বিভাগের আর্কাইভঃ অনুবাদ

মূল কবিতা : পাবলো নেরুদা

21315

আমার অত্যন্ত প্রিয় কবি পাবলো নেরুদার আজ একশো সতেরোতম জন্মদিন। এই বছরটি হল ওঁর নোবেল পুরস্কার লাভের পঞ্চাশতম বছর। তাঁর একটি কবিতার অনুবাদ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন …

অনুবাদ : রিয়া চক্রবর্তী

বেশি দূর যেওনা কখনো, এক দিনের জন্যেও না।
কারণ …
কারণ, আমি জানি না কিভাবে বলবো,
এক একটি দিন কতখানি দীর্ঘ।
তবুও আমি নিবিড়ভাবে অপেক্ষায় থাকবো তোমার,
সব ট্রেন একে একে ঘুমোতে চলে গেলে,
যেমন নির্জনে থাকে একটি স্টেশন।

কখনো ছেড়ে যেওনা, এক ঘন্টার জন্যেও না,
কারণ
বিন্দু বিন্দু তীব্র যন্ত্রণা তখন মুহূর্তেই নদী হয়ে যাবে
ঘরছাড়া ধোঁয়ারা অবিরাম ঘর খুঁজতে খুঁজতে
আমার ভেতরে ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ করে দেবে হারানো হৃদয়।

সমুদ্রের ধারে হাঁটার সময় ছায়াচিত্রের মতো মিলিয়ে যেও না কখনো
তোমার চোখের পাতা যেন শূন্যতায় কেঁপে না ওঠে
এক মুহূর্তের জন্যেও ছেড়ে যেও না, প্রিয়তমা আমার।

কারণ ঠিক সেই মুহূর্তেই হয়ত অনেক দূরে হারিয়ে যাবে তুমি
আর আমি উন্মাদের মতো সমস্ত পৃথিবী উল্টেপাল্টে,
আর্তনাদ করে বিভ্রান্তের মতো,প্রশ্ন করবো,
তুমি কি আসবে?
মৃত্যুর কাছে এইভাবে রেখে যাবে আমায়?

তিনটি পুরাতন কবিতা

বিবর্তন

তবুও বাজিয়েই যাচ্ছ মৃত্যুঘন্টা
হাঘরে মানুষের ডাক
মাছিদের ঢেউ ভেঙ্গে ছুটে চলা নিরন্তর
ওপারে অপেক্ষায় জান্নাতি হুর
এপারে একটা বিষণ্ণ কাক
কর্ষিত ঠোঁটে ডাকছে
কা – কা – কা – কা
সিঁড়ি বেয়ে উঠছে স্মৃতির বালক
বিচিত্র সব নাচন – কোদন
শেষে জানা গেল
মৃত্যু একটা পটপরিবর্তনের নাম।

.
চিৎকার

এ আমার মাটির কসম,
জলবন্দি না রেখে
ধুলোয় ছড়িযে দাও বীজ।
আমি তো ভাতের কাঙাল নই
সবুজ ধরিত্রীর রাখালগিরি করি।
শুধু জন্মের অধিকার দাও
কিছু চিহ্ন রেখে যাব
কলমের ফলায় অনরবত চাষে
শিল্পের খোরাক যুগিয়ে যাবো।
সবাই শুনতে পায়না সোনালী দুপুরের ডাক
আমার প্রতি স্নিগ্ধ মাটির সুবাসিত বিশ্বাস রেখ
বিনয়ী ঘাসফুল যেমন নিজেকে বিলিয়ে দেয়
মানুষের চরণধুলার তলে সেখানে আমি নাহয়
সত্যের ঝাণ্ডা উর্ধ্ব হাতে ধরে রাজপথে দাঁড়িয়ে যাবো।
__________________________________

মৃত্যুসুখ

এখানে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে জন্মান্ধ রাত
মৃতরা আলিঙ্গন ভালোবাসে বলেই আঁধারকে করে সঙ্গী
নারীর অধরে দেয়া প্রথম চুম্বনের কথা ভুলে কেউ কেউ
স্বেচ্ছায় বেচে নেয় দীর্ঘতম মৃত্যুযন্ত্রণার স্বাদ।
শূন্যতা যখন গ্রাস করে সন্ধ্যামন্দিরের মঙ্গল প্রদীপ
নিষিদ্ধ হতে হতেই তখন বেদনারা দু’বোন দু’হাত
প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যায় আকাশের ঠিকানায়,
ঝুলে যাওয়া দুপুর বারান্দায় বসে রিলিজ স্লিপে
লিখে রাখে সচিত্র মৃত্যুর ইতিহাস।
এখানে মুখ খুবড়ে পড়ে থাকে জন্মান্ধ রাত
রংবাহারির দুঃসময়ে রৌদ্রলোকে দু’চোখ খোঁজে গুপ্ত ক্ষত
আমরা মানবিক মানুষ নই, ফাল্গুন রাতে
দুর্বিষহ আগুনে পুড়িয়ে দিই মলাটবন্দি সুখ।

পুশকিনের কবিতা অনুবাদ

[পুশকিনের এই কবিতাটা কোথাও যেন উর্দু শায়েরির সঙ্গে মিলে যায়।
আমার খুব প্রিয়। বাংলায় ভাবানুবাদের এক অক্ষম চেষ্টা চালানো হয়েছে]

১.
ভালোবেসেছিলাম তোমাকে। সেই প্রেম মৃত্যু-অস্বীকারী।
কে জানে হয়তো আজও বুকে ছটফট জ্বলছে চিঙ্গারি…..

২.
প্রার্থনা রাখি, কষ্ট পেয়ো না। নিজে থেকে আমি কোনও দিন
বিশ্বাস করো, দিইনি তোমাকে মর্মবেদনা-নদী !
ভালোবেসে গেছি অনুক্ত, চাপা, আশাহীন আর প্রকৃত;
আমার লাজুক অথচ তপ্ত দরদটি আলো দিত।
আমার তো ছিল ঈর্ষা-আবেগ, অনুরাগ বিধি-না-মানা,
ওকে দিয়ো, প্রভু, আর এক পুরুষ এত দূর প্রেম জানা!

[“I loved you, and that love, to die refusing,
May still — who knows ! — be smouldering

in my breast
Pray be not pained — believe me, of my choosing
I’d never have you troubled or distressed.
I loved you mutely, hopelessly and truly,
With shy yet fervent tenderness aglow;
Mine was a jealous passion and unruly …..
May God grant that another will love you so !”]

ক্যারোলিন বিয়ার্ড হুইটলোর আর একটা কবিতা

আমার দাদা হাভার্ডে গেল,
আর বাবা কিনলেন একটা বন্দুক

৯জুলাই
লক্ষ্যভেদের অভ্যেস ছাড়া অন্য কাজে
বন্দুক ব্যবহার করার কথা সেনেটর অস্বীকার করেছিলেন

বিয়ার্ড বলেছিল, গাড়ির মেঝেয় পড়ে থাকা
মেয়েকে নিয়ে সে জায়গাটা ছেড়ে চলে যায়

এক শ্বেতাঙ্গ পরিবার ওদের অনুসরণ করে
রাস্তা পর্যন্ত আসে, বিয়ার্ডের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার
প্রস্তাবও দেয়
রাজ্যপুলিশের নিরীক্ষক হাওয়ার্ড সিলার
বলেছিলেন যে, ঘোড়সওয়ার পুলিশ বেমেন্ট
ঘটনাস্থলেই গ্রেপ্তারটা করলে সেটা
ন্যায়সঙ্গত হত না

বিয়ার্ড বলেছে, সে স্ফটিক হ্রদে মাছ ধরছিল
স্ত্রী এথেল আর চোদ্দ বছরের মেয়ে সিনথিয়ার সঙ্গে
এমন সময় এক শ্বেতাঙ্গ তাকে বলে,
“নিজেদের লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে তুমি বাধ্য”

রাজ্যপুলিশ এক অভিজাত মিশিগানবাসীকে
গ্রেপ্তার করেছে যিনি গত ৪ঠা জুলাই
ডেট্রয়েট-এ বসবাসকারী এক নিগ্রো পরিবারকে
বন্দুকের ডগায় “ধার্মিকদের আমোদ-প্রমোদের এলাকা”
ছেড়ে যেতে আদেশ করার দায়ে অভিযুক্ত।
এই ২৮ বছর বয়েসি সেনেটর গত রাতে
গ্রেপ্তার হয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের সার্জেন্ট
জেরাল্ড কোরি আর গোয়েন্দা জ্যাস্পার ব্রায়ারস-এর হাতে

জামিন ধার্য হয়েছে পনেরোশো ডলার

১৫জুলাই
সকালের ডাকে একটা খাম এল
ভেতরে খবরের কাটিংটার ওপর দিয়ে
হিজিবিজি ক’রে লাল কালিতে প্রৌঢ় হাতের লেখা:

…..ওকে অবশ্যই ছেড়ে দেওয়া উচিত। নিষ্পাপ মানুষটা !
ও যথার্থ কাজই করতে চেষ্টা করেছিল —
কাফ্রিদের নিজেদের জায়গায় থামিয়ে রাখার কাজ।
যদি আমাদের এইরকম আরও কিছু লোক থাকত!

এগারো শতাংশ সম্ভাবনা: ক্যারোলিন বিয়ার্ড হুইটলো

তার দুকোটি তিরিশ লক্ষ কারণ আছে
কেন আমি ভিক্ষে করব
চুরি করব
বা ধার করব
তোমার মানুষটাকে
এক রাত বা সারা জীবনের জন্যে

ও-আমার বোন, আমার মেয়ে……

দায়িত্ব বিষয়ে : বড় বেশি, বড্ড তাড়াতাড়ি
খুব অল্প, খুবই দেরিতে/ক্যারোলিন বিয়ার্ড হুইটলো

অজ্ঞতা আর অনিয়ম থেকে তোমার জন্ম হয়েছিল
তোমার জন্ম হয়েছিল অস্বচ্ছন্দে

ঋতুস্রাব এমন এক বিশৃঙ্খল ব্যাপার—–
হিসেব রাখা যায় না
কোনও ছন্দই নেই ওর

আমার মা আমাকে যা বলেছেন
আমিও তাই বলব তোমায়
কিস্যু না
…………………………………………..
(ক্যারোলিন আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদী কবি। অনুবাদ আমার)

ড্যাডি

plath-bioa

Daddy: অনুবাদ কবিতা (প্রথম অংশ)

তিরিশটি বছর যেন
পদ প্রদীপ হয়ে, করেছি বসবাস;
ড্যাডি, তুমি কখনো
কায়ক্লেশে, তবু কত শক্তি শ্বাস।

যদিও হন্তার কারণ
ছিলে ঐ ঈশ্বর প্রদত্ত মর্মর ভাস্কর;
সিলমোহরের মতন
যেন বিপদে পাশে, নখের উপর।

তুমি ছিলে যেন প্রধান
উদ্ভট আটলান্টিক মহা সাগরের;
দিতে যেথা সবুজ ঘ্রাণ
খুঁজি সততই তুমে পুনরুদ্ধারের।

পোলীয় জার্মান যুদ্ধে
যেথায় শুধু অবশিষ্ট জঞ্জাল স্তূপ;
মিশে তুমি রক্ত দাগে.
জিহ্বা চোয়ালে আমার, হই চুপ।

তীঁরের মত হৃদয়ে বিঁধে,
মনে প্রাণে ছিলে তুমি, জার্মানী;
অথচ আমার মন কাঁদে
এতটুকু কই মুখে, অশ্লীল ধ্বনি।

যেন এক ইঞ্জিন চালিত
টাইরল ভিয়েনার বরফ ‘পরে;
কথা বলি ঐ ইহূদীর মত
মিলছিল পূর্ব পুরুষে যাযাবরে।

.
মূল: Sylvia Plath

ড্যাডি

plath-bio

Daddy: অনুবাদ কবিতা
(দ্বিতীয় অংশ)

যখন রাগে হারাতে ধৈর্য
আর মোচ সতত কি ঝরঝরে;
নীল চোখে লাগতো আর্য্য
হতেম কম্পিত, শত ভয় ডরে।

তুমি ছিলে সূর্য নও ঈশ্বর
ফ্যাসিবাদী,তবে নারীর পছন্দ;
নির্দয় ও মুখখানি কঠোর
পাশবিকতায়, তুমি ছিলে অন্ধ।

ড্যাডি, ছবি টানা দেয়ালে
ফাঁটা চিবুক,শুনি তবু পদপাত;
যেন তুমি দুর্ভাগাদের দলে
খন্ডিত এ হৃদয়, কত রক্তপাত।

আমার বয়স হয়ত দশ
তোমাকে করে তারা,সমাহিত;
মরিতে চাহি যখন বিশ
পেতে চাহি হোক সে হাড় যত।

আমি হলেম যেন বস্তা বন্দী
হই একদম তোমারই প্রতিরূপ;
চাহি সবে ভালোবাসায় বাঁধি
চিৎকারে নাকি শুধু সর্প ছোপ।

এ হাতে যদি একজন নিধন
বলে বেড়ায়,রক্তপেরা দুইজন;
কিভাবে সহি সেই অপমান
সাত বর্ষ জুড়ে আমার রক্তপান।

তোমার কালো হৃদয়ের দায়
গ্রামবাসীর আরো অসন্তোষ রাজ
ব্যঙ নৃত্য, কি পদাঘাত হায়
আমি নাকি তুমি, সন্তান জারজ।

.
মূল: Sylvia Plath

অনুবাদ কবিতা: প্রকৃতির নির্মিত ঘর ঐ তারাগুলো যেন

The Stars Are Mansions Built
By Nature’s Hand:

আকাশের ঐ তারাগুলো যেন
সারি সারি এক একটি সুরম্য অট্টালিকা
প্রকৃতির নিজ হাতেরই বানানো কখনো;

যেথা শুধু হাসি গান প্রফুল্লতা
স্বর্গের আবাস স্থল অবিনশ্বর, ফুলের মত
মনোহর কত বিচ্ছুরিত আলো উজ্জ্বলতা।

ভালোবেসে জীবন, এ সৃজন
প্রকৃতির মনে কত যে ব্যাপক কল্পনাসব
আকাশের বুকে দুর্গ কক্ষ, এক উল্লম্ফন।

চলমান সবি প্রকৃতি নির্দেশে
ঋতুরাজ বসন্তে যেন বরাবরই সে দুর্বল
পাখিরা গায় পোকামাকড়ের অসন্তোষে।

যেন তাই প্রকৃতির এ অঙ্কন
ফুলেল ভূতল, রঙ প্রাচুর্য আরো সুরভিত
মুকুলিত, সবুজে পল্লবিত উর্বর বাসস্থান।

.
মূল: William Wordsworth

অভিবাদন হে প্রেমের বেদনা

2021
[কবি পারভীন শাকির]

অভিবাদন তোমায় হে প্রেমের বেদনা
আহমাদ মাগফুর

কখনো থেমেছি কখনো চলেছি
হারিয়েছি কভু পথ
এভাবেই হায় কেটেছে জীবন
সয়ে শত যুলমত।

স্বপনে বা জেগে যেখানেই তার
হয়ে গেছি মুখোমুখি
দুচোখ নামিয়ে চুপচাপ আমি
পাশ কেটে চলে গেছি।

আমার বইয়ের প্রিয় কবিতারা
হারিয়েছে আজ সব
তোমার চোখের, চুলের, রূপের-
স্তুতি করে কলরব।

মনেপড়ে কভু ছিলো কেউ হায়
আজ আমি বড় একা
বিচ্ছেদে আমি পুড়ে গেছি, আর
তুমি হয়ে গেছো তারা।

শূন্যে, যমিনে, কাছে- বহুদূরে
যেখানেই আজ চলি
‘প্রেমের বেদনা’ তোমাকে আমার
শুকরিয়া শুধু বলি।।

মূ ল ঊ র্দু ক বি তা . . .

غمِ عاشقی تیرا شکریہ
پروین شاکر

کبھی رُک گئے کبھی چل دئیے
کبھی چلتے چلتے بھٹک گئے
یونہی عمر ساری گزار دی
یونہی زندگی کے ستم سہے

کبھی نیند میں کبھی ہوش میں
تُو جہاں ملا تجھے دیکھ کر
نہ نظر ملی نہ زباں ہلی
یونہی سر جھکا کے گزر گئے

کبھی زلف پر کبھی چشم پر
کبھی تیرے حسیں وجود پر
جو پسند تھے میری کتاب میں
وہ شعر سارے بکھر گئے

مجھے یاد ہے کبھی ایک تھے
مگر آج ہم ہیں جدا جدا
وہ جدا ہوئے تو سنور گئے
ہم جدا ہوئے تو بکھر گئے

کبھی عرش پر کبھی فرش پر
کبھی اُن کے در کبھی در بدر
غمِ عاشقی تیرا شکریہ
ہم کہاں کہاں سے گزر گئے

আমাদের কিছু জানা ও কিছু অজানা ইতিহাস

কিছু বই আছে যে বইয়ের শব্দগুলো মানুষের কান পর্যন্ত পৌঁছেনি। সেই বইয়ের মলাট হয়তোবা কেউ খুলেও দেখেনি। হতে পারে এমন কোন বই আছে যে বইগুলোর মধ্যে একাত্তরের সেই ইতিহাস হতে শুরু করে অনেক অজানা সত্য আছে যা আমাদের বর্তমান সময়ের মানুষদের অজানাই রয়ে গেছে।
বইটির লেখক। এ. আর. ভূঁইয়া। বইটির নাম ‘গ ণ ত ন্ত্রে র ক ব র’

আমরা ইতিহাসকে কাছ থেকে না দেখলেও দলীয় হাইব্রিড ইতিহাসবিদরা যা লিখে গেছে হতে পারে সে গুলোকে আমরা বেশি প্রাধান্য দেই। কিন্তু তার পরেও কিছু নিরপেক্ষ মানুষ কিছু বই লিখে গেছেন যে বইগুলো সেই সময়ে বাজারে বিক্রি করার মত অবস্থা ছিল না। সেটা সেই সময়ের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও পরিবেশের কারণে তেমনি একটি বই “গণতন্ত্রের কবর” বইটির লেখক সত্বাধিকারী শুধুমাত্র লেখক নিজে। বইটি লেখক তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে রেখেছেন কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীকে উপহার ছাড়া বিক্রির অনুমোদন দেননি। আমার সৌভাগ্য বইটি আমার কাছে আছে।

বাকিটা পড়লে হয়তো আপনারা জানতে পারবেন বুঝতে পারবেন সেই সময়ের প্রেক্ষাপট গুলো কি রকম ছিল। মানুষের মূল্যবান জীবনের পরিবর্তন কিভাবে ঘটেছে। মানুষ কতটা অসহায় ছিল কতটা নির্যাতিত ছিল কতটা দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছে তাদের জীবন।

এই বইয়ের কিছু কিছু লেখা আমি ট্রান্সলেট করে আপনাদের মাঝে পরিবেশন করবো।

গণতন্ত্রের কবর
– এ. আর. ভূঁইয়া।

শেখ মুজিবের শাসনামল।
১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের দায়িত্বভার গ্রহণের পর ২৬ শে মার্চ থেকে শুরু করেন এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্র জমা নেওয়া। লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সব অস্ত্রশস্ত্র জমা দিতে থাকেন কিন্তু একটা শ্রেণি তাদের কোনো অস্ত্রশস্ত্র জমা দেয়নি। রাতের অন্ধকারে প্রকাশ্য দিবালোকে যখন সুযোগ পেয়েছে তখনই তারা ডাকাতি খুন, রাহাজানি এবং ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে ৫ লক্ষ লোককে তারা হত্যা করেছিল।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ আর রহমান তাঁর বইতে এই প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছিলেন এই শ্রেণি কারা? কে তাদের নেতৃত্ব দিত? শেখ মুজিব দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন যুদ্ধের পর একটি নব্য স্বাধীন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সার্বিক অবস্থা খুব শোচনীয় আকার ধারণ করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা এবং তাদের এ দেশীয় দালালচক্র ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ছারখার করেছিল। যুদ্ধে রাস্তাঘাট সবকিছু ধ্বংস হয়েছিল। চারদিকে শুধু হাহাকার আর হাহাকার। বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী, অর্থ, খাদ্য, বস্ত্র সাহায্য আসতে থাকে।

সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য যে সাহায্য প্রয়োজন ছিল তার দ্বিগুণ সাহায্য বাংলাদেশ পায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা কালোবাজারে সেগুলো বিক্রি করে দেয়। তারা নামমাত্র ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে থাকে মানুষ। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অবশেষে মৃত্যুবরণ করে লক্ষাধিক মানুষ। দেশে আইন বলতে কিছু থাকে না। ক্ষমতাশালীরা আইনকে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়। শাসন ব্যবস্থা করুন পরিণতি দেখা যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এদেশ সফরে এসে বলেছিলেন “Bangladesh is a bottomless basket” অর্থাৎ বাংলাদেশ একটা তলাবিহীন ঝুড়ি। এর অর্থ বাংলাদেশকে যতই সাহায্য করা হোক না কেন উপকারে আসবেনা। লুটেরা বাহিনী খেয়ে ফেলবে। শুধু হেনরি কিসিঞ্জার নয় স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ৮ কোটি কম্বল, সাড়ে সাত কোটি মানুষ, আমারটি কোথায়? প্রকৃতপক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনরাই প্রকাশ্যে জনসম্মুখে ত্রাণ সামগ্রী লুট করে ভারতে বিক্রি করে।

এ দেশের গরীব, অসহায় মানুষেরা ঠিকমতো সাহায্য পায়নি, তাদের লুট খুন-ধর্ষণ জালিয়াতির মাত্রা এতটাই সীমালংঘন করেছিল যে স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন “সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি।”

শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল পর্যালোচনা করে দেখা যায় এই বাংলাদেশ, এমনকি বিশ্বের অন্য কোন দেশেও এইরূপ অরাজকতা কখনো সৃষ্টি হয়নি। মানুষ শেখ মুজিবের কাছে কি চেয়েছিল? আর কি পেয়েছিল? যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি, শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি, চিকিৎসার কোনো উন্নতি, হয়নি বাসস্থানের কোন উন্নতি হয়নি, কৃষিকাজে কোন উন্নতি হয়নি, কল-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি।

এমনকি বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় আসার পর গণমাধ্যমকে গলা চেপে ধরা হয়েছিল। মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেনি মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারেনি, মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি।

তাহলে মানুষ কি চেয়েছিল? আর কি পেয়েছিল? কি জন্য ২৫ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এই স্বাধীনতার নামে জাতির সাথে প্রতারণা? এই কি সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসন এই কি সেই ২৫ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশ?

প্রিয় কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কির কবিতা

আজ আন্তর্জাতিক অনুবাদ দিবস। সেই উপলক্ষে আমার বহু আগে প্রকাশিত একটা অনুবাদ কবিতা বন্ধুদের জন্য। আমার অত্যন্ত প্রিয় কবি মায়াকোভস্কির কবিতা “past one o’clock” থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখার চেষ্টা।

Past one o’clock
By Vladimir Mayakovsky (1930)

রাত একটা বেজে গেছে
অনুবাদ : রিয়া চক্রবর্তী।

রাত একটা বেজে গেছে, তুমি হয়তো ঘুমোচ্ছো।
আকাশ গঙ্গার স্রোত বেয়ে নিশাচর পাখির ডানার মতো রাত্রি নামে পৃথিবীর চোখে;
তোমার বুকে যে বিষাদ ঘুমিয়ে আছে-
আকস্মিক বার্তায় তাকে আমি জাগাবো না।
আমার কোন ব্যস্ততা নেই।

যেমন সবাই বলছে ,আমাদের বিচার পর্ব শেষ।
ভালবাসার নৌকা বিষাদ স্রোতে ক্ষতবিক্ষত।
সময় এসেছে আমাদের ছাড়াছাড়ির,
প্রয়োজন নেই অতীতের দুঃখ,
যন্ত্রণা ও ক্ষতগুলো ব্যবচ্ছেদের।
বরং চুপ করে থাকো আর শোন
নিঃশব্দে ঝরে পরা পৃথিবীর রাত।

রাত একটা বেজে গেছে, তুমি হয়তো ঘুমোচ্ছো।
নিশব্দ গভীর রাতে, কারা যেন,
অশান্ত পৃথিবীর বুকে গোপনে কান পাতে;
কে যেন জেগে থেকে কথা বলে ওঠে,আর –
বুকের শেষ প্রেমটুকু ,রাত ছড়াল মহাকাশে!

এমন মায়াবী আলোয়, ইতিহাসের গল্প
শুনতে শুনতে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে;
রাত অনেক হলো, হয়তো তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো।

নিশিভোর


ছবি সংগৃহীত।

আশ্রয় চাই আমি এক আল্লাতে,
বিতাড়িত সেই শয়তান হতে।
করিলাম শুরু, নামে আল্লাহ মহান,
করুণা আর দয়া যার পরম অফুরান।
.
বল হে নবি,
আমি আশ্রয় করি প্রার্থনা প্রভাতের রব কাছে,
এমন কিছু হতে যা অবাঞ্ছিত তার সৃষ্টি মাঝে।
যখন রাত্রি আসে ঘিরিয়া আঁধার অনিষ্ঠ সাথে লয়ে,
সেই ক্ষতি হতে আশ্রয় চাই যা করে যাদুকর ফুৎকার দিয়ে।।
.
আরও আশ্রয় চাই আমি মোর খোদা পরে,
হিংসুকের খারাপ হতে যখন সে হিংসা করে।।
.
০৪/০৩/২০১৭
(সূত্রঃ আল-কুরআন, সুরাঃ ফালাক, আয়াতঃ ০১-০৫)

লাবণ্যময় পথচলা

একটা রাতের মতো তার লাবন্যময় পথচলা
যেন মেঘহীন নীলিমায় জ্বলজ্বলে তারাদের শতকলা
আলো আঁধারের কী দারুণ কারুকাজে ভরা
কাজলের চোখদুটো তার স্বপ্ন আলোক ঝরা,
সে প্রসন্ন উজ্জ্বলতায় পূর্ণতা খুঁজে পায়
অস্বীকৃত অপ্রিয় দিন স্বর্গোদ্যান ছেড়ে যায় ।

এক অভূতপূর্ব আলোককুসুম ছোট্ট রশ্মি দিয়ে
আধেকটা বিলীন হয়েছে যে তার অধরা লাবন্য নিয়ে ।
মেঘ চুলে তার ঢেউ খেলে যায় কতো না পরমানন্দে
ঝলকে উঠে আলোকমালা মুখে তার ঝরণাছন্দে ।
ভাবনা সেখানে ফুটে ওঠে এক সুমিষ্ট নির্মলে
কতো যে মিহি কারুকাজ সেই অমূল্য অঞ্চলে ।

তার কুমুদ কপোলে ও জোড়া ভুরু তলে
কোমল পেলব শান্ত সুধা অপরুপ হয়ে দোলে ,
অপরাজেয় সেই হাসি আর দীপ্ত মুখের আভা
যাপিত দিনের শেষে এসে প্রকাশিত হয় প্রভা
একটি নিটোল হৃদয়মাঝে নমিত সে সবার চেয়ে
ভালবাসার বাঁধনে জড়ায় প্রিয়সুখ মেখে গায়ে ।

মূল কবিতা ঃ

She Walks in Beauty

BY LORD BYRON (GEORGE GORDON)

She walks in beauty, like the night
Of cloudless climes and starry skies;
And all that’s best of dark and bright
Meet in her aspect and her eyes;
Thus mellowed to that tender light
Which heaven to gaudy day denies.

One shade the more, one ray the less,
Had half impaired the nameless grace
Which waves in every raven tress,
Or softly lightens o’er her face;
Where thoughts serenely sweet express,
How pure, how dear their dwelling-place.

And on that cheek, and o’er that brow,
So soft, so calm, yet eloquent,
The smiles that win, the tints that glow,
But tell of days in goodness spent,
A mind at peace with all below,
A heart whose love is innocent!

অনুবাদ কবিতা: উত্তর

উত্তর
মহাদেবী ভার্মা

এই এক বিন্দু অশ্রুতে,
চাইলে সাম্রাজ্য লুটিয়ে দাও,
আশীর্বাদের বৃষ্টিতে,
এই শূন্যতা ভরিয়ে দাও;

কামনার স্পন্দন থেকে,
ঘুমোনো একান্ত জায়গা দাও,
আশার কোমল হাসিতে
আমার নৈরাশ্য লুটিয়ে দাও।

চাইলে জর্জর তারের মাঝে,
নিজের মানস বিজড়িত কর,
এই পলকের পেয়ালাতে,
সুখের প্রেরণা ছলকে দাও;

আমার ছন্নছাড়া প্রাণে,
সমস্ত করুণা ঢেলে দাও,
আমার ক্ষুদ্র সীমার মাঝে,
নিজের অস্তিত্ব বিলীন কর!

কিন্তু শেষ হবে না এই,
আমার প্রাণের খেলা,
তোমাকে খুঁজেছি বেদনায়,
তোমাতে খুঁজবো বেদনা!

অনুবাদ কবিতা : মৃত্যু তোমাকে

মৃত্যু তোমাকে
মূল কবিতা : আনা আখমাতোভা
অনুবাদ : রিয়া চক্রবর্তী

একসময় না একসময় তুমি
গ্রহণ করবে আমায় –
এখনি নয় কেন?

তোমারই প্রতিক্ষায় আছি –
সহ্যের সব বাঁধ ভেঙেছে,
অন্ধকারে, দরজা খুলে রেখেছি।
সাথে এনো যন্ত্রণা উপশমের
আশ্চর্য কোনো যাদুকরী মলম।
যদি কোন মন ভোলানো ছদ্মবেশ ধরতে হয়,
তবে ছদ্মবেশেই এসো।
দস্যুর মতো বুকে বিঁধে দিতে চাও বিষাক্ত তীর,
যদি মারণব্যাধির জীবাণু রূপ নিতে চাও,
সে ভাবেই এসো।

না হয় এসো একটা বিভৎস গল্পের মতো
যার সমাপ্তি সবার জানা।
নীল টুপি পরা পুলিশের মাঝখানে
গৃহস্বামীর বিবর্ণ মুখ।
এইসব আমার সহ্যের মধ্যে।
ফুলে ওঠে এস্নেই নদীর জল,
আকাশে প্রজ্জ্বলিত ধ্রুবতারা,
প্রিয়জনের নীল চোখের আলোয়
মুছে দেয় আতঙ্ক আর ভয়।