বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

গন্ধ মলিন

গন্ধ মলিন

কবিতার পিছে ছুটে- ছুটে
বৃদ্ধ হয়ে পরছি- ঠিক কাদামাটি মতো;
নোনা জল চারপাশে বালুচর!
তবু কবিতা কেমন আছে, জানি না;
সোনালি মাঠ প্রান্ত শুধু দৃশ্যময়-
আর কত কবিতা? জানি জানতে পারবো না
সর্বশেষ বৃদ্ধ বয়স বলে কথা, চিনবে না
এ কবিতার পরিচয়ও জানবেই না;
সমাধির উঠন শুন শান হাওয়ার মেঘ-
গন্ধ মলিন- তবু জানি, করবে না- কবিতা।

০৩ মাঘ ১৪২৯, ১৭ জানুয়ারি’২৩

শ্বেতস্বপ্ন

শ্বেতস্বপ্নের ধূসর রাজ্যে কাশফুল হাওয়ায় ওড়ে
শিশিরস্নাত নরম আলোয় পদ্মবনে নীল পতঙ্গ বাসর রচে
জোনাকিরা যায় হারিয়ে হাঁড় কাপানো শীতের আগে
মাঠে থাকে শেয়াল কুকুর কুয়াশার চাদর গায়ে জড়িয়ে।

শ্বেতস্বপ্ন মলিন হলে অসূর নৃত্য সুযোগ পাবে
জাগো তবে নীলকমলেরা মাতৃভূমি পাহারা দিতে
ফুলের মাঝে কীট থাকে তাই, ফুলের চাষ কি বন্ধ হবে!
নীলকমলেরা হারিয়ে গেলে অসূর নৃত্যে তোমার আমার মৃত্যু হবে।

শ্বেতস্বপ্নের ক্যানভাসেতে ছবি আঁকবো দেশ প্রেমের
শ্বেতস্বপ্ন ধূসর করতে দেবনা আর হায়েনাদের
পদ্মবনে থাকে যদি কীট, মুক্ত করবো সদলবলে
নীলকমলেরা ওঠ জেগে; মানব মুক্তির দীক্ষা দিতে।

সম্প্রীতির এই স্বাধীন দেশে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা হবে
স্বাধীনতার বীজমন্ত্রে দীক্ষা নিতে রইবোনা আর পিছু হটে
রফিক সফিক সালামেরা ডাক দিয়ে যায় মুক্তির মিছিল রাজপথে
আজও যেন ডাক দিয়ে যায়, সাম্যের গানের মূর্তপ্রতীক স্বাধীনতার স্বপ্ন পুরুষ মুজিব কন্ঠে।

বিবর্ণ রোদ

কিছু বিবর্ণ ভালোবাসা চড়া দামে বিক্রির আশায়
গোল্ড প্লেট হয়েছিলাম, ক’দিন বেশ চিকচিকে রোদ
বড়ো অদ্ভুত; লাগসই প্রেম খাতির করেনি, এখন
সুপ্রভাও ক্ষণপ্রভা, রাস্তার সস্তা শব্দেরা গিলে খেতে
চায় তিন অবস্থা- কঠিন, তরল এবং বায়বীয়!

একদিন গান পাউডারে মন পুড়ে কয়লা হয়েছিলো
সেই পোড়ামন জোড়া লাগেনি, অস্তগামী সূর্যের মতো
এর কোনো উত্তাপ নেই; ভালোবাসা তখন কেবলই
যদি, কেউ আছো? দাঁড়ি, কমা, কোলন, সেমিকোলন;
শোধ নিবে, নয়ত শোধ দেবে; আমিও উৎরে যেতাম
পুরুষ ভাবনার নারী ও নদী!

এখন ফেলে আসা দিন, রোজই চতুর্থ পুরুষ হয়;
বিবর্ণ রোদ তবুও কিছুটা উষ্ণতা ফেরি করে, জীর্ণশীর্ণ
আবেগ আর ঝুঁকি নিতে সাহস পায় না, সতর্ক প্রহরায়
তটস্থ থাকে নৈঃশব্দের বাতিঘর, কেবল পেছনে ফেনা
হয় নির্ঝরের নির্জনবাস; মাল্টিপল স্কেরোসিসে আক্রান্ত
সময় কোনো কথা বলে না, বলতে পারে না!
তবুও ভালোবাসাহীন আমাকে আমি নিজেই চিনি না!

টুসু গান (গীতি কবিতা) প্রথম পর্ব

টুসু গান (গীতি কবিতা) প্রথম পর্ব
কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

টুসু উৎসব পালনের সময় পৌষ মাসের শেষ চারদিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনে গৃহস্থ বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবরমাটি দিয়ে নিকিয়ে পরিস্কার করে চালের গুঁড়ো তৈরী করা হয়। বাঁউড়ির দিন অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ত্রিকোণাকৃতি ও চতুষ্কোণাকৃতির পিঠে তৈরী করে তাতে চাঁছি, তিল, নারকেল বা মিষ্টি পুর দিয়ে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় ভাবে এই পিঠে গড়গড়্যা পিঠে বা বাঁকা পিঠে বা উধি পিঠে ও পুর পিঠা নামে পরিচিত। বাঁউড়ির রাত দশটা থেকে টুসুর জাগরণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মেয়েরা জাগরণের ঘর পরিষ্কার করে ফুল, মালা ও আলো দিয়ে সাজায়। সারারাত টুসুর জাগরণ হয়। টুসুগান গাওয়া হয়।

টুসুগান-১

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

শ্বশুর ভাল শ্বাশুড়ি ভাল গো
আর ভাল দেওর দুটি,
দেওরের দাদা ভাল গো
দুষ্টু আমার ননদী।

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

সকাল সকাল সবাইকে গো
চা করে খাওয়াই আমি,
নটা বাজল্যা জল খাবার দিই
আপিস যায় আমার স্বামী।

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

সারাদিন রান্না ঘরে গো
রান্ধা বাড়া সকাল হত্যে,
বর আমার আপিস থেকে গো
ঘর আসে 4টার মধ্যে।

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

সাঁঝ হলে বাতি জ্বালাই গো
আমাদের তুলসীথানে,
রাতের বেলা টুসু পূজা গো
সবাই মাতে টুসুগানে।

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

এখানে কিছু সংগৃহীত ও প্রচলিত সুরে
টুসুগানের সংকলন উদ্ধৃত করা হলো।

(১)
# চাল উলহাব রসে রসে
মুঢ়ি ভাজব রগড়ে
সতীন মাগি মইরয়েঁ গেলে
কাঠ চালাব সগড়ে
সতীন মইরল্য ভাল হল্য
ছাতির ভাত মর হেঁট হল্য
সতীন ছিল চৈখের বালি
তাই আগে অকে লিল

(২)
“টুসুর মাচায় লাউ ধরেছ্যে
ধরেছ্যে জড়া জড়া
হাত বাড়াঞে ধইরতে গেলে
পায় জড়া পানের খিলি
জড়া জড়া পানের খিলি
যাঁতি কাটা সুফারি…

(৩)
টুসুর চালে লাউ ধইরেছে
লাউ তুল্যেছে বাগালে
যবে বাগাল ধরা যাবি
বড়বাবুর হুজুরে
যখন বাগাল ধরা যায় মা
তখন হামরা বাঁধঘাটে
ঘাটের হল্যৈদ ঘাটে দিঞে
হামরা যাই মা দরবারে
দরবারে যে গেছলে টুসু
মকদ্দমায়ঁ কি হল্য
মকদ্দমায় ডিগরি হল্য
নীলমনি চালান গেল

(৪)
“উপরে পাটা তলে পাটা
তার উপরে দারোগা
ও দারোগা সইরাঞ বস গ
টুসু যাবেক পুরুল্যা
পুরুল্যা যে গেছলে টুসু মকদ্দমায় কি হল্য
মকদ্দমায় ডিগরি হল্য
নীলমনি চালান গেল”(এই দু ভাবেই গাওয়া প্রচলিত)

(৫)
রাত পোহালে আসে মকর।
ঘরে ঘরে পিঠার বহর
খাওয়াব করি তোকে আদর
কুনু কথা শুনব না গো শুনব না।
খাওয়াব করি কদর।
আসে মকর বছর বছর

“তদের ঘরে টুসু ছিল
দিন করি আনাগনা
কাইল ত টুসু চল্যে যাবে
হবে গ দুয়ার মানা”

রাত পোহালে আসে মকর।
কর তুরা টুসুর কদর
ঘরে ঘরে পিঠার বহর
আসে মকর বছর বছর।

1

পৌষমাসে পিঠেপুলি … সারাগাঁয়ে খুশির জোয়ার মকর পরবে করি সবারে আহ্বান (দশম পর্ব)

পৌষমাসে পিঠেপুলি … সারাগাঁয়ে খুশির জোয়ার
মকর পরবে করি সবারে আহ্বান (দশম পর্ব)
কলমে – কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ঘরে ঘরে পিঠেপুলি ভারি ধূম হয়,
পৌষ সংক্রান্তি নামে সকলেই কয়।
সারারাত গড়ে পিঠে নাহিক বিরাম,
পিঠেপুলি উত্সবে মেতে উঠে গ্রাম।

প্রভাত সময় কালে নদীঘাটে ভিড়,
গরুগাড়ি এসে থামে অজয়ের তীর।
অজয়ের নদী ঘাটে মহা কোলাহল,
টুসু লয়ে আসে ঘাটে কুমারীর দল।

যাত্রীরা সিনান করে অজয়ের ঘাটে,
মেলা বসে নদীচরে সারাদিন কাটে।
ধর্মশীলা মেলা হয় সংক্রান্তি দিনে,
চুড়ি মালা বালা ফিতা সকলেই কিনে।

পৌষ সংক্রান্তি দিনে মহাধূম পড়ে,
যাত্রীদের কোলাহলে ঘাট যায় ভরে।
নদীতে মকর স্নান করে পূণ্যবান,
কবিতায় লিখে কবি লক্ষ্মণ শ্রীমান।

3

পৌষমাসে পিঠেপুলি … সারাগাঁয়ে খুশির জোয়ার মকর পরবে করি সবারে আহ্বান (নবম পর্ব)

পৌষমাসে পিঠেপুলি … সারাগাঁয়ে খুশির জোয়ার
মকর পরবে করি সবারে আহ্বান (নবম পর্ব)
কলমে – কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পৌষমাস সংক্রান্তি মহা ধুমধাম,
পিঠেপুলি উত্সবে মেতে উঠে গ্রাম।
ঘরে ঘরে পিঠে হয় খুশির বাহার,
তিল পিঠে গুড় পিঠে হরেক প্রকার।

সারাদিন আনাগোনা আমন্ত্রিত জন,
সকলেই পিঠে খায় খুশিতে মগন।
খেজুরের গন্ধ ভাসে সারা গ্রামময়,
পিঠে খাও পেটভরে সর্বজনে কয়।

সরা পিঠে বাটি পিঠে সুস্বাদু আহার,
নলেন গুড়ের গন্ধ ভাসে চারিধার।
তিল চাঁছি নারকেল দিয়ে গড়ে পিঠে,
দুধ দিয়ে সিদ্ধ হলে লাগে খুব মিঠে।

কুমারীরা সকলেই বসে আঙিনায়,
টুসু পূজা করে সবে টুসুগান গায়।
সারারাত্রি টুসুগান রাত্রি জাগরণ,
কবিতা লিখিল কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।

2

তুষারপাতের ঘ্রাণ

323

তুষারের গন্ধ পেলেই আমি হয়ে উঠি, বারুদময়।
রোদ দেখবো না জেনেও আকুতি রাখি, সূর্যের চরণে
আহা! বিগত পৌষ! তুমিও আমার জন্য-
রেখে গেলে না কিছু উষ্ণ হিম, কাঁথার করুণা!

আগামী চব্বিশ ঘন্টা এই নগরের সড়কে সড়কে
ঝরবে যে বরফ, কিংবা যে ঝড়োহাওয়া
উড়িয়ে নিয়ে যাবে পুরনো বৃক্ষের বাকল,
কি দিয়ে মোচন করবো তাদের দুঃখ,
অথবা কি দিয়ে বরণ করবো
স্নো-বলের জমাট বেদনা, শাদা শাদা সমুদ্রের দাগ!

তুষারপাতের আগাম সংবাদ এলেই আমি
প্রাচীন শামুকের মতো নিজেকে গুটাতে থাকি,
কিছু পাথর আমাকে ভেদ করে যায়,
কিছু পাথরকে আমি;
কাছে টানতে টানতে নতুন করে লিখি
হিমার্দ্র ঘুমের নামতা।

নিজের স্বার্থে যায় না খোলা ঠোঁট

3252

কাছের মানুষগুলো নিজ স্বার্থে ব্যস্ত, নিতেই অভ্যস্ত,
একবার খুললেই ঠোঁট, পাশাপাশি থাকতে হয় ভীত সন্ত্রস্ত;
আপনজন’রা সব কেড়ে নিতে ওঁৎ পেতে বসে থাকে,
কখন কোন ফাঁকে সব হাতিয়ে নেবে, সে চিত্র আঁকে।

দিতে পারলেই তুমি মহা ভালো, দয়ায় ভরা দেহ
যদি ফেরত চাও তবেই তাদের ঠোঁটে উঠে হেলার দ্রোহ
তুমি কষ্ট করে কামাচ্ছো সে যেন তোমার জন্য নয়,
চারিদিকে হা করে থাকে তোমার সব গিলে খাবে, বাড়াবে প্রণয়।

ইনিয়ে বিনিয়ে কত আবদার, চোখ মানিব্যাগে
বায়নাতে না সূচক সম্মতি দিলেই দেখবে গেছে রেগে,
তোমার যা আছে তোমার জন্য যেন সেসব না
স্বার্থের বুকে না শব্দটি করলেই ব্যবহার আর হয় না বনিবনা।

কেমন যেন মানুষগুলো দেবার বেলায় নাই এক সিকি
অন্যের অর্থের উপর ল্যুলোপ দৃষ্টি, মন যেন আলোয় ঝিকিমিকি
নিজের মনের করে নিয়ে যায় কেউ কেউ ধার,
ফেরত দিতে কতই না কার্পণ্য, টাকা হয় না পকেট হতে বার।

দিতে না পারলেই তোমার কত বদনাম, তুমি হেন তেন, অমানুষ
অথচ তোমার টাকা নিয়ে উড়াবে রঙ আকাশে রঙিন ফানুস
অন্যের টাকা পকেটে গেলেই বুক ফুলিয়ে হাঁটে কেউ,
দেদারসে টাকা উড়ায়, বুকে ভাঙ্গে চাকচিক্যতার ঢেউ।

আপন’রা কেন হবে এত স্বার্থপর, কেন চাইবে কেবল নিতে
দিতে কেন উদাসীন, অবহেলা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতা
কেন দেবে আঘাত মনের ভিতে;
মানুষ কেন এত স্বার্থপরতা নিয়ে পথ হাঁটে আনন্দে
কেন পতন ঘটাতে চায় অন্যের আনন্দ সুখ চলার ছন্দে।

কবিবৃক্ষ -২

3

মাঝে মাঝে ভাবি চাকরিটা ছেড়ে দিবো,
ইদানিং এমন ভাবনা প্রায় আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়,
আনমনে হেসে বলি– কোম্পানীর চাকরি আমি ছেড়ে দিবো? না, ছেড়ে দেয়ার ভাবনায় সে-ই আমাকে ছেড়ে দিবে!

আচ্ছা বলতে পারো?
আর কতো, নিজেকে পুড়িয়ে অন্যকে খাঁটি করে দিবো?
আমরাও একটা মন আছে, আছে প্রাণ; আর সেই প্রাণের সাথে জড়িয়ে আছে একটি সংসার নামক পৃথিবী…
আর পেরে উঠছি না, দেয়ালে পিঠ ঠেকে ব্যথার অনুভব হলে এক সময় বলতাম
এ তেমন কিছুই না, মনে হয় গ্যাস্টিকের একটু চাপ বেড়েছে, কিন্তু আজ?
সেই অবহেলা আর নিরবতাই জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমি জানি…
কবি’রা বরাবরই স্বাধীন, স্পষ্টভাষী, নায্য অধিকার আদায়ে দৃঢ়তা সম্পন্ন
কবি’রা কখনোই গোলামী করতে পারে না, পারে না তেলবাজি কিংবা তোষামোদি করতে
কবি’রা বৃক্ষ, কবিবৃক্ষ তলে সবাই স্বাধীন, গণতন্ত্রীয়।
এসো কবি হই, সত্য ও সুন্দর পৃথিবী সাজাই।
…………………

মহাজনের গদি

318

ইহা এক মহাজনি দোকান
যেনো তেনো মহাজনি না
এখানে
আদর্শের তাকিয়া কে
পাপোশ বানাইয়া যতো খুশি পদদলিত করা হোক না কেন-
মহাজন সর্বদাই শির উঁচু করিয়া
খাড়াইয়া খাড়াইয়া মুত্র ত্যাগের অধিকার রাখেন!..
এবং কি অমৃত অমৃত জিকির তুলে
সেই মূত্র গিলে গিলে
যে কেউই হতে পারে হৃষ্টপুষ্ট!..
চোখের লাজ খুলে
বিবেকের বিচার ভুলে
চলছে
নেড়ী কুত্তার প্রকাশ্য সঙ্গম!
শত সহস্র নীতির মালা ছিন্ন করে
নির্বিচারে জন্ম নিচ্ছে বোধ শূণ্য প্রজন্ম…
যেভাবে
চোরে শুনেনা ধর্মের কাহিনী
যেভাবে
একে একে স্তব্ধ হচ্ছে পৃথিবীর সুষম ইতিহাস
স্তব্ধ হচ্ছে যাবতীয় নিয়ম-নখর
উত্তাপ বাড়ছে প্রখর রৌদ্রে
বুকে অনন্ত তিয়াস!…

আহা মহাজনি
যাহা
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে
দালালি ধর্ম মেনে মেখে চকচকে তৈলাক্ত তোষামোদ তৈরির নির্ভর যোগ্য কারখানা!
“পয়সা ফেকো
তামাশা দেখো’
নীতি তে লাভ লোকসান হিসাব করা হয়।
ইহা আমুদে প্রমুদে
লালু সালু
গোল আলু প্রকৃতির সকল তরকারির উপযোগ্য!
ইহা ব্যবহার কারীরা
দিনে দিনে
সারাদেশে যত্রতত্র
বুর্জোয়া বীজ অবিরাম যাচ্ছে বুনে…
যাতে
ক্ষণে ক্ষণে পয়দা হয় নিত্যনতুন ভোক্তা দাশ
তক্তার গায়ে তক্তা ঠেকিয়ে
যেমন করে বোনা হয় বৃক্ষের সর্বনাশ!..
জ্বী হুজুর
জ্বী হুজুর প্রীতির মদন মন্থনে
এইখানে গড়া হয় মাটির পুতুল
কড়ির জোরে
খুটি গেড়ে
উড়ানো ঘুড়ির লাটাই নিশ্চিন্তে বেধে রাখতে পারে
ঘুড়ি নড়িবে না এক চুল!..

অতিসন্নিকটে তুুুমি

সাঁকো পার হবার শব্দ শুনি।

কারা যেন উজান ধরে ফিরে যাচ্ছে
আরও দূরপথ সুমুদ্দুর-ঘর;

অতিসন্নিকটে রইয়াছ তুমি
বনপিপাসার জ্যোৎস্নাসম্প্রদায়,
হলুদ পাতার পায়তারা শেষে
হরিণীবনের কোলেকাঁখে
দাগ কাটা ট্রেন পথের গোলপাতা দেশ,
শস্য হতে ফিরে আসে
হাওয়ার আস্তরে স্মৃতির পাখি;
বসন্তের কথা শেষে নড়ে ওঠা রোদ
বনের হাওয়ায় সেসব ভাবা যাক-
মাইল মাইল আমরা আমরাই তো!

মন বাগানে ফুল ফুটেছে

32

মন বাগানে ফুটেছে ফুল, উড়ছে প্রজাপতি রঙিন ডানায়
সুখ হাওয়ার তোড়ে যদি যাই হারিয়ে অজানায়,
খুঁজবে আমায় খুঁজবে, নাকি যাবে ভুলে,
স্মৃতিগুলো রাখবে বন্ধু বুক দেরাজে তুলে?

তুমি বিষাদ দাও তাই বলে মন হবে না প্রজাপতি
মন জমিন মুগ্ধতায় উর্বর করলে কী বা এমন ক্ষতি,
বাঁকা চোখে তাকিয়ো না বন্ধু, তাকিয়ো না বাঁকা চোখে
যদি না বাসো ভালো তবে রয়ো না সম্মুখে।

আমি প্রজাপতি, আমি ফুল বাগান
আমি ঠোঁটে তুলি সুখে বেঁচে থাকার গান
থাকো নিরামিষ হয়ে, তিতে বুলি থাকুক ঠোঁটে,
আমার চুপচাপ থাকতে ভালো লাগে না মোটে।

মনের ভিতে রুয়ে রাখি মুগ্ধতার চারা
সেখানে পাপড়ির ডানা মেলে সুখ ফুল ফুটে আমি উচ্ছাসে আত্মহারা
তুমি একঘেঁয়েমী লেজ ধরে বেঁছে আছো হরপল,
আমি মুগ্ধতা সুখ আর উচ্ছলতা ছিনিয়ে আনতে হয়েছি সফল।

আকাশেই থাকো, জমিতে আর হবে না নামতে
হবে না আর হাসি খুশির উত্তাপে ঘামতে,
আমি প্রজাপতির ডানায় উড়ি একা আকাশে
তুমি হয়ো না পরিণত বেদম দীর্ঘশ্বাসে।

যা যায় গেল, ফিরে তাকাবো না আর
এবেলা প্রজাপতির ডানায় হয়েছি সওয়ার
গিয়ে থামবো শৈশবে যেখানে আমার কৈশোর বেলা
সুখি থাকি ধুর ছাই বলে উড়িয়ে দিয়ে তোমার যত অবহেলা।

অদ্ভুত কবি

আমি কবি, আমি সেই কবি
যে কবিতার ছন্দ,তাল,লয় অলঙ্কার কিছুই জানি না।
তবুও কবিতা লেখার দুঃসাহস দেখাই
মনের মাধুর্য মিশিয়ে লিখি
মনের গোছালো অভিলাষ অবিরত।
জানি না, সেগুলো কি কবিতা ?
মনে হয় কবিতা নয়, অন্য কিছু।
তবুও লিখি,ছন্দ বিহীন পঙক্তি।
আমি কবি, আমি সেই কবি
আমি সেই অদ্ভুত কবি।
আমি দুঃখকে হিংস্র ভাবি
যার ক্ষোভানলে জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
আর সুখকে ভাবি পরশ পাথর,
যার পরশ পেয়ে জীবন উচ্ছ্বসিত হয়,
নতুন কিছু আবিস্কার করে।
যা বিহীন মানব জীবন অর্থহীন।
আমি কবি, আমি সেই কবি
যে সত্যের খোঁজ সদা বিহ্বল
মিথ্যার রোষানলে গোলকধাঁধাই
যার আঁখি সদা করে ছলছল।

রচনাকালঃ
০৪/১১/২০২২

ভাসমান

ttyu

একটা আকাশ শূন্যতে ভাসতে চায়!
গল্পের রূপ লাবণ্য কি জানতে চায় না,
মাটির মায়া কি বুঝতে চায় না- আকাশ
চায় যত তারার সাথে মিতালী সাদা মেঘে
ময়ূরপঙ্খি হতে, জানি কত গল্প গাঁথা শুধু
কষ্টের প্রজাপতি উড়া- তবু মাটির কবিতা
বৃষ্টি বাদল শ্রাবণ দিনে কাদা জল একাকার
কি অদ্ভুত গল্পটা সীমানাহীন রোদ্দুর;
যতো সব সোনালি আইল পাথার যেখানে নাকি
গল্পের ইতি টানা সবুজ রঙে সাজানো মাটি
আর আকাশের গলা পর্যন্ত আনন্দ উল্লাস
হাসতে হাসতে ময়ূরপঙ্খি সাজে ভাসমান।

২৬ পৌষ ১৪২৯, ১০ জানুয়ারি’২৩

দূরে দূরে কাছাকাছি

খুব কাছে গেলে যে মুখটা অচেনা হয়ে যায়
সবাই তাকে গোল্লাছুট ভাবুক
সে তো কেনা হয়ে আছে কবেই
সে যখন ভাবে ভ্রমন
তুমি ভেবে নিও রেডিও
যা ইথার ছাড়িয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে অনেকদূর।

সে যখন দেখতে আকাশের মতো
সে যখন ভেজা গাছ, বৃষ্টিময় রোদ
তোমার দৃষ্টি পথে সে যখন পোড় খাওয়া জন
তার জন্যে মায়া রেখো না কোনো
সে তখন শহরের পথে ইউটার্ন
সে তখন ভ্রমনশূন্য মহাকাশ।