বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

কবিতা

ffg

স্মৃতি সময়ের বুনো পথে
জাল বিছিয়ে ছুঁয়ে যায় বিচিত্র রূপ
আত্মা কী মৃত্যুর বৈরি খেল দেখেছে
যাঁর হৃদয় ভেঙ্গে গেল, হারিয়ে গেল স্মৃতি
তাঁর কী জীবনের অধরা আলো
জনকল্যাণের উঠোনে ছড়াবে আলোড়ন!

অনেক দিন আগে
এই পথে গোলাপের স্তবক ছুঁয়ে
একজন প্রশ্ন করে, বলেছিল আমার এক
উজান ভাটার নদী আছে
সে নদীতে মাঝিমাল্লার দল বেঁধে নৃত্য করে
তারপরে আকাশের দিকে তাকিয়ে
আঙুলের ইশারায় ফিসফিস করে
কী যেন বলতে বলতে ডুব সাঁতার কেটে
অনন্ত প্রেমিক রূপে
প্রেমিকার হারিয়ে যাওয়া গল্প উচ্চারণ করে।

যেখানে পৃথিবীর সকল বিবেক
স্বাপ্নিক হয়ে চোখের জল স্পর্শ করে
যেখানে পথের ধারে কোথাও
সমুদ্রের শঙ্খচিল স্মৃতির পথে জাগিয়ে তোলে সেদিনের দিন।

এইতো স্মৃতি জীবন ক্যানভাসের পর্দা জুড়ে
এই এক অনন্য আলোর প্রভাত
ভুট্টা ক্ষেতে গভীর সন্দেহ নিয়ে
পারি দেওয়া জীবনের গান বড্ড বেসামাল।

আষাঢ়

ব্যাঙের ডাক শুনতে হলে যেতে হবে পঁচা ডোবায়। ফেলে যেতে হবে চকচকে শহর-বন্দর পেছনে। ভয় হয়! ব্যাঙদের ডাক বড় সাংঘাতিক আষাঢ়-শ্রাবণে। বৃষ্টি আসবেই তাদের সে কোরাসে। প্রবল বর্ষণে জমে যাবে জল। স্যাঁতসেঁতে হবে পরিপাটি ঘর। বৃষ্টিতে ভিজলে হতে পারে জ্বর। ভয় হয়! মনে যদি পড়ে শৈশব-কৈশর। বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া এমন আষাঢ়ে ব্যাঙের ডাক কে ভালোবাসে? কাঁদা লেগে নষ্ট হবে রাজকীয় সাজ!

তবু ফিরতে হল একদিন ঠিকই পঁচা ডোবায়। পঁচে যাবার পরপর। এই অন্তিম সাধ!

আফাল

hi

আফালের দিন,
উড়ছে তো উড়ছে ধূলো-বালি মাখা
পাতার বহর! ডানার পালক
ভাঙছে ডাল, ফুল, কলি, লতা
আউলা কেশের নারী, দুলছে আঁচল
ভাঙছে, ভাঙছে পাখির বাসা… দোয়েলের সংসার!
আফালের দিন,
কতকিছুই মচকে যায়, টলে যায়, ঝরে যায়!
কে কার রাখে বল খবর!

স্মৃতিসৌধ

Un

ছায়াখেলা আলোবেলা
স্মৃতির কুহক কুহু ডাকে,
খেজুরের মোহপাতা
উঠানের তুলসী
যাযাবরী বিশ্রাম
নক্সী আসন পেতে রাখে।
কাঠকুটো সাধারণ
বালতি ও গামলায়
স্নেহছাপ ট্রেডমার্ক
সূর্যও চুমু খায় সোহাগে
মেটে অবগুণ্ঠিত
লজ্জারুণ তাকে;
আমি আছি, তুমি আছ
স্মৃতিময় স্বপ্নিল ফাঁকে।

পাঠক সংখ্যা এক

যে কবিতাটি আমি একটি জাতীয় দৈনিকে
পাঠিয়েছিলাম, তা আর কেউ পড়েনি। শুধু
পড়েছিলেন ঐ দৈনিকের সাহিত্য সম্পাদক।
তারপরে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ডাস্টবিনে। সেই
থেকে আমার ঐ কবিতাটির পাঠক সংখ্যা
একজনই।

তিনি ফেলে দিয়েছিলেন, কারণ তার ভালো
লাগেনি কবিতাখানি।

এই ভবের বাজারে, অনেকের অনেক কিছুই
ভালো লাগে না।
কারো ভালো লাগে না যোগাত্মক যন্ত্রনা।
আবার, কারো ভালো লেগে যায় বিয়োগাত্মক বন্দনা।

তা নিয়ে আমার কোনো অনুযোগ নেই
প্রকাশিত কথা হচ্ছে এই ……
যারা কবিতা বুঝতে জানে তারা প্রজাপতির পাশে দাঁড়াবেই।
।।।।।।।।

নিবিড় ছায়া খুঁজি এবেলা

chh

রোদ্দুরে মাখামাখি প্রান্তর, ছায়া চাই এক তিল
চাই সুখ অনাবিল
আকাশজুড়ে রোদ্দুরের হোলিখেলা
বড্ড হাঁসফাঁস কেটে যায় বেলা।

তুমি না হয় ছাতা হও
বামপাশে আমার দাঁড়িয়ে রও
কথা কও হিম হিম মিহি, নয় রোদ্দুর তেজ
নেয়ে ঘেমে একাকার দেহ যেন নিস্তেজ।

এসো রোদ্দুরে হাঁটি পাশাপাশি
কিছু রোদ্দুর গিলি অনায়াসে, দেখি উর্ধ্বমুখী সূর্যের হাসি
কথায় কথায় পার হই উত্তাপের সুপান
কিছু প্রেম কথা বল, হৃদয়ে বয়ে যাক ভালোবাসার তুফান।

সময় ফুরিয়ে যাক, দুপুর যাক গড়িয়ে
ছাতা ধরো মাথায়, নিয়ো না সরিয়ে,
যদি মন থাকে ফুরফুরে
সুখ রইবে না আমাদের হতে দূরে।

কিছু মেঘ উড়ে এসে বসুক চোখে
মনে ছড়িয়ে দিত শুদ্ধতা, প্রেম দিক বুকে
তুমি তাকিয়ো আজ আকাশ পানে
মত্ত হয়ো কিচির মিচির গানে।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস,চুনারুঘাট)

আরশের প্রকম্পন

আমরা ভুলে যাই অতীতের আশংকা গ্রস্থ সময়, ক্ষুধা বিধ্বস্ত দীর্ঘ স্মৃতি
সোমত্ত জীবন পেয়ে আমরা ভুলে যাই জীর্ণ কাল, পাষণ্ড যুগের দাসত্ব!!..
যদিও
কেউ কেউ এখনো ঝুলিয়ে রাখে
সতীত্বের ঘন্টা,
লুকিয়ে রাখে
নেকড়ের আঁচড় -কামড়ের নৃশংস ইতিহাস!

আমাদের বগলে- মুষ্টিতে জ্বলন্ত অঙ্গার পিণ্ড!
দলিত মথিত বুকে সহস্রাব্দের দম্ভক নৃত্য,
উন্মত্ত ঊর্ণাজাল..
নিভৃতের দহনে পুড়ছে সৌম্য সকাল
সোনালী দুপুর… পূর্ণিমা প্রহর…
ঘোর অমানিশায় ডুবছে সমগ্র ভবিষ্যৎ!

আশ্চর্য এক স্পর্ধায়
কলংকের শাপ ওদের স্পর্শ করেনা।
নগ্ন উৎসবে প্রকম্পিত আসমান জমিন
কাম মত্ত আগ্রাসন
কুকুরের ঘেউঘেউ..লালায়িত জিহ্বা
সুশীল দুনিয়াকে ভেংচি কাটে
উল্লাসের বেলাল্লাপনা কম্পন তুলে আরশের মঞ্চে!..
কম্পন তুলে ঈশ্বরের বক্ষে
বিবেকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে!…

.
১৪/৭/২৩

কবিতা

ভরসন্ধ্যার খাতা খুলে দেখি
তরঙ্গের ধ্যানমগ্ন মুদ্রার বিন্যাস,
যা কখনো শেখোনি তুমি জোয়ারভাটিতে;
অগাধ জলের শিথানে চোখ রেখে
দেখে গেছো শুধু মাছেদের কেলি
শেখোনি মাছের প্রকারভেদ,
কানকোর ভিন্ন গঠনপ্রকৃতি।

নোনাজল দেখেছো শুধু,
দেখোনি নিষিক্ত চোখের পাথর।

মূল কবিতা : পাবলো নেরুদা

pablo

আমার অত্যন্ত প্রিয় কবি পাবলো নেরুদার আজ একশো উনিশতম জন্মদিন। বহু বছর আগে তাঁর কয়েকটি কবিতার অনুবাদ করেছিলাম। তারই একটা দিয়ে আজ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন …
———
মূল কবিতা : পাবলো নেরুদা
অনুবাদ : রিয়া চক্রবর্তী

বেশি দূর যেওনা কখনো, এক দিনের জন্যেও না।
কারণ …
কারণ,আমি জানি না কিভাবে বলবো,
এক একটি দিন কতখানি দীর্ঘ।
তবুও আমি নিবিড়ভাবে অপেক্ষায় থাকবো তোমার,
সব ট্রেন একে একে ঘুমোতে চলে গেলে,
যেমন নির্জনে থাকে একটি স্টেশন।

কখনো ছেড়ে যেওনা, এক ঘন্টার জন্যেও না,
কারণ
বিন্দু বিন্দু তীব্র যন্ত্রণা তখন মুহূর্তেই নদী হয়ে যাবে
ঘরছাড়া ধোঁয়ারা অবিরাম ঘর খুঁজতে খুঁজতে
আমার ভেতরে ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ করে দেবে হারানো হৃদয়।

সমুদ্রের ধারে হাঁটার সময় ছায়াচিত্রের মতো মিলিয়ে যেও না কখনো
তোমার চোখের পাতা যেন শূন্যতায় কেঁপে না ওঠে
এক মুহূর্তের জন্যেও ছেড়ে যেও না, প্রিয়তমা আমার।

কারণ ঠিক সেই মুহূর্তেই হয়ত অনেক দূরে হারিয়ে যাবে তুমি
আর আমি উন্মাদের মতো সমস্ত পৃথিবী উল্টেপাল্টে, আর্তনাদ করে বিভ্রান্তের মতো, প্রশ্ন করবো,
তুমি কি আসবে?
মৃত্যুর কাছে এইভাবে রেখে যাবে আমায়?
=====================

অন্ধকার

নিজেকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে দেখলাম
আমার মা, রক্তের দুটো ভাই
সকলে পৃথক-পৃথক ভেতরে বসে আছে
দুপুরে খাসির গোস্ত, কাটাপেয়াজ, মরিচ
মেলামাইন প্লেটে সাজানো সংসার-
কেবল একে অপরের সঙে চিল করছে।

আমি হাসলাম, শাশ্বত হাসি; রোজ যে
হাসিতে জীবিত ছিলাম
খুলির ভেতরে মেঘ রেখে। রোদ রেখে।
সেসব অন্ধকার জড়ায়া ধরে হাঁটতে থাকি
বুড়ো আয়নার দিকে, জুটমিলের দিকে
নিজ পাশে দীর্ঘ একটা সম্পর্করহিত ছায়া-
ছায়ার সঙে চোখদুটো লাল হতে থাকে।

মৃতনদী অথবা নারী

আজকাল রাতের সাথে কয়জনের কথা হয়?
বড়জোর অন্ধকারের সাথে সন্ধি হয়!
অত:পর ভোর হওয়ার আগেই বিতাড়িত নদী
ফিরে এসে আরেকটি ভোরের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেয়!
অতঃপর সেও সন্তর্পনে মন্থর এগিয়ে যায়
কোনোএক মৃতনদী অথবা মৃত নারীর মতোন
অবশ্য এই যুগে কে আর দেবদাস হতে চায়?

অলীক আশ্বাসে যদি ভেঙে যায় দেবতার ঘুম
তবে সে কেমন দেবতা?
উপসর্গের পাঠ অনেক আগেই চুকিয়ে দিয়েছি
বড়ো সস্তায় বিকিয়ে দিয়েছি সভ্যতা
নইলে তুমি যতোই পুজো দাও তারে…আমার
অর্ঘ্য থেকে রেহাই পাবে না কোনো অপদেবতা!

গন্ধ পাই

out.

জন্ম আমি দেখিনি;
তোমাদের জন্ম দেখে
উপলব্ধি করি; স্বাদ পাই
গন্ধ পাই আর কত কি?
তবু জন্ম, জন্ম দিন বলে কথা!
জন্ম নিয়ে কত স্বপন কত ইতিহাস
রয়ে যায় সোনালি মনে মৃত্যুর ঘরে
ভেবো না জন্মের ব্যর্থতা
অশুভ কোন চিন্তা; সবই নিখুঁত
কর্মের গুনে জন্মের অমরত্ব!

.
৫/৭/২৩

চার-ছক্কা হবেই

পাকিস্থান ইনিংসঃ
স্লিপ এরিয়ায়
মেশিনগান রেখে ভয় দেখিয়ে আর কোন লাভ নেই-
ক্যাচ হবেই;
উইকেট এরিয়ায়
কামান দিয়ে স্টাম্প আগলে রেখে আর কোন লাভ নেই-
আউট হবেই।

বাংলাদেশ ইনিংসঃ
স্থল সীমানায়
জলপাই রঙের ট্যাংক রেখে আর কোন লাভ নেই-
চার হবেই;
আকাশ সীমানায়
সামরিক হেলিকপ্টারে টহল দিয়ে আর কোন লাভ নেই-
ছক্কা হবেই।

আহা কী সুন্দর বর্ষার আকাশটা

choo

থোকা থোকা মেঘফুলে ভরে আছে আকাশ
আকাশে আজ যেন মেঘেদেরই বসবাস
দেখে যাও রাতুল, আকাশে মুগ্ধতা সীমাহীন
সুখের ঢেউ উথাল পাথাল মনের গহীন।

রাতুল চলো বর্ষার আকাশে রাখি চোখ
আকাশের বুকে আজ খুঁজি সুখ
কোথাও বসি দুজন, সম্মুখে আকাশ নীল
চলো চোখ রাখি যেখানে আকাশে মেঘ বর্ণিল।

চলো রাতুল, নিয়ে চলো অন্য কোথাও
হয়ে যাই লোকালয় হতে উধাও,
আকাশ দেখি পথে হেঁটে হেঁটে
কিছু কথা আছে বুকে জমা, ইচ্ছে যাই তোমার সাথে বেটে।

আকাশে আজ মেঘেদের হল্লা, মনোহারী রূপ
কী রাতুল হয়ে আছো চুপ?
নিয়ে গেলে বলো, চলো যাই
বুকের তারে সুখের বেহালা বাজাই।

ছুটির দিনগুলো এই, বৃথা দেব না যেতে
খুব ইচ্ছে উঠি সুখে মেতে
তুমি যদি যাও, সুখের সীমানায় হারাবো,
চলো না, খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াবো।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, চুনারুঘাট)

অভিশপ্ত স্মৃতি

Screenshot (4)

ভুলে গিয়েছো?
হয়তো ভুলে গিয়েছো খুব করে।
ভুলবে না কেন!
স্মৃতির পৃষ্ঠা থেকে আমি ছিঁড়ে গিয়েছি বহুদিন হলো।
তোমার হৃদয়ের গলিতে ভালবাসার মিছিলে
আমি এক অচেনা স্লোগানী ছিলাম যা বুঝতে অনেক ফাল্গুন চলে গেল,
তাই হয়তো ঝাপসাতেও মনে নেই আমার অস্তিত্ব।

এখন হয়তো বেশ সুখে আছো!
আমিও চাই তুমি ভালো থেকো অনন্তকাল।
যে ভালো থাকার জন্য আমার হাত ছেড়ে ছিলে
যে সুখে থাকার জন্য আমায় কলঙ্ক দিয়েছিলে,
হয়তো অন্য কোনো ঘামের গন্ধে সে সুখে আছো
তাই আমি এখন তোমার নিঃশ্বাসে নেই।

ঘোলাটে স্মৃতির বেহাল্লাপনায় আমি বেশ আছি
আমাকে ঘিরে যে তার সমস্ত ইচ্ছে, স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়েছে
তাকে নিয়ে রঙ্গনের সুগন্ধ সুখের গভীরতায় মজেছি।

ভালো থেকো নীলকন্ঠ!
কোনো এক রাত দুপুরে দু’ফোঁটা অশ্রু ফেল
ঐ অভিশপ্ত স্মৃতির মলাটে।