বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

শুভরাত্রি!

শুভরাত্রি!

গত কয়েকদিনে ‘ক্রসফায়ার’ শব্দটি বহুবার লেখা হয়েছে। শিক্ষিত সচেতনদের অধিকাংশই ক্রসফায়ারের বিপক্ষে, আমিও তাই। গত পনেরো দিনে ক্রসফায়ারে অনেক মানুষ মারা পড়েছে। যারা মারা পড়েছে তাদের সকলেই হয়তো অপরাধী, হয়তো অপরাধী নয়। অপরাধী কে তা নির্ধারিত হয় বিচারালয়ে, যেহেতু ক্রসফায়ারিং-এ হাতের কাছে পেলেই মেরে ফেলা হয়, তাই যে মারা পড়ে তার অপরাধের মাত্রা কতটুকু তা জনসাধারণের জানার উপায় থাকেনা। কাউকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার পর জনসাধারণ পত্র পত্রিকা, ফেসবুক, নানাজনের নানা মন্তব্য থেকে জানতে পারে, যাকে মারা হয়েছে সে ছিল দস্যু বনহুর, সে ছিল জলাতঙ্ক রোগের মত ভয়ঙ্কর। সে সব সময় প্রশাসনের চোখের আড়ালে থাকতো বলে তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা।

ক্রসফায়ারের সর্বশেষ ইস্যু কমিশনার একরামুল। কমিশনার একরামুল হত্যা নিয়ে ফেসবুক, মিডিয়া সরগরম। সকলেই জানে, একরামুল হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে শেষ, অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। সকল মৃত্যুই কারো না কারো কাছে হৃদয় বিদারক ঘটনা, তবে কমিশনার একরামুলের ক্রসফায়ারে মৃত্যু বলে দিচ্ছে, ক্রসফায়ারে শুধু অপরাধীরাই মারা পড়েনা, ক্রসচয়েসের শিকার হয়ে নিরপরাধও মারা পড়ে।

সকলেই বুঝতে পারছে, কমিশনার একরামুল ছিলেন ভুল চয়েসের শিকার। মন্ত্রীও বলেছেন, এমন দুই একটা ভুল হতেই পারে। হ্যাঁ, ভুল হয়, মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। তাই বলে মানুষের প্রাণ নিয়ে ভুল খেলা? ভুলের শিকার হয়ে মারা গেলো একরামুল,’ ভুল হয়ে গেছে’ কথায় হতভাগ্য একরামুলের পরিবার পরিজন, সন্তানেরা জীবিত একরামুলকে ফিরে পাবে? নাকি মন্ত্রী মহোদয়ের কথায় সান্তনা পাবে!

সব ঘটনাই প্রথম কিছুদিন গরম থাকে, ধীরে ধীরে তার উত্তাপ কমে আসে, একসময় শীতল হয়ে যায়। ধারণা করি,আর দুই দিন পর একরামুল হত্যা ঘটনাও শীতল হয়ে যাবে। শীতল হওয়ার আগেই একটা প্রশ্ন মাথায় জেগেছে। শিক্ষিত সচেতন জনগণের অধিকাংশই ক্রসফায়ার পছন্দ না করলেও কিছু সংখ্যক শিক্ষিত লোক কেন ক্রসফায়ার সমর্থন করছে? তারা ক্রসফায়ার সমর্থন করছে এই অজুহাতে, ” মাদক ব্যবসায়ীরা, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নাকি বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে তরুণ সমাজ যুব সমাজকে মদ, ইয়াবায় আসক্ত করে ফেলেছে। তাই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারে মেরে ফেলাটাই সঠিক কাজ।”

আমি বুঝতে পারিনা, বিচার না করেই, শুধু অনুমানের ভিত্তিতে কাউকে মেরে ফেলা যায়? নাকি মেরে ফেলা উচিত? যেখানে দেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ আছে, সন্দেহজনক আসামীকে ধরার জন্য প্রশিক্ষিত পুলিশ বাহিনী আছে, সেখানে ঘরে ঘরে তরুণ তরুণীদের মাদকাসক্ত করার অভিযোগ দেখিয়ে ক্রসফায়ারে কাউকে হত্যা করা যায়? নাকি এই ধরণের হত্যাকে উৎসাহ দেয়া যায়? শিক্ষিত জনেরা কি করে ভুলে যায়, একটি অন্যায় প্রতিহত করতে আরেকটি অন্যায় করা উচিত নয়। একটি ভুল থেকে আরেকটি ভুলের জন্ম হয়।

কেন হবে আমার সন্তান মাদকাসক্ত? কেন ঘরে ঘরে তরুণ তরুণীরা ইয়াবা আসক্ত হবে? এই সকল তরুণ তরুণীদের বাবা মা নেই? বাবা মা তরুণ তরুণীকে ছোটবেলা থেকে সুশিক্ষা দেয়নি? ঘরে ঘরে তরুণ তরুণী, যুব সমাজ কি পারিবারিক শিক্ষা ছাড়াই ছোট থেকে বড় হয়েছে?

সন্তানের মা আমিও। দেশে সংখ্যালঘু ছিলাম, প্রবাসেও সংখ্যালঘু। কাজেই মানসিকভাবে কিছুটা দূর্বল তো ছিলামই, সমস্যা কখনও পিছু ছাড়েনি। সাথে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ছিল। এর মধ্যেই সন্তানদের বড় করেছি। প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার সময়ই সমাজ সম্পর্কে, সমাজের নানাবিধ মানুষ সম্পর্কে সচেতনতামূলক শিক্ষা দিয়েছি। মদ গাঁজা ইয়াবা বিড়ি সিগারেটের খারাপ দিক সম্পর্কে জানিয়েছি। নিজের ভাল মন্দ বুঝে চলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে টিপস দিয়েছি।

এত কিছু শেখানোর পরেও যদি আমার সন্তান বাইরের লোকের হাতছানিতে ভুলে মদ ইয়াবায় আসক্ত হতো, তাহলে বুঝতাম, আমার শিক্ষা দানে ভুল ছিল, ইয়াবা ওয়ালার ভুল ছিল না।

ইয়াবাওয়ালার কাজই ভাল মানুষকে ইয়াবার প্রলোভন দেখানো। আর আমার দায়িত্ব সন্তানকে বলে দেয়া, ইয়াবাওয়ালা মন্দ লোক, তাদের কাছ থেকে যেন দূরে থাকে। এরপরেও যদি আমার সন্তান ইয়াবাওয়ালার প্রলোভনে পারিবারিক শিক্ষা ভুলে ইয়াবাওয়ালার কাছেই ছুটে যায়, প্রাথমিক পরাজয়টা হবে আমার। আমি আমার সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারিনি, অথবা শিক্ষাদানে অবহেলা করেছি। তারপরেও আমি চেষ্টা করবো আমার সন্তানকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে, চেষ্টা করবো ইয়াবাওয়ালার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সজাগ করতে। কখনওই চাইবো না ইয়াবাওয়ালাকে বিনা বিচারে হত্যা করা হোক।

ইয়াবার ব্যবসা বন্ধ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, ইয়াবাওয়ালাকে আইনের আওতায় ধরে আনার দায়িত্ব প্রশাসনের। ইয়াবাওয়ালার অপরাধের বিচার করার দায়িত্ব বিচারালয়ের।

চারদিকে এত দায়িত্ববান মানুষ থাকার পরেও বলবো, সন্তান আমার! সন্তানের মঙ্গল অমঙ্গল, ভাল মন্দ দেখা, সুশিক্ষা দেয়া আমারই দায়িত্ব।

আমার যতটুকু বলার বলে দিয়েছি। আমার বন্ধুদের মধ্যে যারা আওয়ামীলীগের প্রকৃত কর্মী, শুভানুধ্যায়ী, সমর্থক তাদের কাছে আমার বার্তা পৌঁছে গেছে। তারা বুঝেন, রাজনীতি না করেও আমার মত কিছু মানুষ আছে যারা আওয়ামীলীগের মঙ্গল চায়, আওয়ামীলীগের কাছ থেকে সুশাসন চায়, নাগরিক নিরাপত্তার বাস্তবায়ন চায়।

আওয়ামীলীগের কাছে আমাদের ব্যক্তিগত কোন চাওয়া নেই, কিছু পাওয়ার নেই। তবুও আওয়ামীলীগের নামে মন্দ কিছু শুনলে, আওয়ামীলীগের কেউ ভুল কিছু করলে, ভুল বা মন্দ কিছু ঘটে গেলে চারদিকে যখন নিন্দার ঝড় উঠে, আমাদের খুব খারাপ লাগে। বুকে বড্ড অশান্তি হয়, রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকবো বললেও একেবারে চুপ থাকতে পারিনা। সমালোচনা করে ফেলি আওয়ামীলীগের।

হ্যাঁ, আওয়ামীলীগেরই সমালোচনা করি, কারণ আওয়ামীলীগই জনগণ বান্ধব দল, আওয়ামীলীগই ভুল করে, ভুল ধরিয়ে দিলে ভুল শোধরানোর চেষ্টা করে। আওয়ামীলীগই জনগণের শেষ আশ্রয়, জনগণও আওয়ামীলীগের শেষ আশ্রয়। আর আমি তো আওয়ামী বান্ধব সেই জনগণেরই একজন।

[ এই লেখায় ‘ইয়াবাওয়ালা’ যে কোন মন্দলোকের সিম্বলিক প্রয়োগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে]

শুভরাত্রি! আগামী সকাল সকলের ভাগ্যে প্রসন্নতা নিয়ে আসুক।

____________
৩রা জুন। ২০১৮

আগষ্ট মাসকে সামনে রেখে এগুলি কিসের আলামত ???

জয়বাংলা শ্লোগান, গলায় নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে কেন্দ্র দখল করে ধানের শীষে সিল মারা, আমার দেশ পত্রিকার বির্তকিত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর আদালত চত্বরে হামলা, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর একই মালিকের তিনটি গাড়ির বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থী হত্যা, কোমলমতি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীকে পুলিশের কলার ধরে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন, ছাত্রদের শান্তিপূর্ন প্রতিবাদকে ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা আসলে কিসের আলামত ?

সরকারের উর্ধ্বতন মহলসহ গোয়েন্দা সংস্থাকে গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। সামনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রকারী কুচক্র মহলের কোন ষড়যন্ত্র কিনা ? আগেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার জন্য আগষ্ট মাসেই বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রদের উপর বাস তুলে দিয়ে ছাত্র হত্যা, সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবীতে আন্দোলনকে সহিংসতায় রূপদানের লক্ষ্যে বিরোধীদের তৎপরতা কি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোন ষড়যন্ত্র ? নিজেদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ঘরের শত্রুদের কোন গভীর ষড়যন্ত্রের তৎপরতার জানান নয় তো? বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। এখনও ষড়যন্ত্রকারীরা আগষ্ট মাসকে সামনে রেখে তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টারত। এই আগষ্ট মাসেই জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর হামলা হয়েছে তাকে মেরে ফেলার যা এখনও চলমান। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে জানা যায় জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে বর্তমানে আওয়ামী লীগে প্রধান দুটি সমস্যা হলো— অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নিজ নিজ গ্রুপ ভারী করতে বিরোধী মতাদর্শীদের দলে অনুপ্রবেশ।

বাস চাপায় ছাত্র হত্যায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাবালে নূরের যে তিনটি বাসের রেষারেষিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, আসলে এটা কি একই মালিকের তিনটি বাসের রেষারেষি নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি সরকার বিরোধী আন্দোলন সৃষ্টির ইস্যু তৈরীর কোন ষড়যন্ত্র কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। যে বাস গুলির রেষারেষিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেগুলোর নিবন্ধন নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭, যেটা চালাতেন মাসুম। ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ বাসটি চালাতেন জুবায়ের অপরটি ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০, এটা চালাতেন সোহাগ। এরমধ্যে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ নম্বর বাসের চাপায় মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। মাসুম বিল্লাহর বাসের রেজিস্ট্রেশন আর ফিটনেস ঠিক থাকলেও রুট পারমিটের মেয়াদ ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর শেষ হয়েছে। আর সোহাগ আলির বাসটির রেজিস্ট্রেশন ঠিক থাকলেও ফিটনেটের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০ জুন। রুট পারমিট ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৪ মার্চ। আর জুবায়েরের চালানো বাসটির রেজিস্ট্রেশন ঠিক থাকলেও ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ১৮ মে। রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ১৯ মে। রাস্তায় চলার অনুমোদনহীন বাসের চাপায় ছাত্র হত্যা কেমন যেন রহস্যাবৃত। আবার পরিবহন শ্রমিক সংগঠন নামধারী কিছু মোড়লের গোষ্ঠীস্বার্থের আধিপত্যও সড়কে অরাজকতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। ‘দুর্ঘটনার নামে মানুষ হত্যা, আহত শিক্ষার্থীকে আবার পানিতে ফেলে দিয়ে হত্যা করা, ফুটপাতের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীর ওপর বাস তুলে দেয়া- এটা দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড।’

আমাদের নীতিহীনতা, বিবেকহীনতার গা শিউরে ওঠা উদাহারণ সামনে আসছে একের পর এক। অথচ আমরা নিশ্চুপ! নিশ্চুপ মন্ত্রী সকল, নিশ্চুপ নাগরিক সমাজ। অদ্ভুত এক নির্লজ্জতা গ্রাস করেছে আমাদের ! এভাবেই জাতির সামনে ভবিষ্যতের অন্ধকার সুড়ঙ্গ তৈরি হচ্ছে; অথচ দেশের কর্ণধারদের কোনো বিকার নেই।

আমাদের বিবেক আর কত নিচে নামলে আমরা প্রকৃত বিবেকবান হবো ?

অভাব নাই

অভাব নাই ।। দাউদুল ইসলাম

আজকাল আমাদের
অনেক কিছুর অভাব নাই,
প্রথমত কোন নেতার অভাব নাই,
নেতার সাথে পাতি নেতা, চামচা-
দালালের অভাব নাই,
বড় বড় জ্বালাময়ী ভাষণ আর
গলাবাজির অভাব নাই
গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল
ফতোয়াবাজের অভাব নাই,
ধর্মবাজের অভাব নাই
চোর বাটপারের অভাব নাই,
খুন -ধর্ষণ লুটতরাজের অভাব নাই,
অন্যায়কে উস্কে দাতার অভাব নাই,
সামনে এক পেছনের আরেক
কথা বলার দ্বিমুখী সাপের অভাব নাই,
অপমৃত্যুর অভাব নাই,
গুম,খুনে অভাব নাই,
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি; ভেজাল দ্রব্যের অভাব নাই,
আছে বনখেকো, জনখেকো, গম ,চিনি, তেল, পেয়াজ খেকো
যোগ হয়েছে কয়লা খেকো, ময়লা খেকো
অভাব নাই
লাজ শরমের বালাই নাই
মানুষের কাছে মানুষের পরোয়া নাই
বেপরোয়া যান চালকের অভাব নাই
সড়ক দুর্ঘটনার অভাব নাই,
সে দুর্ঘটনার পক্ষে সাফাই গাইবার মতো
শাহজাহান খানের অভাব নাই!
আবার শাহজাহান খানের চামচারও অভাব নাই!!
অভাব নাই অপকর্মের,
অভাব নাই অপশিল্প-অপসংস্কৃতির
অভাব নাই অপশিক্ষার!
অভাব নাই শিশু মৃত্যুর!
অভাব নাই অপচিকিৎসার!
অভাব নাই জন্তু জানোয়ার
আর
হায়েনার থাবার
অভাব নাই মদ গাঁজা হেরোইন ইয়াবার!
অভাব নাই নেকাবের আড়ালে নগ্ন কারবার!
অভাব নাই অপবিচারের
আদালত, উচ্চ আদালত, পাড়া মহল্লার আচারের!
অভাব নাই অভাবের- মীরজাফরী স্বভাবের
আকামের অভাব নাই
চোর ডাকাত দুর্নীতিবাজ সুখের অভাব নাই তাদের
মানুষ মরিলেও চলছে তাদের রাজ!

বিস্মিত বাঙাল: চুমো কি খায়!

বিস্মিত বাঙাল: চুমো কি খায়!

চারপাশের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে চুমু যে একটা খাবার জিনিস- এটা জাতি প্রথম জানলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কলাভবন, কার্জন হল, এনেক্স বিল্ডিং, লেকচার থিয়েটার- এর চিপাচাপায় এবং লম্বা করিডোরে নির্জন সময়ে চুমু খাওয়া আর আক্ষরিক অর্থেই ‘লদকালদকি’র জন্য বিশেষায়িত স্পট আছে, এবং তা ওপেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষায়িত এসব স্পট অনেকেই এড়িয়ে চলেন, অনেকে মজা নিতে ঢু মারেন, আর বাকীরা তা ব্যবহার করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সব ঐতিহ্যের মত এ বিশেষায়িত স্পটের ঐতিহ্যও প্রাচীন। টিএসসি’র বাউন্ডারি ওয়ালের বাইরের ফুটপাতে বসে প্রকাশ্যে চুম্বনরত জুটির একটি ছবি সম্প্রতি ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সবার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে- এ যেনো তাদের চিন্তার বাইরে ছিলো। এর আগে জাতি যেনো জানতোই না চুমু কি! এরা এটাও প্রবলভাবে বিশ্বাস করতো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চুমু খায় না। হায়রে বিস্ময়গ্রস্থ বাঙালি, এরা সবকিছু জানার পরেও এমন একটা ভাব ধরে থাকে, যে মনে হয় এইমাত্র আকাশ থেকে পড়লো।

টিএসসি’র যে পাশের রাস্তায় বসে যুবক-যুবতী চুমু খাচ্ছেন, তার প্রায় একশো গজের মধ্যে ছবিরহাট। এটাও এক টুকরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারের অংশ। ঢাকা শহরের একমাত্র স্বীকৃত ওপেন এয়ার গাঁজা খাবার স্পট। প্রতিদিন ছবির হাট মুখরিত হয়ে ওঠে মহান সৃজনশীল কবি, লেখক, চলচ্চিত্রকার, শিল্পীসহ উদীয়মান বুদ্ধিজীবীদের পদচারণায়। তারা এখানে এসে নিজ নিজ গ্রুপ ও ভক্তদের সাথে গাঁজা টানেন, জ্ঞানে টইটুম্বুর আলোচনা করেন। এসব জ্ঞানগর্ভ আলোচনার ৪০% জুড়ে থাকে কিভাবে প্রতিপক্ষ বিদ্বানের ফুটোয় আঙুল চালিয়েছেন তার স্মৃতি রোমন্থন, অবশিষ্ট ৬০% জুড়ে থাকে আত্মঅহমিকা ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার ভবিষ্যত পরিকল্পনা।

ছবির হাটের একেকজন জ্ঞানী লোক যেনো আদ্যন্ত ৪০-৬০ মিশেলের কটন স্যান্ডো গেঞ্জি। এই স্যান্ডো গেঞ্জির বুনট জুড়েও অবাধ যৌনতা- কে কবে কাকে নিয়ে বিছানায় গিয়েছেন, কে কবে কাকে নিয়ে যাবেন, কত খরচে কাকে নিয়ে মাস্তি করা যাবে- আহারে সৃজনশীলতা! এখানেই শেষ নয়, ছবির হাটেও দিনদুপুরে প্রকাশ্যে চুমাচাট্টি আছে, সন্ধ্যার আবছায়ায় আছে আরও বেশী কিছু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’তে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ফটোগ্রাফ দেখে উত্তেজিত হবার কোনো কারণ দেখিনা, এটা বাস্তবতা। আওয়াজ যদি তুলতেই হয় তবে আওয়াজ তুলেন – দুনিয়ার প্রথম ৫০০ ভার্সিটির তালিকায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নাই কেনো! ৩৮টাকার খাবার আর ১৫টাকার সিট ভাড়ায় থেকে একজন শিক্ষার্থী সুস্থভাবে পড়ালেখা করতে পারেন কি! গবেষণায় বরাদ্ধ বাড়বে কবে!! দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে করেও বেকার থাকার দিন শেষ হবে কবে! নীল-শাদা-গোলাপির রাজনীতি অপেক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কবে শিক্ষাদানে অধিক মনোযোগী হবেন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবে মেরুদণ্ডসমেত একজন ভিসি পাবে! – এসব আওয়াজ তুলতে না পারলে চুপ থাকেন, অথবা আপনিও চুমো খান- প্রকাশ্যে, যত্রতত্র। তাতে কারো কিছু যায় আসেনা, যায় আসেনি।

ওভার এন্ড আউট।

একজন কর্ণেল তাহের ও একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ

জাতীয় বীরেরা বেঁচে থাকেন মানুষে মানুষে। তেমনি একজন বিপ্লবী কমরেড তাহের। ২১ জুলাই কর্নেল আবু তাহেরের শাহাদত বার্ষিকী। কর্নেল আবু তাহের শুধু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তিনি শোষণমুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। তাকে নির্মমভাবে, প্রহসনের বিচারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তা কার্যকর করা হয়েছিল ২১ জুলাই ১৯৭৬ ভোররাতে।

তিনি যে শেষ চিঠিটি লিখেছিলেন- তার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরতে চাই। তিনি লিখেছিলেন- ‘‘আমাকে কেউ হত্যা করতে পারে না। আমি আমার সমগ্র জাতির মধ্যে প্রকাশিত। আমাকে হত্যা করতে হলে সমগ্র জাতিকে হত্যা করতে হবে। কোনো শক্তি তা করতে পারে। কেউ পারবে না।
আজকের পত্রিকা এলো। আমার মৃত্যুদণ্ড ও অন্যদের বিভিন্ন শাস্তির খবর ছাপা হয়েছে প্রথম পাতায়। মামলার যা বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। রাজসাক্ষীদের জবানবন্দিতে প্রকাশ পেয়েছে আমার নেতত্বে ৭ই নভেম্বর সিপাহী বিপ্লব ঘটে, আমার নির্দেশে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হয়। আমার দ্বারা বর্তমান সরকার গঠন হয়। সমগ্র মামলায় কাদেরিয়া বাহিনীর কোনো উল্লেখই ছিল না। অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, জুলমত আলী ও অন্যরা যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা যেন এই মিথ্যা প্রচারের প্রতিবাদ করেন ও সমগ্র মামলাটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। আমি মৃত্যুর জন্য ভয় পাই না। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক ও চক্রান্তকারী জিয়া আমাকে জনগণের সামনে হেয় করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। আতাউর রহমান ও অন্যদের বলবে, সত্য প্রকাশ তাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে তারা যদি ব্যর্থ হন, তবে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। তোমরা আমার অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আদর নিও।’’

তাহের বীরের মতোই কথাগুলো লিখে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর হত্যাকারী- কে । কর্নেল আবু তাহের বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজ চেয়েছিলেন। আমাদের জানা আছে, দেশে দেশে মুক্তিকামী সকল ব্যক্তিত্বের সমস্ত শুভ কর্মের বিরোধিতা করে শোষক শ্রেণি। নির্যাতিত হতে হয়, প্রাণ দিতে হয় শোষক শ্রেণির হাতে এ সকল স্বপ্নতাড়িত মানুষদের। আর বিচারের নাম করে চূড়ান্ত অবিচার, জবরদস্তির মাধ্যমে বিচারকে গ্রাস করা ইতিহাসে কম নেই। তাহেরের বিচারে বিচার ছিল না, সেটি ছিল প্রহসনের বিচার। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাইয়ের গোপন সামরিক ট্রাইবুনালের প্রহসনমূলক বিচারের রায়ে ২১ জুলাইয়ে ফাঁসির দড়িতে জীবন দিতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনা কর্নেল আবু তাহের বীরোত্তমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের সিপাহী ও প্রগতিশীল গণতন্ত্রমনা অফিসারবৃন্দ রাজপথে জনতার কাতারে সামিল হয়ে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছিলেন। অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্য বাস্তবায়িত হতে পারেনি। কারণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতরা অভ্যুত্থানী সিপাহী জনতার পক্ষ ত্যাগ করে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় অনুচরদের পক্ষাবলম্বন করেছিল। এর পরে এরাই
মৌলবাদীদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশে একাত্তর পূর্ববর্তী একটি কালো শক্তিকে বলীয়ান করার চেষ্টা করেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী হায়েনাদের হাতে মন্ত্রীত্ব তুলে দিয়েছিল।

তাহের হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অনেক কিছুই সেদিন করেছিল সামরিক জান্তারা। তৎকালীন হংকং থেকে প্রকাশিত ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউ পত্রিকার দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজকে তাহেরের গোপন বিচার প্রকাশ করার দায়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিলো। কিন্তু সত্য গোপন থাকেনি। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিচারিক রায় প্রকাশই হয়েছিল। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের আদালতে ২০১১ সালের ২২ মার্চ দেওয়া কর্ণেল তাহের হত্যাকাণ্ডের রায়ের পূর্ণাঙ্গরূপ ২০ মে ২০১৩ সোমবার প্রকাশ হয়েছিল।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরের মৃত্যুর ৩৪ বছর পর সামরিক ওই বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের ২৩ অগাস্ট হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তাহেরের স্ত্রী লুতফা তাহের, ভাই আনোয়ার হোসেন, আরেক ভাইয়ের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ। প্রকাশিত রায় থেকে এই জাতি জেনেছে, কর্নেল আবু তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেই সামরিক আদালতে তার বিচার সাজিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশের রাজনীতির ওই যুগসন্ধিক্ষণে গোপন আদালতে ওই বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের অভিমতে একথা বলা হয়েছে।

মাননীয় আদালত বলেছেন,তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার তাহেরকে বিচারের নামে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিলো। আদালত রায়ে বলেছে, জিয়া জীবিত না থাকায় তার বিচার সম্ভবপর না হলেও সরকারের উচিত হবে এই হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে তাকে খুঁজে বের করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা। আদালত আরও বলেছেন , কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড এই কারণে হত্যাকাণ্ড যে, ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের মনস্থির করেন।

এই মামলায় অন্যতম প্রমাণ হিসেবে খ্যাতিমান সাংবাদিক লরেন্স লিফশুজের বক্তব্য এবং বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের লেখা বিবেচনায় আনা হয়েছে।
ব্যারিস্টার মওদুদের ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ’ বইয়ের উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়েছে, বইয়ে লেখক মওদুদ আহমদ অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন যে, এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার মনস্থির করেছিলেন।

আমরা জানি, ইতিহাসের গতি কোনোভাবেই মিথ্যা দিয়ে চাপিয়ে রাখা যায় না। সত্য প্রকাশিত হয়। হতেই হয়। তা না হলে মনুষ্য জাতি নির্ভীক চিত্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে না। পরবর্তী প্রজন্ম সৎ সাহস নিয়ে দাঁড়াতে পারে না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছিলেন কর্নেল তাহের, সে তাহেরকে তথাকথিত গোপন বিচার, সামরিক কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং রায় প্রদানের পর চরম বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নিয়ে মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রায় কার্যকর করা হয়।

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ১৫ আগস্টের নির্মমতম হত্যাকান্ডের পর সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘সো হোয়াট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার’। সে সময়ে বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ঘাতকচক্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা ক্ষমতার পালাবদলে ডানপন্থি মৌলবাদী শক্তিকে সার্বিক পুনর্বাসনে ছিল সর্বাত্মকভাবে তৎপর।

জিয়াউর রহমান প্রথমে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন, যদি তা পালিত হতো তবে সৈয়দ নজরুল ইসলামই ক্ষমতাসীন হতেন। বিদ্রোহী সেনাসদস্যদের তাৎক্ষণিক বন্দি করা সম্ভব হতো। ওদের বিচার হতো। কিন্তু দেখা গেল খুব দ্রুতই তার মতামত থেকে সরে আসেন জিয়াউর রহমান। তিনি হাত মেলান খুনি ডালিম-রশীদ-হুদা চক্রের সঙ্গে। যদিও ডালিম-ফারুক চক্র পরে টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছে, তারা জিয়াকে আগেই ১৫ আগস্টের ক্যুর কথা জানিয়ে রেখেছিল। ষড়যন্ত্রকারী মীরজাফর খন্দকার মোশতাকের শাসন সেজন্যই ছিল খুব ক্ষণস্থায়ী। প্রকৃত কুশীলবরা বেরিয়ে এসেছিল হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে। খুনিদের বিদেশে পাঠানোর নিশ্চয়তা প্রদান করে রাষ্ট্রক্ষমতা পাকাপোক্ত করার সব ব্যবস্থাই করতে তৎপর ছিলেন জিয়াউর রহমান।

কর্নেল আবু তাহের মূলত ভয়ের কারণ ছিলেন সেই ক্ষমতালিপ্সুদের। তারা জানত তাহের বেঁচে থাকলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। তারা ক্ষমতায় টিকে নাও থাকতে পারে। সে কারণেই প্রহসনের বিচারের আয়োজন করে তাহেরসহ অন্যান্য দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের হত্যা করেছিল স্বৈরশাসক জিয়া সরকার।

তাহেরের সঙ্গে জিয়ার বৈরিতার প্রধান কারণ ছিল তাহের মৌলবাদী রাজাকার শক্তির সঙ্গে কোন আঁতাত মেনে নিতে চাননি। আর জিয়া সেই আঁতাতই করতে চেয়েছিলেন। যার কুফল আজও ভোগ করছে গোটা জাতি। গোটা বাংলাদেশের মানুষ।

কর্নেল তাহের হত্যাকাণ্ড কেন বে আইনি ঘোষণা হবে না- তা দাবি করাটা ঐতিহাসিক এবং নৈতিক দায়িত্বও ছিল বটে। তাহের এ বাংলাদেশের গণমানুষের স্বপ্ন পূরণে ছিলেন অগ্রণী সৈনিক। যুদ্ধাহত হওয়ার পরও তার উদ্যম ও স্পৃহার কোন কমতি ছিল না।

বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তির দাপট বাড়াবার মূল কারণ হচ্ছে, ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকা। আমরা মিডিয়ায় দেখছি, বিলাতে তারেক রহমান আবার সক্রিয় হয়ে অনেক আবোল তাবোল কথা বলা শুরু করেছেন।

এটা গোটা দেশবাসীই জানেন, মতলব তাদের অন্যখানে। তারা চায় ঘোলাজলে মাছ শিকার করে পুরো জাতির একাত্তরের বিজয় ইতিহাসটাকেই পাল্টে দিতে। একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে।আমরা দেখেছি, যেসব রাজাকার -আলবদর ঘাপটি মেরে বসেছিল, তারা প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসে পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকান্ডের পর।

কালো চশমা পরা সেই জেনারেল কি তার জীবদ্দশায় কখনো বলেছিলেন,
তিনি স্বাধীনতার ঘোষক?
না, বলেন নি। একজন মহানায়কের পক্ষে একজন সৈনিক সে ঘোষণা পাঠ করেছিলেন মাত্র। তিনিই তাই ঘোষক হয়ে গেলেন?
অন্যের চিঠি কেউ পাঠ করে শোনালে, সে কি চিঠির লেখক হয়ে যায়?
না, হয় না।
জেনারেল জিয়া সেই স্বৈরশাসক যিনি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চরম বিশ্বাসঘাতকতা
করে তারই একজন ত্রাণকর্তা কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলান। শত শত সেনা অফিসারকে হত্যা করেন , গোপনে- বিনা বিচারে। সেসব কথা বাংলার মানুষ ভুলে যান নি। যাবেন ও না কোনোদিন।

৩ নভেম্বর ১৯৭৫ ঘটানো হয় নির্মমতম জেল হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকান্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল, এরা যদি জেল থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে তোলেন! জেনারেল সফিউল্লাহ যা পারেন নি , সেই পাল্টা অভ্যুত্থানে এগিয়ে আসেন সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ। তিনি বুঝতে পারেন , জিয়াই সেই নেপথ্যের নায়ক, যে ঘোলাজলে মাছ শিকার করে সুবিধা নিতে চাইছে। তিনি যে অভ্যুত্থান টি ঘটিয়েছিলেন, তা স্থায়ীত্ব পেলে দেশ আবার জাতির জনকের চেতনায়ই ফিরে যেতো। মাত্র ছ’দিনের মাঝে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। খালেদ মোশাররফ ও অন্যান্য দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসাররা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই করেছিলেন এই পাল্টা অভ্যুত্থান।

এখানে যে বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক, তা হচ্ছে – এ সময়ে দেশের সমাজতন্ত্রপন্থীরা মনে করেন দেশটি তার মূলধারা গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ – এ পরিচালিত হোক। এই চেতনা নিয়ে এগিয়ে আসেন কর্নেল তাহের। তিনি খালেদ মোশাররফ গ্রুপের হাতে বন্দী জিয়াউর রহমান ও তার
অনুসারীদেরকে মুক্ত করে আনেন। এই ঘটনাটিই ঘটে ৭ নভেম্বর।

প্রতিবিপ্লবী খুনী চক্রের নেতা জিয়া মুক্ত হয়েই পাল্টা অভ্যুত্থানের জোর তৎপরতা চালান। শুরু হয় সকল দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হত্যা। কতজন সৈনিক হত্যা করা হয়েছিল সেদিন? সে সময়ে? সেই খুনের ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পাননি স্বয়ং কর্নেল তাহেরও। তাঁকেও ফাঁসি দেওয়া হয় প্রহসনের বিচারের নামে। কি ছিল তার অপরাধ ? তিনি জিয়াকে মুক্ত করার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?

৭ নভেম্বর যদি খালেদ মোশাররফরা জয়ী হতেন, তা হলে আজ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অন্যরকম হতো। ডানপন্থী মদদপুষ্ট জাতীয়তাবাদী আর রাজাকার চক্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘাপটি মেরে বেড়ে উঠতে পারতো না। এই দেশে এভাবে বৃদ্ধি পেতো না জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিস্তার। রাজাকার শাহ আজিজ, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, আব্দুল আলীম, খান এ সবুর এর মতো কুখ্যাত রাজাকারদেরকে কেবিনেটে টেনেছিলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আর তার জায়া খালেদা জিয়া নিজামী- মুজাহিদ নামের দুই কুখ্যাত রাজাকারকে মন্ত্রী বানিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী সাধনায় সিদ্ধি লাভে ব্রত হন!

যারা জাতির জনক শেখ মুজিবের নাম মুছে দেওার চেষ্টা করছে, তারা নতুন নয়। এরা সেই পরাজিত শক্তি। এরা সেই দানব- যারা আজো লাখো শহীদের রক্তকে, লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক – এর চাইতে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কিছুই নেই। জিয়া এজজন সেক্টর কমান্ডার। এটাই তার শুরুর পরিচয়। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

দেশে এখনও মৌলবাদী শক্তি সক্রিয়। তারা যা করছে- তা এই জাতির জন্য, এই ধর্মীয় চেতনাবোধ সম্পন্ন মানুষদের জন্য কল্যাণকর কী না- তা ভাবতে হবে। তাহের এদেশের মানুষের জন্য কী ভাবতেন- তা তাঁর রচনাবলী থেকেই জানা যায়। তিনি তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন-
‘আমি একটি সোনার বাংলার চিত্র দেখেছি। চিত্র দেখার শুরু ১৯৬৮ সাল থেকে। এই চিত্র কল্পনায় কেটেছে বহু বিনিদ্র রাত্রি। এই চিত্র আমাকে রোমাঞ্চিত করেছে, উত্তেজিত করেছে। এই কল্পনায় বারবার মনে হয়েছে জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমি এক অসীম শক্তির অধিকারী। সমস্ত জীর্ণতাকে ভেঙে ফেলে এই চিত্রকে রূপ দিতে সক্ষম। এ চিত্র আমাকে সাহস যুগিয়েছে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমি জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়েছি। বাংলার মানুষের নিবিড় সংস্পর্সে এসে আমি দেখেছি তাদের উদ্যম, কষ্ট সহিষ্ণুতা, শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেম। আমি জেনেছি বাংলার এই অশিক্ষিত, প্রতারিত জনগণই হচ্ছে প্রকৃত প্রগতিশীল। তারাই বাংলার সুপ্ত শক্তি। বাংলার এই জনগণকে আমি আমার চিত্র কল্পনায় অংশীদার করতে চাই । আমি চাই তারা গভীরভাবে এই চিত্র উপলব্ধি করুক। বোমাঞ্চিত হোক, উত্তেজিত হোক। তাদের শক্তির পূর্ণ প্রকাশের মাধ্যমে ইতিহাসের যাদুঘরে বন্দি ধনে ধান্যে পুষ্পেভরা সোনার বাংলাকে মুক্ত করুক।

আমার সোনার বাংলা অনাহার, অশিক্ষা, শোষণ, রোগ , যন্ত্রণায় ভরা বিশৃঙ্খল গ্রাম সমষ্টি নয়। এতে নেই শহরের উলঙ্গ জৌলুষ, পুঁতিগন্ধময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মনের সংকীর্ণতা। আমার সোনার বাংলা প্রকৃতির স্বাভাবিক স্বচ্ছতায় সমৃদ্ধ একটি সম্পূর্ণ প্রকাশ। এই বাংলার চিত্র সম্পূর্ণরুপে নদীভিত্তিক। নদীর সতেজ প্রবাহ আজ স্তিমিত। আমার সোনার বাংলায় নদী সতেজ, প্রাণবান। এর দুপাশে বিস্তীর্ণ উঁচু বাঁধ। বাঁধের উপর দিয়ে চলে গেছে মসৃণ সোজা সড়ক, রেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ লাইন। বাঁধের উভয় পাশ্বের ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গ্রামগুলো উঠে এসেছে বাঁধের উপর। গড়ে ওঠা এই জনপদ মানব সভ্যতার একটি অপূর্ব সৃষ্টি।’’ [ ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে’- নিবন্ধের অংশ ]

এদেশে কর্ণেল তাহের নতি স্বীকার করেননি। তাঁর শংকাহীন চিত্ত এদেশের কোটি প্রজন্মের প্রেরণা হয়ে আছে। তাই কেউ তাহেরের আদর্শ নিয়ে মিথ্যা লিখলে, কিংবা মিথ্যা গলাবাজি করে বক্তৃতা- বিবৃতি দিলে তা এই প্রজন্ম মেনে নেবে না। তাহের আছেন- তাহের থাকবেন, বাংলার কোটি কোটি মানুষের প্রাণে প্রাণে।

__________________
ফকির ইলিয়াস: কলামিস্ট
প্রথম প্রকাশ এখানে।

৪০ বছর পর ৪০ কোটি মানুষের দেশ! বাংলাদেশ!!!

১৬ কোটি মানুষ আর চারদিকে খাল-বিল নদী-নালা নিয়েই বাংলাদেশ। ৭১’সালে দেশটার জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। আজকে ১৬ কোটি। অর্থাৎ ৪৭ বছরে তা দ্বিগুণেরও বেশি। সহজেই অনুমেয় আগামী ৪০ বছরে এই সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে ৪০ কোটির কাছাকাছি চলে যাবে। দেশটার আয়তন ও অর্থনীতির উপর যাদের সম্যক জ্ঞান আছে তাদের জন্যে এ হবে বিশাল এক ধাঁ ধাঁ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে ৪০ কোটি মানুষ! থাকবে কোথায়? খাবে কি? আলট্রা ন্যাশনালিষ্ট ও অতি-দেশপ্রেমিকরা নিজ নিজ থিওরি দাঁড় করাবেন স্ব স্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস হতে। আল্লাহয়ালারা বলবেন রিজিকের মালিক উপরওয়ালা। সবই হবে স্পেকুলেটিভ; তথ্যভিত্তিক প্রোগনজ করার মত বিশেষজ্ঞ আজকের বাস্তবতায় নেই বললেই চলে। ৪০ বছর অনেক সময়। অতদূর না গিয়ে সমসাময়িক বাস্তবতায় ফিরে আসুন দেশটার অর্থনীতির একটা চিত্র আকার চেষ্টা করি।

আসলেই আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি কি? কিসের উপর চলছে আমাদের দেশ? পরিসংখ্যান মতে আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, বাড়ছে গড় আয়ু। তারপরও কি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ থাকতে পারে? ভয়টা এখানেই। আমাদের অর্থনীতির দুটো মাত্র খাত। এক, মানব সম্পদ, দুই পোশাক শিল্প। বলা হয় এক কোটির মত স্বদেশী প্রবাসে শ্রম দিচ্ছে এবং আয়ের প্রায় সবটাই দেশে পাঠাচ্ছে। এক কথায় দেশ চলছে প্রবাসীদের আয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুরু হয়েছিল পোশাক শিল্পের মাধ্যমে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সস্তা শ্রমই ছিল তাদের মূল অস্ত্র। একটা সময় এই খাতের আয় বিনিয়োগ পূর্বক স্ব স্ব সরকার বহুমুখী খাতের জন্ম দিয়েছে এবং সময়ের চাহিদায় বস্ত্র-খাত ঠাঁই নিয়েছে ইতিহাসে। বাংলাদেশ কি একই পথে হাঁটছে? বোধহয় না।

গেল ৬-৭ বছর উন্নত বিশ্বকে কঠিন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে এগুতে হয়েছে। এর ঢেউ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও লেগেছে। বাংলাদেশের মানব সম্পদ রফতানিও মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে। গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে বলা হয় ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। যে কোন সময় এর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এর ফলাফল কি হবে তা আন্দাজ করতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। ধ্বসে পরবে দেশটার অর্থনীতি। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পৃথিবীর কোন দেশেই সস্তা শ্রম সহজলভ্য থাকেনা। বাংলাদেশ এখন সেই সময়টা পার করছে। শ্রমিক শোষণ কোন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয় যা পুঁজি করে আজীবন ব্যবসা করা যাবে। সুতরাং বাংলাদেশের পোশাক খাতও শক্ত ফাউন্ডেশনের উপর দাঁড়িয়ে নেই। দেশে কোন বৈদেশিক বিনিয়োগ নেই যা শ্রমবাজার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ বিদেশীরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে বিনিয়োগ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেনা। এ ধরণের শাসন ব্যবস্থায় যে কোন সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার আশংকা থাকে। বিনিয়োগে বিপদের ঝুঁকি থাকে। বাংলাদেশ সরকার স্পষ্টতই একনায়ক-তান্ত্রিক স্বৈরাচারী সরকার। এ ধরনের সরকার ব্যাপক ধরণের লুটপাট নিশ্চিত রাখতে হত্যা, গুম, খুন আর দমন পীড়নের পথে হাটে। বাংলাদেশে যতদিন গণতান্ত্রিক সু-শাসন চালু না হবে বিদেশী বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে বাধ্য।

আজকের হিন্দুস্থান টাইমসের খবরটা হয়ত চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভিড়ে হারিয়ে যাবে। কিন্তু ছোট্ট এই খবরটার সিগনিফিকেন্স কতটা গভীর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার দাবি রাখে। যেখানে আমাদের ১ কোটি প্রবাসী নিজেদের স্বাভাবিক জীবন সেক্রিফাইস করে পশুর মত শ্রম দিয়ে বছর ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে, সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবৈধ ১০ লাখ কর্মজীবী বাংলাদেশ হতে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার নিজ দেশে পাচার করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ মালয়েশিয়ার জংগলে যে স্বদেশী তার ভিটামাটি বিক্রি করে সকাল-সন্ধ্যা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজ পরিবার তথা দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখছে…যে গৃহবধূ স্বামী সংসার ফেলে মধ্যপ্রাচ্যের আরব পশুদের নির্যাতন সহ্য করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে তার অর্ধেকেরও বেশি সজ্ঞানে আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশে পাচার করতে দিচ্ছি। তাও অবৈধ পথে। এই সেই প্রতিবেশী যারা আমাদের সীমান্তে সামান্য গরু পাচারের অভিযোগে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার স্বদেশীকে হত্যা করেছে।

পদ্মাসেতুর স্প্যান বসছে। দলকানা কৃতদাসদের এ নিয়ে আনন্দের শেষ নেই। অথচ আমরা একবারও ভেবে দেখছিনা এ সেতুতে দেশি বিনিয়োগ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কতটা হুমকি হিসাবে কাজ করবে। এ মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে একটা যুদ্ধ বাঁধলে লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দেশ ফিরতে হবে। ধ্বস নামবে রেমিটেন্সে। লালবাতি জ্বলে উঠবে আমাদের রিজার্ভে। জ্বালানি আমদানি দানব হয়ে খেয়ে ফেলবে আমাদের রিজার্ভ। হাহাকার উঠবে সবখাতে। পদ্মাসেতুর দানবীয় রূপ তখন প্রকটভাবে ফুটে উঠবে। অথচ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এর সুদ হতে পারত মাত্র ১%। একদল সংঘবদ্ধ চোরের দল চাঁদার তালিকা নিয়ে হাজির হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের দরবারে। যারা এই অভিযোগ বিশ্বাস করেনি তাদের মগজ দলকানা জীবাণুতে আক্রান্ত তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

৪০ বছর পর ৪০ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের কি অবস্থা হবে তা ভেবে দেখার কোন প্রয়োজন নেই ফ্যাসিবাদী সরকারের। কারণ সরকার প্রধান হতে শুরু করে তার উজির নাজির কোতোয়াল ডাজ্ঞার দল ইতিমধ্যে কামিয়ে নিয়েছে ১০ প্রজন্ম লালন করার মত অর্থ। সময় হলে আস্তে ওরা ভেগে যাবে বিদেশে। এক মোহম্মদ নাসিমের কলেজ পড়ুয়া ছেলেই নিউ ইয়র্কে বিনিয়োগ করেছে ৫০০ কোটি টাকা।

মাদকের বিরুদ্ধে প্রয়োজন পারিবারিক শুদ্ধি অভিযান

অপরাধিরা সবচেয়ে বেশি প্রতারনা করে তার পরিবারের সাথে। এমন অনেক কে দেখা যায় ধুমপান সহ প্রায় সব ধরনের মাদকের সঙ্গে যুক্ত কিন্ত তাদের পরিবারের কেউ এই সত্য জানেই না। কেউ যদি বলে উল্টো তাদের কথা শুনতে হয়।

চারদিকে অসুস্থ প্রতিযোগীতা। পরিববারের কর্তা ব্যাক্তির আয়ের উৎস কি? সে যে ব্যয় করছে তা কি তার আয়ের সাথে সঙ্গতপূর্ণ? সে কি কোন মাদকের সাথে যুক্ত? এই প্রশ্নের চর্চা আমাদের দেশের পরিবারগুলোতে হয় কিনা জানি না। যদি এই প্রশ্নের চর্চা হতো কিছু পরিবর্তন হলেও হতে পারতো।

অপরাধিরা আপনার আমার চারপাশে আছে। আপনার আমার পারিবারে আছে একটু খোঁজ নিন। এই মাদক অভিযানে কোন পরিবারের অংশগ্রহণ দেখতে পেলাম না। কোন পরিবার তার পরিবারের কোন সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। তার মানে আমাদের পরিবার আমাদের সমাজ অপরাধিদের লালন করছে শুধুমাত্র স্বজন বলে?

তাহলে দেশে কোন কি মাদক চক্র নেই? তাহলে এই মাদক চক্রের কারো পরিবার নেই? কারণ দুটি এক- হতে পারে পরিবারের লোক জানেই না তার পরিবারের কেউ একজন মাদকের সাথে জড়িত। দুই- আথবা পরিবার জেনেশুনে তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এই না জানা ও প্রশ্রয় যে কান্না কারণ হতে পারে এটা কেউ চিন্তাতেই আনে না।

মাদকের বিরুদ্ধে পারিবারিক শুদ্ধি অভিযান জরুরী। সব স্বজন হারা মানুষের কান্নার রং এক। অপরাধির পক্ষে পারিবারিক ও পুলিশি আশ্রয় প্রশ্রয় বন্ধ না হলে অপরাধ সংক্রামণ থামানো যাবে না। নাম মাত্র অভিযান আর কিছু স্বজনদের কান্না ছাড়া আদতে কোন পরিবর্তন বয়ে আনবে না। ক্রসফায়ারের নামে যে হত্যা চলছে এর দায় পরিবার ও রাষ্ট্রকে সমান ভাবে নিতে হবে।

রমজান মাসের ভিক্ষাবৃত্তি …

রমজান মাসের ভিক্ষাবৃত্তি …

ভিক্ষাবৃত্তি বা লিল্লাহ যে একটা কলা (আর্ট) তা জানতে এবং বুঝতে হলে আপনাকে রমজানের পুরোমাস বিলেতের বাংলা চ্যানেল দেখতে হবে… দেখতে হবে কি প্রকারে এই কলার মাধ্যমে কিভাবে মানুষকে প্রলোভন দেয়া হয়… কিভাবে প্রয়োগ করা হয়… আমাদের দরজায় নিয়মিত, অনিয়মিত যে ভিক্ষুক দাঁড়ায় তাকে, তাদেরকে প্রায়ই আমরা তাড়িয়ে দেই, বিরক্ত হলে ধমকে দেই, চূড়ান্ত বিরক্তিতে দৌড়ানি দেই অর্থাৎ ভিক্ষুকের সাথে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি কিন্তু টিভি পর্দার ভিক্ষুকের সাথে এর কোনটাই সম্ভব না… সে, তারা আপনাকে সোজা নরকের রাস্তা দেখিয়ে দেবে… ভিক্ষা, লিল্লাহ না দিয়ে পার পাবেন না… আপনি ধর্ম পরায়ণ বেহেশতে যাওয়ার খায়েশ রাখেন আপনাকে ভিক্ষা দিতেই হবে, টিভির ভিক্ষুকদের ভিক্ষা না দিয়ে বেহেশতে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব… আপনার আপন ভাই না খেয়ে আছে, আপন বোনের পরনে ছেঁড়া শাড়ী… টাকার অভাবে আপনার চাচার চিকিৎসা হচ্ছে না… আপনার মামা, খালা, ফুফু কিংবা আপনার অন্য কোন নিকট আত্মীয় দারিদ্যের কষাঘাতে বিপর্যস্ত, মানবেতর জীবন যাপন করছে… এদের দিকে খেয়াল না দিলেও চলবে… আপনি বরং সোমালিয়ায় পানির কল বসান, সিরিয়ায় সেহরির সামগ্রী পাঠান… আপনার দরিদ্র প্রতিবেশীর ঘরে তিনদিন ধরে রান্না হয়নি দুধের বাচ্চারা খিধেয় কাঁদছে… আপনি এতে ব্যথিত হওয়ার কোন কারণ নাই আপনাকে বেহেশতে যেতে হবে তার জন্য আপনাকে এতিমখানায় টাকা দিতে হবে, মসজিদে টাকা দিতে হবে, মাদ্রাসায় টাকা দিতে হবে… আপনার ঘরে কেউ অভুক্ত আছে, আপনার প্রতিবেশী কেউ অসুখে মরছে এসব আপনি কেন পরোয়া করবেন… আশেপাশে যাই ঘটুক সেসব ভুলে আপনি গাজার চিন্তা করুন, সিরিয়ার চিন্তা করুন, রোহিঙ্গার চিন্তা করুন… আপনাকে বেহেশতে যেতে হবে… আপনার থেকে হাজার মাইল দূরের এতিমখানা, মাদ্রাসা, মসজিদ আপনাকে বেহেশত পাওয়াবে… আপনি মুক্ত হস্তে স্বামীকে না জানিয়ে দান করুন… মদের পয়সা, সুদের পয়সা, মিথ্যা বেনিফিটের পয়সা দান করুন, করতেই থাকুন… আপনাকেই বেহেশত ডাকছে…

রমজান মাসে টিভি চ্যানেলে ভিক্ষা দেয়া মানেই নিশ্চিত বেহেশত, এখনই পরীক্ষা করে দেখুন… বিফলে মূল্য ফেরত…

কোটা সংস্কার এবং আমি

কোটা সংস্কার এবং আমি

আমার জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে। দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা সব কিছুর উর্ধ্বে। এবং গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা লালন করি।

যখনই দেশে কোনো সংকট তৈরি হয় নিজের মতো করে একটা সমাধান খুঁজি। প্রচলিত সরকারী চাকুরিতে কোটা থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সম্পূর্ণ ভাবে বাদ দিয়ে বাকি কোটা বহাল রেখে কোটা সংস্কার করা সম্ভব।

মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং প্রেষণা দেবার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালায়ের মাধ্যমে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের একটা ডাটাবেজ তৈরি করে। প্রয়োজন অনুসারে তাদের সন্তান এবং নাতি পরিবার ভিত্তিক একজনকে চাকুরি দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এবং ভাতা সহ আর যাবতীয় সুবিধা তো থাকছেই।

যেহেতু মেধার কোন বিকল্প নেই তাই জন প্রশাসন মন্ত্রনালয় বিসিএস এর জন্য আলাদা দুটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে:

১। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বিসিএস ( ১০০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা )
* ১৯৭১ থেকে সময় হিসেব করে একটা যুক্তিসঙ্গত সময় পর্যন্ত। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে আগামী পাঁচ অথবা দশ বছর। সকল কে উদার ভাবে এই বিশেষ বিসিএস মেনে নিতে হবে।
এরপর এই পরীক্ষা বিলুপ্ত হবে।

২। নিয়মিত বিসিএস ( নারী, উপজাতি, প্রতিবন্ধী কোটা )

মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বিসিএস পরীক্ষায় শুধু মাত্র তারাই অংশগ্রহণ করতে পারবে যারা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় হতে সঠিক মুক্তিযোদ্ধা বলে সনদ প্রাপ্ত তাদের সন্তান বা নাতি। মেধার ভিত্তিতে যে যেখানে যোগ্য সেখানে তাকে নিয়োগ দিতে হবে।

আর নিয়মিত বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সহ সকলে অংশগ্রহণ করবে। এখানে সীমিত ভাবে নারী, উপজাতি ও প্রতিবন্ধী কোটা বহাল থাকবে। এখানে সমতা এবং মেধার প্রতিযোগিতা হবে। মেধা ভিত্তিক নিয়োগ হবে।

করিম ও রহিম কে এক টেবিলে খাবার দিয়ে করিমের প্লেটে ইলিশ আর রহিমের প্লেটে পাঙ্গাস দিলে সেটা চরম বৈষম্য। যতোই যুক্তি দেয়া হোক রহিমের জন্য এটা মেনে নেয়া সহজ না।

যেখানে সুবিধা দিতে চান দিন। যেখানে সমতার প্রশ্ন সেখানে ব্যক্তিবিশেষে সুবিধা দেয়া বন্ধ করুন। সমতা থাকলে সংঘাত থাকবে না।

সেলফি দিয়ে যায় চেনা!

সেল্ফ সাফিশিয়েন্ট হয়ে ওঠার কতরকমের পথই না রয়েছে! কিন্তু সেই পথকে অনেক সময়েই সেলফিশ পথ মনে হলেও সমাজ সংসারে সেলফ-মেড মানুষদের চিরকালই কদর রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সেল্ফ সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার নতুন এক ফিকির চালু হয়েছে। আজকের আলোচনা তাই সেলফি নিয়েই। সংবাদপত্র চালু হওয়া আর ক্যামেরা আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে এই সেদিন অব্দিও বিখ্যাত মানুষজনদের ছবিই শুধু বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যেত। যে ছবিগুলি তোলার জন্যে পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ডাক পড়তো। কিন্তু বিজ্ঞান প্রযুক্তি তো আর কোথাও থেমে থাকে না। তাই চালু হয়ে গেল সেলফি! কি দারুণ ব্যাপার! নিজের মোবাইল। নিজেরই লেন্স! নিজেই তোলো। আর আপলোড কর। তারপর! ওয়ালে পোস্ট আর আমাকে দেখুন!

এই ‘আমাকে দেখুন’ বিষয়টি সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে বেশি হিট কনসেপ্ট! এবেলায় দেখুন, ওবেলায় দেখুন। বাড়িতে দেখুন, গাড়িতে দেখুন। এ শাড়িতে দেখুন ও শাড়িতে দেখুন। এর সাথে দেখুন ওর সাথে দেখুন। হাসতে দেখুন, হাসাতে দেখুন। নাচতে দেখুন, নাচাতে দেখুন। বাজতে দেখুন, বাজাতে দেখুন, রাঁধতে দেখুন, খাওয়াতে দেখুন। মঞ্চে দেখুন, লঞ্চে দেখুন। ট্রেনে দেখুন, প্লেনে দেখুন। অফিসে দেখুন, মলে দেখুন। না মলত্যাগে দেখুন অব্দি অতদূর গড়ায় নি এখনো। তবে ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে? কিন্তু দেখতে হবে। দেখাতে হবে। যা দেখাবো দেখবে তবে। যত বেশি দেখাতে থাকবেন, তত বেশি সেলিব্রেটি!

এই যে সারাদিন ধরে অক্লান্ত সাধনায় নিজেকে দেখানোর প্রয়াস, সমাজ সংসারে এ কিন্তু সত্যই এক নবতম সংযোজন। কখন কবে কে কোথায় আপনার ফটো তুলবে, সেই ফটো আবার খবরের কাগজে ছাপা হবে কি হবে না, না এত কিছু যদির জন্যে বসে থাকার দিন শেষ। হাতে মোবাইল তোল ছবি দাও পোস্ট। গোনো লাইক। সেল্ফ হেল্পের কি অসাধারণ নমুনা, ভাবা যায়? কারুর পায়ে তেল দেওয়ার দরকার নাই। আপন হাত জগন্নাথ! শুধু ক্লিক করে যেতে হবে সারাদিন। বলা যায় না, আপনার ভাগ্যও কখন কোথায় কিভাবে ক্লিক করে যায়? কে বলতে পারে!

হ্যাঁ এই ক্লিক করতে করতে আপনার পরকালের টিকিটও কনফার্ম হয়ে যেতেও পারে। অনেকেরই গিয়েছে। সেল্ফ ওয়ে টু রীচ দ্য হেভেন! সেলফি তুলতে তুলতে সেল্ফলেস পরকালে পৌঁছিয়ে যাওয়ার রাস্তাটিও সুগম হয়ে উঠছে অনেকেরই। অনেকেরই উঠবে। তবু ক্লিক করা থামলে চলবে কেন? আপনি থামালে অন্যেরা যে সব লাইক আর কমেন্ট বগলদাবা করে নিয়ে যাবে? তখন? আপনি পড়ে রইলেন সেই মান্ধাত্বার বাবার আমলে। স্মার্টফোন আর স্মার্টকার্ডের যুগে অতটা আনস্মার্ট হওয়া কি পোষাবে আপনার? সেটাই আসল কথা। তাই শুধু দেখিয়েই যেতে হবে নিজেকে। না দেখালে কি আর আপনাকে দেখবে কেউ?

তাই আমাকেই নিজেকে দেখিয়ে যেতে হবে নিরন্তর। কিন্তু এই ভাবে নিজেকে দেখাতে দেখাতে আমরা যে কখন আমার পাশের মানুষটিকে দেখতে ভুলে যাচ্ছি, সেকথা ভেবে সময় নষ্ট করা চলবে কি? নিন্দুকেরা যতই বলুক সেলফি তুলতে তুলতে সেলফিশ!

বিদায় ২০১৭ সাল, স্বাগতম ২০১৮ সাল


অন্যান্য দিনের মতো আজকের দিনটিও বিদায় নিয়েছে কিন্তু ইংরেজি দিনপঞ্জি অনুযায়ী এ দিনটির বৈশিষ্ট্য অন্যরকম। কেননা আজকের দিনটি বিদায় নেয়ার সঙ্গে আমরা নতুন একটি বছরে পা রাখব। বিদায় নিবে ২০১৭ সাল। আগমন ঘটবে ২০১৮ সালের। নতুন বছরকে বরণ করতে ব্যস্ত বিশ্ববাসী। পুরাতনকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করা একটি সহজাত নিয়ম। তবুও আমরা প্রত্যাশা করি ২০১৭ সালের সব জরাজীর্ণ ও ব্যর্থতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুন বছর সবার জন্য বয়ে নিয়ে আসুক সুখকর ও শান্তির বার্তা। সাফল্যে ভরে উঠুক সবার জীবন।

প্রিয় পাঠক পাঠিকা আমার শুভেচ্ছা নিবেন। গত ০১-০৭-২০১৩ থেকে শব্দনীড়ের সাথে আছি। চলার পথে সহলেখক হিসেবে আপনাদের সাথে আমার লেখা শেয়ার করছি। আপনাদের লেখায় মন্তব্য করেছি। মন্তব্য করতে গিয়ে কারো কারো লেখায় কড়া সমালোচনাও করেছি। এতে করে যদি কারো মনে আঘাত লেগে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর দোয়া করবেন যেন আগামী বছর আপনাদেরকে আরো ভালো ভালো লেখা উপহার দিতে পারি।

সবাইকে ২০১৮ সালের ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। শুভ নববর্ষ।

যে আগুন নেভেনা

জাজাফী

প্লাস্টিকের ত্রিপলে ঢাকা তাবুতে ফিরে যেতে যেতে একটিবারও রাজুমা পিছনে ফিরে তাকায়নি। সে জানে পিছনে ফিরে তাকিয়ে কোন লাভ নেই। সেখানে তার জন্য কেউ অপেক্ষায় নেই।তাকে দেখে কেউ গুটি গুটি পায়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরবে না। আমরা ভেজা চোখে যদিও তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু এই ভেজা চোখ একটু বাদেই শুকিয়ে যাবে। একটু বাদেই গোটা পৃথিবী ভুলে যাবে রাজুমার কথা। আগুনে পুড়তে থাকা ঘরের আগুন নেভাতে ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা প্রাণপন চেষ্টা করে একসময় আগুন নিভিয়ে ফেলে।নেভানো আগুন থেকেও বেশ কিছুটা সময় ধোয়া ওঠে এবং এক সময় সেই ধোয়াটুকুও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। পোড়া গন্ধও একদিন দুদিন করে করে হারিয়ে যায়।কিন্তু রাজুমার বুকের মধ্যে যে আগুন লেগেছিল তা নেভানোর মত কোন দমকল বাহিনী আজও পৃথিবীতে জন্ম নেয়নি। যে আগুন রাজুমার বুকের মধ্যে দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে তা কোন দিন নিভবে না। অবিরাম জ্বলতে জ্বলতে একদিন হয়তো রাজুমা নামের মেয়েটিও পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। তখনো সে পোড়াগন্ধটুকু বুকের মধ্যে টের পাবে।

তাবুর বাইরে একটি ছোট্ট টুলের উপর বসেছিলাম আমি। সামনে একটি ফাকা টুল পড়ে আছে। একটু আগে সেই টুলে বসে ছিল রাজুমা নামের সাতাশ বছর বয়সী এক নারী। দশমিনিট মত তার সাথে কথা হয়েছিল। সেই দশটা মিনিট আমার কাছে মনে হয়েছিল দশ জনমের সমান। কথা শেষে তাকে বলার মত কোন ভাষাই আমার ছিল না। সে উঠে চলে যাওয়ার পরও তাই আমি ধাতস্ত হতে পারিনি। টুল ছেড়ে ওঠার মত শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে গেছে। নয়তো আমার পা দুটি মাটির সাথে এমন ভাবে আটকে গেছে যে আমি আর উঠতে পারছিনা। কিংবা মনে হচ্ছিল আমার শরীরের ওজন এতো বেড়ে গেছে যেন হিমালয়ের সমান ভারি হয়ে গেছে। সেই ভারিশরীর বয়ে নেবার মত শক্তি তখন আর আমার ছিল না। আরাকানের এক নিভৃত পল্লীতে ছিল রাজুমার ছোট্ট ঘর। সেই ঘর আলো করে রেখেছিল তার দুবছর বয়সী একমাত্র ছেলেটি যে এখন আর নেই। চাদের মত আলো নিয়ে যে ছেলেটি ঘর আলোকিত করতো সে আজীবনের মত হারিয়ে গেছে যেমন করে হারিয়ে গেছে তার সাধের ঘরটি।ঘর চলে গেলে আরো একটি ঘর পাওয়া যায় কিন্তু যে আলোরধারা তার জীবন থেকে হারিয়ে গেল তাকে সে কি করে ফিরে পাবে। চোখের সামনে দাউদাউ করে আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে তার ছোট্ট কুটির সেই সাথে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তার একমাত্র সন্তান। যে ছোট্ট ছেলেটি তার কোলে রোজ রাতে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকতো। তার বুকের দুধ চুকচুক করে খেতো আর ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কত জানা স্বপ্ন দেখতো রাজুমা।

এক সকালে রাখাইন পল্লীতে হানা দিল বুনো হায়েনার দল। দেখতে মানুষ হলেও তারা আসলে মানুষ না। রক্তের নেশায় তারা তখন উন্মাদ হয়ে আছে। রাখাইন পল্লীতে ঢুকে হায়েনারা কোন গরু ছাগল মহিষের উপর হামলা করেনি কারণ তারা তখন মানব রক্তের হোলি খেলায় মত্ত। তারা তখন নারীদেহ নিয়ে মত্ত। সুনামীর মত এসে সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল। কিন্তু সুনামীর সাথে তাদের ছিল আকাশ পাতাল ব্যবধান। সুনামী যখন আঘাত হানে তখন ঘরবাড়ি নষ্ট হয়, অনেকের জীবন চলে যায় কিন্তু সম্মানটুকু থাকে। কিন্তু রাখাইন পল্লীতে যে বুনো হায়েনার দল হানা দিলো তারা ছিল আরো নিকৃষ্ট। পুব আকাশে হয়তো তখনো ভোরের আলো ফুটে ওঠেনি তখন তারা দুয়ারে দুয়ারে বুটের আঘাত করতে শুরু করলো। সেই বুটের আঘাতে কেপে উঠলো পুরো ঘর, পুরো রাখাইন পল্লী। অস্ত্রের মুখে বের করে আনলো ঘুমন্ত নারী পুরুষ শিশু কিশোরদের। ছেলে মেয়ে আলাদা করলো তার পর সবার সামনে ছেলেদের গুলি করে হত্যা করলো। ছোট্ট ছেলে মেয়েরা দেখলো তাদের চোখের সামনে তাদের বাবাকে তাতের বড় ভাইকে চাচা দাদাকে হায়েনারা গুলি করে মেরে ফেলছে। প্রিয় মানুষের মৃত্যু দেখেও তারা টু শব্দটি করতে পারছেনা যদিও তাদের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানেই সব শেষ নয়। পুরুষ সদস্যদের মেরে ফেলার পর নারীদেরকে ঘরে নিয়ে পাশবিক নিযার্তন করেছে। কখনো কখনো ছোট্ট ছেলে মেয়ের সামনেই তাদের মাকে বড় বোনকে সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। পৃথিবীর আকাশ বাতাস তখন কেপে উঠলেও বুনো হায়েনাদের একটি পশমও নড়েনি। তারা উন্মত্ততায় খুনের নেশায় মেতে উঠেছে।

পঙ্গপালের মত রাখাইন পল্লী থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে থাকে অগণিত নারী পুরুষ শিশু কিশোর। কিন্তু সেই পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে রাজুমার ঠাই হয়নি। সে সেই সুযোগটুকু যখন পেয়েছে তখন তার নিজের বলে আর কিছু অবশিষ্ট ছিল না। ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই তার ঘরের দরজাতেও বুটের আঘাত পড়েছে। ঘুম ঘুম চোখে তার স্বামী যখন দরজা খুলছে তখন সেই তার দেড় বছরের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে স্বামীর পিছু পিছু বেরিয়ে এসেছে। ভোরের আলো দেখার আগেই সে দেখেছে তার স্বামীর মৃত্যু। তার পর তাকে টেনেহিচড়ে বাইরে নিয়ে আসা হয়েছিল। স্বামীর মৃতদেহ তখন উঠোনের এক কোণায় পড়ে আছে। সেদিকে তাকাবার মত সময়ও রাজুমার হয়নি। চোখের সামনে দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছে কুড়ে ঘরখানা। একটু আগেও স্বামী সন্তান নিয়ে যে ঘরে আরামের ঘুম ঘুমিয়েছিল রাজুমা এখন সেটা জ্বলছে চোখের সামনে। একটু আগে যে মানুষটি তার স্বামী ছিল সে এখন মরে পড়ে আছে। তখন সে বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছে তার একমাত্র ছেলেটিকে। দুধের শিশুটি জানতেই পারেনি তার জন্মদাতা পিতা চিরকালের মত ঘুমিয়ে গেছে।

একদিকে স্বামীর মৃত দেহ অন্যদিকে চোখের সামনে জ্বলতে থাকা বসতবাড়ি। রাজুমা নামের মেয়েটি যখন বুকের সাথে একমাত্র সন্তানকে জড়িয়ে দিশেহারা হয়ে আছে তখন হায়েনাদের এক সদস্য ওর বুক থেকে একমাত্র সন্তানকে ছিনিয়ে নিল। তার পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে ছুড়ে ফেলে দিল আগুনের মধ্যে। চোখের সামনে কলিজার টুকরো ছেলেটি জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হতে থাকলো কিন্তু রাজুমার কিছু করার থাকলো না। সে তখন মাটিতে শোয়া এবং তার বুকের উপর হায়েনারা পালা করে ওঠানামা করছে। এভাবে কতক্ষণ চলেছে সে জানেনা। পোড়া গন্ধে একসময় সে জেগে উঠলো। পাশবিক নিযার্তনের সে জ্ঞান হারিয়েছিল বলেই স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র সন্তানকে আগুনে পুড়তে থাকা দৃশ্য দেখার কষ্ট থেকে রেহায় পেয়েছে। চোখে মেলে তাকিয়ে দেখলো কিছুক্ষন আগেও যেখানে থাকার ঘর ছিল এখন সব শুন্য। সেখানে শুধু কিছু কয়লা ছাই পড়ে আছে। সে তখন দিশেহারা।হঠাৎ তার সন্তানের কথা মনে পড়লো। থেতলে যাওয়া শরীরটাকে কোনমত টেনে ছাইগাদার কাছে নিয়ে সে তার সন্তানকে খুঁজলো। কিন্তু তাকে সে খুঁজে পেলো না। তার বুকের মানিক তখন ছাইভস্ম হয়ে মৃদু বাতাসে উড়ছে দিগন্তে। আশেপাশে তাকিয়ে স্বামীকে খুঁজলো কিন্তু তাকেও পাওয়া গেল না। হয়তো সন্তানের সাথে সাথে সেও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হায়েনারা হয়তো ওর স্বামীর মৃত দেহ ছুড়ে মেরেছে জ্বলন্ত আগুনে।

স্বামী নেই, একমাত্র সন্তানও নেই সেই সাথে নারীত্বের যে সম্মান, সম্ভ্রম সেটাও কেড়ে নিয়েছে মায়ানমারের নরপিশাচ সেনাসদস্যরা। বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু দরকার সবই সে হারিয়েছে। এ জীবন রেখে আর লাভ কি? একটু দূরে তখনো ঘরের কিছু অংশ দাউদাউ করে জ্বলছিল। শরীরটাকে টেনে সে সেই আগুনে ঝাপিয়ে পড়লো কিন্তু পারলো না। কে যেন তাকে থামিয়ে দিল। তার হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে তাকে সরিয়ে নিল। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো রাহেলার মা। রাখাইন পল্লীতে প্রতিবেশি ছিল।কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো রাজুমা। তাকে শান্তনা দেবার মত ভাষা ছিলনা রাহেলার মায়ের। তারও আপন বলতে আর কেউ জীবিত নেই। সবাইকে মেরে ফেলেছে হায়েনার দল। বয়স হয়ে যাওয়ায় তার উপর পাশবিক নিযার্তন করতে পারেনি ওরা। বুকের সাথে রাজুমার মাথা ঠেকিয়ে তাকে শান্তনা দেবার ভাষা খুঁজতে থাকেন তিনি। কিন্তু বলার মত কোন কথাই তার মূখে আসে না। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রাজুমার কান্নাও থেমে যায়। তাকে ধরে পথে বেরিয়ে পড়ে রাহেলার মা। কতশত মাইল পাড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশ সীমানায়।

ছোট্ট তাবুতে একটু আগে যে মেয়েটি ফিরে গেল সেই মেয়েটিই হলো রাজুমা। যার কোল থেকে একমাত্র সন্তানকে কেড়ে নিয়ে চোখের সামনে ছুড়ে মারা হয়েছিল আগুনে। তার পর স্বামীর মৃতদেহের পাশে মাটিতে চেপে ধরে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তার চোখে তখন অবিরাম শ্রাবণধারা। সামনে দাউদাউ করে জ্বলছে কলিজার টুকরা সন্তান, শরীরের উপর চলছে পাশবিক নির্যাতন, পাশে পড়ে আছে মৃত স্বামী।

আমার সাথে কথা বলে তাবুতে ফিরে যাওয়ার পরও আমি ওই তাবুর দিকে অপলোক তাকিয়ে আছি। গুয়ান্তানামো বে’র অত্যাচারের কথা শুনেছি, আবু গারিবের নিমর্মতার কথাও শুনেছি কিন্তু রাজুমার গল্প সম্পুর্ন আলাদা। আর কোন দিন হয়তো রাজুমার সাথে দেখা হবেনা কারণ ওর সাথে দেখা করার মত সাহস আমার নেই। দেখা হলে কি করে ওকে প্রশ্ন করবো তুমি কেমন আছ? এই প্রশ্ন করতে পারবো না বলেই ভয়ে আর কোন দিন ওর সাথে দেখা হবে না। এখনো ওর বুকে পোড়া গন্ধ, জ্বলতে থাকা আগুনের ধোয়া আরাকানের গোটা আকাশকে ছেয়ে দিয়েছে। হয়তো আরাকানের জ্বলতে থাকা গ্রাম একদিন শান্ত হয়ে যাবে। সব আগুন, ধোয়ার কুন্ডলী থেমে যাবে কিন্তু রাজুমার বুকের আগুন কোন দিন নিভবে না। ওর বুক থেকে যে ধোয়ার কুণ্ডলী বের হতে শুরু করেছে তা কখনো শেষ হবার নয়।

জাজাফী
২৩ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা বালকের আর্তনাদ

তোমা‌দের দুয়া‌রে আ‌মি একটু আশ্রয় চাই

আমার বাবা ছিল
মা ছিল ভাই ছিল
বোন ছিল

আমার স্বপ্ন ছিল ফস‌লের মাঠে সোনা ফলাবার
গেরুয়া কাপড় গা‌য়ে জড়া‌নো একদল লোক
ও‌দের হা‌তে চাপা‌তি-আ‌গ্নেয়াস্ত্র
চো‌খে হিংসা, লোভ, লালসা
ওরা আমার বাবা‌কে হত্যা ক‌রে‌
আমার বোন‌কে ধর্ষণ ক‌রে‌
আমার মা‌য়ের কোল থে‌কে ভাই‌টি‌কে ‌কে‌ড়ে নি‌য়ে
ছু‌ড়ে ‌দেয় দাউদ‌াউ আগু‌নে
জ্বা‌লি‌য়ে পু‌ড়ি‌য়ে ছারখার ক‌রে‌ আমার বস‌তি

আর আ‌মি আমার শোক বিহ্বল মা কে রে‌খে
আমার জীবন নি‌য়ে পা‌লি‌য়ে এ‌সে‌ছি তোমা‌দের দুয়া‌রে
আ‌মি মানুষ আ‌মি বাঁচ‌তে চাই

youtu.be/-NOc9pi68wI
কবিতাটির আবৃত্তি লিংক।

অনলাইন গেম

অনলাইন গেম কি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তা বলার নয়? কিন্তু সেই সব গেম খেলা ছেলে মেয়ের জন্য সেই ফ্যামিলির কতজন অনলাইন ছেড়ে দিয়েছেন? একটু বলবেন কি?
আমার মনে হয় কেউ না। সবাই অনলাইনে আছেন। কেউ গেম খেলছে, কেউ খেলছে না। কিন্তু ফেসবুক হোয়াটস অ্যাপস ইস্ট্রাগ্রাম ও অন্যান্য কেনাকাটা থেকে শুরু করে ফিল্ম দেখা সবই চালিয়ে যাচ্ছেন।
অথচ ছেলেমেয়েকে চোখ রাঙানি। এই, গেম খেলবি না? এ কি সম্ভব।
কেন? আমি তো কোন খারাপ কিছু করছি না। ছেলে মেয়ে কেন করবে? কিন্তু ছেলে মেয়ে তো ভাবছে, তুমি তোমার কাজ করছ আমি আমার কাজ।
তোমার দিক থেকে খারাপ ভাবলেও তার দিক থেকে তো সে মনে করছে ঠিকই করছি।
আমরা ও ছেলেমেয়ে দুজনেই অনলাইনে। আমরা বিজনেস বা লাভজনকে ঘুরছি বন্ধু প্রীতি করছি।
ছেলেমেয়েও তার দিক থেকে তার মত ভেবে অন লাইনে আছে। অনলাইন গেম খেলছে। গান শুনছে। ছবি দেখছে।
এখন দুরবস্থায় হায় হায় করছি। আবেগকে ধরে রেখে বাধ্য ছেলে মেয়েকে বাধ্য করাচ্ছে এই অনলাইন গেম। তুমি অনলাইনে যা যা কর সেগুলো ছেড়ে দাও। দেখি কতটা কি হয়ে যায়? কিছু হবে না। হয়তো কিছু আর্থিক ক্ষতি হতে পারে এছাড়া আর কিছু নয়। তা না। তুমিই অনলাইন ছাড়তে পারবে না বা পারার মানসিকতায় নেই। ওমা, ফেসবুকে সে কি লিখল? কি ছবি দিল? কি শেয়ার করল? মেলটা খুব ইম্পর্টেণ্ট। হোয়াটস অ্যাপ্সে ম্যাসেজটা খুব দরকারী। যেন মনে হয় যুগ যুগ এই মেল ছিল।
আপনি অনলাইন থেকে সরছেন না আর ছেলেকে মেয়েকে আজ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বলছেন – অনলাইন ছেড়ে দাও। কিংবা দিয়ে রেখেছেন কিন্তু ওয়াচ করছেন।
অথচ আপনি ছেড়ে দিলে ও ছাড়তে বাধ্য। সেই ভাবনাই এই টিন এজে ঘোরাফেরা করছে। যা সে বলতে পারছে না। তাই অনলাইনে থেকে আজ এই ভয়ঙ্কর ছেড়ে দিলেও অন্য ভয়ঙ্করে জড়িয়ে পড়বে না তার নিশ্চয়তা কোথায়।
আপনার অফিসে লাগে ভাল কথা। মেবাইলে নেট রিচার্জ আছে তো।  
তার পরেও আমরা অনলাইন থেকে কতটা সরছি।

প্রাচ্যের নক্ষত্রকন্যার জন্য

তাঁকে প্রাচ্যের নক্ষত্র বলা হচ্ছে। তাঁকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সম্ভাবনাময় একটি দেশের নেতা। মানুষকে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি।হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আর্ত মানবতায়। জাতিসংঘে এসে বলে গিয়েছেন, ষোলো কোটি বাঙালী ভাত খেতে পারলে, দশ লাখ রোহিঙ্গাকে শরণার্থীর সম্মান দিতে পারবে বাংলাদেশ। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অন্যতম বড় পরিচয় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনা।
দৈনিক খালিজ টাইমস এ তাগকে নিয়ে একটি কলাম ছাপা হয়েছে। এটি লিখেছেন –
খ্যাতিমান কলামিস্ট এ্যালন জ্যাকব।

এতে রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি মানবিক আবেদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে। তাকে প্রাচ্যের নতুন নক্ষত্র হিসেবে অভিহিত করেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বহুল প্রচারিত দৈনিক খালিজ টাইমস।

এ নিবন্ধে লেখক লিখেছেন, ‘লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবন রক্ষায় সীমান্ত খুলে দিয়ে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপন্ন মানুষের জীবন রক্ষায় শেখ হাসিনা তার যে সহমর্মিতা ও সহানুভূতি দেখিয়েছেন, সে জন্য এ সময়ে তার চেয়ে বড় কোন মানবতার উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখছি না।’

জ্যাকব স্বীকার করেন, স্বৈরাচারী, ঘৃণিত গুরু এবং নামগোত্রহীন লোকদের নিয়ে লেখার আগেই আমাদের উচিত ছিল শেখ হাসিনাকে এই পাতায় উপস্থাপন করা।
জ্যাকব তার কলামে লেখেন, লেখার বিষয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই আমাকে সব সময় কোন বিষয় এবং ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ভাবতে হয়, যদিও এ সপ্তাহে আমার লেখার বিষয় নিয়ে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো দক্ষিণ ভারতের একজন অভিনেতা এবং রাজনৈতিক মাঠে তার আশাবাদী কর্মকাণ্ড নিয়ে, কিন্তু আমি যখন বুঝতে পারলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন প্রাচ্যের নতুন তারকা তখন আমার সিদ্ধান্ত বদলালাম।

তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমরা এই মহৎ সুযোগটি হারিয়েছি কারণ মিয়ানমারে একজন নোবেল বিজয়ীর উজ্জ্বলতা হারানোর বিষয় নিয়ে মিডিয়া অধিক ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো বলে। একটি অপরাধের বোঝা আমাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আর সেটা হল গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক আবেদনটি অবজ্ঞা করায়। এতে তার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে বলে ভাষণে জানিয়েছেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যাকব বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো নেতারা যখন বিশ্ব মানবতার কর্ণধার হন তখন আবারো আশার আলো জ্বলে ওঠে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত বিশ্বে। তার কর্মকাণ্ড প্রথমে ক্ষীণ মনে হয়েছিল, তবে রোহিঙ্গা সমস্যা প্রত্যক্ষ করতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তে খালিজ টাইমস্ যখন
একজন রিপোর্টার পাঠাল তখনি প্রকৃত সমস্যাটি খালিজ টাইমস্ এর সামনে চলে আসে। জ্যাকবের বর্ণনায় উঠে এসেছে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবর্ণনীয় দুর্দশার চিত্র। ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা খাদ্যের জন্যে মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করছে, জরা-জীর্ণ কুটিরে বসতি গড়েছে। এ ঘটনা আমাদের খুবই ব্যথিত করেছে।

জ্যাকব তার কলামে লিখেছেন, সুচির চোখে বিশ্ব গণমাধ্যম রোহিঙ্গা সঙ্কটকে দেখার জন্য অবশ্যই অপরাধী। দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হয়ে দেশছাড়া হওয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে সুচিকে অসহায় মনে হয়েছে। অনেকেই অনুধাবন করতে পারেনি যে, দুই বছর আগে তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি নির্বাচনে বিজয়ী হলেও এখন পর্যন্ত দেশটির সামরিক জান্তাই মূল ক্ষমতায় রয়েছে।

জ্যাকব আরও বলেন, যখন সু-চির সবচেয়ে বেশি উচ্চকণ্ঠ হওয়ার দরকার ছিল তখন তিনি সোচ্চার হতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তথাকথিত এই আইকনের জন্য আমার বিন্দু পরিমাণ সহমর্মিতা নেই বললেই চলে। এটি অবশ্যই ত্রুটিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে যখন গণতন্ত্র পছন্দসই সংখ্যাগরীষ্ঠের পক্ষে যায়। আর জান্তা ও একনায়কদের সঙ্গে সন্ধি করা সহজ হয়ে যায়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে সু-চির সুচিন্তিত নীরবতা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আমি একথা বলেছি আমাদের একটি সম্পাদকীয়তে। আরও বলব, যখন মানবতার জন্য চিৎকার করে কথা বলা উচিত তখন কারও নিশ্চুপ থাকাটা আমার অপছন্দ।

জ্যাকব বলেন, সু-চি কণ্ঠস্বর যখন হারিয়েছেন এমন সময় শেখ হাসিনার সোচ্চার হয়ে ওঠা এক বিরাট স্বস্তি। সুচি ও শেখ হাসিনা উভয়ে তাদের নিজ নিজ দেশের
মুক্তি সংগ্রামের মহানায়কের কন্যা। দু’জনই খুব কাছ থেকে ট্র্যাজেডি দেখেছেন। যদিও ফারাকটা বিশাল। মানবতা যখন বিপন্ন তখন সুচি বেছে নিলেন নিছক দর্শক হয়ে থাকার পথ আর শেখ হাসিনা দেখালেন অমায়িক দয়া ও মানবিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত। শেখ হাসিনার প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ছোট্ট দেশটিতে একবারে ৪ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন এটা তার উদার মনের পরিচয় বহন করে।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘে অধিবেশন চলাকালে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যে তিন লাখ শরণার্থী পেয়েছি, কিন্তু আমাদের স্থান সংকুলানের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আরও বেশি শরণার্থী গ্রহণের বিশাল হৃদয় আমাদের রয়েছে।

জ্যাকব লিখেছেন, ছোট দেশটির জন্য এই ট্র্যাজিক পরিস্থিতি সামলানোর উদারতায় অপরিসীম সাহস প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি বলেন, ১২ লাখ শরণার্থী গ্রহণের সাহস দেখিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে কিন্তু বাংলাদেশ ব্যতিক্রম, এর সম্পদ সীমিত। এটি বাংলাদেশ সরকারের কারণে সৃষ্ট কোন সমস্যা নয়, তথাপি শেখ হাসিনা তার মানবিকতার জায়গা থেকে তবুও সরে যাননি। যে কাজটি শেখ হাসিনা করেছেন, তা একটি প্রতিদান মাত্র। কারণ তিনি ভুলে যাননি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শরণার্থীরা কীভাবে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।

আমাদের মনে আছে, ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হাল ধরার পর নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। সামরিক শাসনের অবসানে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা নতুন করে প্রবর্তনের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

১৯৯৮ সালে শতাব্দীর প্রলয়ংকরী বন্যা হয়েছিলো দেশে। সে সময় বিবিসিসহ অনেকেই প্রমাদ শুনেছিল, এবার সত্যিই বুঝি দুর্ভিক্ষ ও মহামারী লেগে অসংখ্য লোক মারা পড়বে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার তা হতে দেয়নি। কৃষকদের ন্যায্যমূল্যে সার, সহজ শর্তে কৃষিঋণ এবং দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি সত্ত্বেও সেচের সুব্যবস্থা করে দিয়ে খাদ্যসহ দেশে কৃষি বিপ্লব সাধন করেছিলো। জাতীয় অর্থনীতিতে যেমন প্রবৃদ্ধি বেড়েছিল, তেমনি কমেছিল মুল্যস্ফীতি। কিন্তু পরবর্তীকালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে জাতীয় অর্থনীতির সেই সাফল্য ধারাকে ধরে রাখতে পারেনি বরং তারা অপশাসনের মাধ্যমে দেশে খাদ্য সঙ্কটের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, যা সামাল দিতে হয় পরবর্তী মহাজোট সরকারকে।

আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে আলোচিত। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অর্জন অনেক। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি উচ্চাসনে নিয়ে গিয়েছেন বিশ্বের দরবারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ লাভ করেছেন। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

২০১৫ সালে শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নারী পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের জন্য ডব্লিউআইপি (ওম্যান ইন পার্লামেন্ট) গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২৫ মার্চ ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে নারী ও শিশুশিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তিবৃক্ষ পদক’ পুরস্কারে ভূষিত করে। খাদ্য উৎপাদন ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রধানমন্ত্রীকে এই সম্মাননা সার্টিফিকেট প্রদান করে।

২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন, ‘একটি বাড়ি ও একটি খামার প্রকল্প’ ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি মেলায় সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক ‘মান্থন এওয়ার্ড’ এবং জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দরিদ্রতা, অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করায় ‘ডিপ্লোমা এওয়ার্ড’ পদকে ভূষিত করে শেখ হাসিনাকে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদানের জন্য আইএনইএসসিও, প্রধানমন্ত্রীকে কালচারাল ডাইভারসিটি পদকে ভূষিত করে। ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন ব্রেক্রো এমপি প্রধানমন্ত্রীকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দূরদর্শী নেতৃত্ব, সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা, আঞ্চলিক শান্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনবদ্য অবদানের জন্য গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।

তিনি পান সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড। স্বাস্থ্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নারী ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) সাউথ সাউথ নিউজ এবং জাতিসংঘের আফ্রিকা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশন যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড-২০১১ : ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট হেলথ এই পুরস্কারে ভূষিত করে।

শিশুমৃত্যু হ্রাস সংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। একই বছরে আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য এসটি পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে। এই সময়ে বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক-২০০৯’-এ ভূষিত হন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৫ সালের জুন মাসে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া। ২০০০ সালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকন ওমেনস কলেজ ‘পার্ল এস বাক পদক’ প্রদান করে। একই বছর ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টর অনারিয়াস কসা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ‘ইউনিভার্সিটি অব বার্ডিগ্রেপোট’ বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘ডক্টর্স অব হিউম্যান লেটার্স’ প্রদান করে।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১৯৯৯ সালের ২০ অক্টোবর ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি এবং ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ এফএও কর্তৃক ‘সেরেস পদক’ লাভ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৮ সালে নরওয়ের রাজধানী অসলোয় মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে ‘এম কে গান্ধী ’ পুরস্কারে ভূষিত করে। একই বছরের এপ্রিলে নিখিল ভারত শান্তি পরিষদ শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ‘মাদার তেরেসা পদক’ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রাখার জন্য ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে ‘ফেলিক্স হুফে বইনি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। ঐ বছরেই শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী এক আড়ম্বরপূর্ণ বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মানমূচক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৯৭ সালে লায়ন্স ক্লাবসমূহের আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ‘রাষ্ট্রপ্রধান পদক’ প্রদান করা হয় শেখ হাসিনাকে।

শেখ হাসিনা শান্তিতে নোবেল পাবেন কী না তা এখন আর বড় কথা নয়। যারা শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন তাদের চেয়ে শেখ হাসিনা যে কত বেশি মহান তা দিনে দিনে প্রমাণিত হচ্ছে। আর তাঁর প্রধান শক্তি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা। এর চেয়ে বেশি একজন রাজনীতিকের জীবনে আর কি পাওয়ার থাকতে পারে।

_____________________________________
দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা। ৭ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার।