বনগাঁ লিটল ম্যাগাজিন মেলা-২০১৯ এ সময়ের মুখ প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হল শংকর দেবনাথের ছোটদের উপযোগি গল্পের বই ” দুই শালিকের গল্প”
বিভাগের আর্কাইভঃ প্রকাশনা ও রিভিউ
এই শহরের সুখ নিয়ে মিনহাজ ফয়সাল
একুশে বই মেলা – ২০১৯ এ আসছে মিনহাজ ফয়সালের নতুন দুটি বই। ২০১৪ সালে কবিতার বই প্রকাশের মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু করা এই পথিকের এবারের চমক শিশুতোষ ছড়ার বই ‘পাখি সব পাখা চায়’ আর ‘এই শহরের সুখ’ নামে আরেকটি বই। ইতোমধ্যে গ্রন্থ দু’টির প্রচ্ছদ প্রকাশের পাশাপাশি নিয়াজ চৌধুরী তুলির প্রচ্ছদ আর নিসা মাহজাবীনের অলংকরণে সিলেটের শব্দতারা প্রকাশন থেকে শিশুতোষ ছড়ার বই ‘পাখি সব পাখা চায়’ প্রকাশিত হয়েছে।
৬ এপ্রিল সুনামগঞ্জ সদরের বুড়িস্থলে অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ ও রোকেয়া বেগমের পরিবারে জন্ম নেওয়া মিনহাজ ফয়সালের পুরোনাম মিনহাজুর রহমান ফয়সাল। লেখালেখির পাশাপাশি সম্পাদনা করেন সাহিত্যের ছোট কাগজ পিঁপড়া।
লেখকের প্রকাশিত অন্যান্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ- শব্দ দিয়ে আঁকা আবেগ (২০১৪), শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ- চাঁদের বুড়ি (২০১৬), রোদের ডানায় ফড়িং নাচে (২০১৭), ছড়াগ্রন্থ- আপনি আমি তুই (২০১৮), গল্পগ্রন্থ- যতিহীন ভালোবাসা (২০১৬), মানুষ হাসতে জানে (২০১৭) এবং শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ- ম্যাজিক স্যার (২০১৮)।
সাহিত্য অঙ্গনে সফলতার ফলস্বরূপ মিনহাজ ফয়সাল অর্জন করেছেন কেমুসাস তরুণ সাহিত্য পদক (২০১৬) ও কাব্যকথা জাতীয় সাহিত্য পদক (২০১৮)।

এপিগ্রাম ইন “অয়োময়” ও “অদ্ভুত সব গল্প”
হুমায়ূন আহমেদের বইগুলির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক যেটা আমার কাছে মনে হয় তা হচ্ছে “এপিগ্রাম”। বই পড়ার সময় এপিগ্রাম গুলি সহজাত ভাবেই আমার চোখে পড়ে, আর সেগুলিকে আলাদা করে টুকে রাখাটা আমার স্বভাব। শত শত বইয়ের এপিগ্রাম দুটি ডায়রিতে লেখা আছে। এখনও বই পড়ার সময় এই অভ্যাস নিরবে কাজ করে যায়। তারই ফল এই লেখাগুলি। এখানে আজ হুমায়ূন আহমেদের লেখা “অয়োময়” ও “অদ্ভুত সব গল্প” বই দুটির এপিগ্রাম শেয়ার করবো।
অয়োময় গল্পের বইটিতে মাত্র ৩টি এপিগ্রাম আমি পেয়েছি।
১। টাকা পয়সা, ক্ষমতা, এই সব বেশী থাকলে মানুষের স্বভাব ঠিক থাকে না।
২। মৃত্যুর ভয় নিয়ে বেচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।
৩। শিক্ষক সম্প্রদায়ের স্বভাবই হচ্ছে যখন তখন উপদেশ দিয়ে বেরানো।
অদ্ভুত সব গল্প গল্পের বইটিতে মাত্র ৭টি এপিগ্রাম আমি পেয়েছি।
১। শরম নারীর ভূষণ, পুরুষের কলঙ্ক।
২। সকাল বেলার সময়টা হল ব্যস্ততার সময়।
৩। সবকিছু সবাইকে বলে বেরাতে হবে তাতো না।
৪। অফিসের লোকজন অকাজের কথা বলতেই বেশি পছন্দ করে।
৫। যে যেটা অপছন্দ করে তার কপালে সেটাই জোটে।
৬। মানুষের সবচেয়ে ভাল লাগে অচেনা কোন যায়গা থেকে উপহার পেতে।
৭। মূর্খদের সবাই স্নেহ করে। বুদ্ধিমানদের কেউ স্নেহ করেনা, ভয় পায়।
“নিঃশব্দ প্রেম”
ঢাকায় একুশের বই মেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে কাব্যগ্রন্থ “নিঃশব্দ প্রেম“।
বইটি প্রকাশ করছেন : স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান- “জলছবি”।
প্রবাসে থেকে দেশের বই মেলায় বই প্রকাশ করা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার। এই কঠিন কাজটি সহজ করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অগ্রজ সুহৃদ ও গণ মাধ্যম কর্মী “সিস নিউজ” অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক জনাব আল মামুন। সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন সুহৃদ আজাদ কাশ্মীর জামান ভাই।
বইটির সফল প্রকাশনায় অগ্রজ, অনুজ, শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু সবার সুদৃষ্টি প্রত্যাশী।

এপিগ্রাম ইন “অচিনপুর”
হুমায়ূন আহমেদের বইগুলির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক যেটা আমার কাছে মনে হয় তা হচ্ছে “এপিগ্রাম”। বই পড়ার সময় এপিগ্রাম গুলি সহজাত ভাবেই আমার চোখে পড়ে, আর সেগুলিকে আলাদা করে টুকে রাখাটা আমার স্বভাব। শত শত বইয়ের এপিগ্রাম দুটি ডায়রিতে লেখা আছে। এখনও বই পড়ার সময় এই অভ্যাস নিরবে কাজ করে যায়। তারই ফল এই লেখাগুলি। এখানে আজ হুমায়ূন আহমেদের লেখা “অচিনপুর” উপন্যাসের এপিগ্রাম শেয়ার করবো।
১। শিল্পীরা সব সময়ই শিশুদের আকর্ষণ করে।
২। ভয়টা বহুলাংশে সংক্রামক।
৩। কিছু কিছু মানুষ ভাগ্যকে নিজের হাতে গড়েন, আবার কারো কারো কাছে ভাগ্য নিজে এসে ধরা দেয়।
৪। স্মৃতিকে সব সময় বিশ্বাস করা চলে না।
৫। ক্ষমতাবান লোকরা সব সময় নিঃসঙ্গ জীবন কাটায়।
৬। অল্প বয়সে স্নেহটাকে বন্ধন মনে হয়।
৭। না চাইতে যা পাওয়া যায় তা সবসময়ই মূল্যহীন।
৮। কোন একটি বিশেষ ঘটনার কাল্পনিক চিত্র যদি বারবার আঁকা যায় তাহলে এমন একটা সময় আসে যখন সেই কাল্পনিক চিত্রকেই বাস্তব বলে ভ্রম হয়।
৯। আপাত কার্যকারণ ছাড়াই যে সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপার ঘটে তাই কেমন করে পরবর্তী সময়ে মানুষের জীবন বদলে দেয়।
১০। মেয়েরা খুব সহজেই ভালোবাসা বুঝতে পারে।
১১। একঘেয়ে কোন কিছুতেই আকর্ষণ থাকে না।
১২। রূপ আর কয় দিনের? নিম ফুল যয় দিনের।
১৩। নিজেকে অবাঞ্ছিত ভাবা খুব কষ্ট ও অপমানের ব্যাপার।
১৪। যাবতীয় দুর্বোধ্য বস্তুর জন্য মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকে।
১৫। সুখ এবং দুঃখ আসলে একই জিনিস। সময়ের সাথে সাথে সুখ বদলে গিয়ে দুঃখ হয়ে যায় আবার দুঃখ হয়ে যায় সুখ।
“অচিনপুর” উপন্যাসটিতে এই ৫ টি এপিগ্রাম আমার নজরে এসেছে।

এপিগ্রাম ইন “১৯৭১”
হুমায়ূন আহমেদের বইগুলির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক যেটা আমার কাছে মনে হয় তা হচ্ছে “এপিগ্রাম”। বই পড়ার সময় এপিগ্রাম গুলি সহজাত ভাবেই আমার চোখে পড়ে, আর সেগুলিকে আলাদা করে টুকে রাখাটা আমার স্বভাব। শত শত বইয়ের এপিগ্রাম দুটি ডায়রিতে লেখা আছে। এখনও বই পড়ার সময় এই অভ্যাস নিরবে কাজ করে যায়। তারই ফল এই লেখাগুলি। এখানে আজ হুমায়ূন আহমেদের লেখা “১৯৭১” উপন্যাসের এপিগ্রাম শেয়ার করবো।
১। খিদের কষ্ট বড় কষ্ট।
২। মানুষকে ভয় পাইয়ে দেবার মাঝে একটা আলাদা আনন্দ আছে।
৩। বিশেষ বিশেষ পরিবেশে খুব সাধারণ কথাও অসাধারণ মনে হয়।
৪। মৃত্যু একটি ভয়াবহ ব্যাপার। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে কে কি করবে তা আগে থেকে বলা যায় না।
৫। কোন কোন সময় মানুষের ইন্দ্রিয় অস্বাভাবিক তীক্ষ্ণ হয়ে যায়।
“১৯৭১” বইটিতে এই ৫ টি এপিগ্রাম আমার নজরে এসেছে।
রসেকষে ভরা প্রবাদের ছড়া … শংকর দেবনাথ
আমার প্রথম উপন্যাস ‘আলাপন’ প্রকাশিত হচ্ছে
এ প্রজন্মের নতুন মুখ, কবি আশফাকুর তাসবীর’ এর প্রথম উপন্যাস ‘আলাপন‘ প্রকাশিত হচ্ছে নোলক প্রকাশন থেকে।
সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন নোলকের পক্ষ থেকে।
নন্দিনী খান
নোলক প্রকাশন
প্রচ্ছদশিল্পী
আর. করিম
__________
অমিত কুমার বিশ্বাসের উপন্যাস “ঙ বৃত্তান্ত” এর পাঠ-প্রতিক্রিয়া
অমিত কুমার বিশ্বাস-এর “ঙ বৃত্তান্ত ” উপন্যাসের পাঠ-প্রতিক্রিয়া
#শংকর_দেবনাথ
১৪২৫ শারদ সংখ্যা কবিতা আশ্রম পত্রিকায় কাব্যকথাকার অমিত কুমার বিশ্বাস একটি উপন্যাস লিখেছেন। নাম- “ঙ বৃত্তান্ত “।
আমি একজন অতিসাধারণ পাঠক। তাই দু’দুবার পড়তে হলো উপন্যাসটির হৃদয়কে স্পর্শ করার জন্য। তবুও ছুঁতে পারিনি তার অতলান্ত অনুভূতি। তবে পড়ার শুরুতেই আমাকে নামকরণটা ভাবিত করেছে। ব্যতিক্রমী নাম। ঙ বৃত্তান্ত।
ঙ হলো বাংলা বর্ণমালার এমন একটি বর্ণ যা মাত্রাহীন এবং যার উচ্চারণ স্থান হলো নাসিকা মাত্রাহীনতা আসলে মাথার উপরের ছাদহীনতা বা উদ্বাস্তুতা। ঙ নাসিক্যবর্ণ। নাক হলো প্রাণবায়ু নির্গমন বহির্গমন পথ। অর্থাৎ বেঁচে থাকার প্রমাণ। আবার মাত্রাহীনতা বলতে ছন্দ-তালহীনতাও বোঝাতে পারে।
আমার মনে হয় লেখক মাত্রা-লয়হীন বেঁচে থাকা জীবনের বৃত্তান্ত বা কাহিনিচিত্র আঁকতে চেয়েছেন। তাই ৪৮ টি শিরোনামযুক্ত পর্বে সাজানো উপন্যাসটির ভেতরের কাহিনিও মাত্রাহীন। আর কাহিনির শরীরগঠনে যেসব চরিত্র উঠে এসেছে, তারাও ওই মাত্রা-লয়হীন ঙ-এর মত নাসিক্য-ব্যাঞ্জণে প্রকটিত।
বস্তুত “চরে বসে রাধে ঙ/ চোখে তার লাগে ধোঁয়া”- সহজপাঠের এই জীবনসংকট ‘ঙ বৃত্তান্ত’র বিমূর্তসুর। চিরকাল বাস্তুহীন ঙ-রা জীবননদীর চরে যন্ত্রণার আগুনে বাঁচার রসদ জ্বালায় আর বিরুদ্ধ বাতাসে ধোঁয়ারা এসে চোখের জল ঝরায়।
এ উপন্যাস গতানুগতিক উপন্যাসের মত সামঞ্জস্যপুর্ণ কাহিনির বাঁধুনিতে বাঁধা থাকেনি। বাঁধনছেঁড়া জীবনের আকুলতা বারবার গ্রন্থিত হতে হতে গ্রন্থিমোচিত হয়েছে। আর সেই কাহিনির হৃদয়ে বারবার জেগে উঠেছে কবিতার ভালবাসা।
শব্দকে দ্বগ্ধ করতে করতে লেখক শুদ্ধতায় পৌঁছে যান আর নির্মিত হয় এক মগ্নগদ্য। যা পাঠককে একদিকে যেমন টেনে নিয়ে যেতে চায় কবিতার ঘরে, অন্যদিকে রূপক-বিশেষণাশ্রয়ি গদ্যচলন এক ভাব-মায়ালোকের সন্ধান দিতে চায়।
গতানুগতিক উপন্যাস-ভাবনার বিপ্রতীপে উদ্বাস্তু জীবন-কাহিনির সুত্র যেমন ছিন্নতায় সমাকীর্ণ, কাব্যকথাকার অমিত কুমার বিশ্বাসের ‘ঙ বৃত্তান্ত’র কাহিনিসূত্রও তেমনি ছেঁড়াছেঁড়া জীবনের খণ্ডখণ্ড আবেগ-আশা আর স্বপ্নভঙ্গের যাপনচিত্র হয়ে উঠেছে- যা পড়তে পড়তে পাঠক কেবলই দেখতে পাবেন গদ্যের মধ্যে বিমূর্ত কবিতামুর্তি, যে কেবলই হাতছানি দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে চায় এক অনাস্বাদিত রসের ভাবসাগরে। আর মনে হবে -” তৃতীয় নয়ন আগুন ঝরাচ্ছে খুব…”

আলস্যের জয়গান – ৩
আলস্য ভোগ করতে হলে আপনাকে একটি বিশেষ শ্রেণীর লোক হতে হবে, অথবা আপনার পর্যাপ্ত অর্থ-সম্পদ থাকতে হবে। তা যদি না হন বা না থাকে তাহলে আপনার আলস্যের সুযোগটা ঘেচাং করে কেটে নেয়া হবে।
ধরুন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক দুনিয়ার যত পিন দরকার তা প্রস্তুত করছে। ধরুন তারা দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করে। এবার আমাদের প্রযুক্তির কল্যাণে এমন একটি উপায় পাওয়া গেল যার মাধ্যমে প্রতিটি লোক দ্বিগুণ পিন উৎপন্ন করতে পারবে সেই একই পরিমাণ সময়ে।
কিন্তু দুনিয়াতে দ্বিগুণ পিনের প্রয়োজন নেই, এবং পিনের দাম এত সস্তা যে এর দাম কমালেও বাড়তি পিন কেউ কিনবে না। এখন সমস্যা হচ্ছে – পিন শ্রমিকরা যদি দিনে ৮ ঘণ্টাই কাজ করে তবে প্রয়োজনের দ্বিগুণ পিন তৈরি হবে। ফলে অর্ধেক পিন তৈরি কারখানার মালিক হবে দেউলিয়া।
এখানে এই সমস্যার যে সমাধানটা করা হয় তা হচ্ছে – অর্ধেক শ্রমিক ছাটাই।
এই ছাটাইয়ের ফলে অর্ধেক শ্রমিক হচ্ছে বেকার আর কর্মরত বাকি অর্ধেক হচ্ছে অতিকর্ম ভারে ভারাক্রান্ত।
এই সমস্যার সবচেয়ে সহজ সমাধান ছিল পিন প্রস্তুত কাজে নিয়োজিত লোকগুলি এখন থেকে ৮ ঘনটার পরিবর্তে ৪ ঘণ্টা কাজ করবে এবং বাকি সব কিছুই আগের মত চলতে থাকবে। এর ফলে সমস্ত শ্রমিকরাই পেতো তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত আলস্যের স্বাদ। কিন্তু তা হয় না……
আসল ব্যাপার হল দরিদ্র লোকেরা আলস্য ভোগ করুক তা ধনীরা কখনই চায় নি। শ্রমিকদের এই আলস্য ভোগের ভাবনাই তাদের সর্বদা আহত করতো।
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে একজন শ্রমিক দিনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা কাজ করতো, শিশুদেরও প্রায় তাই করতে হতো। কমসে কম ১২ ঘণ্টা কাজতো করতেই হতো। অন্যের ব্যাপারে নাকগলানো যাদের অভ্যাস (মানবাধিকার কর্মী) তারা যখন খোঁচাতে শুরু করলো এতো দীর্ঘ সময় কাজ করার বিষয়টি নিয়ে, তখন তাদের বলা হল যে- “কাজ বয়স্কদের সুরাপান থেকে বিরত রাখে, আর শিশুদের বিরত রাখে অপকর্ম থেকে।”
আপনার কি মত এই যুক্তি সম্পর্কে?
“বার্ট্রান্ড রাসেল”-এর “আলস্যের জয়গান” নামক বই এর প্রথম অধ্যায়ের কিছু অংশবিশেষ আমার মত করে উপস্থাপন করলাম।

আলস্যের জয়গান – ২
আগেই বলা হয়েছে –
কাজ দুই প্রকার।
মোটা দাগে প্রথমটি হচ্ছে – পৃথিবীর উপরিভাগে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনই হল কাজ।
আর দ্বিতীয়টি হল – অপরকে প্রথম কাজটি করতে বলা।
উপরোক্ত দ্বিতীয় কাজটি যারা করেন তাদের পরিধি বিস্তর। শুধুমাত্র যারা প্রথম কাজ করার জন্য আদেশ প্রদান করেন তারাই নন, বরং কি আদেশ প্রদান করা উচিত তার পরামর্শ ও উপদেশ যারা দেন তারাও দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত।
এই সমস্ত উপদেষ্টার পারিশ্রমিকের পরিমাণ কি হতে পারে তার আলোচনা করা অবান্তর। আমাদের মত দেশের প্রেক্ষিতে তাদের এই উপদেশের জন্য ব্যয় হচ্ছে অন্য যেকোনো ব্যয়ের তুলনায় আকাশ ছোঁয়া। আমাদের রাস্তা-ঘাট, সেতু ইত্যাদি তৈরির ব্যয়ের সিংহ ভাগ যায় উপদেষ্টাদের পকেটে সেটা সবাই জানেন।
এই উপদেষ্টাদের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমাদের মনে রাখতে হবে। বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে- “স্বাভাবিক ভাবে একযোগে পরস্পর বিরোধী দুটি উপদেশ প্রদান করা; এর নামই রাজনীতি।” আর রাজনীতি নিয়ে কোন কথা আমি কখনো বলি না বলে চুপ রইলাম। বাকিটা আপনারা বুঝে নেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বলতে হয় এই ধরনের কাজের দক্ষতা এখন শুধুই মানুষকে প্রভাবিত করার উপযোগী বক্তৃতা প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
অন্য দিকে আমাদের সরল সাধারণ গ্রামের দিকে তাকাই। গ্রামে এক শ্রেণীর লোক রয়েছেন যাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেশী ভূসম্পত্তি রয়েছে, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই অন্য আরেক শ্রেণীর প্রয়োজনের জমি টুকুও নেই।
এই সম্পদশালী ভূস্বামীরা কি অলস?
না, তারা কখনোই অলস নন, কারণ তাদের পরিশ্রমটুকু করে দিচ্ছে যাদের ভূসম্পত্তি নেই তারা। বাস্তবিকপক্ষে, এই শ্রেণীর লোকদের আরামদায়ক আলস্যের বাসনা থেকেই ঐতিহাসিকভাবে কাজের প্রশংসা-শ্রমের মর্যাদার জন্ম হয়েছে। আবার এই শ্রেণীর লোকেরই একটা জিনিস কখনোই কামনা করে না, তা হল “তাদের উদাহরণ অন্যেরা অনুসরণ করুক”।
“বার্ট্রান্ড রাসেল”-এর “আলস্যের জয়গান” নামক বই এর প্রথম অধ্যায়ের কিছু অংশবিশেষ আমার মত করে উপস্থাপন করলাম।

আলস্যের জয়গান – ১
“শয়তান এখনো দুষ্কর্ম সাধনের জন্য অলস হাত খুজে পায়।”
যেমন এখন এই মুহূর্তে খুঁজে পেয়েছে আমার হাতকে। এখন লিখবো আলস্যের কথা, আলস্যের পক্ষের কথা।
একজন ব্যাক্তির কথা ভাবুন যার বাঁচার মত যথেষ্ট সঙ্গতি রয়েছে। তবুও তিনি আলসেমী না করে প্রতিদিন কিছু কাজ করতে চান, যেমন স্কুল শিক্ষক, বা অফিস সহকারী ইত্যাদি। একটু চিন্তা করলেই দেখতে পারবেন তিনি কিন্তু একজনের মুখের ভাত কেড়ে নিচ্ছেন। অতএব তিনি একজন দুষ্ট প্রকৃতির লোক। তার উচিত ছিলো কোনো প্রকার কাজ না করে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আলস্যকে উপভোগ করা। এতে করে অন্য আরেক জন, যার খাদ্যের প্রয়োজন তার কর্মসংস্থান সহজ হতো, সেই সাথে সরকারেরও কর্ম সংস্থান নিয়ে এতো মাথা ব্যথা থাকতো না।
উপরের অংশটুকু থেকে এতোটুকু ঠিক ঠিক বুঝা যায় যে- “একজন ব্যাক্তি যতটুকু আয় করেন, তার সেই আয় দ্বারা তিনি ঠিক ততটুকুই অপরের মুখের আহার্য কেড়ে নেন।”
কিন্তু!
হেঁ কিন্তু, আপনি যতটুকু আয় করলেন ততটুকু যদি ব্যয় করে ফেলেন তাহলে আপনি দুষ্টু প্রকৃতির লোক নন। কারণ আপনার ব্যয় যতটুকু ঠিক ততটুকুই অন্য অপর আরেক জনের আয়।
তাই এই আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে “যে ব্যক্তি আয় করে সে দুষ্টু প্রকৃতির নয়, বরং যিনি আয় করে সেই আয় সঞ্চয় করে রাখে, অর্থাৎ ব্যয় করেন না তিনিই দুষ্ট প্রকৃতির লোক।”
অর্থাৎ আপনি যখন সঞ্চয়ের জন্য আয় করছেন তখনই অন্য আরেক জনের মুখের খাবার কেড়ে নিচ্ছেন। তাই কতটুকু কাজ করবেন ভেবে চিন্তে ঠিক করুন।
এখানে বলা দরকার কাজ কি? এবং কাজ কত প্রকার?
কাজ দুই প্রকার।
মোটা দাগে প্রথমটি হচ্ছে – পৃথিবীর উপরিভাগে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনই হলো কাজ।
আর দ্বিতীয়টি হলো – অপরকে প্রথম কাজটি করতে বলা।
প্রথম কাজটি কষ্টকর ও বিরক্তিকর, আর তার জন্য প্রারিশ্রমিকও অনেক কম পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় কাজটি অত্যান্ত মজাদার এবং এর জন্য বিরাট প্রারিশ্রমিক পাওয়া যায়, যদিও এর জন্য কোনো পরিশ্রম করতে হয়না বললেই চলে।
বি.দ্র. : “বার্ট্রান্ড রাসেল”-এর “আলস্যের জয়গান” নামক বই এর প্রথম অধ্যায়ের কিছু অংশবিশেষ আমার মত করে উপস্থাপন করলাম।
চকবন্দি চরাচর (নির্বাচিত অংশ)
…… বামুনবাড়ির মরাশোক দশদিনে কেটে যায়— তবে এতো তুচ্ছের মরা নয় —- তার চেয়ে কয়েক কাঠি ওপোরে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন চরিত্রের বিভিন্ন মানুষ জন যেচে প্রেসক্রিপশন গুঁজে দিয়ে যাচ্ছে, কীভাবে এই মহাপাতক থেকে শাস্ত্রসম্মত ভাবে সবংশে রেহাই পেতে পারে।
বিচিত্র মানুষ জনের বিচিত্র ভঙ্গিমা। বাইরের গেট থেকেই কেউ হাঁউ- মাঁউ করে কাঁদতে কাঁদতে ঢুকছে, ছদ্মআকুলতায় তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকছে তার স্বামী বা পুত্র। এদের এই সংসারেই এখন কে কাকে সান্ত্বনা দেয়! তবু নিজেদের শোক শিকেয় তুলে এগোতেই হয় পরমাত্মীয়ের কুম্ভীরাশ্রু মুছিয়ে দিতে। একদল বিস্তর কান্নাকাটি সেরে বায়না ধরলেন, যে করে হোক মেয়েটাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতেই হবে। এতবড় একটা অনাচার চলতে দেওয়া চলেনা।
সবাই তো সেটাই চায়। তার জন্যই উতলা। কিন্তু, কিভাবে?
— কেন, পুলিশে ডাইরি করো….
–নিজের বাড়ির মেয়ের বিরুদ্ধে নিজেরা পুলিশে যাবো?
— মেয়ের বিরুদ্ধে কেন গো! ডাইরি করো সেই অজাত- কুজাত মোছলমানটার নামে গো!
— তা ওর তো নাম- ঠিকানা – বাপের নাম কিচ্ছুটি জানিনা। কি করে কি হবে?
— ওই যে গো, ওই বড়দির ছেলে প্রতীম– ওই হারামজাদাই তো এই কাণ্ডের মূল। ওকে ডেকে শুধোলেই তো স- ব পেয়ে যাবে।। — পরকে দোষ দিয়ে কী লাভ! আমার ভাগ্যে ছিল লেখা। নইলে অমন বুঝমান মেয়ে আমার! — ডুকরে ওঠেন রমা।
— আলোচনা গতি বাড়িয়ে ক্রমশঃ ষড়যন্ত্রে রূপ পেতে চলেছে…. পুলিশকে বললেই হবে আমাদের নাবালিকা মেয়েকে বিদেশ চালান করার জন্য ফুসলিয়ে নিয়ে গেছে… বলবো মেলা টাকা- গয়না সরিয়ে নিয়ে গেছে,… বলবো..বলবো….
শলাপরামর্শের মাঝে শলাকা র প্রাধান্য ক্রমশঃই গায়ে গতরে বাড়ছে…ও রমা, তুই রাজি থাকিস তো বল্ আমার ছোট শালার বন্ধু এই হালে হালে এখানে সেকেন্ড অ ফিসার হয়ে এসেছে। একবার কমপ্লেনটি করলেই হলো। তারপর বাছাধনের পিঠের ছালচামড়া তুলে নুনলঙ্কা ভরে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবে….
কাঁদতে কাঁদতে আঁতকে ওঠেন রমা এদের এমন নির্মম কথাবার্তা শুনে।…হা ঈশ্বর! যার সম্বন্ধে কথাগুলো বলছ, আমার মেয়েটা যে রয়েছে তারই বুকে…
রমা মেটেই সায় দেয়না ওদের কথায়,.. দেখি,ওর বাবা অফিস থেকে ফিরুন….
গিরিবালা সটান এসে দাঁড়িয়ে যান মেয়ে রমার পাশে,… শোন, এইযে তোমাদের বলছি। খবরদার যেন জামাই বাবাজীবনের কানে এমন নোংরা কথাবার্তা না ওঠে। তোমরা চেনোনা আমার জামাইকে? সে এমন পাইকেরে প্যাঁচে পা ফেলবে? এসব কথাবার্তা একদম বলবেনা এবাড়িতে। আমার জামাই এর অমন পুলিশ বন্ধু কি কম আছে?
… তবে কি জীবনভোর মেয়েটা ওই মুসলমানটার খপ্পরে পড়ে থাকবে? এখনো তল্লাটে আছে… এরপর কেথায় হওয়া করে দেবে কেজানে? যা করার তড়িঘড়ি করতে হবে।
কিসের তড়িঘড়ি? আর ওসব প্যাঁচ- পয়জার কষে কিছু লাভ হবেনা। বুকে করে মানুষ করেছি, আমি চিনি আমার নাতনিকে। ওর আপনজনের যদি কোন অসম্মান করো, আবারও একবার দক্ষযজ্ঞ দেখতে পাবে তোমরা। তোমাদের চোখের ওপোরেই ও আত্মহাত্যা করবে…. শক্ত গিরিবালা যন্ত্রনায় গ’ লে গ’ লে হাপুষ কান্না কাঁদতে থাকলেন,… ততক্ষনে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছেন রমা।
খানিক বিনিপয়সার সিনেমা দেখেপাততাড়ি গোটাতে থাকে পরামর্শদাতারা…এখন এবাড়িতে খাওয়া দাওয়ারও পরিপাটি যে নেই বিশেষ…..হাঁড়ি – হেঁশেল রমার জা – ননদের জিম্মাতে।
( আরও যাবে)
আমার ভণ্ড উপন্যাসের কিয়দংশ
আমার ভণ্ড উপন্যাসের কিয়দংশ
আমার কোনো ইগো নেই তেমনটি আমি মনে করি না। কিন্তু আমার ইগো মানুষ এবং মানবতাবাদের উপরে নয়। কয়েক হাজার ফুট নিচে। ঝালমুড়িওয়ালাকে ভাই, বাদামওয়ালাকে দাদা, চানাচুরওয়ালাকে চাচা বললে যদি আমার ইগো পাংচার হয়ে যায়, তেমনি ইগোর আমি নিকুচি করি। দুই গাল ভর্তি জমাট থুতুর মতো সজোরে নর্দমায় নিক্ষেপ করি। এই যেমন একটি শিশু পানিতে পড়ে গেলো। আমি সু্টেট-বুটেট হয়ে কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছি। তখন যদি জলে নামলে আমি ভিজে যাই ব্যাপার টি কেমন হবে? কারু এতে কিছু নাও আসতে যেতে পারে। আমার অনেক কিছু নয়, সবকিছু আসে যায়।
শিখার বাবা আমার সম্পর্কে কিছু নাখাস্তা, নাদান জাতীয় গালিগালাজ বুক পকেটে নিয়েই হয়ত কবরে যাবেন। এতে আমার তেমন কিছু করার নেই। এই অক্ষমতা আমাকে কিছুটা প্লীহা দিচ্ছে না এমন নয়। তবুও আমার এই ব্যাপারে শিখার সাথে আপোষ রফা করা একেবারেই বেসম্ভব। এইটুকু ইগো মাত্র আমার স ম্ব ল। এর বেশিও নয়। কমও নয়। এইটুকু হারিয়ে ফেললে আমার একান্ত আপন জন বলতে আর কেউ থাকে না। কেউ যদি বলতে চান, বলতে পারেন ভালোবাসার জন্য মানুষ বাপ-দাদার ভিটে মাটি বিক্রি করতে পারে, আর আমি সামান্য ইগো বিসর্জন দিতে পারি না। শিখার হাত ধরে বলতে পারি না সরি। আর কোনোদিন হবে না।
লেখা দিন
লিটলম্যাগ পতঙ্গ। সৃজনশীল ও মননশীল লেখাকে সবসময় গুরুত্ব দিবে ‘পতঙ্গ’। লেখকের মুখ নয় লেখাই হবে মুখ্য বিষয়। সে যতোই নবীন, তরুণই হোক না কেন লেখা প্রকাশযোগ্য হলে সেই লেখা প্রকাশে ‘পতঙ্গ’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সাহিত্যে সকল প্রকার দলবাজি, তেলবাজি, সিন্ডিকেট আর গোষ্ঠী চর্চার প্রথাকে ভেঙ্গে ‘পতঙ্গ’ তার নিজস্ব ধারা বজায় রাখতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। প্রিয় লেখক, পাঠক আপনাদের সহযোগিতা ও ভালোবাসা বুকে ধারণ করে বহুদূর পথ এগিয়ে যেতে চায় পতঙ্গ।
‘পতঙ্গ’ একটি সাহিত্য ও প্রকৃতি পরিবেশ বিষয়ক লিটলম্যাগ।
[email protected]
লেখক নয় লেখায় বিশ্বাসী
যেসকল বিষয়ে লিখতে পারবেনঃ
প্রকৃতি-পরিবেশ
গল্প
কবিতা
উপন্যাস
ছড়া
প্রবন্ধ- নিবন্ধ
সভ্যতা ও সংস্কৃতি
ইতিহাস-ঐতিহ্য
তথা সাহিত্য ও প্রকৃতি পরিবেশ এর সকল বিষয় নিয়ে আপনি লিখতে পারেন।
যে লেখাগুলোকে আমরা কখনোই ‘পতঙ্গ’তে স্থান দিবো না বা প্রকাশ করবো না এবং এই ধরনের লেখাগুলো না পাঠাতে লেখকগণকে অনুরোধ করা হলো।
১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে অবমাননাকর এবং রাষ্ট্র বিরোধী লেখা
২. ধর্ম অবমাননা মূলক লেখা
৩. এমন লেখা যা প্রকাশ হলে কোন ব্যক্তির মানহানি হতে পারে
৪. ভুল তথ্য আছে এমন লেখা
৫. নারীর প্রতি অবমাননা, আক্রমণ ও নিপীড়নমূলক কোনো লেখা
৬. কোন ধরনের উস্কানিমূলক বা আপত্তিকর লেখা
যোগাযোগঃ
আনু আনোয়ার- ০১৭১১ ৬৩ ৭৮ ১১
মোকসেদুল ইসলাম- ০১৭১০ ২২ ৮৮ ১৬