ট্যাগ আর্কাইভঃ ইসিয়াকের কবিতা

বায়না

তিড়িং বিড়িং খোকন নাচে,
হরেক তার বায়না।
দিতে হবে কিনে তাকে,
জাদুকরী আয়না।

ভেবে ভেবে মা যে তার,
হলো কুপোকাৎ।
বাবা বলে দেবো দেবো,
পোহাক আগে রাত।

রাত নিশিথে খোকন সোনা,
ঘুমে স্বপ্ন দেখে।
তেপান্তরের মাঠে এক
বক রাক্ষসী থাকে।

সকাল হতেই বায়না জুড়ে,
মা কিনে দাও ঘোড়া।
রাজকুমারী বন্দী এখন,
নেইকো সাহারা।

মাতো পড়লো দারুণ ভাবনায়,
ভেবে হলো সারা।
খোকার আজব বায়না নিয়ে
বেজায় দিশাহারা।

লাজবতী

গভীর রাতে জলপরীরা উড়ছে
আকাশ জুড়ে।
জোছনারাশি খেলা করে,
তাদের চারিধারে।

ফুলকলিদের ফোটার সুখে,
খুকু গাইছে গান।
পাখপাখালি সেই সুরেতে,
ধরলো ঐক্যতান।

নদীর কুলে ঢেউ খেলে যায়,
কুলে ভেড়ে তরী।
রাজার কুমার বসে তাতে,
দেখতে মানায় ভারি।

কি চায় কুমার কে জানে হায়!
কিসের তরে প্রবেশ।
ছোট্ট খুকু গান থামিয়ে,
চিন্তিত হলো বেশ।

রাজকুমার বলল হেসে,
”ভয় কেন গো আর।
ছন্দ সুরে বেশতো ভালো,
লাগছিলো গান তোমার”।

খুকুমণি তাই না শুনে,
পেল ভীষণ লাজ।
ছুট লাগালো বনের পথে,
বলল,”আছে কাজ”।

এই কথাতে এলো ছুটে,
জলপরীরা সব।
”লাজ হয়েছে, লাজ হয়েছে”
জুড়লো কলরব।

বিয়ের আসর

চড়ুই পাখি বউ সেজেছে,
ঘোমটা দিলো মাথায়।
টুনটুনিটা তাই না দেখে
নাচছে পাতায় পাতায়।

শ্যামা বলে, গয়না আনো ।
ময়না বলে, বর এলো কই?
শালিক বলে, পোলাও খাবো,
সাথে চাই টক মিঠা দই ।

প্যাঁচা বলে চল রে ভাই,
এই আনন্দে গান সবে গাই।
ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে,
সুরে সুরে সুর মিলাই ।

পাঁজি কাকটা দস্যি ভীষণ,
প্যাঁচারে দিলো এক খোঁচা।
বিয়ের আসর পণ্ড হলো,
দায় হলো মান নিয়ে বাঁচা ।

পবিত্র চুম্বণ ও জলোচ্ছাস

তব ধোপদস্ত চুম্বনে,
মদীয় অম্ভোধি পয়স্বিনীতে
জলোচ্ছাস বয়ে গেল অতর্কিতে।

মেঘহীন বর্ষণে ভিজে গেল
মাঠ প্রান্তর।
নতুন জলপ্লাবনে
অচিরেই জেগে উঠলো সেথায়
ঘাস, দূর্বা ও অন্যান্য প্রাণের অনুরণন।

এভাবে তুমি তোমার জাদুকরী
ক্ষমতা প্রয়োগ করো
অকসর প্রিয়তমা ।

আমি চিরকাল তোমার প্রেমে,
নিষিক্ত হয়ে বিকশিত হতে চাই।
অনুভবে ,আহ্লাদে, ভালোবাসাতে।

বন্ধন

যদি কোনদিন তুমি আমায় ভুলে
অচেনা আলোর পথ ধরে
একলা হতে চাও।
দেখবে সেদিন তুমি,
সব পাতা ঝরে গেছে গাছে গাছে।
পাখি সব আর গাইছে না গান।
চাঁদ ভুলে গেছে জোছনা বিলাতে
সব ফুল শুকিয়ে গেছে নিষিক্ত হবার আগেই ।
যেতে চাইলে তুমি যেতে পারো
দুর বহু দূরে!
তবু আমি রয়ে যাবো তোমার অবসরে।
দেখো রয়ে যাবে সব স্মৃতি সব গান তোমার আমার।
দেখবে আমি রয়ে গেছি ঠিকঠাক
তোমার পাশে পাশে।
তুমি চা্ইলেও আর পারবেনা একলা হতে।
পারবেনা আমায় ভুলতে!
আমি আমারে দেব না তোমায় কিছুতেই ভুলিতে।

প্রণয়লীলা

প্রিয়তমা, তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?

রতিক্লান্ত তোমায় খানিকটা ক্ষয়িত দেখালেও,
ম্রিয়মাণ মোটেও নও।
তুমি আনমনে বাঁকা ঠোঁটে
একটুকরো হাসি ধরে রেখেছো পরম নিশ্চিন্তে।

চরম সুখের রেশ হিসেবে -তুমি ঘুমাও প্রিয়তমা,
সব সুখ বুকে নিয়ে ।
আমি শুধু চেয়ে দেখি তোমার প্রিয় মুখ।

নিকৃতি

তোমার ঠোঁটের ফাকে
তিনটা কথার ছবি আঁকতেই।
তুমি আঁতকে উঠে
আমায় ঠেলে ফেলে বললে,
আমি ধর্ষিতা হতে চাইনা ।
আমি আহত চোখে বললাম
ভালোবাসা ও নিগ্রহের মধ্যে
পার্থক্য বলতে তুমি কি বোঝ?
তুমি বললে ,আজকাল পুরুষেরা ভালোবাসেনা।
ভালোবাসা আদায় করে নেয়।
সুযোগ নেয় শারীরিক প্রয়োজনে।
বিভিন্ন ঢংয়ে,বিভিন্ন মোড়কে।
জেনে রাখো প্রেমহীন ভালোবাসাই ক্ষুদ্রতা।

ভালো থেকো প্রিয়তমা

বদলে গেছে সব।
এই শহর রাস্তা ,পথ, ঘাট, বাড়ি!
বদলে গেছে তোমার বাড়ির রাস্তা ও ঘর।
বদলে গেছে তোমার বন্ধু ,প্রেমিক সব।
শুধু বদলাতে পারিনি আমি নিজেকে।
আমি সেই একই আছি!
তুমি আমার নাম দিয়েছিলে বিনে পয়সার কবি,
বলেছিলে আমি নাকি কথার ফুলঝুরি!
কষ্ট পেয়েছিলাম তবু তোমার প্রতি ভালোবাসা বদলায়নি।
কষ্টপেয়েছিলাম তবু নিজেকে বদলায়নি।
তবে এখনো আছে এই পৃথিবীতে একই আকাশ।
এখনো আমি কবিতা লিখি।
এখনো আমি বিনে পয়সার কবি,
এখনো নির্ঘুম কাটে আমার বিরহ রজনী।
আমি নিজেকে বদলাতে পারিনি।
বদলেছে সাইনবোর্ড ,তার পাশে থাকা গাছ।
বদলেছে নিয়নবাতি তার নিচে বসে থাকা ভিখারি।।
বদলেছে গাড়ির মডেল,
বদলেছে চা কফি,কাপ, প্লেট ।
শুধু,
বদলায়নি তোমাকে নিয়ে আমার স্বপ্নগুলো বা ধারণা সমূহ।
তুমি আমার কাছে আছো একই রকম একটুও বদলাওনি।
তুমি ভালো থেকো।

অপেক্ষা এবং প্রত্যাশা

একদিন ভেবেছিলাম,
সব ঠিক হয়ে যাবে।
চলতে পথে শুধরে নেবো যত ভুল আমার।
তুমিও আবার আগের মতো ভালোবাসবে আমায়
সব ভুলে।
কিন্তু এভাবে যে মোড় ঘুরিয়ে তুমি ,
চলার পথে হারিয়ে যাবে!
অন্য কারো হাত ধরে ,
আলো নেভা জোনাকির মতো।
কোনো একদিন।
আমি এখনো বিশ্বাস করিনা ।

তুমি চাইলে নিজে থেকে ফিরে আসতে পারো ।
তুমি চাইলে আবার আমার ছেড়ে যাওয়া হাত ধরতে পারো।
তুমি চাইলে আমায় আবার ভালোবাসতে পারো ।
আমি এখনো অপেক্ষায় আছি তোমার।

অনুষ্ণ অভিপ্রায়

অনুষ্ণ অভিপ্রায়
==========

রাত নিশিথে নির্লিপ্ত বা্তাস
তোমার এলো চুলে যখন অবলম্বন খোঁজে আহ্লাদে।
সেই মুহুর্তে স্বয়ং স্বকীয় পরশ্রীকাতরতা চোখে
তোমায় কেবল ই দেখি!
আর ভাবি,
আমি নিজে পবন হলে বেশ হতো।
তোমায় অনেক গুলো পাপ্পা দিতাম যখন তখন।

তোমার হাসির আভাসে যখন
চাঁদ ঝরে পড়ে জোছনা মাখা অনুষঙ্গে,
ফুল , পাতা আর যাবতীয় অকৃত্রিম পংতিমালায়।
তখন আমার খুব চিত্তদাহ হয় ।

পুন:পুন ক্রমাগত মনে হয়
আমি যদি হতাম প্রিয় কোন ছন্দোবদ্ধ রচনা তোমার।
তুমি আমায় পড়তে অধিকন্তু প্রমোদে ।
আর আমি লুটিয়ে গড়িয়ে পড়তাম অকসর,
তোমার অন্ত:করণের অলি গলিতে।

অতিথি পাখি ও আমরা

বিবেকহীন জিহ্বা বড় বেশী খোঁজে
সুস্বাদু মাংসের স্বাদ
সাথে সস, তন্দুর, সালাদ ও অন্যান্য।

হাজার মাইল বেয়ে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসা
অসহায় পাখিগুলো আসে এই চরাচরে
একটু আশ্রয়ের খোঁজে।
একটু উষ্ণতার লোভে।
বাঁচার তাগিদে।

আশ্রয়প্রার্থীর রক্ষক হয়ে ভক্ষক আমরা সুযোগসন্ধানী।
পারিনি তোমাদের রক্ষা করতে,
বরং করেছি উদোর পূর্তি
নানা ব্যঞ্জনে।
রকমারী সাজসজ্জায়।

চরম নির্লজ্জতায় বেহায়াপনার দৃষ্টান্ত হিসাবে
তার ছবি পোষ্ট করছি ফেসবুক আর টুইটারে।

যা মানুষ হিসাবে চরম লজ্জার ও
বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে চূড়ান্ত বিবেকহীনতার পরিচয়।

সেল ফোন

মধ্যরাতে তারার মেলা বসেছে আকাশে
স্নিগ্ধ ফুল হয়ে ঝরে পড়ছে তোমার কপাল,
ঠোঁট, গাল ও চিবুক বেয়ে।
তুমি আমি জোছনায় ভিজতে ভিজতে
ভাবছি,
এখন একান্ত হতে পারলে
মন্দ হতো না।
সেই মুহুর্তে বেজে উঠলো তোমার সেল ফোন।
তুমি ব্যস্ত হয়ে উঠলে অন্যত্র,
সহসা আহত হলো আমার হৃদয়।
বিরক্তি কর।
এই সেল ফোনগুলো এতো বেরসিক কেন?

মধুরিমা এ আমারই ব্যর্থতা

মধুরিমা,
তোমার খোলা আকাশে
আজকাল পারিজাত ফুলগুলো
বড্ড বেশি রঙীন দেখায়।

তোমার বাহান্ন তীর্থের শরীর
আমায় অনর্থক রাত জাগায়।

তোমার ওই নিটোল কোমর,
বাঁকা ঠোঁট,চঞ্চল পটলচেরা চোখ,
দীর্ঘ কেশ
একহারা গড়ন,চলার ভঙ্গি,
আমার হৃদয়ে কেবলি নিগম তুলে ধায়।

আচ্ছা তুমি এরকম পাকাল মাছের মতো
পিচ্ছিল কেন বলতে পারো?

তুমি কি জানো?
তোমার জন্য আমার এই পৃথিবীতে আসা।
তোমার জন্য আমার সমস্ত কবিতার পঙক্তিগুলো এলোমেলো এবং প্রথাবিমুখ।
তোমার জন্য আমার স্বপ্নদিনের অশ্রুত হাততালি দেয়,
তোমার জন্য আমার যত নিকোটিন পোড়ানো।
জানিনা, জানো কিনা ?

একবার হলেও আহ্লাদি করে বলতে তো পারো !
হোক মিথ্যে করে!
বলতে তো পারো!
ছাড়ো তো এসব ভাবনা চিন্তা আর
বিড়ি সিগারেট , আমার হাতটা ধরো।

জানি তুমি উত্তর দেবে না,
বলবেনা কোন কথা।
হয়তো নৈবেদ্য সমূহ সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি
তোমার মন মন্দিরে।
হয়তো ফুটিয়ে তুলতে পারিনি আমি আমার
মনের ব্যক্তিগত বার্তা সকল,
তোমার মনের মতো করে সাবলীল হরফে।
ঠিক আছে ধরেই নিলাম, এ আমারই ব্যর্থতা।

মানব জীবন

ছয় রিপুর কুমন্ত্রণায় মানব করলে জীবন পার,
দারাপুত্র পরিবার সকল ভাবলে আপনার।

আপন আপন করে তুমি করলে কত ই না অসৎ কাজ,
শয়তানের প্ররোচনায় তুমি সাজলে নানান সাজ।

পরপারের কড়ির তুমি, ধারলে নাকো ধার।
দুনিয়ারে ভাবলে তুমি একমাত্র আপন আধার।

হইলে মরন, ভাবোরে মন তখন কি হবে?
মাটির ঘরে থুইবে তোরে কেউ কি সাথে রবে?

চল্লিশ কদম হাটলে পরে,ফেরেশতা আসবে গোরে।
দীন কি তোমার ? মাবুদ কেবা ? জিজ্ঞাসা করিবে।

ভাবোরে মন সেই ক্ষণে তোমার উত্তর কি হবে?
কবরের আজাব হতে তোমায় কে রক্ষা করিবে?

সময় থাকতে ডাকোরে মন, আল্লাহ ,আল্লাহ বলে।
আল্লাহ আমার দয়ার সাগর, মুক্তি মেলে আল্লাহ রসুলে।

বর্ষঃ অভ্যর্থনা ও বিসর্জন

অপগত বেলার বিভাজন,
মুলত একটি আরোপিত ধারনা মাত্র।
অনন্ত অনাদি অদৃশ্য মহাকাল,
এমনই একটি সমাপন।
যার বিভাজন ঘটানো কখনই সম্ভব নয়।
অতীতের অস্তিত্ব প্রতীয়মান হয়
আমাদের বর্তমান ভাবনায়।
সময়ান্তর মূলত বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের
মাঝখানে একটা যতিচ্ছেদ মাত্র।

তবু মানুষের সুখ, দুঃখ আনন্দ আদর,
পাওয়া না পাওয়ার হাস্য বেদনার।
খেরো খাতায় হিসাব মেলানোর প্রচেষ্টায়,
বিদায় ২০১৯।

হোক ভালো কিছু মানব এবং মানবতার তরে ,
দূর হোক যত পাপ পঙ্কিলতা।
দূরান্তর থাক হতাশার অমানিশা।
ছুঁয়ে যাক সকলের তরে স্নেহ আর ভালোবাসা।
শুভকামনায় ও শুভেচ্ছায় জানাই অভ্যর্থনা ২০২০।

ভুলে যাই ভুলে যাই যত দ্বিধা ভেদ,
বুকে তুলে নেই যত বিষণ্ণতা ও ক্লেদ ।
পঙ্কে ফুটে ওঠে সুশোভন কমলিনী,
মানুষের ভালোবাসায় সেই পদ্মিনী।