বিভাগের আর্কাইভঃ অনুবাদ

দেবদুতের স্পর্শ

দেবদুতের স্পর্শ
Touched by an Angel
(by Maya Angelou)

একাকীত্বের খোলসে লুকোনো আমাদের ভীরু মন
অপেক্ষা করে মহিমান্বিত ভালোবাসার আগমন
তার পুণ্য মন্দির থেকে আমাদের চোখের সামনে।

ভালোবাসার সাথে জড়ানো থাকে অতীতের
বেদনা ভরা স্মৃতি যা মনকে আরও ভারাক্রান্ত করে
কিন্তু অটুট মনের বিশ্বাস আমাদের আত্মগ্লানি আর
ভয়ের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

ধীরে ধীরে স্তিমিত মন ভালোবাসার উজ্জ্বল আলোয়
উদ্ভাসিত হয় ভয়ের খোলস থেকে পায় চিরমুক্তি।
আমরা অবশেষে উপলব্ধি করি ভালোবাসাই জীবনে
সুধারস আনে আর মানবাত্মা পায় অনন্ত মুক্তির স্বাদ।

হাওয়া- পরিবার

হাওয়া- পরিবার

তিন পুরুষ ও নারী মিলে হাওয়ারা মোট ছ’ জন। ঠান্ডা পশ্চিমা হাওয়া “ঘিগের ঘিগের” ওয়ান্ নামের এক কাকের পাহারায় কাঠের ঘরে বন্দি থাকতো। চন্ডমূর্তী স্বভাবের এই নারী হাওয়াটি মাঝে মাঝে ফাঁকতাল বুঝে পালালে, সঙ্গে সঙ্গে ওয়ান্ তাকে জবরদস্তি ফিরিয়ে আনতো। কিন্তু কালক্রমে কাঠের আবাসটি ক্ষয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলে অবাধ্য পশ্চিমা হাওয়া বিশাল ঝড়ে গোটা পৃথিবীতে হালচাল মচিয়ে দিল।

দক্ষিণা হাওয়াবিবি “গুরুনডিলবে” বাস করতো “মুলিয়ান” নামে এক ঈগলের তত্ত্বাবধানে। মুলিয়ান “গুরুনডুডিলবে”র পিঠে চেপে আকাশে সফর করে বিশালাকায় মেঘস্তম্ভের নির্মাণ করতো।

দক্ষিনপূর্ববাতাস”ইয়েরাগে”র আবার তিন বৌ। যখন সে তার বৌদের সঙ্গে প্রেমে লিপ্ত হতো, “বাডথা”, “বিবিল” আর “বাম্বল” গাছেরা ফুলে- ফলে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতো। বস্তুত ইয়েরাগে হ’ল বসন্তের প্রতীক।

উত্তর বাতাস “ডোরানডোরান”ও ছিল প্রকৃত প্রেমিক স্বভাবের। তার চুম্বন থেকে প্রস্ফুটিত হয়ে পুষ্প সাজে সেজে উঠতো কুলা, নুনগাহ্ আর কুরাজং গাছেরা। পূর্ববাতাসের নাম ছিল” গিনিয়াহমু”। সেও তার সাধ্যমতো পৃথিবীতে বিভিন্ন গাছে ফুল- ফল উৎপাদন করতো। তিন বাতাসের বৈধ তিন হাওয়া বৌরা এমন চন্ডমূর্তি ছিল যে তারা বৌদের মুখদর্শন করতোনা।

বছরে দুবার বিখ্যাত করোবরি উৎসবের সময় প্রত্যেক স্ত্রী – হাওয়া মুক্তি পেতো, কারন উৎসবে সবার উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক। ছাড়া পেয়েই ওই বন্য- উগ্রচণ্ডা হাওয়ারা অপরিসীম ক্রোধে সমস্ত গাছপালা ভেঙ্গে চুরে লণ্ডভণ্ড করে দিত, কারন গাছেরা তাদের স্বামীর কাছ থেকে প্রেম চুরি করে পুষ্পবতী- ফলবতী হয়েছে। এই চন্ডমুন্ডাদের স্বভাবের একদমই বিপরীতে পুরুষবায়ুূূরা ছিল অত্যন্ত ভদ্র- সভ্য। তাদের প্রেমস্পর্শেই পৃথিবী জুড়ে গাছে গাছে কচিপাতা, ফুল,ফল আসে। পৃথিবী মোহময়ী রূপে সেজে উঠতে পারে। রক্ষা পায় প্রাণীকুল।
_________________________________

A.W.REED. “Aboriginal Myths,Legends& Fables” থেকে অনুদিত।

মিঁয়া- বিবি V/S ৩য় ব্যক্তি

মিঁয়া- বিবি v/s ৩য় ব্যক্তি
__________________

বর ঝিনুক আর বৌ-কাছিম অন্য আর পাঁচ জনের মতো বেশতো ছিল। তবে কিছুদিন গড়াতেই গিন্নী যথারীতি কর্তার ওপোর তিতিবিরক্ত হয়ে উঠলো। লাটসাহেব দিবারাত্রি সমুদ্রতীরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে রোদ পোয়াবেন, আর হুকুৃম চালাবেন। আজই যেমন সাতসকালে :
– ওগো, খুব তেষ্টা পেয়েছে। শিগগিরি আমার সুমুখে কুয়ো খুঁড়ে দাও দিকিনি…
বৌয়ের বরফ-ঠাণ্ডা চোখ।– আমার যটা হাত, তোমারও তো তটাই…
– কার কটা হাত, আমার সে হিসেবে কাজ নেই। যা বলছি, করো। এমন ছোটোলোকের ঘরের মেয়ে, যে স্বামীকে তেষ্টার জলও একটু দেবে না……
কাছিম কাজ ফেলে একলাফে বরের সামনে, ঝাঁঝের সঙ্গে হাত নাড়িয়ে বললো,
– এইতো দুটো হাত।সকাল থেকে জ্বালানির কাঠ কেটেছি, এখন উনুন গড়ছি, আবার এই দুটো হাতেই তো গুষ্টির পিণ্ডি পাকাতে হবে। বাড়তি হাত কোথায় যে তোমার কুয়ো খোঁড়ার কাজে লাগাবো?

মেয়েছেলের মুখে কিনা এতো- এতো কথা!
ঝিনুক তড়াক্ করে একলাফে বৌয়ের ঘাড় চেপে ধরে দমাদ্দম পেটাতে লাগলো। বেশটি করে হাতের সুখ করে মনের ঝাল মিটিয়ে সোনামুখ করে জিজ্ঞেস করলো,
– আমার হাতের এই নিপুণ ব্যবহার কেমন লাগলো, সুইটি?
মিন্টিনটা, মানে কাছিম – বৌ, সিম্পলি দুহাতে ঝিনুককে তুলে মাথাটা বালিতে গুঁজে দিল। ব্যস, লেগে গেল দুতরফের ঝটাপটি – ঝটাপটির সঙ্গে ইনোভেটিভ গালাগালির তুমুল ছররা। আক্ষরিক জগঝম্প।

‘আকামা’ নামের এক বিশালদেহী তিমি সে মূহুর্তে সমুদ্রের তীর ঘেঁষে প্রাতঃভ্রমণ সারছিলেন। ওদের কাণ্ড দেখে বুঝলেন যে এক্ষুনি দুজনকে ছাড়িয়ে না দিলে কেউ না কেউ প্রাণে মারা পড়বেই। বিবেচনা মতো আকামা দুজনকে দুহাতে ধরে পরস্পরের উল্টোদিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো, — খুব হয়েছে বাপু তোমাদের ঘরকন্না করা! জঙ্গলের পশুদের মতো বিহেব করছো। আর তোমাদের একসঙ্গে থেকে কাজ নেই। আজ থেকে ভদ্রভাবে যে যার মতো আলাদাভাবে বাঁচো।…

তৎক্ষনাৎ, আকামা তখনো পিছু ফিরতে সময় পায়নি, মিন্টিনটা ত্বরিতে তোড়ে তেড়ে এসে আঁচড়ে- কামড়ে রক্তাক্ত করে দিল তাকে, ওদিকে স্বামী ঝিনুক ও কোথা থেকে একটা লাঠি কুড়িয়ে এনে দমাদ্দম পেটাতে লাগলো তিমিকে।
তিমিতো হতবাক,—ওমা! আমি তো তোমাদের শুধু সাহায্য করতে চেয়েছি। অথচ তোমরা কিনা…….

স্বামী-স্ত্রী একযোগে খিঁচিয়ে উঠলো,
– সত্যি যদি সাহায্য করতেই চাও, তো পত্রপাঠ বিদেয় হও এখান থেকে। আর জীবনে কখনো কোন দাম্পত্য কলহে নাক গলাবে না।…
তড়িঘড়ি তিমি পালিয়ে বাঁচলো

সেই থেকে জীবনে আর কখনো বিশালদেহী তিমি সমুদ্রতীর ঘেঁষা অল্প জলের ধারেকাছেও আসেনা। নিজের রাজ্য, গভীর সমুদ্রে থেকেই নিজের চরকায় তেল দেয়।

আর আবহমান কাল ব্যাপী কাছিম দিবারাত্রি বালি খুঁড়ে গর্ত করেই চলেছে শুধুমাত্র নিজের ডিমগুলিকে সুরক্ষিত রাখার আকুলতায়। ঝিনুককে জল খাওয়াতে তার বয়েই গেছে।

A.W. Reed এর Aboriginal Myths, Legends & Fables থেকে অনুদিত।
___________________________________

তুই’ই কবিতা, তুই শব্দের কারিগর

তুই’ই কবিতা, তুই শব্দের কারিগর

একটা কবিতা লিখতে বলেছিলি আমায় তুই,
তোকে নিয়ে;
তুই একটা পাগল, প্রেম পোকা
আমি কবিতার কি বুঝি রে বোকা?

শব্দের পিঠে শব্দ গাঁথলেই কি আর কবিতা হয়?
যার মন আছে তাকে দিয়েই কাব্য হয়
যেমন তুই,
যে প্রেম করতে জানে তার কবিতা হয়
যেমন তুই,
যে ভালোবাসতে জানে সে সবার হৃদয়ে রয়
যেমন তুই,
তোর কলমেই তো কাব্য হয়
তোর কলমেই কবিতা হয়
আমি কারো নই রে
আমার কেও নয়,
আমাকে দিয়ে কিভাবে কবিতা হয়?

নিজের ভেতর অনেক আঁতিপাঁতি খুঁজেছি আমি
মন বলে কোথাও কিছু পাই নি
প্রেমে আমার বড্ড এলার্জি
ভালোবাসা?
সেটা আবার কি?
আমি তো শব্দের কারিগর নই
আমাকে দিয়ে কি কবিতা হয়?

তুই যখন বৃষ্টির গায়ে রোদের রংধনু দেখিস
আমি চাঁদের গায়ের কলঙ্ক দেখি
বৃষ্টির গানে তোর যখন তা ধেই ধেই নাচ
মধ্য দুপুরে আমার মাথায় তীব্র রোদের আঁচ,
চাঁদ আর সূর্যের দূরত্বে ব্যবধান অনেক
ব্যবধান রোদ আর জ্যোৎস্নার
ব্যবধান দিনের সাথে রাতের
ব্যবধান নৌকার সাথে জাহাজের,
ব্যবধান ভালোবাসার সাথে ঘৃণার
বিশাল ব্যবধান তোর সাথে আমার;

তুই যখন কবিতা পরিস
আমি ছাত্র পড়াই পেটের টানে
তুই যখন ভালোবাসায় চন্দ্রাহত
আমি ঠা ঠা রোদে পুড়তে পুড়তে খাদ্যাহ্নেষণে,
আমার হাত মজুরের
আমার হৃদয় পাথরের
আমি কবিতার কি বুঝি রে!
আমাকে দিয়ে কি কবিতা হয়?

ক্ষুধার সাথে পেট কথা কয়
চাঁদ, আমার চাঁদ-রুটি নয়
লেখকের কলমে গল্প হয়
কবির কলমে কবিতা
তোর মনে ভালোবাসা
আমার পেট চেনে ক্ষুধা;

কবিতা লিখবে সে
তোকে ভালোবাসে যে,
আমি পাথর হৃদয়
আমাকে দিয়ে কি কবিতা হয়?

আরে বোকা! তুই তো নিজেই কবিতা
তুই’ই শব্দের কারিগর
তোর হৃদয়ে ভালোবাসা রয়
তোর কলমেই কবিতা হয়
আমার পাথর হৃদয়
আমাকে দিয়ে কি কবিতা হয়?

পাবলো নেরুদার কবিতা : যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও

পাবলো নেরুদার কবিতা : যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও

আমি তোমাকে
একটি কথা জানাতে চাই

তুমি জানো তা কেমন করে:
যদি তাকিয়ে থাকি স্ফটিক চাঁদের দিকে
আমার জানালায় ধীর শরতের লালিম শাখায়,
যদি স্পর্শ করি
আগুনের পাশে
স্পর্শাতীত ছাই
অথবা জরাজীর্ণ কাঠের গুঁড়ি,
সব কিছু আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যায়,
যেন সবই অস্তিত্বময়,
সুরভীটুকু, আলো,ধাতুগুলো,
ছোট্ট নৌকাগুলোর
পাল ছিল
আমার প্রতীক্ষারত তোমার দ্বীপগুলোর দিকে।

বেশ, এখন,
যদি একটু একটু করে থামিয়ে দাও আমাকে ভালোবাসা
আমিও অল্প অল্প করে রুদ্ধ করে দেবো তোমাকে ভালোবাসা।

যদি আকস্মিক,
তুমি আমাকে ভুলে যাও
আর খুঁজোনা আমাকে
কারণ এরমাঝেই আমি ভুলে যাবো তোমাকে।

যদি তুমি এটা দীর্ঘ এবং মাতলামো ভাবো,
বৈজয়ন্তী বায়ুপ্রবাহের ভেতরে বয়ে যায় আমার জীবন,
এবং তোমার সিদ্ধান্ত
আমাকে ছেড়ে যাওয়া সেখানে
হৃদয়ের যে তটরেখায় আমার অধিষ্ঠান,
মনে রেখো
সেটা সেই দিন
সেই প্রহর
আমি আমার বাহুদ্বয় উত্থিত করবো
এবং আমার শেকড় উঠবে অন্য ভূমির সন্ধানে।

কিন্তু
যদি প্রতিদিন,
প্রতি ঘন্টা,
তুমি অনুভব করো তুমি এগিয়ে আসছো আমার দিকে
তোমার অপ্রশম্য মধুরতা সহ,
যদি প্রতিদিন একটি পুষ্প
তোমার ওষ্ঠদ্বয়ে আরোহণ করে আমার সন্ধানে,
আহ আমার প্রেম, আহ আমার আপন,
আমার মাঝে পুন: প্রজ্বলিত হয় সে সব আগুন
আমার মাঝে কিছুই নি:শেষ হয়নি অথবা হয়নি বিস্মৃত।
আমার ভালোবাসা শুষে নেয় তোমার প্রেম, প্রিয়,
এবং যতদিন বেঁচে থাকবে তুমি তোমার বাহুডোরে থাকবে
আমাকে না ছেড়ে।

[If You Forget Me – Pabolo Neruda]

লেখক পরিচিতি: পাবলো নেরুদা (১২ জুলাই, ১৯০৪ – ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩) ছিলেন চিলিয়ান কবি ও রাজনীতিবিদ। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো। পাবলো নেরুদা প্রথমে তাঁর ছদ্মনাম হলেও পরে নামটি আইনি বৈধতা পায়।

পাবলো নেরুদাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী লেখক মনে করা হয়। তাঁর রচনা অনুদিত হয়েছে একাধিক ভাষায়। ১৯৭১ সালে নেরুদাকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক গাব্রিয়েল মার্সিয়া মার্কেজ একদা নেরুদাকে ‘বিংশ শতাব্দীর সকল ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি‘ বলে বর্ণনা করেন।

পাবলো নেরুদার কবিতা : আমাকে রেখে দাও একটি গুপ্তস্থানে

পাবলো নেরুদার কবিতা : আমাকে রেখে দাও একটি গুপ্তস্থানে

আমাকে রেখে দাও ভূগর্ভস্থ একটি স্থানে, একটি গোলকধাঁধায়,
যেখানে আমি যেতে পারি,
যখন ফিরতে চাই
দৃষ্টিহীন, স্পর্শহীন,
পরিত্যক্ত, নির্বাক পাথরে, অথবা ছায়ার অঙ্গুলিতে।
আমি জানি তুমি তা পারবেনা, কেউ না, কিছুই পরিত্যাগ করতে পারেনা
সেই স্থান
অথবা সেই পথ,
কিন্তু কি করতে পারি আমি আমার দরদপূর্ণ তীব্র আবেগের সাথে,
যদি তারা অব্যবহৃত থাকে, প্রাত্যহিক জীবনের প্রান্তসীমায়,
যদি আমি দৃষ্টি নিবদ্ধ না করি টিকে থাকার দিকে,
প্রত্যাশা মৃত্যুর দিকে, অতিক্রম করছে, প্রবিষ্ট হচ্ছে এই অবস্থায়
ধাতব এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন, আদিম অগ্নিশিখায়?

(Leave Me A Place Underground – Pablo Neruda)

লেখক পরিচিতি: পাবলো নেরুদা (১২ জুলাই, ১৯০৪ – ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩) ছিলেন চিলিয়ান কবি ও রাজনীতিবিদ। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো। পাবলো নেরুদা প্রথমে তাঁর ছদ্মনাম হলেও পরে নামটি আইনি বৈধতা পায়।

পাবলো নেরুদাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী লেখক মনে করা হয়। তাঁর রচনা অনুদিত হয়েছে একাধিক ভাষায়। ১৯৭১ সালে নেরুদাকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক গাব্রিয়েল মার্সিয়া মার্কেজ একদা নেরুদাকে ‘বিংশ শতাব্দীর সকল ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি‘ বলে বর্ণনা করেন।

অনুবাদ কবিতা : যখন তুমি বুড়ো

যখন তুমি বুড়ো
অনুবাদ কবিতা : When You Are Old :

হলে যেই পুরাতন ধূসর
নিদ্রায় কাটে সকল অবসর;
স্বপ্ন যত তখন তুলতুলে
বইপাতার মত হেলে দুলে।

নেতিয়ে তনু মন ঝিমায়
পথ অগ্নি লেলিহান শিখায়;
স্বপ্নপথে ধারালো পাথর
স্লথ গতি অন্তে যেন সাগর।

কত ঐ সুখ মধু মুহূর্তে
প্রেমে সিক্ত চোখের ছায়াতে;
কেউ আবার মিছিমিছি
বড় কাছাকাছি দুধের মাছি।

তবে ছিল সে একজন
শোকে ও দূঃখে তারই নয়ন;
যেন চির সঙ্গী তীর্থযাত্রী
ছিল সেতো জীবন জ্যোতি।

প্রেম তার কত অবিচল
স্রোতস্বিনী সুরগান কলকল;
গোপন পর্বত পাহাড়ে
লুকিয়ে গেছে তারার ভিড়ে।

মূল : William Butler Yeats

মধুর অনুযোগের সনেট /ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা

মধুর অনুযোগের সনেট /ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা
অনুবাদ- নাজনীন খলিল

আমাকে কখনো হারাতে দিওনা এই বিস্ময়
তোমার স্ট্যাচুর মতো চোখের, অথবা এই স্বরসঙ্ঘাত
তোমার নিঃশ্বাসের স্বতন্ত্র গোলাপ
যা রাত্রে স্থাপিত হয় আমার কপোলে।

আমি তটস্থ থাকি, এই সৈকতে
এই শাখাহীন গুঁড়ি, যা আমার তীব্র অনুতাপ
পুষ্পহীনতা, শাঁস অথবা মৃত্তিকা
আমার উদ্যমহীনতার জীবাণুর জন্য।

তুমি যদি হও আমার গুপ্তধন
তুমি যদি হও আমার দুর্দশা, আমার বিষণ্ন যন্ত্রণা
যদি আমি হই সারমেয়, তুমি একাকী আমার প্রভু।

কখনো হারাতে দিওনা যা পেয়েছি আমি,
এবং সাজিয়ে দেবো তোমার নদীর শাখা
আমার বিচ্ছিন্ন শরতের পত্র-পল্লবে।

Never let me lose the marvel
of your statue-like eyes, or the accent
the solitary rose of your breath
places on my cheek at night.

I am afraid of being, on this shore,
a branchless trunk, and what I most regret
is having no flower, pulp, or clay
for the worm of my despair.

If you are my hidden treasure,
if you are my cross, my dampened pain,
if I am a dog, and you alone my master,

never let me lose what I have gained,
and adorn the branches of your river
with leaves of my estranged Autumn.

Sonnet Of The Sweet Complaint –Federico Garcia Lorca

যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও –পাবলো নেরুদা

যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও —-পাবলো নেরুদা
অনুবাদ– নাজনীন খলিল।

আমি তোমাকে
একটি কথা জানাতে চাই
তুমি জানো তা কেমন করে :
যদি তাকিয়ে থাকি স্ফটিক চাঁদের দিকে
আমার জানালায় ধীর শরতের লালিম শাখায়,
যদি স্পর্শ করি
আগুনের পাশে
স্পর্শাতীত ছাই
অথবা জরাজীর্ণ কাঠের গুঁড়ি,
সব কিছু আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যায়,
যেন সবই অস্তিত্বময়,
সুরভীটুকু, আলো,ধাতুগুলো,
ছোট্ট নৌকাগুলোর
পাল ছিল
আমার প্রতীক্ষারত তোমার দ্বীপগুলোর দিকে।
বেশ, এখন,
যদি একটু একটু করে থামিয়ে দাও আমাকে ভালোবাসা
আমিও অল্প অল্প করে রুদ্ধ করে দেবো তোমাকে ভালোবাসা।
যদি আকস্মিক,
তুমি আমাকে ভুলে যাও
আর খুঁজোনা আমাকে
কারণ এরমাঝেই আমি ভুলে যাবো তোমাকে।
যদি তুমি এটা দীর্ঘ এবং মাতলামো ভাবো,
বৈজয়ন্তী বায়ুপ্রবাহের ভেতরে বয়ে যায় আমার জীবন,
এবং তোমার সিদ্ধান্ত
আমাকে ছেড়ে যাওয়া সেখানে
হৃদয়ের যে তটরেখায় আমার অধিষ্ঠান,
মনে রেখো
সেটা সেই দিন
সেই প্রহর
আমি আমার বাহুদ্বয় উত্থিত করবো
এবং আমার শেকড় উঠবে অন্য ভূমির সন্ধানে।
কিন্তু
যদি প্রতিদিন,
প্রতি ঘন্টা,
তুমি অনুভব করো তুমি এগিয়ে আসছো আমার দিকে
তোমার অপ্রশম্য মধুরতা সহ,
যদি প্রতিদিন একটি পুষ্প
তোমার ওষ্ঠদ্বয়ে আরোহণ করে আমার সন্ধানে,
আহ আমার প্রেম, আহ আমার আপন,
আমার মাঝে পুন: প্রজ্বলিত হয় সে সব আগুন
আমার মাঝে কিছুই নিঃশেষ হয়নি অথবা হয়নি বিস্মৃত।
আমার ভালোবাসা শুষে নেয় তোমার প্রেম, প্রিয়,
এবং যতদিন বেঁচে থাকবে তুমি তোমার বাহুডোরে থাকবে
আমাকে না ছেড়ে।

[If You Forget Me —Pabolo Neruda]

সমুদ্রের ধারে

অনুবাদ কবিতা : ইন্দ্রাণী সরকার
মূল: উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ – বাই দ্য সী

এই সুন্দর শান্ত বিকেল যেন এক পবিত্র
সন্ন্যাসীনির ন্যায় প্রেমপরিপূর্ণ পরিশ্রান্ত,
সুর্য্য তার প্রশান্তির সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে।
সমুদ্রের উপর স্বর্গীয় নীরবতা —-
শোন সেই পরম শক্তি এখন জাগ্রত
তার অনন্ত গতি বজ্রের ন্যায় অবিশ্রান্তভাবে
শব্দ করে যায় —-
প্রিয় শিশু ও কন্যা, তোমরা যারা আমার সঙ্গে
এখানে হেঁটে গেছ, যদি এই পবিত্র রাত্রি
তোমাদের ছুঁয়ে নাও যায়
প্রকৃতি তবুও কম পবিত্র নয়।
তোমরা সবাই ঈশ্বরের বক্ষে আজীবন আশ্রিত
তোমরা জানো আর না জানো ভগবান
তোমাদের মনের মন্দিরেই বিরাজিত।

তুষার মানব

তুষার মানব

The Snow Man : অনুবাদ কবিতা
-সাইদুর রহমান

শীতেরও আছে কোমল হৃদয় মন
জানায় তাই তো, প্রীতি সম্ভাষণ;
বন প্রান্তরে, ঐ দেবদারুর মতো
দাঁড়িয়ে সরু লম্বা পাইন শতো;
জড়িয়ে ধরে যেন এ মানব তুষার
অপূর্ব ছবি মমতা ভালোবাসার।

কৃষ্ণ বর্ণ ফল, সাদা বরফে ঢাকা
করছে ঝিকমিক, যেন রঙ মাখা;
জানুয়ারির মিঠিমিঠি নম্র রোদ্দুর
শুনি ধ্বনি, তা পল্লবের মর্মর সুর;
ভেবো না এমন, পাইনেরা ক্লান্ত
হিম পরশে যেন বড়ই পুলকিত।

মাটির কম্পন এতো হৃদয় স্পন্দন
ধ্বনি সেতো, বেড়ায় যে সমীরণ;
দর্শক শ্রোতা, দ্যাখে ভূমি বিরান
কেউ নেই, কিচ্ছু নেই শুধু পাইন।

মূলঃ Wallace Stevens

অচিন্ত্য প্রেমের হরিণ /ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা

অচিন্ত্য প্রেমের হরিণ /ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা
অনুবাদ: নাজনীন খলিল

কেউ বুঝতে পারেনি তোমার জরায়ুর
গাঢ় ম্যাগনোলিয়ার সৌরভ।
কেউ জানতোনা তুমি দাঁতের ফাঁকে সয়েছিলে
ভালবাসার একটি হামিংবার্ড তাও।
তোমার কপালের শশীকলার সাথে খোলাপ্রান্তরে
ঘুমিয়ে পড়েছিল সহস্র ক্ষুদে পার্সিয়ান ঘোড়া,
তুষারের শত্রু,
যখন চার রাত তোমার কোমর রেখেছিলাম আলিঙ্গনাবদ্ধ করে।
প্লাস্টার এবং যূথিকার ফাঁকে তোমার চকিতচাহনি
ছিল একটি বিবর্ণ বীজশাখা।
তোমাকে দেবার জন্য আমার হৃদয়ে খুঁজেছিলাম
গজদন্ত অক্ষরগুলো যা বলে, “সিয়েমপ্রে” ,
“সিয়েমপ্রে “,”সিয়েমপ্রে” : আমার নিদারুণ যন্ত্রনার উদ্যান,
সর্বদাই ধরাছোঁয়ার বাইরে তোমার শরীর,
আমার মুখবিবরে তোমার ধমনীর ওই রক্ত,
ইতিমধ্যেই তোমার মুখগহবর আলোহীন
আমার মৃত্যুর জন্য।
[সিয়েমপ্রে– চিরকালীন]

ইংরেজী :
Gacela Of Unforseen Love – Poem by Federico García Lorca

No one understood the perfume
of the dark magnolia of your womb.
Nobody knew that you tormented
a hummingbird of love between your teeth.
A thousand Persian little horses fell asleep
in the plaza with moon of your forehead,
while through four nights I embraced
your waist, enemy of the snow.
Between plaster and jasmins, your glance
was a pale branch of seeds.
I sought in my heart to give you
the ivory letters that say “siempre”,
“siempre”, “siempre” : garden of my agony,
your body elusive always,
that blood of your veins in my mouth,
your mouth already lightless for my death.

অনুবাদ : I Wandered Lonely As A Cloud

অনুবাদ কবিতা : I Wandered Lonely As A Cloud
(by William Wordsworth)

আমি মেঘের মত একা ভেসে যাই

আমি মেঘের মতো একা ভেসে যাই
পাহাড়ি উপত্যকার উপর দিয়ে,

হঠাৎ দেখি পথের ধারে এক ঝাঁক
সোনালী ড্যাফোডিলের গুচ্ছ।

জলের ধারে ধারে, গাছের পাশে পাশে,
তারা হাওয়ায় ওড়ে আর দুলে দুলে নাচে।

ফুলগুলো সুন্দর ওই নক্ষত্রমন্ডলীর
ঝিকমিকে তারাদের মত সারে সারে সাজান।

হাজার হাজার ফুলেরা চারিদিকে ফুটে রয়েছে,
বাতাসের দোলায় যেন তারা মাথা হেলিয়ে
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।

ড্যাফোডিলের বাগানে বাতাসের দোলায়
ঢেউ ওঠে যা জলের ঢেউকেও হারিয়ে দেয়।

তার মনোলোভা রূপে বিমুগ্ধ আমি
হতবিস্মিত হয়ে তাকিয়ে দেখি।

যখন আমি একাকীত্বের সুরভিতে নিমগ্ন
ড্যাফোডিলের সৌন্দর্য্য আমার অন্তরাত্মায়
অপার্থিব ভাবনার সৃষ্টি করে।

আমি ডুবে যাই অনাস্বাদিত এক অনাবিল
আনন্দে ওই ড্যাফোডিলের সুন্দরতায়।।

অনুবাদ কবিতা : কাক মুজিকা ঝাবুচালা

কাক মুজিকা ঝাবুচালা
মূল কবিতা : আনা আখমাতোভা
অনুবাদ : রিয়া চক্রবর্তী

যেভাবে সঙ্গীতের মুর্ছনায় জাগে সুর
ঘুম ভেঙে সহসা এসেছে শীত ঋতু
আলো ঝলমল চারিদিক, রংচঙে পোশাকে
রাজার মতোই এসেছে, সাথে এসেছে মৃত্য

শ্মশান কমিটি

শ্মশান কমিটি

জলের ট্যাঙ্কের নিচে এ-পাড়ার সমস্ত খুন হয়
তার পাশে মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, পাড়ার সব বিয়ের মিঠাই
এই দোকান থেকে
তার গায়ে পার্টি অফিস, তরকারি-হাটের তোলা
এখানে ব’সে ভাগ-বাঁটোয়ারা
তার পেছনে ওষুধ-দোকান, ছোট ও বাঁকা ডাক্তার বলছে
নতুন বৌমার চরিত্রে দোষ আছে
তার ওপরে তিনতলা বাড়ি, সে-বাড়ির ছেলে
বৌকে নাইট শো সিনেমা দেখাবে বলে
তুলে আনছে জলের ট্যাঙ্কের ঠিক নিচে।