বিভাগের আর্কাইভঃ স্মৃতিকথা

স্মৃতিকাতরতায় কাটে পরবাসে আমার ঈদ আনন্দ


১১ আগষ্ট ভোর ৫ টা ৪৪।

আসসালামু আলাইকুম,
আজ আমাদের পরবাসে ঈদ তাই সবাইকে ঈদ মোবারক।

নিশ্চয় সবার জানতে ইচ্ছে করছে আমি কতটা খুশি, তাই ঈদগাহে ঈদের নামায শেষ করে বসে পরলাম মোবাইলের কি বোর্ড নিয়ে। ভাবছি কি লিখবো? অনেক আবেগপ্রবণ হওয়ার পর মন বললো, এতো ভাবাভাবির কি আছে বাঁকাচাঁদ? মন যা বলে তাই লিখে ফেল অভদ্র নগরের আনাড়ী লেখক। হয়তো সবার কাছে তোমার লিখা ভালো নাও লাগতে পারে হে লেখক।

সারাদিন যুদ্ধরত জীবন, কর্মস্থলে কাটে ব্যস্ত সময়। সকালের সূর্য পূর্ব দিগন্তে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়। সূর্যের এই ওঠা-ডোবা জানার সুযোগ কম পরবাসে।
পরবাসে অর্থ আছে, স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার কায়দা আছে, কিন্তু নেই আনন্দ, উল্লাসের নিশ্চয়তা। আমার দেশ সবুজ শ্যামলে বাংলাদেশ। সেই ভরাট যৌবনের রূপ দেখার সাধ আর মেটে কই দূর পরবাসে।

আমরা দেশে থেকে পরবাস বলতে বুঝি অনেক টাকা, সুখ,আরাম, ভোগ-বিলাসের জায়গা। সেখানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদু্ৎ, লোডশোডিং নেই, নেই যানজট। রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেখার মত সুন্দর পরবাস, যেখানে অগোছালো জীবন নামক শব্দের পরিবর্তন হয়। ঠিক এই রকম চিন্তাই থাকে আমাদের বাঙালীদের মনে। তবে বর্তমানে এই ব্যাপারটা নতুনদের মনে এতো স্বপ্নের বেড়াজাল সৃষ্টি করে না।

পরবাস মানে কি?
জানতে হলে চলুন ঘুরে আসি দূরের পরবাস থেকে। অনেক টাকা রোজগার করার একটি প্ল্যাটফর্ম। যেখানে লাখ লাখ টাকা রোজগার করা যায়। রাজার হালে জীবন চলে আরো কত কি? কিন্তু হাজার মিথ্যাকে পিছনে ফেলে সত্য কি জানেন? কিভাবে কাটে তাদের ঈদ অথবা তাদের ঈদের আনন্দের মুহূর্তগুলি কি? বছরের পর বছর আপন পরিজনদের কাছ থেকে সুদূর শহরে দাবদগ্ধ গরম ও হাড়জমাট শীতের মধ্য অবর্ণনীয় পরিশ্রম করে যাই শুধু দেশের রক্তের বাঁধনে বন্দি আপনজনদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য। নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় যৌবনকাল উৎসর্গ করে দেই আপনজনদের জন্য। দূর দেশে থেকেও মন পড়ে থাকে সেই মাতৃভূমিতে, যেখানে রয়েছে আমার জান্নাত আমার মা, আমার মাথার তাজ আমার বাবা, প্রবাহিত রক্তরসে বন্ধনে বন্দি আমার ভাই-বোন।

প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে তাদের কথা। কোন সন তারিখে দুটা টাকা নিয়ে দেশে গিয়ে আপনজনদের মুখের হাসি দেখবো সেই অপেক্ষায় কাটে দিন মাস বছর। প্রতিটি সেকেন্ড কাটে ঘন্টার মত, প্রতিটি ঘন্টা কাটে দিনের মত আর প্রতিটি দিন কাটে যেন দীর্ঘ একেকটা সালের মত।

দিনের কাঠফাটা গরমে হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে যখন রাতে নিজ বেডে ঘুমাতে যাই তখন অক্ষির পাতায় জীবন্ত হয়ে ভেসে উঠে আত্মীয়স্বজনের বিভিন্ন মায়ামুখ। কখন দেশে যাবো,বাবা মার চরণে লুটে পড়বো এই ভাবনায় একসময় ঘুমিয়ে পড়া আমার প্রতিদিনের রুটিন। এখানে জীবন মানে রাত দিনের নিরানন্দ চক্রের জাল। যেখানে হাসি-খুশির কোনো স্থান নেই। একই রকম কাজ আর একই রকমের নিয়মে ধরাবাঁধা জীবনচক্র যেন শেষ হয়েই হচ্ছেনা। এক ঘেঁয়েমী থেকে বের হওয়ার জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে ঈদের দিনে কোন ছুটি থাকেনা বিভিন্ন কর্মস্থলে।

বাৎসরিক আনন্দ উৎসব ঈদ, দেশের মানুষ যতটা আনন্দ উপভোগ করে সেই পরিমাণে পরবাসে মনের কোনায় সামান্যতম আনন্দের দোলাও দিতে পারে না বাৎসরিক ঈদ। এখানে ঈদ, পহেলা বৈশাখ, মধুর মাস জৈষ্ঠ্য, বিজয়ের মাস জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী সব উৎসবের দিন অন্য সব প্রতিদিনের মতই। বরং এখানে ঈদ আনন্দ আসে বেদনার ক্ষত চিহ্নতে নতুন করে লবণের ছিটা দেয়ার জন্য। এই দিনগুলোতে মনের ভিতরের জমাট কষ্টগুলো আবার জীবিত হয়ে ফিরে আসে। এখানে ঈদ মানে চোখের পানি। ঈদ মানে বেদনার ক্ষত নতুন করে তাজা হয়ে জাগ্রত হওয়া।

দেশের আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধবরা জানতে চায় তোদের ঈদ কেমন কাটে? তোরা কি চাঁদরাতে বা তার আগে থেকেই ঈদের মার্কেট করতে যাস? ঈদের দিন ঘুরতে যাওয়া হয় দলবেঁধে? এইসব বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে দেশের অনেক আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে।

তাই আমার ঈদ কেমন আনন্দে কাটে তার সামান্য ইংগিত দেয়ার চেষ্টা করছি। দূর পরবাসে ঈদটা একেক জনের জন্য একেকরকম। অল্প কিছু মানুষের কাছে এখানে ঈদ আনন্দের হলেও অধিকাংশ প্রবাসীর কাছে ঈদ মানেই স্মৃতিবিজড়িত কান্নার দিন। সারা বছরের জমিয়ে রাখা কান্নার বাঁধভাঙা স্রোত যেন ঈদের দিন আর কোনো বাঁধা মানতে চায় না। দু চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে বিরহের পবিত্র অশ্রু। বুকে চাপ পড়ে কষ্টের হিমালয়। কান্নার গতি যেন থামতেই চায় না। জোর করে থামাতে চাইলেও কি যেন এসে গলায় আঁটকে থাকে। খাবার খেতে বসলে লবণের কাজ করে দেয় চোখের পানি, ঝরে পড়ে ভাতের উপর। কোথায় চলে গেলো সেই ঈদ, যে ঈদে আম্মু আমার জন্য সেমাইয়ের পরিবর্তে তৈরি করতো ফিরনি।

কোথায় বাবা মা ভাই বোন? তারা কি নতুন জামা কাপড় কিনেছে? ফিরনি সেমাই রান্না করেছে? আজ ঈদের দিনে আমার শূন্যতা কি তারা অনুভব করছে? আমার অনুপস্থিতি তাদের কাছেও না জানি কত বেদনার। আম্মু মনে হয় ফিরনির কাপ হাতে নিয়ে আমাকে স্মরণ করে ঝুম বৃষ্টির মত চোখের পানি ফেলছে? এইসব ভাবতে ভাবতে ভেজা চোখেই ঈদের দিনটা শেষ হয় আমাদের। পরেরদিন থেকে আবার শুরু হয় হাড়ভাঙা পরিশ্রম। উদ্দেশ্য আমার একটাই নিজের কষ্টকে মাটিতে চাপা দিয়ে আত্মীয় স্বজনরা যেন একটু সুখের ছায়া পায়। বাবা যেন প্রতিমাসে শ্বাস কষ্টের ঔষধে খেতে পারে। আম্মু যেন চিন্তামুক্ত থাকে।

কয়েক বছর পর বাড়ীতে এসে যেন সবাইকে নিয়ে একটু সুখে থাকতে পারি। নিজের সুখ ত্যাগ করলাম স্বজনদের সুখের জন্য। এটাই প্রবাস, এটাই নিয়তি। এখানে ঈদের আগের দিনগুলোতে বাজার সদায় করার কোন ধুম পড়েনা। এখানে এদেশের মানুষদের কাছেই শুধু ঈদ আসে। আমাদের কাছে স্বাভাবিকভাবে নিজের অজান্তেই ঈদের তারিখটা আসে শুধু। যারা বাহিরে কাজ করে তাদের জন্য চাঁদ রাতে একটু বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। আর না ঘুমিয়ে সকালে ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে হয়। এ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই ঈদের লক্ষণ তাদের কাছে পরিলক্ষিত হয়না। নামায শেষে রুমে এসে ঘুমাব বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কম্বল মুড়ি দিয়ে ভাবতে লাগলাম আগে একটু দেশে কথা বলে নেই। যেহেতু আজ আমার এখানে ঈদ।

মোবাইল হাতে তুলে নিয়ে যোগাযোগের জন্য কয়েকবার চেষ্টা করে লাইন পেলাম।
আসসালামু আলাইকুম। আম্মা কেমন আছো?
ওয়ালাইকুমুস সালাম ভালো আছি যাদু, তুমি কেমন আছো বাবা?
ভাল আছি আম্মা, তোমাদের দোয়াই খুব ভাল আছি।
ঈদে নতুন জামা কাপড় পরেছিস তো বাবা?
সেমাই খেয়েছিস তো?
না আম্মা, আমি তো সেমাই খাই না, তুমি জানোনা?
আরে হো … ভুলেই গিয়েছি, তো ফিরনি রান্না করেছো?
না মা, এতো ভেজাল কে করে?
এখন কি করছিস বাঁকা চাঁদ আমার?
বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে ঘুরতে যাবি না?
জ্বী আম্মা। এখন বন্ধু বান্ধবদের সাথেই আছি। ওরা অনেক কিছুই রান্না করেছে। আমার ভারি কণ্ঠ মায়ের আদালতে সব সত্য প্রকাশ পেয়ে যায়, তিনি বললেন কি হয়েছে বাবা তোমার? তোমার গলার আওয়াজ ভারি শোনাচ্ছে? বাঁকা চাঁদ, তোমার অনুপস্থিতি রোজ আমায় ভাবায়, সকাল থেকেই তোমার কথা ভাবছি। মানিক আমার যোজন-যোজন দূরে? যার জন্য ফিরনি বানানো হয়, সে তো ঘরে নেই।

আম্মু আজ আমার এখানে ঈদের দিন, আর তুমি কান্না করতেছো?
আম্মু বলে না বাবা, কাঁদছি না।
আম্মু তোমরা ঈদের জামা কাপড় কিনেছো?
হ্যাঁ, কিনেছি।
বাজার সদায় করতে কোন কমতি করোনি তো?
না বাবা… যা দরকার তার চাইতে একটু আধটু বেশিই কিনেছি।
তুমি চিন্তা করোনা।
ঠিক আছে মা, এখন রাখি আমি, বিকাল করে ফোন দেব। আমি একটু ঘুমাবো।
ঠিক আছে বাবা, তবে বিকালে কিন্তু অবশ্যই ফোন দিও।

মোবাইলটা রেখে কম্বলের ভিতরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে নিঃশব্দের চোরা কান্না কাঁদলাম কিছুক্ষণ। সারা বছরের জমানো কান্না আজকের দিনে ভীড় করেছে। আমি আজ কোথায় পড়ে আছি? এরকম ঈদের দিনে যদি দেশে থাকতে পারতাম, নামায পড়ে মাকে সালাম দিতাম, আম্মু কপালে চুমু খেয়ে বলতো আমার বাঁকা চাঁদ তুমি দীর্ঘজীবি হও, আর বাঁকা চাঁদ পুরো আকাশ জুড়ে একটিই। এভাবে তিনি আমার জন্য দোয়া করতেন। আহ্ আজ আমি পড়ে আছি অনেক দূরে।

এভাবেই পরবাসে একেকজনের কাছে একেক রকমভাবে ঈদ আসে নিরানন্দ হয়ে আবার চলেও যায়। কেও কেও শুধু ঈদের দিনটাই ছুটি পায়, আবার কেউ কেউ ঈদের দিনটিতেও ছুটি পায়না। আবার শুরু হয় সেই কাঠফাঁটা গরমে হাড়ভাঙা পরিশ্রম। দেশের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে যাবার দীর্ঘ অপেক্ষা আর নিয়তির ডিউটি।
প্রতিদিনের একই রকমের কাজ আর একই রকমের নিয়মে সময় পার করা। হাসি-খুশি আনন্দবিহীন জলসমুদ্রে ভাসমান জীবন। জীবন এখানে শুধু রাত দিনের নিরামিষে একটি ডাকাত চক্র। শুধু বাড়ীতে ফিরে যাওয়ার একটি প্রবল অপেক্ষা আছে বলেই হয়ত এখনো এই জীবনের প্রতি কিছুটা মোহ আছে।

তা না হলে এই জীবন আর জড়পর্দাথের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকতো না। এখানে পার্থক্য শুধু এতটুকুই দেশে গিয়ে প্রিয়জনের মুখ দেখার আশাটা অন্তরে পেরেক-কাঠের গাঁথুনী। আর এভাবেই কেটে যায় আমার এবং আমার রুম মেটদের ঈদ আনন্দ। তবুও আমরা হাসি, কারণ পরবাসে এসে আমরা ঝর্ণার মতো কান্নাকে ভিতরে লুকিয়ে কিভাবে হাসতে হয় সেই কৌশল শিখে গেছি। ঈদে সবার স্বপ্ন বাড়ী যায় না, যায় শুধু বেতন বোনাস।

যাই হোক আগামীকাল বাংলাদেশে তোমাদের ঈদ, তোমাদের ঈদ আনন্দ যেন প্রবাহিত ঝর্ণার পানির মত পবিত্র হয় সে আশা রাখছি বিধাতার কাছে। তাই সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানীপাঠ (দশম পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানীপাঠ (দশম পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনদায়ী বানী

পরম দয়াল শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের মুখনিঃসৃত যে হাজার হাজার বাণী ও প্রশ্ন-উত্তর যা কিনা মনুষ্য জীবনে অমৃততুল্য, মাতৃদুগ্ধের ন্যায় অপরিহার্য। তাঁর একেকটি বাণী এককটি মুমূর্ষু মানবের কাছে জীবনদায়ী। ভাষা দিয়ে পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের প্রকাশ ঘটানো কখনো সম্ভব না।

জানালার ছিদ্র দিয়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ যেমন সম্ভব নয়। পরম দয়াল শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র, আচার্য দেব শ্রী শ্রী দাদার মধ্যে কতটা প্রকট তা, শ্রী শ্রী ঠাকুরের বাণীতে পাই:

‘দেবদেবতা হাজার ধরিস্
আচার্য যার ইষ্ট নয়
স্পষ্টতর বুঝে রাখিস্
জীবন চলনায় নেহাৎ ভয়।’

আসুন, আমরা সকলেই শ্রী শ্রী ঠাকুরের নির্দেশিত চলার পথে এগিয়ে যাই
আর আমাদের এই তুচ্ছ জীবনকে ধন্য করে তুলি।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!

পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের চলার সাথী গ্রন্থ থেকে পাঠ

সৃজন-প্রগতি

ক্ষুব্ধ-সম্বেগে অব্যক্তের বুকে দ্রুত ব্যঞ্জনায় বিঘূর্ণিত সত্তার উচ্ছৃষ্ট-বিচ্ছুরণ-সংবিদ্ধ সংঘাতকম্পিত ছন্দে ভাসমান শক্তি-শরীরী প্রতিধ্বনিই আদিবাক্—সৃষ্টির প্রথম প্রগতি !

কম্পিত-কল,সৃজন-উৎস সেই স্ফুটবাক্ বিজৃম্ভিত-সম্বেগে,আত্ম বিচ্ছুরণে,সহসম্পদে,ভাস-বিস্ফোরণে,বহুধা-প্রকটে পর্য্যবসিত হইয়াও তাহাই থাকিলেন—অব্যক্তেরই বুকে ! — কিন্তু সে স্পন্দনে ব্যক্ত- বিমুখ সাড়া দিল না !

স্পন্দনপ্লুত, বিপ্লব-বহ্নি, শক্তি-সমুদ্র, ঘোষ-কল,জাতবাক্ প্রকট-প্রাচুর্য্য হইয়াও তদবস্থ !– তিনিই ঈশ্বর, আদিবাক্–পরমদৈবত !

অব্যক্তে বিরাগ-সম্বেগজ-বীচিস্পন্দিতসত্তা সংক্ষুধিত-আবেগ কম্পনে সিসৃক্ষু হইয়া উদ্বুদ্ধ-সৃজন-স্রোতে বিক্ষুব্ধ সংঘাতে ব্যাবর্ত্ত বৃত্তাভাসে চেতনোদ্দীপ্ততায় অসম-বহুল-প্রকটপরায়ণ হইলেন— আর তিনি প্রোদিতবাক্ !—

বিচ্ছুরিত সত্তার বিশ্লিষ্ট-বিভেদান্তরালে বিক্ষুব্ধ-ব্যষ্টিতে বিভিন্ন-বোধ উপ্ত করিয়া- অনুস্যূত-আকর্ষণ-উপেক্ষায় সমত্ব হরণ করিল যে– সে-ই অব্যক্ত !
চলার সাথী
তুমি জগতে প্লাবনের মত ঢলিয়া পড়–সেবা, উদ্যম, জীবন ও বৃদ্ধিকে লইয়া ব্যাষ্টি ও সমষ্টিতে তোমার আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করিয়া–জয়, যশ ও গৌরবের সহিত;–আর, নারী যদি চায়-ই তোমাকে তবে ছুটুক সে তার মঙ্গলশঙ্খনিনাদে সব-প্রাণ মুখরিত করিয়া তোমার দিকে,–কিন্তু সাবধান ! — চেও না তুমি তা’ !

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ
যতদিন তোমার শরীর ও মনে ব্যাথা লাগে, ততদিন তুমি একটি পিপীলিকারও ব্যথা নিরাকরনের দিকে চেষ্টা রেখো, আর যদি না কর, তবে তোমার চাইতে হীন আর কে?

তোমার গালে চড় মারলে যদি বলতে পার, কে কাকে মারে, তবে অন্যের বেলায় বল, ভালই। খবরদার, নিজে যদি না ভাবতে পার তবে অন্যের বেলায় বলতে যেও না।

যদি নিজের কষ্টের বেলায় সংসারী সাজো, অন্যের অন্যের বেলায় ব্রহ্মজ্ঞানী সেজো না। বরং নিজের দুঃখের বেলায় ব্রহ্মজ্ঞানী সাজো আর অন্যের বেলায় সংসারী সাজো, এমন ভেলও ভাল।

যদি মানুষ হও তো নিজের দুঃখে হাস, আর পরের দুঃখে কাঁদ। নিজের মৃত্যু যদি অপছন্দ কর তবে কখনও কাউকে মর বলো না।

**********
হাসো, কিন্তু বিদ্রুপে নয়।কাঁদো, কিন্তু আসক্তিতে নয়, ভালবাসায়, প্রেমে।

বল, কিন্তু আত্মপ্রশংসায় বা খ্যাতি বিস্তারের জন্য নয়। তোমার চরিত্রের কোনও উদাহরণে যদি কারো মঙ্গল হয়, তবু তার নিকট তা গোপন রেখো না। তোমার সৎস্বভাব কর্মে ফুটে উঠুক, কিন্তু আপন ভাষায় ব্যক্ত না হয়, নজর রেখো। সৎ-এ তোমার আসক্তি সংলগ্ন কর, অজ্ঞাতসারে সৎ হবে। তুমি আপনভাবে সৎ-চিন্তায় নিমগ্ন হও, তোমার অনুযায়ী ভাব আপনি ফুটে বেরুবে।

অসৎ চিন্তা যেমন চাহনিতে , বাক্যে, আচরনে, ব্যবহারে ইত্যাদিতে ফুটে বেরোয়, সৎ-চিন্তাও তেমনি উক্তরূপেই ফুটে বেরোয়।

**********
স্পষ্টবাদী হও, কিন্তু মিষ্টভাষী হও। বলতে বিবেচনা কর, কিন্তু বলে বিমুখ হয়ো না!

যদি ভুল বলে থাক, সাবধান হও, ভূল করো না।

সত্য বল, কিন্তু সংহার এনো না। সৎ কথা বলা ভাল, কিন্তু ভাব, অনুভব করা আরোও ভাল।

অসৎ কথা বলার চেয়ে সৎ কথা বলা ভাল নিশ্চয়, কিন্তু বলার সঙ্গে কাজ করা ও অনুভব না থাকলে কী হলো-বেহালা, বীণা যেমন বাদকানুগ্রহে বাজে ভাল, কিন্তু তারা নিজে কিছু অনুভব করতে পারে না।

যে অনুভুতির খুব গল্প করে অথচ তার লক্ষণ প্রকাশ পায় না, তার গল্পগুলি কল্পনা-মাত্র বা আড়ম্বর।
যত ডুববে তত বেমালুম হবে।

যেমনি ডালিম পাকলেই ফেটে যায়, তোমার অন্তরে সৎভাব পাকলেই আপনি ফেটে যাবে-তোমার মুখে তা প্রকাশ করতে হবে না।

**********
যে-খেয়াল বিবেকের অনুচর তারই অনুসরন কর, মঙ্গলের অধিকারী হবে।

বিস্তারে অস্তিত্ব হারাও, কিন্তু নিভে যেও না। বিস্তারই জীবন, বিস্তারই প্রেম।

যে-কর্মে মনের প্রসারন নিয়ে আসে তাই সুকর্ম, আর যাতে মনে সংস্কার, গোঁড়ামী ইত্যাদি আনে, ফলকথা, যাতে মন সংকীর্ণ হয় তাই কু-কর্ম।

যে-কর্ম মানুষের কাছে বলতে মুখে কালিমা পড়ে, তা করতে যেও না। গোপন যেখানে ঘৃণা-লজ্জা-ভয়ে সেখানেই দুর্ব্বলতা, সেখানেই পাপ!

যে-সাধনা করলে হৃদয়ে প্রেম আসে, তাই কর, আর যাতে ক্রুরতা, কঠোরতা, হিংসা আসে, তা আপাততঃ লাভজনক হলেও তার কাছে যেও না।

তুমি যদি এমন শক্তি লাভ করে থাক যাতে চন্দ্র-সূর্য্য কক্ষচ্যুত করতে পার, পৃথিবী ভেঙ্গে টুকরা-টুকরা করতে পার বা সব্বাইকে ঐশ্বর্য্যশালী করে দিতে পার, আর যদি হৃদয়ে প্রেম না থাকে, তবে তোমার কিছুই হয়নি।

**********

এবার আমার পরবর্তী বিভাগ “ভারত সূর্য ডুবে গেল হায়!” পর্বে পর্বে প্রকাশ দেওয়ার আশা রাখি। সকলের সহযোগিতা ও আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে নতুন বিভাগটি আগামী দিন থেকে নিয়মিত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে। শেষাংশে সংযোজিত করা হবে ভারতের শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবন আলেখ্য গীতি নাটকের কয়েকটি দৃশ্যায়ন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

ইউটিউবে দেখা একটি ভিডিও এবং নিজের কিছু ভাবনা

ক’দিন আগে বিশ্ববিখ্যাত ভিডিও সাইট ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখলাম। ভিডিওটার শিরোনাম: “La odisea de la especie Homo habilis” ভিডিওটা দেখে ভাবতে লাগলাম, আদিম যুগের কথা। আদিম যুগের কথা পুস্তিকায় অনেক পড়েছি। বুড়ো বুড়িদের মুখে শুনেছিও অনেক। মনে হয় আমার পূর্বপুরুষরাও সেই আদিম যুগ থেকেই জন্মে জন্মে এই কলিযুগের সভ্যজগতে এসে পৌঁছেছিল। এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আমার পূর্বপুরুষের সংখ্যা কত হয়েছিল, তা আমার জানা নেই। হয়তো হিসাব করে কোনও দিন এর সঠিক সংখ্যা বের করতেও পারবো না। তবে আদিম যুগ থেকে এপর্যন্ত, পূর্বপুরুষ হতে আমি পর্যন্ত কীভাবে এসেছি; ইউটিউবে থাকা ভিডিওটা দেখে সে- বিষয়ে একটু ধারণা মাথায় এসে যায়।

ভিডিওটা দেখে মানুষ আদিম যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত কীভাবে এগিয়ে আসলো, মোটামুটি একটা হিসাব মিলিয়ে ফেলি। যেমন : আমার পিতৃপুরুষদের মধ্যে আমি পাঁচ পুরুষের নাম জানি। আমার বাবার নাম; আমার ঠাকুরদাদার নাম; ঠাকুরদাদার বাবার নাম; এভাবে পাঁচ পুরুষের নাম। তাঁদের পিতৃপুরুষদের বাবার বাবার নাম মানে চৌদ্দপুরুষের নাম। তা আমার জানা নেই। আমার তো জানা নে-ই, এই বিশ্বের কেউ কারোর চৌদ্দপুরুষের নাম জানে কিনা, তাও জানি না। ধারণা করা যায় কেউ জানেই না। আর জানবেই বা কী করে? একটা বংশের চৌদ্দপুরুষদেরও তো চৌদ্দপুরুষ থাকে। চৌদ্দপুরুষদের পূর্বপুরুষও থাকে। হাতের আঙুলের কড় গুণে হিসাব করতে গেলে এসব চৌদ্দপুরুষদের বাবার বাবা তো কয়েক হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায়। তাহলে দেখা যায় এভাবে বাবার বাবা পর্যন্ত যেতে যেতে সেই আদি পিতা পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে বলে মনে হয়। তার মানে একটা গাছের মাথা থেকে মূল পর্যন্ত পৌঁছানো। যেমন : আদি পিতা আদি মাতা বা আদম হাওয়া পর্যন্ত। তাহলে মনে হয় আমরা তো সেখান থেকেই এপর্যন্ত। মানে আমরা জীবের সেরা মানুষ যেখান থেকে এসেছি।

তাই ভিডিওটা দেখার পর ভাবতে হয় বর্তমান থেকে সেই আদিম যুগ কেমন ছিল? সেই যুগের মানুষের জীবনধারণই বা কেমন ছিল? বর্তমান থেকে কি ভালো ছিল? নাকি দুর্বিষহ ছিল? নাকি সেই যুগের মানুষ বর্তমান যুগের মানুষের চেয়ে সুখি ছিল? এসব নিয়ে নিজে নিজেই অনেকসময় চিন্তা করি। আর ছোটবেলায় আদিম যুগের মতো মানুষের জীবনধারা দেখে অতীত বর্তমান নিয়ে একা একা ভাবতে থাকি।

ভিডিওটিতে দেখা যায় বানর আকৃতির কয়েকজন আদিম মানুষের একটা দল। ওদের শরীরে বনমানুষের মতো লোমশ। এই দলে পুরুষ কয়েকজন, মেয়ে একজন। ওরা সবাই বস্ত্রহীন, উলঙ্গ। ওরা শুধু খাদ্যের সন্ধানে বন-ভাদরে ঘুরে বেড়ায়। ওদের মুখে ভাষা নেই। ওরা বোবা। তবে মুখে আওয়াজ তুলতে পারে। আর হাতের ঈশারা, চোখের ঈশারায় একে অপরের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করে। একটুখানি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারলে, সবাই মিলে খায়। ওদের মনে ভালোবাসা আছে। একে অপরকে ভালোবাসে। সাথের একজনকে যদি বনের কোনও হিংস্র প্রাণী আক্রমণ করে খেয়ে ফেলে, তো সাথের আরও কয়েকজন বিলাপ করে কান্নার সুর তুলে। ওরা দিনের বেলায় রোদ পুড়ে, খাদ্যের সন্ধান করে। রাতের অন্ধকারে সবাই একসাথে ডলাডলি করে ঘুমিয়ে থাকে। ওঁদের ঘড় নেই। বৃষ্টি এলে আশ্রয় খুঁজে। আশ্রয় বলতে কোনোএক বড় গাছের তলায়, নাহয় কোনও পাহাড়ের গুহায়।

youtube.com/watch?v=mQrOLGoIl2c

এসব দৃশ্য দেখে বোঝা গেল যখন কাগজ কলম আবিস্কার হয়নি, তখন মানুষের লেখা-পড়া ছিলই না। লেখা-পড়া যে কী, তাও মানুষ জানতো না, বুঝতোও না। যখন কোনও বস্ত্রের আবিস্কার হয়নি, তখন মানুষ লজ্জা কাকে বলে তা কী জানতো? মনে হয় তখনকার সময় লজ্জা নিয়ে বেশিকিছু ভাবতো না, জানতোও না! এসব নিয়ে তখন তাঁদের ভাবার সময়ও ছিল না। ভাবতো শুধু আহার, নিদ্রা নিয়ে। করতো শুধু বেঁচে থাকার চেষ্টা। তাঁরা চেষ্টা করতো তাঁদের পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাদ্য কোথাও আছে, কী আছে? বৃষ্টি এলে নিজেকে বাঁচাবে কী করে? হিংস্র প্রাণী আক্রমণ করলে বাঁচবে কী করে? এসব চিন্তা নিয়েই তখনকার মানুষেরা বেঁচে থাকতো। আর বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে পর্বতে ঘুরে বেড়াতো। ভিডিওটিতে তা-ই দেখানো হয়েছে।

দেখানো হয়েছে একজন মা সন্তানসম্ভবা হলে মায়ের অবস্থা কেমন থাকে। মায়ের গর্ভে থাকা নবজাতকের জন্য মায়ের ভালোবাসা কেমন থাকে। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটির মুখ দেখে গর্ভধারিণী মা কেমন আনন্দ উল্লাস করে। সন্তানের জন্য জন্মদাতা পিতার ভালোবাসা কেমন থাকে। বনের হিংস্র প্রাণীর সাথে লড়াই করে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েও নিজের সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করে থাকে। প্রখর রোদে গাছে আগুন ধরে গেলে সবাই হায়-হুতাশ শুরু করে। সেই আগুন নিয়ে গবেষণা করে নিজেরাই আগুন জ্বালাতে শিখে। বৃষ্টিতে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করে ঝুপড়িঘর বানাতে শিখে। ধারালো পাথরের ঘষায় হাত কেটে গেলে সেই পাথর দিয়ে শিকার করার অস্ত্র তৈরি করতে শিখে। তীব্র শীত থেকে বাঁচতে পশুর চামড়া ব্যবহার করে। সেই চামড়া দিয়েই একসময় নিজেদের লজ্জা নিবারণের বস্ত্রও আবিস্কার করে ফেলে। এভাবে পার হতে লাগলো কালের পর কাল, আর সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ। এখন চলছে কলিযুগ। মানুষ এখন কলিযুগের মাঝামাঝি সময়ের সভ্য যুগে।

এই যুগে আমার বাবার জন্ম হলো। আমার বড়দাদার জন্ম হলো। চার বোনের জন্ম হলো। এরপর আমার জন্ম হলো ১৯৬৩ খ্রীস্টাব্দের ৮ জুন। সেই থেকে শুরু হলো এই সুন্দর পৃথিবীতে আমার পথচলা। পাঁচবছর বয়সে দেওয়া হলো আমার হাতেখড়ি। হাতেখড়ি দেওয়ার কাগজ ছিল কলা পাতা। কলম✒ছিল বাঁশের কঞ্চি। সেই আদিম যুগ কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা আমার জানা না থাকলেও, আমি একটু একটু বুঝের হতে শুরু করেছিলাম ১৯৬৮ খ্রীস্টাব্দ থেকে। ভালোমন্দ বুঝতে শুরু করে দেখেছি আদিম যুগের মানুষের মতো অনেক মানুষকে অর্ধনগ্ন হয়ে থাকতে। দেখেছি লেংটি পরে থাকতে। ছোটবেলার সেসব দেখা একরকম স্মৃতি থেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ইউটিউবে থাকা ভিডিওটা দেখে আবার নতুন করে মনে পড়ে পড়ে গেল।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (নবম পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (নবম পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবনী

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র
জন্ম তাং: বাংলা ১২৯৫ সনের ৩০ ভাদ্র।(১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দ)

Sri Sri Thakur’s ideology is captured in his literature. His scholarly devotees like Krishna Prasanna Bhattacharya, Sushil Chandra Basu, Panchanan Sarkar, Khalilur Rehman, Prafulla Kumar Das, Ashwini Kumar Biswas, Devi Prasad Mukhopadhyay and some more got engaged into creating literature on Sri Sri Thakur’s personality and ideology. Large number of volumes in various languages have been written and published on the subject of Sri Sri Thakur and his sayings. All these books are on philosophy of Sri Sri Thakur, containing ways and means for the humanity for all time to come.
By the cruel turn of time, came 27th January 1969. Early morning at 04 hours 55 minutes, Sri Sri Thakur, the prophet for the age, took departure from this world of his creation. The prophet of the age, having accomplished his mission, laying the foundation of his movement, relapsed to his cosmic form, into the domain of eternity. Two years after that fateful day, on 10th May 1971, most respectful, image of Laxmi, Sarasibala breathed her last. A glorious chapter in the history of divine play on the earth came to an end.

What remained however is the undying print of his ideology. That ideology lays down the path for the humanity. Sri Sri Thakur remains with his devotees and provide the support and guidance, as he used to do when he was alive on the earth. In his current form, Sri Sri Thakur remains invisible, but not inaccessible and is always responsive. He said, ‘I have given everything in black and white, in prose and verse. I wish, people can talk to me, even when I won’t be there’. He expressed desire from his devotees, by saying, ‘you all are my limbs. I like to move around everywhere through you all.’

World after Thakur’s incarnation waits good time. Good time will come when people follow Sri Sri Thakur’s principles, with sincerity and devotion. The incarnate of the age descended on the earth to share and shift our agony. He besought uninterrupted adherence and undiluted devotion from us. He wanted to remain alive through us. As devotees, our peace lies in his pleasure. It will be our continuous pursuit to be up to his expectation.

Adorations to fulfiller the Best.

Let us think, behold and bowdown at His feet and follow Him with hearty adherence, allegiance and active service, installing Him in the throne of existential uphold and propitious immortal nectar of life.
stay with me always. Keep beside you.
Joyguru!

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ

কাজ করে যাও কিন্তু আবদ্ধ হয়ো না। যদি বিষয়ের পরিবর্তনে তোমার হৃদয়ে পরিবর্তন আসছে বুঝতে পার, আর সে পরিবর্তনগুলো তোমার বাঞ্চনীয় নয়, তবে ঠিক জেনো তুমি আবদ্ধ হয়েছ। কোন প্রকার সংস্কারে আবদ্ধ থেকো না, একমাত্র পরমপুরুষের সংস্কার ছাড়া যা কিছু সবই বন্ধন।

তোমার দর্শনের-জ্ঞানের পাল্লা যতটুকু অদৃষ্ট ঠিক তারই আগে; দেখতে পাচ্ছ না জানতে পাচ্ছ না, তাই অদৃষ্ট।
তোমার শয়তান অহংকারী আহম্মক আমিটাকে বের করে দাও; পরমপিতার ইচ্ছায় তুমি চল, অদৃষ্ট কিছুই করতে পারবে না। পরমপিতার ইচ্ছাই অদৃষ্ট।

তোমার সব অবস্থার ভিতর তার মঙ্গল-ইচ্ছা বুঝতে চেষ্টা কর, দেখবে কাতর হবে না, বরং হৃদয়ে সফলতা আসবে।, দুঃখেও আনন্দ পাবে।

কাজ করে যাও , অদৃষ্ট ভেবে ভেঙ্গে পড় না; আলসে হয়ো না, যেমন কাজ করবে তোমার অদৃষ্ট তেমনি হয়ে দৃষ্ট হবেন। সৎকর্মীর কখনও অকল্যান হয় না। একদিন আগে আর পাছে।

পরমপিতার দিকে তাকিয়ে কাজ করে যাও। তাঁর ইচ্ছাই অদৃষ্ট; তা ছাড়া আর-একটা অদৃষ্ট-ফদৃষ্ট বানিয়ে বেকুব হয়ে বসে থেকো না। অনেক লোক অদৃষ্ট নেই বলে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে, অথচ নির্ভরতাও নেই , শেষে সারা জীবন দুর্দ্দশায় কাটায়, ওসব আহম্মকী।

তোমার তুমি গেলেই অদৃষ্ট ফুরুলো, দর্শনও নাই অদৃষ্টও নাই।

**********

এগিয়ে যাও, কিন্তু মেপে দেখতে যেও না কতদুর এগিয়েছ; তাহলে আবার পিছিয়ে পড়বে।
অনুভব কর, কিন্তু অভিভূত হয়ে পড় না, তাহলে চলতে পারবে না। যদি অভিভূত হতে হয় তো ঈশ্বরপ্রেমে।
যত পার সেবা কর, কিন্তু হুকুম করতে যেও না।
কখনও নিন্দা কর না, কিন্তু অসত্যের প্রশ্রয় দিও না।
ধীর হও, তাই বলে আলসে দীর্ঘসূত্রী হয়ে পড় না।
ক্ষিপ্র হও, কিন্তু অধীর হয়ে বিরক্তিকে ডেকে এনে সব নষ্ট করে ফেল না।
বীর হও, কিন্তু হিংস্রক হয়ে বাঘ ভাল্লুক সেজে বস না।
স্থিরপ্রতিজ্ঞ হও, গোঁয়ার হয়ো না।

তুমি নিজে সহ্য কর , কিন্তু যে পারে না তাকে সাহায্য কর, ঘৃণা করো না, সহানুভূতি দেখাও, সাহস দাও।
নিজেকে নিজে প্রশংসা দিতে কৃপন সাজ, কিন্তু অপরের বেলায় দাতা হও।

যার উপর ক্রুদ্ধ হয়েছ, আগে তাকে আলিঙ্গন কর, নিজ বাটিতে ভোজনের নিমন্ত্রন কর, ডালা পাঠাও, এবং হৃদয় খুলে বাক্যালাপ না-করা পর্যন্ত অনুতাপের সহিত তার মঙ্গলের জন্য পরমপিতার কাছে প্রার্থনা কর; কেন না, বিদ্বেষ এলেই ক্রমে তুমি সংকীর্ণ হয়ে পড়বে, আর সংকীর্নতাই পাপ।

যদি কেহ তোমার কখনও অন্যায় করে, আর একান্তই তার প্রতিশোধ নিতে হয় , তবে তুমি তার সংগে এমন ব্যবহার কর যাতে সে অনুতপ্ত হয়; এমনতর প্রতিশোধ আর নেই-অনুতাপ তুষানল। তাতে উভয়েরই মঙ্গল।
বন্ধুত্ব খারিজ করো না, তাহলে শাস্তিতে সমবেদনা ও সান্ত্বনা পাবে না।

তোমার বন্ধু যদি অসৎও হয় , তাকে ত্যাগ করো না, বরং প্রয়োজন হলে তার সঙ্গ বন্ধ কর, কিন্তু অন্তরে শ্রদ্ধা রেখে বিপদে-আপদে কায়মনোবাক্যে সাহায্য কর, আর অনুতপ্ত হলে আলিংগন কর।

তোমার বন্ধু যদি কু-পথে যায়, আর তুমি যদি তাকে ফিরাতে চেষ্টা না কর বা ত্যাগ কর, তার শাস্তি তোমাকেও ত্যাগ করবে না।

বন্ধুর কুৎসা রটিও না বা কোনও প্রকারে অন্যের কাছে নিন্দা করো না; কিন্তু তাই বলে তার নিকট তার কোন মন্দের প্রশ্রয় দিও না।

বন্ধুর নিকট উদ্ধত হয়ো না, কিন্তু প্রেমের সহিত অভিমানে তাকে শাসন কর।

বন্ধুর নিকট কিছু প্রত্যাশা রেখো না, কিন্তু যা পাও, প্রেমের সহিত গ্রহন করো। কিছু দিলে পাওয়ার আশা রেখো না, কিন্তু কিছু পেলে দেওয়ার চেষ্টা করো।
**********

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (অষ্টম পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (অষ্টম পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবনী

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র
জন্ম তাং: বাংলা ১২৯৫ সনের ৩০ ভাদ্র।(১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দ)

(Continued from the previous publication of 7th part)

Sri Sri Thakur created a sensation in and outside the country. Inquisitive mind and devoted hearts came pouring and created a beehive around Sri Sri Thakur. Sri Sri Thakur’s abode in the village Himayetpur turned to be a shelter for people looking for relief and solutions of various kinds. Centers of activities, primarily to meet the natural requirement of visitors and inhabitants, sprung up; like school, college, hospital, centre of arts, cottage industries and laboratories for scientific experiments. Keeping people engaged in creative, scientific and entrepreneurial activities and developing human faculties on a balanced way was the motive behind all the activities. It was a fusion of science and dharma; material and spiritual; body, mind and soul; all leading to being and becoming of man, in symbiosis with surrounding and the Ideal. Sri Sri Thakur’s abode popularly came to be known as ‘Sri Sri Thakur Anukul Chandra Ashram’. As mother Manamohini desired, ashram was named as ‘Pabna Satsang Ashram’.

Sri Sri Thakur’s father Shiv Chandra Chakraborty left for his heavenly abode on 24thAgrahayan in the Bengali year 1330. Even during the period of mourning, Sri Sri Thakur never remised his pursuit of guiding and caring people, salvaging the fallen and rescuing the endangered. He was untiringly engaged in building his ideological framework both in theory and in practice. That ideology sets the path for the humanity, of current and of the foreseeable future. His cardinal principle for the unification of the mankind was, ‘God is one, dharma is one, prophets are same, servers of the One.” He held all the past prophets in high reverence; upheld and fulfilled all the past prophets through his own conducts and ideology. While respecting all the past prophets, one is required to follow the principles of the present one. He said, “All prophets shoot from providence, hence they are anointed; the present prophet is the consummation of all prophets, hence all prophets should be revered.” He formulated ideological tripod, yajan, yaajan and istabhrity, which are to be practiced every day for the uplift and transformation of every individual, family, society and the humanity. For maintaining excellence and progressiveness in the social system, he favoured varnashram and eugenic based marriage.

As prophet of the age, Sri Sri Thakur pioneered a movement that was designed to give ‘being and becoming’ a reality. He brought in a new defining shape to the concept of ‘dharma’. He said, “Dharma means the laws that sustain life and growth with every effulgence of personality; both individually and collectively.” He raised a guild of dedicated workers, who were classified and named as: ritwik, adhwarjyu and yaajak. The guild of ritwiks, out of sheer love for their Lord, marched far and wide and disseminated the mission and method of love, life and lore, as propounded by Sri Sri Thakur. Whoever came on the ideological spring board of Sri Sri Thakur got an access to their inner energy and were adjusted and elevated, leading a life centered aroundIsta (the blissful Ideal). The evil got automatically banished; each one got committed to an Ideal centric life in a societal grove where mutual love, service and instinct based livelihood prevailed.

Amidst hectic activities to spread the movement, Sri Sri Thakur was focused on ‘man making’. Each person was an asset to him, with biological backdrop and future potential. Sri Sri Thakur’s ideology was primarily meant for protecting the existence (being) and furthering the growth (becoming) of each person. Sri Sri Thakur was looking for a band of balanced and sound personality, devoted and dedicated, to lead his movement for the benefit of the humanity. Sri Sri Thakur was feeling pain and suffering of every person in his heart and was only too eager to alleviate the pain and banish the cause of suffering. Sri Sri Thakur displayed a sensitivity that is very fine and pervasive, by which he felt the feelings of even an ant. His ideology was aimed at making every person free from the bondages and luggage of the past that cause pain and sufferings and make the person progress on the road towards deliverance.

On 6th day of Chaitra in 1344, mother Manamohini devi left his dear son for her heavenly abode. Sri Sri Thakur’s life took a different turn from then onwards, as he did not have any other worldly anchor to keep him going. Loss of mother left a lifelong void for him; as mother was everything for him.
On 1st September 1946, amidst torrential downpour, Sri Sri Thakur left his homestead with a heavy heart. Apparently, he was advised by doctors for a change of climate for his health. He came to Deoghar (Baidyanth Dham) in Santhal Pragana district in then Bihar (now in Jharkhand). His family members and some close disciples accompanied him in this sojourn to Deoghar. It was tragic that less than a year from then, on 15th August 1947, India was partitioned and Sri Sri Thakur’s birth place, Himayetpur in Pabna, remained on the side belonging to Pakistan (now Bangladesh). Sri Sri Thakur never returned to his birthplace. No devotee of Sri Sri Thakur could continue to stay there. All the people migrated to this side in India and many of them preferred to stay at Deoghar, despite all hardship. Slowly, the new ashram began to grow at Deoghar from the scratch. Sri Sri Thakur’s ashram in Himayetpur together with properties worth crores of rupees was taken as public property by Pakistan Government.

Sri Sri Thakur was at his mission and movement. The creator of the universe got engaged with resettlement and rehabilitation, all alone. For him, the partition of the country on lines of religion and the holocaust of communalism that followed was sad, to say the least. But nothing could unnerve and unsettle him. His mission and movement to save and elevate the humanity went on a rampage. People in large number, irrespective of caste, clan, religion, from across the country and some from outside, poured in to Deoghar. A wave of cultural and spiritual reawakening, a resurgence of life, with epicenter at Deoghar engulfed the country. People from all walks of life, common and prominent alike, with various background and expectation, broke down at the feet of Sri Sri Thakur. Every soul looked for a solution; every one came expectant; every leader wanted to be led. Sri Sri Thakur fulfilled every heart, every mind and strengthened every shoulder. Many visitors and onlookers took shelter of Sri Sri Thakur’s ideology by accepting holy mantra. Sri Sri Thakur’s discourses with visitors were so powerful, meaningful and so precise in language that those were recorded. The discussions were jotted down by his erudite devotee Prafulla Kumar Das and transcript of those have been published in ‘Alochana Prasange’ in series. Sri Sri Thakur’s ideology and activities got published in many contemporary magazines and news papers.

Let us think, behold and bowdown at His feet and follow Him with hearty adherence, allegiance and active service, installing Him in the throne of existential uphold and propitious immortal nectar of life.
stay with me always. Keep beside you.
Joyguru!

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ

সত্যদর্শীর আশ্রয় নিয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা কর, এবং বিনয়ের সহিত স্বাধীন মত প্রকাশ কর। বই পড়ে বই হয়ে যেও না, তার essence* কে মজ্জাগত করতে চেষ্টা কর। Pull the husk to draw the seed.*।
উপর-উপর দেখেই কিছু ছেড়ো না বা কোন মত প্রকাশ করো না। কোনও-কিছুর শেষ না দেখলে তার সম্বন্ধে জ্ঞানই হয় না।, আর না জানলে তুমি তার বিষয়ে কি মত প্রকাশ করবে?
যাই কেন কর না, তার ভিতর সত্য দেখতে চেষ্টা কর। সত্য দেখা মানেই তাকে আগাগোড়া জানা, আর তাই জ্ঞান।
যা’ তুমি জান না, এমন বিষয়ে লোককে উপদেশ দিতে যেও না।
*********
নিজের দোষ জেনেও যদি তুমি তা ত্যাগ করতে না পার, তবে কোন মতেই তার সমর্থন করে অন্যের সর্বনাশ কর না। তুমি যদি সৎ হও তোমার দেখাদেখি হাজার হাজার লোক সৎ হয়ে পড়বে। আর যদি অসৎ হও তোমার দুর্দ্দশার জন্য সমবেদনা প্রকাশের কেউই থাকবে না; কারণ তুমি অসৎ হয়ে তোমার চারিদিকই অসৎ করে ফেলেছ।
তুমি ঠিক ঠিক জেন যে তুমি তোমার, তোমার নিজ পরিবারের, দশের এবং দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য দ্বায়ী। নাম যশের আশায় কোন কাজ করতে যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু কোন কাজ নিঃস্বার্থভাবে কর’তে গেলেই কায্যের অনুরুপ যশ তোমার সেবা করবেই করবে।
নিজের জন্য যাই করা যায় তাই সকাম, আর, অন্যের জন্য যা করা যায় তাই নিষ্কাম। কারো জন্য কিছু না চাওয়কেই নিষ্কাম বলে—শুধু তা নয়কো। দিয়ে দাও নিজের জন্য কিছু চেও না, দেখবে, সব তোমার হয়ে যাচ্ছে।
**********
তুমি অন্যের নিকট যেমন পেতে ইচ্ছা কর, অপরকেও তেমনি দিতে চেষ্টা কর- এমনতর বুঝে চলতে পারলেই যথেষ্ট- আপনিই সবাই তোমাকে পছন্দ করবে, ভালবাসবে।
নিজে ঠিক থেকে সবাইকে সৎভাবে খুশি করতে চেষ্টা কর, দেখবে সবাই তোমাকে খুশি করার চেষ্টা করছে। সাবধান নিজত্ব হারিয়ে কাউকে খুশি করতে যেও না, তাহলে তোমার দূর্গতির সীমা থাকবে না।
**********

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (সপ্তম পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (সপ্তম পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবনী

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র
জন্ম তাং: বাংলা ১২৯৫ সনের ৩০ ভাদ্র।(১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দ)

(Continued from the previous publication of 6th part)
Anukul Chandra got his primary education from local Pabna Institution. He then got nominated for matriculation examination from Mahendra Nath School, Naiyhati in district ‘24 Pragana’. At that time one of his classmates came crying to Anukul, as the former could not pay his examination fee. Friend Anukul offered the money with him for his fee to the friend. That was the end of school stint for Anukul.

At the age of 17 in the Bengali year 1313, on 24th day of Shrabana, parents got Anukul married to Sarasibala, aged 11, daughter of Ramgopal Bhattacharya of Dhopadaha village, residing in Pabna town. Sarasibala Devi was an ideal lady of the house. She was wholly dedicated to her husband and had high regards to others in the family. Her qualities like devotion, service, compassion, act of charity and togetherness are legendary and stand out as examples to all homemakers. In course of time, she gave birth to two sons, namely, Amarendra Nath, Bibek Ranjan and two daughters, namely, Sadhana Devi and Santwana Devi. With passage of time, some women pledged their life at the service of Anukul Chandra, when he was over fifty years. Some of them submitted their desire at mother Manamohini Devi to have the holy privilege of becoming consort of Anukul Chandra. Very reluctantly mother Manamohini Devi persuaded son Anukul to accept these women as wives. Prominent amongst them was Sarbamangala Devi, younger sister of Sarasibala Devi. Sarbamangala Devi gave birth to two sons; the eldest one succumbed to infant mortality and the younger son Pracheta Ranjan is still there. Anuka Devi was born to Parulbala Devi, Sri Sri Thakur’s wife from different varna.

Sometime after the marriage with Sarasibala Devi, Anukul Chandra took admission in National Medical School, Kolkata. At that time, he had to go through harsh poverty. It was hard for him to maintain himself at Kolkata with the paltry amount received from mother Manamohini Devi. He had to share space with the coolies in the coal warehouse of Yogen Bhattacharya on the grey street for quite some time. On many days he went without food; had to appease his hunger by drinking water from the roadside taps and slept on the footpath. Passing through hardships and enduring the hard realities, he completed his medical study. One of his teachers in medical college Dr. Sashi Bhusan Mitra observed the divine expressions of the student and later accepted him as Guru.

Anukul Chandra then returned to his village Himayetpur and started practicing medicine. Very soon he became a popular doctor. Words about his perceptive ability to diagnose disease, loving way of dealing with patient, unerring medicine prescription and his sheer feelings and help to the people spread around widely. Even the so called incurable diseases were cured by Anukul’s treatment. That made people to believe that there was some supernatural power with Anukul Chandra. Patients started pouring in to Himayetpur from far flung areas.

Anukul Chandra however could not keep himself confined to medical practice alone for longtime. He realized that a man can hardly be nourished to health without treating his mind. The root cause of all suffering lies in man’s obsession with complexes. Therefore, man can attain health and peace only when he is free from the pull of complexes. Keeping that in mind, Anukul Chandra mobilized some of his friends and followers and organized massive kirtans.

The age of kirtan in Anukul Chandra’s life was actually the phase of revelation of the divinity that he brought down on to the earth as incarnate. That was the phase when Anukul Chandra brought the entire society and environment into a spell of divine consciousness. Amongst his kirtan associates were Kishori Mohan Das, Ananta Nath Ray, Durganath Sanyal, Nafar Ghosh, Kokan, Bune and others. Some more entrants to the kirtan brigade were Satish Chandra Goswami, from the family lineage of Prabhupada Adaitya and Sushil Chandra Basu, who later years became prominent devotees. The mass kirtan that was staged at that time presented an unusual spectacle of mass devotion, leading to a stage of euphoria and trance. Anukul Chandra was the leader; the trigger in the ambience. He displayed a persona that was exceptionally charming, brilliant and attractive. He bore the image of divine in human form; a godly expression, a natural spark of brilliance with magnetic attraction. From that time onwards, Anukul was addressed as Sri Sri Thakur. People came to view God incarnate in him.

In the midst of kirtan, at the height of mass hysteria, Sri Sri Thakur used to lapse into state of suspended animation (samaadhi). At times his body temperature soared high to the level of cinder; and at other times the temperature would collapse to the level of ice. With ceased heart beat, his body would lie flat; at times would undergo series of mudra (yogic acrobatics), all without effort and in quick succession. Jets of blood would spray out of the pores of his skin. With symptoms of lifelessness, the body would radiate a glow and the mouth would go uttering words, sounds, voices, of known and unknown bytes seamlessly. The portions which people could understand appeared to be messages from high state of consciousness, some responses to unexpressed thoughts in the minds of people who surrounded. There were also some outpourings; discordant, disjointed yet powerful and rhythmic. After few days of this type of events, at the behest of Brundaban Adhikari, a wise man in Pabna town, parts of messages in Bengali, English and Sanskrit were noted down by devotees. Those noting have been compiled and published as ‘Holy Book’.

In Bengali year 1316, being requested by Atul Chandra Bhattacharya, Sri Sri Thakur penned down a charter of advices in one night. Those have been published in the form a pocketbook named ‘Satyanusaran’.

Let us think, behold and bowdown at His feet and follow Him with hearty adherence, allegiance and active service, installing Him in the throne of existential uphold and propitious immortal nectar of life.
stay with me always. Keep beside you.
Joyguru!

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ

যার উপর যা’কিছু সব দাঁড়িয়ে আছে তাই ধর্ম, আর তিনিই পরম পুরুষ। ধর্ম কখনও বহু হয় না ধর্ম একই আর তার কোন প্রকার নেই। মত বহু হতে পারে, এমনিকি যত মানুষ তত মত হতে পারে কিন্তু তাই বলে ধর্ম বহু হতে পারে না।

হিন্দু ধর্ম, মুসলমান ধর্ম, খৃষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ইত্যাদি কথা আমার মতে ভুল, বরং ও সবগুলি মত।

কোন মতের সঙ্গে কোন মতের প্রকৃত পক্ষে কোন বিরোধ নেই, ভাবের বিভিন্নতা, রকমফের একটাকেই নানপ্রকারে একরকম অনুভব!
সব মতই সাধনা বিস্তারের জন্য, তবে তা নানা প্রকারে হতে পারে; আর যতটুকু বিস্তারে যা হয় তাই অনুভূতি, জ্ঞান। তাই ধর্ম অনুভূতির উপর।

**********

যদি ভাল চাও তো জ্ঞানাভিমান ত্যাগ ছাড়, সবারই কথা শোন; আর যা তোমার হৃদয়ের বিস্তারের সাহায্য করে তাই কর। জ্ঞানাভিমান জ্ঞানের যত অন্তরায় আর কোন রিপু তত নয়। যদি শিক্ষা দিতে চাও তবে কখনও শিক্ষক হতে চেও না। আমি শিক্ষক, এই অহংকারই কাউকে শিখতে দেয় না। অহংকে যত দূরে রাখবে তোমার জ্ঞানের বা দর্শনের পাল্লা তত বিস্তার হবে।
অহংটা যখনই মিলিয়ে যায়, জীব তখনই সর্বগুন সম্পন্ন নির্গুন হয়।

**********
যদি পরীক্ষক সেজে অহংকার নিয়ে সদগুরু কিংবা প্রেমী সাধুগুরুকে পরীক্ষা করতে যাও তবে তুমি তাতে দেখবে তোমাকেই দেখবে ঠকে আসবে। সদগুরুকে পরীক্ষা করতে হলে তার নিকট সংকীর্ণ-সংস্কার বিহীন হয়ে ভাল-বাসার হৃদয় নিয়ে, দীন এবং যতদুর সম্ভব নিরহংকার হয়ে যেতে পারলে তাঁর দয়ায় সন্তুষ্ট হওয়া যেতে পারে।

তাকে অহং-এর কষ্টিপাথরে কষা যায় না, কিন্তু তিনি প্রকৃত দীনতা রূপে ভেড়ার শিঙে খন্ডবিখন্ড হন।

হীরক যেমন কয়লা প্রভৃতি আবর্জ্জনায় থাকে, উত্তমরূপে পরিষ্কার না করলে তা জ্যোতি বেরোয় না, তিনি তো তেমনি সংসারে অতি সাধারণ জীবের মত থাকেন, কেবল প্রেমের প্রক্ষালনেই তাঁর দীপ্তিতে জগৎ উদ্ভাসিত হয়। প্রেমীই তাঁকে ধরতে পারে। প্রেমীর সঙ্গ কর, তিনি আপনিই প্রকট হবেন।

অহংকারীকে অহংকারী পরীক্ষা করতে পারে। গলিত-অহংকে কি-করে সে জানতে পারবে? তার কাছে একটা কিম্ভুতকিমাকার-যেমন অজমূর্খের কাছে মহাপন্ডিত।

**********

বন্ধু ও বন্ধুত্ব আছে নির্ভরতা আর বিশ্বাসে

বন্ধুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জর্জ হার্ভার্ট বলেছেন, ‘একজন বন্ধু হলো সর্বোৎকৃষ্ট আয়না।’ তার মানে, এই আয়নাতে প্রতিমুহূর্তে সে নিজেকে দেখবে। শুধু বাহ্যিক অবয়বকে নয়, ভেতরটাকেও। বন্ধুত্বটা হওয়া চাই হাত আর চোখের সম্পর্কের মতো। হাতে ব্যথা লাগলে চোখে জল আসে। আর চোখে যদি জল ঝরে, তবে হাত এগিয়ে যায় তা মুছে দিতে। বন্ধু শব্দের মাঝে মিশে আছে নির্ভরতা আর বিশ্বাস। বন্ধু আর বন্ধন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বন্ধুত্ব মানেই যেন হৃদয়ের সবটুকু আবেগ নিংড়ে, ভালোবাসা দিয়ে মন খুলে জমানো কথা বলা। বন্ধুর জন্য গেয়ে ওঠা- হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে, দেখা হবে তোমার-আমার অন্যদিনের ভোরে।
অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য সুপরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের মতে, `একজন ব্যক্তির জীবনের ভালো দিকটা গড়ে ওঠে তার বন্ধুত্ব দিয়ে।` অনুভূতির যত রঙিন জানালা আছে তার মধ্যে বন্ধুত্বের জায়গাটি সবচেয়ে উজ্জ্বল ও স্নিগ্ধ। বন্ধুকে পাশে রেখে চলা যায় সীমাহীন পথ। বন্ধু বয়স ও শ্রেণি মানে না। বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে, মায়ের সঙ্গে, বাবার সঙ্গে, ভাইয়ের সঙ্গে, বোনের সঙ্গে। সহপাঠী হোক, হোক সমবয়সী। কোনো তফাৎ সেই বন্ধুত্বের গভীরতায় যদি কোনো খাদ না থাকে। জীবনে প্রথম বন্ধু গড়ে ওঠার স্মৃতি থাকে অমলিন। সময়ের প্রয়োজনে কোনো বন্ধু দূরে সরে যেতে পারে কিন্তু মনের দূরত্ব কখনই তৈরি হয় না। বন্ধুর সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই অমূল্য। যাদের বন্ধু নেই তারা বিষন্নতায় ভোগে, একাকিত্ব তাকে গ্রাস করে নেয়। ছন্দহীন জীবনে ছন্দ, নিরানন্দ জীবনে আনন্দের জোয়ার যোগ করতে বন্ধুর জুড়ি নেই। বন্ধুত্বকে কোনো পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে মাপা যায় না। মাপার দরকারও নেই। কিন্তু ভালো বন্ধু খুঁজে পাওয়া খুব সহজ নয়। সবাই ভালো বন্ধু হতেও পারে না। বন্ধু যেহেতু আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, তাই বন্ধু নির্বাচনে একটু সচেতন হতে হয়। বন্ধুত্বে হাত বাড়ানো অন্যায় নয়। তবে ভুল মানুষকে না বুঝেই বন্ধু বানিয়ে ফেলা ঠিক না। বন্ধু নির্বাচনের আগে কয়েকটি মানবিক গুণ তার মধ্যে খুঁজে নেওয়া উচিত। সৎ ও সত্যবাদী মানুষ ভালো বন্ধু হতে পারে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বুঝায়। দুই জন ব্যক্তি ও একটি জগৎ। অর্থাৎ দুই জনে সহযোগী হইয়া জগতের কাজ সম্পন্ন করা। আর, প্রেম, বলিলে দুই জন ব্যক্তি মাত্র বুঝায়, আর জগৎ নাই। দুই জনেই দুই জনের জগৎ।’ বন্ধুকে অনেকে প্রেমের সঙ্গে অথবা ভালোবাসার সঙ্গে এক করে ফেলেন। বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘ইহা ছাড়া আর একটা কথা আছে প্রেম মন্দির ও বন্ধুত্ব বাসস্থান। মন্দির হইতে যখন দেবতা চলিয়া যায় তখন সে আর বাসস্থানের কাজে লাগিতে পারে না, কিন্তু বাসস্থানে দেবতা প্রতিষ্ঠা করা যায়।’ বাস্তবিক অর্থে, একেক বন্ধু আমাদের মধ্যে একেকটা দুনিয়ার প্রতিফলন ঘটায়। বন্ধু এমন একজন মানুষ যার কাছে মনের কথা খুলে বলা যায় অবলীলায়। জীবনে চলার পথে অনেক রকমের বন্ধুর দেখা মিলবে। ভুল মানুষকে এড়িয়ে চলুন। নইলে জীবনে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। বন্ধুকে সঙ্গী করে জীবনের অমূল্য সময়টুকু করে তুলুন রঙিন।
নিজের ব্যক্তিগত আবেগ প্রকাশ করতে বন্ধুত্বের মত পবিত্র বন্ধনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কতটা যুক্তি সংগত প্রশ্ন রেখে গেলাম ???
**************
লেখক: কাতার প্রবাসী সাংবাদিক।
উৎসগ: সৌদি প্রবাসী বন্ধু গোলাম মোস্তফা খবিরকে। যার কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি বন্ধু ও বন্ধুত্বের অনুভুতি। যার বন্ধুত্বের প্রতিদান আমার শরীরের অঙ্গের বিনিময়েও পরিশোধযোগ্য নয়।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবনী

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র
জন্ম তাং: বাংলা ১২৯৫ সনের ৩০ ভাদ্র।(১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দ)

Sri Sri Thakur Anukulchandra – A Short Biography
By
Sri Binayak Chakravarty (Grandson of Sri Sri Thakur) on May 6th, 1981
Translated into English by Dr. Debesh Chandra Patra. on September 21, 2015

Towards the close of nineteenth century, humanity was passing through a critical phase. Man’s mind was disturbed and was getting disintegrated; so was his life. Every life was shattered by activities that are anti-human and anti-religious. Life on earth was getting more and more complicated, going away from the laws of nature. Mother India was through severe pain under the shackle of foreign rule. Amidst the vicious environment, mother earth still carried some people who were of pure soul and having crystal living.

One such saintly person was Shiv Chandra Chakraborty, living in Himayetpur village in Pabna district of northern part of undivided Bengal in India. Village Himayetpur was blessed by bounty of nature; all types of trees; varieties of fruits and flowers were there in abundance. The village was skirted by river Padma, discharging perennial flow from the Himalayan range of mountains. The village was surrounded by fertile fields, used for growing paddy and other crops. Other villages in the vicinity were Kashipur, Nazirpur, Chaatni, Pratappur and some more. Himayetpur, situated at two and half miles away from Pabna town, had something special in it. Life in Himayetpur was not so much stressed and ravaged, as in surrounding areas.

Shiv Chandra Chakraborty was a pious brahmin from Sandilya clan. He was popular for his wisdom and helping attitude to others. Wife Manamohini Devi was a living image of duty and purity. At her childhood, girl Manamohini, by virtue of her spiritual merit was blessed by diksha in dream from then saint of Agra, Huzur Maharaj. Ever since then, Manamohini Devi was practicing the holy ‘name’ with intensity and sincerity, while performing all her worldly duties of lady of the home. She displayed immense respect to superior. Both Shiv Chandra and Manamohini were relentlessly engaged with service to people. People in and around the village were greatly benefited by the qualities of head and heart that the couple dispensed.
Manamohini Devi gave birth to her first child at 07 hours 05 minutes on 14th September 1888. That was 30th day of Bhadra in 1295 as per Bengali calendar; 9th day of lunar cycle shuklapaksha(waxing Gibbous phase). That child later came to be known as Sri Sri Thakur Anukul Chandra. In later years, Manamohini Devi was blessed with two sons, Prabhash Chandra and Kumud Ranjan, and a daughter Guru Prasadi Devi, the youngest one.

From the days of infancy, Anukul Chandra displayed unusual features. A curious combination of charm, hyper activity and leadership qualities, with a spell of divine aura surrounded him. Whoever saw the boy felt his endearing manners, perennial love and compassion for others. Boy Anukul bore qualities like respect for elders, feelings for lonely, deep inquisitiveness, service to others, a dispassionate outlook; all these acquired a loving relationship with his peers. His friends used to address him ‘Raja bhai’ (brother royal). Boy Anukul was a mother’s child. Mother cast an overwhelming pull on Anukul. Mother imparted diksha to child Anukul, at the behest of sant Sarkar saheb.

Let us think, behold and bowdown at His feet and follow Him with hearty adherence, allegiance and active service, installing Him in the throne of existential uphold and propitious immortal nectar of life.
stay with me always. Keep beside you.
Joyguru!

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ

এটা খুবই সত্য কথা যে, মনে যখনই অপরের দোষ দেখবার প্রবৃত্তি এসেছে তখনই ঐ দোষ নিজের ভিতরে এসে বাসা বেধেছে। তখনই কালবিলম্ব না করে ওই পাপপ্রবৃত্তি ভেঙ্গেচুরে ঝেঁটিয়ে সাফ করে দিলে তবে নিস্তার, নইলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।
তোমার নজর যদি অন্যের কেবল কু-ই দেখে, তবে তুমি কখনই কাউকে ভালবাসতে পারবে না। আর, যে সৎ দেখতে পারে না সে কখনই সৎ হয় না।

তোমার মন যত নির্মল হবে, তোমার চক্ষু তত নির্মল হবে, আর জগৎটা তোমার নিকট নির্মল হয়ে ভেসে উঠবে।
তুমি যাই দেখ না কেন, অন্তরের সহিত দেখার সর্ব্বাগ্রে তার ভালটুকুই দেখতে চেষ্টা কর, আর এই অভ্যাস তুমি মজ্জাগত করে ফেল।

তোমার ভাষা যদি কুৎসা-কলঙ্কজড়িতই হয়ে থাকে, অপরের সুখ্যাতি করতে না পারে, তবে যেন কারো প্রতি কোনও মতামত প্রকাশ না করে। আর, মনে-মনে তুমি নিজ স্বভাবকে ঘৃনা করতে চেষ্টা কর, এবং ভবিষ্যতে কুৎসা-নরক ত্যাগ করতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ হও।

পরনিন্দা করাই পরের দোষ কুড়িয়ে নিয়ে নিজে কলঙ্কিত হওয়া; আর, পরের সুখ্যাতি করা অভ্যাসে নিজের স্বভাব অজ্ঞাতসারে ভাল হয়ে পড়ে। তাই বলে কোন স্বার্থবুদ্ধি নিয়ে অন্যের সুখ্যাতি করতে নেই। সে তো খোসামদ। সে ক্ষেত্রে মন মুখ প্রায়ই এক থাকে না। সেটা কিন্তু বড়ই খারাপ, আর তাতে নিজের স্বাধীন মত প্রকাশের শক্তি হারিয়ে যায়।

(চলবে)

*********

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (পঞ্চম পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (পঞ্চম পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবনী

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র
জন্ম তাং: বাংলা ১২৯৫ সনের ৩০ ভাদ্র।(১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দ)

Sri Sri Thakur Anukulchandra, the advent, who descended through the mercy of providence due to the cry of existential crisis and served normally with his own urge as a man.

He was a man, the holy man, the loving embodiment in the service of existential propitious bloom.

He was the prophet, who imparted existential upliftment with personal effulgence of unity to the people with compassionate thrill of life.He helped everyone to cross over every difficulty and induced everyone to thrive up every peculiarity of his own to the helm of love and pity, keeping his specific distinctiveness in tact with due conduction of his complexes to the ideal with love, faith and service.

He was the leading teacher of the mankind,who knew the existential trail of life and growth with environmental go.

He was an ‘avataar’ who used to impart, manage and elongate existential becoming.

He was the guide and the goal of life, towards existential proficiency with concentric zeal.

He was the central goading stimulus of existence which makes our conscience conscientious and he roamed in every being with controlled energizing activity and measured him accordingly, thereby he was ‘Iswar’.
He was the one who anointed with the blessed cream which blooms in every individual.

He was for one and all, with every hearty compassion that reached a far fetched plane with an unfathomed trail of intelligence.

Let us think, behold and bowdown at His feet and follow Him with hearty adherence, allegiance and active service, installing Him in the throne of existential uphold and propitious immortal nectar of life.
stay with me always. Keep beside you.
Joyguru!

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ

যদি সাধনায় উন্নতি লাভ করতে চাও, তবে কপটতা ত্যাগ কর।

কপট ব্যাক্তি অন্যের নিকট সুখ্যাতির আশায় নিজেকে নিজেই প্রবঞ্চনা করে, অল্প বিশ্বাসের দরুন অন্যের প্রকৃত দান হতেও প্রবঞ্চিত হয়।

তুমি লাখ গল্প কর, কিন্তু প্রকৃত উন্নতি না হলে তুমি প্রকৃত আনন্দ কখনই লাভ করতে পারবে না। কপটাশয়ের মুখের কথার সঙ্গে অন্তরের ভাব বিকশিত হয় না, তাই আনন্দের কথাতেও মুখে নীরসতার চিহ্ন দৃষ্ট হয়; কারন, মুখ খুললে কী হয়, হৃদয়ে ভাবের স্ফুর্তি হয় না।

অমৃতময় বারি কপটের নিকট তিক্ত লবন-ময়, তীরে যাইয়াও তার তৃষ্ণা নিবারিত হয় না।

সরল ব্যাক্তি উর্দ্ধদৃষ্টি সম্পন্ন চাতকের মত। কপটী নিম্নদৃষ্টিসম্পন্ন শকুনের মত। ছোট হও, কিন্তু লক্ষ্য উচ্চ হোক; বড় এবং উচ্চ হ’য়ে নিম্নদৃষ্টিসম্পন্ন শকুনের মত হওয়ায় লাভ কি?

কপট হয়ো না, নিজে ঠক না, আর অপরকেও ঠকিও না।

(চলবে)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী ( চতুর্থ পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী ( চতুর্থ পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবনী

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র

Anukulchandra was born on 14 September 1888 in Himaitpur village in the Pabna district of the eastern zone of Bengal in undivided India, now in Bangladesh. His father was Shibchandra Chakravarty (Shandilya Gotra Kanyakubja Brahmin) and his mother was Manmohini Devi.

From the very beginning, Anukulchandra was extremely mother centric. He accepted his mother as his guru throughout his life. The lover of the mankind, Anukulchandra set up an Ashram first at Pabna (later it was named Satsang by his mother) and then at Deoghar in India 1946, for fostering spiritual development. The Satsang ashram at Deoghar has now become a major place of attraction in Deoghar

In 1946 Anukulchandra went to Deoghar in Bihar and an ashram came up there as well. He had proclaimed that unless the human society adopts the marriage rules of Varnashram, there will be no peace in the world and all development work will prove to be futile. He did not return to Pabna after the Partition of India, but continued to live in Deoghar, where he left his mortal frame on 26 January 1969.

Let us think, behold and bowdown at His feet and follow Him with hearty adherence, allegiance and active service, installing Him in the throne of existential uphold and propitious immortal nectar of life.
stay with me always. Keep beside you.
Joyguru!

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ

সঙ্কোচই দুঃখ আর প্রসারনই সুখ। যাতে হৃদয়ে দুর্বলতা আসে, ভয় আসে তাতেই আনন্দের খাকতি – আর তাই দুঃখ। চাওয়াটা না পাওয়াই দুঃখ। কিছু চেও না। সব অবস্থায় রাজি থাক, দুঃখ তোমার কি করবে? দুঃখ কারো প্রকৃতিগত নয়কো। ইচ্ছে করলেই তাকে তাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। পরমপিতার কাছে প্রার্থনা কর- তোমার ইচ্ছাই মঙ্গল; আমি জানি না কিসে আমার মঙ্গল হবে। আমার ভিতরে তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক। আর তা’র জন্যে তুমি রাজী থাক-আনন্দে থাকবে, দুঃখ তোমাকে স্পর্শ করবে না।

কারো দুঃখের কারন হয়ো না, কেহ তোমার দুঃখের কারন হবে না।

দুঃখও একরকম ভাব, সুখও একরকম ভাব। অভাবের বা চাওয়ার ভাবটাই দুঃখ। তুমি জগতের হাজার করেও দুঃখ নষ্ট করতে পারবে না-যতক্ষন তুমি হৃদয় থেকে ঐ অভাবের ভাবটা কেড়ে নিচ্ছ। আর, ধর্মই তা করতে পারে।

(চলবে)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী ( তৃতীয় পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী ( তৃতীয় পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবনী

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র
জন্ম তাং: বাংলা ১২৯৫ সনের ৩০ ভাদ্র।(১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দ)
জন্মস্থানঃ পাবনা জেলার হিমাইতপুর গ্রামে।(হিমাইতপুরধাম)
পিতাঃ শিবচন্দ্র ।
মাতাঃ মনোমোহিনী দেবী ।
তিরোধানঃ ১৯৬৯ সনের ২৭ জানুয়ারি। (৮১ বছর বয়সে)
প্রতিষ্ঠিত আশ্রমঃ সৎসঙ্গ ।

গ্রন্থসমুহঃ
অনুকুলচন্দ্র তার জীবনকালে প্রায় ৪৬ টি গ্রন্থ রচনা করেন। তার মাঝে কিছু পুস্তকের নাম দেওয়া হলঃ
 ‘পুণ্যপুথি’
 ‘চলার সাথি’
 ’সত্যানুসরণ’
 ‘নানা প্রসঙ্গ’
 ’কথা প্রসঙ্গ’
 ‘বিবাহ বিধায়না’
 ’শিক্ষা বিধায়না’
 ’নিষ্ঠা বিধায়না’
 ’বিজ্ঞান বিধায়না’
 ’বিজ্ঞান বিভূতি’
 ‘সমাজ সন্দিপনা’ প্রভৃতি

ঠাকুর শ্রী শ্রী অনুকুলচন্দ্রের উপদেশঃ
1. তোমরা যে সম্প্রদায়েরই হও না কেন, মনে রেখ ঈশ্বর এক, ধর্মও এক।
2. থাকবি সংসারে, মন রাখবি ভগবানে।
3. ভগবানের পিছনে ছোট, শান্তি তোর পিছনে ছুটবে।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ

জগতে মানুষ যত কিছু দুঃখ পায় তার অধিকাংশই আসে কামিনী কাঞ্চনে আসক্তি থেকে, ও দুটো থেকে যত দূরে সরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। ভগবান শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণদেব সবাইকে বিশেষ করে বলেছেন, কামিনী-কাঞ্চন থেকে তফাৎ তফাৎ খুব তফাৎ থাক।

কামিনী থেকে কাম বাদ দিলে ইনি মা হয়ে পড়েন। বিষ অমৃত হয়ে গেল। আর মা মা-ই, কামিনী নয়কো। মার শেষে গী দিয়ে ভাবলেই সর্বনাশ। সাবধান! মা কে মাগী ভেবে মর না। প্রত্যেক মাই জগজ্জনী। প্রত্যেক মেয়েই নিজের মায়ের বিভিন্ন রূপ, এমনতর ভাবতে হয়। মাতৃভাব হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত না হলে স্ত্রীলোকে ছুতে নেই—যত দূরে থাকা যায় ততই ভাল; এমনি কি মুখদর্শন না করা আরও ভাল।

আমার কামক্রোধাদি গেলনা গেলনা বলে চিৎকার পাড়লে তারা যায় না। এমন কর্ম, এমন চিন্তা, অভ্যাস করে নিতে হয় যাতে কামক্রোধাদির গন্ধও নেই- মন যাতে ওসব ভুলে যায়। মনে কামক্রোধাদির ভাব এলে কী করে তার প্রকাশ পাবে? উপায় উচ্চতর উদার ভাবে নিমজ্জিত থাকা।

সৃষ্টতত্ব, গণিতবিদ্যা, রসায়ণশাস্ত্র, ইত্যাদির আলোচনায় কামরিপুর দমন থাকে। কামিনী কাঞ্চন সম্পর্কিত যে কোন প্রকার আলোচনাই ওতে আসক্তি এনে দিতে পারে। ও সব আলোচনা থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভাল।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী ( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী ( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবনী

পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে স্মরণীয় ও অনুসর্তব্য বহুবিধ অমূল্য নির্দেশ দান করেছেন। তিনি ধর্ম, অর্থ, কর্ম, পরমার্থ, অধ্যাত্ম, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, বিবাহ, কৃষি, শিল্পকলা, বাণিজ্য, বৃত্তি, সত্তা, ব্যষ্টি, সমষ্টি, অতীত ও বর্তমান ভবিষ্যৎ সবকিছুকে এক মহা সমন্বয়-সূত্রে সংগ্রথিত করে এবং সর্বার্থ পরিপূরাণী পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন তাঁর অমৃতনিষ্যন্দী বাণীনিচয়ের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। এই মহাবাণীনিচয় জনসাধারণের মধ্যে পরিবেশনকল্পে বিষয়বস্তু বিচারে ভাগে ভাগে ভিন্ন-ভিন্ন গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে।

অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর প্রায় ৪৬টি পুস্তক রচনা করেন। এগুলোতে ধর্মশিক্ষা, সমাজ প্রভৃতি বিষয়ে আদর্শ ও উপদেশসমূহ বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:-
সত্যানুসরণ
পুণ্যপুথি
অনুশ্রুতি (৬ খন্ড)
চলার সাথী
শাশ্বতী (৩ খন্ড)
বিবাহ বিধায়না,
সমাজ সন্দীপন,
যতি অভিধর্ম[১]
নারীর নীতি , ইত্যাদি।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ

অনুতাপ কর; কিন্তু স্মরণ রেখ যেন পুনরায় অনুতপ্ত হতে না হয়। যখনই তোমার কুকর্মের জন্য তুমি অনুতপ্ত হবে, তখনই পরমপিতা তোমাকে ক্ষমা করবেন, আর ক্ষমা হলেই বুঝতে পারবে তোমার হৃদয়ে পবিত্র সান্তনা আসছে, আর তা হলেই তুমি বিনীত, শান্ত ও আনন্দিত হবে।

যে অনুতপ্ত হয়েও পুনরায় সেই প্রকার দুষ্কর্মে রত হয় বুঝতে হবে সে সত্বরই অত্যন্ত দুর্গতিতে পতিত হবে। শুধু মুখে মুখে অনুতাপ ও আরও অন্তরে অনুতাপ আসার অন্তরায়। প্রকৃত অনুতাপ এলে তার সমস্ত লক্ষণ অল্পবিস্তর প্রকাশ পায়।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (প্রথম পরিচ্ছেদ)

শ্রী শ্রী ঠাকুরের জীবনী ও বানী (প্রথম পরিচ্ছেদ)
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

যুগ পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের জীবনী

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র (১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮- ২৬শে জানুয়ারি, ১৯৬৯) বাঙালি ধর্ম সংস্কারক। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ নামক সংগঠনের প্রবর্তক। তিনি ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুরে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে দেহত্যাগ করেন।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের সত্যানুসরণ গ্রন্থ থেকে পাঠ

ভারতের অবনতি (degeneration) তখন থেকেই আরম্ভ হয়েছে, যখন থেকে ভারতবাসীর কাছে অমূর্ত্ত ভগবান অসীম হয়ে উঠেছে—ঋষি বাদ দিয়ে ঋষিবাদের উপাসনা শুরু হয়েছে।

ভারত! যদি ভবিষ্যৎ উন্নতিকে আবাহন করতে চাও, তবে সম্প্রদায়গত বিরোধ ভুলে জগতের পুর্ব পুর্ব গুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্পন্ন হও—আর তোমার মুর্ত ও জীবন্ত গুরু বা ভগবানে আসক্ত (attached) হও, –আর তাদের স্বীকার কর যারা তাঁকে ভালবাসে। কারণ, পুর্ব্ববর্ত্তীকে অধিকার করিয়াই পরবর্তীর আবির্ভাব হয়।

অর্থ, মান যশ ইত্যাদি পাওয়ার আশায় আমাকে ঠাকুর সাজিয়ে ভক্ত হয়ো না, সাবধান হও ঠকবে; তোমার ঠাকুরত্ব না জাগলে কেহ তোমার কেন্দ্রও নয় ঠাকুরও নয় – ফাঁকি দিলে পেতে হবে তা।

সত্যানুসরণ

সর্বপ্রথম আমাদের দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। সাহসী হতে হবে, বীর হতে হবে। পাপের জলন্ত প্রতিমূর্তি ঐ দুর্বলতা। তাড়াও, যত শীঘ্র পার, ঐ রক্ত শোষনকারী অবষাদ উৎপাদক vampire কে। স্মরণ কর তুমি সাহসী, স্মরণ কর তুমি শক্তির তনয়, স্বরণ কর তুমি পরমপিতার সন্তান। আগে সাহসী হও, অকপট হও, তবে জানা যাবে তোমার ধর্মরাজ্যে ঢোকাবার অধিকার জন্মেছে।

এতটুকু দুর্বলতা থাকলেও তুমি ঠিক ঠিক অকপট হতে পরবে না; আর যতদিন তোমার মন-মুখ এক না হচ্ছে ততদিন তোমার মলিনতার গায়ে হাতই পড়বে না। মন মুখ এক হলে আর ভিতরে গলদ জমতে পারে না-গুপ্ত আবর্জনা ভাষায় ভেসে উঠে পড়ে। পাপ গিয়ে তার ভিতর বাসা বাঁধতে পারে না।

হটে যাওয়াটা বরং দুর্বলতা নয়কো কিন্তু চেষ্টা না করাই দুর্বলতা। তুমি কোনকিছু করতে প্রাণপন চেষ্টা করার সত্বেও যদি বিফলমনোরথ হও, ক্ষতি নাই। তুমি ছেড় না, ঐ অম্লান চেষ্টাই তোমাকে মুক্তির দিকে নিয়ে যাবে।

দুর্বল মন চিরকালই সন্দিগ্ধ, তারা কখনই নির্ভর করতে পারে না। বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে তাই প্রায়ই রুগ্ন, কুটিল, ইন্দ্রিয়পরবশ হয়। তাদের নিকট সারাটা জীবন জ্বালাময়। শেষে অশান্তিতে সুখ দুঃখ ডুবে যায়, কি সুখ কি দুঃখ বলতে পারেনা। বললে হয়তো বলে বেশ, তাও অশান্তি; অবসাদে জীবন ক্ষয় হয়ে যায়।

দুর্বল হৃদয়ে প্রেম ভক্তির স্থান নেই। পরের দূর্দশা দেখে পরের ব্যাথা দেখে, পরের মৃত্যু দেখে নিজের দূর্দ্দশা, ব্যাথা বা মূত্যুর আশঙ্কা করে ভেঙ্গে পড়া, এলিয়ে পড়া বা কেঁদে আকুল হওয়া – ওসব দূর্বলতা। যারা শক্তিমান, তারা যাই করুক, তাদের নজর নিরাকরনের দিকে; যাতে ও সব অবস্থায় আর না কেউ বিদ্ধস্ত হয়, প্রেমের সহিত তারই উপায় চিন্তা করা—বুদ্ধদেবের যা হয়েছিল। ঐ হচ্ছে সবল হৃদয়ের দৃষ্টান্ত।

তুমি বল না তুমি ভীরু, বলনা তুমি কাপুরুষ, বলনা তুমি দুরাশয়। পিতার দিকে নজর কর, আবেগভরে বল ওগো আমি তোমার সন্তান; আমার আর জড়তা নেই, আমি আর কাপুরুষ নই, আমি আর তোমাকে ভুলে নরকের দিকে ছুটে যাব না, আর তোমার জ্যোতির দিকে পেছন ফিরে অন্ধকার অন্ধকার বলে চিৎকার করব না।
(চলবে)

কিছু গল্প কিছু স্বগোতক্তি

দীর্ঘজীবী হও হে প্রিয় সৈনিক

২০১২ সালের ডিসেম্বরের কনকনে শীতের এক রাত। ওপার বাংলার শিয়ালদহ স্টেশনের জন আহার রেস্টুরেন্টে বসে আছি, সম্ভবত এক কাপ চা ছিল টেবিলে। ন’টা সারে ন’টা বেজে থাকবে। রেস্টুরেন্টটিতে তখন আমার ঠিক পাশে, জানালা সংলগ্ন টেবিলের দু’প্রান্তে বসেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুজন বা একজন তরুণ সদস্য (একজনের গা’য়ে ইউনিফর্ম দেখে নিশ্চিত হই, আরেকজনের ব্যাপারে আজ আর কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারছি না যে, তার গা’য়ে সৈনিকের পোশাক ছিল কিনা)। উভয়েরই বয়স সর্বোচ্চ পচিশ। ওরা জন আহারের দশ রুপী মূল্যের পুরি সবজী খাচ্ছিল। ছয়টা সাতটা পুরি আলুর তরকারি চাটনি’র প্যাকেজ। মূল্য দশ রুপি ছিল তখন। এ সময় দেখলাম, আনুমানিক এগারো বারো বছর বয়সী নোংরা আলুথালু কুচকুচে কালো বর্ণের জনৈক স্থানীয় পথশিশু ঠিক জানালার সামনে, জানালার শার্শিতে মুখ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ওদের পুরি সবজী খাওয়া দেখছে লোভাতুর চোখে।

এভাবে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। দুজনের পুরি সবজী খাওয়া তখন প্রায় শেষ প্রান্তে। এ সময় দেখলাম, ইউনিফর্ম পরিহিত তরুণ সৈনিকটি তার অবশিষ্ট দু’টি বা তিনটি পুরি আর খানিকটা আলুর তরকারি নিয়ে যেয়ে দরজার কাছে শিশুটিকে ডেকে ওর হাতে তুলে দিলো। শিশুটির মুখ নিটোল হাসিতে ভরে উঠলো। হাসতে হাসতে সে সৈনিকের সেই অবশিষ্ট পুরি সবজী নিয়ে একপ্রকার নাচতে নাচতে প্লাটফর্মের কোনও এক দিকে হেঁটে চলে গেল দ্রুত পা’য়ে। তারপর তরুণ সৈনিকটি আবার ফিরে এসে বসলো আগের জায়গায়। আমি রেস্টুরেন্টের ভিতরে বসে দৃশ্যগুলো দেখলাম সুখ দুঃখের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে। সেই সৈনিকের প্রতি অপার শ্রদ্ধায় আমার মাথা নুয়ে এসেছিল উপস্থিত মুহূর্তে। ঠিক যেমন এখন এ মুহূর্তেও ঘটনাটি লিখতে যেয়ে একইরকম মিশ্র অনুভূতিতে ভরে উঠছে মন, একইভাবে শ্রদ্ধায় নতমস্তক হয়ে উঠছি।

আজ আমার এই অত্যন্ত ক্ষুদ্র লেখার মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা ভালবাসা জানাচ্ছি, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেই তরুণ সদস্যকে। বিশেষ একটি বিষয়ে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলবারও সৌভাগ্য হয়েছিল। বেঁচে থাকো হে প্রিয় সৈনিক। দীর্ঘজীবী হও। পৃথিবীর সকল সৈনিক তোমার মতো সুকুমার আলোকিত মনের অধিকারী হয়ে উঠুক।

***
চলন্ত বাসে একটি ব্যার্থ ছিনতাইয়ের স্মৃতি

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ঢাকায় তখন ভলভো নামের দ্বিতল বাস চলতো। উত্তরা মতিঝিল ও মিরপুর মতিঝিল এই দুই রুটে প্রচুর বাস ছিল। ‘ভলভো’ নাম আসলে যাত্রীদেরই দেয়া, বাসগুলোর আদৌ কোনও নাম ছিল না। বিআরটিসি’র লাল রঙের সরকারী দ্বিতল বাস। খুব সম্ভবত সুইডিশ অটোমোবাইল কোম্পানি ভলভো’র তৈরিকৃত ছিল বাসগুলো। বাসের গা’য়ে ইংরাজিতে গোটা গোটা হরফে ভলভো লেখা, যা লোকমুখে পরবর্তীতে বাসের নামে পরিণত হয়। ওই বাসে করেই একদিন সন্ধ্যাবেলা পল্টন যাচ্ছিলাম। নিচতালায় বেরোনোর দরজার কাছে বসেছিলাম। আমার মুখোমুখি চেয়ারে বসা এক প্রবীণ দম্পতি। আনুমানিক সাতটা সারে সাতটা বেজে থাকবে।

যাই হোক বাস চলছে। এসময় ফার্মগেট পেরিয়ে কাওরান বাজারে চলে এলো বাসটা। ট্রাফিক জ্যাম, সিগনাল ইত্যাদির জন্য অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল গতি। এভাবে যেতে যেতে এক পর্যায়ে কাওরান বাজারে দেখলাম, চলন্ত বাসে বাইরে থেকে কে যেন হাত বাড়িয়ে ছো মেরে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করলো আমার সম্মুখে বসে থাকা প্রবীণ ভদ্রমহিলার কানের দুল জোড়ার একটি। খুব সম্ভবত সোনার ছিল ওগুলো। এখনও চোখে ভাসছে উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের চকচকে দুল জোড়া। শুরুতে একটুও বুঝতে পারিনি, ব্যাপারটা ঠিক কী ঘটলো, কয়েক মুহূর্ত লেগে গিয়েছিল পুরোপুরিভাবে আত্মস্থকরণে। ঠিক একেবারে আমার মুখোমুখি বসেছিল দুজন। সেই ভদ্রমহিলার চটজলদি সজাগ হয়ে নিজেকে সরিয়ে নেবার দক্ষতা ছিল বিস্ময়কর। বাইরে থেকে ছিনতাইকারী ছো-ও দিয়েছে, আর সেও তৎক্ষণাৎ তার মাথা ততোধিক দ্রুতবেগে সরিয়ে নিয়েছে জানালার কাছ থেকে। আনুমানিক ষাট ছুঁইছুঁই ছিল প্রবীণার বয়স। যাই হোক কোনও বিপদ হলো না। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটে গিয়েছিল যে বাসে অবস্থিত অন্য যাত্রীদের কেউই বিন্দুমাত্র কিছু আঁচ করতে পারেনি। পনেরো থেকে বিশ সেকেন্ডর একটি ব্যর্থ ছিনতাই চেষ্টা। আমি মুখোমুখি বসে থেকে দেখলাম সব। সে সময় সদ্য সিগনাল থেকে বেরিয়ে বেশ দ্রুত গতিতে চলতে লাগলো বাসটি। ঘটনার পর জানালা দিয়ে সামনে (ওই বাসের সামনের কয়েকটি সিট ছিল উল্টোদিকে) তাকিয়ে দেখলাম, ছিপছিপে গড়নের লুঙ্গি শার্ট পরা আনুমানিক বছর পচিশের এক যুবক রাতের আলোআঁধারি নির্জন সড়কে ধীর পা’য়ে হেঁটে চলেছে আপনমনে।

ব্যাপারটা শুধু কানের একটি এমিটিশন বা সোনার দুল ছিনতাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। যেভাবে ওরকম একটি দ্রতগতির বাসের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে চিলের মতো ছোঁ মেরে ছিনতাইকারী সেই প্রবীণার দুল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল, এতে ভদ্রমহিলার কানও ছিড়ে যেতে পারতো, ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। সৌভাগ্যক্রমে শেষমেশ অবশ্য খারাপ কিছুই ঘটেনি। এটা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র সেই ভদ্রমহিলার তৎক্ষণাৎ দ্রুতবেগে মাথা আরেকদিকে সরিয়ে নেবার দক্ষতার জন্য। এমনকি পাশে বসে থাকা তার স্বামীও বিন্দুমাত্র কিছু আঁচ করতে পারেনি। ভদ্রমহিলা ক্ষণকাল পরে তাকে বলেছিল। আর এদিকে দ্বিতল ভলভো বাস চলছে তো চলছেই।

একদিন কোলকাতায়

২০১২ সালের ডিসেম্বরের এক কনকনে শীতের রাত। স্থান, ভারতের কোলকাতাস্থ নন্দন। প্রধান ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশে সাজ সাজ রব। উপলক্ষটা ছিল ‘চিলড্রেন ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল’। নানা রঙে সেজেছে নন্দন। চারিদিকে উজ্জ্বল আলোকসজ্জা, বিভিন্ন রকমের অলঙ্করণ। শিশুদের উৎসব বলে কথা, কোথাও মিকি মাউসের প্রতিকৃতি কোথাও টম এন্ড জেরি চার্লি চ্যাপলিন তো কোথাও আবার বাঙালির গুপী বাঘা ফেলুদা তো আছেই! সাথে শিশুকিশোরদের চিত্তাকর্ষক ছোট বড় নানান অস্থায়ী ভাস্কর্য। আমরা বড়রাও দিব্যি উপভোগ করছিলাম। আরেকটু পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী আসবেন। অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে সবাই। সেদিনই মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন সপ্তাহব্যাপী উৎসবটি। সাদা ইউনিফর্ম পরা পুলিশে ভরে গেছে চারপাশ।

এ সময় সেখানে পশ্চিম বাংলার বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র এলেন (নিশ্চয়ই তিনি আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এসেছিলেন)। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালেন দরজার সামনে। কিছু আনুষ্ঠানিক কারণে তার অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশে বিলম্ব হচ্ছিল। বোধহয় খানিকটা আগেই এসে পড়েছিলেন। সে যাই হোক লোকজন বেশ কৌতূহলভরে দেখছিল লোপামুদ্রা মিত্রকে। আমিও ছিলাম সেই কৌতূহলীদের দলে। হা হা হা। লোপামুদ্রা মিত্রকে টিভিতে অনেকবার দেখেছি, কিন্তু কখনওই তেমন সুন্দরি বা আকর্ষণীয়াও মনে হয়নি বরং বেশ সাধরণ চেহারা; তেমন সাজগোজও তাকে কখনও করতে দেখিনি। তিনি আসলে ঠিক অমন স্বভাবের নন। মানে খুব অনাড়ম্বর সাদামাটাভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করে থাকেন ক্যামেরার সামনে। যারা তাঁকে চেনেন, তারা জানেন ব্যাপারটা। কিন্তু সেদিন সরাসরি দেখে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে, আমার কেন যেন খুব ভাল লাগছে তাঁকে দেখতে। কী এক আশ্চর্য মাধুরীময়তা, লাবণ্যতা লুকিয়ে আছে তাঁর চেহারায়। তন্ময় হয়ে দেখছিলাম। বলা বাহুল্য তখনও তেমন কোনও সাজগোজ করেননি, বেশ সাধারণভাবেই এসেছিলেন। পরনে রঙিন ঝলমলে একটি শাড়ি, তার উপরে একটা কার্ডিগান। মুখে খুব হালকা কিছু প্রসাধন থাকলেও থাকতে পারে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে সময় তিনি স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন। তাঁর থেকে মাত্র দুতিনহাত দূরে দাঁড়িয়ে দারুণ শীতে মুখ দিয়ে শো শো শব্দ করতে করতে হা করে মুগ্ধ চোখে দেখছিলাম আমার খুব প্রিয় এই গায়িকাকে।

এ সময় একজন ইয়া লম্বা, মোটাসোটা যুবককে ঘটনাস্থলে আবিষ্কার করলাম। ওকে যুবক বলাটাও বোধকরি ঠিক হচ্ছে না। আকার আকৃতিতে অমন দৈত্যাকার হয়ে উঠলেও সে সময় ওর বয়স আঠার’র বেশি হয়তো ছিল না। ছেলেই বলি ওকে, নিতান্তই কিশোর, মুখে চিকন গোফের রেখা, মাথাভর্তী দীর্ঘ এলোমেলো চুল। বেশ মোটা ছিল ছেলেটি, কিন্তু উচ্চতার কারণে স্বাস্থ্যটা স্বাভাবিকই দেখাচ্ছিল। সবার থেকে উঁচুতে মাথা নিয়ে এদিক ওদিক লটরপটর করে বেড়াচ্ছে। লোপামুদ্রা মিত্রকেও বারবার ঘুরে ঘুরে দেখছিল।

কিছুক্ষণ পর দানবটা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘দাদা দাদা, উনি কে?’ আমার উচ্চতা পাঁচ ফিট নয় ইঞ্চি; বাংলাদেশ বা ভারতের মানুষের গড় উচ্চতা অনুযায়ী সাধরণভাবে লম্বাই বলা যেতে পারে। এহেন আমাকেও কাছাকাছি হওয়াতে মাথা বেশ উঁচুতে তুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হচ্ছিল। ও নির্ঘাত ছয় ফিট ছেড়েও আরও দু’তিন ইঞ্চি বেশি হয়ে থাকবে। পরে আরও বেড়েছে কিনা কে জানে! আশা করি, আবার কোনওদিন কোলকাতায় গেলে ওকে দেখবো।

‘উনি বিখ্যাত গায়িকা লোপামুদ্রা মিত্র।’ উত্তরে জানালাম আমি। আমার কথায় কোনও ভাবান্তরই হলো না ওর। অত্যন্ত স্বাভাবিক। লোপামুদ্রা মিত্রকে চিনলে তো আর আরেকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে বসতো না যে তিনি কে। কে জানে বিদেশ থেকে এসেছিল কিনা, কোলকাতার স্থানীয় কেউ লোপামুদ্রা মিত্রকে চিনবে না, তাও কি সম্ভব! নাকি আমার মতোই একজন বাংলাদেশী ছিল! হা হা হা।

যাই হোক আমার কাছ থেকে লোপামুদ্রা মিত্রের পরিচয় পেয়ে দেখলাম, ওর লটরপটর আরও বেড়ে গেল। দৈত্যাকার শরীরটা একবার এখানে তো আরেকবার ওখানে। বুঝলাম না এতো উসখুস করছে কেন! ওর উদ্দেশ্য কি! আসলে বিশালাকার শরীরের কারণে খুব চোখে পড়ে যাচ্ছিল।

একপর্যায়ে দেখলাম কয়েকজনকে ‘এই সর এই সর’ বলে বেশ সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে লোপামুদ্রা মিত্রের একদম প্রায় শরীর স্পর্শ করার মতো কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। আরে… দানবটা কি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবে নাকি, লোপামুদ্রা মিত্রের ঘাড়ে চড়ার মতো অবস্থা! মনে মনে প্রস্তুতি নিলাম গায়িকার কোনওরকমের অসম্মান হলে আমিও মাঠে নামবো। মরলেও পর্বতটাকে কিছুটা হলেও নড়াচড়া করিয়েই ছাড়বো। উপস্থিত এই দুতিনজন কঙ্কালসার লিলিপুট পুলিশ এর কিছুই করতে পারবে না। ওর পাঁচ কেজি ওজনের হাতির হাতের একটি থাবাই যথেষ্ট এই রূগ্ন শীর্ণকায় মাঝবয়সী পুলিশগুলোকে এই কনকনে শীতের রাতে সর্ষেফুল দেখাতে। চেহারা দেখলে মনে হয় ওরা ডায়েট কন্ট্রোল করছে। এই দুতিনজন অভুক্ত, পুষ্টিহীনতার শিকার মাঝবয়সী পুলিশ এই হাতিটাকে কিছুতেই সামলাতে পারবে না! সুতরাং আমাকে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে হলেও এগিয়ে যেতে হবে ওরকম কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে। আমি তৈরি।

এরপর দেখলাম পাহাড়টা লোপামুদ্রা মিত্রের মুখের কাছে মুখ নিয়ে এলো! আরে… শালা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি! ওর উদ্দেশ্য কি! গায়িকার মুখের কাছে মুখ নিয়ে গেছে কেন! জোর করে কি চুমুটুমু খেয়ে বসবে নাকি আবার মা’র বয়সী একজন ভদ্রমহিলার গালে! হাত মুষ্টিবদ্ধ করলাম। আমার প্রিয় গায়িকা, একটু চিৎকার দিলেই এলোপাথাড়ি মারা শুরু করবো এই দুষ্ট দৈত্যটাকে, পরে যা হয় হোক পরোয়া করি না। জানি, ওর সাথে শক্তিতে পেরে উঠবো না। ঐরাবতসম শরীরটা দিয়ে আমাকে কোনওরকম একবার চেপে ধরতে পারলেই আমার ভাবলীলা সাঙ্গ হওয়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে! যাক কি আর করা! তবু স্বান্তনা এই যে, একজন বীর হিসেবে পৃথিবীকে টাটা বাই বলে চলে যাবো।

এমতাবস্থায় দেখলাম দানবটা একেবারে গায়িকার কানের কাছে মুখ নিয়ে যেয়ে ফিসফিস করে কথা বলতে লাগলো। না, আর তো সহ্য করা যায় না! আরও এক কদম মুষ্টি বাগিয়ে এগিয়ে গেলাম। যা হয় হোক আজ এর একটা এসপার ওসপার করেই ছাড়বো। গায়ের জোরে শালা যা খুশি তাই করে বেড়াবি, আর সবাই চুপচাপ দেখে যাবো! না, তা হয় না। এর আগেও কয়েকজনকে ইচ্ছেমতো ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গায়িকার কাছে গিয়েছিলি! আমার তখনই প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিল। যা হোক প্রিয় গায়িকার প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি। আমি আমার দিক থেকে সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত। আমার প্রিয় গায়িকা, সামান্য আহা উহু করলেই সর্ব শক্তিতে ঝাপিয়ে পড়বো দৈত্যটার ওপর। জানি, বড়জোর একটু নড়েচড়ে উঠবে, আর তেমন কিছুই হবে না। ওকে সুবিধামতো নাগালেই পাবো না। পরবর্তীতে নির্ঘাত আমাকে ইচ্ছেমতো তুলোধোনা করে ছাড়বে। আর এইসব পাবলিক তখন কেবল দর্শক হয়ে মজা লুটবে দূর থেকে, কেউ এগিয়ে আসবে না। এই এক ব্যাপারে দুই বাংলার মানুষের মাঝে একচুল পরিমাণও কমবেশি নেই। প্রভাবশালী, বলশালীরা যা খুশি তাই করুক, তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করা যাবে না। পুলিশ নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবে। কিন্তু ততক্ষণ আমি বাঁচি কিনা কে জানে! আমার ঘাড় মটকে দিতে এই পাহাড়সম দানবটার মাত্র দুমিনিটই যথেষ্ট।

এমতাবস্থায় দেখলাম লোপামুদ্রা মিত্র ওকে খানিকটা উষ্মাভরে বললো, ‘আরে দাঁড়াও না। আগে অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসি, তারপর।’ হুমম মানে, অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে কি হবে! ঐরাবতটা কি প্রস্তাব দিয়েছে, যেটা অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসার পর হবে! ভাবলাম। লোপামুদ্রা মিত্র কি ওর ধর্ম মা হতে যাচ্ছে নাকি! বুঝলাম না কিছুই। তবে হাতের মুষ্ঠি খুলে দিলাম। না, সিরিয়াস কিছু নয়। পর্বতটাও একটু তফাতে চলে গেল। বিপর্যয়কর কিছুই হলো না শেষমেশ।

এ সময় আমি কৌতূহলী হয়ে দানবটার কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা ভাই, তুমি লোপামুদ্রা মিত্রের কানেকানে ফিসফাস করে কি বলছিলে?’
আমাকে চিনতে পারলো ও। মিনিট পাঁচেক আগে আমার কাছেই জানতে চেয়েছিল, লোপামুদ্রা মিত্র কে। আমার আচম্বিত প্রশ্নে ভীষণ অপ্রস্তুত হতে দেখলাম ওকে। বেশ লজ্জিতও দেখাচ্ছিল। পারলে উত্তর না দিয়ে ছুটে পালায় সেখান থেকে। আমিও মাথা উঁচুতে তুলে মুখ কঠোর করে ওর দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছি উত্তরের। জবাব না দিয়ে যাবে কোথায় বাছাধন! আমিই তোমাকে চিনিয়েছি শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রকে। এখন আমার কৌতূহল তুমি মেটাও, কি ফিসফাস করছিলে কানেকানে?

এদিক ওদিক তাকিয়ে চেহারায় চরম বিরক্তিভাব ফুটিয়ে তুলে পাহাড়টা আমাকে তখন উত্তরে বললো, ‘এই, কিছু না দাদা, একটা সই চেয়েছিলাম।’ এই উত্তর শুনে আমি তো একেবারে থ। থ মানে থ… এক্কেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, আরেকটু হলেই মূর্ছা যেতাম।