বিভাগের আর্কাইভঃ ব্যক্তিত্ব

বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম … জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি …

কাজী নজরুল ইসলাম।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কালপুরুষ এই মহান প্রাণ একাধারে সঙ্গীতজ্ঞ দার্শনিক সাহিত্যিক নির্ভীক দেশপ্রেমী সাংবাদিক রাজনীতিবিদ কবি এবং সৈনিক। যিনি আজীবন গণমানুষের অত্যাচার এবং দাসত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন প্রতিবাদ করেছেন।

ইংরেজী ১৯২১ সাল। তখন দেশজুড়ে চলা অসহযোগ আন্দোলন বিপুল উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। নজরুল কুমিল্লা থেকে কিছুদিনের জন্য দৌলতপুরে আলী আকবর খানের বাড়িতে থেকে আবার কুমিল্লা ফিরে যান ১৯ জুনে। এখানে যতদিন ছিলেন ততদিনে তিনি পরিণত হন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীতে। তাঁর মূল কাজ ছিল শোভাযাত্রা ও সভায় যোগ দিয়ে গান গাওয়া। তখনকার সময়ে তার রচিত ও সুরারোপিত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে “এ কোন পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মার আঙ্গিনায়, আজি রক্ত-নিশি ভোরে/ একি এ শুনি ওরে/ মুক্তি-কোলাহল বন্দী-শৃঙ্খলে” প্রভৃতি। এখানে ১৭ দিন থেকে তিনি স্থান পরিবর্তন করেছিলেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্লায় ফিরে যান। ২১ নভেম্বর ছিল সমগ্র ভারতব্যাপী হরতাল। এ উপলক্ষে নজরুল আবার পথে নেমে আসেন; অসহযোগ মিছিলের সাথে শহর প্রদক্ষিণ করেন আর গান করেন, “ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী”। নজরুলের এ সময়কার কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়েছে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি। বিদ্রোহী কবিতাটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় এবং সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতি লাভ করে। নজরুল নিজেকে বর্ণনা করেন –

আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর !

আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালবাসা তার কাকন চুড়ির কন-কন।

মহা- বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।

আমি চির বিদ্রোহী বীর –
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির !

১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ই আগস্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করে। এটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হতো। ১৯২০-এর দশকে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন এক সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর পরপর স্বরাজ গঠনে যে সশস্ত্র বিপ্লববাদের আবির্ভাব ঘটে তাতে ধূমকেতু পত্রিকার বিশেষ অবদান ছিল। এই পত্রিকাকে আশীর্বাদ করে কবিগুরু শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন –

কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু।
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।

পত্রিকার প্রথম পাতার শীর্ষে এই বাণী লিখা থাকতো। পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে প্রকাশিত হয়। এই রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দী প্রদান করেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে এই জবানবন্দী দিয়েছিলেন। তার এই জবানবন্দী বাংলা সাহিত্যে রাজবন্দীর জবানবন্দী নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। এই জবানবন্দীতে নজরুল বলেছেন:

আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজ বিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত। … আমি কবি, আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায় বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যাদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে …।

১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। নজরুলকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে যখন বন্দী জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন (১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি ২২) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য গ্রন্থটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। এতে নজরুল বিশেষ উল্লসিত হন। এই আনন্দে জেলে বসে আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে রচনা করেন।

আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে

আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে–
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।

আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে –
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার – ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে –
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ
সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস,
ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস,
গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে!
ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে
চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে,

আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;

আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ কপট কোপের তূণ ধরি,
ঐ আসল যত সুন্দরী,
কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন,
কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে!
তাদের প্রাণের ‘বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না’ বাণীর বীণা মোর পাশে
ঐ তাদের কথা শোনাই তাদের
আমার চোখে জল আসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!

আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির দুবঘাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।

মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!

কাজী নজরুল ইসলাম।
জন্ম : ২৫শে মে ১৮৯৯ ইং। ১১ই জৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ।
মৃত্যু : ২৯শে আগস্ট ১৯৭৬ ইং। ১২ই ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ। তথ্যসূত্র : আন্তর্জাল।

নামাজের সাথে সংসার

ব্যাক্তিসত্তায় আকিব সাহেব একজন ভালো মানুষ। উনি উনার স্ত্রীকে বললেন, আবদুল্লাহর মা, তুমি একজন জান্নাতি মানুষের সাথে সংসার করছো! এই কথা আমি এই জন্য বলছি যে, আমার মনে হয় আমি যখন কোন ভালো কাজ করি তখন আমি বেহেস্তে আছি। আবার যখন খারাপ কাজ করি তখন মনে হয় জান্নাতের দায়োয়ান রেদওয়ানের সাথে ঝগড়া করে জাহান্নামে জ্বলতে বের হয়ে হয়েছি। আবদুল্লাহর মা, যখনই আমি এই যাত্রায় বের হবো তখনই তুমি আমাকে মায়া দিও, মায়ার জালে আটকে রাখিও। আমার শরীয়তকে ভুলে তোমার শরীয়ত মেনে চলিও।

আবদুল্লাহর মা মুচকি হেসে বলে, “মা অধ্ধায়াকা রাব্বুকা ওমা ক্বালা” ১

আকিব সাহেব লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন, “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাযযলীমিন” ২

হঠাৎ আকিব সাহেবের মেয়ে এসে বললো, বাবা তোমার আগামীকালের জন্য তৈরী করা রুটিনটা খুব সুন্দর। সব কাজ নামাজের আগে পরে। আকিব সাহেব তার মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে বলল, ”আম্মাজান, এই রুটিনটা আমার জীবনের রাস্তা জান্নাতের দিকে করে দিয়েছে। আম্মাজান, আমি আপনারে যেমন পচন্দ করি এই রুটিনটাকেও তেমন পচন্দ করি।” আকিব সাহেবের রুটিনটা ছিলো এমনঃ

১. ফজরের আগে তাহাজ্জুদ পড়া।
২. ফজরের পরে সূরা ক্বাফ এর ৩৪-৩৭ আয়াতের তাফসীর।
নয়টার আগে পাক সাফ হয়ে বাড়ী থেকে বের হওয়া। ১০টায় আজাদ চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক।
৩. যোহরের আগে ’বিদায় হজ্বের ভাষণ’ পড়া।
৪. যোহরের পর খাওয়া দাওয়া ও আরাম করা।
৫. আসরের আগে ব্যাবসা বানিজ্যের খোজ খবর নেওয়া।
৬. আসরের পর হক সাহেবের সাথে হাটাহাটি করা।
৭. মাগরিবের পর মাদ্রাসার খোজ খবর নেওয়া।
৮. ইশার আগে জাবের সাহেবকে দেখতে যাওয়া।
৯. ইশার পর আবদুল্লাহর মায়ের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করা।
রাতের খাবার শেষে লেখালেখিতে বসা। ”বিদায় হজ্বের ভাষণ – একটি মোজেযা” সিরিজের ১০ম পর্ব লিখে শেষ করা।
১০. অযু করে ঘুমিয়ে পড়া।

ভালো থাকুক আকিব সাহেবের সংসার।

১. সূরা দোহা-৩
২. সূরা আমবিয়া-৮৭

ব্লগবুক অণুলিখন ৪৫

যার বুক জুড়ে আঁকা লক্ষ মৃত্যু, ধর্ষণ আর ক্ষুধার্ত রাতের প্রাপ্তি –
একাকী নিভৃত আত্মায় উচ্চারিত চিরকালীন বাঙালী …
একটি বিজয়ের দীর্ঘ উচ্চারণ – জয়বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

শেখ মুজিব একটি নাম, একটি ইতিহাস

মানুষের যতগুলো অনুভূতি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে ভালবাসা । আর এই পৃথিবীতে যা কিছুকে ভালবাসা সম্ভব তার মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ভালোবাসাটুকু হওয়া উচিত মাতৃভূমির জন্য । যে মাতৃভূমিকে ভালবাসতে পারে না কোন কিছুকেই তার পক্ষে ভালবাসা সম্ভব না । আমাদের এই ছোট্ট সোনার বাংলাদেশ, যার রয়েছে বীরত্বপূর্ণ গৌরব গাঁথা ইতিহাস । আর এই সাফল্যগাঁথা ইতিহাসের পিছনে রয়েছেন কয়েকজন মহানায়ক।যাদের ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারবো না ।তাদের মধ্য অন্যতম হচ্ছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।যার জন্ম না হলে এই বাংলাদেশ হত না । যার জন্ম না হলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক কোন দেশের নাম থাকতো না । এই বাংলাদেশ, এই মায়ের সৃষ্টির জনক হচ্ছে আমাদের জাতীয় পিতা শেখ মুজিবুর রহমান । এই সুন্দর বাতাস, এই সুন্দর নদী, এই স্বাধীনতা যাকে ছাড়া সম্ভব ছিল না তিনি হলেন আমাদের জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । যার কথা আজো আমাদের বুক নাড়িয়ে দেয়, আমাদের বাহুতে শক্তি এনে দেয় তিনি হচ্ছে আমাদের পরম বন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।কিন্তু এই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে কিছু কিছু কুলাঙ্গার এই নেতার বিরুদ্ধে কথা বলে । জাতীয় পিতার গৌরব গাথা ইতিহাস ম্লান করে দিতে চায় । তার ইতিহাস মুছে দিতে চায় ।এই বাংলার মানুষ কি এতই নিমকহারাম যে মাত্র ৪৭ বছর আগের ইতিহাস ভুলে যাবে? জাতির পিতার মহান অবদান অস্বীকার করবে?

‘তবু তোমার বুকেই গুলির পর গুলি চালালো ওরা
তুমি কি তাই টলতে টলতে বাংলার ভবিষ্যৎকে
বুকে জড়িয়ে সিঁড়ির ওপর পড়ে গিয়েছিলে?’

১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের মর্মস্পর্শী দৃশ্যপট এভাবেই চিত্রায়িত হয়েছে কবিতায়। সেই রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট জাতি দু’দিন পর পালন করবে, শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আঁধার রাতের রূপকল্প কেবল কবিতায় নয়, গানের কলিতেও প্রকাশ পেয়েছে_ ‘সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল, ছিল না চাঁদ’। প্রবীণরা বলেন, সেই রাতে ঢাকার আকাশে কালো মেঘ ছিল, ছিল না বৃষ্টি, ছিল না আঁধার বিদীর্ণ করা নীল জ্যোৎস্না। শ্রাবণের আঁধারে ডুব দিয়েছিল বৃষ্টিহীন রুক্ষরাত। আর এই অমানিশার অন্ধকারে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। রাজধানীর আকাশে-বাতাসে তখনো ছড়ায়নি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ থেকে আজানের সুরেলা ধ্বনি। ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘোর কৃষ্ণপ্রহরে হায়েনার দল বেরিয়ে আসে। নিদ্রাচ্ছন্ন নগরীর নীরবতাকে ট্যাঙ্ক-মেশিনগানের গর্জনে ছিন্নভিন্ন করে ওরা সংহার করে তাঁকে_ ‘লোকটির নাম বাংলাদেশ। শেখ মুজিবুর রহমান।’স্বাধীনতার মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ‘তার মৃত্যু অমোচনীয় কলঙ্কের চির উদাহরণ কোনোভাবেই কাটবে না অমাবস্যার ঘোর কৃষ্ণপ্রহর কোনো কিছুতেই ঘটবে না এর অপরাধমোচন।’৪২ বছর আগে শেষ শ্রাবণের সেই মর্মন্তুদ দিনে বিশ্বাসঘাতকরা যাকে বিনাশ করতে চেয়েছিল সেই মুজিব মরেননি, বাঙালির হৃদয়-মননে অবিনাশী হয়ে রয়েছেন_

‘ওই তাকে দেখা যায়।
দেখা যায় ওই দিনের রৌদ্রে, রাতের পূর্ণিমায়।
মুজিব! মুজিব!

জনকের নাম এত সহজেই মোছা যায়!’বঙ্গবন্ধুর জলদগম্ভীর কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল তা বাঙালির শিরায় শিরায় এখনো শিহরণ তোলে। সেই আহ্বান বাক্সময় হয়ে আছে কবিতায়_

‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি শোনালেন তার অমর কবিতাখানি এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।’বাংলাদেশের হৃদয়সম এ মানুষটির অমরত্বের কথা_

‘সহসা দেখি আমার ছোট্ট ঘরখানির দীর্ঘ দেয়াল জুড়ে দাঁড়িয়ে আছেন শেখ মুজিব;/গায়ে বাংলাদেশের মাটির ছোপ লাগানো পাঞ্জাবি হাতে সেই অভ্যস্ত পুরনো পাইপ চোখে বাংলার জন্য সজল ব্যাকুলতা’

কাগজ ছিঁড়ে যায়, পাথর ক্ষয়ে যায়, কিন্তু হৃদয়ে লেখা নাম রয়ে যায়। সেই নাম শেখ মুজিব।ইতিহাসই তার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। ‘তার জন্ম একটি জাতির উন্মেষ, নতুন দেশের অভ্যুদয় তার মৃত্যু অমোচনীয় কলঙ্ক, এক করুণ ট্র্যাজেডি বঙ্গোপসাগর শোভিত ব-দ্বীপে জ্বলজ্বল তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।’ তিনি কোনো বিশেষ দলের নন, দল-মত নির্বিশেষে সমগ্র জাতির। তার মর্যাদা সর্বজনীন।

এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর-গিরি ও নদী
ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু, ফিরিয়া আসিতে যদি
হেরিতে এখনও মানব হৃদয়ে তোমার আসন পাতা
এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা-পিতা-বোন-ভ্রাতা।

—-‘ডাকিছে তোমারে / কবি সুফিয়া কামাল

যতকাল রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরী মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
—-কবি অন্নদাশংকর রায়
<

১৫ই আগষ্ট। জাতীর জন্য এক কলঙ্কময় দিন। জাতীয় শোক দিবস। ৪২ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই দিনে একদল বিপদগামী পাক হায়েনাদের প্রেতাত্মা তথা সেনাবাহিনীর একটি চক্রান্তকারী চক্র সপরিবারে হত্যা করে বাঙালী জাতীর জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, বাঙালী জাতীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ৪৭, ৫২, ৬৯, ৭০ সহ বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর দ্বার হতে বার বার ফিরে এসেছিলেন, ৭১-এ পাকিস্তানী হায়েনারা যা করতে পারে নাই, সেই কাজটিই অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে সম্পাদন করে পাপিষ্ঠ ঘাতকরা। ওরা মানুষ নামের হায়েনার দল, ওরা শয়তানের প্রেতাত্মা। ওরা জঘন্য। ওরা বিপদগামী হিংস্র জানোয়ারের দল।একদিন যে অঙ্গুলী উচিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” সেই স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর অঙ্গুলি চিরদিনের জন্য নিস্তেজ করে দেয় ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক সেই বাড়িতে। আর কোনদিন ঐ অঙ্গুলি আমাদেরকে প্রেরণা দিতে আসবেনা, দিবেনা মুক্তির বারতা। তবে একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে তিনি মৃত্যুহীন। প্রাণী হিসেবে মানুষ মরণশীল বলে সবারই একটি মৃত্যুদিন থাকে। তবে কোনো কোনো মানুষের শুধু দেহাবসানই ঘটে, মৃত্যু হয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যিনি আমাদের জাতীর পিতা, তার কি মৃত্যু হতে পারে ? না তিনি মৃত্যুহীন। চির অমর।

১৫ আগষ্টের প্রেতাত্মা ও তাদের দোসররা আজও সক্রিয়। আজ ২০১৭ সালের ১৫ আগষ্ট। জাতীর জনকের কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী। তিনি ও তার পুরো পরিবার এখনও সেই ১৫ আগষ্টের প্রেতাত্মা ও দোসরদের কাছ থেকে নিয়মিত হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা করে ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের নায়কদের উত্তরসুরিরা তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে। এভাবে কয়েকবার তারা বোমা হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।গুলশানে জঙ্গী হামলা, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলা করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে তৎপর এখনও পচাত্তরের খুনিরা। আজ তারা সংবিধান সংশোধন করা নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আর একটি ১৫ আগষ্টেরও হুমকি দিয়েছে। তাহলে সত্যিই শেখ হাসিনাকে বা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও ঐ ১৫ আগষ্টের মত নির্মম হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ? আমরা কি দেশে আর একটি ১৫ আগষ্ট চাই বা কামনা করি ? জাতির বিবেক কী বলে ?
************
হামিদুর রহমান পলাশ
সাবেক সহসভাপতি, দোহার থানা ও ঢাকা জেলা ছাত্রলীগ।
যুগ্ন আহ্ববায়ক, দোহার পৌরসভা কৃষকলীগ।

তথ্যসূত্র :
সাইফুজ্জামান খালেদ-চতুর্মাত্রীক, দাদা ভাই ও জাহাঙ্গীর আলম- সামু, উইকি পিডিয়া, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা-আবুল হোসেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ-প্রথম আলো।

অসাধারণ সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও সাধারণের সাহিত্য

অসাধারণ সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও সাধারণের সাহিত্য

হুমায়ুন আহমেদ-এর একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শুরু করি ।

“পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।”

আর এই খুব কম মানুষদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি পেরেছেন। শুধু পেরেছেনই না, তিনি অনেক ভালোভাবেই পেরেছেন। কারন তিনি শুধু নিজের মধ্যকার ঘুমন্ত দৈত্যকেই জাগিয়ে তুলেননি। জাগিয়ে তুলেছেন সাহিত্য বুঝেন না এমন সাধারণ মানুষের মনে সাহিত্যের বোধ। হুমায়ূন পূর্ববর্তী যুগে বাংলা সাহিত্য ছিল উচ্চ শিক্ষিত ও বোদ্ধা শ্রেণীর মানুষদের দখলে। সাহিত্য চর্চা ছিল একই সাথে অহংকার ও বিলাসিতা করবার মত বিষয়। হুমায়ূন সাহিত্যকে তুলে দিয়েছেন স্বল্প শিক্ষিত ও সাধারণ মানুষের হাতে। এই দখল মুক্তির প্রচেষ্টা সহজ ছিল না নিশ্চয়। কিন্তু এই কঠিন কাজটাই হুমায়ূন করেছেন অত্যন্ত সহজ ভাবে। কারন তিনি ছিলেন জাদুকর। সাহিত্যের জাদুকর। তিনি যেমন সাহিত্যকে করে তুলেছেন সাধারণ মানুষের মানবীয় অনুভূতিতে পরিপূর্ণ তেমনি অতি সাধারণ মানুষকেও করে তুলেছেন সাহিত্যের রস আস্বাদনে উন্মুখ, আলোচক ও সমালোচক। মোট কথা সাহিত্যকে তিনি সাহিত্য হিসেবে নয় বরং মানুষের জীবনানুভূতি হিসেবে তুলে ধরেছেন।

আমার মতে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন অনুভূতি কেন্দ্রিক দার্শনিক। কোন দার্শনিকের প্রশংসায় হয়তো “অনুভূতি কেন্দ্রিক” এমন বিশেষণ ব্যবহার করা হয় না। তবে আমি এখানে একটু ভিন্ন ভাবে বলছি কারন দর্শন বলতে যা বুঝায় সেই মাপকাঠিতে তিনি ব্যতিক্রম। তার দর্শন, জীবন দর্শন। জীবনকে তিনি শুদ্ধতা ও নৈতিকতার আলোকে ব্যাখ্যা করেননি শুধুমাত্র। দায়িত্ব ও কর্তব্য ভাঁড়ে জর্জরিত করেননি জীবনের স্বল্প সময়কে। উন্নতির মাপকাঠিতে জীবনকে যান্ত্রিক ও নিষ্প্রাণ করে তুলেননি তার লিখনিতে। বরং জীবন যেমন, জীবন আসলে তেমন ভাবেই সুখের এই কথাই আড়ম্বর করে বুঝিয়েছেন বারংবার তার লিখনিতে। বুঝিয়েছেন জীবনকে আসলে মূল্য দিতে হয়। উপভোগ করতে হয় নিজের মত করে। সাজাতে হয় সাধ্যের মধ্যে পছন্দের উপকরন দিয়ে।

জ্যোৎস্না বিষয়ক লেখকের দুটি লেখাংশ দিয়ে এই বিষয়টাকে আমার মনে হয়েছে আপনাদের কাছে সবচেয়ে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব।

“প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই। গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে? বালিকা ভুলানো জোছনা নয়। যে জোছনায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে বলবে – ও মাগো, কি সুন্দর চাঁদ। নব দম্পতির জোছনাও নয়। যে জোছনা দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে স্ত্রীকে বলবেন – দেখো দেখো চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর। কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাতে জোছনা নয়। যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে। কবির জোছনা নয়। যে জোছনা দেখে কবি বলবেন – কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাঁদ। আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি। যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে। ঘরের ভিতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর। প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব- পূর্ণিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে। চারদিক থেকে বিবিধ কণ্ঠে ডাকবে-আয় আয় আয়।”

এখানে কবি এক গভীর জ্যোৎস্না বিলাশে মগ্ন। জ্যোৎস্নার মত এমন একটা বিমূর্ত সৌন্দর্যের বিষয়কে লেখক তার অতি প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনার মধ্য দিয়ে এমন মূর্ত করে তুলেছেন যেন একমাত্র গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নাই পারে একজন মানুষকে তার জীবনের প্রকৃত সুখের সন্ধান দিতে। যে সুখ জীবনে একবার পেলে একজন মানুষ গৃহত্যাগী হয়েও পেতে পারে ত্রিভুবনের সমগ্র সৌন্দর্য ও সুখের দেখা। তার আর জীবনে চাওয়ার বা পাওয়ার কিছুই যেন অবশিষ্ট থাকেবে না যেন। যদিও এমন হয়তো কেউ কোনদিন পায়না। তবুও সেই গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার জন্য অপেক্ষার যে অনন্ত সময় তা সত্যি সুখের নিশ্চয়ই !

অন্য আরেকটি লেখাংশে সেই অপূর্ব জোছনায় সাড়া দিতে না পাড়ার কষ্ট থেকে তিনি লিখেছেন-

“কোন কোন রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোন যোগ নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতার সর সর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে উঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কি বিপুল বিষণ্ণতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।”

এখানে লেখকের বিষণ্ণতা পাঠকের মনকে নাড়া দেয়। কিন্তু কি এক জাদুকরী শক্তিতে পাঠক তার নিজের অনুভুতিগুলিকে হারিয়ে অথবা নিজের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট গুলিকে হারিয়ে ধারন করেন জ্যোৎস্নার মত মায়াময় এক অপার্থিব সৌন্দর্যের অধরা হাতছানি এবং শূন্যতার অনুভূতি। এবারও পাঠক ভুগতে থাকেন ভিন্ন রকম এক সুভ্র সৌন্দর্যের সুখের অসুখে। এটাকে পাঠক যেভাবেই উপলদ্ধি করুক না কেন, তা প্রকৃত অর্থে সুখেরই।

(পোস্টের কলেবর বড় হয়ে যাওয়ায় এই লেখাটা এখানে অসম্পূর্ণ, আরও পর্ব হতে পারে)

হুমায়ূন আড্ডা

হুমায়ূন কিংবদন্তী লেখক। তাঁর ভক্ত যেমন অজস্র তেমনি সমালোচকও কম না। ভক্ত হোক আর সমালোচক হোক সবাই তাঁর পাঠক। না পড়লে সমালোচনা করব ক্যামনে? আজ তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী। শব্দনীড়ের পক্ষ থেকে হুমায়ূনকে অন্যভাবে স্মরণ করতে চাই। আসুন তাঁকে নিয়ে আড্ডা দিই।

১। তাঁর কোন বইটি ভাল লাগে তা লিখুন। কোন গল্প বা উপন্যাসের বিশেষ উক্তি যদি পছন্দ হয়ে থাকে সেটা উল্লেখ করুন। ভাললাগাগুলো কেন ভাল লাগে সেটাও বলতে ভুলবেন না।
২। হিমু ও মিসির আলী নিয়েও আলোচনা করি। কার কাকে বেশি ভাল লাগে?হিমু না মিসির আলী?
৩। কথা চলুক তাঁর চলচ্ছিত্র ও নাটক নিয়েও। আলোচনায় আসুক বাকের ভাই।
৪। বারবার পড়া কোন গল্প বা উপন্যাস যদি থাকে সেই নিয়েও কথা বলি।
৫। আলোচনা চলুক ব্যক্তি হুমায়ূনকে নিয়েও। তাঁর ব্যক্তি জীবন, বিভিন্ন সাক্ষাৎকার।
৬। তাঁর বইয়ের সমালোচনাও করতে পারেন। বুঝিয়ে বলুন কেন আপনি হুমায়ূনের লেখার কঠোর সমালোচক।
৭। বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেগুলো নিয়ে আলোকপাত করা যায়।
৮। কারো যদি হুমায়ূনের সাথে ব্যক্তিগত কোন স্মৃতি থাকে সেটাও জানতে চাই।
৯। সর্বশেষ হুমায়ূনের পড়া বই নিয়েও কথা বলতে পারেন। অথবা এই মুহূর্তে যদি কোন বই পড়ছেন সেটাও আলাদের জানান।
এক কথায় হুমায়ূনকে নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই। মনখুলে যে কোন কথা, যে কোন আলোচনা। তো আসুন শুরুকরি হুমায়ূনকে নিয়ে আজকের আড্ডাবাজি।

শিক্ষা, শিক্ষক ও একজন সোলাইমান স্যার

আভিধানিক অর্থে- শিক্ষা হচ্ছে, শেখা, অভ্যাস, অধ্যয়ন, জ্ঞানার্জন, চারিত্রোন্নতি। সু-অভ্যাস বা ক্রমাগত অনুশীলন শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ। ল্যাটিন শব্দ Educo থেকে ইংরেজী Education শব্দের উৎপত্তি। Educo শব্দের মূলগত অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- E = Out; duco = to lead, to draw out বা পরিচালিত করা, বের করা, প্রতিভাত করা। Education এর তাৎপর্য হচ্ছে, মানব মনের সহজাত বৃত্তি বা সম্ভাবনাকে বিকশিত ও পরিচালিত করাই শিক্ষা। এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- ইউরোপীয় E (ই) উপসর্গের একটা অর্থ অভাব আর এক অর্থ বর্হিগমতা; Educate শব্দের উৎপত্তিমূলক অর্থ বহির্ণয়ন। এই অর্থ-সূত্রেই তিনি বলেছেন, “আমাদের যে শক্তি আছে তাহারই চরম বিকাশ হইবে, আমরা যা যাহা হইতে পারি, তাহা সম্পূর্ণভাবে হইব- ইহাই শিক্ষার ফল।” মোটকথা, মানুষের অন্তর্নহিত গুণাবলীকে স্ফুরিত, নিগরিত ও নিয়ন্ত্রিত করে জীবনের নানা প্রয়োজেনে তাকে উক্ত গুণগুলো প্রয়োগ করার শক্তি ও নৈপুণ্য দান করাই শিক্ষা।

কোন কিছু গড়তে হলে, সৃষ্টি করতে হলে প্রয়োজন দক্ষ ও বিবেকবান কারিগরের। যাদের অবদানে পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করেছে অনেক সৃষ্টি। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকই তো গড়বে মানুষ। মহানবী (সা.) নিজে দার্শনিক, রাষ্ট্রনায়ক, সেনানায়ক ধরনের কোন অভিপ্রায় প্রকাশ করেন নি। তিনি বলেছেন “আমি শিক্ষক রূপে প্রেরিত হয়েছি।”শিক্ষক হচ্ছেন জাতির বিবেক, মানুষ গড়ার কারিগর। পার্সিডেন রেন বলেছেন- “শিক্ষক শুধু খবরের উৎস বা ভাণ্ডার নন, কিংবা প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার তথ্য সংগ্রহকারী নন, শিক্ষক শিক্ষার্থীর বন্ধু, পরিচালক ও যোগ্য উপদেষ্টা, শিক্ষার্থীর মনের বিকাশ সাধনের সহায়ক তথা তাদের চরিত্র গঠনের নিয়ামক।”শিক্ষক হচ্ছে সমাজের দর্পন বা আলো।শিক্ষা দানের মহান ব্রত যার কাজ তাকেই শিক্ষক বলা হয়। শিক্ষকদের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয়। কেননা একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন তার অনুসারী দের জ্ঞান ও ন্যায় দীক্ষা দিতে। শিক্ষার্থীর মানবতাবোধ কে জাগ্রত করে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদান কে সার্থকই করে তোলেন না, পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরাণ্বিত করেন। স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন।যিনি ছাত্রদের ভেতরের শক্তিকে অনুধাবন করতে পারেন। সেই শক্তিকে এমনভাবে বিকশিত করার চেষ্টা করেন যা তার সমস্ত জড়তাকে ভেঙ্গে স্বপ্নযাত্রার সূচনা ঘটায়। যিনি পথে হাঁটতে শেখান, গন্তব্য দেখানো যার কর্ম নয়। তিনি সিদ্ধান্ত দেন না বরঞ্চ শেখান কত কত ভিন্ন উপায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। যিনি সীমাবদ্ধতাকে নয়, সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দেন। বই নয় যিনি বাস্তবতাকে মুখোমুখি করবার সাহস দেখান।

কিন্তু সেই শিক্ষকই যখন ছাত্রের অবিভাবকের হাতে শারীরিক লাঞ্চনার শিকার হন তখন আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করি এ কোন সমাজে আমরা বাস করছি ? আবার এই ঘটনায় কিছু কিছু শিক্ষক সমর্থনও করেন।তারা আবার কোন শ্নেনীর শিক্ষক ? সোলায়মান স্যার তিনি টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত মীর্জা পুর উপজেলার বাসিন্দা।তিনি ১৯৮৭ সালের এক রৌদ্রাজ্জল ভোরে মালিকান্দা-মেঘুলা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি আমার গনিত শিক্ষক ছিলেন। আমি ১৯৯১ সালে এস.এস.সি পাশ করি। তারপর বহুবার স্যারের সাথে সাক্ষাত হয়েছে। কিন্তু আমি জানতাম না স্যার চিরকুমার। রাহিম কাকার পোষ্ট থেকে জানতে পারি।তিনি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে খুব ভালবাসেন বিধায় বিবাহ পর্যন্ত করেননি!তিনি চিরকুমার। এই বিদ্যালয়ে ৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তার কোন নেতিবাচক দিক কেউ বলতে পাববেন না।তাপরও তিনি ছাত্রের পিতার হাতে শারিরীক লাঞ্চনার শিকার হন।শিক্ষক অপমানের প্রতিবাদে ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষকদের বিক্ষোভের মুখে নারিশা উনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন দড়ানী ক্ষমা চান। এই ভদ্রলোকের উদারতা দেখে শিখলাম ক্ষমাই হচ্ছে অন্যতম ভাল এবাদত যার মাধ্যমে মানুষ প্রতিহিংসা থেকে বহুদূরে থাকতে পারে।

চলবে …………

প্রাক্তন ছাত্র
মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল এন্ড কলেজ
ব্যাচ”১৯৯১

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি :: কবি নির্মলেন্দু গুণ

নির্মলেন্দু গুণ। জন্ম: জুন ২১, ১৯৪৫ ইং আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ, কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোণা বাংলাদেশ। বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিদেরও একজন তিনি। মাত্র ৪ বছর বয়সে মা বীনাপনিকে হারান তিনি ৷ মা মারা যাবার পর তাঁর বাবা আবার বিয়ে করেন।

শিক্ষাজীবন বারহাট্টা স্কুলে ভর্তি হন শুরুতে। স্কুলের পুরো নাম ছিলো করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউট। দুই বিষয়ে লেটারসহ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান ১৯৬২ সালে। মাত্র ৩ জন প্রথম বিভাগ পেয়েছিল স্কুল থেকে। বাবা তাঁর মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন- “কৃষ্ণ কৃপাহি কেবলম। মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কাণ্ডারী’। মেট্রিকের পর আই.এস.সি পড়তে চলে আসেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের সুবাদে পাওয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ সহ পড়তে থাকেন এখানে। নেত্রকোণায় ফিরে এসে নির্মলেন্দু গুণ আবার ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকা ও তাঁর কবি বন্ধুদের কাছে আসার সুযোগ পান। নেত্রকোণার সুন্দর সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে তাঁর দিন ভালোই কাটতে থাকে৷ এক সময় এসে যায় আই.এস.সি পরীক্ষা। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে আই.এস.সি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে তিনিই একমাত্র নেত্রকোণা কলেজের। পরবর্তীতে বাবা চাইতেন ডাক্তারি পড়া কিন্তু তিনি চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে। ভর্তির প্রস্তুতি নেন নির্মলেন্দু গুণ ৷ হঠাত্‍ হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয় ঢাকায়৷ দাঙ্গার কারণে তিনি ফিরে আসেন গ্রামে। ঢাকার অবস্থার উন্নতি হলে ফিরে গিয়ে দেখেন তাঁর নাম ভর্তি লিষ্ট থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়া। আর ভর্তি হওয়া হলো না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফিরে আসেন গ্রামে। আই.এস.সি-তে ভালো রেজাল্ট করায় তিনি ফার্স্ট গ্রেড স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। মাসে ৪৫ টাকা, বছর শেষে আরও ২৫০ টাকা। তখনকার দিনে অনেক টাকা। ১৯৬৯ সালে প্রাইভেটে বি.এ. পাশ করেন তিনি ( যদিও বি.এ. সার্টিফিকেটটি তিনি তোলেননি। ১৯৬৫ সালে আবার বুয়েটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

কর্মজীবন এবং সাহিত্য ধারা। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় ছিলেন। সাংবাদিকতায়ও জড়িত ছিলেন। তিনি প্রধানত একজন আধুনিক কবি। শ্রেণীসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতা, প্রেম ও নারী তার কবিতার মূল-বিষয় হিসেবে বার বার এসেছে। কবিতার পাশাপাশি ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন। নিজের লেখা কবিতা এবং গদ্য সম্পর্কে তার বক্তব্য হলো – “অনেক সময় কবিতা লেখার চেয়ে আমি গদ্য রচনায় বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি। বিশেষ করে আমার আত্মজৈবনিক রচনা বা ভ্রমণকথা লেখার সময় আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে আমি যে গদ্যটি রচনা করতে চলেছি, তা আমার কাব্য-রচনার চেয়ে কোনো অর্থেই ঊনকর্ম নয়। কাব্যকে যদি আমি আমার কন্যা বলে ভাবি, তবে গদ্যকে পুত্রবৎ। ওরা দুজন তো আমারই সন্তান। কাব্যলক্ষ্মী কন্যা যদি, গদ্যপ্রবর পুত্রবৎ।” তথ্য : অন্তর্জাল।

পুরস্কার প্রাপ্তি : বাংলা একাডেমী পদক (১৯৮২) একুশে পদক (২০০১) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬) সহ অসংখ্য পুরস্কারে ঋদ্ধ হয়েছেন কবি।
পেয়েছেন খ্যাতি যশ সম্মান ভালোবাসা।

অসংখ্য সাহিত্য কবিতার পাশাপাশি বহুল আবৃত্ত কবিতা সমূহের মধ্যে – হুলিয়া, অসমাপ্ত কবিতা, মানুষ (১৯৭০ প্রেমাংশুর রক্ত চাই), আফ্রিকার প্রেমের কবিতা (১৯৮৬ নিরঞ্জনের পৃথিবী) – ইত্যাদি অন্যতম। প্রিয় কবির জন্মদিনে জানাই জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। কবি নির্মলেন্দু গুণ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে।

হুলিয়া

আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
শোঁ শোঁ করছে হাওয়া।
আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে।

কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,
ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখে চিৎকার করে উঠেছিল; – আমি সবাইকে
মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি।
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা
তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখোমুখি বসে দূর থেকে
বারবার চেয়ে দেখলেন- কিন্তু চিনতে পারলেন না।

বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি,
অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও
রফিজ আমাকে চিনলো না।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি।
সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে
গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি।

আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
শোঁ-শোঁ করছে হাওয়া।
অনেক বদলে গেছে বাড়িটা,
টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল;
চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে।

পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে
একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লকলকে জিভ দেখালো।
স্বতঃস্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল,
গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে; যেন সবখানেই
সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি।
একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়,
আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার
তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল।

হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক,
এক সময়ে কী ভীষন ছায়া দিতো এই গাছটা;
অনায়াসে দু’জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়।
আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম।
সেই বাসন্তী, আহা, সেই বাসন্তী এখন বিহারে,
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার- সন্তানের জননী হয়েছে।

পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ,
শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে
একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে –
আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
ডাকলুম,— ‘মা’।
বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো।
বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,
চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম।

মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে
লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন; আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম,
দেখলুম দু’ঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল,
সেখানে লেনিন, বাবার জমা- খরচের পাশে কার্ল মার্কস;
আলমিরার একটি ভাঙ্গা- কাঁচের অভাব পূরণ করছে
ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি।

মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি।
সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে।
খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
তিন মাইল বৃষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য।
রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস।
ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবরঃ
– আমাদের ভবিষ্যত কী?
– আইয়ুব খান এখন কোথায়?
– শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন?
– আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?

আমি কিছুই বলবো না।
আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে
বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্যতকে চেয়ে চেয়ে দেখবো।
উৎকণ্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিৎকার করে
কণ্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো:
‘আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না।’

শিক্ষা ও শিক্ষক

আভিধানিক অর্থে- শিক্ষা হচ্ছে, শেখা, অভ্যাস, অধ্যয়ন, জ্ঞানার্জন, চারিত্রোন্নতি। সু-অভ্যাস বা ক্রমাগত অনুশীলন শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ। ল্যাটিন শব্দ Educo থেকে ইংরেজী Education শব্দের উৎপত্তি। Educo শব্দের মূলগত অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- E = Out; duco = to lead, to draw out বা পরিচালিত করা, বের করা, প্রতিভাত করা। Education এর তাৎপর্য হচ্ছে, মানব মনের সহজাত বৃত্তি বা সম্ভাবনাকে বিকশিত ও পরিচালিত করাই শিক্ষা। এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- ইউরোপীয় E (ই) উপসর্গের একটা অর্থ অভাব আর এক অর্থ বহির্গমতা; Educate শব্দের উৎপত্তি মূলক অর্থ বহির্ণয়ন। এই অর্থ-সূত্রেই তিনি বলেছেন, “আমাদের যে শক্তি আছে তাহারই চরম বিকাশ হইবে, আমরা যা যাহা হইতে পারি, তাহা সম্পূর্ণভাবে হইব- ইহাই শিক্ষার ফল।” মোটকথা, মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলিকে স্ফুরিত, নিগরিত ও নিয়ন্ত্রিত করে জীবনের নানা প্রয়োজনে তাকে উক্ত গুণগুলো প্রয়োগ করার শক্তি ও নৈপুণ্য দান করাই শিক্ষা।

শিক্ষক হচ্ছে সমাজের দর্পন বা আলো। শিক্ষা দানের মহান ব্রত যার কাজ তাকেই শিক্ষক বলা হয়। শিক্ষকদের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয়। কেননা একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন তার অনুসারীদের জ্ঞান ও ন্যায় দীক্ষা দিতে। শিক্ষার্থীর মানবতাবোধ কে জাগ্রত করে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদান কে সার্থকই করে তোলেন না, পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেন। স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন। যিনি ছাত্রদের ভেতরের শক্তিকে অনুধাবন করতে পারেন। সেই শক্তিকে এমনভাবে বিকশিত করার চেষ্টা করেন যা তার সমস্ত জড়তাকে ভেঙ্গে স্বপ্নযাত্রার সূচনা ঘটায়। যিনি পথে হাঁটতে শেখান, গন্তব্য দেখানো যার কর্ম নয়। তিনি সিদ্ধান্ত দেন না বরঞ্চ শেখান কত কত ভিন্ন উপায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। যিনি সীমাবদ্ধতাকে নয়, সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দেন। বই নয় যিনি বাস্তবতাকে মুখোমুখি করবার সাহস দেখান।

কিন্তু বর্তমানে এ রকম শিক্ষক আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয় জন আছে ???

আমার রত্ন গর্ভা খালামণি

খালার ছয় মেয়ে এক ছেলেকে রেখে খালুজান মারা যান , ছোট মেয়েটি গর্ভেই ছিলো ।খালা সেই থেকে জীবন যুদ্ধে অবতীর্ন, একহাতে ছেলে মেয়েদের মানুষের মত মানুষ করেছেন, সবাই আজ যার যার জায়গায় সুপ্রতিষ্ঠিত ।
ছেলে মেয়েরা অফিসে যাওয়ার কারনে প্রত্যেক ঘরের সব নাতি নাতনীদের নিজ হতে পেলে বড় করেছেন সবাই জিনিয়াস পড়া লেখায় অগ্রজদেরও ছাড়িয়ে গেছে । আজও যার যেখানে প্রয়োজন সামাল দিয়েই চলেছেন । আম্মা আমার মেয়ের জ্বর খালাম্মা সেখানে হাজির সেবায় নিয়োজিত।আমার ছেলের পরীক্ষা খালাম্মা সেখানে হাজির ঘরের কোন চিন্তা কাউকে করতে হয়না রান্নার তদারকি থেকে খাওয়া সময় মত রেডি। খালাম্মার এই অবদান না থাকলে মেয়েরা কিছুতেই এতদুর আসতে পারতোনা সংসার এত সুখের হয়তো হতোনা ।খালার ছেলে এন এস ইউর বি বি এর ডীন।একমেয়ে ডেপুটি সেক্রেটারি একমেয়ে ইডেন কলেজের এসোসিয়েট প্রোফেসর জামাইরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জয়েন্ট সেক্রেটারি ,অন্যরাও যার যার জায়গায় সুপ্রতিষ্ঠিত। এখনো নাতিন যখন অফিসে যায় বাচ্চা (পুতিন)নানীর হাওলা করেই যায়। দোয়া করি দোয়া চাই খালা যেনো খালার গড়া বাগানে হেটে চলে আনন্দ আস্বাদন করতে পারেন বহুদিন । ধন্য হও খালা, ধন্য তোমার জীবন, সুখে থাকুক তোমার পরিবার।

আমাদের নজরুল ও আমরা

রবীন্দ্রনাথ রাত জেগে প্রার্থনা করতেন। তাঁর প্রার্থনা কক্ষে কারো অনুমতি ছিল না। এমনকি কবিপত্নীরও নয়। একদিন রাতের বেলা প্রার্থনার সময়ে ‘গুরুজী! গুরুজী!! বলে চিৎকার কতে করতে নজরুল রবি কক্ষে ঢুকে পড়েন। হতচকিত রবীন্দ্রনাথ বলেন কিরে অমন ষাঁড়ের মত চিৎকার করছিস কেন? (দুই কবির সম্পর্ক এমন সাবলীলই ছিল।) ‘আমি আপনাকে খুন করেছি গুরু!’ আমি আপনাকে খুন করেছি বলে নজরুল তখন বিদ্রোহী কবিতাটি দেখান। রবি ঠাকুর বলে হ্যাঁরে নুরু তুই আমাকে খুন করেছিস। নজরুলের বিভিন্ন জীবনী গ্রন্থে বিদ্রোহী কবিতার ইতিহাস এভাবে বর্ননা করা আছে। রবিন্দ্রনাথ নজরুল সম্পর্কে উচ্চ ধারনা পোষণ করতেন এবং এই নিয়ে রবীন্দ্র ভক্তরা কবির উপর নাখোশ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ নজরুল কে যখন বসন্ত নাটক উৎসর্গ করেন তখন কবিভক্তরা যে কি রকম চটে ছিলেন সে কাহিনী কম বেশি সবারই জানা। বসন্ত নাটকের উৎসর্গ নিয়ে জেলেও বেশ নাটকীয় ঘটনা ঘটে। এই খবরটি নিয়ে যিনি জেলে যান জেলার তাকে বেশ ভর্ৎসনা করেন এই বলে যে তিনি গিফট এবং ডেডিকেটেস এর পার্থক্য বুঝেন না। জেলার তাঁকে বার বার জিজ্ঞেস করেন, ডেডিকেটেড? ইয়ু মিন গিফট? জেলার সাহেব বিশ্বাসই করতে পারছিল না নজরুলকে উৎসর্গ করা হয়েছে। বড়জোর তাকে একটা বই উপহার দেয়া হতে পারে! জেলারকে তখন নিশ্চিত করা হয় গিফট নয় ডেডিকেটেড। বলা হয় ডেডিকেটেড টু নজরুল। হি ইজ আওয়ার গ্রেটেস্ট পোয়েট নেক্সট টু টেগোর। (এইখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় নেক্সট টু টেগোর, আফটার টেগোর নয়) জেলার নজরুল কে গিয়ে খবর দেন এই বলে, ‘তুমি তো নোবেল পেয়ে গেলে ভায়া!’

নজরুল কি লিখেছেন কি করেছেন আমরা সবাই কম বেশি জানি। ছোটবেলা থেকে জেনে জেনে বড় হয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় নজরুলকে আমরা ধারন করি কম। মাঝে মাঝে আমার মনে আমরা বড় দূর্ভাগা জাতি। নজরুলের মত ব্যক্তিত্বকে ধারন করার সাধ্য আমাদের নেই। আমাদের মাঝে খুব বড় একটা প্রবণতা দেখা যায় যে নজরুলকে ছোট করে দেখার। হেয় করার। নজরুল হেয় করতে পারা, ছোট করা নজরুলের কবিতা নিয়ে হাস্যরস করলে নিজেকে কেমন যেন বুদ্ধিজীবি স্তরে পৌঁছানো যায়। নজরুল তো আন্ডার ম্যাট্রিক ছেলে। আমাদের বড় বড় ডিগ্রী আছে। সেরা ইয়ুনিভার্সিটির পিএইচডি আছে। বিদ্যার গৌরবে তখন নজরুলে কাজকে আর চোখে লাগে না। আমি এমনও দেখেছি নজরুলে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অথচ নজরুল সম্পর্কে তাঁর ধারনা তাচ্ছিল্য করার মত। নজরুল ইন্সটিটিউট যেহেতু সরকারী প্রতিষ্ঠান, এর প্রধানের পদটা গৌরবের ও আর্থিকভাবে লাভজনক। সুতরাং দু একটা পাবলিকেশন্স আছে, বুদ্ধিজীবী মহলে পরিচিতি আছে সরকারী আনুকল্য আছে। সেই সুবাধে নজরুলের ইন্সটিটিউটে মহাপরিচালক হয়ে গেলাম। এই সমস্ত পরিচালক মহাপরিচালকেরা নজরুল গবেষণা তো দূরে থাকুক নজরুল রচনাবলীও পড়েছে বলে আমার মনে হয় না।

নজরুলকে শুধু বিদ্রোহী কবি বলা আমার কাছে মনে হয় কবিকে খাট করা। নজরুলের একটি মাত্র পরিচয় বিদ্রোহী। কিন্তু তাঁর আর বাকী পরিচয়গুলো এর আডালে লুকিয়ে রাখাতো কবির প্রতি অবিচার। আমরা কবির রণতূর্যের কথা বলি কিন্তু বাঁকাবাশরীর কথা ভুলে যাই। নজরুলের মানবতা, সার্বজনীন ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দর্শন, সাহিত্য সবচেয়ে বেশি অনালোচিত। নজরুল ভক্তদের দেখা যায় অতি আবেগে গদগদ হয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও ব্রিটিশ বিরোধী কিছু আলোচনা, সাম্যবাদী কবিতার দু চার লাইন আওড়ে দায়ত্বি শেষ করতে।

আমাদের দেখার দরকার আছে সাংবাদিক নজরুল কেমন ছিলেন? বর্তমান সাংবাদিকদের জন্য নজরুলের সাংবাদিকতা কি দর্শন নিয়ে উপস্থিত হয়। আধুনিক গণমাধ্যমের এই ডামাডোলের যুগে দেখি মেরুদন্ডহীন সাংবাদিকতায় চারিদিক সয়লাব। অতি কথন, অতি আলোচনা, মিথ্যে আর অর্ধ সত্যের এই সাংবাদিকতায় লাল হলুদ নানা রঙে রঙিন। নজরুলের মত গণমানুষের সাংবাদিক আজকের মিডিয়া জগতে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। এর কারণকি এটাই আজকের গণ মানুষের সাথে যোগসম্পর্কহীন সাংবাদিকতা গণমানুষের নজরুলকে ধারণ করতে পারেনা? যাকে ধারণ করার শক্তি নেই তাকে উপেক্ষা করে নিজের অক্ষমতাকে ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা।

বাংলা সাহিত্য ছিল কলকাতার মধ্যবিত্তদের প্রতিচ্ছবি। কামার কুমোর ছুতোরের উপস্থিতি ছিলনা এখানে। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের ছকে বাধা জীবনের ফ্রেম যেক বাংলা সাহিত্যের অলঙ্গনীয় গ্রামার হয়ে জেঁকে বসেছিল। নজরুল এসে প্রথা ভাঙলেন। আজকের দিনে এই কথা অনেক সাহিত্যমোদীর জানা নেই নজরুলই প্রথম কামার কুমোরের মুখের কথা অর্থাৎ আঞ্চলিক কথ্যভাষা সাহিত্যে ব্যাবহার করেছিলেন। বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে এ কিন্তু এক যুগান্তকারী ঘটনা। নজরুল পরবর্তী কোন কথা সাহিত্যেকের পক্ষে এই প্রবণতা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি।

চলচ্চিত্রের সাথে নজরুলের যোগাযোগের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু জানা পর্যন্তই। নজরুলের অভিনীত চলচ্চিত্র গুলো কোথায় আছে। তার পরিচালিত সুরাপিত চলচ্চিত্রগ গুলো আদৌ কোন আর্কাইভে আছে কিনা কে জানে? অন্তত কবির জন্ম মৃত্যু তিথিতে কি এই সব চলচ্চিত্র প্রদর্শিত আলোচিত হতে পারে না। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, বিএফডিসি, নজরুল ইনস্টিটিউট এই বিষয়ে কখনো কোন উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে পড়ে না।

নজরুলের আলোচনা যদি আমরা দু-চারটি কবিতা আর গানের মাঝে সীমবদ্ধ করে রাখি তাহলে আমরা নিজেদেরকেই বঞ্চিত করব। নজরুল যা করেছেন, যা দিয়ে গেছেন তা আমাদের জন্যই দিয়ে গেছেন। জীবন যাপনে চিন্তা চেতনায় নজরুল আমাদের জন্য বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করে গেছেন তা আমরা ভুলে যাই। বাতাসের মাঝে থেকে আমরা যেমন ভুলে যাই আমরা বাতাসে ঢুবে আছি। অনেকের কাছে কথাটি অতি কথন মনে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হল নজরুল ছিলেন উপেক্ষিতের ভাষা, ব্রাত্যজনের কবি। শুধুমাত্র গুটিকয়েক ব্রাহ্মনের হাতে বন্দী ভাষা ও সাহিত্যকে নজরুল মুক্তি দিয়েছিলেন। সেই মুক্তির স্বাধ আমরা আজ সকলেই ভোগ করি।

১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কলকাতার এলবার্ট হলে বাঙালিদের পক্ষ থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেয়া হয়। তখনই জাতির পক্ষ থেকে কবিকে বাঙালির জাতীয় কবি হিসেব অভিহিত করা হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন ব্যারিস্টার এস ওয়াজেদ আলী, শুভেচ্ছা ভাষণ দেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং রায়বাহাদুর জলধর সেন। কবিকে সোনার দোয়াত-কলম উপহার দেয়া হয়। এই সংবর্ধনা সভায় প্রফুল্লচন্দ্র রায় বরেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, নজরুল ইসরামের কবিতা পাঠে আমাদের ভাবী বংশধররা এক একটি অতি মানুষে পরিণত হইবে।’ আমরা অতি মানুষ হতে চাইনা। তাই নজরুলকে উপেক্ষা করি।

আমাদের সময় এসেছে মেরুদন্ড সোজা করে মানুষ হবার।

আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে?

মা

মায়ের আদর

স্বার্থ ছাড়া বন্ধু -বান্ধবী কাছে আসে না
বিনা স্বার্থে দুনিয়ায় কেউ ভালবাসে না।
স্বার্থ ছাড়া ভালবাসে শুধু আমার “মা”
কাঁদা আর খড়কুটো দিয়ে মাটির মূর্তি গড়ে
লক্ষ টাকা মজুরী নেয় মূর্তির কারিগরে,
মা আমার এই সুন্দর দেহ গড়ে দিয়েও মূল্য চাইল না –
স্বার্থ ছাড়া ভালবাসে শুধু আমার “মা”।(নকুল কুমার বিশ্বাস)

পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর ডাক ‘মা’। আনন্দ, বেদনা আর কল্পরাজ্যের যতসব অনুভূতির আলোড়ন— সবই মাকে ঘিরে। ‘মা’ শব্দটি নিজেই একটি অসমাপ্ত গল্প, শ্রেষ্ঠ কবিতা, সময়ের সেরা উপন্যাস…মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই ‘মা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হিসেবে বিবেচিত। মা, মাদার, মম, মাম, আম্মা— যাই বলি না কেন, একজন সন্তানের কাছে তার মায়ের চেয়ে অধিক প্রিয় কোনও কিছুই এই পৃথিবীতে নেই। মাকে নিয়ে কামিনী রায়ের—

‘‘জড়ায়ে মায়ের গলা,
শিশু কহে হাসি
মা তোমারে কত ভালবাসি
কত ভালোবাস ধন ?
জননী শুধায়
“এ-ত” বলি দুই হাত প্রসারি দেখায় ?
তুমি মা আমায় ভালোবাস কতখানি ?
মা বলে মাপ তার আমি নাহি জানি
তবু কতখানি বল,
যতখানি ধরে তোমার মায়ের বুকে নহে তার পরে।’’

যে মাকে নিয়ে এত ভালবাসা, কবিতা, গান সেই মাকে স্মরণ করতে ১৪ই-মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মা দিবস। মায়ের জন্য কোন দিবস নয় প্রতিটি দিনই মায়ের।পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় এবং মধুরতম শব্দটি ‘মা’। মা শুধু প্রিয় শব্দই নয়, প্রিয় বচন, প্রিয় অনুভূতি, প্রিয় ব্যক্তি, প্রিয় দেখাশুনা, প্রিয় রান্না এবং প্রিয় আদর। যতগুলো প্রিয় আছে তার সব প্রিয়ই শুধুমাত্র মাকে কেন্দ্র করেই। পৃথিবীর ইতিহাসে সন্তানের জন্মদাত্রী হিসেবে প্রাকৃতিকভাবেই মায়ের এই অবস্থান। মানব সমাজে যেমন মায়ের অবস্থান রয়েছে। পশুর মধ্যেও মাতৃত্ববোধ প্রবল। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মা যাবতীয় মমতার আধার ও কেন্দ্রবিন্দু। তাই পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায়ই মা-এর সমার্থক শব্দটি ‘ম’ ধ্বনি দিয়ে শুরু।

তাই মায়ের জন্য কোন নিদিষ্ট দিবস নয় প্রতিটি দিন হোক মায়ের জন্য উৎসর্গকৃত।পৃথিবীর সকল মায়ের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা।

ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জন্মদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা…

আমার ভীষণ প্রিয় শিল্পী তথা, সমকালীন ও আধুনিক চিত্রকলার প্রাণ-পুরুষ ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জন্মদিনে, তাঁর প্রতি রইলো আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

“ছবি এঁকে কিছু বলতে চাই আমি, আর তাতেই সঙ্গীত যেমন সান্ত্বনা দেয় তেমনি সান্ত্বনা পাবো “ বলেছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ।

পৃথিবীর মহান শিল্পীদের একজন, জন্মেছিলেন হল্যান্ডে ১৮৫৩ সালে। সেজান, গঁগা এবং ভ্যান গঘ, স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ভাস্কর এই তিন শিল্পীই আধুনিক শিল্পের পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত। সাতাশ বছর বয়সে শিল্পকর্মে নিবেদিত হয়েছিলেন ভ্যান গঘ। অতীত এবং সমকালীন শিল্প সাহিত্য জগত সম্বন্ধে ভিনসেন্ট এর প্রচুর জ্ঞান ছিলো; নিজের মননে সব কিছুর সম্মিলন ঘটিয়ে শিল্প জগতে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন।

“কখনো কখনো অনির্বচনীয় অনেক কিছু থাকে, সমস্ত প্রকৃতিটা যেন মনে হয় কথা বলতে চায়; এ জিনিসটা সবাই দেখতে পায় না, অনুভব করতে পারেনা। যার চোখ আছে, কান আছে, হৃদয় আছে তার জন্যেই ঈশ্বর এ সৌন্দর্য করে রেখেছেন। এ কারণেই আমার মনে হয় একজন শিল্পী সুখী, সে যা দেখে তার একটুখানিও প্রকাশ করতে পারলে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যায়।
আমি আমার কাজের মধ্যে এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি যার ভেতর আমার হৃদয় ও আত্মা সম্পূর্ণ ভাবে নিবেদিত থাকতে পারি এবং যা আমার বেঁচে থাকা অর্থময় করে, অনুপ্রাণিত করে।“
(ছোট ভাই ও জীবনের একমাত্র সহযোগী থিও-কে লেখা চিঠি-তে)।

হল্যান্ডের গ্রোট জুনডার্টে ১৮৫৩ সালে আজকের এই দিনে, ৩০ মার্চ জন্মেছিলেন পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট চিত্রকর ভিনসেন্ট উইলিয়াম ভ্যান গঘ। পাদ্রী থিওডর ভ্যান গঘ ও তার পত্নী কর্নেলিয়ার দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। ছোট বেলায় একা একা ঘুরে বেড়ানো আর নদীর তীরে বসে থাকতেন। ১২-১৩ বছর বয়সে মূলত পেন্সিলে আঁকতে শুরু করেন গঘ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্যারিসের বিখ্যাত চিত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গোপিল অ্যান্ড কোম্পানিতে যোগ দিয়ে ৪ বছর চাকরি করেন। ১৮৭৬ সালে একটি স্কুলে অবৈতনিক সহকারী পদ নিয়ে ইংল্যান্ডে আসেন তিনি। শহরের দরিদ্র ছাত্রদের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে না পারায় চাকুরীচ্যুত হন কয়েকমাস পরই। পিতার মতো পাদ্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে লন্ডন ছেড়ে যান হল্যান্ডে। এক বছরের মাথায় পাদ্রী হবার পড়াশুনাও ছাড়েন। ২৫ বছর বয়সে বেলজিয়ামের এক কয়লা খনিতে পাদ্রী হিসেবে যোগ দেন গঘ। গরীব শ্রমিকদের প্রতি তাঁর আবেগ কর্তৃপক্ষের পছন্দ না হওয়ায় আবারো চাকরি হারান। কিন্তু চাকরিহারা অবস্থাতেই এখানকার শ্রমিকদের সঙ্গী হয়ে দু’বছর কাটান অবর্ণনীয় কষ্টে। কিন্তু এই সময়ই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শিল্পী হবার। আঁকতে শুরু করেন খনি শ্রমিকদের ছবি।

ভ্যান গঘ সম্বন্ধে বলা হয় …His paintings are characterized by thick brush strokes, brilliant colors, and jagged lines, through which Van Gogh expressed his emotional response to his subjects rather than providing an accurate description of them. As a result he became a leader in the development of expressionism in painting.

বেলজিয়ামে গিয়ে এন্টর্প একাডেমিতে ভর্তি হন পদ্ধতিগতভাবে ছবি আঁকার নিয়ম-কানুন শিখতে। কিন্তু নিয়মে বেঁধে থাকা তাঁর পক্ষে ছিল অসহনীয়। ফলে ফার্স্ট টার্ম শেষ হওয়ার আগেই আর্ট একাডেমি ছাড়লেন।

ভ্যান গঘ তার জন্মের সময়ই মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ছিলো মৃগী রোগ… এর সঙ্গে যুক্ত হয় তীব্র মানসিক অস্থিরতা… ফলে উম্মাদ-প্রায় দশা হয় তার… সেন্ট রেমি-র এক মানসিক চিকিৎসা-কেন্দ্রে ভর্তি-ও হন এ-জন্য। কিন্তু তবু থেমে থাকে-নি শিল্প-চর্চা… মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে বসে-ও ২০০ ক্যানভাস আঁকেন!!!

প্যারিসে এসে ফানার্ড করমনের স্টুডিওতে কাজ করতে শুরু করেন। কোন এক ঘটনায় জড়িয়ে পরায় নিজেই তার কান কেটে উপহার পাঠান। এ ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন গঘ। রক্তাল্পতা এবং হ্যালুসিনেসনে ভূগতে থাকেন। আর্লেসের হাসপাতালে দু’সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে ঘরে ফিরে দিনরাত অবিরাম ছবি আঁকতে থাকেন অদ্ভূত উন্মাদের মতো। এক পর্যায়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গঘকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে আর্লেস থেকে বিতাড়িত করে নগর কর্তৃপক্ষ। গঘ নিজেই গিয়ে ভর্তি হন সেন্ট রেমি’র মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। সেখানে গিয়ে সুস্থ না হয়ে বরং বিষন্নতায় ভুগে ভুগে পূর্ণ পাগলই হয়ে যান গঘ। এতো অসুস্থতার মধ্যেও বন্ধ করেননি ছবি আঁকা। মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে বসেও ২০০ ক্যানভাস ছবি আঁকেন। ছোট ভাই থিও তাঁকে নিয়ে এলেন প্যারিসে। কিন্তু কিছুদিন পরই গঘ চলে গেলেন অভঁরো। ১৮৯০ সালের ২৭ জুলাই রাতে তাঁর ভীষণ প্রিয় সেই হলুদ রঙের ক্ষেতে নিজের বুকে গুলি করে শুয়ে থাকলেন আর ঐ অবস্থাতেও খালি পাইপ টেনে গেলেন। ধীরে ধীরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন পৃথিবীর দুঃখীতম এই চিত্রকর।

সেজান, গঁগা আর গঘ… স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল এই তিন শিল্পিই আধুনিক চিত্রশিল্পের পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত। সাতাশ বছর বয়সে শিল্পকর্মে নিবেদিত হয়েছিলেন ভ্যান গঘ শিল্পী জীবন পেয়েছিলেন মাত্র ১০ বছরের। অতীত এবং সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য জগত সম্বন্ধে প্রচুর জ্ঞান ছিলো তার। নিজের মননের সাথে এ-সব কিছুর সম্মিলন ঘটিয়ে শিল্প জগতে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন। বন্ধুহীন, নিঃস্ব আর দূর্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জীবন কাটালে-ও সমকালীন চিত্রকলায় তাকেই মনে করা হয় সবচেয়ে সার্থক শিল্পী হিসেবে। বর্তমান বিশ্বের সব-চেয়ে দামী ১০ টি চিত্রকর্মের মধ্যে একক-ভাবে তাঁর-ই অঙ্কিত রয়েছে ৪ টি!!!

আমার নড়বড়ে আঁকায় ভ্যান গঘ…
ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জন্মদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

পল্লীকবি জসীমউদ্দীন এর বিদায়ী দিনে শব্দনীড় এর শ্রদ্ধাঞ্জলি

213308dasthik-1-2-117

তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,

ছোট গাঁওখানি – ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;
ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী
পারের খবর টানাটানি করি;
বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।

নিমন্ত্রণ – পল্লী কবি জসীমউদ্দীন।
____________________

youtu.be/7P4QcN9kN7M

জসীমউদ্দীন (জানুয়ারি ১, ১৯০৩ – মার্চ ১৩, ১৯৭৬) একজন বিখ্যাত বাঙালি কবি। তিনি বাংলাদেশে ‘পল্লী কবি’ হিসেবে পরিচিত। তাঁর লেখা কবর কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় অবদান। পুরো নাম জসীমউদ্দীন মোল্লা হলেও তিনি জসীমউদ্দীন নামেই পরিচিত।

জীবন বৃত্তান্ত :
তিনি ১৯০৩ সনের পহেলা জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি ছিলো একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট। জসীমউদ্দীন ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল, ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে পড়ালেখা করেন। এখান থেকে তিনি তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২১ সনে উত্তীর্ন হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ. এবং এম. এ. শেষ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ এবং ১৯৩১ সনে। ১৯৩৩ সনে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগদেন। এরপর ১৯৩৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সনে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে তার নিজ গ্রাম বিমলগুহে সমাধিস্থ করা হয়।

রচনাবলী সমগ্রঃ

কাব্যগ্রন্থঃ *রাখালী। (১৯২৭) *নকশী কাঁথার মাঠ। (১৯২৯) *বালু চর। (১৯৩০) *ধানখেত। (১৯৩৩) *সোজন বাদিয়ার ঘাট। (১৯৩৪) *হাসু। (১৯৩৮) *রঙিলা নায়ের মাঝি। (১৯৩৫) *রুপবতি। (১৯৪৬) *মাটির কান্না। (১৯৫১) *এক পয়সার বাঁশী। (১৯৫৬) *সকিনা। (১৯৫৯) *সুচয়নী। (১৯৬১) *ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে। (১৯৬২) *মা যে জননী কান্দে। (১৯৬৩) *হলুদ বরণী। (১৯৬৬) *জলে লেখন। (১৯৬৯) *কাফনের মিছিল। (১৯৮৮)

নাটকঃ *পদ্মাপার। (১৯৫০) *বেদের মেয়ে (১৯৫১) *মধুমালা। (১৯৫১) *পল্লীবধূ। (১৯৫৬) *গ্রামের মেয়ে। (১৯৫৯) *ওগো পুস্পধনু। (১৯৬৮) *আসমান সিংহ। (১৯৮৬)

আত্মকথাঃ *যাদের দেখেছি। (১৯৫১) *ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায়। (১৯৬১) *জীবন কথা। (১৯৬৪) *স্মৃতিপট। (১৯৬৪)

উপন্যাসঃ * বোবা কাহিনী। (১৯৬৪)

ভ্রমণ কাহিনীঃ *চলে মুসাফির। (১৯৫২) *হলদে পরির দেশে। ( ১৯৬৭) *যে দেশে মানুষ বড়। (১৯৬৮) *জার্মানীর শহরে বন্দরে। (১৯৭৫)

সঙ্গীতঃ * জারি গান। (১৯৬৮) * মুর্শিদী গান। (১৯৭৭)

অন্যান্যঃ *বাঙালির হাসির গল্প। *ডালিমকুমার। (১৯৮৬)

পুরস্কার প্রাপ্তিঃ *প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরমেন্স ১৯৫৮। *একুশে পদক ১৯৭৬। *স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৭৮ (মরণোত্তর)। *১৯৭৪ সনে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। *রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট ডিগ্রি (১৯৬৯)।

তথ্যসূত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া।

পূর্ণ চিত্তে এই মহীরূহ এর বিদায়ী দিনে শব্দনীড় পরিবার জানায় বিনম্র শ্রদ্ধা

উপলব্ধি ……

ডিম থেকে মাত্র বের হওয়া হাঁসের বাচ্চাকে পানিতে ছেড়ে দিলে এটি সাতরে ডাঙায় চলে আসে। মাত্র পৃথিবীর আলো দেখেছে যে মুরগী ছানাটি সেও ঠুকরে শস্যদানা খেতে পারে। মাত্র ভূমিষ্ট হওয়া গরু, ছাগল, ঘোড়ার বাচ্চা নিজে থেকেই দুধ পান শুরু করে দেয়, কিছু সময়ের মধ্যে দৌড়া-দৌড়ি শুরু করে। অথচ মানুষ কী অসহায় হয়ে পৃথিবীতে আগমন করে! কান্না ছাড়া সে কিছুই করতে পারে না। স্বাবলম্বী হতে লেগে যায় জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় (আসলে সে কখনোই স্বাবলম্বী হয় না, অন্যের সহযোগিতা ছাড়া সে একটা দিনও চলতে পারে না)। এর কারণ কী, আল্লাহ মানুষকে এত অসহায় করে সৃষ্টি করলেন কেন?
.
আল্লাহ চান সমাজে বসবাসরত প্রতিটা মানুষ অন্য মানুষের কাছে ঋণের জালে আবদ্ধ হোক, তার হৃদয়ে যেন এই চেতনা জাগ্রত হয় যে- সে বহু মানুষের ভালোবাসা, সহযোগিতা, করুণা, দয়ার কারণে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে সুতরাং সমাজের অন্যান্য মানুষের প্রতিও তার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
.
সমাজ টিকে থাকে সামাজিক বন্ধনের উপর। এই বন্ধনগুলো দৃঢ় হয় পারস্পরিক সহযোগিতা ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। একসাথে বসবাস করতে গিয়ে একে অন্যকে যখন সহযোগিতা করে তখন তারা কৃতজ্ঞতা ও কর্তব্যের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। যেমন সন্তান বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও কর্তব্যের জালে আবদ্ধ। কর্তব্য পালন না করতে পারলে সে অনুশোচনার গ্লানিতে দগ্ধ হয়। এটা মানুষের চিরাচরিত সনাতন ধর্ম, মনুষ্য ধর্ম। এটা হারালে মানুষ আর মানুষ থাকে না।
.
আপনি আজ হয়ত বিরাট বড় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি কিন্তু এক সময় আপনিও ছিলেন ছোট্ট শিশু। কান্না বাদে কিছুই করতে পারতেন না। এই অবস্থানে আসতে বহু জনের কাছে ঋণের জালে আবদ্ধ হয়েছেন।