বিভাগের আর্কাইভঃ সমাজ

ভাত

যখন আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে তখন টাকা দিয়ে কি করবেন তার একটা ফর্দ তৈরী করা হয়। সেখানে ভ্রমণের একটা অংশ থাকে, গিফটের একটা অংশ থাকে, অংশ থাকে কিছু মানুষকে আনন্দ দেওয়ার। কতশত ইচ্ছের সাথে যোগ হয় টাকা দিয়ে জলসাঘরে ভালোবাসা কেনা, সুস্থতা কেনার প্রয়োজনীয়তা আর কত যে ছালাম পাওয়ার দাম্ভিকতা তৈরী হয় তারও একটি ফর্দ মনে মনে ঠিক করে মানুষ !

কেউ কেউ রাতে ভাত খেতে পারে না। প্রবল অসুস্থ। বসে থেকে থেকে ডায়বেটিকস হয়েছে। টাকার অধিক ব্যাপ্তিতে ব্লাড প্রেশারও হাই থাকে। কোন রকম খেয়ে রাত কাটিয়ে দিতে পারলেই যেন শান্তি। তাই কি আর হয় ? মধ্য রাত্রিতে উঠে খোলা আকাশের দিকে চেয়ে ভাবতে হয় আপন মানুষগুলোর দূরে চলে যাওয়ার দুঃখ, নিজের মানুষের অবহেলার দুঃখ আরও কত কি ! সব কিছুর পরও তার কাছে যা আছে তা হল টাকা। বিশ্বাস করা যায় টাকা দিয়েই ভাত কিনতে হয় ! বিশ্বাস তো করতেই হবে আমাদের।

বিপরীতে খুব রোগাক্রান্ত একজন মানুষ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। প্রতিদিন সকাল হয় শুধু পরের দিনের ভোর দেখার প্রত্যাশায়। তার কাছে ভাতের আকাঙ্ক্ষা নেই। সে স্যালাইনে বাঁচে। তার বাঁচা, শরীরে রক্ত প্রবাহ আর চোখের দৃষ্টি সবকিছুই চলে অন্য মানুষের দেয়া সাহায্যে। কিন্তু এই মানুষটিরও পরিজন থাকে। এরও একটি শিশু থাকতে পারে, শিশুটির বাবার কাছে আকুতি থাকতে পারে, একটা খেলনা দেখে দৌড়ে গিয়ে বাবার কাছে এসে বলতে পারে “বাবা আমাকে খেলনাটা কিনে দাও”! বাবার উত্তর তখন কি এই সন্তানের কাছে ? সন্তান বাবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেডের কাছে বসে থাকে। স্ত্রীও বসে থাকে। স্ত্রী বোঝে তার স্বামী রক্ত শূণ্য হয়ে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। তারপরও স্ত্রী পাশে থাকে।

কিন্তু স্ত্রী সন্তান কেউ ভাত খেতে পারে না ! যে টাকা মানুষ চিকিৎসার জন্য সহায়তা করে সে টাকায় চিকিৎসাও হয়না ! ভাতের টাকা আসবে কোথা থেকে ? অন্যের ভাত খাওয়া দেখে শিশুটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, সে হিসেব কষতে শুরু করে ভাত খাওয়ার অধিকার হীনতার স্তর বিন্যাসের ! কলা আর বন রুটিতে তাদের দিনগুলো কাটিয়ে দেওয়ার পরও যে ভালো দিন না আসার চরম বাস্তবতা মেনে নেওয়ার মত কঠিন সত্য মেনে নিয়ে ছেলেটির মা ছেলেটির মুখে বুকের দুধ ঠেলে দেয় ! ছেলেটি ভাতের তেষ্টায় অচেতন হয়ে যতক্ষণে ঘুমের ঘোরে চলে যায় তখন ততক্ষণে মায়ের নিজের ক্ষুধা নিবারণ শুধুই একজন মানুষের বাঁচার আকুতিতে নিঃশেষে বিভাজ্য।

একদিকে শহরের লক্ষ লক্ষ টাকার বিল্ডিংয়ের কাচের চাকচিক্য অন্যদিকে টাকা গচ্ছিত না রেখে তা দিয়ে ভ্রমণ করে দেশ দেশান্তর ঘুরে জীবনের মানে খোঁজা মানুষগুলো আর ঠিক তার পাশ ঘেঁষেই হা-ভাত ওয়ালা মানুষ বড় বেশী অপ্রয়োজনীয় একটা অংশ বলা যায় ….

আপনি কি পবিত্র ঈদুল আযহায় পশু কুরবানি দিচ্ছেন?

এই পবিত্র ঈদুল আযহায় আপনি কি মহান সৃষ্টিকর্তার নামে কুরবানি দিচ্ছেন? যদি কুরবানি দেওয়ার জন্য লাখো টাকা দিয়ে একটি চতুষ্পদ প্রাণী কিনে থাকেন, তা হলে ধরে নিন; এই পশুটিই আপনার মনের ভেতরে থাকা অতি আদরের লালিত পালিত পশু। যখন ধারালো ছুরি দিয়ে পশুটিকে কুরবানি বা জবাই করা হবে, আপনি মনে করবেন মহান সৃষ্টিকর্তার নামে আপনি নিজের কুরবানি হয়ে যাচ্ছেন। তারপর কুরবানি দেওয়া পশুটির গোশত নিজ পরিবারের জন্য একবেলার সমপরিমাণ গোশত রেখে বাদবাকি গোশত সঠিকভাবে আপনার গরিব আত্মীয়স্বজন এবং সমাজের গরিব মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিন। তা হলেই মনে হয় আপনার কুরবানি মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে কবুল হবে, আপনিও মহান সৃষ্টিকর্তার নামে নিজেই কুরবানি হয়ে গেলেন।

এটি কোনও পরামর্শ নয়, এটি আমার নিজের মনের ধরনা মাত্র। ভুলও হতে পারে! ভুল হলে আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ক্ষমা করে দিবেন। পরিশেষে সবাইকে আমার পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা।

ছবি ইন্টারনেট থেকে।

সুন্দরী প্রতিযোগীতা: দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়!!

【সতর্কতাঃ এটি একটি আঠারো প্লাস লেখা। বাচ্চারা অবশ্যই এড়িয়ে যাবে।】

সুন্দরী প্রতিযোগীতার স্লোগান- “দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়”, আর “কাপড় খুলে ফেলো” এই দুটো কথা আদতে একই। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে, প্রথমটিতে ভদ্র ভাষার ঢঙ্গে অভদ্র প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, আর দ্বিতীয়টিতে ডিরেক্ট অভদ্র প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। :/

সুন্দরী প্রতিযোগীতায় মেয়েদের কিভাবে নির্বাচন করা হয় জানেন? কুমারীত্ব (অবিবাহিতা), উচ্চতা, বুক ও কোমরের সাইজ, গায়ের রঙ্গ ইত্যাদি দেখা বা মাপা হয়। ব্যাপারগুলো কি শালীনতার পর্যায়ে পড়ে?

ফ্রাষ্ট্রেটিং কোশ্চেন হলো- মেয়েগুলো কি কোরবানির গরু? এখানে একটা মেয়েকে যাষ্টিফাই করা হয় ঠিক কোরবানীর হাটের পশুর মত। হাটে আমরা দেখি গরুটি নাদুস-নুদুস কিনা, শিং ঠিক আছে কিনা, রঙ কেমন ইত্যাদি…। সেইম রিপিট কি এই নোংরা প্রতিযোগীতায়ও হয় না! ব্রেষ্ট, চেষ্ট, ওয়েষ্ট, ওয়েট, ফিগার, হাইট, চেষ্টটিটি, কালার…. মেয়েদের এইগুলা যাষ্টিফাই করা হয়….। স্যরি, বিষয়গুলো লিখতে আমারও যে সংকোচ হচ্ছে।

প্রতিযোগীতার আয়োজক আর দর্শকদের নিয়ে কথা বলার আগে সবচেয়ে অবাক লাগে প্রতিযোগীদের মানসিকতা নিয়ে। একটা মেয়ে কিভাবে পারে সবার সামনে নিজের বডি-ফিগারের প্রদর্শনী করে তথাকথিত স্টার হতে! হাজার হাজার মানুষ রসিয়ে রসিয়ে তার বডি পার্টসগুলো উপভোগ করছে! একসাথে হাজার হাজার জনতা চক্ষু দিয়ে ধর্ষণ করছে বা মানসিকভাবে গিলে খাচ্ছে। কতটা নোংরা আর অসুস্থ মানসিকতার হলে নিজেকে এভাবে “সিম্বলিক প্রস্টিটিউট” এর পর্যায়ে নামানো যায় (স্যরি ফর দ্য হার্ড ল্যাংগুয়েজ)! আমরা অধিকাংশ ছেলেরা মেয়েদের সামনে দূরে থাক, পুরুষ জনতার সামনেই নিজেদের পেট-পিঠ-ন্যাভল দেখিয়ে বেড়াতে লজ্জ্বা পাই। আচ্ছা কখনো কি দেখেছেন পুরুষরা স্বেচ্ছায় নিজেদের পেট-ন্যাভল বের করে রাস্তায় হাটছে! ইজ ইট কমন সিন ফর ম্যান? আর আপনারা মেয়ে হয়ে…!!

আর সেসব অভিবাবকেরাই বা কেমন, যারা নিজেদের মেয়েদেরকে ফ্রিতে জনতার কামনার খোরাক হতে দিচ্ছেন! নিজেদের মেয়েদের ফিগার আম-জনতা উপভোগ করছে, আর তাদের প্রাউড ফিল হচ্ছে! ফিলিং প্রাউড ফর ন্যুডিটি! হাহ, এদের মানসিকতার উপরে কি গজব পড়েছে নাকি- ভেবে ভেবে আকুল হই!!

সুন্দরী প্রতিযোগীতার দর্শকদের (যারা শুধু নিজেদের মা-বোনের বেলায়ই সুশীল) একটা কথাই বলতে চাইঃ আপনার বোনদেরকেও প্রতিযোগীতার হাটে তুলুন, ওদেরও সুযোগ দিন। আরেহ চিন্তা নেই! আপনাকে দর্শক হতে হবে না! এ বেলা না হয় আমরাই তাদের সৌন্দর্য্য আর বডি পার্টসগুলো ফ্রিতে রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করবো! কি বলেন? চলুন উপভোগ করি, অনেক ফূর্তি হবে, অনেক….।

মাজারের খাদেম ও নতুন মুরিদঃ যেমন চোর তেমন সাগরেদ

মাজারের খাদেম ও নতুন মুরিদের মাঝে কথপোকথনঃ
(১ম সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আনেকদিন ধরে আমার প্রায়ই পেটে ব্যাথা হয়। ডাক্তার বলছে গ্যাস জমেছে, সারতে সময় লাগবে।
– ভুল কথা, জ্বীনের বদ নজর লাগছে। বাবার মাজারে মোমবাতি দে, ভাল হয়ে যাবে।
 
(২য় সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আমার বুক ব্যাথা করছে। এখন ডাক্তারের ঔষধ খাচ্ছি।
– ঔষধ খেয়ে কিছু হবে না রে, বাবার মাজারে মুরগি দে, ভাল হয়ে যাবে।
 
(৩য় সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আমার চাকরি হচ্ছেনা, কি করি?
– বাবার ওরশে ছাগল দে, চাকরি হয়ে যাবে।
 
(৪র্থ সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আমার বিয়ে হচ্ছে না। কি করি?
– বাবার ওরশে গরু দে, বিয়ে হবে।
 
(১ মাস পর…)
– খাদেম আব্বা, এই নেন মিষ্টি! নতুন বিয়ে করলাম।
– আরে পাগলা এখন দেখি আমারেই বাবা ডাকে! দেখলি বাবার মাজারে তোর দেয়া মোমবাতি, মুরগি, ছাগল, গরু- সব দান কাজে লেগেছে। বাবা কবর থেকে মুরিদদের সবকিছু জানে (নাউজুবিল্লাহ)।
– জ্বি না, বাবা কিছুই জানে না। নইলে মিছিমিছি পেট ব্যাথা আর বুক ব্যাথার কথা বললাম, তবু বাবা টের পেল না কেন?
– মিছমিছি হলে তুই মাজারে এসব কিছু দিলি কেন?
– আপনার মেয়েকে পটানোর জন্যে আব্বাজান! মোমবাতি, মুরগি, গরু, ছাগল মাজারে দিয়ে আপনার বাসায় আসা যাওয়া নিশ্চিৎ করেছি, আর আপনার মেয়েকে পটিয়ে বিয়ে করেছি।
– কি! তোর এত বড় সাহস, শেষে আমার মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে? তোর চাকরি পাওয়ার কথাও তো তাহলে মিথ্যা! তুই মোমবাতি কেনার টাকা পেলি কই?
– ইয়ে, মাজারের দানবাক্স থেকে টাকা মেরে দিয়ে…
– মুরগি কেনার টাকা?
– দানবাক্স থেকে…
– ছাগল কেনার টাকা?
– দানবাক্স থেকে…
– গরু কেনার টাকা?
– ঐ যে দানবাক্স থেকে…
– ই ই ই…. ধপাস!! (খাদেম মিয়া অজ্ঞান)
– খাদেম আব্বা, কি হলো? আজকে ’হুহ হাহ হুহ’ ড্যান্স দিলেন না যে!

পূর্বে প্রকাশিত।

ধর্ষণের কারণ ও প্রতিকার


ধর্ষণ সর্ম্পকে আলোচনা করার আগে আমাদেরকে জানা প্রয়োজন ধর্ষণ কাকে বলে?
যখন কোন ব্যক্তি কাউকে জোর পূর্বক বা তার সম্মতি ব্যতিত যৌন আচরণ বা যৌন মিলন করে তখন তাকে ধর্ষণ বলে।
এবার বাংলাদেশের ধর্ষণের হালচিত্র নিয়ে আলোচনা করা যাক।

ধর্ষণ বর্তমানে আমাদের সমাজে এক চরমতম সংকট ও মারাত্মক আতংক। যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়ে তাদের কাছে ধর্ষণ শব্দটা বেশী পরিচিত। এমনকি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও ধর্ষণ শব্দটির সাথে পরিচিত। বর্তমানে পত্রিকা হাতে নিলে প্রথমে নজরে পড়ে ধর্ষণের লোমহর্ষক কাহিনী। পত্রিকার পাতায় এমন কোন দিন বাদ নেই যে ধর্ষণের খবর আসে না। পত্রিকার খবর ছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে কত নারী যে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। দেশের কোথাও না কোথাও ২ বছরের কন্যা শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষিত হচ্ছে। ধর্ষণের নেশায় কিছু মানুষরূপী নরপশুরা এসব নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর। বর্তমানে এসব মানুষরূপী নরপশুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু কন্যা, বৃদ্ধা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে ধর্ষণের ফলে তাদের যৌনাঙ্গের গ্রন্থি ছিঁড়ে যায়। তখন রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এমতাবস্থায় অনেক শিশুর প্রাণহানী ঘটে। এর মধ্যে যারা ধর্ষিতা হয়ে বেঁচে থাকে তাদের জীবন হয়ে যায় অন্ধকার। তাদের বিয়ে নিয়ে দেখা দেয় পরিবার ও সমাজে চরম অনিশ্চয়তা। কিন্তু ধর্ষকের বিয়ে অনায়াসেই হয়ে যাচ্ছে। তাদের পোহাতে হয় না কোন লাঞ্ছনা। অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জা ঢাকতে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়। প্রতিদিন দেশের আনাচে কানাচে কতইনা অবলা নারী ধর্ষিত হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। অনেকে লোক লজ্জার ভয়ে ধর্ষণের কথা কারো কাছে প্রকাশ করে না। যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই ধর্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আগে ধর্ষণ হতো গোপনে আর এখন ধর্ষণ হয় প্রকাশ্যে খোলা মাঠে, চলন্ত বাসের মধ্যে। যেখানে একজন নারীকে হাত পা বেঁধে দল বেধে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হচ্ছে। যাকে গণধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ কারীরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, ধর্ষণের পর খুন করা হয় ধর্ষিতাকে। মা-বাবার সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, ছেলের সামনে মাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এসব করেও ধর্ষকরা শান্তি পাচ্ছে না। তারা এখন ধর্ষণের দৃশ্যকে ভিডিও করে ব্লু-ফিল্ম বানিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে। ইদানিং ইন্টানেটেও ধর্ষণের ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। যা জাহেলিয়াতের যুগকে হার মানাচ্ছে।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। এ দেশের ৯০% মানুষ মুসলমান। অথচ এ দেশেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ধর্ষণের সেঞ্চুরী হয়। তারপরও ধর্ষক বুক ফুলিয়ে রাস্তা ঘাটে হাঁটে। অথচ এ দেশের সরকার পারেনি তার বিচার করতে। এ যদি হয় দেশের অবস্থা তাহলে কিভাবে আমাদের মা বোনরা রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করবে? এ দেশের একজন নাগরিক হয়ে লজ্জায় রাস্তায় বের হতে ইচ্ছে করে না। যে দেশের সরকার ও প্রধান বিরোধী দলসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের অবস্থান সে দেশের নারী সরকার পারেনি ধর্ষণকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে। তাহলে কিভাবে এ দেশের অসহায় নারীরা ধর্ষণের হাত থেকে রেহায় পাবে?
এতক্ষণ ধর্ষণের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরলাম।

এবার আসা যাক নারী ধর্ষিত হাওয়ার কারণ কি? ধর্ষণের একাধিক কারণ আছে। এর মধ্যে তথ্যানুসন্ধান করে দেখা গেছে ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবার মূল কারণগুলো হলো, নগ্নতা, অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্খা, বেহায়াপনা, অবাধ যৌনাচার, রাস্তার পাশে দেয়ালে নগ্ন পোস্টার, ফুটপাতে অশ্লীল ছবি সম্বলিত যৌন উত্তেজক অবৈধ বইয়ের রমরমা ব্যবসা, অশ্লীল পত্রপত্রিকা, অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন, ব্লু-ফিল্ম, বাংলা চলচ্চিত্রে খলনায়ক কর্তৃক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের দৃশ্যের মাধ্যমে সমাজে রাস্তা ঘাটে বাস্তবে ধর্ষণ করার উৎসাহ যোগান, ইন্টারনেটে অশ্লীল সাইটগুলো উম্মুক্ত করে দেয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, টুয়েনটি প্লাস চ্যানেলে নীল ছবি প্রদর্শন ইত্যাদি কারণে আজ যুবসমাজের মধ্যে দিন দিন ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ষণের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অভিভাকদের উদাসীনতা।

পরিশেষে বলতে চাই, ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে কঠোর আইন প্রয়োগ করে ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। আর সমাজ থেকে নগ্নতা, বেহায়াপনা দূর করতে হবে। ব্লুু-ফিল্ম দেখানো নিষিদ্ধ করতে হবে। অশ্লীল পত্রপত্রিকা ও বইয়ের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। ছেলে-মেয়েদেরকে যথাসময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। উপরোক্ত লক্ষণগুলো দূর করতে পারলে আশা করা যায় কিছুটা হলেও সমাজ থেকে ধর্ষণ প্রবণতা কমবে। তা না হলে কস্মিনকালেও ধর্ষণ প্রবণতা রোধ করা যাবে না।

(আমার লেখা কপি পেস্ট করে নিজের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা পত্রিকায় প্রকাশ করা নিষেধ।)

যৌনতার পরিসর

নরনারীর যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলাপ আলোচনার চর্চার পরিসরটিই আমাদের সমাজে আজও গড়ে ওঠেনি। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরেই এই বিষয়টিকে আমরা সঙ্গপনে বহুজনের আড়ালে নিভৃত নিরালায় গুপ্ত রাখতেই অধিকতর স্বচ্ছন্দ। আর সেই নিভৃত গঙ্ডীর বাইরে বেড়িয়ে এড়লেই গেল গেল রবে আমরা কোলাহল করি সমাজ রসাতলে গেল বলে। কিন্তু কেন এই লুকোচুরি মানসিকতা? কেন এইভাবে অনিবার্য একটি প্রবৃত্তিকে সব কিছু থেকে আড়াল করতে হবে? শুধু তো অনিবার্যই নয়, বিশ্ব জগতের মূল চালিকা শক্তিইতো যৌন উদ্দীপনা। যেটা না থাকলেই সৃষ্টি হয়ে যেতো মরূভুমি। সেটা জেনেও জীবনের মূল বিষয়টিকেই সব কিছুর তলায় চাপা দিয়ে আড়াল করার এই মন মানসিকতাই কি সভ্যতার মূল আভিশাপ?

আধুনিক সভ্যতাকে বুঝতে হবে, যৌন প্রবৃত্তিকে যত বেশি করে দিনের আলো থেকে দূরে লুকিয়ে রাখা যায় তত বেশি করে একটি সুন্দর প্রবৃত্তি অসুন্দরের অভিমুখে বদলে যেতে থাকে। এখন আমাদের দেখতে হবে সেই অমঙ্গল থেকে আমরা নরনারীর যৌনতাকে রক্ষা করবো কি করে। আসলে নারী পুরুষের যৌনতাকে আমরা যখনই শুধু মাত্র সন্তান উৎপাদনের পদ্ধতি হিসাবে দেখি, তখনই বিষয়টি নিতান্তই জৈবিক একটি প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত হয়ে যায় শুধু। যে প্রক্রিয়া সকল জীবজগতের মূল বৈশিষ্ট। কিন্তু সেই মূল বৈশিষ্ট মানুষের ক্ষেত্রে এসে নতুন একটি পরিসর পেয়ে যায়। যে পরিসর জীবজগতের অন্যান্য প্রজাতির ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না কোন ভাবেই। যৌনতা যখন কেবলই সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়া, তখন যৌন সংসর্গের আগে পরে পরস্পর বিপরীত লিঙ্গের দুটি সত্ত্বা যে যেখানে যেমন ছিল, সেখানেই রয়ে যায়। তাদের মধ্যে সত্ত্বাগত কোন মিলনই সম্ভব হয় না। দুঃখের বিষয়, অধিকাংশ দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই একই সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। যেখানে রতিক্রিয়ার আগে পরেও যে যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে যায় সে। ঘটে না কোন সত্ত্বাগত মিলন। নিতান্তই জৈবিক একটি প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে নিয়মিত যৌন সংসর্গ।

আর এই ঘটনা সম্ভব হয় তখনই যখন যৌনতা কেবল শারীরীক একটি বাহ্যিক প্রক্রিয়ার নামান্তর। যার মূল উদ্দেশ্যই সন্তান উৎপাদন। জীবজগতে মানুষের বিবর্তন ঘটেছে সবচেয়ে পরে। আগের সকল পর্ব থেকে সকল দিক থেকেই এই বিবর্তন অভিনব সন্দেহ নাই। সেই বিবর্তনের প্রায় প্রতিটি ধারাতেই জীব জগতের অন্যান্য সকল প্রজাতির থেকেই মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে গিয়েছে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য। আর সেইটা হলো মানুষের অনুভব শক্তি। যা থেকে জন্ম নেয় উপলব্ধির দিগন্ত। যে দিগন্ত জন্ম দেয় বিশ্লেষণী শক্তির। আর এইখানেই প্রকৃতিতে মানুষই অভিনব। অনেকেই বলতে পারেন, অবশ্যই। আর ঠিক সেই কারণেই তো জীবজগতের সকল প্রজাতির ক্ষেত্রে যৌনতা দিনের আলোর মতো খোলামোলা হলেও মানুষের বেলায় তাকে নিভৃত নিরালায় একান্ত অনুভবে পেতে হয়। আর ঠিক সেই কারণেই যৌনতার চর্চাটি জ্ঞান বিজ্ঞান সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার মতো প্রকাশ্যে সংঘঠিত হওয়ার নয়। এইখানেই মানুষের বৈশিষ্ট। যা তাকে জীবজগতের সকল প্রজাতি থেকে উন্নত করে তুলেছে।

না বিষয়টি আবার ঠিক এইরকম একরৈখিকও নয়। নারী পুরুষের একান্ত ব্যক্তিগত রতিক্রিয়ার নিভৃত নিরালা নির্জন বাসরের প্রয়োজন নিয়ে বিতর্ক নেই। বিতর্ক আমাদের চিন্তা চেতনায় মন মননে জীবনের উদযাপনে যৌনতা নিয়ে যে রাখঢাক আড়াল অবডাল চাপা স্বরে আকারে ইঙ্গিতে ইশারার আয়োজন, সেইটির উপযোগিতা নিয়েই। যে বিষয়টি এমনই স্বতঃসিদ্ধ যে, সেটিকে এড়িয়ে চলার মানেই মরুভুমির চর্চা করা; সেই বিষয়টি নিয়েই এমন একটা ভাব করা যেন ওটিই সভ্যতার অন্তরায়। ওটিকে আড়ালে লুকিয়ে রাখলেই সমাজ সংসারের একমাত্র মঙ্গল।

বস্তুত নরনারীর যৌনতা নিয়ে চর্চার পরিসরটি যত বদ্ধ থাকবে ততই পারস্পরিক সম্পর্কের রসায়নটি দূর্বল হয়ে ওঠে। সেটাই স্বাভাবিক। যৌনতা চর্চার অভাবেই যৌন মিলনের মাধুর্য্য থেকে বঞ্চিত হয় অধিকাংশ মানুষ। একটি সম্পূর্ণ সত্ত্বাগত মিলন প্রক্রিয়া পর্যবসিত হয় শারীরীক মিলনে। এই যে শরীর সর্বস্বতা, এইখানেই মানুষ তার নিজস্ব বৈশিষ্ট হারিয় ফেলে নিতান্তই জৈবিক হয়ে ওঠে। আর সেইটা হয় যৌনতার সঠিক চর্চার পরিসরটিকে অবরুদ্ধ রাখার জন্যেই।

সেক্স ইন রিলেশনঃ মানসিকতার চরম অধ:পতন

ইদানিং যা শুনছি আর দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে, “সেক্স ইন রিলেশন” ব্যপারটা বেশ কমন হয়ে গেছে। এমনকি আমাদের তরুন সমাজের অনেকেই ব্যপারটাকে খুব স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছে, যেন রিলেশনে সেক্স হওয়াটাই কমন! মেয়েরাও সেসব ছেলেদের পেছনেই ঘুরছে যাদের টার্গেট হলো- খেয়ে ছেড়ে দেয়া। একদল মজা লুটছে, আরেকদল মজা নিচ্ছে।

ব্যপারটা ঘটে যাওয়ার পর, কমন ডায়ালগ হচ্ছে- “মানুষই তো ভুল করে”। ওয়েল, এটা মানতে আমার কোন দ্বিধা নেই যে মানুষ ভুল করে, এবং তওবা করে পবিত্র হওয়া যায়। আমার মূল কনসার্ন হলো- ভুল করা এক জিনিস, আর সেক্সের মত জঘণ্য কাজকে অপরাধ মনে না করে “রিলেশনে এরকম হতেই পারে”- এই মানসিকতা ধারন করাটা বিপরীত জিনিস। যখন স্ক্যান্ডাল বের হয় বা ব্রেকআপ হয়, তখনই কেন মনে হয় যে আপনি ভুল করেছেন! এর আগে বহুবার সেক্স করার পরও, কেন আপনার মনে অনুতাপ হলো না? কেন মনে হলো না যে, আপনি জঘণ্যতম পাপ করছেন!

মেজরিটি পার্সেন্ট তরুনরা যেকোন উপায়ে তার গার্লফ্রেন্ডকে ভোগ করতে চায়, ব্যপারটা ইদানিং অনেকটা প্রি-প্ল্যানড হয়ে গেছে। মেয়েরাও যেন নিজেকে বিলিয়ে দেবার অসুস্থ প্রতিযোগীতায় নেমেছে, তারা তাদের মাইন্ড সেটাপ করেই নিয়েছেঃ There is no difference between boyfriend and husband. তো হাজব্যান্ডের সাথে যা করা যায়, বয় ফ্রেন্ডের সাথেও তাই করা যায়!

একটা কথা বলি, ভুল করে থাকলে সেটা এখনই তওবা করে শুধরে ফেলুন। কিন্তু, রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের মত “রিলেশনে সেক্স হতেই পারে” বা “খেয়ে ছেড়ে দেবো” এই মানসিকতা পোষণ করে যেনায় লিপ্ত থাকবেন না। যে মেয়েটাকে আপনি খেয়ে ছেড়ে দিবেন, সে হয়তো কারো না কারো বোন; ঠিক একইভাবে আরেকটি ছেলেও যাকে খেয়ে ছেড়ে দিবে, সে হয়তো আপনার নিজেরই বোন! ইয়েস, মাইন্ড ইট!

———–
ফেসবুকে আমি।

কিছু মােটিভেশনাল কথা

*👉“ আমি ব্যর্থতা কে মেনে নিতে পারি কিন্তু আমি চেষ্টা না করাকে মেনে নিতে পারিনা॥* ” –—মাইকেল জর্ডান।

*👉“ যে নিজেকে অক্ষম ভাবে, তাকে কেউ সাহায্য করতে পারে না॥* ” –—জন এন্ডারসন।

*👉“ আমি বলবনা আমি ১০০০ বার হেরেছি, আমি বলবো যে আমি হারার ১০০০ টি কারণ বের করেছি॥ ”*
—টমাস আলভা এডিসন।

*👉সফলতা সুখের চাবিকাঠি নয় বরং সুখ হল সফলতার চাবিকাঠি। আপনার কাজকে যদি আপনি মনে প্রানে ভালবাসতে পারেন অর্থাৎ যদি আপনি নিজের কাজ নিয়ে সুখী হন তবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন॥* __মাইকেল জর্ডান

*👉সংগ্রহে…………*
*👉হাফেজ মাসউদ*

*🌹Thank You🌹*

কাজের প্রতি ভালবাসা

পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকলে হলে ছোট হোক অথবা বড় হোক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার কাজ করে থাকি। চাই সেটি অফিস হোক অথবা আদালত অথবা নিজের ব্যক্তি জীবনের নানান রকম কাজ। কিন্তু মাঝে মধ্যেই আমাদেরকে অলসতা জড়িতে ধরে। ভুলে যাচ্ছি কাজের প্রতি ভালবাসা। ভুলে যাচ্ছি নিজের জীবন প্রতিষ্ঠার সঠিক লক্ষ্য।

কিন্তু, তা হবে কেন?

প্রত্যেকটি কাজকে যদি আমরা ছোট মনে না করে ভালবাসা দিয়ে আলিঙ্গন করতে পারি। তবেই তো আমরা কামিয়াবি।

………………..
হাফেজ মাসউদ

ভারতীয় হিন্দী সিরিয়ালঃ ধ্বংসের পথে বাংলার সমাজ-সংস্কৃতি

ভারতীয় হিন্দি সিরিয়াল বর্তমানে বাংলাদেশে একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। হিন্দি সিরিয়ালের শিক্ষনীয় কোন বিষয় না থাকলেও এর দর্শক দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাবারের মতো টেনে-হিঁচড়ে এসব সিরিয়াল এমনভাবে লম্বা করা হয় যে, এর শেষ পর্ব কবে প্রচারিত হবে তা কেউ যেমন জানে না তেমনি আন্দাজও করতে পারে না।

শুরুর কথাঃ গণমাধ্যম হিসেবে আমাদের দেশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। তখন বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিল। শুরু থেকে অদ্যাবধি এ চ্যানেলটি এককভাবে সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। বিধায় এই চ্যানেলটি জনগণকে পরিপূর্ণ বিনোদন দিতে পারেনি। আর তাই জনগণও বিনোদনের অন্য বিকল্প উপায় না পেয়ে হিন্দি সিরিয়ালের দিকে ঝুঁকতে থাকে। ১৯৯৬ সালের দিকে বাংলাদেশে হিন্দি চ্যানেল বলতে শুধু সনি আর জিটিভি কে বুঝাতো। বর্তমানে ত্রিশোর্ধ ভারতীয় হিন্দি ও বাংলা চ্যানেল এবং ভারত কর্তৃক সম্প্রচার সত্বাধিকারপ্রাপ্ত কিছু ক্রীড়া, প্রাণীজগৎ, সৌরজগৎ ও ধর্ম বিষয়ক চ্যানেল সহ প্রায় শতাধিক চ্যানেলে অনুষ্ঠান সার্বক্ষণিক সম্প্রচারিত হচ্ছে। আমাদের দেশে হিন্দি সিরিয়ালের যাত্রা শুরু হয় মূলত স্টার প্লাসে সম্প্রচারিত ‘সাসভি কাভি বাহু থি’ সিরিয়ালের মাধ্যমে। সিরিয়ালটি অল্পদিনেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর ‘কাহানী ঘার ঘার কি’, ‘কাসেটি জিন্দেগী কি’, ‘শশুড়াল গেন্দা ফুল’, রিসতা ক্যা কেহরাহে, সাথ নিভানা সাথিয়া, কুম কুম ইত্যাদি সিরিয়ালগুলো দেশের বিশেষ করে মহিলাদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মহিলাদের নিকট এসব হিন্দি সিরিয়াল জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ হলো, গৃহবধূদের সময় কাটানোর একটি চমৎকার উপায়। সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হয়ে একটানা রাত বারটা পযর্ন্ত সম্প্রচার করা হয়। আবার পরের দিনেই সারাদিন ব্যাপি তার পুনঃপ্রচার করা হয়। ফলে মহিলাদের সময়গুলো খুব স্বচ্ছন্দেই কেটে যায়। কিন্তু নির্মম সত্যি হলো এসব হিন্দি সিরিয়াল মানুষের স্বাভাবিক জীবনে প্রচুর প্রভাব ফেলছে। ইতিবাচক দিকটির চেয়ে নেতিবাচক দিকটি ফুটে উঠছে সবচেয়ে বেশি।

হিন্দি সিরিয়ালের খারাপ দিকগুলোঃ হিন্দি সিরিয়ালের মধ্যে যে সব ম্যাসেজ বা বার্তা থাকে তা একটি পরিবার তথা সমাজ কে ধ্বংস করে দিতে যথেষ্ট। হিন্দি সিরিয়াল দেখার ফলে সমাজ থেকে যেমন সামাজিক মূল্যবোধ উঠে যাচ্ছে তেমনি সামাজিক, মানসিক সবক্ষেত্রেই দেখা দিচ্ছে অস্থিরতা। অনৈতিক ও ঘৃণ্য অশ্লীলতা ছাড়া শিক্ষণীয় তেমন কিছুই পাওয়া যায় না বলেই এমনটি হচ্ছে। ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালে যে সব দৃশ্য সচরাচর দেখতে পাওয়া তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-অসম প্রেম, স্বামী-স্ত্রীর পরকীয়া, পারিবারিক ভাঙ্গন, বহু বিবাহ, বউ-শ্বাশুড়ীর ঝগড়া, সম্পত্তির কারণে ভাই-ভাই ঝগড়া, স্ত্রীর কূটনৈতিক চাল, ভুল বোঝাবুঝি, হিংসা, সন্দেহ, অশ্লীলতা, আত্মীয়দের ছোট করা, অন্যকে বিপদে ফেলা, চুরি শিক্ষা, অপরাধ শিক্ষা এসব বিষয়ই হিন্দি সিরিয়ালের মূল বিষয়বস্তু।

ছেলে-মেয়েদের ওপর হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাবঃ কোন কোন পরিবারে দেখা যায় মা-বাবার সাথে পরিবারের ছোট শিশুটিও হিন্দি সিরিয়াল দেখতে টিভির সামনে বসে গেছে। এর ফলে বাবা-মারা জানতেই পারে না যে শিশুটির মানসিক বিকৃতি ঘটছে। মাঝে মধ্যে এমনও দেখা যায় যে, এসব পরিবারের কর্তারা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর পর্যাপ্ত সময় না পেলেও তাদের কে নিয়েই হিন্দি সিরিয়াল দেখতে বসে যান। ফলে ছোটবেলা থেকেই এসব শিশু পরিচিত হচ্ছে অপসংষ্কৃতির সাথে। অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের পড়ার খবরটি ঠিক মতো না জানলেও হিন্দি সিরিয়ালের চরিত্র ও সময়সূচী ঠিকই জানে। এভাবে মা-বাবারাই মূলত তাদের অজান্তেই আদরের বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের পথে বড় বাঁধা তৈরি করে চলেছেন দিনের পর দিন। শিশুর অকালে নষ্ট হওয়ার জন্য এসমস্ত রুচিহীন ও নির্বোধ বাবা-মায়েরাই দায়ী হবেন।

সমাজ ও নিজস্ব সংষ্কৃতির উপর প্রভাবঃ বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচারিত হওয়া অনুষ্ঠানমালার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বিভিন্ন নামে প্রচার হওয়া টিভি সিরিয়ালগুলো। এসব সিরিয়ালের দাপটে বাংলার নিজস্ব সংষ্কৃতি ও ঐতিহ্য আজ হুমকীর সম্মুখীন। একটা সময় ছিল যখন সন্ধ্যা নামলেই পরিবার-পরিজন সবাই একত্রে বসে গল্প-গুজব করে সময় কাটাতো। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। সন্ধ্যার পরেই হিন্দি সিরিয়াল দেখে মানুষ শিখছে কিভাবে শাশুড়ী তার বউকে কিংবা বউ তার শাশুড়ী শায়েস্তা করতে পারে, কেমন করে অন্য পরিবারের ক্ষতি করা যায় তার ফন্দি আঁটে। এমনকি সমাজে পরকীয়ার মতো ঘটনাও বেড়ে চলছে রুচিহীন এই হিন্দি সিরিয়ালের কারণে। হিন্দি সিরিয়ালগুলোতে দেখানো হয় জৌলুসপূর্ণা পরিবেশ, চাকচিক্যময় জীবন ব্যবস্থা, দামী গাড়ী, বাড়ী, শাড়ী গয়না যা আমাদের দেশের তরুণদেরকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে। আমাদের ধর্ম, মূল্যবোধ, পরিবার, সমাজ এসব সর্মাথন না করলেও আমরা তা দেখছি। আমরা আমাদের নিজস্ব সংষ্কৃতি পায়ে দলিত করে ভারতীয় সংষ্কৃতির ওপর আজ দাঁড়িয়ে আছি। হিন্দি সিরিয়ালের ভয়াল থাবায় আমাদের সমাজ-সংষ্কৃতি আজ ক্ষত-বিক্ষত। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও এর প্রভাবে আজকাল হিন্দিতে কথা বলছে। ঈদ-বা পূজার অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা তাদের ওপর ধীরে ধীরে যেন নির্ভশীল হয়ে পড়তেছি। কেননা এখন ঈদ বা পূজা এলেই বাজারে বিভিন্ন হিন্দি সিরিয়ালের নামানুসারে কিংবা নায়িক/মডেলের নামানুসারে কাপড় কিনতে পাওয়া যায়। মাসাক্কালি, ঝিলিক, আশকারা, খুশি নামের পোশাকগুলো ঈদের সময় হলেই বাজার দখল করে নেয়। আকাশ ছোঁয়া এসব দামী পোশাকগুলো কিনতে বসন্ধুরা সিটিসহ গুলশান, বারিধারা, উত্তরার মতো অভিজাত পাড়ার দোকানগুলোয় ভীড় লেগে থাকে। আবার কিছু কিছু দোকানও ইদানিং হিন্দি সিরিয়ালের নামে নামকরণ করা হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

অথর্নৈতিক ক্ষতিঃ হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাবে আমরা সাংষ্কৃতিক ভাবে যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তেমনি অর্থনৈতিক ভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের দেশে ভারতের যে সব চ্যানেল সম্প্রচারিত হয় আমাদের কে সেগুলো পয়সা দিয়ে কিনে দেখতে হয়। এজন্য প্রতি বছর দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ভারতকে দিতে হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের দেশীয় কোন চ্যানেল চালুর অনুমতি দিচ্ছে না ভারত। বিপুল দর্শক চাহিদা থাকা সত্বেও পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠী আমাদের দেশ হতে সম্প্রচারিত টেলিভিশনের অনুষ্ঠানসমূহ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। আমরা তাদের হিন্দি সিরিয়াল দেখার পাশাপাশি তাদের পণ্যের সাথে পরিচিত হচ্ছি। এর ফলে তাদের পন্যের যেমন প্রচার ও প্রসার হচ্ছে আমাদের দেশের সেটা হচ্ছে না। নিজ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি করে কেন তাহলে আমরা হিন্দি চ্যানেল দেখতে যাব।

দায় এড়াতে পারে না দেশের মিডিয়াঃ হিন্দি সিরিয়ালের দর্শক প্রধানত আমাদের দেশের নিম্নবিত্ত বস্তিবাসী ও শ্রমিকশ্রেণী, পোশাক শ্রমিক, উগ্র মানসিকতা সম্পন্ন যুবসমাজ এবং একই মানসিকতার কিছু উচ্চবিত্ত। তাদের নিকট এসব সিরিয়াল ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে মূলত মিডিয়ার প্রচার। মিডিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে নিজ দেশের সংষ্কৃতি-সভ্যতা, কৃষ্টি ও নিজস্ব মূল্যবোধ প্রচারের মাধ্যমে তাদের দায়িত্বশীলতা জনতার সামনে ফুটিয়ে তোলা। কিন্তু সেই সৎ সাহস আজও আমাদের দেশের পত্রিকা অর্জন করতে পারেনি বলেই মনে হয়। প্রতিটা পত্রিকায় ‘বিনোদন’ বা ‘লাইফ স্টাইল’ নামে একটা আলাদা পাতা থাকে। যেখানে দেশের শিল্প ও সংষ্কৃতির সংবাদ পাওয়া যায়। কিন্তু এসব পত্রিকার বিনোদন পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে আধুনিকতার নামে মেয়েদের টপস্ আর জিন্স প্যান্ট, স্লিভলেস ড্রেস পরার ছবি, ছেলেদের চুল থেকে পা পর্যন্ত উদ্ভট সাজ। যা আমাদের সমাজ-সংষ্কৃতির সাথে যায় না। এসব পত্রিকার সম্পাদকেরা একবারও দেশের সংষ্কৃতির কথা ভাবেন না। ভাবেন শুধু নিজ পত্রিকার কাটতির কথা। কিছুদিন আগেই দেশের নামকরা একটা জাতীয় দৈনিকের বিনোদন পাতায় দেখলাম ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের সংবাদ। কখন, কোন চ্যানেলে প্রচারিত তার ছবি সহ সময়সূচী দেয়া হয়েছে। অথচ এই পত্রিকাগুলোকেই বলা হয় সমাজের দর্পণ। তারা যেভাবে সমাজকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরবে সেভাবে জনতা সেটা মনেপ্রাণে গেঁথে নিবে, বিশ্বাস করবে। তাই পত্রিকাগুলোর কাছে বিশেষ দাবী আপনারা হিন্দি সিরিয়ালের সংবাদ প্রচার না করে নিজ দেশের সংষ্কৃতি-সভ্যতা, কৃষ্টি ও নিজস্ব মূল্যবোধের সংবাদ বেশি করে প্রচার করুন।

হিন্দি সিরিয়াল বন্ধে আমাদের করণীয়ঃ আমাদের জীবন-যাপনের সাথে হিন্দি সিরিয়ালগুলোর মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। হিন্দি সিরিয়াল এমনই একটি বিনোদন মাধ্যম যেখান থেকে আপনি নতুন কিছু শিখতে পারবেন না। এই সিরিয়ালগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল্যবোধ পাল্টে দিচ্ছে, রুচির বিকৃতি ঘটাচ্ছে মানুষের। আজ আমরা আমাদের বাঙ্গালীয়ানা ভুলে গিয়ে লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করছি তাদের দেখে। ‘শাড়িতে বাংলার নারী’ এই কথা ভুলে গিয়ে শাড়ি পরার নতুন ধরন শিখছি তাদের দেখাদেখি। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার শাড়ী তো দূরে থাক টপস্ আর প্যান্ট পরেই রাস্তায় চলাচল করছে মেয়েরা। আমরা কেন পোশাক পরি তার সংজ্ঞাই হয়তো পরিবর্তন করে দিচ্ছে এই হিন্দি সিরিয়ালগুলো। বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা ঘরের ভিতর যেমন বন্দি হয়ে থাকতে চাই না তেমনি চাই না অপসংস্কৃতির দুর্গন্ধ আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়ুক। ভারতীয় চ্যানেল, সিনেমার অবাধ বিচরণ আমাদের দেশে। আর তাই ইচ্ছে করলেও এই অবাধ বিচরণ থামাতে পারবো না। আমাদের সবকিছু্র সানিদ্ধ্যে আসতে হয়। কিন্তু এখান থেকেই আমাদের বুদ্ধি-বিবেক আর শক্তি দিয়ে খারাপ সংষ্কতি বর্জন করতে হবে। আমরা বাঙ্গালী। আর বাঙ্গালীদের রয়েছে গর্ব করার মতো হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংষ্কতি। আমাদের সাহিত্য-সংষ্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। তাই এ সমৃদ্ধ সংষ্কৃতির চর্চা করলে, বাংলা নাটক, সিনেমা, যাত্রাপালা দেখলে নিঃসন্দেহে কমে আসবে হিন্দি সিরিয়াল দেখার প্রবণতা। হিন্দি সিরিয়ালের এই অপসংষ্কৃতি রোধ করতে সরকারকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি তরুণদেরকেও এই সংষ্কৃতির ওপর কুঠারাঘাত করতে হবে।

(নিবন্ধটি প্রিয়.কম এ ২৩ মার্চ ২০১৪তে প্রকাশিত হয়েছিল)

শুভেচ্ছা

শব্দনীড়ের সবাইকে সালাম এবং শুভেচ্ছা!
শব্দনীড়ে এবং কোন ব্লগে এই আমার প্রথম পদার্পন। আশা করি আপনাদের সাথে অবসরের সময়গুলি ভালই কাটবে।

উর্বর চিন্তার মানুষ

আমরা আসলে বরাবরই উর্বর মস্তিস্কমনা জাতি।
খেলতে ভালোবাসি মানুষকে নিয়ে।
খেলতে ভালোবাসি মানুষের তর্ক বিতর্ক নিয়ে
মানুষের চিন্তাভাবনা নিয়ে খেলতে ভালোবাসি
অন্যের সমালোচনা করতে ভালোবাসি
অন্যকে আঘাত করতে ভালোবাসি
অন্যের দুর্বলতাকে নিয়ে উপহাস করতে ভালোবাসি
আর ভালোবাসি নিজেকে।
কিন্তু নিজের পার্সোনালিটিকে ভালোবাসি না।
নিজের বিবেক বিবেচনাবোধকে ভালোবাসি না।
নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন করতে পছন্দ করিনা।
নিজের সমালোচনা শুনতে পচন্দ করিনা।
নিজের অযোগ্য ভাবনাগুলো কি তা নিয়ে
কেউ ভাবতে পারিনা।
অন্যের ময়লা নাড়াচাড়া করা আমাদের এএক অদ্ভুদ স্বভাব।
আমরা কি কখনো স্বাভাবিক হতে পারিনা ?
আমরা কি পারিনা নিজের মর্যাদাকে সম্মান করতে ?
আসলে আমরা সবই পারি পারিনা শুধু চিন্তা করতে
কেন আমার নিজের ব্যক্তিক্তভাবনাকে নিম্নগামী করি।
অথচ আমরা চাইলে সবই পারি পরিবর্তনের পরিবর্তন ঘটাতে।

মেকিং অ্যান্ড আনমেকিং অফ লাভ

522

লাভ অ্যান্ড ম্যারেজ, লাভ অ্যান্ড ম্যারেজ; দে গো টুগেদার, লাইক হর্স অ্যান্ড ক্যারেজ (They go together, like horse and carriage) …হর্স অ্যান্ড ক্যারেজ। অর্থ্যাৎ প্রেম আর বিয়ে চলে ঘোড়া এবং গাড়ির মতোই।… গানটি গেয়েছেন ফ্র্যান্ক সিনাট্টা।

সমসাময়িক সময়ে যেখানে কোনো কিছুই আর পবিত্র বা অলংঘণীয় ( Sacred ) গণ্য করা হয় না। সেখানে পরিবারের ধারণাটাও সেকেলে ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে তা বোঝাটা দুস্কর কিছু নয়। প্রেম- ভালবাসা মূলতঃ আবেগ, অনুভূতির বিষয়।

এ বিষয়টা বুঝতে কারো খুব অসুবিধার কথা নয়, যেসব শিশুরা এ দুনিয়ায় আসে ভালবাসা এবং পবিত্র কোনো বন্ধনের ভিত্তিতে, তাদের জন্য সম্ভাবনাটা বেশী। তাদের জীবন ও অস্তিত্বের বাস্তবতটা নিয়ে তারা ভাববে, বুঝবে এবং সম্মানের সঙ্গে দেখবে মমতা ও পবিত্রতার প্রেক্ষাপটেই। আর যাদের আগমন ভালবাসা ও বিয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্কছাড়াই নিছক যৌনতা বা কামনা- বাসনার নাগরদোলায় চড়ে, তাদের জীবন এবং অস্তিত্বের উপলব্ধি হবে অনুরূপ দৃষ্টিকোণ থেকে।

মার্ক টোয়েইন- এর তথাকথিত সেকেলে মনোভাবের পরিচয় মেলে তার উদ্ধৃতিতে: লাভ সিমস দি সুইফটেষ্ট, বাট ইট ইজ দি স্লোয়েষ্ট অফ অল গ্রোথস। নো ম্যান অর ওম্যান রিয়েলী নোজ হোয়াট পারফেক্ট লাভ ইজ, আনটিল দে হ্যাভ বিন ম্যারেড এ কোয়ার্টার অফ এ সেঞ্চুরী। ( আপাতদৃষ্টিতে ভালবাসা মনে হয় সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ভালবাসা সবচেয়ে ধীরে বাড়ে। কোনো পুরুষ অথবা নারী সিকি শতাব্দী দাম্পত্য জীবন না কাটানো পর্যন্ত জানেনই না, সত্যিকারের ভালবাসা কি ? – মার্ক টোয়েইনস নোট বুক )।

মেকিং লাভ : অর্থ পরিভাষার রূপান্তর।

সামগ্রীকভাবে বিয়ের ধারণার ক্ষেত্রে র‌্যাডিকাল পরিবর্তন এসেছে। এখনো বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের কাছে, বিয়ে অর্থ হচ্ছে একজন পুরুষ ও নারীর স্বামী- স্ত্রী হিসেবে মিলন। কিছু কিছু পুরোনো ডিকশনারীতে ( যেমন The Advanced Learner’s Dictionary of Current English- এর ১৯৭৩ সংস্করণে ) উপরিল্লিখিত একটি অর্থই রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণ বিয়ের অর্থ যে সবার কাছে এক ও অভিন্ন তা আর নাও হতে পারে। সেদিন হয়তো বেশী দূরে নয় যখন কোনো বিয়ের কথা শুনলে অথবা নিমন্ত্রণ পেলে বিনয়ের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করতে হবে, এটা কি ভিন্ন লিঙ্গ ( Hetero-sex ) বিয়ে না, অভিন্ন লিঙ্গ ( Same Sex ) বিয়ে।

কে জানে ভবিষ্যতে হয়তো মানুষ ও পশু – পাখিরও বিয়ে হবে এবং তার আইনানুগ ও সামাজিক স্বীকৃতির দাবি উঠবে। বস্তুত বিবর্তন তত্ব অনুযায়ী আমাদের লেজ বিশিষ্ট পূর্ব পুরুষ আত্মীয়েরা এখনো আছে এবং গাছ থেকে গাছে সদানন্দে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। নৈতিকভাবে ঠিক বা ভুল যেহেতু আপেক্ষিক হয়ে যাচ্ছে, আমাদের প্রত্যেকেরই স্বাধীনতা রয়েছে আপন আপন সজ্ঞা বেছে বা খুঁজে নেয়ার।

বর্তমান যুগে সঙ্গমের একটি ইংরেজী হচ্ছে মেক লাভ ( Make Love )। অতীতে প্রেম ভালবাসা হতো বা ঘটতো ( Love used to happen )। মানুষ প্রেম ভালবাসা বানাতো না, ( Make Love ) যেমন করে গাড়ি, বাড়ি অথবা সম্পদ বানানো হয়। এক শতাব্দীরও বেশী আগে মেক লাভ বাক্যাংশের ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু তার সঙ্গে যৌনতার সমার্থক হিসাবে নয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ শেক্সপিয়ার ম্যাকবেথ- এ খুনিদের বলেন, অ্যান্ড দেন্স ইট ইজ দ্যাট আই টু ইয়োর অ্যাসিস্টানস, ডু আই মেক লাভ। এই মেক লাভ বাক্যাংশ আরো অনেক প্রখ্যাত লেখক ব্যবহার করেছেন জন ড্রাইডেন, হেনরী ফিল্ডিং, জেইন অষ্টেন, টমাস হার্ডি, হেনরী জেমস, ডি এইচ লরেন্স প্রমুখ।

তবে বর্তমান যুগের আগে এই বাক্যাংশটা মোটামুটি বোঝাতো অনেকটা এই রকম: কারো বাসনার ঘোষনা বা প্রকাশ। তাই সমারসেট মম- এর অফ হিউম্যান বন্ডেজ উপন্যাসে এই সংলাপ দেখা যায়, ডিড হি মেক লাভ টু ইউ ? হি আস্কড। দি ওয়ার্ডস সিমড টু ষ্টিক ফ্যানিলি ইন হিজ থ্রোট, বাট হি আস্কড দেম নেভারদিলেস। হি লাইকড মিস উইল্কিনসন ভেরী মাচ, অ্যান্ড ওয়াজ থৃল্ড বাই হার কনভারসেশন, বাট কুড নট ইমাজিন এনি ওয়ান মেকিং লাভ টু হার।
হোয়াট এ কোয়েশ্চেন। শি ক্রাইড। পুওর গাই, হি মেড লাভ টু এভরি ওম্যান হি মেট। ইট ওয়াজ এ হ্যাবিট দ্যাট হি কুড নট ব্রেক হিমসেলফ অফ।
যারা অবহিত নন, এক সময় এ বাক্যাংশের ভিন্ন অর্থ ছিলো যা, তাদের জন্য এ ধরণের সংলাপ অনভিপ্রেত রস আস্বাদনের খোরাক হতে পারে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা ক্রমাগতভাবেই এগিয়ে চলেছি রশি’র ( Corded ) জগৎ থেকে রশিবিহীন ( Cordless ) জগতে। আরো একটি অর্থে আমরা কর্ডলেস হয়ে যাচ্ছি। আমরা সবাই জানি নবজাতকেরা জন্মলগ্নে নাড়ির মাধ্যমে মাতৃগর্ভের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই কর্ড কেটে ছিন্ন করার মাধ্যমেই মানুষ হিসাবে নবজাতকের যাত্রার শুরু হয়। এই কর্ড ছিন্ন করার অর্থ এই নয়, আবেগ অথবা সামাজিক দিক থেকে সেই কর্ডকে আমরা ভুলে যাই যা কয়েকদিনের মধ্যে শুকিয়ে গিয়ে রেখে যায় শুধু সংযোগের চিহ্ন। এটা এক ধরণের মিষ্টিক, স্বর্গীয় বা মরমী সংযোগ যা নিছক দৈহিক নয়। এক বিশেষ বন্ধনের পরিচায়ক।

পরিবার ও ঘর হওয়ার কথা নিরাপত্তা এবং আরামের আশ্রয়। বিশেষ করে মায়ের কোল। কিন্তু আধুনিক কর্ডলেস সমাজে তাতেও দূর্বলতা এসেছে। অবশ্যই এ প্রসঙ্গে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই যেসব প্রচলিত।

আমরা ভালবাসা বানাচ্ছি ( Making Love )। যেমন আরো কতো কিছু আমরা বানাই। কার, সোফা অথবা ডিসপোজাল ডায়পার। আমরা এখন ভালবাসা বানাই ( মেক লাভ )। বিষ্মিত হওয়ার কি আছে যে, নিছক অনৈতিকতার পরিবর্তে ভালবাসা যেখানে বিয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলো, কর্ডলেস সমাজের প্রভাবে ভালবাসা এখন হাওয়ার সঙ্গে গায়েব। ( Gone With the Wind- গন উইথ দি উইন্ড )।

মনে হয়, মেকিং লাভ আধুনিক অর্থে তার আনমেকিংয়ের পথ প্রশস্ত করে চলেছে।

522a
বিণীত কৃতজ্ঞতায়ঃ কায়সার আহমেদ। আমাদের রাজশাহী ডট কম।