিল কিন্তু সেটাও বছর হতে বহু বছর হলো ইলিয়াস আলী ফিরে এলো না । আর সবচেয়ে বড় সত্য ইলিয়াস আলী বিএনপির প্রভাবশালী নেতা । তার ফিরে আসার সম্ভাবনা আদৌ কি ?

তনুকে আপনারা মনে হয় ভুলে গিয়েছেন । এই মেয়েটাকে কুমিল্লা সেনা নিবাসে কুমির খেয়ে ফেলেছে। তবে খাওয়ার আগে দেহের উপরে বিকৃত নৃত্য দেশবাসী দেখেছে । আমরা অনেক কাঁদলাম পেপারে ও সামাজিক সাইডে। কি লাভ হলো কিছুই হলো না । তার মা বাবা সন্তান হারালো বিচার ফেল না।

সিনহা , ইলিয়াস আলী ও সাগর রুনি আরো নাম না জানা মানুষের ভিড়ে অসংখ্য তনু যারা আকাশের তারা এখন। তনুর মা বাবা গ্রামের গরিব বলে ঢাকার রাজপথ অনেক আগেই নীরব হয়ে গিয়েছে । ইলিয়াস আলীর সন্তান আর সাগর রুনির সন্তান বড় হয়েছে সিনহার মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলতে পারবে বিচারের আশ্বাস আমরাও পেয়ে ছিলাম। যেই দেশে প্রদীপ লিয়াকত সেই দেশে ইলিয়াস কোবরা সিনামা বানাবে । আর আমরা তা চুপি চুপি দেখে যাবো ।

খল নায়ক ইলিয়াস কোবরা আসলে কিন্তু এই দেশের নাগরিকই না। মিয়ানমারের থেকে এসে কক্সবাজারে নিবাস গড়েছেন। মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে ইয়াবার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোবরা পরিবারের প্রায় সব পুরুষই ইয়াবা কারবারে জড়িত। জেলও খেটেছেন অনেকে আবার মামলাও চলমান ।

আর এই ইলিয়াস কোবরা প্রচণ্ড দাপটের সঙ্গে আমাদের চলচ্চিত্রে কাজ করে গিয়েছেন ! মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই ইলিয়াস কোবরার নাম চলে আসায় এটি নিয়ে গভীর তদন্ত দরকার। সবচেয়ে আজব ও মজার ব্যাপার , যার পুরো পরিবার ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত সেই ইলিয়াস কোবরাকে কক্সবাজারের ওই এলাকার মাদক নির্মূল কমিটির সভাপতি বানিয়ে ছিলেন সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার!!

ছবি ফেসবুক ও কোবরার নিউজ কালের কন্ঠ হতে ।

বিদেশে পথে পথে আমরা

রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সৌদি সরকারের প্রতিনিধিরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটিতে কর্মরত শ্রমিকসহ অন্য পেশাজীবিরা ভিসায় উল্লেখিত পেশার বাইরে কোনো কাজ করতে পারবে না। বিশেষ করে রাজনীতি, পেশাজীবি বা অরাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবে না। শ্রম ভিসায় গিয়ে অনেকে সাংবাদিকতা অর্থাৎ বাংলাদেশে খবর পাঠান অভিযোগের প্রমাণ হাজির করে সৌদি পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এক বাক্যে বলেছেন, প্রেস ভিসা ছাড়া অন্য কেউ সৌদিতে সাংবাদিকতা করতে পারবে না। বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিনিধিদের এই বলে সতর্ক করা হয় যে বাংলাদেশ মিশনের কেউ যাতে এসব কর্মে কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় বা সমর্থন কিংবা অনুমোদন না দেয়। দৃষ্টি আকর্ষণের পরও যদি কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব কর্মে সম্পৃক্ত রয়েছে মর্মে প্রমাণ মিলে তবে, অবশ্যই তাকে জেল-জরিমানাসহ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের কঠোর মনোভাবের বিষয়টি অবহিত করছে। ইকামায় বর্ণিত পেশার বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা এ ধরণের অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

এরপরও কোন ব্যক্তি এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে বা পরিচালনা করলে তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের আওতায় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে জেল জরিমানার সম্মুখীন হওয়াসহ দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সৌদি সরকার জানায়, এখানে অন্য পেশায় নিয়োজিত থেকে সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বা প্রেস ভিসা ব্যতিরেকে যে সকল বাংলাদেশি নাগরিকগণ সাংবাদিকতা করছেন বা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং ঢাকায় সংবাদ প্রেরণ করছেন তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রেও এসব অপরাধের জন্য জেল জরিমানাসহ দেশে প্রত্যাবর্তনের সম্মুখীন করা হবে বলে জানানো হয়।
সৌদি আরবের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য বর্ণিত বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস।

অধিকাংশ লোক জায়গা বিক্রি করে, ধারদেনা করে কিংবা সুদের হিসাবে টাকা ধার করে বিদেশে যায়, এর মধ্যে সামান্য একটা অংশ কিছু সৌদি লোকের সহযোগিতায় বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্যে মাধ্যমে কিছু টাকা আয় করে যেটা তারা দেশে বসে কল্পনাতেও হিসাব করেনি। এরাই কিছু লোক নিজেকে নেতা পরিচয় দিতে শুরু করেন। অনেক সময় স্থানীয় কোন এমপি বা নেতাকে আমন্ত্রণ করে, হোটেলে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এমপি বা নেতাকে দিয়ে একটা সংগঠন এর নাম ঘোষণা করানো হয় এবং সেই সাথে কিছু পদ পদবিতে নাম ঘোষনা করা হয়। বিভিন্ন পদে উপনীত ব্যক্তিগণ নেতা হিসাবে পরিচিয় দিয়ে আত্ম সন্তুষ্টি লাভ করেন। এইসব নেতারাই বিভিন অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হন। আমাদের দেশে এই একটি মাত্র পদ আছে যে পদের জন্য কোন যোগ্যতা লাগেনা শুধু মাত্র পাগল না হলেই হলো, সেটা হচ্ছে নেতা। অবশ্য মন্ত্রী, এম পি হতেও যোগ্যতার কোন মাপকাঠি নেই। কিছু টিভি চ্যানেল বিদেশে শ্রমিক হিসাবে যাওয়া কিছু লোককে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেয় যাদের ভাষা জ্ঞান তেমন নেই। এরা ভালো বাংলা উচ্চারনে কথা বলতে পারেন না, অবশ্য এটা দোষের কিছু নয় কিন্তু যখন এদেরকে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন সেটা বুঝতে পারিনা। যারা সাংবাদিকতা করবেন, লাইভ সম্প্রচার করবেন তারা অবশ্যই উচ্চারণ এবং ভাষাজ্ঞানে সমৃদ্ধ থাকার কথা।

এই দিকে বাংলাদেশের কোন উড়োজাহাজ কুয়েতে ঢুকতে পারবেনা। ইটালীতে অনেক আগে হতে বাংলাদেশী ঢুকতে পারছেনা অথচ হাজার হাজার বাংলাদেশি যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশিরা ইটালীতে করোনা সনদ জালিয়াতি করে খবরের শিরোনাম হয়েছে সবার জানা কথা। জাপানও আজ বলে দিয়েছে বাংলাদেশের লোক ঢুকতে পারবে না। পাপুলের ভিসা জালিয়াতি করায় কুয়েত হয়তো নিরহ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে পদক্ষেপ নিতেও পারে। এখন হতে সরকার দক্ষ কূটনীতিক তৎপরতা চালানো দরকার যাতে শ্রমিক ফেরত না পাঠায়। সরকার এবং জনগণের বুঝা উচিত অকাতরে প্রবাসী ফেরত আসলে দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যা কাটিয়ে উঠা দুরূহ ব্যাপার হবে।

মাসুম নামে এক লোক আমেরিকা বসে প্রায় প্রতিদিন ফেসবুক লাইভ করে সরকারের বিরুদ্ধে। উনি আবার একটা ফেসবুক গ্রুপও করেছে রেমিটান্স ফাইটার অফ বাংলাদেশ (আরএফবি) নামে। যেখানে প্রবাসীদের এড করে এবং প্রচার করছে উনি নাকি সরকারের পদত্যাগ চায়। এবং সরকার বিরোধী যেসব লোক আছে তাদের সহযোগিতাও চেয়েছে। আসলে সব হলো মিথ্যা এবং ধান্দাবাজি। আমেরিকার মাসুম, কাতার প্রবাসী একজন, এসকে মিডিয়ার টিপু চৌধুরী এবং সৌদি প্রবাসী মিনার মাহমুদের ভিতর মতবিরোধ শুরু হয়। মাসুম তার লোক দিয়ে টাকা পয়সা খরচ করে সৌদিতে মিনারকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। সে ধরা পড়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করে সে ডাক্তারী পেশার সাথে সাথে সাংবাদিকতাও করে এবং বিভিন্ন বাংলাদেশী শ্রমিকও এইসব করে ( করোনা নিয়ে এবং মানুষের বিভিন্ন অসুবিধা নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করতো আমিও দেখেছি )। তবে মিনার মাহমুদ একজন ভালো লোক কিন্তু তার এই লাইভ করা সৌদি আইনে নিষিদ্ধ এবং অপরাধ, জানতে পেরেছি সে এখন জেলে। যার কারণে সৌদি সরকার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছে। প্রথম হতে মাসুমের সরকার বিরোধী ফেসবুক লাইভ দেখে আমার মনে হয়েছে লোকটা বাটপার। কোন মতলব নিয়ে সে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করতে চায় যাতে তার লাভ হয়। প্রিয় প্রবাসী ( রেমিটান্স যোদ্ধা ) ভাইবোন আপনারা এইসব মতলবাজ ধান্দাবাজ কূটচালবাজ এবং অসৎ লোক হতে দুরে থাকুন। বিদেশে বসে দেশে কোন দল সরকার থাকে তা নিয়ে রাজনীতি না করে আপনি নিরাপদ সুস্থ ও সবল থেকে সৎ পথে রোজগার করে বৈধ পথে টাকা পরিবারের কাছে পাঠান। এতে পরিবার চলবে, সমাজ দেশ উপকৃত হবে। সজাগ থাকুন ধান্দাবাজ আপনাকে ব্যবহার করে যেন উপরে উঠতে না পারে। মনে রাখবেন আপনি হলেন লাল সবুজ পতাকা, রক্তমাখা মানচিত্র ও জনমদুঃখী মায়ের সন্তান।

সূত্রঃ বিভিন্ন নিউজ পেপার ও ফেসবুক ভিডিও।

অজ্ঞতা নাকি ভন্ডামী

আমাদের ধর্ম পালন দেখে খুবই দুঃখ লাগে। নিজের সুবিধার্থে ইসলামকে আমরা ব্যবহার করছি। যেমন, জ্বিল হজ্জ মাসের প্রথম তারিখ থেকে কোরবানী ঈদ উপলক্ষ্যে অনেকে দাঁড়ি-গোঁফ কাটেনি। আমি তাদের প্রশ্ন করলাম, কেন তারা কাটেনি? উত্তরে আমি বিব্রত হই। এই সময়ে দাঁড়ি-গোঁফ কাটলে আল্লাহ নাকি গোনাহ দিবে। এই কেমন যৌক্তিরে ভাই? হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, এক মুঠো সমপরিমান দাঁড়ি রাখতে, আর যদি দাঁড়িতে ক্ষুর লাগানো হয় তাহলে নবী (সঃ) গলায় ক্ষুর বসানো সমান গোনাহ হবে। অথচ বর্তমানে ধর্ম কে নিজের মত সাজিয়ে যুক্তি দিয়ে নিজেকে মুসলমান দাবী করছে। আপনি আল্লাহর হুকুম পালনে নামাজ পড়ছেন কিন্তু হিন্দু নাপিত দিয়ে দাঁড়ি চাটাই করে উনার বন্ধু নবী করীম (সঃ) কে অপমান করছেন। এইটা কি আপনাদের অজ্ঞতা নাকি আল্লাহর সাথে ভন্ডামীর পরিচয়?

পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের মুসলমান মনে করতো না। কারণ বাঙালিদের আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি বিধর্মীদের সাথে মিল। তাই তারা পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে ছিল। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানীরা চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, খুন ধর্ষণ তথা যত অপকর্ম ইসলামে নিষেধ করেছে সে সকল অপকর্মের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল আর নিজেদের মুসলমান দাবী করে পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছিল। বর্তমানেও ঠিক বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ সকল অপকর্ম করবে আর তখনই তাদের মুসলমানিত্ব দেখাবে আপনি যখন যৌক্তিক প্রতিবাদ করবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামীন সমাজে নামাজ পড়া মানুষগুলোকে আমরা ভালো মনে করি, কিন্তু অন্তরালে তার কুৎসিত চরিত্রটা আমরা দেখি না। শুধু নামাজ পড়লেই যদি সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করানো যেত তাহলে কোরআন-হাদিসে এতো বিধিনিষেধ নাজিল হতো না। আর মানুষেরও মৃত্যু হতো না।

কিছু লোক আছে যারা নামাজ পড়ে আমি ভালো হয়ে গিয়েছি প্রমাণ করার জন্য। আর কিছু লোক আছে বয়স হয়েছে আর কত! তাই। আল্লাহকে ভয় করে যদি নামাজ পড়তো তবে আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ সকল অপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখতো।

আপনি বা আপনারা তো নামাজ পড়েন, তাহলে কয়েকটা জিনিস থেকে আপনারা নিজেদের বিরত রাখতে পারেন কি-না দেখি। যেমন, লোভ-লালসা, হিংসা-পরশ্রীকাতরতা, গীবত-পরনিন্দা, সামাজিক অন্যায় বিচার এবং অন্যের অনিষ্ট সাধন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

ঈদ মহামারী বন্যা ও আমরা

কোরবানের শাব্দিক অর্থ হল- নৈকট্য অর্জন করা, কাছাকাছি যাওয়া। পারিভাষিক অর্থে ‘কোরবানি’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ঈদ উৎসব ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ, কোরবানির মূল দীক্ষাই হল আল্লাহর সকল হুকুমের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের নমুনা স্বরূপ হযরত ইবরাহীম (আঃ) নিজ প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে (আঃ) আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর হুকুমের প্রতি অতিশয় আনুগত্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা তার এ কোরবানিকে কবুল করে নেন, এ ঘটনা আল্লাহর হুকুমের পূর্ণ আনুগত্যতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই কোরবানিতে মানুষের জন্য অসংখ্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।

কোরবানি অন্যতম শিক্ষা হলো দরিদ্র ও অনাথের সুখ দুঃখে ভাগিদার হওয়া। নামাজে ধনী দরিদ্রের সহাবস্থান এবং কোরবানির মাংস গরিবের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার ইসলামী নির্দেশ তা প্রমাণ করে। মাংস বিলিয়ে দেওয়ার আদেশ এই প্রমাণ করে যে ধনীদের সম্পদে অসহায়দের অধিকার আছে। কোরবানি মুসলমানদের শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব না বলে একে শুদ্ধ জীবন গঠনের অনুশীলন বলা উচিত। যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করি। তাওহীদ, একনিষ্ঠতা ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এইটা। দরিদ্র জনগণের দুঃখের ভাগীদার হয়ে আল্লাহের সন্তুষ্টি অর্জনই কোরবানির লক্ষ্য হওয়া উচিত। কোনরকম নিজেকে জাহির করা কিংবা ফায়দা হাসিল এর মনোভাব স্থান লাভ করতে পারবে না। পবিত্র কোরানের সুরা আল -আমের ১৬২ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেছেন ‘বলুন হে নবী (সাঃ) আমার সালাত আমার কোরবানি আমার জীবন আমার মৃত্যু, শুধুমাত্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক মহান রাব্বুল আলামিনের জন্যই”।

করোনা কালে খাদ্য এবং চিকিৎসার জন্য যেভাবে হাহাকার দেখা গিয়েছে বন্যাতেও দেখা যাবে। রাষ্ট্রের উচিত ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, মানব পাচারকারী ও জুয়াড়ি হতে জনগণের সম্পদ উদ্ধার করে দুঃস্থ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া।

মুখ ডুবিযে খাওয়া লোকেরা দেশটার রস খেয়ে ঈদে খাবে বড় বড় গরু, তাদের জন্য প্রতিদিনই ঈদ। কিন্তু আজ এই ঈদ মহামারী ও বন্যার মাঝে খাওয়ার জন্য নিজের ইজ্জত আব্রু বাঁচানোর জন্য ও একটু আশ্রয়স্থলের জন্য যারা সংগ্রামে লিপ্ত তাদের ত্যাগ ও তিতীক্ষার ঈদ । ঈদ আসলে এখনো সাম্য আনতে পারেনি বৈষম্যও কমাতে পারিনি কিন্তু নেতারা ভাষণ দিবেন সাম্যের। সুদখোর, ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, মানব পাচারকারী ও জুয়াড়িরা আজ টাকা দেশে আলমারি ভর্তি করে আবার বিদেশে পাচার করেছে। সিঙ্গাপুর মালেশিয়া যেমন বাড়ি করেছে ব্যবসা পেতেছে তেমনি কানাডা আমেরিকাসহ ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশেও তাই করেছে। এই মহামারীতে এই বন্যায় এইসব মানুষ কতটুকু সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, মোটেও আসেনি। এসেছে সৎ মানবিক দরদি লোকেরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় যারা এগিয়ে আসেনি তারাই নামের সাথে জনদরদি ও সমাজসেবক লিখে কিংবা লিখবে ভোটের সময় ও অন্য সময়।

কিছু কিছু এলাকায় কোরবানি আসলে মেয়ে পক্ষ থেকে জামাই বাড়িতে গরু ছাগল পাঠাইতে হয়। এই মহামারী সময় এইটা বন্ধ করা দরকার। এইসব নিয়মের ফলে প্রায় মেয়ের পরিবারকে হিমশিম খেতে হয়। অনেক এলাকায় মেয়ের বিয়ের সময় একবার কষ্ট করে দিয়ে দেয় যেটা যৌতুকই। ঈদ আসলে আমরা আনন্দিত হই, আরেক পক্ষ আতঙ্কিত হয়।

দয়া করে এসব বন্ধ করুণ লজ্জাজনক কাজ। কোরবানি ওয়াজিব হলে নিজের টাকায় পশু খরিদ করে আল্লাহর নামে কোরবানি করুণ। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, গরিব দুঃস্থ, এতিম ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাধ্যমত খোঁজ খবর রাখতে চেষ্টা করি।

করোনা যুদ্ধে আমারও মৃত্যু হতে পারে–তাই ক্ষমাপ্রার্থী

একসময় যুদ্ধ হতো ঢাল, তলোয়ার, বল্লম, আর আগুনের গোল্লা নিক্ষেপ করে। এরপর মানুষ বারুদ তৈরি করা শিখলো। তারপর শিখলো বিশালাকৃতির কামান তৈরি করা। সম্মুখ যুদ্ধে চলতো ঢাল- তলোয়ারের ঝনঝনানি, আর বল্লমের খোঁচা। দূর থেকে নিক্ষেপ করা হতো কামানের গোলা। কামানগুলো ছিল তখনকার সময়ের দা-কুড়াল বল্লম বানানো কামার দিয়ে। সেই কামানগুলো দেখতে হুবহু কলাগাছের মতো দেখা যেতো। এসব যুদ্ধ কেবলি মোগল সাম্রাজ্যের সময়ই বেশি ছিল।

এরপর শুরু হলো মানুষ মারার অত্যাধুনিক অস্ত্র-সস্ত্রের আবিস্কার। রাইফেল, এলএমজি, পিস্তল, ট্রাঙ্ক ও আকাশ থেকে আকাশে, ভূমি থেকে ভূমিতে মারার স্কাট ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানবিধ্বংসী কামান-সহ সামরিক যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ। এখনো যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য বিশ্বের অনেক দেশ অনেকরকম মারণাস্ত্র তৈরি করার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে।

পৃথিবীর অনেক দেশই নিজ নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য গোলাবারুদ, কামান, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ অনেককিছু প্রস্তুত করে রেখেছে। যাতে অন্য দেশের আক্রমণ থেকে নিজের দেশের মানুষ এবং দেশের সম্পদ তথা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায়। এতে কিন্তু অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়। জান-মাল, অর্থনীতি-সহ কয়েকটা দেশ কয়েক দিনের মধ্যেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তবুও ক্ষমতার লড়াই থেমে নেই। প্রাচীনকাল থেকে এ-পর্যন্ত লড়াই চলছেই চলছে। সভ্যতার শুরু থেকে যেসব যুদ্ধ এই পৃথিবীতে সংঘটিত হয়েছে, সব যুদ্ধই সৃষ্টি হয়েছে কোনো-না-কোনও মানুষের হিংসাত্মক মনোভাব থেকে।

তারপরও বলা যায় যে, মহান স্রষ্টার এই পৃথিবীতে যা-কিছু ঘটে; সেই ঘটনায় স্রষ্টার ইশারা ইঙ্গিতও কিছু-না-কিছু থাকে। কথায় আছে, “মহান স্রষ্টার হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না।” তা-ই যদি হয়, তাহলে মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারা ছাড়া মানুষের একক মতে কিছুতেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হতে পারেনি। নিশ্চয়ই মহান সৃষ্টিকর্তা নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা যুদ্ধগুলোই এযাবতকাল পর্যন্ত এই পৃথিবীতে সংঘটিত হয়েছিল। যেহেতু মহান সৃষ্টিকর্তার হুকুম ছাড়া আলো-বাতাস-সহ সবই অচল। সচল করার কারোর সাধ্য নেই।

ইদানিংকালে সারাবিশ্বে দেখা দিয়েছে এক প্রাণঘাতী যুদ্ধ। এই যুদ্ধ মনে হয় ঘটে যাওয়া সেসব যুদ্ধ থেকে খুবই ভয়াবহ এবং নির্মম ভয়ংকর হতে যাচ্ছে। মনে হয় মহান স্রষ্টা সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করার পরেই এই যুদ্ধ সংঘটিত হবার দিনতারিখ নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তাই পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে বিশ্বে সংঘটিত হওয়া সব যুদ্ধের পর এই যুদ্ধটা শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের শেষদিকে। মানুষে এই যুদ্ধটার নাম দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। বর্তমান যুগে এই যুদ্ধের ভাব-নমুনা দেখে মনে হয় এই যুদ্ধটা মহান সৃষ্টিকর্তা নিজেই যেন পরিচালনা করছেন। তাই এই যুদ্ধে কোনও সৈনিক বা সৈন্য নেই। এই যুদ্ধের যোদ্ধা চোখে দেখা যায় না। এই যুদ্ধে কোনও অস্ত্র-সস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না। যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ, ট্যাংক, কামান, স্কাট ক্ষেপণাস্ত্র, রাইফেল, পিস্তল কিছুরই দরকার হচ্ছে না। যুদ্ধের যোদ্ধাও শুধু একজনই। যাঁর নাম করোনাভাইরাস। এটি দেখা দিয়েছে একরকম প্রাণঘাতী রোগের রূপধারণ করে। এই রোগের নাম নভেল কোরনাভাইরাস, সংক্ষেপে কোভিড-১৯।

সভ্যতার শুরু থেকে যেসব যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেসব যুদ্ধে কয়েকটা দেশ পক্ষে বিপক্ষে থাকতো। একদেশ অন্য দেশকে আক্রমণ করতো। আবার এক দেশ আরেক দেশকে অস্ত্র-সস্ত্র-সহ বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করতো। কিন্তু এই করোনা যুদ্ধে কোনও পক্ষ বিপক্ষ নেই। এটি গণচীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে আবির্ভাব হয়ে আস্তে আস্তে সারাবিশ্বকে একাই আক্রমণ করে ফেলেছে।

এই যুদ্ধে সারাবিশ্বে ২০ জুলাই, ২০২০ইং এপর্যন্ত–
আহত সংখ্যা; ১,৪৬,০৮,৫১৭ জন।
যুদ্ধাহত হয়ে সুস্থ সংখ্যা; ৮২,০১,৫১৬ জন।
যুদ্ধে মৃত্যু সংখ্যা; ৬,০৮,৪৮৭ জন।

এই যুদ্ধে বাংলাদেশে ২০জুলাই, ২০২০ইং এপর্যন্ত–
আহত সংখ্যা; ২,০৭,৪৫৩ জন
যুদ্ধাহত হয়ে সুস্থ সংখ্যা; ১,১৩,৫৫৬ জন।
যুদ্ধে মৃত্যু সংখ্যা; ২,৬৬৮ জন।

এতো আহত নিহত হবার পরও এই যুদ্ধ এখনো বিরামহীনভাবে আমাদের দেশ-সহ সারা পৃথিবীতে আক্রমণ করা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আহত নিহত হচ্ছেই। তবুও এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনও বিজ্ঞানী এই করোনা যুদ্ধ প্রতিহত করার মতো কোনও অস্ত্র, গোলাবারুদ বা ভ্যাক্সিন তৈরি করতে পারেনি। আর পারবে বলেও তেমন কোনও আবাস পাওয়া যাচ্ছে না।

এর কারণ বলতে মনে হয়, মহান সৃষ্টিকর্তা মানবজাতির উপর বড়ই ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তিনি এই পৃথিবীতে জীবের সেরা জীব হিসেবে মানুষকে সৃষ্টির পর থেকে কিছুতেই বশ করতে পারছে না। সভ্যতার শুরু থেকে মানবজাতি দিনদিন অসভ্য উশৃংখল হয়ে দানবে রুপান্তরিত হচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীতে জীবের সেরা মানব যা করছে, বনের পশুজাত প্রাণীরাও তা করছে না। বনের পশুজাত প্রাণীগুলো যা করে, তাও একটু ভেবেচিন্তে মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণে রেখে করে। অথচ জীবের সেরা মানুষগুলো যে-কোনো কাজ করার আগে মহান সৃষ্টিকর্তাকে একটু স্মরণ করে না, ভাবেও না। তিনি যে মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান, তা এই পৃথিবীর মানুষগুলো বুঝেও বুঝে না।

তিনি মহান সৃষ্টিকর্তা জীবের জন্য গাছে দিয়েছেন ফল, নদীতে দিয়েছেন জল। মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারায় মুহূর্তে এই পৃথিবী লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। যেমন– সুনামি, ভূকম্পন, ঝড়তুফান, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা। এগুলো স্বয়ং মহান সৃষ্টিকর্তারই ক্ষমতার প্রমাণস্বরূপ। তাই চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস, গ্রহ-নক্ষত্র সবসময়ই মহান সৃষ্টিকর্তার মহিমা কীর্তন করে এবং তাঁর আদেশনির্দেশাদি মেনে পৃথিবী সৃষ্টি থেকে এপর্যন্ত জীবের পাপপুণ্যের হিসাব না করে সবার জন্য সমানভাবে বিতরণ বিচরণ করে যাচ্ছে।

আর আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি জীবের সেরা উপাধি পেয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার আদেশনির্দেশাদি মেনে চলা তো দূরের কথা, আমরা সবসময়ই একে অপরের ক্ষতিসাধন করছি। হিংসা করছি, অহংকার করছি। একে মারছি, ওঁকে মারছি। তিনি যে একজন অদৃশ্য শক্তি হয়ে আমাদের সাথে সবসময়ই আছেন, তা-ও আমরা ভুলেও মনে করি না। আমরা মানুষ হয়ে মানুষের ক্ষতি করার জন্য সবসময় লিপ্ত থাকি। নিজের স্বার্থের জন্য নিজের গর্ভধারিণী মা-বাবাকেও হত্যা করে ফেলি।

শুধু তা-ই নয়, নিজের ক্ষমতার পরিচয় দিতে গিয়ে ধর্মীয় উপাসনালয় মসজিদ ভেঙে ফেলি। কেউ মন্দির ভেঙে ফেলি। কেউ ভেঙে ফেলি গির্জা। মানুষ হয়ে মানুষ মারার জন্য তৈরি করি মারণাস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, রাসায়ানিক অস্ত্র। জায়গায় জায়গায় মায়ের জাতি নারীদের করি হেস্ত-নেস্ত। রাস্তাঘাটে মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে করি টানা-টানি। আমরা নিজের আখের গোছানোর জন্য কেউ সাজি ঘুষখোর, কেউ সাজি সুদখোর। ক্ষমতার চেয়ারে বসে করি দুর্নীতি। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য করি কতরকমের কারচুপি। আমরা যেন মহান সৃষ্টিকর্তার চেয়েও বড় বিজ্ঞানী হয়ে গেছি। যুগযুগ ধরে আমরা যেন বেসামাল হয়ে গেছি। আমারা নিজের স্বার্থরক্ষার জন্য পাপে হয়ে গেছি জর্জরিত।

এসব দেখে মনে হয় মহান সৃষ্টিকর্তা আর ঠিক থাকতে পারছিলেন না। তাই তিনি তাঁরই সৃষ্টি সুন্দর পৃথিবীতে এই করোনা যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছেন। হতে পারে এই যুদ্ধই হবে মহান সৃষ্টিকর্তার শেষ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কে বাঁচি আর কে মরি তাঁর কোনও ঠিক নেই। শুনেছি মহান সৃষ্টিকর্তা মানবের জন্ম, বিবাহ, মৃত্যু, আর রিজিক নিজেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই যাঁর যেখানে জন্ম হবার সে সেখানেই জন্ম হচ্ছে। যাঁর যেখানে যাঁর সাথে বিবাহ হবার সেভাবেই হচ্ছে। যাঁর মৃত্যু যেখানে যেভাবে হবার সে সেভাবে সেখানেই মৃত্যুবরণ করছে। যাঁর আহার যেখানে যাঁর উপর বর্ধিত করে রেখেছেন, সে সেভাবেই খাচ্ছে, চলছে।

তাই ভাবি, যদি মহান সৃষ্টিকর্তা এই করোনা যুদ্ধে আমার মৃত্যু নির্ধারণ করে রাখেন, তাহলে তো আমি নিজেও এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করতে পারি। কারণ আমিও একজন গণ্ডমূর্খ, অজ্ঞানী, মহাপাপী। তাই যেকোনো সময় এই করোনা যুদ্ধে আমার মৃত্যু অনিবার্য । সেই সময়টা হয়তো বেশি আর বাকি নেই। কারণ মহান সৃষ্টিকর্তার করোনা যোদ্ধা এখন আমাদের সকলের চোখের আড়ালে আবডালে অনেকের সাথেই ঘোরা-ফেরা করছে।

এই যোদ্ধাকে কারোর চেনার উপায় নেই। কার কাঁধের উপর যে এই প্রাণঘাতী করোনা যোদ্ধা বসে আছে, তা-ও বলা মুশকিল! কোন সময় যে এই প্রাণঘাতী করোনা যোদ্ধা অপরের কাঁধ থেকে উড়ে এসে আমার কাঁধে চড়ে বসে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর এই করোনা যুদ্ধ মনে হয় শীঘ্রই শেষ হচ্ছে না। কবে নাগাদ এই প্রাণঘাতী করোনা যুদ্ধ শেষ হয়, তা একমাত্র যুদ্ধ ঘোষণাকারী মহান সৃষ্টিকর্তাই জানেন।তাই সময় থাকতেই আমি সকলের কাচ্ছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যদি নিজের অজান্তে কারোর মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

আমার কণ্ঠে ইসলাম- সূরাহ ফাতিহা-১

সকলের প্রতি আল্লাহ তা’লার শান্তি ও দয়া বর্ষিত হোক।পরম করুনাময় ও মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু-
ইসলাম শব্দের অর্থ আল্লাহকে এক উপাস্য ও মুহম্মদ কে আল্লাহর রাসূল বলে বিশ্বাস করার মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা।আল্লাহর পরিচয় হচ্ছে আল ইলাহ।এখানে আল শব্দের অর্থ একমাত্র আর ইলাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা।কাজেই আল্লাহ শব্দের অর্থ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।।অন্যদিকে মুহম্মদ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রশংসিত।আর এই প্রশংসিত ব্যক্তি হচ্ছে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূল শব্দের অর্থ হচ্ছে যিনি আল্লাহর বার্তাবাহক আর তার মাধ্যমেই আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে থাকেন।যুগে যুগে আল্লাহ এমন অনেক রাসূল প্রেরন করেছেন যেন তিনি মানুষ ও জিনকে সতর্ক করতে পারেন এবং সঠিক নির্দেশনা পৌঁছাতে পারেন। হযরত মুহ’ম্মদ (সঃ) ঠিক এমনই একজন ব্যক্তি। তার উপর মহান রাব্বুল আ’লামিন আল্লাহ একটি গ্রন্থ নাযিল করেন যার নাম আল কোরআন। এটি এমন একটি গ্রন্থ যেখানে আল্লাহর পরিচয় ও তার সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানুষ ও জীনকে জীবন যাপনের বিষয়ে সকল প্রকার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।আর এই বিষয় নিয়েই আমার আলোচনা চলবে আল্লাহ যদি চান-

সূরাহ ফাতিহা বা উন্মুক্তকরন বা উদ্বোধন। এর শ্রেনী হচ্ছে এটি একটি মাক্কী সূরাহ অর্থাৎ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটাই আল্লাহর রাসূলের উপর আল্লাহর বান্দাদের জন্য নাযিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরাহ। এখানে সাতটি আয়াত বা বাক্য রয়েছে-
পরম করুনাময় ও অসীম মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি-
১- সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহ ও তার অধিবাসীদের প্রতিপালন করেন।
২- তিনি অসীম দয়ালু ও অসীম মেহেরবান।
৩- তিনি বিচার দিবসের মালিক।
৪- আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি আর তোমার কাছেই সাহায্য চাই।
৫- আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করো।
৬- তাদের পথ যাদের প্রতি তোমার দয়া ছিলো।
৭- তাদের নয় যারা তোমার নির্দেশ অমান্য করে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তোমার লানতপ্রাপ্ত।

আমিন অর্থাৎ কবুল করো।

এখানে আলোচ্য বিষয় হলো, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, ভয় করা, সাহায্য চাওয়া এবং সতর্ক হওয়া।
যেমন- আমার খুবই বিপদ আর এমতাবস্থায় আমি এক্কেবারেই অসহায়। আমি এখন মুরুব্বীর কাছে পাঁচ হাজার টাকা ধার চেয়ে বসলাম। মুরুব্বী বললেন, আরে এটা তো দুধভাত। এই নিন টাকা পাঁচ হাজার। আমার হৃদয়ে যেন প্রাণ ফিরে এলো। আমি বললাম, দাদাভাই আপনার এই কথা আজীবন আমার স্মরণে থাকবে। তারপর আমি বিপদ্মুক্ত হলাম। তারপর থেকে মুরুব্বীকে দেখলেই সম্মানে আমার হৃদয় তার সামনে যেন বিগলিত হয়ে যায় অবস্থা। দেখা মাত্রই সালাম। এটাকে বলা হয় কৃতজ্ঞ ব্যক্তির পরিচয়। আল্লাহ তা’লা যেমন আমাদের আহার দিচ্ছেন, থাকার জন্য জায়গা দিচ্ছেন এবং পরার জন্য পরিচ্ছদ দিচ্ছেন এটাকে বলা হয় বান্দার প্রতি তার রবের অনুগ্রহ। এই জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বলা উচিত আলহা’মদুলিল্লাহ।

আল্লাহ বিচার দিবসের মালিক। এই মুসাফিরি জীবনে আল্লাহ আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন আমরা যদি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আর নাই করি কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার পর কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করে আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে জীবন যাপন করি বিচার দিবসে তিনি আমাদের এ সবকিছুর জন্য প্রতিফল দান করবেন। হতে পারে সেটা আমাদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি যার ভার তোলা অসম্ভব কিংবা একটি সুন্দর জান্নাত যা আমাদের পৃথিবী থেকেও অনেক বড় আর যার মালিক হবো আমরা প্রত্যেকে আর আল্লাহই সেটা দান করবেন। কাজেই উত্তম প্রতিফল পাওয়ার জন্য আল্লাহকে ভয় করে তার নির্দেশনাকে সামনে রেখে পথ চলতে হবে। এটা এই জন্য যে মানুষের মনে দয়া যেমন আছে, আছে জুলুমও। এখান আপনি অন্যের প্রতি দয়া করবেন নাকি জুলুম করবেন এটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু যদি আল্লাহকে ভয় করেন হাজার চাইলেও আপনি কিছুতেই জুলুম করতে পারবেন না অন্যের ওপর।

এখন শান্তি কে আছে যে না চায়? প্রত্যেকেই শান্তি চায় আর একটি চিরস্থায়ী জীবন চায়। এর জন্য উচিৎ হচ্ছে এমন একটি নীতিকে সামনে রেখে জীবন যাপন করা যা আমাদেরকে সেই শান্তিময় চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবে। আর সেটা হচ্ছে আল কোরআনকে সামনে রেখে জীবন যাপন করা আমাদের প্রত্যেকেরই অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের জন্য সব বিধিবিধান এখানে বলে দিয়েছেন যা অনুসরণ করলে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন প্রতিটি বিপদ-আপদে, জীবনকে করবেন সুন্দর ও সহজ। এর বিস্তারিত সামনে আসবে আল্লাহ যদি চান।

সতর্ক হওয়ার অর্থ হচ্ছে এমন অনেক মানুষ আছে যাদেরকে আল্লাহ তার তার যোগ্যতা মোতাবেক জীবনোপকরন দান করেছেন এবং তাদের অনেকে আছে যারা আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে অর্থাৎ আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় পাশাপাশি এমন একজনের কাছে গিয়েও চায় যে নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে পারে না। যেমন মুরুব্বীকে গিয়ে বললাম আল্লাহ যেমন আমার রব আপনিও আমার রব। আল্লাহ যেমন আমাকে সাহায্য করে আপনিও আমাকে সাহায্য করেন অথচ মুরুব্বী নিজেই আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল। এটাকে বলা হয় শরীক করা যাকে শিরক নামেও অভিহিত করা হয়। আবার এমনও অনেক ব্যক্তি আছেন যারা নামাজ পড়েন কিন্তু অন্যের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকেন কিংবা অন্যকে কষ্ট দেন। এই সকল ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা’লা অভিশাপ দিয়েছেন এবং এদেরকেই আল্লাহ তা’লা পথভ্রষ্ট করেন। তাই সম্পূর্ণ আল কোরআনকে সামনে রেখেই জীবনে পথ চলতে হবে।

আশা করি সুরাহ ফাতিহার ব্যাখ্যার ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই কারো। থাকলে মন্তব্যে জানান চেষ্টা করবো নিজের ভুল সংশোধন করতে নতুবা সঠিকটা জানিয়ে দিতে।

আল্লাহ, আমাকে ও আপনাদেরকে সঠিক জ্ঞান দান করুক।

পরীক্ষায় ভালো ফল ও নৈতিকমূল্যবোধে মা‘য়ের ভূমিকা

মায়ের শিক্ষাই হলো শিশুর আগামীর আসল বুনিয়াদ। আমি আপনি সবাই আমরা সমাজের সচেতন মা বাবা। নৈতিকতার বীজ ঘর হতে বপন করতে হবে। তবে আজকাল কিছু কিছু মা ভারতীয় টিভি চ্যানেল এবং নেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাচ্চা পরে থাকে প্রাইভেট টিচার কিংবা কোন কোচিং সেন্টারে। মা এতে স্বস্তিতে থাকে যে সন্তান পড়ছে। আসলে সে কি পড়ছে, পড়ার ধরনটা কি, কোন কিছুই তদারকি করে না। একজন আদর্শ মানবিক গুণ সম্পূর্ণ মা‘য়ের কারণে একজন সন্তান ভালো জীবন গড়তে পারে। আপনার সন্তানকে সত্য ন্যায়, মায়া মমতা, মননশীল সৃজনশীল ও মানবিক হওয়া মা হিসাবে আপনিই শিখাতে পারবেন। ঘুম হতে সকালে ভালোবাসা মিশ্রিত কণ্ঠে ডেকে তুলে দিন। এবং পড়তে বসতে বলুন। কি পড়ছে আপনি পাশে বসে তদারকি করুণ। স্কুলে শ্রেণী শিক্ষকের পড়ায় মনোযোগ দিতে বলবেন। চলার পথে সালাম দিতে বলবেন। কেউ কিছু দিলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলবেন। সন্ধ্যার পর পাশে নিয়ে পড়াতে বসবেন। অনেক মা টিভি দেখে, না হয় ঘুম যায়, নিজেকে পাল্টান দয়া করে। তবে পড়া হতে হবে আনন্দময়। সন্তানের সবচেয়ে ভালো বন্ধুই হলো পরিবারের মানুষ। আর আমরা তাদের হাত পা বেঁধে মেরে মনে ভয় এবং ঘৃণা ঢুকিয়ে দিই। যা বর্তমানে খুব ভয়ংকর ফল বয়ে আনছে।

রাতেও তদারকি করতে ভুলবেন না পড়াশোনার। পড়ার ভিতর বিরতি দিবেন। মজার কোন গল্প করবেন। যা পারেন খেতে দিবেন। পড়া শেষে লিখতে বলবেন। একটা অংক চার/পাঁচ বার করতে বলবেন। স্কুলে কি পড়ালো, কিভাবে পড়ালো আপনিও দেখবেন। আজকের পড়া ২/৩ দিন পর আবার পুনরায় জিজ্ঞাসা করবেন। মনে রাখবেন আমরা গরীব। আর গরীবের জন্য শিক্ষাই হলো সম্পদ। এবং আপনার সন্তান আপনার সম্পত্তি। আমাদের জন্য মা বাবা কিছু না করতে পারলেও আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমাদের সন্তানের জন্য হয় অগাধ টাকা পয়সা রেখে যেতে হবে না হয় তাদের শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষিত হলে খেয়ে পরে চলার রাস্তা খোঁজ করে নিবে তারা। কারণ যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ। খেলাধুলার সুযোগ দিবেন, রাজনীতি নামক ক্যান্সার হতে “দূরে” রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কলেজ ভার্সিটিতে গিয়ে রাজনীতি করুক। পড়ার ব্যাপারে স্কুলের রুটিন এর পাশাপাশি বাড়ির জন্য রুটিন ঠিক করে দিন। সন্তান কৃষক হবে না গবেষক হবে সময় বলে দিবে আপনি চাপিয়ে দিবেন না। পড়া রিড়িং পড়তে উৎসাহিত করবেন। শুধু সিলেবাস নিয়ে পড়ে থাকবেন না। বাহিরের জগত সম্পর্কে ধারণা দিবেন। সাধারণ জ্ঞান অর্জন করলে সৃজনী চোখ খুলে যাবে। চিন্তার পরিধি বাড়লে পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে অবলীলায়।

একটি আন্তর্জাতিক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ান দৌড়বিদ আবেল মুতাই ফিনিশ লাইন শেষ করার ঠিক কয়েক ফুট আগেই দৌড় বন্ধ করে দিল। তার ধারনা ছিল যে, সে ফিনিশ লাইন শেষ করে ফেলেছে এবং সে জিতে গেছে। আবেলের ঠিক পিছনেই ছিল স্প্যানিশ দৌড়বিদ ইভান ফারনান্দেজ। সে চিৎকার করে আবেল কে বলতে লাগল, “হ্যালো, তুমি ফিনিশ লাইন শেষ করো নাই। তুমি দৌড় চালিয়ে যাও।” আবেল কেনিয়ান হওয়ায় ইভানের ভাষা “স্প্যানিশ” বুঝতে পারছিল না। সে দাঁড়িয়েই রইলো। ইভান এটা বুঝতে পেরে আবেলকে ধাক্কা দিয়ে ফিনিশ লাইন পার করে দিলো। তারপর কেনিয়ান দৌড়বিদ আবেল জিতলো এবং প্রথম হল। প্রতিযোগিতার শেষে এক সাংবাদিক ইভানকে জিজ্ঞাসা করল: তুমি এমনটা করলে কেন? ইভান বলল “আমার স্বপ্ন হল একদিন আমাদের একটি কমিউনিটি লাইফ থাকবে।” সাংবাদিকঃ তাতো বুঝলাম, কিন্তু ঐ কেনিয়ান আবেলকে কেন জিতিয়ে দিলে? ইভান আবারো বলল, আমি তো তাকে জিতিয়ে দেইনি। সেতো জিতেই যাচ্ছিল। সাংবাদিকঃ তুমি নিজেই তো জিততে পারতে, কারণ তুমি তো ঠিক তার পরেই ছিলে? ইভানঃ সাংবাদিকের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল। দেখ, সত্যিই আমি জিততে পারতাম। কিন্তু জেতার মুল্য কি হতে পারত? কি সম্মান আমি পেতাম। হয়ত একটি মেডেল পেতাম। তা দিয়ে আমি কি করতাম? আর এ রকম জেতায় আমার মা’ই বা আমাকে কি ভাবত!

মানুষের মূল্যবোধ বংশানুক্রমিক স্থানান্তর হয়। ইভান তার মায়ের কাছ যে মূল্যবোধ শিখে ছিলো তা হলো আরেকজনকে ঠকিয়ে জিতে না আসে। আর আমরা আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দিচ্ছি যে কোন মূল্যে জিতে আসো। মনে রাখবেন ভালো কাজ করলে যেমন মানুষ বলে এইটা অমুকের সন্তান এবং খারাপ কাজ করলে মানুষ বলে এইটা অমুকের সন্তান।

(বিঃদ্রঃ আমার মেয়ে দুইটা। বড় মেয়ে সিক্সে পড়ে। ক্লাস প্রাইভেট ফেনী উপজেলায় দ্বিতীয় স্থানে হয়েছে। এবং সরকারি বৃত্তি পেয়েছে। ছোট মেয়ে ওয়ানে। আমি করৈয়া হাইস্কুলের ৯১ ব্যাচের ছাত্র। সেটা স্কুলের সোনালি অতীত। )

কখনো থামে না জীবন

করোনার এই দুঃসময়ে
নানামুখী সংকটে মানুষ;
ভাটা সবার আয় ব্যয়ে
দিন মজুরের নেই হুশ।

শুধু নয়, শহর ও বন্দর
কাবু গ্রামীণ অর্থ নীতি;
সবার চোখে মুখে যেন
চাপা আতঙ্ক ভয়ভীতি।

গ্রাম এমনিতেই নির্জন
সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়ায়;
এ নির্জনতা যেন এখন
আরও মূর্ত, করোনায়।

তবু জীবিকার সন্ধানেই
মানুষের চলছে ছুটাছুটি;
কখনো থামে না জীবন
খুঁজেই নেয় তার পথটি।

June 28, 2020

আমি তুমি সে

আগে যেমন বৃষ্টি অথবা রোদে
ছাতা নিয়ে বের হতে;
এখন মুখে পরো মাস্ক, গ্লাবস্
পরে নিয়ো দুই হাতে।

হাঁচি কাশি, দিয়ো না কখনো
মুখেতে রুমাল ছাড়া;
তুমিও বাঁচাতে পারবে মানুষ
তোমার পাশে যারা।

পরস্পরে দূরত্ব রাখো বজায়
খুবই এখন জরুরী;
না হয় কটা দিন রহিলে দূরে
চলছে যে মহামারি।

কর্ম শেষে বাড়ি ফিরবে যখন
সাবানে হাত ধোবে;
মানলে স্বাস্থ্যবিধি, তুমি আমি
সে, সবাই বাঁচবে।

(সঙ্গনিরোধ কালের স্বাস্থ্যবিধি)
June 23,2020

কবরস্থানে একদিন (অভিজ্ঞতা, ভাবনা)

আজকে বিকেলের কথা, মন টা কেমন অস্থির লাগছে, কতদিন কলেজ যায় না, যায়না কোথাও ঘুরতে। সবুজের উপর দু-চোখ ডেবডেব করে ফেলিনি তা-ও তো অনেক দিন হলো। এইসব ভাবছি, তখনই

আসরে আজান হলো, সৃষ্টিকর্তা ডাকছে, কল্যানের দিকে। ডাকছে,নামাজের দিকে।
উনার সৃষ্ট এই মায়াবী পৃথিবীতে আছি অথচ দয়াময় প্রভুর ডাকে সাড়া না দিয়ে ঘরে বসে থাকতে পারলাম না।

পাড়ার মসজিদে গিয়ে জামাতের সহিত ফরজ নামাজ টা আদায় করে। সবুজ দেখতে দেখতে চলে আসলাম চিরন্তন থাকার বাড়ি কবরস্থানে। সবসময়ই কবরস্থান টা আমাকে খুবই কাছে ডাকে, আমি সেথায় গেলেই অদ্ভুত এক ভালোলাগা চলে আসে মনের গহীনে।

এই ভালো লাগার এবং কাছে টানার পিছনের কারণ হিসেবে যদি বলি, তাহলে বলতে হয়।
আমার মমতাময়ী ‘মা’ এই কবরস্থানেরই এক কোনে শুয়ে আছেন।
হয়তোবা এই জন্যেই আপনের চেয়েও আপন মনে হয় কবরস্থানের বালুকণা, দূর্লব লতাপাতা সহ সব কিছুই।

আমার মা যখন প্রিয় সংসার ছেড়ে, মায়াবী পৃথিবী থেকে ইহলোকে রওয়ানা হলেন, তখন আমার বয়স আট কি নয়। পড়াশোনায় বলতে হয় তৃতীয় শ্রেণির অবুঝ এক বালক আমি।

মায়ের ভালোবাসা, মমতাময়ীর আদর, স্নেহময় বৃক্ষছায়া, এইসব বুঝে উঠার আগেই আমার জন্মদাত্রী ‘মা’ চলে গেলেন প্রভুর নিকট।

আজ-অব্দি মায়ের ভালোবাসা বলতে যা বুঝাই তা কেনো যেনো বুঝে উঠতে পারি না আমি।
কত শুনি মায়ের ভালোবাসা এমন তেমন, কিন্তু আমি তা কখনো অনুভব করতে পারিনি।

যাইহোক, কবরস্থানে এসে চলে গেলাম মা যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত সেখানে।
বরাবরের মতো মায়ের কবরে হাতবুলিয়ে দিলাম। মমতাময়ী কে আদর করে, সেই ধূলিমাখা হাতে আল্লাহর কাছে মায়ের পক্ষ হতে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করলাম। দয়াময়ের কাছে মন খুলে বলতে লাগলাম, “রাব্বির হামহুুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সাগিরাহ্”

পরক্ষণেই কান্নায় ভেজা চোখে, এসে বসলাম কবরস্থানের এক দেয়ালে যেখানে প্রায়ই আমি বসি আর ভাবি নানান কিছু।
আজকে আর ভাবতে কিছু মন সায় দিচ্ছে না। তাই মোবাইল টা হাতে নিয়ে আল্লাহর প্রেরিত কালামুল্লাহ শরীফের ফযিলতময় সূরা ইয়াসিন চালিয়ে দিলাম। শ্রেষ্ঠ দের মধ্যে অন্যতম তেলাওয়াতে কোরআনের ক্বারি আহমদ সুদাইসির মধুর কণ্ঠে চলছে সূরাহ ইয়াসিন আর আমি চিন্তা করতে চেষ্টা করছি, দয়াময় প্রভু আমাদের কতো নিয়ামতের দ্বারা পরিচালিত করেন প্রত্যেক টা দিনরাত্রি।

তাইতো, প্রভু সূরা আর- রহমানে বারবার উল্লেখ্য করেছেন –
(ফাবি অ্যাইয়ি আলা’ই রাব্বিকুমা তুক্কাজিবান।)
অর্থ-তোমরা উভয়ই তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন নিয়ামত কে অস্বীকার করবে?

করোনায় সবচাইতে লাভবান দেশ ভিয়েতনাম

২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসে কুপোকাত হয়ে গিয়েছিল ভিয়েতনাম। এবার যখন ভিয়েতনামে করোনা ছড়ালো, পূর্বাভিজ্ঞতা থাকায় তারা সে করোনা খুব ইফেশিয়েন্টলি হ্যান্ডল করলো। ফলাফল করোনায় ভিয়েতনামে একটা লোকও মারা যায়নি। ভিয়েতনাম একদিনের জন্যও তাদের দেশের কলকারখানা বন্ধ করেনি। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে তারা চলে গিয়েছে সেই ২০১৯ এর নভেম্বরেই। এদিকে করোনায় ধাক্কা খাওয়ার পর চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ও মার্কিনীদের তৎপরতা দেখে নড়েচড়ে বসেছে জার্মানীও।

জাপান অলরেডী তাদের কারখানাগুলো চায়না থেকে সরাতে ২৩.৫ বিলিয়ন ইউয়ানের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত পশ্চিমারা। Trump যদি আবারো ক্ষমতায় আসে তবে চীনের সাথে মার্কীনীদের দ্বন্দ্ব আরো বাড়বে। চীনের উপর আরোপিত শুল্কারোপের সময় আরো লম্বা হবে। এসব বিবেচনায় জাপান, নেদারল্যান্ড এবং জার্মানী ইতোমধ্যে তাদের চায়না থেকে কারখানা সরিয়ে সেগুলো প্রতিস্থাপনের বিকল্প খোঁজা শুরু করেছে। এবং তাদের দৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো ভিয়েতনাম। ইতোমধ্যে জাপানের টয়োটা, মার্কিন প্যানাসনিকসহ ২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রায় কনফার্ম করেই দিয়েছে তাদের পরবর্তী গন্তব্য ভিয়েতনাম। শ্রমিকের সহজলভ্যতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, চায়নার বর্ডার, স্মুথ কাস্টম প্রসেস থাকার কারণে ভিয়েতনামই হচ্ছে চায়নার অন্যতম বিকল্প।

কিন্তু আমরা কী করব? আমাদের চার দশকের বেশি বয়স্ক এই পোশাক শিল্প কী এই বিদেশী ব্র্যান্ডের দয়ায় টিকে থাকার চেষ্টা করবে? আমাদের স্কিলড ওয়ার্কার আছে, আছে উপযুক্ত প্রযুক্তিও, আছে স্বনামধন্য ফ্যাশন ডিজাইনার। সবকিছু থাকার পরেও চার দশকে আমাদের কোন আন্তর্জাতিক ব্র‍্যান্ড নেই। এমনকি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কোন প্রচেষ্টাও নেই। বিদেশী ব্র্যান্ডের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর তিন কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা টিকে থাকতে পারেনা। এখনই যদি এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য বিকল্প চিন্তা না করা হয় তবে অচিরেই এই শিল্প এদেশ থেকে ভ্যানিশ হবে। কারণ পাকিস্তান, কম্বোডিয়া আর মায়ানমারের মত দেশগুলো এই শিল্পে আমাদের ঘাড়ের উপর ইতিমধ্যে প্রতিযোগীতার নি:শ্বাস ফেলছে।

এত এত কারখানা ভিয়েতনামে যাওয়ার ঘোষণাতেও ভিয়েতনাম হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারা মনোযোগ দিচ্ছে তাদের বর্তমান প্রধান আয়ের উৎস পোশাক শিল্পের দিকে। তারা দেখছে বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো কোটি কোটি ডলারের প্রোডাক্ট নিয়ে গিয়ে পেমেন্ট না দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করছে। ফলে তারা আর পেমেন্ট পাচ্ছেনা। এথেকে বুঝতে পেরেছে আসলে অনন্তকাল ধরে অন্য ব্র্যান্ডের অর্ডারকৃত পোশাক বানিয়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবেনা। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিজেদের ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে হবে।তাই ভিয়েতনাম ঘোষণা দিয়েছে আগামী ১০ বছরে তারা অন্তত ২০টি আন্তর্জাতিক ব্র‍্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। এবং এই ব্র‍্যান্ডগুলো প্রতিষ্ঠায় যেখানে যে ধরণের সহায়তা দেয়া দরকার ভিয়েতনাম শিল্পমন্ত্রণালয় তার সবধরণের সহায়তা করবে। ভিয়েতনামীরা বীরের জাতি। দীর্ঘ এক দশক মার্কিনীদের সাথে লড়াই করে তারা তাদের দেশ মুক্ত করেছে। গত শতকে মার্কিনীরা একমাত্র ভিয়েতনামীদের কাছেই মুখোমুখি যুদ্ধে পরাস্ত হয়েছে। অতএব ভিয়েতনাম দশ বছরে অন্তত ১০ টা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বে। আর আমরা ঘোষণা দিয়েছি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের । প্রশ্ন হল কোথায় গেল জনগণের রক্ত পানি করা প্রণোদনা । কোথায় গেল শ্রমিকের লাঞ্চনা গঞ্জনা ।

সূত্রঃ LinkedIn

ছবিঃ ন্যাট।