বিভাগের আর্কাইভঃ সাহিত্য

সজীব বয়ান

একটি রণ বাহিনীর গোড়াপত্তন চলছে। শুরু হয়ে গেছে যাবতীয় কলা কৌশল আয়ত্ত করন প্রক্রিয়া। অচিরেই মাঠে নামবে সোমত্ত জোয়ান।যাদের অন্তরে দীর্ঘকালের লালিত বাসনা, রক্তে লহরিত সুর, তীব্র তারানা; বলয়ের সম্মোহিত ছন্দে তারা উঠে আসছে মহান দর্পণে!

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাঞ্জল শ্লোগানে। সমুচ্চারে। শৌর্যের গানে…।
যাবত কালের নিবিষ্ট ক্ষুধা থেকে, বারবার উপেক্ষিত সুন্দরের প্রস্তাবনা থেকে, পতিত অশ্রু বান- প্রেমের নৈবদ্য থেকে ছুটে আসছে নিবিড় এক প্রলয়। সুধা মাখা তীর,পুষ্পিত ধনুকে।
পরাগের গোলায়। হৃদয়ের সমস্ত মমতা মেনে মেখে শাণিত হচ্ছে সৈনিকের চোখ-দুর্জয় দৃষ্টি।

যেখানে ডেকেছে রংধনু কুৎসিত মেঘে, যেখানে পুড়েছে ফুলের স্নায়ু হিংস্র আগুনে, যেখানে ডুবেছে কবি নির্মম বিষাদে, যেখানে রুদ্ধ পথ- শৃঙ্খলিত শিল্পের চরণে। সেখানেই হবে শুদ্ধি
অভিযান! সজীব বয়ান। নতুন এক সংবিধান প্রণীত হবে কবিতা আর গানে।

প্রতিদিন উদযাপিত হবে সুরভী সন্ধ্যা- জ্যোৎস্না উদ্যানে। মহুয়ার বাগানে প্রজাপতির নৃত্য।
সু ঘ্রাণে মোহিত পৃথিবী আপন অক্ষে বয়ে বেড়াবে এক অভিন্ন নদী…

নাকফুলের অভিজ্ঞান

সন্ধ্যায় ডালিমদানার সাক্ষাতে সেসব হাসছে
কবিতার কাগজে মোড়ানো শীতল শিরোনাম
আর তুমি স্থির জমে থাকা রক্তজবা ব্যঞ্জনায়
নাকফুলের অভিজ্ঞানে পড়েই চলেছ।

কাউতালি শব্দ কখন ট্রেন হয়ে ছুটে যাচ্ছে
ঈশ্বরদী জংশন-পথের গায়ে ভাঙাচোরা গ্রাম-
শাদাকালো টিভির এন্টেনা ঘোরানো হাত
সুতোর ববিনে ঘুড়ি উড়তে থাকা সহজিয়া দিন
বোধহয় নিজের যত্ন ভুলে সন্তপ্তয় চেপে বসেছ
তুমি জানো না,আমাদের শিরার গহিনে খেলা
বেশুমার নদীর পিঠ বয়ে এনেছিল পিছুটান-
লুকোচাপা সম্পর্ক, তাতে জন্মেছে বাদামবন।

দেশদ্রোহী

মা, ওরা এখনো টিকে আছে যত্রতত্র, ভালো মানুষের বেশে-
সুযোগ পেলে তোমার সর্বনাশ করার স্বপ্ন দেখে নীরবে নিভৃতে
এখনো বেহায়ার মতো সুযোগ বুঝে তোমার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ে
‘‘এমন দেশে তো এমনই ঘটনা ঘটবে! জানে, সর্বজনেই জানে।’’

তোমার আলো-বাতাস কি তারা ভোগ করছেনা কভু!
তোমার বুকের দুগ্ধ স্রোতরূপী জলে কি তার তৃষ্ণা মিটেনি মৃদু!
তোমার বুকের রাশি রাশি সোনালি ধানে কি তার জুটেনি আহার!
তোমার শ্যামলিমার অপরূপে কি তার চোখে জাগেনি বিস্ময় অপার!

ওরা ছিলো ভিনদেশি শত্রু, অঙ্গার করেছিলো তোমার বুক
বাংলার বুক শ্মশান করতে উদ্যত ছিলো সদা উন্মুখ!
বারুদে বন্দুকে যত্রতত্র খই ফুটিয়েছিলো হায়েনার দল
এরাও তো খই ফোটাচ্ছে কথার ধুম্রজালে, রচেছে মিথ্যে ছল।

মা, তোমার কোনো সন্তান যদি হয় পথের বিবাগী; চলে ভুল পথে
সে দোষ তো মায়ের নয়! পার যদি লড়ে যাও তার সাথে
ঝোপের আড়াল হতে হুক্কাহুয়া রবে বোল বলোনা শেয়াল শয়তান
রুখে দিতে আছে এখনো বেঁচে দেশপ্রেমিক লড়াকু মন।

মায়ের বদনে কালিমা মেখে, পরিচিত হইও না জাতীয় কুলাঙ্গারে
বাংলার জল, বাংলার ফল আর শ্যামলিমা পেয়েছি বিধাতার আশির্বাদের তরে।

মনের দৌড়

rt

মনের যত দৌড়
আকাশ সীমা-
রঙ ছুঁয়ে যায়
মাটির কায়া;

মেঘের ঝড় বৃষ্টি
চোখে নেই মায়া!
বট বৃক্ষ, বাঁশ
চাটাই বুঝে না-
কার কেমন ছায়া;

রঙধনু জোছনা রাত
প্রেম যমুনায়
আসে না চাঁদ-
চাঁদের গায়ে রঙিন বাড়ি
শূন্য মনে কত আড়ি;
কার কি এসে যায়-
মাটির স্পর্শ ছোঁয়া;

১৭ শ্রাবণ ১৪২৯, ০১ আগস্ট ২৩

লাগাতার সন্ধ্যার আয়তন

ক্রমশ আইসিইউ তে চলে যাচ্ছে গোটা বাংলাদেশ!
দীর্ঘতর সন্ধ্যায় গালে হাত দিয়ে বসে আছেন মা,
একটি গামছা দিয়ে জড়িয়ে ছোটবোন’টিকে নিয়ে-
হাসপাতালের দিকে ছুটছেন অগ্রজ!
এম্বুলেন্স ছুটছে,
সাইরেন বাজানো ভুলে গিয়ে শুধুই
আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন চালক ;
ঠাঁই নাই – ঠাঁই নাই
ক্লিনিকের করিডোরে কাঁদছে বিষণ্ণ কাক!

মৃত্যু ছাড়া আর কোনো সংবাদ মাইকে
প্রচার করতে পারছেন না মসজিদের
মোয়াজ্জিন। মন্দিরের উপাসক-
দু’হাত তুলে প্রার্থনা করছেন প্রভুর কাছে,
পাখিরাও ওড়াওড়ি ভুলে গিয়ে-
যাপন করছে বিষাদ-বিলাপ!

সন্ধ্যার আয়তন বেড়ে গেলে দীর্ঘ হয়
রাতের পরিধি!
কিন্তু হায়! মানুষ কতোটা মেনে নিতে পারে
আঁধারের আয়ু! কতোটা বিপন্ন হয়ে
জানান দিতে পারে নিজের অসহায়ত্ব!

আমি নির্বাক চেয়ে আছি।
আমি নিজের সাথেই সারছি সংলাপ।
একটি প্রভাতের জন্য আমি আরাধনার
ডালি সাজিয়ে বলছি…
মহান শক্তিধর হে!
তুমিই তো বলেছ- তোমার ক্ষমা থেকে
কোনো প্রাণই বঞ্চিত হয় না!
#

বৃত্তরেখা

বৃত্তের বাইরে আসতে কড়িকাঠ পুড়িয়েছি
ঘোলা করেছি কতো কতো জল
পরিণামে কিছুমাত্রও ভয় পাইনি
তবুও ক্ষণে ক্ষণে বেড়েছে কেবল সাধের অনল!

কবিতার হাত ধরে চায়ের স্টলে উড়িয়েছি ঘুড়ি
তবুও ধোঁয়ার আস্তর ভেদ করে হয়েছে মন চুরি
দিনশেষে দেখি ঝিঁঝিঁ ডাকে ভারিভুরি!

তবুও পাইনি কাঁহাতক বৃত্তরেখার নাগাল
তবে কি আর সবার মতো আমিও অধরা প্রেমের কাঙাল..?

আমি তোমাদের কেউ নই

dau

নতুন করে প্রমান হলো
আমি তোমাদের কেউ নই, আগেও ছিলাম না
এখনো নই.. কখনো হবো কি-না; জানি না!
যেভাবে জ্যোৎস্না পেরুতে পারে না রাত
অথবা গোধূলি অমানিশার..

নদীও তো বয় শব্দ, রাশি রাশি পদাবলী
তবুও নদী তো কবি নয়,
কবি – নিরবধি
বয়ে বেড়ায় খরস্রোতা নদী! অন্তর্জাল
কলকল ধ্বনি- বর্ণীল কথোপকথন…

আমি কারোই কেউ নই
তোমাদের দলের নই
তোমাদের মতের নই
বর্নের নই
গোত্রের নই;
নই কারো ইচ্ছের নর্তক!..
কেউ নেই, যে-
আমাকে বাধতে পারো, পুষতে পারো, বুঝতে পারো…

নিত্য খবরে জানান দেয়া
সবুজের কান্নায় অশ্রুত ভোরের বার্তা
ঘাসের কেশরে স্ফটিক শিশির বিন্দু কারো নয়!

শত সহস্র অনাহুত কান্না
নিত্য ঝরে যায় নৈশব্দের অক্ষিকোটরে
অজস্র পাখিরা নৈবদ্য অভিসারে
চিৎকার করে ঘোষণা করে –
আমি তাদের কেউ নই!…

সুন্দর

স্বর্ণচ্ছায়া দুপুর ম্লান হতে বিকেলদৃশ্য নেমে এল
অপারেশন টেবিলে শোয়ানো জেব্রাদের দৌড়
ধূলোয় ডুবে যাচ্ছে সেসব পাখিদের প্রান্ত-গাছ
কোনো এককালে সকালের রোদ এনে তুলে দেয়
দূর ব্যঞ্জনার মুখোমুখি সমুদ্র ভাসানো কুয়াশা-
ডুমুরফুলের নিচে অবধারিত এক বসন্ত;
তোমার হাতের বনপিরিচে বিস্কুট হয়ে হাসছে
জলজ্যান্ত হলুদ গমের খেত, দূরের গান ছড়ায়া-
হাঁটতে থাকে সন্ধ্যামণির নীল জ্যোৎস্নামাখা চাঁদ।

আর…
চারা মানুষের তাড়া খেয়ে বানরগুলো নারকেল
গাছে চড়ে বসে এ শহর বেড়ে ওঠার আগে
রঙপেন্সিলে আঁকানো উঠতি নারীর ধূসর চুল
নীল হাওয়ায় ওড়ে আর তুমি তাতে সুন্দর হচ্ছ!

মন হতে শুদ্ধতা হারিয়ে গেছে

ch

মন আমার দুধ সাদা ফুলের মত ছিল
সময় সে সব শুদ্ধতা কেড়ে নিল
মনের ক্ষেতে এখন আগাছাদের বাড়াবাড়ি
আমার সুখগুলো নিয়ে মানুষেরই কাড়াকাড়ি।

আমার মনের শুভ্রতা হারিয়ে ফেলেছি,
আমি হতাশার সায়রে ভাসছি, হাহাকারের ময়দানে ডানা মেলেছি।
আমি যেন আমার নই আর
দীর্ঘশ্বাসের পিঠেই হয়েছি সওয়ার।

মন তো দুধ সাদা ফুলের মত
কেন সময় পোকা হুল ফুটায় বুকে, বুকে যে ব্যথার ক্ষত
গলা পর্যন্ত বিতৃষ্ণার জল,
দু দন্ড শুভ্র প্রহর পেতে অপেক্ষায় হয়ে আছি কপিঞ্জল।

আমার মন কেন শুদ্ধতা হারায়
শুদ্ধতার বুকে বিষের তীর মারতে মানুষরা পা বাড়ায়
বিষের তীর বুকে বিঁধে
আমার যে শুভ্র মন, ভালো থাকি এটুকুই মনে ক্ষিধে।

কান্নাগুলোই কেন আমার হয়
আমার সময় কেন অয়োময়
নিউরণে কী যে যন্ত্রণা
চারিপাশে আমার জন্য মানুষ’রা বুনে কুমন্ত্রণা।

ভাল্লাগে না আর, শুভ্র প্রহর চাই দু’দন্ড
অবসর চাই এক সমুদ্দুর, ফুরসত চাই অনন্ত অখন্ড
ফিরে আসুক চাই, শুদ্ধ প্রহরগুলো আমার
হৃদয় গহীনে আর কত গড়বো বিতৃষ্ণার খামার।

.
(ক্যানন ডি৬০০, ঢাকা)

মাস্তুল

এই বাঁকে কী এর আগে দাঁড়িয়েছিল কেউ। মাস্তুল কাঁধে ফেরারী মাঝির
মন নিয়ে দেখেছিল ভাঙনের সপ্তদৃশ্য ! এবং ওপারের মানুষের বিরহে
ঢেকেছিল দু’চোখ !

এমন প্রশ্ন নিয়ে জল খেলে ঘূর্ণি ঘূর্ণি খেলা
বেলা বয় ধীরে-
যমুনার দুই পাড়ে স্মৃতিমেদ বসিয়েছে মেলা !

একদিন জাগিব না জেনে

একদিন জাগিব না জেনে
ঘুমায়ে পড়ি যদি,
সেদিন বহিবে কী নদী
আজো যেমন বহিতেছে
এই বাংলার প্রাণে
অমরাবতীর অমর গানে।

একদিন জাগিব না জেনে
ঘুমায়ে পড়ি যদি,
সেদিন ডাকিবে কী কোকিল
আজো যেমন ডাকিতেছে
এই বাংলার প্রাণে
কংকাবতীর ঘুঙুরের তানে।

একদিন জাগিব না জেনে
ঘুমায়ে পড়ি যদি,
সেদিন ঝরিবে কী শিশির
আজো যেমন ঝরিতেছে
এই বাংলার প্রাণে
বেহুলার হৃদয়ের টানে।

জলের নিনাদ

জলের শব্দ শোনা যায়; যতবার বৈঠা ওঠানামা করে। হেলেদুলে যাচ্ছে নৌকা ঢেউ ভেঙে ভেঙে। এসব ছন্দের মানে ক’জন জানে! এই যে জলের ফোঁটা, আর ওই তো সোনালি রোদ। তৃষ্ণা কি একেই বলে! নাকি শুধু খেলা। চঞ্চলা মেঘের সেই সাজ। হতে চায় সে বৃষ্টিতে অনুবাদ। এসব শব্দের মানে ক’জন খোঁজে! শুধু নেশার ঘোরে ভাঙছে সিঁড়ি মাতাল বাতাস। খুলছে কপাট বদ্ধ ঘরের। ঐ যে দেয়ালচিত্র। পূর্বপুরুষ দেখেছিল জোয়ার। ভেসে গেছে তাদের কাঠের পাটাতন। আচ্ছা নদী কেন হয় আঁকাবাঁকা?

এখন জলের শব্দ হচ্ছে গেলাসে। সুইমিংপুলে নৌকা বাঁধা আছে। বৈঠাগুলি তার প্লাস্টিক সিলিকনের।

স শ স্ত্র সু ন্দ র

dau

দেখো
বিবেকের করিডোরে
বুকের ভেতরে…অতল আত্মায়
অসংখ্য শিশু কষ্ট পোহাচ্ছে নিশিদিন;
অসীম ধৃষ্টতায় বাড়ছে জ্বালা
হৃদয় গহ্বরে…দৃষ্টির রেখায়…অস্থি-মজ্জায় …
ধূমকেতুর মত ছুটছে ওরা
প্রকম্পিত আকাশে, মেঘের কান্নায়
ধুঁকেছে অন্তহীন
মৃত্যু বেদনায়, নতুন নতুন জন্ম প্রহারে!…

এখানে সান্ত্বনা নাই
হিসেব নাই
কে কারে কাঁদায়…
তবু
মত্ত পতঙ্গের মতন
মানুষ বুকে ধরে এক আকাশ নীলিমা,
রূপোলী স্রোতের তলে পুঁতে রাখে স্বপ্নজাল!

দেখি
সূর্যের চুম্বন ঝরে বৃক্ষের ডগায়;
এলোকেশী রমণীর বুকে যেমন-
রক্তের ঝর্ণা ঝরে!
পৃথিবীর কি বা আসে যায়-
যে স্রোত নেমে আসে উজান বেয়ে
তার তলে বহমান আমাদের অজস্র স্বপন
যার আঁচলে
রচিত হয় সশস্ত্র বাসনা…
দ্রোহের অনিবার্য অভ্যুত্থান!

২৮/৭/১৮

জগন্নাথ

যিনি আমাদের জন্ম দিলেন
এবং তার চেয়েও চিরজীবী মৃত্যু দিতে
সব সময় প্রস্তুত

সেই অপাপবিদ্ধকে প্রণাম
যিনি আমাদের চালেডালে মিশিয়ে খাওয়ালেন,
আর দু’মুহূর্তের মধ্যে আদেশ দিলেন
কালান্তক ভেদবমি
সেই যমগন্ধবাহী উদ্দীপনাকে প্রণাম

যে-আচার্য গরমকালে থোকা থোকা কারখানা বসিয়ে, বৃষ্টিকালে সেখানে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে,
এই শরতে তালা খুলে বাস্তুকারকে দেখাচ্ছেন মেশিনের পেটে পাক দিয়ে ওঠা কাশফুল,
সেই হালকা বাতাস ও উপজাতিনৃত্যকে প্রণাম

কেননা, তিনি ভিক্ষুককে ভিখারি হতে
আশীর্বাদ করেন, বোবাকে দেখান
জিভ টেনে উপড়ে নেওয়ার ভয়
তারই দয়ায় হৃৎপাত্রে ভালোবাসা অবিশ্বাস সমান-সমান, মৃৎপাত্রে
অশ্রুকণা পায়েসান্ন সমান-সমান
তাই জগন্নাথ হাতদুটিতে এক লক্ষ নমস্কার রাখি যদি, তো প্রশান্ত দু’পায়ে সমকক্ষ ধিক্কার প্রণাম

.
(‘তিনটি ডানার পাখি’ কাব্যগ্রন্থ থেকে)