বিভাগের আর্কাইভঃ দেশ

২১শে আগষ্টঃ পরাজিতদের নৃশংস হামলা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লিগ কে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলার করার মতো ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দল গঠন হয় নি। তাই স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতি তে আওয়ামী লীগ কে টিকে থাকার জন্য ষড়যন্ত্র আর খুন খারাবীর মোকাবেলা করতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে অব্যহতি পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র, নানা মুখী শুভ অশুভ শক্তির সমীকরণ। নানা শত্রুর সমীকরণ বলয়ে আওয়ামী বিরোধী চক্রান্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। অতীতে হয়েছে এখনো চলছে। এই অশুভ তৎপরতা কখনো থেকে না। যেমন হয়েছে ৫৪ সালে, ৭১ সালে তা নিয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রামে, মুক্তি সংগ্রামে। এর পরে ৭৫ এর মর্মান্তিক ১৫ই আগষ্ট ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণিত এক ইতিহাস। রাতের অন্ধকারে একদল বেইমানের দল জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে৷ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে শুধুমাত্র কিছু বিপথগামী সামরিক অফিসারই ছিল না, এক প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করেছে। এই প্রতিশোধ স্পৃহা ছিলো মার্কিনীদের, পাকিস্তানি সরকারের আর এ দেশীয় কিছু পরাজিত দালালদের। এখানে যোগ হয়েছে ডান বামের জন সম্পৃক্ততা হীন কিছু রাজনৈতিক নেতা ও দলের। যারা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধাচরণ করে এসেছেন কিন্তু কোন গন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন নাই।

এরপরের ইতিহাস আরো জঘন্য৷ ২১ বছর ধরে এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃতি করা, স্কুল কলেজে মিথ্যা ইতিহাস পড়ানো, দেশ কে ধর্মের নামে পাকিস্থানী করন করা। এই কাজে বিচারপতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় কাজ করে গেছেন। এমনকি ৯০এর স্বৈরাচার পতনের ফসল যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারাও একই পথ অবলম্বন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ কে ক্ষমতায় ফিরতে বাধার সৃষ্টি করেছে।

প্রায় ২১ বছর পর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইতিহাস বিকৃতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করে, ইতিহাসের জঘন্য তম আইন ইন্ডেমনিটি বিল বাতিল করে বংগবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পথ প্রসস্ত করে। এইসব ইতিহাস সবাই জানে।কিন্তু আওয়ামী বিরোধী এবং জাতির জনক এর পরিবারকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র তা কিন্তু থেমে থাকে নি। আজো সেই চক্রান্ত চলছে।

২১শে আগষ্ট সেই চক্রান্তের এক নারকীয় দিন। এইদিন ততকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতির জনকের কন্যা, আজকের প্রধানমন্ত্রী এবং সেই সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ভাগ্যক্রমে তিনি অক্ষত থাকলেও মারা যায় প্রায় উনত্রিশ জন। আহত হন শতাধিক। শেখ হাসিনা নিজেও অসুস্থ্য হয়ে পরেন। এই কুখ্যাত হামলার পরেও আরো কয়েকবার হামলা চালানো হয়েছে। সারাদেশে টার্গেট করে আওয়ামী লীগের নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবি, লেখক কবি, প্রকাশক, মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যা করে জাতিকে, আওয়ামী লীগ কে পংগু করার এক অশুভ চক্রান্তে আজো ততপর একটা চক্র। এই চক্র ৭১ এর পরাজিত শক্তি, এই চক্র পচাত্তরের পুরানো ঐক্যবদ্ধ শক্তি। যারা আন্দোলন দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন ঘটাতে পারে না।

এক্ষেত্রে আবারো এক পুরানো কথা বলতে হয়, আওয়ামী লীগ যখন জিতে তখন সে একা জিতে, আর যখন হারে তখন সবাইকে নিয়ে হারে।

সুন্দরী প্রতিযোগীতা: দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়!!

【সতর্কতাঃ এটি একটি আঠারো প্লাস লেখা। বাচ্চারা অবশ্যই এড়িয়ে যাবে।】

সুন্দরী প্রতিযোগীতার স্লোগান- “দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়”, আর “কাপড় খুলে ফেলো” এই দুটো কথা আদতে একই। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে, প্রথমটিতে ভদ্র ভাষার ঢঙ্গে অভদ্র প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, আর দ্বিতীয়টিতে ডিরেক্ট অভদ্র প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। :/

সুন্দরী প্রতিযোগীতায় মেয়েদের কিভাবে নির্বাচন করা হয় জানেন? কুমারীত্ব (অবিবাহিতা), উচ্চতা, বুক ও কোমরের সাইজ, গায়ের রঙ্গ ইত্যাদি দেখা বা মাপা হয়। ব্যাপারগুলো কি শালীনতার পর্যায়ে পড়ে?

ফ্রাষ্ট্রেটিং কোশ্চেন হলো- মেয়েগুলো কি কোরবানির গরু? এখানে একটা মেয়েকে যাষ্টিফাই করা হয় ঠিক কোরবানীর হাটের পশুর মত। হাটে আমরা দেখি গরুটি নাদুস-নুদুস কিনা, শিং ঠিক আছে কিনা, রঙ কেমন ইত্যাদি…। সেইম রিপিট কি এই নোংরা প্রতিযোগীতায়ও হয় না! ব্রেষ্ট, চেষ্ট, ওয়েষ্ট, ওয়েট, ফিগার, হাইট, চেষ্টটিটি, কালার…. মেয়েদের এইগুলা যাষ্টিফাই করা হয়….। স্যরি, বিষয়গুলো লিখতে আমারও যে সংকোচ হচ্ছে।

প্রতিযোগীতার আয়োজক আর দর্শকদের নিয়ে কথা বলার আগে সবচেয়ে অবাক লাগে প্রতিযোগীদের মানসিকতা নিয়ে। একটা মেয়ে কিভাবে পারে সবার সামনে নিজের বডি-ফিগারের প্রদর্শনী করে তথাকথিত স্টার হতে! হাজার হাজার মানুষ রসিয়ে রসিয়ে তার বডি পার্টসগুলো উপভোগ করছে! একসাথে হাজার হাজার জনতা চক্ষু দিয়ে ধর্ষণ করছে বা মানসিকভাবে গিলে খাচ্ছে। কতটা নোংরা আর অসুস্থ মানসিকতার হলে নিজেকে এভাবে “সিম্বলিক প্রস্টিটিউট” এর পর্যায়ে নামানো যায় (স্যরি ফর দ্য হার্ড ল্যাংগুয়েজ)! আমরা অধিকাংশ ছেলেরা মেয়েদের সামনে দূরে থাক, পুরুষ জনতার সামনেই নিজেদের পেট-পিঠ-ন্যাভল দেখিয়ে বেড়াতে লজ্জ্বা পাই। আচ্ছা কখনো কি দেখেছেন পুরুষরা স্বেচ্ছায় নিজেদের পেট-ন্যাভল বের করে রাস্তায় হাটছে! ইজ ইট কমন সিন ফর ম্যান? আর আপনারা মেয়ে হয়ে…!!

আর সেসব অভিবাবকেরাই বা কেমন, যারা নিজেদের মেয়েদেরকে ফ্রিতে জনতার কামনার খোরাক হতে দিচ্ছেন! নিজেদের মেয়েদের ফিগার আম-জনতা উপভোগ করছে, আর তাদের প্রাউড ফিল হচ্ছে! ফিলিং প্রাউড ফর ন্যুডিটি! হাহ, এদের মানসিকতার উপরে কি গজব পড়েছে নাকি- ভেবে ভেবে আকুল হই!!

সুন্দরী প্রতিযোগীতার দর্শকদের (যারা শুধু নিজেদের মা-বোনের বেলায়ই সুশীল) একটা কথাই বলতে চাইঃ আপনার বোনদেরকেও প্রতিযোগীতার হাটে তুলুন, ওদেরও সুযোগ দিন। আরেহ চিন্তা নেই! আপনাকে দর্শক হতে হবে না! এ বেলা না হয় আমরাই তাদের সৌন্দর্য্য আর বডি পার্টসগুলো ফ্রিতে রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করবো! কি বলেন? চলুন উপভোগ করি, অনেক ফূর্তি হবে, অনেক….।

আগষ্ট মাসকে সামনে রেখে এগুলি কিসের আলামত ???

জয়বাংলা শ্লোগান, গলায় নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে কেন্দ্র দখল করে ধানের শীষে সিল মারা, আমার দেশ পত্রিকার বির্তকিত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর আদালত চত্বরে হামলা, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর একই মালিকের তিনটি গাড়ির বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থী হত্যা, কোমলমতি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীকে পুলিশের কলার ধরে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন, ছাত্রদের শান্তিপূর্ন প্রতিবাদকে ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা আসলে কিসের আলামত ?

সরকারের উর্ধ্বতন মহলসহ গোয়েন্দা সংস্থাকে গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। সামনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রকারী কুচক্র মহলের কোন ষড়যন্ত্র কিনা ? আগেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার জন্য আগষ্ট মাসেই বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রদের উপর বাস তুলে দিয়ে ছাত্র হত্যা, সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবীতে আন্দোলনকে সহিংসতায় রূপদানের লক্ষ্যে বিরোধীদের তৎপরতা কি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোন ষড়যন্ত্র ? নিজেদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ঘরের শত্রুদের কোন গভীর ষড়যন্ত্রের তৎপরতার জানান নয় তো? বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। এখনও ষড়যন্ত্রকারীরা আগষ্ট মাসকে সামনে রেখে তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টারত। এই আগষ্ট মাসেই জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর হামলা হয়েছে তাকে মেরে ফেলার যা এখনও চলমান। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে জানা যায় জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে বর্তমানে আওয়ামী লীগে প্রধান দুটি সমস্যা হলো— অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নিজ নিজ গ্রুপ ভারী করতে বিরোধী মতাদর্শীদের দলে অনুপ্রবেশ।

বাস চাপায় ছাত্র হত্যায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাবালে নূরের যে তিনটি বাসের রেষারেষিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, আসলে এটা কি একই মালিকের তিনটি বাসের রেষারেষি নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি সরকার বিরোধী আন্দোলন সৃষ্টির ইস্যু তৈরীর কোন ষড়যন্ত্র কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। যে বাস গুলির রেষারেষিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেগুলোর নিবন্ধন নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭, যেটা চালাতেন মাসুম। ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ বাসটি চালাতেন জুবায়ের অপরটি ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০, এটা চালাতেন সোহাগ। এরমধ্যে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ নম্বর বাসের চাপায় মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। মাসুম বিল্লাহর বাসের রেজিস্ট্রেশন আর ফিটনেস ঠিক থাকলেও রুট পারমিটের মেয়াদ ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর শেষ হয়েছে। আর সোহাগ আলির বাসটির রেজিস্ট্রেশন ঠিক থাকলেও ফিটনেটের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০ জুন। রুট পারমিট ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৪ মার্চ। আর জুবায়েরের চালানো বাসটির রেজিস্ট্রেশন ঠিক থাকলেও ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ১৮ মে। রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ১৯ মে। রাস্তায় চলার অনুমোদনহীন বাসের চাপায় ছাত্র হত্যা কেমন যেন রহস্যাবৃত। আবার পরিবহন শ্রমিক সংগঠন নামধারী কিছু মোড়লের গোষ্ঠীস্বার্থের আধিপত্যও সড়কে অরাজকতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। ‘দুর্ঘটনার নামে মানুষ হত্যা, আহত শিক্ষার্থীকে আবার পানিতে ফেলে দিয়ে হত্যা করা, ফুটপাতের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীর ওপর বাস তুলে দেয়া- এটা দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড।’

আমাদের নীতিহীনতা, বিবেকহীনতার গা শিউরে ওঠা উদাহারণ সামনে আসছে একের পর এক। অথচ আমরা নিশ্চুপ! নিশ্চুপ মন্ত্রী সকল, নিশ্চুপ নাগরিক সমাজ। অদ্ভুত এক নির্লজ্জতা গ্রাস করেছে আমাদের ! এভাবেই জাতির সামনে ভবিষ্যতের অন্ধকার সুড়ঙ্গ তৈরি হচ্ছে; অথচ দেশের কর্ণধারদের কোনো বিকার নেই।

আমাদের বিবেক আর কত নিচে নামলে আমরা প্রকৃত বিবেকবান হবো ?

মাজারের খাদেম ও নতুন মুরিদঃ যেমন চোর তেমন সাগরেদ

মাজারের খাদেম ও নতুন মুরিদের মাঝে কথপোকথনঃ
(১ম সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আনেকদিন ধরে আমার প্রায়ই পেটে ব্যাথা হয়। ডাক্তার বলছে গ্যাস জমেছে, সারতে সময় লাগবে।
– ভুল কথা, জ্বীনের বদ নজর লাগছে। বাবার মাজারে মোমবাতি দে, ভাল হয়ে যাবে।
 
(২য় সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আমার বুক ব্যাথা করছে। এখন ডাক্তারের ঔষধ খাচ্ছি।
– ঔষধ খেয়ে কিছু হবে না রে, বাবার মাজারে মুরগি দে, ভাল হয়ে যাবে।
 
(৩য় সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আমার চাকরি হচ্ছেনা, কি করি?
– বাবার ওরশে ছাগল দে, চাকরি হয়ে যাবে।
 
(৪র্থ সপ্তাহে)
– খাদেম ভাই, আমার বিয়ে হচ্ছে না। কি করি?
– বাবার ওরশে গরু দে, বিয়ে হবে।
 
(১ মাস পর…)
– খাদেম আব্বা, এই নেন মিষ্টি! নতুন বিয়ে করলাম।
– আরে পাগলা এখন দেখি আমারেই বাবা ডাকে! দেখলি বাবার মাজারে তোর দেয়া মোমবাতি, মুরগি, ছাগল, গরু- সব দান কাজে লেগেছে। বাবা কবর থেকে মুরিদদের সবকিছু জানে (নাউজুবিল্লাহ)।
– জ্বি না, বাবা কিছুই জানে না। নইলে মিছিমিছি পেট ব্যাথা আর বুক ব্যাথার কথা বললাম, তবু বাবা টের পেল না কেন?
– মিছমিছি হলে তুই মাজারে এসব কিছু দিলি কেন?
– আপনার মেয়েকে পটানোর জন্যে আব্বাজান! মোমবাতি, মুরগি, গরু, ছাগল মাজারে দিয়ে আপনার বাসায় আসা যাওয়া নিশ্চিৎ করেছি, আর আপনার মেয়েকে পটিয়ে বিয়ে করেছি।
– কি! তোর এত বড় সাহস, শেষে আমার মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে? তোর চাকরি পাওয়ার কথাও তো তাহলে মিথ্যা! তুই মোমবাতি কেনার টাকা পেলি কই?
– ইয়ে, মাজারের দানবাক্স থেকে টাকা মেরে দিয়ে…
– মুরগি কেনার টাকা?
– দানবাক্স থেকে…
– ছাগল কেনার টাকা?
– দানবাক্স থেকে…
– গরু কেনার টাকা?
– ঐ যে দানবাক্স থেকে…
– ই ই ই…. ধপাস!! (খাদেম মিয়া অজ্ঞান)
– খাদেম আব্বা, কি হলো? আজকে ’হুহ হাহ হুহ’ ড্যান্স দিলেন না যে!

পূর্বে প্রকাশিত।

মানুষ তার নিজ প্রয়োজনেই খুঁজে নেবে উন্নয়নের পথ

আমরা যারা পাকিস্তানে জন্ম নিয়ে বাংলাদেশে বেড়ে উঠেছি তাদের স্মৃতি হতে এখনো মুছে যায়নি বাংলাদেশে সৃষ্টির প্রেক্ষাপট। মূলত পশ্চিম পাকিস্তান ভিত্তিক সেনাবাহিনীর অবৈধ ক্ষমতা দখল ও ২২ পরিবারের নিরবচ্ছিন্ন শোষণই ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার মূল ক্যাটালিস্ট। শেখ মুজিব তথা আওয়ামী লীগের রাজনীতিও একই প্রেক্ষাপটে ঘুরপাক খেয়েছে। সংখ্যাগুরুদের অধিকার কেড়ে নিয়ে সংখ্যালঘুর শাসন কায়েম, সামরিক জান্তাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠা বাইশ পরিবারের কাছে ফাইন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউটগুলো বর্গা দেয়ার ভ্রূণেই সুপ্ত হয়েছিল স্বাধীনতার বীজ। এ বীজ আওয়ামী লীগের ৬ দফা অথবা ১১ দফার ভেতর বড় হয়েছে এসব জাস্ট টকিং পয়েন্ট। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে মুগ্ধ হয়ে নয়, বরং অবৈধ ক্ষমতা ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। এ শোষণ ছিল সংখ্যালঘু কর্তৃক সংখ্যাগরিষ্ঠদের।

আজকের বাংলাদেশ ভৌগলিক সংজ্ঞায় স্বাধীন। তার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটা সীমানা আছে, আছে পতাকা। ব্যাস এতটুকুই! পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ করার যে মূল চেতনা তা এখন বেওয়ারিশ লাশ হয়ে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের অপেক্ষায় আছে। পাকিস্তানী শোষণকে রিপ্লেস করেছে লুটপাট। ২২ পরিবারের জায়গা দখল করেছে ২ পরিবার। শোষণের তাও কিছু লাজ-লজ্জা ছিল, যা আইডেন্টিফাই করতে অনেক সময় ম্যাগনিফাইং গ্লাসের প্রয়োজন হত। কিন্তু আজকের লুটপাটে কোন রাখঢাক নেই, নেই জড়তা; এক কথায় উদাম, নির্লজ্জ, বেহায়া, বেলাজ। রাষ্ট্রের সবকটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বানানো হয়েছে ক্ষমতাসীনদের উদরপূর্তির নিরাপদ ভাগার। লুটপাট মহোৎসবের উচ্ছিষ্ট ভাগ-বটোয়ারা করার কাজে সংযুক্ত করা হয়েছে দেশের ব্যুরোক্রেসি, বুদ্ধিজীবী সহ শ্রেণী-ভিত্তিক সব পেশাদারদের। বিচারবিভাগকে বানানো হয়েছে সবজি এবং নিয়োগ দেয়া হয়েছে লুটপাট যন্ত্রের চৌকিদার হিসাবে। এখানে প্রধান বিচারপতির মাথায় বন্দুক রেখে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় চৌকিদারের ভূমিকা ঠিকমত পালন করেনি বলে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটাধিকারকে বানানো হয়েছে আলোমতি প্রেমকুমার যাত্রাপালার রঙ্গমঞ্চ। বাংলাদেশ এখন একব্যক্তির এক দেশ। এখানে স্বাধীনভাবে কথা বলা যাবেনা…লেখা যাবেনা… প্রতিবাদ এখন যাদুঘরে। এখানে ইচ্ছামত জন্মদিন পালন করাও অপরাধ। বাংলাদেশ এখন একক দেবতার দেশ। অনেকটা উত্তর কোরিয়ার মত, যেখানে ব্যক্তি কিম জং উং’ই দেশ! তিনি যা বলবেন তা-ই আইন, তা-ই শাসন, তা-ই বিচার, তা-ই রায়। এর বাইরে যা কিছু তার সবই নষ্ট, সবই শাস্তিমূলক অপরাধ।

স্বাধীনতার সংজ্ঞাকে আমি রবীন্দ্রনাথের দুই পাখী কবিতার আলোকে ক্লাসিফাইড করতে পছন্দ করি; এক, খাঁচায় বন্দী স্বাধীনতা, দুই, বনের মুক্ত স্বাধীনতা। বন্দী পাখির কিছু কিছু নিশ্চয়তা আছে যা বনের পাখির থাকেনা। যেমন অন্ন! দুবেলা দু’মুঠো খাবার দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েই মানুষ পাখিকে খাঁচায় আটকায়। তো আজকের শেখ হাসিনার স্বাধীনতা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের খাঁচার পাখির স্বাধীনতা; বন্দী, শৃঙ্খলিত! তোতা পাখির এই স্বাধীনতা সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়ও কায়েম হয়েছিল। দু’বেলা দু’মুঠা অন্ন আর মাথার উপর ছাঁদ দিয়ে মানুষকে আফ্রিকা হতে ধরে আনা দাসদের মত স্বাধীনতা দিয়েছিল। কিন্তু সে সমাজ টিকেনি। কারণ মানুষ পশু নয়। মানুষের চিন্তাশক্তি আছে। শুধু আহার আর বাসস্থানই তার জন্য সব নয়। আজকের বাংলাদেশে চিন্তা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। লেনিন, মাও, হো আর কিম’দের মত শেখ মুজিবকে এখানে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে দেবতা হিসাবে। গোটা জাতিকে বলা হচ্ছে হ্যামিলনের বংশীবাদকের পেছনে লাইন ধরতে।

উন্নয়নের চাইতেও আজকের পৃথিবীতে বেশী জরুরি মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার নিশ্চয়তা। এসবের গ্যারান্টি থাকলে মানুষ তার নিজ প্রয়োজনেই খুঁজে নেবে উন্নয়নের পথ।

বাহ্

বাহ্
মানুষ বোঝেনা।

রাজনীতি বোঝনা ক্ষমতা বোঝো
পেট্রোলের বদলে বোঝো পেট্রোল বোমা
মানুষ বোঝনা গুম বোঝো খুন বোঝো।
জনতার সম্পদ লুটপাট বোঝো।
বাহ্ চমৎকার গুণ তোমার চমৎকার হিংস্র দুটি চোখ।

ধর্ষণের কারণ ও প্রতিকার


ধর্ষণ সর্ম্পকে আলোচনা করার আগে আমাদেরকে জানা প্রয়োজন ধর্ষণ কাকে বলে?
যখন কোন ব্যক্তি কাউকে জোর পূর্বক বা তার সম্মতি ব্যতিত যৌন আচরণ বা যৌন মিলন করে তখন তাকে ধর্ষণ বলে।
এবার বাংলাদেশের ধর্ষণের হালচিত্র নিয়ে আলোচনা করা যাক।

ধর্ষণ বর্তমানে আমাদের সমাজে এক চরমতম সংকট ও মারাত্মক আতংক। যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়ে তাদের কাছে ধর্ষণ শব্দটা বেশী পরিচিত। এমনকি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও ধর্ষণ শব্দটির সাথে পরিচিত। বর্তমানে পত্রিকা হাতে নিলে প্রথমে নজরে পড়ে ধর্ষণের লোমহর্ষক কাহিনী। পত্রিকার পাতায় এমন কোন দিন বাদ নেই যে ধর্ষণের খবর আসে না। পত্রিকার খবর ছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে কত নারী যে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। দেশের কোথাও না কোথাও ২ বছরের কন্যা শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষিত হচ্ছে। ধর্ষণের নেশায় কিছু মানুষরূপী নরপশুরা এসব নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর। বর্তমানে এসব মানুষরূপী নরপশুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু কন্যা, বৃদ্ধা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে ধর্ষণের ফলে তাদের যৌনাঙ্গের গ্রন্থি ছিঁড়ে যায়। তখন রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এমতাবস্থায় অনেক শিশুর প্রাণহানী ঘটে। এর মধ্যে যারা ধর্ষিতা হয়ে বেঁচে থাকে তাদের জীবন হয়ে যায় অন্ধকার। তাদের বিয়ে নিয়ে দেখা দেয় পরিবার ও সমাজে চরম অনিশ্চয়তা। কিন্তু ধর্ষকের বিয়ে অনায়াসেই হয়ে যাচ্ছে। তাদের পোহাতে হয় না কোন লাঞ্ছনা। অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জা ঢাকতে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়। প্রতিদিন দেশের আনাচে কানাচে কতইনা অবলা নারী ধর্ষিত হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। অনেকে লোক লজ্জার ভয়ে ধর্ষণের কথা কারো কাছে প্রকাশ করে না। যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই ধর্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আগে ধর্ষণ হতো গোপনে আর এখন ধর্ষণ হয় প্রকাশ্যে খোলা মাঠে, চলন্ত বাসের মধ্যে। যেখানে একজন নারীকে হাত পা বেঁধে দল বেধে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হচ্ছে। যাকে গণধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ কারীরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, ধর্ষণের পর খুন করা হয় ধর্ষিতাকে। মা-বাবার সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, ছেলের সামনে মাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এসব করেও ধর্ষকরা শান্তি পাচ্ছে না। তারা এখন ধর্ষণের দৃশ্যকে ভিডিও করে ব্লু-ফিল্ম বানিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে। ইদানিং ইন্টানেটেও ধর্ষণের ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। যা জাহেলিয়াতের যুগকে হার মানাচ্ছে।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। এ দেশের ৯০% মানুষ মুসলমান। অথচ এ দেশেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ধর্ষণের সেঞ্চুরী হয়। তারপরও ধর্ষক বুক ফুলিয়ে রাস্তা ঘাটে হাঁটে। অথচ এ দেশের সরকার পারেনি তার বিচার করতে। এ যদি হয় দেশের অবস্থা তাহলে কিভাবে আমাদের মা বোনরা রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করবে? এ দেশের একজন নাগরিক হয়ে লজ্জায় রাস্তায় বের হতে ইচ্ছে করে না। যে দেশের সরকার ও প্রধান বিরোধী দলসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের অবস্থান সে দেশের নারী সরকার পারেনি ধর্ষণকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে। তাহলে কিভাবে এ দেশের অসহায় নারীরা ধর্ষণের হাত থেকে রেহায় পাবে?
এতক্ষণ ধর্ষণের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরলাম।

এবার আসা যাক নারী ধর্ষিত হাওয়ার কারণ কি? ধর্ষণের একাধিক কারণ আছে। এর মধ্যে তথ্যানুসন্ধান করে দেখা গেছে ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবার মূল কারণগুলো হলো, নগ্নতা, অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্খা, বেহায়াপনা, অবাধ যৌনাচার, রাস্তার পাশে দেয়ালে নগ্ন পোস্টার, ফুটপাতে অশ্লীল ছবি সম্বলিত যৌন উত্তেজক অবৈধ বইয়ের রমরমা ব্যবসা, অশ্লীল পত্রপত্রিকা, অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন, ব্লু-ফিল্ম, বাংলা চলচ্চিত্রে খলনায়ক কর্তৃক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের দৃশ্যের মাধ্যমে সমাজে রাস্তা ঘাটে বাস্তবে ধর্ষণ করার উৎসাহ যোগান, ইন্টারনেটে অশ্লীল সাইটগুলো উম্মুক্ত করে দেয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, টুয়েনটি প্লাস চ্যানেলে নীল ছবি প্রদর্শন ইত্যাদি কারণে আজ যুবসমাজের মধ্যে দিন দিন ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ষণের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অভিভাকদের উদাসীনতা।

পরিশেষে বলতে চাই, ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে কঠোর আইন প্রয়োগ করে ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। আর সমাজ থেকে নগ্নতা, বেহায়াপনা দূর করতে হবে। ব্লুু-ফিল্ম দেখানো নিষিদ্ধ করতে হবে। অশ্লীল পত্রপত্রিকা ও বইয়ের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। ছেলে-মেয়েদেরকে যথাসময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। উপরোক্ত লক্ষণগুলো দূর করতে পারলে আশা করা যায় কিছুটা হলেও সমাজ থেকে ধর্ষণ প্রবণতা কমবে। তা না হলে কস্মিনকালেও ধর্ষণ প্রবণতা রোধ করা যাবে না।

(আমার লেখা কপি পেস্ট করে নিজের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা পত্রিকায় প্রকাশ করা নিষেধ।)

অভিশপ্ত ছাত্ররাজনীতি

শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির প্রবেশ, দলীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশে পঠন পাঠনের ঘোর অবনতিই সূচীত করে!

জীবনের সমগ্র পরিসরে শিক্ষার্জনের সময়সীমা খুবই সীমিত! সেই সীমিত কালসীমায় যে বিদ্যার্জন এবং মেধার বিকাশ সাধন হয়, তার উপরেই সাধারণত বাকি জীবনের সুখ শান্তি কর্ম ও পরিতৃপ্তি নির্ভর করে! নির্ভর করে একটি জাতি, একটি দেশের উন্নতিও! রাজনীতির অঙ্গনে, সে নিজের ব্যক্তিগত আখের গোছানোর দূর্নীতিই হোক কিংবা সুনাগরিকের দেশপ্রেমে অভিষ্ট দেশসেবা ও দেশের উন্নয়ণ প্রক্রিয়ায় সদর্থক ভূমিকা রাখাই হোক; কর্মমুখর হয়ে ওঠার জন্যে সারা জীবন পাওয়া যাবে! কিন্তু শিক্ষার্জনের জন্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনই জীবনে পাওয়া যায়!

জীবনের সেই স্বল্প কয়টি দিন, যা কার্যকরি শিক্ষার্জনের জন্যেই নির্দিষ্ট তা কখনই রাজনীতিচর্চার ক্ষেত্র হতে পারে না! শিক্ষার্জনের এই পর্বটি ছাত্রছাত্রীর মৌলিক মেধা বিকাশের প্রস্তুতি পর্ব! তারা এই কালসীমায় শিক্ষা আহরণ করবে, আত্তীকরণ করবে! সেই অধীত বিদ্যায় তাদের মেধা পুষ্ট হতে থাকবে! বিকশিত হয়ে ওঠার পথে দ্রুত গতিশীল থাকবে! এবং পর্বে পর্বে তাদের মৌলিক চিন্তা শক্তির বিকাশ ঘটবে! পারদর্শী হয়ে উঠবে কোনো না কোনো কার্যকরী বিদ্যায়! যে পারদর্শিতায় তারা তাদের কর্মজীবনে ক্রিয়াশীল থাকবে জীবনের মূলপর্বে! তাই সমগ্র জীবনের প্রেক্ষিতে শিক্ষাজীবনের এই মূল্যবাণ পর্বটি জীবন গড়ার জন্যেই নির্দিষ্ট থাকা উচিত!

কিন্তু! দুই বাংলায় শিক্ষাক্ষেত্র আজ ছাত্ররাজনীতির অভিশাপের করাল গ্রাসে! কেন এমন হলো? সেটা বুঝতে গেলে একটু ফিরতে হবে ইতিহাসে! বৃটিশ এসে শাসনকার্য পরিচালনা এবং শোষণকার্য চালু রাখার জন্য বশংবদ রাজভক্ত কর্মচারী তৈরীর কারখানা স্বরূপ পত্তন করল আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা! যে শিক্ষাব্যবস্থা সমাজদেহের অন্তর থেকে গড়ে উঠল না! বিদেশী শোষক চাপিয়ে দিলো বাইরে থেকে! ফলে দেশের নাড়ির স্পন্দন থেকে বিচ্যুত, জাতির ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের সাথে সম্পর্কহীন, স্বদেশের প্রাণের সাথে শিকড়হীন এমন এক শিক্ষা পদ্ধতি চালু হল, যা মেরুদণ্ডহীন অনুকরণ প্রিয় নকলনবীশ মুখস্ত বিদ্যায় পারদর্শী ডিগ্রী সর্বস্ব চাকুরী প্রার্থী তৈরী করে!

ফলে শিক্ষার উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ালো চাকুরী সন্ধান! মৌলিক মেধা বিকশের জন্যে সমগ্র জীবনের উদ্বোধন নয়! সুচতুর বৃটিশ বুঝেছিল শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে প্রথমেই যদি জাতির মেরুদণ্ডটি ভেঙ্গে দেওয়া যায়, তবে সেই জাতিকে শতাব্দীব্যাপি বশংবদ করে রেখে শোষণ প্রক্রিয়াকে সুনিশ্চিত করা যায়! আর স্বাধীনতার নামে ভারতবর্ষে বৃটিশের তাঁবেদারদের হাতে শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমতা হস্তান্ততরের পর, স্বদেশী শোষককুল সেই একই শোষণ ব্যবস্থা জারি রাখার উদ্দেশ্য বৃটিশ প্রবর্তীত শিক্ষাব্যবস্থাকেই বজায় রাখল! আগে যেখানে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারখানায় বৃটিশভক্ত রাজকর্মচারী তৈরী হতো; এখন সেখানেই রাজনৈতিক দলীয় কর্মী তৈরীর ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেল!

স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল রাখার উদ্দেশ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ নেতাকর্মীর নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের প্রবাহ বজায় রাখার জন্যে শিক্ষাক্ষেত্রকেও রাজনীতির পরিমণ্ডলে নিয়ে আসা হল ছাত্ররাজনীতির নাম করে! ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করল! আর ছাত্ররাজনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকল রাজনৈতিক দলগুলির হাতে! ছাত্ররা ব্যবহৃত হতে থাকল দলীয় রাজনীতির স্বার্থে! শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য গৌন থেকে গৌনতর হতে থাকল! কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রাজনৈতিক দলেগুলির আখড়ায় পরিণত হল! শিক্ষাক্ষেত্রও হয়ে উঠল রাজনৈতিক দলগুলির অঞ্চল দখলের লড়াইয়ের ময়দান! নষ্ট হয়ে গেল স্কুলকলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের পরিবেশ! ছাত্র শিক্ষক সুসম্পর্ক!

শিক্ষাক্ষেত্রে এরফলে নেমে এসেছে এক চরম নৈরাজ্য! এবং সেটা কাঁটাতারের উভয় পাড়েই সত্য হয়ে উঠেছে! পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সরকারী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে পরস্পরের রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াইয়ের একটা বড়ো ময়দান হয়ে উঠেছে শিক্ষাক্ষেত্রগুলি! শিক্ষাঙ্গনের ছাত্ররাজনীতিতে তারই স্পষ্ট প্রভাব পড়ছে! আর পড়েছে বলেই বারবার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে মুক্ত চিন্তাশক্তি ও মৌলিক মেধা বিকাশের পথটি! ছাত্ররা হাফপ্যাণ্ট পড়া থেকেই দেশের বা রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির দলদাসে পরিণত হয়ে পড়ছে! তথাকথিত ছাত্ররাজনীতি ছাত্রছাত্রীদেরেই স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়িয়েছে! যেহেতু সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিরই স্বার্থ এক তাই এই অভিশাপ চলবে!

পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের চৌঁত্রিশ বছরের শাসন আমলে ছাত্ররাজনীতিকে ক্যাডার তৈরীর প্রক্রিয়া হিসেবে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়ছিল! এবং সাংগঠনিক দৃঢ়তায় ছাত্ররাজনীতিকে কার্যত বিরোধীশূন্য করে, বামফ্রন্টের একছত্র আধিপত্য রাজ্যে এক বিরোধীশূন্য গণতান্ত্রিক পরিসরের সংস্কৃতির পত্তন করেছিল! ছাত্র থেকে শিক্ষক, পঠনপাঠন থেকে কর্মসংস্কৃতি সর্বত্র বামরাজনীতির ছাত্রসংগঠনটি নিঃশ্ছিদ্র আধিপত্ত বিস্তার করেছিল! তাতে শিক্ষাবিস্তার হোক না হোক, রাজনৈতিক আধিপত্ত বিস্তারের কাজটি হয়ে ছিল নিখুঁত! পরিবর্ত্তনের কাণ্ডারীরা এইখান থেকেই ক্ষমতা দখলের সূত্রটি গ্রহণ করে!

পরিবর্ত্তনের কাণ্ডারীরা ক্ষমতায় এসেই রাতারাতি বাম আমলের চৌঁত্রিশ বছর ধরে গড়ে তোলা আধিপত্ত, দুদিনের মধ্যেই কায়েম করতে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সরাসরি পেশিশক্তির আস্ফালনের উপর নির্ভর করতে শুরু করল! যার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা দিতে থাকল বিভিন্ন কলেজে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে! অধ্যাপক অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই যে শিক্ষাক্ষেত্রের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এর জন্যে বর্তমান সরকারি দলের প্রত্যক্ষ মদত নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না! এবং এই প্রবণতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক কলেজ থেকে আর এক কলেজে! এক অঞ্চল থেকে আর এক অঞ্চলে!

এবং রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াইয়ে ব্যবহৃত পেশিশক্তিই সরাসরি ছাত্ররাজনীতির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারী দলের তাঁবেতে নিয়ে আসতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছে স্বাভাবিক পঠনপাঠনের পরিবেশ! সমস্ত রাজ্য জুড়ে এই যে পেশিশক্তির দাপটের আস্ফালন আছড়ে পড়ছে শিক্ষাঙ্গনের চত্বরে, অবশ্যই এর পেছনে সরকারী দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে! তারা ভাবছেন, বাম আমলের সাড়ে তিনদশকের রাজত্বের অন্যতম স্তম্ভ এই ছাত্ররাজনীতিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে তাদেরও দীর্ঘমেয়াদী সময়সীমায় শাসন ক্ষমতা দখলে রাখা সহজ সাধ্য হবে! তাই গণতন্ত্রের পরিসরে স্বৈরতন্ত্রের অভিলাষ চরিতার্থের এই প্রয়াস চলছে!

এই যে ক্ষমতা দখলের রাজনীতির অভিশপ্ত নাগপাশ গ্রাস করে ফেলেছে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে, এখানেই কপাল পুড়েছে বাংলা ও বাঙালির! পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ জুড়ে চিত্রটা মূলত একই রকম! এর পরিণতি ভবিষ্যতে যে ভয়াবহ সে কথা সহজেই অনুমেয়! যে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড স্বরূপ সেই শিক্ষাব্যবস্থার আগাগোড়া ঘূণে ধরে গেলে সে জাতির উন্নতি কোনোদিনও সম্ভব নয়! নয় বলেই উন্নত বিশ্বের জাতিগুলির শিক্ষাব্যবস্থা এই ঘূণ থেকে মুক্ত! সেসব দেশে শিক্ষাক্ষেত্র রাজনৈতিক কলুষতা মুক্ত! শিক্ষাক্ষেত্র সেখানে জাতির ভবিষ্যত সুনাগরিক গড়ে তোলার অঙ্গন! মৌলিক মেধা বিকাশের সুবিস্তৃত মুক্ত পরিসর! জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার পীঠস্থান!

সুচতুর বৃটিশের প্রবর্তীত শিক্ষাব্যবস্থা, ও তাদের তৈরী করে দেওয়া ভোট সর্বস্ব ক্ষমতালোভী গণতন্ত্রের যুগলবন্দীর ফল ফলেছে আজ কাঁটাতারের উভয় পাড়ের বাংলায়! সেই ফলেরই অভিশপ্ত ফসল এই ছাত্ররাজনীতি! সারা বাংলা জুড়ে আজ তাণ্ডব চালাচ্ছে! কিন্তু এই অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে গেলে সমাজ বিপ্লব ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই! যে রোগ সমাজদেহের ভিতরে শিকড় ছড়িয়েছে; সমাজদেহের গভীর থেকে তার মূলোৎপাটন করতে গেলে সমাজ সংস্কার করতে হবে আগাগোড়া! আর সেই সমাজসংস্কার সম্ভব একমাত্র সমাজ বিপ্লবের পথ ধরেই! এই অভিশপ্ত ছাত্ররাজনীতির কবল থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করতে না পারলে বাংলা ও বাঙালির ভবিষ্যত যে অন্ধকার সে কথা বিতর্কের উর্দ্ধেই!

শ্রীশুভ্র

যৌনতার পরিসর

নরনারীর যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলাপ আলোচনার চর্চার পরিসরটিই আমাদের সমাজে আজও গড়ে ওঠেনি। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরেই এই বিষয়টিকে আমরা সঙ্গপনে বহুজনের আড়ালে নিভৃত নিরালায় গুপ্ত রাখতেই অধিকতর স্বচ্ছন্দ। আর সেই নিভৃত গঙ্ডীর বাইরে বেড়িয়ে এড়লেই গেল গেল রবে আমরা কোলাহল করি সমাজ রসাতলে গেল বলে। কিন্তু কেন এই লুকোচুরি মানসিকতা? কেন এইভাবে অনিবার্য একটি প্রবৃত্তিকে সব কিছু থেকে আড়াল করতে হবে? শুধু তো অনিবার্যই নয়, বিশ্ব জগতের মূল চালিকা শক্তিইতো যৌন উদ্দীপনা। যেটা না থাকলেই সৃষ্টি হয়ে যেতো মরূভুমি। সেটা জেনেও জীবনের মূল বিষয়টিকেই সব কিছুর তলায় চাপা দিয়ে আড়াল করার এই মন মানসিকতাই কি সভ্যতার মূল আভিশাপ?

আধুনিক সভ্যতাকে বুঝতে হবে, যৌন প্রবৃত্তিকে যত বেশি করে দিনের আলো থেকে দূরে লুকিয়ে রাখা যায় তত বেশি করে একটি সুন্দর প্রবৃত্তি অসুন্দরের অভিমুখে বদলে যেতে থাকে। এখন আমাদের দেখতে হবে সেই অমঙ্গল থেকে আমরা নরনারীর যৌনতাকে রক্ষা করবো কি করে। আসলে নারী পুরুষের যৌনতাকে আমরা যখনই শুধু মাত্র সন্তান উৎপাদনের পদ্ধতি হিসাবে দেখি, তখনই বিষয়টি নিতান্তই জৈবিক একটি প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত হয়ে যায় শুধু। যে প্রক্রিয়া সকল জীবজগতের মূল বৈশিষ্ট। কিন্তু সেই মূল বৈশিষ্ট মানুষের ক্ষেত্রে এসে নতুন একটি পরিসর পেয়ে যায়। যে পরিসর জীবজগতের অন্যান্য প্রজাতির ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না কোন ভাবেই। যৌনতা যখন কেবলই সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়া, তখন যৌন সংসর্গের আগে পরে পরস্পর বিপরীত লিঙ্গের দুটি সত্ত্বা যে যেখানে যেমন ছিল, সেখানেই রয়ে যায়। তাদের মধ্যে সত্ত্বাগত কোন মিলনই সম্ভব হয় না। দুঃখের বিষয়, অধিকাংশ দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই একই সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। যেখানে রতিক্রিয়ার আগে পরেও যে যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে যায় সে। ঘটে না কোন সত্ত্বাগত মিলন। নিতান্তই জৈবিক একটি প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে নিয়মিত যৌন সংসর্গ।

আর এই ঘটনা সম্ভব হয় তখনই যখন যৌনতা কেবল শারীরীক একটি বাহ্যিক প্রক্রিয়ার নামান্তর। যার মূল উদ্দেশ্যই সন্তান উৎপাদন। জীবজগতে মানুষের বিবর্তন ঘটেছে সবচেয়ে পরে। আগের সকল পর্ব থেকে সকল দিক থেকেই এই বিবর্তন অভিনব সন্দেহ নাই। সেই বিবর্তনের প্রায় প্রতিটি ধারাতেই জীব জগতের অন্যান্য সকল প্রজাতির থেকেই মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে গিয়েছে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য। আর সেইটা হলো মানুষের অনুভব শক্তি। যা থেকে জন্ম নেয় উপলব্ধির দিগন্ত। যে দিগন্ত জন্ম দেয় বিশ্লেষণী শক্তির। আর এইখানেই প্রকৃতিতে মানুষই অভিনব। অনেকেই বলতে পারেন, অবশ্যই। আর ঠিক সেই কারণেই তো জীবজগতের সকল প্রজাতির ক্ষেত্রে যৌনতা দিনের আলোর মতো খোলামোলা হলেও মানুষের বেলায় তাকে নিভৃত নিরালায় একান্ত অনুভবে পেতে হয়। আর ঠিক সেই কারণেই যৌনতার চর্চাটি জ্ঞান বিজ্ঞান সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার মতো প্রকাশ্যে সংঘঠিত হওয়ার নয়। এইখানেই মানুষের বৈশিষ্ট। যা তাকে জীবজগতের সকল প্রজাতি থেকে উন্নত করে তুলেছে।

না বিষয়টি আবার ঠিক এইরকম একরৈখিকও নয়। নারী পুরুষের একান্ত ব্যক্তিগত রতিক্রিয়ার নিভৃত নিরালা নির্জন বাসরের প্রয়োজন নিয়ে বিতর্ক নেই। বিতর্ক আমাদের চিন্তা চেতনায় মন মননে জীবনের উদযাপনে যৌনতা নিয়ে যে রাখঢাক আড়াল অবডাল চাপা স্বরে আকারে ইঙ্গিতে ইশারার আয়োজন, সেইটির উপযোগিতা নিয়েই। যে বিষয়টি এমনই স্বতঃসিদ্ধ যে, সেটিকে এড়িয়ে চলার মানেই মরুভুমির চর্চা করা; সেই বিষয়টি নিয়েই এমন একটা ভাব করা যেন ওটিই সভ্যতার অন্তরায়। ওটিকে আড়ালে লুকিয়ে রাখলেই সমাজ সংসারের একমাত্র মঙ্গল।

বস্তুত নরনারীর যৌনতা নিয়ে চর্চার পরিসরটি যত বদ্ধ থাকবে ততই পারস্পরিক সম্পর্কের রসায়নটি দূর্বল হয়ে ওঠে। সেটাই স্বাভাবিক। যৌনতা চর্চার অভাবেই যৌন মিলনের মাধুর্য্য থেকে বঞ্চিত হয় অধিকাংশ মানুষ। একটি সম্পূর্ণ সত্ত্বাগত মিলন প্রক্রিয়া পর্যবসিত হয় শারীরীক মিলনে। এই যে শরীর সর্বস্বতা, এইখানেই মানুষ তার নিজস্ব বৈশিষ্ট হারিয় ফেলে নিতান্তই জৈবিক হয়ে ওঠে। আর সেইটা হয় যৌনতার সঠিক চর্চার পরিসরটিকে অবরুদ্ধ রাখার জন্যেই।

সেক্স ইন রিলেশনঃ মানসিকতার চরম অধ:পতন

ইদানিং যা শুনছি আর দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে, “সেক্স ইন রিলেশন” ব্যপারটা বেশ কমন হয়ে গেছে। এমনকি আমাদের তরুন সমাজের অনেকেই ব্যপারটাকে খুব স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছে, যেন রিলেশনে সেক্স হওয়াটাই কমন! মেয়েরাও সেসব ছেলেদের পেছনেই ঘুরছে যাদের টার্গেট হলো- খেয়ে ছেড়ে দেয়া। একদল মজা লুটছে, আরেকদল মজা নিচ্ছে।

ব্যপারটা ঘটে যাওয়ার পর, কমন ডায়ালগ হচ্ছে- “মানুষই তো ভুল করে”। ওয়েল, এটা মানতে আমার কোন দ্বিধা নেই যে মানুষ ভুল করে, এবং তওবা করে পবিত্র হওয়া যায়। আমার মূল কনসার্ন হলো- ভুল করা এক জিনিস, আর সেক্সের মত জঘণ্য কাজকে অপরাধ মনে না করে “রিলেশনে এরকম হতেই পারে”- এই মানসিকতা ধারন করাটা বিপরীত জিনিস। যখন স্ক্যান্ডাল বের হয় বা ব্রেকআপ হয়, তখনই কেন মনে হয় যে আপনি ভুল করেছেন! এর আগে বহুবার সেক্স করার পরও, কেন আপনার মনে অনুতাপ হলো না? কেন মনে হলো না যে, আপনি জঘণ্যতম পাপ করছেন!

মেজরিটি পার্সেন্ট তরুনরা যেকোন উপায়ে তার গার্লফ্রেন্ডকে ভোগ করতে চায়, ব্যপারটা ইদানিং অনেকটা প্রি-প্ল্যানড হয়ে গেছে। মেয়েরাও যেন নিজেকে বিলিয়ে দেবার অসুস্থ প্রতিযোগীতায় নেমেছে, তারা তাদের মাইন্ড সেটাপ করেই নিয়েছেঃ There is no difference between boyfriend and husband. তো হাজব্যান্ডের সাথে যা করা যায়, বয় ফ্রেন্ডের সাথেও তাই করা যায়!

একটা কথা বলি, ভুল করে থাকলে সেটা এখনই তওবা করে শুধরে ফেলুন। কিন্তু, রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের মত “রিলেশনে সেক্স হতেই পারে” বা “খেয়ে ছেড়ে দেবো” এই মানসিকতা পোষণ করে যেনায় লিপ্ত থাকবেন না। যে মেয়েটাকে আপনি খেয়ে ছেড়ে দিবেন, সে হয়তো কারো না কারো বোন; ঠিক একইভাবে আরেকটি ছেলেও যাকে খেয়ে ছেড়ে দিবে, সে হয়তো আপনার নিজেরই বোন! ইয়েস, মাইন্ড ইট!

———–
ফেসবুকে আমি।

শেখ মুজিব একটি নাম, একটি ইতিহাস

মানুষের যতগুলো অনুভূতি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে ভালবাসা । আর এই পৃথিবীতে যা কিছুকে ভালবাসা সম্ভব তার মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ভালোবাসাটুকু হওয়া উচিত মাতৃভূমির জন্য । যে মাতৃভূমিকে ভালবাসতে পারে না কোন কিছুকেই তার পক্ষে ভালবাসা সম্ভব না । আমাদের এই ছোট্ট সোনার বাংলাদেশ, যার রয়েছে বীরত্বপূর্ণ গৌরব গাঁথা ইতিহাস । আর এই সাফল্যগাঁথা ইতিহাসের পিছনে রয়েছেন কয়েকজন মহানায়ক।যাদের ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারবো না ।তাদের মধ্য অন্যতম হচ্ছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।যার জন্ম না হলে এই বাংলাদেশ হত না । যার জন্ম না হলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক কোন দেশের নাম থাকতো না । এই বাংলাদেশ, এই মায়ের সৃষ্টির জনক হচ্ছে আমাদের জাতীয় পিতা শেখ মুজিবুর রহমান । এই সুন্দর বাতাস, এই সুন্দর নদী, এই স্বাধীনতা যাকে ছাড়া সম্ভব ছিল না তিনি হলেন আমাদের জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । যার কথা আজো আমাদের বুক নাড়িয়ে দেয়, আমাদের বাহুতে শক্তি এনে দেয় তিনি হচ্ছে আমাদের পরম বন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।কিন্তু এই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে কিছু কিছু কুলাঙ্গার এই নেতার বিরুদ্ধে কথা বলে । জাতীয় পিতার গৌরব গাথা ইতিহাস ম্লান করে দিতে চায় । তার ইতিহাস মুছে দিতে চায় ।এই বাংলার মানুষ কি এতই নিমকহারাম যে মাত্র ৪৭ বছর আগের ইতিহাস ভুলে যাবে? জাতির পিতার মহান অবদান অস্বীকার করবে?

‘তবু তোমার বুকেই গুলির পর গুলি চালালো ওরা
তুমি কি তাই টলতে টলতে বাংলার ভবিষ্যৎকে
বুকে জড়িয়ে সিঁড়ির ওপর পড়ে গিয়েছিলে?’

১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের মর্মস্পর্শী দৃশ্যপট এভাবেই চিত্রায়িত হয়েছে কবিতায়। সেই রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট জাতি দু’দিন পর পালন করবে, শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আঁধার রাতের রূপকল্প কেবল কবিতায় নয়, গানের কলিতেও প্রকাশ পেয়েছে_ ‘সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল, ছিল না চাঁদ’। প্রবীণরা বলেন, সেই রাতে ঢাকার আকাশে কালো মেঘ ছিল, ছিল না বৃষ্টি, ছিল না আঁধার বিদীর্ণ করা নীল জ্যোৎস্না। শ্রাবণের আঁধারে ডুব দিয়েছিল বৃষ্টিহীন রুক্ষরাত। আর এই অমানিশার অন্ধকারে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। রাজধানীর আকাশে-বাতাসে তখনো ছড়ায়নি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ থেকে আজানের সুরেলা ধ্বনি। ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘোর কৃষ্ণপ্রহরে হায়েনার দল বেরিয়ে আসে। নিদ্রাচ্ছন্ন নগরীর নীরবতাকে ট্যাঙ্ক-মেশিনগানের গর্জনে ছিন্নভিন্ন করে ওরা সংহার করে তাঁকে_ ‘লোকটির নাম বাংলাদেশ। শেখ মুজিবুর রহমান।’স্বাধীনতার মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ‘তার মৃত্যু অমোচনীয় কলঙ্কের চির উদাহরণ কোনোভাবেই কাটবে না অমাবস্যার ঘোর কৃষ্ণপ্রহর কোনো কিছুতেই ঘটবে না এর অপরাধমোচন।’৪২ বছর আগে শেষ শ্রাবণের সেই মর্মন্তুদ দিনে বিশ্বাসঘাতকরা যাকে বিনাশ করতে চেয়েছিল সেই মুজিব মরেননি, বাঙালির হৃদয়-মননে অবিনাশী হয়ে রয়েছেন_

‘ওই তাকে দেখা যায়।
দেখা যায় ওই দিনের রৌদ্রে, রাতের পূর্ণিমায়।
মুজিব! মুজিব!

জনকের নাম এত সহজেই মোছা যায়!’বঙ্গবন্ধুর জলদগম্ভীর কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল তা বাঙালির শিরায় শিরায় এখনো শিহরণ তোলে। সেই আহ্বান বাক্সময় হয়ে আছে কবিতায়_

‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি শোনালেন তার অমর কবিতাখানি এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।’বাংলাদেশের হৃদয়সম এ মানুষটির অমরত্বের কথা_

‘সহসা দেখি আমার ছোট্ট ঘরখানির দীর্ঘ দেয়াল জুড়ে দাঁড়িয়ে আছেন শেখ মুজিব;/গায়ে বাংলাদেশের মাটির ছোপ লাগানো পাঞ্জাবি হাতে সেই অভ্যস্ত পুরনো পাইপ চোখে বাংলার জন্য সজল ব্যাকুলতা’

কাগজ ছিঁড়ে যায়, পাথর ক্ষয়ে যায়, কিন্তু হৃদয়ে লেখা নাম রয়ে যায়। সেই নাম শেখ মুজিব।ইতিহাসই তার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। ‘তার জন্ম একটি জাতির উন্মেষ, নতুন দেশের অভ্যুদয় তার মৃত্যু অমোচনীয় কলঙ্ক, এক করুণ ট্র্যাজেডি বঙ্গোপসাগর শোভিত ব-দ্বীপে জ্বলজ্বল তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।’ তিনি কোনো বিশেষ দলের নন, দল-মত নির্বিশেষে সমগ্র জাতির। তার মর্যাদা সর্বজনীন।

এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর-গিরি ও নদী
ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু, ফিরিয়া আসিতে যদি
হেরিতে এখনও মানব হৃদয়ে তোমার আসন পাতা
এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা-পিতা-বোন-ভ্রাতা।

—-‘ডাকিছে তোমারে / কবি সুফিয়া কামাল

যতকাল রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরী মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
—-কবি অন্নদাশংকর রায়
<

১৫ই আগষ্ট। জাতীর জন্য এক কলঙ্কময় দিন। জাতীয় শোক দিবস। ৪২ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই দিনে একদল বিপদগামী পাক হায়েনাদের প্রেতাত্মা তথা সেনাবাহিনীর একটি চক্রান্তকারী চক্র সপরিবারে হত্যা করে বাঙালী জাতীর জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, বাঙালী জাতীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ৪৭, ৫২, ৬৯, ৭০ সহ বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর দ্বার হতে বার বার ফিরে এসেছিলেন, ৭১-এ পাকিস্তানী হায়েনারা যা করতে পারে নাই, সেই কাজটিই অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে সম্পাদন করে পাপিষ্ঠ ঘাতকরা। ওরা মানুষ নামের হায়েনার দল, ওরা শয়তানের প্রেতাত্মা। ওরা জঘন্য। ওরা বিপদগামী হিংস্র জানোয়ারের দল।একদিন যে অঙ্গুলী উচিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” সেই স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর অঙ্গুলি চিরদিনের জন্য নিস্তেজ করে দেয় ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক সেই বাড়িতে। আর কোনদিন ঐ অঙ্গুলি আমাদেরকে প্রেরণা দিতে আসবেনা, দিবেনা মুক্তির বারতা। তবে একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে তিনি মৃত্যুহীন। প্রাণী হিসেবে মানুষ মরণশীল বলে সবারই একটি মৃত্যুদিন থাকে। তবে কোনো কোনো মানুষের শুধু দেহাবসানই ঘটে, মৃত্যু হয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যিনি আমাদের জাতীর পিতা, তার কি মৃত্যু হতে পারে ? না তিনি মৃত্যুহীন। চির অমর।

১৫ আগষ্টের প্রেতাত্মা ও তাদের দোসররা আজও সক্রিয়। আজ ২০১৭ সালের ১৫ আগষ্ট। জাতীর জনকের কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী। তিনি ও তার পুরো পরিবার এখনও সেই ১৫ আগষ্টের প্রেতাত্মা ও দোসরদের কাছ থেকে নিয়মিত হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা করে ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের নায়কদের উত্তরসুরিরা তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে। এভাবে কয়েকবার তারা বোমা হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।গুলশানে জঙ্গী হামলা, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলা করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে তৎপর এখনও পচাত্তরের খুনিরা। আজ তারা সংবিধান সংশোধন করা নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আর একটি ১৫ আগষ্টেরও হুমকি দিয়েছে। তাহলে সত্যিই শেখ হাসিনাকে বা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও ঐ ১৫ আগষ্টের মত নির্মম হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ? আমরা কি দেশে আর একটি ১৫ আগষ্ট চাই বা কামনা করি ? জাতির বিবেক কী বলে ?
************
হামিদুর রহমান পলাশ
সাবেক সহসভাপতি, দোহার থানা ও ঢাকা জেলা ছাত্রলীগ।
যুগ্ন আহ্ববায়ক, দোহার পৌরসভা কৃষকলীগ।

তথ্যসূত্র :
সাইফুজ্জামান খালেদ-চতুর্মাত্রীক, দাদা ভাই ও জাহাঙ্গীর আলম- সামু, উইকি পিডিয়া, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা-আবুল হোসেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ-প্রথম আলো।

কিছু মােটিভেশনাল কথা

*👉“ আমি ব্যর্থতা কে মেনে নিতে পারি কিন্তু আমি চেষ্টা না করাকে মেনে নিতে পারিনা॥* ” –—মাইকেল জর্ডান।

*👉“ যে নিজেকে অক্ষম ভাবে, তাকে কেউ সাহায্য করতে পারে না॥* ” –—জন এন্ডারসন।

*👉“ আমি বলবনা আমি ১০০০ বার হেরেছি, আমি বলবো যে আমি হারার ১০০০ টি কারণ বের করেছি॥ ”*
—টমাস আলভা এডিসন।

*👉সফলতা সুখের চাবিকাঠি নয় বরং সুখ হল সফলতার চাবিকাঠি। আপনার কাজকে যদি আপনি মনে প্রানে ভালবাসতে পারেন অর্থাৎ যদি আপনি নিজের কাজ নিয়ে সুখী হন তবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন॥* __মাইকেল জর্ডান

*👉সংগ্রহে…………*
*👉হাফেজ মাসউদ*

*🌹Thank You🌹*

কাজের প্রতি ভালবাসা

পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকলে হলে ছোট হোক অথবা বড় হোক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার কাজ করে থাকি। চাই সেটি অফিস হোক অথবা আদালত অথবা নিজের ব্যক্তি জীবনের নানান রকম কাজ। কিন্তু মাঝে মধ্যেই আমাদেরকে অলসতা জড়িতে ধরে। ভুলে যাচ্ছি কাজের প্রতি ভালবাসা। ভুলে যাচ্ছি নিজের জীবন প্রতিষ্ঠার সঠিক লক্ষ্য।

কিন্তু, তা হবে কেন?

প্রত্যেকটি কাজকে যদি আমরা ছোট মনে না করে ভালবাসা দিয়ে আলিঙ্গন করতে পারি। তবেই তো আমরা কামিয়াবি।

………………..
হাফেজ মাসউদ

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপারে বলন কাঁইজির ভবিষ্যদ্বাণী

(Bolon Kaiji’s prediction about the Third World War)

বলন কাঁইজির ভবিষ্যদ্বাণী (The prophecies of Bolon Kaiji)
বলন কাঁইজি গত ২০০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে ১০টি ভবিষ্যদ্বাণী করেন। অতঃপর; তাঁর জ্ঞানশিষ্যগণ তা লেখে রাখেন। গত ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর জ্ঞানশিষ্যদের উদ্যোগে কাঁইজির গ্রন্থিত প্রায় ৫০০ বলন সংকলিত হয়। অতঃপর; উক্ত বলন হতে ৩১৩ বলন সংকলন করে ‘বলন তত্ত্বাবলী’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ঐ গ্রন্থের ২৮ পৃষ্ঠায় ‘বলন কাঁইজির ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ’ উপশিরোনামে নিচের এই ভবিষ্যদ্বাণীটি ছাপা হয়। এটি এক নং ভবিষ্যদ্বাণী।

পরবর্তীকালে কাঁইজির আরেক জ্ঞানশিষ্য নাগর কাঁইজি (ছিদ্দিক কাঁইজি) ‘বলন কাঁইজির সংক্ষিপ্ত জীবনী’ গ্রন্থ নির্মাণ করেন। এই গ্রন্থটি এখনও প্রকাশিত হয় নি। এই গ্রন্থেও কাঁইজির ভবিষ্যদ্বাণীগুলো স্থান পেয়েছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিষয়ক জ্ঞানার্জনে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে বলে আমরা আশা করি।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ (The third world war)
মানুষের নিকট এমন এক সময় অতিক্রম করবে; যখন বিশ্ব দুই বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এক পক্ষে থাকবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য দল এবং অপর পক্ষে থাকবে বৃহৎ শক্তিশালী মাত্র ২টি দল। উক্ত দল দুটির প্রধান লক্ষণ হলো; তাদের এক দলের বসন হবে সাদা এবং অপর দলের বসন হবে কালো। তারা অভেদ্য দূর্গের মধ্যে কঠিনভাবে অবস্থান করবে। বর্তমান বিজ্ঞানের নির্মাণ কোন যন্ত্রই তাদের গোপন দূর্গের সন্ধান করতে পারবে না। তারা সেখান থেকে স্বয়ংকৃত অস্ত্রের সাহায্যে তুমুল যুদ্ধ করবে এবং সারা বিশ্বে অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘঠিত করবে। এ যুদ্ধে নিরপেক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলোও বাঁচতে পারবে না। উক্ত দল দু’টি গোপনে গোপনে এত শক্তি অর্জন করে বসে থাকবে যে; বিশ্ববাসী তা টের করতেও পারবে না। এ যুদ্ধে এমন সব আধুনিক মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে; যা পূর্বে একবার হয়েছিল। তবে; পূর্বে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির চেয়ে অনেক শক্তিসম্পন্ন যন্ত্রাংশ এ যুদ্ধে ব্যবহৃত হবে।

দেশ দু’টি ১০ ধাতু যোগে দূরপাল্লার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এমন সব বিমান নির্মাণ করবে; যা নাকি একবার মাত্র ব্যবহার হবে। বিমানগুলো মৌমাছির মত ঝাঁকে ঝাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা নির্ভুলভাবে অভিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে। তারা যেখানে আঘাত হানবে; তা চিরতরে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। সাথে সাথে বিমানটিও বিধ্বস্ত হবে। যেখান হতে যেটিকে পাঠান হবে; তা আর কোনদিন দূর্গে ফিরিয়ে আনা হবে না। যেমন; তীরন্দাজ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত তীর একবার ছুড়ে দিলে আর ফিরে আসে না। আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক শক্তিশালী যন্ত্রও সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিমানগুলোকে প্রতিহত করতে পারবে না। বিশ্বের সব বিজ্ঞানী একত্র হয়েও উক্ত দেশ দু’টির গোপন দূর্গগুলো চিহিৃত ও ধ্বংস করতে পারবে না। অথচ; দূর্গগুলো থাকবে তাদের দূর্গের সামনেই। এমনভাবে; দুর্ভেদ্য ভাসমান দূর্গ তারা নির্মাণ করবে; যা সহজে স্থানান্তর করা যাবে। যেখান থেকে যুদ্ধ করা হবে; তা চিহিৃত হলেই তারা তা জানতে পারবে। শত্রুপক্ষ আক্রমণ পরিচালনা করার পূর্বেই তারা উক্ত ভাসমান দূর্গগুলো অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিবে। তাদের এ অভিনব যুদ্ধ কৌশল দেখে সেদিন সারা বিশ্ববাসী হতবাক ও বিস্মিত হবে। তাদেরকে লক্ষ্য করে যেসব অস্ত্রাদি নিক্ষেপ করা হবে; তাতে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উক্ত দেশ ২টির তেমন কোন ক্ষতিই হবে না।

অবস্থান (Location)
উক্ত দেশ দু’টির অবস্থান হবে ভূভাগের মধ্য ভাগের পশ্চিমে। দেশ দু’টি খনিজ সম্পদ ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে অত্যন্ত অগ্রসর হবে। তারা নৈতিক আচরণেও বিশ্বের সেরা হবে। যুদ্ধোত্তর ৩ দশকে তারা নিজেরাই ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।

সূচনা (Start)
সামান্য একটি ভূখণ্ডের পুনরুদ্ধারকে কেন্দ্র করে এ ধ্বংসশীল মহাযুদ্ধের সূচনা হবে। যুদ্ধটি এমন সময় আরম্ভ হবে; যখন উক্ত দেশ দু’টি ব্যতীত সারা বিশ্ববাসী একজনকে বিশ্ববরেণ্য ও মহাশক্তিশালী নেতা রূপে গ্রহণ করবে।

স্থায়িত্বকাল (Stability)
মহাধ্বংসশীল এ যুদ্ধটি নয় মাস স্থায়ী হবে।

ক্ষয়ক্ষতি (Damage)
মরণঘাতি এ মহাযুদ্ধে বিশ্বের তিন ভাগের দুই ভাগ লোকই মারা যাবে। সর্ব প্রকার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বিকল হবে। আধুনিকতা বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এমনকি; মাত্র ২৮ মাইল দূরে কোন সংবাদ পাঠাতে পুরো একদিন সময় লাগবে। কিন্তু উক্ত যুদ্ধবাজ দেশ দুটির তেমন কোন ক্ষতি হবে না।

সূচনাকাল (Start time)
যে মাসের ৩ তারিখ শনিবার হবে; সে দিনই যুদ্ধ আরম্ভ হবে। তা যে কোন সময় হতে পারে।

আত্মরক্ষার উপায় (Bulwark)
যদিও; আত্মরক্ষার কোন উপায় থাকবে না। তবুও; একমাত্র কুকুর প্রিয় লোকগণ আত্মরক্ষা পাবে। বেঁচে যাওয়া অধিকাংশ পুরুষ তাদের পুরুষত্ব হারিয়ে নারীত্ব বরণ করবে। রাস্তাঘাটে নারীদের একচেটিয়া উপদ্রপ হবে। নারীরা যত্রতত্র সমর-সংগ্রাম সৃষ্টি করবে। চিকিৎসাবিদ্যা প্রায় বিলুপ্ত হবে। চিকিৎসার অভাবে অবশিষ্ট লোকের অধিকাংশই মারা যাবে।

সূত্রতথ্য;
বলন তত্ত্বাবলী;
লেখকঃ বলন কাঁইজি
আনন্দ পাবলিশার্স; ৩৮/৪ক, বাংলাবাজার, ঢাকা- ১১০০
প্রকাশকাল; ২৯ ফাল্গুন, ১৪১৪ বঙ্গাব্দ; ১২ মার্চ, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ।

বলন কাঁইজির জীবনী; লেখকঃ নাগর কাঁইজি (ছিদ্দিক কাঁইজি)

ভারতীয় হিন্দী সিরিয়ালঃ ধ্বংসের পথে বাংলার সমাজ-সংস্কৃতি

ভারতীয় হিন্দি সিরিয়াল বর্তমানে বাংলাদেশে একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। হিন্দি সিরিয়ালের শিক্ষনীয় কোন বিষয় না থাকলেও এর দর্শক দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাবারের মতো টেনে-হিঁচড়ে এসব সিরিয়াল এমনভাবে লম্বা করা হয় যে, এর শেষ পর্ব কবে প্রচারিত হবে তা কেউ যেমন জানে না তেমনি আন্দাজও করতে পারে না।

শুরুর কথাঃ গণমাধ্যম হিসেবে আমাদের দেশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। তখন বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিল। শুরু থেকে অদ্যাবধি এ চ্যানেলটি এককভাবে সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। বিধায় এই চ্যানেলটি জনগণকে পরিপূর্ণ বিনোদন দিতে পারেনি। আর তাই জনগণও বিনোদনের অন্য বিকল্প উপায় না পেয়ে হিন্দি সিরিয়ালের দিকে ঝুঁকতে থাকে। ১৯৯৬ সালের দিকে বাংলাদেশে হিন্দি চ্যানেল বলতে শুধু সনি আর জিটিভি কে বুঝাতো। বর্তমানে ত্রিশোর্ধ ভারতীয় হিন্দি ও বাংলা চ্যানেল এবং ভারত কর্তৃক সম্প্রচার সত্বাধিকারপ্রাপ্ত কিছু ক্রীড়া, প্রাণীজগৎ, সৌরজগৎ ও ধর্ম বিষয়ক চ্যানেল সহ প্রায় শতাধিক চ্যানেলে অনুষ্ঠান সার্বক্ষণিক সম্প্রচারিত হচ্ছে। আমাদের দেশে হিন্দি সিরিয়ালের যাত্রা শুরু হয় মূলত স্টার প্লাসে সম্প্রচারিত ‘সাসভি কাভি বাহু থি’ সিরিয়ালের মাধ্যমে। সিরিয়ালটি অল্পদিনেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর ‘কাহানী ঘার ঘার কি’, ‘কাসেটি জিন্দেগী কি’, ‘শশুড়াল গেন্দা ফুল’, রিসতা ক্যা কেহরাহে, সাথ নিভানা সাথিয়া, কুম কুম ইত্যাদি সিরিয়ালগুলো দেশের বিশেষ করে মহিলাদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মহিলাদের নিকট এসব হিন্দি সিরিয়াল জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ হলো, গৃহবধূদের সময় কাটানোর একটি চমৎকার উপায়। সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হয়ে একটানা রাত বারটা পযর্ন্ত সম্প্রচার করা হয়। আবার পরের দিনেই সারাদিন ব্যাপি তার পুনঃপ্রচার করা হয়। ফলে মহিলাদের সময়গুলো খুব স্বচ্ছন্দেই কেটে যায়। কিন্তু নির্মম সত্যি হলো এসব হিন্দি সিরিয়াল মানুষের স্বাভাবিক জীবনে প্রচুর প্রভাব ফেলছে। ইতিবাচক দিকটির চেয়ে নেতিবাচক দিকটি ফুটে উঠছে সবচেয়ে বেশি।

হিন্দি সিরিয়ালের খারাপ দিকগুলোঃ হিন্দি সিরিয়ালের মধ্যে যে সব ম্যাসেজ বা বার্তা থাকে তা একটি পরিবার তথা সমাজ কে ধ্বংস করে দিতে যথেষ্ট। হিন্দি সিরিয়াল দেখার ফলে সমাজ থেকে যেমন সামাজিক মূল্যবোধ উঠে যাচ্ছে তেমনি সামাজিক, মানসিক সবক্ষেত্রেই দেখা দিচ্ছে অস্থিরতা। অনৈতিক ও ঘৃণ্য অশ্লীলতা ছাড়া শিক্ষণীয় তেমন কিছুই পাওয়া যায় না বলেই এমনটি হচ্ছে। ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালে যে সব দৃশ্য সচরাচর দেখতে পাওয়া তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-অসম প্রেম, স্বামী-স্ত্রীর পরকীয়া, পারিবারিক ভাঙ্গন, বহু বিবাহ, বউ-শ্বাশুড়ীর ঝগড়া, সম্পত্তির কারণে ভাই-ভাই ঝগড়া, স্ত্রীর কূটনৈতিক চাল, ভুল বোঝাবুঝি, হিংসা, সন্দেহ, অশ্লীলতা, আত্মীয়দের ছোট করা, অন্যকে বিপদে ফেলা, চুরি শিক্ষা, অপরাধ শিক্ষা এসব বিষয়ই হিন্দি সিরিয়ালের মূল বিষয়বস্তু।

ছেলে-মেয়েদের ওপর হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাবঃ কোন কোন পরিবারে দেখা যায় মা-বাবার সাথে পরিবারের ছোট শিশুটিও হিন্দি সিরিয়াল দেখতে টিভির সামনে বসে গেছে। এর ফলে বাবা-মারা জানতেই পারে না যে শিশুটির মানসিক বিকৃতি ঘটছে। মাঝে মধ্যে এমনও দেখা যায় যে, এসব পরিবারের কর্তারা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর পর্যাপ্ত সময় না পেলেও তাদের কে নিয়েই হিন্দি সিরিয়াল দেখতে বসে যান। ফলে ছোটবেলা থেকেই এসব শিশু পরিচিত হচ্ছে অপসংষ্কৃতির সাথে। অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের পড়ার খবরটি ঠিক মতো না জানলেও হিন্দি সিরিয়ালের চরিত্র ও সময়সূচী ঠিকই জানে। এভাবে মা-বাবারাই মূলত তাদের অজান্তেই আদরের বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের পথে বড় বাঁধা তৈরি করে চলেছেন দিনের পর দিন। শিশুর অকালে নষ্ট হওয়ার জন্য এসমস্ত রুচিহীন ও নির্বোধ বাবা-মায়েরাই দায়ী হবেন।

সমাজ ও নিজস্ব সংষ্কৃতির উপর প্রভাবঃ বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচারিত হওয়া অনুষ্ঠানমালার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বিভিন্ন নামে প্রচার হওয়া টিভি সিরিয়ালগুলো। এসব সিরিয়ালের দাপটে বাংলার নিজস্ব সংষ্কৃতি ও ঐতিহ্য আজ হুমকীর সম্মুখীন। একটা সময় ছিল যখন সন্ধ্যা নামলেই পরিবার-পরিজন সবাই একত্রে বসে গল্প-গুজব করে সময় কাটাতো। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। সন্ধ্যার পরেই হিন্দি সিরিয়াল দেখে মানুষ শিখছে কিভাবে শাশুড়ী তার বউকে কিংবা বউ তার শাশুড়ী শায়েস্তা করতে পারে, কেমন করে অন্য পরিবারের ক্ষতি করা যায় তার ফন্দি আঁটে। এমনকি সমাজে পরকীয়ার মতো ঘটনাও বেড়ে চলছে রুচিহীন এই হিন্দি সিরিয়ালের কারণে। হিন্দি সিরিয়ালগুলোতে দেখানো হয় জৌলুসপূর্ণা পরিবেশ, চাকচিক্যময় জীবন ব্যবস্থা, দামী গাড়ী, বাড়ী, শাড়ী গয়না যা আমাদের দেশের তরুণদেরকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে। আমাদের ধর্ম, মূল্যবোধ, পরিবার, সমাজ এসব সর্মাথন না করলেও আমরা তা দেখছি। আমরা আমাদের নিজস্ব সংষ্কৃতি পায়ে দলিত করে ভারতীয় সংষ্কৃতির ওপর আজ দাঁড়িয়ে আছি। হিন্দি সিরিয়ালের ভয়াল থাবায় আমাদের সমাজ-সংষ্কৃতি আজ ক্ষত-বিক্ষত। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও এর প্রভাবে আজকাল হিন্দিতে কথা বলছে। ঈদ-বা পূজার অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা তাদের ওপর ধীরে ধীরে যেন নির্ভশীল হয়ে পড়তেছি। কেননা এখন ঈদ বা পূজা এলেই বাজারে বিভিন্ন হিন্দি সিরিয়ালের নামানুসারে কিংবা নায়িক/মডেলের নামানুসারে কাপড় কিনতে পাওয়া যায়। মাসাক্কালি, ঝিলিক, আশকারা, খুশি নামের পোশাকগুলো ঈদের সময় হলেই বাজার দখল করে নেয়। আকাশ ছোঁয়া এসব দামী পোশাকগুলো কিনতে বসন্ধুরা সিটিসহ গুলশান, বারিধারা, উত্তরার মতো অভিজাত পাড়ার দোকানগুলোয় ভীড় লেগে থাকে। আবার কিছু কিছু দোকানও ইদানিং হিন্দি সিরিয়ালের নামে নামকরণ করা হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

অথর্নৈতিক ক্ষতিঃ হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাবে আমরা সাংষ্কৃতিক ভাবে যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তেমনি অর্থনৈতিক ভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের দেশে ভারতের যে সব চ্যানেল সম্প্রচারিত হয় আমাদের কে সেগুলো পয়সা দিয়ে কিনে দেখতে হয়। এজন্য প্রতি বছর দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ভারতকে দিতে হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের দেশীয় কোন চ্যানেল চালুর অনুমতি দিচ্ছে না ভারত। বিপুল দর্শক চাহিদা থাকা সত্বেও পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠী আমাদের দেশ হতে সম্প্রচারিত টেলিভিশনের অনুষ্ঠানসমূহ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। আমরা তাদের হিন্দি সিরিয়াল দেখার পাশাপাশি তাদের পণ্যের সাথে পরিচিত হচ্ছি। এর ফলে তাদের পন্যের যেমন প্রচার ও প্রসার হচ্ছে আমাদের দেশের সেটা হচ্ছে না। নিজ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি করে কেন তাহলে আমরা হিন্দি চ্যানেল দেখতে যাব।

দায় এড়াতে পারে না দেশের মিডিয়াঃ হিন্দি সিরিয়ালের দর্শক প্রধানত আমাদের দেশের নিম্নবিত্ত বস্তিবাসী ও শ্রমিকশ্রেণী, পোশাক শ্রমিক, উগ্র মানসিকতা সম্পন্ন যুবসমাজ এবং একই মানসিকতার কিছু উচ্চবিত্ত। তাদের নিকট এসব সিরিয়াল ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে মূলত মিডিয়ার প্রচার। মিডিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে নিজ দেশের সংষ্কৃতি-সভ্যতা, কৃষ্টি ও নিজস্ব মূল্যবোধ প্রচারের মাধ্যমে তাদের দায়িত্বশীলতা জনতার সামনে ফুটিয়ে তোলা। কিন্তু সেই সৎ সাহস আজও আমাদের দেশের পত্রিকা অর্জন করতে পারেনি বলেই মনে হয়। প্রতিটা পত্রিকায় ‘বিনোদন’ বা ‘লাইফ স্টাইল’ নামে একটা আলাদা পাতা থাকে। যেখানে দেশের শিল্প ও সংষ্কৃতির সংবাদ পাওয়া যায়। কিন্তু এসব পত্রিকার বিনোদন পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে আধুনিকতার নামে মেয়েদের টপস্ আর জিন্স প্যান্ট, স্লিভলেস ড্রেস পরার ছবি, ছেলেদের চুল থেকে পা পর্যন্ত উদ্ভট সাজ। যা আমাদের সমাজ-সংষ্কৃতির সাথে যায় না। এসব পত্রিকার সম্পাদকেরা একবারও দেশের সংষ্কৃতির কথা ভাবেন না। ভাবেন শুধু নিজ পত্রিকার কাটতির কথা। কিছুদিন আগেই দেশের নামকরা একটা জাতীয় দৈনিকের বিনোদন পাতায় দেখলাম ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের সংবাদ। কখন, কোন চ্যানেলে প্রচারিত তার ছবি সহ সময়সূচী দেয়া হয়েছে। অথচ এই পত্রিকাগুলোকেই বলা হয় সমাজের দর্পণ। তারা যেভাবে সমাজকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরবে সেভাবে জনতা সেটা মনেপ্রাণে গেঁথে নিবে, বিশ্বাস করবে। তাই পত্রিকাগুলোর কাছে বিশেষ দাবী আপনারা হিন্দি সিরিয়ালের সংবাদ প্রচার না করে নিজ দেশের সংষ্কৃতি-সভ্যতা, কৃষ্টি ও নিজস্ব মূল্যবোধের সংবাদ বেশি করে প্রচার করুন।

হিন্দি সিরিয়াল বন্ধে আমাদের করণীয়ঃ আমাদের জীবন-যাপনের সাথে হিন্দি সিরিয়ালগুলোর মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। হিন্দি সিরিয়াল এমনই একটি বিনোদন মাধ্যম যেখান থেকে আপনি নতুন কিছু শিখতে পারবেন না। এই সিরিয়ালগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল্যবোধ পাল্টে দিচ্ছে, রুচির বিকৃতি ঘটাচ্ছে মানুষের। আজ আমরা আমাদের বাঙ্গালীয়ানা ভুলে গিয়ে লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করছি তাদের দেখে। ‘শাড়িতে বাংলার নারী’ এই কথা ভুলে গিয়ে শাড়ি পরার নতুন ধরন শিখছি তাদের দেখাদেখি। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার শাড়ী তো দূরে থাক টপস্ আর প্যান্ট পরেই রাস্তায় চলাচল করছে মেয়েরা। আমরা কেন পোশাক পরি তার সংজ্ঞাই হয়তো পরিবর্তন করে দিচ্ছে এই হিন্দি সিরিয়ালগুলো। বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা ঘরের ভিতর যেমন বন্দি হয়ে থাকতে চাই না তেমনি চাই না অপসংস্কৃতির দুর্গন্ধ আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়ুক। ভারতীয় চ্যানেল, সিনেমার অবাধ বিচরণ আমাদের দেশে। আর তাই ইচ্ছে করলেও এই অবাধ বিচরণ থামাতে পারবো না। আমাদের সবকিছু্র সানিদ্ধ্যে আসতে হয়। কিন্তু এখান থেকেই আমাদের বুদ্ধি-বিবেক আর শক্তি দিয়ে খারাপ সংষ্কতি বর্জন করতে হবে। আমরা বাঙ্গালী। আর বাঙ্গালীদের রয়েছে গর্ব করার মতো হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংষ্কতি। আমাদের সাহিত্য-সংষ্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। তাই এ সমৃদ্ধ সংষ্কৃতির চর্চা করলে, বাংলা নাটক, সিনেমা, যাত্রাপালা দেখলে নিঃসন্দেহে কমে আসবে হিন্দি সিরিয়াল দেখার প্রবণতা। হিন্দি সিরিয়ালের এই অপসংষ্কৃতি রোধ করতে সরকারকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি তরুণদেরকেও এই সংষ্কৃতির ওপর কুঠারাঘাত করতে হবে।

(নিবন্ধটি প্রিয়.কম এ ২৩ মার্চ ২০১৪তে প্রকাশিত হয়েছিল)