বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

আমাদের নকল পথ

ধূসর শহরে নেমে আসে নারকেলপাতা হয়ে,
সবুজে দীর্ঘতর।

একটি গিরগিটী বিবর্ণ দেয়ালের কার্নিশ ঝুলে
পৌষের শীত ভেঙে পরিযায়ী রোদ
হলুদ চোখে চায়ের কাপের মত ঝোপঝাড়-
একটু গভীরে শুঁকনো অন্ধকার পৃথিবীর ঠোঁটে তুলে
সকল দেয়ালের বাড়ি নির্জনতার ছায়াসঙ্গী নামায়;

শিশির দল উড়ে আসে মাকড়সার জালে
গোলাপি-সাদা ভ্রমণ শিল্প ভরদুপুরের বারান্দায়
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গত বসন্ত ডাকে-ছুঁয়ে যায় চারপাশ,
নির্জন আঙুলের ঢেউ, বালির ভেতরে চোরাবালি
জ্যোৎস্নার বাতাসে যতদূর ক্ষিপ্র নিঃশ্বাসের গন্ধঢেউ
অথচ আমাদের রক্ত রক্ত রঙ চুমু খায় নকল পথ।

দেখতে দেখতেই সূর্য যায় ডুবে

32

এইতো পশ্চিমে রক্তিম আভা নিয়ে সূর্য
বাজে হাওয়ায় হাওয়ায় বেলা চলে যাওয়ার তূর্য,
দিনের বুক আঁধারে ছেয়ে যায়,
আকাশও তার রঙ বদলাবে।

এইতো সূর্যটা আকাশের গায় আছে ঝুলে
সে কেন হাঁটে পশ্চিমে আলোর কথা ভুলে,
বেলা কেন চলে যায় আমায় ফেলে,
আমার আটকায় বেলা বয়সের জেলে।

এইতো সূর্যটা রক্তিম আলো ছড়িয়ে,
আকাশকে আছে জড়িয়ে
সে কেন ঘুমোতে যায় দুনিয়া আঁধারে ভরিয়ে,
আলো নিয়ে সাথে এই যে সূর্য পশ্চিমে যায় গড়িয়ে।

কেমন যেন বিষণ্ণ আলোয় আমি আটকে থাকি
একেকটি দিন যায় আমায় দিয়ে ফাঁকি,
বয়স তবে কোথায় রেখে যাই,
মুখ ঘুরিয়ে দেখি উচ্ছল সময়গুলো আর আমার নাই।

আলো আঁধারের এই খেলা ঘরে
ডুবে যাই এবেলা ব্যথার বালি চরে,
পশ্চিমের রক্ত রঙ আমার সুখ গিলে খায়,
দিন চলে যায়, সময় দিয়ে যায় জড়তা পায়।

এইতো সূর্যটা পশ্চিমে ছড়ায় কী মিহি আলো
হায় গোধূলিয়া আমার বড় লাগে ভালো,
আক্ষেপগুলো ছুঁড়ে ফেলে
আমি মুগ্ধতা নিয়ে চোখে উড়ি সুখে ডানা মেলে।

(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)

চাকুরি বিষয়ক তিন নম্বর বিজ্ঞপ্তি

আমারও একটা চাকরি দরকার। ফায়ার ব্রিগেডের মেম্বারশীপ।
অগ্নি নির্বাপক হয়ে নেভাতে পারবো কিছু আগুন-
এমন নিশ্চয়তা। দমকল বাহিনীর সদস্য হিসেবে ঠিক আগুনের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিটাতে পারবো জল। জলের পরাগ। বৃষ্টির পরমাণু।

আমারও একটা চাকরি দরকার। এ বিষয়ে দৈনিকের পাতায়
আমিও দিতে চাই আরেকটি বিজ্ঞপ্তি। কেউ না পড়ুক-
তারপরও জানাতে চাই, বেকার আছি বহুদিন।মানুষের মনের অনল
নেভাতে না পেরে যে প্রেম ভুলে যায় মানবিক ইতিবৃত্ত লিখার
কৌশল, আমি তার অধীনেই কেরাণি হতে চাই।

আমারও একটা চাকরি দরকার। মুচি’র।
পৃথিবীর জুতা সেলাইয়ের কাজটুকুই করে যেতে চাই।
তারপরও পৃথিবী যদি জুতোপায়ে একটু সবল হয়ে দাঁড়াতে পারে !

ভোজ

ভোজ

মনের কথা, মনে না হলে
কিসের সব কথনিকা-
মানলে বুঝি তাল গাছ
-না মানলে ঢেঁকি পার
এক কথায়- লোজ;
সত্য কথার গন্ধ অনেক
সুবাস বয় না যতসব
নর্দমার চিন্তা ফল; বুঝলে
জ্ঞান- না বুঝলে চেংক
নদী চায় নদীর মতো ভোজ।

১৬ মাঘ ১৪২৯, ৩০ জানুয়ারি’২৩

অবসান

3277

অপেক্ষায় থেকে যে দুটি আঁখি
সতত ঝরায় অশ্রু জল
সেও জানে দিনের পর রাত আসে,রাতের পর দিন।

যে চলে যায় সে চলেই যায় সব রেখে
যে ফিরে আসে সে কোনো বাঁধাকেই উপেক্ষা করে না।

তুমিও ঠিকই ফিরে আসবে একদিন
সেদিন এই চোখের হয়ে যাবে চির অবসান।।

শীতের সন্ধ্যায়

হামগুড়ি দেয়া সূর্যটা প্রচণ্ড শীত গায়ে নিয়ে ডুবে গেলো।
এই নিউইয়র্ক শহর তার হাত ধরে রেখেছিল সারাদিন-
বরফ পড়ে নি। তবু হাড় কাঁপানো বাষ্পের মাঝে
আমাদের নিঃশ্বাসগুলো বার বার হচ্ছিল দ্বিখণ্ডিত।

আমরা এর আগেও অনেকবার পড়েছি খণ্ডনকাব্য
এর আগেও, শীতের রাতে বিনিময় করেছি পাঁজর
তবু যেনো মনে হয়, এমন শীত আর আসেনি কখনও
এমন মিলনের গান গায় নি কোনোদিন
পরিযায়ী সবুজ দোয়েল।

বীজ থেকে দৈর্ঘ্য পৃথিবী

ফুরফুরে মেজাজ-কখনো বিভোর স্বপ্নে চাঁদ উলটায়-
ঝটপট সিদ্ধান্তে তরুণ ছন্দ বায়ু সিনেমার নৃত্যশালা,
কখনো ছদ্মনামে শরীরের রঙ পালটায়
মন খারাপের ব্যত্যয় ভেঙে-গোলপাতার ঘর
ছেঁড়াখোঁড়া দেওয়াল ভরা বঙোপের হিমালয়-সুন্দরবন,
বোতাম ভাঙা ময়লা জামার আলপিনে
পালতোলা নদীর ডুবছবি, দু দিকে শহর আর গ্রামের পথ;
মধুভ্রম স্বপ্ন দরজা আঁকে-সকল ঋতু
বর্ষাগম চৈত্রের মখমলি মাটির বীজ থেকে দৈর্ঘ্য পৃথিবী।

শুভ সকাল

3

তোমার হাতে তুলে দিলাম প্রভাতের স্নিগ্ধতা
তোমার সাথে মেতে রইলাম মিষ্টি রোদের উষ্ণতা।

ঊষার দেশে বাল্মীকি হেসে উঁকি দেয় নব যৌবন
ভালবাসা আশায় থাকে, স্বপ্ন আঁকে নিভৃত মন;

যেমন চাও কাছে এসো, আমাকেও যেতে দাও অমর্ত্য পুরে
রৌদ্র উজ্জ্বল গালে সোনালি চুম্বন পেয়ে যাও ভরা গাঙের জোয়ারে।

তুমি এসো

বসন্তের গান বুনিতেছে কোকিলে,
দূর পাড়ায় বাসন্তী সাজের আয়োজন নববধূর,
পুষ্পরাজিতে ফুলে ফুলে সয়লাব হবে-
তোমার চুলের স্পর্শ রবে কতক গোলাপে।

জারুল তলায় কপোত-কপোতী নানান বেশে,
বসন্তের রঙ মাখাবে শত আদরে,
হৃদয়গ্রাহী বাংলার চিরাচরিত গানে-
তোমার বন্দনাবাক্য ছড়াবে চারপাশে।

পল্লবে প্রেমের রব উঠবে,
কোকিলের কুহুতানে প্রেমিকের মননে-
শতক পঙক্তি সাজাবে প্রেয়সীর তরে,
তোমায় সাক্ষী রেখে আয়োজন সারবে বসন্তের।

সুরূপা,
তোমার আগমন হেতু সেদিন-
নানা স্থান হতে কবিদের সমাবেশ হবে,
তোমার বন্দনার শতেক পঙক্তির নিবেদন।

গত বসন্তে তোমার অপেক্ষায়,
পুষ্পরাজের সভাসদের মলিন বদন দেখেছি,
কোকিলের বিরহ সুরের মূর্ছনায়-
প্রেমিক মনে বসন্তের রঙ জাগেনি।

প্রিয় সুভাষিণী,
এই বসন্তে তুমি রঙ ছড়িয়ে দিও,
কামুকী বসন্তের অঙ্গে-
সর্বত্র,সর্বজনে বসন্ত ঠিকই আসবে।

সুরূপা,
শত আয়োজন সারা নববধূর অন্দরমহলে,
তুমি আসলেই বসন্ত আসবে,
কোকিলের কুহুতান-
কিংবা বৃক্ষরাজিতে পল্লবের প্রেম।

চাঁদের গন্ধ বহুদুর

চাদের গন্ধ বহুদুর

বামনের সাদা ঘরে- চাঁদ কেনো
যে খেলতে না রাজি-তবু ঝিলমিল
জোছনাময় যত কষ্ট, ব্যর্থতায়
মেঠোপথে হেঁটে যায়- মন মরা
ধানসালিক; কোন এক সময় চৈত্রের
ধূলি উড়ে যায়-কালো ধোঁয়া উড়ানো
চাঁদের সাথে ছায়া চলে একাকী!
যত সব সোনালি রুপলী কথোন
ভাবতে অবাক লাগে, রঙিন রাতে
এখনো হাত ছুঁয়া চাঁদের গন্ধ বহুদুর।

১২ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জানুয়ারি’২৩

স্বস্তি বাচন মন্ত্র

তোমাকে খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে এসেছি কোন হাহাকারের ভেতর
কত ঘুম লুকিয়ে পড়েছে প্রাচীরের পর প্রাচীর পেরিয়ে একেকটা রাতের পারে
তোমাকে শুইয়ে দিয়েছি কোমল ধবল তুষারে
কোনদিন জেগে উঠবে কি?
বলবে কি ডেকে, “মায়াবতী রাজকন্যাগো চন্দ্রালোকিত জলে
তুমিও লেগে গেছো চাঁদের মতো করে
তোমার সুবাস পাই এত দূর থেকেও
এসো, কাছে এসো।”
কে কার কাছে যায় বলো?
চোখের মতন চোখ হলে মন ছোঁয়া যায়
মনের মতন চোখ উড়ে যায়, যায়ই
তুমি জানো, তুমি জানো আর কোত্থাও তুমি নেই তো।

যদি ফেরো রাজহাঁসের বুক থেকে মেলে দেব নম্র ওম
দুইহাতের তালুতে তুলে নেব কঠিন চিবুক তোমার
মায়ায় জড়িয়ে রাখব আরও বিরাশি বছর
এবং ফিসফিস করে বলে দেবো, “হারিয়ে যাও ফের”
ঋণ করে ভালো থাকতে ভালো লাগেনি কখনো আমার

যে সমাধি গড়ে উঠেছে বুকের ভেতর
সেখানে তোমার শব রাখা নেই কোনো
আছে শান্ত এক নির্জন পরিণতি
ফিরে যাও, এখানে হাহাকার ছাড়া; শূন্যতা ছাড়া আর কিছু নেই
সমাধিক্ষেত্র পেছনে ফেলেই মানুষ চলে যায় সামনের দিনে
সুশীতল ঝরনায় প্রবহমান চারুজলের দিকে
যেখানে পরীদের মেয়েগুলো সাঁতার কাটে
এই জন্মে তাদের জন্যে তুমি বহমান নদী হয়ো
কাউকে খুঁজতে খুঁজতে তোমার হাহাকার ঢেউ হয়ে ছুটে যাক
সাথে ছুটে যাক বিষাদজ্বালাগুলো এদিক থেকে ওদিক, সেদিক
শত শত ঘুম তোমার আইরিশ সমাধিতে প্রোথিত হয়ে আছে।

ভূতের মাসি

3t

জমাট শীতে হঠাৎ এক ঝড়বাদলের রাতে।
ছমছমে এক গভীর রাত
নিজের কাঁধে রাখছি হাত
ভয়েই মরি একলা থাকি
বাঁচার এখন অনেক বাকি
ভূতের মাসি ভাংরা নাচে আনন্দেতে ছাতে।

আকাশ তোর বুকে লিখে রাখি কষ্ট কাব্য

326

কষ্টে সাগরে ডুবে আছি আকাশ জানিস
চাই তুই আমায় কেবল তোর কাছে টানিস,
তোর বুকে চোখ রেখে আমি হতে চাই সুখী,
আমি আল্লাহকে ডাকি এবেলা হয়ে উর্ধ্বমুখী।

আকাশ জানিস কী? তোর বুকে লিখে রাখি কষ্ট কবিতার ছন্দ
তোর বুকে মেঘ রাখি, দিস দুই দন্ড আনন্দ
আমি যে অবহেলার জলে যাচ্ছি ভেসে,
আকাশ শুভ্র মেঘ নিয়ে তুই থাকিস পাশে।

আমি কষ্ট পাই, বলি না কাউকে, তোকে বলি
তুইও যেন আপনজন আমার, তোর আলোয় উঠি জ্বলি;
কত বিষণ্ণতা রেখে বুকে তোর
তুই আমার একমাত্র ভালো লাগার ঘোর।

তোর বুকে যে শুদ্ধ মেঘ, মন তেমন রাখতে চাই সাদা
হয় না, চারিদিকে স্বার্থের ধাঁধা
আমায় তুই সুখী করে দিস, মেঘে মেঘে বুক ভরে;
আমা তুলিস টেনে আমি ডুবে আছি ব্যাথার বালিচরে।

দীর্ঘশ্বাসের প্রহরগুলো দিতে চাই ছুটি
আমি মেঘের বুকে খেতে চাই সুখে লুটোপুটি
আকাশ তুই কল্প ডানা দিস আমায় ছুঁড়ে
আমি আসবো তোর বুক হতে ঘুরে।

কেমন যেন সময়গুলো, পাথরে হয়ে আছে পূর্ণ
চারিদিকে বিষণ্ণতার রেণূ ঘূর্ণ
এসব থেকে পেতে চাই মুক্তি,
আকাশ মন করে দিস, মনে জোগাস শুদ্ধতার শক্তি।

(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, চুনারুঘাট)

বেঁচে আছি প্রতিদিন… (জন্মদিনে শব্দ’রা উথালপাতাল করে…)

327

এখনো/
আঁতুড় ঘরের গন্ধ গায়ে/
এখনো / মধুর স্বরে ডাকে/ মায়ে/
এখনো কেঁদে উঠি/ একাকী/
আলগা হলে / মায়ের বুক /
আসলে/
এখনো আছি/ ছোট্ট সেই পীযুষ টি/
বাবা মায়ের দাউদ/
কখনো/
উদাসী/ কখনো হাসি মুখ/
এখনো /রক্ত-ঘাম /ঝরায় /
অশ্রুত প্রার্থনায় /
চায়/ আমারই সুখ/…
দেখতে দেখতে/ কেটে গেছে/ তিন যুগ/
বসন্ত/
ঝরেছে রঙ্গও বরষ/
অনন্ত শিশিরে/ ডুবে গেছে/ হলুদ প্রান্তর/ সবুজ জমিন/…
জানিনি/ বড় হতে/
রূঢ় হতে/
বড়লোকি ধরতে/ হীরে জহরতে/ ধনে দৌলতে/
পারিনি/
যেতে / গূঢ় হতে নিগূঢ়ে/
হৃদয়/ মন/
দুমড়ে মুচড়ে/ যেতে পারিনি গড্ডালিকায়/ বহতা স্রোতে/
কেবল টিকে আছি/
ডালে-ভাতে/
মায়ের বুকে/ এক রত্তি সুখে/…
আর
কিছুই নেই আমার/ সত্যি নেই/
কবিতার মত/ আড়কে আছি/ মাটির সোঁদা মায়ায়/
বেঁচে আছি/ প্রতিদিন…/

নীলরত্ন মৌন আকাশ

শরীরের সুস্বাদু চিনিমাখা নীলরত্ন মৌন আকাশ
তেখাঁজ বরফ, শাদা কাফনের মতো; ছড়ানো-
আলুথালু মাছকাঁটা হ্রদ-শিতিল বৃক্ষ,
বোবাবাতাস পরিযায়ী ডানায় হিমালয়-উর্বর দ্বীপপুঞ্জ
ঘাসের পাখনায় রোদগলা বিকেল-সোনাধান
অদূরে বাতাবিলেবু থোড়-থমথম রাত-নক্ষত্র;

এভাবে, যেভাবে-প্রশস্ত চোখ চমকায়
সৌধ ফসলির অভয়ারণ্য-হাঁটুভর সমুদ্র
হরফের মতো মাটি থেকে বালুকণা-পাথর-নদী,
যুগল বাধা গাঙচিল, ঠোঁটে ঠোঁটে দুই শামুক-
সুসম্পন্ন রমণী ও পুরুষ-গাঢ় ছায়ায় ডুবছিল