বিভাগের আর্কাইভঃ প্রকাশনা ও রিভিউ

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৫

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৫

রথযাত্রার দিন দূর-দূরান্তের গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন ক্লাব, লাইব্রেরি বা অন্য ধরনের সংগঠন দল বেঁধে যাত্রাপালা বুকিং করতে আসেন। বুকিং করার সময় একটা টাকা দিয়ে বুকিং করেন। সুতরাং রথযাত্রার তিথি আসলে চিত্পুুরের যাত্রা দলগুলির অগ্রিম রোজগারের একটা দিন। নায়েক পার্টিদের অগ্রিম বুকিংয়ের সঙ্গে মিষ্টির প্যাকেট, ক্যালেন্ডার ও পোস্টার দেওয়া হয় – যাতে তাঁরা তাঁদের জায়গায় ফিরে গিয়ে প্রচার শুরু করতে পারেন। নায়েক পার্টি বুকিংয়ের বিনিময়ে একটা নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেয়ে থাকেন। প্রায় আড়াই দশক চিত্পুরের সঙ্গে যুক্ত থাকার সূত্রে একজনকে জানতাম — যাঁর নাম ‘নিরাপদ দাস’ এবং যিনি গর্ব করে বলতেন যে বরাহনগর মিউনিসিপ্যালিটিতে তিনিই সবচেয়ে বেশি কর দেন তাঁর সম্পত্তির জন্য। নিরাপদবাবু ভারতী অপেরার গদিতে বসতেন এবং নায়েক পার্টিদের সঙ্গে যাত্রাপালার মালিকের যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে কমিশন নিতেন।

রথযাত্রার দিন মালিকরা পালাকার, সুরকার – এঁদের প্রত্যেককে কিছু অগ্রিম দিতেন। এই অগ্রিম দেওয়াকে বলা হয় ‘সাইদ’ করা। অনেক দলে সুরকারের রথের দিন একটু সুরও করে দিতে হতো। একে বলা হত ‘সুরভাঙা’ অনেক দলে নাটকও পড়া হত।

চিত্পুরের যাত্রাদলে ষাট, সত্তর এমনকি আশির দশকে গদিঘর ছিল। অর্থাত্‍ একটা বড় তক্তপোশ থাকত। তার ওপর মোটা তোশক থাকত ধবধবে সাদা চাদর ঢাকা। আর থাকত কয়েকটা তাকিয়া। ঘরে চেয়ার ও লম্বা বেঞ্চি থাকত। মালিক গদিতে বসতেন। অতিথি যদি বিশিষ্ট হন তবে গদিতে বসবেন, অন্যথায় চেয়ার বা বেঞ্চিতে। কালের প্রকোপে এখন আর সেই পুরনো গদিঘর নেই। এখন সব অফিস হয়েছে আধুনিক চেয়ার-টেবিল দিয়ে।

আগে রথযাত্রার দিন চিত্পুরের যাত্রাপাড়ায় লোকে লোকারণ্য হত। শিল্পী ও সুরকার ও পালাকারদের পকেট গরম হতো। নায়েক পার্টিরা বড় থলে ভরে মিষ্টির প্যাকেট, ক্যালেন্ডার ও পোস্টার নিয়ে ঘরে ফিরে যেতেন বুকভরা আশ্বাস নিয়ে। যাত্রাপালার গান হলে পাড়ার ভেঙে পড়া ক্লাবঘরটার ছাউনি হবে, লাইব্রেরির বই কেনা যাবে। আগে যাত্রা হতো ষষ্ঠী থেকে জ্যৈষ্ঠি। অর্থাত্‍ দুর্গাপুজোর ষষ্ঠি থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস অবধি। কমবেশি একশো আশি দিন থেকে দুশো দিন। এখন হোম এন্টারটেনমেন্টের যুগে পুরনো যাত্রার সে সুদিন আর নেই। তবু বাংলার যাত্রা আছে, ছিল এবং থাকবে। লোকশিক্ষা ও মনোরঞ্জনের মাধ্যম হয়ে।

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৫
‘ভালো মানুষের ভাত নেই’

‘ভালো মানুষের ভাত নেই’ যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত কথাসার।

ভারতে নোট বাতিল নিয়ে মোদি-মমতার চলমান দ্বন্দ্ব এবার উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের যাত্রাপালায়। যাত্রার মাধ্যমে নোট বাতিল নিয়ে মোদি-মমতার বাকযুদ্ধ যাত্রাশিল্পীদের অভিনয়ে নিপুনভাবে ফুটে উঠেছে যেন। কলকাতার যাত্রাপাড়া চিৎপুরের যাত্রাশিল্পীদের দল ‘আনন্দবীণা অপেরা’ নোট বাতিল নিয়ে এ যাত্রাপালাটি মঞ্চায়ন করছে। যাত্রার নাম ‘ভালো মানুষের ভাত নেই’।

খোলা জায়গায় মঞ্চায়িত এই যাত্রাপালায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখার জন্য ভিড় করছেন দর্শকরা।

আনন্দবীণা অপেরা কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারতে নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে নানা কাহিনীর বাঁকবদলের মাধ্যমে সময়ের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই যাত্রাপালার মাধ্যমে। যাত্রার পালাকার মঞ্জিল ব্যানার্জি জানান, ‘ভালো মানুষের ভাত নেই’ যাত্রাপালায় শ্রেয়া নামের এক নারীচরিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে প্রতিবাদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

যাত্রাপালার কাহিনী পরম্পরায় যেখানে নোটবাতিলের পর শ্রেয়ার বিয়ের জন্য তাঁর বাবা ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়ে টাকা না পেয়ে ফিরে আসে। তারপর টাকার অভাবে বিয়ের দিন প্যান্ডেলের লোকেরা শ্রেয়ার বাড়ি থেকে প্যান্ডেল খুলে নিয়ে যায়। লগ্নভ্রষ্টা মেয়ের কথা ভেবে অসুস্থ হয়ে যায় শ্রেয়ার বাবা।

আর ঠিক এখান থেকেই শুরু হয় শ্রেয়ার আন্দোলন। যে আন্দোলন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যায় সারা দেশে। যাত্রাপালার শেষঅবধি জারি থাকে শ্রেয়ার নোট বাতিলবিরোধী আন্দোলন। অন্যদিকে এই নাটকে বীরেন্দ্র নামের এক চরিত্রে দেখা মিলে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদির। আছে মোদির ঘনিষ্ট ব্যবসায়ীরাও। আছে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, আছে রাইটার্স বিল্ডিংও।

এ ছাড়া যাত্রাপালার শুরুতেই দেখা মিলবে ভগবানরূপী কাল্পনিক এক চরিত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সব মিলিয়ে জমজমাট এই পালায় এখন মেতে উঠতে আরম্ভ করেছে যাত্রাপ্রেমী মানুষ। এই যাত্রা পালার প্রযোজক ও নির্দেশক কনক ভট্টাচার্য জানালেন, পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে যাত্রা মোটামুটি চার থেকে পাঁচ মাসের ব্যবসা। কিন্ত গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ভারতে নোট বাতিল ঘোষণা হওয়ার পর যাত্রা জগতে ঘোর অমানিশা নেমে আসে। টাকার অভাবে যাত্রাপালার বুকিং বন্ধ হয়ে যায়।

যাত্রাশিল্পী ও কলাকুশলীরা চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। ঠিক সেখান থেকেই নোট বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাবনায় এই ‘ভালো মানুষের ভাত নেই’ যাত্রা পালা সূচনা। গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসতে চলতি মওসুমে প্রথম মঞ্চস্থ হলো এই ‘ভালো মানুষের ভাত নেই’ যাত্রা পালা। ভিড়ে ঠাসা দর্শক ছিল সেই পালায়।

কনক ভট্টাচার্য বলেন, প্রথম শোতেই আমাদের পালা উতরে গেছে। আমরা এরইমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে বুকিং ফোন পাচ্ছি। আসলে নোট বাতিল নিয়ে মোদি-মমতার দ্বন্দ্বকে সাধারণ মানুষ এখন ভীষণভাবে দেখতে চাইছে। তাই শুধু বাস্তবের মাটিতেই নয়, মোদি-মমতা রণংদেহী রূপকে যাত্রারমঞ্চে দেখতে এখন মানুষ দলে দলে ছুটছে এই পালার পেছনে।

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৪

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৪

পঞ্চাশের শতকেও পশ্চিম বাংলার তথ্য এ দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মুখে উচ্চারিত হতো নট্ট কোম্পানীর যাত্রা গানের কথা। এ নট্ট কোম্পানী ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশার পাঁজিপুঁথিপাড়া গ্রামের বাবু শশীভূষণ নট্ট এবং তার ভাই হারান চন্দ্র নট্ট প্রতিষ্ঠা করেন।

তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার শ্রেষ্ট যাত্রা দল নট্ট কোম্পানী। তখন সামাজিক বেড়াজাল পেরিয়ে মহিলারা যাত্রা পালায় অংশ নিতে পারতেন না। সে কারণে মহিলা চরিত্রে ছেলেদের দিয়ে অভিনয় করানো হতো। শিল্পসম্মত অভিনয়, কাহিনী বিন্যাস ও বিবেকের গান বেশির ভাগ ঐতিহাসিক ও সামাজিক কাহিনী নিয়েই রচিত হতো।

প্রথম দিকে যাত্রাপালার শুভ যাত্রা শুরু হয় জমিদার বাড়ীর অভ্যন্তরীণ আঙ্গিনায়। এর পর নট্ট কোম্পানী ঝালকাঠি সদরসহ দেশের বিভিন্ন শহর বন্দরে যাত্রা পালা করে অল্পদিনেই বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এরপর কোলকাতাসহ পশ্চিম বাংলার প্রায় সর্বত্র যাত্রা পালা করে নট্ট কোম্পানী অচিরেই শ্রেষ্ট যাত্রা দলের স্বীকৃতি লাভ করে।

সামাজিক পালায় চলমান সমাজের ন্যায়-অন্যায়, অসঙ্গতি-অসঙ্গতি, সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ প্রভৃতি বিষয়। সামাজিক পালারচনায় সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন রঞ্জন দেবনাথ। তাঁর গলি থেকে রাজপথ, নীচুতলার মানুষ, এরই নাম সংসার, পৃথিবী আমারে চায়, আজকের সমাজ, বধূ এলো ঘরে, সংসার কেন ভাঙে, আমরাও মানুষ, শশীবাবুর সংসার, একটি গোলাপের মৃত্যু, স্বামী সংসার সন্তান, বন্দী বিধাতা, বিদূষী ভার্যা বা মেঘে ঢাকা তারা, কন্যাদায়, প্রিয়ার চোখে জল, সন্ধ্যা প্রদীপ শিখা, যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ, কলঙ্কিনী বধূ বা জীবন নদীর তীরে, মায়ের চোখে জল, অনুসন্ধান, জেল থেকে বলছি, সংসার আদালত, বিবেকের চাবুক, এ পৃথিবী টাকার গোলাম, জোড়াদিঘির চৌধুরী পরিবার, সাত পাকে বাঁধা, নন্দরানীর সংসার, চরিত্রহীন, কোন এক গাঁয়ের বধূ, মায়ের চোখে জল প্রভৃতি পালা খুবই মঞ্চসফল।

সামাজিক পালায় ভৈরবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কৃতিত্বও উল্লেখ করার মতো। তাঁর একটি ফুলের মৃত্যু, কান্না-ঘাম-রক্ত. ময়লা কাগজ, অভাগীর সংসার, অচল পয়সা, মা মটি মানুষ, নিহত গোলাপ, পাঁচ পয়সার পৃথিবী, বাঁচতে চাই, অশ্রু দিয়ে লেখা, প্রভৃতি পালা সকল শ্রেণীর দর্শক-শ্রোতার কাছেই জনপ্রিয়।

নির্মল মুখোপাধ্যায়ের সোনাডাঙ্গার বউ, প্রেমের সমাধি তীরে, পথের ছেলে, জীবন থেকে নেয়া, আজকের বাঙালি, মমতাময়ী মা, গরিব কেন মরে, জুয়াড়ি, মা যদি মন্দ হয়, ভাঙছে শুধু ভাঙছে, অমানুষ, কলঙ্কিনী কেন কঙ্কাবতী, মানবী দেবী প্রভৃতি পালা যাত্রামোদী মানুষের কাছে অতি প্রিয়।

কমলেশ ব্যানার্জীর বাঈজীর মেয়ে, হাসির হাটে কান্না, জবাব দাও, আমার ছেলে ফিরিয়ে দাও, কূল ভাঙা ঢেউ, বিশ্বাসঘাতক, হারানো সুর, সমাজ পালা পেশাদার-অপেশাদার সকল দলেই অভিনীত হয়।

প্রসাদকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের পৃথিবীর পাঠশালা, মানুষ পেলাম না, একফোটা অশ্রু, পেটের জ্বালা; চণ্ডীচরণ ব্যানার্জীর হকার, সিঁদুর পরিয়ে দাও, গফুর ডাকাত, নয়নতারা, প্রতিমা; নন্দগোপাল রোয় চৌধুরীর জনতার রায়; মহাদেব হালদারের সম্মান হারা মা, লক্ষ টাকার লক্ষ্মী, স্বামী ভিক্ষা দাও; রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগুন, অমানুষ, লাল সেলাম; শম্ভুনাথ বাগের পৃথিবী তোমায় সেলাম, অসুস্থ পৃথিবী; কানাইলাল নাথের গাঁয়ের মেয়ে, আমি মা হতে চাই, মা ও ছেলে; সত্যপ্রকাশ দত্তের বধূ কেন কাঁদে, দুই টুকরো বৌমা; জিতেন্দ্রনাথ বসাক মানুষ, জীবন জ্ঞিাসা, সোনার হরিণ, জানোয়ার; স্বদেশ হালদারের ঝাড়–দার, ঘুমন্ত সমাজ, আজকের দুনিয়া; বলদেব মাইতির অভিশপ্ত প্রেম, কাজল দিঘির কান্না; অনিল দাসের সোনার সংসার; শিবাজী রায়ের সিঁদুর পেলাম না; সঞ্জীবন দাসের শূন্য বাসরে বধূ, হতভাগিনী মা এবং স্বপনকুমার চট্টোপাধ্যায়ের শ্মশানে হলো ফুলশয্যা, অচল পয়সা, অভাগীর কান্না দুই বাংলার মঞ্চে সমানভাবে আদৃত হয়েছে।

পূর্ণেন্দু রায়ের দস্যুরানী ফুলনদেবী ও ওগো বধূ সুন্দরী, দুটি পয়সা, ফুলশয্যার রাতে প্রভৃতি পালা বিভিন্ন যাত্রাদলে অভিনীত হয়ে আসছে। দস্যুরানী ফুলনদেবী পালাটি সামাজিক পালা হলেও এতে ভারতে ‘দস্যুরানী’ হিসেবে আলোচিত ও পরবর্তীতে লোকসভার সদস্য ফুলনদেবীর জীবনকাহিনী অবলম্বনে রচিত। বাংলাদেশের পরিতোষ ব্রহ্মচারীও এই কাহিনী নিয়ে যাত্রাপালা রচনা করেন। পশ্চিমবঙ্গের অজিত গঙ্গোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের শাহজাহান বিশ্বাস একই কাহিনী নিয়ে একই নামে পালা রচনা করেন। পরিতোষ ব্রহ্মচারীর এক যুবতী হাজার প্রেমিক, আবার দরিয়া ডাকে, বেদের মেয়ে জ্যোছনা, ডিসকো কুইন, ছোটমা ও বিরাজবৌ (শরৎচন্দ্রের উপন্যাস অবলম্বনে), রিক্তের বেদন (কৃষ্ণগোপাল বসাকের উপন্যাস অবলম্বনে) ও বর্ণমালা মা আমার সামাজিক পালা হিসেবে তুষার অপেরা-সহ প্রথম শ্রেণীর পেশাদার বিভিন্ন যাত্রাদলে অভিনীত হয়।

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৪
মমতার ডাকে দিল্লি চলো

‘মমতার ডাকে দিল্লি চলো’ যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত কথা

“মমতার ডাকে দিল্লী চলো”। এটি একটি যাত্রাপালার নাম। নাম দেখেই মনে হচ্ছে এই পালাটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়েই রচিত। উল্লেখযোগ্য, এ যাত্রায় পার্শ্বচরিত্র হিসেবে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। রয়েছেন সোনালী গুহ, সুব্রত বক্সী প্রমুখ চরিত্ররাও। মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম, জঙ্গলমহল, শবর জীবন – এসবই রয়েছে এই যাত্রাপালায়। রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে গৃহীত রূপশ্রী-কন্যাশ্রীর মত প্রকল্পের কথাও।

রাহুর গ্রাসে দেশ। গ্রহণ কাটাতে মমতার ডাকে মিলিত হচ্ছে দেশের আগামীর চালিকা শক্তি। সে–শক্তি সঞ্চয়ে অর্থাৎ অশুভ ও দানব শক্তির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে ফের যাত্রামঞ্চে ঝলসে উঠল সত্যের শাণিত কৃপাণ। পালাকার অশোক দে–র ‘মমতার ডাকে দিল্লি চলো’ পালার প্রথম মঞ্চ পরিবেশনা সাড়া ফেলল জনমানসে। ‘লোকবন্দনা অপেরা’র এই কাহিনীর মূল চরিত্র মমতা ব্যানার্জির চরিত্রে অভিনেত্রী সীতা ঘোষ অবিকল মমতাই। মহড়া–পর্বে বেশ রপ্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক জীবন এবং তাঁর যাবতীয় ন্যায়–নীতি। নাটকের অন্য সব চরিত্রের অভিনয়ও ছুঁয়েছে দর্শক–মন। যা স্পষ্ট বৃহস্পতিবার হলদিয়ার ক্ষুদিরাম স্মৃতিরক্ষা কমিটি আয়োজিত ক্ষুদিরাম মেলার অনুষ্ঠানে। এটা ছিল এ–পালার প্রথম মঞ্চ পরিবেশনা।

যে–ছবি দেখতে অভ্যস্ত যাত্রাপ্রিয়রা— পালা শেষের আগেই হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন দর্শক। হলদিয়ার মঞ্জুশ্রী ময়দানের যাত্রামঞ্চে অবশ্য দেখা গেল বিরল চিত্র। যাত্রা শেষ ঘোষণা না করেই কলাকুশলীরা দর্শকের অনুভূতি জানতে অপেক্ষা করছিলেন সাজঘরে। মিনিট ৫ পরও ছবির বদল না দেখে সীতা ঘোষ–সহ পালার সমস্ত কুশলী মঞ্চে এসে জানালেন যাত্রা–সমাপ্তির কথা। সীতাই জানালেন, এ যাত্রাপালার উদ্দেশ্য। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে যাত্রার বিবেকের যে–শক্তি, এর কোনও বিকল্প নেই। এই যাত্রার হাত ধরেই পরাধীন জাতিকে মুক্তির গান শুনিয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান বাঙালি জনমানসে যাত্রার সেই ধারাবাহিকতা অনেকটাই সচল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অন্যায়–অসত্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আঙ্গিকে ও বিন্যাসে লোকায়ত জনপদকে আন্দোলিত করতেও বেশ উদ্যোগী।

বিপন্ন যাত্রাশিল্প অনেকটাই সক্ষম হয়েছে ঘুরে দাঁড়াতে। যার প্রতিদান দেওয়ার যাত্রাপালা বলে দাবি অভিনেত্রী সীতা ঘোষের। তিনি বলেন, ‘দেশের মাথায় এখন রাহুর বাসা। গ্রহণ কাটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির যজ্ঞে শামিল হতে তাঁদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।’ যাত্রাশিল্পীরা আশাবাদী, ‘মমতার ডাকে দিল্লি চলো’ যাত্রাপালা বেশ জনপ্রিয় হবে গ্রামবাংলায়। যা দেখার পর সম্প্রীতি রক্ষা, শান্তি এবং উন্নয়নের তাগিদে মমতার হাত জনতা শক্ত করবে বলেও মনে করেন তাঁরা। এই যাত্রাপালায় মমতার চরিত্রে দৃপ্ত সীতার অভিনয় সকল অগণিত দর্শকের মন জয় করার অধিকার রাখে।

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৩

আজ তিন মাস ধরে ক্লাব ঘরে নিয়মিত চলছে নতুন যাত্রাপালার মহড়া। যাত্রাপালার নাম ‘সিঁদুর দিয়ে কেনা ভালবাসা’।
প্রথম অঙ্ক প্রথম দৃশ্য। দৃশ্যের শুরুতে হ্যারিকেন হাতে একটা ছায়ামূর্তি কোনও রকমে টাল সামলে ধীরে ধীরে মঞ্চে প্রবেশ করে।
বাড়িতে ঢোকা মাত্রই কেউ চিৎকার করে বলল, ‘‘এই সিঁদুরের মূল্য তুমি কী বুঝবে বিধুবাবু?’’
নেপথ্যে মিউজিকে ভেসে আসে করুণ গীতি- এ জীবনে ভালবাসা পেলাম না।

বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পাথরচুড়। প্রায় বহু বছর ধরে এই গ্রামে দুর্গাপুজো হচ্ছে। দুর্গাপূজায় যাত্রাপালা শুরু হবে। চলবে তিন দিন। শেষ দিনে বাউলগান। সারা গ্রামে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। পুজোর অন্যতম চমক যাত্রাপালা। পৌরানিক, ঐতিহাসিক ও সামাজিক যাত্রা পালা। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ এটাই। গ্রামের বাসিন্দারা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই চার দিনের জন্য।

গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে কারো কারো প্রস্তাব ছিল, কলকাতার দল এনে পালা নামানোর। বাধা দিয়েছিলাম আমি। আমি বললাম-গ্রামের লোকেদেরই পালাতে নামাতে হবে। সব খরচ ষোলআনা পূজা কমিটি বহন করবেন। গ্রামের তিনটি পাড়া। তিন পাড়ায় তিনটি যাত্রা দল। শেষের দিনে বাউল গান। বাউল গান পরিবেশন করবেন স্থানীয় শিল্পী সজল মণ্ডল।
রথের দিন থেকে শুরু হয় মহড়া। পাড়ার লোকেরাই সেখানে অভিনেতা। তবে ‘ফিমেল আর্টিস্ট’ আনা হয় বাইরে থেকে। মঞ্চ থেকে মেক আপ আর্টিস্ট সব খরচই বহন করেন যোলআনা পূজা কমিটি।

দিকে দিকে সাড়া জাগানো কোলকাতার স্বনামধন্য অপেরার যাত্রাপালার বুকিং চলছে। যাত্রাপালার পোস্টার নজরে পড়ে। পালার নাম- ‘স্বাধীন দেশের পরাধীন ভালবাসা’। তারা মা অপেরার পালা ‘স্বামীর চিতা জ্বলছে, ভাঙা গড়া নাট্য নিকেতনের বাজি ‘সিঁন্দুর আছে স্বামী নেই’। কোথাও বা বায়না করা আছে যাত্রাদল। যাত্রাপালার নাম ‘বৌ হয়েছে রঙের বিবি’ । সেই সব পোস্টার গুলি সেঁটে দেওয়া হতো মন্দিরের দেওয়ালে, অথবা রাস্তার চৌমাথায় বড়ো বটগাছের কাণ্ডের উপর দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা থাকত। কূয়ো তলার চার পাশে নীচের স্থানও ফাঁকা থাকতো না।

কখনো বা অটো রিক্সায় মাইকের চোঙা টাঙিয়ে অ্যানাউন্সমেন্ট করা হতো আগামী…. তারিখে কোলকাতার দ্বিগ্বিজয়ী অপেরার সাড়া জাগানো পালা মঞ্চস্থ হতে চলেছে। টিকিটের হার চেয়ার (স্পেশাল) ১০ টাকা, চেয়ার ৫ টাকা, জমিন-২ টাকা। বলা বাহুল্য ঐ বিজ্ঞাপন প্রচারের গাড়িতে সিজিন টিকিটও পাওয়া যেত। সিজিন টিকিট মানে ঐ টিকিটে একজনের তিনদিনই যাত্রা দেখার ও শোনার প্রবেশ অবাধ।

সেদিন আর নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে টিকিটের হারও বেড়েছে কিন্তু দর্শকের হার কমে গেছে। চ্যারিটি শো যাত্রার প্যাণ্ডেলে তেমন আর ভিড় হয় না। অথচ এমন একদিন গেছে যে সময় যাত্রা পরিচালনা কমিটি টিকিট দিতে পারে নি। দর্শকের দাবী অনুযায়ী প্যাণ্ডেলের প্রবেশ পথ ভেঙে দিতে হয়েছে। পুরানো দিনের কথা স্মরণে এলে মনটা আজও কেঁদে ওঠে। চলে গেছে সুমধুর সেই দিনগুলি…….

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-৩
গোধূলি লগ্নে সিঁদুর চুরি

‘গোধূলি লগ্নে সিঁদুর চুরি’ যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

রহস্যের জাল ছিঁড়ে দুষ্টের দমনে রণংদেহী মূর্তিতে আসরে হাজির সিঁদুর চৌধুরি। নিশিগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ এই কন্যা। এ সমাজের মীরজাফরদের চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর গুঁড়িয়ে দিতে, লোভ-লালসা-কামনার চোরা পাচার করতে, ওসি সিঁদুর চৌধুরি
অবিচল। একরোখা।

সিঁদুরকে ঘিরেই আকাশবাণী যাত্রা সংস্থার টানটান উত্তেজনা দম আঁটা পরিস্থিতির পালা ‘গোধূলি লগ্নে সিঁদুর চুরি।’ রচনা-নির্দেশনায় মঞ্জিল বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম-ভূমিকায় চম্পা হালদার। চম্পার তুখোড় অভিনয়—শরীরী ভাষা ইতিপূর্বেই আমজনতার সাবাশি প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। মঞ্জিলের লেখা পালার সংলাপ বিবেকের দরজায় করা নাড়ে।

ওসি সিঁদুর চৌধুরি বন্ধ করে দেয় মহাবীর পালের বেআইনি অস্ত্রপাচার কারবার। এই পুলিস আধিকারিক অন্যায়ের সঙ্গে আপসে নারাজ। তাই তিনি রাজি হয়েছেন স্বেচ্ছায় ছুটির দিন আর রবিবারও ডিউটি করতে। বেশ চলছিল। কিন্তু বিধি হলো বাম।
আর তাই নিজের আশীর্বাদের ‘শুভদিনে’ তিনি ধর্ষিতা হলেন নিজগৃহে। মহাবীর পালের পেটোয়া লোক গুর্নজ শঙ্কর ইজ্জত লুটে স্তব্ধ করে দিল—সিঁদুর নামক দুরন্ত এক্সপ্রেস-এর দৌড়।
লজ্জায় অপমানে কুঁকড়ে গিয়ে ওই দুঁদে অফিসার সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরি ছাড়ার।

সেই কবে জন্মদাত্রী মা’কে অসময়ে অকালে হারিয়ে, সৎমায়ের আদর স্নেহে বড় হয়েছে। বাবার কারখানায় তালা ঝুলে যাওয়ার সময় সেই ধরেছিল সংসারের হাল। খরচ জুগিয়েছে ছোট ছোট ভাইবোনেদের রোজদিন-প্রতিদিনের। নিয়তির অদ্ভুত লীলায় আজ সে অসতী কলঙ্কিনী। ঘৃণার পাত্রী। কালবৈশাখী ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় তার সাজানো বাগান।

তাহলে কী চলতেই থাকবে মহাবীরের দাদাগিরির বাহুবলী কাজকারবার। ক্লাইম্যাক্সে কি ফিনিক্স পাখির মতো ভস্মশয্যা ছেড়ে জাগ্রত হবেন, অন্ধকারে চলে যাওয়া সিঁদুর ম্যাডাম। মঞ্জিল দারুণভাবে চম্পা হালদারকে মাথায় রেখেই সাজিয়েছেন সামাজিক পালা ‘গোধূলি লগ্নে সিঁদুর চুরি’। আকাশবাণী যাত্রা সংস্থার আর কে ঘোষ-এর নিরলস তত্ত্বাবধানে এবং নায়িকা চম্পা হালদারের নিত্যনতুন দৃশ্য পরিকল্পনা—এই পালা চলতি মরসুমে ঘেরা গোধূলির মধ্যে অন্যতম। পল মুখোপাধ্যায় রয়েছেন কালো চরিত্রে।

এই বছরেও পল জার্সি বদল করেননি। অভিনয়ে সমান-সমান টক্কর নিচ্ছেন পল মুখোপাধ্যায় নায়িকা চম্পা হালদারের সঙ্গে। দশটি গানে সমৃদ্ধ এই পালার সুরকার স্বপন পাকড়াশী। নৃত্য-নির্দেশনা পার্থসারথি। রয়েছেন অন্যান্য চরিত্রে অরুণ মুখোপাধ্যায়, ঋত্বিকা, অরিজিৎ লাহিড়ী, অষ্টাদশী পিয়াসা, রাকেশ পণ্ডিত, কুমার সৌরভ, নন্দদুলাল পাল, পুতুল নস্কর, রাগ জিঙ্গল, মানস চট্টোপাধ্যায়। আলো-ধ্বনি এস সরগম।

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-২

যাত্রাপালা আজকাল লোক শোনে না। প্রান্তিক গ্রামগুলোর কথা না হয় বাদ দিলাম কারণ তাদের সেখানে শহুরে ছোঁয়া লাগতে এখনও বোধকরি বেশ কিছুটা বাকি আছে। একটা সময় ছিল যখন যাত্রাপালার বিশ নাম ছিল। ইদানীং কালে সে যুগ এখন অতীত, সবটাই কালের গ্রাসে আজ ম্রিয়মাণ।

যাত্রাপালার আরেকটা অঙ্গ হল পালাগান। যাত্রা সাধারণত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হয় যেমন – সমাজসেবা মূলক, ভালোবাসা বা বিয়ে সংক্রান্ত, রসাত্মক। যাত্রাপালা বিভিন্ন স্বাদের গল্পের সমষ্টি বলা যেতে পারে। পালাগান কিন্তু এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পালাগানের মূল কেন্দ্র হচ্ছে ঠাকুরের নামগান করা। কিন্তু এটা সংকীর্তন নয়। পালাগানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বহুযুগ ধরে যে সমস্ত পৌরাণিক কাহিনী আমরা শুনে আসি সেগুলোই খানিকটা উল্টে পাল্টে নতুন ভাবে আনা হয়। পালাগানের অভিনেতাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয় দর্শকদের মনের দিকে কারণ তাদেরকে ক্ষুন্ন করলে অযথা বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।

এই অ্যান্ড্রয়েড বা স্মার্ট টিভির যুগে যাত্রাপালা বা পালাগান দুটোই আজ অস্তমিত। আমাদের ভারতবর্ষের লোকশিল্পী বা অন্যতম প্রাচীন কলা হিসাবে এটির নাম থাকলেও আজকাল লোক সেটাকে খুবই কম প্রাধান্য দেয়। যার ফলে একের পর এক যাত্রাদল ভেঙে যাচ্ছে। শহরে মানুষদের কাছে যাত্রা বা পালাগান নিতান্তই বিস্ময়কর জিনিস।

আমাদের পাথরচুড় গ্রামে প্রতি বছর ধর্মপূজা উৎসব উপলক্ষ্যে যাত্রাগান হত। পালাগানের পরিচালনা করেন সুকান্ত স্মৃতি নাট্যসংঘ। সারারাত ব্যাপী এই যাত্রা অনুষ্ঠিত হত নিকটস্থ মন্দিরের সামনে মাচা বেঁধে।

ঐতিহাসিক যাত্রাপালা কাঁসাই নদীর তীরে, অরুণ বরুণ কিরণমালা, নাচঘরের কান্না, রঘুডাকাত, নিহত গোলাম। পরবর্তী পর্যায়ে সামাজিক যাত্রাপালা সিঁদুর নিও না মুছে, মা মাটি মানুষ ও আমার লেখা যাত্রাপালা “সোনাই দিঘির মেয়ে ” মঞ্চস্থ হয়েছে চতুর্দিকে হ্যাজাক বাতি জ্বালিয়ে আর ত্রিপল টাঙিয়ে। বলা বাহুল্য তখনকার সময়ে সকলেই যাত্রাপালা দেখতে আসতো আসে পাশের বহু গ্রাম থেকে।

অভিনয়, আলোকসজ্জা, মেকআপ এবং আবহসঙ্গীত সবটাতেই এখনও সেই আপন আপন ছোঁয়া রয়ে গেছে। কোনোটাই বাজার চলতি জিনিস কেনা নয়। আবহসঙ্গীত নিজের হাতে পরিবেশন করা হয় স্টেজের পাশ থেকে। পাশের ফাঁকা জায়গা থেকে অভিনেতারা উঠে আসেন। সবথেকে উল্লেখ্য হচ্ছে গান। পালাগানের অন্যতম শর্ত হচ্ছে গানের মাধ্যমে সবটুকু কাহিনী ব্যক্ত করা, সংলাপের অংশ এখানে তুলনায় কম থাকে। অভিনেতারা যথেষ্ট সাবলীল এবং দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে যান। তাদের এই প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।

পালাগান বা যাত্রপালা আজ হারিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্প আমাদের আদিতে বসত করত এখন তা বিলীন হবার জোগাড়। তবু দেখে ভালো লাগে আমার গ্রামে এই পালাগানের আসর দেখে।

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ
যাত্রাপালা-২

বিয়াল্লিশের বিপ্লব যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু

১৯৪২ সাল ভারতবর্ষের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়। অগ্নিযুগের অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে বাংলার মৃত্যুপাগল যৌবন সেদিন যেভাবে দাবানলের মতো জ্বলে উঠেছিল, জীবনপণ করে নির্ভীক সৈনিকের মতো আমৃত্যু যুদ্ধ করেছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য, তাঁদেরই কিছু কাল্পনিক চরিত্রের সমাবেশ এ যাত্রায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

এ যাত্রার চরিত্রগুলোর মধ্যে যেমন জন্মভূমি মায়ের মুক্তিসংগ্রামে নিবেদিত বীরসন্তানেরা রয়েছেন, তেমনি রয়েছে স্বার্থের মোহে অন্ধ ইংরেজের ক্রীতদাস, রয়েছে ঘরশত্রু বিভীষণের দল, যারা অব্যাহত রেখেছে দেশমায়ের মুক্তিসংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেওয়ার কূটকৌশল। যাত্রাপালার একপর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী শাসকের প্রলোভনে মত্ত জমিদার তাঁর স্নেহের নাতি, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূসহ স্বজনদের হারিয়ে উন্মাদ হয়ে যান।

ইংরেজের বিচারে এই আন্দোলনের মূল নায়ক জমিদারপুত্র মহেন্দ্র (প্রশান্ত) চৌধুরীর দ্বীপান্তর হয়। কিন্তু স্বাধীনতা পাওয়ার পর কালাপানির নির্বাসন থেকে তিনি আবার ফিরে আসেন জন্মভূমির বুকে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে পালা লিখেছেন প্রসাদকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য, নির্দেশনা দিয়েছেন ভিক্টর দানিয়েল। দেশপ্রেম ও ব্রিটিশবিরোধী বক্তব্য প্রচার করে চারণকবি মুকুন্দ দাস শুরু করেছিলেন ‘স্বদেশি যাত্রা’। উদীচীরও প্রথম পরিবেশনা সেই ব্রিটিশ ভারতের স্বদেশি আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগ এবার যাত্রাপালা মঞ্চে আনছে। নাম ‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব’।

‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব’ যাত্রাপালার দৃশ্য

যদি দেশের স্বাধীনতার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে বর্তমানের তরুণেরা সমাজের অভ্যন্তরে বিরাজমান স্বার্থপর সাম্রাজ্যবাদী দেশীয় দালাল, মজুতদার, মুনাফালোভী লুটেরাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন, তবেই সার্থক হবে বিয়াল্লিশের বিপ্লব, সার্থক হবে উদীচীর শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগের এই প্রয়াস।

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ যাত্রাপালা-১

বিগত ৪০ বছর আগে নট্ট কোম্পানির হাত ধরে যাত্রামঞ্চে চলচ্চিত্র শিল্পীদের আগমন ঘটেছিল৷ একসময় পশ্চিমবঙ্গের যাত্রায় মুম্বাইয়ের ডাকসাইটে অভিনেত্রীদেরও দেখা পাওয়া গেছে৷ কয়েক বছর আগেই রবীনা ট্যান্ডন, শক্তি কাপুর বা পদ্মিনী কোলাপুরীর মতো বলিউড অভিনেতারা পশ্চিমবঙ্গের যাত্রামঞ্চে মুখ দেখিয়েছেন৷ তবে অতীতের যাত্রাশিল্পী বীণা দাশগুপ্তা, গুরুদাস ধাড়া, শান্তিগোপাল, অশোক কুমার, ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়, স্বপন কুমার প্রমুখদের উজ্জ্বল উপস্থিতি যাত্রায় আজ নেই৷

২০১৭ সালে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক বিষয় উঠে আসছে৷ সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতার কারণে রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, যুবশ্রী ইত্যাদি প্রকল্পও সামাজিক বিষয় হিসেবে যাত্রায় উঠে আসছে৷ দিগ্বীজয়ী অপেরা ‘কন্যাশ্রীর জোয়ারে বিশ্বজয়ী মমতা’ নামে একটি পালা মঞ্চস্থ করছে৷ সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা, গ্রামীণ উন্নয়ন, ওপরে জোর দিয়েছেন পালাকার৷

টিভির সঙ্গে যুদ্ধে যাত্রা হেরে গিয়েছে, এটা মেনে নিতে দ্বিধা নেই বিগত ২২ বছর ধরে যাত্রার সঙ্গে জড়িত অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারীর৷ এ বছরও যাত্রায় অভিনয় করছেন তিনি৷
যাত্রা শিল্পের সাথে সংযুক্ত কলাকুশলীর মন্তব্য নিয়ে আজ থেকে ধারাবাহিক রিভিউ পর্ব শুরু করলাম।

সহৃদয় পাঠক-পাঠিকার মন্তব্যও এখানে প্রকাশ দেওয়ার আশা রেখে আজ থেকে শুরু হলো ধারাবাহিক কয়েকটি পর্বে “যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ” বিভাগটি।
সাথে থাকবেন- এটা প্রত্যাশা করি।
জয়গুরু!

যাত্রার আসর যাত্রামঞ্চ
যাত্রাপালা-১

“বায়না করা বৌ” সামাজিক যাত্রাপালার সংক্ষিপ্ত কথা:

আশুতোষ গাঙ্গুলীর একমাত্র পুত্র অর্পণ সাবিত্রীকে বিয়ে করে। হানিমুনের উদ্দেশ্যে শহরে পাড়ি দেয়। ম্যানেজার কালী নাগের চক্রান্তে মাঝপথে অর্পণের মোটরগাড়ির ইঞ্জিন বার্ষ্ট হয়। হারিয়ে যায় গাঙ্গুলীবাড়ির কুললক্ষ্মী সাবিত্রী। অর্ধোন্মাদ অবস্থায় বাড়ি ফেরে অর্পণ। কালী নাগ নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে নতুন করে চক্রান্তের জাল বোনে।

সাবিত্রীর সঙ্গে চেহারার অদ্ভুত মিল থাকায় কালী নাগ পতিতাপল্লীর পতিতা সতীকে এক মাসের জন্য বায়না করা বউ সাজিয়ে অর্পণের কাছে আনে। অর্পণ সতীকেই সাবিত্রী ভেবে ধীরে ধীরে সুস্থ স্বাভাবিক হতে থাকে। সতীও অতীত জীবন ভুলে মনেপ্রাণে সত্যিকারের সাবিত্রী হয়ে উঠে।

ওদিকে অর্ধদগ্ধা সাবিত্রী রূপ-সৌন্দর্য হারিয়ে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় সাজে পতিতাপল্লীর সতী। এদিকে অর্পণ ও সতীর অকৃপণ ভালোবাসার চাওয়া-পাওয়া যখন কানায় কানায় পূর্ণ হতে যায়, ঠিক তখনই প্রকাশ হয়ে পড়ে সতীর আসল পরিচয়।
আর তখনই ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে আশুতোষ ঘৃণাভরে তাড়িয়ে দেয় সতীকে। নিরূপায় সতী তার ভালোবাসার মোহ ছেড়ে আবার ফিরে আসে তার পুরানো জীবিকায়। কিন্তু সতীর অকৃপণ ভালোবাসার টানে উন্মাদপ্রায় অর্পণ সতীর সন্ধানে ছুটে যায় পতিতাপল্লীতে।

সেখানে অর্পণের সামনে হাজির হয় সতী ও সাবিত্রী। বিস্ময়ে হতবাক অর্পণ কাকে মেনে নেবে? তার বিয়ে করা বউ। অর্ধদগ্ধা কুরূপা সাবিত্রীকে, না তার বায়না করা বউ সতীকে? এমনি অসংখ্য জীবন যন্ত্রণার বাস্তব দলিল এই নাটক—“বায়না করা বউ”। – নাটকটি কলকাতার শ্রীহরি নাট্য কোম্পানী যশের সঙ্গে অভিনয় করে।

ছন্দ নিয়ে আলোচনা (পর্ব -১)

ছন্দ নিয়ে আলোচনা (পর্ব -১)

ছন্দ : কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ্র সিংহরায়)

অর্থাৎ, কবি তার কবিতার ধ্বনিগুলোকে যে সুশৃঙ্খল বিন্যাসে বিন্যস্ত করে তাতে এক বিশেষ ধ্বনিসুষমা দান করেন, যার ফলে কবিতাটি পড়ার সময় পাঠক এক ধরনের ধ্বনিমাধুর্য উপভোগ করেন, ধ্বনির সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাসকেই ছন্দ বলা হয়।

বিভিন্ন প্রকার ছন্দ সম্পর্কে জানার পূর্বে ছন্দের কিছু উপকরণ সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। আর ছন্দ সম্পর্কে পড়ার আগে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার- ছন্দ সর্বদা উচ্চারণের সাথে সম্পর্কিত, বানানের সঙ্গে নয়।

অক্ষর : (বাগযন্ত্রের) স্বল্পতম প্রয়াসে বা এক ঝোঁকে শব্দের যে অংশটুকু উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর বা দল বলে। এই অক্ষর অনেকটাই ইংরেজি Syllable-র মত। যেমন-
শর্বরী- শর, বো, রী- ৩ অক্ষর
চিরজীবী- চি, রো, জী, বী- ৪ অক্ষর
কুঞ্জ- কুন, জো- ২ অক্ষর

যতি বা ছন্দ-যতি : কোন বাক্য পড়ার সময় শ্বাসগ্রহণের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর অন্তর যে উচ্চারণ বিরতি নেয়া হয়, তাকে ছন্দ-যতি বা শ্বাস-যতি বলে।
যতি মূলত ২ প্রকার- হ্রস্ব যতি ও দীর্ঘ যতি। অল্পক্ষণ বিরতির জন্য সাধারণত বাক্য বা পদের মাঝখানে হ্রস্ব যতি দেওয়া হয়। আর বেশিক্ষণ বিরতির জন্য, সাধারণত বাক্য বা পদের শেষে দীর্ঘ যতি ব্যবহৃত হয়।

পর্ব : বাক্য বা পদের এক হ্রস্ব যতি হতে আরেক হ্রস্ব যতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলা হয়। যেমন-
একলা ছিলেম ∣ কুয়োর ধারে ∣ নিমের ছায়া ∣ তলে ∣∣
কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
( ∣ – হ্রস্ব যতি ও ∣∣ – দীর্ঘ যতি)
এখানে একলা ছিলেম, কুয়োর ধারে, নিমের ছায়া, তলে- প্রতিটিই একেকটি পর্ব; মানে প্রতিটি চরণে ৪টি করে পর্ব।

মাত্রা : একটি অক্ষর উচ্চারণে যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে মাত্রা বলে। বাংলায় এই মাত্রাসংখ্যার নির্দিষ্ট নয়, একেক ছন্দে একেক অক্ষরের মাত্রাসংখ্যা একেক রকম হয়। মূলত, এই মাত্রার ভিন্নতাই বাংলা ছন্দগুলোর ভিত্তি। বিভিন্ন ছন্দে মাত্রাগণনার রীতি বিভিন্ন ছন্দের আলোচনায় দেয়া আছে।

শ্বাসাঘাত : প্রায়ই বাংলা কবিতা পাঠ করার সময় পর্বের প্রথম অক্ষরের উপর একটা আলাদা জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত জোর দিয়ে পাঠ করা বা আবৃত্তি করাকেই বলা হয় শ্বাসাঘাত বা প্রস্বর। যেমন-
আমরা আছি ∣ হাজার বছর ∣ ঘুমের ঘোরের ∣ গাঁয়ে ∣∣
আমরা ভেসে ∣ বেড়াই স্রোতের ∣ শেওলা ঘেরা ∣ নায়ে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

এখানে প্রতিটি পর্বের প্রথম অক্ষরই একটু ঝোঁক দিয়ে, জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত ঝোঁক বা জোরকেই শ্বাসাঘাত বলে।

পদ ও চরণ : দীর্ঘ যতি বা পূর্ণ যতি ছাড়াও এই দুই যতির মধ্যবর্তী বিরতির জন্য মধ্যযতি ব্যবহৃত হয় । দুই দীর্ঘ যতির মধ্যবর্তী অংশকে চরণ বলে, আর মধ্য যতি দ্বারা চরণকে বিভক্ত করা হলে সেই অংশগুলোকে বলা হয় পদ। যেমন-
তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ⊥ দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣∣
তোমাতে আমাতে ∣ রত ছিনু যবে ⊥ কাননে কুসুম ∣ চয়নে∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
(এখানে ⊥ দ্বারা মধ্যযতি চিহ্নিত করা হয়েছে।)

পূর্ণযতি দ্বারা আলাদা করা দুইটি অংশই চরণ; আর চরণের মধ্যযতি দিয়ে পৃথক করা অংশগুলো পদ। এরকম-

যা আছে সব ∣ একেবারে ⊥
করবে অধি ∣ কার ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

স্তবক : অনেকগুলো চরণ নিয়ে একটি স্তবক গঠিত হয়। সাধারণত, একটি স্তবকে একটি ভাব প্রকাশিত হয়।

মিল : একাধিক পদ, পর্ব বা চরণের শেষে একই রকম ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের ব্যবহারকে মিল বলে। অলংকারের ভাষায় একে বলে অনুপ্রাস। সাধারণত, মিল পদের শেষে থাকলেও শুরুতে বা মাঝেও মিল থাকতে পারে। পদের শেষের মিলকে অন্ত্যমিল বলে। যেমন-
মুখে দেয় জল ∣ শুধায় কুশল ∣ শিরে নাই মোর ∣ হাত ∣∣
দাঁড়ায়ে নিঝুম ∣ চোখে নাই ঘুম ∣ মুখে নাই তার ∣ ভাত ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

এখানে, প্রথম চরণের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের শেষের পদদুটিতে অন্ত্যমিল (অল) আছে; দ্বিতীয় চরণের প্রথম দুই পদের শেষেও অন্ত্যমিল আছে (উম)। আবার দ্বিতীয় চরণের প্রথম দুই পদের শেষের ধ্বনি (ম) তৃতীয় পদের শুরুতে ব্যবহৃত হয়ে আরেকটি মিল সৃষ্টি করেছে। আর দুই চরণের শেষের পদেও অন্ত্যমিল আছে (আত)।

এবার, সুকান্ত ভট্টাচর্যের আঠারো বছর বয়স- কবিতার প্রথম দুটি স্তবকের ছন্দের এসব উপকরণ নিয়ে আলোচনা করলে বুঝতে সুবিধা হতে পারে।

আঠারো বছর বয়স
সুকান্ত ভট্টাচার্য

আঠারো বছর ∣ বয়স কী দুঃ ∣ সহ ∣∣
স্পর্ধায় নেয় ∣ মাথা তোলবার ∣ ঝুঁকি, ∣∣
আঠারো বছর ∣ বয়সেই অহ ∣ রহ ∣∣
বিরাট দুঃসা ∣ হসেরা দেয় যে ∣ উঁকি। ∣∣∣

আঠারো বছর ∣ বয়সের নেই ∣ ভয় ∣∣
পদাঘাতে চায় ∣ ভাঙতে পাথর ∣ বাধা, ∣∣
এ বয়সে কেউ ∣ মাথা নোয়াবার ∣ নয়- ∣∣
আঠারো বছর ∣ বয়স জানে না ∣ কাঁদা। ∣∣

উপরে কবিতাটির ছন্দ যতির স্থান নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এর পর্ব, পদ ও চরণ একরকম নির্দেশিত হয়েছে। প্রতিটি চরণে তিনটি পর্ব রয়েছে; প্রথম দুটি পর্ব ৬ মাত্রার, শেষ পর্বে ২ মাত্রার (মাত্রা গণনা নিচে ছন্দ অনুযায়ী আলোচনা করা আছে)। অর্থাৎ শেষ পর্বটিতে মাত্রা কম আছে। কবিতায় এরকম কম মাত্রার পর্বকে অপূর্ণ পর্ব বলে।

কবিতাটির প্রতি চারটি চরণে কোন বিশেষ ভাব নির্দেশিত হয়েছে। এগুলোকে একেকটি স্তবক বলে। যেমন, প্রথম স্তবকটিকে কবিতাটির ভূমিকা বলা যেতে পারে, এখানে কবিতাটির মূলভাবই অনেকটা অনূদিত হয়েছে। আবার দ্বিতীয় স্তবকে আঠারো বছর বয়সের, অর্থাৎ তারুণ্যের নির্ভীকতা/ভয়হীনতা বর্ণিত হয়েছে। এভাবে কবিতার একেকটি স্তবকে একেকটি ভাব বর্ণিত হয়।

আবার কবিতাটির চরণের অন্ত্যমিলের দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, প্রতি স্তবকের প্রথম ও তৃতীয় চরণের শেষে এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণের শেষে অন্ত্যমিল আছে। এছাড়া চরণগুলোর ভেতরেও খুঁজলে মিল পাওয়া যাবে।

বাংলা ছন্দের প্রকারভেদ
বাংলা কবিতার ছন্দ মূলত ৩টি- স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত । তবে বিংশ শতক থেকে কবিরা গদ্যছন্দেও কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। এই ছন্দে সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাস না থাকলেও ধ্বনিমাধুর্যটুকু অটুট রয়ে গেছে, যে মাধুর্যের কারণে ধ্বনিবিন্যাস ছন্দে রূপায়িত হয়।

নিচে সংক্ষেপে ছন্দ ৩টির বর্ণনা দেয়া হল।

স্বরবৃত্ত ছন্দ : ছড়ায় বহুল ব্যবহৃত হয় বলে, এই ছন্দকে ছড়ার ছন্দও বলা হয়।
• মূল পর্ব সবসময় ৪ মাত্রার হয়
• প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে শ্বাসাঘাত পড়ে
• সব অক্ষর ১ মাত্রা গুনতে হয়
• দ্রুত লয় থাকে, মানে কবিতা আবৃত্তি করার সময় দ্রুত পড়তে হয়
উদাহরণ-
বাঁশ বাগানের ∣ মাথার উপর ∣ চাঁদ উঠেছে ∣ ওই ∣∣ (৪+৪+৪+১)
মাগো আমার ∣ শোলোক বলা ∣ কাজলা দিদি ∣ কই ∣∣ (৪+৪+৪+১)
(যতীন্দ্রমোহন বাগচী)
এখানে bold হিসেবে লিখিত অক্ষরগুলো উচ্চারণের সময় শ্বাসাঘাত পড়ে, বা ঝোঁক দিয়ে পড়তে হয়। আর দাগাঙ্কিত অক্ষরগুলোতে মিল বা অনুপ্রাস পরিলক্ষিত হয়।

এরকম-
রায় বেশে নাচ ∣ নাচের ঝোঁকে ∣ মাথায় মারলে ∣ গাঁট্টা ∣∣ (৪+৪+৪+২)
শ্বশুর কাঁদে ∣ মেয়ের শোকে ∣ বর হেসে কয় ∣ ঠাট্টা ∣∣ (৪+৪+৪+২)
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ :
• মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়
• অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়; আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে (য় থাকলেও) ২ মাত্রা গুনতে হয়; য় থাকলে, যেমন- হয়, কয়; য়-কে বলা যায় semi-vowel, পুরো স্বরধ্বনি নয়, তাই এটি অক্ষরের শেষে থাকলে মাত্রা ২ হয়
• কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত
উদাহরণ-

এইখানে তোর ∣ দাদির কবর ∣ ডালিম-গাছের ∣ তলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
তিরিশ বছর ∣ ভিজায়ে রেখেছি ∣ দুই নয়নের ∣ জলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
(কবর; জসীমউদদীন)

কবিতাটির মূল পর্ব ৬ মাত্রার। প্রতি চরণে তিনটি ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব আছে।
এখন মাত্রা গণনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম চরণের-
প্রথম পর্ব- এইখানে তোর; এ+ই+খা+নে = ৪ মাত্রা (প্রতিটি অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); তোর = ২ মাত্রা (অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় ২ মাত্রা)
দ্বিতীয় পর্ব- দাদির কবর; দা+দির = ১+২ = ৩ মাত্রা; ক+বর = ১+২ = ৩ মাত্রা
তৃতীয় পর্ব- ডালিম-গাছের; ডা+লিম = ১+২ = ৩ মাত্রা; গা+ছের = ১+২ = ৩ মাত্রা
চতুর্থ পর্ব- তলে; ত+লে = ১+১ = ২ মাত্রা

অক্ষরবৃত্ত ছন্দ :
• মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়
• অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়
• অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, এমন অক্ষর শব্দের শেষে থাকলে ২ মাত্রা হয়; শব্দের শুরুতে বা মাঝে থাকলে ১ মাত্রা হয়
• কোন শব্দ এক অক্ষরের হলে, এবং সেই অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে, সেই অক্ষরটির মাত্রা ২ হয়
• কোন সমাসবদ্ধ পদের শুরুতে যদি এমন অক্ষর থাকে, যার শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, তবে সেই অক্ষরের মাত্রা ১ বা ২ হতে পারে
• কবিতা আবৃত্তির গতি ধীর হয়
উদাহরণ-

হে কবি, নীরব কেন ∣ ফাগুন যে এসেছে ধরায় ∣∣ (৮+১০)
বসন্তে বরিয়া তুমি ∣ লবে না কি তব বন্দনায় ∣∣ (৮+১০)
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি- ∣∣ (১০)
দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? ∣∣ (১০)
(তাহারেই পড়ে মনে; সুফিয়া কামাল)
কবিতাটির মূল পর্ব ৮ ও ১০ মাত্রার। স্তবক দুইটি পর্বের হলেও এক পর্বেরও স্তবক আছে।
এখন, মাত্রা গণনা করলে দেখা যায়, প্রথম চরণের,
প্রথম পর্ব- হে কবি, নীরব কেন; হে কবি- হে+ক+বি = ৩ মাত্রা (তিনটি অক্ষরের প্রতিটির শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); নীরব- নী+রব = ১+২ = ৩ মাত্রা (শব্দের শেষের অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় সেটি ২ মাত্রা); কেন- কে+ন = ১+১ = ২ মাত্রা; মোট ৮ মাত্রা
আবার দ্বিতীয় চরণের,
দ্বিতীয় পর্ব- লবে না কি তব বন্দনায়; লবে- ল+বে = ২ মাত্রা; না কি তব = না+কি+ত+ব = ৪ মাত্রা; বন্দনায়- বন+দ+নায় = ১+১+২ = ৪ মাত্রা (বন- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলেও অক্ষরটি শব্দের শেষে না থাকায় এর মাত্রা ১ হবে; আবার নায়- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি- য় থাকায়, এবং অক্ষরটি শব্দের শেষে থাকায় এর মাত্রা হবে ২); মোট ১০ মাত্রা

এরকম-
আসি তবে ∣ ধন্যবাদ ∣∣ (৪+৪)
না না সে কি, ∣ প্রচুর খেয়েছি ∣∣ (৪+৬)
আপ্যায়ন সমাদর ∣ যতটা পেয়েছি ∣∣ (৮+৬)
ধারণাই ছিলো না আমার- ∣∣ (১০)
ধন্যবাদ। ∣∣ (৪)
(ধন্যবাদ; আহসান হাবীব)

অক্ষরবৃত্ত ছন্দের রূপভেদ বা প্রকারভেদ : অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আবার অনেকগুলো রূপভেদ বা প্রকার আছে- পয়ার, মহাপয়ার, ত্রিপদী, চৌপদী, দিগক্ষরা, একাবলী, সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। নিচে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল-

সনেট :
• বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
• বাংলায় উল্লেখযোগ্য সনেট রচয়িতা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, অক্ষয়কুমার বড়াল, ফররুখ আহমদ,কামিনী রায়, প্রমুখ
• ১৪ বা ১৮ মাত্রার চরণ হয়
• দুই স্তবকে ১৪টি চরণ থাকে
• সাধারণত দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮টি ও ৬টি চরণ থাকে (চরণ বিন্যাসে ব্যতিক্রম থাকতে পারে)
• প্রথম আটটি চরণের স্তবককে অষ্টক ও শেষ ৬টি চরণের স্তবককে ষটক বলে
• এছাড়া সনেটের অন্ত্যমিল ও ভাবের মিল আছে এমন চারটি চরণকে একত্রে চৌপদী, তিনটি পদকে ত্রিপদীকা বলে
• নির্দিষ্ট নিয়মে অন্ত্যমিল থাকে
• দুইটি স্তবকে যথাক্রমে ভাবের বিকাশ ও পরিণতি থাকতে হয়; ব্যাপারটাকে সহজে ব্যাখ্যা করতে গেলে তা অনেকটা এভাবে বলা যায়- প্রথম স্তবকে কোন সমস্যা বা ভাবের কথা বলা হয়, আর দ্বিতীয় স্তবকে সেই সমস্যার সমাধান বা পরিণতি বর্ণনা করা হয়
• সনেটের ভাষা মার্জিত এবং ভাব গভীর ও গম্ভীর হতে হয়
• সনেট মূলত ৩ প্রকার- পেত্রার্কীয় সনেট, শেক্সপীয়রীয় সনেট ও ফরাসি সনেট; এই ৩ রীতির সনেটের প্রধান পার্থক্য অন্ত্যমিলে। এছাড়া ভাব, বিষয় ও স্তবকের বিভাজনেও কিছু পার্থক্য আছে (তা ব্যাকরণের ছন্দ প্রকরণের আলোচ্য নয়)। নিচে ৩ প্রকার সনেটের অন্ত্যমিলের পার্থক্য দেখান হল-
পেত্রার্কীয় রীতি ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক চ+ছ+জ চ+ছ+জ
শেক্সপীয়রীয় রীতি ক+খ+ক+খ গ+ঘ+গ+ঘ চ+ছ+চ+ছ জ+জ
ফরাসি রীতি ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক গ+গ চ+ছ+চ+ছ

উদাহরণ-

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব ∣ বিবিধ রতন;- ∣∣ (৮+৬) ক
তা সবে, (অবোধ আমি!) ∣ অবহেলা করি, ∣∣ (৮+৬) খ
পর-ধন-লোভে মত্ত, ∣ করিনু ভ্রমণ ∣∣ (৮+৬) ক
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি ∣ কুক্ষণে আচরি। ∣∣ (৮+৬) খ অষ্টক
কাটাইনু বহু দিন ∣ সুখ পরিহরি। ∣∣ (৮+৬) খ
অনিদ্রায়, অনাহারে ∣ সঁপি কায়, মনঃ, ∣∣ (৮+৬) ক
মজিনু বিফল তপে ∣ অবরেণ্যে বরি;- ∣∣ (৮+৬) খ
কেলিনু শৈবালে, ভুলি ∣ কমল-কানন। ∣∣ (৮+৬) ক

স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী ∣ কয়ে দিলা পরে,- ∣∣ (৮+৬) গ
ওরে বাছা, মাতৃকোষে ∣ রতনের রাজি ∣∣, (৮+৬) ঘ
এ ভিখারী-দশা তবে ∣ কেন তোর আজি? ∣∣ (৮+৬) ঘ ষটক
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, ∣ যা রে ফিরি ঘরে। ∣∣ (৮+৬) গ
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; ∣ পাইলাম কালে ∣∣ (৮+৬) ঙ
মাতৃভাষা-রূপ খনি, ∣ পূর্ণ মণিজালে । ∣∣। (৮+৬) ঙ
(বঙ্গভাষা; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

কবিতাটিতে দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮ ও ৬ চরণ নিয়ে মোট ১৪টি চরণ আছে। প্রতিটি চরণে ৮ ও ৬ মাত্রার দুই পর্ব মিলে মোট ১৪ মাত্রা আছে।

অমিত্রাক্ষর ছন্দ :
• বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
• অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাবের প্রবহমানতা; অর্থাৎ, এই ছন্দে ভাব চরণ-অনুসারী নয়, কবিকে একটি চরণে একটি নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করতেই হবে- তা নয়, বরং ভাব এক চরণ থেকে আরেক চরণে প্রবহমান এবং চরণের মাঝেও বাক্য শেষ হতে পারে
• বিরামচিহ্নের স্বাধীনতা বা যেখানে যেই বিরামচিহ্ন প্রয়োজন, তা ব্যবহার করা এই ছন্দের একটি বৈশিষ্ট্য
• অমিত্রাক্ষর ছন্দে অন্ত্যমিল থাকে না, বা চরণের শেষে কোন মিত্রাক্ষর বা মিল থাকে না
• মিল না থাকলেও এই ছন্দে প্রতি চরণে মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ১৪) এবং পর্বেও মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ৮++৬)
উদাহরণ-

তথা
জাগে রথ, রথী, গজ, ∣ অশ্ব, পদাতিক ∣∣ (৮+৬)
অগণ্য। দেখিলা রাজা ∣ নগর বাহিরে, ∣∣ (৮+৬)
রিপুবৃন্দ, বালিবৃন্দ ∣ সিন্ধুতীরে যথা, ∣∣ (৮+৬)
নক্ষত্র-মণ্ডল কিংবা ∣ আকাশ-মণ্ডলে। ∣∣ (৮+৬)
(মেঘনাদবধকাব্য; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

এখানে কোন চরণের শেষেই অন্ত্যমিল নেই। আবার প্রথম বাক্যটি চরণের শেষে সমাপ্ত না হয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি চরণের শুরুতেই সমাপ্ত হয়েছে (তথা জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক অগণ্য)। এই অন্ত্যমিল না থাকা এবং ভাবের বা বাক্যের প্রবহমানতাই অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য।

গদ্যছন্দ :
• এই ছন্দে বাংলায় প্রথম যারা কবিতা লিখেছিলেন তাদের অন্যতম- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
• মূলত ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী শিল্পমুক্তির আন্দোলনের ফসল হিসেবে এর জন্ম
• গদ্য ছন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- গদ্যের মধ্যে যখন পদ্যের রঙ ধরানো হয় তখন গদ্যকবিতার জন্ম হয়
• পর্বগুলো নানা মাত্রার হয়, সাধারণত পর্ব-দৈর্ঘ্যে কোন ধরনের সমতা বা মিল থাকে না
• পদ ও চরণ যতি দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত হয়; এই বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন উচ্চারণের সুবিধার্থে নয়, বরং অর্থ প্রকাশের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও তা পড়ার সময় এক ধরনের ছন্দ বা সুরের আভাস পাওয়া যায়
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও এর পদবিন্যাস কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও পুনর্বিন্যাসিত হতে হয়
উদাহরণ-

আমার পূর্ব-বাংলা এক গুচ্ছ স্নিগ্ধ
অন্ধকারের তমাল
অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায়
একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ
সন্ধ্যার উন্মেষের মতো
সরোবরের অতলের মতো
কালো-কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো
বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি
(আমার পূর্ব বাংলা; সৈয়দ আলী আহসান)
(সংকলিত)
———————————————————————————-

শব্দনীড়ের সাথে যুক্ত লেখক লেখিকা, সাহিত্যিক, কবিগণকে জানাই আন্তরিক প্রীতি আর শুভেচ্ছা।
সাথে থাকবেন, পাশে রাখবেন।
জয়গুরু!

ছন্দময় কবিতার বিষয়বস্তু ও ছন্দ নিয়ে আলোচনা

জনক দিবসের কবিতা র প্রারম্ভিক আলোচনা
বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে থেকে পিতৃ দিবস পালন শুরু হয়। আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল – এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই, আমেরিকার পশ্চিম র্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। আবার, সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও পিতৃ দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে, ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মা’কে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯শে জুন, ১৯১০ সালের থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।

সন্তানের জন্য বাবার ভালোবাসা অসীম। মুঘল সাম্রাজ্যরের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। তিনি সন্তান হুমায়ুনের জীবনের বিনিময়ে নিজের জীবন ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। এমন স্বার্থহীন যার ভালোবাসা, সেই বাবাকে সন্তানের খুশির জন্য জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। পিতৃ দিবসে সন্তানদের সামনে সুযোগ আসে বাবাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানানোর। তাছাড়া পিতৃ দিবস পালনের ফলে সমাজে এবং পরিবারে পিতাদের যে অবদান তা যে সমাজ এবং নিজের সন্তানরা মূল্যায়ন করছে, এ বিষয়টিও বাবাদের বেশ আনন্দ দেয়। তাছাড়া অনেক সন্তানই আছে, যারা পিতা-মাতার দেখাশোনার প্রতি খুব একটা মনোযোগী নয়। মা দিবস বা বাবা দিবস তাদের চোখের সামনের পর্দাটি খুলে ফেলে পিতা-মাতার প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে তাই বলা যায়, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে মা দিবস বা বাবা দিবসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। মোটকথা আমাদের পরিবার তথা সমাজে পিতার যে গুরুত্ব তা আলাদাভাবে তুলে ধরাই পিতৃ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।

বিভিন্ন ভাষায় পিতা-
জার্মান ভাষায় পিতা শব্দটি হচ্ছে “ফ্যাট্যা” আর ড্যানিশ ভাষায় “ফার”। আফ্রিকান ভাষায় ‘ভাদের’ হচ্ছেন পিতা! চীনে ভাষায় চীনারা আবার ‘বাবা’ কেটে ‘বা’ বানিয়ে নিয়েছে! ক্রী (কানাডিয়ান) ভাষায় পিতা হচ্ছেন ‘পাপা’ তেমনি ক্রোয়েশিয়ান এ ‘ওটেক’ ভাগ্যিশ! ক্রোয়েশিয়ায় জন্মাই নি! কারণ ওরা পিতাকে ‘ওটেক’ ওটেক বলে! দাঁড়ান আরো আছে, ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় পিতা ডাক হচ্ছে ‘পাই’। ডাচ ভাষায় পাপা, ভাডের আর পাপাই এই তিনটি হচ্ছে পিতা ডাক। সবচাইতে বেশী প্রতিশব্দ বোধহয় ইংরেজি ভাষাতেই! ইংরেজরা পিতাকে ডাকেন, ফাদার, ড্যাড, ড্যাডি, পপ, পপা বা পাপা! ফিলিপিনো ভাষাও কম যায় না, এই ভাষায় পিতা হচ্ছেন তাতেই, ইতেই, তেয় আর আমা। আমরা কিন্তু পিতাকে আদর করে হিব্রু ভাষাতেও ডাকি! হিব্রু ভাষায় পিতা হচ্ছে ’আব্বাহ্‌’। হিন্দি ভাষার পিতা ডাকটি পিতাজী! আবার ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় অর্থাৎ সেই ‘বাহাসা ইন্দোনেশিয়া’য় যদি পিতা ডাকি তাহলে সেটা হবে- বাপা কিংবা আইয়্যাহ! জাপানিরা তাদের ভাষায় পিতাকে ডাকেন- ওতোসান, পাপা। পুর্ব আফ্রিকায় অবশ্য পিতাকে ‘বাবা’ ডাকা হয়! হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পাপা ছাড়াও পিতা শব্দের অনেকগুলো প্রতিশব্দ আছে, যেমন- আপা, আপু, এদেসাপা। বাংলা ভাষায় বাবা বা আব্বা।

আসুন আজ জনক দিবসে আমরা সকলে শপথ গ্রহণ করি যেন শেষ বয়সে কোন জনকের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে না হয়। তাহলেই সমাজজীবন হবে সুখময়। সংসার হয়ে উঠবে সুখের স্বর্গধাম।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!

জনক দিবসের কবিতা
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পরিবার গড়ে পিতা বহু পরিশ্রমে,
জন্মদাতা পিতা তবু কাঁদে বৃদ্ধাশ্রমে।
পাথর দেবতা পূজে কিবা হবে ফল,
জনক দেবতা যদি ফেলে চোখে জল।

পিতারে না চেনে পুত্র যুগের বিচার,
ঘরে ঘরে হেরি কেন হেন অবিচার।
পিতাপুত্রে হানাহানি, বাক্যযুদ্ধ হয়,
পিতা পরাজিত হয়, সন্তানের জয়।

জনক দিবস আজি জানে সর্বজন,
জনকেরে কর পূজা, ধরহ চরণ।
পিতারে সম্মান কর পাবে পূণ্যফল,
লভিবে সম্মান যশ এই ধরাতল।

পিতৃসম নাহি গুরু, কেহ বসুধায়,
লিখেন লক্ষ্মণ কবি তার কবিতায়।

————————————————————–

আমার এই ছন্দময় কবিতার বিষয়বস্তু
ও ছন্দ নিয়ে আলোচনা
আলোচনা করেছেন- ডঃ সুজিতকুমার বিশ্বাস
—————————————
কবিতার নাম: জনক দিবসের কবিতা
কবির নাম: লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
কবিতা প্রকাশের তারিখ: ১৬.০৬.২০১৯
——————————-
কবিতার পর্ব বিভাজন ও মাত্রা বিশ্লেষণ
প্রথম পর্ব- ৪ লাইন
দ্বিতীয় পর্ব- ৪ লাইন
তৃতীয় পর্ব- ৪ লাইন
চতুর্থ পর্ব- ২ লাইন
প্রতি লাইনে ৮+ ৬ = ১৪
——————————-
কবিতার ছন্দ ও লিপিকরণ:
ছন্দ রীতি- অক্ষরবৃত্ত ছন্দ
মাত্রা গণনার নিয়ম- মুক্ত অক্ষর ১ মাত্রা এবং রুদ্ধ অক্ষর-
শব্দের আগে ও মাঝে ১ মাত্রা, শব্দের শেষে ২ মাত্রা; একক
রুদ্ধ অক্ষর- ২ মাত্রা।
পর্ব- ৮+ ৬ মাত্রায়। পূর্ণ পর্ব- ৮ মাত্রায়, অপূর্ণ পর্ব- ৬ মাত্রায়।
চরণ- ২ পর্বের
স্তবক- ৪টি
মিল- চরণান্তিক।
পঙক্তি- ১৪টি সমস্ত পঙক্তি সমমাত্রিক ও সমপার্বিক।
লয়- ধীর।
বিশেষত্ব- সনাতন পয়ার
ছন্দ বিষয়ে মন্তব্য- খুব ভালো।
———————————-
কবিতার ছন্দবদ্ধতার নানাদিক:
কবিতাটি কবি ছন্দ মেনে লিখেছেন।
কবিতায় উপমা চিত্র কল্পের ব্যবহার ও বাস্তববোধ প্রকাশ পেয়েছে।
কবিতার আবৃত্তি পাঠ ও অনুভূতি- যথার্থ ও সুন্দর।
কবিতার বাহ্য ও অন্তরঙ্গ উপকরণ সঠিকভাবে জেনে বুঝে প্রয়োগ করা হয়েছে।
ছন্দের আকৃতি বা রূপভেদ- চতুর্দশপদী।
ছন্দবন্ধের ধরণ- পয়ার ছন্দ।
কবিতায় অলঙ্কার প্রয়োগ- সুন্দর।
অন্ত্যমিল – আছে এবং খুব ভালো।
ছেদ ও যতির স্পষ্টতা- উপলব্ধ।
কবিতায় ছন্দ ব্যাকরণের বিভিন্ন দিক প্রকাশিত।

কবিতা বিষয়ে ডঃ সুজিতকুমার বিশ্বাসের মন্তব্য /পরামর্শ/ অনুরোধ।

কবির এ জাতীয় লেখায় আসর আগামীতে আরও সমৃদ্ধ হবে আশা করি। কবির এ ধরণের লেখা আসর আগামীতে আরও পেতে চায়।
কবি আমার শুভেচ্ছা নেবেন। ভালো থাকুন। জয়গুরু।

আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধ- এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে কবির মন্তব্য বক্সে লিখে জানাবেন।
তাছাড়া যে কোন গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।
কবির কবিতার বিষয়বস্তু ও প্রারম্ভিক আলোচনা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

চেরনোবিল: এইচবিও টিভি সিরিজ

প্রথম প্রথম ল্যাব করতে গিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট পড়লো ইউরেনিয়াম, আর্মেসিয়াম সহ বেশ কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা নিরূপনের জন্য। সারাজীবন শুধু ইউরেনিয়াম, এটমিক বোমার নামই শুনে গেছি কিন্তু কখনো ইউরেনিয়াম নিয়ে নাড়াচাড়া করবো সেটা ভাবিনি। এরপর আরেকটা পড়লো ঘরের কোনায় লুকিয়ে থাকা তেজস্ক্রিয় পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা নিরূপনের জন্য একটা সিস্টেম বানানো। তখন এটমেল এভিআর ৩২ এর চল ছিলো, বাজারে রাসবেরীর সিস্টেম সবে আসতে শুরু করেছে। এরপর আরেকটা এ্যাসাইনমেন্ট এলো যে রেডিয়েশন ব্লক করার সিস্টেম এবং তাদের কার্যকরীতা। লেড মানে প্লামবাম থেকে শুরু করে এলউমিনিয়াম গ্রাফাইট, মোটা পুরু কংক্রীটের স্লাব সবই ছিলো সেই বিকিরন টেস্টে। সে এক লম্বা তেজস্ক্রিয় টাইপের ইতিহাস। যদিও প্রফেসর সুপারভাইজার গন আমাদের আশ্বস্ত করতেন যে আসলে আমাদেরকে পিউর ইউরেনিয়ামের সংস্পর্শে নেয়া হবে না। এমন কিছু ধাতব পদার্থ যাদের ওপর ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয় বিকিরন ফেলা হয়েছে সেসব দিয়ে এই প্রজেক্ট গুলো করানো হবে।

সে যাকগে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কখনো যদি মেল্ট ডাউন বা দুর্ঘটনা ঘটে তখন সবচে বিপদজ্জনক যে জিনিসটা হয় তেজস্ক্রিয়তার ছড়াছড়ি। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সবাই যেটা জানি না কোরিয়ামের ভয়াবহতা। নিউক্লিয়ার রড যখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চেইনরিএকশন ঘটে তাকে ঘিরে থাকা কন্ট্রোলড মডারেটর আর কিছু করতে পারে না। প্রচন্ড তাপে, এই মোটামুটি ২৭০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে (১০০ ডিগ্রিতে পানি বাস্পীভূত হয়, ইস্পাতের গলনাংক ১৫১০ ডিগ্রী), মডারেটর ধরে রাখতে পারে না। সেখানে প্রচন্ড তাপে ইউরেনিয়াম ফুয়েল রড গলতে শুরু করে এবং আশেপাশের সবকিছু গলিয়ে লাভাতে পরিনত করে। পানির সংস্পর্শে এসে বোরিক এসিড, ইন্ডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, সিজিয়াম আয়োডাইড এবং পরে জিরকোনিয়াম ডাইঅক্সাইডের সৃষ্টি করে। পানির সংস্পর্শে প্রচুর বাস্পের সৃষ্টি করে এবং সেই বাস্পে এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে আর তখন শুরু হয় তুষার পাত। দুর্ঘটনাস্থল হতে ১৫০-২০০ কিলোমিটার দূরে জানালার শার্সিতে যে ধূলো লেগে আছে তাতে পাবেন তেজস্ক্রিয় আয়োডিন ১৩১ এর আইসোটোপ। সেই কোরিয়াম ঠান্ডা করতে সারা সোভিয়েত ইউনিয়নের যত বোরন ছিলো অথবা হিট এক্সচেন্জারের জন্য যত লিকুইড নাইট্রোজেনের মজুত সব এক অর্ডারে চেরনোবিলে জড়ো করা হয়েছিলো। সুইডেনের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের মিটারে আয়োডিন ১৩১ এর আইসোটোপ ধরা দিচ্ছিলো। তখনও সারা বিশ্ব জানতে পারে চেরনোবিলের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে দুর্ঘটনা হয়েছে। সাদা তুলোর পেজার মতো পড়তে থাকা তুষারপাত মানুষ ভুল ভেবে যদি চোখে মুখে লাগায়, অথচ এটাই তেজস্ক্রিয়তা তখন কি কেউ ভেবে দেখেছে তার কি হবে?

সুন্দর একটা পয়েন্ট! তেজস্ক্রিয়তা আসলে ব্যাপারটা কি? মানুষ যখন তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসে তখন আমাদের কংকালের হাড়ের ক্যালসিয়াম খুব দ্রুত তেজস্ক্রিয় বা আয়োনাইজড হয়ে যায় এবং সেগুলো বিকিরন করা শুরু করা। ফলে শরীরে রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিন বা রেড সেলের অক্সিজেন স হজেই নস্ট হয়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ও হিলিং ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কোষের ডিএনএ গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মিউটেটেড হওয়া শুরু করলে হাড় থেকে মাংস গুলো খসে পড়ার যোগাড় হয়। বড় ভয়ংকর সে মৃত্যু। তবে আপনাকে সে পরিমান রেডিয়েশনের শিকার হতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে বছরে আপনি বছরে সর্বমোট মাত্র ৩ রয়েন্টজেন্ট রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসতে পারেন। আপনি যদি নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টরীতে কাজ করেন তাহলে বছরে ৫ এর বেশী না। এখন আপনি যদি হেজমেট স্যুট পড়ে রিএক্টরের সামনে নাচানাচি করেন, তাহলে আপনার মৃত্যু হয়তো তার পরের দিন সকালে লিখিত হবে। চেরনোবিল রিএ্যাক্টরে যখন মেল্ট ডাউন হয় তখন দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে ১৫০০০ রয়েন্টজেন্ট এবং কেন্দ্রে প্রায় ১ মিলিয়ন রয়েন্টজেন্ট ছিলো।

এইচবিও চেরনোবিলের ওপর অসাধারন সিরিজ তৈরী করেছে। প্রথম দুটো এপিসোডে এমনও দৃশ্য আছে যখন রেডিয়েশনের মেঘ লোকালয়ের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে তখন তার নীচে ছোট ছোট শিশুরা পনিটেইল বেধে স্কুলে খেলা করছে। কিশোরীরা গরম থেকে রক্ষা পাবার জন্য আইসক্রীমে কামড় দিচ্ছে। উঠতি বয়সী যুবকেরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে বাস্কেটবল কোর্টে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক দৃশ্য ছিলো যখন রেডিয়েশনে আক্রান্ত সবাইকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তখন প্রিয় পোষা কুকুরটি সে গাড়ীর পিছে দৌড়াচ্ছে। কুকুরটির শরীরের অর্ধেক পশম নেই, রক্ত ঝরছে। তার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। সে তার মালিকের গাড়ীর পিছু নিয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, সরকার পক্ষ নিজেদের এহেন ব্যার্থতাকে ঢেকে রাখবার জন্য যে অসুস্থ অস্বীকার ও ঘটনা ধামাচাপা দেবার প্রবনতা সেটা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। যেসব কয়লা শ্রমিকদের রিএ্যাক্টরের নীচে থাকা পানি সরানোর জন্য পাম্প ও হিট এক্সচেন্জার বসানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়, তাদের ছিলো না কোনো হেজমেট। ওপরে ইউরেনিয়াম অক্সাইডের কোর গলছে, মিলিয়ন মিলিয়ন রয়েন্টজেন্ট পরিমান তেজস্ক্রিয়তা নির্গমন হচ্ছে আর নীচ দিয়ে পুরো উলঙ্গ অবস্থায় সূড়ঙ্গ গড়ছে। যদিও জানে না এই আত্মঘাতী কাজের জন্য তাদের কোনো ক্ষতিপূরন দেয়া হবে কিনা কিন্তু তারা এটা করছে এই গলিত কোরিয়াম যদি পানির সাথে গিয়ে থার্মোনিউক্লিয়ার ব্লাসট ঘটায় অথবা পার্শ্ববর্তী নদীর পানিতে মেশে তাহলে ৫০ লক্ষ মানুষের খাবারের সুপেয় জলের উৎস বহু বছরের জন্য তেজস্ক্রিয় হয়ে থাকবে।

সমালোচনা করা যায় গর্বাচেভের আদলে যিনি অভিনয় করছেন। ছোটবেলায় গর্ভাচেভের ভারী কিউট পার্সোনালিটির সাথে এ চরিত্রটা তেমন যায় না। কিন্তু তাতে এক অথর্ব দুর্নীতিগ্রস্থ ও অযোগ্য সরকারের ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলতে এতটুকু কার্পন্য নেই কারো অভিনয়ে বা শুদ্ধ বয়ানে।

কি যেনো মসৃন কালো পাথরের মতো ছিলো! বেশ উৎসাহভরেই দমকল কর্মী সেটা হাতে নিলো। পাশের সহকর্মী বলে উঠলো,”ওটা গ্রাফাইট, ফেলে দে!” একটু সন্দেহ দেখা দিলো, হাত থেকে ফেলে দিলো,”কংক্রিটও হতে পারে!” কিন্তু তার মিনিট কয়েকের মধ্যে তার হাত ঝলসে গেলো। আসলে ওটা গ্রাফাইট ছিলো, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে তেজস্ক্রিয়তম পদার্থটি সে হাতে নিয়ে নিজের ওপর পৈশাচিক মৃত্যুকেই যেনো ডেকে এনেছিলো। রক্তাক্ত, কষ্টকর, যন্ত্রনাকাতর মৃত্যুর চাইতেও ভয়াবহ ছিলো এক অথর্ব স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের চরম ব্যার্থতার রূঢ় শিকার!

আমরাও কিছু দিন পর নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করছি। চেরনোবিলের আরবিএমকে নিউক্লিয়ার রিএক্টর থেকে হাজার গুন নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী ও যুগোপোগী এই রিএ্যাক্টর। যদি দক্ষ হাতে চালানো যায়, আমাদের আর পিছে ফিরে তাকাতে হবে। ভুল হলেও এরকম ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই। তারপরও আমাদের হয়তো তখন একটা করে আয়োডিন ট্যাবলেটের কৌটা সাথে করে ঘুরতে হবে। তার আগে এই সিরিজটা একটা ভালো শিক্ষা হতে পারে।

অবশ্য আমরা মনে সান্তনা পাবার জন্য ফুকুশিমা দুর্ঘটনার দিকে তাকাতে পারি যেখানে তেজস্ক্রীয়তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে আনা গেছে যদিও দুর্ঘটনাস্থলে এখনো ভয়াব হ মাত্রা তেজস্ক্রিয়তা বিদ্যমান। সেই পুরো প্লান্ট স্ক্রাপ করার জন্য ৪০ বছরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যের শুধু প্লান করার জন্য হাতে ৫ বছর রাখা হয়েছিলো। কিন্তু ৮ বছর পর রোবট দিয়ে এখন ধারনা পাওয়া যাচ্ছে চেরনোবিলের ফুকুশিমার রিএ্যাক্টর পুরোপুরি ধ্বসে যায়নি এবং কোরিয়াম এখনো রিএ্যাক্টরের ওপরের দিকেই আছে। পুরোপুরি রোবট নিয়ন্ত্রিত উদ্বার কাজ করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে তবে সেই টেকনোলজি এখনো কারো হাতে আসেনি। তাই বলে গবেষনা থেমে নেই। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভূমিকম্প রিখটার স্কেলের ৬-৭ ঠেকাবার জন্য সিভিল ইন্জিনিয়াররা পন্থা বের করতে পারলেও ৮ এর ওপর বা ৯ হলে তার কোনো পন্থা কারো জানা নেই। হতে পারে প্রকৃতির একটা ধাক্কা তাই বলে এটা আশীর্বাদ ধরা যায় এ জন্য যে এর ফলে টেকনোলজিক্যাল যে উন্নয়ন ঘটবে তা কাজে লাগানো যাবে গ্রহান্তরী অভিযান বা আরো বড় কোনো কাজে।

বিজ্ঞান আসলেই উত্তর দেয়, বলা হয়নি যে সবকিছু স হজে মিলবে। প্রকৃতির গুপ্তধন আরাধ্য বলেই মানুষের এগিয়ে যাওয়া।

বুক রিভিউ : ট্রেন টু ভিলেজ (কিশোর উপন্যাস)

বুক রিভিউ
ট্রেন টু ভিলেজ (কিশোর উপন্যাস)
লেখকঃ জিল্লুর রহমান
প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান, ০৫, বাংলাবাজার, ঢাকা।

বিষয়বস্তুঃ
ওরা কোনো দিন গ্রাম দেখেনি। ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছে, ঢাকায় বড় হয়েছে, একক পরিবারে। ফলে ওদের জীবনের গণ্ডি বলতে বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে সীমিত। তাই কিশোর বয়সে ওদের যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন ছিলো সেগুলো জানা হয়নি। রকির বাবা যখন বললো গ্রাম থেকে তার তাইতো ভাই আসবে তখন রকি আর রিতু দু’জনে হা করে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

গ্রাম থেকে তুলি এলো মিউজিক কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করতে, তার কাছ থেকে গ্রামের গল্প শুনে রকি গ্রামে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হলো । কিন্তু একা যাবে কীভাবে ? বাবা-মা কেউ রাজি হলো না, তাদের সময় নেই। রকি তার গ্রামে যাওয়ার আগ্রহের কথা বললো তার ফ্রেন্ড টনি, জেমস আর তিথিকে। তিথিতো শুনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো, ওয়াও। আমিও যাচ্ছি তোদের সঙ্গে।

কিন্তু গ্রামে যেতে ওদের অনেক বাধা। জেমস বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান বলে তারা জেমসকে যেতে দিলো না। তিথির গ্রামে যাওয়ার পথে বাধা হলো সে মেয়ে বলে। শুরু হলো তিথির হ্যাঙ্গার স্ট্রাইক। অবশেষে তারও একটা যাওয়ার উপায় বের হলো। এমনিভাবে অনেক বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে ওরা গ্রামে গেলো। সেখানে গিয়ে পরিচিত হলো অনেক নতুন ঘটনার সাথে। মাইক্রোবাস থেকে নামতেই একটা পাঁঠা দেখে রকি আর টনির মধ্যে একজন বলতে শুরু করলো ভল্লুক, আরেকজন বললো। মাইক্রোবাস দেখে পাঁঠা জোরে দৌড়ে আসতেই রকি আর টনি দু’জনে দৌড় দিলো। ওদের এই কাণ্ড যেনো গ্রামের মানুষের মধ্যে একটা হাসি-ঠাট্টার বিষয় হলো।

বিকেলে তুলি যখন রিতু আর তিথিকে মেহেদি পাতা তোলার জন্য ডাক দিলো তখন দু’জনে খুব খুশি হলো কিন্তু রিতু মেহেদি পাতা তোলার জন্য হাত বাড়াতেই তিথি জোরে চিৎকার করে বললো, হাত দিস্ না রিতু কাঁটা বিঁধবে। সখের বশে তিথি সন্ধ্যায় শাড়ি পরলো। আর শাড়ি পরে উঠান থেকে আঙিনায় নামতেই সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো। পরদিন এই ছয় জনের একদল এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় কিশোর-কিশোরী গেলো ধর্মপুর ফরেস্টে, জঙ্গল দেখতে। জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা আর পশু-পাখির ছবি তুলতে তুলতে রকি আর তিথি পথ হারিয়ে ফেললো।

তিথি ভুলে মোবাইলফোন বাড়িতে ছেড়ে এসেছে আর ছবি তুলতে তুলতে রকির মোবাইল ফোনেও চার্জ শেষ হয়ে গেছে। দু’জনের শরীরও অনেক ক্লান্ত। এখন কীভাবে জঙ্গল থেকে বের হবে সে চিন্তায় দু’জনে অস্থির হয়ে পড়লো। রকির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, সে জোরে জোরে টনি, টনি বলে ডাকতে শুরু করলো কিন্তু জঙ্গলের অনেক গভীরে চলে আসায় ওদের ডাক টনি, তরু, তুলি, রিতুর কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। ওরা নিরাশ হয়ে ক্লান্ত অবসন্ন দেহ নিয়ে পথে পথে ঘুরছিলো। এমন সময় জঙ্গলের পথ দিয়ে একপাল শুয়োর দেখে দু’জনে ভয়ে কেঁপে উঠলো। ওরা একগুচ্ছ ঘন ছোট গাছের আড়ালে লুকালো। গভীর জঙ্গলের দু’জন অপরিচিত কিশোর-কিশোরীকে দেখে শুয়োরের পালকে তাড়া করে এগিয়ে এলো ফিলীপ মারন্ডী। সে রকি আর তিথিকে আশ্বস্ত করলো, অভয় দিলো এবং দু’জনকে পথ দেখিয়ে জঙ্গল থেকে বের করে মাইক্রোবাসের কাছে পৌঁছে দিলো।

পরদিন সন্ধ্যায় আড্ডা হলো তুলির দাদু লতিফ সাহেবের সঙ্গে। লতিফ সাহেব পঁচাত্তর বছর বয়সের একজন উচ্চশিক্ষিত, জ্ঞানপিপাসু এবং প্রযুক্তি চিন্তা জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ। শহুরে এই চার কিশোর-কিশোরী তার ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট, ট্রেন টু ভিলেজ গ্রুপ, ব্লগে লেখা দেখে অবাক হলো। ওরা যেনো খুঁজে পেলো পঁচাত্তর বছর বয়সের এক চিরসবুজ বালককে। লতিফ সাহেবও অবাক হলেন যখন তিনি জানতে পারলেন ওরা কোনোদিন গ্রাম দেখেনি, গ্রামে ওদের কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই। এতদিন শেকড়ের টান, নাড়ির টান, মাটির টান বলে যে কথা তিনি বলতেন এই কিশোর-কিশোরীদের সে রকম কোনো টান নেই। ফুপা সম্পর্ক কাকে বলে ওরা জানেনা তখন তিনি শুধু অবাকই হলেন না কিছুটা হতবাক হলেন।

তিনি এই কিশোর-কিশোরীদের বোঝালেন এমনিভাবে গ্রামের সঙ্গে শহরের মানুষের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ছিন্ন হচ্ছে, গ্রামের মানুষের সঙ্গে শহরের মানুষের বৈষম্য বাড়ছে। আর কয়েক প্রজন্ম পর হয়তো দেখা যাবে গ্রামের মানুষ আর শহরের মানুষ দু’টো আলাদা প্রজাতির মানুষে পরিণত হয়েছে। লতিফ সাহেব ওদের শোনালেন তার ইচ্ছার কথা, গ্রামের অপরূপ শোভা, গ্রামের মানুষের কৃষ্টি-কালচার বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, মানুষে মানুষে এই সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে সমাজকে স্থিতিশীল করার জন্য। তিনি তাদের শোনালেন, দেশপ্রেমিক কিশোর ক্ষুদিরামের দেশ্রপ্রেমের কথা, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা।

ট্রেন টু ভিলেজ একটি চমৎকার কিশোর উপন্যাস, গ্রন্থটি সংগ্রহে রাখতে পারেন।

বুক রিভিউ উপন্যাসঃ খুঁজে ফিরি তারে

বুক রিভিউ উপন্যাসঃ খুঁজে ফিরি তারে
লেখকঃ জিল্লুর রহমান
প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান, ০৫, বাংলাবাজার, ঢাকা।

বিষয়বস্তুঃ
আরশী মোবাইলের বাটন টিপলো, দুঃখিত এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহ পূর্বক কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন। সে মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে দিলো, তোমারই বা দোষ কী? তোমার সঙ্গে তো আমি নিজেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি, তুমিই বা নতুন করে সংযোগ দিবে কেনো ? তুমি কোথায় ফিরোজ ? কতদিন থেকে তোমাকে খুঁজছি, কতোবার তোমার মোবাইলে রিং দিয়েছি, কোনোদিন তোমাকে পেলাম না। তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন, তুমি আমাকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে, তুমি বলতে আমি যেদিন প্রমোশন পেয়ে অফিসার হবো সেদিন তুমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবে। আমি প্রমোশন পেয়েছি ফিরোজ, আগামী মাসে আমার একটা র‌্যাংক লাগবে, তুমি দেখবে না?

প্রমীর অকাল মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ে রিমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরোজ দ্বিতীয় বিয়ের কথা কোনোদিন ভাবেনি। নীলফামারী থেকে জয়পুরহাট বদলি হওয়ার পর সে যে বাসা ভাড়া নিয়েছিলো সে বাসারই মেয়ে আরশী তখন বগুড়া আযিযুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্রী। প্রথমদিকে ফিরোজ যখন অফিসে থাকতো তখন আরশী প্রায় সময় দোতলায় চলে আসতো, রিমার সঙ্গে কথা বলে সময় কাটিয়ে দিতো। একদিন আরশীর সঙ্গে ফিরোজের পরিচয় হয়। আরশী যেন খুব তাড়াতাড়ি ফিরোজকে আপন করে নেয়। ফিরোজও যেন তাই। অল্পদিনের মধ্যে আরশীর ভালোবাসার কাছে ফিরোজের বয়স, সরকারি চাকুরিতে তার পদমর্যাদা সবকিছুই যেন সে ভুলে গিয়েছিলো।

এমন সময় জয়পুরহাট পুলিশ লাইনে মহিলা পুলিশে নিয়োগের সার্কুলার দেখে আরশী প্রথমে ফিরোজের কাছে পরামর্শ চায়। ফিরোজ প্রথমে আরো লেখাপড়া করার পরামর্শ দিলেও আরশীদের আর্থিক টানাটানির কথা জেনে তাকে চাকরির চেষ্টা করার জন্য উৎসাহ দেয়। ভাগ্যক্রমে আরশী মহিলা পুলিশ পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়। মহিলা পুলিশে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আরশী প্রথমেই ফিরোজের পা ছুঁয়ে সালাম করে। তারপর রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে শুরু হয় ট্রেনিং। ট্রেনিং চলাকালে আরশীর সবসময় ফিরোজের কথা মনে হতো, তার মনে হতো ফিরোজই যেন তার সব। ফিরোজ জীবনেও ধীরে ধীরে প্রমীর স্থান দখল করে আরশী।

ট্রেনিং শেষে আরশীর পোস্টিং হয় রাজশাহী জেলার বাঘমারা থানায়। আরশী প্রথমে ভেঙ্গে পড়লেও ফিরোজ তাকে সান্ত্বনা দেয় এবং সব সময় তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফিরোজ প্রায় আরশীর সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজশাহী যেতো, সারাদিন দু’জনে নব-দম্পতির মতো রাজশাহী চষে বেড়ানোর পর ফিরোজ আরশীর সংসারের প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দিয়ে জয়পুরহাট ফিরতো।

আরশীকে মহিলা আসামি নিয়ে প্রায়ই রাজশাহী যেতে হতো। সেখানে তার পরিচয় হয় কন্সটেবল নূরের সঙ্গে। তখন নূরের পোস্টিং ছিলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন কোর্টে। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে প্রথমে সখ্যতা গড়ে উঠে, তারপর প্রেম। নূর আরশীকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখায়, আরশী নূরের দেখানো স্বপ্নে বিভোর হয়ে ফিরোজকে ভুলে যায়। আরশী আর ফিরোজের বিষয়টিকে আরশীর বোন-দুলাভাই অর্থ উপার্জনের একটা মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে আরশীকে ফিরোজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে উৎসাহিত করে। ফিরোজ জয়পুরহাট থেকে বদলি হয়ে যায়।

নূর আরশীর সঙ্গে প্রতারণা করে। নূর-এর প্রতারণা আরশীর মনে ফিরোজের সঙ্গে তার আচরণের জন্য অপরাধবোধ জাগিয়ে তোলে। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করার জন্য আরশী মনে মনে তাকে খুঁজতে থাকে। ইতোমধ্যে আরশীর প্রমোশন হয় এবং র্যাং ক পরানোর দিন নির্ধারিত হয়। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করা আরশীর জন্য আরো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আরশী তার বান্ধবী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত জেসমিনের সহযোগিতায় ফিরোজের হেডঅফিসের ঠিকানা বের করে। সেখানে যোগাযোগ করে জানতে পারে ফিরোজ কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে রিজাইন করেছে। আরশী সেখান থেকে ফিরোজের ঠিকানা নিয়ে রওয়ানা হয় তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায়।

চাকরি ছেড়ে দিয়ে এইচ.বি.এস পজিটিভ ভাইরাসে আক্রান্ত ফিরোজ কাউকে না জানিয়ে তার একমাত্র কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত দিনে রিমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন রাতেই ফিরোজ অসুস্থ ‘ হয়ে পড়ে। তাকে জরুরি ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।
দিনাজপুরে ফিরোজের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে আরশী একভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কল ফিরোজ সাহেবের বাড়িটা কোনো দিকে ? প্লিজ যদি বলতেন?
তিনি অদূরে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ফিরোজের বাড়িটাতো ঐদিকে কিন্তু ও তো-
কী হয়েছে আঙ্কল?
ও তোমার কে হয় মা?
আংকেল ফিরোজ সাহেব আমার পরম শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ, তাঁর এক মেয়ে আছে নাম রিমা, তিনি আমাকে রিমার মতো স্নেহ করেন। ফিরোজ সাহেব আমার গার্জিয়ানের মতো, বন্ধুর মতো, তিনিই আমার সব।
ভদ্রলোক অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বললেন, তাহলে তো তুমি সব হারিয়েছো মা।
______________________________________

যারা ঘরে বসে খুঁজে ফিরি তারে সংগ্রহ করতে চান, এখানে ক্লিক করুন।

বুক রিভিউ উপন্যাসঃ বিজয়িনী

বুক রিভিউ উপন্যাসঃ বিজয়িনী
লেখকঃ জিল্লুর রহমান
মূল্য: টাকা ১৫০.০০ মাত্র।
প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান, ০৫, বাংলাবাজার, ঢাকা।

বিষয়বস্তুঃ
রাতের আঁধারে সবুজ যেদিন রাতে শঙ্কর মাধবপুর গ্রাম থেকে পালিয়ে এলো সেদিন শীতের রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার, শঙ্কর মাধবপুর গ্রাম থেকে রাজিবপুর পৌঁছাতে পায়ে হাঁটার পথ তিন কিলোমিটার, উঁচু-নিচু রাস্তা, ধু ধু বালুচর আর কাশবন। তারপর সোনাভরি নদী। মনের ভিতরে আছে কেউ দেখে ফেলার আশঙ্কা। এতকিছুর মধ্যেও সবুজের মনে হলো একবার যদি রেণুর মুখটা দেখে যেতে পারতো…

সালিসের ভয়ে, সালিসে অপমানের ভয়ে সে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছে ঢাকায়। একটা চাকুরীও জুটেছে গার্মেন্টসে। কিন্তু গার্মেন্টসে চাকুরীতে তার মন নেই। তার মনের মধ্যে সবসময় রেণু, আর শুধু রেণু।

সেদিন সবুজ পালিয়ে যাওয়ার পর রেণুও চলে যায় নানার বাড়ি চিলমারী। ক’দিন যেতে না যেতেই শুরু হয় তার বিয়ের আয়োজন। রেণু নানার বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয় রিয়াজের সঙ্গে। রিয়াজ বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। পাকা বাড়ি, অন্ন-বস্ত্রের অভাব নেই। ব্রহ্মপুত্রের চরে ক্ষুধা তৃষ্ণার সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়া রেণু এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহ বঁধু। তারপরও রেণুর মনে সুখ নেই। তার মন শুধু সবুজের জন্য ছটফট করে। এর মধ্যে ঘটে আরেক ঘটনা। রিয়াজ রেণুকে নিয়ে বেড়াতে আসে শঙ্কর মাধবপুর গ্রামে, শ্বশুরবাড়িতে। আর বেড়াতে এসেই হয় যত বিপত্তি। সে রেণুর প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পারে রেণুর সঙ্গে সবুজের হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের কথা। সে রেণুকে তার বাবার বাড়িতে রেখে পরদিনই পালিয়ে যায়। রেণুও পরের নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে চলে যায় পিছনে পিছনে রেণু চলে যায় তার শ্বশুরবাড়ি কিন্তু সম্পর্কটা আর আগের মতো স্বাভাবিক হয় না। রেণুর ওপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে রেণু তার বাবার বাড়ি চলে আসে। ক’দিন পরেই চলে আসে বিচ্ছেদের চিঠি, তালাকনামা।

রেণুর বড় বোন বানু। কিশোরী বয়সে তারও বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু সতীনের সংসারে টিকতে না পেরে সেও ফিরে এসেছিলো বাবার বাড়িতে সে অনেক আগের কথা। তারপর সে চলে যায় ঢাকা, সেখানে গার্মেন্টসে চাকুরী করে বাড়িতে মাসে মাসে টাকা পাঠায়, তাদের দুর্দিন কেটে যায়, সংসারে সুখ আসে। রেণু বাবার বাড়িতে ফিরে এলে সেও বানুর সঙ্গে ঢাকা গিয়ে বানুর সঙ্গে গার্মেন্টসে চাকুরী করে। দু’মেয়ের চাকুরীর টাকায় সংসার আরো সচ্ছল হয়।

বানু, রেণু আর ইতি। নুরুর তিন মেয়ে আর একমাত্র ছেলে মানিক। ইতি মেধাবী ছাত্রী। সে যখন ক্লাস ফাইভ পাস করে হাই স্কুলে ভর্তি হবে তখনো বানুর চাকুরী হয় নি, রেণু শ্বশুরবাড়িতে। তখন তাদের টানাপোড়নের সংসার। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সঙ্গতির অভাবে নুরু তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু শঙ্কর মাধবপুর হাই স্কুলের হেড মাস্টারের পরামর্শ আর আশ্বাসের ফলে সে ইতিকে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করে দেয়।

ইতি আর মানিক যমজ। নুরুর একমাত্র ছেলে, বানু, রেনু, ইতির একমাত্র ভাই হওয়ায় সে বড় হয়েছে অনেক আদর যত্নে। ক্লাস ফাইভ পাস করার পর সে জিদ ধরলো রাজিবপুর হাই স্কুলে ভর্তি হবে। নুরু তাকে রাজিবপুর হাই স্কুলেই ভর্তি করে দিলো। কিন্তু রাজিবপুর ভর্তি হওয়ার পর সে লেখাপড়ায় আরো পিছিয়ে গেলো।
ছেলে সন্তানের জন্য নুরু আর ফুলির সংসারে একে একে তিন মেয়ে হয়েছে, মেধাবী হওয়ার পরও ইতির লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে মানিককে রাজিবপুর হাই স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে অথচ সেই অবহেলার মেয়ে ইতি এ-প্লাস পেয়ে এস.এস.সি পাস করলো আর মানিক পাস করলো বি গ্রেডে।

সবুজ তার মামাতো ভাইয়ের কাছে সব খবর নিয়ে শেষ পর্যন্ত রেণুকে খুঁজে পেয়েছে। শুধু খুঁজে পাওয়াই নয়, সে রেণুকে বিয়ে করেছে। ইতি আর মানিকের রেজাল্ট এবং সবুজের সঙ্গে রেণুর বিয়ে সব মিলিয়ে নুরু আর ফুলির সংসারে আজ আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। বানু, রেণু আর সবুজ ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছে ডে কোচে। বটতলায় কোচ থেকে নেমে ভ্যানে চড়ে সবাই নদীর ঘাটে এলো। নদীর ঘাটে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো না। কিছুক্ষণ পরেই নৌকা ছেড়ে দিলো।
নৌকা যখন সোনাভরি পার হয়ে শঙ্কর মাধবপুর ঘাটে এসে ভিড়ল তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সবাই নৌকা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলো। সোনাভরির পাড় থেকে রেণুদের বাড়ি কয়েক মিনিটের পথ। বাজারের পাশে একটা মসজিদ থেকে তখন ফজু মাতব্বর নামাজ পড়ে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো একসঙ্গে কয়েক জনকে পেছন থেকে আসতে দেখে সে দাঁড়ালো। সবাই কাছে যেতেই ফজু মাতব্বর জিজ্ঞেস করলো, কে? তোমরা কে?

শঙ্কর মাধবপুর গ্রামের শালিসের ধারক এবং বাহক ফজু মাতব্বরকে দেখে সবুজের রেগে ফেটে পড়লো। সে ফজু মাতব্বরের কাছে গিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক সুরে বললো, স্লামুয়ালায়ক মাতব্বর সাহেব। ওয়ালেকুম আসসালাম। তুমি সবুজ না? সবুজ আরো কাছে গেলো, হ্যাঁ আমি সবুজ। তুমি না গ্রাম ছেড়ে চলে গেছিলে?আবার এসেছে? হ্যাঁ, আবার এসেছি। শালিস বসাবেন নাকি? রেণুও এসেছে। রেণু সামনে এসে দাঁড়ালো। ফজু মাতব্বর একবার রেণুর আরেকবার সবুজের দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোমরা বিয়ে করেছো? সবুজ রেণুর কাঁধের ওপর একটা হাত রেখে বললো, হ্যাঁ। রেণু এখন আমার বউ। ফজু মাতব্বর আর কোনো কথা বললো না। সে মাথা নত করে চলে গেলো।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখকদের বই নিয়ে ‘সতীর্থ’ বইমেলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখকদের বই নিয়ে ‘সতীর্থ’ বইমেলা

কবি ও গল্পকার এবং শব্দনীড় ব্লগার রোদেলা নীলা‘র পুরনো এবং নতুন বই পাওয়া যাবে সতীর্থ বইমেলা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বইমেলায়।

নির্বাণ প্রকাশের আয়োজনে দ্বিতীয় বারের মতো আগামী ১২, ১৩, ১৪ এবং ১৫ এপ্রিল রোজ শুক্র, শনি, রবি এবং সোমবার; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সতীর্থ বইমেলা ২০১৯।

সতীর্থ বইমেলায় থাকছে বিভিন্ন প্রকাশনী হতে প্রকাশিত জাহাঙ্গীরনগরের বর্তমান ছাত্র, সাবেক ছাত্র এবং শিক্ষকদের বই। ১২, ১৩, ১৪ এবং ১৫ এপ্রিল প্রতিদিন সকাল ১০ টায় মেলা শুরু হয়ে চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত।

বইমেলার পাশাপাশি গতবছরের মতো এবারো থাকছে কবিতা পাঠ, গান এবং উচ্চাঙ্গ সংগীত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ১২ তারিখ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত।

আপনারা সবাই আমন্ত্রিত।

বইমেলায় মারজানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এ তরুণ বাচিকশিল্পী শেখ সাদী মারজানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “রক্তমাখা প্রিয় বসন্ত” চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ৪৮ পৃষ্ঠার বইটিতে রয়েছে ৪০টি কবিতা। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে- পশ্চিমবঙ্গের কবি-কথাসাহিত্যিক আবদুস শুকুর খান ও তাঁর সহধর্মিনী নিলোফা খানকে। এর আগে ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মারজানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলোর বিলাপ আঁধারের হাসি” প্রকাশিত হয়েছিল।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে- লিটল ম্যাগ চত্বরের চলন্তিকার (১২৭ নম্বর)স্টলে।

কবি দাউদুল ইসলামের দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ “অচিন বুদবুদ”

কবি দাউদুল ইসলামের দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ “অচিন বুদবুদ” বেরিয়েছে বাংলা একাডেমির একুশে বই মেলায়। জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থটিতে রয়েছে ১০০টি নির্বাচিত কবিতা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত।

একুশে বই মেলায় জাগৃতির ২২৫ ও ২২৭ নং স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

শব্দনীড় ব্লগের কবি দাউদুল ইসলামের দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ “অচিন বুদবুদ”। প্রথম কাব্য গ্রন্থ ব্লগারস ফোরাম থেকে “নীড় পদাবলী” যৌথ ভাবে প্রকাশিত হয়। এবং দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “দেবী ও কবি” পাঠক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

প্রিয় পাঠকদের বইটি সংগ্রহ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শুভকামনা এবং ধন্যবাদ।