বিভাগের আর্কাইভঃ জীবন

নিদারুণ অসহায়

2906

ভয় ভয় মন
ভাবি বসে সারাক্ষণ,
কী যেন হয় কখন
কথা বলি যখন।

কথা বলি কম
পেছনে দাঁড়িয়ে যম
কান খাড়া হরদম
উল্টা-পাল্টা হলেই খতম!

ধর্ম অবমাননার অজুহাত
খুঁজে বেড়ায় দিনরাত,
ধর্মের গেলো জাত
ধর মার বেজাত।

তাই মনে ভয়
কখন যে কী হয়,
কেউ যদি কিছু কয়
ভেবেচিন্তে বলতে হয়।

এ-কী নিদারুণ অসহায়
মানবতা গেলো কোথায়,
জবরদস্তি চাপিয়ে মাথায়
ধর-মার কথায় কথায়!

বয়ে যায় অমরত্তের পথে

29323

যে আপনার
সে ছেড়ে যেতে চাইলেও
রয়ে যাবে;

যা আপনার
তা ঠিকই রয়ে যাবে
সোনালী রোদ্দুরের মত.’
রয়ে যাবে অস্তিত্বের রোম কূপে,
রয়ে যাবে অশান্ত দিনের পরেও
মৃত্যুর দোরগোড়ায় থেকে
অথবা তারপর।

রয়ে যাবে
নক্ষত্রের মতোই জ্বলজ্বল করে
শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে
রয়ে যাবে হৃদয়ের মনিকোঠায়
ঝকঝকে চকচকে উজ্জ্বল হয়ে।

ভেঙ্গে যেতে চাইলেও
রয়ে যাবে, রয়ে যাবে
ফুলের মত পবিত্র’
রয়ে যাবে হাজার বছর।

হয়তো তাজমহল নয়
প্রেম রয়ে যায়
ভালোবাসা রয়ে যায়
কিছু কথা রয়ে যায়
কিছু স্মৃতি রয়ে যায়।

রয়ে যায় মহানদীর পথ বয়ে
সাগর হতে মহাসাগরের পথে
হয়তো এভাবেই লেখা হয়
প্রেমের যাত্রা
বয়ে যায় অমরত্তের পথে।

কিছু জীবন লেখা হয় বইয়ের পাতায়
পৃষ্ঠার পড়তে পড়তে
লেখা হয় জীবনের গল্প
কিছু জীবন এভাবেই বেঁচে থাকে
পৃথিবীর এই পথে
যেখানে কেউ পায় ভালোবাসা
আর পায় ঘৃণা।

স্মৃতির আল্পনা

2899

কোথায় যে হারিয়ে গেলো
সেই সোনালী দিন,
ঝোলাবাতি গোল্লাছুট খেলা খেলে
কেটে যেতো সারাদিন।

বিকালে আমরা জড়ো হতাম
ছোট একটা মাঠে,
খেলা শেষে দৌড়ে যেতাম
ঐ নদীর ঘাটে।

সাঁতার কেটে পাড়ি দিতাম
ঐ খরস্রোতা নদী,
সাঁতরে যেতাম ভয়ভয় মনে
কুমিরে ধরে যদি!

কারোর হাতে যদি দেখতাম
সেকালের ক্যামি ঘড়ি,
অবাক চোখে তাকিয়েই থাকতাম
ফিরতাম না বাড়ি!

যদি দেখতাম কেউ-না-কেউ
বাজাচ্ছে এফএম রেডিও,
সারাদিন শুনতাম রেডিওর গান
ক্ষুধায় মরতাম যদিও!

বাবার সাথে বাজারে গিয়ে
ধরতাম কতো বায়না,
বাবুল বিস্কুট তক্তি বিস্কুট
কেন কিনে দেয়না?

অভাবী বাবা বিরক্তি মনে
দিতেন পকেটে হাত,
দিতেন মাত্র দশ পয়সা
তাতেই হতো বাজিমাত!

পাচ পয়সার বাবুল বিস্কুট
পাচ পয়সার তক্তি,
খুশিতে হাঁটতাম আর খেতাম
করতাম বাবাকে ভক্তি!

আর কি আসবে ফিরে
সেই সোনালী দিনগুলো,
জানি আসবেনা ফিরে সেদিন
তবুও আঁকি স্মৃতিগুলো!

.
ছবি নিজের তোলা। এলাকার বাদশা মিয়া।

যে কারণে প্রাক্তনকে ভুলে যাওয়াই শ্রেয়

2949

বিচ্ছেদের পর প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে চাইলে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত।

প্রেমের মতো বিচ্ছেদও জীবনের একটি অংশ। নারী-পুরুষের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রথম ধাপই হচ্ছে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের ওপর ভিত্তি করে যোগাযোগ, মেলামেশা ও ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে বিপরীত লিঙ্গের কারও প্রতি প্রেমের অনুভূতি জেগে উঠতেই পারে। এইটা মোটেই দোষের কিছুই নয়। বিভিন্ন কারণে সেই সম্পর্ক ভেঙ্গেও যেতে পারে। কখনো সেই প্রেম ভেঙে গেলে অপর পাশের মানুষটার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা উচিত কিনা তা নিয়ে অনেকেই কনফিউজড থাকে? আবার কেউ কেউ বিচ্ছেদের পরেও প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক বজায় রাখেন। অনেকেই ভেঙে যাওয়া প্রেমের স্মৃতি ভুলে যেতে প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ তো দুরের কথা মুখও দেখতে চান না।

আসলে বিচ্ছেদের পরেও প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখা কিংবা না রাখার সিদ্ধান্তটি যার যার একান্ত নিজস্ব বিষয়। তবে মনোবিদেরা কিন্তু প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেছেন। তারপরেও প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা নিয়ে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত যাতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। যেমনঃ

(১) ফ্লার্ট বা রোমান্স না করা: প্রাক্তনের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব রাখতে হয় তাহলে কখনোই তার সঙ্গে ফ্লার্ট করা অথবা রোমান্টিক কোনো কথা বলা উচিত না। কারণ দুই পক্ষের মধ্যে কেউ যদি একটু মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে আবার তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি অনুভূতি জেগে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে মানসিক ও সামাজিক জটিলতায় পড়তে হতে পারে, তখন দুজনের মধ্যে তৈরি হবে বিব্রতকর পরিস্থিতি।

(২) দূরত্ব বজায় রাখা: বন্ধুত্বের সম্পর্কে পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং দূরত্ববোধ একপাশে সরিয়ে রাখা একটি অলিখিত নিয়ম। কিন্তু যদি প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে হয়, তাহলে অবশ্যই এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটবে। প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে চাইলে যেমন তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, তেমনি অপরকেও নিশ্চয়তা দিতে হবে যে আপনার দিক থেকে দূরত্ব ঘোচানো হবে না।

(৩) অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখা: প্রেমের সম্পর্কে থাকা অবস্থায় পরস্পর রংময় পৃথিবীতে থাকে। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর কিন্তু অপরিচিত আগন্তুকের মতো হয়ে পড়ে। যদি প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতেই হয়, তাহলে তার প্রতি নিজের অনুভূতিকে চার দেয়ালের সীমানায় বন্দি করে ফেলতে হবে। নয়তো যদি একে অপরের প্রতি আবার অনুভূতি সৃষ্টি হয় তাহলে তা অবশ্যই ক্ষতিকর পর্যায় চলে যাবে। কারণ একজন বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলে, অপর জন মনোকষ্টের ভুক্তভোগী হবেনই।

.
প্রচ্ছদ ছবি—ঢাকা ট্রিবিউন।

মোবাইলে খেয়েছে ডাকবাক্স-সহ আরও অনেককিছু

286

বছর তিনেক আগে একটা জরুরি কাজে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলাম। যাচ্ছিলাম অটো চড়ে। হাজীগঞ্জ ফেরিঘাট পেরিয়ে যখন কিল্লারপুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, রাস্তার বাম পাশে ময়লা আবর্জনায় মধ্যে একটা ডাকবাক্স দেখতে পেলাম। ডাকবাক্সটি অনেক আগে থেকেই এখানে বসানো হয়েছিল। তবে আগে ডাকবাক্সটির সামনে এতো ময়লা আবর্জনা ছিল না, সবসময় পরিষ্কারই ছিল। বর্তমানে ডাকবাক্সটি পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়।

ডাকবাক্সটি ময়লার স্তুপের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বাক্সের চারপাশে থাকা জঙ্গলে একাকার। দেখে মনে হয় হয়তো মাসে, নাহয় বছরে একবার এই ডাকবাক্সটির তালা খোলা হয়। ডাকবাক্সটির অবস্থান হলো হাজীগঞ্জ কিল্লারপুল সংলগ্ন ড্রেজার সংস্থার মেইন গেইট ঘেঁষা। ডাকবাক্সটি দেখে আগেকার কথা মনে পড়ে গেল।

একসময় এদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ডাকবাক্স ছিল খুবই সম্মানী বস্তু। এই ডাকবাক্স ছিল অগণিত মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি। এসবের জ্বলন্ত সাক্ষী আমি নিজেই। দেখতাম একটা চিঠির অপেক্ষায় আমার মা ডাকপিয়নের বাড়িতেও দৌড়াতে। বাবার প্রেরিত চিঠি মা হাতে পেয়ে অস্বস্তির নিশ্বাস ফেলতো। চিঠি হাতে পেয়ে ডাকপিয়নকে কতনা অনুরোধ করতো, চিঠি পড়ে শোনানোর জন্য।

ছোটবেলার স্মৃতিগুলো এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে। মনে পড়ে তখন, যখন একটা পোস্ট অফিসের সামনে অথবা রাস্তার ধারে ডাকবাক্স চোখে পড়ে। ছোটবেলা দেখতাম আমার মা চিঠির মাধ্যমে বাড়ির সুসংবাদ, দুঃসংবাদ বাবাকে জানাতেন। বাবা থাকতেন নারায়ণগঞ্জ। চাকরি করতেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চিত্তরঞ্জন কটন মিলে। আমার মা লেখা-পড়া জানতেন না। চিঠি লেখাতেন গ্রামে থাকা পাশের বাড়ির শিক্ষিত মানুষ দিয়ে।

এখনকার মতন তো শিক্ষিত মানুষ তখনকার সময়ে এতো ছিল না। কোনও কোনও গ্রামে একজন মেট্রিক পাস মানুষও ছিল না। যদি একটা গ্রামে একজন মানুষ ভাগ্যক্রমে মেট্রিক পাস করতো, দু’একটা গ্রামের মানুষ তাকে দেখার জন্য ভিড় জমাতো। আমাদের গ্রামে একই বাড়িতে তিনজন শিক্ষিত মানুষই ছিলেন। তাঁরা তিনজনই ছিলেন স্কুলের মাস্টার। সেই কারণেই তাদের বাড়ির নাম হয়েছিল মাস্টার বাড়ি। এঁরা হলেন, দক্ষিণা মাস্টার, প্রমোদ মাস্টার ও সুবল মাস্টার।

মাকে যিনি সবসময় চিঠি লিখে দিতেন, তিনি ছিলেন সুবল মাস্টার। সম্পর্কে নিজেদের আত্মীয়। চিঠি লেখাও একটা বিরক্তের কাজ। চিঠি লিখতে হলে সময় লাগে, মন লাগে, ধৈর্য লাগে, তারপর হয় চিঠি লিখা। সব শিক্ষিত মানুষ চিঠি লিখে দেয় না। চিঠি লিখতে পারে না, জানেও না। সুবল মাস্টার আমার নিকটাত্মীয় জেঠা মশাই। আমার বাবার খুড়াততো ভাই (চাচাতো ভাই)। আমার বাবার বয়স থেকে সুবল মাস্টার অল্প কয়েক মাসের বড়। তাই আমার মা’র ভাশুর।

মা জেঠাদের বাড়িতে গিয়ে অনেকসময় ফিরে আসতেন, চিঠি না লেখাতে পেরে। এভাবে দু’তিনদিন যাবার পর একদিন শ্রদ্ধেয় জেঠা মশাই মাকে সময় দিতেন, চিঠি লিখে দিতেন। জেঠা-মশাই কাগজ কলম হাতে নিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করতেন কী ব্যাপারে চিঠি দিবে? মা বলতেন, ঘরে চাল নেই, ডাল নেই, তেল নেই, হাট-বাজার করার মতো টাকা-পয়সাও নেই। এই নিয়েই আপনি সুন্দর করে লিখে দেন, যাতে আপনার ভাই বুঝতে পারে।
তখনকার সময়ে শর্টকাট ( মানে কিছু লেখা) চিঠি লিখতে পোস্টকার্ডই বেশি ব্যবহার করতো। একটা পোস্টকার্ডের মূল্য ছিল মাত্র ১৫ পয়সা। আর একটা ইনভেলাপের মূল্য ছিল মাত্র চার আনা(২৫) পয়সা মাত্র। তখনকার সময়ে দশ পয়সার খুবই মূল্য ছিল। সহজে বিনা দরকারে কেউ পাঁচটি পয়সাও খরচ করতো না। পোস্টকার্ড আর ইনভেলাপের মূল্য দশ পয়সা এদিক সেদিক হওয়াতে মানুষ অল্প কথার জন্য পোস্টকার্ডই বেশি ব্যবহার করতো।

পোস্টকার্ডে জেঠা মশাই চিঠি লিখে মাকে পড়ে শোনাতেন, মা শুনতেন। পোস্টকার্ড বুকে জড়িয়ে বাড়ি চলে আসতেন। পরদিন সকালবেলা আমি স্কুলে যাবার সময় মা আমার কাছে পোস্টকার্ডটা দিয়ে বলতেন, “বাজারে গিয়ে চিঠিটা পোস্ট অফিসের সামনে থাকা বাক্সে ফেলে দিবি”। মায়ের কথামত পোস্টকার্ডটা খুব যত্নসহকারে বইয়ের ভেতরে রেখে বাড়ি থেকে রওনা হতাম।

আমাদের বাড়ি থেকে পোস্ট অফিসের দূরত্ব ছিল প্রায় এক কিলোমিটার। বাজারে যাবার রাস্তার পাশেই ছিল স্কুল। স্কুলে বই খাতা রেখে চিঠি নিয়ে সোজা বাজারে চলে যেতাম। ডাকবাক্সে পোস্টকার্ডটা ফেলে দিয়ে তারপর আসতাম স্কুলে। স্কুল ছুটি হবার পর বাড়ি আসার সাথে সাথেই মা জিজ্ঞেস করতেন, ‘চিটি বাক্সে ফেলেছিস’? বলতাম, ‘হ্যাঁ মা ফেলেছি’!

এরপর থেকে মা অপেক্ষায় থাকতেন ডাকপিয়নের আশায়। মানে বাবার দেওয়া চিঠি হাতে পাবার আশায়। কখন আসবে বাবার চিঠি বা মানি অর্ডার করা টাকা? পোস্ট অফিস থেকে (ডাকপিয়ন) যিনি বাড়ি বাড়ি চিঠি পৌঁছে দিতেন, তিনি গ্রামের সবার নাম জানতেন এবং বাড়িও চিনতেন। ডাকপিয়ন আমাদের পাশের গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন।

পোস্ট অফিসে চিঠি বা মানি অর্ডার করা টাকা আসার পরপরই ডাকপিয়ন পৌঁছে দিতেন বাড়িতে। বকশিস হিসেবে ডাকপিয়নকে এক টাকা বা লাড়ু-মুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। এতে ডাকপিয়ন সাহেব খুব খুশি হতেন। বাবা যদি মানি অর্ডার করে টাকা পাঠাতেন, তাহলে আমার মা বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেই টাকা রেখে দিতেন। আর যদি টাকার বদলে চিঠি আসতো, তাহলে হাতে পাওয়া চিঠি ডাকপিয়ন সাহেবকে দিয়ে পড়াতেন, না হয় চিঠি নিয়ে দৌড়াতেন মাস্টার বাড়ি।

মায়ের চিন্তা শুধু কী সংবাদ এলো চিঠির মাধ্যমে। জেঠা মশাই মাকে দুঃখ সুখ নিয়ে বাবার লেখা চিঠি পড়ে শোনাতেন, মা চুপ করে বসে শুনতেন। সেসময়ে আমার মায়ের মতো এমন আরও অনেক মা ছিল, যারা লেখা-পড়া জানতো না। তাঁরা ডাকপিয়ন থেকে চিঠি হাতে পেলে অনেকেই দুঃচিন্তায় পড়ে যেতো। ভাবতো সুসংবাদ এলো, না দুঃসংবাদ এলো?

এখন আর সেই দিন নেই। মানুষ এখন চিঠি বা পত্র লেখা প্রায় ভুলে গেছে। মানুষ এখন কলম দিয়ে একটুকরো কাগজে মনের কথা লিখতে চায় না। মানুষ এখন এন্ড্রোয়েড মোবাইলের কীবোর্ড ব্যবহার করে। মেইল আর মেসেজের মাধ্যমে প্রিয়জন আর স্বজনদের সাথে মনের ভাব আদানপ্রদান করে থাকে। তাই পোস্ট অফিসে আগের মতো তেমন ভিড় দেখা যায় না। ডাকবাক্সেও মানুষ এখন কেউ চিঠি ফেলতে চায় না, ফেলেও না। এখন চিঠির যুগ প্রায় শেষপ্রান্তে এসে গেছে। এখন মোবাইল ফোনের যুগ এসেছে।

একসময় দেশের প্রতিটি পোস্ট অফিসের সামনে, আর গ্রাম গঞ্জের হাট-বাজারের রাস্তার পাশে দেখা যেতো ডাকবাক্স। অনেক স্থানে গাছের ঢালেও ঝুলানো ছিলো ডাকবাক্স। তবে আগের মতো ডাকবাক্সের তেমন একটা কদর নেই। আগেকার সময়ে ডাকবাক্সে মানুষ চিঠি ফেলতো। ডাকপিয়ন সময়মত ডাকবাক্সের তালা খুলে চিঠি বের করতো। তারপর চিঠিগুলো একটা বস্তা ভরে নিকটস্থ পোস্ট অফিসের উদ্দেশে রওনা হতো।

রাতবিরেতে ডাকপিয়নের হাতে থাকতো একটা হারিকেন আর আর একটা বল্লম। পায়ে বাঁধা থাকতো নূপুরের মতন ঝুনঝুনি। ডাকপিয়ন চিঠির বস্তা কাধে নিয়ে ‘বস্তিওয়ালা জাগো, হুশিয়ার সাবধান’ বলে চিৎকার করতে করতে হেঁটে যেতো। খানিক পরপরই হামাগুড়ি দিয়ে চিৎকার করতো, আর লাফিয়ে লাফিয়ে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হাঁটতে থাকতো। ডাকপিয়নের গলার আওয়াজ আর পায়ে বাঁধা সেই ঝুনঝুনির শব্দে মানুষ ঘুম থেকে জেগে উঠতো।

ডাকপিয়ন কতো বাধা আর ঝড়বৃষ্টি, চোর ডাকাতের ভয় উপেক্ষা করে চিঠির বস্তা পৌঁছে দিতো হেড পোস্ট অফিসে। হেড পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠি চলে যেতো দেশের বিভিন্ন জেলাশহরে। পৌঁছে যেতো ডাকবাক্সে ফেলা প্রেরকের চিঠি প্রাপকের হাতে। সেসময় এই ডাকবাক্সের অনেক আদর ছিল, কদর ছিল, যত্ন ছিল। মানুষ চিঠি প্রেরণের জন্য, টাকা পাঠানোর জন্য ছুটে যেতো নিকটস্থ পোস্ট অফিসে। আবার অনেকেই অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকতো ডাকপিয়নের আশায়। কখন হাতে এসে পৌঁছবে প্রিয়জন আর স্বজনদের চিঠি, সে আশায় লেখাপড়া না জানা মানুষেরা চিঠি হাতে পেয়ে কেউ আবার হাউ-মাউ করে কাঁদতো। মনে করতো কী যেন দুঃসংবাদ এসেছে। অনেকে আবার খুশিতে হয়ে যেতো আত্মহারা। এখন মোবাইলের জগতে ডাকপিয়ন আর ডাকবাক্স যেন মোবাইলে খেয়েই ফেলেছে।

শুধু ডাকবাক্সই খায়নি, খেয়েছে আরও অনেককিছুই। যেমন: আগে মানুষে রেডিওর গান শুনতে একটা মনোমত রেডিও কিনে ঘরে রাখতো। সেই রেডিও চালু করে গান শুনতো। খবর শুনতো। নাটক শুনতো। আবহাওয়া বার্তা শুনতো। আর এখন? একটা কমদামি মোবাইলেও থাকে এফএম রেডিও। মিউজিক প্লেয়ার। ভিডিও প্লেয়ার। ঘড়ি। বার্তা প্রেরণেরও অত্যাধুনিক সিস্টেম। এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে টাকা প্রেরণের সহজ সুবিধা। মোবাইলে পানির বিল পরিশোধ করা। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা। যেকোনো ব্যাংক থেকে নিজের হাতে থাকা মোবাইল টাকা আদানপ্রদান করা-সহ আরও যে কয় কী বাহারি সুবিধা, তা আর লিখে শেষ করা যাবে না। তাই আর কথা আর লেখার শব্দ সংখ্যা না বাড়িয়ে বলতে চাই, বর্তমান যুগের মোবাইলে অনেককিছুর মধ্যে ডাকবাক্সটাকে ভালো করে খেয়েছে।

বি:দ্র: এই লেখাটা আরও অনেক আগে কয়েকটা ব্লগে পোস্ট করেছিলাম। আজকে আবার লেখার কিছু ঘষামাজা করে পোস্ট করলাম। ছবিটি আরও তিন বছর আগের তোলা।

আর্কাইভ

আপনার ছোট্ট মণিটি যদি দুই থেকে তিন বছরে পা রেখে থাকে তবে লিখাটি আপনার জন্য। এই বয়সটাতে অন্যান্য প্রয়োজন গুলোর সাথে দাঁতের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনও অন্যতম। সাধারণত জন্মের পর শিশুর মুখে প্রথম দাঁত আসার পর থেকে শিশুরা হাতের কাছে যা পায় তাই কামড়ে দিতে চায়। এ সময় থেকেই দাঁত ব্রাশ করে দিতে হবে। তবে এ সময়টাতে টুথপেস্ট ব্যবহার না করে দাঁত গুলো ভালভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে।

দুই বছর বয়সের মধ্যে একটি শিশুর ১৬ থেকে ২০ টি দাঁত বড় হবে। সাধারণত তিন বছর বয়সে শিশুর দাঁতগুলোর একটি সম্পূর্ণ সেট থাকে ২০ টুকরা। এ সময়টা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন আপনার ছোট্ট মণিকে দাঁতের যত্ন নিয়ে সচেতন হতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। যদি আপনি ভেবে থাকেন এ বয়সে শিশু তেমন খাদ্য গ্রহণ করছে না তাই দাঁত ব্রাশ করাটা জরুরী নয় তবে আপনি ভুল। কারণ এ বয়সটা থেকে যদি শিশু দাঁত ব্রাশ করার একটি রুটিনে অভ্যস্ত হয় তবে আপনি স্মরণ না করিয়ে দিলেও সে ভুলবে না।

গড়ে ৪০% শিশু দাঁতের ক্ষয় রোগে ভোগে। যার একমাত্র কারণ হলো দাঁত সঠিক ভাবে ব্রাশ না করা বা একেবারেই ব্রাশ না করা। এর অন্যতম পরিচালিত সমস্যার মধ্যে থাকে ব্যথা। যা শিশুকে চিবানোর সময় প্রচণ্ড অসুবিধা দেয় ফলে শিশুর খাদ্য হজম হয় না। বেশির ভাগ দেখা যায় এ বয়সের শিশুরা এই সমস্যা গুলো বুঝিয়ে তুলতে পারে না।

ডাঃ জিউলিয়ানো বলেন, “অপর্যাপ্ত ব্রাশিং শরীরে ব্যাকটেরিয়া বিকাশের কারণ হতে পারে, যা প্রদাহ এবং রোগের কারণ হতে পারে- শুধু মুখে নয়, শিশুর পুরো শরীর জুড়ে।”

অশান্ত মন

283

১।
অশান্ত এই মন
করে শুধু বনবন
ভাবে বসে সারাক্ষণ
কী করি এখন?

২।
দিতে চায় ওজন
সেরে সেরে মণ
মেলে না যখন
গোলমাল বাধে তখন!

৩।
ভাবতে হয় ভীষণ
হিসাব নেবে মহাজন
মেলাবে কে এখন
সময়ও নেই বেশিক্ষণ!

৪।
তবুও ভাবে কিছুক্ষণ
ফাঁকি চলে কতক্ষণ
হাতে সময় অল্পক্ষণ
কী হবে যে কখন!

৫।
কে আছে আপন
কোথায় আপনজন প্রিয়জন
পরিজন আত্মীয়স্বজন বন্ধুগণ
কাছে নেই স্বজন।

৬।
বিপদে বন্ধুর লক্ষণ
ক্ষুধায় উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ
লোভে কুমন্ত্র গ্রহণ
বিশ্বাসে মন্ত্র শ্রবণ।

৭।
এমনি করে কতোজন
ভাগ্যে সিংহাসনে আহরণ
জোটে ক্ষমতার আসন
ময়দানে বক্তৃতা ভাষণ।

৮।
বনে যায় রাবণ
কাঁপায় রাজনীতির অঙ্গন
দুর্নীতিতে গড়ে বিলাসভবন
চামচিকা করে তৈলমর্দন।

৯।
এভাবেই চলছে ভূবণ
মরছে দেশের জনসাধারণ
চালিয়ে যায় আন্দোলন
নিশ্বাস থাকে যতক্ষণ।

১০।
হোক না মরণ
চলুক দমন পীড়ন
করবো না পলায়ন
প্রভুকে করবে স্মরণ!

১১।
একজন দুইজন তিনজন
ক্ষমতায় আসে যতজন
তারাই করছে ভোজন
কে আছে আস্থাভাজন?

১২।
মেলেনা মনের মতন
এমনই হিসাবের ধরন
বোধহয় জীবনটা রণাঙ্গন
চলছে যুদ্ধ সর্বক্ষণ।

১৩।
থাকবেনা বেহিসাবি ধন
ধরবে দুর্নীতিদমন কমিশন
বিফল চেষ্টা প্রাণপণ
শ্রীঘরে করবে প্রেরণ।

১৪।
সরগরম আদালত প্রাঙ্গণ
হিসাব দাওরে মদন
কোথায় করছো ভ্রমণ
কী কী করছো গোপন?

১৫।
অবৈধ সোনাদানা বাসভবন
সেজেছো পুরোহিত ব্রাহ্মণ
কতনা নাট্য মঞ্চায়ন
উজাড় করেছো বনায়ন।

১৬।
খেয়েছ কতো শিল্পায়ন
খেয়েছ তেল চিনি লবণ
মেরেছ মানুষ যখনতখন
এবার হবে পতন।

১৭।
হোক সুন্দর ভূষণ
থাকুক সুন্দর কথন
দুষ্কৃতকারী হয়না পরিবর্তন
শুধুই মঞ্চ রূপায়ণ।

১৮।
বৈশাখে বাতাস সনসন
তীব্র বেগে আগমন
একসময় থামে ঝড়তুফান
শান্ত হয় আসমান।

১৯।
করজোড়ে করি পণ
হে প্রভু নারায়ণ
করো দুষ্টের দমন
গড়াও সুন্দর জীবন।

২০।
কর্মের ফলটা এমন
সুকর্মে মিষ্টি ফলন
দুঃখ কর্মের উপার্জন
সৎপথে করো গমন।

নবীজীকে কটূক্তির প্রতিবাদ

28640

যারা মহানবীকে নিয়ে করে কটূক্তি,
তাদের সাথে হবে না কোনও চুক্তি।
করবো বয়কট, দেখা দিক যত সংকট,
করবো ঘৃণা, চলবে প্রতিবাদ ধর্মঘট।

মুসলিম হিন্দু ইহুদী বৌদ্ধ খ্রিস্টান,
আমরা সকলেই একই মায়ের সন্তান।
নেই কোনও ভেদাভেদ, সকলেই সমানসমান,
আল্লাহ ঈশ্বর গড একজনই, তিনিই মহান।

কবিতা

29

মৃতের কাছে স্বপ্নের গুরুত্ব থাকতে নাই
যেমন স্বপ্নের কাছে মৃতের কোন গুরুত্ব নাই।
খুব শীঘ্রই যুক্ত হবে সারি সারি কফিন-
যৌথ জীবনের বিস্মৃতি থেকে জন্ম নেয়া সহস্র প্রশ্ন,
নীরবে আত্মহুতি দেয়া বিবেকের ধ্বনি!

অতএব, নিশ্চিত থাকো
দ্বিখণ্ডিত বিশ্বাসের তর্জনী গর্জে উঠার অপেক্ষায়।

জীবের মৃত্যুই নিশ্চিত

2807

মরতে চায় না কেউ বাঁচতে সবাই চায়,
বাঘের সাথেও করে যুদ্ধ বাঁচতে দুনিয়ায়।
এই দুনিয়ায় সুখশান্তি সবাই পেতে চায়,
ভাগ্যগুণে কেউ পায় কেউ বুক ভাসায়।

জায়গা জমি বাড়ি গাড়ি চায় যে সকলে,
একদিন চলে যাবে সবাই সবকিছুই ফেলে।
রাজা-বাদশা সাধু-সন্ন্যাস মহাজ্ঞানীও হলে,
মরণকে সবাই করছে বরণ সকালে বিকালে।

তবুও হায় ভুলে যায় সবাই বাস্তব অতীত,
মৃত্যুকে করে না স্মরণ গায় ভবিষ্যৎ সংগীত।
যা-কিছু আছে এই দুনিয়ায় সবকিছুই অনিশ্চিত,
চিরসত্য স্রস্টার বিধান জীবের মৃত্যুই নিশ্চিত।

.
ছবিটি নারায়ণগঞ্জ শ্মশান থেকে তোলা। একদিন ছবির মতো আমিও শবদেহ হয়ে শ্মশানে যাবো, তা একশো-তে-একশো নিশ্চিত!

মা বুলি

aW1

বিহান বেলায় প্যাটের ভিতর টুঁ টুঁ কর্ য়্যা কাইনতে থাকে
খিদা…খিদা…জগতটকে সাপুটে খায়্যেঁ ফেলার লেগ্যে
মনট তখন হাটুর পাটুর…

ছুটুবেলার ইস্কুলঘরের ছামুটে যুন লাল ধুলার রাস্তাট সিদ্যা
জঙ্গলের কালা আন্ধারে সিঁধাইনছে
উয়ার অগল বগলে মাঠ গুডু (দিকুরা যাকে ইন্দুর বলে)
খাম আলু দুচার পেইলেই দিন পুরা রাত পুরা লিসচিন্দি।

ইস্কুলঘরে ছুটুবেলাট বডই হিচিকিচানো,
সর্দি নাকে সিলেট পিনসিল আর আঁখ লাল
ম্যাস্টরগুলান খালি মারে দিকুদিগের বুলি না বইললেই…

গাঁওবুড়া বইলথ এমন দিন আইসবেক রে আইসবেক
আপন আপন অলচিকিতেই লিখা পড়া
বেটা বিটি গুলাও বাঁইচবেক দিকু দিগের বুলি থিক্যে!

আজও সেই ইস্কুলঘর, আজও সেই সর্দি নাকের ছুটু ছুটু মানুষগুলা
আজও সেই বাবুদের ঘরের লাল চোখ ম্যাস্টর,

দু টাকা কিলো চালও উরাই ল্যায়
দিকু বুলিও উরাই সিখাই জবরদস্তি
আজও সেই লেংটি পইরে ইস্কুলঘরের পাস হয়্যাঁ
গুডু খুঁজা, খাম আলু খুঁজা…

মরন ইস্তক আমার ছামুতে মা বুলি অলচিকি
সিলেটে লিখ্যা হয়্যেঁ এখনো এলো নাই গ মহাজন!

কুরবানির শিক্ষা

যারা ভাবো কুরবানিটা উৎসব বই অন্যকিছু নয়
তাদের ষোলআনা জীবনের ষোলআনা-ই ক্ষয়।
এই কুরবানির রয়েছে যে গৌরবময় এক গাঁথা
তাকওয়ার পরাকাষ্ঠায় নবী ইব্রাহিম হলেন মাথা।
আল্লাহর রাহে নিবেদিত তাঁর প্রিয়পুত্র ইসমাইল
ত্যাগের এই মহিমায় সুখবর দিলেন জিবরাইল।
খুশি হলো গ্রহ-তারা,ফেরেশতারা এবং আকাশ
সেই খুশিতে খোদা কুরবানির নিয়ম করেন প্রকাশ।

তবুও কিছু কিছু খারাপ লোকেতে পশু হত্যা কয়
তারা সারাবছর মাংশ খায়, সেটা কি হত্যা নয়?
জীবন, মরণ সবকিছু আল্লাহর সৃষ্টি, তাঁরই দান
তাঁর তরে যে জীবন দিবে, সে-ই হবেন মহীয়ান।
আমরা কেবল শিক্ষা নেব, নেব দীক্ষা তাকওয়ার
তবেই মোদের করবেন ক্ষমা, মহান পরওয়ার।
আজ ঘরে ঘরে বিলিয়ে দেবো, জান্নাতি সেই সুখ
তবেই অন্ধসমাজ থেকে পালিয়ে যাবে ভাই দুখ।।

তাঁর ইচ্ছা

288

তাঁর হুকুম ছাড়া যদি
না নড়ে গাছের পাতা,
কার এমন শক্তি আছে
ছিন্ন করে কারোর মাথা?

তাঁর হুকুম ছাড়া যদি
হবেনা চন্দ্র-সূর্য উদিত,
কার এমন সাধ্য আছে
বিনা দোষে করবে দন্ডিত?

তাঁর হুকুম ছাড়া যদি
হবেনা দিন আর রাত,
কার এমন ক্ষমতা আছে
ঝরাবো শিলাবৃষ্টি আর বজ্রপাত?

তাঁর হুকুম ছাড়া যদি
হয়না জলোচ্ছ্বাস ঝড়-তুফান,
কারো কী এমন সাধ্য আছে
ভাঙবে ঐ দেবমূর্তি হনুমান?

আমরা এখন গুমোট পৃথিবী থেকে বিবর্তন হয়ে ভাইরাল

2899 আমরা এখন গুমোট পৃথিবী থেকে বিবর্তন হয়ে ভাইরাল পৃথিবীতে পদার্পণ করেছি। যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত স্টার না হওয়ার হতাশায় জর্জরিত। আমরা এখন পৃথিবীর যে কর্নারে বসবাস করছি এখানে মানব সভ্যতার বিকাশ খুব কমই হয়েছে এখানে সত্য অপ্রিয় বলে মনে করা হয় মিথ্যাকে তেলের কারখানা রিজার্ভ করে তেল মাখানো হয়। এখানে সত্য বলা নিষেধ সত্য বললে চাকরি থাকবে না। তাই লোকে বলে …

ওরে সত্য পালা…
যখন তোর সময় আসবে
মিটাবি তোর জ্বালা
ওরে সত্য তুই
অন্ধকারের চোরাগলিতে
যা হারিয়ে যা
কখন বিপদ ঘনিয়ে আসবে
রাখবে গলায় পা
সময় থাকতে চা হারিয়ে যা।

এই সময়টা অসময় তোর
যখন হবে ভোর
যখন উদয় সূর্য হবে তোর
ধারদেনা সব মিটিয়ে নিবি তবে
তোর আলোর ওই চমক দেখলে
হাসি থাকে না যার
বেজার মুখে কন্ঠ রোধে
উতলা হবে তার।

জীবনটা আজ বাঁচার জন্য
সামলে নিয়ে চল
সামনেই তোর আলোর দিগন্ত
প্রকাশ হবে ভোর
যা হারিয়ে যা,
ছাড়িয়ে যা সব পেছন স্মৃতি
রাখবি বেঁধে আড়াল কৃতি
খুব সামনেই আসবে সময় তোর।

ভোর হবে ওই জ্বলবে আলো
পাপের নিশান ভাংবে ভালো
চাপা পড়ে গেলেও সত্য
উঠবে জেগে তোর।
ধৈর্য ধরে আড়াল হয়ে চল
আসবে আলো ওই সন্নিকটে
বিনের আওয়াজ নিয়ে
সাপ ধরা ওই মন্ত্র পড়ে
সত্য এসে মারবে ছোবল ঘাড়ে
গলে যাবে মিথ্যার কপাট খানি।

নিজের শান্তি খুঁজতে গিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তাকে অশান্তিতে রাখছি!

289

আমার ঠাকুরদা’র সংসারে শুধু তিন ছেলে ছিলো। এই তিন ছেলের মধ্যে যনি সবার বড়, তিনিই ছিলেন আমার বাবা। আর যেই দুইজন ছিলেন, উনারা আমার বাবা’র ছোট ছিলেন। সেই হিসেবে ওই দুইজন আমার কাকা। একজন মেজো কাকা, আরেকজন ছোট কাকা। এখন হয়তো কেউ বেঁচে নেই। আমার বাবা’র সংসারে আমরা দুই ভাই চার বোন।

আমরা বড় হয়ে যখন ছয় ভাই-বোন কিছু-না-কিছু নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ, মারা-মারি করতাম, বাবা তখন ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করতেন। আমাদের সাথে জোরাজুরি করেও যখন ঝগড়া থামাতে পারতেন না, তখন বাবা বাড়ির উঠোনে বসে কপালে হাত রেখে চোখের জলে বুক ভাসাতেন।
কাঁদতে কাঁদতে বলতেন, “ওরে তোরা আর ঝগড়া-ঝাটি করিস না! আমার ভালো লাগে না! আমাকে আর অশান্তিতে রাখিস না! হে দয়াল, আমাকে মৃত্যু দাও! আমি আর সইতে পারছি না!”

সেসময়ে বাবার কান্নাকাটি নিয়ে এতো মাথা ঘামাইনি। যা নিয়ে এখন প্রায় সময়ই ভাবি! এখন বুঝি, সেসময় বাবা কেন কেঁদেছিল! সেসময় বাবা আমাদের ঝগড়া-ঝাটি সইতে পারছিলেন না বিধায় কেঁদে কেঁদে কপাল ঠুকছিল। যদিও এখন বাবা, বড়দাদা, বড়দি এখন বেঁচে নেই, তবুও সেসব ঘটনা নিয়ে এখন নিরালায় বসে খুবই ভাবতে হচ্ছে।

হ্যাঁ, খুব ভাবি এবং খুবই চিন্তা করি। সেইসাথে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি। আচ্ছা, সেসময়ে আমাদের ঝগড়া-ঝাটি দেখে আমার বাবা যে এতো কষ্ট পেয়ে কেঁদেছিলেন, বাবার কান্না দেখে মহান সৃষ্টিকর্তা কতটুকু কষ্ট পেয়েছিলেন?

আমার এই প্রশ্নের কারণ হলো, আমাদের ভাই-বোনের মতো এই পৃথিবীর সেবাইতো মহান সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি! সবাইতো এক জায়গা হতে এবং একইভাবে এই পৃথিবীতে এসেছি।

তা-ই যদি হয়, তাহলে আবারও জানতে ইচ্ছে করে, এই পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা ক’জন? উত্তর আসে, এই পৃথিবীর সকল জীবের সৃষ্টিকর্তা একজনই!

তাহলে আমরাতো সবাই একজনেরই সৃষ্টি! সেই হিসেবে আমরা সবাই একে অপরের ভাই-বোন অথবা নিকটাত্মীয়! ধর্ম হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন। তাতে আবার দোষের কী? যে যেই ধর্মের অনুসারীই হোক, ডাকছে তো এক জনকেই। আমার একজন ভাই ও-তো নিজের ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। মহান সৃষ্টিকর্তাকে জন্মগত ধর্মে থেকে যেই নামে ডেকেছিল, সেই নামে না ডেকে যেই ধর্ম গ্রহণ করেছে– সেই ধর্মমতে মহান সৃষ্টিকর্তাকে ভিন্ন নামে ডাকবে; সেটা স্বাভাবিক!

যেমন আমার বাবাকে কেউ বাবা, কেউ কাকা, কেউ জেঠা, কেউ মামা, কেউ দাদা, কেউ পিসা, কেউ মেসো, কেউ ঠাকুরদাদা বলে ডেকেছিল।

তদ্রূপ এই পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল মানুষরা মহান সৃষ্টিকর্তাকে যার যার ধর্মমতে ভিন্ন-ভিন্ন নামে ডাকছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা একজনই। আমরা সবাই একজন মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি! সেই হিসেবে আমরা সবাই সবার ভাই-বোনের মতো অথবা সবাই সবার নিকটাত্মীয়।

তাহলে আমাদের ঝগড়া-ঝাটি, মারা-মারি, কাটা-কাটি দেখে মহান সৃষ্টিকর্তা কি আমার বাবার মতো কষ্ট আর অশান্তি ভোগ করছে না? যেখানে আমরা তাঁর কৃপা পাবার জন্য উপাসনা করি। তাঁকে সন্তুষ্টি করার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পারি, সেখানে তাঁকে অশান্তিতে রাখছি কেন? আমাদের নিজের অশান্তি কি মহান সৃষ্টিকর্তার অশান্তি নয়?

আমার মনে হয়, এই কারণেই আজ পৃথিবীর সব দেশেই অশান্তি বিরাজ করছে। আর এই অশান্তির মূল কারণই হচ্ছে, আমাদের বাড়াবাড়ি, মারামারি, আর মহান সৃষ্টিকর্তাকে খুশি রাখতে না পারা এবং নিজেদের শান্তি খুঁজতে গিয়ে স্বয়ং মহান সৃষ্টিকর্তাকে অশান্তিতে রাখা।

বি:দ্র: বন্ধুগণ, আমার লেই লেখাটা কাউকে উদ্দেশ্য করে লিখিনি। লেখাটা আমার নিজের ব্যক্তিগত ভাবনা থেকে লিখেছি। কারোর মনে আঘাত লাগলে অবশ্যই ইনবক্সে জানাবেন। আর ভালো লাগলো মন্তব্যে প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ রইল।