বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

পেনড্রাইভ

জমা হয়ে আছে সূচালো দু’খের ধার। বরফে বিদ্ধ হচ্ছে
শীতের সূর্যকণা। কোথাও পুড়ছে জীবন- কোথাও
থেমে যাচ্ছে চুল্লীর আগুন, তা দেখে হাসছে চাঁদ, কাঁপছে
নক্ষত্রের সংসার।

চারপাশে ঝুলে থাকছে অনেকগুলো মহাকাল।
অনেকগুলো মৃত বসন্ত,
অনেকগুলো শাদা পাপড়ির কফিন
যারা বিদায়ী বর্ষাবরণে জলে নেমেছিল, কেবল
তারাই দেখছে এসব দৃশ্য। বাকী সবাই নজর রাখছে
তাসের পাতায়।

কয়েকটি বজ্রবিন্দু জমে আছে একটি ধাতুকুটুরিতে।
ক্রমশ উৎস খুঁজে দু’খীরা জয়ী হচ্ছে। আর সুখীরা
তাদের পরাজয়ক্রম সংরক্ষণ করছে দ্বিধার পেনড্রাইভে।

যেখানে কেউ আসেনা

মানুষ দূর থেকে শুধু আমার ভূল দেখেছে
কাছে আসলে দুঃখ!
অথচ, চোরাগলি ধরে খানেক হাঁটলেই
অনুভূতির দেখা পেতো
কিন্তু, ততক্ষণে সন্ধ্যে নামে
সবাই বাড়ি ফিরে যায়।

হাবিজাবি লেখা – ১০

তবু শুকতারা পার হলে আমিও ঘাসে ঘাসে নিহারিত পা,
বেহদ্দ ক্লান্তির পোশাক খুলে নদীতে ডুবি, যেন তেষ্টাপূরণ জল –
আদিগন্তময় নিজেকেই ছড়িয়ে বলি, আঃ! জীবন –

এভাবেই প্রথাগত ভালোবাসা লেখার পর যদি ঘৃণার খোলা করতল রাখি –
তবে আর কীসের জয় পরাজয়?

অথচ আমাদের জীবনে প্রেম আছে, আছে পরকীয়া ও স্বকীয়ার দীর্ণ কিংবা দীপ্ত ঘোষণা ;

আমাদের রাতজাগা তারা আছে, আমাদের আছে ইলিশের ল্যাজা মুড়ো চাখা অষ্টপ্রহরের সংকীর্তন…

বাতাসে বাতাসে বয়ে যাওয়া বিকট উদ্গার

কিশোরের ক্ষয়ে যাওয়া আঙুলে দেগে দেওয়া অক্ষয় নীলকালি আছে

রেডলাইট এরিয়ায় একদা কিশোরীর মরা স্বপ্নের হাঁ-করা মুখে ভনভনে মাছি আছে

সেই ঝাঁকের একটা মাছি হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা বরাবর সহস্রাক্ষ

ঘুরিয়ে চলেছে —

ঘুরিয়েই চলেছে

আমাদের হৃদয়ের মহামারীতে মরা সব বাসি কবিতার ভেতর

একটি মৃত্যু ও কিছু কথা

কিছুক্ষণ আগে মারা গেলেন মা,
টের পেয়েছি তার আত্মার প্রস্থান-
আমার হাতেই ছিল মা’র হাত।

কর্কট রোগে ধুঁকতে ধুঁকতে
ক্লান্ত-শ্রান্ত পরাজিত মা অবশেষে
এই কিছুক্ষণ আগে মারা গেলেন।

রাত-জাগা নির্ঘুম চোখ-কোন জল নেই-
শুধু রক্তাক্ত গোধূলির রক্ত রংয়ে আঁকা;
বিভ্রান্ত শরীর নিথর নিশ্চুপ
ধূলিধূসরিত শাহবাগ চত্তরে।

অন্ধকারের জড়ায়ু ছিঁড়ে একটু একটু করে
ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ছে,
তবু কোথাও কোথাও অন্ধকার থেকেই যায়…
এই কিছুক্ষণ আগে মারা গেলেন মা।

আহা সেইসব দিন

দূরত্ব এতোটাই বেড়ে গেছে যে
আমাদের মাঝে শোভাবর্ধন করছে মৃত্যুফাঁদ
অথচ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে অন্য কথা
ধূলোমাখা সেইসব অতীতের দিন, নিরেট মৃত্যু ঘ্রাণ
সাঁতরে গেছি কৈশোর বয়োঃসন্ধিকাল
আহ যৌবনের নগ্নতা! প্রহসনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল আমায়।

এমন কতো বিরুদ্ধ স্রোত চলে গেছে
জন্মের ফাঁদে আটকে গেছে যাযাবর জীবন
ফিনফিনে দুঃখ দ্বারা ভরেছি লাভের ব্যাগ
আলতো ছোঁয়ায় এঁকেছি যে দেহের ছবি
সেতো ছিল এক ভুলের ক্যানভাস
লাটিমের মতো ঘুরে ঘুরে শুধুই বাড়িয়েছি পথের দেনা
রাতের জরায়ুতে লেগে থাকে মাতৃত্বের ঘ্রাণ।

আহ্ গোপন উল্লাস
পেঁচার চোখ নিয়ে একপাশে পড়ে থাকে ক্ষুধা
আর একপাশে পড়ে থাকে শিল্পকলার মুগ্ধবোধ
অনিবার্য টানে মাঝেমধ্যে ছুটে যাই যুবতী আকাশ পানে
যেনো শঙ্খডানার চিল।

পকেটের ফ্রেমে

ফ্রেমে

রঙধনুহীন কিছু মানুষ আছে
অভাবের কথা শুনলে মরে যায়;
প্রাচুর্য দেখলে অজ্ঞান হয়!
বাস্তবতার মুখে গুলিফোটাই-
তবু আমরা শ্রেষ্ঠ মানুষ!
অভাব প্রাচুর্য সুখের নায়ে ভাসাই
কৃত্রিম নদীর জলে জলে-
তারপর শূন্য মাটিতে মিশি
বলো দেহের কোন পকেটের ফ্রেমে
নিয়ে গেলে অভাব প্রাচুর্য।

০৭ মাঘ ১৪২৯, ২১ জানুয়ারি’২৩

নামাবলি

32

আরে বেটা ফয়সল,
তোর কীসের ভয় ? চল !
পাশে আছে সাব্বির,
নিজেকে তুই ভাব বীর।

আরো আছে চন্দন
কী দারুণ বন্ধন।
তার সাথে আছে কেকা,
বুঝবিনা তুই একা !

চ্যাকা খেয়ে হাঁটে খুকি,
তারে দেখে লাগে দুঃখী ?
মনেপড়ে শেফালিরে,
তারে কত খেপালি.. রে I

বান্দবী মুন্নি…ও শাকচুন্নি।
এই বেটা ফয়সল
কীসের এতো ভয় ? চল !

ঠাণ্ডা সামাজিকতা

আমার রাঙা রক্তে ঠাণ্ডা লাগে, নির্মিত হাতের তালু
কুঁচকে যায়-বলো কিভাবে ধরবো তোমাকে-
কেবল কুয়াশার দরজা টেনেছ, সম্মুখে কল্পনার রমণী

অনন্ত ঊষারে পলকা বাতাসে ধড়ফড়ায়-
ঊরুভঙ্গির অবিশ্বাস, অবৈধ কিছু চাইতে আসিনি
হা করে পড়ছি নভোনীল ফুঁসফুঁস, তোমার প্রাক্তনতা;
এবং আপেলের কাছাকাছি ছুরি রাখার মতো
তোমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে জড়ায় সকল স্পর্ধা, আজানুপ্রেম

ফরিয়াদ

d9-204844

পাপের দাহে আজকে খরা হৃদয় জমি
মশগুল এ দিল এই দুনিয়ার ক্ষণিক মোহে
মাটির আদম কেমনে বাঁচি নরক থেকে
না দাও যদি ধুইয়ে তোমার অনুগ্রহে?

স্রষ্টা তুমি দৃষ্টি জুড়ে সৃষ্টি সবি
তাইতো প্রভু চাইছি তোমার অনুগ্রহ
এই দুনিয়ার ফেতনা থেকে বাঁচাও মোরে
তুমি ছাড়া নেই তো প্রভু অন্য কেহ।

আমি পাপী পাপের বোঝায় নুইয়ে গেছি
ঝরে না আর অনুতাপের অশ্রু বারি
কালের স্রোতে পাহাড় সম পাপের বোঝা
তোমার কাছে চাই যে ক্ষমা আজকে তার-ই।

তোমার দেয়া নাজনেয়ামত ভুগছি তবু
শোকর আদায় সেই দানের-ই হয়নি কভু
ওগো মালিক রহম কর এই নাদানে
স্ব-মহিমায় নাযাত দিও বিচার দিনে;
না পাই যেন নরক জীবন তোমার দ্রোহে;
বাঁচাও প্রভু আমায় আপন অনুগ্রহে।

মন কথনিকা

মন কথনিকা-৪৬২৯

লিখে এত লাভ কী আমার, ভাবি নাকো এসব,
বুকের ভিতর লেগে থাকে শত শব্দের উৎসব
লিখতে আমার লাগে ভালো, মনে লাগে শান্তি,
লিখতে পারলে পাতা ভরে যায় মুছে যায় ক্লান্তি।

মন কথনিকা-৪৬৩০

এত যে সুখ চারিপাশে, শান্তি আমার মনে নাই,
কত কথা মনে জমা বন্ধু আমার সনে নাই,
রাগ করে সে দূরে থাকে, কথা অল্প বলে না,
তারে ছাড়া আমার কী আর একটুখানি চলে না?

পলাশের চিতাচিহ্ন

প্রতিবেশে হায়েনা শকুন আর পরিবেশে মৃত ফসফরাস, দেহ
থেকে ঝরে যাওয়া শিশুর পাঁজর। আমি ছুঁয়ে দেখি, এই কফিনে
আমিও শুয়েছিলাম বিগত জনমে আর সিজোফ্রেনিয়া ঘেরা আকাশ
ছিল আমার সহচর। ভালোবাসা দেবে বলে কেউ আসেনি কাছে,
ডাকেনি ধরে নাম। বিধি বাম ছিল না জানি, তবু কেন এই মানব
নির্মিত বলয় ঢেকে দিয়েছিল আমার স্বপ্নদেশ। আমার সবুজ ললাট…

আমারও গন্তব্য ছিল আর ছিল বিশাল মৃত্তিকাকোষ। সে ভিটায় এখন
পলাশের চিতাচিহ্ন। সমাগত ঢেউয়ের আঘাত ভাসিয়ে নিয়ে গ্যাছে
সব। তোমাকে কি দেবো বলো ! কোন অশ্রুঅনলে পোড়াবো আমার
জমাট শোকছত্রাবলি। প্রিয় স্বজন, প্রিয় রাষ্ট্রনায়ক আমার ! এখানে
হাত দিয়ে দ্যাখো ভিয়েতনাম, কুয়েত, ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন সহ
তামাম দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে আমার রক্তের দাগ। আর পলাশগুলো
ফোটে আছে সেই রঙে, তুমি আসবে বলে, ধীর পায়ে এই শ্বেতাঙিনায়।

তর্জনীটা উঁচিয়ে ধরো

বজ্র আওয়াজে নিয়ে নাও আজ রাজপথের দখল,
প্রয়োজনে ক্রাচ বা হুইল চেয়ারে হোক এই মিছিল ;
শ্লোগান ধরো দরাজ কণ্ঠে বল চীর উন্নত মম শির।

টিয়ার সেলের ঝাঁজালো ধোঁয়ার মতো ছড়িয়ে পরো,
নষ্টদের মেধা মগজে প্রতিবাদের ভাষা বপন করো ;
শ্লোগান ধরো সমস্বরে সবাই বলে উঠো জয় বাংলা।

ব্যারিকেট ভেঙে চলে এসো এই বিজয়ের মিছিলে,
গর্জে ওঠো যেন অত্যাচারীর মসনদই কেঁপে ওঠে ;
কণ্ঠে কণ্ঠে ধারণ করো বিপ্লবী শ্লোগান জয় বাংলা।

তাক করা বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাও,
পাড়ার মোড়ের চায়ের টেবিলেও হোক আলোচনা;
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার সোনার বাংলাদেশ নয়।

শহর জুড়ে তাকিয়ে আছে আজ বিদ্রোহী দু’চোখ,
বুকে জমা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতোই সব ক্ষোভ;
বাক্ স্বাধীনতা আর গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত হোক।

জয় বাংলা শ্লোগান ধরো আজ বিদ্রোহী ওই কণ্ঠে ;
তর্জনীটাও উঁচিয়ে ধরো এই সমাজ বদলের স্বার্থে।

কবিবৃক্ষ- ৩ (স্বাধীনতা)

32

ভাবছি কৃষক হবো,
তপ্ত আর শুষ্ক মরুর বুকে সবুজ শস্যের দোল খেলাবো
কৃষাণীর আঁচল তলে লবন পান্তা ভাত খাবো।

অতঃপর,
ছোট্ট একটা মুদির দোকান হবে, সময়ানুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবো
পিতা-মাতা, ভাই-ভাতিজা আর স্ত্রী-সন্তানদের একটু সময় দিবো…

প্রকৃত কথা হলো স্বাধীনতা বলতে পৃথিবীতে কিচ্ছু নেই
আমরা যা দেখছি, যা ভাবছি তা সবটাই মিছে; স্বাধীন হয় দেশ, স্বাধীনতা পায় দেশ ও দশে;
যেখানে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় সেখানে স্বাধীনতা থাকে না…

স্বাধীনতার সংজ্ঞা জলের মতো…
ভিন্নভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাধীনতার সংজ্ঞাও পরিবর্তন হয়
কর্ম স্বাধীনতা বলতে পৃথিবীতে কিছুই নেই, কর্ম করতে হবেই;
ধর্মে যেমন স্বাধীনতা নেই, ঠিক তেমন-ই;
ভেবে দেখুন, সেই ধর্ম পালনে পরিতৃপ্ততা আছে, আছে শান্তি
স্বাধীনতা তো সেটাই…
যেমন স্বাধীন কবি ও কবিবৃক্ষ
এসো কবি হই, স্ব-স্ব ধর্মে শান্তিকে করি আলিঙ্গন।

বিষাক্তের বিষে…

311n

কবিতায় তোমার ব্যবচ্ছেদ হতে পারতো
শব্দ আর অক্ষর গুলোকে আমি চিরতরে নিষিদ্ধ করলাম।
পেন্সিল স্কেচ অথবা জলরঙে প্রকাশ পেতে পারত- তোমার বেহাল্লাপনা
তাবৎ তুলি আর পেন্সিল কাটার গুলো নি-স্পর্শ করে দিলাম……
যদিও জেনে বুঝে তুমি ফিরে গেছো নস্টালজিক জলসা ঘরে
যে আসরে – ক্যু চক্ষের বহুগামী সভাসদ, লেলিহান জিহ্বা কিলবিল করে
অশ্লীলতা সেখানে সভ্যতার মসনদ গড়ে নিয়েছে ইতিমধ্যে…

সবিই তো তোমার মুখ থেকে জানলাম আমি-

আশা হত কবির মত
নিভৃত প্রার্থনা ছাড়া কি-ই বা করার আছে আমার?
তুমি বারোমাসি ফলজ বৃক্ষের মত অমূল্য সাহা
আমি হত দরিদ্র, বাস্তুহারা
কৃত্রিমতায় আমার কেন পোষাবে বলো?

অলকানন্দার জলে ভেসে যাওয়া হৃদয়
যদি কোন দিন সাহারার তৃষ্ণা মেটায়
অলীক স্বপ্নের এই প্রবোধে নিজেকে থামিয়ে রাখি অপেক্ষার প্রহরে…
কাগুজে নৌকায় ভেসে স্বপ্ন পূরণের স্বপ্ন আসবে
অথবা-
প্লাস্টিকে তৈরি বাহারি ফুলে জমকালো অভ্যর্থনা!
এর কোনটাই আমার করতে পারিনা-

আমি চাইলে পৃথিবীর সবচেয়ে-
নোংরা শব্দে তোমার উপমা বিতরণ করতে পারতাম
অথচ ক্ষমা তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে;
চোখের জল পান করতে করতে
বুঝে নিয়েছি রক্তের স্বাদ… তুমি উন্মাদ হও বেগানা রসে
বিষাক্তের বিষে…
কিন্তু তীর্থের কাকের মত তোমার জীর্ণ মুখ- সইবেনা আমার…।

একটি কবিতায় বিস্ময়চিহ্ন

চা পানের শেষ চুমুক ধরে ভিজে যাচ্ছি।

এক নেশাসক্ত কবি, তার কবিতা
লেখার আগে বন্দোবস্ত মন
নিয়ে বসে আছে, দ্রাক্ষার ভেতর;

এই মুহূর্তে,বুড়ো পৃথিবীর মুখোমুখি
সটান হয়ে পাঠ করছি,তাকে-
মরে যাবার আগে, ধূমাল বিস্তারে
পাঁকা পেঁপের মতো টসটসে আবৃত অঙ্গ,
তীব্র হয়ে ওঠা শ্রমণ রূপ, ক্ষীয়মাণ নগর
প্রার্থনা পরা সাত স্বর্গের পৃথিবী
দুচোখের সামনে বড়সড় বিস্ময়চিহ্ন

কাঁটাচামচে ঝুলে আছে নীরবতা!