চিরায়ত


জোছনা চুরির গল্প অনেক শুনেছি
পলিগামী পুরুষের রসায়ন
ভাবতে ভাবতে
নিঃশ্ছিদ্র মশারীর আকার-প্রকার
নির্ধারন করে ফেলি
চাঁদও কি জোছনাভূক প্রানী নাকি
চাঁদেও ফোটে নানাবিধ ফুল!

আমাদের এখানে বৃষ্টি হত
মনে রাখবার মত রাত্রিও নামত
ঋতুবতী গুহানারী একবার চাঁদে ফেলে
এসেছিল লাল রঙটার অর্থ
অন্ধকার আর নীরবতা
যোগ হয়েছিল আলোর সমগোত্রে
যার কারনে গল্পগুলো খরস্রোতা হয়ে গিয়েছিল।

সেই থেকে ওরা গল্প করত সারারাত
যদিও নারীটি বাঁধা থাকত লালঝুঁটি
মোরগের কাহিনীতে যেখানে একটি মেয়ে
জুতার ফিতায় নানারঙ যোগ করে
খলখল হেসে উঠত
পুরুষটা আবার হাসি-কান্না সব থেকেই
আমিষ খুঁটে খেতে শিখেছিল প্রবল।

আদি থেকে এভাবেই চুরি হয়ে যাচ্ছিল
সমস্ত কুলীন নিঃশ্বাস
যা আটকে থাকে প্রতিটি জোছনার রঙে;
রঙভ্রান্তির বিকারে।


তুরাগের জলে ডুবন্ত এক মানুষ দেখেছিলাম
যে বাঁচতে চায়নি মোটেও
তার উর্ধ্বমুখি হাত ছিল না সাধারন
অথচ আমরা তাকে বাঁচিয়েছিলাম আর সে
ক্ষেপে উঠেছিল লজ্জাহীনের মত।

তাকে বাঁচাবার লজ্জায় আমাদের ঘুম নষ্ট হয়
এখনো, আমরা প্রতি রাতে পালা করে
লোকটাকে পাহারা দেই
এরপরে শিলা, এরপরে লিনা
এরপরে একসময় হয়তো আমরা কেউ থাকব না।

লোকটা তখন অনায়াসে ডুবে যেতে পারবে
তখন তার কান্না শুনবে তুরাগ, শুধুই এক নদ।


বিড়ালকে জিজ্ঞেস করা হল, তোমার মুকুটে
কি লাগানো আছে মেয়ে?
বিড়াল তার থাবা মেলে ধরে বলল, মুকুট নেই
শুধু নখে মেখে রেখেছি কাঁটা-কাঁটির সোহাগ!

কর্ময‌জ্ঞে হা‌রি‌য়ে‌ছি মন

ch

‌কোথা দি‌য়ে যে সময়গু‌লো পালায়, পাই না আর টের
সময় হ‌তে নি‌জের জন‌্য সময় আর কর‌তে পা‌রি না বের;
সময় ব‌্যস্ততার যাতাক‌লে ফে‌লে
আ‌মি ছে‌ড়ে উ‌ড়ে যায় দূ‌রে, ডানা মে‌লে।

পাই না ‌নি‌জের জন‌্য সময় আর অফুরন্ত
মন যে হ‌য়ে উঠ‌লো দুরন্ত;
সয় না আর সয় না ব‌্যস্ততার জ্বালা
কত আর দেখ‌বো ক‌র্মের যাত্রাপালা।

পালা‌তে চাই দূ‌রে, যেখা‌নে নেই প‌রি‌চিত জন
‌কে দে‌বে আমায় এক টুক‌রো নির্জন
ক‌বিতার ছন্দ হা‌রি‌য়ে কা‌ঁদি, ‌নিস্তব্ধ ম‌নের বাড়ী
বয়স ফুরা‌য়ে যায়, ক‌বে আর টান‌বো ক‌র্মের পি‌ছে দা‌ঁড়ি।

চাই চাই, অ‌তি চা‌হিদার ভি‌ড়ে আ‌মি আর নাই
আ‌মি যেন ধু‌লো বা‌লি ছাই
ফুঁ দিলেই আ‌মি ‌বিষণ্ণতার সমুদ্দু‌রে হাবুডুবু খাই
‌দিন‌শে‌ষে নি‌জে‌কে বড্ড ক্লান্ত পাই।

আমার বেলাগু‌লো চু‌রি হ‌য়ে যায়, কর্ম বড্ড না‌ছোরবান্দা
স্বা‌র্থের ফুল ফুটা‌তে মানুষজন ক‌রে নিত‌্যই ধান্ধা;
সে ধান্ধা‌তে মন রে‌খে আ‌মি নি‌জে‌কেই হারাই;
ই‌চ্ছে ক‌রে সব ছে‌ড়ে ছু‌ড়ে দূর ‌কোথাও যে‌তে পা বাড়াই।

বু‌কের ভেত‌রে ব‌্যথার নদী
ব‌য়ে চ‌লে‌ছে নিরব‌ধি;
মাথায় বোঝা হয় কর্ম, আ‌মি ভু‌লের পর ক‌রি ভুল
ভুলগু‌লো এ জীব‌নে হ‌বে না আর ফুল।

ভু‌লের সাগর পা‌ড়ি দি‌তে কতই না কষ্ট, কী পে‌রেশা‌নি
কত মন্দ কথা বাহার শু‌নি, শু‌নি কত শাস‌নের বাণী
কা‌জের বোঝা ঘা‌ড়ে চা‌পি‌য়ে তোমরা ত‌ড়িৎ গ‌তি‌তে চাও কাজ
শু‌নো না কান পে‌তে বু‌কের গহী‌নে দীর্ঘশ্বা‌সের আওয়াজ।

দীর্ঘ আলাপ

আমার পাশাপাশি একটা বিকেল—ডুবে যাচ্ছে
হাওয়ার ভেতরে—তারপর গতদিনের জ্যোৎস্না
আজও ফিরে এল, শরতের আলাপে বসে থাকি
দীর্ঘ আলাপ শেষে—পাহাড়ের গারোভাষা যেমন
পাতাছেঁড়া বিদ্যাগ্রন্থ–টিলার গাছ আয়ত্ত করছে
ঘাসেদের বুক চিরে পথ করা মানুষের মনস্কতা—

কখনো তোমার মুখ—কখনোবা আধুলি রূপ
আর বিষণ্ণতা জানতে চেয়ে এখানে দণ্ডিত হই
আমাদের আলাপ বেঁচে থাকলে দেখা হবে
চোখ আর ভুরুর ইশারায়—এই ভেবে একটানা
রাত সমর্পিত হয়—অন্তস্রোতে শীতরেণুর নিঃসঙ্গ
পুতুল নাচ। নিরুত্তর বেড়াল চুপচাপ যষ্টিমধু খায়—
নিরাবরণ ঘাসেরা হেসে ওঠে ছোট শিশুর মতো;

বুকের ধ্রুপদী দাগ

আমাদের বাসার সামনে দিয়ে যে সরু রাস্তা
সবুজ পরিধান করি তুমি রোজ যাও;

তুমি বোধহয় নবম শ্রেণী,
আমিও। তোমাদের স্কুলের বিপরীতে
শ্যাওলা পরা যে দালান ক্রমে ক্ষয়িষ্ণু
হচ্ছে; তার কোন এক ক্লাসে
এলজেব্রা কষতে গিয়ে আটকে যাচ্ছি।

অমনোযোগী ছাত্রের প্রতি
বিপিন পালের কোন দয়ামায়া নাই।

এলজেব্রা কষতে গিয়ে
আমি সবুজ কষি, কষি তোমার নাকফুল।

অমনোযোগের শাস্তি বেঞ্চে দাঁড়ানো,
তবে মন্দ লাগছে না।

জানালার বাইরে তোমাদের স্কুলের
চকচকে নতুন বিল্ডিং
অসংখ্য সবুজের সমারোহ।

কোন এক সবুজে তুমিও আছো
উৎসুক চোখ বাইরে তাকিয়ে আছে।

চোখের দূরবীন তোমাকে খুঁজছে
বুকে চিনচিনে ব্যাথা;
মেয়ে তুমি কী জানো
তুমিই বুকের ধ্রুপদী দাগ।

অঞ্জলি লহো হে কবি…

3017

30095 যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে –

কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৫, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬), (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ – ভাদ্র ১৪, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ), অগ্রণী বাঙালি কবি, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আজ তাঁর ৪৬ তম প্রয়াণ দিবস।

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে –- কাজেই “বিদ্রোহী কবি”। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।

নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী। এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল।

3023

তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্য তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল। এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামাসংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।

মধ্যবয়সে তিনি পিক্‌স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।।

3014

শ্রদ্ধেয় মরহুম কবি কাজী নজরুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

শ্রদ্ধার সাথে তাঁকে স্মরণ করছি, এবং তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সেই দিনের সেই দুখু মিয়া যদি পৃথিবীতে না আসতেন, তবে সম্পদশালী বাংলা সাহিত্য তাঁর বিপুলাংশের ঐশ্বর্য্য, সাহিত্যের রত্নভান্ডার হতে বঞ্চিত হতো।

আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসীব করুন।

লেখকঃ দাউদুল ইসলাম
( কবি ও প্রাবন্ধিক )

তুমি কোথায়?

nit

তোমাকে খুঁজি!
পথেঘাটে, বনজঙ্গলে, পাহাড়ের কোণে,
হিমালয় পর্বতে, এখানে-সেখানে,
খুঁজেছি বহু এই পৃথিবীর সবখানে
পাইনি কোথাও, দেখি-ও-নি দু’নয়নে।

তুমি কোথায়?
খুঁজে পাই অন্তর দৃষ্টিতে,
আকাশে-বাতাসে, বজ্রপাতে, বৃষ্টিতে,
তুফানে, জলোচ্ছ্বাসে, সুস্বাদু ফলের মিষ্টিতে,
সাগর নদীতে আর তোমার সৃষ্টিতে।

তুমি সত্যি আছো!
পাহাড়-পর্বত হিমালয় বলে,
নদী বলে, পাহাড়ের ঝর্ণায় বলে,
পূর্ণিমার চাঁদ বলে, আকাশে তারা বলে,
মনের বিশ্বাস বলে, এ দেহের নিশ্বাস বলে।

নিতাই বাবু
২৬/০৮/২০২৩ইং।

বাঙালি সেকুলারের মনের পশু সঙ্কট

abu

১.
কোরবানি ঈদের পরদিন, রাত ৮টা। সুনসান পাড়া, নিরবতা বিদীর্ণ করে কেউ একজন তীব্র গতিতে বাড়ির কলাপসিবল দরজা ঝাঁকাচ্ছে। কল বেল থাকার পরও এভাবে দরজা ঝাঁকানো ভীতিকর, ভয় পেতে শুরু করেছি।

আতঙ্ক আর কৌতূহল মিশ্রিত মন নিয়ে দ্রুত দরজার সামনে গেলাম, মহল্লার এক ভায়ের ভয়ার্ত চেহারা, দু’হাতে সজোরে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন, ভেঙে ফেলতে চাইছেন। আমাকে দেখে কিছুটা সম্বিৎ ফিরে পেলেন, কাতর স্বরে বললেন,
– জলদি দরজার তালা খুলো, আমারে বাঁচাও.. প্লিজ বাঁচাও।

তাকে ঘরে এনে বসালাম। পরপর দুই গ্লাস পানি খেলেন। বোঝা গেলো খুব বিপজ্জনক কিছু ঘটেছে। জিজ্ঞেস করলাম,
– কি হইছে ভাই!
– তুমি তো জানো আমি দুইটা কোরবানি দেই। একটা পারিবারিকভাবে ঈদের দিন, আরেকটা একা দেই, ঈদের পরদিন।
– আমি তো জানতাম একটা দেন।

গত এক যুগ ধরে এই ভাইদের বাসায় একটা গরু কোরবানি দিতে দেখে আসছি, তিনি দুইটা পশু কোরবানি দেবার কথা বলায় কিছুটা বিস্মিত হলাম। সেই বিস্ময় ভাঙাতে তিনি জানালেন,
– না, একটা না। ঈদের দিন পারিবারিকভাবে কোরবানি দেই বনের পশু, আর ফেসবুকে সিরিয়াস হবার পর থেকে ঈদের পরদিন একা একা কোরবানি দেই মনের পশু।

একটা ঢোক গিলে জানতে চাইলাম,
– তা সমস্যাটা কি, ভাই?
– বিশাল সমস্যা। আজ দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর মনের পশুটারে জবাই দিবার জন্য পায়ে বাইন্ধা একটানে মাটিতে ফেলছি, মুহুর্তের মধ্যে ঝাড়া দিয়া খাড়ায়া গেলো, ফ্র‍্যাকশন অব সেকেন্ড খাড়ায়া রইলো, তারপর দিলো ঝাইররা দৌড়।
– বলেন কি! তারপর?
– আমিও পশুর পিছনে দিলাম দৌড়, টের পায়া ওই পশু গিয়া ঢুকলো সেলিনাদের বাসায়।
– সেলিনা? কোন সেলিনা! আপনাদের বাড়ির পাঁচ ছ’টা বাড়ির পর যে থাকে! মানে আপনার এক্স মানে প্রাক্তন..

কথা শেষ করতে না দিয়ে মহল্লার ভাই চেঁচিয়ে উঠলেন-
– চুপ। একদম চুপ। বিশ্বাসঘাতিনী, আইয়ূব বাচ্চু তাই বলেছেন ‘সেলিনা এখন অন্য কারো/আমার কেউ নয়..’
– ওহ! আচ্ছা। তবে সেলিনার কথা থাক, আপনার মনের পশুর কথা বলেন-
– বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে সেলিনাদের গেটে দাঁড়ায়ে আছিলাম, কিন্তু মনের পশুটা ঢুকছে তো ঢুকছেই। বের আর হয়না। একটু আগে বের হইলো সেলিনার বড় ভাই, সাথে তার মনের পশু, তার মনের পশু আবার দুইটা- যমজ এলসেশিয়ান কুত্তা।
– বলেন কি!
– হ রে ভাই! সেলিনার বড় ভাইরে দেইখা সালাম দিলাম, তিনি সালামের জবাব নিয়া জিগাইলেন, ‘এইখানে কি করতাছো, বিলাল?’
– তারপর!
– আমি জবাব দিবার আগেই সেলিনার ভায়ের মনের পশু দিলো ধাওয়া, আমার পাছায় কামড়ায়া কিচ্ছু বাকী রাখে নাই, ধাওয়া খাইতে খাইতে এইখানে আয়া পরছি।

মহল্লার ভায়ের মনের পশু গেছে পালিয়ে, তার ওপর প্রাক্তনের বড় ভায়ের মনের পশু এক জোড়া এলসেশিয়ানের ধাওয়া খাওয়ার ভয়ে চুপচাপ আমার বাসায় বসে আছেন, দেখে মায়া লাগছে, কষ্টও হচ্ছে।

২.
মাঝরাতে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। এমন বৃষ্টিতেই চার পাঁচজন বন্ধু মিলে পাহারা দিয়ে মহল্লার বড় ভাইকে বাসায় পৌছে দিলাম। সকালে ঘুম ভাঙলো ভায়ের ডাকে, বৃষ্টি নেই কিন্তু বারান্দায় গোড়ালি পর্যন্ত পানি। রাস্তায় পানি বেশী, ময়লাও। ওই পানি পেরিয়ে মহল্লার ভাই চলে এসেছেন। বিস্ময় গোপন করে জানতে চাইলাম,
– এতো সকালে! কোনো সমস্যা, ভাই?
– সমস্যা মানে বিশাল সমস্যা।

একটা মাত্র জীবনে মানুষকে বহু বিশাল বিশাল সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়! ভোরের আলোয় মনটা বিষন্ন হয়ে উঠলো, বিষাদভরা কণ্ঠে বললাম,
– চলেন, ছাদে বসি। চা খেতে খেতে কথা বলি..

দু’জনে ছাদে উঠেছি। ক’টা চড়াই, বাবুই আর দোয়েল খাবার খাচ্ছে। প্রতিদিন এদের খাবার দেওয়া হয়, না দিলে ভোরে এসে চেঁচামেচি শুরু করে। পাখিগুলো আমাদের দেখে উড়ে গেলো না, ভাই বললেন,
– এগুলির দেখি অনেক সাহস!
– উড়ে যাবার পাখা আছে, ভয় কেনো পাবে?
– তা ঠিক! তা ঠিক!

চায়ে চুমুক দিচ্ছি, ভাই উশখুশ করছেন কিন্তু কথা শুরু করতে পারছেন না। অগত্যা আমিই প্রশ্ন করলাম-
– কি সেই বিশাল সমস্যা!
– প্রথম সমস্যা হলো, সেলিনার ভায়ের মনের জোড়া কুত্তা যে আমারে কামড়াইলো, এর জন্য কি নাভির গোড়ায় ইনজেকশন নিতে হইবো!

দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললাম,
– না, ভাই। মনের ইনজেকশনই বড় ইনজেকশন। দ্বিতীয় সমস্যাটা কি?

ভাই একটু কেশে নিয়ে শুরু করলেন,
– কোরবানি ঈদের পরদিন মানে গতকাল তো মনের পশুরে কোরবানি দিতে পারিনি, দৌড়ায়া সেলিনাদের বাড়িতে পালাইলো।
– হুম।
– কিন্তু কেলেঙ্কারি কাণ্ড ঘইটা গেছে-
– ছি: ছি: বলেন কি!
– হ, আমার মনের পশু তো সেলিনার মনের পশুরে নিয়া জঙ্গলে ভাগছে..
– ওহ! এতে আর সমস্যা কি?
– এইটাই তো সমস্যা! মনের পশু এখন তো আর মনের পশু নাই, পুরাই বনের পশু হয়া গেলো।
– এইভাবে তো ভাবি নাই! তবে আগামী ঈদের পরদিন কোরবানি দিবেন কি!

ভাই স্বস্তির স্বরে জানালেন,
– ওইটা নিয়া চিন্তা নাই। মনের পশু পালানোর আগে তিনটা বাচ্চা দিয়া গেছে, নাদুস নুদুস, মনের মাঠে নাপাম ঘাস খায়া খায়া বড় হইতাছে–

খুব কৌতূহল নিয়েই জানতে চাইলাম-
– বলেন কি! আচ্ছা ভাই, বছরে বছরে মনের পশু কুরবানি না দিয়া, মনের পশুর খামারটারে এক্কেবারে উচ্ছেদ করলে হয়না!

আমার বোকামিতে ভাই মৃদু হাসলেন,
– এইটা একটা কথা হইলো! মনের পশু কুরবানি দিতে কইছে, খামার উচ্ছেদ করতে তো কয়নি। তাছাড়া খামার বন্ধ করলে প্রতি ঈদে ফেসবুকের পাকপবিত্র ময়দানে মনের পশু কোরবানি দিমু কেম্নে!

‘কে এমনটা বলেছে’ এই প্রশ্নের উত্তর জানার সাহস হলো না, তাই চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম,
– সমস্যা কি আরও কিছু আছে?
– হুম
– কি সেটা?
– আমার গফরে বুঝাইতে পারিনা আমি শুধু তারেই ভালবাসি, আমার ১২টা গফের একটা গফও আমার এই কথাটা বিশ্বাস করে না।

মুরগির ডিম ফুটে ছাগলের বাচ্চা বের হলেও এতটা তাজ্জব হতাম না, তাজ্জবতা কাটিয়ে বললাম,
– দু:খজনক, মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক–, এ তো অনেক বড় প্রব্লেমেটিক সমস্যা।
– এটা বড় সমস্যা না, সমস্যা হইলো আমার মনের পশুর লগে ওদের মনের পশুও যদি ভাইগা যায় তবে তো বিশৃঙ্খলা হয়া যাইবো।
– ভাগতে চাইলে ভাগতে দেন, বিশৃঙ্খলা হইবো ক্যান!
– বিশৃঙ্খলা হইবো না! ওগো ১২জনের মনে ১২টা পশু, আর আমার মনে পশু মাত্র ৩টা। অবস্থাটা বোঝা একবার, এক্কেবারে পরকীয়া হয়া যায় না!

সাহস নিয়ে বললাম,
– আপনার গফদের মনে আর বনে আসলে একটাই পশু, মানে ১২জন মিলে ১টা পশুরেই শেয়ারে পালতাছে, চিন্তা কইরেন না।
– এইটা হইলে তো ভালোই। কিন্তু একটারে নিয়া যদি বারো পশু পালায়! কিয়েক্টা অরাজকতা! এর থেকে পরিত্রাণের কি কোনো উপায় নাই!!

এই বিশাল সমস্যার সমাধান খুব কঠিন নয়, ভায়ের মনে হাইব্রিড পশু চাষ করলেই হবে। কিন্তু বলার ইচ্ছে হলো না, বাঙালি সেক্যুলারের মন বুঝা খুব কঠিন, তাদের মনের পশুরে বুঝা কঠিনতর, তাই ভায়ের চেহারার সাথে মিলিয়ে নিজের চেহারায় চিন্তার ভাব ধরে রাখি, যেনো কোরাসে চিন্তা করছি।

.
পুরানো লেখা।

বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ওগো মহান কবি, বিশ্বকবি
আজ তোমার জন্মতিথির
এই মিলন সন্ধিক্ষণে
লহ মোর সহস্র প্রণাম।

তুমি মোর গুরু, তুমি মোর পিতা
তোমার গানে পাই আমি কথা —-
সে গান আমার কণ্ঠে বাজে।

তার সুরের কোমল মূর্ছনায়
আমি মুগ্ধ, অভিভূত
নয়নের ধারা বয় অবিরত।

আমি খুঁজে পাই তোমায়
তোমারি গানে গানে।
হে কবি, তোমার ওই সুন্দর
দেবোপম কান্তি স্নিগ্ধতায় ভরপুর।
সেই রূপ আমার মনে আনে
প্রগাঢ় শান্তির অনুভূতি।

কে বলে তুমি নেই ?
তুমি আছ, তুমি থাকবে,
এই মানবজাতির হৃদয়ে
প্রতিদিন বহুদিন চিরন্তন ভাবনায়।

আয়না

ria

প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়ালে
দেখতে পাই আমার
অন্য এক অস্তিত্ব,
যেখানে আমার গোপন ক্ষতগুলো
দগদগে ঘা হয়ে ফুটে ওঠে।

আমার চারপাশে অসংখ্য আয়না
বার বার ক্ষতগুলোকে
চিনিয়ে দিতে চায়,
ক্রমশ সরে যাই নিরাপদ দূরত্বে।
সঠিক আয়নার সামনে
দাঁড়ানো হয়ে ওঠে না আর।

ছোঁয়াচে রোগ

একদিন বৃষ্টির তোড়ে ভেসে যাওয়া কিছু কথা
আজ বৃষ্টির জলের সাথেই ফিরে এসেছে
দৈবাৎ কোনো শকুনের চোখ পড়েনি
দৈবাৎ কোনো প্রকাণ্ড দেহি চিল ছোঁ মারেনি!!

হয়ত এভাবেই ফিরে আসবে পড়শির অধিকার
হয়ত এভাবেই ফিরে আসবে বাপ-দাদার উত্তরাধিকার!

ওদের কারো কারো চুনকাম করা অদ্ভুত মুখ
কেউ কেউ বিপন্ন প্রজাতির গুটি বসন্তে খুঁজে
ফিরছে পঞ্চম প্রজন্ম আগের হারানো সুখ!

তবুও আমাদের বেঁচে থাকে ভোগ আর সম্ভোগ
তবে কি…
করোনার মতোন এও কোনো ছোঁয়াচে রোগ?

সিকি শৈশব

তোমদের বয়সের তলে চাপা পড়েছে আমার
নৃত্যরত টনটন করে বেড়ে ওঠা শিশু—শৈশব
অথচ আমি ভাড়া থাকি—দেয়ালঘড়ির ভেতর;
আর্দ্র চোখদুটো মানুষের ইস্তেহার পাঠ করে
খুঁজে বেড়ানো আঁতুড় ঘ্রাণের নীল হাওয়া—
জেনেছি মানুষের সৌন্দর্য—ধূসরপক্ষ—ক্ষীয়মান

প্রথম রঙ—উঠতি জীবনের মুখোমুখি—বরইফুল
বয়ে নিচ্ছে রক্তমাখা চাটনি, প্রেম; মশলাবনের
হারানো বিজ্ঞপ্তি—ড্রয়ারভরতি নীরব অনুবাদ
সেই দৌড়—হরবোলা আয়োজন—কানামাছি
জংধরা ঝিনুকের লুকোনো ধার—কত মারকুট
নির্জন সম্পর্কের টিলায়—টিলায় সিকি দুলছে
আর জীবনের পেছনে দাঁড়ায় অযুত চেনামুখ।

যখন দীর্ঘশ্বাস উ‌ঠে বু‌কে

ch

‌বিশাল আকা‌শে তাকাই যখন দীর্ঘশ্বাস আট‌কে থা‌কে বু‌কে
‌ছোট ছোট মে‌ঘেরা এ‌সে দাঁড়ায় চো‌খের সম্মু‌খে
‌নিঃশ্বাস ছে‌ড়ে ভা‌বি….. কী আর করার আ‌ছে আমার
আকাশ‌কে জানাই অ‌ভি‌যোগ, কেন রে আকাশ
আমার বু‌কে ক‌ষ্টের খামার…

আকাশ আমায় ভা‌লো রা‌খে, সুখ পাই অনায়া‌সে
ভুল‌তে ক‌‌রি চেষ্টা
ম‌নে জাগাই ভা‌লো থাকার তেষ্টা
কাটা‌তে চাই না ছোট জীবন কেবল আয়া‌সে।

আকা‌শে ‌চোখ রা‌খি তাক
‌কেন ‌যে মন আকা‌শে দু‌র্বিপাক
ভা‌লো থাক‌তে চাই তবুও বিষণ্ণতা এ‌সে ধ‌রে ঝে‌ঁকে
আ‌মি চাই না কা‌লো মেঘ নেই ম‌নে মে‌খে।

চাই মন আকা‌শে ‌রোদ্দুর জ্বলুক ঝলম‌লি‌য়ে
সময় কেন আমায় রা‌খে না কষ্ট ভু‌লি‌য়ে
কান্না চো‌খে রা‌খি, ঠো‌ঁটে রা‌খি রাগ
জ্ব‌লে না আর মন দেয়া‌‌লে সু‌খের চেরাগ।

মন আকা‌শে কেবল কা‌লো মেঘ’রাই উ‌ড়ে
আর ম‌নের উচ্ছলতা যায় দূ‌রে
চাই শুভ্র মে‌ঘের মত মন থাকুক পুত প‌বিত্র,
এখা‌নে কেউ নেই আমার, কেউ নয় যেন মিত্র।

বুকটা লা‌গে ফাঁকা, যেমন মেঘহীন আকাশ
ফাঁকা বু‌কে জমা হয় মুহুর্মূহু দীর্ঘশ্বাস
‌বিষণ্ণ মে‌ঘের মত মন আজ
‌সেখা‌নে নেই আজ সু‌খের আওয়াজ।

.
(স‌্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)

নবীন সুর ও সংগীতে

da

… এভাবে ফিরে আসে অতীত,
প্রাচীন ঘোর
নামে শৈল প্রপাত
অন্তরে রঙ্গীন প্রভাবরি ভোর।
সহস্র রজনী কাটে নির্ঘুম
কেটেকুটে রচিত হয় কবিতা
কাটে দ্বিধা, সুধা… স্বপ্নচারিতা
কাটেনা কেবল-
তোমাকে দেখার নেশা…. শ্রুতি মনোহর!

এই যে বাজছে শুনি
শঙ্খের চুম্বনে তুমুল শঙ্খ ধ্বনি,
ধ্রুপদ রাগ,
সমুদ্র মন্থনে জেনে গেছি
তোমার সনে আগুনের গোপন প্রণয়!
জলও খুজে অতল
নবীন সুরে বুঝে বিরল সংগীত
আমিই কেবল খুঁজিনি জীবন
চিনতে যাই নি আসল- নকল।

করাতকল

সোমবার এলেই বাড়তে থাকে দীর্ঘশ্বাস।
করাতকলের মতো ঘ্যাষ ঘ্যাষ শব্দ
তীক্ষ্ণধারে কাটছে ধানি জমির ফসল।

জানা আছে সেই মন্ত্র – ভাঙ্গলেই আয়ু শেষ
বিঁধে থাকি – পাছে পড়ে যাই যদি –
অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ।

তবু ডাক দিয়ে যায় নিষিদ্ধ করাতকল
সানগ্লাস– ধরে রাখে চোখ
পুরুষ্টু আঙুলে ছুঁয়ে দেখি করাতকলের রক্তবমি।

আনন্দ– একটা সিনেমার টিকেট!
অতঃপর– ট্রাফিক সিগন্যাল! কারফিউ!
অবাক বিস্ময়– করাতকল!

গোলাপি চাঁদ

images (4)

ডাকছে গোলাপি চাঁদ
এই নির্ঘুম আধোরাত
জানি না তো অনুবাদ
ভাঙছে জোয়ারে বাঁধ।

এই হাওয়া মৃদুমন্দ
আঁকাবাঁকা জলতরঙ্গ
মনে হয় অতীন্দ্রিয়
শোনায় কত যে গল্প।

সরিয়ে মেঘের পালক
উঁকি দেয় দুরন্ত চোখ
জানি না কোন শ্লোক
তাকিয়ে থাকি অপলক।

বাতাসে ফুলের গন্ধ
আবার এসেছে বসন্ত
ভাসছে জলে প্রতিবিম্ব
ছুঁতে গেলে হই বিভ্রান্ত!