পাখির ব্যাথা বুঝে না বলেই
তীরন্দাজ অনুশোচনায় ভুগে না।
সব সিঁড়িই উপরের দিকে নেয় না
শেষটায় যে ছাদের কার্নিশ;
লোভে পড়ে টপকাতে গেলে
নিশ্চিত পতন।
কতটুকু এগুবো
তা না ভাবলেও,
জানতে হয়
থামবো কখন…
—————-
#লোভ
২৮ ০২ ২০২০
আজিমপুর, ঢাকা।
পাখির ব্যাথা বুঝে না বলেই
তীরন্দাজ অনুশোচনায় ভুগে না।
সব সিঁড়িই উপরের দিকে নেয় না
শেষটায় যে ছাদের কার্নিশ;
লোভে পড়ে টপকাতে গেলে
নিশ্চিত পতন।
কতটুকু এগুবো
তা না ভাবলেও,
জানতে হয়
থামবো কখন…
—————-
#লোভ
২৮ ০২ ২০২০
আজিমপুর, ঢাকা।
প্রত্যাগত না হয়েও প্রতিদিন
আমাদের খুন হতে হয়,
বিবর্ণ দেয়ালে প্রিয় বর্ণমালায়
লেখা হয় ব্যার্থ প্রতিবাদ।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে
অস্পষ্ট হয়ে যায় সব,
তনুদের অভিশাপে কিছুই
যায় আসে না কারো।
অস্থিরতায় কাটে সময়
ভোর হতেই না জানি
কে হয়ে যায় আবারও
শেষ সংবাদ…!
—————
১৪.০১.২০২০
শেওড়াপাড়া, ঢাকা।
জীবনটাও যে বড্ড জটিল
অনেকটা সরল অংকের মতোই।
প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়
বন্ধনী পার হওয়ার আগেই
যে থাকে রেখা বন্ধনীর বাঁধা।
কোন মতে তা না হয়
পার হওয়া গেল,
কিন্তু এরপর–
এরপর শুরু গোলকধাঁধা ;
গুণ আগে না ভাগ আগে
তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই
বেজে উঠে প্রথম ঘন্টা শেষের ধ্বনি;
এখনো যে বাকি সুদকষা, জ্যামিতি,
পাটিগণিত আর পরিমিতি!
সরলটা না হয় পরেই মিলাবো;
কর্জের সুদ আর বাকির হিসাব
আসল মেলাতেই মাথার হাত,
সুদ তা তো এক সমুদ্র দূর
আহারে জীবন —
ভাবতে গিয়েই
আরেক ঘন্টা পার-
ঢং ঢং ঢং
ধুর ছাই আর সময় তো নাই
এখনো যে বাকি জ্যামিতি
পাটিগণিত আর পরিমিতি!
“ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি
দুই সমকোণের সমান ”
শুধু এটা প্রমাণ করতে পারলেই
তোদের সবই হবে আমার ;
সময় বাকি মাত্র মিনিট পনেরো —
সাত মিনিট তের সেকেন্ডেই
প্রমাণ করে দিলাম
পয়া অপয়ার মাঝে শুধু
মিনিট ব্যাবধান;
শুধু সময় মতো
টুকতে পারলেই হলো।
রাজার নীতি নিয়ে মাথায়
আমাকে কে আর পায় ;
সরল জীবনের ভুল গুলো
এখন যে সুদাসলে
উসুলের সময়—
—————————
শেওড়াপাড়া, ঢাকা
২৯/০৭/২০১৯
রাতের শেষ প্রহর;
অস্পষ্ট আলোয়
চুলে ঢাকা তোমার মুখ,
তুমি গভীর ঘুমে বিভোর।
মধ্যরাতে যখন পড়ছিলাম
টেবিল ল্যাম্পের আলোয়,
তখন ডেকেছিলে কাছে
কিন্তু তাকাইনি আমি, দেইনি সাড়া
তোমার কাঙ্খিত আহবানে।
জানি তুমি এক খরস্রোতা নদী
যেখানে সাঁতরিয়েছি আমি হাজারবার,
জানি আমি এ নদীর গভীরতা ;
কত নিস্তরঙ্গ ঢেউ আসে
সময় – অসময়ে।
আজ আর তোমাকে
পাড়ি দিতে চাই না আমি,
নির্ভীক নাবিকের মতন ;
বালিহাঁস হয়ে ভাসতে চাই
তোমার মোহনায়।
তুমি আমার অধর ছুঁয়ে দেখ
রক্তের শিহরণ।
শরতের সাদা মেঘ,
ঐ দূরের শুভ্র কাশফুল
ডাকছে তোমায়।
বিকেলের পরাজিত সূর্য,
নীলাভ আকাশ লাল করে ফেলবে।
তখন হয়তো তোমার
সময় হবে না রংধনু দেখার;
সময়ের স্রোতে ভাসিয়ে দিবে নিজেকে।
সময় তোমাকে দিবে
অনেক কিছুই,
কিন্তু নিয়ে যাবে
কিছু বন্ধুকে,
দূর থেকে আরও দূরে।
হঠাৎ কোন একদিন
অস্বচ্ছ চোখ নিয়ে,
মনে পড়বে তোমার আমাকে।
কিন্তু তখন ব্যস্ত সময়
দিবেনা ফিরতে আর তোমায়,
হারিয়ে যাওয়া সেই
অমলিন দিন গুলোতে…
রাত নেমেছে আজ আবার,
হাজার বছরের নিষিদ্ধ
পূর্ণিমার রাত।
কুয়াশায় মাখা, রক্তে ভেজা
অপার্থিব আলোয় ভেসে যাওয়া
এক দুঃস্বপ্নের রাত।
ঘুম গুলো সব
পড়েছে ঘুমিয়ে,
নিঃশ্চুপ এই আলো আঁধারিতে।
আকাশ ভরা রূপালী আলোগুলো
একা একা থাকে জেগে, তাই
অপেক্ষায়, ফিরে আসার
হারিয়ে যাওয়া সুসময়ের।
রাত নেমেছে আবার আজ,
শূণ্যতা গুলোকে
আরও শূণ্য করে,
হাজার বছরের আরও এক
মৃত স্বপ্নের রাত।
কীট দংশনে শিব হয়নি নীল,
নীল হয়েছিল হিংসায় –
নিজ অর্ধাঙ্গি দেবী চণ্ডীর।
ষড়যন্ত্রের ভুল পূজোয়
স্বর্গ হারায় নীলাম্বর।
অভিশাপের মর্তলোকে
জীবন সুতো এক হয় আবার
কালকেতু – ফুল্লরার।
শিব পূজারীর অব্যর্থ শরে
অস্থির সব বনচর,
ছলনাময়ী চণ্ডী ফিরে
রূপ নিয়ে গোধিকার।
আপন পূজোয় তুষ্ট দেবী
বর পায় আবার নীলাম্বর,
ছলনাময়ীকেই ছলনায় ফেলে
করে তারা আবার,
স্বর্গ পুনরুদ্ধার।
শুকতারা না চিনে
কালপুরুষ দেখতে চাওয়া যেমন ভুল,
জীবন বেদ না জেনে
তোমাকে বুঝতে যাওয়াও ছিল ভুল।
গিয়েছিলাম ভুলে,
কচুরিপানা আর পদ্মের,
মৌলিক পার্থক্য।
একজন পাল্টায় ঘাট অবিরাম,
আর অন্যজন ?
অন্যজন জীবন কাটায় স্থির থেকে
হৃদয়ে বাঁধা যে তার অদৃশ্য শিকল !
যে শহর ঘুমিয়ে পড়ে অসময়ে,
ক্লান্ত মানুষের শ্রান্তি ভুলে।
জীবন্মৃতের মতন পড়ে রয়
স্বপ্নগুলো বেহিসাবে যে শহরে;
সেই শহর তো আমার নয়।
যে শহরে পড়ে থাকে আজ
হাজারো স্বপ্নের লাশ,
রঞ্জিত রাজপথ আর
বারুদের গন্ধে ভরা বাতাস;
সেই শহরতো আমার নয়।
আমি মৃত্যুকে দেখেছিলাম সেইদিন,
দাঁড়িয়ে ছিল সে একাকী বিমর্ষ হয়ে ।
কৌতুহলী চোখে দেখছিল দাঁড়িয়ে
রাস্তার পাশের ভাঙা ডাস্টবিনের ধারে,
ময়লার স্তূপ ঘিরে থাকা
বেওয়ারিশ কাক আর কুকুরগুলোকে ।
দেখছিল সে নীল ডুমো মাছির ডানায়
উড়ে চলা জীবাণুর নাচন,
নিয়ে একচিলতে বাঁকা হাসি
ঠোঁটের কোনে ।
হঠ্যাৎ চোখে পড়ল তার,
কাক-কুকুরের টানা হেঁচড়ায়
ছেঁড়া পলেথিন হতে,
বেড়িয়ে থাকা এক
নবজাতকের হাত !
স্তব্ধ হয়ে গেল মৃত্যু তখন,
ভাবতে পারছিলনা সে কখন
এসেছিল ঐ শিশুর কাছে ?
মৃত্যুর চোখে মৃত্যুর ছায়া পড়ে,
ভেসে আসে প্রশ্ন সঙ্গোপনে-
“আর কত বলী হবে নিষ্পাপ শিশু,
এই সভ্যতার, চরম অসভ্যতার ?”
আমরা জানি না
দিন কিভাবে বদলায়,
শীতে রং হারানো
গাছেরও যে প্রাণ আছে
তা অস্বীকারে গাছের
কী আসে কী যায়?
ঘুমবিহীন চোখ
ছুটে চলে মানুষ,
শহর থেকে শহর
নগর থেকে নগর,
এখন সময়
রাত্রি দ্বিপ্রহর …
এইতো সেদিনও
এই পথের প্রতিটি
গাছকে আমি চিনতাম,
নীলচে জারুল অরুণাভ কৃষ্ণচূড়া
অথবা পলাশ রাঙা মেঠোপথ
সবই দূর অতীত এখন।
এ পথের দুপাশের
বুনো ঘাসফুলগুলোর কথা
বড্ড মনে পড়ে এখনো।
শীতের শেষটায় শিশির ভারে
নুয়ে পড়তো এদিক ওদিক।
পাথর, বালি, বিটুমিনের মিশ্রণ
চলন গতিটাই মসৃণ শুধু,
জীবনের পথটা নয়।
তাই পাপী ছুটে পাপের পেছন
আর জীবন ছুটে দিন শেষে
নিয়ে কিছু মিথ্যা সময়..
হেমন্তের শেষ দিনগুলোতে
জল সবুজ মাঠের রঙ
যেভাবে ধূসর হয়ে যায়,
প্রতিটা প্রাণেরও তেমনি
একটা সময় আসে।
ভরা বর্ষায়ও
থান ইটে চাপা পড়া
ঘাসেরও রঙ বদলায়;
অনেকটা সেভাবেই
বিপাশার পাশে
নিরঞ্জনের গল্প
শুধু হতাশারই!
তবুও অলীক স্বপ্নে
বিভোর নিরঞ্জনকে,
একদিন বললাম –
“প্রতীক্ষা আর অপক্ষা’র
প্রার্থক্য বুঝিস তুই?”
দূরপানে স্থীর চোখে
তাকিয়ে শুধু বললো ;
“হারানো আর না পাওয়ার
মাঝের দেয়াল ভাঙা কি
এতোই সহজ, অরুণ? “
হত্যাকাণ্ডের তখনো কিছুটা সময় বাকি। সাদা শার্টের আস্তিন কনুই পর্যন্ত গোটানো শেষ, মগে আধ খাওয়া কফি। বহুকাল তেল না দেওয়া কাঁধ ছুঁই ছুঁই ধূসর এলোমেলো চুল, ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে যেন তীক্ষ্ণ ছুরির ফলা। মধ্যবয়সী মানুষটার চেহারায় তবুও কেমন এক মায়া। দেখলেই বুকের ভেতরটায় শুধু হু হু করে।
ঘরময় দামী এক্সপ্রেসো কফির ঘ্রাণ আর সিগারেটের ধোঁয়া গৌধুলীলগ্নের আলো আঁধার যে পরিবেশ তৈরি করেছে তাতে সুইস নাইফ হাতে থাকলে যে কারোরই খুন করার জন্য হাত নিশপিশ করারই কথা। রফিক একটার পর একটা সিগারেট জ্বালাচ্ছে, আর জীবনানন্দের কবিতা পড়ছে। সামনের চেয়ারে হাত পা বাঁধা মুখ বন্ধ শিখা দেখছে আর অপেক্ষা করছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে দুই ঘন্টা ধরে আটকে এভাবে আটকে থাকা কোন সহজ কথা নয়। কিন্তু বুঝা যাচ্ছে লোকটা কিছুক্ষণের ভিতরেই কিছু একটা করবে। লোকটার কাছে আর মাত্র দুইটা সিগারেট আছে, যারা চেইন স্মোকার তাদের কাছে সময় মতো সিগারেট না থাকাটা অনেক বিপদজনক। সেই হিসাবে দুইটা সিগারেট শেষ হতে দশ পনেরো মিনিট লাগার কথা।
আর মাত্র পনেরো মিনিট, তারপরই সব শেষ। ধারণা মতো শেষ সিগারেটা মাঝামাঝি জ্বলছে। নীরবতা ভেংগে লোকটা কবিতার বইয়ের থাকে চোখ না সরিয়েই জিজ্ঞেস করলো- “নাম কি?” কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে উত্তর না পেয়ে, শিখার দিকে তাকিয়ে দেখে বললো, ওহ তোমার তো মুখ আটকানো। এই বলে সে শিখার মুখ খুলে দিল।
তুমি চিৎকার করবে না জানি, সাহসী মানুষকে আমি পছন্দ করি। চিৎকার করার ইচ্ছা থাকলে তুমি আগে থেকেই হাত পা খোলার চেষ্টা করতে। যে এরকম পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে পারে সে অবশ্যই সাহসী, Am I right?
একথা বলেই লোকটা প্রচন্ড শব্দে হা হা হা করে হাসতে লাগলো। এই প্রথম শিখার ভিতরে প্রচন্ড ভয় লাগলো, এই লোকটা কোন স্বভাবিক মানুষের হতে পারে না। এই লোকটা গাছ থেকে মরিচ তোলার মতোই টুপ করে মানুষ মেরে ফেলতে পারে।
মেঘফুল নেই বলেই
বৃষ্টিতে আপ্লুত হই আমরা,
জলের কোন রঙ নেই বলে
কান্নায় কখনো রংধনু হয় না।
ঝড় ও জলের অদৃশ্য সমীকরণ
বীজগাণিতিক কোন নিয়ম মানে না,
তাই হয়তোবা বিপাশার উপেক্ষা
কখনো নিরঞ্জনের অপেক্ষার মাঝে
কোন দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় না।
শীতের শেষ, কালবৈশাখীর দিন
আসি আসি করছে তখন,
এমন এক কুয়াশাচ্ছন্ন হিমেল সকালে
নিরঞ্জনকে জিজ্ঞেস করলাম-
“ঝড়কে বেঁধে শুধু জল দিয়ে কি
বৃক্ষ বাঁচে রে নিরঞ্জন?”
তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে
ম্লান চেহারায় শুধু বললো,
“বৃক্ষেরা আছে বলেই না
স্বার্থপরের সংখ্যা বেশি নেই।”