বিভাগের আর্কাইভঃ ভ্রমণ

25591792_1745115755538726_4156128952430206254_n - Copy

বারবিকিউ ইন কামিনী ঘাট (প্রথম অংশ)

২৮/০৮/২০১৩ইং আমরা ক’জন মিলে আয়োজন করেছিলাম একটি জল ভ্রমণের। আয়োজক ছিলাম আমরা ৫ বন্ধু আর ইনভাইটেট ছিল আরো ৮ জন। এক দিন আগেই একটি বোট ভাড়া করে রেখেছিলাম আমরা। ২৭ তারিখ বিকল থেকেই সমস্ত বাজার শেষ করে ফেলি শুধু সালাদের উপকরণটা বাদে। আয়োজন ছিল খুবই সাদা-সিধা সাদা ভাত, ডাল, আলু ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, শুটকি ভর্তা, মুরগির সাদা ঝাল মাংস

প্রোগ্রামটা ছিল এমন –
সকালে হোটেলে নাস্তা করে সাঁতারকুল থেকে উঠবো বোটে সকাল ১০টা মধ্যে।
নাগরির কাছে কামিনী ঘাটে এক বড় ভাইয়ের খামারে গিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করবো।
সেখানেই দুপুরের পর থেকে আস্ত একটা খাসি বারবিকিউ করা হবে।
সেই সাথে ১০টা মুরগিও নেয়া হয়েছে বারবিকিউ করার জন্য।
নানা ধরনের পানিয় নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত, যে যত খুশী পান করতে পারবেন এটা মাথায় রেখে।
সন্ধ্যার আগে আগে আবার উঠে পরবো বোটে, রাতের ১২টা পর্যন্ত ঘুরবো বোট নিয়েই।

সেই কাহিনীর প্রথম অংশ আজ দেখবেন ছবিতে।


বি.দ্র. বিড়ি ও নানা ধরনের পানিয় স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।

বি.দ্র. ছবিগুলি আমার তোলা নয়।
২০১৩ সালের ভ্রমণ, লেখাটাও তখনকারই, এখানে নতুন করে শেয়ার করলাম।
চলবে……

মেঘ পাহাড়ে ঘুরোঘুরি

‘পিয়াইন নদীর স্রোতে’ গল্পটা লিখতে লিখতে ভাবছিলাম, কবে যে মেঘালয় পাহাড়ে উঠবো! সবাই বলতো ডাউকি সীমান্ত পার হলেই নাকি মেঘালয় পাহাড়ের আসল সৌন্দর্য বোঝা যায়। তাই আমি ভারতীয় ভিসাতে ডাউকি বর্ডার নিয়ে রেখে দিতাম, কখন কাজে লেগে যায় এই আশায়।

সুযোগটা হয়ে গেল এই জুলাই মাসেই। বৃষ্টিতে পুরো সিলেট একেবারে পানিতে থৈ থৈ। নাজনীন খলিল আপুকে নিয়ে শহর ঘুরতে ঘুরতে পরিচয় হয়ে গেল একজন ব্যবসায়ী দম্পতির সঙ্গে, যারা প্রায় প্রতি মাসেই শিলং যান। তাদের কাছ থেকেই পেয়ে গেলাম ডাউকি বর্ডার থেকে শিলং যাবার পুরো তথ্য। শুধু তাই নয়, আমাকে বর্ডার থেকে কোন গাড়ি ডাউকি বাজার অব্দি নিয়ে যাবে তার নম্বর পর্যন্ত দিয়ে দিলেন। এরপর আর মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী ঘুরতে যাওয়া নিয়ে আমার কোনো সংশয় থাকলো না।

পরদিন ভোর ৭টায় তাদের পরিচিত ড্রাইভার এসে হাজির। কারণ সকাল দশটার মধ্যে সীমান্তের ঝামেলা শেষ করা ভালো। বৃষ্টির মধ্যে ডাউকি বাজার পৌঁছতে দেরি হয়ে গেলে শিলং পৌঁছতে সন্ধ্যা নেমে যাবে। সিলেট–তামাবিলের সেই এবড়ো-থেবড়ো রাস্তা দিয়ে দুই ঘন্টার ক্লান্তিময় যাত্রা শেষ হলো তামাবিল ইমিগ্রেশনে। বাংলাদেশের সীমান্তের শীর্ণ চেহারা সব সময় আমাকে হতবাক করে। হয় সরকার এই খাতে কোনো খরচ করে না অথবা আমরা যে যাবার সময় জনপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা দেই তার সঠিক ব্যবহার এখানে হয় না। সার্ভিস চার্জ এবং সেই সঙ্গে কিছু উপঢৌকন কাস্টম অফিসারের হাতে দিয়ে বেরিয়ে গেলাম ল্যাগেজ হাতে।

জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে অসাধারণ অনুভূতি জাগলো মনে। এপাশে বাংলাদেশ আর ওপাশে ভারত। ধীরে ধীরে আমি উপরের দিকে উঠছি, ডাউকি বাজারের দিকে। ওখান থেকে ট্যাক্সিতে শিলং যেতে লাগবে প্রায় তিন ঘন্টা। মাঝে ইমিগ্রেশনে চেক-ইন করে নিতে হবে। ওদের ইমিগ্রেশন আর আমাদের ইমিগ্রেশন অফিস সম্পূর্ণ আলাদা। সাজানো গোছানো অফিস। সবার পরণে অফিসিয়াল পোশাক এবং অবশ্যই তারা কথা বলছেন ইংলিশে এবং প্রয়োজনে হিন্দিতে।

অনেকেই বলে থাকেন ভারতীয় সীমান্তে ল্যাগেজ খুলে চেক করা হয়। যদিও আমার বেলাতে কোনো কালেও ঘটেনি এমনটা। আর ওরা আধুনিক মেশিনের ভেতরে ল্যাগেজ ভরে দিয়ে চেক করছে; প্রাচীন পদ্ধতির আর দরকার পড়ছে না। হিন্দিতে একজন লেডি অফিসার জিজ্ঞেস করলেন – ‘এধারমে কেয়া ভিজিট মে?’ হিন্দি ভালো পারিনা, তাই ইংলিশে চালিয়ে দিলাম- ইয়েস, ওয়ান্ট টু ভিজিট শিলং।

আবার প্রশ্ন; আপ কেয়া করতে হো?
আমি হেসে উত্তর দিলাম, আই এম এ রাইটার, ট্রাভেলিং ইজ মাই প্যাশন।
মহিলার চোখে-মুখে সন্তুষ্টি খেলা করে উঠলো, তিনি হাসি মুখে সিল মেরে দিলেন। এর মধ্যেই বাংলাদেশের সিমে বিপ্লবদার কল। তিনি ট্যাক্সি নিয়ে এসেছেন আমাকে ডাউকি বাজার অব্দি দিয়ে আসবেন বলে। আমি আর দেরি না করে উঠে পড়লাম। এই ফাঁকে সেদিনের ইন্ডিয়ান রেট জেনে নিলাম আমার একজন ব্যাংকার বন্ধুর কাছ থেকে। সে যা রেট বললো বিপ্লবদা তার চাইতে ১০ রুপি করে কম দিতে চাইলো। পনের হাজারে তিন দিন মেঘালয়ে ঘোরাঘুরি ভালো ভাবেই করা যাবে এমন ধারণা ছিল। কেবল বোকামি হয়ে গেল পুরো টাকাটা না ভাঙ্গিয়ে। ভেবেছিলাম শিলং পৌঁছে সবটা ভেঙ্গে রুপি করবো। কিন্তু ওখানে যা দিতে চাইলো তা এর থেকেও অর্ধেক ।

বিপ্লবদা আমাকে একটা টাটা ন্যানো জিপে বসিয়ে দিলেন। এটাতে বসে দার্জিলিং ওঠার অভ্যেস আমার আছে। মোট আট জন প্যাসেঞ্জার থাকেন। আড়াইশ করে ভাড়া। সাঁই সাঁই উঠে যায় পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায়। প্রতিবারই মনে হবে এই বুঝি পড়ে গেলাম। ড্রাইভার এমন দক্ষ হাতে গাড়ি চালান যে ওপাশ থেকে অদেখা গাড়িগুলো বাঁক ঘুরে আসলেও কখনো টক্কর খায় না। অবশ্য ঘটনাক্রমে কেউ যদি দুর্ঘটনায় একবার পড়েই যায় তবে আর রেহাই নেই।

আমি বসেছি জিপের সবচাইতে ডানে। ইচ্ছে ছিল বাম দিকে বসে বাংলাদেশের পিয়াইন নদীটি আর একবার কাছ থেকে দেখবো। জিপ ডাউকি ব্রিজের ওপর দিয়ে যাবার সময় জ্যামে পড়ে গেল। আমি ডান পাশের পিয়াইন নদীর স্রোতধারা দেখতে লাগলাম। সবুজের গা ছুঁয়ে ভেসে যাওয়া জল। আর সেই জলে ধাক্কা খাচ্ছে বড় বড় পাহাড়। সারাটা জীবন সেই পাথরে বসে ছবি তুলেছি আর এই প্রথম ওপর থেকে দেখতে পাচ্ছি আমার বাংলাদেশ।

জিপ ওপরে উঠছে। আর চোখ আটকে যাচ্ছে পাহাড়ের মাটি ফুঁড়ে ঝরতে থাকা জলস্বিনী ঝরনায়। শিলং যাবার পথেই যে কতোগুলো ঝরনা দেখলাম তা আর গুণে শেষ করা গেল না। যত উপরের দিকে উঠছি তত তাপমাত্রা কমছে। এক সময় সাদা মেঘ এসে জড়িয়ে ধরলো। এশিয়ার সবচাইতে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিংলং-এর মধ্য দিয়ে আমরা এগুচ্ছি। তাদের পোশাক আর তাদের ভাষা বোঝার সাধ্য আমার নেই। অসমীয়া ভাষায় তারা কথা বলছে। বোঝাই যাচ্ছে ভীষণ কর্মঠ মানুষ এরা। পাহাড়ের এতো উঁচুতে কাঠের বাড়ি করে থাকা সোজা কথা নয়। বাচ্চারা দেখলাম হেঁটে হেঁটে স্কুলেও যাচ্ছে।

কখনো মেঘ, আবার কখনো রোদের মিষ্টি আলো এই করতে করতে পুরো ছয় হাজার ফুট উপরে উঠে গেলাম। জুলাই মাস মানে ভ্রমণের মৌসুম চলছে। তাই ব্যাপক ভিড়। ড্রাইভার আমাদের নামিয়ে দিল একটা স্ট্যান্ডের ভেতর যার দুই ধারে কেনাকাটার দোকান। আমি এখন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড নামে খ্যাত স্বপ্নময় শিলং শহরে।

আমি কোনো হোটেল বুক করে এখানে আসিনি। কলকাতা থেকে আগত বন্ধু রাম গোপাল চ্যাটার্জি থাকার ব্যবস্থা করেছেন ভারতীয় সেবা আশ্রমে। অবশ্যই হিন্দু ব্রাহ্মণদের সাথে। আমার কাছে কোনো ভারতীয় সিম নেই, কোনো রুপিও নেই। এখন যদি পাসপোর্টখানাও হারিয়ে যায় তবে নিজেকে কোন দেশের বলে চালিয়ে দেব তাই ভাবছি। ট্র্যাভেল ব্যাগ টেনে টেনে আরো ওপরের দিকে উঠলাম। চারপাশে কত বাহারি ফলের আড়ত। কিনবো কী করে? বেশি স্মার্ট হতে গিয়ে টাকা ভাঙ্গাইনি। আমি যখন এমন এলোমেলা ঘুরে বেড়াচ্ছি, পেছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠলো-‘নীলা’।

ছয় ফুট লম্বা মানুষটার দেখা পাওয়া গেল অবশেষে। প্রথম দেখা হলে লোকে কুশল বিনিময় করে। তখন এসব থোরাই কেয়ার করার দশা আমার। সোজা বলে বসলাম, “উফ, ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে দাদা। আগে কিছু খাব।” দাদা ঘড়ি দেখলেন, “দুটো ক্রস করে গেছে। আগে রুম বুঝে নাও। পরে তো সেটাই পাবে না। দেখছো না শিলং লোকে লোকারণ্য।”

আমার মোটেও রুম নিয়ে ভাবনা ছিল না। এমন পরিচ্ছন্ন শহরে পাহাড়ের গায়ে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও আমার খারাপ লাগবে না। তবু দাদার পিছু নিলাম। আশ্রমের ম্যানেজারের কাছে পাসপোর্ট কপি জমা দিয়ে থাকার ঘরটা একবার দেখে নিলাম। বাহ! কোনো ফ্যান নেই এখানে। হু হু করে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে। কল ছেড়ে মুখ ধুতেই শিহরিত হলাম বরফ শীতলতায়। সুরুচি রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এতো ভিড় থাকে ওখানে ভাবাই যায় না। ভেবেছিলাম ভাত পাব না। আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাতের সঙ্গে মাছ, সবজি, খাসি সব দিল। যে তিন দিন ছিলাম ওখানেই দুপুরের খাবার সেরেছি।

বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধে নামার পথে। দাদার হাতে ডিএসএলআর। আমরা পুলিশ বাজার থেকে আরো ওপরে উঠতে লাগলাম। পাহাড়ের উঁচুতে গভীর এক লেক। সে রাতেই ছিল গুরু পূর্ণিমা। ছয় হাজার ফুট ওপরে বসে ঘন সাদা থালার মতোন জ্বলজ্বলে একটি চাঁদ দেখতে দেখতেই শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। মাথার ওপর জলভেজা চাঁদ নিয়ে সে রাতে আর ঘুম হলো না। পুলিশ বাজার ঘুরে ঘুরে বেশ কম দামে কিছু চপ্পল নিলাম আর কয়েকটা লন কিনে নিলাম। রুমে ফেরার সময় খেলাম মৌ। চিকেন দিয়ে তৈরি খাবারটির প্রেমে পড়েছিলাম সেই প্রথমবার যেদিন কলকাতা গিয়েছিলাম। দাদা বেশ ভোরেই হাঁটতে চলে গেলেন। আমি তার ঘরে গিয়ে খুঁজে না পেয়ে আশ্রমের ম্যানেজারের অফিসে গিয়ে ফোনে চার্জ দিতে থাকি; যদি কোনো রকমে একটা সিম জোগাড় করতে পারি। ভারতে কেজি দরে সিম বিক্রি হয় না। এর আগে পনেরো দিন থেকেও নিজের নামে সিম তুলতে পারিনি। তাই আশা ছেড়ে দিয়ে ওদের সঙ্গে বসে নাস্তা সেরে নিলাম।

একটি থালাতে বাহারি পদের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে – লুচি,পায়েস, ফল, সবজি, ডাল। দু’পাশে লম্বা সারি করে সবাই বসেছে আর ধবধবে সাদা ধুতি পরা একজন মধ্যবয়সী লোক বালতির ভেতর বড় আকারের চামচ ডুবিয়ে খাবার তুলে তুলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ পূজো করছেন প্রতিমার পায়ের কাছে জবা এবং গাঁদা ফুল দিয়ে। আর কেউ কেউ আমার সাথে বসে গেছেন ভোগ খেতে। পুরো বিষয়টা যখন সম্পন্ন হয়ে গেল তখন দাদা এসে বললেন – “ও তুমি ভোগ সেড়ে নিয়েছো? তবে রেডি হয়ে নাও। আমরা শিলং পিক- এ যাব।”

শিলং পিক কেবল আমার কাছে বইয়ে পড়া গল্পের মতো ছিল। এবার বুঝলাম পিক কতোটা উপরে হয়। যে ছেলেটির গাড়ি আমরা সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিয়েছিলাম সে স্থানীয় ছেলে। মোটামুটি একটানে উঠিয়ে নিল শিলং পিকে। দুই ধারে চাষের জমি আর সেখানে গরু আর ভেড়া চরাচ্ছে রাখাল। আকাশের কাছাকাছি এসেও এমন চেনা দৃশ্য চোখে না দেখলে সত্যি বিশ্বাস করতাম না ।পুলিশ বাজার থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এই শিলং পিক।

শিলং পিক ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বেইজ। একটি রাডার স্টেশন রয়েছে । ফলে চূড়া থেকে শহরের ছবি তোলার অনুমতি থাকলেও রাডারের দিকে ক্যামেরা ঘোরানো যাবে না। মূল চূড়ার এক কিলোমিটার আগেই সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট। সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক আছেন তাই তার পরিচয়পত্র জমা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। দুটো ওয়াচটাওয়ার আছে এখানে। একটি টাওয়ার থেকে ২৭০ ডিগ্রি কোণে দেখে নিলাম পুরো শিলং; যেন পাখির চোখে আকাশ দেখা। এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য ভিডিও করে নিলাম হাতের মুঠোয় ধরে রাখা মোবাইলে। আরেকটি টাওয়ারে রয়েছে টেলিস্কোপ। ৫০ রুপি দিয়ে টেলিস্কোপে পুরো শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো দেখে নিলাম। রুপিগুলো দাদার কাছ থেকে বিনিময় করেছি টাকার বদলে।

এখানেও নানান পদের ফল পাওয়া গেল। খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে মাথায় ফুল লাগিয়ে অনেকেই ছবি তুলছেন। আর আমার সারাক্ষণ ইচ্ছে হলো মেঘগুলোকে ছুঁয়ে থাকি। এদিকে বেলা বেড়ে যাচ্ছে। যেতে হবে আমার কাছে সবচাইতে আকর্ষনীয় স্থান অ্যালিফেন্ট ফলসে। ফলসে গা ভেজাবার আগে ড্রাইভার নিজেই বললো- “চলুন দিদি, একটা বন আছে এখানে। ওটা দেখে নেই।”

আমি মজা করে বললাম, “ওই বনে কি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে?”
সে হেসে উত্তর করলো, “না, তা নেই। তবে অনেক জন্তু-জানোয়ার আছে।”

দক্ষ হাতে সে গাড়ি আরো কিছুটা নামিয়ে নিয়ে এলো, এখান থেকে পুরো পাহাড়টা ন্যাড়া দেখাচ্ছে। চারপাশে শুধুই সারি সারি বাড়ি। কোথাও আর গাছপালা নেই। গলফ খেলার খোলা মাঠ পেরিয়ে চলে গেলাম সেই অরণ্যে। যদিও আমরা অরণ্যের ভেতর ঢুকিনি; খোলা মাঠে ১০০ রুপি দিয়ে গাড়ি থামিয়ে গরম গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছি। পাহাড়ের ওপর বিস্তৃত খোলা মাঠ। দাদা ছবি তুলছেন অনবরত। বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের খেলতে দিয়ে নিশ্চিত গল্প করছেন। পরিবার নিয়ে সময় কাটাবার জন্য এটা ভীষণ নিরিবিলি একটা জায়গা।

খোলা ময়দানে কিছু সময় কাটিয়ে সোজা চলে গেলাম এলিফ্যান্ট ফলসে। শতাধিক মানুষ, পার্কিং এলাকায় অনেক গাড়ি, কিন্তু রাস্তায় এক-আধটুও ময়লা নেই। এবার আর উপরের দিকে নয়, আমাদের নামতে হচ্ছে নীচের দিকে। মেঘালয়ের পূর্ব খাসিয়া পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে এলিফ্যান্টস ফলস। ভারতের খাসিয়া রাজ্যে এ ঝরনা ধারাকে বলা হতো ‘কা খাসাইদ লাই পাতেং খোসিউ’; বাংলায় একে বলে তিন ধাপের ঝরনা। এখানে তিনটি ধাপে পাথর বেয়ে নামে পানি। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা এ ঝরনার নাম দেয় এলিফ্যান্ট ফলস। এই জলপ্রপাতের কালো পাথরগুলো মিলিত হয়ে এক ঐরাবত আকৃতির সৃষ্টি করেছিল, সেই থেকে এর নাম দ্য এলিফ্যান্ট ফলস।

তিনশো সিঁড়ি মাড়িয়ে নেমে গেলাম ঝরনার জলে গা ভেজাতে। কিন্তু ওখানে নিরাপত্তা বেষ্টনি এতোটাই কড়া ছিল যে তা আর পার হতে পারলাম না। তাই হাঁটু পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে স্বান্তনা দিলাম।

সে রাতে দুই পা সটান করে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিলাম; ওই তিনশ সিঁড়ি উঠতে দম বেরিয়ে গিয়েছিল। পরদিন খুব ভোরে উঠে নাস্তা সেড়ে নিলাম মাদ্রাস ক্যাফেতে। দোসার সঙ্গে পনির আর সবজি। যেতে হবে মেঘের আরেক বাড়ি নীলাচল যা অবস্থিত আসামের একসময়কার রাজধানী গৌহাটিতে।

সকাল ৯টার মধ্যেই জিপ ছেড়ে দেয় গৌহাটির উদ্দেশ্যে। তাই আমরাও ল্যাগেজ গুছিয়ে নিয়েছিলাম সকাল সকাল। আর গৌহাটি থেকে ঢাকায় ফেরার জন্য বাংলাদেশের বিআরটিসি ট্র্যাভেল তো আছেই। যা কিনা আসাম ছেড়ে ডাউকি সীমান্ত হয়ে সিলেট ধরে আমাকে আবার নিজের দেশ বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেবে।

__________________________
ছবি: রাম গোপাল চ্যাটার্জি, বর্ধমান, কলকাতা।

AD_4_ (9)

১০টি ভ্রমণ চিত্র – ৭

সময়, সুযোগ আর অর্থ, এই তিনটি জিনিসের সমন্বয় করা খুব কঠিন। একটার ব্যবস্থা করলে অন্যটি পিছলে যায় হাতের মুঠো থেকে। কিন্তু যখন তিনটির সমন্বয় করা যায় তখনই একটা ভ্রমণে বেরিয়ে পরা যায়। সমন্বয় করতে পারা সেই সব ভ্রমণের ছবিগুলি থেকে ১০টি ছবি থাকবে এই পর্বে যেগুলি আগেই ফেবুতে শেয়ার করা হয়েছে।

১। আহসান মঞ্জিল

ছবি তোলার স্থান : আহসান মঞ্জিল, ঢাকা।
ছবি তোলার তারিখ : ৩০/০৯/২০১২ ইং
পথের হদিস : ঢাকা > পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে > আহসান মঞ্জিল।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°42’30.9″N 90°24’21.6″E

২। শতবর্ষী বটবৃক্ষ

ছবি তোলার স্থান : বটতলা, আলুটিলা, খাগড়াছড়ি।
ছবি তোলার তারিখ : ২৬/০১/২০১৪ ইং
পথের হদিস : ঢাকা > খাগড়াছড়ি > বটতলা।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°04’36.9″N 91°53’07.7″E

৩। রেল লাইন

ছবি তোলার স্থান : ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্কের পিছনে।
ছবি তোলার তারিখ : ১৩/০৩/২০১৬ ইং

৪। নভথিয়েটার

ছবি তোলার স্থান : নভথিয়েটার, ঢাকা।
ছবি তোলার তারিখ : ২০/০১/২০১২ ইং

৫। দেবদারু

ছবি তোলার স্থান : বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিরপুর, ঢাকা।
ছবি তোলার তারিখ : ০৬/০৩/২০১৭ ইং
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°49’11.8″N 90°20’31.9″E

৬। লেক ভিউ

ছবি তোলার স্থান : বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিরপুর, ঢাকা।
ছবি তোলার তারিখ : ০৬/০৩/২০১৭ ইং
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°49’24.8″N 90°20’55.8″E

৭। সৈকত

ছবি তোলার স্থান : কলাতলী সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার।
ছবি তোলার তারিখ : ২০/০৫/২০১৪ইং
পথের হদিস : ঢাকা > কক্সবাজার > কলাতলী সমুদ্র সৈকত।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 21°24’53.9″N 91°58’56.2″E

৮। বেতাব ভ্যালী

ছবি তোলার স্থান : বেতাব ভ্যালী, কাশ্মীর, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ২৭/০৫/২০১৫ ইং
পথের হদিস : ঢাকা > কলকাতা > পেহেলগাও > বেতাব ভ্যালী।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 34°03’11.2″N 75°21’29.7″E

৯। জলপরি

ছবি তোলার স্থান : নুহাশপল্লী, পিরুজালী।
ছবি তোলার তারিখ : ৩১/০৮/২০১২ইং
পথের হদিস : ঢাকা > হোতাপারা > পিরুজালী > নুহাশপল্লী
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 24°09’30.4″N 90°21’47.0″E

১০। লালন শাহের মাজার

ছবি তোলার স্থান : ছেউড়িয়া, কুষ্টিয়া।
ছবি তোলার তারিখ : ১৭/০৮/২০১২ইং
পথের হদিস : ঢাকা > কষ্টিয়া > ছেউড়িয়া > লালনের আখড়া।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°53’44.7″N 89°09’07.3″E

Padma_2_ (11) - Copy

পদ্মবিল অভিযান

গতকাল বিকেল ৩টায় আমরা বাসা (বাড্ডা) থেকে বের হই। যাব নাগরি। পথে রাথুরা পার হয়ে যেতে হবে।
দিন কতক আগে Abdul Ohab Tamal ভাই এর কল্যানে জানতে পারি রাথুরায় একটি পদ্ম বিল আছে। কিছু ছবিও দেখেছি। ছবি দেখে বুঝা যায়নি বিলটা আসলে এতো বড় হবে। আমার ধারনা ছিল বড়সর কোন পুকুর হতে পারে।

ঐ পথে রাথুরা হয়ে নাগরি পর্যন্ত আমাদের প্রচুর যাতায়াত। তাই এবার ঢুদিয়ে যায়গাটা চিনে নিতে গেলাম। চোখ জুড়িয়ে গেলো।

এলাকার মেম্বার সাহেব ও উনার ছেলে সহযোগিতার চূড়ান্ত করেছে। আপ্পায়নের জন্য বেশ পিরাপিরি করেছেন। কিন্তু আমাদের আবার নাগরি যেতে হবে বলে দেড়ি করিনি। কথা দিয়ে এসেছি আরেকদিন বাচ্চা-কাচ্চাদের নিয়ে যাবো উনার বাড়িতে।

ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে গেলো।

বি.দ্র. আমাদের শহুরেদের কিছু অনৈতিক আচরন আর মন্তব্য গ্রামের এই সব আন্তরিক মানুষ গুলিকে কষ্টদেয়।

0.0 - Copy

১০টি ভ্রমণ চিত্র – ৬

সময়, সুযোগ আর অর্থ, এই তিনটি জিনিসের সমন্বয় করা খুব কঠিন। একটার ব্যবস্থা করলে অন্যটি পিছলে যায় হাতের মুঠো থেকে। কিন্তু যখন তিনটির সমন্বয় করা যায় তখনই একটা ভ্রমণে বেরিয়ে পরা যায়। সমন্বয় করতে পারা সেই সব ভ্রমণের ছবিগুলি থেকে ১০টি ছবি থাকবে এই পর্বে যেগুলি আগেই ফেবুতে শেয়ার করা হয়েছে।

১। মেঘের দেশে

ছবি তোলার স্থান : গেনটিং হাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া।
তারিখ : ১৮/১২/২০১০ ইং
পথের হদিস : ঢাকা > কুয়ালালামপুর > গেনটিং হাইল্যান্ড।

২। সমাধি

ছবি তোলার স্থান : নাগরি, কালিগঞ্জ।
তারিখ : ১৪/১১/২০১৭ ইং
পথের হদিস : ঢাকা > নাগরি বাজার> সেন্ট নিকোলাস গির্জা।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°54’48.8″N 90°30’27.9″E

৩। লাল কাঁকড়ার ঝাক

ছবি তোলার স্থান : পুটনির দ্বীপ।
ছবি তোলার তারিখ : ২১/০৩/২০১৫ইং
পথের হদিস : ঢাকা > সাতক্ষীরা > নীলডুমুর > পুটনির দ্বীপ।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 21°42’11.2″N 89°20’22.4″E

৪। সবুজ পথ

ছবি তোলার স্থান : কলাগাছিয়া, সাতক্ষীরা।
ছবি তোলার তারিখ : ২২/০৩/২০১৫ ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে সাতক্ষীরার শ্যামনগর বা ইশ্বরিপুর। সেখান থেকে যেতে হবে বুড়িগোয়ালীনি। বুড়িগোয়ালীনির নীলডুমুর খেয়া ঘাট থেকে উঠতে হবে ট্রলারে। ৩০ মিনিটেই পৌচে যাবেন কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 22°12’53.5″N 89°14’20.7″E

৫। হাজীগঞ্জ দূর্গ

ছবি তোলার স্থান : হাজীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
ছবি তোলার তারিখ : ০৮/০৭/২০১১ ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে চলে আসুন নারায়ণগঞ্জ। বাস বা ট্রেন স্টেশন থেকে রিক্সা নিয়ে চলে আসুন হাজীগঞ্জ কেল্লা।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°38’00.5″N 90°30’46.1″E

৬। সোনাকান্দা দূর্গ

ছবি তোলার স্থান : বন্দর, নারায়ণগঞ্জ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৪/১২/২০১৭ ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে চলে আসুন নারায়ণগঞ্জ। বাস বা ট্রেন স্টেশন থেকে হেঁটে চলে আসুন খেয়া ঘাট। খেয়া নৌকায় শীতলক্ষ্যা পার হয়ে রিক্সা নিয়ে চলে যান সোনাকান্দা দূর্গে।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°36’25.0″N 90°30’43.5″E

৭। ইদ্রাকপুর দূর্গ

ছবি তোলার স্থান : মুক্তারপুর, মুন্সীগঞ্জ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৯/১২/২০১৭ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকে বাসে চলে আসুন মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর। মুক্তারপুর থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সায় ইদ্রাকপুরের কেল্লা যাওয়া যায়।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°32’50.4″N 90°32’02.6″E

৮। শিকার ও শিকারি

ছবি তোলার স্থান : কটকা, সুন্দরবন।
ছবি তোলার তারিখ : ২২/১১/২০১৪ ইং
পথের হদিস : ঢাকা > খুলনা / মংলা > লঞ্চে করে কটকা।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 21°51’14.4″N 89°46’25.5″E

৯। লালন শাহের মাজার

ছবি তোলার স্থান : ছেউড়িয়া, কুষ্টিয়া।
ছবি তোলার তারিখ : ১৭/০৮/২০১২ইং
পথের হদিস : ঢাকা > কষ্টিয়া > ছেউড়িয়া > লালনের আখড়া।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°53’44.7″N 89°09’07.3″E

১০। কুঠিবাড়ি

ছবি তোলার স্থান : কুঠিবাড়ি, শিলাইদহ, কুষ্টিয়া।
ছবি তোলার তারিখ : ১৭/০৮/২০১২ইং
পথের হদিস : ঢাকা > কষ্টিয়া > শিলাইদহ > কুঠিবাড়ি।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°55’11.3″N 89°13’12.2″E

মেধাকচ্ছপিয়া ট্রেইলে বুনো হাতির সন্ধানে

ট্রিপটা নিয়ে অনেকদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা হচ্ছিল, যাবো কি যাবো না সে দোলায় দুলতে দুলতে ঢাকা থেকে আমরা নয়জন বের হয়ে গেলাম ক্যাম্পিং এর উদ্দেশ্যে, বারোজন যাবার কথা থাকলেও অনাকাঙ্খিত কারনে তিনজন আমাদের সাথে আসতে পারেনি। রাতের বাসে ঘুমঘুম আরামেই পৌছে গেছি চট্টগ্রাম, ঠিক ভোরে ঠান্ডা হাওয়ায় চোখ মেলেই দেখলাম কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে নদীটিকে, মুহুর্তেই মন চনমনে হয়ে গেল।


কক্সবাজার থেকে চল্লিশ কিলোমিটার ভেতরে একটা জায়গায় নেমে গেলাম আমরা। মাঝপথে নেমে যাওয়ায় দু একজন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসাই করে ফেললেন এখানে নামবেন আপনারা!


বাস থেকে নেমে কিছুদূর এগিয়েই আমরা আমাদের অস্থায়ী বিশ্রামের জায়গায় পৌছে গেলাম, কিছুটা উপরে উঠেই দেখতে পেলাম পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য কিছু ট্রি এক্টিভিটিস তৈরি করা হয়েছে। কিছুটা বিশ্রামের পরই বুঝতে পারলাম আমরা একটা ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছি! কারন আমরাই প্রথম দল যারা এখানে ক্যাম্পিং করবো। উঠে গেলাম ট্রি এক্টিভিটিস উপভোগের জন্য।


একে একে আমরা সবাই এক ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, ভালোই লাগল, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাল ছিল, সেখানকার মানুষজনও বেশ ভাল মনে হল, আমার জন্য তারা তাদের গাছের কাঁঠাল, লিচু পাঠাল, আমরা তাদের আতিথেয়তা দেখে যারপরনাই মুগ্ধ হলাম। দুপুরে বের হলাম আশেপাশের জায়গা দেখতে যাতে আমরা ভাল একটি জায়গায় আমাদের ক্যাম্প স্থাপন করতে পারি।


চারপাশের শতবর্ষী গাছগুলো যেন আমাদের দেখে আনন্দিত, আর আমাদের কথা নাইবা বললাম।


মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখছিলাম আমরা।


দুপুরের খাবারের পর আমাদের মধ্যে থেকে তিনজনকে ক্যাম্পে রেখে বাকিরা বের হলাম ট্রেইল ধরে হাঁটতে, ঝোপঝাড় বনবাদাড় হাঁটছি তো হাঁটছি, এ যেন অদ্ভুত নেশা।


সাথে একজন গাইড থাকাতে বেশ ভাল হয়েছে নয়ত তিনঘন্টার পথ আমাদের ন ঘন্টায় শেষ হতো কিনা কে জানে।


অনেক পরে কিছু বাড়িঘরের দেখা মিলল। সন্ধ্যায় ক্যাম্পে ফিরে এলাম।


ক্যাম্পফায়ারের সাথে চলল বারবিকিউ, গান, আনন্দ উচ্ছাস, কথোপকথন। সব মিলিয়ে একটা মোহময় আবেশ।


দিনে প্রায় তিনঘন্টা ট্রেইল ধরে হাটার সময় আমরা বুনো হাতি দেখতে পাইনি, কিছু হাতি দারা আক্রান্ত পরিত্যাক্ত বাড়িঘর দেখেছি। যাহোক আড্ডা চলছিল, রাত প্রায় দুইটা কিংবা আড়াইটা, তিনজন তাবুর ভেতরে আর বাকিরা বাইরে আড্ডা দিচ্ছিলাম। চলছিল হাতি নিয়ে হাসাহাসি, হঠাৎ মটমট শব্দে আমরা চমকে উঠলাম, আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল হাতির পাল, আমরা মোটামুটি ভয়ই পেলাম। হঠাৎ দুটো ফাঁকা গুলির আওয়াজ শুনলাম, হাতিরা কোথায় যেন মিলিয়ে গেল, পরে জানতে পারলাম আমাদের নিরাপত্তার জন্য আগে থেকেই কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী সেখানে ছিলেন, রাতটা কিভাবে পার হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি, সকালে বন বিভাগের কর্মকর্তারা এলেন সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য। কুশল বিনিময়ের পর সব গুছিয়ে আমরা রওনা হয়ে গেলাম কক্সবাজারের উদ্যেশ্যে।

কক্সবাজারে হোটেলে পৌছে কিছুক্ষণ সুইমিং পুলে দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখলাম পাহাড় ও সমুদ্র, মনটা অত্যাধিক শান্ত হয়ে গেল। আকাশ হঠাৎ কাল হয়ে গেল, সমুদ্রের রুপটাই যেন বদলে গেল, আমরাও কাছ থেকে সমুদ্রের এমন বিরল রুপ দেখার লোভে বিচে নেমে ধুলোর ঝড়ের মুখোমুখি হলাম।


বৃষ্টিতে ভিজলাম, আস্তে আস্তে সমুদ্র শান্ত হয়ে গেল।


অবাক হয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখলাম।


গোধূলি বেলায় শান্ত সমুদ্রের পাড়ে বসে উপভোগ করলাম স্মরণীয় কিছু সময়।


সন্ধায়, গেলাম জীবন্ত মাছ দেখতে।

তারপর রাতে দশটার দিকে আমরা প্রবল আত্মতৃপ্তি নিয়ে ঢাকার উদ্যেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম। হলফ করে বলতে পারি এটা সত্যিই আমার জীবনের একটা না ভোলার মতন ট্রিপ ছিল।

7 - Sonakand Durgo (69) - Copy

১০টি ভ্রমণ চিত্র – ৫

সময়, সুযোগ আর অর্থ, এই তিনটি জিনিসের সমন্বয় করা খুব কঠিন। একটার ব্যবস্থা করলে অন্যটি পিছলে যায় হাতের মুঠো থেকে। কিন্তু যখন তিনটির সমন্বয় করা যায় তখনই একটা ভ্রমণে বেরিয়ে পরা যায়। সমন্বয় করতে পারা সেই সব ভ্রমণের ছবিগুলি থেকে ১০টি ছবি থাকবে এই থ্রেডে যেগুলি আগেই ফেবুতে শেয়ার করা হয়েছে ।

১। বারান্দায়…..
ছবি তোলার স্থান : সাজেক, রাঙ্গামাটি।
ছবি তোলার তারিখ : ১৩/১০/২০১৬ইং

পথের হদিস : ঢাকা > খাগড়াছড়ি > দিঘীনালা > সাজেক।
সকাল কেটে গেলেই মেঘমাচাং এর এই বারান্দায় দৃশ্যপট বদলে যায়।
T O D – পূর্নিমায় মেঘের দেশে

২। নির্বাসনে যাবেন নাকি?
ছবি তোলার স্থান : আরু ভ্যালি, কাশ্মীর, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ২৭/০৫/২০১৫ইং

পথের হদিস : আমরা গিয়েছি ঢাকা > কলকাতা > জাম্মু > পেহেলগাম > আরু ভ্যালি।
T O D – কাশ্মীর ইভেন্ট

৩। সবুজের মাঝে
ছবি তোলার স্থান : চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদভবন, ঢাকা
ছবি তোলার তারিখ : ১০/০৪/২০১৭ ইং

৪। পেট্রোনাস টাওয়ার
ছবি তোলার স্থান : কুয়ালালামপুরে, মালয়েশিয়ার।
ছবি তোলার তারিখ : ১৮/১২/২০১০ ইং

৫। কৃত্রিম দ্বীপ
ছবি তোলার স্থান : বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিরপুর, ঢাকা।
ছবি তোলার তারিখ : ০২/০৪/২০১৭ ইং

৬। Merlion
ছবি তোলার স্থান : মারলায়ন পার্ক, সিঙ্গাপুর।
ছবি তোলার তারিখ : ১৫/১২/২০১০ ইং

নির্জনতা
ছবি তোলার স্থান : মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত।
ছবি তোলার তারিখ : ২১/০৩/২০১৫ইং

পথের হদিস : ঢাকা > সাতক্ষীরা > নীলডুমুর > মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত।
T O D – সাতক্ষীরা হয়ে সুন্দরবন ইভেন্ট।

৮। হাজাছড়া ঝর্ণা
ছবি তোলার স্থান : হাজাছড়া ঝর্ণা, দিঘীনালা, খাগড়াছড়ী।
ছবি তোলার তারিখ : ১৩/১০/২০১৬ইং

পথের হদিস : ঢাকা > খাগড়াছড়ি > দিঘীনালা > হাজাছড়া ঝর্ণা।
এতো চমৎকার একটা ঝর্ণাতে যেতে তুলনামূলক পাহাড়ি পথে হাঁটার কষ্ট নাই বললেই চলে।
আমি গিয়ে ছিলাম TOD এর সাথে “পূর্নিমায় মেঘের দেশে” ইভেন্টে।

৯। নীল জলের ঢেউ

ছবি তোলার স্থান : কোরাল দ্বীপ, পাতায়া, থাইল্যান্ড।
ছবি তোলার তারিখ : ২০/১২/২০১০ইং

১০। কুঠিবাড়ি

ছবি তোলার স্থান : কুঠিবাড়ি, শিলাইদহ, কুষ্টিয়া।
ছবি তোলার তারিখ : ১৭/০৮/২০১২ইং
পথের হদিস : ঢাকা > কষ্টিয়া > শিলাইদহ > কুঠিবাড়ি।

7 - Sonakand Durgo (68)

১০টি ভ্রমণ চিত্র – ৪

সময়, সুযোগ আর অর্থ, এই তিনটি জিনিসের সমন্বয় করা খুব কঠিন। একটার ব্যবস্থা করলে অন্যটি পিছলে যায় হাতের মুঠো থেকে। কিন্তু যখন তিনটির সমন্বয় করা যায় তখনই একটা ভ্রমণে বেরিয়ে পরা যায়। সমন্বয় করতে পারা সেই সব ভ্রমণের ছবিগুলি থেকে ১০টি ছবি থাকবে এই থ্রেডে যেগুলি আগেই ফেবুতে শেয়ার করা হয়েছে ।

১। বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ির সামনের অংশ
ছবি তোলার স্থান : বালিয়াপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ইং

পথের হদিস : ঢাকা > আড়াইহাজার > বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি।
Save the Heritages of Bangladesh এর ২৫ তম ইভেন্ট

২। ইন্ডিয়া গেট
ভারতের জাতীয় স্মৃতিসৌধ
ছবি তোলার স্থান : দিল্লী, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ১৫/০৩/২০১৪ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > কলকাতা > দিল্লী > ইন্ডিয়া গেট।

৩। বিরতী
ছবি তোলার স্থান : গুলমার্গ, কাশ্মীর, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ২৯/০৫/২০১৫ইং

পথের হদিস : আমরা গিয়েছি ঢাকা > কলকাতা > জাম্মু > পেহেলগাম > শ্রীনগর > গুলমার্গ।
T O D – কাশ্মীর ইভেন্ট

৪। শুভ্রসবুজ
ছবি তোলার স্থান : লেহ, কাশ্মীর, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ১/৬/২০১৫ ইং

পথের হদিস : আমরা গিয়েছি ঢাকা > কলকাতা > জাম্মু > পেহেলগাম > শ্রীনগর > কারগিল > লেহ।
T O D – কাশ্মীর ইভেন্ট

৫। শুভ্রনীল
ছবি তোলার স্থান : ছেড়াদ্বীপ, সেন্টমার্টিন।
ছবি তোলার তারিখ : ২৭/০১/২০১২ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > টেকনাফ > সেন্টমার্টিন > ছেড়াদ্বীপ।

৬। নীল জলে
ছবি তোলার স্থান : লালাখাল, সিলেট।
ছবি তোলার তারিখ : ২০/১০/২০১৪ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > সিলেট > লালাখাল।

৭। ঝর্ণা
ছবি তোলার স্থান : গুলমার্গ, কাশ্মীর, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ২৯/০৫/২০১৫ইং

পথের হদিস : আমরা গিয়েছি ঢাকা > কলকাতা > জাম্মু > পেহেলগাম > শ্রীনগর > গুলমার্গ।
T O D – কাশ্মীর ইভেন্ট

৮। মেঘের রাজ্যে
ছবি তোলার স্থান : সাজেক, রাঙ্গামাটি।
ছবি তোলার তারিখ : ১৩/১০/২০১৬ইং

পথের হদিস : ঢাকা > খাগড়াছড়ি > দিঘীনালা > সাজেক।
সারাটা সকাল কেটে গেছে মেঘমাচাং এর এই বারান্দায় বসে।
T O D – পূর্নিমায় মেঘের দেশে

৯। আহসান মঞ্জিল
ছবি তোলার স্থান : আহসান মঞ্জিল, ঢাকা।
ছবি তোলার তারিখ : ৩০/০৯/২০১২ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে > আহসান মঞ্জিল।

১০। কোরাল দ্বীপ
ছবি তোলার স্থান : কোরাল দ্বীপ, পাতায়া, থাইল্যান্ড।
ছবি তোলার তারিখ : ১৮/০৫/২০১৪ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > ব্যাংকক > পাতায়া > কোরাল দ্বীপ।

গল্পে গল্পে ভ্রমণ কাহিনিঃ আদিম মানুষের দেশে (দুই)

কেনিয়া, ১ আগস্ট ২০১৮; লোকাল টাইম ০০:০১ মিনিট।

-কারিবু। নোরিনের চিবুকে হালকা স্পর্শ দিয়ে আদনান নাভিদ গ্রিট করলো।
-আসান্তে সানা। ঘুম ঘুম কন্ঠে সুতপা নোরিন জবাব দিলো

বিয়ে বার্ষিকী; তাই নোরিনকে নাভিদ ওদেশের ভাষা সোহাইলিতে স্বাগত জানিয়েছে। একই ভাষায় উত্তরটাও নোরিনের জানা ছিল।

গত ২৬ জুলাই এর পরিকল্পনা অনুযায়ী ওরা এখন লডোয়াতে; কেনিয়ার রিফটভ্যালি প্রোভিন্সের একটা কাউন্টি হেড কোয়ার্টার। ডায়োসিস অব লডোয়ার গেস্ট হাউজে।

চিবুক ছুঁয়ে দিয়েই নাভিদ মিটমিটি হাসছিল।

-তোমার মতলবটা কি? নোরিন প্রশ্ন করলো
-জলে জোছনা মিশাবো। আবার দুষ্টু-হেসে নাভিদ জবাব দিল
-গল্প বল; এদেশের গল্প

ফ্রিজ থেকে আধা লিটারের একটা বোতল খুলে নাভিদ এক ঢোক জল খেয়ে নিলো।

-এখানে লোমিয়া নামে একটা কাউন্টি আছে। সকালের নাস্তা সেরেই লোমিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেব
-লোমিয়ায় কেন? নোরিন জানতে চাইলো
-এদেশে চাকরীকালীন সময়ে নাইরোবি থেকে বহুবার এখানে এসেছি। তখন একবার লোমিয়ার একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমাদের এই বার্ষিকীতে ওখানে যেতে চাই। নানান দেশে নানান রকমের বিয়ের সংস্কৃতি রয়েছে। সবগুলো থেকে তোমার-আমারটা যে প্রকৃতই ভিন্ন সেটা দুজন একসাথে অনুভব করতে চাই।

-আমার অমত নেই। তোমার সেই লোমিয়া ভ্রমণের অনুভূতি শেয়ার কর।

-লোমিয়ার এই নৃ-গোষ্ঠিটি মোটা দাগে টুরকান। সেবার এখান থেকে আড়াই ঘন্টা ট্রাভেল করে ওখানে গিয়েছিলাম; নিরাপত্তা বাহিনীর সবল প্রস্তুতি নিয়ে। শেষের দশ পনের মিনিটের পথ ছিল বিয়ের আয়োজন স্থলের ভিতর। উঁচু নিচু ঝোপ জঙ্গল; হঠাৎ হঠাৎ যেনো মাটি ফুঁড়ে সারিবাঁধা নারীরা হেলেদুলে নেচেগেয়ে গাড়ির সামনে এসে থেমে যেতো।

এর কয়েক মিনিট পর একটা লাঘার পাড়ে উপস্থিত হতেই ৩০-৪০ জনের একটা গ্রুপ আমার গাড়ির দিকে একে-৪৭ তাক করলো। বলে নেই, মরু ভূমিতে মরা নদিকে লাঘা বলে।

-মরু ভূমিতে নদি? নোরিন বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলো

-উজানে উগান্ডা। ওখানে বৃষ্টি নামলে তা ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাডের রুপ নিয়ে এই মরুভূমির নির্দিষ্ট কিছু জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেই জায়গাগুলো দেখতে মরা নদির মতোই।

-লাঘায় ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড দেখেছ?
-হ্যা; এবং সেটা হৃদয় বিদারক ছিল। অন্য একদিন সেই গল্প বলবো। এখন লোমিয়ার কথা শুনো
-ওকে; গো এহেড
-কিন্তু তার আগে কিছু বিনিময় চাই।

বেগতিক বুঝে নোরিন ওর মুখ নাভিদের বুকে লুকিয়ে ফেললো। এর অল্প কিছুক্ষণ পর ওরা বারান্দায় গেলো। পাহাড়ের ওপর গেষ্ট হাউজটা। জোছনায় বেশ দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। মধ্যরাতে নোরিন যেন একটা মরুভূমি শহরের বিলাপ অনুভব করছিল।

-জলে জোছনা না মিশালে আজ এই রাত খুব অভিমানী হবে। বলেই নাভিদ আবার মুচকি হাসলো।

স্বভাবসুলভ ভাবে নাভিদের বুকে নোরিন একটা কিল বসিয়ে দিল। এটা না পেলে নাভিদের বাম বুকের “লাব-ডাব” শব্দ মৃদু থেকে মৃদুতর হয়ে যায়; তাই সে এই কিলটার প্রতীক্ষায় থাকে।

-গল্পটা বল। সকালে উঠতে হবে। নোরিন তাড়া দিল
-ওই রকম বন্দুকের মুখোমুখি আগেও বেশ কবার হয়েছি। তাই লোমিয়ায় তখন ভয় পাইনি। এর কিছু কারণও আছে। রিফ্টভ্যালির কোন টুরকানা কাউন্টিতেই সরকারের কার্যকর উপস্থিতি ছিলনা। আগেই বলেছি, বিরাশিভাগ মানুষ যাযাবর। পশুপালন ছাড়া ওদের জীবন নির্বাহের তেমন কোন বিকল্প নেই। আয়তনে প্রায় আমাদের দেশের সমান এই বিশাল এলাকায় খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসা ইউএন এর ওপর অনেকটা নির্ভরশীল ছিল। তাই ইউএন এর সাইন বা লগোযুক্ত গাড়ি বা কিছু দেখলে ওরা ভালো আচরণ করে।

-গুলি করেনি?
-না। আমার নিরাপত্তা বাহিনির প্রধানের নাম ছিল জন। সে অনেকগুলো ভাষা জানতো। জন ওর গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে গিয়ে ওদের সাথে মিনিট দুয়েক কথা বলার পর চিত্রটা পুরো বদলে গেলো

-সেটা কি?
-ওদের গোত্রীয় প্রধান এসে আমাকে নিয়ে গেল। আমার সাথে জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়ার দুই নাগরিক ছিল। ওদেরকে নিয়ে গোত্রীয় প্রধানকে অনুসরণ করতে লাগলাম
-ওই দুই ভিনদেশী নাগরিক পুরুষ না মহিলা?
-বলবোনা;
নাভিদ একটা চাপা হাসি দিলো

-ঠিক আছে; বলোনা। কিন্তু তারপর কি হলো?
-পায়ে হেটে লাঘা পেরিয়ে আমরা একটা জঙ্গলে প্রবেশ করলাম। সেখানে নানান বয়সী পুরুষ লোক ছিল। সবার হাতে একে-৪৭ । গায়ে যেটুকু আবরণ ছিল তা ওদের মূল কিছু আড়াল করতে পারেনি। একটা কথা সম্ভবত তোমাকে আগেই বলেছিলাম। টুরকানায় যে বৃদ্ধকে লাঠিতে ভর দিয়ে চলার কথা তার হাতেও একে-৪৭ দেখেছি

-পরে জঙ্গলে কি হয়েছিল?
-ওখানে বিয়ের মূল অনুষ্ঠানটা চলছিল। এখানে সেখানে গরু, ছাগল পুড়ানো হচ্ছিল। আমার উদ্দেশ্যে গোত্র প্রধান মিনিট পাঁচেক কথা বলে ভোজনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানালো। সে কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেছিল। আফ্রিকার অনেক জায়গাতে একটা কমন কালচার হলো, কোন খাবার অফার করলে সেটা গ্রহণ করতে হয়। জন আমার হয়ে ওদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো। ওটা রমজান মাস ছিল এবং আমি মুসলিম এটা বুঝাতে জনকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

-রমজান মাস না হলে কি করতে?
-আমি আসলে ওদের খাবারে অংশ নিতে বেশ আগ্রহী ছিলাম। যদিও পশুগুলোর চামড়া আধপোড়া ছিল। ওরা নুন মরিচ চিনেনা। রোজা না রাখলে বার্থডে কেকের মতো চামড়াসহ কেটে দেয়া মাংস পিছগুলো আমি সানন্দে খেতাম

-তুমি সর্বোতভাবে জংলী;
কথাটা বলেই নাভিদের ফিনফিনে চুল নোরিন এলোমেলো করে দিল।

-ইন্টারেস্টিং কিছু কথা বলা হয়নি
-কি?
-বর ষাটোর্ধ ছিল; কনে সিক্সটিন। তাই কনেকে যৌতুক হিসেবে বর বেশি পশু দিয়েছিলো। রিপিট করছি, যৌতুক বরেরা দেয়; কখনোই কনে নয়

-ডিটেইল বল
-বর যেইই হোক না কেন প্রেমিক বা ভিখিরি; বিয়েতে ন্যূনতম চার ইউনিট পশু দিতেই হয়। এজন্য অধিকাংশ যুবকই বিয়ের আগে যুদ্ধে যায়। শত্রু নৃগোষ্ঠির পশু জয় করে এনে বিয়ে করে অথবা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যায়। বলে রাখি, প্রতি ইউনিটে তিরিশটা পশু থাকে। এর মানে বিয়ে করতে হলে একজন পুরুষের কমপক্ষে ১২০টা পশু থাকতে হবে। এক ইউনিট মানে- এই যেমন ৩০ টা গরুর এক ইউনিট, ৩০ টা ছাগলের এক ইউনিট; এইভাবে মেষ, উট, জেব্রা ইত্যাদির ইউনিট। ওই বিয়েতে বর যেহেতু বেশি বয়সী এবং ধনী ছিল তাই সে ৪ এর অধিক ইউনিট পশু দিয়েছিল। সংখ্যাটা আজ একজাক্টলি মনে নেই।

-বিয়ে করতে যুদ্ধে যায়- এরকম কী যেন বললে?
-হ্যাঁ। রিলেটিভলি ধনীরাই পশু পালন করে। বাকীদের কেউ কেউ তাদের পশু দেখভাল করে। ওরা বিয়ে করবে কেমনে যদি নিজের পশু না থাকে? তাই ওরা পকট এ যুদ্ধে যেতো। পকট এলাকাটা বড় বড় পাহাড় দিয়ে টুরকানা থেকে আলাদা করা।

-ট্রুলি ভেরি ইন্টারেসটিং। নোরিন মন্তব্য করলো

-বিয়ের অনুষ্ঠানটিতে উল্লেখ করার মতো আরও কিছু ঘটনা ঘটেছিলো। আধাকাঁচা চামড়ায় তৈরি বরের পোশাকটা আমি পরেছিলাম।
-কোনদিন ছবি দেখাওনি তো!
-কেনিয়ার পর উগান্ডায় চাকরি করতাম। কামপালায় থাকতাম। শেষের দিকে একদিন আমার লেপটপ্টা ক্র্যাশ করে। ওখানে কেনিয়া এবং উগান্ডায় তোলা সব ছবি ছিল।
– বিগ লস
– রিয়াক্ট না করলে তোমাকে একটা কথা বলবো
-বলো
-আফ্রিকানরা রোমান্টিক হয়না। ইস্ট আফ্রিকার দেশগুলিতে দীর্ঘ সময় থেকে এই সত্যটা বেশ বুঝেছি। তবে আমার দিকে লোমিয়ার ওই কনের মিটমিট-তাকিয়ে থাকা দেখে ভাবছিলাম, আফ্রিকান রমণীরা সেদিনই প্রথম রোমান্টিক হয়েছে!
-তো?
-অথচ এই আমার সাথে এমন মধুরাতেও তুমি কেমন কৃপণ!

নাভিদের ধনুকের মতো বাঁকা ঠোঁটটা চেপে ধরে নোরিন “গৃহে” প্রবেশ করল। আজ সে নিজেই মুলবাতি নিভিয়ে নীলটা জ্বালিয়ে দিলো।

ঈশ্বব্রের ডায়েরিতে অবশ্য স্পষ্ট লিখা আছে, জগৎ সৃষ্টির পর কোন এক পহেলা আগস্টে মরুভূমিতে একবার বৃষ্টি নামবে।

ঈশ্বরের কী কখনো ভুল হয়?!

7 - Sonakand Durgo (67) - Copy - Copy

১০টি ভ্রমণ চিত্র – ৩

সময়, সুযোগ আর অর্থ, এই তিনটি জিনিসের সমন্বয় করা খুব কঠিন। একটার ব্যবস্থা করলে অন্যটি পিছলে যায় হাতের মুঠো থেকে। কিন্তু যখন তিনটির সমন্বয় করা যায় তখনই একটা ভ্রমণে বেরিয়ে পরা যায়। সমন্বয় করতে পারা সেই সব ভ্রমণে ছবিগুলি থেকে ১০টি ছবি থাকবে এই থ্রেডে যেগুলি আগেই ফেবুতে শেয়ার করা হয়েছে ।

১। বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ির একাংশ
ছবি তোলার স্থান : বালিয়াপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ইং

পথের হদিস : ঢাকা > আড়াইহাজার > বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি।
Save the Heritages of Bangladesh এর ২৫ তম ইভেন্ট

২। গুরুদুয়ারা
ছবি তোলার স্থান : দিল্লী, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ১৫/০৩/২০১৪ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > কলকাতা > দিল্লী > গুরুদুয়ারা।

৩। অশ্বারোহী
ছবি তোলার স্থান : গুলমার্গ, কাশ্মীর, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ২৯/০৫/২০১৫ইং

পথের হদিস : আমরা গিয়েছি ঢাকা > কলকাতা > জাম্মু > পেহেলগাম > শ্রীনগর > গুলমার্গ।
T O D – কাশ্মীর ইভেন্ট

৪। ঝিকঝাক রোড
ছবি তোলার স্থান : কারগিল থেকে লেহ যাওয়ার পথে, কাশ্মীর, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ৩১/৫/২০১৫ ইং

পথের হদিস : আমরা গিয়েছি ঢাকা > কলকাতা > জাম্মু > পেহেলগাম > শ্রীনগর > কারগিল > লেহ।
T O D – কাশ্মীর ইভেন্ট

৫। প্রবাল
ছবি তোলার স্থান : ছেড়াদ্বীপ, সেন্টমার্টিন।
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/০১/২০১২ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > টেকনাফ > সেন্টমার্টিন > ছেড়াদ্বীপ।

৬। হযরত শাহজালালের দরগাহ মসজিদ
ছবি তোলার স্থান : হযরত শাহজালালের দরগাহ, সিলেট।
ছবি তোলার তারিখ : ২০/১০/২০১৪ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > সিলেট > হযরত শাহজালালের দরগাহ।

৭। ধুসর ও সবুজ
ছবি তোলার স্থান : লেহ, কাশ্মির, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ১/৬/২০১৫ ইং

পথের হদিস : আমরা গিয়েছি ঢাকা > কলকাতা > জাম্মু > পেহেলগাম > শ্রীনগর > কারগিল > লেহ।
T O D – কাশ্মীর ইভেন্ট

৮। অবসর
ছবি তোলার স্থান : সাজেক, রাঙ্গামাটি।
ছবি তোলার তারিখ : ১৩/১০/২০১৬ইং

পথের হদিস : ঢাকা > খাগড়াছড়ি > দিঘীনালা > সাজেক।
বিকেলে এখানে বসে অনেক্ষণ মশার কামর খেছেছিলাম।
T O D – পূর্নিমায় মেঘের দেশে

৯। কুউউ…ঝিকঝিক…..
ছবি তোলার স্থান : লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজার, সিলেট।
ছবি তোলার তারিখ : ১৯/১০/২০১৪ ইং

পথের হদিস : লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার, সিলেট শহর থেকে দূরত্ব হবে প্রায় ৬০ কিলোমিটার।

তবে যেতে হলে সবথেকে ভাল মাধ্যম হতে পারে ট্রেন। কমলাপুর স্টেশন থেকে সিলেটগামী ট্রেনে উঠে নামবেন শ্রীমঙ্গলে, সময় লাগবে প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটারের দূরত্বে এই উদ্যান। সিএনজি অথবা রিকশাতে করে খুব কম সময়ে পৌঁছে যেতে পারবেন।

আর বাসে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারগামী যেকোন বাসে উঠে পড়লেই হবে, মৌলভীবাজার শহর থেকেও যেতে পারবেন উদ্যানে সি এন জি অথবা লোকাল বাসে চড়ে।

১০। হিমছড়ির বাঁকে
ছবি তোলার স্থান : হিমছড়ি, কক্সবাজার।
ছবি তোলার তারিখ : ১৮/০৫/২০১৪ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > কক্সবাজার > হিমছড়ি।

গল্পে গল্পে ভ্রমণ কাহিনিঃ আদিম মানুষের দেশে (এক)

ওরা দুজন এইমাত্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগষ্টেরে প্রথম দিন আফ্রিকায় থাকবে। শেষ বয়সে মধুচন্দ্রিমা আর কি! আজ ২৬ জুলাই; কাল ২৭, তারপর ৩১ জুলাই; এইভাবে একদিন ১ আগস্ট হবে! কতোদূর —- !

-আগে কোন দেশে যাবো?
নোরিন জানতে চাইলো। সুতপা নোরিন। নাভিদ আদনানের স্ত্রী।

-কেনিয়া
নাভিদ জবাব দিল।
সে বিশেষ পাসপোর্টের অধিকারী; তাই ভিসা কোন বড় বিষয় না।

-ওখানে কি কি দেখবো?

-রিফটভ্যালি প্রভিন্সের টুরকানায় যাবো; লোকিচোগিয়ো বাদ দিয়ে বাকি মেজর এলাকাগুলিতে। এজন্য লডোয়াতে অবস্থান করতে হবে। আদিমানুষ এবং ওদের ডাইভারসড কালচার তোমার ভালো লাগেবেই। লেক টুরকানা দেখবো এবং অন দ্যা ওয়ে, ইকুয়েটর অতি অবশ্যই

-ওসব তুমি দেখেছ?

-হ্যাঁ। কেনিয়াতে যখন পোস্টিং ছিল কাজের জন্য বহুবার গিয়েছি। রিফটভ্যালি প্রভিন্সের এলডোরেট যথেষ্ট গ্রীন; বাকিটুকু ডেজার্ট। কেউ যেতে না চাইলেও আমার খুব আগ্রহ ছিল। এলাকাটা উদ্ধার করতে যাওয়ার উছিলায় ওসব উপভোগ করেছি। কী যে দারুণ সব কৃষ্টি কালচার ! এথনোগ্রাফিক স্টাডির জন্য ওখানে অসাধারণ সব বিষয় রয়েছে।

-ইকুয়েটর নিয়ে একটু বল।

-ওটা রিফ্টভ্যালি বা লডোয়ার পথেই পড়বে; নাইরোবি থেকে বেশি দূরে নয়। লডোয়া যেতে আমি অধিকাংশ সময় ফ্লাই করেছি। এর আড়াই তিনদিন আগে অফিসিয়াল ভেহিকল বাইরোডে গিয়ে লডোয়াতে উপস্থিত থাকতো। আকাশ পথে ঘণ্টা দেড়েক; কিন্তু বাইরোডে আড়াইদিনই লাগে। প্রথম যেবার বাইরোডে যাই ইকুয়েটর মিস করেছিলাম। আমার কাঠখোট্টা ড্রাইভার গাইড করেনি। পরে অবশ্য প্রতিবারই থেমেছি। যাওয়ার পথে থামলে ডান পাশের একটা ঘর থেকে একজন লোক বের হয়ে আসতো। কিছু ডলার বা কেনিয়ান শিলিং দিলে লোকটা ইকুয়েটরের ম্যাজিক দেখাতো

-ম্যাজিকটা কি?
-এখন দেখাই? নাভিদ মুচকি হাসলো
-না।

নাভিদের বুকে দুটো কিল মেরে নোরিন ইকুয়েটরের ম্যাজিক বলার জন্য তাগিদ দিল।

-ইকুয়েটরের বাংলা আমার মনে নেই। ওটা একটা ক্লিয়ার কাট স্ট্রেইট লাইন। এই লাইন থেকে নর্দান হেমিস্ফেয়ারের দিকে বিশ মিটার দূরে গিয়ে পানি ভর্তি গামলায় লোকটা একটা কাগজের টুকরা রাখলো। সাথে সাথে কাগজটা স্পিডে ক্লক-ওয়াইজ ঘুরতে লাগলে। সাউদার্ন হেমিস্ফেয়ারে একই দূরুত্বে এর ঠিক উল্টো ঘটলো; অর্থাৎ কাগজটি এন্টিক্লক ওয়াইজ ঘুরতে লাগলো। আর ইকুয়েটর লাইনে কাগজটি স্থির রইলো। ওই লাইনে তোমার ওজন ৬২ কেজি হবে যা প্রকৃত ওজন থেকে ৩% কম।

যাহোক, এরপর বনের মতোন এরিয়া; প্রচুর মধু। আমি নাম দিয়েছিলাম হানিফরেস্ট। যেতে যেতে এক সময় এলডোরেট শহর পড়বে। ওখানে আমার বন্ধু আছে। সাউথ সুদানে আমার চার বছরের মধ্যে ওকে তিন বছর পেয়েছি।

-মহিলা?
একটু উদ্ভিগ্ন হয়ে নোরিন জানতে চাইলো

-না। রিচার্ড এর কথা তোমাকে আগে বেশ কবার বলেছি।

যাহোক, পথে প্রচুর পাহাড় পাবে। পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে একেবেকে পথ গেছে। মন ভরবেই। যতোবেশি এগুবে; সবুজ কমতে থাকবে। এক সময় দেখবে, একে-৪৭ কাঁধে ৬ ফুটাধিক লম্বা কোন যুবতী; ডেজার্টে গরু, ছাগল, উট দেখভাল করছে। একটু যদি তাকাই দোষ দিবেনা তো?

-ঘুষি দেব

-তা দাও। ওদের ছবি ওঠাবেনা কিন্তু; গুলি করে দেবে। একটা ঘটনা বলি।

কেনিয়াতে প্রথম যেবার গেলাম; নাইরোবিতে ইসরাইল এমব্যাসির বিপরীতে যে হোটেলটা আছে ওখানে অফিস আমার একরাতের জন্য থাকার ব্যাবস্থা করেছিল। যতদূর মনে পড়ে ওটা বিশপ রোডে। হোটেলটা এক্সপেন্সিভ কিন্তু সুবিধা কম। কমপ্লেমেন্টারি কিছু ছিলোনা। আড়াই ডলার দিয়ে আধা লিটার জল কিনেছিলাম। এর সপ্তাহ দুয়েক পর আমি লডোয়াতে যাই একটা রোগের এপিডেমিক ইনভেস্টিগেশনের জন্য। সাথে অন্য একজন ভিনদেশি কলিগ ছিল। “মিস্টার টি-কাট” চুলের সাড়ে ছয় ফুটের মতো লম্বা যুবতীর হাতে একে-৪৭ দেখে সে পুলকিত হয়। লোভী কলিগটা ক্যামেরায় ক্লিক করতেই সেই যুবতী তার দিকে বন্দুক তাক করেছিল। মেরেই ফেলবে। তখন পাশ থেকে একজন পরামর্শ দিয়েছিলে অর্ধেক ভরা বোতলটা দিয়ে দিতে। নাইরোবির সেই হোটেলটাতে এক বোতল পানির দাম আড়াই ডলার যা দিয়ে লডোয়া কিংবা টুরকানা সাউথে একটা ছোট সাইজের ছাগল কেনা যায়।

-ছাগলের কথা বলছ কেন?
-ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার থেকে ওরা বন্দুকগুলি কিনে। ডলার পাবে কোথায়? তাই বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ওরা ছাগল ব্যাবহার করে
-পরে তোমার কলিগের কি হয়েছিল?
-ওই অর্ধেক বোতল জলই সমাধান ছিল
-ভেরি ইন্টারেস্টিং।
নোরিন মন্তব্য করলো।

-হ্যাঁ; একটা একে-৪৭ সমান মাঝারি বা বড় সাইজের একটা ছাগল; যার বাজার দাম দিয়ে ইসরাইল এমব্যাসির বিপরীত থেকে দুই লিটার জলও কিনতে পারতাম না।

এই জল নিয়ে আমার কিছু কাহিনি আছে; আজ একটা শোনাই। তার আগে বলি, লডোয়া আসলে টুরকানা সেন্ট্রালের কাউন্টি হেড কোয়ার্টার। এখন অবশ্য জেলা বলে; কাউণ্টি না। তো সেন্ট্রাল থেকে টুরকানা সাউথে যাচ্ছিলাম। আমার নিরাপত্তা প্রধানের নাম ছিল জন; বেশ ইন্টিলিজেন্ট। উপতক্যার মধ্যে পাথুরে পথ দিয়ে ঝাঁকুনি খেতে খেতে এগুচ্ছিলাম। সামনে হঠাৎ একে-৪৭ ধারী ২০-৩০ জনের একদল যুবক পথ আগলে দাঁড়াল। বাম দিক থেকে একই সংখ্যক বন্দুকধারী দৌঁড়ে আসছিল। জন ওর নিজের বাহিনীকে বন্দুক নামিয়ে ফেলতে বললো। পেছনের গাড়িতে আমি অতিভয়ে একেবারে ভয়শূন্য হয়ে পড়লাম।

-পরে কি হয়েছিল?
-জন নিগেশিয়েট করেছিল; জল দিয়ে।

মরুভূমিতে জলের বড় আকাল। ওখানে জায়গায় জায়গায় মরা নদির চিহ্ন আছে; লাঘা বলে। উগান্ডায় বৃষ্টি হলে লাঘায় প্রাণ আসে; ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড প্রাণ কেড়ে নেয়। নিজ চোক্ষে দেখেছি। কোন কোন এলাকায় ওই লাঘা খুঁড়ে খুঁড়ে ওরা চামড়া রঙের যেটুকু জল পায় তা দিয়েই দিন চালায়। শতকরা তিরাশি ভাগ লোক যাযাবর। কোথাও একটু জলের খবর পেলে ওরা সেখানে যায়। ফুরিয়ে গেলে আবার নতুন এলাকার খোঁজ করে। ওদের জীবনে জল নেই; প্রেম নেই।

সত্যি বলছি, ওরা প্রেম বুঝেনা। টুরকানায় যেয়ে তুমি যদি কোন কিছুকে প্রেম হিসেবে চিহ্নিত কর; সেটার দাম কমপক্ষে চার ইউনিট পোষা প্রাণী। যার প্রতিটি ইউনিটে তিরিশটা গরু বা ছাগল বা ভেড়া বা উট থাকে।

আবার বলি, ওখানে প্রেম মানে কমপক্ষে ১২০ টা প্রাণি।

-বুঝিয়ে বল

-আজ না ময়না; আগামিকাল বলবো। তবে জানিয়ে রাখি, সবসময় সাথে জল রাখবে। মেইন লাইট অফ করে নীল লাইটটা অন করতে করতে নাভিদ দুষ্টুমি মাখানো হাসি দিলো।

এখন ওদের নিঃশব্দে কথা বলার সময়; তাই বাকি কাহিনি কাল হবে। এখন নোরিন বেশ উতলা হয়ে আছে; নাভিদ ততোধিক।

ঘর ভরা নীল জোছনা; এখনই কী বৃষ্টি নামবে?

7 - Sonakand Durgo (67) - Copy - Copy

১০টি ভ্রমণ চিত্র – ২

সময়, সুযোগ আর অর্থ, এই তিনটি জিনিসের সমন্বয় করা খুব কঠিন। একটার ব্যবস্থা করলে অন্যটি পিছলে যায় হাতের মুঠ থেকে। কিন্তু যখন তিনটির সমন্বয় করা যায় তখনই একটা ভ্রমণে বেরিয়ে পরা যায়। সমন্বয় করতে পারা সেই সব ভ্রমণে ছবিগুলি থেকে ১০টি ছবি থাকবে এই থ্রেডে যেগুলি আগেই ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে ।

১। ঝুলন্ত সেতু
ছবি তোলার স্থান : ঝুলন্ত সেতু, রাঙ্গামাটি।
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/০১/২০১৪ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > রাঙ্গামাটি > ঝুলন্ত সেতু

২। পাহাড়ি কুটির
ছবি তোলার স্থান : নীলগিরি যাওয়ার পথে, বান্দরবান।
ছবি তোলার তারিখ : ২৯/০১/২০১৪ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > বান্দরবান > নীলগিরি।

৩। গোপীনাথ জিউর মন্দির
ছবি তোলার স্থান : আচমিতাভোগ বেতাল, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৪/২/২০১৭ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > কিশোরগঞ্জ > কটিয়াদী > গোপীনাথ জিউর মন্দির।

৪। আড়াই দিনকা ঝোপড়া
ছবি তোলার স্থান : আড়াই দিনকা ঝোপড়া, আজমের, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ১৩/৩/২০১৪ ইং
কথিত আছে এই মসজিদটি আড়াই দিনে বানানো হয়েছিলো জ্বিনদের দিয়ে। তবে কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি।

পথের হদিস : ঢাকা > কলকাতা > দিল্লী > আজমের।
বা ঢাকা > কলকাতা > জয়পুর > আজমের।
বা আরো নানান ভাবে যাওয়া যায়।

৫। জিন্দাপীরের মসজিদ
ছবি তোলার স্থান : বাগেরহাট।
ছবি তোলার তারিখ : ২৪/১১/২০১৪ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > বাগেরহাট > খানজাহান আলরি মাজারের অল্প দূরত্বে।

৬। বেতাব ভ্যালী
ছবি তোলার স্থান : বেতাব ভ্যালী, পেহেলগাম, কাশ্মির, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ২৭/৫/২০১৫ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > কলকাতা > জম্মু > পেহেলগাম > বেতাব ভ্যালী।

৭। পাহাড়ি নদী
ছবি তোলার স্থান : পেহেলগাম, কাশ্মির, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ২৭/৫/২০১৫ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > কলকাতা > জম্মু > পেহেলগাম।

৮। একলা পথে
ছবি তোলার স্থান : মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার।
ছবি তোলার তারিখ : ১৮/০৫/২০১৪ইং

পথের হদিস : ঢাকা > কক্সবাজার > মেরিন ড্রাইভ।

৯। ট্রাম
ছবি তোলার স্থান : কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ২২/০৫/২০১৫ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > কলকাতা > কলেজ স্ট্রিট।
ওয়ার্ল্ড হেরিটাজ কালকাতার ট্রামটি নাতীকে দেখাচ্ছেন এক দাদা।

১০। ঢেউ
ছবি তোলার স্থান : ছেড়াদ্বীপ, সেন্টমার্টিন।
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/০১/২০১২ ইং

পথের হদিস : ঢাকা > টেকনাফ > সেন্টমার্টিন > ছেড়াদ্বীপ।

7 - Sonakand Durgo (67) - Copy - Copy

১০টি ভ্রমণ চিত্র – ১

সময়, সুযোগ আর অর্থ, এই তিনটি জিনিসের সমন্বয় করা খুব কঠিন। একটার ব্যবস্থা করলে অন্যটি পিছলে যায় হাতের মুঠ থেকে। কিন্তু যখন তিনটির সমন্বয় করা যায় তখনই একটা ভ্রমণে বেরিয়ে পরা যায়। সমন্বয় করতে পারা সেই সব ভ্রমণে ছবিগুলি থেকে ১০টি ছবি থাকবে এই থ্রেডে যেগুলি আগেই ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে ।

১। আলোক গোলক

ছবি তোলার স্থান : যমুনা সেতু।
ছবি তোলার তারিখ : ২৩/৫/২০১৪ ইং
পথের হদিস : ঢাকা > যমুনা সেতু।

২। প্রতিক্ষা

ছবি তোলার স্থান : সাজেক, রাঙ্গামাটি।
ছবি তোলার তারিখ : ১৩/১০/২০১৬ইং
পথের হদিস : ঢাকা > খাগড়াছড়ি > দীঘিনালা > সাজেক।

৩। মেঘ সাগরে

ছবি তোলার স্থান : সাজেক, রাঙ্গামাটি।
ছবি তোলার তারিখ : ১৪/১০/২০১৬ইং
পথের হদিস : ঢাকা > খাগড়াছড়ি > দীঘিনালা > সাজেক।

৪। বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ির একাংশ

ছবি তোলার স্থান : বালিয়াপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৪/১০/২০১৬ইং
পথের হদিস : ঢাকা > আড়াইহাজার > সাটুরিয়া > বালিয়াপাড়া।

৫। হাওয়াখানা পুকুর

ছবি তোলার স্থান : বালিয়াটি জমিদার বাড়ীর একটু আগে, মানিকগঞ্জ
ছবি তোলার তারিখ : ২৫/১১/২০১৬ইং
পথের হদিস : ঢাকা > মানিকগঞ্জ > সাটুরিয়া > বালিয়াটি জমিদার বাড়ী।

৬। হাওয়াখানা পুকুর

ছবি তোলার স্থান : বালিয়াটি জমিদার বাড়ীর একটু আগে, মানিকগঞ্জ
ছবি তোলার তারিখ : ২৫/১১/২০১৬ইং
পথের হদিস : ঢাকা > মানিকগঞ্জ > সাটুরিয়া > বালিয়াটি জমিদার বাড়ী।

৭। বালিয়াটি জমিদার বাড়ী

ছবি তোলার স্থান : বালিয়াটি জমিদার বাড়ী, মানিকগঞ্জ
ছবি তোলার তারিখ : ২৫/১১/২০১৬ইং
পথের হদিস : ঢাকা > মানিকগঞ্জ > সাটুরিয়া > বালিয়াটি জমিদার বাড়ী।

৮। ছয়আনি জমিদার বাড়ি

ছবি তোলার স্থান : ছয় আনি জমিদার বাড়ি, মানিকগঞ্জ
ছবি তোলার তারিখ : ২৫/১১/২০১৬ইং
পথের হদিস : ঢাকা > মানিকগঞ্জ > সাটুরিয়া > ছয়আনি জমিদার বাড়ি।

৯। গৌতম বুদ্ধ

ছবি তোলার স্থান : অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার, খাগড়াছড়ি।
ছবি তোলার তারিখ : ২৭/০১/২০১৪ ইং
পথের হদিস : ঢাকা > খাগড়াছড়ি > অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার।

১০। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি তোলার স্থান : জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা, ভারত।
ছবি তোলার তারিখ : ০৫/১২/২০১৪ ইং
পথের হদিস : ঢাকা > কলকাতা > জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি।

7 - Sonakand Durgo (67) - Copy

আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ২য় পর্ব

প্রাচীন স্থাপত্য দেখার আলাদাটা একটা আকর্ষণ আছে। আমি মাঝে মাঝেই সুযোগ হলে তাদের দেখতে বেরহই। প্রাচীন স্থাপত্য গুলির মধ্যে বাংলাদেশে মসজিদগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাচীন মসজিদগুলি প্রমান করে কতটা আদিতে দেশের ঐ অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিলো। এই প্রাচীন মসজিদগুলি আমাদের দেশের ইতিহাসেরই অংশ। আজ আমার দেখা ৫টি প্রচীন মসজিদের ছবি এখানে রইলো। প্রতি পর্বেই আমার দেখা ও ছবি তোলা ৫টি করে প্রাচীন মসজিদের ছবি ও সামান্য তথ্য উপস্থাপন করবো।

৬। : বজরা শাহী মসজিদ

অবস্থান : নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়ন
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°00’14.5″N 91°05’34.8″E
নির্মাতা : জমিদার আমানউল্যাহ এবং পরবর্তীতে আলী আহাং এবং সুজির উদ্দিন চীনা মাটির পাত্রের টুকরা ও গ্লাস দ্বারা মসজিদের শোভাবর্ধন করেন।
নির্মাণকাল : মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের আমলে ১৭৩২ সালে নির্মিত হয়। মসজিদ তৈরির ১৭৭ বছর পর ১৯০৯ সালে একবার মেরামত করা হয়।
ছবি : নিজ
ছবি তোলার তারিখ : ১৮/০৮/২০১৭ ইং
পথের হদিস : নোয়াখালী জেলার মাইজদী হতে সোনাইমুড়ী গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস/ সিএনজি অটোরিক্সাযোগে বজরা হাসপাতালের সম্মুখে নেমে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে ২০০ গজ পশ্চিমে গেলে বজরা শাহী মসজিদে পৌঁছা যাবে।

৭। : চুনাখোলা মসজিদ

অবস্থান : চুনাখোলা গ্রাম, বাগেরহাট।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 22°40’42.8″N 89°43’55.8″E
নির্মাতা : স্থানীয় জনশ্রুতি মতে, মসজিদটি খান জাহানের কোনো কর্মচারী নির্মাণ করেছিলেন। ইটের দেয়ালসমূহ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে ১৯৮০ সালে ইউনেস্কোর সহায়তায় সংস্কার করা হয়।
নির্মাণকাল : চুনখোলা মসজিদটি ১৫ শতকে নির্মিত।
ছবি তোলার তারিখ : ২৪/১১/২০১৪ ইং
ছবি : নিজ
পথের হদিস : ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাটে বাস যায়। ভাড়া নন এসি ৪৫০ টাকার মত। বাসের হেলপারকে বলে রাখলে ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে ইজিবাইক নিয়ে অনায়াসেই চলে যাওয়া যায় চুনাখোলা মসজিদ।

৮। : আবদুল হামিদ জামে মসজিদ

অবস্থান : গোয়ালদি, সোনারগাঁ।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°39’24.9″N 90°35’36.8″E
নির্মাতা : জনৈক আবদুল হামিদ শাহ কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়।
নির্মাণকাল : শিলালিপির সাক্ষ্য মতে ১৭০৫ খ্রিস্টাব্দে (১১১৬ হি.) এটি নির্মাণ করা হয়।
ছবি : নিজ
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে পারেন বাসে মোগড়াপাড়া। সেখান থেকে অটোরিকসায় সোনারগাঁও হয়ে গোয়ালদি গ্রামের গোয়ালদি মসজিদের সামনে। তাছাড়া সায়দাবাদ থেকে সরাসরি বাস যায় পানাম নগরে। সেখান থেকে রিকসা করে চলে যাওয়া যাবে গোয়ালদি মসজিদ। গোয়ালদি মসজিদের কাছেই আবদুল হামিদ জামে মসজিদ।

৯। : পুরান বাজার জামে মসজিদ

অবস্থান : পুরান বাজার, চাঁদপুর।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°13’36.4″N 90°38’25.8″E
নির্মাতা : বজলুল গণি পাটওয়ারী।
নির্মাণকাল : ১৯০১-১৯০৬ ইং সাল।
ছবি : নিজ
ছবি তোলার তারিখ : ২৭/০১/২০১৭ ইং
পথের হদিস : ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চ বা সায়দাবাদ থেকে গাড়িতে চাঁদপুর। খেয়া পার হয়ে বা ঘুর পথে রিক্সায় পুরান বাজার জামে মসজিদ।

১০। : হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ

অবস্থান : হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°15’05.9″N 90°51’15.1″E
নির্মাতা : হাজী আহমদ আলী পাটোয়ারী।
নির্মাণকাল : মসজিদের প্রতিষ্ঠাকাল ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ।
ছবি : নিজ
ছবি তোলার তারিখ : ২৭/০১/২০১৭ ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকেবাসে গেলে চাঁদপুরের বাস স্টেন্ডের আগেই হাজীগঞ্জ নামতে হবে। আর লঞ্চে গেলে লঞ্চ থেকে নেমে লোকাল বাস বা অন্য পরিবহনে আসতে হবে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে।

7 - Sonakand Durgo (67) - Copy

আমার দেখা প্রচীন মসজিদ – ১ম পর্ব

প্রাচীন স্থাপত্য দেখার আলাদাটা একটা আকর্ষণ আছে। আমি মাঝে মাঝেই সুযোগ হলে তাদের দেখতে বেরহই। প্রাচীন স্থাপত্য গুলির মধ্যে বাংলাদেশে মসজিদগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাচীন মসজিদগুলি প্রমান করে কতটা আদিতে দেশের ঐ অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিলো। এই প্রাচীন মসজিদগুলি আমাদের দেশের ইতিহাসেরই অংশ। আজ আমার দেখা ৫টি প্রচীন মসজিদের ছবি এখানে রইলো। প্রতি পর্বেই আমার দেখা ও ছবি তোলা ৫টি করে প্রাচীন মসজিদের ছবি ও সামান্য তথ্য উপস্থাপন করবো।

১। ষাট গম্বুজ মসজিদ

অবস্থান : বাগেরহাট
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 22°40’28.2″N 89°44’30.6″E
নির্মাতা : হযরত খানজাহান আলি (র.) এটি নির্মান করেছেন বলে ধারনা করা হয়। [মসজিদে কোনো শিলালিপি না থাকায় এটি কে নির্মাণ করেছিলেন সেটার সঠিক তথ্য নেই।]
নির্মাণকাল : ১৫শ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। [মসজিদে কোনো শিলালিপি না থাকায় এটি কবে নির্মাণ হয়েছে সেটার সঠিক তথ্য নেই।]
ছবি তোলার তারিখ : ২৪/১১/২০১৪ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাটে বাস যায়। ভাড়া নন এসি ৪৫০ টাকার মত। বাসের হেলপারকে বলে রাখলে ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে নামিয়ে দিবে। বাস স্টেশন থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে, ইজিবাইক নিয়ে অনায়াসেই চলে যাওয়া যায়।

২। হযরত শাহজালালের দরগাহ মসজিদ

অবস্থান : সিলেট
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 24°54’07.5″N 91°51’57.6″E
ছবি তোলার তারিখ : ২০/১০/২০১৪ ইং
পথের হদিস : বাস, ট্রেন বা প্লেনে সহজেই সিলেট চলে যাওয়া যায়। সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রেই হযরত শাহজালালের দরগাহ মসজিদটির অবস্থান।

৩। জিন্দাপীরের মসজিদ

অবস্থান : বাগেরহাট
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 22°39’53.2″N 89°45’50.2″E
নির্মাতা : অজ্ঞাত
নির্মাণকাল : অজ্ঞাত
ছবি তোলার তারিখ : ২৪/১১/২০১৪ ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাটে বাস যায়। ভাড়া নন এসি ৪৫০ টাকার মত। বাসের হেলপারকে বলে রাখলে ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে নামিয়ে দিবে। বাস স্টেশন থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে, ইজিবাইক নিয়ে অনায়াসেই চলে যাওয়া যায়।

৪। মহজমপুর শাহী মসজিদ

অবস্থান : মহজমপুর, নারায়ণগঞ্জ
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°44’05.9″N 90°36’18.5″E
নির্মাতা : ফিরোজ বা ফিরুজ খান নামে জনৈক ব্যক্তি নির্মাণ করেন।
নির্মাণকাল : যতদূর যানা যায় “সুলতান শামসুদ্দীন আহমদ শাহ” এর শাসনকাল ১৪৩২ থেকে ১৪৩৬ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময় মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে।
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ ইং
পথের হদিস : দেশের যেকোন যায়গা থেকে মদনপুর বা ভুলতা বা অড়াইহাজার বাজারে আসতে হবে। সেখান থেকে যেতে হবে মহজমপুর বাজার। বাজারের কাছে পথের ধারে রয়েছে “মহজমপুর শাহী মসজিদ”।

৫। গোয়ালদি মসজিদ

অবস্থান : গোয়ালদি, সোনারগাঁ।
জিপিএস কোঅর্ডিনেশন : 23°39’23.4″N 90°35’36.2″E
নির্মাতা : মোল্লা হিজাবর আকবর খান।
নির্মাণকাল : সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের শাসনামলে ৯২৫ হিজরির ১৫ শাবান অর্থাৎ ১৫১৯ইং খ্রিস্টাব্দের আগষ্ট মাসে গোয়ালদি মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
ছবি তোলার তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ ইং
পথের হদিস : ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে পারেন বাসে মোগড়াপাড়া। সেখান থেকে অটোরিকসায় সোনারগাঁও হয়ে গোয়ালদি গ্রামের গোয়ালদি মসজিদের সামনে। তাছাড়া সায়দাবাদ থেকে সরাসরি বাস যায় পানাম নগরে। সেখান থেকে রিকসা করে চলে যাওয়া যাবে গোয়ালদি মসজিদ।