নিবিড় ঘন মেঘে ঢাকা তমসাবৃত
আকাশ শুভ্র চাঁদের আলোয় ভরা।
অস্পষ্ট সঙ্কুচিত গোলাকার চাঁদ
মৃদু আলো ছড়ায় যা পাথর, গাছপালা
আর মিনারের নকশা মাটিতে এঁকে দেয়।
সুদূরে চিন্তারত একাকী পথিক সুমধুর
চাঁদের আলোয় সচকিত হয়ে
অবনত মুখ তুলে উপরে তাকিয়ে দেখে
মেঘ সরে গেছে আর মেঘের ফাঁক দিয়ে
ফুটে ওঠে সুস্পষ্ট চাঁদ আর স্বর্গের দীপ্তি।
নীলাভ আঁধারে বাঁকা চাঁদ ভেসে যায়,
কত শত ক্ষুদ্র অথচ স্পষ্ট অগুন্তি নক্ষত্র
সুগভীর নীহারিকায় চাঁদের পথসঙ্গী হয়,
কত দ্রুত তারা বৃত্তাকারে ঘুরে যায়
কিন্তু অদৃশ্য হয় না, গাছে গাছে ঝরো বাতাস
বয়ে যায় কিন্তু তারা পথভ্র্যষ্ট হয় না
বহু যোজন দূরে থেকেও;
মেঘেদের সারি সারি তোরণ
অপরিমিত গভীরতায় গাড় হতে থাকে।
দূরে মন আর দৃষ্টি ক্রমশঃ শান্ত হতে থাকে,
চারিদিকের সুন্দর আর পবিত্র পরিবেশে মন
হয়ে যায় অচঞ্চল, ধ্যানমগ্ন।
( My translation in Bengali from “A Night-Piece” by William Wordsworth)
দূরে যেও না, এমন কি এক দিনের জন্যও নয়
কারণ আমি জানি না কি করে বোঝাই যে
একটা দিনও আমার কাছে অনেক লম্বা মনে হয়,
আর মনে হয় আমি যেন জনশূন্য স্টেশনে তোমার জন্য
একা অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে, সব ট্রেন অন্যত্র ঘুমিয়ে আছে।
আমায় ছেড়ে যেও না, এমন কি এক ঘন্টার জন্যেও…
কারণ একটু কষ্টও যে অসম্ভব যন্ত্রণা দেয়,
দাবানলের আগুন যেন ক্রমশঃ আমার দিকে ধেয়ে আসে
আমার লুপ্ত হৃদয়কে অবরুদ্ধ করতে।
তোমার ছায়া ঐ সমুদ্রতীরে যেন কখনো মিলিয়ে না যায়;
তোমার চোখের পলক যেন না কাঁপে ঐ সুদূর শূন্যতায়।
আমায় ছেড়ে যেও না এক মুহুর্তের জন্যও প্রিয়তম আমার,
কারণ ঐ এক মুহুর্তেই তুমি অনেক দূর চলে যাবে আর
আমি হতভম্বের মত সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াব আর
জিজ্ঞাসা করে বেড়াব তুমি কখন ফিরে আসবে ?
তুমি কি এভাবে আমায় ফেলে যাবে শেষ হয়ে যাবার জন্য ?
Don’t Go Far Off
Pablo Neruda
Don’t go far off, not even for a day, because –
because — I don’t know how to say it: a day is long
and I will be waiting for you, as in an empty station
when the trains are parked off somewhere else, asleep.
Don’t leave me, even for an hour, because
then the little drops of anguish will all run together,
the smoke that roams looking for a home will drift
into me, choking my lost heart.
Oh, may your silhouette never dissolve on the beach;
may your eyelids never flutter into the empty distance.
Don’t leave me for a second, my dearest,
because in that moment you’ll have gone so far
I’ll wander mazily over all the earth, asking,
Will you come back? Will you leave me here, dying?
ওয়েস্টমিন্সটার ব্রিজের উপরে
– উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ)
এই পৃথিবীতে এত সুন্দর আমি কিছুই দেখি নি :
এমন অভূতপূর্ব দৃশ্যকে যে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে সে তো মূর্খ :
দেখো শহর কেমন সুন্দর সাজ করেছে এই পবিত্র নীরব প্রভাতে,
দেখো জাহাজ, মিনার, গম্বুজ, রঙ্গশালা আর মন্দিরগুলি
কেমন দাঁড়িয়ে আছে মাটির উপর আকাশের নীচে।
সব কিছুই কেমন উজ্জ্বল আর ঝকঝকে বিশুদ্ধ বাতাসের আবরণে
সুর্য্য কখনো এত সুন্দরভাবে উদিত হয় নি এই পাথরে পাহাড়ি উপত্যকায়
কখনো এত গভীর প্রশান্তি আমি দেখি নি বা অনুভব করি নি।
নদী কেমন নিজের ইচ্ছেয় বয়ে চলে যায়:
ও ভগবান ! শহরের সব বাড়িগুলি এখনো কেমন সুষুপ্তিতে মগ্ন !
________________________________________
Upon Westminster Bridge
W. Wordsworth
Earth has not anything to show more fair:
Dull would he be of soul who could pass by
A sight so touching in its majesty:
This City now doth like a garment wear
The beauty of the morning:
silent, bare,
Ships, towers, domes, theatres, and temples
lie Open unto the fields,
and to the sky,
All bright and glittering in the smokeless air.
Never did sun more beautifully steep
In his first splendour valley, rock, or hill;
Ne’er saw I, never felt, a calm so deep!
The river glideth at his own sweet will:
Dear God! the very houses seem asleep;
And all that mighty heart is lying still!
এই সুন্দর শান্ত বিকেল যেন এক পবিত্র
সন্ন্যাসীনির ন্যায় প্রেমপরিপূর্ণ পরিশ্রান্ত,
সুর্য্য তার প্রশান্তির সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে।
সমুদ্রের উপর স্বর্গীয় নীরবতা —-
শোন সেই পরম শক্তি এখন জাগ্রত
তার অনন্ত গতি বজ্রের ন্যায় অবিশ্রান্তভাবে
শব্দ করে যায় —-
প্রিয় শিশু ও কন্যা, তোমরা যারা আমার সঙ্গে
এখানে হেঁটে গেছ, যদি এই পবিত্র রাত্রি
তোমাদের ছুঁয়ে নাও যায়
প্রকৃতি তবুও কম পবিত্র নয়।
তোমরা সবাই ঈশ্বরের বক্ষে আজীবন আশ্রিত
তোমরা জানো আর না জানো ভগবান
তোমাদের মনের মন্দিরেই বিরাজিত।
W. Wordsworth
By the Sea
IT is a beauteous evening, calm and free;
The holy time is quiet as a nun
Breathless with adoration; the broad sun
Is sinking down in its tranquility;
The gentleness of heaven is on the Sea:
Listen! the mighty being is awake,
And doth with his eternal motion make
A sound like thunder—everlastingly.
Dear child! dear girl! that walkest with me here,
If thou appear untouched by solemn thought
Thy nature is not therefore less divine:
Thou liest in Abraham’s bosom all the year,
And worshipp’st at the Temple’s inner shrine,
God being with thee when we know it not.
যে বাড়িতে আমি জন্মেছিলাম তা এখন মনে আছে
সেই ছোট্ট জানালা দিয়ে সকালের সুর্য্য উঁকি মারত;
কিন্তি কখন সে তাড়াতাড়ি করেও আসত না
অথবা দেরিও করত না।
কিন্তু এখন আমার প্রায়ই মনে হয় রাত্র যেন
আমার নিঃশ্বাস কেড়ে নেবে….
সাদা আর লাল গোলাপের কথা
বেগুনি আর হলুদ লিলি কাপ ফুলগুলো
আলা কেমন ঝলমল করে সবই মনে পড়ে।
ঐ যে লাইলাকের উপর রবিনের বাসা, যেখানে
আমার ভাই গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলে সাজিয়েছিলো
সেই গাছ আজও বেঁচে আছে।
আমার মনে আছে যেখানে আমি দোলনায় দুলতাম
সেখানে ফার গাছেরা ঘন আর লম্বা আর তারা
হাওয়ার দোলায় কেমন দুলত !
আমার মনটা তখন কতই না হালকা ছিল যা
ক্রমশই ভারী লাগে।
গ্রীষ্মে পুকুরের শীতল জল আমার জ্বরতপ্ত কপালকে
আর ঠান্ডা করতে পারে না।
আমার মনে আছে উঁচু উঁচু অন্ধকার ফারগাছ্গলোর
তীক্ষ্ণ মাথাগুলি কেমন আকাশ ছোঁয়া !
এই সব অনুভূতিই ছিল ছোটবেলার অনভিজ্ঞতা।
এখন আমার আর আনন্দ হয় না এই ভেবে যে
এখন আমি আমার শৈশবের স্বর্গ থেকে অনেক দূরে
Thomas Hood
Past and Present
I remember, I remember
The house where I was born,
The little window where the sun
Came peeping in at morn;
He never came a wink too soon
Nor bought too long a day;
But now, I often wish the night
Had borne my breath away.
I remember, I remember
The roses, red and white,
The violets, and the lily-cups–
Those flowers made of light!
The lilacs where the robin built,
And where my brother set
The laburnum on his birthday,–
The tree is living yet!
I remember, I remember
Where I was used to swing,
And through the air must rush as fresh
To swallows on the wing;
My spirit flew in feathers then
That is so heavy now,
And summer pools could hardly cool
The fever on my brow.
I remember, I remember
The fir frees dark and high;
I used to think their slender tops
Were close against the sky:
It was a childish ignorance,
But now ’tis little joy
To know I’m farther off from Heaven
Than when I was a boy.
তোমাকে একটি কথা আজ বলি …..
যখন আমি ওই ঝলমলে চাঁদের দিকে তাকাই,
বা জানালা দিয়ে শরতের লাল শাখা প্রশাখা দেখি,
অথবা আগুনে পোড়া কাঠগুলো ছুঁই
সব কিছুই শুধু তোমার স্মৃতি মনে করায়।
যে কোন আলো, গন্ধ, ধাতব স্পর্শ যেন
নৌকার মত তোমার দ্বীপে ভাসিয়ে নিয়ে যায়
যেখানে তুমি আমার প্রতীক্ষারত।
কিন্তু ধীরে ধীরে যখন তুমি আর আমায়
ভালোবাসতে চাইছো না,
আমিও তোমায় একটু একটু করে আর
ভুলে যেতে চাই।
তাই হঠাত যদি তুমি আমায় ভুলে যাও
আর আমায় না খোঁজো তুমি জানবে
আমি তোমায় আগেই ভুলে গিয়েছি।
যদি তুমি আমায় সমুদ্রচরে নির্বাসন দাও,
যেখানে আমার মূল আর শাখা প্রশাখা বিস্তারিত,
তবে জেনো সেই মুহুর্তে আমি অন্য কোন
সমুদ্রচরের দিকে যাত্রা করেছি।
কিন্তু যদি প্রতি মুহুর্তে তোমার মনে আমার
মধুর স্মৃতি মনে পড়ে যায়,
যদি প্রতিদিন একটি ফুল তোমার ঠোঁটে
আমায় খুঁজে বেড়ায়,
ওগো প্রিয় আমার জেনে রেখো আমি তোমার
কোন কিছুই ভুলি নি।
আমার ভালোবাসা এখনো তোমার জন্য
অপেক্ষা করে, এখনো তুমি আছ আমার
এই দুই বাহুর মধ্যে চিরদিনের জন্য।
ভারতীয় সুরের প্রতি
P. B. Shelley
Lines to an Indian Air
প্রথম রাত্রে এক মধুর স্বপ্নে
তোমায় দেখে জেগে উঠলাম,
মৃদু হাওয়ার ফিসফিসানি আর
তারাগুলো ঝলমল করছে
আরই যেন কেউ আমায় তোমার ঐ
ঘরের জানালার দিকে চোখ নিয়ে গেল।
বাতাসের গতি ধীরে ধীরে মন্দ হতে লাগলো
রাত আরও গভীর অন্ধকার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
চাঁপার গন্ধ কমতে লাগলো এক মিষ্টি স্বপ্নের মত।
বুলবুলি পাখিটির আওয়াজ আজ মৃত।
ও আমার প্রিয় আমিও তোমার বুকে
তোমারি সাথে মরতে চাই।
কেউ কী আছো ?
আমায় মাটি থেকে টেনে তোলো।
আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে মারা যাচ্ছি।
তোমার ভালোবাসার বৃষ্টির মতো
আমার ঠোঁটে আর বিবর্ণ
চোখের পাতায় ঝরতে দাও।
আমার গাল ঠান্ডা ও সাদা হায় !
আমার হৃৎপিণ্ড দ্রুত শব্দ করছে;
আমায় তোমার বুকে জোরে চেপে ধর
আর তার পরেই আমি চিরতরে বিদায় নেব।
[স্টিফেন হকিং আর লিওনার্দ লোদিনো-র লেখা “দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন” বইয়ের ‘হোয়াট ইজ রিয়ালিটি’ প্রবন্ধের কিছু অংশের অনুবাদ করেছিলাম দু’তিন বছর আগে। তার অল্প কিছুটা…]
বাস্তবতা কী?
কয়েক বছর আগে ইতালির মোনজা শহরের পৌরসভা গৃহপালিত পশু-পাখির মালিকদের গোল পাত্রে গোল্ডফিশ রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ব্যবস্থাগ্রহণকারী তার পদক্ষেপের আংশিক ব্যাখ্যা দেন এই বলে যে কোনও মাছকে বক্রতল-বিশিষ্ট পাত্রে রাখা একরকম নিষ্ঠুরতা, কেননা বাইরের দিকে তাকালে মাছ বাস্তবের একটা বিকৃত চেহারা দেখছে।
কিন্তু আমরা কী করে জানতে পারলাম যে আমাদের কাছেই বাস্তবের সত্য ও অবিকৃত চেহারাটাই আছে? এমন নয় তো যে আমরাই রয়েছি বড়ো গোল্ডফিশ-পাত্রের ভেতর আর একটা বিশালাকায় লেন্স আমাদের দৃষ্টি বিকৃত করে দিচ্ছে? গোল্ডফিশের বাস্তবের প্রতিচ্ছবি আমাদের চেয়ে আলাদা, কিন্তু আমরা কি নিশ্চিত হতে পারি যে সেটা কম বাস্তব?
গোল্ডফিশের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সঙ্গে মেলে না, তবুও তারা বৈজ্ঞানিক নিয়মের সূত্র আবিষ্কার করতে পারে যার সাহায্যে পাত্রের বাইরে দেখা বস্তুর গতিবেগ শাসন করা যায়। উদাহরণ হিসেবে, বিকৃতির জন্যে একটা স্বাধীন ভ্রমণশীল বস্তু যেটা আমাদের চোখে সরলরেখায় চলছে বলে মনে হয়, ওদের চোখে বক্ররেখা অনুসরণকারী হিসেবে ধরা দেবে। সে যাই হোক না, সোনালিমাছ তাদের বিকৃত দৃশ্য-বাস্তবতা থেকেই বৈজ্ঞানিক সূত্র প্রণয়ন করতে পারে যেটা সবসময় সত্যি হবে এবং যার জন্যে পাত্রের বাইরের বস্তুর ভবিষ্যত গতির ব্যাপারে অনুমান করতেও সক্ষম হবে তারা। আমাদের দৃশ্যজগতের নিয়মগুলো থেকে ওদেরটা আরও জটিল হবে, কিন্তু সরলতা তো কেবলমাত্র রুচির ব্যাপার। কোনও সোনালিমাছ এমন থিয়োরি তৈরি করলে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবের অকাট্য ছবি হিসেবে আমাদের মেনে নিতেই হবে।
বাস্তবের পৃথক ছবির একটা উদাহরণ হল মহাজাগতিক বস্তুর গতি বর্ণনার জন্যে ১৫০ খ্রিস্টাব্দে আনা টলেমি-র (৮৫ এ.ডি.-১৬৫ এ.ডি.) মডেল। টলেমি তার আবিষ্কারটি প্রকাশ করেছিলেন ১৩ খণ্ডের ভল্যুমে সাধারণত যা আরবি “আলমাজেস্ট” নামেই পরিচিত। আলমাজেস্ট শুরু হচ্ছে — পৃথিবীর যে গোলকের মতো আকারের, নিশ্চল, ব্রহ্মাণ্ডের মাঝখানে বসে আছে আর মহাকাশের সঙ্গে দূরত্বের তুলনায় তার চেহারা হিসেবে না আসার মতোই ছোট — এর কারণ ব্যাখ্যার ভেতর দিয়ে। আবার কোপার্নিকাস ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে এমন এক পৃথিবীর বর্ণনা দিলেন যেখানে সূর্য স্থির আর গ্রহগুলো বৃত্তাকার পথে তার চারদিকে ঘুরছে।
এখন, কোনটা বাস্তব, টলেমি না কোপার্নিকাসের নকশা? যদিও মানুষজনের পক্ষে এটা বলা অস্বাভাবিক নয় যে কোপার্নিকাস টলেমিকে ভুল প্রতিপন্ন করলেন, আসলে তা সত্যি নয়। যেমন আমাদের স্বাভাবিক দেখা বনাম সোনালিমাছের দেখা, যে কেউ এর কোনও একটা ছবি ব্যবহার করতে পারে ব্রহ্মাণ্ডের মডেল হিসেবে, কেননা মহাকাশ সম্পর্কে আমাদের পর্যবেক্ষণকে পৃথিবী বা সূর্য, যে কোনও একটিকে কেন্দ্রে রেখেই ব্যাখ্যা করা যায়। আমাদের মহাবিশ্বের প্রকৃতি বিষয়ে দার্শনিক বিতর্কে এর যাই ভূমিকা হোক না কেন, কোপার্নিকাসের ছাঁচের আসল সুবিধে হল স্রেফ এটুকু যে গতিবেগের সূত্রগুলোর সমীকরণ সেই ফ্রেম অফ রেফারেন্সে অনেক সরল যেখানে সূর্য স্থির অবস্থায় আছে।
এক ভিন্ন ধরণের বিকল্প বাস্তবতা দেখা গিয়েছে সায়েন্স ফিকশান সিনেমা “দ্য ম্যাট্রিক্স”-এ, যেখানে মানুষ নিজের অজান্তে বুদ্ধিমান কম্পিউটারের তৈরি এক সিমুলেটেড ভার্চুয়াল বাস্তবতার মধ্যে বাস করছে যাতে তারা শান্ত আর সন্তুষ্ট থাকে আর সেই ফাঁকে কম্পিউটার মানুষের জৈব-বৈদ্যুতিক শক্তি (সে জিনিসটা যাই হোক না কেন) শুষে নেয়। এই ভাবনা হয়তো খুব বেশি কষ্টকল্পিত নয়, কেননা অনেক মানুষ ওয়েবসাইটগুলোর অনুকারক বাস্তবতার মধ্যে সময় কাটাতে পছন্দ করে যেন এটা তাদের দ্বিতীয় জীবন।
কীভাবে জানলাম যে, কম্পিউটারের তৈরি একটা সোপ অপেরাতে আমরা জাস্ট কয়েকটা চরিত্র নই? যদি আমরা একটা কৃত্রিম কাল্পনিক জগতে বাস করতাম, ঘটনার কোনও যুক্তিগ্রাহ্যতা বা ধারাবাহিকতা থাকত না, তারা মেনে চলত না কোনও নিয়মও। ভিনগ্রহের প্রাণী যাদের নিয়ন্ত্রণে আমরা, আমাদের প্রতিক্রিয়া তাদের আরও বেশি মজার লাগত। ধরুন, পূর্ণ চাঁদ ভেঙ্গে অর্ধেক হয়ে গেল অথবা পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের কলার ক্রিম পি-র ওপর সামলানো-যায়-না এমন এক ভয়ানক লোভ তৈরি হয়েছে। কিন্তু যদি অন্য গ্রহের প্রাণীরা নতুন কোনও নিয়ম প্রণয়ন করে থাকে, আমরা কোনওভাবেই তাদের জানাতে পারব না যে এই ছদ্মবেশী বাস্তবের বাইরেও একটা বাস্তবতা ছিল। অ্যালিয়েনরা যে পৃথিবীতে বাস করে সেটাকেই “সত্যি” বলা ঠিক হবে আর কৃত্রিম পৃথিবীকে “মিথ্যে”। কিন্তু আমাদের মতো সিমুলেটেড জগতের সত্তারা বাইরে থেকে যদি তাদের ব্রহ্মাণ্ডকে দেখতে না পায়, তাদের নিজেদের মনের ছবিকে সন্দেহ করার কোনও কারণই থাকবে না। এটা হল সেই চিন্তার আধুনিক চেহারা যে আমরা প্রত্যেকেই অন্য কারও স্বপ্নের অংশ।
চাঁদের প্রাণিগুলো ঘুরছিল আর শুঁকছিল তাদের কুটীরের চারপাশ।
যে লোকগুলো স্বপ্ন দেখেনা তাদের কামড়ে দেবে এসে জীবন্ত গুঁইসাপ,
এবং ভগ্নহৃদয়ে পালিয়ে যাওয়া লোকটাকে পাওয়া যাবে রাস্তার মোড়ে তারাদের মৃদু প্রতিবাদের শান্ত তলদেশে অবিশ্বাস্য কুমিরগুলো।
ঘুমায়না কেউ পৃথিবীতে। কেউ নয়, কেউনা।
কেউ ঘুমায়না।
দূরের এক সমাধিতে একটি শবদেহ
পুড়ছে তিন বৎসর ধরে
কারণ তার হাটুর নীচে একটি গ্রামীণ শুষ্ক ভূমি
এবং যে সকালে তারা সমাধিস্থ করেছিল ওই ছেলেটিকে কেঁদেছিল অনেক
তাকে শান্ত করার জন্য প্রয়োজন ছিল কুকুরগুলোকে ডেকে পাঠানোর।
জীবন একটি স্বপ্ন নয়, সাবধান! সাবধান! সাবধান!
আমরা সিঁড়ি থেকে নেমে যাই ভেজামাটির স্বাদ অনুভবের জন্য
অথবা আরোহন করি বরফের ক্ষুরধার প্রান্তে মৃত ডালিয়ার কণ্ঠস্বরের সাথে।
কিন্তু বিস্মরণ বলে কিছু নেই, স্বপ্নও নেই।
অস্তিত্ব আছে মাংসের। নতুন একগুচ্ছ শিরায়
চুম্বন আমাদের মুখগুলোকে জুড়ে রাখে,
এবং এই ব্যাথাকে যে জেনেছে সে আজীবন জেনেই যাবে
এবং আজীবন মৃত্যুকে বহন করবে তার কাঁধে যে ভয় পায় সে।
একদিন
ঘোড়াগুলো বাস করতে আসবে পান্থশালায়
এবং ক্ষিপ্ত পিঁপড়েগুলো
নিজেদের নিক্ষেপ করবে গরুর চোখে আশ্রিত হলুদ আকাশে।
একদিন
আমরা সংরক্ষিত প্রজাপতিগুলোকে দেখবো মৃতদেহ থেকে উঠে আসতে
কিন্তু তখনও হাঁটছে ধুসর শৈবাল এবং স্তব্ধ নৌকার রাজ্যে।
আমরা দেখবো আমাদের আংটিগুলোর বিচ্ছুরণ এবং জিহ্বা থেকে গোলাপের ঠিকরে ওঠা।
সাবধান! সাবধান হও! সাবধান হও!
যাদের এখনো আছে বজ্রপাত এবং নখরের চিহ্নগুলো,
এবং ওই ছেলেটি যে কাঁদে কোনদিন সেতু আবিষ্কারের গল্প
শোনেনি বলে,
অথবা ওই মৃত লোকটি যে এখন মালিক শুধু তার একটি জুতো এবং মাথাটার,
আমরা অবশ্যই তাদের নিয়ে যাবো সেই দেয়ালের কাছে যেখানে অপেক্ষায় আছে গুঁইসাপ
এবং বিষধরেরা,
যেখানে ভালুকের দাঁতগুলো অপেক্ষায় আছে,
যেখানে অপেক্ষায় আছে ছেলেটির মমিকৃত হাত,
শেষপ্রান্তে দাঁড়ায় উটের কেশরগুলো তীব্র নীল কম্পনের সাথে।
কেউ ঘুমাচ্ছেনা আকাশে। কেউ নয়, কেউনা।
ঘুমাচ্ছেনা কেউ।
যদি কেউ বন্ধ করে তার চোখ
একটি চাবুক, ছেলেরা, একটি চাবুক!
খোলাচোখগুলোর দৃশ্যচিত্র হতে দাও
এবং আগুনের যন্ত্রণাক্ত ক্ষত।
এই পৃথিবীতে কেউ ঘুমাচ্ছেনা। একজনও না, নয় একজনও।
আমি এটা আগেই বলেছি।
কোন একজনও ঘুমাচ্ছেনা।
কিন্তু কেউ যদি রাত্রে তার মন্দিরে খুব বেশি শ্যাঁওলার জন্ম দেয়,
মঞ্চের চোরাদরোজাগুলো খুলে দাও সে যেন চাঁদনি দেখতে পারে
মিথ্যা পানপাত্রগুলো, বিষ এবং রঙ্গমঞ্চের খুলি।
(City That Does Not Sleep – Federico Garcia Lorca)
ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা
[ অনুবাদকের কথা: ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা বিশ্বসাহিত্য- অঙ্গনে এক সুপরিচিত নাম। লোরকাকে স্পেনের সর্বাপেক্ষা মহান কবি হিসেবে এবং বিশিষ্ট নাট্যকারদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার জন্ম ৫ জুন ১৮৯৮, স্পেনের ফুয়েন্তে ভ্যাকুয়ারসে। তাঁর পিতা ফেডারিকো গার্সিয়া রড্রিগেজ ছিলেন একজন সম্পন্ন কৃষক। মা ভিসেন্তা লোরকা রোমেরিও ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক এবং পিয়ানোবাদক। স্পেনিয় নামকরণ রীতি অনুসারে ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা নামের গার্সিয়া এসেছে পৈতৃক সূত্রে এবং লোরকা এসেছে মায়ের সূত্রে। মা ভিসেন্তা লোরকা রোমেরিও ছিলেন লোরকার আইডল। ১৯৩৬ সালের ১৯ অথবা ২০ আগস্ট বিনা বিচারে জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর সমর্থকদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তিনি।
কিন্তু খাঁচার মাঝে আবদ্ধ যে পাখিটির
ডানা আর পা বেঁধে রাখা হয়েছে,
সে শুধু তার দৃষ্টির সীমাবদ্ধতায়
আপন মনে গান গেয়ে যায়।
তার গান দূরে বহুদূরে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ে
সে কেঁদে কেঁদে তার মুক্তির গান গেয়ে যায়।
মুক্ত পাখীটি খোলা হাওয়ায় সকালের আলোয়
উজ্জ্বল ঘাসের ফাঁকে তার খাদ্য খুঁজে নেয়।
কিন্তু খাঁচার পাখিটি আতঙ্কগ্রস্তের ন্যায়
তার ছায়ার দিকে তাকিয়ে রাতের আঁধারে
শুধু মুক্তির গান গেয়ে যায়।
I know why the caged bird sings
Maya Angelou
A free bird leaps on the back
Of the wind and floats downstream
Till the current ends and dips his wing
In the orange suns rays
And dares to claim the sky.
But a BIRD that stalks down his narrow cage
Can seldom see through his bars of rage
His wings are clipped and his feet are tied
So he opens his throat to sing.
The caged bird sings with a fearful trill
Of things unknown but longed for still
And his tune is heard on the distant hill for
The caged bird sings of freedom.
The free bird thinks of another breeze
And the trade winds soft through
The sighing trees
And the fat worms waiting on a dawn-bright
Lawn and he names the sky his own.
But a caged BIRD stands on the grave of dreams
His shadow shouts on a nightmare scream
His wings are clipped and his feet are tied
So he opens his throat to sing.
The caged bird sings with
A fearful trill of things unknown
But longed for still and his
Tune is heard on the distant hill
For the caged bird sings of freedom.
এই আপেলগুলোর স্বপ্নে আমি ঘুমুতে চাই,
সমাধিক্ষেত্রের কোলাহল থেকে উঠে এসে।
ওই শিশুটির স্বপ্নে আমি ঘুমুতে চাই
যে উত্তাল সমুদ্রে ছিন্ন করতে চেয়েছিল তার হৃদয়।
মৃতদের রক্তক্ষরণ হয়না একথাটি আর শুনতে চাইনা,
ওই যে গলিত মুখগুলো যায় জলের সন্ধানে,
আমি শিখতে চাইনা ঘাসের এই নির্যাতন,
দেখতে চাইনা ভোরের আগে কর্মচঞ্চল চাঁদের সর্পাকৃতি মুখ।
কিছুক্ষণ ঘুমুতে চাই
কিছুক্ষণ, এক মিনিট, এক শতাব্দী;
কিন্তু সবাইকে অবশ্যই তা জানতে হবে আমি মরে যাইনি।
যেহেতু আমার ঠোঁটগুলোতে স্বর্ণখণ্ড
যেহেতু আমি ওয়েস্ট উইংয়ের এক ক্ষুদে বন্ধু
যেহেতু আমি আমার কান্নার তীব্র ছায়া।
ভোরে আমাকে ঢেকে রেখো একটি আচ্ছাদনে
কারণ ভোর আমার দিকে ছুড়ে দেবে মুঠোভর্তি পিপীলিকা,
এবং আমার জুতোগুলো ভিজিয়ে দিও খর জলে
যেন পিছলে যেতে পারে বৃশ্চিকের চিমটিগুলো।
যেহেতু আমি আপেলগুলোর স্বপ্নে ঘুমুতে চাই
শিখতে চাই সেই আর্তনাদ যা আমাকে শুচি করে দেবে মৃত্তিকার সাথে;
যেহেতু আমি থাকতে চাই ওই তমসাচ্ছন্ন শিশুটির সাথে
যে তার হৃদয় ছিন্ন করতে চেয়েছিল উত্তাল সমুদ্রে।
(Gacela of the Dark Death – Federico Gercia Lorca)
ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা
[ অনুবাদকের কথা: ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা বিশ্বসাহিত্য- অঙ্গনে এক সুপরিচিত নাম। লোরকাকে স্পেনের সর্বাপেক্ষা মহান কবি হিসেবে এবং বিশিষ্ট নাট্যকারদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার জন্ম ৫ জুন ১৮৯৮, স্পেনের ফুয়েন্তে ভ্যাকুয়ারসে। তাঁর পিতা ফেডারিকো গার্সিয়া রড্রিগেজ ছিলেন একজন সম্পন্ন কৃষক। মা ভিসেন্তা লোরকা রোমেরিও ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক এবং পিয়ানোবাদক। স্পেনিয় নামকরণ রীতি অনুসারে ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা নামের গার্সিয়া এসেছে পৈতৃক সূত্রে এবং লোরকা এসেছে মায়ের সূত্রে। মা ভিসেন্তা লোরকা রোমেরিও ছিলেন লোরকার আইডল। ১৯৩৬ সালের ১৯ অথবা ২০ আগস্ট বিনা বিচারে জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর সমর্থকদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তিনি।
স্বর্গের স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমোও ত এবার
হাসিমাখা চোখ দুটি কেমন আধবোজা হয়ে আছে
গোলাপী রঙের হাসিমাখানো ঠোঁট দুটি
একটু নড়ে ওঠে আর তখন সুগন্ধি নিঃশ্বাস টের পাই।
এখন তার গালদুটি সলজ্জে লাল
শ্বেতশুভ্র গ্রীবায় শালটি জড়ানো
সে কখনো ফিসফিস করে কথা কয়,
আবার কখনো সে সাধারন স্বরে কিছু বলে ওঠে
আমার ভয় লাগে সেসব কথা শুনতে।
সে ঘুমের মাঝে কেঁপে ওঠে, কেঁদে ওঠে,
তার সুন্দর হাত দুখানি বুকের উপর জড় করা।
কেমন সুন্দর সে পবিত্র দেবশিশুর ন্যায় ঘুমে আচ্ছন্ন
যেন কোন দেবকন্যা তার বিশ্রামাগারে শায়িতা
নিশিন্তে ঘুমাও, সব চিন্তা ভগবানের উপর ছেড়ে দাও
তোমার মনের সব গোপন কোথা সেই পবিত্রস্থানেই থাক !