বিভাগের আর্কাইভঃ অনুবাদ

মা’ এর জন্য ভালোবাসা

ফুলের দোকানের সামনে এসে একজন ভদ্রলোক তার গাড়ি থামালেন।
উদ্দেশ্য তার মা’য়ের জন্য কিছু ফুল কিনবেন। যিনি এখান থেকে প্রায় দু’শ মাইল দূরে বাস করেন। গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়, তিনি লক্ষ্য করলেন, দোকানের পাশে, পায়ে হাঁটার পাকা রাস্তার কিনারে মনখারাপ করে একটি ছোট্ট বালিকা বসে আছে।

ভদ্রলোক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি গো, তুমি এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেনো?”

বালিকা বললো, “আমার মা’য়ের জন্য একটি ফুল কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার কাছে শুধু ৭৫ সেন্ট আছে; এবং একটি ফুলের দাম দুই ডলার।”
লোকটি মুচকি হেসে বললেন, “এসো আমার সাথে দোকানে। আমি তোমাকে একটি ফুল কিনে দেব।”

তিনি ছোট্ট বালিকাটির জন্য একটি ফুল কিনলেন। এবং নিজের মা’য়ের জন্যও ফুল দেয়ার অর্ডার করলেন। যখন দেখলেন, বালিকাটি চলে যাচ্ছে, তিনি
বালিকাকে বললেন, “চলো, তোমাকে তোমাদের বাড়ি পৌঁছে দেই।”
“হ্যা, দয়া করে আমার মা’য়ের কাছে আমাকে পৌঁছে দিন।” বালিকা বললো।
সে তাকে রাস্তা দেখিয়ে একটি কবরস্থানের দিকে নিয়ে গেলো। নতুন একটি কবরের উপর সে ফুলটি রাখলো।
মানুষটি ফুলের দোকানে আবার ফিরে এলেন, একটি ফুলের তোড়া উঠালেন
এবং দু’শ মাইল দূরে ড্রাইভ করে তার মা’য়ের বাড়ি চলে এলেন।

শিক্ষাঃ জীবন খুব ছোট। যিনি তোমাকে ভালোবাসেন এবং যত্ন নেন, তার জন্য যতটুকু সময় দেয়া তোমার পক্ষে সম্ভব, তার সাথেই সময়টা কাটিয়ে দাও।
—————–
অনূদিত

মধুর অনুযোগের সনেট /ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা

মধুর অনুযোগের সনেট /ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা
অনুবাদ- নাজনীন খলিল।

আমাকে কখনো হারাতে দিওনা এই বিস্ময়
তোমার স্ট্যাচুর মতো চোখের, অথবা এই স্বরসঙ্ঘাত
তোমার নিঃশাসের স্বতন্ত্র গোলাপ
যা রাত্রে স্থাপিত হয় আমার কপোলে।

আমি তটস্থ থাকি, এই সৈকতে
এই শাখাহীন গুঁড়ি, যা আমার তীব্র অনুতাপ
পুষ্পহীনতা, শাঁস অথবা মৃত্তিকা
আমার উদ্যমহীনতার জীবাণুর জন্য।

তুমি যদি হও আমার গুপ্তধন
তুমি যদি হও আমার দুর্দশা, আমার বিষণ্ন যন্ত্রণা
যদি আমি হই সারমেয়, তুমি একাকী আমার প্রভু।

কখনো হারাতে দিওনা যা পেয়েছি আমি ,
এবং সাজিয়ে দেবো তোমার নদীর শাখা
আমার বিচ্ছিন্ন শরতের পত্র-পল্লবে।
___________________________

Never let me lose the marvel
of your statue-like eyes, or the accent
the solitary rose of your breath
places on my cheek at night.

I am afraid of being, on this shore,
a branchless trunk, and what I most regret
is having no flower, pulp, or clay
for the worm of my despair.

If you are my hidden treasure,
if you are my cross, my dampened pain,
if I am a dog, and you alone my master,

never let me lose what I have gained,
and adorn the branches of your river
with leaves of my estranged Autumn.

Sonnet Of The Sweet Complaint–Federico Garcia Lorca

অনুবাদ: নববর্ষ

নববর্ষ
হরিবন্শ রায় বাচ্চন

বর্ষ নতুন,
হর্ষ নতুন,
জীবনের উৎকর্ষ নতুন।

নতুন স্বপন,
নতুন স্পন্দন,
জীবনের নতুন আয়োজন।

নতুন আশা,
নতুন রাস্তা,
জীবনের নতুন পথ চলা।

গান নতুন,
প্রেম নতুন,
জীবনের রীতি নতুন,
জীবনের নীতি নতুন,
জীবনের জয় নতুন!

অনুবাদ কবিতা: কোট

কোট
সর্বেশ্বর দয়াল সাক্সেনা

খুঁটিতে কোটের মতো
দীর্ঘকাল ধরে আমি টাঙানো
কোথায় চলে গেছে
আমাকে গা’য়ে চাপিয়ে সার্থক করা ব্যক্তি?
ধূলোর পর ধূলো
এমনভাবে জমে চলেছে যে
আজ আমি নিজেই
নিজের রঙ ভুলে গেছি।
ঝুলে পড়েছে বাহু
কুচকেছে ছাতি
আর ওতে যুক্ত হয়েছে এক তাপ
এক সম্পূর্ণ শরীর হবার আত্মবিশ্বাস
এখন আমার মাঝে আর নেই।
খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি,
বাইরে এক গাছ
রঙ বদলে চলা
পাখিদের সাথে ঝনঝনাচ্ছে
আর হাওয়ায় নৃত্যরত:
আমিও নড়াচড়া করি
ব্যস নড়াচড়াই করি
দেয়ালের সাথে ধাক্কা খাবার জন্য।
দীর্ঘ সময় চলে গেছে
হ্যা, এক দীর্ঘ সময়
যখন ও চুপচাপ দরজা বন্ধ করেছিলো
আর আমার দিকে না তাকিয়ে, কোনওকিছু না বলে
বাইরে ভারি পা ফেলে চলে গিয়েছিলো-
‘এখন তুমি মুক্ত
একা কামরায় মুক্ত
কারও শোভা কিম্বা রক্ষক
হওয়া থেকে মুক্ত
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, তুষারপাতের
ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্ত
অন্যের জন্যে সম্পাদন করা হয়ে থাকে
এরকম প্রত্যেক যাত্রা থেকে মুক্ত
নিজের পকেট ও নিজের শরীরের
নিজের কলার ও নিজের আস্তিনের
মালিক তুমি নিজে
এখন তুমি মুক্ত, স্বাধীন-
পূর্ণরূপে স্বাধীন- নিজের জন্য।’

খুঁটিতে দীর্ঘকাল ধরে টাঙানো
কামরার নীরবতার এই সঙ্গীত
আমি প্রতিটি মুহূর্তেই শুনি
আর এক নিদারুণ বন্দিত্বের অনুভব
করতে করতে সংজ্ঞাহীন হয়ে চলেছি
যে ক্রুশবিদ্ধের শাস্তি নিজেই নিজের নখ দিয়ে লিখছি।
না, আমার এই মুক্তি চাই না
নিজের জন্য স্বাধীন হয়ে বাঁচার থেকে ভালো
আপনজনের জন্যে গোলাম হয়ে থাকা
আমার একটি ছাতি চাই
দুটি সুডৌল বাহু
যাতে আমার ছাতি ও বাহু জুড়ে দিয়ে
আমি সার্থক হতে পারি
বাইরে বেরোতে পারি
নিজের ও ওর ইচ্ছেকে এক করতে পারি
এক-ই লড়াই লড়তে পারি
আর জোড়াতালি ও কাপড়ের টুকরোকে অঙ্গীকার করে
একদিন জরাজীর্ণ হয়ে
সমাপ্ত হতে পারি।

ওর প্রতিটি আঘাত আমার
ওর প্রত্যেক ক্ষত প্রথম ভুগবো আমি
ওর প্রতিটি লড়াই আমার
আমি ওর জন্যে কাঁদি
এটুকুই আমার প্রাপ্য।

খুঁটিতে দীর্ঘকাল ধরে ঝুলে ঝুলে
আমি কোট থেকে
নিজের কাফন বানিয়ে চলেছি
কোথায় প্রলয়ঙ্কর ঝর?
সবকিছু তছনছ করে দেয়া
ভূমিকম্প কোথায়?
আমি এই দেয়াল, এই খুঁটি থেকে
মুক্ত হতে চাই
আর প্রচণ্ড ঝরে উড়তে উড়তে
নিজের বাহু প্রসারিত করে
ছাতি চওড়া করে
ওকে খুঁজে বের করতে চাই-

যে চুপচাপ একদিন দরজা বন্ধ করে
আমার দিকে একবারও না তাকিয়ে কোনওকিছু না বলে
বাইরে ভারি পা ফেলে চলে গিয়েছিলো।

আমি জানি
ওকে কেউ ডাকছিলো
ওর কিছু প্রয়োজন হয়েছিলো
ওকে এক বিরাট ঝর ও ভূমিকম্প
নিয়ে আসা শক্তির খোঁজ করার ছিলো
ওর এখান থেকে যাবারই ছিলো
কিন্তু কোথায়?
আমিও ওর সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম।
দীর্ঘকাল ধরে খুঁটিতে ঝুলে ঝুলে
আমিও
এক ভীষন ঝর
এক বিরাট ভূমিকম্পের প্রয়োজন
অনুভব করতে লেগেছি।
তবে কি সেও
আমার মতো
কোনও খুঁটিতে ঝুলে ঝুলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো?
কোট ছিলো?

অনুবাদ কবিতা – A Night-Piece

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ
উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ
অনুবাদ। ইন্দ্রানী সরকার

নিবিড় ঘন মেঘে ঢাকা তমসাবৃত
আকাশ শুভ্র চাঁদের আলোয় ভরা।
অস্পষ্ট সঙ্কুচিত গোলাকার চাঁদ মৃদু
আলো ছড়ায় যা পাথর, গাছপালা আর
মিনারের নকশা মাটিতে এঁকে দেয়।

সুদূরে চিন্তারত একাকী পথিক সুমধুর
চাঁদের আলোয় সচকিত হয়ে অবনত
মুখ তুলে উপরে তাকিয়ে দেখে মেঘ
সরে গেছে আর মেঘের ফাঁক দিয়ে
ফুটে ওঠে সুষ্পষ্ট চাঁদ আর স্বর্গের দীপ্তি।

নীলাভ আঁধারে বাঁকা চাঁদ ভেসে যায়,
কত শত ক্ষুদ্র অথচ স্পষ্ট অগুন্তি নক্ষত্র
সুগভীর নীহারিকায় চাঁদের পথসঙ্গী হয়,
কত দ্রুত তারা বৃত্তাকারে ঘুরে যায় কিন্তু
অদৃশ্য হয় না, গাছে গাছে ঝরো বাতাস
বয়ে যায় কিন্তু তারা পথভ্রষ্ট না হয়ে বহু
যোজন দূরে থেকেও; মেঘেদের সারি সারি
তোরণ অপরিমিত গভীরতায় গাড় হতে থাকে।

দূরে মন আর দৃষ্টি ক্রমশঃ শান্ত হতে থাকে,
চারিদিকের সুন্দর আর পবিত্র পরিবেশে মন
হয়ে যায় অচঞ্চল, ধ্যানমগ্ন।

A Night-Piece
– William Wordsworth.

The sky is overcast
At length a pleasant instantaneous gleam
Startles the pensive traveller while he treads
His lonesome path, with unobserving eye
Bent earthwards; he looks up–the clouds are split
Asunder, –and above his head he sees
The clear Moon, and the glory of the heavens.
There, in a black-blue vault she sails along,
Followed by multitudes of stars, that, small
And sharp, and bright, along the dark abyss
Drive as she drives: how fast they wheel away,
Yet vanish not!–the wind is in the tree,
But they are silent; –still they roll along
Immeasurably distant; and the vault,
Built round by those white clouds, enormous clouds,
Still deepens its unfathomable depth.
At length the Vision closes; and the mind,
Not undisturbed by the delight it feels,
Which slowly settles into peaceful calm,
Is left to muse upon the solemn scene.

কলম্বিয়ান কবি মারিও রিভেরোর কবিতা …

কবি মারিও রিভেরো ছিলেন একজন কলম্বিয়ান কবি। নানান রং ছড়িয়ে ছিলো তাঁর জীবনে। তিনি একাধারে ছিলেন কবি, সমালোচক, ট্যাঙ্গো গায়ক, এবং সাংবাদিক। তিনি ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩ ই এপ্রিল ২০০৯ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। তাঁর জীবনে তিনি দেশী, বিদেশী নানাবিধ পুরুষ্কারের পুরস্কৃত হয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত পুরুষ্কারের মধ্যে হল :
National Poetry Prize Eduardo Cote Lamus. 1972
National Poetry Prize Jose Asuncion Silva. 2001

কলম্বিয়ান কবি মারিও রিভেরোর কবিতা …
অনুবাদ: রিয়া চক্রবর্তী

ব্যাথাকে ভালবেসো
সঞ্চয় যা করেছ তাতেই
শুদ্ধ হবে শব্দেরা
প্রতিদিন তোমাকে ফিরিয়ে
দেবে যা শুধুমাত্র তোমারই ছিলো …

দৃষ্টি হবে শুদ্ধতম
সামান্য ধুলোর কণা
মুছে যাবে আঘাতে আঘাতে
তোমাকে বিদ্ধ করে অনবরত…..

সৃষ্টি হবে মুক্তোদানার
তোমার হৃদয়ে
বিষাদে পরিপূর্ণ হবে যখন ….

আকাশের তারা সবসময় সুন্দর দেখায় [Halo Effect]

সিলিকন ভ্যালীর একটা ফার্ম, সিস্কো, একসময় ছিল নতুন অর্থনীতির বরপুত্র। সাংবাদিকরা এর সর্বসাফল্য নিয়ে অকুণ্ঠ প্রশংসা করতঃ এর চমৎকার গ্রাহক সেবা, নির্ভুল কৌশল, দক্ষ অধিগ্রহণ, অদ্বিতীয় কারবারী সংস্কৃতি, সহজাত দক্ষ ক্যারিশমাটিক সিইও। দুই হাজার সালের মার্চমাসে এইটা ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে দামী কোম্পানী।

পরের বছর সিস্কোর শেয়ারের দাম ৮০% পড়ে গেলে, সাংবাদিকরা সুর পালটানো শুরু করে। হঠাৎ করে কোম্পানীর প্রতিযোগীতামূলক সুবিধাগুলোকে ধ্বংসাত্মক ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত করা হলঃ বাজে গ্রাহক সেবা, ধূমায়িত কৌশল, বেকুবমার্কা অধিগ্রহণ, পঁচা কর্পোরেট সংস্কৃতি এবং একজন বেকুব সিইও। এসব যখন বলা হচ্ছে, তখন কিন্তু কোম্পানীর না কোন কৌশল বদলানো হয়েছে, না সিইও পালটানো হয়েছে। যা পাল্টেছে তা হল কোম্পানীর চাহিদা, সেটা হয়েছে ডটকম ক্রাশের ফলশ্রুতিতে, তা কিন্তু কোম্পানীর কোন ভুল-ত্রুটির জন্য নয়।

যখন কোন বিষয়ের কোন একটা দিক আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয় আর সেটা পুরো বিষয়টার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত করে সেটাকেই আমরা বলি হেয়লো এফেক্ট (Halo effect) বা জ্যোতিষ চক্কর বলতে পারি। সিস্কোর ক্ষেত্রে এই জ্যোতিশ্চক্র বিশেষভাবে উজ্জ্বল ছিল। সাংবাদিকরা সিস্কোর শেয়ার মূল্য দেখে টাস্কি খেয়েছে আর কোন ভেতরের কোন খবর না নিয়েই ভেবেছে পুরো বিজনেসটা নিশ্চয়ই চকচকে আর টকটকে।

হেয়লো এফেক্ট সব সময় একইভাবে কাজ করে, আমরা কোন সহজলভ্য বা উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য বা বিবরণ নিয়েই পুরো ব্যাপারটা সম্পর্কে ধারনা করে ফেলি। যেমন কোন কোম্পানীর আর্থিক অবস্থা থেকে বাড়তি যাচাই বাচাই ছাড়াই আমরা খুব সহজে কোম্পানীর ব্যাবস্থাপকদের পরিচালনা ক্ষমতা বা এর কোম্পানির বিজনেস কৌশলের সম্ভাব্যতা নিয়ে উপসংহারে চলে যাই। আমরা প্রায়শই সফলতা বা শ্রেষ্ঠত্ব আরোপ করি যেখানে এগুলো খুব সামান্যই আছে, যেমন, আমরা যখন শুধু খ্যাতির উপর ভিত্তি করেই কোন ম্যানুফ্যাকচারার থেকে পন্য কিনি। . হেলো এফেক্টের আরো একটা উদাহরণ হল, আমরা ধরে নিই এক ধরনের ব্যবসায়ে সফল সিইওরা অন্য যেকোনে ব্যবসায়েও সফল হবে, এবং আরেকটা বিষয় হল, তারা তাদের ব্যক্তি জীবনেও নায়ক বনে যায়।

মনোবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড লী থর্নডাইক প্রায় শত বছর আগে, এই হেলো এফেক্ট আবিষকার করেন। তাঁর উপসংহার ছিল, যে কোন একটি গুণ ( উদাহরণস্বরূপঃ সৌন্দর্য, সামাজিক অবস্থা, বয়স) ইতিবাচক বা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে এবং তা পুরো ব্যাপারটাতে এর একটা অসমান প্রভাব থাকে। সৌন্দর্য হল সবচেয়ে বেশি গবেষনা করা উদাহরণ। ডজন ডজন গবেষণা দেখিয়েছে যে, আমরা দেখতে ভাল লোকদেরকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই/ এমনি এমনিই ধরে নিই যে তারা সুপ্রিয়, সৎ এবং বুদ্ধিমান। আকর্ষনীয় লোকজন তাদের পেশাগত জীবনে সহজেই এই সুবিধা পেয়ে থাকে এমনকি স্কুলেও এই হেলো এফেক্ট দেখা যায় যেখানে শিক্ষকরা অসচেতনভাবেই দেখতে ভাল বাচ্চাদেরকে বেশি মার্ক দিয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপনের সাথে এই হেলো এফেক্টের এর দারুন সংযোগ আছেঃ টিভিতে, বিলবোর্ডে, ম্যাগাজিনে যেসব সেলিব্রেটিরা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসে তাদের দিকে একবারটি দেখুন। কিভাবে রজার ফেদেরারের মত একজন পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় কিভাবে একজন কফি মেশিন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, যদিও সেটা সফল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে কোন বাধা নয়। আমরা সেলিব্রেট্রিদেরকে এতবেশি বিজ্ঞাপনে দেখি যে, আমরা কখনো চিন্তাও করি না কেন এটা-সেটার বিজ্ঞাপনে তাঁদেরকে দেখানোটা আদৌ আমাদের জন্য কোন গুরুত্ব বহন করে কিনা। কিন্তু এটাই হল হেলো এফেক্টের সবচেয়ে সেয়ানা পার্টঃ এটা আমাদের অবচেতন মনে কাজ করে। যা কিছু রেকর্ড করা দরকার তা হল, আকর্ষণীয় মুখ, আকর্ষনীয় জীবনধারা (লাইফস্টাইল) এবং ঐ নির্দিষ্ট পণ্য।

জোরালো নেতিবাচক প্রভাবের সাথে সাথে হেলো এফেক্ট বড় ধরনের অবিচারের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং এমনকি যখন জাতীয়তা, লিঙ্গ, অথবা বর্ণ সবকিছুর ব্যাপারে বাঁধাধরা চিন্তার দিকে নিয়ে যেতে পারে। কেউ বর্ণবাদী কিংবা লিঙ্গ-বিদ্বেষী না হয়েও এসবের স্বীকার হতে পারে। হেয়লো এফেক্ট আমাদের দৃষ্টি মেঘাচ্ছন্ন করে দেয় যেমনটা দেয় সাংবাদিক, শিক্ষক এবং ভোক্তাদের।

কদাচিৎ এই প্রভাবের নির্মল দিক দেখা যায় – হতে পারে সেটা স্বল্পমেয়াদী, আপনি কখনো প্রেমের সাগরে ভেসেছেন? If so, যদি তাই হয়, তাহলে আপনি জানেন, কতটা নিখুঁত মনে হতে পারে একজন কে। আপনার মনের মানুষকে মনে হবে পুরো একটা প্যাকেজ, আকর্ষণীয়, বুদ্ধিমান, পছন্দনীয় এবং উষ্ণ। এমনকি আপনার বন্ধুরা অনেক কিছু নেতিবাচক দিক পয়েন্ট আউট করতে পারে, আপনি এর কোন কিছুই দেখেন না, বরং মনে হয় সেগুলোও কত সুন্দর!

প্রকৃত বৈশিষ্ট বুঝতে হেয়লো এফেক্ট আমাদেরকে বাধা দেয়। এটা কাটাতে হলে আপনাকে ফেসভ্যালু বাদ দিয়ে চিন্তা করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্টগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে। বিশ্বমানের অর্কেস্ট্রাওগুলোতে বাছাইয়ের সময় পর্দার আড়ালে ক্যান্ডিডেটদেরকে পারফর্ম করতে হয় যাতে লিঙ্গ, বর্ণ, বয়স এবং চেহারা কোন ভূমিকা রাখতে না পারে। সবচেয়ে বড় কথা হল আপনার, যথাযথ তথ্য নেয়ার ও বুঝার মত ধৈর্য্য থাকতে হবে।

[রলফ ডবেলি থেকে অনূদিত]

শোফার নলেজ (মুখ ও মুখোশ)

ম্যাক্স প্লাংক সাহেব ১৯১৮ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবল প্রাইজ জেতেন। ঐ বছর তিনি জার্মানি ভ্রমনে যান। সেখানে প্রচুর অভ্যর্থনা- সংবর্ধনা পান, স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর বক্তৃতা করা লাগে। প্রতিটি সেমিনারে-সভাতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর একই বক্তৃতা শুনতে প্লাংকের শোফার সেটা মুখস্থ করে ফেলেছিল। একই বিষয় শুনতে শুনতে সে কিছুটা বিরক্তও হয়ে উঠেছিল। সুতরাং সে প্লাংক সাহেবকে এক চমৎকার প্রস্তাব দিল। বলল, একই বক্তৃতা দিতে দিতে আপনি নিশ্চয় বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। মিউনিখের সভায় আপনি শোফারের টুপি পরে সামনে বসে থাকবেন। আর আমি মিস্টার প্লাংক সেজে বক্তৃতা করব। সন্দেহ নেই ব্যাপারটা আমাদের দুজনের জন্যই বৈচিত্র নিয়ে আসবে। ড্রাইভারের এ সৃজনশীল প্রস্তাবটা প্লাংকের খুব মনে ধরল। তিনি বললেন, তথাস্তু।
সুতরাং নির্দিষ্ট দিনে মিউনিখের নামজাদা সব প্রফেসরদের সামনে প্লাংকের শোফার কোয়ান্টাম কেকানিক্সের উপর লম্বা বক্তৃতা দিল। আর প্লাঙ্ক শো’ফার সেজে বসে রইলেন। সভাশেষে একজন প্রফেসর দাঁড়িয়ে একটা প্রশ্ন করলেন। তখন প্লাঙ্করূপী ড্রাইভার বলল, মিউনিখের মত জায়গায় কোন জাঁদরেল প্রফেসর এরকম সিম্পল প্রশ্ন করতে পারে তা আমার জানা ছিল না। এটার উত্তর দেয়ার জন্য তো আমার ড্রাইভারই যথেষ্ট বলে সে ড্রাইভাররুপী প্লাঙ্ককে দেখিয়ে বলল, আমার ড্রাইভার এ প্রশ্নের জবাব দিবে।

আমেরিকার প্রখ্যাত ইনভেস্টর ও ব্যবসায়ী চার্লি মুঙ্গারের মতে দুই ধরনের জ্ঞান আছে। প্রথমটা হল আসল জ্ঞান। যার জন্য লোকে অনেক পরিশ্রম করে, রাত জাগে, পড়ালেখা করে। দিনরাত খেটে-খুটে কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করে। আরেকটা হচ্ছে, শোফার নলেজ। (শোফার নলেজ)। এইটাকে আমরা লোকদেখানো বিদ্যা বলতে পারি। এই ধরনের লোকেরা মূলত বিদ্যা জাহিরের ক্ষেত্রে ওস্তাদ হয়ে থাকে। সুন্দর ভঙ্গি আর সুন্দর চুল কিংবা চমৎকার হাসিই হয়ত তাদের বক্তৃতার মূলধন। অনেকটা টিভি নিউজ প্রেজেন্টারদের মত, অন্যের তৈরি করা খবর তারা চমৎকার উচ্চারণে দেখে দেখে স্মার্টলি পড়তে পারে।
.
দুঃখজনক ব্যাপার হল, এখনকার সময়ে আসল নলেজ আর শোফার নলেজ আলাদা করা খুবই কঠিন হয়ে গেছে। নিউজ প্রেজেন্টারদের ক্ষেত্রে আমরা তবু বুঝতে পারি যে, এই নিউজের আসল মালিক তারা নয়। সবাই জানে তারা শুধু পাঠক।

সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এটা বুঝতে পারা আরো বেশি কঠিন। সাংবাদিকদের অনেকেই সত্যিকারের জ্ঞান অর্জন করে। অনেক ঝানু রিপোর্টার আছেন যারা সুদীর্ঘ সময়ের পরিশ্রমে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। একটা জটিল বিষয় বুঝতে ও বুঝাতে তাদের আন্তরিক চেষ্টা থাকে, এর পেছনে সময় দেন। দীর্ঘ পড়াশোনা করেন। তারপর তারা ঐ বিষয়ে বিশ্লেষণ দেন। কিন্তু বেশিরভাগ সাংবাদিকরা শোফার নলেজের কাতারেই পড়ে। তাঁরা ভাসা ভাসা জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে বিশ্লেষন দাঁড় করিয়ে ফেলেন। আর দেখা যায়, তাদের স্বল্প ও বেমানান জ্ঞানের কারনে বিশ্লেষন হয়ে উঠে একচোখা, শ্লেষ-বিদ্বেষ আর আত্মতৃপ্তিতে ভরপুর।
কারবারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই জিনিস দেখা যায়। যে কোম্পানী যত বড় তার জন্য তত বড় স্টার সিইও দরকার। উৎসর্জন ( Dedication ), ঐকান্তিকতা (Solemnity ), দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এই সমস্ত শক্তি ও গুণাবলীর চেয়ে স্টার হওয়াটাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। দক্ষতা ও যোগ্যতার চেয়ে মেকাপটা বেশি হয়ে উঠে। শেয়ারহোল্ডার ও সাংবাদিকরা প্রায় মনে করেন, লোকরঞ্জনের ক্ষমতা মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দিবে। বাস্তবে যা কখনোই নয়।

শোফারকে গার্ড দেয়ার জন্য ওয়ারেন বাফেট সুন্দর তরিকা দিয়েছেন, সেটা হল, যোগ্যতার বৃত্ত (Circle of Competence)। প্রত্যেকের উচিত নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতার একটা বৃত্ত টেনে নেয়া। এই বৃত্তের ভেতরে থাকবে সেই সব যাতে আপনি প্রত্যক্ষ জ্ঞানবলে পরিপূর্ণ দক্ষ। আর বাইরে থাকবে সেই সব যা আপনি আংশিক বোঝেন। মুঙ্গারের মতে, আপনার উচিত সার্কেল অব কম্পিটান্স এর ভেতরে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা। এটা ইম্পর্টেন্ট না সার্কেলটা কত বড়। ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে, সার্কেল পরিধি কোথায় তা জানা। আপনি যদি যেখানে আপনার কম্পিটেন্স নাই সেখানে খেলতে যান তবে নিশ্চিতভাবে আপনি হারবেন। এজন্য আগে নিজের দক্ষতা গুলো নির্দিষ্ট করে নিন। এবং অবশ্যই নিজের সার্কেলের ভেতরেই খলুন।
সবশেষে যা বলা দরকার তা হল, শোফার নলেজ সম্পর্কে সচেতন থাকা চাই। কোম্পানীর মুখপাত্র, নিউজ প্রেজেন্টারদের সাথে প্রকৃত জ্ঞানীকে গুলিয়ে ফেললে হবে না। এটা আপনি কিভাবে করবেন? দেখবেন, প্রকৃত বিশেষজ্ঞ নিজের সীমা জানেন, কি জানেন আর কি জানেন না সে বিষয়ে তারা সচেতন। যদি তারা নিজেকে সার্কেল অব কম্পিটান্স এর বাইরে দেখেন, তখন তারা খুব সহজেই বলেন, ‘আমি জানি না।‘ লজ্জা নয়, এমনকি প্রচ্ছন্ন গৌরবের সাথে।
শোফারের কাছে আপনি সব কিছুই শুনবেন, কিন্তু কখনোই শুনবেন না, ‘আমি জানি না। ‘

[রলফ ডবেলি’র দ্যা আর্ট অব থিংকিং ক্লিয়ারলি অবলম্বনে]

স্নিগ্ধ গোলাপ এখন বিষাক্ত

পৃথিবীর উদ্যানে গুনগুন করছে বিষাক্ত ভ্রমর
বিষের হুল ফুটিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অঙ্গে
বিষে নীল হচ্ছে উদ্যানের লাল গোলাপ
বদলে যাচ্ছে গোলাপের চেহারা
স্নিগ্ধ গোলাপ এখন বিষাক্ত।

মারাঠি থেকে অনুবাদ … ছত্রিশ বাহানা

ছত্রিশ বাহানা
– মারাঠি থেকে অনুবাদ।

ভূমিকা : গল্প- সখুবাঈ। যেভাবে ঘরে মজুত খাবার শেষ হয়ে গেলে অদিবাসী পরিবার খাবারের পরিবর্তে কন্যাসন্তানদের অন্য লোকেদের বাড়ি পাঠানো হয় তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে। খুব অল্প বয়সে সখুবাঈকেও পাঠানো হয়েছিল অন্যের শিশু দেখাশোনা করার জন্য। তিনি তখন এতোই ছোট যে শিশুটিকে তিনি দেখাশোনা করেন তাকে কোলে তোলার ক্ষমতা ছিলো না। তিনি কেবল দোলনায় দোলাতে পারতেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সখুবাঈয়ের জীবনের ঘটে গেছে নানা ঘটনা। সেইসব ঘটনা থেকে তিনি যোদ্ধার মতোই বেরিয়ে এসেছিলেন। কখনও তিনি ভয় পেয়েছেন তাকে আক্রমণ করা হবে, কখনও ভয় পেয়েছেন তাকে ডাইনী আখ্যা দেওয়া হবে। সমাজ তাকে বহিষ্কার করবে। তা সত্ত্বেও তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন আদিবাসী মেয়েদের মুক্তির জন্য। সাখুবাঈয়ের জীবন এমন এক ইতিহাসের অঙ্গ যা পরিচিত হওয়া প্রয়োজন।

সাখুবাঈ গভিট দাহনু তালুকের বন্দঘর মেঘপাড়া অঞ্চলের এক আদিবাসী রমনী। তিনি ভূমিহীন শ্রমিক, প্রান্তীয় চাষীদের মধ্যে কর্মরত গণসংস্থা কষ্টকারী সংঘটনের সঙ্গে কাজ করেছেন। সখুবাঈ গ্রামের লোকেদের একজোট করে সংঘটন গড়ে তুলেছেন। তার জীবন ছিলো সংগ্রামের তাই ক্রমশ তিনি হয়ে উঠেছিলেন দৃঢ়চেতা রমনী। অদিবাসী অঞ্চলে মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া মুশকিল। জেলা পরিষদ স্কুলগুলো মোটামুটি কাজ করে না। তাছাড়া বেঁচে থাকার প্রয়োজনে গ্রামের লোকেরা গ্রামের বাইরে কাটায় বছরের ন’মাস। আর চাষ করার জন্য ফিরে আসে তিনমাস। মীনা তোঢাড়ের বাবা কালুরাম তোঢাড়ে তৈরী করেছিলেন ভূমিসেনা। এবং মীনা তৈরী করেছেন একটি আশ্রম স্কুল। সেখানেই বড় হয়েছেন সাখুবাঈ। পড়াশোনা করেছেন। চাষাবাদ করেন এবং সখুবাঈ অবসর সময়ে লিখে রাখতেন কিছু লোকগাঁথা। সেখান থেকেই একটি গল্পের অনুবাদ দেওয়া হলো।
______________________________

ছত্রিশ বাহানা

এক সময়ে এক কুঁড়ে বাস করতো। গল্পকার গল্প শুনেই তার সময় কাটতো। সেইসব গল্পের মূল ছিলো মেয়েরা। অর্থাৎ মেয়েদের হালচাল সম্বন্ধে পুরুষদের সব সময় সতর্ক থাকা উচিৎ। কারণ পুরুষদের প্রতারণা করতে মেয়েরা অনেক রকম ছলনার আশ্রয় নিতে পারে। সে এই জন্য সবসময় ‘ছত্রিশ বাহানা’ শব্দটি ব্যাবহার করতো। এর অর্থ হলো – ছত্রিশ রকমের ছলনা।

লোকটি প্রত্যেকদিন তার কাহিনীকারের থেকে ফিরে এসে তার স্ত্রীকে মারতো। তার স্ত্রীর কাছে সে ওই ‘ছত্রিশ রকমের বাহানা দেখতে চাইতো। স্ত্রী কয়েকদিন পর্যন্ত তার মার সহ্য করলো। প্রথমে সে তার স্বামী ওই কাহিনীকারের কাছে যাতে না যায় সেই চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যার্থ হলো। তারপর সে একদিন ঠিক করলো তার নির্বোধ স্বামীকে উচিত শিক্ষা দেবে।

তখন বর্ষাকাল চলছিল। গ্রামের সবাই চাষের কাজে ব্যস্ত। কাহিনীকার নিজের জমিতে চাষের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যার ফলে স্বামীর মারের হাত থেকে স্ত্রী সাময়িক মুক্তি পেয়েছে। তখন সে উপায় ভাবতে লাগলো স্বামীকে শিক্ষা দেওয়ার। কিভাবে সংসারে শান্তি আনা যায়। তাদের জমি ছিলো পাহাড়ের ঢালু জায়গায়। স্বামী প্রতিদিন চাষের কাজে চলে যায়। আর স্ত্রী সংসারের কাজ সামলে দুপুরে স্বামীর খাবার নিয়ে মাঠে যায়। হঠাৎই একদিন স্ত্রী পাহাড়ের নীচে জলাশয়ে অনেক ছোট ছোট মাছ দেখতে পেলো। সে তখন ইচ্ছেমতো মাছ ধরলো। জলের পাত্রে রাখলো। তারপর নিজেদের জমিতে গেলো। স্বামী তখনও কাজে ব্যস্ত দেখে মাছগুলো জমিতে ছেড়ে দিলো। তারপর স্বামীকে বললো ‘দেখো আজ আমাদের জমিতে কি পেয়েছি।’ এমন একটি জায়গায় মাছ দেখে স্বামী অবাক। সবগুলো মাছ ধরে ঝুড়িতে রাখলো। এবং এর জন্য স্বামী উদযাপন করতে চাইলো। তাই স্ত্রীকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে মাছগুলো রান্না করতে বললো। আর নিজে গেলো মদ খেতে। ইতিমধ্যেই স্ত্রী মাছগুলো রান্না করে চিলেকোঠায় লুকিয়ে রাখলো। মদ খেয়ে নেশাগ্রস্ত স্বামী বাড়ি ফিরে মাছ খেতে চাইলো। স্ত্রী এইকথা শুনে অবাক হওয়ার ভান করলো। তখনই স্বামী একটা লাঠি দিয়ে স্ত্রীকে ভীষণ মারতে লাগলে, স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বাইরে এসে সাহায্য চাইলেন। স্ত্রীর কান্না শুনে সব প্রতিবেশীরা তার উঠোনে এসে জড়ো হলো। সব পুরুষরা প্রথমে স্বামীর পক্ষ নিয়েছিলো। স্বামী তাদের মাছে কাহিনী শোনালো। স্বাভাবিক ভাবেই অতো উঁচু জায়গার জমিতে মাছ কখনোই পাওয়া যাবে না। গ্রামবাসীরা ধরেই নিলো লোকটি মাতাল। এবং স্ত্রীকে মারার জন্য, তাদের মিথ্যে বলার জন্য ভীষণ মারতে লাগলো।

ধীরে ধীরে সবাই চলে গেলে স্ত্রী চিলেকোঠা থেকে মাছ বের করলো। তারপর স্বামীকে বললো – “আমার ছত্রিশ বাহানার মধ্যে আজ মাত্র একটা দেখলে। এবার নিজেকে শোধরাও, না হলে এখনও আমার পঁয়ত্রিশটা বাহানা বাকি।”

_______________
অনুবাদ- রিয়া চক্রবর্তী।

মারাঠি থেকে অনুবাদ … গল্পকার ও শ্রোতা

গল্পকার ও শ্রোতা
– মারাঠি থেকে অনুবাদ।

ভূমিকা : গল্প- সখুবাঈ। যেভাবে ঘরে মজুত খাবার শেষ হয়ে গেলে অদিবাসী পরিবার খাবারের পরিবর্তে কন্যাসন্তানদের অন্য লোকেদের বাড়ি পাঠানো হয় তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে। খুব অল্প বয়সে সখুবাঈকেও পাঠানো হয়েছিল অন্যের শিশু দেখাশোনা করার জন্য। তিনি তখন এতোই ছোট যে শিশুটিকে তিনি দেখাশোনা করেন তাকে কোলে তোলার ক্ষমতা ছিলো না। তিনি কেবল দোলনায় দোলাতে পারতেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সখুবাঈয়ের জীবনের ঘটে গেছে নানা ঘটনা। সেইসব ঘটনা থেকে তিনি যোদ্ধার মতোই বেরিয়ে এসেছিলেন। কখনও তিনি ভয় পেয়েছেন তাকে আক্রমণ করা হবে, কখনও ভয় পেয়েছেন তাকে ডাইনী আখ্যা দেওয়া হবে। সমাজ তাকে বহিষ্কার করবে। তা সত্ত্বেও তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন আদিবাসী মেয়েদের মুক্তির জন্য। সাখুবাঈয়ের জীবন এমন এক ইতিহাসের অঙ্গ যা পরিচিত হওয়া প্রয়োজন।

সাখুবাঈ গভিট দাহনু তালুকের বন্দঘর মেঘপাড়া অঞ্চলের এক আদিবাসী রমনী। তিনি ভূমিহীন শ্রমিক, প্রান্তীয় চাষীদের মধ্যে কর্মরত গণসংস্থা কষ্টকারী সংঘটনের সঙ্গে কাজ করেছেন। সখুবাঈ গ্রামের লোকেদের একজোট করে সংঘটন গড়ে তুলেছেন। তার জীবন ছিলো সংগ্রামের তাই ক্রমশ তিনি হয়ে উঠেছিলেন দৃঢ়চেতা রমনী। অদিবাসী অঞ্চলে মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া মুশকিল। জেলা পরিষদ স্কুলগুলো মোটামুটি কাজ করে না। তাছাড়া বেঁচে থাকার প্রয়োজনে গ্রামের লোকেরা গ্রামের বাইরে কাটায় বছরের ন’মাস। আর চাষ করার জন্য ফিরে আসে তিনমাস। মীনা তোঢাড়ের বাবা কালুরাম তোঢাড়ে তৈরী করেছিলেন ভূমিসেনা। এবং মীনা তৈরী করেছেন একটি আশ্রম স্কুল। সেখানেই বড় হয়েছেন সাখুবাঈ। পড়াশোনা করেছেন। চাষাবাদ করেন এবং সখুবাঈ অবসর সময়ে লিখে রাখতেন কিছু লোকগাঁথা। সেখান থেকেই একটি গল্পের অনুবাদ দেওয়া হলো।
______________________________

গল্পকার ও শ্রোতা

অনেক বছর আগে, এক গ্রামে দুই বন্ধু বসবাস করতো। একজন ছিলো গল্পকার এবং অন্যজন শ্রোতা। একদিন তারা অনেক দূরের জঙ্গলে গেলো এবং সেখানে বসে তারা একের পর এক গল্প শুরু করলো। এদিকে যে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, ওদের আর নজর নেই। দিন শেষ হয়ে একসময় রাতও পার হয়ে গেলো। সঙ্গে আনা খাবার পচে যাচ্ছে তাদের খেয়াল নেই। তারা এতটাই গল্পের মধ্যে ডুবে ছিলো। একসময় তারা সেই জঙ্গলেই অনাহারে মারা গেলো। দুদিন পরে কিছু পথচারী সেও রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। তারা দুটো মৃতদেহ দেখে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো এরা দুজন কে? এক জন বললো হয়তো কোনো পরদেশী। তখন তারা সেই মৃতদেহ নিজেদের গ্রামে নিয়ে গিয়ে কবর দিলো।

এদিকে অনেক দিন ধরে গল্পকার আর শ্রোতার কোনো খবর নেই দেখে তাদের স্ত্রীরা খুঁজতে বের হলো। জঙ্গলের মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে তারা হাজির হলো এক কবরস্থানে। সেখানকার লোকেদের জিজ্ঞেস করলো – “ও গ্রামের অধিকারী বলো তো, এরা কি আমাদের স্বামী?” গ্রাম অধিকারী বলল – “আমরা এদের মৃত অবস্থায় পাই। পাশে না খাওয়া খাবার। তাদের আমরা এক সঙ্গে মাটির তলায় কবর দিই।” তখন স্ত্রীদের কথায় কবর খুঁড়ে হাড়গুলো বের করা হলো। তখন স্ত্রীরা আবার জানতে চাইলো – “ও গ্রাম অধিকারী, এদের মধ্যে কে গল্পকার আর কে শ্রোতা?” কেউ উত্তর দিতে পারলো না।

স্ত্রীরা তখন অধিকারীর কথামত হাড়গুলো একটা থলিতে ভরে কাছাকাছি একটা পুকুরে নিয়ে গেলো। হাড়গুলোকে জলে ডুবিয়ে দিলো। যিনি শ্রোতা তিনি এমনভাবে গল্পগুলো আত্মস্ত করেছিল যে তার হাড় গুলো ভারী হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেগুলো ডুবে গেলো। অন্যদিকে গল্প বলতে বলতে গল্পকারের শরীর প্রায় খালি হয়ে গিয়েছিল। ফলে তার হাড়গুলো ভেসে রইলো।

অধিকারী বললেন – “তোমাদের স্বামীর হাড়গুলো এবার বাড়ি নিয়ে যাও। এখন তোমরা জানো কোন গুলো গল্পকার এর হাড় আর কোন গুলো শ্রোতার হাড়। হালকা এবং ভারী। সৃষ্টিকর্তা এবং গ্রহীতা। গল্পকার এবং শ্রোতা।”

_______________
অনুবাদ- রিয়া চক্রবর্তী।

কথামালা

কথামালা

শরতের আকাশ “বুনোহাঁস”-
কখনো চ্যাটে খেলছে— হেলেদুলে চলছে-
ডিম পাড়ছে-
শুয়ে আছে মিটমিট করে কিছুটা দূরে আনমনভাবে তাকিয়ে-
মনখারাপের অাড়ষ্টতা-
প্রকৃতির পুরো থালাটাই বাঁধাধরাহীন ফেসবুক-

“নোটিফিকেশন” মৃদুমন্দ ভাবে দুলছে-
বৃষ্টির নিম্নচাপ-
হঠাৎ কালো মেঘ-
ঝড়—
আবার “সেলফির” বিচরন-
রোদের হুঙ্কার ——
লাইক কমেন্টের স্নান খাওয়া।

বৃষ্টির শেষে

বৃষ্টির শেষে
– থিওডোরা ওনকেন

সেদিন তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল
যখন শিশিরের ফোঁটা সবুজ ঘাসে হীরের
মত ঝিকমিক করছিল।
কাঠবিড়ালী আর ব্যাঙগুলো আনন্দে ডেকে উঠছিল।
যখন ভোরের বেলা চরিদিক নিঃস্তব্ধ আর শান্ত
সুর্য্যের স্নিগ্ধ উষ্ণ বিকিরণ আমার শরীরে খেলা করে
আভাসে জানিয়ে যায় দু একটা মেঘের আগমন বার্তা
সঙ্গে এক শান্তি আর সন্তুষ্টিতে পূর্ণ এক দিনের শপথ।
এমনি এক নিখুঁত উজ্জ্বল দিনে ভয়ানকভাবে তোমার
অনুপস্থিতি চোখে পড়ছে।

Theodora Onken

I missed you the other day
When the dew left its diamond glitter upon the grass
And the squirrels and frogs were frolicking merry
When the silence of daybreak calmed
And the sunrise ever warmed
With its gentle rays dancing across my skin
Giving me hints of a fluffy white cloud or two
Promising an entire new day
Of peace and contentment
A perfect day-this
But for the glaring-almost blindingly-blazing
Absence of you

ডায়ানার দিনগুলি

ডায়ানার দিনগুলি

রাতের আলোয় পৃথিবীর স্তব্ধতা মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
আমাদের দু:খে ভারাক্রান্ত পায়ের ওপর আমরা ক্রমশ: নুয়ে পড়ি।
মন অজানাকে জানতে চায়
সূর্য্যকুমারী ছাড়াই আমাদের হৃদয় আগামীকে মাপতে চায়।

যে হাত দুটি দিয়ে সূর্য্যকুমারী তার উজ্জ্বল টায়ারা আর রত্নখচিত মুকুট ধরে থাকে,
সেই হাতেই এ্যাঙ্গোলার ধুলাময় রাস্তার ব্যাথাময় মুখগুলি স্পর্শ করে।

যদিও তার জন্ম আতিশর্য্যের মধ্যে
তবুও সে কোনো সবজান্তার ভাব না দেখিয়েই দরিদ্রদের সাথে মিশে যায়।

বসনিয়ার ঝলমলে আর চনমনে সুন্দর মেয়েটিকে তার সৌন্দর্য্য ও সহজলভ্যতার জন্য
আমরা তাকে সর্বদা ভালোবাসি ও ধরে রাখতে চাই।
আমাদের ভালো লাগে মেয়েটি যখন নিজের খুশিতে নিজেই হাসতে থাকে।

পৃথিবী এখন আর আগের মতো নেই।
অনেক ছোট, সংকুচিত আর বর্ণহীন হয়ে গেছে।

তবুও মেয়েটি বেঁচে ছিল কারণ সে পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলত।
সে ইতিহাসে তার পদক্ষেপ রেখে গেছে।

আমরাও নিজেদের ছেড়ে অন্যের জন্য চিন্তা ভাবনা করতে পারি।
তার জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে মমতা, কৌতুক, সৌন্দর্য ও উৎসাহ দিয়ে নিজেদের জীবন গড়তে পারি।

সূর্যকুমারী বিদায়।

_____________________________

The Week of Diana
A poem by Maya Angelou

The dark lantern of world sadness has cast its shadow upon the land.
We stumble into our misery on leaden feet.
Our minds seek to comprehend the unknowable and our hearts seek to
Measure a tomorrow without the Sunshine Princess.

Her hands which had held bright tiaras and jewelled crowns,
Also stroked the faces of pain along
Angola’s dusty roads.
She was born to the privilege of plenty
Yet, she communed with the needy without a show of pompous piety.

Glowing in Bosnia, radiant at glittering balls,
We came to love her and claim her for her grace and accessibility.
Luminous always.
We smiled to see her enter and grinned at her happiness.
Now the world we made is forever changed…

Made smaller, meaner, less colorful.
Yet, because she did live,
Because she ventured life and confronted change,
She has left us a legacy.

We also may dare…
To care for some other than ourselves and those who look like us.
And maybe we can take a lesson from her
And try to live our lives
With passion, compassion, humor and grace.

Goodbye Sunshine Princess.

তার অপার্থিব সৌন্দর্য্য

তার অপার্থিব সৌন্দর্য্য
– ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার অনুবাদ

তাকে প্রথম দেখার পর আমি খুব অবাক হই
যেন সে এক পলকের একটি অলংকার।
এক অপার্থিব সৌন্দর্য্যে মহিমান্বিতা।
তার চোখ দুটি যেন গোধুলির তারা
ভোরের লালিমা আর বসন্তের সব
সৌন্দর্য্য নিয়ে সে সৃষ্টিকর্তার এক
অভিনব সৃষ্টি নৃত্যের ভঙ্গিমায় আঁকা।
নিয়ত তার রূপ আমায় চমকিত করে,
বিচলিত করে আনমনে আনমনে।

তার অন্তর্মুখী রমনীয় কমনীয়তার প্রকাশ
প্রতি পদে পদে যখন সে গৃহকার্য্যে রত,
তার মুখাবয়ব মধুর স্মৃতি আর আশ্বাসে ভরা।
সে প্রাত্যহিক জীবনের জন্য একদম উপযুক্ত
না হলেও তার এই সাধারণ অথচ সাবলীল
মনোভাব আর গতিবিধি, তার মনের আপাত
দুঃখ, সহজ চাটুকারিতা, প্রশংসা, দোষারোপ,
ভালোবাসা, চুম্বন, অশ্রু এবং হাসি সব কিছুই
আমায় আকর্ষণ করে, উত্সাহিত করে।

এখন আমি যতই তাকে ভালোভাবে দেখি
তার জীবনের প্রতি পদক্ষেপ অনুভব করি।
তার জীবন আর মৃত্যুর অনুধাবন, অবিচলিত
আত্মবিশ্বাস, দূরদৃষ্টি, শক্তি, গুণাবলীতে সে
যেন বিধাতার একটি সম্পূর্ণ আর নিঁখুত সৃষ্টি।
তার উপস্থিতি আমায় সচকিত করে, সঠিক
পথের সন্ধান দেয়, মনকে শীতল করে।
তবুও আমার কাছে সে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র
যে এক অলৌকিক উপস্থিতিতে মহিমান্বিতা।