বিভাগের আর্কাইভঃ দেশ

কোনো একটি পবিত্র গোলাপের সন্ধানে

তোমার হাতে দেব বলে বহু দিনের অপেক্ষা আমার,
পবিত্র একটি গোলাপের।
যে গোলাপ মধুকরের গুঞ্জন শুনবে না,
অসূর্য্যস্পর্শা কোনো আধার যার পাপড়ি ছোঁবে না।
শুধু রাতের শিশির ঝরবে যার গায়ে
মুছে দিতে দিনের ধুলো, ধোয়া, ক্লান্তি এবং ক্লেদ।

তোমার হাতে দেব বলে বহু দিনের অপেক্ষা আমার,
পবিত্র একটি গোলাপের ।
যে গোলাপ স্বৈরাচারের গলায়
শুভেচ্ছা মালা হয়ে ঝুলবে না।
কোনো স্বৈরাচারের আগমনী তিথি,
যার সৌরভে হবে না সুরভিত কোনোদিন।

দেশে আজ অজস্র গোলাপের ছড়াছড়ি,
কিন্তু আজও সে গোলাপ কোনো কলি গর্ভে ধরেনি।
এই হতভাগ্য দেশের কোনো বনে বা বাগানে ফোটেনি,
রাজধানীর অভিজাত ফুলের দোকানেও অদৃশ্য সেই গোলাপ।
গোলাপ আজ ব্যক্তি পূজা, স্তব আর বাণিজ্য উপকরণ,
মিথ্যা নেতৃত্বের স্তবগানে গোলাপ হারিয়েছে তার পবিত্র সত্তা।

তোমার হাতে দেব বলে বহু দিনের অপেক্ষা আমার,
পবিত্র একটি গোলাপের।
দেশের সব গোলাপ হারিয়েছে তার সব সৌরভ, গৌরব,
সারা দেশ খুঁজে আমি পেলাম না একটিও পবিত্র গোলাপ।
যার গায়ে আঁধারের ছায়া নেই, ক্লেদাক্ত বৃষ্টির ছোয়া নেই,
যা দিয়ে করি তোমার ভালোবাসা স্তব।

অবৈধ

ব্যভিচারীর লালসার স্বীকার লাঞ্চিত কোনো নারীকে,
অবৈধ সন্তান প্রসবের অভিযোগে অভিযুক্ত কোরোনা কখনো।
ব্যভিচারীর ক্ষমতা দম্ভের উল্লাস, লালসা পূরণের তৃপ্তিতে নয়
লাঞ্চিত নারীর নিঃসীম লজ্জা, অশ্রুজলেই লুকানো সভ্যতা।
লজ্জার চাদর ছাড়া সভ্যতাহীন জীবন,
মানুষের নয় স্বেচ্ছাচারীর,গা জোয়ারি হিংস্র শ্বাপদের জীবন।
ক্ষমতা দম্ভে লালসা উন্মত্ত কোনো স্বেচ্ছাচারিকে তাই,
খামোশ বলে রুখে দাঁড়াবার সময় হয়েছে এবার।

বিজয় মাসে গনতন্ত্র, সুশাসনের চাদরহারা দেশ উলঙ্গ,
ক্ষমতা সম্ভোগে উন্মত্ত শাসকের লালসায় লাঞ্চিত এবং লজ্জিত।
অবৈধ সরকার প্রসবকারী বাংলাদেশের পলি মাটিকে বলোনা ক্লেদাক্ত,
নদীর স্রোতে খুঁজোনা স্বৈরাচারের বীর্যের দাগ।
ইচ্ছে বিরুদ্ধ ক্ষমতা সম্ভোগের উন্মত্ত শাসন বীর্যপাতে,
অবৈধ সরকার প্রসবের লজ্জায় ম্রিয়মাণ দেশের সকল সবুজ।
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বপ্নঘাতকের গণতন্ত্রের বধ্যভূমিতে আরো একবার,
বাক, ব্যক্তি, ভোটস্বাধীনতার দাবিতে প্রতিবাদের ফিনিক্স পাখি হোক বাংলাদেশ।

মেসি তুমিই বলো নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কেন দরকার …

মেসি, তোমার ফুটবল জাদুতে মুগ্ধ পৃথিবী ।
নিঝুম কত রাত নির্ঘুম কাটে ছয় মহাদেশে,
দেখতে সবুজ মাঠে তোমার অনায়াস, স্বচ্ছন্দ বিচরণ !
রক্ষণ ছিন্নভিন্নকারী তোমার চোখ ধাঁধানো গতি, ড্রিবল
কত সহজে বিজয়ী স্বপ্নের বীজ বুনে সমর্থক মনে !
শেষ মুহূর্তে জালে জড়ানো তোমার রংধনু শটগুলো
কি অপার্থিব উন্মাদনা ছড়ায় গ্যালারি জুড়ে !
যেন স্বয়ং দেবতা বর নিয়ে নেমেছে সবুজ মাঠে।
কিন্তু বলো, পারবে কি সবুজ মাঠে এমন স্বপ্ন মায়া ছড়াতে
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যদি না থাকে?

ধরো, তোমার দিকে মাঠ মসৃন, যেন সবুজ কাশ্মীরি গালিচা,
আর বিপক্ষ দিক যেন পুলিশি রিমান্ডে ক্ষত বিক্ষত
নিহত বিরোধী দলীয় নেতার বেওয়ারিশ কোনো লাশ !
সেই মাঠে সাথে থাকলেও নেইমার ও দুরন্ত এম্বেপে,
মাতাতে পারবে কি গ্যালারি তুমি বা তোমার দল?
আক্রমণে এম্বেকি কি পাবে দুরন্ত অশ্বারোহীর গতি?
নেইমারের মাটিঘেঁষা শটগুলো কি হবে না লক্ষ্যচূত?
সবুজ ক্যানভাসে আঁকা ভ্যান গগের ছবির মতো গোলগুলো
তোমার, পাবে কি তিন কাঠির সঠিক ঠিকানা?
অযোগ্য ব্যবস্থাপনায় আদৌ যায় কি খেলা নান্দনিক ফুটবল?

তেমন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়েছে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে,
দলদাস পুলিশ সেজেছে আক্রমণের ঘোড়া ।
ঘরে বাইরে, নগরে বন্দরে অননুমোদিত গ্রেফতার, পুলিশি রিমান্ড,
নির্বাচনে প্রতিপক্ষের প্রাপ্য আজ জেল,গুলি,এবং নির্বিচার সন্ত্রাস।
শ্বাপদ হিংস্রতায় ছিন্নভিন্ন ঘর বাড়ি,পোস্টার,নির্বাচনী আশ্বাস,
গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে স্বৈরাচারের দিচ্ছে আজ প্রকাশ্যে উঁকি ঝুঁকি !
যে গণতন্ত্র থাকার কথা ছিলো দেশের সবুজ মাঠে, গ্রামে ও শহরে,
সে গণতন্ত্র আজ মিটি মিটি জ্বলে হয়ে দূর আকাশের শুকতারা ।
তবুও ইসি লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড গড়েছে বলে আনন্দে বাগবাগ,
সিইসি গর্বিত নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে, সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ !

মেসি, বলো এইরকম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে পারতে কি তুমি,
লা লীগার রেলিগেটেড কোন দলকেও হারাতে?

টেন্টালাসের তৃষিত জীবন আজ বাংলাদেশ

দিগন্ত জোড়া সাগর জলে ভাসা জীবন ছিল তোমার
তবুও এতটুকু তৃষ্ণা মেটেনি, টেন্টালাস !
হাত বাড়ালেই সাগর,
তবুও কি দুর্লভ জলহীন তৃষিত এক জীবন কাটলো !
তাই বুঝি হাজার বছর পরে পুনর্জন্ম নিলে টেন্টালাস,
ষোলো কোটি জনগণের প্রতিচ্ছবি হয়ে এই বাংলাদেশে?
নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে জল হয়তো পেতেও পারো একটু,
কিন্তু জল খাবার স্বাধীনতা পাবে কি এই পুনর্জন্মে?
ছদ্মবেশী দেবী কি দেবে এবারও জীবন বাঁচাবার স্বাধীনতা?
করুণার বারিধারায় ভিজবে কি তার জিঘাংসু হৃদয়?

একশো তিপ্পান্ন অনির্বাচিত সাংসদের অবৈধ খুঁটিতে
গড়া দেবীর ক্ষমতার প্রাসাদ।
ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার লুটেপুটে খেয়েছে সব চেলা চামুণ্ডা,
সুইস ব্যাংকে স্ফীত লক্ষীর প্রসাদ।
দেবী শাসনে উন্নয়নের সুনামিতে নাকি ভাসে নগর বন্দর!
মধ্যম আয়ের দেশে আমজনতার নুন আন্তে পান্তা ফুরোয়।
তবুও চাইনি ছিনিয়ে নিতে দেবীর অবৈধ লক্ষীর ঝাঁপি,
অথবা অবৈধ ক্ষমতার বিলাসী প্রাসাদ।
চেয়েছিলাম শুধু গণতন্ত্রের একটু মৌল আশাবাদ,
চাওয়া ছিল একটা সুষ্ঠু নির্বাচনী আশ্বাস।

সেই সামান্য চাওয়াতেই দেখি দেবীর শাসন উত্তাল,
বিলীন গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচনের মৌল সব চাওয়া।
বিলীন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গড়বার সব আশ্বাস,
দেবী দুঃশাসনে নির্বাসিত গণতন্ত্র আজ দূর দ্বীপবাসিনি।
সে দ্বীপে যাবার সহজ কোনো ভেলা নেই,
শুধু রক্ত নদীতে নিরন্তর ভেসে চলা।
দলদাস আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা মামলায়,
বিপর্যস্থ বহুদলীয় সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল পথ ও প্রান্ত।
টেন্টালাস, দিগন্ত জোড়া সাগরেও তোমার ছিল তৃষিত জীবন,
গণতন্ত্রের দেবীর সুশাসনেও আমার তৃষ্ণা অধরা গণতন্ত্রের!

তবুও টেন্টালাস, ষোলো কোটি মানুষ তৃষিত জীবন বয়ে চলি,
বিজয়ের মাসে অধরা গণতন্ত্রের গভীর আশ্বাসে।

রূপকথার সেই পাগলা হাতিটা আনো

রূপকথার পাতা থেকে:

রাজপথের দু’ধার উপচে পরছে, উত্তেজিত প্রজাবৃন্দ অপেক্ষমান,
ঐতো রাজহস্তিশালের পাগলা হাতি হয়েছে ধাবমান !
গণনা মতে মানুষের ভীড়ে লুকিয়ে আছে রাজ্যের ভাবী কাণ্ডারী,
পাগলা হাতি খুঁজে নেবে আজ মৃত রাজার সুযোগ্য উত্তরসুরী।
পাগলা হাতি তুলে ছিল পিঠে এক কান্তিমান যুবক,
অতঃপর সুখে শান্তিতে রইলো তারা পেয়ে সুযোগ্য অভিভাবক।

বাংলাদেশ ২০১৮:

স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পরে আজও
রূপকথার সেই রাজ্য হয়ে আছে বুঝি এই দেশ।
মাথাভারী সরকারি সমাবেশে আছে নখদন্তহীন রাষ্ট্রপতি,
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী,অনির্বাচিত একশো তিপ্পান্নজন সাংসদ!
অনুগত প্রশাসন,আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ তবুও
গুম,খুনের অবিরাম রক্তস্রোত আর অশ্রুজলে প্লাবিত এই সমতল।
স্তাবক গোষ্ঠীর সরকারি ব্যাংক, শেয়ার বাজার লুণ্ঠনের কালো কালিতে
লেখা হয় সর্বস্ব হারানো কোনো অনেক মফিজের আত্মহত্যার ঠিকানা।

দলবাজির নীলদংশনে ধ্বংস শিক্ষা ব্যবস্থা, শাসন ও প্রশাসন,
ধ্বংস নিরপেক্ষ নির্বাচন,জনমুখী প্রশাসনের স্বাপ্নিক চাওয়াগুলো।
ধ্বংস এই দেশে বাক, ব্যক্তি স্বাধীনতার সকল অবশিষ্ট,
কে এই সবুজে শ্যামলে অক্লান্ত বাজায় নিরোর ধ্বংস বাঁশি?
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া একাত্তরের বাংলাদেশে
আজ শোনা যায় কোন পরাজিত স্বৈরশাসকের কলহাস্য?
গণতন্ত্র, বাক ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রত্নতত্বে গড়া বাংলাদেশ যেন
আজ স্বৈরাচারের শ্বাপদসংকুল এক বিচ্ছিন্ন ব-দ্বীপ।

মৃত্যুর আল্পনা আঁকা এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপই কি আমার দেশ?
এ’দেশেই কি শহীদের রক্তে ভেজা শিমুল ফুটেছিলো কোনো ফাগুনে?
কুয়াশা বেলা শেষে আলোর মিছিল হয়েছিলো কখনো এই পৌষেই?
ভোট স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা কি ছিল বীরশ্রেষ্ঠের স্বপ্ন?
না,যাও তন্ন তন্ন করে খুঁজে আনো রূপকথার সেই পাগলা হাতিটাকে।
এই অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত সরকার বাতিল করে,
জনসংখ্যার ভারে নুব্জ্য ষোলো কোটি মানুষের মেলা থেকে-
খুঁজে নিক সে দেশ পরিচালনার কোনো সুযোগ্য উত্তরসুরী।

(আমি ভেবেছিলাম একবার আমার কবিতাটা উৎসর্গ করি প্রিয় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে। কিন্তু ভরা জ্যোস্নার একটা পূর্ণিমা পেতেওতো একটা উজ্জ্বল চাঁদ লাগে ! তাঁকে উৎসর্গের করার মতো কবিতা লেখার হাত কোথায় আমার ? তাই ইচ্ছেটা চেপেই রেখেছিলাম।কিন্তু আজ বড়োদিনে তার চলে যাবার খুব কষ্টের খবরটা পেলাম। তাই আমার সব লজ্জ্বা চেপে রেখে এই কবিতায় মনে করছি শ্রদ্ধাভাজনেষু প্রিয় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে।)

**এই কবিতার মতো একটা কবিতা বছর তিনেক আগে অন্য একটা ব্লগে লিখেছিলাম। অনেকটা একই শিরোনামে। অনেক পরিবর্তন করে আবার এই কবিতাটা লিখলাম। খুবই কম কিন্তু তবুও অল্প কিছু অংশ একই থাকলো।  

নেংটো রাজার বাংলাদেশ

ফটো : ইন্টারনেট (প্রথমআলো)

রাজা নেংটো হয়েই হাঁটছিল রাজপথে,
সবাই কিন্তু দেখতেও পাচ্ছিলো তার নগ্ন পদচারণা !
তবুও সবাই চিৎকার, উচ্ছাস উল্লাসে বাগবাগ,
তোষামুদেরা সব সুর করে বলছিলো,
আহাহা কি সুক্ষ, কি অপূর্ব সুন্দর, রাজকীয়
আমাদের রাজা মশাইয়ের পরিধেয় বস্ত্র !
সেই জন সমাগমে কেউ ছিল মোসাহেব,
উচ্ছন্ন ভোগী, কেউ সুবিধাবাদী কেউবা
ক্ষমতা বলয়ের থাকা ছোট উপগ্রহ বিশেষ।
কেউবা সত্যি সত্যি জিম্মি রাজরোষের,
কেউ কেউ হতে পারে ভীত বা আত্মবিশ্বাসহীন।
কিন্তু এই ক্লীব প্রজাবৃন্দের ভিড়ে
নিজের আত্মা বিক্রি না করা একটি শিশুও ছিল,
সহজ সরল সত্যবাদী একটি দেবশিশু।

রূপকথার সেই গল্পটা কিন্তু সবারই জানা।
রূপকথার সেই রাজ্য যেন আজকের বাংলাদেশ,
ছদ্মবেশী স্বৈরাচার শাসনে গণতন্ত্র উলঙ্গ আজ !
বসনহীন গণতন্ত্রের গা থেকে একে একে খুলে গেছে
বাক ব্যক্তি স্বাধীনতার কারুকার্যময় পোশাকগুলো সব।
সবাই দেখছে যে দেশে গণতন্ত্র মৃতপ্রায়
সরকারের কথায় কাজে অবৈধ স্বরাচারের নিনাদ।
ইসি, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ সবাই ব্যস্ত তাঁবেদারিতে।
উলঙ্গ গণতন্ত্রে ধ্বংস বাক্ ব্যক্তি স্বাধীনতা,
সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা আর সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান।
তবুও রূপকথার স্তাবকবৃন্দের মতই আজ
জ্ঞানী গুণী সুশীল সমাজের কেউ কেউ ভাব করছে
যেন গণতন্ত্র, সুশাসনের উন্নয়ন সুনামিতে
জনগণের জীবনে চলছে সুখের বানভাসি!

কিন্তু এতো জ্ঞানী গুণী সুশীল আর উচ্ছিষ্টভোগীর ভিড়ে
সেই দেবশিশুটি কোথায় ?
উলঙ্গ গণতন্ত্রের গায়ে সুশাসনের ছদ্ম লেবাস পরাবার কারিগর
শাসক গোষ্ঠীর সামনে মোসাহেবীর লেজুড় ছিড়ে,
দেশের জনারণ্যে থেকে সেই শিশুটি নির্ভয়ে বেরিয়ে আসুক।
সহজ কণ্ঠে শাসক গোষ্ঠীকে জিজ্ঞেস করুক,
বাক, ব্যাক্তি স্বাধীনতাহীন দেশের উলঙ্গ গণতন্ত্রের গায়ে
বহুমতের কারুকার্যময় রেশমি কাপড়টা কোথায় গেলো?

—শ্রদ্ধাভাজনেষু কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আপনি এখনো লিখলে আমি আপনার লেখা এই কবিতাটা পড়তাম (জানি এই কবিতাটা তখন আরো মুগ্ধ কাব্য হতো)!

দ্বিতীয় পর্বের স্বাধীনতা

বাংলা দেশের স্বাধীনতার গল্পটা কিন্তু সবাই জানে,
তবুও সবাই ভুলে যায়, বার বার ভুলে যায় গল্পটা।

কোটি মানুষের মুখের ভাষা স্তব্ধ করতে
কায়েদ-ই-আজমের শব্ধ সন্ত্রাস.
মৌলিক গণতন্ত্রের মোড়কে ছিনতাই স্বাধীনতা!
তখনো সরকার সমর্থক কিছু বুদ্ধিজীবী, কিছু মিডিয়া,
তারস্বরে বলেছিলো বাহ বাহ্ একেইতো বলে গণতন্ত্র
যেন সাক্ষাৎ ‘অফ দা পিপল, ফর দা পিপল বাই দা পিপল’!
মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে রুদ্ধশ্বাস শাসন,
ছদ্মবেশী স্বৈরাচারের শিকল ভাঙতে
দেশের সবুজ মাঠে,নগরে বন্দরেই ছিল কিন্তু প্রস্তুত,
স্বাধীনতার ডাকে পাগলপারা নির্ভিক জনগণ।
নেতা জেলবন্দি, অন্যরা পলাতক
তবু স্বাধীনতার সূর্য উঠেছিল তাদের বুকের লাল আকাশ চিড়ে।

স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পরে আজও
দেশে ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিনতাইকরি শাসক শ্রেণীর গলায়,
মৌলিক গণতন্ত্রের গতবাধা গান !
সবাই দেখতেই পাচ্ছে প্রকাশ্য,নগ্ন পক্ষপাতিত্ব করছে
ইসি, সরকার ও প্রশাসন যন্ত্র ।
তবু কেউ কেউ আগের মতোই বলছে
কি চমৎকার গণতন্ত্র, বহুদলীয় নির্বাচনের আমেজ দেশে !
এর মধ্যে কেউ দলদাস, কেউ দলবাজ,
কেউ ব্যাংক লুটেরা দস্যু,কেউ কৃপাপ্রার্থী,
কেউ আসলেই ভীত র্যাব,পুলিশ,হেলমেট বাহিনীর !
দশ বছরের সীমাহীন অত্যাচারে মুমূর্ষু
কারো কারো কাছ থেকে এই চিন্তা অভাবিত নয় ।

কিন্তু প্রায় অর্ধশতক আগে গর্জে ওঠা
সেই নির্ভিক জনগণ ও তার উত্তরাধিকার,
আজো আছে দেশের ধুলো জড়ানো মাঠে,ঘাটে,শহরে ও বন্দরে।
বাক,ব্যক্তি স্বাধীনতা আর ভোট অধিকার রক্ষার
এবার পৌষের যুদ্ধে,
তারা যদি গর্জে উঠে আরেক বার?

ভালোবাসা নির্বাচন ২০১৮

সরকারি, বেসরকারী, গোপন, প্রকাশ্য জরিপের ভিত্তিতে
জানি, তোমাকে ছাড়া বহতা ব্যস্ত জীবন হবে স্তব্ধ নদী।
কোনো ভালোবাসা সেতু নির্মিত হবে না, স্যাটেলাইট উড়বে না,
বেশুমার লুটপাট হবে ভালোবাসার ব্যাংক, স্টক মার্কেট।
তোমার বৈধতা ছাড়া হতে পারে মধ্যম আয়ের হৃদয় উন্নয়ন স্থবির,
মনের ব-দ্বীপ হানা দিতে পারে ভালোবাসা চেতনা বিরোধী গোষ্ঠী।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় তাই দিতেই হবে
বছর শেষে, বহু প্রতীক্ষার ভালোবাসা নির্বাচন।

তোমাকেই মনোয়ন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী
এমন কি চাও যদি নখদন্তহীন রাষ্ট্রপতি পদ -তাতেও।
মনোয়ন বোর্ডে শুধু রেখেছি নিজেকে,
পকেটস্থ ইসি, সিইসি, কমিশনার, ও সব নির্বাচনী যন্ত্র।
কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী, বিদ্রোহী প্রার্থী বিহীন সাজাবো সাধের নির্বাচন,
চাইনা কোনোই বিরূপ শব্দ সন্ত্রাস।
তোমার মনোয়ন কনফার্ম হৃদয় রাজধানীর সব আসনেই,
এসো, নির্বাচিত হও বিনা ভোটে, ‘হে ভালোবাসা জননী’।

তোমাকে পেতে নির্বাচনের প্রাক্কালে নিষিদ্ধ সব নাগরিক অধিকার,
বাক্ ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকুক অন্তরীণ স্বৈরাচারী কারাগারে।
ঐক্যমত্য পোষণের নাগরিক শাসন বাতিল ঘোষিত আজ,
যদি সোনার হরিন হারায় জবাবদিহিতার নিষ্পেষণে!
তাই সাবধান, বিন্দুমাত্র বিক্ষোভে হবে নির্বাচন ভণ্ডুল,
দখল নেবে সেনাবাহিনী, হেলমেট বাহিনী, দলীয় দস্যু এই সতেজ ব-দ্বীপ।
তাই এসো বাহুডোরে, অবাধ্য মরুভুমিসম তৃষিত হৃদয় আমার,
নজির বিহীন উন্নয়নে আরো পাললিক করো ভোটারবিহীন নির্বাচনেই।

#মি টু

কেউ একজন বললেন সবাই যখন হ্যাশট্যাগ মি টু নিয়ে সরব তখন আমি কিছু বলছি না কেন ?
একটা মেয়ের জন্ম হলো এবং সে জানেনা চারপাশে কি পাইথন তার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। মা তাকে আগলিয়ে রাখেন, বাবাও আগলিয়ে রাখেন। কিন্তু ওর যদি অনেকগুলো ভাইবোন হয় তবে তাকে আগলে রাখার সময় কই এতো ?
অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিটি বাচ্চাকে সে সমজেন্ডার হলেও ধরা ছোঁয়া নিষেধ। ফুলের মতোন বাচ্চা কিন্তু কেউ ছুঁয়ে আদর করতে পারবে না। দূরে থেকে শুধু একটু হাসি দিয়ে আদর দেখানো যাবে।

সেদিন একটা সিনেমা দেখলাম – এক টিনেজ মেয়েকে এই পৃথিবীতে একা রেখে তার মা মারা গেলেন। তার বাবা অলরেডি তার মাকে ছেড়ে চলে গেছেন। সে তার বাবার বাসায় গেলো। বাবা তার নতুন স্ত্রী নিয়ে সংসার পেতেছেন। সে সংসারে আবার নতুন অতিথি আসবে। তাই তার বাবা আর তার সৎ মা অপরাগতা প্রকাশ করলেন তাকে এই সংসারে আশ্রয় দিতে। ঘর থেকে বের হবার সময় তার বাবা বললেন – মামনি ভালোবাসি তোমাকে। সেও বললো আমিও তোমাকে ভালোবাসি বাবা। বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখে আপ্লুত হয়েছিলাম। একবারো ভাবলেন না এই বাচ্চা মেয়েটা কোথায় যাবে ! তিনি নিজেও পুরুষ। তিনি জানেন এই পুরুষকুল এই মেয়েকে আস্ত রাখবেনা। অথচ তিনি তার মেয়েকে বাঘ সিংহের খাঁচার দিকে ঠেলে দিলেন। যাই হোক উপায়ান্তর না দেখে চোখের পানি মুছতে মুছতে সে এলো তার আত্মীয়ার বাসায়। ভদ্রমহিলা তাকে খুব যত্ন করেন। তার স্বামীও যত্ন করেন। কিন্তু ভদ্রলোক যত্ন করতে করতে একদিন বেশিই যত্ন করে ফেলেন। সে বের হয়ে গেলো। ঘরের বাইরে পুরো বিশ্ব তার জন্য ডেঞ্জারজোন। তবু এক ভদ্রলোক সহানুভূতি পরায়ণ হয়ে তার বাসায় নিয়ে গেলেন। সেখানে দেখা গেলো তার কাতর স্ত্রীকে। ভদ্রলোক এবং তার স্ত্রী তাকে যথেষ্ট যত্ন আত্তি করলেন। এবং ভদ্রলোক নিজেই তার শরীরের সুবিধা নেয়া শুরু করলেন। মেয়েটা এবার রাগ করে বের হয়ে যেতে পারলো না। সে আর কত জায়গায় ফিরবে !!

কিন্তু সমস্যা হলো ভদ্রলোক নিজে ভোগ করেই ক্ষান্ত হলেন না। তিনি তাকে দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন। অসহ্য হয়ে মেয়েটা আবার বের হয়ে এলো। সেই আত্মীয়ার কাছে গেলো পুনরায়। এবং ততদিনে সে ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছে। ওর আত্মীয়া তাকে একটা সংস্থায় নিয়ে গেলেন। সেখানে আরো অনেক টিনএজার ছেলেমেয়ে আছে। প্রত্যেকেই দেখা গেছে কোনো না কোনোভাবে সামাজিক বা পারিবারিক বা যৌননিগ্রহের শিকার।

… সিনেমাটা এমেরিকার ব্যাকগ্রাউন্ডে করা। বোঝা যায় পৃথিবীর সব নারী সব মেয়ে শিশু একই ভাবে যৌননিগ্রহের শিকার হয়।

আসলে এটা একটা ঘটনা মাত্র। এরকম হাজারো লক্ষাধিক মেয়ে শিশু, কিশোরী নারীর নিগ্রহের ঘটনা ঘটে যায় মানুষের সামনেই অথবা অগোচরে। কিন্তু যা ঘটে নারীর সাথে নারী ভুলে না। সে তার শৈশব থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনার কথা মনে রাখে, আসলে মনে রাখা না তার মনে থাকে। ভুলে যায় না। অভিশাপ দিতে থাকে সেই জানোয়ারদের।

মিটু এর জোয়ারে অন্তত কিছু প্রভাবশালী লোক যারা ক্ষমতার ছত্রছায়ায় আছেন, তাদের বদ উদ্দেশ্য থেকে ক্ষান্ত হবেন। অন্তত কিছু মেয়ে হলেও রক্ষা পাবে। আমরা জানি তবু লোভী আরো বহুলোক তাদের কালো হাত বাড়িয়েই রাখবেন।
আমরা বলি আবু লাহাবের মত তাদেরও হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক।

“যেমন কর্ম তেমন ফল-নেতা নির্বাচনে থাকুন সচেতন”

হ্যালো!
হ্যালো!!
হ্যালো!!!
রিক্সাওয়ালাকে নিজের দিকে তাকাতে বাধ্য করতে কয়েক বার হ্যালো হ্যালো বলার পরও তিনি শুনছেন না। রিক্সাওয়ালা সোজা রিক্সা থামালেন এক অফিসের দরজায়। রিক্সায় আরোহী ভদ্রলোক অবাক! তার গন্তব্যের বিপরীতে চলে আসায় অনেকটা রাগ হয়েই বললেন।
-আরে বেটা তোরে একটা চড় দিতে মন চায় বুঝলি, তুই যাবি আমার অফিসে আর তুই এলি এদিকে।
-স্যার, রাগ কইরেন না…সময় শেষ তাই আজই কিনতে হবে।
-মানে!
-মানে স্যার নমিনেশন পেপার। আমি ইলেকসনে খারাইমু।
ভদ্রলোক এবার হার্টফেল করার অবস্থা। বলে কি বেটা!।ভদ্রলোকের মুখভঙ্গি দেখে রিক্সাওয়ালাও একহাত নিলেন।
-কেন স্যার! আমরা কি মানুষ না এ দেশের জনগণ না?
-তা কেনো! আমি ভাবছি ইলেকশন করতে হলে তো সামান্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে তাছাড়া নমিনেশন পেপার কিনতে আর জমা দিতে কম করে হলেও পঁচিশ ত্রিশ হাজার টাকা লাগবে।
-কোন সমস্যা নাই স্যার, আমি মেট্রিক পাস আর টাকা! আমার আরো দুটো ব্যাটারী রিক্সা আছে ওগুলা বিক্রি কইরা দিমু।
-এর পর তুমি চলবে কি করে?
-কি যে কন স্যার, আমি পাস করলে কি আর এগুলা চালামু!
-আগে তো পাস করবি তারপর না হয় ভাববি।
-কেন? এ দেশে এতো এতো চোর মাস্তান পাস করতে পারলে আমি পারমু না কেন? হুনছি আমাগো খেলোয়ার মাশরাফি, হিরো আলমও নাকি নির্বাচন করব আমি হেগো থেকে কম কিসে? পরিশ্রম করে খাই হুম। তাছাড়া আর কত কাল এমন গরিবী হালে থাকমু কন? পাস যদি নাই করতে পারি তবে ইলেকসন খারানোর কারনে এলাকায় মানষে আমারে এমপি সাব কইয়া ডাকবো তাতেই আমি কোটিপতি হইয়া যামু। বুঝলেন স্যার, আস্তে আস্তে কই-এদেশে রাতরাতি কোটিপতি হইতে রাজনিতীই হইল এহন উত্তম জায়গা। দেহেন না এহন রাজনিতী কে না করে বলেন! দেশের সব কিছুর কেন্দ্র বিন্দুই এহন রাজনিতীর কাতারে।

ভদ্রলোক ভাবলেন এর সাথে তর্কে পারা যাবে না। এ দিকে অফিসের সময়ও যায় যায়।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, এই নাও তোমার ভাড়া।
রিক্সাওয়ালা ভদ্রলোকের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন।
-ছি ছি স্যার লজ্জা দিয়েন না, ভাড়া লাগবে না শুধু দোয়া চাই।
এ কথা বলে রিক্সাওয়ালা রিক্সার চাকায় লক করে নমিনেশন পেপার কিনতে দিলেন দৌড়। ভদ্রলোকটি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। আর ভাবেন হায়রে রাজনিতী তুই এখন কোন পর্যায়ে চলে গেলি। না আছে বংশপরায়নপর রাজনীতির অভিজ্ঞতা না আছে শিক্ষা আর জনপ্রিয়তার আলো। ইচ্ছে হলেই, যে কেউ নেতা হতে চায়, হয়েও যায়।

অফিশিয়াল ব্যাগটি হাতে নিয়ে মাথা নীচু করে কিছুটা হেটেই যাচ্ছিলেন তার অফিসের দিকে। হঠাৎ সামনে এসে দাড়ালেন তার এক সহকর্মী।
-আরে স্যার যে, হেটে হেটে কি অফিসে যাচ্ছেন?
-আরে না ভাই রিক্সায় আসছিলাম হঠাৎ রিক্সাওয়ালার সাধ জাগল নেতা হবার। সে অনেক কথা। চলুন ঐ চা দোকানটায় একটু চা পান করে রেষ্ট নিয়ে নেই।

ব্যাস্ত শহরে আজ কাল মানুষের ঢল। আসছে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ জাতীয় নির্বাচন। তাই নমিনেশন পেপার কিনতে মানুষের জোয়ার। নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে তেমন কঠিন কোন নিয়ম নীতি না থাকায় দিন দিন বাড়ছে নেতা বা প্রার্থীর সংখ্যা। কখনো দেখা যায় একই ঘরে স্বামী-স্ত্রী, দেবর-ভাবীর নমিনেশন নেয়া এবং নির্বাচনী লড়াই। আজব মানুষ আমরা কোন একটা সেক্টর বা উৎসতে প্রফিটেবল দেখলে যেন আমরাই হ্যামিলনের বাশিঁর সূরে মেতে উঠি।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে না দিতেই সেই দোকানে দল বল নিয়ে হাজির হলেন এক নির্বাচনী প্রার্থী। মার্কার কাগজটি জনে জনে বিলি করছেন তার কর্মীরা আর সে নিজে যখন, যেখানে যাকেই পাচ্ছেন বুকে বুক লাগিয়ে দোয়া ও দাওয়া চাচ্ছেন। ঠিক সেই সময় সেখানে হঠাৎ উদয় হলেন এক উড়নচন্ডী পাগলের। পাগলের শরিরের অবস্থার কথা বর্ননা নাই বা দিলাম তার শরির হতে নির্গত দুগন্ধ যেন আমাদের রাস্তাঘাটে ফেলে দেয়া পচা ডাষ্টের চেয়েও অসহনীয়। সেই পাগল আচমকা প্রার্থীকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকেন… যাবে যাবেগো এবার যাবেগো ইত্যাদি পাগলের যা প্রলাপ।

বেচারা প্রার্থী! নিজেকে খিচ মেরে সংযত রেখে পাগলের আলিঙ্গনকে স্বাগত জানালেন। তৎক্ষনাত তার কর্মীরা এসে পাগলটিকে ধীরে ধীরে নেতার কাছ হতে সরালেন। নেতার শরীরে জামা পুরোটাই ময়লা আর পাগলের মুখের লোল পড়ে নষ্ট হয়ে গেল। চায়ের দোকানে আর সবাইকে সালাম দিয়ে তড়িৎ তিনি চলে গেলেন তার দলবল নিয়ে। দোকানদারও কিছুটা স্বস্তি পেলেন। সেই দোকানেই বসা দুজন লোকাল বাসিন্দা বলাবলি করছেন।

১ম জন-শালায় একটা ভন্ড!গত বারও এ ভাবে ভোট ভিক্ষা চাইয়া এলাকায় কোন কাম করে নাই খালি নিজের পকেট ভরেছে।
২য় জন-তাতো হবেই! দেখতে হবে না ওর বংশ পরিচয়! ওর জাত খান্দান! ও’তো নন মেট্রিক,ট্রাকের হেলপারি করত। দিন আনতো দিন খেতো। মায় করত বেশ্যাগিরি বাবা করত কুলিগিরি… ও আর কত ভালা হইব! ট্রাকষ্টেসনের সদস্য হইয়া কিছু টাকা কামাইছিলো! সেই টাকার গরমের নির্বাচনে দাড়াইয়া টাকা উড়াইয়া পাস করছিলো। এই বার কি করবে?
পাশেই বসে চা পান করছিলেন ভদ্রলোক ও তার সহকর্মী। লোকাল বাসিন্দাদের এমন তর্কে যেন কিছু বলতে ইচ্ছে করছে তার মন। এক সময় তর্কের সাথে তাল মিলালেন। মাঝে মধ্যে তার সহকর্মীও দু একটা কথা বলে ফেললেন।
-হ্যালো! ভাইজানরা কি এখানকার লোকাল পাবলিক?
-হ’ভাই।
-আচ্ছা, এই যে তর্ক করছেন দুজনে, এখানে কি আমি কিছু কথা বলতে পারি? যদি অনুমতি দেন।
লোক দুটো খুব উৎফুল্ল ভাব নিয়ে অনুমতি দিলেন।
-জি জি বলেন।
-আপনাদের কথায় বুঝতে পারলাম তিনি মানে ঐ যে কিছুক্ষণ আগে একজন নির্বাচন প্রার্থী এসেছিলেন ভোট চাইতে। তিনি সাবেক সাংসদ ছিলেন তাইতো?
১ম জন- জি, এমপি ছিলেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে, তো তিনি এমপিতে পাস করলেন কি ভাবে? আপনারা মানে জনগণ কি তাকে ভোট দিয়ে পাস করান নাই? নাকি সে ভোট ছিনতাই করে সন্ত্রাসী কায়দায় এমপি হয়েছেন?
২য় জন- না, না, সে ভোট পেয়েই পাস করেছিলো।
-তাহলে তার এমপি হওয়াতে তার দোষটি কোথায়? আপনি আমরাইতো তাদেরকে ভোট দেই তাই না? যদি আমরা আমাদের দেখবালের প্রতিনিধি নির্বাচনে সঠিক যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকে বেছে নিতে না পারি তবে তার এমপি হওয়ার পরবর্তী অপকর্মের দায় কার? নিশ্চয় আমাদের?
১ম জন মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললেন।
-এবার আসি আপনার শেষের কথায়। আমাদের দেশে প্রতি পাচ বছর অন্তর অন্তর আমরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেই। ভোট দেয়া একটি পবিত্র দায়ীত্ব এবং মৌলিক অধিকার। এখন আপনি আমি যদি সেই পবিত্র ভোটটিকে অপবিত্র করি টাকা খেয়ে তবে দোষ কার? আমি আমার কর্মফল ভোগ করব এটাই চিরন্তন সত্য, তাই নয় কি? সেতো আপনাকে আমাকে টাকার বিনিময়ে কিনে ফেলল এ অবস্থায় তার কাছ থেকে কি আর কোন সুবিদা আশা করতে পারি? সেতো ভোটে পাস করে তার লগ্নি তুলবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি?

তর্ক করা দুজনেই একদম বোবা হয়ে গেলেন। এবার ভদ্রলোকটির সহকর্মী বললেন।
-আর ঐ যে বললেন বংশ পরিচয়!। ভাল এবং যোগ্য নেতা হতে হলে ভাল কোন বংশ পরিচয় লাগে না। জগতে এ রকম বহু উদাহরণ আছে যারা মুচির ঘরে জন্মেও সমাজ সেবায় জীবন দিয়েছেন, হয়েছেন জগৎ বিখ্যাত। তাইতো গুণিজনেরা বলে গেছেন ”জন্ম হোক যথা তথায় কর্ম হোক ভাল”।
আর একটা কথা মনে রাখবেন, যে দেশের রাজনৈতীক নেতারা কেবল মাত্র তাদের স্বার্থ সম্বলিত নির্বাচনী প্রক্রিয়া কি ভাবে হবে তা ঠিক করতেই পার করে দিয়েছেন দীর্ঘ ৪০/৪৫টি বছর সে দেশের জনগণ হয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে আমাদের ভবিষৎ ভাল করার নেতা নির্বাচনে। শুধু অন্যের দোষ নয় নিজেকেও মাঝে মধ্যে আয়নায় দেখতে হবে নিজের চেহারাটা কেমন। তাই আসছে নির্বাচনে সঠিক নেতা নির্বাচনেই দেশ ও দশের উন্নয়ণ ঘটবে নতুবা আমরা যেই আছি সেই থেকেও পিছিয়ে পড়ব বহুগুণ দূরে।

তর্ক কারীদের মুখ বন্ধ-মাথা নত। শুধু মুখে বলে যাচ্ছেন, জি জি….স্যার।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ছবি:অনলাইন সংগ্রীহিত।

বাবা মা-ও একদিন শিশু হবে

শিশুবেলায় বাবার আঙ্গুল ধরে ঘুরে বেড়ানোর কথা মনে হলেই মনে পড়ে আমার বৃদ্ধ দাদার কথা। দাদা বৃদ্ধ অবস্থায় আমার বাবার সাথে খুব বেশী ঘুরে বেড়াতে চাইতেন। দাদা প্রায়ই কথা বলতে শুরু করলে আর থামতেন না। বাবা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। কখনও কখনও একবারে মধ্য রাত পর্যন্ত দাদা কথা বলেই যেতেন। স্মৃতিচারণ, সাংসারিক, জীবনে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনা সব কিছুই থাকতো এই আলাপচারিতার মধ্যেই। আমার কাছে খুব আশ্চর্য মনে হত যে বাবা সারা রাত ধরে দাদার একই কথা শুনে যায় তবুও কখনও বিরক্তি বোধ করে না এর কারণ কি আসলে !

উত্তর পাওয়ার জন্য অনেকগুলো বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। দাদা এবং দাদু মৃত্যুর পর বুঝতে পেরেছি শূণ্যতা আর অনুভূতির কতটা গাঢ়ত্ব। বৃদ্ধকালে দাদা এবং দাদু দুজনেই একেবারে শিশুর মত হয়ে গিয়েছিলেন। যাই করতেন সব কিছু বাবাকে জিজ্ঞেস করে করতেন। বাবা অনেক সময়ই দেখতাম দাদার বিছানা থেকে ময়লা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন এবং আমার মাও সাহায্য করছেন। এত কিছুর পরও দাদা দাদু প্রায়ই একাকী আলাপ করতে এবং বলতেন সেই তারুণ্য ভরা জীবনের গল্পগুলো। এক সময় একজনের মৃত্যুর পর যখন অন্যজন খুব বেশী একা হয়ে যান তখন দেখলাম শিশু আচরণের একেবারে চুড়ান্ত পর্যায়।

ঠিক এই সময়টাতে প্রতিটি মানুষই একদিন আসে। কিন্তু প্রতিটি মানুষই কি আমার দাদা দাদুর মত সঙ্গ পায় ? অনেক প্রতিষ্ঠিত পরিবার গুলোর এখন একক পরিবার হিসেবে থাকতে পছন্দ করছে। বাবা মাকে তারা ঝামেলার মনে করে। একটি পরিবারে যেখানে সন্তান আছে কিন্তু বাবা মা নেই এ বিষয়টি যে অভাবের, তাড়নার তা যেন ভাববার মানুষই পৃথিবীতে এখন আর নেই। আরেক ধরণের পরিবার আছে যারা বাবা মা এর সাথে একসাথে থাকলেও বাবা মায়ের খবর রাখতে যেন খুব অমনোযোগিতা ! তেমনি একটি বাস্তব দেখা গল্প বলি।

আমাদের বাড়ির কাছেই একজন মানুষ যিনি খুব বেশী প্রতিষ্ঠিত সমাজে। রাজনীতির সাথেও খুব বেশী সংশ্লিষ্টতা আছে তার। সে হিসেবে প্রতি ঈদে যাকাতের কাপড় নেওয়ার জন্য প্রচুর পরিমান মানুষের সমাগম ঘটে তার বাড়িতে। শাড়ি লুঙ্গি দিয়ে সবার মন জয় করে নেন খুব তাড়াতাড়িই। মানুষ দোয়া করে যায় আর তার মুখে দেখি অনাবিল হাসি !

তার মা বৃদ্ধ অবস্থায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। এক সময় একটি ছোট্ট ঘরে তার মাকে আমরা বেঁধে রাখতেও দেখেছি ! কি সেই মর্মান্তিক দৃশ্য ! চিৎকার করে কান্না আর অভিশাপের চরম হাহাকার দেখে হৃদয়ে দাগ কেটে যেতো বার বার ! প্রতিবেশীরা কিছু বললে তাদের উপরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন তিনি।
আচ্ছা যখন এই লোকটি খুব ছোট ছিলেন তখন মা কিভাবে বড় করে তুলেছেন ? আমার ছোট্ট বাচ্চাটির জন্য রাতে ঘুমোতে পারি না, তার আবদার রাখার জন্য মধ্য রাত্রিতে দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে চাঁদ দেখাতে হয়, যখন হাঁটা শুরু করলো একাধারে দু-ঘন্টা ধরে তার হাতে ধরে ধরে হাঁটাতে হত, একটু মন খারাপ হলেই আমার কোলেই অর্ধেক রাত কাটিয়ে দেয় আরও কত কি ! এরকম তো প্রতিটি শিশুই বাবা মা কে ঘিরেই বেড়ে ওঠে। তারপর শিশুরা বড় হয় আর বাবা মায়েরা হয়ে ওঠেন শিশু !

যখন বাবা মায়েরা শিশু হয়ে ওঠেন তখনই যেন ঘোর বিপত্তি। এই বিপত্তি গুলোই প্রবীণদের জীবনকে ঠেলে দেয় অসহায়ত্বের দিকে। বৃদ্ধাশ্রমে না গিয়েও বয়স্ক মানুষেরা অনেকেই আছেন ঘরে বন্ধী হয়ে। দেখার কেউ নেই, কথা শোনার কেউ নেই, নেই মান অভিমানের কোন পরিসমাপ্তির মানুষও !

আপনি যখন পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত তখনই হয়ত আপনার বাবা মা আপনার শিশু জীবনে ফিরতে শুরু করবে। এটাই চিরাচরিত নিয়ম। আমাদের শিশু জীবনে আমরা যেমন বাবা মাকে ধরে ধরে দাঁড়াতে শিখি তেমনি আমাদের বাবা মায়েরাও আমাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার সময় যেন আমরা পাশে থাকি এটাই বড় কর্তব্য। ধর্মগত দিক আর বাস্তবিক দিক যেভাবেই যাই না কেন পিতামাতার স্থান সবার উপরে। সুতরাং এখনি আমাদের মানবিকতার উন্নয়ন ঘটানোর সময়।

পারিবারিকভাবেই শিক্ষা দিয়ে সন্তানকে বড় করুণ যে সন্তানই বাবা মায়ের শেষ আশ্রয়স্থল। আগে থেকেই শিশুদের বোঝাতে হবে একটা সময় বাবা মাকেই আবার সন্তানের দায়িত্বে থাকতে হয় বা হবে। সঠিক শ্রদ্ধার জায়গায় যদি বাবা মাকে স্থান দেওয়া যায় তবে বৃদ্ধ অবস্থায় বাবা মা কে সন্তানেরা নিজেদের শিশুদের মতই আদরে লালন পালন করতে থাকবে।

আমার বাবা দাদার সাথে যে আচরণ করতেন তা আমার প্রায়ই মনে হয় আর আমি শুদ্ধ হই। একারণেই যৌথ পরিবার প্রথাও প্রয়োজন যাতে করে একজনকে দেখে অন্যজন অনুপ্রাণিত হয়। বয়স্ক মানুষ একটি বাড়ির সবচেয়ে মূল্যবান মানুষ হিসেবে বসবাস করবে এটাই আমাদের চাওয়া।

নারী তুমি বিজয়িনী

নারী তুমি বিজয়িনী

সেই পাথর যুগের জীবিকা অন্বেষণে শিকার ও সংগ্রহ থেকে শুরু করে নব্যপ্রস্তর যুগে উৎপাদনের সূচনায় নারীর অবদান অনস্বীকার্য। প্রাচীন ও মধ্যযুগে নারীর সাহিত্যচর্চা, যোদ্ধা এবং রাজ্য বা সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনায়ও নারীর পরিচয় পাওয়া যায়। সেই সময়ও নারী পিছিয়ে ছিল না। আধুনিক যুগে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ, রাষ্ট্র পরিচালনা, মহাকাশ ভ্রমণ ও গবেষণা, সাহিত্যচর্চা, বিজ্ঞানচর্চা, ব্যবসা বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারী গৌরবের রেখা টেনে চলেছে। তবে এই অর্জন খুব সহজেই অর্জিত হয় নি। শত বাধা ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। যা এখনো বিদ্যমান। একজন নারীরও সমতার অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার ও উন্নয়নে অংশীদারিত্বের অধিকার রয়েছে। এই অধিকার যারাই পেয়েছেন তারাই আজ স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন।

শত বাধা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিকে হার মানিয়ে অনেক নারীই ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরিত হয়ে আছেন। তাঁরা সমকালীন গণ্ডী ছাপিয়ে গিয়ে সমাজকে দেখিয়েছেন উন্নয়ন ও কল্যাণের পথ। নিজ দক্ষতা ও কর্মগুণে আমাদের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-

১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে বসেন। মুসলিম ভারতের তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে রাজিয়াই একমাত্র নারী, যিনি দিল্লির সিংহাসনে প্রথম উপবেশন এবং রাজদন্ড ধারণ করে প্রবল প্রতাপে শাসন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সুলতান ইলতুৎমিশ, যিনি দাস বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন।

ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর নারীবিদ্বেষী আমির-ওমরাহগণ সুলতান রাজিয়ার বিরোধিতা শুরু করেন। তাঁদের যুক্তি হল যে, ইলতুৎমিশের পুত্র থাকার কারনে কন্যা উত্তরাধিকারী হতে পারে না। এই রাজমহীয়সী ছিলেন বিচক্ষণ, ন্যায়পরায়ন, দয়াশীল, সুবিচারক, বিদ্যোৎসাহী, প্রজাবৎসল, সমরকুশল এবং রাজোচিত বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী। শৈশব থেকেই রাজিয়া ছিলেন খুবই বুদ্ধিমতি এবং পিতা সুলতান ইলতুৎমিশের শাসনকার্য লক্ষ করতেন। তিনি অস্ত্রচালনা, অশ্বারোহণ ও রাজনীতিতে ক্রমশ দক্ষ হয়ে উঠতে থাকেন। রাজিয়ার রাজোচিত গুণাবলি দেখে সুলতান ইলতুৎমিশ তাঁর পুত্রদের পরিবর্তে কন্যা রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনিত করেন! সুলতান রাজিয়া দক্ষ অশ্বারোহী ছিলেন এবং বর্ম ও শিরস্ত্রাণ পরে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু রক্ষণশীল আমিরগণ সুলতান রাজিয়ার খোলামেলা রাজকীয় আচার-আচরণ মোটেই পছন্দ করতেন না। অতঃপর প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে এক যুদ্ধে এই রাজমহীয়সী সুলতান রাজিয়ার মৃত্যু হয়!

ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, শিক্ষাব্রতী, সমাজসংস্কারক এবং নারীর অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। রোকেয়া যে সামাজিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন, সেখানে মুসলমান মেয়েদের গৃহের অর্গলমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ ছিল না। তবুও তিনি বড় ভাইয়ের নিকট ঘরেই গোপনে মোমবাতির আলোয় বাংলা ও ইংরেজি শিখেন। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও পদে পদে গঞ্জনা সত্যেও তিনি জ্ঞানার্জনে অবিচল ছিলেন। তাঁর স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনেও রোকেয়াকে শিক্ষার্জন ও লেখালেখি করতে উৎসাহ যুগিয়েছেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ নামে মেয়েদের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বিরূপ সমালোচনা ও নানাবিধ সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে সে যুগের মুসলমান মেয়েদের শিক্ষালাভের অন্যতম পীঠস্থানে পরিণত করেন।

রোকেয়ার সমগ্র সাহিত্যকর্মের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজের কুসংস্কার ও অবরোধ প্রথার কুফল, নারীশিক্ষার পক্ষে তাঁর নিজস্ব মতামত, নারীদের প্রতি সামাজিক অবমাননা এবং নারীর অধিকার ও নারী জাগরণ সম্পর্কে তাঁর প্রাগ্রসর ধ্যানধারণা। শিক্ষা ব্যতীত নারীজাতির অগ্রগতি ও মুক্তি সম্ভব নয়, এ সত্য অনুধাবন করেই তিনি নারীশিক্ষা প্রসারের কাজে ব্রতী হন। সাহিত্যচর্চা, সংগঠন পরিচালনা ও শিক্ষাবিস্তার এই ত্রিমাত্রিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সমাজ সংস্কারে এগিয়ে আসেন এবং স্থাপন করেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

একবিংশ শতকে এসে বাংলাদেশী প্রথম নারী পর্বতারোহী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে নিশাত মজুমদার। এরপরেই রয়েছে সেভেন সামিট বিজয়ী ও দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী পর্বতারোহী হিসেবে ওয়াসফিয়া নাজরীনের নাম। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যোগ দিতে কঙ্গো গিয়েছে বিমানবাহিনীর দুই নারী বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুতফী।

নারীদের এই বিশ্ব জয়ের ভূমিকা যতটা আনন্দের ততটাই গৌরবের। দেশের জন্য নিজ মেধায় গতানুগতিক পেশার বাইরেও নারীরা চ্যালেঞ্জিং, সৃষ্টিশীল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পেশায় সফলভাবে কাজ করছে। পৃথিবীর কল্যাণে নারীর যে অর্ধেক অবদান তা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। মেধা ও যোগ্যতা থাকলে সব বাধা-বিপত্তিই যে মোকাবিলা করা সম্ভব, বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার নারীরা তা প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যাচ্ছে। তবে নারীর এই মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে কতটুকু কাঠখড় পোড়াতে হয় এবং তার কতটুকু মূল্যায়ন করা হয় তা ভাববার বিষয়! উন্নয়ন ও কল্যাণে নারীর অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব কোন ভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।

ভাত

যখন আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে তখন টাকা দিয়ে কি করবেন তার একটা ফর্দ তৈরী করা হয়। সেখানে ভ্রমণের একটা অংশ থাকে, গিফটের একটা অংশ থাকে, অংশ থাকে কিছু মানুষকে আনন্দ দেওয়ার। কতশত ইচ্ছের সাথে যোগ হয় টাকা দিয়ে জলসাঘরে ভালোবাসা কেনা, সুস্থতা কেনার প্রয়োজনীয়তা আর কত যে ছালাম পাওয়ার দাম্ভিকতা তৈরী হয় তারও একটি ফর্দ মনে মনে ঠিক করে মানুষ !

কেউ কেউ রাতে ভাত খেতে পারে না। প্রবল অসুস্থ। বসে থেকে থেকে ডায়বেটিকস হয়েছে। টাকার অধিক ব্যাপ্তিতে ব্লাড প্রেশারও হাই থাকে। কোন রকম খেয়ে রাত কাটিয়ে দিতে পারলেই যেন শান্তি। তাই কি আর হয় ? মধ্য রাত্রিতে উঠে খোলা আকাশের দিকে চেয়ে ভাবতে হয় আপন মানুষগুলোর দূরে চলে যাওয়ার দুঃখ, নিজের মানুষের অবহেলার দুঃখ আরও কত কি ! সব কিছুর পরও তার কাছে যা আছে তা হল টাকা। বিশ্বাস করা যায় টাকা দিয়েই ভাত কিনতে হয় ! বিশ্বাস তো করতেই হবে আমাদের।

বিপরীতে খুব রোগাক্রান্ত একজন মানুষ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। প্রতিদিন সকাল হয় শুধু পরের দিনের ভোর দেখার প্রত্যাশায়। তার কাছে ভাতের আকাঙ্ক্ষা নেই। সে স্যালাইনে বাঁচে। তার বাঁচা, শরীরে রক্ত প্রবাহ আর চোখের দৃষ্টি সবকিছুই চলে অন্য মানুষের দেয়া সাহায্যে। কিন্তু এই মানুষটিরও পরিজন থাকে। এরও একটি শিশু থাকতে পারে, শিশুটির বাবার কাছে আকুতি থাকতে পারে, একটা খেলনা দেখে দৌড়ে গিয়ে বাবার কাছে এসে বলতে পারে “বাবা আমাকে খেলনাটা কিনে দাও”! বাবার উত্তর তখন কি এই সন্তানের কাছে ? সন্তান বাবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেডের কাছে বসে থাকে। স্ত্রীও বসে থাকে। স্ত্রী বোঝে তার স্বামী রক্ত শূণ্য হয়ে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। তারপরও স্ত্রী পাশে থাকে।

কিন্তু স্ত্রী সন্তান কেউ ভাত খেতে পারে না ! যে টাকা মানুষ চিকিৎসার জন্য সহায়তা করে সে টাকায় চিকিৎসাও হয়না ! ভাতের টাকা আসবে কোথা থেকে ? অন্যের ভাত খাওয়া দেখে শিশুটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, সে হিসেব কষতে শুরু করে ভাত খাওয়ার অধিকার হীনতার স্তর বিন্যাসের ! কলা আর বন রুটিতে তাদের দিনগুলো কাটিয়ে দেওয়ার পরও যে ভালো দিন না আসার চরম বাস্তবতা মেনে নেওয়ার মত কঠিন সত্য মেনে নিয়ে ছেলেটির মা ছেলেটির মুখে বুকের দুধ ঠেলে দেয় ! ছেলেটি ভাতের তেষ্টায় অচেতন হয়ে যতক্ষণে ঘুমের ঘোরে চলে যায় তখন ততক্ষণে মায়ের নিজের ক্ষুধা নিবারণ শুধুই একজন মানুষের বাঁচার আকুতিতে নিঃশেষে বিভাজ্য।

একদিকে শহরের লক্ষ লক্ষ টাকার বিল্ডিংয়ের কাচের চাকচিক্য অন্যদিকে টাকা গচ্ছিত না রেখে তা দিয়ে ভ্রমণ করে দেশ দেশান্তর ঘুরে জীবনের মানে খোঁজা মানুষগুলো আর ঠিক তার পাশ ঘেঁষেই হা-ভাত ওয়ালা মানুষ বড় বেশী অপ্রয়োজনীয় একটা অংশ বলা যায় ….

আপনি কি পবিত্র ঈদুল আযহায় পশু কুরবানি দিচ্ছেন?

এই পবিত্র ঈদুল আযহায় আপনি কি মহান সৃষ্টিকর্তার নামে কুরবানি দিচ্ছেন? যদি কুরবানি দেওয়ার জন্য লাখো টাকা দিয়ে একটি চতুষ্পদ প্রাণী কিনে থাকেন, তা হলে ধরে নিন; এই পশুটিই আপনার মনের ভেতরে থাকা অতি আদরের লালিত পালিত পশু। যখন ধারালো ছুরি দিয়ে পশুটিকে কুরবানি বা জবাই করা হবে, আপনি মনে করবেন মহান সৃষ্টিকর্তার নামে আপনি নিজের কুরবানি হয়ে যাচ্ছেন। তারপর কুরবানি দেওয়া পশুটির গোশত নিজ পরিবারের জন্য একবেলার সমপরিমাণ গোশত রেখে বাদবাকি গোশত সঠিকভাবে আপনার গরিব আত্মীয়স্বজন এবং সমাজের গরিব মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিন। তা হলেই মনে হয় আপনার কুরবানি মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে কবুল হবে, আপনিও মহান সৃষ্টিকর্তার নামে নিজেই কুরবানি হয়ে গেলেন।

এটি কোনও পরামর্শ নয়, এটি আমার নিজের মনের ধরনা মাত্র। ভুলও হতে পারে! ভুল হলে আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ক্ষমা করে দিবেন। পরিশেষে সবাইকে আমার পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা।

ছবি ইন্টারনেট থেকে।

২১শে আগষ্টঃ পরাজিতদের নৃশংস হামলা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লিগ কে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলার করার মতো ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দল গঠন হয় নি। তাই স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতি তে আওয়ামী লীগ কে টিকে থাকার জন্য ষড়যন্ত্র আর খুন খারাবীর মোকাবেলা করতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে অব্যহতি পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র, নানা মুখী শুভ অশুভ শক্তির সমীকরণ। নানা শত্রুর সমীকরণ বলয়ে আওয়ামী বিরোধী চক্রান্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। অতীতে হয়েছে এখনো চলছে। এই অশুভ তৎপরতা কখনো থেকে না। যেমন হয়েছে ৫৪ সালে, ৭১ সালে তা নিয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রামে, মুক্তি সংগ্রামে। এর পরে ৭৫ এর মর্মান্তিক ১৫ই আগষ্ট ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণিত এক ইতিহাস। রাতের অন্ধকারে একদল বেইমানের দল জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে৷ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে শুধুমাত্র কিছু বিপথগামী সামরিক অফিসারই ছিল না, এক প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করেছে। এই প্রতিশোধ স্পৃহা ছিলো মার্কিনীদের, পাকিস্তানি সরকারের আর এ দেশীয় কিছু পরাজিত দালালদের। এখানে যোগ হয়েছে ডান বামের জন সম্পৃক্ততা হীন কিছু রাজনৈতিক নেতা ও দলের। যারা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধাচরণ করে এসেছেন কিন্তু কোন গন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন নাই।

এরপরের ইতিহাস আরো জঘন্য৷ ২১ বছর ধরে এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃতি করা, স্কুল কলেজে মিথ্যা ইতিহাস পড়ানো, দেশ কে ধর্মের নামে পাকিস্থানী করন করা। এই কাজে বিচারপতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় কাজ করে গেছেন। এমনকি ৯০এর স্বৈরাচার পতনের ফসল যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারাও একই পথ অবলম্বন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ কে ক্ষমতায় ফিরতে বাধার সৃষ্টি করেছে।

প্রায় ২১ বছর পর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইতিহাস বিকৃতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করে, ইতিহাসের জঘন্য তম আইন ইন্ডেমনিটি বিল বাতিল করে বংগবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পথ প্রসস্ত করে। এইসব ইতিহাস সবাই জানে।কিন্তু আওয়ামী বিরোধী এবং জাতির জনক এর পরিবারকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র তা কিন্তু থেমে থাকে নি। আজো সেই চক্রান্ত চলছে।

২১শে আগষ্ট সেই চক্রান্তের এক নারকীয় দিন। এইদিন ততকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতির জনকের কন্যা, আজকের প্রধানমন্ত্রী এবং সেই সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ভাগ্যক্রমে তিনি অক্ষত থাকলেও মারা যায় প্রায় উনত্রিশ জন। আহত হন শতাধিক। শেখ হাসিনা নিজেও অসুস্থ্য হয়ে পরেন। এই কুখ্যাত হামলার পরেও আরো কয়েকবার হামলা চালানো হয়েছে। সারাদেশে টার্গেট করে আওয়ামী লীগের নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবি, লেখক কবি, প্রকাশক, মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যা করে জাতিকে, আওয়ামী লীগ কে পংগু করার এক অশুভ চক্রান্তে আজো ততপর একটা চক্র। এই চক্র ৭১ এর পরাজিত শক্তি, এই চক্র পচাত্তরের পুরানো ঐক্যবদ্ধ শক্তি। যারা আন্দোলন দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন ঘটাতে পারে না।

এক্ষেত্রে আবারো এক পুরানো কথা বলতে হয়, আওয়ামী লীগ যখন জিতে তখন সে একা জিতে, আর যখন হারে তখন সবাইকে নিয়ে হারে।