মিড ডে ডেজারট এর সকল পোস্ট

মিড ডে ডেজারট সম্পর্কে

I shall say bye to my sleepless night if “tomorrow” comes to me with a message that I’m waiting for last twenty years, Then I shall pray for one more “tomorrow” to send you back pieces of clouds bottle of dew and a “one-sea tears”!

কবিতাঃ কালরাতে আমার এককোটি বিষন্ন বছর কেটে গেছে

কাল রাতে আকাশ বউ সেজেছিল; সূর্যের ঘরে যাবে!
যদি তারা নিভে যায় তাই পথে পথে জোনাকি ছিল
বাহন হিসেবে চার বেহারার পালকি ছিল;
কাল রাতে আকাশ সমুদ্ররঙ শাড়ি পরেছিল!

এরপর হঠাৎ করেই আকাশটা হারিয়ে গেলো!
সাথে জল-জোছনার প্রণয় হারালো
ঘাসফড়িঙয়ের নৃত্য হারালো; তুমি হারিয়ে গেলে
এবং নিমেষেই আমার কবিতার খাতাটাও।

অন্তর জ্বালিয়ে হন্যে হয়ে আমি তোমাকে যেই খুঁজতে লাগলাম
ঈশ্বর বললেন, “তুমি, সে এবং পৃথিবীটাই ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে গেছে”।
কাল রাতে ব্লাকহোলে তোমাকে হারিয়ে আমার চোখে জল এলো;
বান হলো এবং
নূহের যে নৌকাটা কোন কিছুতেই ডোবার কথা নয়
সেটাও কালরাতে চোখ-জলে ডুবে গেলো।

কাল রাতে আমার এককোটি বিষন্ন বছর কেটে গেছে!
অতঃপর ঈশ্বর সদয় হলেন; এবং গোটা ব্ল্যাকহোলকে তোমার চুলে মিশিয়ে
পৃথিবীটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন;

অথচ তোমাকে আমার করে আমাকে দিলেননা!

কবিতাঃ প্রশ্ন করোনা

কবিকে কখনো প্রশ্ন করোনা; বিস্মিত হবে- কবিরা মিথ্যে জানেনা
কবিকে কখনো প্রশ্ন করোনা ; বিস্মিত হবে- কবিরা সত্য মানেনা !

কবি মানেনা ভালোবাসা কোন গাঁয়ে থাকে- কবি জানে এক মায়াঘর
কবি আকাশ মানেনা – চোখের কোণে মেঘ এঁকে বলে, আকাশ পর !

কেনো কবিতায় জল ছবি আঁকে, কবিকে প্রশ্ন করোনা ; চোখের কোণে ঝরণা নামে
নিশীথ জোৎস্নায় কেনো বর্ষণ হয়, প্রশ্ন করোনা; কবি জল কিনে জোছনার দামে!

কবি নদি আঁকে, মেঘ আঁকে, কনে দেখা সন্ধ্যে আঁকে; একলা রাতের নৈঃশব্দ আঁকে সঙ্গোপনে
তারার মেলায় স্মৃতি আঁকে, কবি সুখ আঁকে, কষ্ট আঁকে, মাথার খোঁপার ফুল আঁকে-একলা বনে !

কবি কেনো সমর্পিত হয়- প্রশ্ন করোনা; কেনো বিদ্রোহী হয় বুকের আগুনে
বুকের গহীণে কেন ভালোবাসা নদি হয়ে বয়ে যায় কোন নিষিদ্ধ ফাগুনে !

কবি প্রেম, কবি কম্পন, কবি গাঙচিল, কবি মায়ানীল, কবি স্বর্গ সুখের নিষিদ্ধ বন্দর
কবি দেবি, কবি বেহুলা ! প্রশ্ন করোনা তার ভেলায় ভাসে কোন গোপন লখিন্দর !

(ফুটনোটঃ বেশ আগের লেখা। কেউ কমেন্ট করলে আমার জবাব দিতে কিছুদিন দেরি হতে পারে!)

কবিতাঃ মনলতা

এডামের বিষন্নতার জন্য বায়ু পরিবর্তন অতীব জরুরি এবং অত্যাবশ্যক;
অন্যথা হলে তাঁর নিজের চেয়ে মহাবিশ্বের অধিকতর ক্ষতি হবে বলে
একটা নিশ্চিত গোয়েন্দা তথ্য ঈশ্বরের হাতে এলো।
অতঃপর এডাম আসমান ছেড়ে প্রথমে নিকষ কালো রাত্রির কাছে গেলেন
এবং সেখানে মুগ্ধ হয়ে তিনি টানা এক কোটি বছর কাটালেন।

এককোটি বছর পর এডামের বিষন্নতা নিরাময় হলোনা!

এবার রাত্রির পাশ ছেড়ে এডাম দিগন্তের কাছে গেলেন
যেখানে আকাশ দলবেঁধে সমুদ্রের কাছে নেমে এসেছে;
তার পরনে সন্ধ্যারঙ শাড়ি, খোঁপায় তারার মালা!
রাত নামলেই ওখানে জলে জোছনা মিশে রঙধনু হয়।
সেখানেও তিনি এক কোটি বছর মুগ্ধ সময় কাটালেন!

দ্বিতীয় এককোটি বছর পরও এডামের বিষন্নতা নিরাময় হলোনা!!

এইভাবে পাহাড়ি উপত্যকায় তাঁর তৃতীয় এককোটি বছর!
শেষে হতাশ এডাম আসমানে ফিরবেন বলে যেই পা বাড়ালেন
হঠাৎ অদূরে তাঁর চোখ আটকে গেলোঃ
চল্লিশফুট বাই চল্লিশফুট একটা জলাধার;
তার পাথরবাঁধা ঘাটে একখন্ড সবুজ গায়ে মেখে
এক নারী হেলান দিয়ে বসে আছেন।
কাছেই ডালে ডালে গন্ধম ফল, এখানে সেখানে নির্ভীক এনাকোডা
এবং পাহাড় বেয়ে জোছনার অবিরাম ঝর্ণা।
নারীটির চুলে এডামের এক কোটি বছরের সেই মুগ্ধ রাত্রি মিশে আছে
দেহ জুড়ে পাহাড়ি উপত্যকার স্নিগ্ধ বাঁক
এবং চোখে সেই রঙধনু দিগন্ত;
যেখানে আকাশের সাথে সমুদ্রের কোটি বছরের নিরন্তর সঙ্গম।

এবার আসমান থেকে উৎফুল্ল ঈশ্বর মর্তে নেমে এলেন
এবং বললেন, “আমার গোলাভরা মুগ্ধতার বারো আনা বেচে দিয়ে
এই নারীর নির্মাণ খরচ মিটিয়েছি; ওর নাম ইভ”!
মৃদু হেসে এডাম বললেন, “সে আমার মনলতা”।

আমার নাবলা কথা এবং ফেবু মেমোরি থেকে একটা পোষ্ট

Ben এর সাথে এক দশকের মধ্যে আমার তিনবার দেখা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ এর প্রথম দিকে। তিনবারই আফ্রিকায়; তিনটা ভিন্ন দেশে। সে আমার অনেক সিনিয়র এবং হেডকোয়ার্টারে একজন বিগশট। শেষবার খাবার টেবিলে সে আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিল, “সব কথা কী পরিবারের সাথে শেয়ার করেছো?” জবাবে বলেছিলাম, তাঁরা কিছু তো জানেই; ফেইস বুকেও শেয়ার করেছি”। তবে কিছু কথা বলা হয়নি। যুদ্ধের সময়ের কিছু দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা।

আসলে কিছু কথা বলার ইচ্ছে হয়নি। কিছুদিন আগ পর্যন্তও এই ইচ্ছেটা জাগেনি। কিন্তু গত দু’ তিনদিন ধরে কেন জানি সেইসব নাবলা কথা লিখে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ থেকেই লিখবো ভাবছিলাম। ফেবু ওপেন করে দেখি, মেমোরিতে দুটি পোস্ট। একটা আমার ফেবু ওয়ালে অনলি মি-তে (১৫ নভেম্বর ২০১৭) লেখা একটা কবিতা বইয়ের ড্রাফট রিভিউ। দ্বিতীয়টা পাকিস্তানে এক সন্ধ্যায় সিন্ধ নদ অতিক্রম করার সময় আমার অনুভূতি নিয়ে একটা পোস্ট (১৫ নভেম্বর ২০১২)।

এখন খুব সংক্ষেপে এই সিন্ধ পাড়ে প্রাচীন সভ্যতা, রিসেন্ট ইতিহাস এবং আমার অপূর্ণ ইচ্ছার কথা শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে। আফ্রিকার যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার নাবলা বিষয়গুলি আজ তাই পেন্ডিং রেখে দিলাম।

আমি ইতিহাস খুব কম জানি। কিন্তু প্রাচীনতম ইতিহাসগুলি জানার আমার ভীষণ আগ্রহ রয়েছে। তবে পড়ে পড়ে নয়; দেখে দেখে জানার আগ্রহ। যদি সিন্ধু সভ্যতার কিছু চিহ্ন দেখতে পাই তাই সিন্ধ নদের পাড় ঘেষে গড়ে ওঠা শহরগুলিতে আমি গিয়েছি।

ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য সিন্ধ পাড়ে লারকানা এবং ঠাট্টা উল্লেখযোগ্য ছিল। মহেঞ্জোদারোর কথা তো সবাই জানে। ওটা লারকানা জেলা শহরের কাছে (প্রায় ২০ কিলো দূরে)। দেশটাতে কয়েক বছর ছিলাম। বেশ কবার এটেম্পট নিয়েও লারকানা বা মহেঞ্জোদারোতে যাওয়া হয়নি। এই না যেতে পারার আফসোস আমি এখনো অনুভব করি। তবে ঠাট্টায় গিয়েছি।

করাচী থেকে ঠাট্টায় যাওয়ার কথা বলি। পথে বামপাশে ঝিরক হাসপাতাল। ওখানে নামলাম। আমার আগ্রহের কারণে ওরা আমাকে কায়েদে আযম এর গ্রামে নিয়ে গেল। যতদূর মনে পড়ে ৭-৮ মিনিটের ড্রাইভ। উনার জন্মস্থান নিয়ে দুটি মত থাকলেও ওখানকার গ্রামবাসীরা দৃঢ়তার সাথে জানালো, ওটাই কায়েদে আযম এর জন্মস্থান। তারা আমাকে সিন্ধ নদের একটা ঘাটে নিয়ে গেল যেখানে তিনি (কায়েদে আযম) বাল্যকালে খেলতেন; সাঁতার কাটতেন। সিন্ধের ঐ অংশটা শুকিয়ে একেবারে খালের মতো সরু হয়ে গেছে। উজানে বাঁধের কারণে। ঘাটটায় কিছুক্ষণ বসে থাকলাম এবং ভিন্ন একটা অনুভূতি টের পেলাম।

ঝিরক থেকে ঠাট্টা প্রায় ৪৫ মিনিটের ড্রাইভ। কুড়ি মিনিট ড্রাইভ করার পর পাথরের একটা ঘর দেখলাম। কথিত আছে প্রায় হাজার বারশো বছর আগে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এক অন্ধ লোক ঘরটা বানিয়েছিলেন। এলাকার লোকদের কাছে ওটা একটা বিস্ময়। ভিতরে যেতে চাইলাম। সবাই মানা করল। কিন্তু কেন? বুঝা গেলোনা।

ঠাট্টা সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে ডিসি এবং জেলা এক্সেকিউটিভ হেলথ অফিসারের সাথে দেখা করি। একইদিন শহর প্রান্তে মাক্লি নামক জায়গায় ওয়ার্ল্ড বিগেস্ট সিমেট্রিতে (কবরস্থান) গেলাম। ঠিক মনে নেই, সম্ভবত হাজার বছরের পুরান এই সিমেট্রি। রাজা মহারাজাদের পরিবারের সদস্যদের সাড়ে তিন হাত মাপের ঘর। অসাধারণ দেখতে প্রতিটা কবর। বহুক্ষণ ধরে দেখছিলাম কিন্তু আগ্রহ কমেনি। ওখানে যারা শুয়ে আছেন তাঁদের অনেকেই ইতিহাসখ্যাত। অসাধারণ সব কারুকাজময় হাজার হাজার সমাধি। তাঁদের কেউই সাধারণ ছিলেন না; সবাই পরাক্রমশালী। দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, “পরাক্রমশালী লোকগুলির সাথে ঐ সময়ের চাষামজুরদের এখন পার্থক্য কি? মাটি!

এসব দেখে একই পথে ফিরছিলাম। হায়দারাবাদ শহরে রাত্রি যাপন করব। যখন সিন্ধ নদ অতিক্রম করছিলাম তখন সন্ধ্যা নামে নামে। তখনই এই পোস্টের কথাগুলি আমার অনুভূতিতে আসে। হায়দারাবাদে হোটেলে ওঠে এই ছবি সহ পোস্টটা দিয়েছিলাম। আজ কেন জানি এখানে শেয়ার দিতে ইচ্ছে হল। কেউ “ক্ষণিক আমাকে ভাবে” এই কথাটা পোস্টে লিখেছি; কিন্তু কে সে জানতামনা। অদ্ভূত হিউম্যান সাইকোলজি; যা মানুষ নিজেও নিজেরটা জানেনা!

মেমোরি থেকে ১৫ নভেম্বর ২০১২ র পোস্টঃ
“আজ যখন সিন্ধু নদি অতিক্রম করছিলাম তখন সন্ধ্যা নামে নামে। কিছু পাখি সিন্ধুর জাগা-চরে বসেছিল; আর কিছু ঘরে ফিরছিল। তখন মনে
হয়েছিল আমার একটা নদি আছে-সেখানেও সন্ধ্যা নামে। সেখানে হয়তো কেউ সন্ধ্যাবাতি জ্বালাতে গিয়ে ক্ষণিক আমাকে ভাবে”!

কবিতাঃ ঠিক সময়েই এসেছিলাম

তখন তুমি শ্যূলোক রাণী; সেই জনমে নাইল তীরে
স্মরণ করো;
তখন তুমি বন্দি পাখি; আসতে উড়ে শিকল ছিড়ে
স্মরণ করো।

তোমার প্রাসাদ পাশেই একটা ছেলে; ঠিক ছেলে তো নয় রাখাল বালক
ভুলে গেছো?
নাইলপাড়ে আকাশ জুড়ে অযুত স্মৃতি; ঠিক স্মৃতি তো নয় পাখির পালক
ভুলে গেছো?

মাঠের ধারে হিজল গাছের মগ ডালেতে নাটাই ছিড়ে এক সফেদ ঘুড়ি
মনে পড়ে?
বেওয়ারিশ লাল সানকিতে আঁকা একটা মুখ- মিহিন চুলের উড়াউড়ি
মনে পড়ে?

সন্ধ্যে হলে তারার সাথে দেখতে যেতে আকাশ নদি
স্মরণ করো;
কাব্য হতো মেঘের সাথে চোখের কোণের; নিরবধি
স্মরণ করো।

আমি ঠিক সময়েই এসেছিলাম;
দেখোনি তো!
হাস্নাহেনার গন্ধ নিয়ে তোমার গায়ে মিশেছিলাম
দলছুট এক পাখি ছিলাম
সফেদ ঘুড়ি, সানকিতে মুখ, জোনাক জ্বলা আঁখি ছিলাম;
দেখোনি তো!

অণুগল্পঃ মধ্যরাতের সূর্য

দরজার অন্যপাশ থেকে জাভেদ এমন মুগ্ধতা নিয়ে তাকালো যে টুনির চোখ ভিজে এলো। এন্ড্রোপজ, মেনোপজের বয়স দুজনেরই। এমন বয়সে কী এতো ভালোবাসা হয়? প্রশ্নটা অবশ্য সে বেশ কবার করেছে। প্রতিবারই জাভেদের এক জবাব, “চোখে অন্তরের আলো ফেলে আমি তোমাকে দেখি; এই দুনিয়ার কোন কিছুই আমি তোমারচে সুন্দর দেখিনা!”

ঘরে প্রবেশ করে জাভেদ ডাইনিং এ বসলো। বিকেল চারটায় স্কুল শেষ করে পরপর তিনটা বাড়িতে সে টিউশনি করেছে। নন-এমপিও ভুক্ত স্কুলের শিক্ষক; টিউশনি করেই যেটুকু হয়। বউ এর শুকনা মুখ দেখে সে বিষন্ন হলো। এটা অবশ্য নতুন কিছু না। এতো অনটন; কিন্তু কারো কাছ থেকে কোনদিন সে বাকিতে কিছু নেয়না। জাভেদ বুক ফুলিয়ে বলে, “আমার টুনি আছে; আমি কেন মানুষের কাছে অবনত হবো”?

বাজারের ব্যাগ হাতে জাভেদ বের হয়ে গেল। পকেটে মাত্র কুড়ি টাকার একটা নোট। আজ অক্টোবরের ২৮ তারিখ; অথচ সেপ্টেম্বরের বেতনও কেউ দেয়নি। জাভেদ ভাবলো, আজ সে নিজ থেকে চাইবে। তাই প্রথমে স্টুডেন্টদের বাড়ি গেলো। তাদের কেউ একজন যদি টিউশন ফি দেয় তা দিয়ে বাজার করবে। পারলে অল্প কিছু পোলাও এর চাল, সব্জি এবং একটা ব্রয়লারের মুরগি। টুনির ঠান্ডা লেগেছে; কাল রাতে সে ভালো করে নিঃশ্বাস নিতে পারেনাই। ঘরে তার ব্লাড প্রেসারের ওষুধও নাই। ওদিকে এক সপ্তাহ আগেই টুনি বলেছিল, ২৯ অক্টোবরে কিছু ভালো মন্দ রান্না করবে। দিনটা বিশেষ কিনা!

পর পর চারজন স্টুডেন্টের বাড়িতে জাভেদ কোন সাড়া পেলোনা। সে আরো বিষন্ন হলো। আর চেষ্টা না করে বাজারে একটা চক্কর দিয়ে সে বাড়ি ফিরে গেলো।

জাভেদের হাতে খালি ব্যাগ। কিন্তু তার বুক পকেটে টুনির জন্য সদাই; সান্দারপল্লী থেকে পনের টাকায় কেনা এক পাতা লাল টিপ।

আজ চুলা জ্বলবেনা। কিন্তু সেদিকে টুনির তেমন ভ্রুক্ষেপ নাই। কারণ তার সম্মুখে দন্ডায়মান এক মহারাজের বুকে এক কোটি লাল সূর্য জ্বল জ্বল করছে। পনের টাকার মহারাজারা দেবতার চে শক্তিশালী হয়!

চায়ের সাথে ওরা শুকনো মুড়ি খেলো। রাত একটু গভীর হতেই টুনি ঠোঁটের কোণে হাসি মেখে বললো, “রাত একটু বাড়লেই ২৯ তারিখ হবে। চলো বাইরে যাই।“ কপালের কাঁচাপাকা চুল সরাতে গিয়ে জাভেদ দেখলো, টুনির অনেক জ্বর। একটু বিস্ময় নিয়ে সে জানতে চাইলো, “কোথায় যাবে”?

“নদীর নির্জন চরে। তোমার সুবর্ণ দিনে আমি মধ্যরাতের সূর্যে পুড়বো”;
টুনি জবাব দিলো।

অণুগল্পঃ ট্যালেন্ট-হান্ট

“গল্পকার ট্যালেন্ট-হান্ট” অনুষ্ঠানে প্রথম প্রতিযোগীর ওপর দুজন আন্তর্জাতিক বিচারক যারপরনাই বিরক্ত হলো। দেশীয় বিচারকরা এতে বিব্রত বোধ করলো।

-এখানে গল্প কোথায়? প্রতিযোগী গল্পকারের কাছে এক বিচারক জানতে চাইলো
-কেন? এই যে পঁচা গোবর স্তুপের একটা ইমো, তারপর কাঠের খড়মের ইমো, তারপর হুতুমপেঁচার ভেংচির ইমো, তারপর কুঁড়েঘরের কোণায় একটা গাবগাছের ইমো যাতে হেলান দিয়ে একটা গোবরে পোকা খড়ম পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ইমোগুলি সাজিয়ে নিন; যা দাঁড়াবে সেটাই আমার গল্প।

প্রতিযোগী গল্পকারের কথায় দেশি বিদেশী সব বিচারক কিছুক্ষণ “থ” মেরে থেকে একসাথে হো হো করে হেসে ওঠলো। তাদের কেউ একজন খুব ধীরে “স্টুপিড” বললো; তা কেউ শুনলো কেউ শুনলোনা। কিন্তু কথাটা কে বললো তা বুঝা গেলোনা।

একটু দম নিয়ে এক বিচারক প্রশ্ন করলো,
-তাহলে এটা ইমো দিয়ে বানানো গল্প?
-হ্যাঁ এবং সারাবিশ্বে একমাত্র আমিই ইমোর পর ইমো দিয়ে গল্প করছি
-বাহ; খুব ভালো। তো গল্পের নাম কি দিয়েছেন?
-কেন? নাম তো গল্পটার নিচে লিখে দিয়েছি। নামটা হলো, “ভাবের মাঝে বসবাস, ঘরের কোণে গাবগাছ”

উত্তর শুনে বিচারকদের ফিট হবার জো। তারা একে অপরের মুখের দিকে তাকালো এবং দ্বিতীয়বার শব্দ করে হেসে ওঠলো।

-গ্রেট । আপনিই বিশ্বের প্রথম নির্বাক-গল্পকার। মিটমিটি হেসে এক বিচারক মন্তব্য করলো।

এতে বোকা প্রতিযোগী গল্পকার আনন্দে গদগদ হলো!
-আপনার সব গল্পই কী নির্বাক? অন্য একজন বিচারক জানতে চাইলো
-না; আমি মূলত ক্রিয়েটিভ রাইটার
-বাহ; বেশ! এখন একটা সবাক ক্রিয়েটিভ গল্প শুনান। একজন দেশি বিচারক অনুরোধ করলো
-“আকাশেতে গাভীগন, করিতেছে চেচায়ন”, প্রতিযোগী গল্প শুরু করলো
-থামেন। এক বিচারক খুব বিরক্ত হলো এবং বললো, কী সব “পদ্যমদ্য” দিয়ে গল্প শুরু করলেন?

প্রথম প্রতিযোগীর সাথে কথা শেষ হতেই দুজন পুলিশ এসে অনুষ্ঠানটিতে হাজির হলো। হ্যান্ডকাফ পরা মধ্যবয়সী একজন পুরুষকে নিয়ে তারা এসেছে। এই আসামী আসলে “গল্পকার ট্যালেন্ট-হান্ট” অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় প্রতিযোগী।

-কি হয়েছে? একজন বিচারক জানতে চাইল
-এটা আমার দ্বিতীয়বার হ্যান্ডকাফ পরা। দুবারই আমার লিখা গল্পের জন্য। প্রথমবার একটা ফেইসবুক গ্রুপে প্রকাশিত গল্প নিয়ে। সেবার জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

এক গ্লাস পানি চেয়ে নিয়ে এক ঢোক গিলে হ্যান্ডকাফ পরা প্রতিযোগী আবার বলতে শুরু করলো,

“সাতদিন আগে নারী নির্যাতন নিয়ে আমার নিজের লেখা একটা গল্প ফেইসবুক ওয়ালে প্রকাশ করেছিলাম। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে। মহামান্য আদালত আমার এবং সরকার পক্ষের বক্তব্য শুনে দুটো নির্দেশনা দেয়। এক) আমাকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া; দুই) তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তবে এই নির্দেশনা দেয়ার আগে মহামান্য আদালতকে যখন গল্পটি পড়ে শোনানো হয় তখন আমি কারো কারো চোখের কোণ ভিজা দেখেছিলাম। তখন বিজ্ঞ আদালত মন্তব্য করেন যে, ফেইসবুক ওয়ালের গল্পটা এবং বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য প্রায় শূন্য। তাই আদালত গল্পকারকে রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেয় যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ওটা নিছকই একটা গল্প- বাস্তবে অমন কিছু ঘটেনি”।

বক্তব্য শেষ করে হ্যান্ডকাফ পরা প্রতিযোগী বিচারকদের দিকে তাকালো। সে খেয়াল করলো, দেশি বিদেশি সব বিচারক বিস্ময় নিয়ে তার হ্যান্ডকাফের দিকে তাকিয়ে আছে।

আসলে অনুষ্ঠানটির বিচারকরা প্রথম প্রতিযোগীর প্রতি খুবই বিরক্ত ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় প্রতিযোগীর প্রতি পুরো বিপরীত। তারা ভাবে, গল্প কতোটা উন্নত এবং জীবন ঘনিষ্ট হলে দেশের আইন আদালত এভাবে রিয়াক্ট করতে পারে। তাদের কাছে গল্পকারের হ্যান্ডকাফটা খুবই দামি লাগে।

আসামী নিজে এবার হ্যান্ডকাফটার দিকে তাকালো। বিচারকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে তার বন্দি হাত দুটোতে একটা মৃদু ঝাঁকি দিলো। এতে অনিন্দ্য সুন্দর একটা বাজনা বেজে ওঠলো; ঠিক তার মনলতার পায়ের নূপুরের মতো।

অণুগল্পঃ “বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি”

ল্যাপটপ ভাজ করে একটু দূরে সরিয়ে রেখে সুবোধ বরুয়া টিভি অন করলো। একটা চব্বিশ ঘণ্টা খবরের চ্যানেল। ওটার এক সিনিয়র রিপোর্টার ঢাকা থেকে উখিয়ায় গিয়ে কাজ করছে। সাথে এক তরুণী; সে স্থানীয় প্রতিনিধি। তরুণীটি রাখাইন বাংলা জানে। একজন রোহিঙ্গা বালকের সব হারানোর কাহিনি তারা রেকর্ড করছে!

বালকটি কি বলছে সুবোধ কিছু বুঝতে পারছেনা; সম্ভবত অনেকেই না। একটু পর তরুণীটি দর্শক-শ্রোতার জন্য তা শুদ্ধ বাংলায় সংক্ষেপে অনুবাদ করে শুনালো।

“বালকটির নাম সামসুল; বয়স নয় বছর। রাখাইনে ওর পরিবার মোটামুটি স্বচ্ছল ছিল। তিনদিন আগে হঠাৎ গেরুয়া রঙের লোকজন এসে তার বাবা মাকে গুলি করে মেরেছে। তাতেও তারা থামেনি। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেহ থেকে তাদের কলিজা বের করে এনেছে। আড়াল থেকে সে সবই দেখেছে। তারপর পাঁচ বছরের ছোট ভাই এর মুখ চেপে ধরে সামসুল ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়ে পালিয়েছে। পড়শী শ্যাম চন্দ্রসহ আরো কয়েকজন বন্ধুও ছিল। তারা তিন দিন হেঁটে নাফ নদির এপাড়ে এসেছে। এই তিনদিন ছোট ভাইটির মুখে ন্যূনতম কিছু দিতে পারেনি। সে জানেনা ভাইকে কিভাবে বাঁচাবে। তাকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে সামসুল কিছুক্ষণ আগে খাবারের খোঁজে বের হয়েছিলো! খাবার নিয়ে ফিরে এসে দেখে, আদরের ছোট হারিয়ে গেছে “!

এটুকু অনুবাদ করেই তরুণী থেমে গেলো। আসলে সে থামেনি; বাকহীন থেকে নিযুত কথা বলে গেছে! সুবোধ দেখলো, তরুণীটি যে হাত দিয়ে তার নিজের চোখ ঢেকেছে তা থরথর কাঁপছে; হাতের ভিতর ঢেকে থাকা মুখখানাও।

সুবোধ ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে এক ঝাপটা জল দিয়ে আবার টিভির সামনে বসলো। এবার তরুণীটিকে নয়; নিজের বিবেককে সে কাঁপতে দেখলো! একটা বিশ্বকে কাঁপতে দেখলো। সে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো; তাঁর চোখ দুটি এখন নাফ নদি ! এই নাফজল গেরুয়া নয়; বর্ণহীন! তবে মিঠা থেকে নোনা হয়ে গেছে!

সুবোধ আবার টিভির পর্দায় চোখ রাখলো। ক্যামেরাম্যান নয় বছরের নিঃস্ব শিশুটিকে ফোকাস করেছে। পাশে তারই মতো আরেক জন। ওরা নিরুদ্দেশে হাঁটছে! নেপথ্য কন্ঠে বলছিল, রাখাইনের দুই নিঃস্ব শিশু যাচ্ছে!

কিন্তু সুবোধ শুনতে পেল ঈশ্বর বলছেন, “সামসুল বা শ্যাম নয়; মহামতি বুদ্ধ যাচ্ছেন”!

“বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি”!

অণুগল্পঃ মিডলাইফ ক্রাইসিস

বালকগুলি মহিলাটার পেছনে পেছনে এমন ভাবে হাঁটছিল যে মনে হচ্ছিল, ওরা হ্যামিলনের এক মহিলা বাঁশীওলাকে অনুসরণ করছে। ওদের হৈ হল্লোর শুনে মোত্তালেব মিয়া এক পলক তাকিয়ে আবার কাজে মন দেয়। মূল রাস্তা থেকে পঞ্চাশ ষাট গজ দূরে মাঠে সে নিড়ানির কাজ করছিল। কি জানি কী মনে করে কয়েক সেকন্ড পরে সে আবার তাকায়। চশমাহীন চোখে আবছা দেখলেও মহিলাটিকে সে খুব সহজেই চিনতে পারে। নিড়ানি বন্ধ করে দ্রুত পায়ে মহিলার দিকে সে এগিয়ে যায়।

-এই পোলাপান, যাহ্‌ যাহ্‌। মোত্তালেব মিয়া ধমক দিয়ে বালকগুলিকে দূরে সরিয়ে দেয়।

সে মহিলার খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। পারলে যেন গায়ে গা লাগিয়ে দেয়। তার “ছুঁক ছুঁক” ভাব দেখে মহিলাটি মুচকি হেসে শরীর এগিয়ে দিয়ে বলে,
-ছুঁইবেন? নেন। ম্যালা দিন হইলো আমার ঘরে আহেন না যে?

মোত্তালেব মিয়া অবশ্য সুচতুরভাবে প্রশ্নটা এড়িয়ে যায়;
-এই ভর-দুপুরে কই যাও মোছাম্মত সিতারা বেগম?
-উপজেলা হাসপাতালে যামু মাতব্বর সাব। পাড়ার এক মাসী অসুস্থ হইয়া ওইখানে ভর্তি আছে।
-হাসপাতাল থেইকা ফিরবা কখন? নাকি আজ ফিরবানা?
-ফিরমু। রাত নয়টা দশটা বাইজা যাইতে পারে
-ঐ সময় আমি স্কুলটার ওইখানে থাকমুনি; তুমি আইসো। আসবা তো সিতারা বেগম? মোত্তালেব মিয়া ফিস ফিস করে জানতে চায়।
-পুরা সাতশ টাকা লাগবো! ঠোঁটের কোণে হাসি মেখে সিতারা বেগম জবাব দেয়।

অল্প দূরে থাকা ছেলেগুলোর দলনেতা খুব নিচুস্বরে বলে,
-জানস তোরা ওই বেটি কেডা?
-তিন নাম্বার দাদি? ছেলেগুলির একজন উল্টা প্রশ্ন করে।
-ওই রকমই। আগের মরা দাদিটা লাল পরী হইয়া ফিরা আইছে। দাদারে আদরও করতে পারে; আবার ঘাড় মটকাইয়াও দিতে পারে।

দলনেতার শেষ মন্তব্যে সবাই হো হো করে হেসে ওঠে এবং একসাথে উল্টা পথে দৌড় দেয়।

মোত্তালেব মিয়া; সাতান্ন পেরিয়ে আটান্ন চলছে তাও প্রায় চার মাস হয়ে গেলো। সে শিমুলিয়া গ্রামের মত-মাতব্বর এবং সিতারার নিয়মিত খদ্দের। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু এবং পরে এক কিশোরীকে দ্বিতীয় স্ত্রী করে ঘরে আনা- সব কথাই আবেগের সময় সিতারাকে সে বলে দিয়েছে। “এমন বুড়ো পুরুষকে কোন বাচ্চা মেয়ের ভালো লাগবে?” সিতারা বেগম ভাবে। অতঃপর মোত্তালেব মিয়ার হাতে এক খিলি পান গুজে দিয়ে সে উপজেলার পথে হাঁটা ধরে।

অল্প কিছুক্ষণ পরে পেছনে তাকিয়ে সিতারা বেগম শব্দ করে হেসে ওঠে। কারণ শিমুলিয়া স্কুলের কাছে আজ রাতেই দেখা করার কথা ঠিক হলেও মোত্তালেব মিয়া এখন তার পিছু নিয়েছে। তার শাড়ির ভিতরের সম্ভাব্য যে অংশে মোত্তালেব মিয়ার চোখ আটকে আছে সেখানে মৃদু ঢেউ তুলে সে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়। হাসপাতালে পৌঁছার আগেই বড় একটা কবরস্থান। সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে তার বিকেল হয়ে যায়। ডানে বামে সামনে পেছনে সে তাকিয়ে দেখে, সাড়ে তিন হাত মাপের ঘরগুলি এবং শূন্যপথটা ছাড়া কোথাও কিছু নেই।

তবে সিতারা বেগম বেশ অনুভব করে, যতদিন শরীর আছে তার নিজের ভিতর হেমিলনের বাঁশিওলার একটা অস্তিত্ব আছে যা মোত্তালিব মিয়ার রক্তস্বল্পতায় ভোগা কিশোরী বউটার মধ্যেও নাই! তাই তার পেছনে শিমুলিয়া গ্রামের এই মধ্যবয়সী পুরুষটা দৌড়াচ্ছে আর হাঁফাচ্ছে; হাঁফাচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে!

পাঠক হিসেবে আমার ব্যবচ্ছেদ (একান্তই নিজস্ব ভাবনা থেকে)

একঃ
আমি কবিতা ভালোবাসি এবং অণুগল্পের মুগ্ধ পাঠক। তবে ভুল শব্দের কবিতায় আমার মাথা ধরে; গান বা কবিতার চরণেপূর্ণ গল্পে আমি বিরক্ত হই। কারণ জীবনের গল্পে (মানে আধুনিক গল্পে) গান কবিতা অতি বেমানান। বাস্তবে কারো দিন কি গান বা কবিতা দিয়ে শুরু বা শেষ হয়? কথার শুরু বা শেষে কি আমরা গান গাই, কবিতা বলি?

মুক্ত ছন্দে লেখা কবিতা আমার বেশি পছন্দ। অর্ধ ছন্দে লেখা কবিতা পড়তে আগ্রহ পাইনা। ভুল বানান বিরক্তি জাগায়। নিজে ভুল করলে লজ্জিত হই।

যখন কবিতা পড়ি এর ব্যঞ্জনা, বিনির্মাণ, রহস্যময়িতা, বহুমুখিতা, সমসাময়িকতা এবং চিত্রকল্প নিয়ে ভাবি। কবিতা যেভাবে আমার ভিতর ছাপ রেখে যায় সেভাবেই তার একটা ছায়া আমি কবিতায় জমা রাখি।

মুগ্ধতা প্রকাশে আমি অকৃপণ হই যখন মনমতো কবিতা পাই।

দুইঃ
মনলতাকে একদিন সাগর মহাসাগর সৃষ্টির ইতিহাস বলছিলাম। তবে তার আগে এই মহাবিশ্ব যে শিম বিচির মতোন ছিল; বিগব্যাং ওটাকে মহাবিশ্বে রূপান্তর করেছে সেটাও ওকে বলতে ভুলিনি।

অণুগল্প আসলে এই মহাবিশ্বের সমান; তবে বিগব্যাং ঘটার আগের রুপে। মানে শিম বিচির মতোন। এই “অণু” মানে ছোট নয়। তাই যদি হতো তাইলে অণুগল্প ইজ ইকুয়াল্টু ছোটগল্প হয়ে যেতো। এই “অণু” শব্দটা পদার্থের সর্বনিম্ন গাঠনিক একক পরমাণু থেকে নেয়া হয়েছে মনে করলে বেশি অর্থবহ হয়। মহাবিশ্বের সমান একটা গল্পকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে যখন আর ছোট করা যায়না তখন সেটা অণুগল্প হয়। সেটা তিনশ শব্দের হতে পারে, পাঁচশ শব্দের হতে পারে, পাঁচ পাতারও হতে পারে। তবে সেটাকে ভেঙ্গে আর কোনভাবেই ছোট করার উপযোগিতা থাকবেনা- এই শর্তটা খুব জরুরি। এর আরেকটা মানে হল খুব ছোট কাহিনি নিয়ে লেখা গল্প অণুগল্প নয়।

লক্ষাধিক সদস্যের একটা গ্রুপে সেদিন এক গল্পকারের অণুগল্পের পাঠক সংখ্যা দুই অথবা চার দেখলাম (লাইক সংখ্যা)। বিন্দুর সমান একটা কাহিনিকে উনি যেন মহাবিশ্ব বানাতে চেয়েছেন। আমার পছন্দ হলোনা। লক্ষাধিক সদস্যের অনেকেই সম্ভবত পছন্দ করেননি। আবার এর বিপরীতে এমন কিছু গল্পকার দেখেছি যারা বিগব্যাং কে ঠেকিয়ে দেয়ার মতো শক্তি নিয়ে অণুগল্প লিখেন। পরম মুগ্ধতা নিয়ে তখন ভাবি, সাহিত্যের অনেক বড় কারিগর সম্ভবত এইসব অণুগল্পকার।

তিনঃ
তবে বিবেক-আন্ধা মানুষ যতো ভালো গল্প বা কবিতাই লিখুক না কেন তাদের লেখাগুলি পড়ার আগ্রহ আমার খুব একটা হয়না। বিশেষ করে রাজনৈতিক লেখাগুলি যথেষ্ট ইতিহাস মীমাংসিত না হলে এবং তাতে লেখকের চোখের দৃষ্টির সাথে তার বিবেকের সংযোগ না পেলে আমি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই; রাজনৈতিক পত্রিকাগুলির প্রতি যেমন। চোখে দেখা একটা ঘটনা বলি। ক্রিয়েটিভ লেখকদের একটা গ্রুপে এক নতুন এডমিন কয়েকটা ঐরকম (রাজনৈতিক) পোস্ট দিলেন; এতে গ্রুপটার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। কয়েক মাস পরে দেখি গ্রুপ্টা কেমন একলা হয়ে গেছে। আমি জানিনা, আমার মতো করে ঐ গ্রুপের অনেকেই ভেবেছিলেন কিনা।

চারঃ
চোখের সামনে বেশ কিছু কবি আছেন যারা ভীষণ উন্নত মানের। পরম মুগ্ধতা নিয়ে তাদের লেখা পড়ি। আমার অন্তরের সব কথা যেন তাদের কবিতায় থাকে। তাদেরকে আমার অন্তর্যামী মনে হয়। কারণ অন্তরে বিচরণ করে আমার কথাই উনারা লিখেন। এদের কেউ কেউ দুই বাংলার টপ কবিদের মানের অনেক কবিতা লিখেছেন।

আমি যখন অণুগল্প পড়ি গল্পকারের না-লেখা অংশে বেশি গল্প খুঁজি। সত্যিকারের অণুগল্পকারের না-লেখা অংশ পড়ে শেষ করা যায়না। উন্নত অণুগল্প হলো আমার মনের প্রোটিন, জল, ভিটামিন। আর উন্নত কবিতা হল আমার চোখের জলে প্রাণের প্রতিবম্ব। সেই জল আনন্দের জল; বেদনারও। চোখের পলকের নাচনে আমি কবিতার ছন্দ পাই; আর চোখের গহীনে সেই প্রতিবিম্বের স্রষ্টাকে।

আমাদের ভালো থাকা এবং সাদামাটা কিছু কথা

একঃ বোনের সাথে ফোনালাপ এবং TIA/স্ট্রোক

– ডান হাত পা কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল। বোন ফোনে বললো
-কি হয়েছিল? আমি জানতে চাইলাম
-ডান পাশ খুব দুর্বল; বাম পাশ একদম স্বাভাবিক ছিল
-ডান পাশ কি অবশ হয়েছিল?
-হ্যাঁ, অনেকটা তাই। বোধ হারিয়ে ফেলেছিলাম। নাড়াতে সমস্যা হচ্ছিল
-মুখে কিছু?
-হ্যাঁ; কথা আটকে যাচ্ছিল।
-কতক্ষণ অবশ ভাব ছিল?
-কয়েক মিনিট

TIA (Transient Ischemic Attack); মিনি স্ট্রোক বলেন কেউ কেউ। কখনো কখনো এতো অল্প সময়ের জন্য হয় যে রোগী নিজেও তা বুঝতে পারেন না। সেক্ষেত্রে বুঝার উপায় হলো, কথা আটকে যাওয়া বা এক চোখে কম দৃষ্টির সাময়িক অভিজ্ঞতা হয়েছিল কিনা তা মনে করে দেখা।

TIA তে আক্রান্তের দিনই সব ঠিক হয়ে যায়। তবে সতর্ক করে যায় যে, বড় স্ট্রোক আসন্ন। তাই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
—————————

দুইঃ ঢাকাই ছবির নায়িকা-দিওয়ানা চিরকুমার এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারে হোমিও চিকিৎসা

ভদ্রলোক আমার অনেক সিনিয়র; কিন্তু বন্ধুর মতো। বাংলা সিনেমার এক নায়িকার জন্য ভীষণ দিওয়ানা ছিলেন এবং তার কারণে বিয়েই করলেন না। তার সাথে আড্ডায় সেদিন কথায় কথায় হোমিও চিকিৎসার কথা ওঠলো।

-আমি যখন দ্বিতীয় বর্ষে একদিন অধ্যাপক গোপালচন্দ্র ফিজিওলোজি পড়াতে পড়াতে কেন জানি বলেছিলেন, “হোমিও চিকিৎসাকে বিজ্ঞান এখনো স্বীকৃতি দেয়নি”। আমি বললাম।

-কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বিজ্ঞানীরা বলেছে, “হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত নয়”। এই কথাটা বলে চিরকুমার একটা সত্য ঘটনা বললেন।

“এক নিঃসন্তান দম্পতি এক মেয়েকে এডপ্ট করেছিল। মেয়েটাকে বড় করে বিয়েও দিয়েছিল। এক সময় মেয়েটা তার ব্রেস্টে শক্ত কিছু অনুভব করে। পালক বাবা হোমিও প্র্যাকটিস করতেন। তিনি টিউমারের চিকিৎসা দিতে লাগলেন। যখন বুঝলেন হোমিওতে কাজ হচ্ছেনা, মেয়েকে তিনি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ডাক্তাররা বললো, দেরি হয়ে গেছে। মেয়েটা বেশিদিন বাঁচেনি। মনের কষ্টে পিতাও”।
চিরকুমার কাহিনি বলা শেষ করলেন।

-জানা গেছে ব্রেস্ট ক্যানসারের দেরিতে চিকিৎসার মূল (৫০%) কারণ হলো হোমিও চিকিৎসায় লেগে থাকা। কিন্তু ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে এই ক্যান্সার ভালো হয়ে যায়। আমি বললাম।
-তাইলে কি এইক্ষেত্রে হোমিও চিকিৎসা একটা ইনডাইরেক্ট কিলার? নাকি হোমিও চিকিৎসক ইন্ডিভিজুয়াল এজন্য দায়ি? চিরকুমার প্রশ্ন করলেন।
-আমি নিশ্চিত নই। তবে হোমিও চিকিৎসা বিষয়ে অধ্যাপক গোপালচন্দ্র যা বলেছিলেন এবং পত্রিকায় আপনি যা দেখেছিলেন তা গুরুত্বপূর্ণ । জবাবে বললাম।
—————————

তিনঃ বন্ধুদের সাথে আড্ডা এবং কিডনি ফেইলুরে ভেজাল হারবাল চিকিৎসার দায়

সপ্তাহ খানেক আগে আমার বাড়িতে ক’জন সহপাঠী বন্ধু এসেছিল। সবাই মেডিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের। ওদের মধ্যে তিনজন শিক্ষকতা করে, একজন মিলিটারি এবং একজন বিজ্ঞানী।

-তোর ভাই নাকি কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা বাদ দিয়ে চুপি চুপি হারবাল চিকিৎসা নিচ্ছিলেন?
এক বন্ধু আমাকে প্রশ্ন করলো।

-হ্যাঁ। ডিউটি স্টেশনে যাওয়ার আগে সিরাম ক্রিয়েটিনিন ২ এর কিছু বেশি দেখে গিয়েছিলাম। আমার কর্মস্থলে সেবার যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সময় মতো দেশে আসতে পারছিলাম না। অনিয়মের কথা শুনছিলাম এবং জোর দিয়ে বলেছিলাম, কোনভাবেই যেন হারবাল চিকিৎসা না নেন। কিন্তু হারবাল চিকিৎসকরা তো রোগীকে কনভিন্স করতে অনেক বেশি শক্তিশালী। সিরাম ক্রিয়েটিনিন খুব দ্রুত ৬ এবং তারপর ৮ হয়ে গেল। ডায়ালাইসিস চলছিল। দেশে এসে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য চেষ্টা করলাম। উনার সেই উপযোগিতা ছিলনা। মন খারাপ করে কর্মস্থলে ফিরে গেলাম। উনার শেষ দেখা আমি পাইনি।
জবাবে বললাম।

-আমার দূর সম্পর্কের এক আন্টি, বয়স কম বেশি চল্লিশ। সৌন্দর্য বাড়ানোর (সম্ভবত স্লিম হতে) জন্য হারবাল ওষুধ খাচ্ছিলেন। উনার অন্যকোন সমস্যা ছিলনা। হারবাল নিতে নিতে এক সময় উনার কিডনি ফেইল করল। কিছুদিন আগে মারা গেছেন। আমার গ্রামের বাড়ির সতের আঠার বছরের এক ছেলেরও একই হয়েছে। ছেলেটা এখনো বেঁচে আছে বটে; তবে অবস্থা ভালো নয়।
এক শিক্ষক বন্ধু বললো।

-মানুষ জানে হারবাল ওষুধে কোন সাইড ইফেক্ট নাই। কিন্তু এসব ওষুধে লতাগুল্মের সাথে মারাত্মক ক্ষতিকর উপদান যোগ করা হয় এবং তা বদ অশিক্ষিত হারাবালিস্টরা গোপন রাখে।
বিজ্ঞানী বন্ধু যোগ করলো।

এসব দেখার কেউ নাই। তাই দেওয়ালে দেওয়ালে “কলিকাতা হারবাল”এর এমন আধিপত্য!

ছোটগল্পঃ ঈশ্বরচন্দ্র

-তোমার দেয়া শিশিরগুলি আমি জমিয়ে রেখেছি
-কেন? দীপাবলি জানতে চাইলো।
-একটা নদি বানাবো।

পার্কে ঘাসের ডগায় শিশির পেলেই দীপাবলি সেগুলোর ছবি তুলে প্রাঙ্গণের ইনবক্সে পাঠিয়ে দেয়। এই শিশির দিয়ে নদি বানানোর কথাই প্রাঙ্গণ তখন দীপাবলিকে বলছিল। ওরা ইনবক্সে চ্যাট করছে। প্রাঙ্গণের শেষ কথাটার জন্য কোন মন্তব্য না করে দীপাবলি আবার জগিং শুরু করে। তার মাঝারি সাইজের চুল। দৌড়ানোর সময় ঝুঁটিটা যেন খুব আনন্দ নিয়ে নাচে।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রাঙ্গণ আবার লিখে;
-তোমার নদি পছন্দ না?

মেসেজের শব্দ শুনে দীপাবলি ধারে কাছের একটা বসার জায়গার দিকে যায়।
-হ্যাঁ, খুব পছন্দ;
পার্কের ব্যাঞ্চে বসে দীপাবলি জবাব দেয়।

-ওটার নাম হবে মনছুঁই নদ। তোমার নামে দলিল করে দেবো।
-নদ কেন? দীপাবলি জানতে চায়।
-কারণ, কোন শাখা থাকবেনা। যা কিছু আমি তোমাকে দেই তার কোনটারই শাখা হয়না।

প্রাঙ্গণ; পুরো নাম ঈষান চন্দ্র প্রাঙ্গণ। তার জন্য দীপাবলির মন কানায় কানায় প্রেমে পূর্ণ। কিন্তু ট্রাউজার পরে পার্কে জগিং এবং মাঝারি সাইজের একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালানোর সাহস ও স্মার্টনেসের অভাব তার মধ্যে না থাকলেও প্রেমের জন্য আছে। তাই প্রাঙ্গণকে সে একবারও ভালোবাসার কথা বলতে পারেনাই।

সব বিধবারই কী এসব বিষয়ে সাহসের অভাব হয়? দীপাবলি ভাবে; কিন্তু উত্তর খুঁজে পায়না। সে জানে, একজন মানুষ তার জীবনের কোন সময়েই স্বাধীন নয়। বিশেষ বিশেষ অবস্থায় মানুষের স্বাধীনতাহীনতা খুব তীব্র হয়। দীপাবলি এখন সেই বিশেষ অবস্থাটার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে।

গত তিনদিন প্রাঙ্গণ খুব অল্প সময় অনলাইনে এসেছে। ওর জ্বর; ছুটিতে আছে। দীপাবলির হঠাৎ ইচ্ছে হলো, আজ সারাদিন প্রাঙ্গণের সাথে চ্যাট করবে। অফিসকে জানিয়েও দিল, আজ সে যাবেনা। এরপর পার্কের ব্যাঞ্চ থেকে দীপাবলি ওঠে দাঁড়ালো। আজ আর জগিং করবেনা। সে বাড়ির পথে হাঁটছে আর চ্যাট করছে।

-একটু দাঁড়াও। ফান করে প্রাঙ্গণ লিখলো
-কেন? দীপাবলি জানতে চাইলো
-তোমার গায়ে একটা প্রজাপতি বসেছে
-ওটা পাঙ্গু চন্দ! দীপাবলি হাসির ইমো দিয়ে জবাব লিখলো

এরপর কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বললোনা।

দীপাবলির এই বয়সে নিয়মিত জগিং করাকে প্রাঙ্গণ খুব এপ্রিসিয়েট করে। যদিও সে নিজে কোনদিন করেনা।

-কোন কোন পুরুষ চায় তার প্রিয়তমা মোটা সোটা হোক। প্রাঙ্গণ মন্তব্য করলো
-আমি সুস্থ থাকার জন্য এক্সারসাইজ করি। হাওএভার, কেউ কেউ ফ্যাটি লেডি পছন্দ করে বললে। কেন করে?
-ওপার বাংলার একটা ভিডিও দেখেছিলাম। সেখানে এক ফ্যাটি মহিলা বলছে, “আমার বয়ফ্রেন্ড আমার এই অবস্থাকে সমর্থন দিয়ে বলে, কোয়ালিটির চেয়ে কোয়ানটিটি বেশি জরুরি। কোয়ালিটি হলো মায়া”।
-তুমি কেমন লেডি পছন্দ কর?

দীপাবলির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রাঙ্গণ প্রসঙ্গ পাল্টালো।

-তাকিয়ে দেখ, তোমার সম্মুখে একদল স্বপ্ন
-আমার সম্মুখে এখন এক বৃদ্ধা। দীপাবলি জবাবে লিখলো
-আমি উনার দুচোখে স্বপ্ন ভরে দিতে চাই
-বৃদ্ধাটা অন্ধ; দীপাবলি জানালো
-ও…
-উনার সাথে একটা পোষা বিড়াল আছে
-নাম দুখি? প্রাঙ্গণ ফান করলো
-তা জানিনা। তবে বিড়ালটাও অন্ধ।

কথাটা বলেই দীপাবলির মন ভার হলো। কেন জানি অন্ধ বৃদ্ধার সাথে তার নিজের একটা মিল খুঁজে পেলো।

দীপাবলি পার্ক থেকে বাসায় ফিরলো। নিতিকা ক্লাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একমাত্র মেয়ে নিতিকা; আর কোন সন্তান নাই। মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। মায়ের অস্বাভাবিক পরিবর্তন নিয়ে নিতিকা যে ইদানিং ভাবে সেটা দীপাবলি বুঝতে পারে। প্রাঙ্গণের সাথে বয়সের পার্থক্য, ঘরে সোমত্ত মেয়ে- এসব প্রথম সাক্ষাতের দিনই তীব্রভাবে অনুভব করে প্রাঙ্গণকে অনলাইন চ্যাট করার বিষয়ে তার আপত্তির কথা জানিয়েছিল।

কিন্তু এখন এই পর্যায়ে প্রাঙ্গণকে ছাড়া দীপাবলি তার দুনিয়াটাকে অন্ধকার দেখে। সে লম্বা সময় শাওয়ার নিলো। তারপর বসুন্ধরা মার্কেটে “সাদাকালো” দেশি ব্র্যান্ড থেকে কেনা একটা শাড়ি পরে কপালে বড় একটা লাল টিপ দিলো। সে তার রেশমি চুলগুলি ছেড়ে দিয়েছে। ল্যাপটপ অন করার সাথে সাথে ক্যামেরাও অন হলো। অন্যপাশে প্রাঙ্গণ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে।

-শাড়িটা তোমার গায়ে জোছনা রাত হয়ে ফুটে আছে। আর কপালের টিপ রাতের অবাক সূর্য।
-ইউ অলোয়েজ মেইক মাই ডেইজ।

মন্তব্যটা লিখেই দীপাবলি টের পেলো, আবেগে তার চোখ ভিজে গেছে। যাবেই তো, এমন করে যে কথা বলে যে কোন বয়সের মেয়ে তার মুগ্ধতায় বুদ হয়ে থাকবে। ভার্চুয়াল জগতে রোম্যান্টিক মানুষেরা এভাবেই কথা বলে ঠিক; কিন্তু শুধু অনলাইনে না সামনাসামনিও প্রাঙ্গণ অমন।

দীপাবলি মানে দীপাবলি চ্যাটার্জি; সাড়ে চল্লিশ। স্বামী অমিত চ্যাটার্জি তিন বছর আগে হার্ট এটাকে মারা গেছেন। স্বামীর রেখে যাওয়া ব্যবসা সে দেখে। গত বছর প্রাঙ্গণের সাথে অনলাইনে পরিচয় হয়। কিছুদিন চ্যাট করার পর ওরা একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করে। সেই সাক্ষাতের সময়ও দীপাবলির সাথে সে সাবলীলভাবে স্বপ্নের কথা বলেছে। ইনবক্স চ্যাটিংএ যেমন। প্রাঙ্গণ বছর দুয়েক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে একটা মাঝারি মানের চাকরি করে।

বয়সের তুলনায় দেখতে ছোট প্রাঙ্গণকে প্রথম সাক্ষাতে দেখে দীপাবলি অবাক হয়েছিল, কী করে এতো পার্থক্যের কারো সাথে সে এভাবে কথা বলেছে?

কিন্তু এখন মনে হয়, প্রাঙ্গণ তার বহুজন্মের চাওয়া ছিল এবং অবশেষে এইজন্মে এসে তাকে পেয়েছে। এখন তাকে হারালেই যেন দীপাবলির সর্বনাশ হবে! অনুভবের এমন তীব্রতা দীর্ঘ সময় প্রেমের আকালের কারণেই কী হয়?

দীপাবলি কল্পনা করে, অল্পদিনের মধ্যে নিতিকার বিয়ে হবে। মেয়ে এবং মেয়ের স্বামী মিলে প্রাঙ্গণের সাথে তার বিয়ের আয়োজন করবে এবং বাকী জীবন প্রাঙ্গণ তার জন্য একই রকম থেকে যাবে।

-আমার নিজের একটা নদি আছে কেউ জানেনা। ওতে খুব ভাঙ্গন হয়! দীপাবলি লিখলো।

দীপাবলির অন্তরের কথা আঁচ করতে পেরে প্রাঙ্গণ প্রসঙ্গ পাল্টালো।
-বাসায় ফুলের মালা আছে?
-জগিং করে ফেরার সময় একটা কিনেছি। দীপাবলি জবাব দিল।
-খোঁপায় পরবে?
-হ্যাঁ।

দীপাবলি ওঠে গেল।
মিনিট দশেক পর ফুলের মালা খোঁপায় পরে সে আবার ল্যাপটপের সামনে বসলো।
-চুল ছুঁয়ে দেই? প্রাঙ্গণ লিখলো
-দাও
-তাতে খোঁপাটা যদি খুলে যায়?
-যাক; না হয় আমি বৃষ্টিতে ভিজে যাবো

“এখন আসি” বলে প্রাঙ্গণ হঠাৎ লগ আউট হল।

ল্যাপটপ ভাজ করে দীপাবলি রান্নাঘরে গেল। তার ইচ্ছা ছিল, আজ লম্বা সময় প্রাঙ্গণের সাথে কথা বলবে। হলোনা। তাই একটু মন ভার হয়েছে। নিতিকার জন্য মুরগী-মসলা করলো। ঘি দিয়ে আলুভর্তা প্রাঙ্গণের খুব পছন্দ। সে আসবেনা; সেই উপায়ও নেই। তবু প্রিয় মানুষটাকে ভেবে দীপাবলি আলু ভর্তা বানালো।

রান্না শেষ করে দীপাবলি আবার ল্যাপটপ অন করলো। প্রাঙ্গণের সবুজ বাতি জ্বলছেনা। জ্বর কমেছে কিনা সেটা জানতে চেয়ে সে একটা মেসেজ দিলো। সাথে সাথে প্রাঙ্গণের রিপ্লাই এলো।

-হ্যাঁ, জ্বর কমেছে।
-দেখা করতে চাই; পারবে? দীপাবলি জানতে চাইলো
-কোথায়?
-আগের সেই রেস্টুরেন্টে
-কখন?
-না থাক; আজ দেখা করবোনা! দীপাবলি মত বদলালো।
কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করে দীপাবলির ভিতর। ইদানিং খুব বেড়েছে।

প্রাঙ্গণ একটা হাসির ইমো দিয়ে বিদায় নিলো।

এর পরের দিন; এর পরের সপ্তাহ; এর পরের মাস।
দীপাবলি ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি। তার চেহারায় এর স্পষ্ট একটা ছাপ পড়েছে। প্রাঙ্গণ একটু একটু করে দীপাবলিকে এভয়েড করেছে।

এর পরের কোয়ার্টার।
এভয়েড করতে করতে প্রাঙ্গণ গত এক মাস দীপাবলির সাথে কোন যোগাযোগ করেনি।

নিতিকা এখন তার মায়ের চোখে সারাক্ষণ মেঘ দেখে; জলশূন্য মেঘ। সে মায়ের সব জানে, সব বুঝে এবং খুব করে চায়, তার প্রিয় মা যেন যেকোন শর্তে ভালো থাকে।

নিতিকা ভাবছিল, যদি একবার প্রাঙ্গণ আসতেন— ! ঠিক তখনই ডোরবেলের শব্দ হল। নিতিকা দরজা খুলে দিলো। অন্যপাশে এক যুবক; বয়স তার চেয়ে কিছুটা বেশি লাগে।

“আমি ঈষানচন্দ্র”, যুবকটি নিজের পরিচয় দিলো।

কিন্তু নিতিকা শুনতে পেলো যুবকটা বলছে, “আমি ঈশ্বরচন্দ্র (বিদ্যাসাগর)”!

অণুগল্পঃ মায়ানীল মেয়েটির হাত ধরে চলে গেলো

বেশ লম্বা সময় পর আহমেদ হোসেন দেশে ফিরছে। আগে ঘন ঘন ফিরতো। এয়ারপোর্টে তখন কেউ না কেউ তাকে রিসিভ করতে আসতো। এসব অনেক আগের কথা। শেষ ক’বার এয়ারপোর্টে কেউ আসেনি। বয়স বেড়েছে কিন্তু আহমেদ হোসেনের ইচ্ছের বয়স বাড়েনি। মুখে বলেনা; কিন্তু এখনো মন চায় সন্ধ্যে-বাতি জ্বালিয়ে পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে তার জন্য কেউ একজন অপেক্ষায় থাকুক।

শেষ ফ্লাইটটা এমিরেটস। আহমেদ হোসেন সব সময়ই চেষ্টা করে জোন “এ”-র প্রথম রো-তে আসন নিতে। এবারও ব্যাতিক্রম হয়নি। প্রথম যাত্রি হিসেবে সে এয়ার বাস থেকে নামলো। ডিপ্লোমেটিক সুবিধা নিয়ে সে চার পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব ফরমালিটিজ শেষ করে ফেললো। লাগেজে প্রায়োরিটি ট্যাগ লাগানো থাকায় খুব তাড়াতাড়ি লাগেজ দুটোও পেয়ে গেলো।

সব কিছুই তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো। কিন্তু আহমেদ হোসেনের কোন তাড়া নেই। মোবাইলের সিমটা পরিবর্তন করে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। যদি কোন কল আসে; বলে, “তুমি নেমেছো? আমি ১ নং গেটে দাঁড়িয়ে আছি”। তার মোবাইলটা বেজে ওঠলো; অপরিচিত নাম্বার। সে আগ্রহ নিয়ে কলটা রিসিভ করলো।

“গুড মর্নিং স্যার। রফিক ফ্রম … ডিপার্টমেন্ট অব ……সিকিউরিটি…….”।

আহমেদ হোসেন আশাহত হলো। মন খারাপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। সিদ্ধান্ত নিলো বন্ধুদের কল দিয়ে বলবে, তোরা এসে আমাকে নিয়ে যা।

আহমেদ হোসেন তার নিজের মনের এমন অদ্ভূত আচরণে কিছুটা অবাক হলো। সেতো নিজেই বহুবার মানুষকে বলেছে, কারো কাছ থেকে কিছু আশা করোনা; এমনকি মায়ের কাছেও। তবুও বন্ধুদেরকে কল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। অন্যপ্রান্ত থেকে প্রিয় বন্ধুর কণ্ঠ ভেসে এলো। আহমেদ বললো, তোকে একটু পরে আবার কল দেবো রে।

আসলে মায়ানীলের মতো কাউকে সে দেখেছে; তাই বন্ধুর সাথে কথা কন্টিনিঊ করেনি। তার জন্য বড় মায়া এই মানবীর। আহমেদ হোসেনের বুকটাকে নীলরঙ নদ বানিয়ে তাতে সে অষ্টপ্রহর চোখের জল ঢালে। সে আরো একটু এগিয়ে গেলো। মানবী মোবাইলে কথা বলছে। মায়ানীলেরই কণ্ঠ। দেশে আসার খবর সে জানে। তাইলে কী মায়ানীল তাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে ? এতো মায়া যার বুকে সে আসতেই পারে ! আরো একটু এগিয়ে গেলো আহমেদ হোসেন। তখনই প্রায় সাতাশ-আটাশ বছর বয়সী একটা মেয়ে এসে মায়ানীলকে জড়িয়ে ধরলো।

যে পাখি “জীবনের সব লেনদেন মেটাতে” পারেনা সে একটু আঁধারেই ঘরে ফিরে! মায়ানীল আড়চোখে আহমেদ হোসেনকে দেখলো। আলো-আঁধারের আহমেদ হোসেনকে আসলে কী সে দেখতে পেলো?

নীলরঙ শাড়ি পরা মায়ানীল মেয়েটির হাত ধরে চলে গেলো!

কবিতাঃ প্রাচীর

মঙ্গল থেকে নিযুত কোটি পাহাড় ধার করে এনে
একটানা বাইশ আলোকবর্ষ সময় কুড়ি হাজার নক্ষত্রের শ্রম ব্যায় করে
দিগন্ত বরাবর একটা দুঃখ-প্রাচীর বানালাম।
ঈশ্বর বললেন, “এটা ভালো; কিন্তু পাহাড়ে পাহাড়ে যে ঢালু আছে
দুঃখগুলো ওসব দিয়ে অনায়াসেই ভিতরে প্রবেশ করবে।
মেঘ নামিয়ে মেরামত করতে পারো বটে;
তবে তা খুবই সাময়িক
এবং অযথাই ব্যায়বহুল হবে”।

তাই মেঘ নয়; দিগন্ত বরাবর সমুদ্রের পর সমুদ্র বসিয়ে
আরো কুড়ি হাজার নক্ষত্রের শ্রম যোগ করে
আমি দ্বিতীয় স্তরের প্রাচীরের কথা ভাবলাম।
ঈশ্বর বললেন, “এটা মাচ বেটার
সমুদ্রের সাথে নদিও যোগ করতে পারো;
এতে খুব বেশি যে খরচ হবে তাও নয়।
তবে সাথে যদি ঝর্ণা মিশাতে চাও; তাতে যদিও সুরক্ষার নিশ্চয়তা নেই,
তোমার হৃৎপিণ্ডের অর্ধেকটা দেবতাকে ভোগ দিতে হবে”।

অতঃপর ঝর্ণার কথা বাদ দিয়ে ঈশ্বরের চোখের জল ঢেলে
আমি তৃতীয় স্তরের প্রাচীরের কথা ভাবলাম।
এবার ঈশ্বর মৃদু হাসলেন এবং একটু থেমে বললেন,
“ওতে খুব ভালো কাজ হবে বটে; তবে তোমার আকাশ,
সব গ্রহ-নক্ষত্র একযোগে জলশূন্য হবে
এবং এক সময় আমার চোখ দুটো দেবতাদের দখলে যাবে !
খরচাটা তাই প্রকৃতই বিস্তর; কিন্তু কখনোই তা
তোমার মনলতার দুঃখের চেয়ে বড় কিছু নয়”!

ছোটগল্পঃ রুপন্তির কথা

তিনি এক রকমের কানে ধরেই সাংবাদিককে মুখের কাছে এনে বললেন,”রেইপ কথাটা বেশ্যাদের বেলায় ঠিক খাটেনা”। সাংবাদিক হে হে করে হেসে বললো, “খুবই হক কথা, নেতা”। উপস্থিত পাতি নেতাদের মধ্যে যারা তাদের নেতার কথা শুনলো তারা হেসে ওঠলো; যারা শুনেনি তারাও।

বিকেলেই রিপোর্টটা একটা অনলাইন পোর্টালে এলো। শিরোনামের নিচে পর্ণ ম্যুভি থেকে কপি পেস্ট করা একটা ছবি। রসিয়ে রসিয়ে লিখা। বিস্তারিত পড়ে নিহালের মন ভার হয়ে গেলো। সে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ মেঘে ছেয়ে গেছে। রুপন্তির ইনবক্সে নক করলো;

-কি করছ?

রুপন্তিকে এটা নিহালের কমন প্রশ্ন। ইনফ্যাক্ট এটা দিয়েই সে কথা শুরু করে। এক্ষেত্রে রুপন্তিরও একটা রেডিমেইড জবাব আছে,“তোমার জন্য নিজেকে সাজাই”!

কিন্তু আজ নিহাল কোন জবাব পাচ্ছিলনা। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট, পনের মিনিট ! অতঃপর মোবাইলে কল দিয়ে সে রুপন্তিকে অনলাইনে আসতে বললো।

-বিশেষ কিছু করছিনা, নিহালের প্রশ্নের জবাবে রুপন্তি লিখলো।
দুমিনিট আগে হারিকেনের সলতে কমাতে গিয়ে কী মনে করে যে বাড়িয়ে দিলাম মনে আসছিলনা। পরে মনে পড়েছে, মিন্সট্রুয়েশন শুরুর এক্সপেক্টেড ডেট থেকে কতদিন পার হয়ে গেছে সেটা ক্যালেন্ডারে দেখতে চেয়েছিলাম। আসলে এই মুহূর্তে সেটাই করছিলাম আর তুমি কল দিলে। আজ দুই সপ্তাহ পূর্ণ হয়েছে। এর আগে নিয়মিতভাবে আটাশ দিনের চক্র ছিল। বিয়াল্লিশ দিন হয়ে গেলো। আমি নিশ্চিত প্রেগন্যান্ট।
রুপন্তি যোগ করলো।

– জানি
-কিভাবে জেনেছ?
-একটা অনলাইন পোর্টালে এসেছে ।

রুপন্তি বিষন্ন হলো। এসব ওই বদমাশদের কাজ। সে বিশ্বাস করে, ওরা ভালো করে জেনে লিখেনি। নিশ্চয়ই সবকিছু মনগড়া এবং বিকৃত। নাদেখা রিপোর্টটির নানান সিনারিয়ো তার চোখে ভাসতে লাগলো।

বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিহাল লম্বা করে একটা কমেন্ট লিখেলো; কিন্তু পোষ্ট করলোনা। কী লিখবে বুঝতে পারছিলনা। অতঃপর কিছুক্ষণ অফলাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো ;

-পরে আসছি।

নিহাল লগ আউট হলো।
রুপন্তি অপেক্ষা করতে লাগলো।

কেন অপেক্ষা করছে? নিহাল তার কেউ কি?
কে?

বিএ পাশ করার পর পরই রুপন্তির বিয়ে হয়। কিন্তু একটা রাতও পুরো হয়নি; ওর স্বামী মারা যায়। পুকুর ঘাটে সাপের কামড়ে। সেই থেকে কপালে অপয়ার সিল পড়ে। আর বিয়ে করেনি। একটা বেসরকারি চাকরি নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ওটা একটা “হায় হায় কোম্পানি” ছিল। বেশিদিন চলেনি। নিরুপায় হয়ে দুই বছরের মাথায় একটা হোটেলে যাওয়া আসা শুরু করে। ওখানে তিন বছর হয়ে গেলো। নানান জন ওর কাছে আসে ! কেউ বয়সে বড়; কেউ অনেক ছোট। পকেটে ট্যাবলেট নিয়েও কেউ কেউ আসে। তবে নিহাল একেবারেই ভিন্ন। যেদিন রাতে বৃষ্টি হয় কেবল সেদিনই আসে। সারারাত রুপন্তির হাত ধরে জানালার পাশে বসে থাকে; গান গায় আর ময়নার গল্প বলে।

তিন বছর ধরে আকাশে মেঘ করলেই রুপন্তি নীল শাড়ি পরে; খোপায় ফুলের মালা জড়ায়। ময়নার কথা বলার সময় নিহালের চোখে জল দেখে রুপন্তির হিংসা হয়। সে ময়নার মতো হতে চায়। কিন্তু আজ ব্যাতিক্রম হলো। সে সাজেনি। রুপন্তি আর নিহালকে ছাড়াই আজ রাতের নগর জুড়ে বৃষ্টি হবে।

রুপন্তি খেয়াল করলো, নিহালের আইডির পাশে আবার সবুজ বাতি জ্বলে ওঠেছে।

-এতো দেরি করলে কেন? রুপন্তি কিছুটা অস্থির হয়ে প্রশ্নটা করলো
-সরি। ভালো আছো?

কথার মাঝে নিহালের এই কুশল জানতে চাওয়া নতুন কিছু নয়। এই প্রশ্নটার উত্তর যে কেবল হ্যাঁ বা না এর মধ্যে নেই সেটা রুপন্তি ভালো করেই বুঝে। সে একটু ডিটেইলে জবাব দেয়;

-একমাস আগে পাঁচদিনের ছুটিতে গ্রামে আসছিলাম। আমি বাড়ি থেকে দশ মিনিটের হাটা দূরত্বে তখন। আচমকা অপহৃত হলাম। পাড়ার এক বখাটে ছেলে আমাকে অস্ত্রের মুখে রেইপ করে। ওসব নিয়েই ঘণ্টাখানেক আগে বাড়িতে দরবার হলো।

-কোন সিদ্ধান্ত হলো কি?

-জানাজানি হবার আগে রজত ওর সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে আমাকে ভয় দেখিয়েছিল। রজত মানে ওই বখাটে ছেলে;যে আমাকে রেইপ করেছে।

পরে গ্রাম্য দরবারে টাকা দিয়ে মিটমাটের চেষ্টা করা হয়। আমি কোনটাই মানিনি। এক পর্যায়ে রজতের পিতা বিয়ে পড়ানোর প্রস্তাব দেয়। সে প্রভাবশালী এক নেতার চেলা। প্রথম দিকে আমার বাবা মা নারাজ থাকলেও এখন রাজি। মামলা উঠিয়ে নিতে বলে। বিয়ের প্রস্তাব হয়তো ওদের একটা চাল। আন্তরিক প্রস্তাব হলেও আমি রাজি নই। আমি চাই ওর শাস্তি হোক।

রুপন্তির সম্মতি নিয়ে নিহাল ভিডিও কল দিলো। সবকথা তো লিখে প্রকাশ করা যায়না!

– আজ দরবারে তুমি ওই পক্ষকে কি বলেছো?
থুতনির নিচে হাত রেখে নিহাল রুপন্তির দিকে তাকিয়ে আছে

-সোজা “না” বলে দিয়েছি। কেন রাজি হবো তুমিই বল?

প্রশ্নটা করেই নিহালকে রুপন্তি লাইনে অপেক্ষা করতে বলে। রজতের পক্ষের লোকজন আসছে। হয়তো জরুরি কিছু।

মানুষগুলোর সাথে কথা বলতে রুপন্তি বাইরে গেলো। নিহাল ওকে নাদেখলেও ওদের কথোপকথন শুনছে। রুপন্তি প্রথমে ধীরে শান্তভাবে কথা বলে। পরে উত্তেজিত হয়ে যায়।

“মৃতের মতো শুয়েছিলাম। শরীর মেলে দিতে হয়েছিল। না দিলে তুই তো আমাকে মেরেই ফেলতি। তুই মার্ডরার, রেপিস্ট এবং —এবং— !
এই খাটাস, সব বলবো তুই আর কি কি?”

রেপিস্টকে রুপন্তি শাসাচ্ছিলো। সে লোকগুলিকে এক রকমের দূরদূর করে তাড়িয়ে দিয়ে নিহালের সাথে যোগ দিলো।

-পুরো পরিবারটাই খারাপ ! শুনেছি ওর বাবাও একই রকম। রুপন্তি আবার কথা শুরু করলো

-বুঝে শুনে ঠান্ডা মাথায় ওদেরকে হ্যান্ডল করো। নিহাল পরামর্শ দিলো

-হুম;আমার একার লড়াই
-ওই রেপিস্ট একজন সম্ভাব্য মার্ডারার; এবং সে আর কি সেটা বলতে যেয়েও বললেনা। তোমার ওই নাবলা কথাটা আমি জানি!

-কি?

-নপুংসক !