বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

সুড়ঙ্গে মাথা

মরলে একটু নাড়াচাড়া পড়ে
রিখটার স্কেল চার সাড়ে-চারে
চেপে যা এখন, লুকো শেলটারে

আমরা মিছিল-ঘেরাওয়ের জোট
নবযুগ আনা সেরা হুজ্জোত
চুমু ছিল যারা, গুটিয়েছে ঠোঁট

নেট প্র‍্যাকটিসে দেখে নিতে হয় —
জুনিয়ার ব্যাট। এক হিটে ছয়?
বিপ্লবী নল দৃঢ় নিশ্চয়!

এসব বোঝে না মধ্যবিত্ত
নিচু শির, ভয়পূর্ণ চিত্ত
বেঁচে থেকে ছেলে কীই বা ছিঁড়ত!

তাকিয়া সাজিয়ে উঁচু নম্বর,
হেলান দিয়েছি পয়গম্বর;
সুড়ঙ্গে মাথা, মুক্ত গতর

প্রশাসন আর রাজনৈতিক
টেবিলে বসেছে আধিভৌতিক
স্টেপ নেবে ঠিক স্টেপ নেবে ঠিক…

ডিজিটাল বাংলাদেশ

out.

নাম তার নিতাই চন্দ্র, ডাকে সবাই বাবু,
নেই কোনও জমিদারি, বাবু ডাকে তবু।
লেখাপড়া নেই তেমন, শুধু অল্পকিছু জানা,
ইচ্ছে ছিল লেখাপড়ার, সমস্যা ছিল আনা।

যা হয়েছে নিজের চেষ্টায়, তা দিয়েই চলে,
ঘরে খাবার না থাকলেও সত্য কথাই বলে।
কাজে ছিল পাকা, হিসাবে ছিল ঠিক,
বে-হিসাবে চলতে গিয়ে, সব হলো বেঠিক।

জায়গাজমি নেই কিছুই, পরের বাড়ি বাসা,
স্বপ্ন বলতে জীবনটুকু, বেঁচে থাকার আশা।
এখন বয়সে সে কাবু, মাথায় পেকেছে চুল,
স্মরণশক্তি কমেছে খুব, হিসাবে করে ভুল।

শরীরের চামড়া হচ্ছে ঢিলে, গুটিকয়েক দাঁত,
চোখের দৃষ্টি নেই তেমন, ঝাপসা দেখে দিনরাত।
একসময় দৌড়াত খুব, ক্যামি ঘড়ির পেছনে,
সারাক্ষণ বসে থাকতো, টিভির পর্দার সামনে।

সেইদিন নেই বাবুর, এখন ডিজিটাল দেশ-বিদেশ,
হাতে হাতে মোবাইল ফোন, আগের দিন শেষ।
ছোট একটা যন্ত্র মোবাইল, ভেতরে সব তার,
দুনিয়াটা হাতের মুঠোয়, চিন্তা কীসে আর।

লেখাপড়া লাগে না লিখতে, মুখে বললেই হয়,
কী লিখবে আমায় বলো, গুগল মামায় কয়।
তাইতো সবাই লিখে যাচ্ছে, হচ্ছে সবাই কবি,
স্টুডিওতে যায় না কেউ, নিজেই তোলে ছবি।

কমেছে ক্যামেরার মান, ধূলিসাৎ স্টুডিওর ব্যাবসা,
ফটোগ্রাফার সবাই এখন, মোবাইল ছাড়া সমস্যা।
দুঃখ করে বাবু বলে, মোদের দিন তো শেষ,
তথ্যপ্রযুক্তির এই দুনিয়ায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ।।

.
নিতাই বাবু:
১১/০৮/২০২৩ইং।

ফেউ

আকাশে ছড়িয়ে যাক একথালা ভাত
বুভুক্ষু মানুষগুলো চোখ মেলে থাক
বিত্তশালীরা কতোবড় দানশীল!
বুঝুক এইবার বস্তির যতীন।

মানুষ খেতে না পাক পড়ে থাক রাস্তায়
তারা কথা বলে বড় বড় হপ্তায় হপ্তায়
বানের জলে ভেসে যাক বানভাসী মানুষ
আমরাতো শহরে উড়াই রঙিন ফানুস।

কথায় নয় শুধু চাটুকারে ভরা
লাশবাহী গাড়িটা যাচ্ছে একা
আমরা যেমন থাকি ভাবছে না কেউ
নিরন্ন যারা তারা নয় এদেশের ফেউ।

১০০৮২০১৬

ধানশালিক যারা

স্বদেশ তুমি হাসো,এই বুনোহাঁসের বাংলায়
দ্বিধাহীন সেই রোদের মতো—বৃষ্টির প্রণয়ে
বাতাসও ডাকে সন্ধ্যা পাখির ছিন্ন ডানায়
এই পৃথিবীর ধানফুল দক্ষিণের খালপাড়ে

ভাঁটফুল ঝোপঝাড় পাতার কৌটা—মুমু রাত
এই যে গ্রাম মাটির দেওয়াল শহর বহুদলে
হেঁটে আসে নদী বাদামি বিকেল নতুন চাঁদ
ঘুড়ি আর ফড়িং নৃত্য করে কয়লার ফুলে

অধিক হেমন্ত সে নবান্ন গান চুলখোলা নারী
উষ্ণ বরফের ঠোঁট বুনে দেয় কুয়াশার চিল
নিজেল রাত্রি জলছাপ মানুষের কামার্ত পরী
উঠানের গীত ঘামের শিস মাটির সমুদ্র নীল—

আমাদের খুনসুটি এই আরও বকুল দোতারা
পৃথিবীর মলাট খুলে হাঁটে—ধানশালিক যারা!

রাতের পৃথিবী

fogg

কোন কোন ঘুম ভাঙ্গা রাতে দেখি
পৃথিবীটা নিঃসম্বল ভিখিরির মতো
ফুটপাথে কানা উঁচু থালা পেতে বসে আছে।
তন্দ্রাবেশে কুয়াশাভেজা নিস্তেজ রাত।

বাতাসের গায়ে গন্তব্যের প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে
একটি নিশাচর পাখি উড়ে গেলে; তুমুল
পাখসাটে হু হু করে বাজে অস্ফুট ব্যথাচ্ছন্ন এক সুর।
কখনোবা মানুষও তো পরিযায়ী পাখি!

শোনা না শোনার দোলাচলে হিস হিসে ধ্বনি বাজে ;
ঝলসে ওঠে রাতের চাবুক।

একটা প্রকাণ্ড কালো মাকড়শার মতো
কিলবিলে দশপায়ে হেঁটে যাচ্ছে জমকালো রাত।

যেতে যেতে কোথাও কী কিছু ফেলে গেলো কেউ
একটি পতত্র? এক ফোঁটা বিষ?

নিস্পৃহ সময়ের গান

নিস্পৃহ সময়ের কথা খুউব মনে পড়ে
তখন অকবিতারাও বেসুরো গান হয়
নদী আর নারী একই সুরে কথা কয়!

আজকাল দীঘির কালচে জলে নক্ষত্র জ্বলে
জোনাকিরা বেজায় ভয় পায়
ওদের কে বুঝাবে…?
যখন সাপ আর ব্যাঙ একসাথে ঘুমায়
তখন মহাবিশ্বের কারো কোনো ভয় নাই.!!

তবে ক্ষয় আছে মহাসমুদ্র কিংবা পাহাড়
জীবন যুদ্ধে টিকে থাকাই অতি বড় বিজয়
বিপদের দিনে অতিকায় হাতিও মশার আহার!!

মন কেন হয় মেঘলা আকাশ

cho

যেদিকে তাকাই যেন অথৈ সমুদ্র
কূল নাই, নাই কিনার, সাঁতরেও হতে পারবো না পার
কোথায় ভুল, কোথায় শুদ্ধতা
আকাশে তাকিয়ে উদাস, পাই না কথার উত্তর।

মানুষের মন কেন কালো মেঘ আকাশ,
কেন হয় না কাশফুল
মানুষের মন হয় না সাদা মেঘ
মানুষের মন কেন পাথরের পাহাড়।

ভাবতে গিয়ে ডুবে যাই চিন্তার ডহরে
পারি না স্বাচ্ছন্দ্যে উঠতে আর
ক্রমশ মনের আকাশ হয়ে যায় গ্রীষ্ম,
আমি তো চাই মন থাকুক হেমন্ত।

চাই মন হউক শরতের মত, সুখে উদাস
অথচ সব আশা আমার গুঁড়েবালি
চোরাবালি সময়, হারিয়ে যাই মুহুর্মুহু কষ্টের অতলে,
হারিয়ে গেলেও খুঁজে না কেউ আর।

তুচ্ছ আমি, আমি অবহেলার চূড়ান্ত সীমানা
সে সীমানায় উচ্ছলতা নেই
নেই দু’দন্ড শান্তির হাওয়া
আমি অপ্রয়োজনীয়, কেন তবে হবে আমার
দুনিয়ার বুকে বসবাস!

ইশ পাখি হয়ে যেতাম যদি
অথবা আকাশে মেঘ
এখানে কেউ ছুঁয় না আমার মনের আবেগ
স্বার্থপরদের সাথে বসবাস, আর কিছু দীর্ঘশ্বাস
নিয়েই যেন দেব পাড়ি অনন্ত পথ।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, গ্রীণ মডেল টাউন ঢাকা)

বিশ্বস্ত বন্ধুদের প্রতি

এখন রপ্ত করতে চাই কীভাবে পালাতে হয়, কীভাবে দীর্ঘ করা যায়
বিভিন্ন ছুটিদিবস- কীভাবে অন্য কোনো গ্রহে পৌঁছে নেয়া যায়
মুক্ত নিশ্বাস। জানি সেদিন হয়তো থাকবে না আর এই শ্বাসকষ্ট,
এই পোড়ামাটিচিহ্ন লেগে থাকবে না আমার হাতে, অথবা যে ছবিগুলো
একদিন ছিঁড়ে ফেলেছিলাম, সেগুলোও জোড়া লাগাবার প্রয়োজন
পড়বে না আর।

এবার শিখে নিতে চাই নাম-নিশানা মুছে ফেলার কৌশল, কেউ
জানবে না এই নগরের ভোটার তালিকায় আমারও নাম ছিল,
একদিন কলমও ছিল আমার বিশ্বস্ত বন্ধু আর কাগজে
যে কাটাকুটিগুলো আমার পাঁজর ছিল- মূলত এরাই ছিল আমার কবিতা।

আমি পালিয়ে যেতে চাই,
মানুষ আমাকে পরাজিত পথিক বলুক
তারপরও,
যেতে চাই এই নগর থেকে অন্য কোথাও
যেখানে কেউ আমাকে আর চিনবে না
কেউ জানবে না পূর্বজনমে আমি আদৌ মানুষ ছিলাম কী না !

আবেগের আলিঙ্গন

sh

ছিঁড়েছে হৃদয়, হতাশায় জগৎ,
তবুও আশা বেঁচে থাকে, তাজা বাতাসের মতো,
পরীক্ষা এবং ক্লেশের মধ্য দিয়ে, আমরা সাহস করি,
প্রেমের যাত্রায় দুঃখ, বেদনাকে আলিঙ্গন,

এই বেদনাত্মক আত্মার ক্রন্দন,
ইথারের শূন্যতায় ভেসে যায় সুগন্ধি গোলাপ
সঙ্গীন জীবন, সংকীর্ণ পথ আর পথিক।

এভাবেই চলছে, শেষ পর্যন্ত,
একটি সময়ের পথে সম্পূর্ণ সুখ
দুঃখ স্মৃতির আবেশ যেনো এখানেই একাকার,
চারপাশের কানাঘষা খোলামেলা চিৎকার
মুখোমুখি মিষ্টি হাসি,

আমি বলে রাখি তোমার অপেক্ষা,
এই দিন শেষ হবে দুই আত্মা, এক হিসাবে,
নিয়তির মিষ্টি কীর্তি, প্রেমের সিম্ফনিতে
নাটক সাজিয়ে মন সুস্থ হবে,

ওহ এত ঝরঝরে,
এত স্মৃতি এত বেদনার পর
আবেগের এই ট্যাপেস্ট্রিতে,
ভালোবাসার হৃদস্পন্দন।

খুঁজতে

খুজতে

আমি তারার দেশে
যাচ্ছি- খুঁজতে-
কি হারালাম- কি হারালাম
জানলো জোছনা রাত!
ঝিঁঝিঁপোকার গায়েন;
আমি তারার দেশে-
যাচ্ছি- খুঁজতে।
খুঁজতে খুঁজতে পেলাম
মা হারনার যন্ত্রনা
চাঁদের বুকে অসীম সীমানা
জনম তরীর আলপনা
মায়ের মুখ মলিন করা
দেখছি সবই অনমরা
কি পেয়ে হারিয়ে গেলো
এই নিঠুর দুনিয়া;
যন্ত্রনাটা হাজার বছরে
পুষলাম শুধু তারার দেশে-
খুঁজতে- খুঁজতে!

.
২৫ শ্রাবণ ১৪২৯, ০৯ আগস্ট ২৩

নিভৃতচারী

IMG_20230808_093856

জানি না কে সে
চুপিচুপি আসে পাশে
টের পাই ফুসফুসে
সুবাস ছড়ায় বাতাসে।

বলে না কোন কথা
পুষে রাখে মৌনতা
তবু এই নীরবতা
মনে হয় গভীরতা।

জানি নিভৃতচারী
করে তবু মনচুরি
জানি না নিশাচরী
কেন এই লুকোচুরি?

তৃষ্ণা মিটবে কিসে
একবার যদি হাসে
ঝরনার জলে ভেসে
নদী হবে অনায়াসে।

জানি না কে সে
এভাবে কেন আসে
মনখারাপের দেশে
পালিয়ে যায় শেষে।

প্রবাসেও খুঁজি শ্যামলিমা তোমায়

অন্ধকার ঘোর ঘোর অমানিশা
তবু জ্বালাচ্ছে আলো জোনাকি মেয়েরা
হিজল তমালের ডাল বেয়ে ঝরছে শিশিরের মুক্তো ফোটা
ধূসর প্রবাসেও আমি স্বপ্নে হারিয়ে যাই প্রিয়তমা শ্যামলিমা।

পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনি না বিচিত্র সুরের তানে
মাঝে মাঝে দেখি শালিক জোড়া কোনো এক মরুদ্যানে
অভিমানে তারা দেখিছে এদিক ওদিক ভিন্ন দিকে মুখ করে
হোক অভিমান তবুও করি স্মৃতি রোমন্থন, তোমাকে পেতে আপন করে।

জলাশয় কখন দেখেছি ভুলে গেছি, দেয় না সে হাজিরা স্মৃতির মাঝারে
সারি সারি শ্বেত বলাকা ওড়েনা আর সন্ধ্যার আকাশে ঘরে ফেরার তরে
চাতক চাতকী রচেনা মায়ার বন্ধন, রুক্ষ মরুর মাঝে উদাসী হতে-
দখিনা বাতাসে এখানেও ওঠে ঝড়, হিমশীতল নয়! প্রিয় মুখ জ্বালাতে।

ভ্রান্তির ছলনে আমি ভুলে মাঝ রাতে পথ চলি বেহুলার সন্ধানে
কোথাও পাই না খুঁজে তারে, যারে দেখেছি শ্যামল বাংলার মননে
জোনাকি মেয়েরা জ্বালায় না আলো এখানে, ছুটে চলে শুধু যন্ত্রদানবের দল
শ্যামলিমা তোমার মত এমন শ্যামল নাই আর পৃথিবীর বুকে, আছে শুধু ছল!

নিষ্ফলা লজিং মাস্টার

gtry

রাত বাড়ছে, বিদঘুটে অন্ধকার, আলোর চুকেছে পাঠ;
মাস্টার, ও মাস্টার—
তোমার উপরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট।
হা হা হা …
বাতাসে আসে বিদ্রুপের ধ্বনি,
অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে; চারদিকে শব্দের খিল খিলানি।

ভেসে উঠে এক নারীর ছায়া
পিছনে তাড়া করে বেড়ায় অতীত স্মৃতি,
কণ্ঠটি বড়ই চেনা
হাতছানি দেয় নিষ্ঠুর নিয়তি।
সেই যে, পড়ার টেবিলে—
ছাত্রীটি— বীজ গণিত, পাটি গণিতের ফাঁকে,
অংক কষে সংসার জীবনের, রঙিন স্বপ্ন আঁকে।
‘যেখানে শোভা পাবে— একটা ছোট ঘর, সন্তানাদি
বাড়ির আঙিনা জুড়ে শিউলি ফুল আর মেঝেতে শীতল পাটি,
যাতে আসন পেতে মধ্যমণি হবে সামনে বসে থাকা মানুষটি।

হাতে হাত, মননে, প্রণয়ে, সঙ্গমের স্বপ্ন করে যতন,
জ্যামিতির কাটায় দৈর্ঘ্য—প্রস্থে মাপে সংসারের আয়তন।

এটা বয়সের আবেদন, আবেগী মনের বাসনা
নয়ন যুগল হয় স্বপ্নভাসি,
বইয়ের পাতায় বড় বড় অক্ষরে ভাসে
মাষ্টার ‘তোমায় ভালবাসি’।

টেবিলে শব্দ হয় ঠকঠক করে, সম্বিত ফিরে পায়—
‘মনযোগ দাও হে’ বইয়ের পাতায়,
সে যে বুঝে না, যাকে ঘিরে এত সব আয়োজন
সে কি না ব্যস্ত নিয়ে অন্যকিছু; মেকি যা তা’য়।

এত পানসে কেন? রঙ রস কিছুই কি স্পর্শ করে না!
মনে মনে আওড়ায়— ‘বড়ই বেরসিক! কিছুই বুঝে না,’
যাও, যাও আজ ছুটি!
সমাধান করে দিব অন্য কোনদিন, শরীরটা আজ ভাল যাচ্ছে না।

ছাত্রীর মাঝেও যে কিছু চলছে; সেটি বুঝতে হয় না বাকি,
শারীরিক অক্ষমতা; সেটা প্রকাশ করার নয়
ভালভাল কেটে পড়ি; মায়ার বন্ধন দিয়ে ফাঁকি।

কিছুদিন পর খবরে আসে ‘সুইসাইড’
দাগ কেটে যায়; এতসব খবরের ভীড়ে,
চাওয়া ছিল— ‘তাতে কি আসে যায়, সে সুখী হউক
অন্য কোথাও, অন্য কোন নীড়ে।’

এই মৃত্যুর জন্য কি আমি দায়ী? নিছক ছেলে মানুষি বৈকি!
শূন্যতাকে করে আপন,
বুকে খা খা করে একাকিত্ব, বড়ই পীড়া দেয় যাযাবর জীবন যাপন।

হৃদয় পোড়া আঘাত
আজ হয়েছে ভীষন ক্ষত,
কামনা বাসনা ছাড়া নিরাশ এই জীবন সংসার
নিষ্ফলা, অকেজো বৃক্ষের মত।

জলের আঙুর


এক বর্ষায় সব পালটি খেয়ে গেছে হুতাশন।
পাতায় পাতায় এমন প্রফুল্ল গাঁট
সমস্ত পাখির মুখ খুলে গিয়ে;
নারকোলডাঁটির দুপাশে ঘন দুর্গাভুরু তোলা,
তাতে জলকুহেলি।
এমন নবরত্ন কারাদণ্ড সবুজ চেপে ধরেছে
আমাদের…
গাছই উচ্চারণ করছে আর পল্লব সহ্য করব না।
এই বর্ষার পেছন পেছন এল উদ্দালক
খুনের হুমকি থেকে বেঁচে;
মনের মধ্যেও ফের আরম্ভ চালু শুরু, ভাই,
জলের মোড়লি; আর তাতে পাছা-উবদি হাঁস


মাতাল-বিরক্ত পথ, টর্চ হাঁটছে
এক্কা-দোক্কা লাফ দিয়ে দিয়ে
কচি-শসা রাস্তাটায় বৃষ্টির লবন মাখানো

সব উঠোনে ঘুরে গেছে সবুজ প্যারামবুলেটার
সাদা ফুলতোলা ফ্রকের জলশিশু
তার মধ্যে আধ-শোয়া

ভেজা, হিম, ভিতু কাক হয়ে
এডাল-ওডাল উড়ে বসছে প্রেম


মনসিজ পানির ভেতরে বৃষ্টির আচ্ছন্ন ফুল
কোমর পর্যন্ত অতিকায়

ছাদ তুলতে ওস্তাদ মিস্তিরি ত্রিপলের নীচে
বালিতে পাথরকুচি — চালের উদরে ডাল —
ঠেসে দিয়ে হাভাতে ইঁটের ছোট হিল্লে করে দিল

একবার আটচালা ছেড়ে, মাটির গৌরাঙ্গ, তুমি
উঠোনে দাঁড়াও। কত আস্ত থাকে দেখি
চোখ, চূড়া, দুটি ছিচরণ!

.
(‘নবরত্ন কারাদণ্ড সবুজ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে)