বিভাগের আর্কাইভঃ জীবন

আল্লাহ সর্ব শক্তিমান

ইয়া আল্লাহ! ইয়া রাব্বুল আলামিন!
অফুরন্ত অসীম তোমার গুণ
ইচ্ছে হলেই সৃষ্টি করো তুমি
শুধু বলো ‘কুন-ফায়াকুন’।
তুমি শুধু বলো, ‘হও’ আর তা সব
নিমিষেই হয়ে যায়
দেখা-অদেখা বিরাজ অসীম
তসবিহ পড়ে সেজদায়।

কেউনা পারে দেখতে তোমায়
না পারে কেউ ছুঁতে
ক্লান্তি তোমায় ধরতে পারেনা
নিদ্রায় যাওনা শুতে।
এতো সুন্দর! এতো নিয়ামত!
এইযে বসুন্ধরা
তুমি সুন্দর তাই সবই সুন্দর
তোমার কুদরতে গড়া।

মহা পরিকল্পনাকারী
তুমি হে-অধীশ্বর
নশ্বর ভ্রম্মান্ডে শুধু
তুমিই অবিনশ্বর।
সকল সৃষ্টির শ্রষ্ঠা তুমি
কোরআনে করেছ পেশ…
তোমার কোথাও শুরু ছিলোনা
কোথাও হবেনা শেষ!

এই যুগে

27879

আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
স্কুল কলেজে যাই,
স্কুল কলেজে গিয়ে মোরা
অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল চালাই।

ক্লাসে না হোক লেখা পড়া
না হোক পরীক্ষা,
ফেসবুক টিকটকে দিবে মোদের
যুগোপযোগী শিক্ষা।

ফেসবুকে পাবো প্রাণের বন্ধু
টিকটকে গাইবো গান,
গুগলকে মোরা প্রশ্ন করবো
তথ্য কোথায় পান?

ইউটিউবে গুজবের ভিডিও দেখে
গ্রাম-গঞ্জ সংঘর্ষ বাঁধাবো,
ফেসবুকে গুজবের স্ট্যাটাস দেখে
অসহায় মানুষদের কাঁদাবো।

গুজব ছড়িয়ে পুড়িয়ে দিবো
প্রতিপক্ষের ঘর-বাড়ি,
ভাংচুর লুটপাট লাঠিপেটা করে
সহায়সম্বল নিবো কাড়ি।

এদেশ ওদেশ ৬

(শুরু করেছি ভারত – বাংলাদেশ – পাকিস্তানের ময়নাতদন্তমূলক নিবন্ধ “এদেশ ওদেশ”। লেখাটি আগে এক‌টি কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমার মনে হয় ২০১৫ সালে লেখা এই নিবন্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। আজ ষষ্ঠ পর্ব।)

পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী জুটি ইস্কান্দার মির্জা ও লিয়াকত আলি খানের শাসনকাল ছিল গণতান্ত্রিক। যদিও রাষ্ট্রের ঘোষিত নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অব পাকিস্তান। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত এক অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে যেতে হয়েছিল। এই সময়ে ছয় জন প্রধানমন্ত্রী পদ পেয়েছেন এবং দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অপসৃত হয়েছেন।

গণতন্ত্রের এই দুরবস্থা সৃষ্টির জন্য আপাতদৃষ্টিতে সেখানকার ভঙ্গুর শাসনকাঠামো কে দায়ী করা হলেও আসলে এর পেছনে ছিল আমেরিকার আগ্রাসনের ইচ্ছা। পাকিস্তানে গণতন্ত্র কায়েম থাকলে সেখানকার সিস্টেম কে দিয়ে নিজের স্বার্থে কাজ করানো সম্ভব নয় জেনেই ১৯৫৮ তে জেনারেল আইয়ুব খান কে দিয়ে ক্যু ঘটিয়ে শাসনযন্ত্র দখল করানো হলো।

কিন্তু মিলিটারি স্বৈরশাসনের ওপরে ভরসা রাখলেও সেখানে মৌলবাদকে কাজে লাগানোর প্রয়োজন তখনো পড়েনি। ধর্মপালন সব দেশেই সাধারণ মানুষের এক অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে এই ধারণা সেই প্রাচীন কাল থেকেই মনের মধ্যে বাসা বেঁধে আছে। কিন্তু ধর্মপ্রচারকরা সব ধর্মেই কখনো হানাহানির কথা বলেননি। সর্বদাই শান্তির কথা, পবিত্রতার কথা, সৌহার্দ্যের কথা বলেছেন। অথচ সেই মহাপুরুষদের বাণী বিকৃত করে একদল কুচক্রী সেই সময়েই সক্রিয় হচ্ছিল ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু রাষ্ট্র তখনো তাদের কাজে লাগায়নি।

আইয়ুবের দেখানো রাস্তা ধরেই ক্ষমতায় এলেন ইয়াহিয়া খান – জুলফিকার আলি ভুট্টো জুটি। আর ক্ষমতায় এসেই উপনিবেশ পূর্বের ওপরে শোষনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন তাঁরা। এদিকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দুনিয়া জুড়ে প্রতিবাদের সামনে সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু চালে একটু ভুল হয়ে গেল।

আয়তন অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের সাংসদ সংখ্যা যে নীতিনির্ধারক হয়ে উঠতে পারে এই গণনা সম্ভবত স্বৈরশাসকরা করেন নি। দেশের দুই অঞ্চলেই তখন পাকিস্তান মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কুশাসনের জন্য জমেছে ব্যাপক ক্ষোভ। তরতর করে বাড়ছে আওয়ামী লিগের জনপ্রিয়তা। মুসলিম লীগের বিরোধী সব দলই তখন গ্রহণযোগ্য। আর এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যেই হলো নির্বাচন।

হরেকরকম দুর্নীতির আশ্রয় নিলেও শেষরক্ষা হলোনা। ক্ষমতা হস্তান্তর অবশ্যম্ভাবী জেনে সক্রিয় হয়ে উঠলো গণতন্ত্র বিরোধী সবকটি অশুভ শক্তি। যেনতেনপ্রকারে নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক সাংসদপদ বিজয়ী আওয়ামী লিগ এবং বিরোধী জোটকে ক্ষমতায় আসা আটকাতে তড়িঘড়ি কারারুদ্ধ করা হলো শেখ মুজিবর রহমান সহ প্রথম সারির নেতাদের। আলোচনার সব প্রয়াস ভেস্তে দেওয়া হলো ইচ্ছাকৃত ভাবে। পূর্বের উপনিবেশে পাকিস্তানের যেসব এজেন্সি তাদের স্বার্থরক্ষায় নিযুক্ত ছিলো, যেমন আলবদর, রাজাকার ইত্যাদি এই সংগঠনগুলোর শক্তিবর্ধন করে দেশব্যাপী বিক্ষোভ প্রতিরোধের কাজে সামিল করা হল। আর নামানো হল সেনাবাহিনী। ঠিক সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পাকিস্তান মৌলানা ভাসানী সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের চেষ্টা করেও গ্রেপ্তার করতে পারে নি। ভাসানী ভারতে পালিয়ে এসে জনমত ও রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলেন।

একদিকে পূর্ব পাকিস্তানের পিষ্ট বাঙালি হাতে তুলে নিচ্ছিল রাইফেল অন্যদিকে কূটনৈতিক দৌত্য চালিয়ে পূর্বের অংশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন স্বতন্ত্র সত্তা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়ে গেল। মজার ব্যাপার এই ভীষণ দুর্দিনে কোনো পীড়িত মানুষের মনে ধর্মের নামে অধর্মের বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবনা উঁকি দিতে পারেনি কারণ সেই সময়ে লড়াইয়ের মুখ্য চরিত্রে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কেউ মৌলবাদী ছিলেন না।

(আবার কাল)

অসহায় মানুষের আহাজারি

27862

যে দেশের অগণিত মানুষের
নেই যে বাসস্থান,
সে দেশে ভিনদেশি মানুষেরা
পেয়ে যায় স্থান।

যে দেশের নাগরিক ভোটার জনগণ
রাত কাটায় বস্তিতে,
ভিনদেশ থেকে আসা মানুষগুলো
রাত কাটায় স্বস্তিতে।

রাজধানী সহ বড় বড় শহরের বস্তিগুলোতে
আচমকা আগুন জ্বলে,
তখন ভিনদেশি শরণার্থীরা বাসস্থান চেয়ে
মিছিল করে দলেদলে।

যে দেশের নাগরিক থাকে রেললাইনের পাশে
অযত্নে আর অবহেলায়,
ভিনদেশি শরণার্থীরা এদেশে করে খুনখারাপি
তারাই ফুর্তিতে দিন কাটায়।

যে দেশের সিংহভাগ মানুষ ভূমিহীন অসহায়
তারাই হয় উচ্ছেদের শিকার,
ভিনদেশ থেকে এসে করে সন্ত্রাসী চুরি বাটপারি
তাদেরই দেয় বিশ্ব পুরস্কার।

শ্রীলংকার বিপর্যয় এবং আমাদের শিক্ষা

27878

খুব বেশিদিন আগের কথা নয় যখন শ্রীলংকাকে মনে করা হতো দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক জায়ান্ট। মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন এসব খাতে শ্রীলংকার সাফল্য ছিল ঈর্ষণীয়। কিন্তু হঠাৎ কী এমন ঘটল যে, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করা দেশটি এখন অস্তিত্বের সংকটে। বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকট এবং ঋণের ভারে জর্জরিত দেশটি এমন অবস্থায় ঠেকেছে যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। তেল সংগ্রহের জন্য হাজারো মানুষ লাইনে ভিড় করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পেট্রোল পাম্পগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। এক ইরানের কাছেই জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ আড়াইশ মিলিয়ন ডলার বকেয়া। অথচ ২০০৬ সালে গৃহযুদ্ধ সমাপ্তির পরে শ্রীলংকার মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২০১২ সাল পর্যন্ত ঠিকই ছিল। সে সময় মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৩৬ ডলার থেকে বেড়ে হয় ৩ হাজার ৮১৯ ডলার, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। দেশটি ২০১৯ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশেও পরিণত হয়েছিল। কিন্তু কোনো অর্জনই ধরে রাখতে পারেনি। প্রবৃদ্ধি কমতে থাকলে পরের বছরেই বিশ্বব্যাংক তাদের নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে নামিয়ে দেয়। এরপর রপ্তানি কমে চলতি আয়ে দেখা দেয় বড় ভারসাম্যহীনতা। কিন্তু বড় ধস নেমেছে মূলত গত দুই বছরে, করোনা অতিমারির সময়ে। সবশেষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরও বিপদে পড়ে তারা।

আই এম এফ এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর শ্রীলংকাকে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অথচ হাতে আছে ২৩১ কোটি ডলার। সুতরাং ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, নতুন করে আরও ঋণ নিতে হচ্ছে। যতই বলা হোক, চীনের ঋণের ফাঁদে বন্দি শ্রীলংকা। কিন্তু এর একাধিক কারণ রয়েছে। মূলত অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, লাগামহীন বৈদেশিক ঋণ, ঋণ পরিশোধে বেহাল অবস্থা, কর কমানো, পর্যটন ও রেমিট্যান্স খাতের বিপর্যয়, অর্গানিক চাষে বিপর্যয় এবং সংকট সামাল দেওয়ার ব্যার্থতাই বর্তমান মহাবিপর্যের প্রধান কারণ। এ প্রসঙ্গে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক শ্রিমাল আবিরত্নে বলেন, “কিছু বড় বড় প্রকল্প শ্রীলংকার জন্য ‘শ্বেতহস্তীতে’ রূপান্তরিত হয়েছে।”

এবার বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। যদিও আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, শ্রীলংকার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে আমি এও মনে করি, সাবধানের কোনো মার নেই।

ঋণ পরিশোধের দায়ের দিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে বিপজ্জনক অবস্থানে নেই। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের ঋণের হার এখন জিডিপির ৩৮ শতাংশ। যার মধ্যে বিদেশি ঋণের হার ১৩ শতাংশ। সুতরাং আপাতত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা, আইএমএফের হিসাবে এই হার ৫৫ শতাংশের বেশি হলেই বিপদ। তবুও শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনে বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর কারণ- যেসব বড় প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ছে, তার প্রায় সব ক’টিই অবকাঠামো প্রকল্প। এই খাতের ঋণের মধ্যে সরবরাহ ঋণও আছে। যার সুদহার বেশি এবং ঋণ সরবরাহকারীরাই প্রকল্প তৈরি করে দিচ্ছে। এসব প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ না হলে ব্যয় আরও বাড়বে।

তাছাড়া বড় প্রকল্পের কারণে ঋণ পরিশোধের দায় বাড়ছে দ্রুতগতিতে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র বলছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে পরিশোধ করতে হয়েছিল ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯১ কোটি ডলার। ফলে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। এদিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হয়ে গেলে কম সুদে আর ঋণ পাবে না বাংলাদেশ। মিলবে না বাণিজ্যে বিশেষ অগ্রাধিকার সুবিধা।
এসব কারণে অর্থনীতিতে ক্রমাগত চাপ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, দেশে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫৬২ কোটি ডলার। অন্যদিকে এই অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিও ঋণাত্মক। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। আমদানি ব্যয় আরও বাড়লে রিজার্ভে টানও বাড়বে। সুতরাং আগে থেকেই সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।
————————–

কাহিনীর ভেতর কাহিনী…

2762

ব্যক্তিগত একটা গল্প দিয়েই শুরু করি লেখাটা। কথা দিচ্ছি খুব একটা লম্বা করবো না।

স্তেলার সাথে পরিচয়টা ছিল অনেকটা প্রি-এরেঞ্জেড। আমার রুমমেট আন্দ্রেই শনিবার ক্লাসে যাওয়ার আগেই বলে রেখেছিল সন্ধ্যায় যেন কোথাও না যাই। তার সাথে একটা অপরিচিত জায়গায় যেতে হবে। নিজের সেরাটা প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিয়েই যেন তৈরি থাকি এমন একটা তাগাদাও ছিল।
আন্দ্রেই সেন্ট পিটার্সবার্গে নতুন। এসেছে প্রশান্ত মহাসাগরের রাশান দ্বীপ সাখালিন হতে। বড় শহরে আসার আগে সে কোনদিন বিদেশীর সাথে কথা বলা দূরে থাক, সামনে হতেও দেখেনি। আমি নাকি প্রথম এবং তা-ও আবার রুম-মেট হিসাবে।

রাতে একটা পার্টিতে যেতে হবে। মেয়েদের পার্টি। পার্টি করার মত যথেষ্ট ছেলে নেই তাদের হাতে। আন্দ্রের গার্ল-ফ্রেন্ড তাদেরই একজন। দুজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ছেলে যোগাড়ের। আমি তাদেরই একজন।

ওখানেই আন্দ্রের মাধ্যমে পরিচয় স্তেলার সাথে। গায়ে গতরে একফোঁটা চর্বি নেই, যা রুশ মেয়েদের জন্যে কিছুটা অস্বাভাবিক। সে রাতে বলতে গেলে হুর-পরীদের আসর জমেছিল। সৌন্দর্যের রহস্য উন্মোচন করতে অবশ্য খুব সময় লাগেনি। মেয়েদের সবাই ছিল স্থানীয় ব্যালে স্কুলের ছাত্রী।
এ প্রফেশনে আসতে শরীর ও সৌন্দর্য ছিল বাধ্যতামূলক। জমায়েত মেয়েদের কারোরই ঘাটতি ছিলনা এসবের।

স্তেলার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর ধরে নিয়েছিলাম লৌকিকতা রক্ষার জন্যে কিছুটা সময় ব্যায় করে ও চলে যাবে অন্য ধান্ধায়।

সে রাতে তা আর ঘটেনি। গভীর রাত পর্যন্ত এক সেন্ডের জন্যে সে আমাকে ছেড়ে যায়নি। আপনি হতে তুমি পর্যন্ত আসতে খুব একটা পথ পাড়ি দিতে হয়নি। এবং লম্বা এক কাহিনীর শুরু হয়েছিল সে রাতেই।

শনিবার বিকেল হলেই যে চলে আসত আমার এখানে। জানালার নীচে দাঁড়িয়ে বরফের ঢিল ছুড়ে জানান দিত নিজের উপস্থিতি। আমিও তৈরি হয়ে নীচে নেমে যেতাম।
আর দশটা রুশ মেয়ের মত সে নৈশ-ক্লাব, রেস্তোরা অথবা ভদকা পার্টিতে না গিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যেত ব্যালে অনুষ্ঠানে। ঢুঁ মারতো স্থানীয় ফিলারমনিতে। পরিচয় করিয়ে দিত চাইকোভস্কি, সেস্তাকভিচের কম্পোজিশনের সাথে। নিজের উচ্চাশা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতো না। তারও ইচ্ছা একদিন চাইকোভস্কির সোয়ান লেকের মূল চরিত্রে সে নাচবে।

এভাবেই ঘুরে গেল বছর। ততদিনে আমার অস্তিত্বের সবকিছুতে স্তেলার উপস্থিতি অবিচ্ছেদ্য। শনিবার সন্ধ্যা মানেই আমাদের।

হঠাৎ এক শনিবার তার আর দেখা নেই। আমি তৈরি হয়ে অপেক্ষায় আছি তার ঢিলের। কিন্তু না…বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল তবু তার দেখা নেই।
একটু অবাক হলাম। এমনটা হওয়ার কথা নয়। ধরে নিলাম নিশ্চয় শরীর খারাপ।
পরের শনিবারেও দেখা নেই। এবং তারপরের শনিবারেও না। অপেক্ষার প্রহর লম্বা হতে আরও লম্বা হওয়া শুরু করল। শীতের পর বসন্ত এলো এবং বসন্তের পর গ্রীষ্ম। যেন হালকা বাতাসে মিলিয়ে গেল জলজ্যান্ত একটা মেয়ে।
আস্তে আস্তে মেনে নিলাম এই অন্তর্ধান। ধরে নিলাম নিশ্চয় অন্য কারও বাহু-লগ্না হয়েছে ততদিনে। পৃথিবীর এ প্রান্তে এসব নিয়ে হা হুতাশ করার অবকাশ ছিলনা। আমিও হেঁটে গেলাম আমার পথে।
ধীরে ধীরে মুছে গেল স্তেলার স্মৃতি। আমার রুম-মেট আন্দ্রেই কোন হদিস দিতে পারল না।

প্রায় দেড় বছর পর সন্ধান পেলাম স্তেলার। সে একটা চিঠি পাঠিয়েছে। ঠিকানা দেখে চমকে উঠলাম, হাইফা, ইসরায়েল।

আন্দাজ করতে পেরেছিলাম সে ইহুদি। কিন্তু এ নিয়ে কোনদিন প্রশ্ন করিনি। নিজেই লিখেছে ইসরায়েল যাওয়ার কারণ। গোটা পরিবার ইতালি হয়ে পাড়ি জমিয়েছে ওদিকে। তার একমাত্র ভাই এখন ইসরায়েল আর্মির সৈনিক। নতুন বয়ফ্রেন্ডও রুশ ইমিগ্রেন্ট এবং সে সেনাবাহিনীর মেজর।

এবার আসি এ লেখার মূল পর্বে।

ইসরায়েল নামের দেশটার মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৫ভাগ রুশ। সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় ছলেবলে ওরা দেশ ছাড়তো। অনেক সময় ওদেরও ঠেলে দিত দেশের বাইরে। ইহুদিরা সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিল ২য় শ্রেণীর নাগরিক। সমাজের সর্বক্ষেত্রে ওরা ছিল অবহেলিত। প্রতিটা রুশ ইহুদির কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন ছিল একসময় ইসরায়েল চলে যাওয়া।

প্যালেস্টাইনিদের দরদে উথলে উঠছে রুশ স্বৈরশাসক ভ্লাদিমির পুতিনের মন। তার এই মায়া অক্টোপাসের মত আঁকড়ে ধরছে ধর্ম-প্রিয় বাংলাদেশিদের মন। তাই রুশদের ইউক্রেইন আক্রমণে অনেক স্বদেশী জেহাদের মত কলম লড়াই করছেন রুশদের হয়ে। অনেকের জন্যে কারণ একটাই, প্যালেস্টাইনিদের প্রতি রুশ সমর্থন ও ইউক্রেইন প্রেসিডেন্টের অন্য শিবিরে অবস্থান।

এখানেই আসে স্তেলা, তার ভাই ও নতুন বয়ফ্রেন্ডের কাহিনী।
ফার্স্ট জেনারেশন রুশ ইহুদিদের অনেকেই নাম লেখায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে। তাদের মিশন এক ও অদ্বিতীয়; প্যালেস্টাইনিদের নির্মূল।
পশ্চিমে একটা কথা চালু আছে; ইসরায়েলি বর্বরতায় অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতা যদি আমেরিকা হয় তবে সে অর্থ দিয়ে কেনা অস্ত্র চালাতে যে মানব সম্পদের দরকার হয় তার মূল যোগানদাতা রাশিয়া।
রুশ ইহুদিদের অনেকেই হাতে অস্ত্র নিয়ে হামলে পরে প্যালেস্টাইনি শিশুদের উপর। আকাশ হতে গুড়িয়ে দেয় গাজার বাড়ি-ঘর। পুরস্কার হিসাবে পায় প্যালেস্টাইনি এলাকায় সম্পত্তি। ওখানেই সেটলার হিসাবে বিষের কাঁটা হয়ে বাস করে প্যালেস্টাইনিদের নাকের ডগায়।

এদেশ ওদেশ ৪

(শুরু করেছি ভারত – বাংলাদেশ – পাকিস্তানের ময়নাতদন্তমূলক নিবন্ধ “এদেশ ওদেশ”। লেখাটি আগে এক‌টি কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমার মনে হয় ২০১৫ সালে লেখা এই নিবন্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। আজ চতুর্থ পর্ব।)

দুই দেশেই প্রথম দিকে মৌলবাদকে মদত দিয়েছিল শাসকগোষ্ঠী। পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল উপনিবেশ পূর্বঅংশকে তাঁবে রাখা, আর এপারে ভোটের রাজনীতি। ফলে উত্তর বা পশ্চিমের পাক অঞ্চলে বিষবৃক্ষ হয়ে বাড়ছিল উগ্রবাদ। ভারতের পূর্বাঞ্চলে।

নিরীহ বাঙালি বহুদিন চুপ করেই ছিল। আগেই বলেছি, ভাষাআন্দোলনের মত কিছু অরাজনৈতিক ক্ষোভ ছাড়া তারা মোটামুটি মেনেই নিয়েছিল বঞ্চনার ইতিবৃত্ত। তলেতলে ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল কিন্তু বিস্ফোরণের স্তরে পৌঁছে যায়নি।

সেই ৪৭ এ অনেক স্বপ্ন দেখেছিল মানুষ। ভেবেছিল ইংরেজ গেলে স্বর্গরাজ্য হবে। প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছুটেছিল। মানুষকে বোঝানো হয়েছিল স্বাধীনতা মানেই দুর্নীতির অবসান, স্বাধীনতা মানেই দারিদ্র্য মুক্তি।

অথচ বাস্তবে দেখা গেল, ইংরেজ আমলে তাদের চাটুকারবৃত্তি করে যারা রীতিমতো পরাক্রমশালী আর ধনশালী হয়ে উঠেছিল, তারাই মাছির মত শাসন মধুর চারপাশে ভীড় জমালো। আর আশ্চর্যজনক ভাবে তারাই ক্ষমতার চাবিকাঠি পেতে শুরু করল।

এতে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের আখেরে লাভ হলেও দ্রুত বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে শুরু করল শাসক দলগুলো। একের পর এক দুর্নীতির ছবি ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল। এপারে জীপ কেলেংকারীর দায়ে পদত্যাগ করলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কৃষ্ণমেনন। বিশ্বাস হারিয়ে মানুষ খুঁজতে লাগলো বিকল্প।

প্রশাসনিক স্তর ক্রমশঃ আমলা নির্ভর হয়ে উঠলো। আর যেহেতু শীর্ষ আমলারা প্রায় সকলেই সমাজের উচ্চশ্রেণীর তাই স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছিল তাদেরই। মধ্যবিত্ত উচ্চের পদলেহন করে উপরে ওঠার মসৃণ চেষ্টা একমনে করছিল। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র আর দরিদ্রেতর অসহনীয় যন্ত্রণায় দিনাতিপাত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

এর মধ্যেই ছোটোখাটো ইস্যু থেকে জ্বলে উঠছিল আগুন। দাবানলের শক্তি কব্জা করে ছড়িয়ে পড়ছিল। অভুক্ত মানুষ সামিল হচ্ছিল তেভাগা আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, এক পয়সার ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির আন্দোলনে।

এর মধ্যেই নরমপন্থী কংগ্রেসের দিক থেকে মানুষ ঝুঁকে পড়ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর দলগুলোর দিকে। এদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি বেড়ে উঠছিল তরতর করে। নীচুতলার সমাজ থেকে উঠে আসা কিছু যুবক যুবতী সমাজ পাল্টে বিভেদ অবসানের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। অন্যদিকে বিষগাছের মত সংগোপনে ছড়াচ্ছিল ধর্মের নামে বেসাতি করা মৌলবাদের শিকড়।

একটা সময় এল, যখন আম মানুষ কংগ্রেসের নামই শুনতে চাইত না। তবুও ভিভিআইপিদের বিভিন্ন দেবস্থানে ভোট নদী পার হওয়ার জন্য মাথা ঠোকার ছবি ফলাও করে খবরের কাগজে ছাপা হলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে দেখত, কারন ভেতরে ছিল আজন্মলালিত হাজার কুসংস্কার। আর দুর্নীতির দুর্গন্ধ আড়াল করতে নেতারাও বেশী করে প্রচারের শিরোনামে থাকার জন্য এরকম ছবির পোজ দিতে লাগলো।

(ফের আগামীকাল)

আমার সাথে বন্ধুত্ব করো না

f-BG20d

আমার সাথে বন্ধুত্ব করো না,
আমি প্রতিদিন নিজের সাথে যুদ্ধ করছি।
এবং আমি মানুষকে দূরে ঠেলে দিই,
এমনকি তাঁর জন্য আমি দুঃখিত না।

তুমি যা ভাবছ আমি সে নই,
আমি ঠান্ডা, অন্ধকার, এবং দূরের বরফে ঢাকা চকচকে অসীম পাহাড়
হয়তো আমার বোঝা তুমি টানতে পারবে না বলে বদলে ফেলবে পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য।

জানি তুমি আমার এই সামান্য কথা বুঝবে না।
তাই ধীরে ধীরে নিজেকে আড়াল করছি
আমি শুধু নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করছি।
অন্যের প্রতি আমার কোনো আক্ষেপ নেই দুর্বলতা নেই আকৃষ্টতা নেই

আমি তোমাকে সতর্ক করছি,
আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে না।
আমি যখনই কোথাও সামান্য স্থায়িত্ব গ্রহণ করি
সেই সীমা কখন অতিক্রম করবে তা স্থির করে আমার মন। এমনও হতে পারে আমি তখনই চলে যাই।

আমি আমার নিজের সমস্যার সম্মুখীন হই না,
আমি শুধু অদৃশ্য হয়ে পালিয়ে যাই।
আমার চোখের পলক ফেলার আগে তোমার দৃষ্টির বাইরে

আমি মেয়ে নই, কিংবা কোনো সংকটাপন্ন হৃদয় না
আমার তোমার সাহায্যের দরকার নেই।
দরকার নেই অতীব আবেগের যেখানে রক্ষার চেয়ে বিনাশের প্রভাব বেশি।

আমি ঘুমাচ্ছি না প্রিয় বন্ধু আমার,
আমার তোমার ঐন্দ্রজালিক চুম্বনের দরকার নেই।
আমি রাজকন্যা নই,
আমার প্রিন্স লাগবে না।
আমি ভিখারি নই,
আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি।

আমার সেই সময় ফুরিয়ে যায়নি
যখন আমি দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে বলব
এই যে দেখো আমি সেই,
সেই আমি আজ তোমাদের মাঝে।

কিন্তু একটা জিনিস আমার ভয় লাগে,
কারো মন ভেঙ্গে যেতে ভয় পাই।
কারণ আমি জানি অনুভূতি কি,
বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রনা আমার হৃদয়েও রয়েছে আমিও হৃদয় ভাঙতে পারি গড়তে পারি
জানার মধ্যে অজানা কি সেটা জানিনা।

হাতের তর্জনী আঙুলের কিছু গুণাবলী

2788

আমাদের হাতে পাঁচটি করে আংগুল আছে। প্রতিটি আংগুলের আবার নির্দিষ্ট করে নামও আছে। এই আংগুল গুলো আবার জ্যোতিষ শাস্ত্রের সাথেও সম্পর্কিত। আসুন জেনে নিই আপনার আংগুল গুলোর নাম এবং এ সম্পর্কিত কিছু কার্যাবলী।

প্রথমতঃ আঙ্গুলের নাম ও আঙ্গুলগুলির পরিচয় করে দেওয়া যাক।
ত- তর্জনী, বৃহস্পতির আঙ্গুল
ম- মধ্যমা, শনির আঙ্গুল
অ- অনামিকা, রবির আঙ্গুল
ক- কনিষ্ঠা, বুধের আঙ্গুল
বৃ- বৃদ্ধা বা বুড়ো আঙ্গুল

বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাড়া তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠার প্রত্যেকটির তিনটি করে পর্ব আছে। অর্থাৎ আঙ্গুলগুলি তিনভাগে ভাগ করলে এক এক ভাগকে এক একটি পর্ব বলে।
প্রথম পর্ব- প্রকৃত জ্ঞান ও ধর্মবোধ, আধ্যাত্মিক জগৎ
দ্বিতীয় পর্ব- প্রেম-প্রীতি ও উচ্চাকাঙ্খা, মানসিক জগৎ
তৃতীয় পর্ব- হঠকারিতা, জেদ ও প্রভুত্ব, বৈষয়িক জগৎ

তর্জনী বিচারঃ দেবগুরু বৃহস্পতি এই আঙ্গুলের অধিপতি। এই আঙ্গুল কীভাবে আপনার ওপর কিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে তা দেখে নিন, মিলিয়ে নিনঃ—

১। তর্জনীর প্রথম পর্ব অন্য পর্বের চেয়ে লম্বা হলে আত্মাভিমানী, দাম্ভিক, পণ্ডিত ব্যক্তি ও কুসংস্কার গ্রস্ত হয়।

২। এই আঙ্গুল যতটা লম্বা হওয়ার কথা তার থেকে ছোট হলে বিচার-বিবেচনা ও চিন্তার গভীরতা থাকে না। অপরে সহজে তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

৩। এই আঙ্গুল অন্য সব আঙ্গুলের চেয়ে বড় হলে সে অত্যাচারী, ক্ষমতালিপ্সু, দাম্ভিক ও বাস্তব জ্ঞানশূন্য হয়।৪। এই আঙ্গুল স্বাভাবিক হলে আদর্শবান, চরিত্র বাদী, বিদ্বান, ভাবুক ও ব্যক্তিত্ব শীল হয়।

৫। এই আঙ্গুল লম্বায় অনামিকার সমান হলে সে চাটুকার ও ধনাকাঙ্খী হয়।

৬। এই আঙ্গুল খুব লম্বা অহঙ্কারী, প্রভুত্বকামী ও ভাল জননেতা হয়।

৭। আঙ্গুলটি বাঁকা হলে মান-যশ-গৌরব যতটা পাওয়ার কথা ততটা পাবে না। নানা বাঁধা-বিঘ্ন বার বার আসবে। অন্যের কাছে অপদস্থ হতে হবে। আত্নীয়-স্বজন উপকার নিয়ে পরে ভুলে যাবে। স্বীকার করবে না।

লেখাটি “বাংলা পঞ্জিকা” অ্যাপ থেকে সংগৃহীত।

এদেশ ওদেশ ৩

(শুরু করেছি ভারত – বাংলাদেশ – পাকিস্তানের ময়নাতদন্তমূলক নিবন্ধ “এদেশ ওদেশ”। লেখাটি আগে এক‌টি কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমার মনে হয় ২০১৫ সালে লেখা এই নিবন্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। আজ তৃতীয় পর্ব।)

পুরাকালে ভারতবর্ষের পরিধি ছিল আফগানিস্তানের কাবুল (গান্ধার প্রদেশ) থেকে নাগপ্রদেশ (বর্তমানের অরুনাচল)। এখনকার মায়ানমার ছিল অন্য দেশ, আর উত্তরে ছিল ইলাবৃতবর্ষ (বর্তমানে তিব্বত)। এই বিশাল এলাকা ভারতবর্ষের অন্তর্গত হলেও বিভিন্ন স্বাধীন শাসকের শাসনে থাকত। এই এলাকা থেকে মুঘল আমলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গান্ধার প্রদেশ হয়ে গেল পাঠান ভূমি। ইংরেজ আমলে ক্রমাগত বিদ্রোহে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন দেশ হয়ে গেল তরাই অঞ্চল।

রাজনীতির কান্ডারীরা যাই করুন না কেন, এই বিশাল ভূমিখন্ডের সাধারণ মানুষ কিন্তু এসবে মাথা ঘামাত না, সত্যি কথা বলতে তারা এত বিভেদের বৃত্তান্ত জানতোও না। রুটি রুজির জোগাড়ে সীমান্ত অতিক্রম করা তখন অন্যায় ছিল না।

৪৭ পরবর্তী দেশগুলোতে শাসকেরা ছিল উচ্চবর্ণের এবং রীতিমতো ধনী সম্প্রদায়ভূক্ত। এরা প্রায় সকলেই ছিল বিদেশে উচ্চশিক্ষিত। আমজনতার শিকড়ের সমস্যা সম্পর্কে এরা কেউই খুব একটা ওয়াকিবহাল ছিল না। রাজতন্ত্র নামেই বিদায় নিয়েছিল। রাজা মন্ত্রী নবাব উজির নাজিরের দল ক্ষমতা ভোগ করছিল নিজেদের মধ্যে গোপণ আঁতাত এবং প্রকাশ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ ছড়ানোর কূট খেলা খেলে।

ভারতে নেহরু আর পাকিস্তানে জিন্নাহ্ র নরম নীতির কাল ফুরিয়ে এল খুব দ্রুত। পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব মুখে আলোচনায় বসার কথা বললেও কার্যত উগ্র আক্রমণ করে স্ব স্ব দেশে নিজের জনপ্রিয়তা বজায় রাখা বা বাড়িয়ে মূলতঃ ভোট বৈতরণী পেরনোর চেষ্টা করতে শুরু করেছিল।

এই সহজ রাস্তার সন্ধান তারা পেয়েছিল ৪৬ – ৪৭ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়েই। নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে এতে ইন্ধন যুগিয়ে ছিল অপসৃয়মান ইংরেজ শাসক।

এদিকে দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসনের ছায়ায় থাকতে থাকতে ঔপনিবেশিক শাসকের সমস্ত খারাপ ধ্যানধারণা মজ্জায় মজ্জায় ঢুকেছিল ওই উঁচুতলার শাসকদের মধ্যেও।

দুই স্বতন্ত্র দেশ ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের আলাদা বৃত্ত গড়ে নিল। অথচ একটু চেষ্টা করলেই বিভাজনের কষ্ট ভুলে সৌহার্দ্য বাড়ানো যেত অনায়াসে।

ভারতে বাড়ছিল হিন্দু মৌলবাদ। আর পাকিস্তানকে ততদিনে গ্রাস করতে শুরু করেছে অন্ধ মৌলবাদ। প্রাদেশিকতায় আচ্ছন্ন পাকিস্তানের উচ্চসম্প্রদায় ভারত থেকে আসা উদবাস্তুদের গায়ে ছাপ মেরে তাদের করে দিল স্বতন্ত্র দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মোহাজির। সিন্ধপ্রদেশের বালুচিস্তান অবহেলিত রয়ে গেল। আর পূর্ব পাকিস্তান হল উপনিবেশ। ভারতেও সর্বাধিক গুরুত্ব পেল উত্তর ও পশ্চিমের প্রদেশগুলো। উত্তর পূর্বের প্রদেশগুলোর জন্য বরাদ্দ হল চরম অবহেলা।

বঞ্চনা আনলো চরম দারিদ্র্য, দারিদ্র্য আনলো ক্ষোভ। ক্ষুব্ধ প্রজন্ম আবেদন নিবেদনের রাস্তা ছেড়ে হাতে তুলে নিল অস্ত্র। অশিক্ষিত এইসব বিদ্রোহীরা খুব সহজেই ধর্মের নামে মিথ্যা প্রচার করা ক্ষমতালোভীদের খপ্পরে পড়ে গেল।

(আবার আগামীকাল)

জেরুজালেম হয়ে রামাল্লা… ঘুরে এলাম পশ্চিমে তীরের প্যালেস্টাইন পর্ব ১১

274368

– ব্রেকফাস্ট ইন তেল আভিভ-

অনেকদিন হয়ে গেল পাখিদের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে না। তাসমান পাড়ের সিডনির ফ্লাটটা ছিল সাগরের খুব কাছে। ওখানে কান পাতলে হরেক রকম পাখিদের গান শোনা যেত। অবশ্য বেলা গড়ানোর সাথে এনযাক প্যারেডের গাড়ির স্রোত গ্রাস করে নিতো মিহি সুরের কিচির মিচির গান। অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে আসার পর অনেকদিন মিস করেছি বীচের পাশে রোদময় ঝলমলে সকাল গুলো।

বেন ইহাহুদা স্ট্রীটের উপর সেন্ট্রাল হোটেলটার কোন শ্রী ছিলনা। সাদামাটা মোটেলের মত। প্রথম দেখায় আমাদের মগবাজারের কোন হোটেলের সাথে গুলিয়ে ফেললে অন্যায় হবেনা। তবে সব বিচারে ক্লান্ত, শ্রান্ত পরিব্রাজকদের সস্তায় রাত কাটানোর আয়োজন ছিল সন্তোষজনক। অনলাইনে হোটেল খুঁজতে গিয়ে ডাউন টাউনের কাছাকাছি এর চাইতে সস্তা কোন হোটেল খুঁজে পাইনি। তাই হোটেলটার ভালমন্দ নিয়ে অভিযোগ করার কারণ ছিলনা।

সেই হোটেলেই ঘুম ভাঙ্গল পাখিদের ডাকে। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকাতে মনটা হাল্কা হয়ে গেল। দুটো কবুতর বসে আছে রেলিংটায়। থেমে থেমে শব্দ করছে। ব্যস্ত হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কাঁচের ওপাশে আমাকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে চুপ হয়ে গেল। হঠাৎ করেই উড়াল দিল। হয়ত ভয় পেয়েছে। কিছুক্ষণ পর নতুন দুজন অতিথি এসে ফিরে গেল পুরানো কাজে।

রাতের ঘুম খুব একটা লম্বা হয়নি। পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি এখনো অন্ধকার। হঠাৎ করেই অংকটা মাথায় এলো যা এয়ারপোর্টে নেমে কষে নিয়েছিলাম। আমার শহরের চাইতে ৯ ঘণ্টা এগিয়ে ইসরাইলের সময়। সে হিসাবে এখন ভোর প্রায় ৪টা। দুয়েকটা গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে বাইরে। রাস্তা পরিষ্কার করার ট্রাকটাকে দেখলাম বেশ সময় নিয়ে পরিষ্কার করছে।

বাইরে তাকালে মনে হবে ঢাকার কোন গলির কার্বন কপি। পাশের জরাজীর্ণ দালানের অনেক জায়গায় পলিস্তরা খসে খসে পরছে। ছাদের উপর পুরানো দিনের এন্টেনা। জানালার পর্দাগুলোও স্যাঁতস্যাঁতে। শুধু বাকি ছিল মসজিদ হতে আজানের ধ্বনি ভেসে আসার।

274343 ভোরের আলো ফুটতেই রাতের খিদাটা মোচড় দিয়ে উঠল। অপেক্ষা করার সময় ছিলনা। নিশ্চয় এতক্ষণে দোকান-পাট খুলে গেছে। হয়ত হোটেল গুলোতে ব্রেকফাস্ট গ্রাহকদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। বেরিয়ে পড়ার এটাই ছিল উত্তম সময়। আরও একপ্রস্ত গোসল শেষে পরিষ্কার জামাকাপড় পড়ে লবির দিকে রওয়ানা দিলাম।

আবারও হতাশ হলাম। হোটেলের মুল ফটক তখনো তালা দেয়া। রেসিপশনে কেউ নেই। আনাতোলি স্তেপানভিচকে কোথায় দেখতে পেলাম না। অজান্তেই মুখ হতে অশ্রাব্য একটা গালি বেরিয়ে এলো। লবির কফি মেশিন হতে আবারও এক কাপ কফি নিয়ে ফিরে এলাম রুমে।

ভ্রমণের ক্লান্তি ও পেটে সাহারা মরুর ক্ষুধার কারণে রাতে ব্যাপারটা খেয়াল করিনি। সকালে তা বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে গেলাম। ফোন ও ল্যাপটপের চার্জ কমে আসছে। বড়জোর ঘণ্টা-খানেক চলবে। এরপর রি-চার্জ না করলে দুটোই নিস্তেজ হয়ে পড়বে।

সমস্যাটা নতুন নয়। এর আগেও পৃথিবীর অনেক দেশে মুখোমুখি হয়েছি। তবে প্রতিবার তার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছি। কিন্তু এ যাত্রায় ব্যপারটা একবারের জন্যেও মাথায় আসেনি।

রি-চার্জের জন্যে এডপটার দরকার। এখানকার পাওয়ার কর্ডের সাথে আমেরিকান কর্ডের মিল নেই। কানেকশনের জন্যে চাই এডপটার। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না করা গেলে আমার গোটা সফরটাই অন্ধকারে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিল।

৮টার দিকে দ্বিতীয় চেষ্টায় বেরিয়ে পরলাম হোটেল হতে।

তেল আভিভ। যে কোন মানদণ্ডে আধুনিক একটা শহর। চারদিক চকচক করছে সবকিছু। নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থাও যে কোন আধুনিক শহরের মত। রুম হতে দেখা পুরানো বাড়িটা মনে হল একটা যাদুঘর। নিজের মত করে দাঁড়িয়ে আছে। অথবা হতে পারে সক্ষম-হীন কোন পরিবার শেষ অবলম্বন হিসাবে আঁকড়ে ধরে রাখছে বাড়িটা। এক কথায় পাশের কোন বাড়ির সাথেই মিল নেই।
সময় গড়ানোর সাথে বাড়ছে মানুষের কোলাহল, গাড়ির মিছিল। জেগে উঠেছে তেল আভিভ।

274444

হোটেলের ঠিক উলটো দিকে বেশকটা রেস্টুরেন্ট চোখে পড়লো। খোলার আয়োজন চলছে কেবল। দরজায় সময় পরখ করতে গিয়ে হতাশ হলাম; ৯টার আগে একটাও খুলবে না।

সময় করে ব্রেকফাস্ট করতে চাইলে আমাকে আরও ঘণ্টা-খানেক সময় ব্যয় করতে হবে কোথাও। সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম নতুন রেস্টুরেন্টের সন্ধানে।

গর্জনটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছিল। কিছু মানুষের পোশাকও ইঙ্গিত দিচ্ছিল সন্দেহটার। নিশ্চয় সামনে কোথাও সমুদ্র। আপাতত সবকিছু উঠিয়ে রেখে ওদিকটায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। জমে থাকা সময় কাটানোর উপযুক্ত জায়গা! কয়েক ব্লক হাঁটার পর আন্দাজ করে নিলাম কোন দিক হতে বইছে এ বাতাস।

কিছুটা এগুতেই চোখে পরল দৃশ্যটা। সমুদ্র! শহরের রাস্তা গুলো ঢালু হয়ে ওদিকেই যাচ্ছে আমার মত। দুপাশের স্কাই স্ক্র্যাপার গুলো বলে দিচ্ছে জীবন এখানে অনেক দামী। হাতে যথেষ্ট অর্থ না থাকলে এমন এলাকায় বাসকরা সম্ভব নয়। এক কথায় বিত্তবানদের এলাকা।

প্রথম দেখায় তালগোল পাকিয়ে যায় সবকিছু। মগজের সবকটা কলকব্জা একবিন্দুতে এসে স্থির হয়ে যায়। ভূমধ্য সাগরের রাশি রাশি ঢেউ! সাথে নীলাভ আভা। তীরে এসে আছড়ে পরে মিশে যাচ্ছে বালুকা বেলায়। কলোম্বিয়ার সান্তা মার্তায় দেখা ক্যারিবিয়ান সাগরেরই যেন কার্বন কপি। ঢেউ ভারত মহাসাগরের মত উত্তাল না হলেও তাতে আছে এক ধরণের মায়াবী আবহ। সহজে চোখ ফেরানো যায়না।

বীচের কাছাকাছি আসতেই দেখলাম খুব একটা ভিড় নেই। দুয়েকজন বয়স্ক মানুষ তাদের প্রাতঃকালীন জগিং করছে। বিকিনি পরা মহিলারাও জড়ো হচ্ছে। একজন ভারতীয় মহিলাকে একটু অবাক হলাম। দৃষ্টিকটু পোশাক পরে শামিল হওয়ার চেষ্টা করছে মুল কাফেলায়।

২৪ ঘণ্টারও কম সময় এ দেশে। এরই ভেতর একটা উপসংহার টানলে বোধহয় ভুল হবেনা। এ দেশের মেয়েরা বিপদজনক সুন্দরী। কেবল গায়ের রঙ আর চেহারাই নয়, শরীর সঠিক রাখার মাপকাঠিতেও ওরা এগিয়ে। ছেলেদের সৌন্দর্য বিচার করার দায়িত্ব আমার নয়। কিন্তু এদের দিকে তাকালেও মনে হবে ঈশ্বর হয়ত নিজ হাতে তৈরি করেছেন।

বীচের পাশেই দেখা মিলল মাকডোনাল্ডের। পরিচিত দোকানের গন্ধ পেয়ে ওদিকে রওয়ানা দিতে দেরী করলাম না। খোলা থাকলে নাস্তা ওখানেই সেরে নেয়া যাবে ভেবে স্বস্তি পেলাম। কিন্তু হতাশ হলাম। ভেতরে কোন আলো নেই। একেবারেই অন্ধকার। দেখে মনে হল মেরামত চলছে। খাবার যেন অধরা হয়ে গেল তেল আভিভ শহরে।

ঘণ্টা-খানেক সময় কাটিয়ে হোটেলে ফেরার রাস্তা ধরলাম। ওখানের রেস্টুরেন্ট গুলো এতক্ষণে খুলে যাওয়ার কথা। দরদাম অথবা প্রকারভেদ খুঁজে দেখার মত অবস্থা ছিলনা। ঢুকে পরলাম ছিমছাম একটা ক্যাফেতে।

মেনু হিব্রু ভাষায়, তাই বুঝতে অসুবিধা হল। তবে তালিকার পাশে ছবি থাকায় কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারলাম।

সাজগোজে পরিপক্ব সুপার আবেদনময়ী মেয়েটা ভুবন-জুড়ানো হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘এদিকটায় এই প্রথম বুঝি?’

আমিও সহজ ভাবে উত্তর দিলাম। ‘একেবারে ব্রান্ড নিউ। চব্বিশ ঘণ্টারও কম।

সময় নিয়ে রান্না করলো। প্লেট যখন টেবিলে রেখে গেল আমার চোখ ছানাবড়া। বিশাল আয়োজন। ছোট একটা বাস্কেটে চার টুকরো পাউরুটি। টমেটো সসে ডুবানো দুটো ডিম ভাজি। শসা ও টমেটোর সালাদ। সাথে অলিভ ওয়েল। এবং ফ্রেশ এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস। তেল আভিভের প্রথম ব্রেকফাস্ট। এক কথায় ইসরায়েলে আমার প্রথম খাবার।

এদেশ ওদেশ ২

(শুরু করেছি ভারত – বাংলাদেশ – পাকিস্তানের ময়নাতদন্তমূলক নিবন্ধ “এদেশ ওদেশ”। লেখাটি আগে এক‌টি কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমার মনে হয় ২০১৫ সালে লেখা এই নিবন্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। আজ দ্বিতীয় পর্ব।)

কিন্তু গোল বাঁধলো এখানেই। গান্ধীর পরেই সবচেয়ে সিনিয়র নেতা ছিলেন মহম্মদ আলি জিন্নাহ্। আর এই জিন্নাহ্ থাকলে নতুন দেশের প্রধানমন্ত্রী যে তিনিই হবেন তা বুঝেই দিল্লীর মসনদ দখলে শুরু হলো চিরাচরিত ষড়যন্ত্রের খেলা।

স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার সময়েই রীতিমতো প্রস্তাব পাস করিয়ে জিন্নাহ্ কে অর্থদপ্তর দেওয়ার কৌশল, সুভাষচন্দ্র কে কংগ্রেস থেকে তাড়ানোর কৌশল, এই খেলারই শাখাপ্রশাখা। স্বভাবতই মর্যাদায় আহত জিন্নাহ্ বেরিয়ে গিয়ে তৈরী করলেন মুসলিম লীগ।

কিন্তু মজার ব্যাপার জিন্নাহ্ বা তাঁর দল প্রথমেই স্বতন্ত্র ভূমিখন্ডের দাবী তোলেন নি। কংগ্রেসের শীর্ষ ক্ষমতালোভীরা একের পর এক বৈষম্যমূলক আচরণ করে যাওয়ার পরে জিন্নাহ্ দাবী তুললেন পাক – ই – স্তান এর।

নিজে জিন্নাহ্ উদারমনস্ক পাশ্চাত্য শিক্ষার মানুষ ছিলেন। ধর্মীয় আচার তিনি নিজে প্রায় পালনই করতেন না। অপরদিকে হিন্দু মৌলবাদ তখন শিকড় ছড়াতে শুরু করেছে। বিভিন্ন ভাবে বিপর্যস্ত আমজনতাকে দলের সমর্থনে টানতে গেলে সবচেয়ে সহজ উপায় ধর্মীয় মেরুকরণ। অথচ হিন্দু মৌলবাদীরা সেটা করতে শুরু করে দিয়েছে, অতএব মরীয়া কংগ্রেস নিজেকে পুরো সেদিকে ঝুঁকিয়ে দিল। মুসলিম লীগ বুদ্ধিমানের মত সে কাজটা সেরেই ফেলেছিল। ফলতঃ সবচেয়ে সহজ রাস্তায় হাঁটল দুই দলই। আনঅফিসিয়ালি দুই দলের গায়ে দুই ধর্মের তকমা পড়ে গেল।

ভারত বা পাকিস্তান দুই দেশই জন্মলগ্ন থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেয়ে অন্য বৃহৎ ক্ষমতাশালীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে শুরু করেছিল। পাকিস্তান আমেরিকার আর ভারত রাশিয়ার। অথচ প্রায় সমসাময়িক স্বাধীনতা লাভের পরেই চীন বা জাপান অনেক এগিয়ে যাচ্ছিল শুধুমাত্র নিজস্ব ভাবনা আর উদ্যোগে।

বৃহৎ রাষ্ট্র তাদের নিজেদের স্বার্থেই এই দুই নবগঠিত দেশ কে মদত দিতে শুরু করল, কারন ভৌগলিক অবস্থানের সুবাদে দুই দেশই অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। বড় দেশের দাদাগিরি বা স্বার্থ বজায় রাখতে যেকোনো একটা দেশ তাদের হাতে রাখা অবশ্যম্ভাবী ছিল।

আর এখানেই শুরু হল ধর্মীয় মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত। নেহরু বা জিন্নাহ্ দুজনের কেউই আর যাই হোক মৌলবাদী ছিলেন না। কিন্তু তাঁদের চারপাশে আবর্তিত মৌলবাদ ঠেকানোর কোনো চেষ্টাই তাঁরা বা তাঁদের দল করেনি ভোটের মুখের দিকে তাকিয়ে। অশিক্ষিত, হতদরিদ্র দুইদেশের মানুষগুলোকে যে শুধু ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে এক ছাতার তলায় এনে নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকার পথ প্রশস্ত হয়, তা তাঁদের দুই দলই ততদিনে বুঝে গেছিল। আর এরা ক্ষমতায় থাকলে বৃহৎ শক্তিরও এই অঞ্চলে ছড়ি ঘোরাতে সুবিধা হয় বলে তারাও এতে হয় চোখ বুজে ছিল নয়তো অর্থ, সরঞ্জাম দিয়ে বাড়তে সাহায্য করে চলেছিল। সাধারণ জনতা এই কূটকথা বুঝতেই পারেনি।

(আবার আগামীকাল)

বিপরীত দৃশ্য

মানুষের ঘরে কারনে অকারনে উঁকি দেয়া স্বভাব
ভাণ্ডারে অনেক বিসদৃশ দৃশ্য জমা আছে।

যখন কোথাও উঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকে না
তখন সে একমনে দৃশ্যান্তরে যায়। বিপরীত দৃশ্যে

নিজেকে প্রতিস্থাপিত করে আহত হয়
তার শরীর থেকে রক্ত ঝরে। গত পরশু

আবদাল মোল্লার পোয়াতি স্ত্রী মৃত সন্তান
প্রসব করে। সে জানে শিশু মৃত্যুর কারণ;

তারও দুদিন আগে চোখে সে দেখেছে
আবদাল মোল্লার ডান পা সজোরে লাথি মারছে।

নিন্মাঙ্গে রক্ত দেখে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিল
তবু মগজে দৃশ্য জমা হয়ে গেছে।

সে সাক্ষী দিতে পারতো কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্য;
বদমাশ ছাড়া কেউ মানুষের ঘরে উঁকি দেয় না।

বদমাশের সাক্ষ্য সম্পূর্ণ মূল্যহীন। তার সাক্ষ্যের
অপেক্ষা না করে বউও দুদিন পরে মরে গেল।

জেরুজালেম হয়ে রামাল্লা… ঘুরে এলাম পশ্চিমে তীরের প্যালেস্টাইন পর্ব ১০

27434

পৃথিবীর এ প্রান্তে আমার প্রথম রাত। দ্বিধা, সংশয় আর বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ইসরায়েল নামের দেশটায় সহজে পৌঁছতে পারবো এর কোন নিশ্চয়তা ছিলনা। সংশয় থাকলেও ভয় ছিলনা। সীমান্ত হতে ফিরিয়ে দিলে তেমন কিছু হারানোর ছিলনা আমার।

ইসরায়েল নামের একটা দেশ দেখার আকর্ষণ কি আমাকে এখানটায় টেনে এনেছে! বোধহয় না। তেল আভিভ, হাইফা, রিশহন যিলিওনের মত ইসরায়েলি শহরগুলোতে হয়ত আর দশটা শহরের মত জীবন আছ।, তবে সে জীবন আমার মত গোবেচারা টাইপের একজন টুরিস্টকে টানার জন্যে যথেষ্ট মনে হয়নি। আমি এসেছি আসলে প্যালেষ্টাইনিদের দেখতে। পশ্চিমা অর্থ ও পেশী শক্তির কাছে পরাজিত একটা জাতির জীবনকে কাছ হতে দেখার আগ্রহ নিয়েই এখানে আসা।

রাত গড়াচ্ছিল। টিক টক শব্দে ভ্রমণের ঘড়ি কখন মধ্যরাত পাড়ি দিয়েছে টের পাইনি। গরম পানিতে লম্বা একটা গোসল দিয়ে শরীর মন হতে ঝেড়ে ফেললাম ভ্রমণের ক্লান্তি। ধবধবে সাদা বিছানাটাকে এ মুহূর্তে দেখাচ্ছিল লাস্যময়ী নারীর তুলতুলে শরীরের মত।

না, ঘুমের কাছে নিজকে সপে দেয়ার সময় না এটা। পেটের ক্ষুধা ক্যান্সারের মত চেপে বসেছে গোটা শরীরে। মগজ প্রায় বিকল। যেকোনো মূল্যে কিছু একটা দিতে হবে পেটে। পোশাক পালটে রওয়ানা দিলাম লবির দিকে।

আনাতোলি স্তেপানভিচকে দেখে একটু অবাক হলাম। রাত অনেক হয়েছে অথচ ছোট টেবিলটায় বসে হাবিজাবি কি যেন লিখছে। আমাকে দেখে রাজ্যের বিরক্তির নিয়ে চোখ তুললেন।

কোন ভণিতা না করে জানতে চাইলাম হোটেলের ক্যান্টিন হতে খাওয়ার মত কিছু পাওয়া যাবে কিনা। রাত হয়ে গেছে, এসময় ক্যান্টিন খোলা থাকার কথা না। তাই অনুরোধের ভাষায় বিনয়ের কোন অভাব রাখলাম না।

2743

হোটেলের কোন ক্যান্টিন নেই, ভাবলেশহীন আনাতোলির চেহারায় সামান্যতম বিনয় ছিলনা। আমিও নাছোড় বান্দা। পেটে কিছু দিতেই হবে, তা না করলে সারারাত জাগতে হবে। বুঝিয়ে বলতে কিছুটা নরম হল হোস্টের চেহারা। হাতে একটা চাবি ধরিয়ে অনুরোধ করল ফেরার সময় যেন শব্দ না করি। সিঁড়ির বাতি মূল সুইচ হতে বন্ধ থাকবে, তাই এ নিয়েও যেন হৈচৈ না করি তা মনে করিয়ে দিলেন।

মধ্যরাতের তেল আভিভ! হোটেলের মূল দরজা খুলে রাস্তায় পা রাখতে ঠাণ্ডা বাতাস চোখে মুখে প্রশান্তির প্রলেপ বুলিয়ে দিল। বেন ইয়াহুদা স্ট্রীট একেবারেই ফাঁকা। মাঝে মধ্যে দ্রুত গতির দুয়েকটা গাড়ি মনে করিয়ে দিচ্ছিল এ শহরেও জীবন আছে। ট্রাফিক বাতিগুলো পালা করে লাল সবুজ বাতির আভা ছড়াচ্ছে।

আমি হাঁটছি আর হন্যে হয়ে সন্ধান করছি মুখে দেয়ার মত খাবারের। আগেই লক্ষ্য করেছি পুলিশের গাড়িটা আমাকে ফলো করছে। তিনবার চক্কর দেয়ার পর ব্রেক কষলো আমার পাশে। কোন সমস্যায় আছি কিনা জানতে চাইলো। সংক্ষেপে তুলে ধরলাম মধ্যরাতে তেল আভিভের রাস্তায় পদচারণার পটভূমি। দুই ব্লক দূরে একটা নাইট ক্লাবের দিকে ইঙ্গিত করে জানাল ওখনাটায় কিছু একটা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

চারদিকে পিনপতন নীরবতা। সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছে থেমে থেমে। নিশ্চয় ভূমধ্য সাগর খুব একটা দূরে না। বেশকিছুটা দূর হতেই বুঝা যাচ্ছে নাইট ক্লাব বন্ধ হতে চলছে। কাছাকাছি আসতে ফটকের বাউন্সার জানালো তাদের ফুড অপশন ১২টার আগেই বন্ধ হয়ে যায়। কাউন্টারে হাল্কা কিছু স্ন্যাক্সের ব্যবস্থা থাকলেও এ মুহূর্তে সেটাও বন্ধ। বাড়তি কোন ঝামেলা এড়াতে আমাকে হোটেলে ফিরে যাওয়ার উপদেশ দিল।

মগবাজার মোড়ের হোটেলগুলো কি এখনো খোলা আছে? হিসাব করলে ঢাকায় নিশ্চয় এখন সকাল। হোটেলগুলোর জীবন শুরু হতে যাচ্ছে কেবল। এ মুহূর্তে গরম দুটো পারোটা আর খাসির পায়ার বিনিময়ে ইসরায়েল সফর বিকিয়ে দিতেও দ্বিধা করতাম না। বসবাসের অযোগ্য তালিকার শীর্ষে থাকা ঢাকাকেই মনে হল পৃথিবীর সবচাইতে খাদ্য-বান্ধব শহর!

আমি আসলেই ক্ষুধার্ত। তেল আভিভে এ মুহূর্তে পেটে দেয়ার মত কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই হোটেলে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। লবিতে কফি মেশিন চালু আছে। ওখান হতে বড় এক কাপ কফি নিয়ে রুমে ফিরে রাত জাগার সিদ্ধান্ত নিলাম।

আনাতোলির উপদেশ মেনে বেড়ালের মত নিঃশব্দে ফিরে গেলাম নিজ রুমে।

আজ আর ঘুম আসবেনা। হঠাৎ করেই মনে হল এ শহরে করার মত কিছু নেই আমার। দেখার তেমন কিছু থাকলেও আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। সকালে আরও এক প্রস্ত গোসল দিয়ে নাস্তা শেষ করে জেরুজালেমের দিকে রওয়ানা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

– চলবে।

শৈশব থেকে বার্ধক্য

27745


স্মৃতিময় শৈশব
সকাল-বিকাল হৈচৈ কলরব
লাফালাফি দুষ্টুমিও করে সব
চাওয়ারও কমতি নেই যত্তসব।

হাত-খড়ি সবে শুরু
অ আ ই ঈ শেখায় শিক্ষাগুরু
পাঠশালায় গমন মন করে দুরুদুরু
এভাবেই প্রাইমারি শেষে হাইস্কুল শুরু।


দুরন্ত কিশোর
যখনই হয় রাত ভোর
দে দৌড় হৈ-হুল্লোড়
ছুটে চলে দূর থেকে বহুদূর!

পড়ালেখা খেলাধুলা
সমানতালে কাটে বেলা
কখনো পড়া কখনো হেলা
এভাবেই কাটে যায় কিশোরবেলা।


মধুময় যৌবন
করে হনহন ঘুরে বনবন
কী করবে কখন অশান্ত মন
কখনো ভ্রমণ কখনো বনভোজন।

সাত পাকে পড়ে বাঁধা
জীবনসঙ্গী হয় প্রিয়তমা রাধা
হয় সংসারি বনে যায় গাধা
বাড়ে খাটুনি জীবন হয় আধা।


দুশ্চিন্তায় বার্ধক্য
ভাবে বসে শুনিনি তো গুরুবাক্য
তাই বার্ধক্যে শোন না কেউ তার বাক্য
অসহায় বৃদ্ধ সময়টা বার্ধক্য।

বার্ধক্যে আহার নিদ্রা সীমিত
শরীরে রোগ-ব্যধি থাকে নিয়মিত
কখন যে আসে ডাক থাকে চিন্তিত
যখন আসে ডাক সব হয়ে যায় স্তম্ভিত।