বিভাগের আর্কাইভঃ সাহিত্য

আরশের প্রকম্পন

আমরা ভুলে যাই অতীতের আশংকা গ্রস্থ সময়, ক্ষুধা বিধ্বস্ত দীর্ঘ স্মৃতি
সোমত্ত জীবন পেয়ে আমরা ভুলে যাই জীর্ণ কাল, পাষণ্ড যুগের দাসত্ব!!..
যদিও
কেউ কেউ এখনো ঝুলিয়ে রাখে
সতীত্বের ঘন্টা,
লুকিয়ে রাখে
নেকড়ের আঁচড় -কামড়ের নৃশংস ইতিহাস!

আমাদের বগলে- মুষ্টিতে জ্বলন্ত অঙ্গার পিণ্ড!
দলিত মথিত বুকে সহস্রাব্দের দম্ভক নৃত্য,
উন্মত্ত ঊর্ণাজাল..
নিভৃতের দহনে পুড়ছে সৌম্য সকাল
সোনালী দুপুর… পূর্ণিমা প্রহর…
ঘোর অমানিশায় ডুবছে সমগ্র ভবিষ্যৎ!

আশ্চর্য এক স্পর্ধায়
কলংকের শাপ ওদের স্পর্শ করেনা।
নগ্ন উৎসবে প্রকম্পিত আসমান জমিন
কাম মত্ত আগ্রাসন
কুকুরের ঘেউঘেউ..লালায়িত জিহ্বা
সুশীল দুনিয়াকে ভেংচি কাটে
উল্লাসের বেলাল্লাপনা কম্পন তুলে আরশের মঞ্চে!..
কম্পন তুলে ঈশ্বরের বক্ষে
বিবেকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে!…

.
১৪/৭/২৩

কবিতা

ভরসন্ধ্যার খাতা খুলে দেখি
তরঙ্গের ধ্যানমগ্ন মুদ্রার বিন্যাস,
যা কখনো শেখোনি তুমি জোয়ারভাটিতে;
অগাধ জলের শিথানে চোখ রেখে
দেখে গেছো শুধু মাছেদের কেলি
শেখোনি মাছের প্রকারভেদ,
কানকোর ভিন্ন গঠনপ্রকৃতি।

নোনাজল দেখেছো শুধু,
দেখোনি নিষিক্ত চোখের পাথর।

মূল কবিতা : পাবলো নেরুদা

pablo

আমার অত্যন্ত প্রিয় কবি পাবলো নেরুদার আজ একশো উনিশতম জন্মদিন। বহু বছর আগে তাঁর কয়েকটি কবিতার অনুবাদ করেছিলাম। তারই একটা দিয়ে আজ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন …
———
মূল কবিতা : পাবলো নেরুদা
অনুবাদ : রিয়া চক্রবর্তী

বেশি দূর যেওনা কখনো, এক দিনের জন্যেও না।
কারণ …
কারণ,আমি জানি না কিভাবে বলবো,
এক একটি দিন কতখানি দীর্ঘ।
তবুও আমি নিবিড়ভাবে অপেক্ষায় থাকবো তোমার,
সব ট্রেন একে একে ঘুমোতে চলে গেলে,
যেমন নির্জনে থাকে একটি স্টেশন।

কখনো ছেড়ে যেওনা, এক ঘন্টার জন্যেও না,
কারণ
বিন্দু বিন্দু তীব্র যন্ত্রণা তখন মুহূর্তেই নদী হয়ে যাবে
ঘরছাড়া ধোঁয়ারা অবিরাম ঘর খুঁজতে খুঁজতে
আমার ভেতরে ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ করে দেবে হারানো হৃদয়।

সমুদ্রের ধারে হাঁটার সময় ছায়াচিত্রের মতো মিলিয়ে যেও না কখনো
তোমার চোখের পাতা যেন শূন্যতায় কেঁপে না ওঠে
এক মুহূর্তের জন্যেও ছেড়ে যেও না, প্রিয়তমা আমার।

কারণ ঠিক সেই মুহূর্তেই হয়ত অনেক দূরে হারিয়ে যাবে তুমি
আর আমি উন্মাদের মতো সমস্ত পৃথিবী উল্টেপাল্টে, আর্তনাদ করে বিভ্রান্তের মতো, প্রশ্ন করবো,
তুমি কি আসবে?
মৃত্যুর কাছে এইভাবে রেখে যাবে আমায়?
=====================

অন্ধকার

নিজেকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে দেখলাম
আমার মা, রক্তের দুটো ভাই
সকলে পৃথক-পৃথক ভেতরে বসে আছে
দুপুরে খাসির গোস্ত, কাটাপেয়াজ, মরিচ
মেলামাইন প্লেটে সাজানো সংসার-
কেবল একে অপরের সঙে চিল করছে।

আমি হাসলাম, শাশ্বত হাসি; রোজ যে
হাসিতে জীবিত ছিলাম
খুলির ভেতরে মেঘ রেখে। রোদ রেখে।
সেসব অন্ধকার জড়ায়া ধরে হাঁটতে থাকি
বুড়ো আয়নার দিকে, জুটমিলের দিকে
নিজ পাশে দীর্ঘ একটা সম্পর্করহিত ছায়া-
ছায়ার সঙে চোখদুটো লাল হতে থাকে।

মৃতনদী অথবা নারী

আজকাল রাতের সাথে কয়জনের কথা হয়?
বড়জোর অন্ধকারের সাথে সন্ধি হয়!
অত:পর ভোর হওয়ার আগেই বিতাড়িত নদী
ফিরে এসে আরেকটি ভোরের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেয়!
অতঃপর সেও সন্তর্পনে মন্থর এগিয়ে যায়
কোনোএক মৃতনদী অথবা মৃত নারীর মতোন
অবশ্য এই যুগে কে আর দেবদাস হতে চায়?

অলীক আশ্বাসে যদি ভেঙে যায় দেবতার ঘুম
তবে সে কেমন দেবতা?
উপসর্গের পাঠ অনেক আগেই চুকিয়ে দিয়েছি
বড়ো সস্তায় বিকিয়ে দিয়েছি সভ্যতা
নইলে তুমি যতোই পুজো দাও তারে…আমার
অর্ঘ্য থেকে রেহাই পাবে না কোনো অপদেবতা!

গন্ধ পাই

out.

জন্ম আমি দেখিনি;
তোমাদের জন্ম দেখে
উপলব্ধি করি; স্বাদ পাই
গন্ধ পাই আর কত কি?
তবু জন্ম, জন্ম দিন বলে কথা!
জন্ম নিয়ে কত স্বপন কত ইতিহাস
রয়ে যায় সোনালি মনে মৃত্যুর ঘরে
ভেবো না জন্মের ব্যর্থতা
অশুভ কোন চিন্তা; সবই নিখুঁত
কর্মের গুনে জন্মের অমরত্ব!

.
৫/৭/২৩

চার-ছক্কা হবেই

পাকিস্থান ইনিংসঃ
স্লিপ এরিয়ায়
মেশিনগান রেখে ভয় দেখিয়ে আর কোন লাভ নেই-
ক্যাচ হবেই;
উইকেট এরিয়ায়
কামান দিয়ে স্টাম্প আগলে রেখে আর কোন লাভ নেই-
আউট হবেই।

বাংলাদেশ ইনিংসঃ
স্থল সীমানায়
জলপাই রঙের ট্যাংক রেখে আর কোন লাভ নেই-
চার হবেই;
আকাশ সীমানায়
সামরিক হেলিকপ্টারে টহল দিয়ে আর কোন লাভ নেই-
ছক্কা হবেই।

আহা কী সুন্দর বর্ষার আকাশটা

choo

থোকা থোকা মেঘফুলে ভরে আছে আকাশ
আকাশে আজ যেন মেঘেদেরই বসবাস
দেখে যাও রাতুল, আকাশে মুগ্ধতা সীমাহীন
সুখের ঢেউ উথাল পাথাল মনের গহীন।

রাতুল চলো বর্ষার আকাশে রাখি চোখ
আকাশের বুকে আজ খুঁজি সুখ
কোথাও বসি দুজন, সম্মুখে আকাশ নীল
চলো চোখ রাখি যেখানে আকাশে মেঘ বর্ণিল।

চলো রাতুল, নিয়ে চলো অন্য কোথাও
হয়ে যাই লোকালয় হতে উধাও,
আকাশ দেখি পথে হেঁটে হেঁটে
কিছু কথা আছে বুকে জমা, ইচ্ছে যাই তোমার সাথে বেটে।

আকাশে আজ মেঘেদের হল্লা, মনোহারী রূপ
কী রাতুল হয়ে আছো চুপ?
নিয়ে গেলে বলো, চলো যাই
বুকের তারে সুখের বেহালা বাজাই।

ছুটির দিনগুলো এই, বৃথা দেব না যেতে
খুব ইচ্ছে উঠি সুখে মেতে
তুমি যদি যাও, সুখের সীমানায় হারাবো,
চলো না, খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াবো।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, চুনারুঘাট)

সত্যি মরে পথ্যি ছাড়া

সকল কিছুই নকল এবং
মিথ্যে দেখে দেখে-
চিত্ত জুড়ে নিত্য সবাই
সন্দেহ নেয় মেখে।

সত্যি কি এক রত্তিও নেই
আসল কি নেই কিছু?
উঠছি ভোরে ছুটছি জোরে
মিছের পিছুপিছু!

সন্দেহে মন-দেহের ভিতর
ভাবনা ইতর জাগে-
অবিশ্বাসের বিষ শ্বাস এখন
অবিরতই লাগে।

আসলটাকেও নকল লাগে
ধকল স’য়ে স’য়ে-
সত্যিগুলোও ধুলোয় পড়ে
যাচ্ছে মিছে হয়ে।

সত্যি মরে পথ্যি ছাড়া
আসল মরে ধুঁকে-
মিথ্যে বেড়ায় নৃত্য করে
চিত্তভরা সুখে।

অভিশপ্ত স্মৃতি

Screenshot (4)

ভুলে গিয়েছো?
হয়তো ভুলে গিয়েছো খুব করে।
ভুলবে না কেন!
স্মৃতির পৃষ্ঠা থেকে আমি ছিঁড়ে গিয়েছি বহুদিন হলো।
তোমার হৃদয়ের গলিতে ভালবাসার মিছিলে
আমি এক অচেনা স্লোগানী ছিলাম যা বুঝতে অনেক ফাল্গুন চলে গেল,
তাই হয়তো ঝাপসাতেও মনে নেই আমার অস্তিত্ব।

এখন হয়তো বেশ সুখে আছো!
আমিও চাই তুমি ভালো থেকো অনন্তকাল।
যে ভালো থাকার জন্য আমার হাত ছেড়ে ছিলে
যে সুখে থাকার জন্য আমায় কলঙ্ক দিয়েছিলে,
হয়তো অন্য কোনো ঘামের গন্ধে সে সুখে আছো
তাই আমি এখন তোমার নিঃশ্বাসে নেই।

ঘোলাটে স্মৃতির বেহাল্লাপনায় আমি বেশ আছি
আমাকে ঘিরে যে তার সমস্ত ইচ্ছে, স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়েছে
তাকে নিয়ে রঙ্গনের সুগন্ধ সুখের গভীরতায় মজেছি।

ভালো থেকো নীলকন্ঠ!
কোনো এক রাত দুপুরে দু’ফোঁটা অশ্রু ফেল
ঐ অভিশপ্ত স্মৃতির মলাটে।

দুঃখের অবসানে

CL_1688749542558

থমথমে আকাশটার মেঘগুলো ঝরছে রিমঝিম,
কোথাও কেউ নেই,
বিজন প্রান্তরে একাকী ভিজছি আমি-
আমার দুঃখগুলোকেও বিলাতে বৃষ্টির জলে।

বেশ দিনকয়েক হলো,
ভালো নেই আমি,
বেঁচে থাকার আশাটুকুর লোপ পাচ্ছে-
অস্থিরতার বাহুবলে আবদ্ধ আমি।

একাকী বৃষ্টিতে ভিজছি,
মনে আশা বেঁধে,
রিমঝিম বরষণে হারিয়ে যাবে-
মুছে যাবে চোখের জল মানুষের আড়ালে।

পরিজন ফেলে এসে ইটের শহরে,
প্রতিদিন পুড়ছি,
যন্ত্রণায় মরছি,সীমাহীন কষ্টে-
বুকের আর্তনাদ শুনে না কেউ আজ।

সহসা থেমে গেলো রিমঝিম বৃষ্টি,
বুঝেছি হায়,
আমার কষ্টের ভাগ নিবেনা কেউ-
একাকী বিজন নগরে হাঁটছি।

থমথম আকাশটা সুখী হলো কোন আশে,
নানাবিধ কষ্টে মরছি আমি,
হায় বৃষ্টিও বুঝে না আমায়-
না হলে সহসা থামার মানে কি?

নতশিরে বাড়ির পানে ছুটছি,
আবারো যদি বৃষ্টি নামে,
মনের দুঃখ ভুলতে আসবো-
জলস্রোতে বিলিন করবো চোখের পানি।

বদল বিষয়ক

বদলে যাওয়া মানেই বর্জ‌্যের শেষ তলানিটুকু নয়-
বদলে যাওয়া মানেই- পরে নেয়া নয় পশুত্বের খোলস
বদলাবার নামে যারা পান করতে চাইছে ধুমকেতুর সিগ্রেট
অথবা যারা গাইতে চাইছে দেহদক্ষিণার গান,
তাদের কাছে বদলে যাওয়া মানেই-
গায়ে জড়ানো একটি মৌসুমি হাওয়ার প্রলেপ।

বানর বদলে মানুষ হয়েছে
অথবা মানুষ বদলে হয়েছে পাথর-
এমন অনেক উপাখ্যান পড়তে পড়তে আমরা যখন
আকাশের দিকে তাকাবো তখন দেখবো,
মাটিজীবী রাত্রিই গ্রহণ করে নিয়েছে সকল প্রাণের সারৎসার।

আর বদলের ইতিহাসটি শাণিত হয়েছে নরসুন্দরের ধারালো ক্ষুরে !

অতিক্রম

পৃথিবীর শেষ মানুষটা যেদিন বলেছিল
নিশিই সব অন্ধকার শুষে
আস্ত একটা দিন পায়ের কাছে রেখে যায়
সেদিন অবিশ্বাস জেগেছিল
পরে ভেবে দেখেছি কথাগুলো মিথ্যে নয়
এরপরে কত রাত গড়িয়ে গেছে ঊষার দিকে
সেই মানুষকে আর খুঁজে দেখিনি
একটা মানুষ, আস্ত মানুষ
ছায়া হতে হতে
গলে যেতে যেতে
রয়ে গেছে মূর্তি হয়ে
যে মূর্তি প্রতি রাতেই জমা পড়ে রাজকোষে
সকালে আবার চুরিও হয়
আবারো রাত্রি ভালবেসে
তাকেই চুমু খাই পরম মমতায়
সেই মানুষটা এখন কেবলই দিবানিশি কাব্য।

প্রশ্ন করো না কেউ

কেউ প্রশ্ন করো না, এতোদিন কোথায় ছিলেন?
জীবনানন্দের মতো আমিও তাঁরে খুঁজতে গিয়েছিলাম বনলতা সেন!
রোজ রোজ কতো কতো ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া, শিমূল, পলাশ
এতো রঙের আবির মেখেছো গায়ে, কেউ কি করেছো আমার তালাশ!
লজ্জা ঘষে ঘষে আমিও কুড়িয়েছি নীল লোহিত
আশার দোলকে গোলক ধাঁধাঁর মতো ঘুরছি আধা পক্ক কেশী রোহিত!
ক্লান্তি আমাকে ক্লান্ত করে না রুপোলি নদীর ঢেউ
চিলের ডানার মগ্ন আছি শূন্য জলপাত্রে, সঙ্গী হবে নাকি মোর কেউ?

শ্রমণ

dau

চরম অসহিষ্ণুতা ঘিরে আছে
ঘুমহীন গ্রীষ্ম রাতে তৃষিত পাঁজরে
ঘোরের ভেতর
দৌড়াচ্ছে মৃগমদ হ্রেষা
টগবগ টগবগ… বুকের গভীরে…
নিঙড়ে দিচ্ছে প্রশস্ত জমিন, মেঠোপথ, নদী
অবিরাম ছুটছে শ্রমণ অমৃতের সাধন অব্ধি!