বিভাগের আর্কাইভঃ দেশ

রোহিঙ্গারা আধিপত্য বিস্তার করবে- সেদিন বেশি দূরে নয়

গত দুইবছর আগে মিয়ানমার রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গারা যখন সেদেশের নিরাপত্তার উপর হামলা করেছিল, তখন এর পাল্টা জবাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীও রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু করে দিলো। ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করলো। এভাবে পালাক্রমে দলেদলে আসতে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখেরও বেশি। যা আমাদের ছোট্ট একটা দেশের জন্য বিরাট একটা বোঝা। আমাদের মাথায় ঋণের বোঝা থাকলেও আমরা কিন্তু অতিথিপরায়ণ। আমাদের মানবতা একটু বেশি। কারোর দুঃখ দেখলে আমাদের দরদ উথলে পড়ে। কারণ মানবতার দিক দিয়ে আমরা পৃথিবীতে সেরা, তাই। আমাদের আরকিছু না থাকুক, কিন্তু মানবতা আছে।

এই মানবতার কথা ভেবে একসময় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুতুপালং গেলেন। নিজের চোখে রোহিঙ্গাদের সমস্যা দেখলেন। রোহিঙ্গাদের সমস্যা দেখে কাঁদলেন। সমাবেশে আমাদের দয়াময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বুকে টেনে নিয়ে বলেছিলেন, “আমরা ষোল কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে আরও লাখ দশেক রোহিঙ্গাকে আমরা খাওয়াতে পারব।” দয়াময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর সারাবিশ্ব থেকে পেলো বাহাবাহা। রোহিঙ্গারা পেলো বেঁচে থাকার আশ্বাস। শুরু হলো মানবতার মহামানবদের প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ। অংশগ্রহণের মূল লক্ষ্য ছিল অসহায় রোহিঙ্গাদের সাহায্য করা।

সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন আমাদের দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। এগিয়ে গেলেন বিভিন্ন মানবতার সংঘটন। সবাই নিজ নিজ সাধ্যমতো বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কুতুপালঙের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। দেশের অনেক মসজিদে মসজিদে শরনার্থী রোহিঙ্গাদের জন্য চাঁদা উঠাতে শুরু করলেন। কেউ টাকা, কেউ পয়সা, কেউ জামাকাপড়, কেউ খাবার, কেউ বাসনপত্র সাহায্য হিসেবে দিতে শুরু করলেন। সেসব ত্রাণসামগ্রী ট্রাকে ভরে ভরে কুতুপালং নিয়ে রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছিল।

সেসময় এমনও দেখেছি, নিজের প্রতিষ্ঠানের গরিব দুঃখীদের দুই টাকা সাহায্য সহযোগিতা করে না, সেসব মালিকরা দশ থেকে পনেরো দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট বানিয়েছে। সেসব প্যাকেটে ছিল চিড়ামুড়ি, দুধ, চিনি, মিঠাই, পাউরুটি, চালডাল, তেল, লবণ, লুঙ্গি, গেঞ্জি-সহ আরও অনেককিছু। অথচ নিজের প্রতিষ্ঠানেই খেয়ে-না-খেয়ে যাঁরা চাকরি করে, তাঁদের জন্য একটি প্যাকেটও জুটেনি।

সেই প্যাকেট ট্রাকে ভরে সামনে “রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে ত্রাণসামগ্রী” লেখা ব্যানার টাঙিয়ে নিয়ে গেলেন রোহিঙ্গাদের জন্য। দিলেন তাঁদের। রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে গেলেন বিভিন্ন এনজিও সংস্থা-সহ মানবাধিকার সংস্থাও। আসলেন বিদেশিরাও। আসলেন নোবেলজয়ী কয়েকজন সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ। সরকার জায়গা দিলেন। দিলেন বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি। বানিয়ে দিলেন থাকার ঘরদোর। রোহিঙ্গাদের দেখভাল ও নিরাপত্তার জন্য দিলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনছার-সহ শতশত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দিলেন এইজন্য যে, তাঁরা রোহিঙ্গারা নিরুপায় অসহায় বলে। সরকারের উদারতায় বাংলার প্রতিটি মানুষও সেসময় খুশি ছিলেন। বাংলার মানুষ ভেবেছিল ওঁরা আর থাকবেই বা ক’দিন? থাকুক! কিন্তু এই থাকা যে চিরস্থায়ী থাকা হবে, তা বাংলার খুব কম মানুষেই জানতো। বেশিরভাগ মানুষেই জানতো তাঁরা অসহায়। কিন্তু এখন আর রোহিঙ্গাদের মাঝে অসহায় বলতে কেউ নেই। রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের চেয়েও ভালো অবস্থায় আছে। বিশেষ করে কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালং সহ এর আশপাশের স্থানীয় মানুষের চেয়ে খুবই ভালো আছে।

তাই এখন আর বাংলার মানুষ কেউ রোহিঙ্গাদের জন্য ভাবে না। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যায় না। মসজিদে মসজিদে রোহিঙ্গাদের জন্য চাঁদা ওঠায় না। অনেকে রোহিঙ্গাদের নামও শুনতে চায় না। রোহিঙ্গা নামটি এখন এদেশের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। গণমানুষের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের নাম। ভবিষ্যৎ বিপদের নাম এখন রোহিঙ্গা। তাই বলে রোহিঙ্গাদের কিছুই আসে যায় না। ওঁরা রোহিঙ্গারা এখন এদেশের কাউকে তোয়াক্কা আর জমা-খরচের হিসাব-নিকাশও দেয় না। ওঁরা রোহিঙ্গারা চলছে ওঁদের নিজের মত করে স্বাধীনভাবে।

তাঁদের এখন মানুষের দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর প্রয়োজন হয় না। লাগেও না। তাঁদের ঘরদোর আছে। টাকাপয়সা আছে। কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালঙের স্থানীয় বাসিন্দাদের যা না আছে, রোহিঙ্গাদের তা আছে। থাকে শুধু সরকারি শরনার্থী শিবিরে। তাতে দোষের কিছুই নেই। এই শরনার্থী শিবিরে থেকে ওঁরা রোহিঙ্গারা বিদেশ যাবার পাসপোর্টও সংগ্রহ করছে। বিদেশেও যেতে পারছে। চুরি ডাকাতি ছিনতাই খুনখারাপি সবই করতে পারছে। খুন তো সময় সময় করেও থাকে। ওঁদের এখন অনেক শক্তি। ওঁদের অত্যাচারে স্থানীয় বাসিন্দা সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

রোহিঙ্গারা গতবছরও বেঁচে থাকার আকুতি-মিনতি করেছিল। আজ ওঁরা স্থানীয় নেতাদের গুলি করে মেরে ফেলে। ওঁদের সাহায্য সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকা এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরাও প্রতিনিয়ত ওঁদের হাতে মার খাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের হাতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও মার খাচ্ছে। ওঁরা রোহিঙ্গারা এখন হয়তো নতুন করে ঘোষণা দিতে পারে স্থায়ীভাবে থাকার। কারণ ওঁরা এখন মিয়ানমার থেকে ভালো আছে। সুখে আছে। এই সুখ ওঁরা কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইবে না। হাতছাড়া করবেও না। ওঁরা এই দেশ থেকে কখনোই স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে না।

ওঁরা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকা অবস্থাও এমন করেছিলো। কিন্তু সেখানে ওঁরা সফল হতে পারেনি। মিয়ানমার সরকারও ওঁদের নাগরিকত্ব দেয়নি। ওঁদের নাগরিকত্ব ছিলও না। সেই ক্ষোভে রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্বকে জানান দিয়েছিল, আমরা রোহিঙ্গা মুসলমান। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এবং মিয়ানমারের সব নাগরিক জানতো, ওঁরা রোহিঙ্গারা বিষাক্ত প্রজনন। এখনো মিয়ানমারের অনেক নাগরিক রোহিঙ্গাদের জংলি জানোয়ার বলেই মনে করে থাকে। ওঁদের ব্যবহারিক ভাষাকে মিয়ানমারের নাগরিকরা জংলি ভাষা হিসেবে মনে করে। আরও অনেককিছুর কারণেই, মিয়ানমার সরকার থেকে ওঁরা নাগরিকত্ব আদায় করতে পারেনি। পারেনি শান্তি বজায় রেখে সেদেশে থাকতে। এ-সবকিছু আমাদের জানা থাকতেও আমরা ওঁদের সাদরে গ্রহণ করে বুকে টেনে নিয়েছি। আদর-সমাদর করেছি। খাবার দিয়েছি। থাকার জায়গা দিয়েছি। জামাকাপড় দিয়েছি। বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। ওঁদের দুঃখ দুর্দশা সেরে ওঠার সুযোগ দিয়েছি। বিনিময়ে ওঁরা এখন আমাদের দিচ্ছে বাঁশ।

ওঁরা এখন সুর উঠিয়েছে। ওঁরা বলছে, মিয়ানমার সরকার ওঁদের নাগরিকত্ব সহ আরও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা না দিলে ওঁরা আর মিয়ানমার ফিরে যাবে না। রাখাইনে ওঁদের যেমন নেতা ছিল, এখানে ওঁদের নেতাও আছে। রোহিঙ্গাদের নেতারা এখন সমাবেশের ডাক দিয়ে মনের আনন্দের দুইবছর ফুর্তি উদযাপন করে। লক্ষলক্ষ রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে মিছিল মিটিং করে। এতে কী বোঝা যায়? এতে বোঝা যায় আর কিছুদিন পরই ওঁরা এদেশের নাগরিকত্ব চাইবে। ন্যাশনাল আইডি কার্ডে হাতে পাবার জন্য আন্দোলনে নামবে। আরও দশজন নাগরিকের মতো ওঁরাও নাগরিকত্ব সুযোগসুবিধা ভোগ করতে চাইবে। বিশ্বের কাছে বেঁচে থাকার অধিকার চাইবে।

যদি তা-ই হয়, তাহলে কি আমাদের মানবতার সরকার ওঁদের সেই চাওয়া পূরণ করতে পারবে? না করতে পারলেই হবে মহাবিপদ। রোহিঙ্গা দ্বারা আগামীতে ঘটবে এমন বিপদগুলো বর্তমানে কিছু কিছু রূপধারণ করতে শুরু করেছে। বর্তমানে রোহিঙ্গারা নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গত দুই বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৪৭১টি মামলাও হয়েছে। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪৩টি৷ রয়েছে ধর্ষণ, অপহরণ, মাদক চোরাচালানের অভিযোগও৷ হয়তো আর কিছুদিন পর রোহিঙ্গারা আরও ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তখন আর কিছুতেই ওঁদের দমানো যাবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আমাদের মানবতার সরকারকে এখনই ভেবে দেখা উচিৎ বলে করি। নাহয় অবস্থা হবে আরও ভয়াবহ। আরও বেগতিক। একসময় রোহিঙ্গারা কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালং সহ এর আশ-পাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের জায়গাজমি জবরদখল করে নিবে। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে, এঁরাই আধিপত্য বিস্তার করতে থাকবে। সেদিন বেশি দূরে নয়, অতি নিকটেই।

পাশে আছি কোলকাতা

পাশে আছি কোলকাতা

কিছুক্ষণ আগে (০৪.০৯.১৮) কোলকাতায় একটা ফ্লাইওভার ধ্বসে পড়েছে। আশংকা করা হচ্ছে, নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন অনেক মানুষ। এমন শিরোনাম দেখে আমরা বাংলাদেশীরাও গভীর ভাবে মর্মাহত হয়েছি। আমরা নিহত, তাঁদের পরিবার এবং কোলকাতারবাসীর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এই সংকট উত্তরণে সৃষ্টিকর্তা তাঁদের পাশে থাকুন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের উপর কুখ্যাত হেলমেট বাহিনী ও পুলিশের বর্বর হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল কোলকাতার ছাত্রভাইয়েরাও। স্লোগান দিয়েছিলঃ “চলুক গুলি টিয়ারশেল, পাশে আছি বাংলাদেশ”

দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম ছাড়া ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার অন্য কোন কারণ থাকতে পারেনা। এসবের ভুক্তভোগী শুধু কলকাতা নয়, ঢাকাও। এখন থেকে দুই বাংলার ছাত্রসমাজ একসাথে লড়বে সন্ত্রাস, অরাজকতা, দুর্নীতি, লুটপাট অনিয়মের বিরুদ্ধে।

আজ আমরা বাংলাদেশীরাও বলছি, “পাশে আছি কোলকাতা”।

আসিফ আহমেদ
৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ক্রমশ নরকে

বৈষম্যহীন সমাজ কি গড়ে ওঠা সম্ভব বাংলাদেশে ? সম্ভব না। প্রকট একটা ভেদাভেদ এই দেশের মানুষের মধ্যে। এক দলের এতো বেশী অর্থসম্পদ আর এক দলের কিছুই নাই। এর মধ্যে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের নীচেও যে শ্রেণী সেই দল বঞ্চিতশ্রেণী। তাদের শোষণ করার কি আছে ? তারা বেড়েই ওঠে কুকুর বিড়ালের মতো। বাংলাদেশে কুকুর বেড়াল বেড়ে ওঠে এর তার ঝুটা, উচ্ছিষ্ট খেয়ে। বাংলাদেশের সবচাইতে নীচের যে শ্রেণী সে শ্রেণী কি এই ভাবে বেড়ে উঠছে না ?

ওদের বেড়ে ওঠা রেলস্টেশনে, বস্তিতে, কানাগলিতে, ঘুপচিতে। ঘর নাই, থাকার জায়গা নাই, খাবারের সংস্থান নাই। এক বেলা আছে তো আর এক বেলা খাবার নাই। দিনে আনে দিনে খায়। কখনো দিনেও খাবার থাকে না। তাদের খাবার যোগার করতে হয় কঠিন পরিশ্রম করে। কঠিন পরিশ্রম করতে না চাইলে সহজ উপায় চুরি করা। আরো রিস্কিতে যেতে চাইলে হাইজ্যাক করা, ছিনতাই করা, ডাকাতি করা। ভিক্ষা করাও একটা পেশা হিসেবে নেয় কেউ।

তাদের ছেলেমেয়ে বেড়ে ওঠে বঞ্চনায়, তুচ্ছতায়, মায়ামমতাহীন এক প্রতিবেশে। এর ফলে যে জেনারেশন গড়ে ওঠে সে জেনারেশন হয় হিংসুক, চোর, ডাকাত, বিদ্বেষ-পরায়ণ, প্রতিশোধ-পরায়ণ। কাউকে শ্রদ্ধা করতে শেখে না, ভালোবাসতে শেখে না, যা থাকে তা হলো ঘৃণা ,অবদমন,বিদ্বেষ। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত শিক্ষিত সমাজের প্রতি ঘৃণা অবদমন নিয়ে তারা বড় হয়। এর ফলে আমরা পাই কালা জাহাঙ্গীর, অমুক মুরগী মিলন বা এসব ছেলেপেলেদের।

এই যে ক্লাস গড়ে উঠছে তাতে কি আমার আপনার কিছু যায় আসে না ? (সবাই যে খারাপ হচ্ছে তা নয় )

যায় আসে। যখন ছিনতাই বাড়ে, হাইজ্যাকিং বাড়ে, চুরি ডাকাতি বাড়ে, রেপিস্ট বাড়ে তখন আমরা গেলো গেলো বলে রব করি। কিন্তু এই যে একটা সমাজ বেড়ে উঠছে এর প্রভাবে সবাই কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সমাজ অস্থিতিশীল হচ্ছে। আজকে এক নারী রাস্তায় গণপিটুনিতে নিহত হন। রেপিস্ট বাড়ছে। সন্ত্রাস বাড়ছে। আজকে কেউই নিরাপদ না এই দেশে।

যখন এক নারীকে অথবা সমাজের কাউকে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা হয় তখন খেয়াল করলে দেখবেন সমাজের এই শ্রেণীর মানুষগুলোই অংশগ্রহণ করছে। তাদের ভেতর থাকে ঘৃণার লেলিহান শিখা। ফাঁক পেলেই সে বেরিয়ে আসে। আমার আপনার ছেলে, স্বামী কিংবা ভাই এতে অংশগ্রহণ করছে না। সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষগুলো হিংস্র হয় না। কেনো না তার জীবন যাপনের জন্য অমানুষের মতো কঠিন পরিশ্রম করতে হয় না। খাবার অভাবে থাকতে হয় না। ঘুমের জায়গার জন্য শীত গ্রীষ্মকে পরোয়া করতে হয় না। অথচ তাদের করতে হয়েছে প্রতিদিন। করতে হয় প্রতিদিন। ঘুমের জন্যও পরিশ্রম। খাবার যোগাড়ের জন্য সংগ্রাম। সেই শিশুটি থাকতেই। ওদের কাছে আমরা আপনারা কি আশা করবো। যাদের দায়িত্ব আমরা কখনোই নেই নাই।

দেশের এক দল মানুষ যখন সবার টাকা নিজেরাই কুক্ষিগত করে তখন এক দল বঞ্চিত হবেই। দুর্নীতি না থাকলে হয়তো এমন চরম বৈষম্য সমাজে থাকতো না। অন্তত সমাজের এই শ্রেণীর অস্তিত্ব থাকতো না। এর সুদূর প্রসারী প্রভাবে সমাজের সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হতে বাধ্য –

আপনি যিনি সমাজের উপর তলায় বসে আছেন সে আপনিও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আপনার নাভিশ্বাস উঠবে। আহা এই দেশে থাকা যায় না। মোটেই যায় না। অথচ এই দেশকে নরক বানানোর জন্য আপনারাই দায়ী।

সস্তা ভালোবাসা আর বিকৃত মানসিকতা – ১

প্রেম, ভালোবাসা নামের এখনকার সম্পর্কগুলো বর্তমানে খুব সস্তা, হুটহাট করেই হয়ে যায়। যত্রতত্র প্রথম দেখা, মিষ্টি হাসি দেখেই এই সব শুরু হয়। যদিও পরে মানসিকতার দ্বন্দ্ব, সামাজিক, পারিবারিক প্রেক্ষাপটের অশান্তি, অর্থনৈতিক সমস্যায় এইসব ভালোবাসা জানালা দিয়ে লেজ তুলে পালায়। কারন আর যাই থাক, এতে কোন কমিটমেন্ট থাকে না। আর বিয়ের আগে সব উজাড় করে দেওয়া বালিকারাও জানে না আদৌ সে ছেলেটির সাথেই সংসার পাততে পারবে কিনা? কিংবা এই ছেলেটিই পরে তাকে গ্রহন করবে কিনা? যদি তা না হয় তাহলে ওর ভবিষ্যত কি? পূর্ণিমার চাঁদ নাকি ঘোর অমাবস্যা?

এইসব অনেক গল্পেরই পরের কাহিনী সবার জানা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেগুলি পাওয়া যায় ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমো কিংবা কিছু নিষিদ্ধ ওয়েব সাইটে।

আজকাল মর্ডান জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা ফেসিয়াল টিস্যু পেপার চেন্জ করার মতো BF / GF চেন্জ করে। দুধ থেকে সরটা খেয়ে, ছেলেরা ভাগে আর মেয়েরা কাঁদে। ছেলেটা যদি আইটি এক্সপার্ট হয়, তাহলে তো আরো চমৎকার! এক হাজার টাকার মোবাইলেও আজকাল HD ক্যামেরা পাওয়া যায়। “মজাই মজা” শেষ হয়ে গেলে ছেলেরা ব্যস্ত হয় যায় অন্য মেয়ে নিয়ে আর সারা দেশের মানুষ ব্যাপক বিনোদনের ফ্রি সুযোগ পায় ইন্টারনেটে। মোবাইল কম্পানিগুলি তে খোঁজ নিয়ে দেখুন, মোবাইলের ডাটা প্যাক গুলি সব শেষ কি দেখে!

এসব মেয়েরা যে আজন্ম বেকুব তা তারা তাদের নিজেদের কার্যকলাপ দিয়েই প্রমাণ করে। সারাজীবন নিত্য নতুন স্টাইল করে বেড়ান এই সব মেয়েরা পরে দেখা যায় বোরকা পড়ে নাক মুখ ঢেকে সব সময় বাইরে যেতে। আর তাতেও যদি না সামলাতে পারে, তাহলে অবশেষে নিজের গলায় নিজেরই ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শেষ বারের মতো নিজেকে আস্ত বেকুব প্রমান দিয়ে দৈনিক সংবাদ পত্রের প্রথম পাতার রগরগে নিউজ হতে।

এই সব বদের হাড্ডি ছেলেরা যদি নিত্য জামা বদলানোর মতো নিত্য নতুন নারী সঙ্গী তথা গার্লফ্রেন্ড পেয়ে যায় সবার অগোচরে, তবে সে কেন একটা মেয়েকে মোহরানা দিয়ে সম্মানের সাথে ঘরে তুলে স্ত্রীর মর্যাদা দিবে! এদের কাছে নারী যদি বিয়ে ছাড়াই এতটাই সহজ লভ্য হয়, তাহলে ঐ ছেলেদের কী দরকার বিয়ে নামের সারা জীবনের রেস্পনন্সিবিলিটির ঝামেলায় নিজেকে জড়ানোর !

এই সব মেয়েদের কাছে খুব জানতে ইচ্ছে করেঃ
#মেয়ে, যখন ছেলেবন্ধু তোমার কাছে তোমার হট পিক চায় তখন কি মনে থাকে না কাকে কি দিতে যাচ্ছো? এর ভবিষ্যত পরিনতি কি হতে পারে? শেষ পর্যন্ত সেগুলি কোথায় জায়গা করে নেবে?
#মেয়ে, যখন তোমার ছেলেবন্ধু এর সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্জনে সময় কাটাও, তখন কি একবারের জন্যও মনে থাকে না তুমি কার সম্মান মাঠে নামালে নিজেকে এভাবে খোলা রেখে?
#মেয়ে, যখন তোমার ছেলেবন্ধু তোমার জামার ভিতর ইচ্ছেমত হাত দেয় তখন কি মনে থাকে না, কার সম্পদ কার জন্য তুমি উন্মুক্ত করে দিলে?
#মেয়ে, যখন তুমি ছেলেবন্ধুর সাথে অমুকের ফ্ল্যাটে গিয়ে দুটি দেহ এক করে শুয়ে থাকো, তখন কি একবারের জন্যও মনে হয় না কার সম্পদ কাকে বিনামূল্যে বিলিয়ে দিচ্ছো? গভীর আবেগে ভেসে যেয়ে যেসব ভিডিওতে পোজ দেও, শেষ পর্যন্ত সেগুলি কোথায় জায়গা করে নেবে?

হয়তো শেষ পর্যন্ত এই ছেলেবন্ধুর সাথে তোমার বিয়ে হলোই না, অনেক কারনেই সেটা নাও হতে পারে। তখন কেন আবার সমস্ত অপবাদ ছেলেটাকে দিচ্ছ? ছেলেটা নির্দোষ অবশ্যই নয়, প্রশ্নই উঠে না, কিন্তু তুমি সুযোগ না দিলে এইসব কি হতে পারত? মজা কি শুধু ছেলেটা পেয়েছে, তুমি পাওনি? না পেলে, কি জন্য এভাবে নিজের শরীর বিনামূল্যে বিলিয়ে দিয়েছ? ছেলেটা যেমন একটু সুখের জন্য তোমাকে চেয়েছে, ঠিক তেমনি তুমিও চেয়েছো সে সুখের ভাগীদার হতে। এটা কি ভূল কিছু? আর সেই সুখের ভাগীদার হতে, খুব সহজে নিজেকে শিয়াল কুকুরের মতো জানোয়ার গুলির খাবার বানালে নিজেকে? আরে, নিজের ভালো তো একটা পাগলেও বুঝে!

আমরা যেন জেনেও বার বার ভুলি যাই, আমরা ঢেকে রাখা খাদ্য দ্রব্য সব সময় নিরাপদ মনে করি। কারণ তার ভিতরটা জীবাণু মুক্ত থাকে। আর খোলা জিনিসে মশা, মাছি আর পোকামাকড় এসে ভীড় করে। কখনও কি একবারও ভেবে দেখেছ, যাকে সবকিছু “চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিব” ভেবে দিয়ে দিলে, তার সাথে যদি তোমার বিয়ে না হয়, তখন ভবিষ্যতে পরের জনকে কি উত্তর দিবে?

এত্ত বড় ভালোবাসা, যেই ভালোবাসার স্ট্যাটাস ফেসবুকে দিতে দিতে আংগুল পর্যন্ত ব্যথা করে ফেলতে, সারারাত সুপার এফএনএফে কথা বলতে বলতে কাটিয়ে দিতে, তাকে দিয়ে যাকে বেঁধে রাখতে পার নি, ছোট্ট একটা শরীর দিয়ে কিভাবে সেটা সম্ভব?

ঈদের চাঁদ দেখলে আমরা যতটা খুশি হই, ততটা খুশি ঈদের দিনেও হই না। কারন ঈদের দিন মানে ঈদ শেষ, কিন্তু আর চাঁদ দেখা মানে কাল ঈদ। পার্থক্যটা কি আর ভেঙ্গে বললাম না। যে তোমার সাথে বিয়ের আগেই তোমার সব পেয়ে গেছে, তার আবার কি দরকার তোমাকে বিয়ে করার?

নিজের চরিত্র ভাল থাকলে নারীবাদী হতে হয় না। এই সব অশ্লীল কাজে সমর্থন যারা দেয়, আসলে তারা স্বার্থপর সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। কারন সুস্থ মস্তিকের বিবেকবান পুরুষ বা মহিলা একান্তই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের কারন ছাড়া এতে সমর্থন দিতে পারে না। একান্তই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের কারন ছাড়া আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে কেউ যায় না বা এতে সমর্থনও দিতে পারে না। নিজের জাগতিক ভোগ বিলাসের লোভ যখন সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভয়ের চেয়ে বেশী হয় তখনই মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়।

দোকানে ঢুকে কিছু কিনতে চাইলে সবাই দোকানের স্যাম্পলটা নেড়েচেড়ে ভালোভাবে দেখে নেয়, কেনার সময় কিন্তু নেয় কিন্তু শোকেসের ভিতরের ইন্ট্যাক্ট প্যাকেট। বর্তমানে এইসব মেয়েরা সবাই ইন্ট্যাক্ট প্যাকেট থেকে বের হয়ে এসে স্যাম্পল হবার প্রতিযোগিতায় নেমে গেছে….

মধু খাওয়া শিখিয়ে ভ্রমরের ডানা গজিয়ে দিয়ে এই সব মেয়েরা আশা করে, ভ্রমর এক ফুলেই, এক স্বাদের মধু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে….…হায়, কি বিচিত্র এদের আশা…..

পূনশ্চঃ এটা একটা জন সচেতনতা মূলক পোষ্ট। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নারী স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা করার যদি অধিকার থেকে, তবে লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়ে কিছু সত্য কথা আমি কেন লিখতে বা বলতে পারবো না……..

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও গণতন্ত্র

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জমে উঠছে আকর্ষণীয় দ্বৈরথ,
দুরন্ত পেস এটাক আর মায়াবী স্পিনের আক্রমণ সাজিয়ে
কখনো বোলারের ইনসুইং, কখনো আউট সুইং বা কাটার,
জবাবে ব্যাটসম্যানের বুক চেতানো অফ, অন ড্রাইভ, হুক, পুলের শৌর্য !
স্ট্যাম্পড, কট বা বোল্ড আউটের বিপরীতে সীমানা ছাড়ানো ছয় বা চার,
দর্শক উত্তেজনার পারদ চড়ায় প্রতি পলে পলে।
সম শক্তির দ্বৈরথে এইতো হয়, ঘাত প্রতিঘাতেই আসে সাফল্য,
শক্তির নিত্যতা সূত্রের মতো অমোঘ নিয়মের ব্যতিক্রম শুধু এই দেশে !

শব্দহীন স্বাধীনতার শঙ্খনীল কারাগারে বন্দি অহর প্রহর,
অনির্বাচিত শাসনে জব্দ সব ভিন্নমত, উচ্ছল কলকণ্ঠ I
প্রতিবাদী যৌবন পলাতক দেশের বিস্তীর্ণ পথ প্রান্তরে,
ক্ষমতাসীন রাজনীতির বাইশ গজে সমশক্তির কোনো দ্বৈরথ নেই I
প্রতিপক্ষের ধারালো বোলিং অস্ত্র নেই, আক্রমণ প্রতি আক্রমণের শংকা নেই,
তবুও ভয়াল কোন ইনসুইংয় শংকায় অষ্টপ্রহর কাপে সরকারি ব্যাটসম্যান !
শুভবাদের মিডিয়াম পেসেই একের পর এক সরকারি উইকেট পতন,
নীতি, ন্যায়, শুভ ও সত্যের উইকেট হারিয়ে ইনিংস চলে খুঁড়িয়ে… I

উদার গণতন্ত্র, সুশাসন আর উন্নয়নের শাসন প্রতিষ্ঠার কোন বিশ্বকাপে
এমন দল হয় কি কখনো বিজয়ী? পেতে পারে কি কোনো ফেয়ার প্লে ট্রফি ?

মাইডাস টাচ

পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার ‘মাইডাস টাচ’ বাজেট স্পর্শে,
ক্ষুধা কাতর মানবাত্মার হলো কি কোনো পয়মন্ত প্রাক্কলন?
কথা ছিলো মধ্যম আয়ের এই দেশে বাজেট স্পর্শে
ক্রমশ বিলীন হবে অবিনাশী দারিদ্র্যের প্রলয় অশ্রুজল I
অতলান্ত উন্নয়নের জোয়ার, সুখ সমৃদ্ধির প্লাবনে দেশ আমার,
হবে দূর প্রাচ্যের কোনো সিংহ নগরী বা নিখোঁজ আটলান্টিস !
কিন্তু ‘কেউ কথা রাখেনি’-র বরুনার মতোই ধোকা দিয়েছে কেউ,
অপ্রাপ্তির ডালি সাজিয়ে ফোটা গোলাপে আজ মৃত শবের গন্ধ!
সোনার ধানের সোনালী খাঁচায় বন্দি কৃষক সোনালী আগুনে অঙ্গার,
নিষিদ্ধ নৈবদ্য বাজিয়ে বুঝি চলবে অন্ত্যজের অন্তহীন আরতি !
নুন আন্তে পান্তা ফুরোনোর পুরোনো গল্পেই রাত কাবার,
ধুর শালা, কে শোনায় আবার সোনালী ভোরের কল্পগল্প!
‘মাইডাস টাচ’ বাজেট স্পর্শেও অপাঙতেয় আমি অন্ত্যজ অস্তিত্বে,
অস্তিত্ব বিনাশী পরিচয়ে হয়ে গেছি রাজা মাইডাসের গড়া নিস্প্রান স্বর্ণমূর্তি !

*********
ইংরেজি ফ্রেজ ‘মাইডাস টাচ’ মানে হলো যে স্পর্শে সব কিছু সোনা হয় । গ্রিক মিথলজির রাজা মাইডাস দেবতার বরে যা স্পর্শ করতেন তাই স্বর্ণ হয়ে যেত। একদিন ভুল করে রাজা মাইডাসের স্পর্শে তার একমাত্র মেয়ে প্রাণহীন সোনার মূর্তিতে পরিণত হন । সেই শোকে রাজা মাইডাস মৃত্যুবরণ করেন I

বিটকেলে নৈতিকতাবোধ ও আমাদের গর্ব

সক্রেটিসের আবির্ভাবের সাথে সাথেই পশ্চিমা সাহিত্য এবং আধুনিক দর্শনের আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়। যদিও সেটা সক্রেটিসের মৃত্যুর পর টের পেতে শুরু করে। হেলিনিস্টিক শতককে বলা হয় গ্রীকদের জন্য স্বর্নসময়। এসময় সক্রেটিস, প্লেটো ও এ্যারিস্টটলের কাজগুলো আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে এবং তার পথ ধরে আর্কিমিডিস টলেমি ত্বরান্বিত করেন গ্রীক দর্শন ও ধর্ম চেতনা, মধ্য আফ্রিকা থেকে পারস্য এমনকি হিমালয়ের পাদদেশ, হিন্দুকুশ অতিক্রম করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

তখন গ্রীক সমাজে দাসপ্রথা বেশ প্রচলিত এবং সাধারন ব্যাপার ছিলো। সমাজের উচুশ্রেনী সবসময় নিজেদেরকে একটু আলাদা করে চলতেন। প্লেটো তার রিপাবলিক ও ল বইতে একটি আদর্শ রাস্ট্রের ধারনা দিয়েছিলেন। যদিও এ যুগে এই আদর্শ রাস্ট্রের ধারনা শুনলে সবাই তেড়ে আসবে কিন্তু প্লেটোর এই ধারনা তখনকার সমসময়িক সময়ে বেশ প্রভাব ফেলে এবং এ্যারিস্ট টল এর সমূহ সমালোচনাও করেন। প্লেটোর আদর্শ রাস্ট্রে দু শ্রেনীর মানুষ থাকবে যার মধ্যে একদল শাসক আরেকদল হবে শোষিত। শাসক দল আবার দু ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে পড়বে অভিভাবক বা তত্বাবধায়ক শ্রেনী এবং পরবর্তী ভাগ হবে তাদের সাহায্যকারী। প্লেটোর মতে বিয়ে হচ্ছে প্রকৃতি ও মানুষের শত্রূ যা শুধু সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনে। যেহেতু রাস্ট্র পরিচালনা করার অধিকার একমাত্র অভিভাবক বা তত্বাবধায়ক শ্রেনীর সেহেতু তাদের মধ্যে যারা বীর তারা সবচেয়ে সুন্দরী ও উর্বরা নারীদের মাধ্যমে তাদের সন্তানের জন্ম দেবে। এখানে কোনো সন্তান জানবে না তার পিতা কে, কোনো পিতা জানবে না তার সন্তান কে। এই গ্রুপের মধ্যে যে সবচেয়ে দুর্বল এবং অযোগ্য তার ভাগ্যে পড়বে কোনো কুশ্রী, দুর্বল নারী। তাদের সন্তানও হবে দুর্বল, বিকলাঙ্গ অথবা অযোগ্য শ্রেনীর। যারা একবারেই বিকলাঙ্গ তাদেরকে আলাদা করে সতর্ক ও মানবিক উপায়ে ছেটে ফেলতে হবে। এর ফলে যিনি শাসক হবেন তার ধন সম্পদ নিয়ে লোভের মাত্রা কমবে। যেহেতু তার সন্তান কে তা তিনি জানেন না সেহেতু তার জন্য সম্পদের পাহাড় বা প্রশাসনে তার জন্য স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি করার সুযোগ থাকবে না। তাই রাস্ট্রপরিচালনায় তিনি নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের আশ্রয় নিতে পারবেন। আর যেহেতু সন্তান জানবে না যে তার পিতা কতটা ক্ষমতাধর বা উচুপদে আসীন সেহেতু তাকেও নিজেকে তৈরী করতে হবে আরও উচু পদের জন্য। তাকে দেয়া হবে দার্শনিক জ্ঞান যাতে করে সে নিজেকে দর্শনের আধ্যাত্মবাদের গুরু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

যদিও প্লেটো সাথে সাথে এও বলে গেছেন এরকম আদর্শ রাস্ট্র একমাত্র স্বর্গেই সম্ভব, পৃথিবীতে সম্ভব নয়, কিন্তু জন্মগতশ্রেষ্ঠত্ব ব্যাপারটা এখনও মানুষ তার অজান্তেই বহন করে। প্লেটোর এই আদর্শ রাস্ট্রের ধারনা নিষ্ঠুর, বর্বর এবং যত যাই বলি না কেন, আজ আমরা যে গনতান্ত্রিক পরিবার তন্ত্রে বসবাস করছি সেখানে সরকারী বা বিরোধী দলীয় পার্টির প্রধানেরা প্লেটোর এই জন্মগত ধারায় বিশ্বাসী হয়েই চলছে। কিছু দিন আগে ভারতে নির্বাচন হয়ে গেলো এবং সমালোচিত, নিন্দিত একইসাথে নন্দিত মোদী ফের নির্বাচিত হলেন এবং ভারতে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির যুগ আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং পাকাপোক্ত হতে শুরু করলো। সেই সাথে কংগ্রেসের ভরাডুবি হলেও রাহুল গান্ধীর অযোগ্যতাকে কেও পাত্তাই দিলো না। বরংচ পার্টি হেরে যাক, পরিবারততন্ত্র বেচে থাকুক। যদিও বিজেপিতে এই পরিবার তন্ত্র নেই, তবে ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলো।

পরিবারতন্ত্র বা জন্মসূত্রে শাসক হওয়ার ব্যাপারটা সৌদী আরবেও দেখা যায়। আমাদের দেশের প্রধান বিরোধী দলে তো রীতিমত আয়োজন করে সবাই পূজো করে।

প্লেটোর ছাত্র এ্যারিস্ট টল বিয়ে ও রাজনীতি নিয়ে তার বিপরীত আদর্শের চিন্তাভাবনা বেশ সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে “পুরুষ মাত্রই রাজনৈতিক প্রানী”। এর অর্থ হলো মানুষ জন্মগত ভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে বেড়ে ওঠে। সামাজিক জীব হবার কারনে গোষ্ঠীর বাইরে বেড়ে ওঠার কথা চিন্তা করা যায় না বলেই গোষ্ঠীর উচিত প্রতিটি মানুষকে তার স হজাত উপায়ে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দেয়া। যদিও এ্যারিস্ট টল একটি রাস্ট্রের সরকার কি কি রূপ নিতে পারে তার একটা সরলীকৃত সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও তার এই সংজ্ঞা আমাদের সামনে খুব সহজেই ধরা দেয়। যদি একজন শাসক সবার কথা চিন্তা করে রাস্ট্র শাসন করেন তাহলে সেটা হবে রাজতন্ত্র আর যদি সে শাসক নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে শাসন করেন তাহলে সেটা হবে স্বৈরতন্ত্র। যদি শাসকশ্রেনী সমাজের একটি নির্দিষ্টশ্রেনীর হয় এবং সবার স্বার্থে শাসন করে তাহলে সেটা হয় অভিজাততন্ত্র আর যদি সেই নির্দিষ্ট শ্রেনীর শাসক নিজেদের কথা চিন্তা করে তাহলে সেটা হবে গোস্ঠী শাসনতন্ত্র। আর সংখ্যাগরীষ্ঠতার ভিত্তিতে শাসক নির্বাচিত হয়ে সবার স্বার্থে কাজ করে তাহলে সেটা হবে রাস্ট্র শাসনব্যাবস্থা বা পলিটি। আর যদি সংখ্যাগরীষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়ে নিজেদের স্বার্থে কাজ করার অর্থ হলো গনতন্ত্র। এ্যারিস্টটলের মতে সর্বোত্তম রাস্ট্রব্যাবস্থা হলো রাজতন্ত্র যার পরেই লাইনে আছে অভিজাততন্ত্র। যেহেতু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে রাজতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্র একসময় একনায়কতন্ত্র ও গোষ্ঠিশাসনতন্ত্রে পরিনত হয়, সে হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ ও ভালো অবস্থা হলো পলিটি বা রাস্ট্রশাসনব্যাবস্থা।

সে সূত্রে এ্যারিস্টটল প্লেটোর অস্থায়ী বিয়ে বা জন্মসূত্রে গোষ্ঠীর অংশ হওয়াটার বিরোধীতা করেন। তিনি পরিবারকে রাস্ট্রের অংশ হিসেবে দেখেন এবং প্রতিটা পরিবারের বিকাশ রাস্ট্রের অগ্রগতীর ধারক বলে মনে করেন। সে সূত্রে পুরো রাস্ট্রটাই হবে সকল পরিবারের রাস্ট্র যেখানে প্লেটোর রাস্ট্র হবার কথা এক পরিবার রাস্ট্র।

আসলে বিয়ে, রাস্ট্র, রাজনীতি নিয়ে এসব কথা এজন্যই বললাম আজ পত্রিকায় একটা খবর চোখে আসলো। ভগ্নীপতি তার স্ত্রীর বড় ভাইকে ফোন করে বললেন যে তার বোনের আত্মচিৎকার শুনতে। এই বলে তাকে বেদম প্রহার করতে লাগলেন। এরকম প্রহার এই প্রথম ছিলো না। বাবার মৃত্যুর পর ছোটবোনকে কোনো মতে মানুষ করে পরে তাকে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় যৌতুক দেয়া হয় ৩ লাখ টাকা ন গদ। কিন্তু যার সাথে বিয়ে দেয়া হয় তার দাবী ছিলো আরও বেশী। সে ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্মও হয়। তারপরও যৌতুকের বাকি টাকার জন্য এরকম বেদম প্রহার দিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এরকম ঘটনা আজই প্রথম নয়, আবহমান কাল থেকেই চলছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রহারে অংশ নেন শ্বাশুড়ী ননদ এমনকি শ্বশুড় সাহেবও। প্রাচীন আব্রাহামিক ধর্মের নিয়মানুসারে আপনাকে মেয়েকে অর্থ দিয়ে বিয়ে করতে হবে এবং তার বাকী জীবনের ভরনপোষনের দায়িত্ব নিয়ে হবে। তার বদলে একজন স্ত্রী তার সতীত্ব ও গর্ভ পুরোটাই স্বামীর জন্য বরাদ্দ রাখবেন। এর অন্যথা হলে ব্যাভিচার স হ নানা শাস্তির ব্যাবস্থা আছে। যদিও আব্রাহামিক ধর্মের সর্বেশষ সংস্করন ইসলামের প্রসার এ অঞ্চলে ব্যাপক প্রসার ঘটলেও একটি মেয়ের পিতাকে অর্থ দিয়ে তাকে বিয়ে করার চল তেমন একটা দেখা যায় না। তবে নারীর সতীত্ব ও গর্ভের অধিকারের বেলায় এ অঞ্চলের মানুষের তারা কড়ায় গন্ডায় ওসুল করে ছাড়ে। সেখানে ধর্মের কড়া নিয়ম কানুন যেগুলো কিনা ক্ষেত্রবিশেষে জীবনসংহারী সেগুলো পালনেও কেও পিছপা হয় না।

এক্ষেত্রে আরো যে ব্যাপারটা আশ্চর্য লাগে আমাদের দেশে গনতন্ত্রের নামে অলিগার্কি বা গোষ্ঠীশাসনতন্ত্রের সুবাদে নারী দ্বারা সুদীর্ঘ সময় দেশ পরিচালিত হলেও নারীরা আজও অবহেলিত।

এই পারস্পরিক দ্বন্ধপূর্ন ব্যাপারগুলো আমাকে বেশ আগ্রহী গড়ে তোলে এই ভেবে যে আমাদের স্বজাতীর নৈতিকতাবোধ বানর বা শিয়ালের ডায়াস্পরার সাথে মেলে কিনা! যখন কোনো বাঙ্গালী বিদেশের মাটিতে নিজেদের সংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে বড় কথা বলে, তখন আমার বড্ড হাসি পায়।

এটা কি আমার দোষ? আমি আসলেই জানতে ইচ্ছুক।

মাঠে ময়দানে ক্রিকেট ঘরে বাইরে জুয়া

ছবিটি গতকাল ১২ মে চৌধুরী বাড়ি এলাকা থেকে রাত ১০টা সময় তোলা। ছবিতে দেখা যায় একটি ফার্নিচার দোকানে থাকা কালার টেলিভিশনে চলছে ক্রিকেট খেলা। সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিছু ক্রিকেট ভক্ত। আসলে এঁরা সবাই ক্রিকেট ভক্ত নয়! এঁরা ক্রিকেট জুয়াড়ি। খেলা শেষ হলেই এঁদের বাজি ধরার টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাবে। অপেক্ষা শুধু খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

বর্তমানে হাতে হাতে স্মার্ট ফোন! ঘরে ঘরে কালার টেলিভিশনের ছড়াছড়ি। সাথে পাচ্ছে সীমিত মূল্যে নেটওয়ার্ক 4G ইন্টারনেট সেবা। আছে ওয়াইফাই নামের ইন্টারনেটও। আবার দেশের আনাচে-কানাচে, হাট-বাজারে, অলি-গলির দোকানে দোকানে চলতে থাকে টিভি চ্যানেলগুলোতে খেলা আর খেলা। সেসব খেলার মাঝে একটি খেলাই বেশি জনপ্রিয় খেলা দেখা যায়। তা হলো, বর্তমান যুগের ক্রিকেট খেলা। এই জনপ্রিয় খেলার ভেতরে চলছে অন্যরকম মরণঘাতী জুয়া খেলা। এই জুয়া খেলা ক্রিকেট খেলার উইকেটরা খেলে না। খেলোয়াড় বা প্লেয়ার বা উইকেটরা খেলে ক্রিকেট, আর ক্রিকেট খেলার ভক্তদের মধ্যে অনেক ভক্তই খেলছে মরণঘাতী জুয়া। এটা একরকম গুপ্ত জুয়া। যা চোখে দেখা যায় না, শুধু শোনা যায়, আর অনুভব করা যায়!

বর্তমানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে রাতদিন সরাসরি ক্রিকেট খেলা সম্প্রচার করা হয়। একই সাথে ক্রিকেট জুয়াড়িদের জুয়া খেলাও চলতে থাকে। তা সারাবিশ্বের অগণিত মানুষেই জানে। কিন্তু কেউ তা সরাসরি প্রকাশ করতে চায় না। তাই এই মরণঘাতী ক্রিকেট জুয়া প্রকাশ্য না হয়ে, গোপনেই থেকে গেলো। ক্রিকেট জুয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে, ক্রিকেট নিয়ে নিজের কিছু স্মৃতিচারণ করা যেতে পারে।

সময়টা ছিল স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৪- ১৯৭৫ সাল। সেসময় আমরা রাবারের তৈরি টেনিস বল দিয়ে ব্যাটবল খেলতাম। টেনিস বল ফেটে গেলে বা হারিয়ে গেলে, ছেঁড়া-ফাঁড়া কাপড় মুড়িয়ে টেনিস বলের মতন বানিয়ে খেলতাম। যখন ব্যাটবল খেলা খেলতাম, স্টেন বানাতাম যেকোনো গাছের তিন চারটে শুকনো ডালা সারিবদ্ধভাবে গেঁথে। নাহয় চার পাঁচটি ইট উপরনিচ করে সাজিয়ে রেখে। ব্যাট বানাতাম দুইহাত আন্দাজ একটুকরো কাঠের তক্তা দিয়ে। হাতে পোক্ত করে ধরার জন্য তক্তার একাংশ দা দিয়ে কেটে চিকণ করে নিতাম। বল করতাম মাটিতে গড়িয়ে। খেলোয়াড় সংখ্যা বলতে সমবয়সী যারা খেলতে ইচ্ছুক হতো তাঁরা সবাই। এটাই ছিল আমাদের সময়ের ব্যাটবল খেলা।

মাটে ময়দানে যারা ব্যাটবল খেলতো, সবাই তাদের খেলোয়াড়ই বলেই জানতো। আগেকার সময়ে ব্যাটবল খেলার খেলোয়াড়দের কেউ উইকেট বলতো না। উইকেট যে কী, তা কেউ জানতামও না। শুধু জানতাম, যারা খেলে তাঁদের খেলোয়াড়ই বলে। সেই খেলোয়াড় বর্তমান যুগে হয়ে গেল উইকেট বা ব্যাটসম্যান। আর ব্যাটবল হয়ে গেলো জাতীয় ক্রিকেট খেলা। এটা জাতির জন্য একরকম সৌভাগ্যও বলা চলে।

ক্রিকেটের জন্মকাল ও আমাদের জাতীয় ক্রিকেট:
ক্রিকেট খেলার জন্ম কোথায় এবং কোন দেশ থেকে উৎপত্তি, তা নিয়ে এখনো অনেক মতভেদ দেখা যায়। তবে যতদূর জানা যায়, ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিলো ষোড়শ শতকের শেষদিকে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে এটি সারাবিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৪৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হলেও ইতিহাস স্বীকৃত টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলা শুরু হয় ১৮৭৭ সালে।

আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট ১৯৭৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার(আইসিসি) সহযোগী সদস্যে পরিণত হয়। পরবর্তীতে রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করে। আর বিশ্বকাপে প্রথম খেলার সুযোগ পায় ১৯৯৯ সালে। সেই থেকে আস্তে আস্তে মানুষের মনে ক্রিকেট ক্রিকেট সুর বাজতে থাকে। যা আজ অনেক মানুষের মনের খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ক্রিকেট। যা আমাদের জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃত। আবার অনেক জুয়াড়িগণ ক্রিকেটকে জুয়া হিসেবেও পুঁজি করে নিয়েছে।

ক্রিকেট জুয়া:
বর্তমানে দেশের জাতীয় খেলা ক্রিকেট খেলার সাথে যোগ হয়েছে একধরণের গুপ্ত জুয়া। কোনও টিভি চ্যানেলে এই খেলা চলাকালীন সময়ে এই গুপ্ত জুয়াকে বলা হয় বাজি। এটা কোনও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জেতার বাজি নয়! এটা খেলা চলাকালীন সময়ে হাতে হাতে টাকার বাজি।

ক্রিকেট খেলোয়াড়রা যখন প্রাণপণ চেষ্টা করে অন্য দলকে হারিয়ে দেশের সুনাম অর্জন করতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই তাঁদের খেলা দেখে অনেকেই হেরে যাচ্ছি মরণঘাতী জুয়ার কাছে। কি ছেলে, কি বুড়ো, কি জোয়ান বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ মানুষেই এই ক্রিকেট জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এমনও দেখা যায়, যারা জীবনে বাহান্ন কার্ডের তেপ্পান্ন খেলা নামে পরিচিত তাসখেলা জানে না বা কোনও দিন খেলেওনি, তাঁরাও আজ এই ক্রিকেট জুয়ায় আসক্ত হয়ে পরেছে। বর্তমানে ধনী- গরিব থেকে শুরু করে অনেকেই গুপ্ত জুয়ায় সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই ক্ষণিকের জন্য কিছু-না-কিছু পাচ্ছে।

জুয়া নিয়ে লোকমুখে শোনা কথা:
এমনও দেখা যায় আর শোনা যায়, “লোকটি ব্যাটে বলে শেষ হয়ে গেল!”
যদি জানতে চাই, “তা কীভাবে?”
উত্তর আসে, “আরে মিয়া ক্রিকেটে শেষ করে দিচ্ছে! খেলা শুরুর আগে তো যেকোনো এক দলের পক্ষ নিয়ে বাজি ধরছেই, খেলা শুরু হলে বলার বল করার সময়ও বাজি ধরে! ব্যাটসম্যান ব্যাট করলে চার হবে, না- কি ছয় হবে? এই নিয়েও ধরে বাজি! এভাবেই অগণিত মানুষ ক্রিকেট জুয়ায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।” এসব বলেন প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই।

পাড়া-মহল্লায় জুয়া:
অনেক পাড়া-মহল্লায়, হাট-বাজারে, অনেক দোকান দেখা যায়। দোকানে কোনও মালামাল নেই! দোকানে শুধু একটি কালার টেলিভিশন থাকে। সামনে থাকে লোক দেখানো চা বানানোর কেতলি। দোকানের ভেতরে বাইরে থাকে জুয়াড়িদের আড্ডার সাথে গোপনে চলতে থাকে জুয়ার আসর। এসব জুয়াড়িদের মধ্যে থাকে মহল্লার উঠতি বয়সের ছেলেপেলে, আর দোকানদার ও ব্যবসায়ী।বাজি ধরার টাকা কখন যে লেনদেন হয়ে যায়, তা জুয়াড়িরা ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। তা কেবল জুয়াড়িরাই বলতে পারে। একদিকে চলছে খেলা, অন্যদিকে চলছে মুড়ি- চানাচুর সহ মাংস পোলাও- এর আয়োজন। খেলা শেষে বাজি বা জুয়ার টাকা টাকা থেকে দোকানদাদের কমিশন বুঝিয়ে দিয়ে মুহূর্তেই ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়! জুয়ার টাকা কখন যে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায়, তা কেউ বোঝতেও পারে না। কোথাও কোথাও বাজির টাকা জমা রাখার জন্য একজন বিশ্বস্ত লোকও রাখা হয়। যাকে বলে জমাদার। জমাদারের কমিশনও থাকে আলাদাভাবে। তা হলো, যারা জিতবে জমাদারের কমিশন বাবদ তাদেরকে শতকরা ৩০-৪০% হিসেবে দিতে হবে।

রিকশার ড্রাইভারদের জুয়া:
জানামতে বর্তমানে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মেইন সিটিতেই ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে পারে না। আবার কোনও কোনও শহরে চলাচল করেও। বর্তমানে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার ড্রাইভাররা প্রতিদিন কম করে হলেও ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করে থাকে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজার এই ৬-৭ শ টাকা রোজগার করতে তাঁদের শরীর থেকে একটু ঘামও ঝরে না। কারণ, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে দৈহিক কোনও খাটুনি নেই! হাতে চাপ দিলেই শোঁ শোঁ করে রিকশ চলতে থাকে। তা ছাড়া বর্তমানে রিকশায় চলাচলকারীরা রিকশাওয়ালাদের ন্যায্য পাওনা থেকেও একটুও কম দেয় না, বরং দুএক টাকা বেশিই দিয়ে থাকে। তাই ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা বর্তমান সময়ের একজন সরকারি কর্মচারীর সমতুল্য বেতনের টাকাই রোজগার করতে পারছে। অনেক রিকশার ড্রাইভার টাকার গরম সহ্য করতে না পেরে ক্রিকেট জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পরছে। কেউ কেউ অতি কষ্টের কেনা নিজের রিকশা বিক্রি করেও ক্রিকেট জুয়া খেলে থাকে। পরবর্তীতে সংসারে বেঁধে যায় হট্টগোল!

রিকশার ড্রাইভাররা সারাদিন রিকশা চালায় নিজ এলাকায়। নিজ এলাকায় কোথায় এবং কোনখানে জুয়ার আসর বসে, তা যিনি জুয়া খেলে তিনি ঠিকই জানে। ওরা দিনের বেলা রিকশা চালিয়ে সময়মত আসন্ন ক্রিকেট খেলার পক্ষ নিয়ে বাজির টাকা জমাদারের কাছে জমা দিয়ে দেয়। জমাদার টাকা বুঝিয়ে পেয়ে খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করে রাখে। কোন সময় খেলা শুরু হবে, তাও ওদের মুখস্থ থাকে। প্যাসেঞ্জার বহন করার ফাঁকে-ফাঁকে ক্রিকেটের খবরও সংগ্রহ করে। খেলা শেষ হয়ে গেলে যার যার টাকা জমাদারের কাছ থেকে বুঝিয়ে নিচ্ছে। যারা জিতছে তাঁদের ভাদ্রমাস, যারা হেরে যাচ্ছে তাঁদের হয় সর্বনাশ!

সাধারণের জুয়া:
বর্ত্তমানে দেশের প্রতিটি হাট-বাজারে, মার্কেটের প্রতিটি দোকানে থাকে কালার টেলিভিশন। আবার জায়গায় জায়গায় থাকে বড়বড় টেলিভিশনের শো-রুম। শো-রুমে বড় পর্দার টেলিভিশনে চলতে থাকে ক্রিকেট খেলা। সানমে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে দর্শকবৃন্দ। এরা সবাই খেলা প্রিয় দর্শকবৃন্দ নয়! বেশিরভাগ দর্শকই জুয়াড়িবৃন্দ। এরা একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়াবে। ওদের কথা একমাত্র ওরাই বুঝবে। পাশে থাকা অন্য দর্শক জুয়াড়িদের কথা, ভাব, ভঙ্গি কিছুই বুঝবে না। চলছে বাজি ধরাধরি গুপ্ত জুয়া। এঁদের কোনও জমাদার ব্যক্তি নেই। কাউকে কোনও কমিশন দিতে হয় না।

ঘরে ঘরে জুয়া:
বলবেন, এ আবার কেমন জুয়া? এটা একপ্রকার ঘরোয়া জুয়া। যা নিজের আত্মীয়স্বজনদের মাঝেই হয়ে থাকে। যেমন– বড়ভাই বাজি ধরে ছোট ভাইয়ের সাথে। সাক্ষী থাকে আপন মা অথবা বড়বোন। নাহয় সংসারের একজন ঘনিষ্ঠ মুরুব্বি। খেলা শেষ হলে বাজি বা জুয়ার টাকা বিজয়ী ব্যক্তি বুঝে নিচ্ছে। আবার দুলাভাই বাজি ধরে শালার সাথে, নাহয় স্ত্রীর বড়ভাইয়ের সাথে। যিনি জিতবে তিনি হিরো। সময়সময় মহিলাও এই জুয়ায় শরিক হয়ে থাকে।

টোকাইদের জুয়া:
বর্তমানে চলছে টোকাইদের রমরমা ব্যবসা। তাঁদের এখন বিনা পুঁজিতে অনেক ব্যবসা। কাঁধে একটা ছেঁড়া-ফাঁড়া প্লাস্টিকের ব্যাগ দেখে কেউ ঘৃণা করলেও, ওদের কিছু যায় আসে না। কারণ, ওদের ধান্ধায় ওরা থাকে। সময়সময় শহরের রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনের গভীরেও ওরা ডুব দিয়ে লোহালক্কড় উঠিয়ে নেয়। সেই লোহার অনেক মূল্য! সাথে থাকে আরও অনেকরকমের টোকানো সামগ্রী। এগুলো আড়তদারের কাছে বিক্রি করে একে অপরের সাথে ধরে বাজি। খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাস্তার পাশে দোকানে থাকা টেলিভিশনের সামনেই ওরা বসা থাকবে। খেলা শেষে যার যার পাওনা গোপনে বুঝে নিয়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।

এটিই হচ্ছে একমাত্র ক্রিকেট খেলার খবরাখবর জানার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।

মোবাইল অ্যাপলিকেশনে জুয়া:
বর্তমানে হাতে হাতে এন্ড্রোয়েড মোবাইল। মোবাইলে থাকে ইন্টারনেট সংযোগ। কোন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে জানা যায় ক্রিকেটের নগদ ফলাফল, তা কেবল জুয়াড়িরাই জানে।। তাঁরা জুয়াড়িরা নিজের মোবাইলে ক্রিকেট খেলার অ্যাপলিকেশন বা অ্যাপস ডাউনলোডের পর ইনস্টল করে রাখে। হাঁটা-চলার মাঝেই খানকি পরপর মোবাইল অন করে খেলার খবর দেখছে। বুঝে নিচ্ছে আজকের ধরা বাজি হারবে না জিতবে!

অনলাইনে জুয়া:
বর্তমানে মোবাইল ব্যবহারকারীর হাতে থাকে সারাবিশ্ব। এই এন্ড্রোয়েড মোবাইল এখন একজন টোকাইর হাতেও থাকে। যারা ক্রিকেট জুয়াড়ি, তাঁরা জানে কোন সাইটে থাকে ক্রিকেটের খবরাখবর। তাঁরা তাঁদের মোবাইলে সেই সাইটগুলো বুকমার্ক করে রাখে। এসব সাইটের মধ্যে সহজ সাইট পাওয়া যায় মোবাইল এ্যাপ অপেরা মিনিতে। সারাদিনের জন্য ২০ টাকার মেগাবাইট নামের ইন্টারনেট কিনে শুধু খেলার খবরই দেখে। ওরা জুয়াড়িরা মুহূর্তের মধ্যেই বলে দিতে পারছে কোন ম্যাচ কোন দেশে চলছে। আর কোন দলের খেলা কোন চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে। সেভাবেই জুয়াড়িরা দক্ষ দেখে পক্ষ নিয়ে ধরছে বাজি! কেউ জিতছে, কেউ হারছে।

কথায় কথায় জুয়া:
চা-দোকানে বসে খেলা দেখার মাঝে কথায় কথায় চলছে বাজি! অনেকের জানতে ইচ্ছে হবে, এ আবার কেমন বাজি? তা হলো, বলার বল করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই একে অপরকে বলছে, “বাজি লাগা, চার হইবো না ছয় হইবো? কেউ চারের পক্ষে, কেউ ছয়ের পক্ষ নিয়ে ধরে বাজি। ছয়, চার কিছুই যদি না হয়, তো হয়ে যায় ড্র! তারপর থাকে পরবর্তী বলের অপেক্ষায়। এভাবেই চলে কথায় কথায় জুয়া।

পরিশেষে:
অনেক মানুষের মতামতের উপর ভিত্তি করে ধারনা করা যায়, এভাবে চলতে থাকলে দেশের সব শ্রেণির মানুষই দিন দিন এই ক্রিকেট জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়বে। এই জুয়ার কারণে বাংলাদেশের পুরো সমাজেই অপরাধ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছে অনেকেই। অনেকের ধারণা এতে করে বাড়বে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধও। জুয়ার প্রতিরোধে এখনই দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া গেলে ছাত্র-যুবকরা তো বটেই, কিশোররা পর্যন্ত এই জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়বে বলে মত দিয়েছে অনেকে।

অনেকে মনে করে, সরকারের উচিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রতিদিনের ক্রিকেট খেলা দেখানো বন্ধ করে দেওয়া সহ জুয়ার বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠা। আর বিটিআরসির মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি পুলিশ ও গোয়েন্দাসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে এবিষয়ে সজাগ রাখা উচিৎ। একই সাথে সম্ভব হলে বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৎপর সকল জুয়াড়িকেও আইনের আওতায় আনা। আমরা দেশের জনগণ চাই, ক্রিকেট শুধু বিনোদনমূলক ক্রীড়া হিসেবেই এগিয়ে যাক! জনপ্রিয় হয়ে উঠুক! এর সঙ্গে যেন কোনোক্রমেই জুয়ার মতো অপরাধ যেন যুক্ত হতে না পারে।  স্বাধীন মুক্তভাব নিয়ে দেশ-বিদেশ জয় করতে থাকবে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের দামাল ছেলেরা। এটাই হোক আমাদের সকলের কামনা।

“জয় চেরনোবগ”

ইউরোপের অনেক রেস্টুরেন্টের বারে ফানবোর্ডে লেখা থাকে “ড্রিংক বিয়ার সেভ ওয়াটার”। এই লেখাটা প্রথমবার দেখে বেশ হাসি আসলেও বারটেন্ডার যখন বললো আফ্রিকার অনেক দেশে বিশুদ্ধ পানির দাম বীয়ারের চেয়ে বেশী, তখন হতাশা পেয়ে বসে। যেকোনো পরিমানের এলকোহলই হোক, যকৃত কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সেসব দেশে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য হলেও সবাইকে বীয়ার পান করে বাঁচতে হবে। তারা কৈশোর থেকেই এলকাহলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা যেখানে কেটো ডায়েটের নামে একটা বীয়ার পান করলে ৭ টা পাউরুটির সমান কিলোক্যালোরী গ্রহন করবো এই ভয়ে তার ধারে কাছে যাই না, সেখানে কালো দরিদ্র মানুষগুলো নিজের জীবন বাচাতে বীয়ার তথা এলকোহলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।

একটা সময় মনে হতো আর কতটা ক্ষতি হলে মনে হবে অনেক হয়েছে, এখন আমাদের থামা উচিত। সমাজ থেকে সকল কলুষিত চিন্তা ভাবনা, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। শুনেছি বিশ্বের ৮০ টি শহরে যুবক যুবতীরা মিছিল করে রাস্তা বন্ধ করছে শুধু একটা দাবী নিয়ে, পৃথিবীর জলবায়ু রক্ষা করতে হবে। অথচ নেতাদের কথাবার্তা শুনলে ছোটবেলার আজব একটা চিন্তার কথা মনে পড়ে যায়।

তখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই লম্বা ছুটিতে নানু বাসা চলে যেতাম। সকাল বেলা উঠেই সুবর্ন বাসে উঠে ঢাকার দিকে যাত্রা করা, দৌলতদিয়ার ঘাটে লঞ্চ ধরা, পদ্মার থৈ থৈ ঢেউয়ে ভয় লাগলেও একটা রোমাঞ্চ অনুভব করতাম নানু বাড়ি যাচ্ছি। আমি আবার সাতার জানতাম না। পদ্মার প্রমত্তা ঢেউ আমার মনে ভয় জাগাতো, ভাবতাম এটাই বুঝি শেষ যাত্রা আমার। কিন্তু দেখো! তারপরও দিব্যি বেচে আছি। পদ্মা এখন দেখতে কুমার নদীর মতো মজা কোনো খাল। সে যাই হোউক, ঢাকায় এলে নানুকে দেখতাম বিশাল একটা এলুমিনিয়ামের ট্রেতে চালের খুঁত বাছতেন। মামারা ছিলো যৌথ পরিবার, তার ওপর দু তিনজন বিয়ে করে সবাই একসাথেই থাকতো, সে এক বিশাল হুলস্থুল ব্যাপার স্যাপার। নানু কাজের মেয়েদের নিয়ে দিনের একটা বড় অংশ কাটাতেন চাল বাছতে বাছতে। ছুটির সময় সব কাজিনরা এলে বাসা পুরো গরম হয়ে যেতো। নানু সব পিচকি পাচকাদের ধরে চাল বাছতে বসিয়ে দিতেন আর আমরা স্বানন্দে পুরো ড্রাম ভরে দিতাম।

চাল বাছতে বাছতে মনে হতো এই যে একটা দুটো তিনটি খুত বেছে নিলাম এতে কি চালের পরিমান কমবে? এত গুলো চালের মধ্যে দুটো চাল নিলেও তাতে কোনো পার্থক্য হবে না। এমনকি আরো দুটি, আরো দুটি, প্রগমনিক ধারায় চলতে থাকলেও সে চাল ফুরোবে না। নানুকে বুঝিয়ে না বলতে পারলেও তিনি ঠিকই বুঝে নিয়ে একটা লাইন বললেন,”কোন সে ব্যাপারী গুনতে পারে এক থাল সুপারী?” রাতের বেলা আকাশের তারা গুনতে গিয়েও একই সমস্যায় পড়লাম। ঠিক যেখান থেকে তারা গুনতে শুরু করেছি, আমি সেখানেই আটকে থাকি। কোথা থেকে কোন তারা কোথা দিয়ে উকি দিচ্ছে, বোঝা মুস্কিল। তারা গোনাটা একটা গোলক ধাঁধাঁ। তবু আমার দুঃসাহস থামেনি। জ্ঞান অর্জন করলাম, বুঝতে শিখলাম কিভাবে অসংখ্য জিনিসকে মাপতে হয়, তাকে কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ব নেতারা নাছোড়বান্দা। তারা ছোটবেলার সেই চাল গোনার হিসাবেই পড়ে আছে। মনে করে এতটুকু কার্বন নিঃসরনে কিছু হবে না। হলেও প্রকৃতি ঠিকই সামলে নেবে। অথবা যদি হয়ও তাহলে সেটা অবশ্যম্ভাবী। ঠেকানো যাবে না। তারা যেনো ছোটবেলার সেই ভ্রান্ত দর্শনে আটকে আছে।

স্লাভিক গড চেরনোবগ ছিলেন একজন অপদেবতা। সে অভিশাপ দেবার পয়মন্ত ছিলো, হাস্যজ্বল উৎসবে মৃত্যুর ছায়া ডেকে এনে বিষাদের বন্যা বইয়ে দিতে তার মুন্সিয়ানা তুলনাহীন। ওডিনের গুংনীরের মতো তার ছিলো কাঠের তৈরী বিশাল হাতল ওয়ালা হাতুড়ী। উৎসর্গের গরুর মাথায় এক আঘাতে ফাটিয়ে হত্যার প্রিয় অস্ত্র ছিলো সেই হাতূড়ি, যেনো তরমুজের মতো ফেটে চূরমার। আমাদের নেতারা হলো সেই চেরনোবগের ছায়া। তাদের কলমের খোঁচা গ্রীমনিরের গুংনীড়।

আমরা সেই উৎসর্গের গরু, বলা যায় বলির পাঠা। যদিও প্রহেলিকার জগতে বাস আমরা নিজেদেরকে মহান হুবালের বিশ্বাস ধারন করা সাহসী ছায়াসঙ্গী ভাবতে ভালোবাসি অথচ এ সবই মায়া, মিথ্যা। আমাদের বিশ্বাসের মোহরে তারা বেঁচে থাকে, ঈশ্বর হয়ে আমাদের ভাগ্য নিয়ে হাস্যকর খেলা খেলে।

আমাদের দরকার ছিলো একজন প্রমেথিউস অথবা ফ্রান্সের আধুনা “ভলতেয়ার” পল সাঁত্রে, যারা আমাদের চোখের পর্দা সরিয়ে ইউটোপিয়ার জগতকে ভেঙ্গে দেবেন! যদিও ভয় হয়, আমাদের বিপ্লব হাতছাড়া হয়ে মধ্যযুগীয় হুবালের হন্তারক ডাকাতের অনুসারীদের হাতে না চলে যায়! আজ তাই ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়ার লাখোকোটি মানুষ নীরবে কাঁদছে, সে কস্ট গুলো আসলেই কাউকে স্পর্শ করে না, না হুবাল, না আজুরা মেহতা, না ওডিন অথবা আখেনাতেনের সেই আদি পরাক্রমশালী “আতেন”!

হ্যাপী ব্লগিং!!

নীরব ব্যথা

বনফুল আর আশালতা
পাখপাখালির গুঞ্জন সেথা;
খাঁচার পাখি কয় না কথা
শুনব তাদের মনের ব্যথা।

ছড়ার বুকে আঁকব আজি
সবার বুকের দুঃখরাজি;
কষ্টের মাঝে জীবন যাদের
দুঃখই জীবন সঙ্গী তাদের।

গাছের দুঃখ, মাছের দুঃখ
পদ্মা নদীর শুকনো বক্ষ;
পদ্মার বুকের আহারাজি
মাতৃ ভূমির জীবন বাজি।

বাবা্র দুঃখ, মায়ের দুঃখ
বৃদ্ধাশ্রম আজ বাঁচার কক্ষ!
খাবার নিয়ে যুদ্ধ যাদের
যুদ্ধই জীবন, দুঃখ তাদের।

থাকার দুঃখ, খাওয়ার দুঃখ
জীবন নদীর নেই যে লক্ষ্য;
পথের ধারে আশ্রয় যাদের
মানুষ কী সে ভাবছ তাদের!

আশ্রয়হীনদের কষ্টের পাহাড়
দুঃখ তাদের নেই যে আহার;
ওরা মানুষ ভাগ্য যাদের
বঞ্চনা দিলো দৈব তাদের।

দীপ জ্বালিয়ে আশার আলো
জ্যোতি করো না ঘরটা কালো;
সবে মিলে প্রাণপণে চেষ্টা’
এসো না গড়ি মায়ের দেশ’টা।

খুকি

ধরার বুকে রাত নেমেছে
আঁধারে ঘর কালো;
খুকি আমার জনম নিল
ঘর করিল আলো।

পাড়া পড়শি ভিড় করেছে
সবাই হাসি খুশি;
এ-নয়তো মোর ছোট্ট খুকি
উদয় হলো শশী।

মা-আমার নাতনী পেয়ে
হলেন মহা খুশি;
সুখ’ বন্যায় ভরে দিলেন
সকল মাসি পিসি।

খুকি আমার হচ্ছে বড়
মা-বাবার আদরে;
স্রষ্টা তোমার মহিমা গাই
সদা, চরাচরে।

আধো ভাষায় খুকি কভু
বাব্বা রবে ডাকে;
মাম্মা বলে ডেকে আবার
মাকে কভু হাকে।

কন্যা’ জনম শুনতে পেয়ে;
যে করে মুখ ভারি।
শুনুন এবার বিশ্ববাসী;
তার তরে মোর আড়ি।

আসুন এবার সবাই মিলে
শপথ করে বলি;
পুত্র-কন্যা সমান ভেবে
আনন্দে পথ চলি।

যোগ্য করে কন্যা সন্তান
যদি গড়ে তুলি;
সসম্মানে বাঁচব সবাই
দুঃখ সবই ভুলি।

## উৎসর্গঃ বিশ্বের ঐ সকল কন্যা সন্তানদের সম্মানে, যাদের জন্ম হবার খবরে তাদের মা-বাবা এবং নিকটাত্মীয়গণের মুখমন্ডল কালো হয়ে গিয়েছিল।

অক্ষমের স্বীকারোক্তি

নিজের ভিতরে
নিতান্ত অক্ষম এই আমি
বলিষ্ঠ সংগমে
জন্ম দিতে পারি না
বলিষ্ঠ ভবিষ্যৎ,
শৃঙ্খলিত দু’হাতে
খান খান করতে পারিনা
ভয়াবহ বর্তমান:
নীরবে লালন করি শুধু রাজাকারের গল্প –
দেখি ভেঙ্গে পড়ে শহীদ মিনার-স্মৃতিসৌধ,
ঝরে পড়ে বর্ণমালার বর্ণসম্ভার
আরো কোন এক পঁচিশে মার্চে –
আর আমি কিছু্ই করতে পারি না
শুধু অক্ষম বসে থাকি মর্মর সিংহাসনে।

/ মো: সফি উদ্দীন

আমার গাঁ

সবুজ আঁচলে ঘোমটা জড়ানো,
মায়াবী গাঁ’র কথা;
শুনিবে যদি এসো হে বন্ধু,
থাকি মোরা সেথা।

ছোট্ট এক সবুজ গাঁয়ে,
আমার বসবাস;
কুলকুল রবে নদী চলে,
তারই এক পাশ।

পাল উড়িয়ে চলে নৌকা,
জলে ভাসে হাস;
মাছ ধরেই জেলে ভাইদের,
চলে বার মাস।

গাঁয়ের মাঝে পাঠশালা এক,
জ্ঞানের আলো ছড়ায়;
এমন রূপটি কোথাও খোঁজে,
পাবে নাকো ধরায়।

ভোর হলেই লাঙ্গল কাঁধে,
ছোটে কৃষাণ দল;
পাঠশালাতে শিশু-কিশোর,
করে কোলাহল।

প্রাণের সাথে প্রান মিলিয়ে,
সেথা সবে থাকি;
সুখ-দুখের যত্ত কথা,
আল্পনাতে আঁকি।

ধুলো উড়ানো মেঠো পথে,
গোরুর গাড়ি ছোটে;
ক্ষুধায় চোখে অশ্রু ঝরে,
ভারি বোঝা পিঠে।

আছে সেথায় বড় দীঘি,
শাপলা ফুলের মেলা;
নাইতে গিয়ে দুষ্ট ছেলে,
জলে করে খেলা।

নানা জাতের সবুজ বৃক্ষ,
ফুলে ফলে ভরা;
আকাশ জুড়ে আলো ছড়ায়,
আঁধার রাতের তারা।

মাঠ জুড়ে শস্য ফলান,
মোদের কৃষাণ দল;
সরলতায় জীবন গড়া,
বুঝে না কোন ছল।

পৌষ পার্বণে কৃষাণ’ মুখে,
ফুটে সরল হাসি;
এসব কিছু মিলিয়ে গাঁ,
পরম ভালোবাসি।

বিলেটেড হ্যাপি নিউ ইয়ার

ইংরেজি নববর্ষে তোমাকে শূন্য ই-কার্ড কেন?
বর্ষ বরণের উত্তাল রাতে পাইন বনের মাথার ছিল কোমল চাঁদ।
তোমাকে কার্ডটা পাঠাবো বলেই সেই মায়াবী রাতে,
ল্যাপটপ খোলা …তারপর অবাধ্য মনে কত যে স্বপ্ন আঁকা!
ইচ্ছে করছিলো নবম সিম্ফোনির মতো সুর উঠাই কি বোর্ডে,
তোমার কার্ডে লিখি পেত্রাকের মতো কোনো সনেট!
রবি ঠাকুর থেকে হাল আমলের নির্গুণ কবির কবিতার গুঞ্জন মনে,
কিন্তু এক দিন আগে খুন হয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের শোকে কিবোর্ড হলো স্তব্ধ !
আমার মধ্যরাত, তোমার সকালে আছে এখন আলোর মিছিল?
কাঁচা কাঁচা রোদে ভেজা সকাল আসে কি দেশে এখনো?
দেশের নীল আকাশে নেই কোনো সাদা মেঘের ভেলা,
আকাশ জোড়া ঘন কালো মেঘ ঘিরে ধরেছে দেশ।
উচ্চকণ্ঠ ব্যক্তি পূজা আর স্তবে অভ্যস্ত চারদিক,
শুধু নিভৃতে নৈঃশব্দ্যে কাঁদে সত্য ও সুন্দর।

তোমার কার্ডে লিখতে চেয়েছিলাম তাই মিথ্যা মুক্ত জীবনের সার সত্য,
‘পরাজিত গণতন্ত্রেও আমার বিধ্বস্ত মনের অস্তিত্ব করেছো স্বাধীন।
আকাশের ব্যাপ্তিতে ছড়িয়ে দিয়েছো আমার ভালোবাসা স্বপ্ন,
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ পেরিয়ে অসীম করেছো ভালোবাসার মানস রাষ্ট্র ।
আমার ভালোবাসা কল্যাণ রাষ্ট্রের জনক, সর্বকালের সেরা মানবী
গলা চিপে ধরা গণতন্ত্রের নাভিশ্বাসেও তোমাকে নবর্ষের শুভেচ্ছা’।
কিন্তু জানোতো সাংবিধানিক বাধ্যকতায় নিষিদ্ধ,
আমার এই বিশুদ্ধ ভালোবাসা উচ্চারণ !
ফেসবুকে তোমার লাইক ধরে স্থায়ী অস্থায়ী সব ঠিকানায় যদি
পৌঁছে যায় সাতান্ন ধারার হুলিয়া নিয়ে জেল,জুলুম বা মৃত্যু!
গুম, খুনের অবিরল জলের ধারায়,তোমাকে হারাবার অশ্রুবন্যায়
কেমন করে আমার নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা ভেলা ভাসাই, বলো?
সেই আশংকায় শূন্য ই-কার্ড তোমার ঠিকানায়,
স্যরি, বিলেটেড হ্যাপি নিউ ইয়ার!

(এই রকম একটা কবিতা বছর তিনেক আগে লিখেছিলাম দেশের কিছু কষ্টকে ভেবে। সেই একই কষ্ট থেকে এই কবিতাও । এছাড়া গত কয়েক দিনে ব্লগে প্রিয় ব্লগারের চমৎকার কিছু ভালোবাসার কবিতা দেখে আমার একটা ভালোবাসার কবিতা লিখার ইচ্ছে হয়েছিল । আমার যে হতচ্ছড়া কবিতার হাত,মাথা। ভালোবাসার কবিতা লিখতে গিয়ে কি ছাইপাশ হলো কে জানে ! তবুও এটাই কিন্তু আমার ভালোবাসার কবিতা সৌমিত্র দা, রিয়াদি,নাজমুন আপা আপনারা যাই বলুন না কেন!)

সুশিক্ষার কারিগর সেই মাস্টার সাহেব কই?

ইদানিং খুব মনে পরে,
ছোট বেলায় পাঠশালায় পাঠ্য আম চুরির গল্পটা।

গাছের নিচে পরে থাকা একটি আমি কুড়িয়ে নিয়েছিল
ছোট আনোয়ার, আমবাগানের মালিকের অজান্তেই।
চুরির অপবাদ, মাস্টার সাহেবের বেত্রাঘাত, সহপাঠীদের গঞ্জনা
আম কুড়ানোর কোনো সুখ পায়নি আনোয়ার।
মাস্টার সাহেব শিক্ষা দিয়েছিলেন তাকে,
পরের জিনিস না বলে নেওয়া চৌর্যবৃত্তি, অন্যের অধিকার হরণ।
ঈশ্বরও হন রুষ্ট গর্হিত সে অন্যায়ে।
মাস্টার সাহেবের সুশিক্ষায় দিব্য হয়েছিল আনোয়ারের জীবন।
আম চুরির অপবাদে অভিযুক্ত ছোট আনোয়ারই
একদিন কুড়িয়ে পাওয়া ধান বিক্রির
হারানো হাজার টাকার থলে ফিরিয়ে দিয়েছিলো শোকাস্তব্ধ
মালিক, ক্ষুদ্র কৃষক আজিজ মিয়ার হাতে !

ষোল কোটি জনগণের ভোটের অধিকার কুড়িয়েছে প্রশাসন ও সরকার,
নিপুন কারিগরিতে ভোট দাতার অজান্তেই!
সাজানো নির্বাচনের অসত্য, অকথ্য শপথে,
আবারও বৈধতা খোঁজে সরকার।
গণতন্ত্রের শব দাহের প্রজ্বলিত আগুনে উদ্ভাসিত
সরকার দিব্য হবে কি কোনো সুশিক্ষায়?
ভোট কুড়ানো নির্বাচনে পাওয়া, জনগণের হারানো শাসন থলে,
দেবে কি সরকার তুলে ভোটের প্রকৃত মালিকের হাতে?
গুপ্ত ঘাতকের জিঘাংসা পীড়িত,স্তম্ভিত বাংলাদেশে,
‘ভোটাধিকার হরণ গর্হিত’ সেই সত্য শিক্ষা দেবার পাঠশালা কোথায়?
আছে কি কোথাও লুকিয়ে এই ব-দ্বীপের সবুজ বন, বৃক্ষের আড়ালে
সরকারি চরিত্র দিব্য করার কারিগর,সেই মাস্টার সাহেব?