বিভাগের আর্কাইভঃ স্মৃতিকথা

» জীবন গদ্য (ফেলে আসা দিনগুলো)

কাপড়ের পুতুল কালো সুতোর চুল। রঙবেরঙের শাড়িতে সাজিয়ে গুছিয়ে পুতুল কন্যা শুইয়ে রাখতাম কাগজের বাক্সে। কাপড়ের কিংবা মাটির পুতুলেই আমাদের আনন্দ ছিল। আমরা তাই নিয়ে সুখি ছিলাম, উচ্ছ্বল ছিলাম। পুতুলের কাঁথা বালিশ সুতো তুলো দিয়ে সেলাই করা প্রহর আর এখানে নেই। আমাদের বিকেল কেটে যেতো খেলনা রান্নাবাটি খেলে কিংবা পুতুল বিয়ে বিয়ে খেলায়। লাল ইট বাটা মশলা আর বালির ভাতের প্রহরগুলো নাগালের বাইরে এখন,অতীত ঘাটলে রোমাঞ্চিত হই আর ভাবি তোমাদের প্লাস্টিকের পুতুল, টেডি বিয়ারের যুগে তোমরা ঘরে বন্দি থেকেই সুখ কুঁড়াচ্ছ। তোমরা ন্যাকা ভাব ধরে টেডি জড়িয়ে শোও, তোমাদের সাক্ষাৎকার নিলে তোমরা টেডি কোলে বসিয়ে কথা বলো। তোমাদের যুগ বড্ড ন্যাকা যুগ।

মুঠোফোনের পর্দায় চোখ যেটুকু সময় পাচ্ছো, কিংবা টিভির পর্দায়। তোমরা শুদ্ধ হাওয়ায় উড়তে জানো না, শিখো নি কিভাবে উচ্ছ্বাস কুঁড়াতে হয়। হাতে গোনা কয়েক বন্ধু নিয়ে গড়ে নিয়েছো তোমাদের পৃথিবী। আমাদের মন ছিল দোয়েল পাখি। চঞ্চলতার অপর নাম খঞ্জন পাখি ছিল আমাদের যুগ। আমরা প্রেম শিখিনি যে বয়সে সে বয়সে তোমরা আই লাভ ইউ আই লাভ ইউ মুখে ফেনা তুলে ফেলো। তোমাদের মুখে অশ্লীল কথাগুলো হড়বড় করিয়ে বেরিয়ে পড়ে, তোমাদের লজ্জাহীন পৃথিবীতে বড্ড লজ্জা পাই।

পথে হাঁটলেই কানে গরম শিশা গালানোর মত কিছু শব্দ উড়ে এসে কান ঝাঁঝাঁ জ্বালিয়ে দেয়। তোমাদের ভাষা শুনে আতংকে কেঁপে উঠি। তোমরা সিক্স সেভেন এইটে পড়া বাচ্চা, তোমাদের ঠোঁট হতে ঝরে পড়ে মুহুর্মুহু অশালীন ভাষা। তোমরা বলো জায়গা মতো ফেললে চার পাঁচ বাচ্চার বাপ হয়ে যেতে উহ্,কি বীভৎস তোমাদের যুগ। তোমাদের কচি ঠোঁটে নিকোটিনের ধোঁয়ার কুণ্ডুলি। তোমাদের আদব কায়দা কিছুই নেই অবশিষ্ট। পথে হাত ধরে হাঁটো প্রেমিকার। তোমাদের ভয় নেই অথচ আমাদের মায়ের বকুনির ভয় ছিল, সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে হতো। আমাদের কাপড়ের পুতুল যুগ ঢের ভাল ছিল।

সময়ের হাত ধরে পথে আগাই,ফুলেল সময় যায় চলে যায়, ফাঁকি সব ফাঁকি। রঙ বেরঙের প্রজাপতি রঙ চোখে,ঠোঁটে কানে গলায় আর দুটো হাতে ঝুলে থাকে, আহা সাজন পাতন, মনে বেড়ে যায় উচ্ছ্বাস, সুখে থাকার উচ্ছ্বাস। রঙধনু রঙ চুড়িগুলো রিনিঝিনি বেজে উঠলেই মনে কেমন সুখ সুর অনুরণন বেজে উঠে!

এই মেলা সেই মেলা, ফুটপাত কি পথের বাঁকে, সাজানো কাঁচের চুড়ির প্রহরগুলো যেনো মনাকাশে নাটাইয়ের সূতো ছেঁড়া ঘুড়ি, এটা দিন ওটা দিন লাল নীল সবুজ সব দিন সব দিন, হাতে পড়িয়ে দিন, এই যে বাড়ালাম দু’হাত-চুড়িওয়ালী পরম মমতায় চুড়ি পরাতে পরাতে বকবক করে বলতেই থাকে আহা এই রঙে মানায় গো বুজি আপনার হাতে এইগুলি নিন এগুলোও নিন, প্রয়োজন অপ্রয়োজনে কেনা হয়ে যায়, হয়ে যেতো শত সহস্র চুড়ি। জমে জমে পাহাড়!

চুড়ি চুড়ি চুড়ি ড্রেসিং টেবিলের কাঁচের আয়নার ফাঁকে উঁকি দিয়ে দেখলেই বুকে হাহাকার উড়ে। সেই হাত চুড়ি ভরা হাত সময়ের ফেরে পড়ে আজ শূন্য! সময় বড় ব্যস্ত করে ফেলেছে আমায়। কিছুই আর করা হয়ে উঠেনা, সাজগুজ খাওয়া বিশ্রাম সবই যেনো ছুটে যাচ্ছে আমায় ছেড়ে। হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারি না উচ্ছ্বাস সময়, মুগ্ধতা হারায়, যায় হারিয়ে ফিরে দেখি আয়নায় আবছা আলোয় আমি ফুরিয়ে গেছি। আর ভাল্লাগে না। চুড়িগুলো আজ অবহেলায় পড়ে আছে কাঁচের বাক্সে কিংবা রঙ বাহারি ঝুড়িতে। স্মৃতি হবে ওরা, স্থান হবে একদিন ময়লার ঝুড়িতে। কষ্ট হয় বড়, বড় কষ্ট মনে আজ।

কথোপকথন ০১

চলে যাবে? এই তো এলে, সবে সূর্য হলো লাল।
গোধূলি রাঙা বিকেল। অস্থির তুমি।
যেতে হবে আজ। আসবো আবার আগামী কাল
অনেক কাজ বাঁকি। ভালো থেকো তুমি।

বস না একটু! কতদিন পর দেখা, হোক না দুটি কথা!
জানি না আজ কেন এত ব্যকুল।
দ্যাখো সন্ধ্যা নামে। পুর বীর আকাশ ছেয়ে রাত আসে।
আজ কেন কেন তুমি এত ব্যকুল?

বকুল, গাঁদা, শিউলি, চাঁপা তোমার চুলে থাকতো গাঁথা।
এখনো কি করো চুলের খোঁপা?
থাক না এসব! অন্য কিছু বল। কি লাভ আত্নদহনে?
তার চেয়ে ভালো চুপ থাকা।

হুম্! ঠিক বলেছো। যে মনে স্বপ্নের দহন জ্বলে শুধু
স্বপ্ন হারার আগুন নদে। তার চুপ থাকায় শ্রেয়।
রেগে গেলে বুঝি! এই যে রাগ করে কি পেলে জীবনে?
যে রাগে শুধু কষ্ট দিতে পারে তা বর্জনই কি শ্রেয় নয়?

তোমারও তো কম ছিল না আত্নঅহমিকা। তবুও সখী।
থাক্! বাদ দাও এসব কথা কেমন।
হুম্! সেই ভালো। স্মৃতি শুধু ক্ষত বাড়ায়। রক্ত ঝরায়।
সময় বড্ড বেহায়া! যেতে হবে এখন।

চলে যাবে! যাও, সময় পেলে এসো। আমি আছি এই
শিমুল তলা, ভাঙা সাঁকো, ধুলাবালিতে মিশে।
সন্ধ্যার পাখায় রাত নামে ডাহুকীর চোখ মেলে যেই,
তেমনই পাবে আমায় বসে আছি তোমার আশে।

০৭/০৫/১৯

আমার দেখা ব্লগ ব্লগার ও ফেসবুকে শব্দনীড় ব্লগ পেইজ!

ফেসবুকে স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগ পেইজ আছে, তা আপনি জানেন কি? আমি জানি এবং নিয়মিত ফলো করে আসছি। আজকে এ নিয়েই কিছু লিখতে চাই! আশা করি সাথে থাকবেন। তার আগে ব্লগ এবং ব্লগিং নিয়ে আমার কিছু নূন্যতম অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি, জেনে নিন!

বর্তমানে মোবাইল ফোন হাতে-হাতে ছড়াছড়ি। ঘরে ঘরে কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর ওয়াই ফাই নামের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। একসময় কারোর হাতে মোবাইল ফোন দেখলেই, সামনে গিয়ে উঁকি মেরে দেখতাম। আর ভাবতাম, কী দিয়া যে তৈরি করলো এই মোবাইল! ঈশ! যদি আমি একটা কিনতে পারতাম!

এভাবে ভাবতে ভাবতে ২০০৬ ইংরেজি সালে নোকিয়া ১১১০ মডেলের ৩৬০০ টাকা দিয়ে একটা মোবাইল সেট নিজেই কিনে ফেললাম। সাথে ৫৫০ টাকা দিয়ে একটা বাংলালিঙ্ক সিম কার্ডও কিনে শুরু করলাম, নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকা অপরের সাথে কথা বলা।

এরপর ২০০৭ ইংরেজি সালে নোকিয়া N-73 মডেলের পুরাতন একটা মোবাইল সেট কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে থাকি। তখনকার সময়ে নেটওয়ার্কভিত্তিক ইন্টারনেটের সুবিধা ছিল GPRS সার্ভিস। সেসময় নোকিয়া বাটন মোবাইলের সেটিং থেকে কনফিগারেশন সেটিং করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। আর অনলাইনে থাকা বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করতাম। এটাই ছিলো আমার নিয়মিত অভ্যাস।

কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহার করার পর মোবাইলটি আর ভালো লাগছিল না। ভালো না লাগার করণ ছিলো শুধু একটাই। তাহলে নোকিয়া N-73 মডেল মোবাইলে বাংলা লেখা যেতো না, আর মোবাইল স্ক্রিনে বাংলা লেখা প্রদর্শিতও হতো না।

এরপর ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে নোকিয়া C-3 দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। তাতেও বাংলা লেখা যেতো না। মনের আক্ষেপ আর আফসোস শুধু থেকেই যেতো। তারপরও বিশ্ববিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলে সার্চ করা ছিল আমার প্রতিদিনের কাজ। সেসব কাজের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ব্লগে উঁকি মারা সহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া সহ আরও অনেককিছু। তবে বেশকিছু অনলাইনভিত্তিক দিনলিপি বা ব্লগে সময়টা বেশি ব্যয় করতাম।

একসময় অনলাইনে থাকা একটা স্বনামধন্য ব্লগে লেখকদের লেখা পড়তে খুবই ভালো লাগতো। নিজেরও লিখতে ইচ্ছে করতো। একসময় নোকিয়া বাটন মোবাইল C-3 দিয়ে এক ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। কিন্তু নোকিয়া C-3 মোবাইলে তো বাংলা লেখা যায় না। কোনরকমভাবে ইংরেজি বর্ণ দিয়ে স্বল্পসংখ্যক শব্দ দিয়ে একটা লেখা জমা দিলাম। ব্লগে লেখা জমা দিয়ে বেশকিছুদিন আর ব্লগে প্রবেশ করিনি।

এরপর প্রায় দুই তিনমাস পর অনেক কষ্ট করে মনের স্বাদ মেটানোর জন্য সিম্ফনি W-82 মডেল-এর একটা মোবাইল কিনলাম। মোবাইলটা কিনেই, সেইদিনই ব্লগে প্রবেশ করলাম। উদ্দেশ্য হলো, আমার জমা দেওয়া লেখাটার অবস্থা দেখা। দেখি সম্মানিত মডারেটর লেখার শিরোনাম বাংলায় দেওয়ার জন্য বলছে। সিম্ফনি এন্ড্রোয়েড মোবাইলে বাংলা লেখা যেত। লেখার শিরোনাম দিলাম, “আমিও মানুষ”। আবার জমা দিয়ে আর ব্লগে প্রবেশ করি না। প্রায় কয়েকমাস পর ব্লগে প্রবেশ করলাম। দেখি আমার লেখায় কয়েকজন সম্মানিত লেখকদের মূল্যবান মন্তব্য। সেসব মন্তব্যের উত্তর দিতে গেয়েই, আজ অবধি ব্লগ আর ব্লগিংয়ের মাঝেই আটকা পড়ে আছি। ব্লগে লিখছি, পড়ছি, দেখেও যাচ্ছি। অনেক সম্মানিত লেখক-লেখিকাদের সাথে ঘনিষ্ঠতাও গড়েছি। শুরু থেকে এপর্যন্ত ব্লগ, ব্লগিং এবং ব্লগের পোস্টের মন্তব্য বিষয়ে সামান্যতম ধ্যানধারণাও মোটামুটি অর্জন করতে পেরেছি বলেও মনে হয়।

ব্লগ:
আমার জানা মতে ”ব্লগ” শব্দটি ইংরেজী (Blog), এর বাংলা প্রতিশব্দ৷ যা এক ধরনের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। ইংরেজি (Blog) শব্দটি আবার (Weblog) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যেটুকু জানা যায়, এই ব্লগের ইতিহাস এবং অনলাইন দিনপত্রী ১৯৯৭ ইংরেজি সাল থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি চলছে। প্রায় ব্লগই মূলতঃ লেখায় আকিন, কিছু কিছু আছে শিল্প(আর্টব্লগ), ছবি(ফটোব্লগ)। ডিসেম্বর ২০০৭এর হিসাবে, ব্লগ খোঁজারু ইঞ্জিন “টেকনোরাটি” প্রায় এগারো কোটি বার লাখের ও বেশি ব্লগের হদিশ পেয়েছে।

ব্লগার:
যারা আমার আগে থেকে ব্লগে লিখেন, তাঁরা অবশ্যই ব্লগ বিষয়ে আমার চেয়ে ভালোই জানেন। তা আর নতুন করে নতুন কিছু উপস্থাপন করার কোনও দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। তবে আমরা যারা ব্লগে লেখালেখি করছি, সবাই জানি যিনি ব্লগে লিখেন; তাকে “ব্লগার” বলে। তবে সহ ব্লগারগণ একে অপরকে লেখক লেখিকা বলেই বেশি সম্বোধন করে থাকে। যেহেতু একই প্লাটফরমে একে অপরের সাথে লেখা শেয়ায় করছে, তাই। তারপর পছন্দ অপছন্দের মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যার যার মনের ভাব জানান দিচ্ছে। এতে করে একে অপরের সাথে খুব অল্পদিনে মধ্যেই সুসম্পর্কও গড়ে উঠছে।

ব্লগিং:
যিনি ব্লগে পোষ্ট করেন তাকে ব্লগার বলে। পোস্ট করা বা ব্লগে লেখালেখি করা হচ্ছে “ব্লগিং”।

মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া:
ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের পছন্দের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন। আর পাঠক সেখানে লেখার উপর ভিত্তি করে তাদের মন্তব্য করতে পারেন৷ মন্তব্য দানকারী পাঠককে অবশ্যই ব্লগের নিবন্ধিত পাঠক হতে হবে। মানে হচ্ছে, একজন ব্লগারের লেখনীয় পোস্টে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগে তাকে সেই ব্লগে লগইন করতে হবে। নিবন্ধিত সদস্য ছাড়া কিছুতেই মন্তব্য করতে পারবে না। ব্লগের পোস্টে আর ব্লগার অথবা লেখক-লেখিকার লেখায় মন্তব্য হলো একরকম চুম্বকের আকর্ষণের মতন। চুম্বক যেমন লোহাকে কাছে টানে, তেমনিভাবে মন্তব্যকারীকে পোস্টদাতা বা লেখক-লেখিকা ভালোবেসে ফেলে। তারপর একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাব গড়ে উঠে।

ব্লগ পোস্ট:
সাম্প্রতিক কালে অনলাইনে থাকা বেশিরভাগ ব্লগ সাংবাদিকতার একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একজন দায়িত্বশীল ব্লগার নিজের এলাকার সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ নিয়ে এক বা একাধিক লেখা ব্লগে আপডেট করেন বা করে থাকেন। অনেক সময় কোন খবরের শিরোনামের উপরও ব্লগার তার মতপোষন করে লিখে ব্লগে পোস্ট করে থাকেন। আবার কেউ কবিতা লিখেন। কেউ ইতিহাস লিখেন। কেউ সাহিত্য নিয়ে লিখেন। কেউ আবার ছোটগল্প ও রম্য লিখে ব্লগে পোস্ট করেন।

শব্দনীড় বাংলা ব্লগ:
তবে আমার মনে হয়, আমাদের এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগের জন্মকাল ২০১০ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ। ব্লগে প্রথম পোস্ট করেছিলেন, সম্মানিত লেখক মুরুব্বী। লেখার শিরোনাম ছিল, “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল!” পোস্টে মন্তব্য দানকারী ছিলেন, সম্মানিত লেখক মামুন। এপর্যন্ত শব্দনীড় বাংলা ব্লগে পোস্টের সংখ্যা ৭৭৮১টি। সর্বশেষ পোস্টের শিরোনাম, “আমার দেখা ব্লগ ব্লগার ও ফেসবুকে শব্দনীড় ব্লগ পেইজ!”

ব্যক্তিগত:
আমি এই স্বনামধন্য শব্দনীড় ব্লগে নিবন্ধিত হয়েছি, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের ৬ তারিখ। পোস্ট করেছি আগস্ট মাসের ৭ তারিখ। লেখার শিরোনাম ছিল, “আমি রাত জাগা পাখি!” মন্তব্য পড়েছিল ৬+৬=১২টি। আমার নগণ্য লেখনীয় পোস্টে ৫জন সম্মানিত লেখক-লেখিকার করা মন্তব্যের উওর দিয়ে গিয়েই হয়তো এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগের মায়াজালে আটকা পড়েছি। মনে হয় আর কখনো শব্দনীড় থেকে আড়াল হতে পারবো না।

আমার চেয়ে আরও হৃদয়বান ব্লগার এই শব্দনীড়ে আরও অনেক আছে। তাঁরা প্রতিদিন নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন, পোস্ট করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমি অধম শুধু সময়ের অভাবে এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগে নিয়মিত হতে পারছি না। কারণ, আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ, তাই। তবে আমার হাতে থাকা ব্যবহারিক মোবাইল থেকে প্রতিদিন কয়েকবার ব্লগে উঁকি মারি। সবার পোস্ট ফলো করি। সময়ের অভাবে পোস্টে মন্তব্য করতে বা দিতে পারি না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখিত!

ফেসবুকে শব্দনীড় বাংলা ব্লগ:

শব্দনীড় বাংলা ব্লগে আমার লেখা প্রকাশ হওয়ার পর আমি ফেসবুকে নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করি। একসময় ফেসবুকের সার্চ বক্সে শব্দনীড় লিখে সার্চ করে শব্দনীড় বাংলা ব্লগ দেখতে পাই! মনে মনে খুবই আনন্দিত হলাম। আনন্দিত হলাম এই কারণে যে, বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক নিউজ, ব্লগ সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নিজস্ব পেইজ থাকে। যার কারণ হলো সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ানো। ফেসবুকে শব্দনীড় বাংলা ব্লগের নিজস্ব পেইজ থাকা মানে ব্লগের পোস্ট বা ব্লগারদের লেখায় পাঠক সংখ্যা বাড়ানোই এর মূল লক্ষ্য।

দুঃখ:
শব্দনীড় ব্লগ টিম ব্লগের সমস্ত পোস্ট অটোমেটিক ফেসবুক পেইজে শেয়ার হচ্ছে। আমরাও শব্দনীড় বাংলা ব্লগে লেখালেখি করছি, পোস্ট করছি, পাঠক সংখ্যার দিজে নজর রাখছি, মন্তব্যের দিকে দৃষ্টি রাখছি আমরা কিন্তু সবাই বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করছি। কেউ কেউ নিজের প্রকাশিত পোস্ট ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করছে। পোস্টের পাঠক সংখ্যা দিকে তাকিয়ে থাকছে।

অথচ ফেসবুকে থাকা শব্দনীড় বাংলা ব্লগ পেইজের দিকে কেউ একটি নজরও দিচ্ছি না। শব্দনীড় বাংলা ব্লগ ফেসবুক পেইজে থাকা নিজের পোস্টের দিকেও কেউ নজর দিচ্ছে না, লাইক দিচ্ছে না, দুটি শব্দ বিশিষ্ট বাক্য লিখে মন্তব্যও করছে না।

এসব দেখে সবই ভালো লাগে, তবুও দুঃখ শুধু এখানেই থেকে যায়। দুঃখ থাকবে না সেদিন, যেদিন দেখবো ফেসবুকে শব্দনীড় বাংলা ব্লগ পেইজে ব্লগ থেকে শেয়ার হওয়া প্রতিটা পোস্টে সবার লাইক কমেন্ট দেখবো। তখন ব্লগে থাকা পোস্টগুলোর পাঠক সংখ্যাও অনেকাংশে বেড়ে যাবে। ব্লগের সুনামও বাড়বে।
পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদের সাথে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!

আগেকার হাতে খড়ি বর্তমানে শিশুর স্কুলব্যাগ!

শিশুদের জন্য “হাতে খড়ি” উৎসব আগে গ্রাম শহরের সবখানে প্রচলিত থাকলেও, বর্তমানে এর বিন্দুবিসর্গ বলতে নেই বা কারোর চোখেও পড়ে না। আক্ষরিক অর্থে হাতে খড়ি হচ্ছে, লেখাপড়ার সাথে শিশুর প্রথম পরিচয়। শিশু জন্মের তিন থেকে চারবছরের মাথায় এই উৎসবটি পালন করা হতো। তা বেশি প্রচলন দেখা যেত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। জন্মের পর থেকে জীবনে যতোগুলো উৎসব পালন করা হয়, তারমধ্যে হাতে খড়ি শিশুদের জন্য খুবই একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ছিল।

হাতে খড়ি অর্থ হলো, শিক্ষার সূচনা বা শিক্ষার শুরু। এই উৎসবটি পালন করা হতো, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে, নাহয় সরস্বতী পূজার পরপর এক সপ্তাহের মধ্যে শনিবার বাদে যেকোনো দিন।

অনেকে এই বিশেষ উৎসবটি সরস্বতী পূজার দিনই করে ফেলতো। কেননা, সরস্বতী পূজা মানেই বিদ্যাদেবীর পূজা। তাই ওইদিন পুরোহিত সরস্বতী পূজা সম্পাদন করা শেষে, এই হাতে খড়ি উৎসবটির কাজ সম্পন্ন করতো।

যেসব অভিভাবকগণ তাঁদের শিশুকে হাতে খড়ি দিতে ইচ্ছুক থাকতো, সেসব শিশুদের হাতে খড়ি দেওয়ার কাজটি পূজামণ্ডপেই করে ফেলা হতো। যেসব শিশু বাদ পড়তেন, পূজার পর শনিবার বাদে যেকোনো দিন তাঁদের হাতে খড়ি উৎসবের কার্যসম্পাদন করা হতো। আগেকার সময়ে বেশিরভাগ শিশুদেরই হাতে খড়ি দিয়ে লেখাপড়া শুরু করা হতো। তা ধনী আর গরিবদের মধ্যে কোনও ব্যবধান ছিল না। তবে ধনীব্যক্তিদের সন্তানদের একটু জাঁকজমকভাবেই করা হতো। কেননা, ধনীব্যক্তিদের ধনসম্পদ বেশি বলে, তাঁদের নিয়মনীতিও একটু বেশি থাকতো, তাই। তবে সব পিতামাতাই তাঁদের সন্তানকে হাতে খড়ি দেওয়ার নিয়মটা করেই স্কুলে পাঠিয়েছেন।

আমারও হাতে খড়ি দেওয়া হয়েছিল। কীভাবে দেওয়া হয়েছিল, তা স্পষ্ট মনে না থাকলেও, একটু বড় হয়ে যাদের হাতে খড়ি উৎসব দেখেছি, তা খুবই মনে আছে। সরস্বতী পূজার আগের দিনই শিশুর অভিভাবক এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পূজা কার্যসম্পাদনকারী পুরোহিতকে অবহিত করে রাখতেন।

সরস্বতী পূজার আগে বা হাতে খড়ি উৎসবের আগের দিন বাঁশের কঞ্চি (ছিপ), কলাপাতা, একটা খালি দোয়াত, গরুর খাটি দুধ, ধান-দূর্বা, ফুল-তুলসী সহ কিছু ফলফলারি সংগ্রহ করে রাখা হতো। হাতে খড়ি উৎসবের দিন ভোর থেকে শিশুকে কিছুই খেতে দিতেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত হাতে খড়ি কার্যসম্পাদন না হতো।

এমনিতেই যেকোনো পূজার আগের দিন সংযম পালন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়মনীতি। তাই ছোটবেলায় শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজায় সংযমের দিন মাছ-মাংস পরিহার করা এমনিতেই ছিল বাধ্যবাধকতা, তারমধ্যে বাড়তি যোগ হচ্ছে হাতে খড়ি! শিশুটির নিরামিষ আহার, আতপ চালের ভাত খাওয়া, উপোস থাকা সম্ভব হবে কি-না এসব নিয়ে পূজার আগের দিন শিশুর অভিভাবকগণ খুবই দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো।

সরস্বতী পূজার পুষ্পাঞ্জলি অর্পণে হতো আনন্দঘন এক আয়োজন! পুষ্পাঞ্জলি পর্বের পরপরই একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা কোমলমতি শিক্ষার্থীও ধর্মীয় চেতনায় দিয়ে থাকতো হাতে খড়ি। পুরোহিত হাতে খড়ি দিতে বা নিতে ইচ্ছুক সব শিশুদের একসারিতে বসাতেন। শিশুর সামনে থাকতো কাগজের মতো কলাপাতার চিকণ টুকরো। আর গরুর খাটি দুধে জল মিশ্রিত একটা দোয়াত। দোয়াতে থাকতো কলমের মতো চোকা একটা ছোট বাঁশের কঞ্চি(ছিপ)। শিশুর পেছনে থাকতো শিশুর মা, বাবা অথবা বড়দিদি।

পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করে দোয়াত থেকে কলমের মতন কঞ্চি দিয়ে এক এক করে প্রত্যেক শিশুর সামনে থাকা কলাপাতায় অ-আ ক-খ লিখে দিতেন। এরপর শিশুর পেছনে বসা মা, বাবা অথবা বড়দিদিরা শিশুর হাতে কঞ্চি ধরিয়ে পুরোহিতের অ-আ ক-খ-এর উপর শিশুর হাত ঘোরাতেন। কয়েকবার ঘোরানোর পর পুরোহিত সবার বিদ্যাবুদ্ধি কামনা করে সরস্বতী দেবির নিকট প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শেষ করতেন, হাতে খড়ি উৎসব। এরপর থেকেই শিশুর লেখা-পড়ার জন্য চলতো শতরকমের চেষ্টা প্রচেষ্টা।

এই যুগে আর হাতে খড়ি উৎসবটা দেখা যায় না। আর হাতে খড়ি কাকে বলে এবং হাতে খড়ি কী, তাও অনেকে জানেনা। এখন শুধু জানে এবং বুঝে, শিশুর বয়স তিনবছর হলেই; শিশুকে ইংলিশস্কুল বা কিন্ডারগার্টেন ভর্তি করতে হবে। আর শিশুর কাঁধে একটা সুন্দর বেশি দামি বড়সড় স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে দিয়ে হবে।

তাই এখন দেখা যায় শিশুর বয়স তিনবছর হলেই, শিশুর কাঁধে বড় একটা স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে দিয়ে কিন্ডারগার্টেন নিয়ে যেতে। এটা একরকম আধুনিক যুগের ফ্যাশনও বলা চলে। এমনও দেখা যায়, শিশু তাঁর হাতের বুড়ো আঙুল চুষতে চুষতে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে যাচ্ছে। সাথে সেজে-গুঁজে যাচ্ছে শিশুর মা অথবা অন্য কেউ। শিশুকে ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে, শিশুর ছুটি না হওয়া পর্যন্ত কিন্ডারগার্টেনের আশেপাশেই ডিউটি দিচ্ছে।

স্কুল ছুটির পর আবার বিশাল একটা স্কুলব্যাগ শিশুর পিঠে ঝুলিয়ে দিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। কেউ হেঁটে, কেউবা গাড়িতে। শিশুর স্কুলব্যাগের ভেতরে থাকছে, পানির বোতল, প্লাস্টিকের টিফিন বাটি সহ পড়ার চেয়েও বাড়তি কিছু বই। যা শিশুর অভিভাবকরা খুব সখ করে শিশুর স্কুলব্যাগের ভেতরে ভরে দেয়। যাতে শিশুর কাঁধে ঝুলানো স্কুলব্যাগটি একটু বড় দেখা যায়। যত বড় স্কুলব্যাগ হবে, তত বাড়বে শিশুর অভিভাবকদের প্রশংসা। তাই সময়সময় দেখা যায়, বিশাল স্কুলব্যাগের ভারে শিশু কুঁজো হয়ে যাচ্ছে। তবুও শিশুটিকে স্কুলব্যাগ বহন করতেই হচ্ছে।

স্মৃতিঃ হয়তো সেই ভুল মনে হওয়াটাও ভুল ছিলো

সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলাম ড্রাইভার বললো,
“একটু ডানে তাকান”।

একজন তিরিশোর্ধ মহিলা তাকিয়ে ছিলেন।
জানতে চাইলাম,
“কে উনি?”

“কয়েক মাস ধরে যে আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।”
পোস্তুন ড্রাইভার জবাব দিলো।

আমার বাঙালি বাবুর্চি খাবার পরিবেশনের সময় বেশ কবার মহিলাটির অনুরোধের কথা জানিয়েছিলো। সে ইউএস প্রবাসী; রহস্যময় কারণে পাকিস্তানে অবস্থান করছিলো। বাবুর্চি ছাড়া আরো কেউ বিষয়টা জানতো ধারণা করিনি।

যে বিশ্বাস নিয়ে তাঁর সাথে দেখা করিনি তখন সেটাকে ভুল মনে হলো।

হয়তো সেই “ভুল মনে হওয়াটা”ও ভুল ছিলো।

কে জানে?!

————–
(পাকিস্তান; জুন ২০১৩)

… মধুর ক্ষণ


হারিয়ে যাওয়া মধুর ক্ষণ
ছেলে বেলার দিন;
দুষ্ট মনটা কষ্ট খুঁজে
বাড়িয়ে দেয় ঋণ।

খুঁজি আজও ও-ই সময়টা
লুকিয়ে করা দেখা;
মনটা আজও আনচান করে
পাইতে তোমার লেখা।

খুঁজতাম তোমায় প্রাণের সখী
আপন করে একান্তে;
আজও খুঁজি ঐ সময়টা
যদি তুমিও জানতে!

তোমায় তখন পেতাম যদি
মধুময় ওই দিনে;
আদর সোহাগ সবই দিতাম
বাঁধতাম প্রাণের সনে।

হারিয়ে যাওয়া দুরন্ত দিন
গেলো কোথায় বলো!
আমি তোমার প্রাণেই থাকি
খোল আঁখি খোল।

হারিয়ে যাওয়া মধুর ক্ষণ
দিবে কী ফিরিয়ে;
যাব আবার মধু বনে
সখী তোমায় নিয়ে।

মা’র বাঁধন

আকাশের বুকে মেঘের ভেলা
পৃথিবীর বুক বিষাদে ভার
ধরার বুকে অশ্রু ফেলে
বর্ষা আনিল মধুময় আষাঢ় ।

সকাল সন্ধ্যা কাঁদছে বধু
নৌকায় যাবে বাপের বাড়ি;
আড়িয়াল বিলে হাসছে শাপলা
কাটে না দিন আর মা’কে ছাড়ি।

শালুক তুলিতে জলকেলিতে
কত না মধুর হারানো দিনগুলো;
বকুনি সহেছি মা’র কত না নীরবে
মজিতাম খেলায় উড়িয়ে ধুলো।

খুনসুটিতে ছোট ভাইকে কাঁদালে
মা এসে দিতো জোরে কান মলা;
ভোরে, নীরবে গিয়ে বকুল তলায়
কুড়িয়ে বকুল গাঁথা হয় না মালা।

বই-খাতা নিয়ে সাঁঝের বেলা
টেবিলে বসা ছিল কতো না তিক্ত;
সেই সব মধুর হারানো দিনের ব্যথায়
হয়ে গেছি আজ কত না রিক্ত!

লাল শাড়িতে এই অচেনা গাঁয়
কাটছে না দিন আর শ্বশুর বাড়ি;
চোখ’-কোনে মা’র চিকচিক অশ্রু
থাকতে দেয় না আর বাঁধন ছিঁড়ি।

সংগ্রামে দিশাহারা এক নারীর গল্প!!!

সংগ্রামে দিশাহারা এক নারীর গল্প?

সংগ্রাম এই শব্দটি শুনলে মনের মধ্য যেন আঘাত আনে। বাঙালীরা কি দোষ করেছিল যে জীবন দিতে হয়েছিল। শুধু ন্যায্য অধিকার পাওয়ার জন্য বাঙ্গালীদের প্রাণ নিয়েছিল পাকিস্তানিরা। বাঙ্গালীরা দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করেছিল এই অধিকার জন্য। শুধু অধিকার নয় বাংলাকে শোষণ, শাসন থেকে মুক্ত করে, স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে যান, বীর শহিদরা। শহিদের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা।

(১৯৭১ সালের এক সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
গ্রামে বাস করতেন সহজ সরল এক নারী। তাহার ৬ টি সন্তান। তিনটি মেয়ে, তিনটি ছেলে। তাহার ছোট মেয়েটির নাম দিপালী। ৬-৭ মাস বয়স হবে। বাংলার বুকে সংগ্রাম চলছে। চারদিকে রক্তাক্ত গুলাগুলি চলছে। গ্রামের মানুষ কি শান্তিতে ঘূমাচ্ছে?
না!!!
কখন কে জানে, গ্রামে আসবে ৭১ এর যমরাজ। কার মায়ের বুক খালি করবে ওরা, কার নিবে প্রাণ? গ্রামে মিলিটারি আসলে চারদিকে হৈ চৈ পড়ে যায়, শুরু হয় ছুটা-ছুটি। সবাই চারদিকে পালিয়ে যায়। কেউ জঙ্গলে, কেউ নদীতে নৌকায়, কেউ হাওরে গিয়ে জীবন রক্ষা করে। মিলিটারিরা চলে যাওয়ার আবার ফিরে আসে। এভাবে চলে তাদের জীবন দীর্ঘ নয় মাস।

একদিন দিপালীর মা পালিয়ে যাবে জঙ্গলে মিলিটারিরা এসে গেছে গ্রামে। তিনি সন্তানকে নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছেন। তিনি জঙ্গলে গিয়ে দেখেন, সন্তান রেখে বালিশ নিয়ে এসেছেন। তাহার ছোট সন্তান দিপালী ছিল ঘুমে। তিনি হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলেন। তখন তার ননদ দৌড়ে গিয়ে তাহার সন্তানকে নিয়ে আসে। দিশাহারা হয়ে মা সন্তানকে রেখে বালিশ নিয়ে আশ্রয় এর জন্য পালিয়েছিলেন। শান্তিতে নেই গ্রামের মানুষ কখন কাকে মারবে। ঘর বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে।

গ্রামে মানুষ মারার জন্য লাইনে দাড় করেছিল মিলিটারিরা, কিন্তু পারেনি মারতে গ্রামের একজন রাজাকার ছিল সে ছিল মানব প্রেমিক। রাজাকারে কথায় আর গ্রামের মানুষ মারে নি। ছেড়ে দিয়েছে সবাইকে। এভাবে বলা যায় কত ইতিহাস অজানা রয়ে গেছে।

_____________________
(গল্পটি বাস্তব ঘটনা থেকে নেওয়া,
আমার মায়ের কাছ থেকে গল্প শুনেছিলাম, তারপর লিখলাম)

ছবিঃ অনলাইন।

পাথরের রাজ্য বিচনাকান্দিতে একদিন

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত বিচনাকান্দি পর্যটন এলাকা। সিলেট শহর থেকে বেশখানিক দূরে এই স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর জলপাহাড়ের খেলাভূমি বিচনাকান্দি। বিচনাকান্দির এখানে-ওখান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাথর আর পাথর। মনে হবে যেন একটি পাথরের রাজ্যতে আছি। বিশ্রামহীন ভাবে এই রুপময় সৌন্দর্যের সৌরভ দেখে নিমিষেই ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ঝর্ণার জল দেখে মনপ্রাণ ভরে যায়।

জলধারার পানিতে নামলে মনে হয় যেন পৃথিবীর শান্তি এখানে। শুকনো মৌসুমে এখানের সৌন্দর্য চোখে পড়ে না। তবুও সৌন্দর্য্যর শেষ নেই। আমি ও আমার বন্ধুবান্ধব গিয়েছিলাম শুকনো মৌসুমে বিচনাকান্দিতে। আমরা গিয়েছিলাম গাড়িযোগে। শুকনো মৌসুম হওয়াতে নৌকায় যেতে পারিনি, যেতে হয়েছিল গাড়িযোগে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নৌকাযোগে যাওয়া যায়। দেখা যায় জলের ঝলমল খেলা। জলের এই ঢ্ল মায়াময় করে তোলে চারপাশ।

শুকনো মৌসুম হওয়া সত্তেও, অল্প স্বচ্ছ শীতল পানির তলদেশে পাথরের পাশাপাশি নিজের শরীর দেখা যায় স্পষ্ট। অবিরাম জলপাথরের ফাঁকে ফাঁকে শুয়ে বসে সেলফি তুলতে তুলতে বেলা শেষ হয়ে গেল। যেদিকে তাকাই শুধু পাথর আর পাথর বড়, মাঝরি, ছোট পাথর। শুধু তাই নয় রঙ্গিলা পাথর, কালো,সাদা পাথরের সমাহার। স্পটের শেষ সীমানা পর্যন্ত শুধু পাথর আর পাহাড়। দূর থেকে দেখলে মনে মনে হয় পাহাড়ের দলগুলো আকাশের সাথে লেগে আছে। কিন্তু যতি কাছে যাই পাহাড়গুলো আকাশ থেকে যেন দূরে যেতে থাকে। আর পাহাড়ের গায়ে মেঘ লেগেই থাকে। জল, পাথর, পাহাড় আর মেঘ নিয়েই বিচনাকান্দি। প্রশান্তি সৌন্দর্য্য ভোগ করতে হলে এখানে যেতেই হবে।

__________________
প্রথম প্রকাশিত, শিশু বার্তায়।

একজন নিজাম ভাই এবং আমার খিদের গল্প

ছবিতে আহমাদ মাগফুর।নজরুল মঞ্চে ২০১৫ এর বইমেলায়। আফসার নিজামের তোলা।

অতীতের অসংখ্য গাঢ়তর বিষয়কেও বর্তমানে এসে অনেকের কাছে হালকা লাগতে পারে। তবে সত্য হল, আজকের এই হালকা বিষয়টাই অতীতের সেই উপস্থিত সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তাই অতীত আমার কাছে বরাবরই উৎসাহের বিষয়। দিনের পর দিন যায়, তবুও এই উৎসাহ আমার কমে না। বর্তমানের চেয়েও আড়ম্বরপূর্ণ এক অনন্য আবহে, ভেতরে আমার বেঁচে থাকে শুধু অতীত, অতীতের সব ছবি।

উন্মেষ আমার জীবনে তেমনই এক দারুণ অতীত। ভাবতেই অবাক লাগে সেই সময়টার কথা। চার পাঁচটা তরুণ। যারা সদ্য মাত্র কৈশর পেরিয়েছে। তারা একটি সাহিত্যের লিটলম্যাগ বের করছে। প্রথমটা হাতে লিখে বেরিয়েছে। দ্বিতীয়টা কম্পোজ আর ফটোস্ট্যাট। তৃতীয়টাই প্রেসের ঝকঝকে ছাপায়। পত্রিকাটাই যে শুধু তরতর করে এগিয়ে গেছে তাই নয়। এগিয়ে গেছে রাতজাগা অসংখ্য আলাপ, আড্ডা, গল্প, কবিতা আরও কত কত স্বপ্ন!

সব রাত্রিই সকাল হয়। সব গল্পই ফুরায়। সব স্বপ্নও তাই ভেঙে যায়। যেতে হয়। এই নিয়ম মেনেই বোধকরি উন্মেষ একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত এক মহাবিরতির স্টেশানে ঘুমিয়ে পড়ে। সবাই এই ঘুমকে মৃত্যু বলতে চাইলেও আমি মনেমনে মানতে পারিনি। তাই উন্মেষ’র এই ঘুম ভাঙাতে আমি আমার সবটুকু সুর দিয়ে ঘুমভাঙানির গান গাইতে চেয়েছি। উন্মেষকে জাগাতে চেয়েছি। ঘুম যখন ভাঙলই না, তখন মনকে বলেছি; থাক, ঘুমিয়েছে ঘুমোক, ছেড়ে দিলাম। তাকে মহা বিরতি দিলাম। তবুও মৃত বলতে রাজি হলাম না।

উন্মেষ’কে নিয়ে যখন একা হয়ে পড়েছিলাম, তখনকার সময়ের ছোট্ট একটা গল্প। নিজাম ভাইয়ের গল্প। খিদের গল্প।

আল কাউসারে ছিল আমাদের মাসিক ছুটি। দুইদিন। এই ছোট্ট ছুটিতেই পত্রিকার সবটুকু কাজ করতে হত। তেমনি এক মাসিক ছুটির দুপুরবেলা কাজে বেরোতে যাবো। তখনই একজন শিক্ষক ডেকে নিয়ে তাঁর ব্যাঙ্কের কিছু কাজ দিয়ে দিলেন। সেই কাজ শেষ করতে করতে আমার সারাটা দুপুর চলে গেল। খিদায় পেট লেগে যাচ্ছে। এদিকে পত্রিকার কাজও কিছু হয়নি। কোন কাজটা করবো! বিজ্ঞাপন নাকি মেকআপ! নাকি প্রুফ? নাকি বাসায় চলে যাব, কিছুই বুঝে আসছে না।

এমনই যখন অবস্থা। তখন কী মনে করে যেন হাঁটা দিলাম নিজাম ভাইয়ের অফিসের দিকে। যেতে যেতে ভাবলাম; তিনি যদি পত্রিকার কোন একটা কাজে সহযোগিতা করতে পারেন, বিজ্ঞাপন/লেখা/ছাপাখানার খোঁজ, যেকোনো একটা হলেই হল।

নিজাম ভাইয়ের সাথে দেখা হতেই বল্লাম; আজ তো বৃহস্পতিবার না, বিপরীত’র আড্ডাও নাই, তবুও চলে আসলাম। নিজাম ভাই অভিযোগের স্বরে বললেন, আরে, তোমার সাথে কি আমার আড্ডার সম্পর্ক নাকি, তুমি যেকোনো দিন, যখন ইচ্ছা আসবা। সাথে সাথেই জানতে চাইলেন, দুপুরে খেয়েছি কি না। আমি হালকা করে মাথা নেড়ে প্রসঙ্গ পালটাতে গিয়ে বললাম, নিজাম ভাই, পত্রিকার কাজের বিষয়ে আসছিলাম। তিনি নরম করে ধমক দিয়ে বললেন, চলো চলো, আগে খাবা। কাজ টাজ কী আছে সব পরে হবে।

অসম্ভব খিদে ছিলো। ক্যান্টিনে বসে তারপর আমি রুই মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছি। নিজাম ভাই বসে আছেন আমার মুখোমুখি। তিনি দুপুরের খাবার অনেক আগেই সেরেছেন। এখন বসে আছেন আমাকে সঙ্গ দিতে। আমি যেন অস্বস্তিতে না পড়ি তাই তিনি নিজের জন্য চা’য়ের অর্ডার করেছেন। চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর আমার সঙ্গে টুকটাক গল্প করছেন। তার দিকে চোখ তুলতেই তিনি জানতে চাইলেন, আর কিছু লাগবে কি না। আমি বললাম, না। কিন্তু মনেমনে বললাম, লাগবে। অবশ্যই লাগবে। শুধু প্রিয়জন নয়, প্রিয়জনের খিদে অনুভব করার মত জগতে আপনার মত অসংখ্য আফসার নিজাম লাগবে।

আজ বিশ’ই ফেব্রুয়ারি। আফসার নিজাম ভাইয়ের জন্মদিন। সারাদিন অসংখ্য মানুষ তাকে নানান শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এখন এই শেষবেলা এসে আমি সেসব পড়ছি। আর ভাবছি; শুভেচ্ছা আর কী জানাবো, কৃতজ্ঞতাই তো কত জানানোর বাকি। দুয়া করি, নিজাম ভাই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন। তার পরবর্তী প্রজন্মও ভালোবাসা আর আদর্শিকতায় তাকে ছাড়িয়ে যাক। তার মত আরও অসংখ্য ‘নিজাম’ এর হাত ধরে পৃথিবীটা ভালবাসার পথে এগিয়ে যাক!

পুনশ্চ :
খাবার শেষ করেই নিজাম ভাই সেদিন আমাকে ছেড়ে দেন নি। পত্রিকার জন্য তিনি আমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছেন। প্রুফ, মেকাপ, কভার থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন। এমন কি রাত জেগে উন্মেষের বর্তমান অসাধারণ লোগোটিও তিনি আমাদের জন্য করে দিয়েছিলেন।

ছবি :
দুই বছর ধরে বইমেলায় যাই না। পনের’র বই মেলায় নিজাম ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে গিয়ে তিনি বললেন, বন্ধুর (নজরুলের) গলায় হাত রেখে দাঁড়াও তো, দুজনের একটা ছবি তুলে দিই!

আমার স্মরণীয় দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ইং

২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ছয় বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্মানিত মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করছি, আমি নিতাই বাবু।

একসময় বাটন মোবাইলের সেটিং থেকে কনফিগারেশন সেটিং করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। মোবাইল ছিল নোকিয়া N73। দীর্ঘদিন ব্যবহার করার পর মোবাইলটি আর ভালো লাগছিল না। এরপর শুরু হলো নোকিয়া C-3 দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা। গুগলে সার্চ করা। বিভিন্ন ব্লগে উঁকি মারা। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলা সহ আরও অনেককিছু।

২০১৫ সালের জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে লেখকদের লেখা পড়তে ভালো লাগতো। মনে স্বপ্ন জাগতো। নিজেরও লিখতে ইচ্ছে করতো। একসময় ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে রেজিস্ট্রেশন করলাম। নোকিয়া C-3 মোবাইলে বাংলা লেখা যায় না। কোনরকমভাবে ইংরেজি বর্ণ দিয়ে কয়েকটি শব্দের সমন্বয়ে একটা লেখা জমা দিলাম। লেখা জমা দেওয়ার বেশকিছুদিন আর ব্লগে প্রবেশ করিনি।

এরপর প্রায় দুই তিনমাস পর সিম্ফনি W82 মডেল-এর একটা মোবাইল কিনলাম। দাম ৯৫০০টাকা মাত্র। সেইদিনই ব্লগে উঁকি দিলাম। উদ্দেশ্য হলো, আমার জমা দেওয়া লেখাটার অবস্থা দেখা। দেখি সম্মানিত মডারেটর লেখার শিরোনাম বাংলায় দেওয়ার জন্য বলছে। সিম্ফনি এন্ড্রোয়েড মোবাইলে বাংলা লেখা যেত। লেখার শিরোনাম দিলাম, “আমিও মানুষ”। আবার জমা দিয়ে আর ব্লগে প্রবেশ করি না। প্রায় পনেরো দিন পর ব্লগে উঁকি দিলাম। দেখি আমার লেখায় কয়েকজন সম্মানিত লেখকদের মূল্যবান মন্তব্য। সেসব মন্তব্যের উত্তর লিখতে গেয়েই, আমি ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সকল সম্মানিত ব্লগারদের হৃদয়ে বন্দি হয়ে গেলাম। এরপর নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমস্যা নিয়ে ব্লগে অনেক লিখেছি। বেশি লিখেছি শীতলক্ষ্যা নদী নিয়ে, আর নারায়ণগঞ্জ শহর নিয়ে।

এরপর নির্ধারিত হলো ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ছয় বছর পূর্তির দিনক্ষণ। তারিখ ছিল, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ইং, বৃহস্পতিবার। ব্লগের ছয় বছর পূর্তিতে থাকবে, লেখক সম্মাননা ও লেখকদের লেখায় ছাপা অক্ষরে তৈরি বই-এর মড়ক উম্মোচন। অবশ্য ব্লগের সকল ব্লগারদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সেইদিন আমাদের নাগরিক সাংবাদিকদের মিলনমেলায় কাউকে সেথে করে নিতে পারিনি। কোনও ঘনিষ্ঠ বন্ধুও আমার সাথে যায়নি। অথচ অনেক বন্ধুকে আমি রিকুয়েস্ট করেছিলাম। নিরুপায় হয়ে আমি একাই পৌঁছে গেলাম ব্লগের ছয় বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে। মিলন মেলার আয়োজন করা হয়েছিল, ঢাকা ধানমন্ডি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি টাওয়ারে।

ওইদিন ছয় বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ব্লগের লেখক লেখিকা ছাড়াও আমন্ত্রিত ছিলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্মানিত মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেব, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য কমিশনার সম্মানিত জনাব গোলাম রহমান সাহেব সহ আরও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল এর সাংবাদিকবৃন্দও। তাদের সাথে যোগ হয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর।

একসময় শুরু হয় ব্লগের ছয় বছর পূর্তির আনুষ্ঠানিকতা। সভামঞ্চে আসন গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, আমন্ত্রিত অতিথিদের। সম্মানিত অতিথিবৃন্দ সভামঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ফুলের তোড়া। আর দেওয়া হয় ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ব্লগারদের ২৫টি লেখা দিয়ে প্রকাশিত ‘নগর নাব্য- মেয়র সমীপেষু বই। নাগরিক সাংবাদিকদের নির্বাচিত ২৫ লেখার সংকলন ‘নগর নাব্য- মেয়র সমীপেষু’র বইয়ের মোড়ক ‘উম্মোচন হয় সম্মানিত অতিথিবৃন্দের হাতের ছোঁয়ায়।

এরপর সম্মানিত ব্লগ মডারেটর প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় ব্লগারদের সম্মাননা দেওয়ার বিষয়ে প্রসঙ্গ টেনে আমার লেখার একটা শিরোনাম বলতে থাকে। শিরোনামটা ছিল ‘শীতলক্ষ্ম্যা নদীতে বিষাক্ত কেমিক্যালের পানি এবং আমাদের মৃত্যু’, আমি বসে বসে সম্মানিত মোডারেট-এর কথা শুনছিলাম। পরে সম্মানিত মেয়রের কাছ থেকে আমাকে সম্মাননা পুরস্কার নেওয়ার জন্য মঞ্চের সামনে আসতে বলেন।

ঘোষনা দেয়ার সাথে সাথে আমার পাশে বসা আমার প্রিয় লেখক ফারদিন ফেরদৌস দাদা আমাকে অতিথিবৃন্দের সামনে যেতে বললেন। তখন আমি আনন্দে আর ভয়ে কাঁপছিলাম। আবার এই সম্মাননা পাবার আনন্দে ভেতরে-ভেতরে একপ্রকার কাঁদতে লাগলাম। সেটা ছিলো অতি সুখে আনন্দের কান্না। আমতা-আমতা করে সম্মানিত অতিথিবৃন্দের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সম্মানিত মেয়র সাহেব আমাকে আর একটু সামনে আসতে বলেন। আমি সামনে গেলেই সম্মাননার একটা ক্রেস্ট ও রঙিন কাগজে মোড়ানো দুটি পুস্তক সহ আমার হাতে তুলে দেয়।

আমি সম্মানিত মেয়রের হাত থেকে ব্লগের সম্মাননা পুরস্কার আমার হাতে নেওয়ার পরেই শুরু হয় মঞ্চে উপস্থিত সকল সম্মানিত ব্যক্তি ও আমার প্রিয় সহ-ব্লগার/লেখকবৃন্দদের হাততালি। আমি হাতে নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দদের সাথে করমর্দন করে সবাইকে নমস্কার জানিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে এসে আমার প্রিয় লেখকদের সাথে বসি।

এর কিছুক্ষণ পর শুরু হয় প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। সেই পর্বে আমাদের বিডিনিউজ ব্লগের অনেকেই সম্মানিত মেয়র সাহেবকে নগরের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করেন, সম্মানিত মেয়র সাহেবও সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্ন-উত্তর পর্বের পরপর শুরু হয় স্বাগত ভাষণ, এরপর শুরু ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তির কেক কাটা। সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ব্লগের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তির কাক কেটে মিষ্টিমুখ করে সভাস্থল ত্যাগ করেন। আমরা সকল ব্লগার/লেখকরা মেতে উঠি আনন্দে উল্লাসে, হাসি আর গানে।

সেইদিন মিলনমেলায় সবার সান্নিধ্যে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ি। মনে হয়েছিল আমি নিজ পরিবারের আপনজনদের সাথেই আনন্দে মেতে আছি। ব্লগের এই মিলনমেলায় এসে বুঝতে পারলাম, যারা লেখক, যারা লিখে তাদের মনটা থাকে অনেক বড়। লেখকরা খুব সহজেই যেকোনো মানুষকে আপন করে বুকে টেনে নিতে পারে। যারা লেখক তাঁরাই বুঝে মানুষের মনের কথা আর মনের ব্যথা।

আমার এই সম্মাননার জন্য আমি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগটিমের কাছে চিরদিন ঋণী। আমি ওই প্ল্যাটফর্মের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। যারা আমাকে এই সম্মাননা দেয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন। এই ঋণ শোধরানোর মতো নয়। ব্লগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর আমাকে বহু কিছু দিয়েছে। ব্লগ থেকে আমি বহুকিছু পেয়েছি, শিখেছি। দিতে পারি নাই কিছুই। আমার দেওয়ার সামর্থ্যও নাই।

আমার মতো একজন নগণ্য মানুষকে এই বিশাল সম্মাননা দিয়ে আমাকে ঋণী করার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সেই সাথে বিডিনিউজ ব্লগের সকল ব্লগার/লেখকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ও আজীবন ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে রইলাম। এই ভালোবাসা কোনদিন ছিন্ন হবার নয়। আর এই সম্মাননা আমার একার নয়, এই বিশাল সম্মাননা এই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগের সবার সম্মাননা। জয়তু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, জয়তু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগের নাগরিক সাংবাদিক ব্লগার/লেখকবৃন্দ। সেইসাথে জয় হোক স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগ সহ ব্লগের সকল লেখক লেখিকাদের। জয় হোক মানবতার।

বটগাছের মমতায় সমাধিস্থানে নির্মিত একটি মঠ

সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্-এর পুকুরপাড়ে পাগলা সাধুর সমাধি স্থানে নির্মিত মঠ।

একটি বটগাছ পরম মমতায় আঁকড়ে ধরে রেখেছে পাগলা সাধুর সমাধি স্থানে নির্মিত একটি মঠকে। মঠটি ঘিরে কথিত আছে অনেক জানা অজানা কথা। সেসব কথা নাহয় লেখার শেষাংশে প্রকাশ করবো। শুরুতে সুশীতল ছায়াসুনিবিড় দেববৃক্ষ বটগাছের জন্ম কথা নিয়ে কিছু লিখতে চাই।

বটগাছ একটি বৃহদাকার বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। আমাদের দেশের গ্রাম ও শহরে বট গাছ সাধারণত দুই প্রকারই বেশি দেখা যায়, কাঁঠালিবট ও জিরাবট৷ কাঁঠালি বটের পাতা ঠিক কাঁঠাল পাতার মতো। আর জিরাবটের পাতা পানপাতার মতো দেখা যায়। তাই দুই রকমের বটগাছের দুইটি নাম হয়েছে জিরাবট, আর কাঁঠালি বটগাছ। এই দুই প্রকারের বটগাছ আমাদের দেশের শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জের আনাচে-কানাচে অনেক দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পুরানো বাড়ির দেয়ালের কার্নিশে, প্রাচীর ঘেরা দেয়ালের ফাটলে।

এর কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে বিভাগীয় শহরগুলোতে এখনো অনেক পুরানো স্থাপনা আছে। খোদ ঢাকা শহরেও অনেক পুরানো স্থাপনা দেখা যায়। ঢাকা শহরের নিকটবর্তী শহর নারায়ণগঞ্জেও অনেক পুরানো স্থাপনা চোখে পড়ে। আগে সিমেন্টের খুবই দাম ছিল। দাম ছিল এই কারণে যে, তখনকার সময়ে আমাদের দেশে কোথাও কোনও সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ছিল না। কোনও জমিদার বংশের কারোর সিমেন্টের দরকার হলে, বিদেশের কথা স্মরণ করতে হতো। তাই সিমেন্ট ছিল বিদেশি এক দুর্লভ পণ্য। যেই পণ্য তখনকার দিনে যেকেউ কিনতে সক্ষম হতো না বা পারতো না। আগের দিনে যার কাছে এক হাজার টাকা থাকতো তাকে বলতো হাজার টাকার মালিক। আর যিনি থাকতো কয়েক হাজার টাকার মালিক, তাকে লোকে বলতো হাজারী।

পাগলা সাধুর সমাধি স্থানে নির্মিত মঠ। মঠটাকে একটি বটগাছে পরম মমতায় আঁকড়ে ধরে রেখেছে। এখন আর এই মঠ থেকে একটি ইটাও খসে পড়বে না, কেউ আর ভেঙেচুড়ে তচনচও করতে পারবে না।

এসব হাজারীদের হাজার হাজার টাকা থাকতেও, তাঁরা বিদেশ থেকে সিমেন্ট এনে তাদের বসতবাড়ি, দালান-কোঠা রড-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করতে পারেনি। তৈরি করতে হয়েছে মোটা মোটা এঙ্গেলের সাহায্যে। আর সিমেন্টের পরিবর্তে সুরকির (ইটের ফাঁকি) সাথে চুনা মিশিয়ে পেঁকমাটির মতন করে ছোট ছোট ইটের সাথে লেপে তাদের স্থাপনাগুলো তৈরি করেছে। কেউ কেউ চুনের খরচের টাকা বাঁচাতে সুরকির পরিবর্তে আঠালো মাটি সাথে ইট গেঁথে বড়সড় দালানকোঠা তৈরি করছে। ওইসব দালান-কোঠা মাটি আর ইটের সুরকি দিয়ে তৈরি বলেই, এসব দালান-কোঠার দালানে, বাড়ির বাউন্ডারি ওয়ালে শেওলা পড়তে দেখা যায়।

দালান-কোঠা বা বাউন্ডারির (প্রাচীর) শেওলায় জন্মায় এক ধরণের উদ্ভিদ। একসময় দেয়ালে জমে থাকা শেওলা থেকে জঙ্গলে পরিণত হয়। এসব জঙ্গলের সাথে জন্মে থাকে কাঁঠালি বটগাছ, জিরা বটগাছ। বটগাছের কোনও বীজ রোপণ করা যায় না। আর বটের বীজ রোপণ করলে বীজ থেকে গাছ জন্মায়ও না। তাহলে পুরানো দেয়াল, আর পুরানো দালান-কোঠা, পুরানো প্রাচীরে বটগাছ জন্মালো কীভাবে?

বটগাছের শিকড়ে ঘেরা পাগলা সাধুর সমাধি স্থানে নির্মিত মঠ।

যেভাবে বটগাছ জন্মায়:
বসন্ত ও শরৎকালে বটগাছে নতুন পাতা গজানোর সময় হয়। একসময় বটগাছের ঢালার মঞ্জরিতে ফুলের কলি বের হতে থাকে। ফুল ফোটে। মঞ্জরির গর্ভে ফুলগুলো লুকানো থাকে। ফুলগুলো খুবই ছোট এবং ফলের মতোই গোলাকার৷ ফলগুলো হুবহু আঙুর ফলের মতো। দেখতে লাল রঙের। এই ফলগুলো পাখিরা মহানন্দে ফল খেয়ে ওদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করে। একসময় পাখিরা মলত্যাগ করে এই বীজ ছড়িয়ে দেয়। পাখিবাহিত এই বীজ দালানের কার্নিশ, পুরানো দালানের ফাটল ও অন্য কোন গাছের কোটরে জমা থাকে। সেই বীজ থেকে আস্তে আস্তে গাছ জন্মাতে থাকে। একারণে উপগাছা বা পরগাছা হিসেবেও বটগাছের বেশ খ্যাতিও আছে। এই বটগাছ এমনই একটা গাছ, তার ফল হইতে বীজ সংগ্রহ করে বপন করলে গাছ জন্মায় না। আবার কোন দালানের কার্নিশ হইতে তৈরি গাছ উঠিয়ে এনে রোপণ করলে হয়। উপযুক্ত পরিবেশে একটি গাছ পাঁচ(৫) থেকে ছয়(৬) শত বছর বেঁচে থাকতে পারে৷ বট বাংলা অঞ্চলের আদিমতম বৃক্ষ। অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বটগাছকে দেববৃক্ষও বলে।

বটগাছের এসব ঝুরি বা লত বা শিকড়গুলো একদিন বটগাছে পরিণত হবে।

বটের বর্ণনা:
বটের পাতা একান্ত, ডিম্বাকৃতি, মসৃণ ও উজ্জল সবুজ৷ কচি পাতা তামাটে। স্থান-কাল পাত্রভেদে পাতার আয়তনের বিভিন্নতা একাধারে বটের বৈশিষ্ট্য তথা প্রজাতি শনাক্তকরণের পক্ষে জটিলতার কারণও। পরিণত গাছের পাতা আকারে কিছুটা ছোট হয়ে আসে। বটের কুঁড়ি পাংশুটে হলুদ এবং এর দুটি স্বল্পায়ু উপপত্র পাতা গজানোর পরই ঝরে পড়ে। খুব অল্প বয়স থেকেই বট গাছের ঝুরি বা লত নামতে শুরু করে। তবে কাঁঠালি বটের ঝুরি বা লত বেশি নামে। এসব ঝুরি বা লত মাটির সংস্পর্শ পেলেই বাড়তে থাকে। ডালপালার ঝুরিগুলো একসময় মাটিতে গেঁথে গিয়ে নিজেরাই একেকটা কাণ্ডে পরিণত হয়। এভাবেই বট গাছ ধীরে ধীরে চারপাশে বাড়তে থাকে এবং একসময় মহীরুহে পরিণত হয়। তখন সর্বপ্রথম জন্মানো গাছটিকে আর চেনা যায় না। সবই ঝুরি বা লত গাছের মতনই দেখা যায়।

একসময় এই সমাধি স্থানের মঠটির সামনে গড়ে উঠেছিল তুলার গোডাউন। সেই তুলার গোডাউন একসময় আগুন ধরে যায়। সেই আগুনে মঠের উপর বটগাছের একটা ঢালা পুড়ে যায়। পুড়ে যাওয়া সেই ঢালা থেকে এখন নতুন নতুন পাতা বের হচ্ছে।

বট গাছকে ঘিরে বাংলা অঞ্চলে রয়েছে শত সহস্র বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য। (আর এই ঐতিহ্য বহনকারী একটি বট গাছ রয়েছে আমাদের বাংলাদেশেও। জানা যায়, ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে। এ বট গাছের যে বিশাল ব্যাপ্তি তা ডিজিটাল যুগের উন্নত ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা সম্ভব নয়। এই গাছটা আঠার(১৮) বিঘা জমির উপর বিস্তৃত। বনবিভাগের উদ্যোগে এর চারপাশ বাঁশ-মূলি দিয়ে ঘেরা হয়েছে গাছটি সুরক্ষিত রাখার জন্য। এই বটগাছটার জন্ম কথা জানে এমন লোক বর্তমানকালে কালিগঞ্জ উপজেলায় নেই। যাকেই জিজ্ঞাসা করা হয়, সে-ই বলে আমার দাদাও বলতে পারেনা, আর আমি বলবো কীভাবে?

জানা যায় এই গাছ হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বটগাছ। উষ্ণ আবহাওয়ায় বিশাল আয়তনের এই ছায়াবৃক্ষটি মানুষের অনেক উপকারে আসে। প্রাচীনকাল থেকেই বটবৃক্ষের ছায়ায় হাট-বাজার বসে, মেলা হয়, লোকগানের আসর বসে। জনসভারও আয়োজন হতো। কারণ হিসেবে বলা যায়, বাংলার গ্রামাঞ্চলে বড় বড় সুশীতল হলরুম ছিল না। আর তাই বড় বড় অনুষ্ঠান ও জনসভাগুলো ছায়াসুনিবিড় বটতলায় অনুষ্ঠিত হতো। এখনো গ্রামাঞ্চলে সেই দৃশ্য অনেকসময় চোখে পড়ে। বটগাছকে ভারত ও বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকেরা শিবের (মহাদেব) ছায়াবৃক্ষ হিসেবে মান্য করে থাকে।

মঠের ভেতরে খালি জায়গা আছে। খালি জায়গায় আগে অনেক মানুষ ঘৃতপ্রদীপ জ্বালাতো। দিতো ধূপের ধোঁয়া।

যার কারণে এই বটগাছ ভারত ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা কাটেও না,বটগাছের লাকড়ি পোড়ায়ও না। এখনো হিন্দু ঘনবসতি এলাকায় এই বটগাছের নিকটে মন্দির স্থাপন করে পূজা অর্চনা দিতে দেখা যায়। আর বটগাছের নিচে শিবের (মহাদেব) হাতের একটা অস্ত্র(ত্রিশুল) গাড়া থাকতে দেখা যায়। যার কারণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ধর্মীয় কারণে বটগাছ কাটা নিষিদ্ধ।

সমাধি স্থানে নির্মিত মঠে বটগাছ:
উল্লেখ করা যায়, এমন আরেকটি বটগাছ আছে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল এলাকায়। এই বটগাছটির অবস্থান চিত্তরঞ্জন কটন মিলের পুকুর পাড়ে। বটগাছটি একটি সমাধি স্থানকে অতি আদরে ঘিরে রেখেছে। সমাধি স্থানটি হলো একটি মঠ, (মন্দিরের মত) সমাধি স্থান।

আগেকার সময় কোন সরকারি বা পৌরসভার অধীনে হিন্দুদের জন্য খুব কম সংখ্যক শ্মশানঘাট ছিল। যা চোখে না পড়ার মতো। কাজেই কোন হিন্দু লোক মৃত্যুবরণ করলে তাঁর শবদাহ বা (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া) করা হতো তার নিজস্ব জায়গাতে। যার জায়গার অভাব ছিলো, তার মরদেহ দাহ (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া) করা হতো, কোনও এক জলাশয়ের ধারে, না-হয় নদীর পাড়ে। (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অর্থ হলো: অন্ত:অর্থ=শেষ, ইষ্টি:অর্থ=যজ্ঞ, ক্রিয়া: অর্থ=কার্যসম্পাদন। সুতরাং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শব্দের অর্থ শেষ যজ্ঞ সম্পাদন। এই শেষযজ্ঞ বলতে বোঝায় অগ্নিতে মৃতদেহ অহুতি দেওয়া)৷

১৯৪০ সালের দিকে পাগলা সাধু নামে একজন সাধু ছিলো। তাদের নিজস্ব বাড়ি ছিল নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল এলাকায়। বর্তমান চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্ পুকুরপাড় সংলগ্ন। এই পাগলা সাধুর মরদেহ বসত বাড়ির পাশে চিত্তরঞ্জন পুকুরপাড় দাহ করা হয়। এরপর তাঁর পুত্র মধু ঘোষ সেখানে একটি মঠ নির্মাণ করে রাখে। একসময় তারা সপরিবারে হিন্দু মুসলিল রায়টের সময় ঘর-বাড়ি ছেড়ে ভারত চলে যায়। রায়টের পর তাদের ঘরবাড়ি সবই বেদখল হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু পাগলা সাধুর সমাধির মট খানা সেভাবেই থেকে যায়। আর সেই মঠ হতে একটি বটগাছ জন্মে বড় হতে থাকে।

বর্তমানে মঠ থেকে গজে ওঠা বটগাছটি মঠটাকে এমন ভাবে জরিয়ে রেখেছে, এখন আর মঠ(মন্দির) দেখা যায় না। শুধু বট গাছের শিখর আর শিখর। দূর থেকে কেউ বুঝবেও না যে, এখানে একটি মঠ(মন্দির) আছে। আগে এখানে অনেকেই সকাল-সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাত। দিতো সকাল-সন্ধ্যা ধূপের ধোঁয়া। বর্তমানে এখানে আর কেউ সকাল-সন্ধ্যা ধূপের ধোঁয়া আর মোমবাতি জ্বালায় না। হয় না কোনও বাৎসরিক মেলা বা কোন হরিনাম সংকীর্তন। অনেকের মুখে শুনা যায় যে, আগে এই মঠ বা মন্দিরে মনোবাসনা পূর্ণের আশায় এখানে অনেকেই মানত/নিয়ত বাঁধত। শোনা যায় নিয়ত বা মনের আশা পূর্ণও হয়েছে অনেকের। সমাধিস্থান মঠ থেকে গজে ওঠা বটগাছটি দেখে বুঝা যায় যে, পাগলা সাধুর সব জায়গা বেদখল হলেও এই মঠ বেদখল হতে দিবো না।

এই পবিত্র সমাধি স্থানের মঠটির বটগাছের শিকড়ের ভেতরে আছে বিশালাকার দু’টি সাপ। এই সাপ দু’টি সময় সময় অনেকেরই চোখে পড়ে। কিন্তু কাউকে ক্ষতি করে না। ধরে নেওয়া যায়, এরা পাগলা সাধুর পবিত্র সমাধি স্থানের মঠটির পাহারাদার। তাই দিনের বেলায়ও সমাধিস্থান মঠের সামনে গেলে কেমন যেন শরীরে কাঁপন ধরে। যাই হোক মঠের সামনে গেলে সবচেয়ে অবাক লাগে মঠটিকে আদর করে আঁকড়ে ধরে রাখা বটগাছটি দেখলে। যেন মায়ের আঁচল দিয়ে মঠটিকে ঢেকে রেখেছে। এখন আর কেউ মঠের একটা ইটাও খুলে নিতে পারবে না। প্রতিটি ইটের ভেতরে ভেতরে বটের শিকড় পেছানো আছে।

অনেকে বলে, “এই বটগাছটির জন্যই পাগলা সাধুর সমাধি স্থানের মঠটি রক্ষা পেলো। বটগাছটি না থাকলে তাদের ফেলে যাওয়া জায়গা সম্পত্তির সাথে এই সমাধি স্থানের মঠটিরও অস্তিত্ব হারাতে হতো।” যে যা-ই বলার বলুক! দুঃখের বিষয় হলো, এমন একটি পবিত্র স্থানের দিকে স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী কেউ ফিরে তাকাচ্ছে না। যদি নিকটবর্তী এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকলে এই পবিত্র সমাধি স্থানটির দিকে একটু খেয়াল রাখতো, তাহলে এখানেও অন্যান্য মন্দিরের মতন বাৎসরিক মেলা, হরিনাম সংকীর্তন, একনাম অনুষ্ঠিত হতো। পাগলা সাধুর সমাধি স্থানটিও থাকতো সবার মুখে মুখে, আর জায়গাটিও থাকতো আলোতে ঝলমল। কিন্তু না, কেউ আর এরকম উদ্যোগ নিচ্ছে না। অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে পাগলা সাধুর পবিত্র সমাধি স্থানের মঠটি।

জয়তু পাগলা সাধু, জয়তু বটগাছ।

নীরেন্দ্র-বন্দনা

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

রাজা রে তোর
কাপড় কোথায়?
প্রশ্ন ছিল শিশুর-
মনন জুড়ে
স্বপ্ন ছিল
কলিকাতার যিশুর।

সেই কবি আজ
নেই শরীরে
এই আমাদের পাশে-
রবেন তিনি
কাব্য-ছড়ায়
আর কবিতার ক্লাসে।

মোবাইল যুগে ডাকবাক্স নিয়ে স্মৃতিকথা


নারায়ণগঞ্জ হাজীগঞ্জ এলাকার কিল্লারপুল সংলগ্ন ড্রেজার সংস্থার গেইটের সামনে ময়লার স্তুপে পড়ে থাকা ডাকবাক্স। ছবি মোবাইল দিয়ে তোলা

একসময় দেশের প্রতিটি পোস্ট অফিসের সামনে, আর গ্রাম গঞ্জের হাট-বাজারের রাস্তার পাশে দেখা যেতো ডাকবাক্স। এখনো সারাদেশ জুড়ে যত্রতত্র দেখা মেলে ডাকবাক্স। তবে আগের মতো ডাকবাক্সের তেমন একটা কদর নেই। আগেকার সময়ে ডাকবাক্সে মানুষ চিঠি ফেলতো। ডাকপিয়ন সময়মত ডাকবাক্সের তালা খুলে চিঠি বের করতো। তারপর চিঠিগুলো একটা বস্তা ভরে নিকটস্থ পোস্ট অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হতো। ডাকপিয়নের হাতে থাকতো একটা হারিকেন, আর একটা বল্লম। পায়ে বাঁধা থাকতো ঘুংগুর। ডাকপিয়ন চিঠির বস্তা কাধে নিয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে পথ চলতো। আর বলতে শোনা যেতো হুশিয়ার সাবধান! এভাবে রাতবেরাতে ডাকপিয়ন গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হাঁটতে থাকতো। ডাকপিয়নের গলার আওয়াজ আর পায়ে বাঁধা সেই ঘুংগুরের শব্দে মানুষ ঘুম থেকে জেগে উঠতো।

ডাকপিয়ন কতো বাধা আর ঝড়বৃষ্টি, চোর ডাকাতের ভয় উপেক্ষা করে চিঠির বস্তা পৌঁছে দিতো হেড পোস্ট অফিসে। হেড পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠি চলে যেতো দেশের বিভিন্ন জেলাশহরে। পৌঁছে যেতো প্রাপকের কাছে। সেসময় এই ডাকবাক্সের অনেক আদর ছিল, কদর ছিল, যত্ন ছিল। মানুষ চিঠি প্রেরণের জন্য, টাকা পাঠানোর জন্য ছুটে যেতো নিকটস্থ পোস্ট অফিসে। আবার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকতো ডাকপিয়নের আশায়। লেখাপড়া না জানা মানুষ চিঠি হাতে পেয়ে কেউ আবার হাউ-মাউ করে কাঁদতো। মনে করতো কী যেন দুঃসংবাদ এসেছে। অনেকে খুশিতে হয়ে যেতো আত্মহারা। এখন আর সেইদিন নেই। মানুষ এখন চিঠি বা পত্র লেখা প্রায় ভুলেই গেছে। পোস্ট অফিসেও আগের মতো তেমন ভিড় দেখা যায় না। ডাকবাক্সে মানুষ এখন চিঠি ফেলে না। ডাকবাক্সে পড়ে থাকে ময়লা আবর্জনা আর ধুলোবালি।

একসময় মোবাইল ওয়াপ পদ্ধতির স্মার্ট ফোন নেটওয়ার্ক চালু হবার পর থেকে ডাকবাক্সের কদর কমতে থাকে। সেইসাথে যোগ হয়েছে বর্তমান সময়ের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। তাই হাট-বাজারে, রাস্তার পাশে থাকা ডাকবাক্সে শেওলা পড়তে শুরু করেছে। মানুষ ভুলতে শুরু করেছে চিঠি লেখা। মানুষ একরকম পোস্ট অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একেবারে যে পোস্ট অফিসে যায় না, তা কিন্তু নয়! যায় অনেকের দরকারি কাজে। তবে বর্তমানে মানুষ যে ডাকবাক্সের ধারেকাছেও যায় না সেটা সত্য এবং বাস্তব।

সেদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে আসার পথে কিল্লার পুল সংলগ্ন ড্রেজার সংস্থার মেইন গেইটের সামনে একটা ডাকবাক্স চোখে পড়ে। ডাকবাক্সটি পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়, ময়লা আবর্জনায়। ডাকবাক্সটি ময়লার স্তুপের উপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বাক্সের চারপাশে জঙ্গলে একাকার। দেখে মনে হয় হয়তো মাসে, নাহয় বছরে একবার এই ডাকবাক্সটির তালা খোলা হয়।

একসময় এদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ডাকবাক্স ছিল খুবই সম্মানী বস্তু। এই ডাকবাক্স ছিল অগণিত মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি। এসবের জ্বলন্ত সাক্ষী আমি নিজেই। দেখতাম একটা চিঠির অপেক্ষায় আমার মা ডাকপিয়নের বাড়িতেও দৌড়াতে। বাবার প্রেরিত চিঠি মা হাতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতো। চিঠি হাতে পেয়ে ডাকপিয়নকে কতনা অনুরোধ করতো, চিঠি পড়ে শোনানোর জন্য।

ছোটবেলার স্মৃতিগুলো এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে। মনে হয় তখন, যখন একটা পোস্ট অফিসের সামনে অথবা রাস্তার ধারে ডাকবাক্স চোখে পড়ে। ছোটবেলা দেখতাম আমার মা চিঠির মাধ্যমে বাড়ির সুসংবাদ, দুঃসংবাদ বাবাকে জানাতেন। বাবা থাকতেন নারায়ণগঞ্জ। চাকরি করতেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চিত্তরঞ্জন কটন মিলে। মা সংবাদ পোঁছাতেন চিঠির মাধ্যমে। আমার মা লেখা-পড়া জানতেন না। চিঠি লেখাতেন গ্রামে থাকা পাশের বাড়ির শিক্ষিত মানুষ দিয়ে। এখনকার মতন তো শিক্ষিত মানুষ তখনকার সময়ে ছিল না। কোনও কোনও গ্রামে একজন মেট্রিক পাস মানুষও ছিল না। যদি একটা গ্রামে একজন মানুষ ভাগ্যক্রমে মেট্রিক পাস করতো, দু’একটা গ্রামের মানুষ তাকে দেখার জন্য ভিড় জমাতো। আমাদের গ্রামে একই বাড়িতে তিনজন শিক্ষিত মানুষই ছিলেন। তাঁরা তিনজনই ছিলেন স্কুলের মাস্টার। সেই কারণেই তাদের বাড়ির নাম হয়েছিল মাস্টার বাড়ি। তাদের নাম ছিল, দক্ষিণা মাস্টার, প্রমোদ মাস্টার ও সুবল মাস্টার।

মাকে যিনি সবসময় চিঠি লিখে দিতেন, তিনি ছিলেন সুবল মাস্টার। সম্পর্কে নিজেদের আত্মীয়স্বজন। চিঠি লেখাও একটা বিরক্তের কাজ। চিঠি লিখতে হলে সময় লাগে, মন লাগে, ধৈর্য লাগে, তারপর চিঠি লিখা। সব শিক্ষিত মানুষ চিঠি লিখে দেয় না, চিঠি লিখতে পারে না, জানেও না। সুবল মাস্টার সম্পর্কে আমার জেঠা মশাই। আমার বাবার খুড়াতো ভাই (চাচাতো ভাই)। আমার বাবার বয়স থেকে সুবল মাস্টার অল্প কয়েকমাসের বড়। তাই আমার মায়ের ভাশুর। মা জেঠাদের বাড়িতে গিয়ে অনেকসময় ফিরে আসতেন, চিঠি না লেখাতে পেরে। এভাবে দু’তিনদিন যাবার পর একদিন শ্রদ্ধেয় জেঠা মশাই মাকে সময় দিতেন, চিঠি লিখে দিতেন। জেঠা-মশাই কাগজ কলম হাতে নিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করতেন কী ব্যাপারে চিঠি দিবে? মা বলতেন, ঘরে চাল নেই, ডাল নেই, তেল নেই, হাট-বাজার করার মতো টাকা-পয়সাও নেই। এই নিয়েই আপনি সুন্দর করে লিখে দেন, যাতে ওর বাবা বুঝতে পারে।

তখনকার সময়ে শর্টকাট চিঠি লিখতে পোস্টকার্ডই বেশি ব্যবহার করতো। একটা পোস্টকার্ডের মূল্য ছিল মাত্র ১৫ পয়সা। আর একটা ইনভেলাপের মূল্য ছিল মাত্র চার আনা(২৫) পয়সা মাত্র। তখনকার সময়ে দশ পয়সার খুবই মূল্য ছিল। সহজে বিনা দরকারে কেউ পাঁচটি পয়সাও খরচ করতো না। পোস্টকার্ড আর ইনভেলাপের মূল্য দশ পয়সা এদিক সেদিক হওয়াতে মানুষ অল্প কথার জন্য পোস্টকার্ডই বেশি ব্যবহার করতো। পোস্টকার্ডে জেঠা মশাই চিঠি লিখে মাকে পড়ে শুনাইতেন, মা শুনতেন। পোস্টকার্ড বুকে জড়িয়ে বাড়ি চলে আসতেন। পরদিন সকালবেলা আমি স্কুলে যাবার সময় আমার কাছে পোস্টকার্ডটা দিয়ে বলতেন– বাজারে গিয়ে চিঠিটা পোস্ট অফিসের সামনে থাকা বাক্সে ফেলে দিবি! মায়ের কথামত পোস্টকার্ডটা খুব যত্নসহকারে বইয়ের ভেতরে রেখে বাড়ি থেকে রওনা হতাম।

আমাদের বাড়ি থেকে পোস্ট অফিসের দূরত্ব ছিল প্রায় এক কিলোমিটার। বাজারে যাবার রাস্তার পাশেই ছিল স্কুল। চিঠি নিয়ে সোজা বাজারে চলে যেতাম। ডাকবাক্সে পোস্টকার্ডটা ফেলে দিয়ে তারপর আসতাম স্কুলে। স্কুল ছুটি হবার পর বাড়ি আসার সাথে সাথেই মা জিজ্ঞেস করতেন– চিটি বাক্সে ফেলেছিস? বলতাম, হ্যাঁ মা ফেলেছি! এরপর থেকে মা অপেক্ষায় থাকতেন ডাকপিয়নের আশায়। মানে বাবার দেওয়া চিঠির আশায়। কখন আসবে বাবার চিঠি বা মানি অর্ডার করা টাকা। পোস্ট অফিস থেকে (ডাকপিয়ন) যিনি বাড়ি বাড়ি চিঠি পৌঁছে দিতেন, তিনি গ্রামের সবার নাম জানতেন এবং বাড়িও চিনতেন। ডাকপিয়ন আমাদের পাশের গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন।

পোস্ট অফিসে চিঠি বা মানি অর্ডার করা টাকা আসার পরপরই ডাকপিয়ন চিঠি পৌঁছে দিতেন বাড়িতে। বকসিস হিসেবে ডাকপিয়নকে এক টাকা বা লাড়ু-মুড়ি খাওয়াইয়ে আপ্যায়ন করে দিতেন। এতে ডাকপিয়ন সাহেব খুব খুশি হতেন। বাবা যদি মানি অর্ডার করে টাকা পাঠাতেন, তাহলে আমার মা বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেই টাকা রেখে দিতেন। আর যদি টাকার বদলে চিঠি আসতো, তাহলে হাতে পাওয়া চিঠি ডাকপিয়ন সাহেবকে দিয়ে পড়াতেন, না হয় চিঠি নিয়ে দৌড়াতেন মাস্টার বাড়ি। মায়ের চিন্তা শুধু কী সংবাদ এলো চিঠির মাধ্যমে। জেঠা মশাই মাকে দুঃখসুখ নিয়ে বাবার লেখা চিঠি পড়ে শুনাইতেন। মা চুপ করে বসে শুনতেন। সেসময়ে আমার মায়ের মতো এমন আরও অনেক মা ছিল, যারা লেখা-পড়া জানতো না। তাঁরা ডাকপিয়ন থেকে চিঠি হাতে পেলে অনেকেই দুঃচিন্তায় পড়ে যেতো। ভাবতো সুসংবাদ এলো, না দুঃসংবাদ এলো?

এখন আর সেই সময় নেই। চিটির যুগ প্রায় শেষপ্রান্তে এসে গেছে। এখন মোবাইল ফোনের যুগ। কথা হয় মোবাইলে। বিদেশে থাকা প্রিয়জনের সাথে কথা বলার জন্য টেলিফোন এক্সচেঞ্জেও কাউকে যেতে হয় না। জরুরি কোনও সংবাদ টেলিগ্রাফ করতে পোস্ট অফিসে যেতে হয় না। পোস্ট অফিসে গিয়ে লাইন ধরে চিটির খাম ওজন দিয়ে আর রেজিস্টার করতে হয় না। এখন সব কাজ সমাধা হয়ে যাচ্ছে ছোট একটা যন্ত্র মোবাইল ফোনেই। চিঠির মতন লেখা হয় মেসেজের মাধ্যমে। যখন খুশি তখন যেকোনো সময়।

বিদেশ থেকে প্রিয়জনের পাঠানো টাকা আসে ব্যাংকে, আর মোবাইলে। টাকার পরিমাণ এবং কোন ব্যাংকে টাকা পাঠানো হয়েছে, তা মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রিয়জনকে। মোবাইলের মাধ্যমে নিমিষেই সব হয়ে যাচ্ছে। যখন খুশি টাকা উঠানো, টাকা পাঠানো, মোবাইল ফোনে রিচার্জ করার মত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এতে ব্যাংকে যাওয়া কিংবা ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি মিলছে মানুষের। দিন যত গড়াচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে উঠছে। বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। কদর কমছে পোস্ট অফিস আর ডাকবাক্সের।

মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হওয়ায় গ্রামীণ জনজীবন অনেক সহজ হয়েছে। এ সেবার মাধ্যমে ঘরে বসেই অনেক কাজ করা যাচ্ছে। বাস, ট্রেনের টিকিট থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনও পরিশোধ করা যাচ্ছে মানুষের হাতের মুঠোয় থাকা ছোট্ট যন্ত্রটির মাধ্যমে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেসব কাজ করা যায় সেগুলো হলো– রেমট্যান্স পাঠানো, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট। একজনের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্যজনের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো। ইউটিলিটি বিল দেওয়া। মোবাইল ফোনের এয়ার টাইম কেনা।

পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্চেন্ট পেমেন্ট। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেতন দেওয়া। পানির বিল পরিশোধ করা। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা, বিমা প্রিমিয়াম, ডিপিএস দেওয়া যায়। আরও আছে ভিডিও কল। কথা বলার সাথে সাথে প্রিয়জনের ছবি বা ভিডিও দেখা যাচ্ছে মোবাইল স্কিনে। মনে হয় প্রিয়জনের সাথে সামনাসামনি বসে কথা হচ্ছে। এটা ছিল কোনোএক সময়ে মানুষের কল্পনাতীত। কিন্তু এখন তা বাস্তব। এতকিছুর শর্টকাট সুবিধা পাওয়ার পর, কে যায় কষ্ট করে পোস্ট অফিসে? আর কে-ই-বা যায় চিঠি লিখে ডাকবাক্সে ফেলতে? কেউ যাক আর না যাক, হারানো দিনের স্মৃতি হিসেবে যেন ডাকবাক্স সবসময় আমাদের পাশে থাকে, এই কামনাই করি।

আমার নাবলা কথা এবং ফেবু মেমোরি থেকে একটা পোষ্ট

Ben এর সাথে এক দশকের মধ্যে আমার তিনবার দেখা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ এর প্রথম দিকে। তিনবারই আফ্রিকায়; তিনটা ভিন্ন দেশে। সে আমার অনেক সিনিয়র এবং হেডকোয়ার্টারে একজন বিগশট। শেষবার খাবার টেবিলে সে আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিল, “সব কথা কী পরিবারের সাথে শেয়ার করেছো?” জবাবে বলেছিলাম, তাঁরা কিছু তো জানেই; ফেইস বুকেও শেয়ার করেছি”। তবে কিছু কথা বলা হয়নি। যুদ্ধের সময়ের কিছু দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা।

আসলে কিছু কথা বলার ইচ্ছে হয়নি। কিছুদিন আগ পর্যন্তও এই ইচ্ছেটা জাগেনি। কিন্তু গত দু’ তিনদিন ধরে কেন জানি সেইসব নাবলা কথা লিখে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ থেকেই লিখবো ভাবছিলাম। ফেবু ওপেন করে দেখি, মেমোরিতে দুটি পোস্ট। একটা আমার ফেবু ওয়ালে অনলি মি-তে (১৫ নভেম্বর ২০১৭) লেখা একটা কবিতা বইয়ের ড্রাফট রিভিউ। দ্বিতীয়টা পাকিস্তানে এক সন্ধ্যায় সিন্ধ নদ অতিক্রম করার সময় আমার অনুভূতি নিয়ে একটা পোস্ট (১৫ নভেম্বর ২০১২)।

এখন খুব সংক্ষেপে এই সিন্ধ পাড়ে প্রাচীন সভ্যতা, রিসেন্ট ইতিহাস এবং আমার অপূর্ণ ইচ্ছার কথা শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে। আফ্রিকার যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার নাবলা বিষয়গুলি আজ তাই পেন্ডিং রেখে দিলাম।

আমি ইতিহাস খুব কম জানি। কিন্তু প্রাচীনতম ইতিহাসগুলি জানার আমার ভীষণ আগ্রহ রয়েছে। তবে পড়ে পড়ে নয়; দেখে দেখে জানার আগ্রহ। যদি সিন্ধু সভ্যতার কিছু চিহ্ন দেখতে পাই তাই সিন্ধ নদের পাড় ঘেষে গড়ে ওঠা শহরগুলিতে আমি গিয়েছি।

ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য সিন্ধ পাড়ে লারকানা এবং ঠাট্টা উল্লেখযোগ্য ছিল। মহেঞ্জোদারোর কথা তো সবাই জানে। ওটা লারকানা জেলা শহরের কাছে (প্রায় ২০ কিলো দূরে)। দেশটাতে কয়েক বছর ছিলাম। বেশ কবার এটেম্পট নিয়েও লারকানা বা মহেঞ্জোদারোতে যাওয়া হয়নি। এই না যেতে পারার আফসোস আমি এখনো অনুভব করি। তবে ঠাট্টায় গিয়েছি।

করাচী থেকে ঠাট্টায় যাওয়ার কথা বলি। পথে বামপাশে ঝিরক হাসপাতাল। ওখানে নামলাম। আমার আগ্রহের কারণে ওরা আমাকে কায়েদে আযম এর গ্রামে নিয়ে গেল। যতদূর মনে পড়ে ৭-৮ মিনিটের ড্রাইভ। উনার জন্মস্থান নিয়ে দুটি মত থাকলেও ওখানকার গ্রামবাসীরা দৃঢ়তার সাথে জানালো, ওটাই কায়েদে আযম এর জন্মস্থান। তারা আমাকে সিন্ধ নদের একটা ঘাটে নিয়ে গেল যেখানে তিনি (কায়েদে আযম) বাল্যকালে খেলতেন; সাঁতার কাটতেন। সিন্ধের ঐ অংশটা শুকিয়ে একেবারে খালের মতো সরু হয়ে গেছে। উজানে বাঁধের কারণে। ঘাটটায় কিছুক্ষণ বসে থাকলাম এবং ভিন্ন একটা অনুভূতি টের পেলাম।

ঝিরক থেকে ঠাট্টা প্রায় ৪৫ মিনিটের ড্রাইভ। কুড়ি মিনিট ড্রাইভ করার পর পাথরের একটা ঘর দেখলাম। কথিত আছে প্রায় হাজার বারশো বছর আগে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এক অন্ধ লোক ঘরটা বানিয়েছিলেন। এলাকার লোকদের কাছে ওটা একটা বিস্ময়। ভিতরে যেতে চাইলাম। সবাই মানা করল। কিন্তু কেন? বুঝা গেলোনা।

ঠাট্টা সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে ডিসি এবং জেলা এক্সেকিউটিভ হেলথ অফিসারের সাথে দেখা করি। একইদিন শহর প্রান্তে মাক্লি নামক জায়গায় ওয়ার্ল্ড বিগেস্ট সিমেট্রিতে (কবরস্থান) গেলাম। ঠিক মনে নেই, সম্ভবত হাজার বছরের পুরান এই সিমেট্রি। রাজা মহারাজাদের পরিবারের সদস্যদের সাড়ে তিন হাত মাপের ঘর। অসাধারণ দেখতে প্রতিটা কবর। বহুক্ষণ ধরে দেখছিলাম কিন্তু আগ্রহ কমেনি। ওখানে যারা শুয়ে আছেন তাঁদের অনেকেই ইতিহাসখ্যাত। অসাধারণ সব কারুকাজময় হাজার হাজার সমাধি। তাঁদের কেউই সাধারণ ছিলেন না; সবাই পরাক্রমশালী। দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, “পরাক্রমশালী লোকগুলির সাথে ঐ সময়ের চাষামজুরদের এখন পার্থক্য কি? মাটি!

এসব দেখে একই পথে ফিরছিলাম। হায়দারাবাদ শহরে রাত্রি যাপন করব। যখন সিন্ধ নদ অতিক্রম করছিলাম তখন সন্ধ্যা নামে নামে। তখনই এই পোস্টের কথাগুলি আমার অনুভূতিতে আসে। হায়দারাবাদে হোটেলে ওঠে এই ছবি সহ পোস্টটা দিয়েছিলাম। আজ কেন জানি এখানে শেয়ার দিতে ইচ্ছে হল। কেউ “ক্ষণিক আমাকে ভাবে” এই কথাটা পোস্টে লিখেছি; কিন্তু কে সে জানতামনা। অদ্ভূত হিউম্যান সাইকোলজি; যা মানুষ নিজেও নিজেরটা জানেনা!

মেমোরি থেকে ১৫ নভেম্বর ২০১২ র পোস্টঃ
“আজ যখন সিন্ধু নদি অতিক্রম করছিলাম তখন সন্ধ্যা নামে নামে। কিছু পাখি সিন্ধুর জাগা-চরে বসেছিল; আর কিছু ঘরে ফিরছিল। তখন মনে
হয়েছিল আমার একটা নদি আছে-সেখানেও সন্ধ্যা নামে। সেখানে হয়তো কেউ সন্ধ্যাবাতি জ্বালাতে গিয়ে ক্ষণিক আমাকে ভাবে”!