বিভাগের আর্কাইভঃ সমাজ

সুকৌশলে বিনষ্ট হওয়া দেশের কর্ণধার সম্প্রদায়

-> বাংলাদেশ। নামটি শুনলে হৃদয়ে যতটা প্রেম জাগ্রত হয় তা মনে হয় সেই বহুকাল পূর্বের কোন এক সময় এর কাল্পনিক কোন এক শ্রুতি বাক্য। মনে প্রশ্ন জাগে, সেই প্রেম কি ১৭৫৭ সালের সিরাজ-উদ-দৌলা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল? এখনো কি সেই প্রেম বর্তমান আছে আমাদের মাঝে? নাকি আমরা তথাকথিত দেশপ্রেম নিয়ে মাতামাতি করি!! সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া বড্ড দায়।

-> ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হল। আহা! দেশ স্বাধীন হল। আমার দেশ। আমাদের দেশ। নতুনভাবে শুরু হল পথচলা। সেই পথচলার ৪২ বছর পরে এলো নতুন এক অধ্যায়। নাম আধুনিকতা। আহ! আধুনিকতা শব্দটা তো গেঁয়ে শব্দের বিপরীত। এখন তো আর এসব শব্দ চলে না। বলা উচিত আধুনিকতা শব্দটা তো ব্যাকগ্রাডেড শব্দের বিপরীত। তো কি সেই আধুনিকতা? সামাজিক যোগাযোগ এর যুগান্তকারী উপাদান ফেসবুক। আধুনিক হতে গেলে ফেসবুকসহ অন্যান্য একাউন্ট থাকাটা অলিখিত দলিল।

-> বুয়েট থেকে পাশ করা ছেলেটা আজ আমেরিকা চলে গেছে। সে নাকি বছরখানেক আগে সেখানে সরকারি স্কলারশিপ পেয়েছিল। তারপর শোনা গেল সে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এর খুব ভাল পদে চাকরি পেয়েছে একজন দক্ষ কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তার পরিবারকেও নিয়ে গেছে। তার তো কোন চিন্তা নাই। ভাল চাকরি, ভাল বেতন, সাহিত্য বিশারদদের মতানুসারে ছান্দিক সুখময় সুখের সংসার।

-> দুর্নীতি। তিনি সরকারি চাকরি করেন। উচ্চ পদে আছেন। নিশ্চিত তিনি দুর্নীতিবাজ। নাহলে কি তিনি উচ্চ পদে থাকতে পারতেন? কখনই না। সংবিধান এ এরকম কোন লিখিত সংজ্ঞা আছে বলে তো মনে হয় না।

-> আহা! কত আনন্দের খবর। পরিবারে নতুন শিশু এসেছে। বছর ৩ না ঘুরতেই ছেলেটা ৬ মিনিটে ১০০ শত্রু সেনা খতম করতে ওস্তাদ। আমাদের দেশের সেনারা যে কি করে!! এসব ওস্তাদ, মহাভারতের ভীম এর ন্যায় ক্ষত্রিয়দের থেকে কিছু শিখলেও তো পারে। বলছিলাম পাবজি এক্সপার্ট ভীম এর ন্যায় যোদ্ধাদের কথা।

এই কথাগুলো আমার কথা না। এই কথাগুলো হল হীমাদ্রি নদীর তীরে বসে থাকা একজন দেশপ্রেমিক সত্বার আক্ষেপ এর কথা। তার নাম সুকুমার। জন্ম হয় হীমাদ্রি নদীর মাঝে কোন এক স্রোতের ওপর। অবিরাম পথচলার মাধ্যমে স্রোতের মত সেও পুরো দেশ ঘুরে বেড়ায়। লোকে বলে পথিক সুকুমার। তার বয়স আনুমানিক সহস্র বছর।

বিজ্ঞসমাজের গুরু সুকুমার একবার কথা শুরু করলে আর থামতেই চায় না। তো তার সাথে যখন সাক্ষাত হল নদীর তীরে তখন বললাম, আপনার সাক্ষাত এর অপেক্ষায় কত ঘুরেছি। আজ দেখা হল; অনেক কথা বলব আজ আপনার সাথে।
প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কেমন আছেন? বলে কি সে নাকি ভাল নাই। কারন জিজ্ঞাসা করায় সে বলে কিভাবে ভাল থাকা যায়!! দেশের মানুষের মাঝে দেশপ্রেম এর যে স্বল্পতা, তরুন সমাজ এর যে ভঙ্গুর দশা, আধুনিকতার নামে যে করুন দশা তাতে কি ভাল থাকা যায়?? মহাশয় আমি বুঝছি না। একটু বিস্তারিত বলেন। তিনি বললেন,শোন তাহলেঃ-
১৭৫৯ সাল। সিরাজ এর মৃত্যুর বছর পার হয়েছে। মীর জাফর বোঝা শুরু করেছে শাসন এর পুরো ক্ষমতা ব্রিটিশদের হাতে। সে শুধু নামমাত্র রাজা। তখন সে আফসোস ছাড়া আর কোন কাজ করার সময় সুযোগ পেত না। তো সেই যে শুরু হল আফসোস সেটা এখন প্রতি বাঙ্গালির নিজস্ব সম্পদ। একটা কাজ শুরু করবে একজন। আহ! আজ না। কাল থেকে শুরু করব। কাল আর আসে না কখন। আফসোস। একটা ব্যবসা শুরু করতে হবে। পরিকল্পনা আগে করতে হবে। সেই পরিকল্পনা শেষ হলে দেখা যায় সেটা অন্য দেশে ২০ বছর আগে হয়ে গেছে। আফসোস। এত এত আফসোস !! ধুর! ভাল লাগে না। ইন্টারনেট অন, লগ ইন, শুরু স্ক্রলিং।

->বুয়েট থেকে পাশ করল। ভাল কথা। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এ কাজ করার সুযোগ পাইল। পরিবার নিয়ে চলে গেল। ২৫ বছর দেশের সম্পদ ব্যবহার করল। অথচ সে দেশের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা করল না। কি দরকার। আপন প্রান আগে। বেঈমান।

->অন্যকে দুর্নীতিবাজ বলার আগে নিজে চিন্তা করো নিজে দুর্নীতিবাজ কি না। একজন ছাত্র যদি ঠিকমত বিদ্যা না অর্জন করে তাহলে কি সেটা দুর্নীতিবাজ না? সেটা তো আর বড় দুর্নীতি। কারন ছাত্র নিজের কর্তব্য এর সাথে বিরোধিতা করল। কিসের ছাত্রত্ব, দুর্নীতিবাজ।

->ছোট বাচ্চা। খেলবে। প্রকৃতির সাথে থাকবে। প্রকৃতি দেখবে,প্রকৃতি তাকে শিখাবে সব। তাকে যুদ্ধ করতে বলেছে কে?সেই যুদ্ধগুলো সে যদি মোবাইল বা কম্পিউটারে না খেলে বন্ধুদের সাথে গিয়ে মাঠে খেলত তাহলে সে যেমন সামাজিকতা শিখত তদ্রুপ শারীরিক উন্নতি হত। কিন্তু পাবজি যোদ্ধা হওয়ার কারনে সে আজ সময় অপচয় করার কৌশল শেখা ছাড়া কিছুই শিখছে না। নষ্ট হচ্ছে একটা সম্ভাবনাময় বীজ যে বীজ একসময় দেশের হাল ধরতে পারত।

নাহ আমি তো বিপদে পরেছি মনে হচ্ছে। সুকুমার এর থেকে এত সব শুনতে থাকলে আমার মগজ ধোলাই হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। কিন্তু সুকুমার একবার যেহেতু বলা শুরু করেছে তাহলে সে শেষ না করে আর থামবে না। অগত্যা। শুনতেই হবে।
হীমাদ্রি নদীর সুপেয় পানি আর প্রকৃতির ফল আমরা ভাগাভাগি করে খাওয়ার পর আবারও সুকুমার শুরু করল কথা বলা। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে মনে হয় কেঁদে দিবে এখুনি। কথা বলার সময় সে বারবার থেমে যাচ্ছিল। কণ্ঠ ভেজা ভেজা মনে হচ্ছিল। আমি শুধু দেখছিলাম। তাছাড়া এই পদ্মভূষিত লোকালয়ের আমি সত্বার বাসিন্দার কিছুই করার ছিল না।

একটা শিশু জন্ম গ্রহন করল। পৃথিবী আনন্দিত হল। নতুন প্রানের আগমন হল। প্রকৃতি এই বীজ রোপণ করল কারন প্রকৃতি জানে এইটা সেরা বীজদের মধ্যে অন্যতম।এই যোগ্য,এই সেরা। দেশ তাকে বড় করা শুরু করল। দেশ তার আলো, বাতাস, খাদ্য দিয়ে তাকে বড় করা শুরু করল। তার মনোরঞ্জনের সকল ব্যবস্থা গ্রহন করল। তাকে খেলার জায়গা দিল। তার সকল অপূর্ণতা পুরন করল। কারন দেশ যে তার মা। মা কি সন্তানের জন্য সকল খুশির যোগান না দিয়ে পারে? শিশুটা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকল। সে অনেক বড় হয়ে গেল। কতটুকু বড়? মা এর কাছে সন্তান কি কখন বড় হয়? সে তো মা এর কাছে সেই আগের মত ছোটই আছে। মা তখনও তাকে লালন পালন করছে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কি মা দেশ মা তাকে লালন পালন করবে না? মা কি কখনও বলবে আজ থেকে সন্তানকে আর দেখাশোনা করবে না? সুকুমার আর বলতে পারল না। তার কান্না দেখে মনে হল প্রকৃতি স্থির হয়ে গেছে। পাখিরা ওড়া ভুলে গেছে। নদীতে আর স্রোত চলছে না। সবাই শুধু সুকুমারকেই দেখছে।
কান্না থামিয়ে সুকুমার আবার বলা শুরু করল।ওই শিশুকে দেশ মা যে বড় করল, তার কি বিন্দুমাত্র দায়িত্ব নাই মা এর ওপর? এটাকে দায়িত্ব বলা ভুল হবে। মা এর ওপর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। তাকে কে অধিকার দিল দেশের সাথে প্রতারনা করার?সুকুমার কে দেখে এবার একটু গর্জিত মনে হচ্ছিল। চোখে রক্তের আভা। সে এবার যা যা বলছে সব যেন হৃদয়ে বিদ্ধ হচ্ছিল। তার কথাগুলো ছিল এরুপঃ

শিশু জন্ম নিল। তার শুরু হল নতুন পথচলা। যখন সে একটু বড় হল তখন তার স্কুলে যাওয়ার কথা। বন্ধুদের সাথে মাঠেখেলার কথা। সে শুধু শিখবে।প্রকৃতি তাকে শেখাবে। সে কেন মোবাইল হাতে নিয়ে বন্ধ রুমে বসে গেম খেলবে? এটা কি সময় এর অপচয় ছাড়া আর কিছু? এটা থেকে সে কি শিখবে? মনোরঞ্জন? কেন প্রকৃতি তার মনোরঞ্জনের জন্য কোন ব্যবস্থা করেনি? গাছ,নদী,পশুদের বৈচিত্র্য এসব দেখতে গেলে তার জীবন এর অন্তিমকাল চলে আসবে অথচ এসব বৈচিত্র্য দেখা শেষ হবে না!! অথচ সে কোন ভ্রান্ত পথের মধ্যে থেকে নিজের জীবনের সোনালি সময় গুলোকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে? এটা কোন ধরনের আধুনিকতা?

ছাত্র অবস্থায় সে কি করবে? বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র। এই কবিতা তো আজ মান্ধাতার। আধুনিক না। তাই এর মর্ম বুঝতে না পেরে ছাত্র ভুলে যায় তার কর্ম সম্পর্কে। সে আজ ব্যস্ত কম্পিউটার নিয়ে। গেম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত যাতায়াত!! হায়রে আধুনিকতা! অথচ কখনো কি পায়ে হেঁটে সেই ছাত্র খোঁজ নিয়েছে তার বাড়ির পাশের বৃদ্ধলোকটি হাঁটতে পারছে না, তার কি অবস্থা এখন? প্রচণ্ড জ্বরে কাতরানো তার বন্ধু ২ দিন স্কুলে যায়নি,তার কি অবস্থা এখন? ইদের দিন নতুন পোশাক কিনতে না পেরে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা তার গরীব বন্ধুর জন্য কি করা যায়, সবাই মিলে একটা নতুন পোশাক উপহার দেয়া যায় কি না? নাহ এটা তো বাকগ্রেডেড চিন্তা, আধুনিক হও,ইন্টারনেট অন, লগ ইন, শুরু স্ক্রলিং। আধুনিক সামাজিকতার যুগে প্রবেশ।

বুয়েট থেকে পাশ করা ছেলেটা তো দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্বান সন্তানদের একজন। সে আরো বিদ্যা অর্জনের জন্য বিদেশ গেল। তারপর ভাল চাকরি পেল। সেখানেই সে বাকি জীবন অতিবাহিত করার মনোনিবেশ করল। সে কি একবারও চিন্তা করতে পারল না সে দেশের একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান, তাকে দেশের কত প্রয়োজন। সে এই প্রয়োজন এর প্রয়োজনীয়তা বুঝল না? দেশ তাহলে কিভাবে সানে যাবে? দেশকে নেতৃত্ব দিবে কে?দেশের সেরা সন্তান তো আজ নিজের লাভের জন্য বিদেশ পরে আছে। দেশ মাএর যা হওয়ার হবে। অন্যজন দেখবে দেশ।আমার কি? হায়রে সন্তান!! কি সব আধুনিকতা!!

দুর্নীতি। নিজের ক্ষমতার অপব্যহারই তো দুর্নীতি। এটা কতক সরকারি কর্মচারীদের মাঝেশুধু সীমাবদ্ধ।আরে বোকা!! তাদের চেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ তো আপনি নিজে। লেখাপড়া করা, সেটা ঠিকমত করা হয় না, ছাত্র দুর্নীতি। লেখক, সংকীর্ণ মনের লেখা, পাঠকদের সাথে দুর্নীতি। চালক, লাইসেন্স নাই, যাত্রীদের সাথে দুর্নীতি। দারোয়ান, ঘুমিয়ে পরে পাহারা দেয়ার সময়,মালকিনের সাথে দুর্নীতি। আরো কত উদাহরন!! সরকারি কোন কর্মচারী দুর্নীতিবাজ হলে নিজ দায়িত্বে অবহেলা করা এসব জনগন, ছাত্ররা হল দুর্নীতির জনক। সুতরাং আগে নিজে ঠিক হওয়া উচিত। পরে অন্যের দোষ খোঁজ করা উচিত। নিজের কাজে সচেতন হলেই তবেই দেশ এর উন্নতি এর আশা করা উচিত। সবাই অন্যের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত।এটা তো দেশ শিক্ষা দেয় নি। ভুলে গেছিলাম, এসব তো মান্ধাতার, ব্যাকগ্রেডেড, আসো আধুনিকতাই। ইন্টারনেট অন, লগ ইন, শুরু স্ক্রলিং।

এত সব কথা শুনে মনে হচ্ছিল আমার যদি ডানা থাকত তাহলে উড়ে যেতাম। এসব শুনতে থাকলে মগজ ধোলাই হবে নিশ্চিত। সুকুমার তো কোন ভাবেই থামছে না। আরও কিছু বলতে যাবে সুকুমার… এমন সময়উচ্চ আওয়াজ… ক্রিং ক্রিং ক্রিং…ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে মনে হল মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙল না। ঘুম ভাঙল আধুনিক অ্যালার্ম নামক মোরগ এর ডাকে। তারপর কি যেন মনে হল, আরে সুকুমার এর কথা ভেবে লাভ কি… ওই সব সোশিয়ালিস্টিক কথা। স্বপ্নের কথা। ওইগুলো অন্য কেও ভাববে্‌, আমার কি দরকার!! ইন্টারনেট অন, লগ ইন, শুরু স্ক্রলিং……

একটি ফুল নিয়ে আত্ম ভাবনা

ফুলের ছবিটি আমারই তোলা সেটা থেকে জুম করে এই অংশটুকু নেওয়া হয়েছে। ফুলটির সাথে আমাদের জীবনের বেশ কিছু সামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছি। নিচে সেগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরছি।

১. ব্যক্তি স্বাতন্ত্র: লক্ষ্য করুন ফুলের প্রত্যেকটি পাপড়িই আলাদা রকমের। একটার সাথে আরেকটার মধ্যে কোন না কোন পার্থক্য আছেই। আমাদের সমাজেও প্রত্যেকটি মানুষ একে অন্যের থেকে আলাদা।

২.পারষ্পরিক সহযোগিতা: লক্ষ্য করুন নিচের দিকের একটি পাপড়ির মাথাটা ভেঙে গেছে। আর তাকে সাপোর্ট দিয়ে রেখেছে পাশের পাপড়ি। যার জন্য অন্যান্য পাপড়ির মতো সেটিও স্বাভাবিকের মতই দাঁড়িয়ে আছে। এটাকে যদি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত কিংবা প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে তুলনা করা হয় তবে সমাজের সুস্থ, সাবলম্বী মানুষদের সাহায্য সহযোগিতায় অস্বাভাবিকরাও মূলধারায় আসতে পারে।

৩. একই সমাজে বিভিন্ন গোত্র: লক্ষ্য করুন ফুলগুলো মধ্যে ডানপাশে ৩টা, তার নিচে চারটা এবং তার উপরেই পাঁচটি ও শেষে একটা মিলে ফুলটি গঠিত। অর্থ্যাৎ মতাদর্শ কিংবা সমাজের অন্য কোন প্রভাবকের ফলে একই প্রজাতির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র দলের সৃষ্টি হয়।

৪. সমাজ নিয়ন্ত্রক: দেখুন ফুলগুলোর পাপড়ির থেকে উচ্চ স্থানে আছে ফুলের গর্ভধারণ প্রয়োজনীয় উপাদান। পাপড়িগুলো সরাসরি প্রজননে কাজ করে না। পরাগায়নের জন্য সাহায্য করে মাত্র। এটা এমন ভাবে হতে পারে যে, আমাদের সমাজের একটা উচ্চ শ্রেণি থাকে যারা সকল কাজ পরিচালনা করে। সাধারণ মানুষ সেখানে কেবল প্রভাবক মাত্র। নিজে থেকে কোন কাজ করতে পারে না। আবার এভাবে যদি ভাবা যায় ফুলের পাপড়িগুলোই গর্ভাশয় সহ প্রয়োজনীয় উপাদানকে নির্বাচিত করেছে প্রধান অংশ হিসেবে যারা সকল কাজ করবে। এটাকে গণতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত করা যেতে পারে যেখানে পাপড়িগুলো না থাকলে পরাগায়নই হবে না। অর্থাৎ মানুষ ছাড়া গনতন্ত্র সম্ভব নয়।

৫. ফুলের রং: দেখুন ছবির ফুলটির রং হলুদ। এই ঝোপের সব ফুলই হবে হলুদ। আবার অন্য ঝোপের সব ফুল হয়তো আবার অন্য রংয়ের। ফুলের ঝোপটিকে একটি দেশ/ মহাদেশ বা বৃহত্তর কোন অঞ্চল ভাবলে দেখা যাবে এক একটা অঞ্চলের মানুষের গায়ের রং আলাদা, কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ মিশ্র।

৬. সমাজে মানুষ: দেখুন প্রতিটি পাপড়ি আলাদা আলাদাভাবে নিজে সুন্দর না। কেউ লম্বা কেউ বেঁটে, কেউ ভাঙা… অথচ সবাই মিলে একটি সুন্দর ফুল। অর্থাৎ সমাজের একত্রে সবাই মিলে গঠিত হয় একটি আদর্শ সমাজ। সামগ্রিকভাবে সবাই সুন্দর।

৭. প্রতিটি মানুষ সম্ভাবনাময়ী: এই ফুলটি নতুন বংশধর সৃষ্টির জন্য জন্মগতভাবে প্রস্তুত। অথচ বাহ্যিক প্রভাবক ঝড় বৃষ্টি, ফুল ছিড়ে ফেলা ইত্যাদি কারণে সকল সম্ভবনার সমাপ্তি ঘটতেই পারে। মানুষও তো একইভাবে সম্ভাবনাময়ী।

৮. জীবনে দাঁড়ানো: ফুলটি শক্তিশালীভাবে দাড়িয়ে থাকতে তার মজবুত ভিত্তি প্রয়োজন হয়েছে যা সেই নিজেই গড়ে তুলেছে। একটা মানুষকেও জীবনের দাঁড়িয়ে উঠতে হলে নিজেই জীবনকে গড়ে নিতে হয়; অন্য কেউ তা করে দেয় না।

৯. মানুষের ফোকাসড হওয়া: ফুলটি তার সমগ্র সৌন্দর্য, তার ক্ষমতা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যার লক্ষ্য সমাজে সবার সামনে ফোকাসড হওয়া। মানুষ ও সেই ভাবেই চাই সব জায়গায়তে ফোকাসড হতে।

এগুলো আমার নিছকই ভাবনা। কিন্তু আমার কাছে জিনিসগুলো বেশ অর্থপূর্ণ মনে হয়েছে।


শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ধর্ষন: কিছু মিথ -১

৭৭ এর দিকে মিশেল ফুকোঅদ্ভুত একটা যুক্তি দিলেন। নারী পুরুষের যৌনপ্রক্রিয়া কখনোই অপরাধতুল্য হতে পারে না। কারন এটা একটা আদিমতম জৈবিক প্রক্রিয়া যা স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু ধর্ষন অবশ্যই অপরাধতুল্য কেননা এটা জোর করে তার ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনেকটা এমন যে আপনি কাউকে সাকার পাঞ্চ বা সজোরে মুস্টিবদ্ধ ঘুষি মারলেন। সেভাবে কারো জননাঙ্গের ভেতরে জোর করে নিজের যৌনাঙ্গ প্রবেশ করা অবশ্যই সেরকম একটা উদাহরন ধরা যেতে পারে কিন্তু আপনি যখনই সেটা শুধু মেয়েদের জননাঙ্গ হিসেবে তুলে ধরবেন যা সুরক্ষা করা দরকার (যেমন টাকা পয়সা ইত্যাদির মতো বিশেষ লিঙ্গের জননাঙ্গকে অস্পৃশ্য মনে করা), বস্তুত আপনি তখনই ট্যাবুতে নিয়ে গেলেন। আসলে এটা তা না, এটা হলো একধরনের সহিংসতা। তার এই যুক্তিটি তৎকালীন নারীবাদের মেইনস্ট্রিমের সেক্সিট জনপ্রিয় ধারার থেকে সমালোচিত হয়। ফুকোর এই বক্তব্য অনুযায়ী আধুনিক সময়ে যৌনতাকে ট্যাবু হিসেবে দেখার যে ভ্রান্তি এবং তা থেকে সুযোগ নেয়া সুবিধাবাদীদের আঁতে বেশ ঘাঁ দিতে এখনো সক্ষম। হয়তো ২০২০ এর দিকে #MeToo এর সেকেন্ড ওয়েভে ধর্ষক বা নীপিড়কদের উল্টো প্রতিবাদী হয়ে ওঠা অথবা বাংলাদেশে সুবিধাবাদী সুশিল ধর্ষকদের কন্ঠে পুরুষ নির্যাতনের যে বুলি শোনা যায় এটা তারই ফল।
দ্বাদশ শতকে রোমানরা ধর্ষনকে অপরাধ গন্য করে সংজ্ঞায়িত করে এভাবে যে যৌনমিলন হোক বা না হোক নারীর ওপর ধর্ষনের উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ করা হলেই সেটা ধর্ষন বলে গন্য হবে। সম্প্রতি এফবিআই তাদের ধর্ষনের সংজ্ঞাকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে যার মাধ্যমে ভিক্টিম শুধু নারী হতে পারেন না, একটি শিশু, হিজড়া অথবা একজন পুরুষ বা সমকামী অথবা বিবাহিতা স্ত্রীও (যদি তার স্বামীর দ্বারা ধর্ষিত হন) হতে পারেন।

তারপরও ধর্ষন থেমে নেই। ধর্ষন কেন হয় সেটা নিয়ে একটা ব্লগ লিখেছিলাম চাইলে এখানে পড়ে আসতে পারেন। পুরোটাই মানসিক বিকৃতি সংশ্লিস্ট ব্যাপার।

ধর্ষন নিয়ে যখনই কোনো আলোচনা হয় তখন এর দুটো দিক নিয়ে কথা হয় সেটা হলো ধর্ষিতা নারী সাহসী হয়ে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জনসম্মুখে বলবে যাতে সবাই সচেতন হন এবং এটা যে আসলেই কত খারাপ সেটা নিয়ে সবাই ভাবতে পারে, এর মূল উদঘাটনে ডিসকোর্স হতে পারে। আরেকটি দিক হলো প্রশাসনিক যারা মূলত ধর্ষনের কোনো ঘটনা ঘটলে তার তদন্ত, আসামী পাকড়াও, ভিক্টিমের পুনর্বাসন এবং তার উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন।কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ হচ্ছে না, মূল সমস্যা যেখানে সেটা হলো ধর্ষনের সংজ্ঞা একেক দেশে একেক রকম। আমেরিকার এফবিআই ধর্ষনকে যে সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করেছে, মুসলমান দেশগুলো সেভাবে সংজ্ঞায়িত করে না কারন সেখানে দাসী আর স্ত্রী ধর্ষন হুদুদ আইনেই বৈধতা দিয়ে দিয়েছে এবং হ্বদের ধারায় ধর্ষনকে কোনোভাবেই সুস্পস্টরূপে ব্যাখ্যা করে নাই। আবার অনেক দেশে সমকামীরা নিজেদের পরিচয় জানালেই তাদের মৃত্যু অনিবার্য, আবার বাচ্চাবাজী ও বাল্যবিবাহের নামে শিশুধর্ষন বা স্টাচুয়ারী র‌েপ রাস্ট্রিয় ভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

১) সুইডেন ধর্ষনে এত উপরে কেন?

যদি আমরা ধর্ষনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে সুইডেনের অবস্থান পাবো ষষ্ঠ স্থানে। প্রশ্ন আসতে পারে সভ্যতার ধারক বাহক বলে খ্যাত এবং শান্তির দেশ হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয় তাদের সমাজ ব্যাবস্থা এত খারাপ কেন! তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
এর কারন হলো সুইডেনের অতিরিক্ত উদ্বাস্তু থাকার কারনে সেখানে যে সামাজিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত ধর্ষনের সংজ্ঞার পরিবর্তন।
বিশ্বের নানা জায়গায় যুদ্ধবিগ্রহ,অযাচারের কারনে উদ্বাস্তুরা যেসব উন্নত দেশে নিরাপদে থাকার অনুমতি পায় তাদের মধ্যে সুইডেন শীর্ষস্থানীয়। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে এসভিটির তথ্যমতে ধর্ষনকারীদের ৫৮ শতাংশের জন্মই সুইডেনের বাইরে যার ৪০ শতাংশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বর্বর মুসলমান দেশগুলো থেকে। বাকীরা আফগানিস্তান আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপ থেকে। আর বাকী যারা সুইডেনে জন্মেছে তাদের ৮০ ভাগ এসেছে ইমিগ্রান্ট ফ্যামিলির থেকে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, আফগানিস্তানের যুদ্ধের কারনে চলে আসা উদ্বাস্তুদের জন্য তার দুয়ার খুলে দেয়ার ফলে গত এক দশকে সুইডেনে বেড়েছে ৮০ শতাংশের ওপরে। ।

এখন আসি ধর্ষনের সংজ্ঞাতে তাদের কি বিবর্তন হয়েছে।ত্রয়োদশ দশক থেকেই স্টাচুয়ারী রেপ অর্থাৎ শিশু বা কিশোরের সাথে যেকোনো প্রকারের সহবাসকে ধর্ষন হিসেবে গন্য করে আসছে এবং সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এর শাস্তি মৃত্যুদন্ড ছিলো। ১৯৬৫ সালে সুইডেন বিশ্বে সর্বপ্রথম ম্যারিটাল রেপ অর্থাৎ স্ত্রীর অনুমতি ব্যাতিত সহবাসকে ধর্ষন হিসেবে গন্য করা শুরু করে। সমকামী এবং লিঙ্গ নিরপেক্ষ সংজ্ঞাকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করে ১৯৮৪ সাল থেকে। অজ্ঞান অবস্থায় কারো সাথে সহবাস করলে তা সে স্ত্রী হোক অথবা গার্লফ্রেন্ড সেটাকেও ধর্ষন হিসেবে গন্য করা শুরু করে ২০০৫ সাল থেকে। সুইডিশ পুলিশের ওয়েবসাইট অনুযায়ী বর্তমানে ধর্ষনের সংজ্ঞা অনেকটা এমন:

যেকেউ যদি কাউকে শক্তির মাধ্যমে যৌনক্রিয়া করা হুমকি দিলে যদি ভিক্টিম অপমানিত বোধ করেন তাহলে তাকে ধর্ষনের দায়ে ২ থেকে ৬ মাসের জেল খাটতে হবে।ধর্ষনের জন্য জেল কখনোই চার বছরের নীচে এবং ১০ বছরের ওপরে হবে না

যৌনক্রিয়া, হতে পারে তা সহবাস, কিন্তু অন্যান্য যৌনক্রিয়া ও এর তালিকাভুক্ত এবং তার জন্য যদি কাউকে হুমকি বা ঝগড়ার মাধ্যমে বাধ্য করা হয় বা তার চেস্টা করা হয় তাহলে সেটাও ধর্ষনের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি অরাধী কাউকে ড্রাগ, মানসিক প্রতিবন্ধী বা মাতাল অথবা অন্যান্য মাদকের মাধ্যমে তার দুর্বলতার সুযোগ নেয় তাহলে তাকে ধর্ষনের দন্ডে দন্ডিত করা হবে।

২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে স হবাস বা পেনিট্রেট যেকোনো অবস্থাতে করলেও সেটা ধর্ষন বলে গন্য করা হবে।
সুইডেনে ধর্ষনের পরিসংখ্যান এমন ভাবে করা হয় যে যখনই উপরোক্ত সংজ্ঞানুসারে কোনো অভিযোগ রিপোর্ট করা হয় তখনই সেটা পরিসংখ্যান বিভাগে চলে যায়। পরে যদি কেসটা অপ্রমানিত বা ডিশমিশ হয়ে যায় তাতেও সে পরিসংখ্যানে কোনো প্রভাব পড়ে না যেটা অন্যান্য ইউরোপীয়ান দেশে হয়ে থাকে। আবার কোনো স্ত্রী যদি অভিযোগ করেন যে তার স্বামী মাসে প্রতিদিন তাকে ধর্ষন করে তাহলে সেখানকার পুলিশ তা ৩০ বার হিসাব করে।
আরো একটি কারন না বললেই নয় যে ২০০০ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ভিক্টিম সার্ভের তথ্যানুযায়ী ধর্ষনের মতো ঘটনা সুইডেনের পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ গোপনীয়তা এবং ভিক্টিমের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এবং শূন্য দুর্নীতি থাকায় সেখানে ধর্ষিতা বা অভিযোগকারীর সন্তুষ্টি বেশ ভালো কারন লিঙ্গ সাম্যতায় সুইডেন বিশ্বে শীর্ষস্থানে আছে।

ইউএনওডিসির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১ লক্ষ জনে ৬৫ জন ধর্ষনের অভিযোগ করে যেখানে ১২৯ টা দেশের মধ্যে ৬৭ দেশে ধর্ষনের কোনো ডাটাি পাওয়া যায় না। এর অন্যতম প্রধান কারন সেসব দেশের দুর্নীতি, প্রশাসনের ওপর অনাস্থা। আবার এই ৬৭ টা দেশের ৯০ ভাগ দেশই হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আবার অনেক দেশে ধর্ষন নামে কোনো টার্ম নাই কারন কোরানে ধর্ষন নামের কোনো শব্দ নাই যেমন মিশর। মিশর এটাকে শারিরীক আঘাতের তালিকাভুক্ত করে। এমনকি বাংলাদেশ চায়নার মতো দেশে গত দশকে ধর্ষনের হিসাবটাও ঠিক মতো পাওয়া যেতো না। সৌদিআরবের ঘটনা আরো ভয়ঙ্কর

যাই হোক উদ্বাস্তু সমস্যার কারনে গত ৫ বছরে তাদের দেশে ধর্ষনের পরিমান ভয়াবহ পরিমানে বেড়েছে। এবং শাস্তি প্রদানের হার ১৩% যা অন্যান্য নরডিক দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন। এ নিয়ে এয়ামনেস্টি ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে তারা। আরো ভয়াবহ ব্যাপার হলো ২০১৩ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এত কিছুর পরও প্রায় ৮০শতাংশ ধর্ষনের ঘটনাই রিপোর্টে করা হয় না।

সে হিসেবে বলা যেতে পারে প্রশাসনিক সততা স্বচ্ছতা ও পরিপূ্র্ন সংজ্ঞায়িতকরন এবং উন্নত সমাজ ব্যাবস্থার সাথে বর্বরতম জঙ্গী সভ্যতার অসততাই দায়ী সুইডেনের এমন উচ্চ পরিসংখ্যানের পিছে।

২) বাংলাদেশ ধর্ষনে ভারত থেকে পিছিয়ে।

২০১৯ সালে ধর্ষন পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ তম যেখানে সুইডেনের অবস্থান ৬। ভারতের অবস্থান হলো ৯১ তম। পরিংখ্যানে বলা হয় বাংলাদেশে ভারতের থেকে ৫ গুন বেশী ধর্ষন হয়। শুধু ধর্ষনই নয়, সার্বিক অপরাধচিত্র কতটা ভয়াবহ ভারতের তুলনায় সেটা এখানে ক্লিক করলেই বোঝা যাবে। তাই কেউ যদি বলে ভারতের থেকে বাংলাদেশে ধর্ষন কম হয়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন সে একজন জ্ঞানপাপী মিথ্যুক বা অজ্ঞ। যে দেশে বাল্যবিবাহকে সুন্নত হিসেবে দেখা হয় এবং ইসলামী স্কলাররা শিশুধর্ষনের চর্চায় মত্ত তাদের কাছ থেকে সত্য কখনো জানবেন না।

চলবে……

ধর্ষন কেন বাড়ছে

এভাবে ভয়াবহ ভাবে ধর্ষন বাড়ছে কেন?
সম্ভাব্য কারণগুলি হতে পারে এরকম
১। আশে পাশে অসংখ্য রেপ ঘটছে, সব নজরে আসে না,মেয়েরাও কাউকে কিছু জানায় না, এভাবে নিরবে নিভৃতে যখন ঘটনা ঘটছে তখন রেপিস্ট ভাবছে এটাও কারো নজরে আসবে না।
২। রেপিস্টের জন্য এটাই প্রথম ঘটনা নয়।এরকম কুকর্ম সে প্রতিনিয়ত ঘটিয়ে যাচ্ছে, দু একটা জনসম্মুখে আসছে
৩।তথ্যের অবাধ প্রবাহ, ইন্টারনেট সার্চ দিলেই বেরিয়ে আসছে হাজার হাজার পর্ণ এর টুকরো টুকরো ছবি অথবা ভিডিও
৪। মেয়েদের জোর করাকে সে ভাবছে পৌরুষ,
মেয়েরা রাজি না, তারা ভাবে এই যে তার অসম্মতি এ আসলে বাহানা, সে আদতে সংগ চায় —
৫। সিনেমাগুলোতে সব সময় দেখানো হয় নারী রেপড হচ্ছে, হিংস্র উল্লাস করছে পুরুষ, নিজেদের সেজায়গায় ভেবে উল্লসিত হচ্ছে
৬। লজ্জাহীনতা, মেয়েরা ভাবছে সম্ভ্রম হারাচ্ছে, তার লজ্জা সারা দুনিয়ায়, সমাজে আর পুরুষ একে গৌরব অথবা বীরত্ব ভাবছে, যেমন প্রভাকে ছি ছি করেছে সবাই বিপরীতে রাজিব বীরপুরুষের মত বুক ফুলিয়ে চলেছে

৭। রেপ ঘটছে সমাজের উপরতলা থেকে নীচতলা। তবে একটা ভালো পরিবারে ছেলেমেয়েরা শেখে নীতি এবং নৈতিকতাবোধ।শিশু প্রথম পাঁচ বছরে তার জীবনের মূল শেখাটা শিখে যা তার অবচেতন মনে স্থায়ী হয়।পরিবারে মানুষের প্রতি সম্মানবোধ, আত্মমর্যাদাবোধ তার মধ্যে গ্রো না করলেও সে অন্যকে সম্মান করতে শেখে না।রেপিস্টের আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে এই বোধ তার মধ্যে না জাগাটাও রেপিস্টের রেপিস্ট হয়ে ওঠার কারণের মধ্যে পড়ে।
৮।সমাজের নিন্মবিত্ত শ্রেণীর যারা রাস্তায় বেড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে কি বোধ জাগার আশা করা যায়?
৯। বস্তিগুলোতে ছোট্ট একটা রুমে পরিবারের ৬/৭ জন থাকছে, রান্না করছে, ঘুমাচ্ছে, জীবনের ন্যুনতম চাহিদা যেখানে পূর্ণ হয় না তাদের কাছে কি আশা করা যায়?
১০। কাজ নাই।বেকার। অলস মস্তিষ্ক।

১১। এমন একটা দেশ যেখানে টাকার মূল্য মানুষের মূল্যের চাইতে বেশি হয়ে উঠেছে –
১২। বিনোদন বলতে বোঝায় হিন্দি সিরিয়াল,
নাটক হচ্ছে হাউকাউ, চিল্লাফাল্লা এক অবস্থা।
একসময় চমৎকার কাহিনী সমৃদ্ধ সিনেমা আজ আর নেই।সেই প্রেম আর প্রেম পাবার জন্য মরিয়া হওয়া!!

১৩। ইয়াবা, গাঁজা, ড্রাগে ছেয়ে গেছে দেশ।
১৪। হুজুর, স্কুল কলেজের শিক্ষক কম বেশি অনেকেই লাইমলাইটে আসছেন নারী লোভের কারণে,
এক্ষেত্রে যাদের আদর্শ মানা হয়েছিল এতোকাল তাদের এই অধপাতের বিষয় প্রভাবিত করছে মানুষকে

কোনটা প্রেম আর কোনটা ক্রাশ?/অরুণিমা মন্ডল দাস

আধুনিক জীবন যাপনে “প্রেম” শব্দটা প্রায়শই শোনা যায় – গ্রামেগঞ্জে শহরে সব জায়গায় প্রেম ভালোবাসা উপচে ঝোপে ঝাড়ে মেট্রো ,ট্রেনে কাপলদের দেখলেই বোঝা যায় \–ঠিক কতটা পরিমান প্রেম উথলে উথলে পড়ছে? বিয়ের আগে কতকিছু সোনা মোনা ডার্লিং আরো কিছু থাকলে বলতে শোনা যায় বিয়ের পরে বাচ্চার টয়লেট পরিষ্কার করতে করতে ই মেয়েদের যৌবন কেটে যায় !

সে যা হোক আসলে প্রেম কি? ক্রাশ কি? সেটাই বুঝে উঠতে পারলাম না/ আজকাল সুন্দর ছেলে সুন্দরী মেয়ে বিশেষ করে সিঙ্গেলদের ক্রাশ” বল আর প্রেম বল কোনকিছু র অভাব নেই /অভাব শুধু প্রকৃত ভালোবাসার /ভালো লাগল পেতে হবে না হলে বাঁচব না”—ঠিক এটাকে প্রেম বলা যায় কি? আবার ভালো লাগল জ্যাকেট পরেছে হিরো স্টাইলে ফিদা তাই”! –এটা শুধুই ক্রাশ! আপনি ছেলেটির বা মেয়েটির পোশাক চুল শরীর কে পছন্দ করেন মনকে নয়? তাই নয়কি? যে ভালোবাসবে সে আপনার শরীর কে নয় চামড়ার রংকেও নয় আপনার আত্মা” কে ভালোবাসবে!/ সবকিছু কেই ভালোবাসবে ভালোদিককে ভালোবাসবে আবার খারাপ দিককেও ভালোবাসবে/

প্রেম” বিবাহিত এনগেজ ইন আ্য রিলেনশিপ এইসব আগাছা কে মানে না /আসলেই সবাই সবার মনের মতো হয় না/আর সবকিছু প্রকৃতির নিয়মে ঘটবে সেটা আশা করা ও যায় না/ সুশৃঙ্খল ব্যক্তিকেও অনেক সময় অনেক কিছু মেনে নিতে হয় / ব্যাপারটা ঠিক এরকম সবাইকে সবার ভালো লাগে না ? সাইকোলজি লি মন থেকে যাকে যার পছন্দ যার সংগে মেন্টালিটি ম্যাচ করবে তাঁর সংগে ই সম্পর্ক সম্ভব সে যে হতে পারে /সে বিধবা বিবাহিত যেকেউ এটা কোন ফ্যাক্ট /আমি জোর গলা য় বলতে পারি কোন রিলেশান ই” প্রেম বা বিয়ের ক্ষেত্রে পারফেক্ট” থাকে না বা থাকতে পারে না /

এক মা ছেলের সম্পর্ক ছাড়া কোন সম্পর্ক ই পারফেক্ট হতে পারে না/অন্য ব্লাড রিলেশান /অন্য পরিবারের মেয়ে ছেলে !/ কি করে পুরোপুরি ম্যাচিউরড পারফেক্ট পাবেন বলুন? সব সম্পর্কেই “গিভ আ্যন্ড টেক” পলিশি কাজ করে মাত্র !

ঠিক সেই কারনেই খুব প্রেম অমর প্রেম এইসব ফালতু ছাড়া কিছুই না /মোহ জিনিসটা তীব্র মাত্রায় কাজ করলে কিছু একটা হয় /তীব্র আ্যট্রাকশান বলা যেতেও পারে /ক্রাশ জিনিসটা তিনমাসের বেশী থাকে না /সুন্দর সিনারী র মতো /ভালো লেগেছিল আবার দেখলে কিছু কিছু হতে পারে / মনের নাগাল পেতে অনেক দেরী? মনের পেট খারাপের হদিশ ক্রাশেদের” নজরেই আসবে না! উরা সুবিধাবাদী প্রেমিক /কষ্ট হলে চোখ জল এলে প্রেমটাকে দুমড়ে মুচড়ে কুঁড়ি থেকে ফোটা ফুলটাকে গঙ্গায় ছুড়ে মেরে পালাবে/ এদের মন থাকে না রূপ দেখেই পাগল হয় মাত্র !

প্রেম সত্যিকারের হলে পর মনে তাঁর ছাপ সারা জীবন থেকে যায় /একজন প্রেমিক প্রেমিকার আই কনটাক্ট ই তাঁদের হার্টবিট বাড়িয়ে দেয় মন নিঙড়ে নেয় সম্পূর্ণভাবেই দুজনের আত্মার খবর দুজনের মধ্যেই প্রতিস্থাপিত হয় / এখনকার প্রেম প্রেমিকদের মধ্যে তো দূর ,বিবাহিত লিভ ইন দের মধ্যেই দেখা যায় নি/ জীবনটা একটা নিয়মে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে/ সকালের চা দুপুরের খাওয়া রাতের খাওয়া ”—এটাই কি জীবন? এর জন্যই কি আমরা বাঁচি/ মাঝেমধ্যে উড়ো গার্লফ্রেন্ড বৌয়ের ঝামটা বরের মারধর চিমটিকাটা ঝগড়াঝাঁটি?/ এটাই জীবন? ভালোবাসাহীন জীবন/সবাই আমরা এরকম ই বেঁচে আছি/সংসারের দাস/
প্রকৃতির দাস / প্রেম করছি শরীর দেবে না তা হয় তখন ভাববেন ডালমে কুছ কালা হ্যায় যে প্রেম বাঁচাতে আপনি ঝোপেঝাড়ে শুয়ে পড়লেন দেখবেন কিছুদিন পর সেই প্রেমিক বোর হয়ে যাচ্ছেন/ দূর শুতে ভালো লাগছে না? ছেলেরা অবশ্যই কিছু ছেলেরা এতো লোভী সুন্দরী বৌ তাতে তাঁদের মন ভরছে প্রেমের নাটক করে শুচ্ছে/ আবার বলছে দূর ভালো লাগছে না? এদের নিচের অংশে আলাদীনের গুহা” অর্ডার দিলেও মনে হয় না এদের শান্তি মিলবে আর মেয়েদের ক্ষেত্রে কিছু মেয়েদের ?এটা কি প্রেম? ভালোবাসা?

এদের কোথায় শান্তি আর কোথায় ভালো লাগবে বলে দিতে পারবেন?

তাই জোর গলায় আবার ও বলতে পারি কোন বিবাহিত কাপল ই সুখী নয় জাস্ট লোকদেখানো সেলফি তে জীবনযাপনে নাটক করে মাত্র! কজন বিবাহিত পুরুষ বা মহিলা প্রকৃত ভালোবাসা পেয়েছেন বলতে পারেন!কেউ ই নয়? সব নাটক মাত্র আর কমপ্রো র পাহাড় ?

….ধন্যবাদ। নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই সবাইকে। আমার কিছু তীক্ষ্ণ সত্য বাক্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। অনেক দিন পর এলাম কিছু শব্দ ভালো না লাগলে বাদ দিতে পারেন।

পাপ শপাংকের সাতকাহন-১

এ্যারিস্টটলের মতে মানুষ কোনো পাপ কাজ করতে পারে না, সে যাই করে তার নিজের জন্যই করে। তখনকার গ্রীক দার্শনিকরা পাপকে আক্রাশিয়া নাম দিয়েছিলেন। প্লেটো এ্যারিস্ট টল যতই পাপের অস্তিত্ব অস্বীকার করুক না কেন, আকিনাস, দেকার্ত সবাই এই আক্রাশিয়ার অস্তিত্বের ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখেছিলেন। কেউ কেউ নিজের বিবেকের বিপরীতে কিছু করাকেই পাপ বলতেন, কেউ কেউ খোদ বিবেকের উৎস এবং তার পঠন পাঠন নিয়েই প্রশ্ন তুলতেন।

তখন আমাদের ভার্সিটির গেটের সামনে বাঁচা বাবা নামের একটা রেস্টুরেন্ট ছিলো। রান্নায় তেমন বাহারী স্বাদ না থাকলেও হলের একই রকম খাবার থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমাদের একমাত্র উপায় ছিলো এই রেস্টুরেন্ট টি। কারো জন্মদিন, বা কোনো বান্ধবী প্রপোজ করেছে অথবা সেমিস্টার ফাইনালে টপ করলেই চল বাঁচা বাবা। পাশ করে বের হয়ে জবে ঢুকলাম, ওর বেশ কয়েকবছর পর কনভোকেশনের ডাক পেলাম। তখনও গিয়ে দেখলাম দিব্যি গম গম করছে বাঁচা বাবা। কনভোকেশনের বিশাল ভূড়িভোজের পরেও বাঁচা বাবাতে বসে চা বা পরোটার সাথে এক বাটি সব্জি এখনো স্মৃতির মানসপটে। যেসব ৯-১০ বছরের ছেলেগুলো কাজ করতো তারা তখন জোয়ান। আর যারা যুবক ছিলো, অনেকেই বিয়ে শাদী করেছে, রেস্টুরেন্টের পাশেই একটা ঘর করে সংসার জাকিয়ে বসেছে। ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে যখন দেশ জুড়ে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের আয়োজন চলছিলো, সেসময় রাঙ্গুনিয়ার সেই ছোট্ট রেস্টুরেন্ট টির ওপর বুলডোজার পড়ে। এরপর সেখানে রেস্টুরেন্ট টি দাড়াতে পারেনি। জানি না যারা ওই প্রতিষ্ঠান ঘিরে নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলো, তারা এখন কেমন আছে।

তখন পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বুঝলাম, হঠাৎ করে দুর্নীতি যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে প্রায় কয়েক কোটি সংগ্রামী মানুষ পথে বসে যাবে। যদিও একসময় মানুষ ঠিকই মানিয়ে নেয়, কিন্তু মানুষ না খেয়ে বেচে থাকতে পারে মাত্র তিনদিন। আর একটা ঘুনে ধরা সিস্টেম ঠিক হতে লাগে বছরের পর বছর। তখন আরো একটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেলো পাপ আসলে কি জিনিস? আসলেই কি এর অস্তিত্ব আছে?

এই যে এতগুলো সংগ্রামী মানুষ, তারা চুরি করছে না, হত্যা রাহাজানী ডাকাতি করছে না। তারা খুব সাধারন ভাবেই ব্যাবসা করছে সিস্টেমের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। কারন এটা তাদের জন্য সস্তা এবং তার চেয়ে বড় কথা সাধ্যের নাগালে। রাস্ট্র পারেনি বলেই তারা বেচে থাকার এরকম সৎ পথ বেছে নিয়েছে। এটা কিভাবে পাপ হতে পারে?

তাহলে পাপ বলে কি কিছু নেই? সেটা কিভাবে হয়? হত্যা খুন ধর্ষন এগুলো পাপ, তাই না?

মধ্যযুগের লেখক অগাস্টিনের মতে আমরা পাপ করি যখন কোনো কিছু করার সদিচ্ছা যদি দুর্বল হয়। প্রায় সমসাময়িক একিউনাস বিশ্বাস করতেন আমরা পাপ করতে পারি কারন আমাদের ইচ্ছাগুলো কল্পনা রং এ মেশাতে পারি এবং তাকে যুক্তি সংগত করতে পারি যাতে করে আমাদের মনে হয় এটাই ছিলো সর্বোত্তম যার ফলে নিজেকে বোঝাতে পারি যে আমি এটাই করতে চাই।

তার মানে পুরো ব্যাপারটাই নিজের স্বার্থে ভাবা বা নিজের জন্য করা। যখন মানুষ অপরের জন্য না ভেবে নিজের স্বার্থে কিছু করে তাহলেই কি পাপ হবে?মনে হয় না, যখন কারো কোনো ক্ষতি করে বা কোনো কিছু ক্ষতি হয় তাহলেই পাপ বলে ধরে নেয়া যায়, তাই না? কিন্তু যদি এমন হয় যে পরের ভালো করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি হয় তাহলে সেটাই বা কেমন বুদ্ধিমানের কথা?

তখন প্রশ্ন আসতে পারে কোনো কিছু বিচার করার অধিকারটা কার আছে? ঈশ্বর?

সেক্ষেত্রে পাপ ব্যাপারটাকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধ যেটা কিনা মানুষ সম্পূর্ন স্বাধিনভাবে বিচার করতে পারে এবং যার ফল সবার জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে, যদি তা নাও হয়, তাহলে ক্ষতি করবে না। একে নৈতিক পাপাচার বা দর্শনগত পাপ। ধর্মীয় পাপের ব্যাপারটা পুরোপুরি ঈশ্বর বা তার প্রদত্ত পথপ্রদর্শক বা ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে নৈতিক পাপাচারের অনেক কিছু ধর্মীয় পাপাচারের লিস্টে থাকে না। এই যেমন দাসপ্রথা, শিশুকাম, বাল্যবিবাহ, লুট, ধর্মের নামে হত্যা ইত্যাদি।

ব্যাক্তিগতভাবে পাপের কনসেপ্টটা একটা হাস্যকর কৌতুক মনে হয়। একটা শিশুর সামনে আপনি দুটো মুস্টিবদ্ধ হাত ধরলে তাকে কিছু বলার আগেই সে একটা হাত বেছে নিয়ে তা খোলার চেস্টা করবে। সেটাতে কিছু না থাকলে আরেকটা হাত ধরে বসবে। আপনি যদি আবার আগের হাতটি মুস্টিবদ্ধ করেন সে আবার ওটা ধরবে। তখন তার কাছে ব্যাপারটা অভ্যাসগত খেলায় পরিনত হয়। যতক্ষন না টডলার পরিপক্ক হবে তার সামনে প্রতিদিন এই মুস্টিবদ্ধ হাত ধরুন, সে আনন্দের সাথেই খেলবে।

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মানুষ এমনই। মানুষ এত বিশ্বাসী কেন এটা ভাবতে গিয়ে দেখলাম দর্শনের চাইতে এর সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারে নিউরোসায়েন্স বা এনাটমি। মানুষের মাথার ডানে ভেন্ট্রোলেটারাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশটির জন্য মানুষ বিশ্বাসী হয়। তাহলে ধর্মের উৎপত্তী এত পড়ে আসলো কেন? এর প্রধান কারন যখন নিয়েনডার্থালরা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতো অর্থাৎ মানুষের বিবর্তন শুরু হয়নি, তখন তারা ছিলো বেশ ক্ষিপ্র এবং পঞ্চইন্দ্রিয় সমূহ খুব শক্তিশালী কারন তাদের মস্তিস্কের এই অংশগুলো বেশ বড় ছিলো। তারা খুব শিকারী ছিলো, এবং মাথার পেছনের দিকটা অপেক্ষাকৃত বড় হওয়ায় তারা বুদ্ধিমান ছিলো। তাদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এতটা উন্নত না থাকায় তারা মৃত সৎকারের আচারেই সীমাবদ্ধ ছিলো। ঈশ্বরের কনসেপ্ট তাদের মধ্যে আসেনি। মানুষের ঐশ্বরিক ধারনা অনেক পরে আসে যখন নিয়েনডার্থালরা বিলুপ্ত হতে থাকে এবং মানুষ সমাজবদ্ধ হতে থাকে। সমৃদ্ধির ফলে তখন মৃত ব্যাক্তির সৎকারের সাথে সাথে আত্মা, মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করে।

আর ঠিক এমসয়টাতেই প্রচলন হয় সভ্যতার কুৎসিত দাসপ্রথা। বলা হয়ে থাকে বর্নবাদ, জাতিগত বিদ্বেষ থেকে শুরু করে হানিকারক বিষয় সমূহের উৎপত্তি ঠিক এখান থেকেই।

চলবে….

খালি হাতে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরা শ্রমিকদের দিন কাটবে কিভাবে?

সৌদি আরব সরকারের ব্যাপক ধরপাকড় অভিযানের মুখে খালি হাতে বুধবার রাতে দেশে ফিরেছেন ২১৫ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। স্বজনদের কাছে তারা ফিরে গেছেন এক বুক হতাশা নিয়ে। জমি জমা বিক্রি করে এবং ঋণ নিয়ে তারা সৌদি আরব গিয়েছিলেন পরিবারের মুখে এক টুকরো হাসি ফোটাতে৷ অথচ সেই স্বপ্ন এখন বিরাট দুঃস্বপ্ন। এই শ্রমিকদের সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে তা নিয়ে তারা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ।তাদের চোখেমুখে রাজ্যের হতাশা।

বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও ব্রাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম জানাচ্ছে, নভেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে ১৫৬১ জন কর্মী দেশে ফিরেছেন। আর এ বছর সৌদি আরব থেকে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন । এই শ্রমিকদের বেশিরভাগেরই আকামা অর্থাৎ কাজের অনুমতিপত্র ছিল।

কাজের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও সৌদি পুলিশ এই শ্রমিকদের গ্রেফতার করে। এরপর জেল জুলুম শেষে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।অনেকের অভিযোগ তাদের ঠিকমতো খাবারও দেয়া হয়নি। উপরন্তু মানসিক নির্যাতন করা হয়৷

ফিরে আসাদের একজন বাহার উদ্দিন। তিনি সৌদি আরবে কন্সট্রাকশনের কাজ করতেন। দীর্ঘ ২৬ বছর সেখানে ছিলেন।

এয়ারপোর্টে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “অনেক বছর সৌদি আরবে ছিলাম। জীবনে এমন পরিস্থিতি কখনো সৌদি আরবে দেখিনি। সেখানকার পুলিশ বেপরোয়া হয়ে গেছে। বৈধ-অবৈধ দেখছে না। রাস্তা থেকে ধরে সোজা জেলে। এরপর পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে।”

ফিরে আসা শ্রমিকদের আরেকজন সিলেটের ইলিয়াস আলী। তিনি জানান,সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে সৌদি আরব যান। দালাল তাকে সেখানে ভালো কাজ পাবার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “যে কোম্পানিতে কাজ করার কথা ছিল তাদের দেখা মেলেনি। ফলে এখানে সেখানে কাজ করেছি। আকামা হয়নি। আকামার জন্য দুই দফায় টাকা দিয়েছি ২১ হাজার রিয়াল। এরই মধ্যে মাস ছয়েক আগে ডান পা অবশ হয়ে গেল। চলাফেরা করতে পারি না। যে জায়গায় কাজ করি সেই নিয়োগকর্তা বললেন আকামা করতে ২৭ হাজার রিয়াল লাগবে। এই পা নিয়ে আমি এখানে থেকে কি করব। পরে ধরা দেই। শেষমেষ খালি হাতেই আমাকে ফিরতে হলো দেশে।”

কিশোরগঞ্জের সোহরাব পরিবারের দুঃখ দুর্দশা ঘোচাতে বছর দুয়েক আগে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি গিয়েছিলেন।কিন্তু সাম্প্রতিক ধরপাকড়ে তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়। আসার সময় মাথায় জড়ানো মাফলার আর পরিহিত জামাকাপড় ছাড়া কিছুই সঙ্গে আনতে পারেননি। যেখানে তিনি থাকতেন সেই রুম থেকে ধরে ফেরত পাঠানো হয়।

সৌদিতে বর্তমানে এক বড় প্রতারণার নাম ফ্রি ভিসা। এর মাধ্যমে শ্রমিক বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন এবং একসময় কূল কিনারা না পেয়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরেন।

বছর দুয়েক আগে ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ভোলার ফুয়াদ হোসেন। ছয় লাখ টাকা খরচ হয় তার। কিন্তু সেখানে টিকতে পারেননি। টাকার বিনিময়ে আকামার ব্যবস্থা হলেও মেয়াদ শেষে সেই অর্থ ওঠেনি। ফলে পরবর্তী আকামা হয়নি। সেখানে তিনি অবৈধ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় কাজ করতে থাকেন এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ফলে খালি হাতে দেশে ফিরতে হয় তাকে।

সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলছেন, ফ্রি ভিসা মূলত একটা প্রতারণা। তার ভাষ্য – “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফ্রি ভিসা বলতে আসলে কিছু নেই। এখানে কাজ করতে হলে আকামা থাকতে হবে এবং নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে হবে। এর বাইরে গেলে অবৈধ হয়ে যেতে হয়। তখন মেয়াদ থাকলেও ফেরত পাঠানো হবে।”

তার মতে ফ্রি ভিসার বিষয়টি এভাবে কাজ করে – “সৌদি আরবের কোনো ছোট কোম্পানি, তাদের সক্ষমতা নেই লোক নিয়োগের, কিন্তু সে কয়েকজন লোকের চাকরির অনুমোদন নেয়। তখন তার নামে শ্রমিকদের জন্য ভিসা ইস্যু হয়। এরপর ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আকামা নিয়ে শ্রমিকরা অন্য জায়গায় কাজ করে।”

বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কেউ সৌদি আরব যেতে চাইলে সঠিক তথ্য জেনে বুঝে যেতে হবে,এমনটাই পরামর্শ অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস এর মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরীর ভাষ্য – শ্রমিক পাঠানোর আগে তাদের সঠিক ওরিয়েন্টেশন দরকার। ওরিয়েন্টেশনের অভাবে অনেকে ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে বিপদে পড়ছে।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান এর মতে, শ্রমিকদের কাউকে যেন শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য যাবার পূর্বে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।

বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনায় সৌদি আরব বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হতভাগ্য শ্রমিকরা সৌদি আরব গিয়েছিলেন নিজ সংসারের অভাব দূর করে স্ত্রী সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। অথচ তারা এখন হতাশার বৃত্তে বন্দি।

যারা হতে পারতেন আশাজাগানিয়া রেমিট্যান্স যোদ্ধা তারাই আজ জানেন না সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে। তাদের চোখে আজ কোন স্বপ্ন নেই,আশা নেই। যারা দেশের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হতে পারতেন তারাই এখন অন্ধকারে। সমাজ এবং সরকার তাদের পাশে দাঁড়ালে এই অন্ধকার কেটে যাবে। মানবিক দিক বিবেচনা করে চলুন তাদের পাশে দাঁড়াই। চলুন তাদের বলি,ভয় পেওনা,পাশে আছি। নতুন সকাল আসবেই।

মামুন রণবীর
১৫/১১/১৯

সমাজ সচেতনতা

সমাজ সচেতনতা।
নভেম্বর ৭, ২০১৯ সকাল ৭ টা ৪০ মিনিট
দীর্ঘদিন হাসপাতালের কারাগারে থাকার পর ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে।

পারিবারিক জীবন হলো সবচেয়ে সুশৃংখল, এখানে যতই ভুল করেন যত অপরাধ করেন সাত খুন মাফ, পারিবারিক বন্ধন হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধন যেখানে স্নেহ-মমতা মায়া ভালোবাসার উৎপত্তিস্থল।

আপনি যতটাই হতাশাগ্রস্থ হন পরিবারের কাছে আসলে হতাশা দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যায়। এজন্যই পারিবারিক জীবনের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য বন্ধন ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরী।

পরিবার না থাকলে বেঁচে থাকাটাই দুঃস্বপ্নের হয়। আপনি যতই অর্থ সম্পদ উপার্জন করেন পরিবারের বৃত্ত বৃত্তের সুশৃংখল ভালবাসায় তার মোর ঘুরিয়ে দেয় সাহস যোগায় যা কখনো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে না।

এখানেই আপনার সমস্ত সুখ নির্ণীত হয়। এখানে প্রত্যেককে কারো সুখে সুখী কারো দুখে দুখী। আপনার জীবন থেকে অনেকেই চলে যাবে অনেকেই আসবে কিন্তু পরিবারের একজন মানুষ ছুটে গেলে সারা জীবন আপনি বলতে পারবেন না।

এইজন্যই পারিবারিক বন্ধন অতি দ্রুত হয়। কাছের মানুষ যেভাবে চলে যায় সেভাবে পারিবারিক বন্ধনের একজন মানুষ চলে যাওয়াটা অত্যন্ত কষ্টের যন্ত্রণার বেদনার।

আপনার জীবন থেকে বন্ধুবান্ধব চলে যেতে পারে তাতে হয়তো কোনো যায় আসে না। জীবন চলার পথে মানুষ কত বিপদসঙ্কুল মুহূর্তের সম্মুখীন হয় কেউ উদ্ধারের জন্য এগিয়ে না আসলেও পরিবারের মানুষ সবার আগে এসে হাজির।

আমরা সমাজবদ্ধ জাতি হলেও আমরা অনেকেই পশুর চেয়েও অধম, বনের নেকড়ের চেয়েও নিকৃষ্ট। আমরা কখনও কখনও জানোয়ারের রূপ ধারণ করি যা আমাদের জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ আমাদের পরিবারের জন্য বিপদজনক আমাদের সমাজ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এই পরিস্থিতির জন্য পরিবার (… ) দায়ী না থাকলেও এ পরিস্থিতির জন্য পরিবার ও বিপদসঙ্কুল মুহূর্তের সম্মুখীন হয়। সেজন্যই আপনি যা করবেন সেটা পরিবার কখনো কখনো নির্ধারণ করে দেয়।

পরিবারের বাইরে কোন কিছু করাটা সত্যিই বোকামি আপনি যদি ভালো কিছু করতে চান পরিবারের লোক ই সাহস যোগায় যা আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য একধাপ এগিয়ে নেয়। পরিবারের সে মানুষরা সুখী হয় ভালো ফিল করে আপনার গর্বে গর্বিত হয়।

তাই জীবন চলার পথে আপনি যা কিছুই করেন পরিবারের বন্ধন ভেঙ্গে দিয়েন না পরিবারের বন্ধন নষ্ট করবেন না একটা পরিবারের বন্ধন হাজার কোটি টাকার মূল্যের চেয়েও সম্পদশালী যা কোন অর্থে সাথে বিনিময়ে তৈরি করা যায় না।

যা কোন জীবনের সাথে বিনিময় করা যায় না যার কোন মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। এটাই হল পরিবার; দুনিয়ার অন্য কোন কিছু না পেলেও এখানে এসব কিছুই পাবেন আপনি।

তাই আমি আপনাদের প্রতিনিয়ত বলবো পরিবারকে ভালবাসুন পরিবারের কাছাকাছি থাকুন পরিবারের মানুষকে সুখে রাখুন এটাই আপনার জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত তার পাশাপাশি আপনার চারপাশের মানুষ কেউ ভালোবাসার মধ্য দিয়ে জীবন প্রবাহিত করুন।

আমরা কতদিনই বা বেঁচে থাকব আমরা চারপাশের মানুষকে যদি ভালো না বাসতে পারি তাহলে সেই জীবন সাফল্যমণ্ডিত হয় না। লোভ ক্ষোভ হতাশা দিয়ে কোন কিছুর সাফল্য আসে না।

পরিবারের সাথে সাথে আপনার চারপাশে মানুষের মন জয় করা উচিত। মানুষের ভালোবাসা, মানুষের দোয়া মানুষের সুন্দর দৃষ্টি আপনার জীবনকে করে তুলবে আরো আনন্দদায়ক আরো সুন্দর আরো সাফল্যময় হোক প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের নতুন অধ্যয়ন।

নারী কারো মা কারো বোন কারো স্ত্রী সবচেয়ে বড় কথা হল নারী হচ্ছে মায়ের জাত

নারী, নারী কারো মা, কারো বোন, কারো স্ত্রী, সবচেয়ে বড় কথা হল নারী হচ্ছে মায়ের জাত একজন পুরুষের চেয়ে নারী কোন অংশে কম নয়, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা মানুষ হিসেবে যদি চিন্তা করি তাহলে আমরা সমানে সমান কেউ কারো কোন অংশেই কম না বেশি ও না।

শুধুমাত্র নারীর শারীরিক গঠনের জন্য যে একজন দুর্বল আর একজন শক্তিশালী এই বিষয়টি বর্তমান আধুনিক যুগে নেহায়েতই অন্যায় একটি প্রবচন আমরা দাসত্বের চিন্তাভাবনা ছাড়া কখনোই তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না বলেই আমরা আজ এখনো নারীকে সঠিকভাবে বুঝতে শিখিনি।

আমাদের এই শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা এতটাই শোচনীয় যে আমরা নারীর মূল্যায়ন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা রাখিনা নারীকে ছোট করে দেখাও এক ধরনের অন্যায়।

নারীরা জেগে উঠেছে এটি যদি আপনি অস্বীকার করেন তাহলে আপনি এখনো পিছিয়ে আছেন সভ্য সমাজ ব্যবস্থা থেকে। আর এটা যদি আপনি ভুল ভাবেন ভুল বোঝেন তাহলে বলবো যে আপনি আজ থেকে চৌদ্দশ বছরের সেকেলে চিন্তার ভেতরে আবদ্ধ আছেন।

নারী ছাড়া কোন পুরুষ পৃথিবীতে আগমন করতে পারেনি। ধর্মীয় ব্যাখ্যায় যদি যাই ঈসা আলাইহিস সালাম জিব্রাইলের মাধ্যমে তার মায়ের গর্ভে আসে জাস্ট একটা ফুলের সুগন্ধ তার নাকে শ্রবণের মাধ্যমে।

একজন পুরুষ কখনোই নারীর মতো সমৃদ্ধ এবং সম্মানিত হতে পারবে না, একজন নারীর ভেতরে যে গুন আছে একজন পুরুষের ভেতরে সেই গুণগুলো নেই যা নারীকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যায়, সেই বিষয়গুলোই নারীকে অনেক সম্মানিত করেছে। আমাদের সমাজে একজন নারীর অপরাধের জন্য আর সকল নারীকে খারাপ ভাবা ঠিক নয়, অপমান অপদস্থ করা করা ঠিক না।

নারীকে সম্মান করুন, শ্রদ্ধা করুন রেস্পেক্ট করুন, নারীর প্রতি আপনার যে ভালবাসা যে দায়িত্ববোধ যে সহনশীল আচরণ করা দরকার তার প্রতি যে ধ্যানধারণা পোষণ করা বাধ্যতামূলক সেটা আপনার নৈতিক আদর্শ থেকেই তৈরি করা উচিত।

এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা নারীকে ক্ষুদ্র কীট এর চেয়েও জঘন্য ভাবে, এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা নারীকে শুধু একটা যন্ত্র ভাবে উৎপাদনশীল মেশিন হিসেবে।

এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা শুধু নারীকে ঘরে বন্দী করে রাখতে চায় এক শ্রেণীর মানুষ ভেবেই থাকে যে নারীকে তৈরি করা হয়েছে পুরুষের জন্য, এক শ্রেণীর মানুষ ধরেই নিয়েছে নারীকে তৈরি করা হয়েছে পুরুষের সেবার জন্য। এক শ্রেণীর মানুষ ধরেই নিয়েছে যে নারী হচ্ছে পুরুষের দাসী! এই শ্রেণীর মানুষ গুলো ভেবে নেই যে পুরুষ ব্যতীত বাইরে কোন নারী যাবে না নারীর দায়িত্ব ঘর পর্যন্ত।

স্বামীকে সেবা করা, সন্তান উৎপাদন করা, স্বামীর চাহিদা মেটানো ইত্যাদি ইত্যাদি। ওই সব শ্রেণীর মানুষের এই যদি চিন্তা ধারা হয় তাহলে কিভাবে এমন ভেদাভেদ করে স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে সৃষ্টি করতে পারলেন “নারীকে”। সেই পুরুষ সমাজ জানেনা কি তুমি যাদের বিরুদ্ধে আজ কথা বলছো সেই সমস্ত নারীরাই হচ্ছে তোমার মায়ের শ্রেণি, তোমার মায়ের গর্ভে তুমি যদি না আসতে তাহলে তুমি কখনোই পৃথিবীর এই আলো বাতাস দেখতে পেতে না উপভোগ করতে পেতে না আর আজকের এই চিন্তাধারা ও করতে পেতে না।

আমাদের এই ভঙ্গুর সমাজে ভঙ্গুর রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নারী এবং পুরুষকে নিয়ে যে ভেদাভেদ তৈরি হয়েছে সেখানে যদি দুইটি শ্রেণীকে সামনে রাখা যায় তবে সেখানে নারীর চেয়ে পুরুষই অত্যাধিক জঘন্য চরিত্রহীন বলে অনুমেয় হয় বর্তমানে আমাদের এই আধুনিক যুগে কোথায় কি ঘটনা কিভাবে ঘটছে তা মিনিটের ভিতরে চলে আসে এবং জানা যায়।

এবং চলার পথে আমরা যা নিজের চোখ দিয়ে দেখি সেটাকেই বিশ্বাস করা যায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থায় যা চোখে পড়ে তার ওপর ভিত্তি করেই আমার বিশ্বাস জন্মেছে যে পুরুষরাই সবচাইতে বেশি অপরাধী সেটা চরিত্রগত হোক আর ক্ষমতার দিক দিয়ে হোক প্রভাবের দিক দিয়ে হোক।

আজকের আমাদের এই ধর্মীয় সমাজ প্রকৃত জীবন ব্যবস্থার ওপর শিক্ষা না নিতে পারলেও কিংবা পাশ্চাত্যের কালচার থেকে শিক্ষা না নিতে পারলেও ধর্মীয় দীক্ষা থেকে ভালো কিছু কখনোই শিখতে পারিনি যা আমাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করতে শেখায় আমরা অন্যের চরিত্র নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারি কিন্তু আমরা নিজেদের চরিত্র নিয়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণ মুখ ফস্কে কাউকে কিছু বলি না।

এটাই যদি একজন মানুষের মানসিক অবস্থা হয় তাহলে একজন প্রকৃত মানুষের দায়িত্ব জ্ঞান কি সেটা আমরা কখনই বুঝতে পারব না এমনকি জানতেও পারব না।

বখতিয়ার শামীম।
4 অক্টোবর 2019

সস্তা ভালোবাসা আর বিকৃত মানসিকতা – ১

প্রেম, ভালোবাসা নামের এখনকার সম্পর্কগুলো বর্তমানে খুব সস্তা, হুটহাট করেই হয়ে যায়। যত্রতত্র প্রথম দেখা, মিষ্টি হাসি দেখেই এই সব শুরু হয়। যদিও পরে মানসিকতার দ্বন্দ্ব, সামাজিক, পারিবারিক প্রেক্ষাপটের অশান্তি, অর্থনৈতিক সমস্যায় এইসব ভালোবাসা জানালা দিয়ে লেজ তুলে পালায়। কারন আর যাই থাক, এতে কোন কমিটমেন্ট থাকে না। আর বিয়ের আগে সব উজাড় করে দেওয়া বালিকারাও জানে না আদৌ সে ছেলেটির সাথেই সংসার পাততে পারবে কিনা? কিংবা এই ছেলেটিই পরে তাকে গ্রহন করবে কিনা? যদি তা না হয় তাহলে ওর ভবিষ্যত কি? পূর্ণিমার চাঁদ নাকি ঘোর অমাবস্যা?

এইসব অনেক গল্পেরই পরের কাহিনী সবার জানা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেগুলি পাওয়া যায় ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমো কিংবা কিছু নিষিদ্ধ ওয়েব সাইটে।

আজকাল মর্ডান জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা ফেসিয়াল টিস্যু পেপার চেন্জ করার মতো BF / GF চেন্জ করে। দুধ থেকে সরটা খেয়ে, ছেলেরা ভাগে আর মেয়েরা কাঁদে। ছেলেটা যদি আইটি এক্সপার্ট হয়, তাহলে তো আরো চমৎকার! এক হাজার টাকার মোবাইলেও আজকাল HD ক্যামেরা পাওয়া যায়। “মজাই মজা” শেষ হয়ে গেলে ছেলেরা ব্যস্ত হয় যায় অন্য মেয়ে নিয়ে আর সারা দেশের মানুষ ব্যাপক বিনোদনের ফ্রি সুযোগ পায় ইন্টারনেটে। মোবাইল কম্পানিগুলি তে খোঁজ নিয়ে দেখুন, মোবাইলের ডাটা প্যাক গুলি সব শেষ কি দেখে!

এসব মেয়েরা যে আজন্ম বেকুব তা তারা তাদের নিজেদের কার্যকলাপ দিয়েই প্রমাণ করে। সারাজীবন নিত্য নতুন স্টাইল করে বেড়ান এই সব মেয়েরা পরে দেখা যায় বোরকা পড়ে নাক মুখ ঢেকে সব সময় বাইরে যেতে। আর তাতেও যদি না সামলাতে পারে, তাহলে অবশেষে নিজের গলায় নিজেরই ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শেষ বারের মতো নিজেকে আস্ত বেকুব প্রমান দিয়ে দৈনিক সংবাদ পত্রের প্রথম পাতার রগরগে নিউজ হতে।

এই সব বদের হাড্ডি ছেলেরা যদি নিত্য জামা বদলানোর মতো নিত্য নতুন নারী সঙ্গী তথা গার্লফ্রেন্ড পেয়ে যায় সবার অগোচরে, তবে সে কেন একটা মেয়েকে মোহরানা দিয়ে সম্মানের সাথে ঘরে তুলে স্ত্রীর মর্যাদা দিবে! এদের কাছে নারী যদি বিয়ে ছাড়াই এতটাই সহজ লভ্য হয়, তাহলে ঐ ছেলেদের কী দরকার বিয়ে নামের সারা জীবনের রেস্পনন্সিবিলিটির ঝামেলায় নিজেকে জড়ানোর !

এই সব মেয়েদের কাছে খুব জানতে ইচ্ছে করেঃ
#মেয়ে, যখন ছেলেবন্ধু তোমার কাছে তোমার হট পিক চায় তখন কি মনে থাকে না কাকে কি দিতে যাচ্ছো? এর ভবিষ্যত পরিনতি কি হতে পারে? শেষ পর্যন্ত সেগুলি কোথায় জায়গা করে নেবে?
#মেয়ে, যখন তোমার ছেলেবন্ধু এর সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্জনে সময় কাটাও, তখন কি একবারের জন্যও মনে থাকে না তুমি কার সম্মান মাঠে নামালে নিজেকে এভাবে খোলা রেখে?
#মেয়ে, যখন তোমার ছেলেবন্ধু তোমার জামার ভিতর ইচ্ছেমত হাত দেয় তখন কি মনে থাকে না, কার সম্পদ কার জন্য তুমি উন্মুক্ত করে দিলে?
#মেয়ে, যখন তুমি ছেলেবন্ধুর সাথে অমুকের ফ্ল্যাটে গিয়ে দুটি দেহ এক করে শুয়ে থাকো, তখন কি একবারের জন্যও মনে হয় না কার সম্পদ কাকে বিনামূল্যে বিলিয়ে দিচ্ছো? গভীর আবেগে ভেসে যেয়ে যেসব ভিডিওতে পোজ দেও, শেষ পর্যন্ত সেগুলি কোথায় জায়গা করে নেবে?

হয়তো শেষ পর্যন্ত এই ছেলেবন্ধুর সাথে তোমার বিয়ে হলোই না, অনেক কারনেই সেটা নাও হতে পারে। তখন কেন আবার সমস্ত অপবাদ ছেলেটাকে দিচ্ছ? ছেলেটা নির্দোষ অবশ্যই নয়, প্রশ্নই উঠে না, কিন্তু তুমি সুযোগ না দিলে এইসব কি হতে পারত? মজা কি শুধু ছেলেটা পেয়েছে, তুমি পাওনি? না পেলে, কি জন্য এভাবে নিজের শরীর বিনামূল্যে বিলিয়ে দিয়েছ? ছেলেটা যেমন একটু সুখের জন্য তোমাকে চেয়েছে, ঠিক তেমনি তুমিও চেয়েছো সে সুখের ভাগীদার হতে। এটা কি ভূল কিছু? আর সেই সুখের ভাগীদার হতে, খুব সহজে নিজেকে শিয়াল কুকুরের মতো জানোয়ার গুলির খাবার বানালে নিজেকে? আরে, নিজের ভালো তো একটা পাগলেও বুঝে!

আমরা যেন জেনেও বার বার ভুলি যাই, আমরা ঢেকে রাখা খাদ্য দ্রব্য সব সময় নিরাপদ মনে করি। কারণ তার ভিতরটা জীবাণু মুক্ত থাকে। আর খোলা জিনিসে মশা, মাছি আর পোকামাকড় এসে ভীড় করে। কখনও কি একবারও ভেবে দেখেছ, যাকে সবকিছু “চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিব” ভেবে দিয়ে দিলে, তার সাথে যদি তোমার বিয়ে না হয়, তখন ভবিষ্যতে পরের জনকে কি উত্তর দিবে?

এত্ত বড় ভালোবাসা, যেই ভালোবাসার স্ট্যাটাস ফেসবুকে দিতে দিতে আংগুল পর্যন্ত ব্যথা করে ফেলতে, সারারাত সুপার এফএনএফে কথা বলতে বলতে কাটিয়ে দিতে, তাকে দিয়ে যাকে বেঁধে রাখতে পার নি, ছোট্ট একটা শরীর দিয়ে কিভাবে সেটা সম্ভব?

ঈদের চাঁদ দেখলে আমরা যতটা খুশি হই, ততটা খুশি ঈদের দিনেও হই না। কারন ঈদের দিন মানে ঈদ শেষ, কিন্তু আর চাঁদ দেখা মানে কাল ঈদ। পার্থক্যটা কি আর ভেঙ্গে বললাম না। যে তোমার সাথে বিয়ের আগেই তোমার সব পেয়ে গেছে, তার আবার কি দরকার তোমাকে বিয়ে করার?

নিজের চরিত্র ভাল থাকলে নারীবাদী হতে হয় না। এই সব অশ্লীল কাজে সমর্থন যারা দেয়, আসলে তারা স্বার্থপর সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। কারন সুস্থ মস্তিকের বিবেকবান পুরুষ বা মহিলা একান্তই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের কারন ছাড়া এতে সমর্থন দিতে পারে না। একান্তই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের কারন ছাড়া আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে কেউ যায় না বা এতে সমর্থনও দিতে পারে না। নিজের জাগতিক ভোগ বিলাসের লোভ যখন সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভয়ের চেয়ে বেশী হয় তখনই মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়।

দোকানে ঢুকে কিছু কিনতে চাইলে সবাই দোকানের স্যাম্পলটা নেড়েচেড়ে ভালোভাবে দেখে নেয়, কেনার সময় কিন্তু নেয় কিন্তু শোকেসের ভিতরের ইন্ট্যাক্ট প্যাকেট। বর্তমানে এইসব মেয়েরা সবাই ইন্ট্যাক্ট প্যাকেট থেকে বের হয়ে এসে স্যাম্পল হবার প্রতিযোগিতায় নেমে গেছে….

মধু খাওয়া শিখিয়ে ভ্রমরের ডানা গজিয়ে দিয়ে এই সব মেয়েরা আশা করে, ভ্রমর এক ফুলেই, এক স্বাদের মধু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে….…হায়, কি বিচিত্র এদের আশা…..

পূনশ্চঃ এটা একটা জন সচেতনতা মূলক পোষ্ট। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নারী স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা করার যদি অধিকার থেকে, তবে লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়ে কিছু সত্য কথা আমি কেন লিখতে বা বলতে পারবো না……..

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

“জয় চেরনোবগ”

ইউরোপের অনেক রেস্টুরেন্টের বারে ফানবোর্ডে লেখা থাকে “ড্রিংক বিয়ার সেভ ওয়াটার”। এই লেখাটা প্রথমবার দেখে বেশ হাসি আসলেও বারটেন্ডার যখন বললো আফ্রিকার অনেক দেশে বিশুদ্ধ পানির দাম বীয়ারের চেয়ে বেশী, তখন হতাশা পেয়ে বসে। যেকোনো পরিমানের এলকোহলই হোক, যকৃত কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সেসব দেশে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য হলেও সবাইকে বীয়ার পান করে বাঁচতে হবে। তারা কৈশোর থেকেই এলকাহলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা যেখানে কেটো ডায়েটের নামে একটা বীয়ার পান করলে ৭ টা পাউরুটির সমান কিলোক্যালোরী গ্রহন করবো এই ভয়ে তার ধারে কাছে যাই না, সেখানে কালো দরিদ্র মানুষগুলো নিজের জীবন বাচাতে বীয়ার তথা এলকোহলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।

একটা সময় মনে হতো আর কতটা ক্ষতি হলে মনে হবে অনেক হয়েছে, এখন আমাদের থামা উচিত। সমাজ থেকে সকল কলুষিত চিন্তা ভাবনা, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। শুনেছি বিশ্বের ৮০ টি শহরে যুবক যুবতীরা মিছিল করে রাস্তা বন্ধ করছে শুধু একটা দাবী নিয়ে, পৃথিবীর জলবায়ু রক্ষা করতে হবে। অথচ নেতাদের কথাবার্তা শুনলে ছোটবেলার আজব একটা চিন্তার কথা মনে পড়ে যায়।

তখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই লম্বা ছুটিতে নানু বাসা চলে যেতাম। সকাল বেলা উঠেই সুবর্ন বাসে উঠে ঢাকার দিকে যাত্রা করা, দৌলতদিয়ার ঘাটে লঞ্চ ধরা, পদ্মার থৈ থৈ ঢেউয়ে ভয় লাগলেও একটা রোমাঞ্চ অনুভব করতাম নানু বাড়ি যাচ্ছি। আমি আবার সাতার জানতাম না। পদ্মার প্রমত্তা ঢেউ আমার মনে ভয় জাগাতো, ভাবতাম এটাই বুঝি শেষ যাত্রা আমার। কিন্তু দেখো! তারপরও দিব্যি বেচে আছি। পদ্মা এখন দেখতে কুমার নদীর মতো মজা কোনো খাল। সে যাই হোউক, ঢাকায় এলে নানুকে দেখতাম বিশাল একটা এলুমিনিয়ামের ট্রেতে চালের খুঁত বাছতেন। মামারা ছিলো যৌথ পরিবার, তার ওপর দু তিনজন বিয়ে করে সবাই একসাথেই থাকতো, সে এক বিশাল হুলস্থুল ব্যাপার স্যাপার। নানু কাজের মেয়েদের নিয়ে দিনের একটা বড় অংশ কাটাতেন চাল বাছতে বাছতে। ছুটির সময় সব কাজিনরা এলে বাসা পুরো গরম হয়ে যেতো। নানু সব পিচকি পাচকাদের ধরে চাল বাছতে বসিয়ে দিতেন আর আমরা স্বানন্দে পুরো ড্রাম ভরে দিতাম।

চাল বাছতে বাছতে মনে হতো এই যে একটা দুটো তিনটি খুত বেছে নিলাম এতে কি চালের পরিমান কমবে? এত গুলো চালের মধ্যে দুটো চাল নিলেও তাতে কোনো পার্থক্য হবে না। এমনকি আরো দুটি, আরো দুটি, প্রগমনিক ধারায় চলতে থাকলেও সে চাল ফুরোবে না। নানুকে বুঝিয়ে না বলতে পারলেও তিনি ঠিকই বুঝে নিয়ে একটা লাইন বললেন,”কোন সে ব্যাপারী গুনতে পারে এক থাল সুপারী?” রাতের বেলা আকাশের তারা গুনতে গিয়েও একই সমস্যায় পড়লাম। ঠিক যেখান থেকে তারা গুনতে শুরু করেছি, আমি সেখানেই আটকে থাকি। কোথা থেকে কোন তারা কোথা দিয়ে উকি দিচ্ছে, বোঝা মুস্কিল। তারা গোনাটা একটা গোলক ধাঁধাঁ। তবু আমার দুঃসাহস থামেনি। জ্ঞান অর্জন করলাম, বুঝতে শিখলাম কিভাবে অসংখ্য জিনিসকে মাপতে হয়, তাকে কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ব নেতারা নাছোড়বান্দা। তারা ছোটবেলার সেই চাল গোনার হিসাবেই পড়ে আছে। মনে করে এতটুকু কার্বন নিঃসরনে কিছু হবে না। হলেও প্রকৃতি ঠিকই সামলে নেবে। অথবা যদি হয়ও তাহলে সেটা অবশ্যম্ভাবী। ঠেকানো যাবে না। তারা যেনো ছোটবেলার সেই ভ্রান্ত দর্শনে আটকে আছে।

স্লাভিক গড চেরনোবগ ছিলেন একজন অপদেবতা। সে অভিশাপ দেবার পয়মন্ত ছিলো, হাস্যজ্বল উৎসবে মৃত্যুর ছায়া ডেকে এনে বিষাদের বন্যা বইয়ে দিতে তার মুন্সিয়ানা তুলনাহীন। ওডিনের গুংনীরের মতো তার ছিলো কাঠের তৈরী বিশাল হাতল ওয়ালা হাতুড়ী। উৎসর্গের গরুর মাথায় এক আঘাতে ফাটিয়ে হত্যার প্রিয় অস্ত্র ছিলো সেই হাতূড়ি, যেনো তরমুজের মতো ফেটে চূরমার। আমাদের নেতারা হলো সেই চেরনোবগের ছায়া। তাদের কলমের খোঁচা গ্রীমনিরের গুংনীড়।

আমরা সেই উৎসর্গের গরু, বলা যায় বলির পাঠা। যদিও প্রহেলিকার জগতে বাস আমরা নিজেদেরকে মহান হুবালের বিশ্বাস ধারন করা সাহসী ছায়াসঙ্গী ভাবতে ভালোবাসি অথচ এ সবই মায়া, মিথ্যা। আমাদের বিশ্বাসের মোহরে তারা বেঁচে থাকে, ঈশ্বর হয়ে আমাদের ভাগ্য নিয়ে হাস্যকর খেলা খেলে।

আমাদের দরকার ছিলো একজন প্রমেথিউস অথবা ফ্রান্সের আধুনা “ভলতেয়ার” পল সাঁত্রে, যারা আমাদের চোখের পর্দা সরিয়ে ইউটোপিয়ার জগতকে ভেঙ্গে দেবেন! যদিও ভয় হয়, আমাদের বিপ্লব হাতছাড়া হয়ে মধ্যযুগীয় হুবালের হন্তারক ডাকাতের অনুসারীদের হাতে না চলে যায়! আজ তাই ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়ার লাখোকোটি মানুষ নীরবে কাঁদছে, সে কস্ট গুলো আসলেই কাউকে স্পর্শ করে না, না হুবাল, না আজুরা মেহতা, না ওডিন অথবা আখেনাতেনের সেই আদি পরাক্রমশালী “আতেন”!

হ্যাপী ব্লগিং!!

খুকি

ধরার বুকে রাত নেমেছে
আঁধারে ঘর কালো;
খুকি আমার জনম নিল
ঘর করিল আলো।

পাড়া পড়শি ভিড় করেছে
সবাই হাসি খুশি;
এ-নয়তো মোর ছোট্ট খুকি
উদয় হলো শশী।

মা-আমার নাতনী পেয়ে
হলেন মহা খুশি;
সুখ’ বন্যায় ভরে দিলেন
সকল মাসি পিসি।

খুকি আমার হচ্ছে বড়
মা-বাবার আদরে;
স্রষ্টা তোমার মহিমা গাই
সদা, চরাচরে।

আধো ভাষায় খুকি কভু
বাব্বা রবে ডাকে;
মাম্মা বলে ডেকে আবার
মাকে কভু হাকে।

কন্যা’ জনম শুনতে পেয়ে;
যে করে মুখ ভারি।
শুনুন এবার বিশ্ববাসী;
তার তরে মোর আড়ি।

আসুন এবার সবাই মিলে
শপথ করে বলি;
পুত্র-কন্যা সমান ভেবে
আনন্দে পথ চলি।

যোগ্য করে কন্যা সন্তান
যদি গড়ে তুলি;
সসম্মানে বাঁচব সবাই
দুঃখ সবই ভুলি।

## উৎসর্গঃ বিশ্বের ঐ সকল কন্যা সন্তানদের সম্মানে, যাদের জন্ম হবার খবরে তাদের মা-বাবা এবং নিকটাত্মীয়গণের মুখমন্ডল কালো হয়ে গিয়েছিল।

#মি টু

কেউ একজন বললেন সবাই যখন হ্যাশট্যাগ মি টু নিয়ে সরব তখন আমি কিছু বলছি না কেন ?
একটা মেয়ের জন্ম হলো এবং সে জানেনা চারপাশে কি পাইথন তার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। মা তাকে আগলিয়ে রাখেন, বাবাও আগলিয়ে রাখেন। কিন্তু ওর যদি অনেকগুলো ভাইবোন হয় তবে তাকে আগলে রাখার সময় কই এতো ?
অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিটি বাচ্চাকে সে সমজেন্ডার হলেও ধরা ছোঁয়া নিষেধ। ফুলের মতোন বাচ্চা কিন্তু কেউ ছুঁয়ে আদর করতে পারবে না। দূরে থেকে শুধু একটু হাসি দিয়ে আদর দেখানো যাবে।

সেদিন একটা সিনেমা দেখলাম – এক টিনেজ মেয়েকে এই পৃথিবীতে একা রেখে তার মা মারা গেলেন। তার বাবা অলরেডি তার মাকে ছেড়ে চলে গেছেন। সে তার বাবার বাসায় গেলো। বাবা তার নতুন স্ত্রী নিয়ে সংসার পেতেছেন। সে সংসারে আবার নতুন অতিথি আসবে। তাই তার বাবা আর তার সৎ মা অপরাগতা প্রকাশ করলেন তাকে এই সংসারে আশ্রয় দিতে। ঘর থেকে বের হবার সময় তার বাবা বললেন – মামনি ভালোবাসি তোমাকে। সেও বললো আমিও তোমাকে ভালোবাসি বাবা। বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখে আপ্লুত হয়েছিলাম। একবারো ভাবলেন না এই বাচ্চা মেয়েটা কোথায় যাবে ! তিনি নিজেও পুরুষ। তিনি জানেন এই পুরুষকুল এই মেয়েকে আস্ত রাখবেনা। অথচ তিনি তার মেয়েকে বাঘ সিংহের খাঁচার দিকে ঠেলে দিলেন। যাই হোক উপায়ান্তর না দেখে চোখের পানি মুছতে মুছতে সে এলো তার আত্মীয়ার বাসায়। ভদ্রমহিলা তাকে খুব যত্ন করেন। তার স্বামীও যত্ন করেন। কিন্তু ভদ্রলোক যত্ন করতে করতে একদিন বেশিই যত্ন করে ফেলেন। সে বের হয়ে গেলো। ঘরের বাইরে পুরো বিশ্ব তার জন্য ডেঞ্জারজোন। তবু এক ভদ্রলোক সহানুভূতি পরায়ণ হয়ে তার বাসায় নিয়ে গেলেন। সেখানে দেখা গেলো তার কাতর স্ত্রীকে। ভদ্রলোক এবং তার স্ত্রী তাকে যথেষ্ট যত্ন আত্তি করলেন। এবং ভদ্রলোক নিজেই তার শরীরের সুবিধা নেয়া শুরু করলেন। মেয়েটা এবার রাগ করে বের হয়ে যেতে পারলো না। সে আর কত জায়গায় ফিরবে !!

কিন্তু সমস্যা হলো ভদ্রলোক নিজে ভোগ করেই ক্ষান্ত হলেন না। তিনি তাকে দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন। অসহ্য হয়ে মেয়েটা আবার বের হয়ে এলো। সেই আত্মীয়ার কাছে গেলো পুনরায়। এবং ততদিনে সে ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছে। ওর আত্মীয়া তাকে একটা সংস্থায় নিয়ে গেলেন। সেখানে আরো অনেক টিনএজার ছেলেমেয়ে আছে। প্রত্যেকেই দেখা গেছে কোনো না কোনোভাবে সামাজিক বা পারিবারিক বা যৌননিগ্রহের শিকার।

… সিনেমাটা এমেরিকার ব্যাকগ্রাউন্ডে করা। বোঝা যায় পৃথিবীর সব নারী সব মেয়ে শিশু একই ভাবে যৌননিগ্রহের শিকার হয়।

আসলে এটা একটা ঘটনা মাত্র। এরকম হাজারো লক্ষাধিক মেয়ে শিশু, কিশোরী নারীর নিগ্রহের ঘটনা ঘটে যায় মানুষের সামনেই অথবা অগোচরে। কিন্তু যা ঘটে নারীর সাথে নারী ভুলে না। সে তার শৈশব থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনার কথা মনে রাখে, আসলে মনে রাখা না তার মনে থাকে। ভুলে যায় না। অভিশাপ দিতে থাকে সেই জানোয়ারদের।

মিটু এর জোয়ারে অন্তত কিছু প্রভাবশালী লোক যারা ক্ষমতার ছত্রছায়ায় আছেন, তাদের বদ উদ্দেশ্য থেকে ক্ষান্ত হবেন। অন্তত কিছু মেয়ে হলেও রক্ষা পাবে। আমরা জানি তবু লোভী আরো বহুলোক তাদের কালো হাত বাড়িয়েই রাখবেন।
আমরা বলি আবু লাহাবের মত তাদেরও হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক।

বাবা মা-ও একদিন শিশু হবে

শিশুবেলায় বাবার আঙ্গুল ধরে ঘুরে বেড়ানোর কথা মনে হলেই মনে পড়ে আমার বৃদ্ধ দাদার কথা। দাদা বৃদ্ধ অবস্থায় আমার বাবার সাথে খুব বেশী ঘুরে বেড়াতে চাইতেন। দাদা প্রায়ই কথা বলতে শুরু করলে আর থামতেন না। বাবা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। কখনও কখনও একবারে মধ্য রাত পর্যন্ত দাদা কথা বলেই যেতেন। স্মৃতিচারণ, সাংসারিক, জীবনে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনা সব কিছুই থাকতো এই আলাপচারিতার মধ্যেই। আমার কাছে খুব আশ্চর্য মনে হত যে বাবা সারা রাত ধরে দাদার একই কথা শুনে যায় তবুও কখনও বিরক্তি বোধ করে না এর কারণ কি আসলে !

উত্তর পাওয়ার জন্য অনেকগুলো বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। দাদা এবং দাদু মৃত্যুর পর বুঝতে পেরেছি শূণ্যতা আর অনুভূতির কতটা গাঢ়ত্ব। বৃদ্ধকালে দাদা এবং দাদু দুজনেই একেবারে শিশুর মত হয়ে গিয়েছিলেন। যাই করতেন সব কিছু বাবাকে জিজ্ঞেস করে করতেন। বাবা অনেক সময়ই দেখতাম দাদার বিছানা থেকে ময়লা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন এবং আমার মাও সাহায্য করছেন। এত কিছুর পরও দাদা দাদু প্রায়ই একাকী আলাপ করতে এবং বলতেন সেই তারুণ্য ভরা জীবনের গল্পগুলো। এক সময় একজনের মৃত্যুর পর যখন অন্যজন খুব বেশী একা হয়ে যান তখন দেখলাম শিশু আচরণের একেবারে চুড়ান্ত পর্যায়।

ঠিক এই সময়টাতে প্রতিটি মানুষই একদিন আসে। কিন্তু প্রতিটি মানুষই কি আমার দাদা দাদুর মত সঙ্গ পায় ? অনেক প্রতিষ্ঠিত পরিবার গুলোর এখন একক পরিবার হিসেবে থাকতে পছন্দ করছে। বাবা মাকে তারা ঝামেলার মনে করে। একটি পরিবারে যেখানে সন্তান আছে কিন্তু বাবা মা নেই এ বিষয়টি যে অভাবের, তাড়নার তা যেন ভাববার মানুষই পৃথিবীতে এখন আর নেই। আরেক ধরণের পরিবার আছে যারা বাবা মা এর সাথে একসাথে থাকলেও বাবা মায়ের খবর রাখতে যেন খুব অমনোযোগিতা ! তেমনি একটি বাস্তব দেখা গল্প বলি।

আমাদের বাড়ির কাছেই একজন মানুষ যিনি খুব বেশী প্রতিষ্ঠিত সমাজে। রাজনীতির সাথেও খুব বেশী সংশ্লিষ্টতা আছে তার। সে হিসেবে প্রতি ঈদে যাকাতের কাপড় নেওয়ার জন্য প্রচুর পরিমান মানুষের সমাগম ঘটে তার বাড়িতে। শাড়ি লুঙ্গি দিয়ে সবার মন জয় করে নেন খুব তাড়াতাড়িই। মানুষ দোয়া করে যায় আর তার মুখে দেখি অনাবিল হাসি !

তার মা বৃদ্ধ অবস্থায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। এক সময় একটি ছোট্ট ঘরে তার মাকে আমরা বেঁধে রাখতেও দেখেছি ! কি সেই মর্মান্তিক দৃশ্য ! চিৎকার করে কান্না আর অভিশাপের চরম হাহাকার দেখে হৃদয়ে দাগ কেটে যেতো বার বার ! প্রতিবেশীরা কিছু বললে তাদের উপরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন তিনি।
আচ্ছা যখন এই লোকটি খুব ছোট ছিলেন তখন মা কিভাবে বড় করে তুলেছেন ? আমার ছোট্ট বাচ্চাটির জন্য রাতে ঘুমোতে পারি না, তার আবদার রাখার জন্য মধ্য রাত্রিতে দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে চাঁদ দেখাতে হয়, যখন হাঁটা শুরু করলো একাধারে দু-ঘন্টা ধরে তার হাতে ধরে ধরে হাঁটাতে হত, একটু মন খারাপ হলেই আমার কোলেই অর্ধেক রাত কাটিয়ে দেয় আরও কত কি ! এরকম তো প্রতিটি শিশুই বাবা মা কে ঘিরেই বেড়ে ওঠে। তারপর শিশুরা বড় হয় আর বাবা মায়েরা হয়ে ওঠেন শিশু !

যখন বাবা মায়েরা শিশু হয়ে ওঠেন তখনই যেন ঘোর বিপত্তি। এই বিপত্তি গুলোই প্রবীণদের জীবনকে ঠেলে দেয় অসহায়ত্বের দিকে। বৃদ্ধাশ্রমে না গিয়েও বয়স্ক মানুষেরা অনেকেই আছেন ঘরে বন্ধী হয়ে। দেখার কেউ নেই, কথা শোনার কেউ নেই, নেই মান অভিমানের কোন পরিসমাপ্তির মানুষও !

আপনি যখন পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত তখনই হয়ত আপনার বাবা মা আপনার শিশু জীবনে ফিরতে শুরু করবে। এটাই চিরাচরিত নিয়ম। আমাদের শিশু জীবনে আমরা যেমন বাবা মাকে ধরে ধরে দাঁড়াতে শিখি তেমনি আমাদের বাবা মায়েরাও আমাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার সময় যেন আমরা পাশে থাকি এটাই বড় কর্তব্য। ধর্মগত দিক আর বাস্তবিক দিক যেভাবেই যাই না কেন পিতামাতার স্থান সবার উপরে। সুতরাং এখনি আমাদের মানবিকতার উন্নয়ন ঘটানোর সময়।

পারিবারিকভাবেই শিক্ষা দিয়ে সন্তানকে বড় করুণ যে সন্তানই বাবা মায়ের শেষ আশ্রয়স্থল। আগে থেকেই শিশুদের বোঝাতে হবে একটা সময় বাবা মাকেই আবার সন্তানের দায়িত্বে থাকতে হয় বা হবে। সঠিক শ্রদ্ধার জায়গায় যদি বাবা মাকে স্থান দেওয়া যায় তবে বৃদ্ধ অবস্থায় বাবা মা কে সন্তানেরা নিজেদের শিশুদের মতই আদরে লালন পালন করতে থাকবে।

আমার বাবা দাদার সাথে যে আচরণ করতেন তা আমার প্রায়ই মনে হয় আর আমি শুদ্ধ হই। একারণেই যৌথ পরিবার প্রথাও প্রয়োজন যাতে করে একজনকে দেখে অন্যজন অনুপ্রাণিত হয়। বয়স্ক মানুষ একটি বাড়ির সবচেয়ে মূল্যবান মানুষ হিসেবে বসবাস করবে এটাই আমাদের চাওয়া।

নারী তুমি বিজয়িনী

নারী তুমি বিজয়িনী

সেই পাথর যুগের জীবিকা অন্বেষণে শিকার ও সংগ্রহ থেকে শুরু করে নব্যপ্রস্তর যুগে উৎপাদনের সূচনায় নারীর অবদান অনস্বীকার্য। প্রাচীন ও মধ্যযুগে নারীর সাহিত্যচর্চা, যোদ্ধা এবং রাজ্য বা সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনায়ও নারীর পরিচয় পাওয়া যায়। সেই সময়ও নারী পিছিয়ে ছিল না। আধুনিক যুগে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ, রাষ্ট্র পরিচালনা, মহাকাশ ভ্রমণ ও গবেষণা, সাহিত্যচর্চা, বিজ্ঞানচর্চা, ব্যবসা বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারী গৌরবের রেখা টেনে চলেছে। তবে এই অর্জন খুব সহজেই অর্জিত হয় নি। শত বাধা ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। যা এখনো বিদ্যমান। একজন নারীরও সমতার অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার ও উন্নয়নে অংশীদারিত্বের অধিকার রয়েছে। এই অধিকার যারাই পেয়েছেন তারাই আজ স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন।

শত বাধা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিকে হার মানিয়ে অনেক নারীই ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরিত হয়ে আছেন। তাঁরা সমকালীন গণ্ডী ছাপিয়ে গিয়ে সমাজকে দেখিয়েছেন উন্নয়ন ও কল্যাণের পথ। নিজ দক্ষতা ও কর্মগুণে আমাদের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-

১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে বসেন। মুসলিম ভারতের তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে রাজিয়াই একমাত্র নারী, যিনি দিল্লির সিংহাসনে প্রথম উপবেশন এবং রাজদন্ড ধারণ করে প্রবল প্রতাপে শাসন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সুলতান ইলতুৎমিশ, যিনি দাস বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন।

ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর নারীবিদ্বেষী আমির-ওমরাহগণ সুলতান রাজিয়ার বিরোধিতা শুরু করেন। তাঁদের যুক্তি হল যে, ইলতুৎমিশের পুত্র থাকার কারনে কন্যা উত্তরাধিকারী হতে পারে না। এই রাজমহীয়সী ছিলেন বিচক্ষণ, ন্যায়পরায়ন, দয়াশীল, সুবিচারক, বিদ্যোৎসাহী, প্রজাবৎসল, সমরকুশল এবং রাজোচিত বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী। শৈশব থেকেই রাজিয়া ছিলেন খুবই বুদ্ধিমতি এবং পিতা সুলতান ইলতুৎমিশের শাসনকার্য লক্ষ করতেন। তিনি অস্ত্রচালনা, অশ্বারোহণ ও রাজনীতিতে ক্রমশ দক্ষ হয়ে উঠতে থাকেন। রাজিয়ার রাজোচিত গুণাবলি দেখে সুলতান ইলতুৎমিশ তাঁর পুত্রদের পরিবর্তে কন্যা রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনিত করেন! সুলতান রাজিয়া দক্ষ অশ্বারোহী ছিলেন এবং বর্ম ও শিরস্ত্রাণ পরে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু রক্ষণশীল আমিরগণ সুলতান রাজিয়ার খোলামেলা রাজকীয় আচার-আচরণ মোটেই পছন্দ করতেন না। অতঃপর প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে এক যুদ্ধে এই রাজমহীয়সী সুলতান রাজিয়ার মৃত্যু হয়!

ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, শিক্ষাব্রতী, সমাজসংস্কারক এবং নারীর অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। রোকেয়া যে সামাজিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন, সেখানে মুসলমান মেয়েদের গৃহের অর্গলমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ ছিল না। তবুও তিনি বড় ভাইয়ের নিকট ঘরেই গোপনে মোমবাতির আলোয় বাংলা ও ইংরেজি শিখেন। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও পদে পদে গঞ্জনা সত্যেও তিনি জ্ঞানার্জনে অবিচল ছিলেন। তাঁর স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনেও রোকেয়াকে শিক্ষার্জন ও লেখালেখি করতে উৎসাহ যুগিয়েছেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ নামে মেয়েদের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বিরূপ সমালোচনা ও নানাবিধ সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে সে যুগের মুসলমান মেয়েদের শিক্ষালাভের অন্যতম পীঠস্থানে পরিণত করেন।

রোকেয়ার সমগ্র সাহিত্যকর্মের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজের কুসংস্কার ও অবরোধ প্রথার কুফল, নারীশিক্ষার পক্ষে তাঁর নিজস্ব মতামত, নারীদের প্রতি সামাজিক অবমাননা এবং নারীর অধিকার ও নারী জাগরণ সম্পর্কে তাঁর প্রাগ্রসর ধ্যানধারণা। শিক্ষা ব্যতীত নারীজাতির অগ্রগতি ও মুক্তি সম্ভব নয়, এ সত্য অনুধাবন করেই তিনি নারীশিক্ষা প্রসারের কাজে ব্রতী হন। সাহিত্যচর্চা, সংগঠন পরিচালনা ও শিক্ষাবিস্তার এই ত্রিমাত্রিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সমাজ সংস্কারে এগিয়ে আসেন এবং স্থাপন করেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

একবিংশ শতকে এসে বাংলাদেশী প্রথম নারী পর্বতারোহী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে নিশাত মজুমদার। এরপরেই রয়েছে সেভেন সামিট বিজয়ী ও দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী পর্বতারোহী হিসেবে ওয়াসফিয়া নাজরীনের নাম। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যোগ দিতে কঙ্গো গিয়েছে বিমানবাহিনীর দুই নারী বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুতফী।

নারীদের এই বিশ্ব জয়ের ভূমিকা যতটা আনন্দের ততটাই গৌরবের। দেশের জন্য নিজ মেধায় গতানুগতিক পেশার বাইরেও নারীরা চ্যালেঞ্জিং, সৃষ্টিশীল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পেশায় সফলভাবে কাজ করছে। পৃথিবীর কল্যাণে নারীর যে অর্ধেক অবদান তা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। মেধা ও যোগ্যতা থাকলে সব বাধা-বিপত্তিই যে মোকাবিলা করা সম্ভব, বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার নারীরা তা প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যাচ্ছে। তবে নারীর এই মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে কতটুকু কাঠখড় পোড়াতে হয় এবং তার কতটুকু মূল্যায়ন করা হয় তা ভাববার বিষয়! উন্নয়ন ও কল্যাণে নারীর অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব কোন ভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।