বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

দুঃখের অবসানে

CL_1688749542558

থমথমে আকাশটার মেঘগুলো ঝরছে রিমঝিম,
কোথাও কেউ নেই,
বিজন প্রান্তরে একাকী ভিজছি আমি-
আমার দুঃখগুলোকেও বিলাতে বৃষ্টির জলে।

বেশ দিনকয়েক হলো,
ভালো নেই আমি,
বেঁচে থাকার আশাটুকুর লোপ পাচ্ছে-
অস্থিরতার বাহুবলে আবদ্ধ আমি।

একাকী বৃষ্টিতে ভিজছি,
মনে আশা বেঁধে,
রিমঝিম বরষণে হারিয়ে যাবে-
মুছে যাবে চোখের জল মানুষের আড়ালে।

পরিজন ফেলে এসে ইটের শহরে,
প্রতিদিন পুড়ছি,
যন্ত্রণায় মরছি,সীমাহীন কষ্টে-
বুকের আর্তনাদ শুনে না কেউ আজ।

সহসা থেমে গেলো রিমঝিম বৃষ্টি,
বুঝেছি হায়,
আমার কষ্টের ভাগ নিবেনা কেউ-
একাকী বিজন নগরে হাঁটছি।

থমথম আকাশটা সুখী হলো কোন আশে,
নানাবিধ কষ্টে মরছি আমি,
হায় বৃষ্টিও বুঝে না আমায়-
না হলে সহসা থামার মানে কি?

নতশিরে বাড়ির পানে ছুটছি,
আবারো যদি বৃষ্টি নামে,
মনের দুঃখ ভুলতে আসবো-
জলস্রোতে বিলিন করবো চোখের পানি।

বদল বিষয়ক

বদলে যাওয়া মানেই বর্জ‌্যের শেষ তলানিটুকু নয়-
বদলে যাওয়া মানেই- পরে নেয়া নয় পশুত্বের খোলস
বদলাবার নামে যারা পান করতে চাইছে ধুমকেতুর সিগ্রেট
অথবা যারা গাইতে চাইছে দেহদক্ষিণার গান,
তাদের কাছে বদলে যাওয়া মানেই-
গায়ে জড়ানো একটি মৌসুমি হাওয়ার প্রলেপ।

বানর বদলে মানুষ হয়েছে
অথবা মানুষ বদলে হয়েছে পাথর-
এমন অনেক উপাখ্যান পড়তে পড়তে আমরা যখন
আকাশের দিকে তাকাবো তখন দেখবো,
মাটিজীবী রাত্রিই গ্রহণ করে নিয়েছে সকল প্রাণের সারৎসার।

আর বদলের ইতিহাসটি শাণিত হয়েছে নরসুন্দরের ধারালো ক্ষুরে !

অতিক্রম

পৃথিবীর শেষ মানুষটা যেদিন বলেছিল
নিশিই সব অন্ধকার শুষে
আস্ত একটা দিন পায়ের কাছে রেখে যায়
সেদিন অবিশ্বাস জেগেছিল
পরে ভেবে দেখেছি কথাগুলো মিথ্যে নয়
এরপরে কত রাত গড়িয়ে গেছে ঊষার দিকে
সেই মানুষকে আর খুঁজে দেখিনি
একটা মানুষ, আস্ত মানুষ
ছায়া হতে হতে
গলে যেতে যেতে
রয়ে গেছে মূর্তি হয়ে
যে মূর্তি প্রতি রাতেই জমা পড়ে রাজকোষে
সকালে আবার চুরিও হয়
আবারো রাত্রি ভালবেসে
তাকেই চুমু খাই পরম মমতায়
সেই মানুষটা এখন কেবলই দিবানিশি কাব্য।

প্রশ্ন করো না কেউ

কেউ প্রশ্ন করো না, এতোদিন কোথায় ছিলেন?
জীবনানন্দের মতো আমিও তাঁরে খুঁজতে গিয়েছিলাম বনলতা সেন!
রোজ রোজ কতো কতো ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া, শিমূল, পলাশ
এতো রঙের আবির মেখেছো গায়ে, কেউ কি করেছো আমার তালাশ!
লজ্জা ঘষে ঘষে আমিও কুড়িয়েছি নীল লোহিত
আশার দোলকে গোলক ধাঁধাঁর মতো ঘুরছি আধা পক্ক কেশী রোহিত!
ক্লান্তি আমাকে ক্লান্ত করে না রুপোলি নদীর ঢেউ
চিলের ডানার মগ্ন আছি শূন্য জলপাত্রে, সঙ্গী হবে নাকি মোর কেউ?

শ্রমণ

dau

চরম অসহিষ্ণুতা ঘিরে আছে
ঘুমহীন গ্রীষ্ম রাতে তৃষিত পাঁজরে
ঘোরের ভেতর
দৌড়াচ্ছে মৃগমদ হ্রেষা
টগবগ টগবগ… বুকের গভীরে…
নিঙড়ে দিচ্ছে প্রশস্ত জমিন, মেঠোপথ, নদী
অবিরাম ছুটছে শ্রমণ অমৃতের সাধন অব্ধি!

ফোটায় ফোটায় শিশির জমে

ha

বৃষ্টি ভেজা আকাশ
একলা চলা বাতাস
কেউ করেনা কারও সাথে সন্ধি
আজকে আমি আমার ঘরে
যেনো খাঁচায় বন্দী।

বর্ষার ওই শ্রাবণ ধারা
টাপুর টুপুর জলে
ঝন ঝনিয়ে পায়ের নুপুর
উথালপাতাল করে।

মনের খাঁচায় মনের মানুষ বন্দী
কেউ কর না আমার মনে সন্ধি

আজ অবেলায় মুক্ত ঝড়ে
ফোটায় ফোটায় শিশির জমে
বেলার মাঝে অবেলা এসে
ভীড় করেছে ফন্দি
কেউ কর না আমার সাথে সন্ধি।

ইচ্ছে করে

nii

ইচ্ছে করে আকাশে উড়ে যেতে,
পারি না পাখির মতো ডানা নেই বলে!
ইচ্ছে করে সব বিলিয়ে দিতে,
তা-ও পারি না কিছুই নেই বলে!

ইচ্ছে করে ভূমিহীনদের ভূমি দিতে,
পারি না নিজের ভিটেমাটি নেই বলে!
ইচ্ছে করে দুখীদের সুখ দিতে,
তা-ও পারি না কপালে সুখ নেই বলে!

মেঘলা আকাশ ফুটো হয়ে গেছে

chooo

ঝুম বৃষ্টির এই প্রহরে তুমি আছো কোথায়
ভেজার বড় স্বাধ
আমায় বেঁধে রাখো বৃষ্টির সুতায়
পেতে রবের এই নিয়ামতের আশীর্বাদ।

চলো পথের কাদা মাটিতে পা রেখে হাঁটি
ভেজাই পা
সুখ শিহরণ জাগাই মনে, বুকে সুখ সাজাই পরিপাটি,
দেখো ঝরছে বৃষ্টি, এ যে রবের কৃপা।

এসো ভিজি, দেহে লাগাই রহমতের ছোঁয়া
অবিরাম ঝরে যাচ্ছে বৃষ্টি
এমনো ক্ষণ পাবে না আর, মন যে আমার সুখেতে গেল খোয়া
আমি এখানে, ছাউনিতে বসে আছি, ফিরাও দৃষ্টি।

পাতাদের কাঁপন গাছে গাছে
বৃষ্টির বিন্দুরা কি ছিল আকাশে!
ঝরছে তো ঝরছেই, বৃষ্টিরা পথের উপর নাচে
এমনো ক্ষণ চাই না কাটাতে দীর্ঘশ্বাসে।

নিয়ামতের জল ছোঁয়াবে কি মাথায়
একা ভিজতে ইচ্ছে নেই এবেলা
দেখে যাও ঝুম বৃষ্টির বিন্দু পাতায় পাতায়
চলো ভাসাই বৃষ্টির জলে সুখের ভেলা।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, চুনারুঘাট)

ছায়া

একটা সন্ধ্যা। জুটমিলের রশিতে
ঝোলানো হিম হওয়া অহর্নিশ ছায়া

কাঠগোলাপ ফুলের কেকাসিক্ত
নীরব প্রিজম থেকে উৎসাহিত হচ্ছে
কেরোসিনে জ্বলা পদ্মাচর গ্রাম,
শহরে উঠে আসা ব্রিজ-পথ,
শালিকের পিঠে চড়া ড্যান্সহল
খুলির ভেতরে পৃথিবীর গাউন হাওয়া-
পৃথক বনে শরীর খসায়া অবতীর্ণ
সন্ধ্যা ঘিরে মানুষের চারা
বয়স বাড়লে বদলে যায় আঁতুড়ঘর।

দুটি কবিতা

ঘুমতালিকার দ্বিতীয় বোতাম

প্রথমটি খসে পড়েছে অনেক আগেই। আমি যখন তৃতীয় বোতামটি
তালাশ করছিলাম, তখনই দুচোখ জুড়ে নেমেছিল বৃষ্টিঘুম। বেশ দীর্ঘ
হয়েছিল রাততালিকা। আর এই গ্রীষ্মাকাশে তারা উড়াবে বলে, ক’টি
পাখি আমার সাথে ধরেছিল বাজি। হারা-জেতার ভয় না করেই।
রাত মানেই ঘুম।ঘুম মানেই রাত। এই বিনম্র শর্তাবলি অস্বীকার করে
আমি পাখিদের সাথে জুয়া খেলতে বসেছিলাম। খুঁজেছিলাম, অস্তগামী
ভোরের বিবরণ।আবার দেখা হবে বলে যে গোলাপ বাগান থেকে
বিদায় নিয়েছিল- তার ছায়ামূর্তি। আমার একবারও মনে পড়েনি-;
দ্বিতীয় যে বোতামটি আমার বুক থেকে খসে পড়েছিল, মূলতঃ তা
ছিল একটি পাথরদানা। তুমি যাকে বিদ্রূপ করে বলতে- ‘প্রেম’॥
#

ছায়াপেশী

মহান পেশীর ভেতর ডুবে আছে চিতা
চিতার মাঝে হাসছে ফুল,
না- আমি ভুল বলছি না
ভুল করে ওই ছায়াপেশী ঢুকে পড়ছে আরেকটি
পেশীর ভেতর।
কামনার ঘোর চোখে যে আগুন জল’কে পোড়ায়,
আমি তার মাঝেই খুঁজে ফিরি তোমার ভগ্নস্বর।
#

After My Death

(Translated from Bengali Version Created by Me)
(Dedicated to My Friend Late Imdadul Bari Apu)

After my death,
Never ever think
I will not be anywhere:
Keep your eyes on the twilight,
In the evening sky;
Lay your ears in the music of fallen leaves,
In the screech of owl;
Have your nose on the green,
In the tears of dew –
You will find me.

After my death,
Never ever think
I will not be anymore:
Keep your eyes on the clouds of autumn,
In the adamant wind of kashbon;
Lay your ears in the solemnity of rain,
In the melody of falling water;
Have your nose on the hyacinth flowers,
In the water of Bongshi –
You will find me.

After my death,
Never ever think
I will not be anymore:
Keep your senses on the eyes of shalik,
In the flight of sparrow;
Lay your ears in the symphony of jhijhi,
In the light and darkness of jonaki;
Have your nose on the stem of rice,
In the heart of durba grass –
You will find me.

রাত্রিকথা


বসে আছি বারান্দায়, একা।
এ এমন শহর
আকাশ দেখা যায়না
অথচ খসে পরা তারার
পোড়াগন্ধ টের পাই হৃদয়ে

আমি আরো একা হয়ে যাই।


কারা যেন কোন পাহাড়ে থাকে
অবিন্যস্ত কথাবার্তা আর
কমিউনিকেশনের নতুন ভাষায়
তারা যেন মিথ্যাকে সত্যিতে সাজায়।

কায়দা করে চলো পাথর হই
মানুষ জীবন আর ভালো লাগছে না।

শিখার প্রেম

গাছে গাছে ফোটে আছে হরেক রকম ফুল
হরেক রকম ফুল
শিখা রানী খুলল ফেলে খোপায় বাধা চুল
খোপায় বাধা চুল।

খোপায় কেন চুল বাঁধলো যায় না কারণ জানা
যায় না কারণ জানা
জানলে তবু যায় না বলা বলায় আছে মানা
বলায় আছে মানা।

তবু বলি শুনো সখা শুনো আমার সই
গোপন কথা কই
শিখা রানী পড়তেছিল প্রেম কাননের বই
গোপন কথা কই।

বইয়ের পাতায় গোপন চিঠি গুলাপি এক খামে
গুলাপি এক খামে
প্রেমের পদ্য কেউ লিখেছে শিখা রানীর নামে
গোলাপি এক খামে।

সেই পদ্য শিখার মনে গানের তালে নাচে
গানের তালে নাচে
জানল শিখা তার জন্য কেউ কোথাও আছে
গানের তালে নাচে।

প্রেম আবেগে থরথরো ফেলল বেধে চুল
মনে হুলস্থুল
সই সখীরা বলল শিখা চুল তো এবার খোল
তুই চুল তো এবার খোল।

প্রেমাবেগে সখীর কথায় খুলল মাথার খোপা
খুলল মাথার খোপা
বলল সখি আমার মাথায় কোদাল দিয়ে কোপা
তোরা কোদাল দিয়ে কোপা।

এমন সুখে মরি যদি সুখের মরণ হবে
সুখের মরণ হবে
প্রেমে পরায় এত সুখ কে জেনেছিস কবে
প্রেমের মরণ হবে।

শিখা রানীর প্রেম হয়েছে প্রেমিক বসে ঘাটে
প্রেমিক বসে ঘাটে
প্রেমের নদী পেরিয়ে তারা সুখ সায়রে হাটে
জীবন সুখেই কাটে।

শিখা রানী চুল বাধে কিংবা রাখে খোলা
প্রেমের পাঠে তাহার এখন আড়াই জোড়া পোলা।

ধরিত্রীফুলগাছ

সৌন্দর্য, আমাকে স্নিগ্ধ চোখে চোখে রাখো

বাতাস শান্তিপীড়িত, বাতাস কীটবাসস্থান
আর প্রেমিক-প্রেমিকা ফোঁড় আছে অন্ধকারে
সিক্ত-অভিষিক্ত দুই পাখি
গালে ছোট ছোট সুশ্রী চাঁদের কারখানা

ওই যে ষোলো শাখার ধরিত্রীফুলগাছ
কিছু না কিছু পাপড়ি সবার মাথায়
আমি সেখানে লেখা কুড়োতে যাই
দেখি রোগা এক আহা রে ইঁদুর, তার দিন শুরু হল
আলো এসে বসেছেন ঝিঙেক্ষেতে স্বয়মাগতা
তারপর আজ রাতে যতবার তোমার শরীরে গিয়েছি
ছোট্ট সোঁতায় শুধু মাছ চমকে ওঠার শব্দ

তুমি আর বিবাহ ক’রো না
আমার শান্ত পোতাশ্র‍য় হয়ে যাও

ভালোবাসার জলকামান দুজনে ঘুরিয়ে দেব
পৃথিবীর দিকে

আসুক বৃষ্টি হঠাৎ করে

chh

আসুক বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি
ঝরুক বৃষ্টি ধরায়
আর পারি না থাকতে সুখে
গ্রীষ্ম মাসের খরায়।

পুড়ে যাচ্ছি জ্বলে যাচ্ছি
৫০ ডিগ্রি তাপে
নাখোশ বুঝি প্রভু তুমি
মরছি অনুতাপে।

দাও না বৃষ্টি, ঝরাও বৃষ্টি
ওগো দয়াল আল্লাহ্
করো ভারী পাপ কমিয়ে
বান্দার পূণ্যির পাল্লা।

আয় না বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে
আকাশ হতে নেমে
সূর্যের তাপে জনজীবন
থমকে আছে থেমে।

নাই রে শান্তি ধরার উপর
নেইকো সুখ আর অল্প
তাঁর নিয়ামত ছাড়া ধরায়
হয় না সুখের গল্প।

দয়া করো মাবুদ আল্লাহ
দাও ঝরিয়ে বৃষ্টি
হোক না প্রভু একটুখানি
সুখ আরামের সৃষ্টি।

আয় রে বৃষ্টি আয়রে ত্বরা
দে ভিজিয়ে মাটি
সাজুক ধরা সজীবতায়
আজকে পরিপাটি।