ধূসর পৃথিবীতে-

পাইনি কথাটি ডাহা একটা মিথ্যা হবে
মায়ের কাছে পেয়েছি, পেয়েছি বোনের কাছে,
পেয়েছি বন্ধুদের সাথে; জানা অজানা মানুষের মাঝে
ফিরিয়েও দিয়েছি শতশত এ জনমে!

আকাশ ছোঁয়ার সাধ মিটেছে
কাশফুলের নরম বিছানায় বিনিদ্র রজনীতে
কোলাহল করেছি নীলিমার সাথে বিমুগ্ধ বাক্যালাপে
আঁধার পেরিয়ে অরুণ আলোয় রাঙা পৃথিবীতে!

ঘুরেছি দেশে-বিদেশে; ছুটেছি অজানা পথে
তেপান্তরের মাঠে গল্পে মেতেছি কতো না বিচিত্র্য বিষয়ে!
তাজমহলের পদ ছুঁয়ে জ্যোৎস্না রাতে স্বপ্নের খেলা খেলেছি বর্ণিল সমাহারে
সাগরের নোলাজলে স্নান করেছি বিষাদের ছায়া মুছে দিতে।

বিস্তীর্ণ মরুর বুকে ক্যাকটাসের স্বপ্নযাত্রায় বিমোহিত হয়ে
স্বপ্ন বুনেছি সজীবতার, সঙ্কল্প করেছি দুর্গম পথে বিজয়ী হতে
হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু রেখেছি; হয়নি পদানত অপঘাতে
সপ্নের সাথে মিতালি করেছি অধরাকে কাছে পেতে।

কোথাও তবু যেন এক ভীষন্নতা, ধূসর এই পৃথিবীর রুক্ষতায়
সকল অর্জন যেন ম্লান হয়ে যায় ক্ষুদ্র এক বালিকার অবহেলায়,
সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল এক ক্ষুদ্র বালিকার অবহেলায়
এক ক্ষুদ্র বালিকার অবহেলায়।।

ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টার

rty আমি ততদিনে ফোন সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের কাজ ভালোবাসতে শুরু করেছি এবং বহাল তবিয়তে কাজ করছি। ফোন সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে আমাদের কাজ হচ্ছে ফোন সার্ভিস নিতে আগ্রহী গ্রাহকদের সহযোগিতা করা। এবং আমি তা অতি আনন্দের সাথে করার চেষ্টা করি। এই কাজ করতে করতে অল্প অসুন্দরের পাশাপাশি অনেক সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়।

অসুন্দর কিছুই আমি মনে রাখি না।
আর সুন্দর যা কিছু দেখি সবই চিন্তা চেতনা স্মৃতিতে জমা রাখি।

আমেরিকায় এসে তো এমনিতেই চারপাশ সুন্দর দেখি। আর ওয়ালমার্টে চাকরি করতে করতে সুন্দর সুন্দর মানুষজনও দেখি, মানুষজনের কাজকর্ম দেখে সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতাও হয়। আমেরিকার ইয়াং জেনারেশান হচ্ছে হুজুগে টাইপ। ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে খুব কম আমেরিকান, তারা চিন্তা করে জীবনের বর্তমান মুহূর্ত নিয়ে। আমাদের দেশে ভিটে মাটি বিক্রি করে হলেও বাবা মা চায় সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে। আর আমেরিকায় ইয়াং জেনারেশান ঘটি বাটি বিক্রি করে হলেও লেটেস্ট মডেলের গাড়ি, জুতো আর লেটেস্ট মডেলের ফোন কিনবে! এই জিনিসগুলোর প্রতি এদের কী যে নেশা!
★***********************★

আজ আমাদের কাছে ফোন সার্ভিস নিতে এসেছে অনেকেই। তাদের মধ্যে দুটো ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো। যাদের দেখা পেলাম, তাদের সাথে গল্প করে মনটা ভালো লাগায় ভরে গেছে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরেও ভালো লাগার রেশটা ছিলো।

এক হোয়াইট আমেরিকান ভদ্রমহিলা, বয়স আনুমানিক ৫৩ বা ৫৪ বছর হতে পারে, এসেছিলো ফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে। যদিও এটা বিভিন্ন ফোন কোম্পানির টাওয়ারের সমস্যা, তবুও আমাদের গ্রাহক আমাদের লক্ষ্মী তাই ফোন কোম্পানির হয়ে আমিই এই কথাগুলো ভদ্রমহিলাকে বুঝিয়ে বললাম। ভদ্রমহিলা ফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণ জানার পর এটা নিয়ে আর কথা বললেন না, চলেও গেলেন না। ভাবলাম, আরও কিছু জানতে চায়। ভদ্রমহিলার কাছে জানতে চাইলাম, আর কিছু জানতে চায় কিনা।

না, তিনি আর কিছু জানতে চায় না। শুধু বললো যে, আমার ইংলিশ উচ্চারণ নাকি তার কাছে খুব ভালো লেগেছে। পরবর্তী প্রশ্ন ছিলো আমি কোন্ দেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনেই ভদ্রমহিলা, ‘এমিলি এমিলি শীগগীর আসো’ বলে ডাকতেই যে এসে হাজির হলো আমাদের সামনে, অপূর্ব সুন্দরী ২৪-২৫ বছর বয়সী এক তরুণী। একেবারে আমাদের দেশের মেয়েদের মতো অভিব্যক্তি চেহারায়। মুখে সলজ্জ হাসি, কী অমায়িক ভাব চেহারাতে! ভদ্রমহিলা যখন জানলেন যে, আমি বাংলায় কথা কই, খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, এমিলিও বাংলা বলতে পারে!

আমেরিকান তরুণী বাংলা বলতে পারে শুনেই তো আমার চোখ ছানাবড়া! ভদ্রমহিলা জানালেন, এমিলি কলকাতায় থেকেছে এক বছর। অই এক বছরে বাংলা পড়তে ও লিখতে শিখেছে, বলতে তো পারেই। উনার দেয়া তথ্যের সত্যতা জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রমাণ করার জন্যই হয়তো তিনি এমিলিকে অনুরোধ করতে লাগলেন আমার সাথে বাংলায় কথা বলার জন্য। এমিলি নামের সুন্দরী মেয়েটি বাঙালি মেয়েদের মতোই খুব লজ্জা পাচ্ছিলো! আমিই পরিস্থিতি সহজ করে দিলাম, বাংলায় বললাম, এমিলি তুমি কথা শুরু করো।

এমিলি স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে বললো, “আমার নাম এমিলি, কলকাতাতে আমার স্বামীর সাথে এক বছর ছিলাম। ওখানে গড়িয়াহাটে থেকেছি। আধুনিক শিশু শিক্ষা বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম আমি। আজ আমি খুব আশ্চর্য্য হয়েছি এই ওয়ালমার্টে একজন বাঙালিকে দেখতে পেয়ে”। এমিলির বাংলা শুনে আমার আক্কেলগুড়ুম! মাত্র এক বছর বাংলা পড়ে এমন শুদ্ধ বাংলা বলতে আমি অন্ততঃ কাউকে দেখিনি। আমি এমিলির সলজ্জ মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।

বাংলাতেই জিজ্ঞেস করলাম, ‘এমিলি, তোমার সাথের মানুষটি তোমার কে হন?”

এমিলি বললো, ‘উনি আমার শাশুড়ী। আচ্ছা রীতা আন্টি, আপনি কি রান্নাও করেন এখানে? সব বাঙালি খাবার রান্না করেন?”

এমিলির কথা শুনে আমার জ্ঞান হারানোর অবস্থা। এই মেয়ে আমাকে আন্টি ডাকছে! বুঝলাম সে অলরেডী শিখেছে, আমাদের দেশে কাউকে নাম ধরে ডাকার রেওয়াজ নেই, তাই সে আমার নামের ব্যাজ থেকে নামটি নিয়ে সাথে আন্টি যোগ করে ফেলেছে। বাঙালি নারীর যে রান্নাবান্নাই প্রধান কাজ, এটাও সে জেনে গেছে! তাকে জানালাম যে আমি প্রতিদিন রান্না করি, এবং বাঙালি খাবার রান্না করি।

এমিলির শাশুড়ী এবার জানালেন যে উনারা মিসিসিপির অধিবাসী নন, উনারা এসেছেন ইন্ডিয়ানা থেকে। বললাম, তাই তো বলি, আমার ইংরেজি উচ্চারণ কেন তোমার পছন্দ হয়েছে! মিসিসিপির মানুষ তো আমার ইংরেজি উচ্চারণ কিছুই বোঝে না, আমিও মিসিসিপির ইংলিশ কিচ্ছু বুঝি না। মিসিসিপির মানুষদের সাথে কথা বলতে বলতে আমি ইংলিশই ভুলে যাচ্ছি— বলে হেসে ফেললাম।

এমিলির শাশুড়িও খুব হাসলেন। স্বীকার করলেন, সাউদার্ন ইংলিশ উনিও বলতে পারেন না, বুঝতেও পারেন না! ওরা মিসিসিপিতে এসেছে কারণ এমিলির স্বামী, অর্থাৎ ভদ্রমহিলার ছেলের চাকরির পোস্টিং হয়েছে মিসিসিপি এয়ারবেসে, তাই ছেলে- বৌমার কাছে উনি বেড়াতে এসেছেন। ভদ্রমহিলা বললেন, তাঁর ছেলে ফুল ব্রাইট স্কলারশীপ পেয়ে ইন্ডিয়াতে গিয়েছিল উচ্চ শিক্ষার জন্য, সাথে এমিলিও গেছে। এমিলি কলকাতায় বসে থাকেনি, শিশু শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করেছে। এক বছরে ওরা দুজনেই যতখানি বাংলা শিখেছে, এখানে ফিরে এসে কারো সাথে বাংলা চর্চা করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে দুজনেই খুব আপসেট ছিলো।

আজ আমার দেখা পেয়ে ভদ্রমহিলা মহাখুশি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন আমার মত একজন খাঁটি বাঙালির খোঁজ পেয়ে গেছেন বলে। আর চিন্তা নেই, ছেলেকে গিয়ে বলবেন বাংলা চর্চা করার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। উনার ফোন নাম্বার দিলেন, এমিলির ফোন নাম্বার দিলেন এবং আমার ফোন নাম্বার নিলেন। ফিরে যাওয়ার সময় ভদ্রমহিলা ইংলিশে ধন্যবাদ জানালো এবং অনুরোধ করে বললো, আমি যেনো মাঝে মাঝে ফোনে এমিলির খোঁজ নেই। আর এমিলি বাংলায় বললো, আবার কথা হবে রিটা আন্টি!

এমিলিরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কালো এক তরুণ এলো নতুন ফোন সার্ভিস কন্ট্র্যাক্ট নিতে। তখনও আমিই ছিলাম ডিউটিতে। কেউ নতুন ফোন সার্ভিস নিতে চাইলে আমাদের প্রথম কাজ হলো, গ্রাহকের ক্রেডিট হিস্ট্রি চেক করা। গ্রাহকের সমস্ত পারসোন্যাল ইনফর্মেশান কম্পিউটারে সাবমিট করার পর ক্রেডিট ব্যুরো থেকে রেজাল্ট আসে। সেই রেজাল্টের ভিত্তিতেই ঠিক হয় গ্রাহককে কোনো ডিপোজিট মানি জমা দিতে হবে কিনা।
ক্রেডিট হিস্ট্রি চেক করার কথা শুনে তরুণ একটু আমতা আমতা করছিলো।

তাকে বুঝিয়ে বললাম যে এটা ফোন কোম্পানিগুলোর বেঁধে দেয়া নিয়ম। ক্রেডিট স্কোর ভালো হলে গ্রাহককে কোনো ডিপোজিট মানি জমা দিতে হয় না। আর ক্রেডিট স্কোর খুব ভালো না হলে কিছু ডিপোজিট দিতে হয়। এক বছর সার্ভিস কন্টিনিউ করতে পারলে ডিপোজিট মানি ওরা মান্থলি বিলের সাথে ব্যালেন্স করে দেয়। সব শুনে তরুণ আধ ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসবে বলে চলে গেলো। আধঘন্টা বাদে সে সত্যিই ফিরে এলো, এবার একা আসেনি। সাদা আমেরিকান সুন্দরী এক মেয়েকে বগলদাবা করে এনেছে।

অভিজ্ঞ চোখ দিয়ে দেখলাম, এরা প্রেমিক- প্রেমিকা। ইদানিং প্রায়ই দেখি কালো ছেলেদের সাথে সাদা মেয়েকে গলাগলি করে চলতে। কিনতু সাদা ছেলের পাশে কালো মেয়ে এখনও দেখিনি। কে জানে, এদেশেও হয়তো সাদা চামড়ার কদর বেশী! বাচ্চা মেয়ে, কেমন অভিমানী অভিমানী মুখ করে পাশে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটির ক্রেডিট স্কোর চেক করে দেখলাম দুই ফোন লাইনের জন্য তাকে জমা দিতে হবে ৬০০ ডলার ডিপোজিট।
এবার ফোন পছন্দ করার পালা। মেয়েটি পছন্দ করেছে ‘ আইফোন ফোর’। দুই বছরের জন্য কন্ট্রাক্ট, প্রতি আইফোন ফোরের জন্য দিতে হবে আরও ৯০ ডলার।

টাকার পরিমাণ শোনার পর ছেলেটির মুখের চেহারা করুণ হয়ে গেলো। আমি তাকে অন্য ফোন পছন্দ করতে বললাম, যেগুলো দামে একটু সস্তা হবে। কিন্তু অভিমানী বালিকার জেদ, ‘আইফোন ফোর’ দিতেই হবে তাকে।ছেলেটি মেয়েটির দিকে অনুনয়ের চোখে তাকাতেই মেয়ে মুখ ঘুরিয়ে ছেলেটির পাশ ছেড়ে সোজা হাঁটা দিলো। ছেলেটি উতলা হয়ে বললো, বেইবি ফিরে আসো, তোমার পছন্দের ফোনই নেয়া হবে। বলেই আমাকে বললো, ঠিক আছে, আমি ৬০০ ডলার ডিপোজিট দিবো। ছেলেটিকে বললাম যে, তুমি তো অনেক বড়লোক মনে হয়, নাহলে ৬০০ ডলার ডিপোজিট দেয়া তো সোজা কথা না!

সে বললো, আমি খুবই সাধারণ মানুষ, কিনতু আমার ফিঁয়াসেকে এত ভালোবাসি যে এই টাকার পরিমাণ তুচ্ছ আমার কাছে। শেষ পর্যন্ত প্রিয়ার আবদারে সে ৬০০ ডলার ডিপোজিট, ২০০ ডলার ফোনের জন্য , ৮০ ডলার একটিভেশান ফি দিয়ে দুটি ‘আইফোন ফোর’ নিতেই মেয়েটির মুখ অনিন্দ্য সুন্দর হাসিতে ভরে গেলো। তরুণ যখন চুক্তিপত্রে সাইন করছিলো, আমি জানতে চাইলাম তারা কবে বিয়ে করতে যাচ্ছে। সাথে সাথে তরুণ বললো, ‘এই ডিসেম্বারে আমরা বিয়ে করবো”

আর মেয়েটি ধীরে সুস্থে বললো, “আমি এখনও জানিনা কবে বিয়ে করবো। এক বছর আগে আমাদের এমগেজমেন্ট হয়েছে, আরও সময় দরকার বিয়ের ডিসিশান নিতে।” মেয়েটির বয়স ১৮, ছেলেটির বয়স তো আমি আগেই জেনেছি ২৬ বছর। মনে মনে স্বীকার করতেই হলো, এই জগত সংসারে সব দেশেই মেয়েরা খুব হিসেবী হয় এবং ছেলেরা হয় বেহিসেবী। ছেলেদের সাথে সম্পর্ক তৈরির আগে প্রায় প্রতিটি মেয়ে সম্পর্কের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়, সম্পর্ক চলকালেও সম্পর্কের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় সম্পর্কটা রাখবে কিনা।

*এবং পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখলে জানা যাবে, বেশীর ভাগ প্রেমিক- প্রেমিকার ব্রেক আপ হয় প্রেমিকার হিসেবী স্বভাবের কারণে, আর ছেলে-মেয়ের বিবাহিত সম্পর্ক ভেঙে যায় ছেলেদের বেহিসাবী স্বভাবের কারণে।* চুক্তিপত্র সাইন হয়ে যেতেই দেখি মেয়েটির মুখে হাসির বন্যা দেখা গেলো, ছেলেটির মুখেও প্রশ্রয়ের এক অপূর্ব হাসি। আমার দেখে এত ভালো লাগলো যে ছেলেটিকে বলেই ফেললাম, ‘জীবনে টাকা আসে টাকা চলেও যায়, কিনতু এমন মুহুর্ত বার বার আসে না। তোমাদের সুখী সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইলো”।

বাড়ি ফিরে আমার স্বামীর কাছে এমিলি আর তার শাশুড়ির গল্প করলাম। কিছুক্ষণ পরে আমার স্বামী বললেন যেনো নেক্সট ছুটির দিনে এমিলি, তার বর আর এমিলির শাশুড়িকে আমাদের বাড়িতে ডিনারের নেমন্তন্ন করি।
মনে পড়ে গেল, এমিলির শাশুড়ীও আমাকে বলেছিল, মাঝে মাঝে যেনো এমিলির খোঁজ খবর নেই!★★

কিন্তু আমি এমিলির শাশুড়ির দেয়া ফোন নাম্বার লেখা কাগজের টুকরোটি আর খুঁজে পাইনি। খুব সম্ভবতঃ এমিলির শাশুড়িও আমার ফোন নাম্বার লেখা কাগজটি খুঁজে পাননি।

তাই আমাদের আর কখনো কথা হয়নি।

— ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টার

প্রার্থনা এই আমার

chho

প্রার্থনা এই তোমার নিকট
ওগো মহান প্রভু
পূণ্যিতে দাও ভরে তুমি
আমার মনের বিঁভু।

অশুদ্ধতা মনের যত
দূর করে দাও ত্বরা
নাড়ে যেন শান্তি এসে
মন দুয়ারে কড়া।

পাপে ভরা জীবন আমার
আছি কষ্টে আমি
মাফ করে দিয়ো পাপ আমার
ওগো অন্তর্যামী।

ভ্রান্তির পথে হাঁটছি সদা
পাই না পথের দিশা
চোখের সম্মুখ খাড়া আছে
পাপের অমানিশা।

সোজা পথে চালাও প্রভু
যে পথে নেই কাঁটা
পাপের কাঁটায় রাখলে যে পা
সুখে পড়ে ভাটা।

এই দুনিয়ার মোহ আমায়
অন্ধ করে রাখে
রঙ তামাশা মন্দ কর্ম
কাছে কেবল ডাকে।

বাঁচাও প্রভু মোহ হতে
মন শুদ্ধ দাও করে
মনের ভিতে পূণ্যির খামার
দাও আল্লাহ দাও গড়ে।

কালকেউটের বাসর

dau

আমি আর কই যামু-
যহন আমারে চিনে না আমার খেতি জমিন
যহন আমারে সে ফিইরা চাহে না, কাদা জলে
মাখতে দেয়না- গড়তে দেয়না কস্তূরী হরিণ…
আমি এখন কোন ক্ষেতে চালামু হালের লাঙ্গল
চাষের কলা কৌশল মেনে চিনে- কোন আশায়
দিমু নিড়ানি সাফ করমু আগাছার জঙ্গল;
আমি না হয় মগ্ন আছিলাম নিশান্তের ধ্যানে-
শ্রাবণে গানে জলধির নৃত্যে
তাই বইলে-কি জমিন ভুলিতে পারে, বেগানা কৃষাণের মদমত্তে!
এখন জমিন জোড়া বধ্যভূমি- বুকের ধন ছেঁড়া স্বপ্ন সমাধি
কান্নার গহীনের বাদ্য বাজে, বাজে শঙ্খধ্বনির মর্মর
রাতের পাখীদের ক্ষুধার্ত শীৎকার- মত্ত শুধু কালকেউটের বাসর!

আমি কোন খানে পামু আশ্রয়, কারে করমু পথের সাথী
যেখানে বেবাকতেই কয় তপ্ত কথা- তয়, কে হইবো অগতির গতি
কে চাইবো ফিরে- অহন
কে বুঝবো এই অধম নাখান্দা নালায়েক (অ)কবির মন
ভিটে বাস্তু হারা- দুদণ্ড ঠাই নাই যার
পথের দিশা হারা- বুকে খণ্ড বিখণ্ড মেঘ, বিচ্ছিন্ন আবেগ
বাড়িয়ে চলিছে সংকট!
কলিজা পোড়া গন্ধ নির্গত দীর্ঘশ্বাসে
বুঝতেইতো পারিনি তুলোর মতন মেঘে- তুষের আগুন পুষে রেখেছে!

৭.৭.১৭

ভালো থাকা ভোরগুলো

‘তোমরা সবাই ভালো থেকো’- বলতে বলতে একটি ছায়া
আচমকা মিলিয়ে যায়। একশত সতেরো বছর,
বেঁচেছিলেন লালন- ডাক তুলে একটি টিয়ে এসে
বসে সবুজ কার্নিশে। একটি ভোর তার সমগ্র যৌবন নিয়ে,
লিখেছিল যে কবিতা, সেই কবিতাটি কেবল
‘কবি,কবি’ বলে সারা দুপুর ভরে কাঁদে।

আসলে কান্নাকামী সমুদ্রই কেবল জানে সকল
প্রাণের দুঃখবাদ। নতুন ভোর উঠবে বলে যে কদমফুল
মাটিতে ঝরে পড়ে, সে ও নিজস্ব নিয়মে লিখে,
বিগত বোশেখের সরল পংক্তিমালা। আর মাটির গভীরে
ক্রমশ বড় হতে থাকে কঙ্কালের বিশালত্ব।

‘ভালো থেকো ভোর, ভালো থেকো কালের সুদূর’
এমন উপাখ্যান ছড়িয়ে নদী ও মেঘ গড়ে প্রবাহের মিতালী।
বড় অসহায় হয়ে এর পাশে এসে দাঁড়ায় জীবনের স্মৃতিগুলো।
#

………………………………………
[ সৈয়দ শামসুল হক- শ্রদ্ধাষ্পদেষু ]

উষ্ণ বাউর

rtyu

নয় তো মাটির চাপায় উড়ে বসবে
এক নাক দুর্বলা ঘাসের বাসনা;
এ কি দর্পণের গায়ে অনল জ্বেলে না
শুধু সেলফিতে ভূত পুত রঙিলা
আজও দেখি দৃশ্যপটে কান্না!
ভাদ্র শেষে আশ্বিনের মার্জনা
আর উষ্ণ বাউর বাজনা;
মনের ময়লা কতখানি পরিষ্কার
এই কার্তিকে হবে পরীক্ষা-
জোছনা সলক আর বুঝি চায় না
গলার মালা সেলফিতে বয় না।

৩০ ভাদ্র ১৪৩০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২৩

শহরতলীতে ইভনিং ওয়াকের ইমেজারি

ind

ক্রমশঃ দিনের আলো ফিকে হয়ে আসে
আবছায়া আঁধারে শহর ঢেকে যায়
দূরে নদীর জলে বোটগুলো ঢেউয়ের তালে তালে দোলে
আরও দূরে নদীর ওপারে শহরের
উঁচু উঁচু ইমারতের মাথা মিশে আছে মেঘেদের দেশে
পাশে প্ল্যানেটোরিয়ামের ডিম্বাকৃতি চূড়া
গাছের ডাল হেলে হেলে পড়ে যায় জলের উপর
পাতাগুলো জলের সাথে ভেসে ভেসে ওঠে
ইঁটের রাস্তা আর পাশে জগিং ট্রেইল সোজা চলে গেছে বহুদূর
যেতে যেতে হাঁপিয়ে গেলে বেঞ্চিতে বসে যাই
পাশে হেঁটে যাওয়া হাঁসগুলোকে হাত নেড়ে নেড়ে ডাকি
তারা প্যাঁক প্যাঁক করতে করে শাবকগুলি নিয়ে রাস্তা পেরিয়ে যায়।

ষোলকলা কৌশল

আমি অকর্মা বলে- বাকীরা লুটাইতো গাছে ছড়ার মুনাফা সুকৌশলে। বরই পাকলে বরই, জাম পাকলে জাম, গাছে ছড়তে পারতাম না বলে ঢিল ঢাল ছুড়ে যা পড়তো তাই খাইতাম।
ওরা মচকা মেরে খেতো কচকচে পেয়ারা, কাঁচা আম।
…তলায় থেকে আমি হুদাই চিল্লাইতাম।

শীতের মৌসুমে আমাদের খেজুর গাছ খোদাই হতো। গাছির বাটালের ধারে সব ক’টা খেজুর গাছ তৈরি হতো পরিপাটি রমণীর সাজে, চেঁচে চেটে যাদের গ্রীবার নিচে চাঁদের মত চকচক করতো উজ্জ্বল মোহনা, সিনা সন্ধি, যেখান থেকে ঝরতো ফোঁটা ফোঁটা রসের ধারা। আমি ঐ একটা গছেই চড়তে পারতাম, খোপ বেয়ে বেয়ে। রসের লালসায় সকাল সন্ধ্যা হতাম উন্মুখ, নিকষ বরষায় প্রেতে দিতাম জিহ্বা, লুটাইতাম গাছে চড়ার সুখ।

রোজ রোজ।
আমিও করতাম মধুবালার খোঁজ। যার জন্যে- জাগতো মালতী লতার দোলা, কোকিলার সুরে গাইতাম গান, ডাকতাম গোপনে- মোহন জলে, হংসমিথুন লীলায়, অবিরাম তই তই বোলে।
এই মর্ম জ্বালা। সাপ লুডু খেলা। তুরুপের তাস। চড়াই উৎরাই ফেরিয়ে শিখি আরোহণ। ষোলকলা কৌশল। রসে- কষে মাখামাখি, চিনি সাধের জীবন।

জ্বর জ্যোৎস্না

একটা আলজিভ বিকেল। নুডলসের মতো
—চিকন। ভেজা শরীর, উর্বর বুক দেখা যায়।
সে দৌড় দিতে ভুলে গেছে। রেশমগুটি থেকে
সুতো হাসে। শাদা কবুতর—তিলগ্রন্থ ওড়ায়-
চুম্বন আর উরুতে বেড়ে ওঠে রুটিকারখানা

মৌনসন্ধ্যা। সেরকম গাঢ়, ভেতরে গোপন জ্বর
জ্যোৎস্না নেই। হারিকেনের বিষণ্ণ রঙ, উপল
পাতার তল ভেসে আসে। তাতে জেলেবাড়ি
পার হওয়া যায়। শানবাঁধানো—পুকুর। পাখিরা
গোসলে সাঁতরায়, পৃথিবীর সব আনন্দ তাদের।
রবারগাছ মূর্ছাঘুমে—মনে হয় নৃত্য করা হলুদ
পাতা টের পেলে প্রবেশের পথ খুঁজে বেড়াবে।
দূরের ধানকল ঘাসের আত্মহত্যা থামিয়ে
সিল্ক রোদের মাঠ শুয়ে পড়ে। নতুন পুনর্পাঠে…

কত অচেনা পথ হয়ে যায় চেনা

chh

চেনাপথগুলো ছেড়ে আসি, সে পথ হয় অচেনা
হয় না সেই পথে হেটে আর মুগ্ধতা কেনা;
অচেনা পথ হয় চেনা হাটলে জীবনের বাকে বাকে
ভিড় জমায় মনে নতুন মুগ্ধতারা ঝাকে ঝাকে।

চেনা পথ অচেনা হয়, তুমিও কি আমার অচেনা পথ
হয়নি চেনা তোমাকে আর,
হলো না আর নেয়া ভালো থাকার শপথ
তোমার আমার সম্পর্কটা হয়ে ওঠলো না মায়ার।

তুমি আমার অচেনা পথ, আমিও হইনি চেনা তোমার
কেউ কাউকে বলতে পারিনি, ভালোবাসি বেশুমার;
কেমন যেন সময় আমাদের সম্পর্ক করতে থাকলো বিচ্ছিন্ন
আমরা তবুও হাঁটি অচেনা পথ ধরে, পাশে আছি, মন ভিন্ন।

কোথায় হারালাম, কেন এমন হলো, হলো না কেউ কাউকে চেনা
তুমিও হতাশায় নিমজ্জিত, সত্যল? বলবেনা?
হাসিহীন তুমি থেকে যাও একাকি
ভেবে দেখো সময় কতটুকু আর বাকি।

দুজনার পথ দুটো, অথচ একই পথে হাটি তবু
আমরা বিষণ্ণতা কুড়িয়ে অসুস্থ করে রাখি মনের বিভু।
সমঝোতায় হলো না আর সংসার পাতা
আমাদের জীবন নামায় বিষাদের কাব্যরগাথা।

দীর্ঘশ্বাসের লহর ছড়িয়ে দিই অচেনা পথে হেটে হেটে
কেউ আর দেখি না কারো মন ঘেটে
চুপ কথার রাজ্যে হারিয়ে আমরা সুখ খুজি
কখনো মন ব্যেথায় ডুবে গেলে আলগোছে একাকিত্বের বুকে মুখ গুজি।

.
এই মেঘ এই রোদ্দুর দীর্ঘশ্বাস

একটি বাউল গান [] তোমার কোনো পরিচয় নাই

তোমার কোনো পরিচয় নাই,
আমি যদি ডাক না দেই
আমি তোমার ছবির বাহক
সাথেই আছি- কোথায় নেই!

১। সব কর্তৃত্ব আমায় ঘিরে
পাপ আর পূণ্যের সব বিচার,
তোমার হুকুম পালন করি-
আমার তো নাই অধিকার,
আমি ছাড়া তুমি বেকার,
লুকিয়ে আছ আলোতেই ।।

২। যুগে যুগে তোমায় খুঁজে
করছে যারা আত্মদান,
কোথায় নিয়ে রাখছো তাদের
কিসের বিচার, কি বিধান!
বলো প্রেমের কি প্রতিদান
দূরে সরাও নিমিষেই ।।

৩। ফকির ইলিয়াস বলে মায়ার
কঠিন শিকল নিয়ে পা’য়
পারি না আর চলতে আমি
বেড়েই চলছে দেনা-দায়
বাঁঁচবো আছি এই ভরসায়
শুধু তোমার পরশেই ।।

.
#
নিউইয়র্ক

এলোকেশী

তখন তার এলোচুল বাতাসকে করছে শাসন
এমন মেঘলা দিনে ভিজতে ইচ্ছে করে ভীষণ
সুবাসে তার মাতাল চারপাশ যখনতখন
এমন নেশায় কতবার হয়েছে ইচ্ছে মরণ
চাতকের মতো চেয়ে থাকি, হয় যদি বর্ষণ
বাড়ছে তৃষ্ণা যত দেখি ঢেউয়ের আন্দোলন।

long-hair-girls-dp-28

ধূসর এ আঙিনা তার পরশ পেয়েছে যখন
এই অবেলায় হলো যেন বসন্তের আগমন
হাসি তার নির্ঝরিণী বারবার হচ্ছে প্রসারণ
ভাসছে চাঁদের খেয়া করতে তাকে দর্শন
কোথায় শিখেছে সে এমন নিখুঁত বশীকরণ
সকাল-বিকাল করছে কেবল হৃদয় হরণ।

জানি আসবে জ্বর তবু মন শুনছে না বারণ
আসছে ঝড় চোখের ভেতর করছে সম্মোহন
চোখবুজে যতবার করছি আত্মসমর্পণ
নির্ঘুম সারাবেলা তবু স্বপ্নলোকে বিচরণ
জানবে না কেউ এই এলোমেলো হবার কারণ
শুধু নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে থাকবে তার আলোড়ন।

একদিন তোমাকে ফেরাবে

—————-একদিন তোমাকে ফেরাবে

সেই স্মৃতিগুলো,
একদিন তোমাকে ফেরাবেই;

সেই পুরাতন পথ!
আগোল খোলা আকাশ তো, কত কিছু ভুলেছো? খসে পড়া পালকের মতো
ঝরে গেছে কতক? কাঠবাদাম তলে, বৃষ্টি ছোঁয়ার মাতম;
ঝরা পাতায় সাঁড়ি বেঁধে চলে পিঁপড়ার দল। স্মৃতির ভির করা উঠানে
সজনে ডালে ভেজা কাক; উঁকি দিয়ে দ্যাখে
এখনো কতক খসে পড়া স্মৃতি তোমার।

ফিরবে বলে বাসন্তী বেলা
তোমার আরধ্য বিরহ অভিমানে কাঁদে; বলে উঠে চুপিসারে
অরন্য বিলাপ। ঝিঁর ঝিঁরে বৃষ্টিতে নেতিয়ে পড়া লজ্জাবতী যেন
বৃষ্টির ছোঁয়া মুর্চ্ছা যায়।

আঙ্গিক খোলসে লুকিয়ে ছিল কিছু স্মৃতি
তুমি তাও ভুলে যেতে বসেছ; বিষম খেয়ে তন্দ্রা
অভিমানে আবসা পথে হাঁটে
যাক তা সরে যাক আসমান জমিন ভেদে
তবু্ও যাতনা বার বার ফিরে; কটুম পাখি যায় ডেকে
একদিন তোমাকে ফেরাবে।
========

ভাদ্র মাসের তাল

কথা প্রসঙ্গে এবার ভাদ্রের কথায় আসি
আগে যখন কালে-ভদ্রে ভাত বাসি হতো
এখন বাসি হয় নগদ টাকায় কেনা হাসি
তবুও আমি এই ভাদ্র মাস বড় ভালোবাসি!

আগের দিনে ভাদ্রের গরমে পাকতো তাল
এখন কথায় কথায় গরম হয় মাথার চাল
আগে চুল পাকলে ফকফকা সাদা হতো
আর এখন হয় নিঁখুত কালো অথবা লাল!

তেজারতিতে তেজি ভাব মোটেই আর নেই
তবুও বায়নার চৌকাঠে সখিনা ফুলায় গাল
আপাদমস্তক কাপড়ে ঢাকা তবুও উলংগ দেহ
আশেপাশে দশ-বারোজন হাঁটে… তবু্ও
মুখ খিচিয়ে বলে..আমার সঙ্গী নাই কেহ!
——————

জালস্বপ্ন

বড্ড স্মৃতিভ্রম হচ্ছে ইদানিং আমার
যান্ত্রিক শহরে এসে সব ভুলে যেতে বসেছি আমি
এখন আর ঘুম ভাঙ্গেনা দোয়েল কয়েল শালিক আর ময়নার গান শুনে!
ভুলতে বসেছি মধ্যরাতে ঝিঝির মিষ্টি-মধুর ঘুম পাড়ানি সুর।
আমি এখন হয়তো আর পরখ করতে পারবো না; কোনটি শালিক কোনটি ময়না!
কলমিলতার ফাঁকে ফাঁকে ডাহুকের ছানা হয়তো আজো ভেসে বেড়ায়
ঝুরিঝুরি হয়তে আজো বিরহ বেদনায় নিস্তব্ধ রাত কাটায় কোন গাছের ডালে
চোখে এখন আর ভাসেনা সারি সারি শ্বেতবলাকার সান্ধ্য-আয়োজন
‘নিম’ বলে হুতুম ডাক দিয়ে যায় হয়তো আজো মহাযাত্রীর অন্তিম শয়ানের পাশে!
কুসংস্কার বলে হয়তো উড়িয়ে দেই অতি-আধুনিক সভ্যসমাজে-
তবে কি মরেনি সেইদিন যেইদিন হুতুম ডাক দিয়েছিল তোমার চালের ওপর দিয়ে।
জোড়া শালিক দেখে তুমিও কি স্বপ্ন দেখ নি ভালোবাসা পাওয়ার
হয়তো মিথ্যে হয়তো ছিল অলীক; ছিল মিথ্যে স্বপ্ন, তবুও দোলা লেগেছিল জলে!
টুনটুনি হয়তো এখনো বাসা বুনে নিচু কোন গাছের ডালে
ছোট্ট পাখিটি স্বপ্ন অশেষ; শুন্য নীড়ে হাহাকারে মাতে ঝড়ের শেষে
বাবুই পাখির শক্তগাথুনি বাসা বাঁধে তাল তমালের পাতায় পাতায়
ঝড়ের তালে দোলে; দুলছে যেন মহাকাল, ভাঙে গড়ে অনন্তকাল।
সাজের বাহারে ময়না টিয়া, বাঙালি ললনার প্রতিমূর্তিরূপে
জন্মান্তর বাঙালি মিত্রতা গড়েছে বিনে সুতার মালায় প্রকৃতির সাথে
তবুও মানুষ আজ ছুটে চলেছে যন্ত্রের নগরে মিথ্যে সুখের আবাহনে।