বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

মেয়েটির কেউ রাখে না খোঁজ

Exif_JPEG_420

যে মেয়েটি রোজ রোজ জানালার গ্রীল ধরে
দাঁড়িয়ে থাকত দু চোখ মেলে
দূর মেঘের মিনারে,
প্রিয় কারুর আশায়।

যে মেয়েটি রোজ রোজ সন্ধ্যা নামার আগেই
গুছিয়ে নিতো এলো কেশি আস্তাবল,
গোধূলীর চিলেকোঠায়।
পূজার ডালা হাতে যে মেয়েটি রোজ জ্বালত
সন্ধ্যা প্রদীপ নীরব তুলসীবনে,
করত বসে আরতি।

যে মেয়েটির দূরন্ত উচ্ছ্বাস বইচির বাগান ঘেরা,
কলাবতী নলক নাকে,
ছোট্ট গাঁ’টি করত সারা।
যে মেয়েটি রোজ রোজ রাখত সবার খবর,
সবই মনে রাখত সে,
কখন কি লাগবে দরকার।

যে মেয়েটির রোজ রোজ বাড়ন্ত সময়,
ধুলোমাখা পথে,
বইয়ের ভাঁজে রাখত ফুটন্ত গোলাপ।
সে মেয়েটি ছিল সবার মধ্যমণি,
আদরের তুলতুলি,
খুশির রাঙা প্রভাত।
সে মেয়েটির এখন রোজ রোজ ছন্নছাড়া ভাব,
আওলা ঝাওলা কথায়,
বে ভুলি কাজের হিসেব রাখা।

সে মেয়েটি আজ কোথায় আছে,কেমন আছে,
হায় নিয়তি,সেই মেয়েটির
কেউ রাখে না আর খোঁজ!
মেয়েটি এখন ঘর পালিয়ে ঘুরে বেড়ায় পথে,
দূরন্ত মেয়েটির নির্জীব প্রাণ,
অবহেলায় কাটে দিন।

সর্পশাপ

গাছগুলো ভিজে শেষ।
এমনদিনে সেও যেন একলা থাকে কোনোদিন
এই আকাশের সারিমেঘ
শীত শীত ব্যাকুল বাতাস আর
ভেজা মন নিয়ে
সেও যেন কাঁদে আরো কয়েকবার

যে হারায় সে হারায়
যে জানে সত্যিকারের ভাসান দিতে
সে ডাকেনা কাউকে আর
ফিরে ফিরে আসে হাহাকার
বুক ভরা অভিমান
দিকছাড়া ক্ষ্যাপাটে শোক

যাকে শোক দিয়েছে সে তারই মতন
সেও অবিশ্বাসী এক, সাজাপ্রাপ্ত
কষ্ট সাঁতরে সে যেন অবিরাম
ব্যথায় পরিশ্রান্ত, বারবার দিয়ে যায় ডাক
এই মেঘলা দিন, মৃদু বৃষ্টি আর ইষৎ জ্বালা
হে মহাযোগ, তাকেও দিও কষ্ট এমন!

দুনিয়ার মোহতেই আটকে আছে মন

দুনিয়ার মোহ জয়ে বাহবা দিচ্ছি, সুর তুলছি নিত্য
দুনিয়ার রঙ তামাশায় রাখছি সুখি চিত্ত;
কেউ জানি না কত না পাপ তুলছি আমলনামায়,
গেয়ে যাচ্ছি সুখেরই গান, ঠোঁট রেখেছি সারেগামায়।

উল্টে রাখছি পাল্টে দিচ্ছি ধর্মীয় বিধি বিধান,
জীবন জুড়ে আসছে নেমে পাপের নিদান;
কোথায় কী আর বলি, নিজের মতামত নিয়েই চলি,
মত বিরুদ্ধ হলেই আগুন হয়ে জ্বলি।

কেউ হিজাব নিয়ে করছে হাউকাউ, কেউ বোরখা
জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলে শয়তানগুলো দিচ্ছে ধোকা,
কেউ বুঝেও না বুঝার ভান ধরে থেকে গেলাম চুপ,
কেউ জানে না অসুর গুলার ভয়ঙ্কর রূপ।

কত যুক্তি তর্ক কত জ্ঞানের ভান্ডার ওদের বুকে
কেবল ইসলামের জ্ঞান নেই, আল্লাহ দেন না হেদায়েতের মন্ত্র ফুঁকে
সমাজে ছড়াচ্ছে বিষ হরদম,
ইসলামকে অপমান করতেই যেন ওরা ফলে প্রতিটি কদম।

ভুল শুদ্ধ যাচাই না করেই আমরা লাফিয়ে বেড়াই সমাজে,
কেউ কেউ ইসলামের পক্ষে সাফাই গেয়েও দাঁড়ায় না জায়নামাজে;
মুখে ভালো কথা অন্তর কারো মন্দ,
এরাই সমাজে বাঁধিয়ে দেয় দ্বন্দ্ব।

কেউ কেউ মোহ উপেক্ষা করতে পারে, কেউ পারে না
মুসলিম হয়েও ইসলামের বিধি বিধানকে হেয় করতেও ছাড়ে না;
অনুতাপে হয় না কাতর
এদের দিল আল্লাহ করে দিয়েছেন পাথর।

শর্তাবলী

তোমাকে বেশি স্বীকৃতি দিতে গিয়ে
চেনা প্ল্যাটফর্মের ট্রেন তাঁর
গ্রীবা হরিণের সবুজ দরজা নিয়ে দৌড়ায়-
একদল শিশুদের মতো হৈ-চৈ যেন
লাগামহীন নেমে আসে দৃশ্য থেকে
পুরনো অভিসার-ওড়াউড়ি দূর মফস্বল
আর সব চেয়ে প্রয়োজন যা ছিল
সিঁড়ির শুরুটা যেভাবে মুহূর্ত ছেঁড়ে যায়

তবু আনন্দ, উপশম পুঁতে চুক্তি সেরে নিই
পাব।দেরি, ওসব সায়াহ্নক্ষণে টাকার মতো
বুকেপিঠে লেপটে থাকার নাম কেবল
নিয়ম ভেঙে চাওয়া, আহবান-জানি
এমন পয়ত্রিশটি দাঁড়ি কমা শিস ছড়ায়
থেমে থেমে মুসলমানের মেয়ে, শর্তাবলী!

কুহেলিকার পাঁজরে

32

বুক ডুবাতে ইচ্ছে করছে নোনা জলে
বিষম অসুখ ভরা বুক
কতকাল আর রাখবো আগলে
ভগ্নহৃদয়…ক্লেদাক্ত মুখ!

দূর… বহুদূরে
উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে প্রিয় নীলাচলে
প্রগাঢ় কুহেলিকার পাঁজরে
গুণগুণ করা বাতাসের মুখোমুখি দাড়িয়ে
ইচ্ছে করছে এলোমেলো হই
তোমার ঘনকালো সুগন্ধি চুলে!..

ইচ্ছে করছে
ডুবে যাই জোছনা মাখা সাগরে
চোখের পাতায় স্বপ্ন এঁকে
ঘুমিয়ে যাই মুক্তো থাকা ঝিনুকের বুকে!…

পরজীবী পথের প্রান্তে

যে মেঘ মেরুদণ্ডহীন উড়ে যায়, তার
কোনো গন্তব্য থাকে না। কিংবা যেজন
রাত না চিনেই খোঁজে অন্ধকারের প্রকার-
তাকে নিয়েও ভাবে না কেউ!

কিছু ছায়া মিশে যায় পরজীবী পথের প্রান্তে;
আর কিছু মানুষ রক্তরেখার ভোর
দেখেই করে উল্লাস! কেউ কেউ-
চূড়ায় আরোহন করবে বলে,
ক্রমশ ভাঙতে থাকে মোহের সিঁড়ি।

কিছু কিছু সিঁড়ি নির্মিত হয় মূলত
ছায়াগ্রহণের রাতকে স্বাগত জানাবার জন্যে।
কালের কবন্ধে এই যে চাঁদের কিরণ
তুমি দেখছো, তা গতপক্ষে বিগলিত
জোসনার অশ্রু-
যে অশ্রু দিয়ে মানুষ সাজায় নতুন
বছরে,
তার প্রেমকাননের নবম অক্ষর।

# # #
* ২০২২ সালে লেখা শেষ কবিতা

৩১ ডিসেম্বর ২০২২, নিউইয়র্ক ♪

নববর্ষ ২০২৩ তুমি

2023a

স্বাগতম হে নববর্ষ
বিদায় নিল বাইশ সাল,
নতুন বছর এলে তুমি
বদলে দিও সবার হাল।

হৃদিবনে লাগল দোলা
খুশি অতি সবাই আজ,
চারিদিকে বাদ্য বাজে
নর-নারীর রঙিন সাজ।

গত সালের যন্ত্রণা সব
ভুলে গেছে, নেই মনে,
বহু স্থানে প্রভাত ফেরি
কত উচ্ছ্বাস লোকজনে।

আলোর উদয় কর তুমি
হিংসা ভুলে প্রেম গানে.
ছোট-বড় রহে মিলমিশ
দিয়ো শান্তি সব প্রাণে।

গরিব-দুখী যতো মানুষ
না খেয়ে রয় কভু আর,
শান্তি বহে সকল দেশে
স্বর্গ-সুখের খোলে দ্বার।

স্বরবৃত্তঃ ৪+৪/৪+৩

অনামা বৃত্তায়ণ

ima

_______অনামা বৃত্তায়ণ

পৌষের মেঘ কুয়াশায় ঢাকে
অভিমানে তন্দ্রায়
ধ্রুব তারা জ্বলে জ্বলবে
এমনি সঙ্গোপনে রাত্রি যায়; অমানিশায়

রাত্রি যাপনে নগ্ন কাল
সহ বাসে ধরাশায়ী, কতক বিদ্রূপ?
কতক হাস্য রসে হারা?
তবুও পোড়া বিরহ স্বপ্নঘোরে
পোড়ায় নিত্য অমিয় আশায়।

বিরহে পুড়ে পুড়ে
কবিতার মুখ খুলে; খোলা হাওয়া গিলে
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে
বলে উঠে কবিতা, তুমি নেই
ধ্রুব তারার যে আশ্বাস ছিল
অনামা বৃত্তায়ণ।
_____
আজ ১৪ পৌষ ১৪২৯

গণ্ডগোল

imagesগন্ডগোল

চোখে মুখে যে আগুন
বর্ণ চূড়া মন অসভ্য;
তবু বাপু, সাধু তুলসী
পাতার গদ্য! পদ্যের
গায়ে শুধু ফুল চন্দ্রন-
হাত লাগে না- পুড়ে
পুড়ে দৃষ্টিভারি চঞ্চল
হায় খোদা সবাই দেখি
গলা পর্যন্ত গণ্ডগোল-
মাটির ভাজে অনশন।

১৪ পৌষ ১৪২৯, ২৯ ডিসেম্বর’২২ 

মাঘী পূর্ণিমার অপেক্ষায় আছি

322

মাঘী পূর্ণিমার অপেক্ষায় আছি
হাড় কাঁপা হিমে
জ্যোৎস্না গলা কুয়াশার আড়ালে
তোমায় নিয়ে যাবো ওমের সন্ধানে।

হে নিসিন্দা নারী
আঁধারের বাঁধ ভেঙ্গে আলোর উষ্ণ অঙ্গে
এবার আমাকে ঠাঁই দাও রঙের তুলি সমেত,
বুকের সুডোলে আগলের ঝাঁপ তুলে দাও
বৃন্তের নীলে অংকিত হোক শতাব্দীর জলছবি।

মাঘী পূর্ণিমার ঐশ্বরিক রূপে সমৃদ্ধ নদী
শীতল জলে স্নান করে যদি জব্দ হয়ে পড়ি
যদি স্তব্ধ হয় শরীরে প্রভাবিত রক্ত, নাড়ী
কিংবা দুর্মর কম্পনে রুদ্ধ হয় বাক শক্তি
তুমি অবাক হয়ে দেখো
তোমার একটি চুম্বনে আমি হবো মর্মরিত
মহিমান্বিত আলিঙ্গনে জাগাবো বিশুদ্ধ উষ্ণতা
প্রাণের স্পন্দনে প্রলুব্ধ যৌনতায় বিকশিত হবে নব জীবন!

তুমি এসো তখন, মাঘের শীতে
হিম শঙ্কিত পায়রা যখন বাক হারা সঙ্গিন অভাবে
যখন পৃথিবী ডুবে থাকবে হিমাঙ্কের তলে
যখন তুষারপাত লজ্জা পাবে শিতের কবলে।

স্মৃতির দুয়ার

rece

স্মৃতির দুয়ার খুলে দেখি
অনেক প্রাপ্তি তায়,
এই জীবনের শ্রেষ্ঠ আমি
গত বছর টায়।

শিক্ষক হয়ে গর্ব করি
জেলার শ্রেষ্ঠ হয়ে,
কাজের নেশা বাড়িয়ে দেয়
এমন মধুর জয়ে ।

ডিসি স্যার সাহিত্য পদক
দিলেন তুলে হাতে,
ক্ষুদ্র জীবন ভরলো সুখে
সম্মাননা সাথে।

কবি হয়ে পেলাম হাতে
রয়ালিটির টাকা,
এভাবেই চলুক জীবন
সুখে দুখে থাকা।

অরুন উৎসব

Wi

কত কথা চলে গেছে কার অতলে
বদলে গেছে সেইদিন, এইদিন
আমাদের দিন আর রাত।

জ্বরের কিনারে শর্তহীন তার প্রলাপ
এগিয়ে দিয়েছে বুকভরা ঘুম লিস্ট
নজরের উল্কিকাটা চোখ আর
মজার সব নক্সায়
খুলে গেছে বুঝি কল্যাণের স্বরলিপি।

যে চেয়েছিল গোপনে বাঁচতে
মৃত্যু তাকে পুড়িয়ে গেছে শতবার
মিথ্যে তার গ্রীবা সহসা ডুবে যেতেই
কি অসাধারণ শষ্যভারে জেগে উঠছে জ্যোতি
শুরুটা আসলে এখান থেকেই হয়।

একজন আজ কানামাছি, ছুঁয়ে যাচ্ছে আন্দাজে
বনবিথী তার তাতানো সিগনেচার;
শুক আর সারির জড়োয়া গহীন।

জল তার কবেকার বলে গেছে কথা
মেঘ তার সবেধন এঁকে দিল ছবি।

সময়ের যত লেনদেন

মেঘদল জমে থাকা আকাশ
শুভ্র কুয়াশা ভেজা শিশির।
সবুজ ঘাসের এক চিলতে
অভিমানি বুক চাঁদের নিয়ন আলো খোঁজে।

জোনাকীরা ছুটে চলে অজানা
গন্তব্যে রঙ, রঙিনের ঘোর কেটে
উৎসবে ডুবে শহর।
সাইবেরিয়া থেকে আগত
একদল পরিযায়ী উড়ে যায়
মুখোরিত শব্দের উল্লাসে।

সময়ের যত লেনদেন, যত
হিসেব-নিকেশ
দ্রুত বদলে যায় সুর্যাস্তের মতো
অন্ধকারে।

পূর্বরাগ

3179

চাঁদের আলোয় লিখছে নতুন স্বপ্ন
ইউলিসিসের মতো তীব্র অথচ,
নার্সিসাসের মতো প্রেমাচ্ছন্ন
ট্যারেন্টুলার বিষাক্ত লালায় প্রেমের
রন্ধ্রে রন্ধ্রে গজিয়ে উঠেছিল পার্থেনিয়াম।

এসো, মনের সমস্ত আভরণ খুলে
কৃষকের ধানবোনা ছন্দের মতো
নির্জন সমুদ্রের গর্জনের মতো,
পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা
একলা পাখির মতো এসো।

হরপ্পার প্রাচীনতম শব্দ থেকে
আবিষ্কার করো তোমার শিলালিপি।

অবয়ব

শান্ত ঠোঁটে নেমে আসছে নিস্তব্ধতা
একটা নিষিদ্ধ আবেদন কর্ষণ শেষে
ধীরে খুলছে মনের আগল
এমন প্রকাশ্য বেদনাহীন মৃত্যু কে না চায়?

টুকে রাখ ছুটি দিনের ঠিকানা
আমরা ভ্রমনে যাচ্ছি
ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক ঠেলে দূরে
মুখোমুখি বসে চাঁদ পুকুরের পাড়ে
লিপিবদ্ধ করি একে অন্যের মুখ।