বিভাগের আর্কাইভঃ জীবন

হোম কোয়ারেন্টিনের দিনগুলো-১

hhyui

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্রেক আর উৎকণ্ঠায় দিবস-রজনী পার করছি। দেশের অবস্থা প্রতিদিনই ভয়াবহতায় রুপ নিচ্ছে। আমি চিন্তিত। আমি শঙ্কিত ভীষন। করোনা নিয়ে মানুষ এখনও পুরোপুরি সচেতন হয়ে উঠেনি। মানুষ এখনও অবজ্ঞা আর অবহেলায় দিন পার করছে। আমার এক সিনিয়র সেদিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছিলেন, ৫-৬ জন আক্রান্ত নয় বরং সরকারে বলা উচিৎ ৫ লক্ষ আক্রান্ত। তাহলেই বাঙ্গালী ঘরে ঢুকে যাবে, প্রয়োজনে সেনাবাহিনী বেদম প্রহার করবে সবাইকে। আমি তার এই স্ট্যাটাসে মন্তব্যে রাখি আগে উচিৎ হবে দরিদ্রদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া। তাহলে সমস্যা সমাধান হবে। তিনি আমার এই কথার কোন উত্তর দেন নি। আগ্রহ নিয়ে তার প্রোফাইলে ঢুকলাম। বায়োতে লিখা ছিলো, Judge me, I will prove you wrong. আমি দেরী না করে বন্ধু তালিকা থেকে তাকে বিদায় জানাই। আমার মাথামোটা লোক একদমই পছন্দ না।

আমাদের এই সোনার দেশে অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করেন। ধনী যারা গরীবদের দেখে তাদের অবস্থা ধরি মাছ না ছুই পানি। অথচ তারা যদি আমাদের প্রতি সত্যিকার অর্থে করুণার সুরে তাকাতো আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি বাঙ্গালীর ভাত নিয়ে কোন চিন্তা করতে হতো না। ধনীরা গরীবদের মূল্যায়ন করতে চান না। সমস্যা এই জায়গাতেই। আমার একজন সিনিয়র একদিন তার স্ট্যাটাসে তার অফিসের চেয়ারম্যান সাহেবের একটি উক্তি তুলে ধরেন সেখান লিখা ছিলো, আপনার পরিবারের সকল চাহিদা পূর্ণ করার পর বেঁচে থাকা অর্থ জনগণের। কতই না মেধাবী তিনি। তার মতো সকল ব্যক্তিগণ যদি এভাবে ভাবতো আমাদের ভিন্ন কোন দেশের কাছে টাকার জন্য দুহাত বাড়াতে হতো না। আর আল্লাহ সেই ব্যক্তি সেই জাতিকে ভিক্ষার রাস্তা খুলে দেন যারা অভাবের রাস্তা খুলতে চান নিজেদের জন্য। ইশ্ মানুষ যদি বুঝতো।

ব্লগার রাজীব নূর তার একটি স্ট্যাটাসে বলেছেন, আমাদের মতো দরিদ্র দেশে এক বছর না, তিন বছরের খাবার মজুত রাখা দরকার। খরা, বন্যা ও ঝড় তো প্রতি বছরই লেগে আছে। হোমো সেপিয়েন্স নামের এই প্রজাতিটা পৃথিবী জুড়ে অশান্তি সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে অন্য সব প্রজাতি অনেক ভালো থাকবে। বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতের সাথে আমি এক অসাধারন মিল খুঁজে পেয়েছি তার এই কথাগুলোর সাথে। বিগত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের দরিয়া কূলে হরেক রকম প্রাণ দেখা গেছে। কোথাও হরিন হরিণী নৃত্য করছে, কোথাও কাঁকড়ার দলো উৎসব আয়োজন করছে আবার দরিয়ার পানিতে হরেক রকমের মাছেদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এই দৃশ্যগুলো কতই না নজর কাড়া। প্রাণীগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, তারা স্বস্তির সাথে শ্বাস ফেলছে। আমি এক নাগাড়ে তাকিয়ে ছিলাম সেগুলোর দিকে। মানুষ কত জালিম হতে পারে চিন্তা করা যায়? আপন মাতৃভূমির নিরীহ প্রাণীদের সাথে কি ধরনের আচরন করতে হয় তারা আজও সেটা শিখেনি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তিনি এসব প্রাণীগুলোকে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে জাতির বিবেকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

আজ সকল অত্যাচারী সীমা লঙ্ঘনকারী শাসক গণ কোথায়? তারা নাকি অমুক জাতিকে তমুক জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। পৃথিবীতে রাজত্ব করবেন। আজ তারা সবাই পালিয়ে গিয়েছেন। তাদের মনে ভয় ঢুকেছে। তারা বোঝে, আল্লাহর আযাব বড্ড কঠিন। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দিন আগে বলেছিলেন, লক্ষাধিক মৃত্যু না হলে তিনি খুশী হবেন। একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি নিজ জাতির প্রতি এমন একটি অবজ্ঞা মূলক কথা বললেন কি করে আমি এটা ভেবেই ক্লান্ত। আসলে তিনি দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন না এটাই হবে হয়তো। কারণ একজন মানুষ যখন দায়িত্ব নেন তখন তার প্রধান কর্তব্য হচ্ছে নিজেকে মানবতার স্বার্থে বিলিয়ে দেয়া। আর এই কাজটা করেছেন, আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। যিনি মৃত্যুকে সামনে রেখে মানবতার কল্যাণে আপন পেশায় ফিরে গিয়েছেন। তার প্রতি আমার অবিরত শ্রদ্ধা।

.
চলবে-

উৎপত্তির পর মৃত্যু নিশ্চিত জীবন

2482110 ১। জীবন
আমরা জানি জীবন একটি অবস্থা। যেটি একটি অর্গানিজমকে জড় পদার্থ (মানে প্রাণহীন) থেকে ও মৃত অবস্থা থেকে পৃথক করে। যখন জীবসত্তার অবস্থান স্থান কাল পাত্র ভেদে শূন্য থেকে কোন কিছুর দৃশ্যমান অবস্থানের মাধ্যমে পরিণত হয় কিংবা যখন তা নির্মীয়মান হয়, সেটি যেকোনো ধরনের হোক না কেন খাদ্য গ্রহণ বিপাক বংশবিস্তার পরিচালনা ও আরো ইত্যাদি বিষয়াদির মাধ্যমকে তাঁর নীতিতে পরিণত করে তখনই নতুন একটি অস্তিত্বের গঠন ক্রিয়ার অবস্থান সূচিত হয়।

অথবা টিকে থাকার জন্য যখন উপস্থিত শক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান ও অবকাঠামোগত অবস্থার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে তখন তার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। যাকে আমরা জীবসত্তা বা জীবনসত্তা বলে চিহ্নিত করে থাকি এসব কিছুই জীবের উপস্থিতিতে নির্দেশ করে। আর এর প্রকৃত মৌল হচ্ছে প্রোটোপ্লাজম। আমরা অনেকেই জানি জীবন বা প্রাণ বিষয়ক শিক্ষা জীববিজ্ঞানে আলোচিত একটি বিষয় যাকে আমরা প্রোটোপ্লাজম বলে চিহ্নিত করে থাকি এই প্রোটোপ্লাজমের ক্রিয়া-কলাপকেই জীবন বলা হয়।

প্রকৃতি, এ এক অপার বিস্ময়কর অবস্থা। প্রকৃতি মহাবিশ্বের এক অনন্য সৃষ্টি। এই সৃষ্টির মাধ্যমে জীবের উৎপত্তি সূচিত হয়েছে। প্রকৃতিতে এমন কিছু মৌল উপাদান রয়েছে যার দ্বারা জীবের আবির্ভাব ঘটে। সেখান থেকেই প্রাণের উৎপত্তি শুরু হয়। সৃষ্টির মাধ্যমে যেহেতু প্রাণের শুরু হয়েছে মৃত্যুর মাধ্যমে ঠিক তার শেষ হয়। এটি শুধু জীবন নয়। প্রকৃতিতে যা রয়েছে যা কিছু রয়েছে এই মহা ব্রহ্মান্ডে যা কিছু রয়েছে। এর বিনাশ হচ্ছে এবং বিনাশ থেকেই নতুন করে তার নতুন একটি অবস্থা শুরু হচ্ছে।

এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বিষয়গুলোকেই জীবসত্তা বলে। যা জৈবিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন ভৌত সত্তাগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করে। কোষীয় সংকেত সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার একটি দারুন প্রক্রিয়া যা দারুণভাবে ভাববার বা উপলব্ধির বিষয়। যেসব বস্তু গুলোতে এই সকল গুণাবলী নেই হয়তো সেই সকল বস্তুর ভেতর থেকে জীবন শক্তির আবহমান কালের পথ ধরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে নয়তো তাদের ভেতরে সেই গুণগত মান গুলো কোনদিনও ছিল না।

২। জন্ম
জন্মের মাধ্যমে যেহেতু জীবনের উৎপত্তি হয় তেমনি এই উৎপত্তির পর মৃত্যু নিশ্চিত। এ নিয়ে আমার তেমন কোনো আগ্রহ নেই। পৃথিবীতে সবাই যেমন আসতে পারে ঠিক একই রকমভাবে তারা সবাই প্রত্যাগমন হয় তার ভিতরে আমিও বাদ যাবো না। পৃথিবীর কোন কিছুই অবিনশ্বর নয়; মুখের হাসি, চোখের অশ্রু, সময়ের দীর্ঘ মায়াজাল থেকে ছিন্ন হয়ে কোন একটা স্থানে গিয়ে বাষ্প হবে। পাহাড় সমুদ্র বন জঙ্গল মন্থন গতিতে ছুটে যাবে
অতি সূক্ষ্ম ভাবে তারা তাদের শক্তি হারাবে। আমাদের নীরবতা আমাদের চিৎকার এই মহা শূন্যতা ভেদ করে আর কোথাও পৌঁছবে না।

সৃষ্টির শুরু অথবা সূচনা লগ্ন থেকে নিয়তির এই অন্ধকার দঙ্গল থেকে আমরা কখনই বের হতে পারিনি, পারব না। কোন একটা শক্তির মাধ্যমে মুক্ত আকাশ বালুর কনায় ছেয়ে যাবে। মেঘের বজ্র দ্রুভিভূত অন্ধকার মেঘের আকার ধারণ করে নিশ্চিহ্ন করবে এই পরিপূর্ণ ভাসমান পৃথিবী। এখানে আর থাকবেনা অস্তিত্বের খন্ডন, এখানে আর থাকবেনা জীবের আনাগোনা মুক্তি অবমুক্তি এসব খেয়ালে পরিণত হবে। এখানে জানার জন্য আর কেউ থাকবে না। বোঝার জন্য আর কেউ থাকবে না, মানার জন্য আর কেউ থাকবে না, ভাববার জন্য আর কেউ থাকবে না।

এখানে কোন শুদ্ধতা অশুদ্ধতা পরিশুদ্ধ অপরিশোধ্য পরিচিত অপরিচিত দহন উৎপীড়ন নিপীড়ন বেহিসেবি জীবনের এই খন্ডন কোন কাজে আসবে না। নিশ্চিহ্ন হবে সব, চিহ্নহীন অন্ধকার প্রকারান্তে ছেয়ে যাবে পৃথিবীর এই প্রানন্তর আরেকটি পথের পাথেয় হয়ে জমাট বাঁধবে আরেকটি শক্তির মহড়ায়। মুক্তির ফোয়ারায় নিজেকে উজ্জ্বল করে যখন কোন মানুষ মানবজাতির অস্তিত্বের খণ্ডন করবে সেই ক্রমবর্ধমান সময় সে ক্রমবর্ধমান স্থান সেকাল সে পাত্র ভেদে তখনই পূর্ণমান তখনই প্রয়োজন; তুমি যখন এসেছ কিংবা যখন তুমি ছিলে যখন তুমি থাকবে যখন তুমি চলাচল করবে মায়ার সেই অখন্ডতা খন্ডন করে মানুষ যে সত্য প্রবচন উপলব্ধি করতে পারে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তা সময়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান।

শূন্যে ভাসমান এই পৃথিবী কয়েক শ আলোকবর্ষ কিংবা কয়েক মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন দূরে থেকে যেমন বালুকণার মতোই উপলব্ধ হয়। যখনই সপ্ত স্তরের কোন কিছুই অবলোকন হয় না কোন কিছুই থাকেনা কোন কিছুই বোঝার উপায় নেই তখন ইহকাল ও পরকালের অভাব মানুষকে অন্য চেতনার আলোকে বিচ্ছিন্ন করবে। মৃত্যু নিয়ে আমার তেমন কোনো আক্ষেপ নেই। মৃত্যুকে ভয় পাওয়া মানেই শত্রুকে ভয় পাওয়ার মতোই স্বাভাবিক ব্যাপার। মৃত্যুর জন্য আয়োজন হতে পারে মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে সদা প্রস্তুত থাকা। কোন ঋণ রেখে যাওয়া নয়। আপনি যদি কারো উপর অন্যায় করেন জুলুম করেন অত্যাচার করেন। ফ্রম সেটা আপনার জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে। প্রকৃতির শাস্তির বিধান অত্যন্ত সূক্ষ্ম।

আজ যা আপনি নিজে রেখে যাচ্ছেন অন্যায় উপার্জনের মাধ্যমে অসাধুপায় ও উপার্জনের মাধ্যমে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ও শাস্তির সম্মুখীন করবেন। আপনি বেঁচে যাওয়া মানে আপনার অপরাধ ক্ষমা হয়ে গিয়েছে আপনার অন্যায় সবাই ভুলে গিয়েছে সেটা ভাবা আপাদমস্তক ভুল। আপনার অস্তিত্বের অহংকার আপনাকে যখন শেষ করে দেবে তখন আপনার জন্য আর কোন কিছু অবশিষ্ট থাকে না।ফ্রিজের ভিতরে যত উপার্জন হবে তার জন্য আপনাকে ততটাই নমনীয় হতে হবে। অস্তিত্বশীল মানব জীবনের এটাই সবচাইতে বড় সৌন্দর্য। কেউ কোনো অন্যায় কেউ কোনো অপরাধ কেউ কোনো অপকর্ম করে জগজ্জীবন প্রতীক্ষা আনন্দ করতে পারবে এই ধারণার তা নিতান্তই প্রকৃতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

৩। মৃত্যু
তাই বলবো, ভয় করো না।
মৃত্যুকে ভয় না করে মৃত্যুর জন্য তৈরি হও।
প্রিয় মহোদয়, মৃত্যু আসবে বিষয়টি নিশ্চিত।

অনিবার্য সত্য হলো
মৃত্যু কাউকে ছাড়বে না।
আপনি সাময়িক সুন্দর পদক্ষেপের মাধ্যমে
মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পারেন।

কিন্তু মৃত্যু আপনার সামনে এবং পেছনেl
কিম্বা চতুর্দিক থেকেই প্রস্তুত।
একটা সময়, একটি স্থান, একটি কাল
প্রকৃতির এই অপার মহিমার মধ্যেই মৃত্যু অপেক্ষামান।

চেষ্টা করো কোন কিছুতে আশাহীন হইওনা
বুদ্ধিমত্তা, তোমার বিবেক, তোমার শক্তি ও সাহসের
মাধ্যমেই তোমার পরিচ্ছন্ন পথ সূচিত হবে।

কেউ কারো ক্ষতি করতে পারে না।
যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো একজন মানুষ
আরেকজন মানুষকে সুযোগ দেবে।
সহজে কেউ কারো কাছাকাছি আসতে পারে না।
যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মানুষ
আরেকজন মানুষকে কাছে না ডাকবে।

কেউ যদি তোমার সাথে রূঢ় আচরণ করে
প্রথমে তাকে ছেড়ে দাও, তার হাতেই ছেড়ে দাও
অপেক্ষা করো সে পরিবর্তন হয় কিনা…

প্রত্যেকটি মানুষকে সুযোগ দেয়া উচিত;
এই সুযোগটা তার অধিকার
তার কর্ম অনুধাবনের জন্য
এ সুযোগটি পেতেই পারে।
এটি একজন বিবেক এবং বুদ্ধিমান
মানুষের দ্বারা যৌক্তিক আচরণ বলেই পরিগণিত হয়।

দেখো, সে বারবার আঘাত করে কিনা।
দেখো সে বারবার তোমার হৃদয়ে
ক্ষত সৃষ্টি করছে কিনা।
আমাদের প্রানান্তর ছুটে চলা পৃথিবী
কাউকে ফেলে দেয় না।
খুনি, জালিম, বর্বর অপরাধীরাও তার কাছে আশ্রয়প্রার্থী

অতএব যে কোন বিচার,
প্রকৃতির মুখোমুখি হয়ে উপভোগ করতেই হবে।
জীবন থেকে কখনো আস্থা হারানোর উচিত না…

একটি জীবন তৈরি হয়েছে
আরেকটি জীবনের জন্য
এটি আমরা আমাদের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে
আত্মচেতনার মাধ্যমে আত্ম ভাবনার মাধ্যমে
অনুধাবন করে নিয়েছি।

তোমার মাঝে মৃত্যুর আত্ম ফলন ঘটবেই।
এটি অস্বীকার করার কোন ইচ্ছেও নেই
তবুও যদি কেউ অহংকারী হয় তার পতন নিশ্চিত।

জগতের কোন কিছুই অবিনশ্বর নয়।
নশ্বরের এই কোলাহলে সবাই মুক্ত, সবাই স্বাধীন।
তবে সেই সত্য কর্মের মাধ্যমে হতে হয়, হতে হবে।
অন্যায়-অপরাধ অবিচারের স্বাধীনতা
কেউ কাউকে দেয়নি দিতে পারেনা।

তাহলে সেই সম্পর্কে
তোমাকে সচেতন থাকতেই হবে।
এবং তোমাকে সৎকর্ম দাঁড়া
তোমার জীবনকে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে
ভাবিত করো ও ধাবিত করো।

এটাই তোমার কর্ম, এটাই তোমার নিয়তি।
শুধু এটুকু মনে রেখো
আমাদের এই শুদ্ধ ও সুন্দর সময়
জীবন এক জায়গায় গতিমান অন্য স্থানে স্থির;

আজ নাটক

সে এক দিন। ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধু পরিচালক – অভিনেতা উজ্জ্বল হকের আমন্ত্রণে সিউড়িতে আননের নাটক দেখতে গেছিলাম। সেদিন অডিটোরিয়ামে বসে নাটক শুরুর আগে লিখেছিলাম নীচের কবিতা। থিয়েটার শেষ হলে সেখানে অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, যার মধ্যে নাট্যকার অতনু বর্মণ এখনো বন্ধু বৃত্তে আছেন। আর থিয়েটার শেষে উজ্জ্বলের বাড়িতে যে আন্তরিক আতিথেয়তা পেয়েছিলাম ওর পুরো পরিবারের কাছে সেটা আজও ভুলিনি। সেখানে রাত্রিবাস করে ফিরেছিলাম পরদিন সকালে। Ujjwal ও অতনু দুজনেই আরও উজ্জ্বল হয়েছেন তাঁদের থিয়েটার নিয়ে। এই আনন্দটুকুই থেকে যায় স্মৃতির সঞ্চয়ে।

2475

নিঃশব্দ অডিটোরিয়ামে
মহুয়ার ঝিম ধরা আলো
সহস্র চেয়ারের বলিরেখায়
মশাদের গুনগুন সমাপতন
ড্রপসিন ফাঁক করে
উঁকি দেয়
আলুথালু মঞ্চ
খাঁজ কাটা স্টেপ বেয়ে –
‘মা এদিকে এস…’
রসের কলসি আসে
দ্রিমিদ্রিমি পায়ে
ইতিউতি প্রস্তুতি
আজ নাটক।

পারিবারিক দায়বদ্ধতা ও বন্ধন মানুষে আত্মসম্মান তৈরি করে

প্রকৃতি বিচারের ক্ষেত্রে অন্ধ নয়। যার যেটা প্রাপ্য সেটা সে দ্বিগুণ আকারে ফিরিয়ে দেয়। প্রকৃতির মাঝে বিচরণ করে জুলুম করে প্রকৃতিকে ঘুষ দিয়ে থামানোর কোন উপায় নেই, অন্যায়-অপরাধ অপকর্ম করে ক্ষমা চাওয়ার কোনো উপায় নেই। প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে নিরুপায় নয়। প্রকৃতি সর্বদাই প্রতিশোধ পরায়ণ। প্রকৃতি যেভাবে অপরাধের বিচারের দায়ভার নেয় মানুষ এভাবে কখনোই নিতে পারে না। প্রকৃতি তার সময়ের অপেক্ষা করে দ্বিগুণ আকারে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। ভালো কিংবা মন্দ প্রকৃতি দুয়েই খেয়াল রাখে দুটোই ফিরিয়ে দেয় অনেকগুণ।

প্রকৃতিকে ঘুষ কিংবা উপঢৌকন এর মাধ্যমে পাশে রাখা যায় না পাশে পাওয়া যায় না। কিংবা প্রকৃতির কোন সহমত ভাই নেই। প্রকৃতির নিরব মারণাস্ত্র অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। প্রকৃতি কোন ভ্রম নয়, খেয়াল নয়। প্রকৃতির উপর বিশ্বাস অন্য কেউ হারালেও আমি কখনো হারায় না। কারণ আমি বিশ্বাস করি প্রকৃতি আমাদের জীবনকে দারুন ভাবে সাজিয়ে দেয়, বেঁচে থাকার জন্য।

বিশ্বাসী বন্ধু কিংবা প্রতারকগণ সর্বদা পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে। কিছু ভেবে যদি ক্ষমা করেও দেন সারাজীবন আপনার পাশে থাকলেও বিশ্বাসী হয়না। হৃদয়ে তার জন্য ঘৃণা ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই থাকে না। ঘৃণা এমন একটা জঘন্যতম স্থান। কাউকে যদি একবার সেই ঘৃণার স্থানে রাখা হয় কোনদিনও সেই মানুষ তার সুন্দর জায়গা তৈরী করে নিতে পারেনা।

তাই বলবো বিশ্বাস অর্জন করে ধোঁকা দেয়ার পরিণাম খুব ভয়ংকর হয়। এমনকি তা জীবিত থেকে উপভোগ করা মানে মৃত্যুর চেয়েও নোংরা এবং জঘন্যতম। এর চাইতে আত্মসম্মান হীন জীবন আর হয় না। এখানে বেঁচে থেকেই নরক যন্ত্রণার তিরস্কার উপভোগ করা মানে নিকৃষ্ট জীবন ছাড়া কিছু নয়। এরচেয়ে নামে-বেনামে প্রাণীর জীবন সুন্দর।

পারিবারিক দায়বদ্ধতা ও বন্ধনের মধ্যে থেকে মানুষ যে আত্মসম্মান তৈরি করতে পারে স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে শ্রদ্ধা স্নেহ ও ভালবাসায় সর্বদা তাঁদের আগলে রাখে। সে হোক নারী কিংবা পুরুষ সমাজে কেউ কোনভাবেই ঊশৃংখল আচরণ কিম্বা অশ্লীলতা ছড়াতে পারে না।

নারী কিংবা পুরুষ তাদের ভাষা ব্যবহারে সচেতন হওয়া জরুরী সেটা হোক পরিবারে হোক সমাজে হোক পরিচিত অপরিচিত আলোচনা-সমালোচনায়। প্রত্যেকটা মানুষ একজন আরেকজনের প্রতি সবার সাথে সুন্দর আচরণ ভালো ব্যবহার অবশ্যই কাম্য তার পরেও তাদের ভেতরে যদি অশ্লীল বাক্য উচ্চ কণ্ঠস্বর কিম্বা ঊশৃংখল আচরণ যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় তবে তার ভেতরে কোনো লজ্জা বোধ নেই। এরা সর্বদা বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের যে আচরণ সেটাই করে থাকে।

এরা যেকোন পরিবারের জন্যই বিপদজনক সমাজ এদের জন্য কোনভাবেই জায়গা ছেড়ে দেয় না। কারণ সমাজে যখন ঊশৃঙ্খলা দেখা দেয় তখন সমাজ সেই ঊশৃঙ্খলা থামানোর জন্য সেই ঊশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারীকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করে। সমাজের সিদ্ধান্তের বাইরে কেও যেতে পারে না কেউ যদি তা ভঙ্গ করে সমাজ তাকে তার অবস্থান থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

দ্বন্দ্ব সমাস

আমাদের বন্ধু অতনু বিজ্ঞান ক্লাসে
কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকতো
কিংবা ক্লাসের বাইরে নীলডাউন।
সম অপরাধে আমরা মাফ পেয়ে
যেতাম, শুধু শাষাণ হত; শাস্তি
তেমন ভোগ করতে হত না।
আমাদের শিক্ষক সনাতন পন্থি;
অর্থাৎ হিন্দু, অতনুও হিন্দু
তবু তার প্রতি পক্ষপাতিত্ব ছিল না।

বড় পণ্ডিত বাংলা দ্বিতীয় পত্র
অর্থাৎ ব্যাকরণ পড়াতেন
ব্যাকরণ আমাদের বিভীষিকা
কানধরা, নীলডাউন ছাড়া
কোনদিন পার পেতাম না।

ছোট মৌলানা ধর্মের পাশাপাশি
অর্থনীতি। টাকাপয়সার ব্যাপারে
তখনো কাঁচা ছিলাম এখনো কাঁচা
অতনু মৌলানার প্রিয় ছাত্র ছিল
মুসলমান হিসাবে আমরা মৌলানার
অতিরিক্ত আনুকূল্য পাইনি।
মৌলানার দোয়ায় অতনু বিরাট
অর্থনীতিবীদ, আমরা তারই অধীনস্থ।

তখনকার দিনে শিক্ষকেরা ছাত্রে
ছাত্র দেখতেন; ধর্ম দেখতেন না।
এখন কি অবস্থা জানি না,
বড় পণ্ডিতের দ্বন্দ্ব সমাসে
নীলডাউন হইনি বহুদিন!

মন গাছ

মন বৃক্ষের নিচে একদিন ভয়ানক কান্ড ঘটে গেল, এই কাণ্ডের রেশ দীর্ঘ দিন আমাদের তাড়া করেছে।

শীলা নামের যে মেয়েটা মৃদুল কে ভালোবাসতো এক ভোরে তাকে দেখা গেল মন গাছে ঝুলে আছে।

ধরাধরি করে তার লাশ যখন নামানো হলো, আমরা তাকাতে পারিনি, তার জিব্বা মুখ থেকে অনেকখানি বেরিয়ে আছে। তাকে বীভৎস দেখাচ্ছে, যে স্নিগ্ধ মুখ আমাদের উৎপীড়িত করত সে মুখের এমন বীভৎস রূপ আমরা সহ্য করতে পারিনি।

অথচ তাকে প্রেমিকা ভাবার কোন কারন নাই, সে বিশ পেরিয়েছে আমরা টিনএজ বয়সও ছুঁতে পারিনি। তবু তাকে প্রেমিকা ভাবতাম, তার আশেপাশে ভিড় করে থাকতাম। শীলা আমাদের প্রশ্রয় দিত, বোনের আদরে গালে চিমটি কাটতো। তার একটুখানি আদরে আমরা দিশেহারা হয়ে যেতাম।

মন গাছের পাশ দিয়ে যে সরু রাস্তা পাড়ায় ঢুকেছে সেই সরু রাস্তায় একদিন মৃদুল কে দেখা গেল বর বেশে বধু নিয়ে আসছে।

তার বধু শীলার মতই স্নিগ্ধ, অথচ তাকে আমরা ডাইনি ভাবতাম। সে ডাইনি ছিল না, আমাদের মন পাবার জন্য সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করত। আমরা তাকে ঘৃণা করতাম বলতাম ‘ডাইনি তুই মর’।
একদিন তাকেও ডাইনির মত মন গাছে ঝুলতে দেখলাম, মৃদুল আরেক ডাইনিকে বিয়ে করে নিয়ে এলো।

মা’র তুলনায় ‘মা

কেউ কখনো জিজ্ঞাসিলে
বলব আপন মতে
মায়ের মত কেউ ছিলনা
কেউ পারেনা হতে!
মায়ের মত আপন হয়ে
কেউ আসেনি ধরায়
আমার সুখে হাসি ফোটে
দুঃখে অশ্রু ঝরায়!

অস্থিরতায় মা জননীর
গুটি কয়েক বানী
এক নিমিষে দূর’যে হত
বিষাদ যত গ্লানি!
আমার মায়ের মত করে
কে করে আর আদর
নিখাঁদ ভালোবাসায় বুনা
আস্ত একটা চাদর।

মা’র কোলেতে বসলে পেতাম
শান্তি জনম ভরা
তাঁর শরীরের গন্ধ যেমন
মেশকে আম্বরা
মা’র তুলনায় শুধুই’যে ‘মা
বিশাল অবদান
হে-পরোয়ার আমার মাকে
জান্নাত কর দান।

পরকীয়া প্রণয় … দুটি পর্ব

পরকীয়া প্রণয় (৩)

দরজাটা ভেঙ্গে ফেল যদি শুনতে না পায় কেউ ডাক। আমি সতীশ, তোমায় ডাকছি নিরন্তর। আহ্ প্রেম! সাজিয়ে রেখেছি থরে থরে। ভালোবাসো খুউব বেশি, এমন পুষ্পিত রাত আর হয়তো আসবে না ফিরে। অশুচি শরীর; তুমুল প্রেমের নৈপুণ্যতায় বিশুদ্ধ হবো দু’জন। মিথ অথবা সাইকোলজি যাই বলুক লোকে ভেতরে ঘটছে লঙ্কাকাণ্ড। মালিকানাহীন এই অন্ধকার রাতের পিঠজুড়ে মৃগনাভীর গন্ধ। মিলিয়ে যাচ্ছে শরীরে শরীর। ডুব-সাঁতার খেলা। চৌকাঠ জুড়ে ছুঁয়ে যাওয়া গোপন গন্ধে খসে খসে পড়ছে আকাশের তারা।
ইশারা বোঝ? সাদা-কালো ডাক? পা টিপে টিপে এসেছি এতোটা দূর। দরজাটা খোল! আমি সতীশ, বাইরে দাঁড়িয়ে।
.
পরকীয়া প্রণয় (৫)

ক্যালেন্ডারের বুকে একটি সংখ্যা। যেনো লাল চোখে জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে থাকে। অনিয়মের নিয়মে বাঁধা পড়েছি দু’জন। তোমাকে ঘিরে এমন কতো সংখ্যা জমা আছে বুকে। একচিলতে রোদ্দুর এঁকে যাওয়া ঠোঁটে আগুনের ডাক। অনিয়ন্ত্রিত সময়ে অনাহুত আগমন। খোলা আছে বুকের বোতাম। সন্ধ্যার লালচে রোদ্দুরে ভেসে বেড়ায় আমাদের প্রাক্তন প্রেম। তুমি মানেই প্রেম, প্রেম মানে যাদুমন্ত্র, যাদুমন্ত্র মানেই পরকীয়া; ঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরে ঘুরে তোমার কাছেই আসি। কিছু সাংকেতিক ছোঁয়া-ছুঁয়ি। নগ্ন রাত। বেআবরু হৃদয়। সন্তর্পণে হারাই সুড়ঙ্গে।

অস্তিত্বের খণ্ডন

কৃপণ’রা জীবনে কোন কিছু উপভোগ করতে পারে না। একজন চিন্তাশীল বিবেকবান ও উদার মনের মানুষ তার জগৎ জীবনে ধন-দৌলত অর্থ-সম্পদ নানাবিধ ঐশ্বর্য উপভোগ করতে পারেন। আপনি যখন যথার্থরূপে নিজেকে বুঝতে পারবেন তখন অন্যের সম্পর্কে দারুন সব ধারণা তৈরি হবে। মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে গেলে প্রথমে আপনাকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে আপনি সেই সম্পর্কটা অর্থের মাধ্যমে করছেন কিনা।

অর্থের সম্পর্ক সারা জীবন মানুষকে একটা ধূম্র ধোঁয়াশার মায়াজাল এর মধ্যে আবিষ্ট করে। যা অন্তরের চোখ দিয়ে দেখা যায়, অর্থ দিয়ে দেখা যায় না। চোখের সামনে অনেক অনেক সত্য দেখা অনুভবে খারাপ লাগলেও আপনার অন্তরের ভাবনাটা ভুল হতে পারে। আমরা যদি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে সেইসব বিষয়গুলোকে বিবেচনা করি এবং নিজের চিন্তাশীল আচরণের দ্বারা সেটি যদি ধৈর্যের সহিত বোঝার চেষ্টা করি সেটা যদি সময় নিয়ে ও হয় তবুও ভালো।

আপনার আগ্রহের বস্তু যেটাই হোক না কেন ভুল চিন্তার জন্য উপশম রয়েছে,, ভুল ধারণার জন্য উপশম রয়েছে, ভুল ভাবনার জন্য উপশম রয়েছে কিন্তু যখন আচমকা অন্যকে ভুল মুঝে তুলে ধরেন সেটা আপনার বোধ, বুদ্ধি ও বিবেক থেকে বাইরে এসে অবিবেচকের মতো আচরণ করছেন। অনুভব করছেন আপনি যা কল্পনা করছেন তার ওপর ভিত্তি করে যদি আপনি সেই বিষয়টি নিয়ে একটি অ্যাকশন এর পর্যায়ে বিবেকে সমাবেশ করেন তবে সেই মুহূর্তে সেটা অবশ্যই ভুল চিন্তার প্রতিফলন।

আমাদের পারস্পারিক জীবনে আমরা নিজেরা নানাভাবে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি কিন্তু সেগুলোকে নিজেদের ভেতর থেকে মোকাবেলা করতে হবে। যদি আপনি সেই মোকাবেলা টা পরস্পরের সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমে না করেন তবে সেখানে তৃতীয় পক্ষ দ্বারা এমন একটি ঘটনা ঘটবে যে ঘটনার জন্য কোন এক সময় অনুশোচনায় ভুগতে পারেন। বিবেকের সাথে চিন্তা করার অনুশীলন করায় মানব জীবনের সুফল বয়ে আনতে পারে বোধগত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ভাবগত জীবনে আপনি কখনোই সত্যকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।

সে সত্যটা যদি আপনি ভুল বোঝার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেন তবে জীবনের প্রত্যেকটি লক্ষে আপনি হেরে যেতে পারেন। অর্থ মানব জীবনে চলতে গেলে বোঝা পড়ার জন্য প্রয়োজন। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে পরিকল্পনায় আপনাকে সফলতার দিকে আনতে পারে আপনি যদি পরিকল্পনার সহিত চিন্তা করেন। তবে সেই চিন্তা গুলো অবশ্যই যথার্থরূপে গ্রহণ হবে। চিন্তার পরিপক্কতা আপনাকে সুদুরপ্রসারী চিন্তার মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরি করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনা। যদি সেখানে আপনি আপনার ভাবগত জীবনের বিষয়াদি নিয়ে চিন্তাশীল আচরণের বাইরে গিয়ে অবিবেচক ধারণা পোষণ করেন তবে সেই ক্ষেত্রে আপনি আপনার জীবনে উদার মানসিকতার বৈচিত্র্য উপলব্ধি করতে পারবেন না।

এজন্যই বলা হয় উদার ব্যক্তিরা তার জগত জীবনে সকল ধরনের ঐশ্বর্যকে উপভোগ করতে পারে। মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে গেলে অবশ্যই বিবেক এবং সুন্দর মানসিকতার প্রয়োজন রয়েছে। প্রত্যেকটি আগ্রহের সম্পর্কে নিজেকে সচেতন হতে হবে, বুদ্ধিমান হতে হবে, চিন্তাশীল হতে হবে, বিবেকবান হতে হবে এমনকি বোধ সম্পন্ন হতে হবে তবেই আপনার আগ্রহের যাত্রাপথ অনুকূলে আসবে। যেকোনো অনুকূল পরিবেশে আপনি যাতে নিজেকে খুব সহজে গ্রহণ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার চিন্তা আপনার ভাবনা আপনার বিবেক আপনার মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো অবশ্যই সুন্দর ভাবে নিপুণতার সহিত উপলব্ধি করতে হবে। নয়তো তা নিমিষেই ভেস্তে যাবে।

প্রত্যেকটি চিন্তাশীল প্রতিভাবান মানুষ হেরে যেতে পারে না। আবার মানব জীবনে মানুষই একমাত্র যারা অন্যের শক্তির কাছে হেরে যায় সামর্থ্যের কাছে হেরে যায় ক্ষমতার কাছে হেরে যায় জ্ঞানের কাছে হেরে যায়।
কিন্তু সেই হেরে যাওয়াতে অনেক ক্ষতি হলেও একটা মানুষকে কোনদিন পেছন ফিরে তাকানোর অবকাশ রাখা উচিত নয়। মানুষ হেরে গেলেও সামনের দিকে গমন করে আরেকটি ক্ষেত্রে দুর্বল মানুষেরা হেরে গেলে তার সামনে শেষ দেয়ালটি দেখে এবং সে নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে জীবনকে নিঃশেষ করে দেয়।

চিন্তাশীল মানুষেরা মানবসমাজে যুগের পর যুগ ধরে তাদের সুন্দর কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। মানুষ যদি নিজেকে আগ্রহের বস্তু মনে করেন তবে সেটি খুবই দুঃখজনক এবং হতাশার, মানুষকে হতে হবে আগ্রহী, আগ্রহের মানুষ। যাকে নিয়ে অন্য কেউ চিন্তা করবে অন্য কেউ ভাববে। মানুষ যখন শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে তখন তার ভেতরে অগাধ পরিমাণ স্বার্থপরতা কাজ করে। স্বার্থপরতা সব সময় প্রতিহিংসার দিকে ধাবিত করে যেখানে অপরের চিন্তা-ভাবনা অপরের কথা বলার সুযোগ নস্যাৎ করে দেয়। এরকম অবিবেচক মানুষ সব সময় আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গ্রোথিত হয়ে রয়েছে ওরা কখনোই অন্যের ক্ষেত্রে বিবেচক হয় না। তারা কখনোই অনুভব করতে জানেনা অপরের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হওয়া জরুরী।

একজন মানুষ যখন শুধুমাত্র নিজের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তখন তার বক্তব্যকে কোনভাবেই গ্রহণ করছে না তখন সম্পর্কের দরজাটা আপনাআপনি শেষ হয়ে যায়। ভেঙ্গে যায় তছনছ হয়ে যায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। এটি যদি সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থির থাকে তবে জীবনের সব জটিল দিক গুলো পুনরায় তার জীবনে এসে বাসা বাঁধবে যা আর কখনই সেই বিদ্যমান জায়গা থেকে সরে আসবে না।

পরিশেষে যা হবার তাই হবে একটি দূরত্ব একটি দেয়াল একটি বিধ্বস্ত চিন্তা একটি অসামঞ্জস্য ভাবধারা পার অধঃপতনের জন্য দায়ী থাকবে সেটি কারো জন্য কাম্য নয়। তাই বলবো প্রত্যেকটি মানুষকে তাঁদের আপন আপন জায়গা থেকে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ সংবেদনশীল হওয়া অত্যন্ত জরুরী। যখন একজন মানুষের অনুভূতির দেয়াল একদম ক্ষীর্ণ হয় তখন তার মধ্যে কোনভাবেই জাজমেন্ট থাকেনা তারা অ্যাগ্রেসিভ হয় আগ্রাসী হয় এমনকি এমন সব ঘটনা ঘটে যা অন্য কেউ ভাবার সুযোগ পাওয়ার আগেই ঘটে যায়। একজন বোধ সম্পন্ন মানুষ তার বক্তব্যকে যখন বারবার প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে একজন নির্বুদ্ধি পরায়ণ মানুষ তার জায়গা থেকে অটল অনড় এটা তো বিচক্ষণতা নয় এটা তার মস্তিষ্ক গত ভাবনার পরিধি যেখানে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই।

তাদের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক বা অন্য কোন কিছু করাই উচিত নয়। তারা তাদের স্বার্থের বাইরে কখনোই যাবে না, যেতে পারে না। অপরের প্রতি কোনভাবে করুণা দেখানো উচিত নয় তবে অপরের প্রতি সর্বদা সহানুভূতি রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। সেটা যদি কাছের মানুষ আপন জন প্রিয় মানুষ হয় তবে তো অবশ্যই নয়। আমি কাউকেই সেই জায়গা থেকে বিবেচনা করার সমর্থন করতে পারি না। সহানুভূতির পাশাপাশি একজন মানুষকে দায়িত্ববান হতে হবে বিবেকবান হতে হবে সুন্দর মানসিকতার মধ্য দিয়ে সেই মানুষটা যখন অপরের চিন্তাকে বুঝতে পারবে তখনই সেই মানুষটা তার জায়গা থেকে একটি সুন্দর স্থান দখল করে নিতে পারেন।

করুণা বোধ সম্পন্ন না হলেও এটি একজন অন্ধ মানুষের পথ চিনে নেয়ার মতই স্পর্শ কাতর ব্যাপার। কাউকে করুনা না দেখিয়ে তার জায়গা থেকে দায়িত্ববান আচরণ করা প্রকৃত মানুষের কর্ম। যে কর্ম গুনের কোন মূল্য অর্থ-সম্পদ ধন দৌলত দিয়ে নির্ণয় করা যায় না। চিন্তা ও উদার মানসিকতা উদার ভাবনা কিংবা সকল ধরণের প্রতিহিংসাকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ নিম্ন চিন্তা নির্বুদ্ধিপরায়ন বাকবিতণ্ডা সর্বদা অশুদ্ধ রাখে। নিকৃষ্ট মনোভাবাপন্ন ভাবনা জগতের সবচেয়ে জঘন্যতম কাজের মধ্যে একটি তাই বলবো সব কিছুকে করুনার জায়গা থেকে না দেখলেই ভালো এসকল স্থান গুলো কে সহানুভূতির জায়গায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই জায়গাটা না থাকলে কোনো মানুষই মানুষ হতে পারবে না।

আপনি একজন মৃত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারেন না। যদি তাকে সাহায্য করেন তাহলে জীবিত অবস্থায় আপনার জন্য এটি সঠিক কাজ ছিল। জীবিত অবস্থায় যদি সেই মানুষকে আপনি সহানুভূতি দেখান সাহায্যের হাত বাড়ান বন্ধুত্বের নিদর্শন দেখান তাহলে সে মানুষটা মৃত্যুর জায়গা থেকে আরো অনেক বছর বেঁচে থাকার সুযোগ পায়।
দান দুই প্রকার
১. দেখিয়ে দান করা
২. মহৎ উদ্দেশ্যে নিঃস্বার্থভাবে দান করা

দানে স্বার্থ থাকেনা যে দানে স্বার্থ থাকে সে দান গ্রহীতার জন্য বিপদজনক অসম্মানের দায়িত্বের জায়গা থেকে সেদান কখনোই গ্রহণ করা উচিত নয়। আবার যে দামে স্বার্থ থাকেনা যে দান স্বার্থহীন যে দান মানব কল্যাণের জন্য সূচিত হয় রচিত হয় সেই দানের মহত্ব অসীম। আমাদের এই সমাজে কিছু কিছু মানুষ নিজেকে প্রকাশ করার জন্য জাহির করার জন্য নিজের প্রতি অন্যের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য অন্যকে আনুগত্য করনের জন্য অন্যের কাছে ভালো সাজার জন্য দেখিয়ে-দেখিয়ে দান করে এই মানুষেরা এক জায়গায় বুক দেখায় আর অসংখ্য জায়গায় পিঠ দেখিয়ে চলে। এরাই সেই মানুষ যারা আপনার সামনে আপনাকে ভালো বলবে কিন্তু পেছন থেকে আপনাকে মন্দ বাক্য বলতে দ্বিধা করবেনা।

সর্বদা সুযোগসন্ধানী বড় কিছু পাবার জন্য ছোট-ছোট ত্যাগ করে আর সেই ব্যর্থতাকেই তারাতান বলে চালিয়ে যায়। আসলে তারা ভালো কাজে কখনোই আপনাকে সহযোগিতার হাত বাড়াবে না। নিঃস্বার্থ দানশীল মানুষ সর্বদা মানব চক্ষুর আড়ালে বসবাস করার চেষ্টা করে যে মানুষের সমাজে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে দান করে সেই মানুষদের প্রতি অন্যের যে দৃষ্টি তা নিতান্তই জগত জীবনের জন্য দারুণ এক উপমা বহন করে। আমরা এই মানুষদের সামনাসামনি কদর করতে না জানলেও আড়াল থেকে তাদের আলোচনা-সমালোচনা দুটোই করা হয় তবুও তারা কখনই থেমে থাকে না তারা থেমে থাকে না অন্যের কথা শুনে। তাই এই মানুষদের মাঝে সর্বদা হাস্যজ্জল মুখ উপলব্ধি হয়।

যাদের ভেতরে অপরের জন্য ভালোবাসার আকুতি বিরাজমান তারা কোনদিনও অন্যের কোন বিপদে পিছুপা হয়না। এ মানুষদের সমাজে কদর না থাকলেও তারা গ্রহীতার হৃদয়ে দীর্ঘকাল বসবাস করে। এটাকে মনুষত্ববোধ বলে; এটাই মনুষত্ববোধ এর প্রথম কর্ম পরিচয় এই কর্মটি প্রত্যেকটি মানুষের ভেতরে যত্নের সহিত লালনপালন করা উচিত। মৃত ব্যক্তির কোন অর্থের প্রয়োজন হয় না যে অনুদান অর্থ সাহায্য মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছবে না সেটি কোন সাহায্য নয় এটি কোনো সহানুভূতি নয়, কোনো সুন্দর কর্মনয়। আপনি কখনও বেওয়ারিশ লাসের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন যদি তা করে থাকেন সেটা অবশ্যই জগতের সবচেয়ে সুন্দর কর্মের একটি।

যে চিন্তা মানব জীবনে ক্ষতি সাধিত করে সে চিন্তা করার চেয়ে না করা ভালো। অভিঘাতের প্রাণান্ত চেষ্টা বড় বড় মানুষকে নিম্ন মানসিকতার পরিচয় এর দিকে ধাবিত করে। সুন্দর মানুষ কখনোই অন্যের ক্ষতির জন্য প্রার্থনা করতে পারে না পক্ষান্তরে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসা মানুষ সর্বদা অন্যের সুপারিশ প্রাপ্ত হয়। জ্ঞান মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোয় এনে সত্তের দরজা খুলে দেয়। সহৃদয় ভাবনা-চিন্তায় জিহবা কখনও আহত হয় না। দ্রতার মাধ্যমে বিবেক উদিত হয় দ্রতা যখন তার বিবেকের প্রকাশ ঘটায় তার নীতি বা আদর্শের কখনো অনুভব করতে পারে না। কিন্তু অপর প্রান্তের একজন বুদ্ধিমান মানুষ তার জায়গা থেকে ঠিকই অনুভব করতে পারে।

একজন মানুষের দ্বারা যে কোন ভালো কাজ করার পর সেই মানুষটি অন্তর থেকে সুখ বোধ করে। ভদ্র মানুষেরা খুব তীক্ষ্ণ ধারালো বুদ্ধিমান হয় না এমনটা নয় কম কথা বলা মানুষ সমাজের বাইরের এমনটি ভাবা উচিত নয়। ভদ্র মার্জিত মানুষেরা যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই কথা বলার প্রয়াস করে থাকে তবে কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যে মানুষ সারাজীবন তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন না হওয়ার কারণে পিছিয়ে যান। এরা পিছিয়ে পড়লেও অন্যের ক্ষতি করবে এমন হৃদয় তাদের ভেতরে জায়গা করতে পারেনা। তাত্ত্বিকভাবে তারা সর্বদা ধৈর্যশীল। এই মানুষেরা এক সময় পিছিয়ে পড়লেও আর একসময় অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে কারণ তাদের ছোট ছোট কর্মই তাদের কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়তা করে এবং মজবুত একটা ভিত্তি স্থাপন করতে সহায়তা করে যা ভাঙ্গার কোন প্রয়াস রাখে না।

জীবন চলার পথে অনেক মানুষকে সামনে পাওয়া যায় যাঁরা নিজেদের সুবিধার্থে সর্বদা ঊর্ধ্বমুখী। মানুষেরা অন্যকে বিপদে ফেলতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনা। এ মানুষেরা যখন কোন পরিবারে প্রবেশ করবে সেই পরিবারের সব কিছু পুড়ে ছারখার করে দিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনা। এরা নিজেরাও বুঝতে পারে কিনা তারা কখন কি ধরনের আচরণ করছে এমনকি পণ্যের ভালো তাদের চক্ষুশূল হয়ে থাকে এরা অন্যের ভালো কিছু দেখলে আফসোস ফেটে পড়েন এমনকি তাকে অপমান করার জন্য উদ্যত হয় যেকোনো মূল্যে ক্ষতি করার জন্য পিছপা হন না। আসলে পচনশীল হৃদয় কখনোই মমতা বা সমতার গান শুনতে পান না তারা তাদের নিজের চিন্তা জায়গা থেকে বধির হন। কখনোই তাদের চোখ দ্বারা সুন্দর দৃষ্টিতে তাকানো উপমা খুঁজে পায় না এরা সর্বদা ব্যর্থ জীবনের পথে নিজেদের ধাবিত করে যা তাদের জীবনকে অন্ধকারের পথে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।

এই মানুষের একটা সময় একুল ওকুল সব কুল হারিয়ে পথে বসে কিন্তু তবুও যদি তাদের হৃদয়ে একবার সেই অনুশোচনা একবার সেই ভাবনাটা তাদের ভেতরে উপলব্ধি হতো তবে তাদের নতুন করে সুন্দর একটি জীবন শুরু করার দারুন একটা সম্ভাবনা থাকে। এটাতো আমাদের হিসাবের কথা। তারা কখনোই এই পর্যায়ে যেতে পারে না। ছোটখাটো ব্যাপারেও অনেক জটিল এবং কঠিন পরিস্থিতি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে এজন্য এদের সাথে অতিরিক্ত ভাবে কোনো কথা না বলাই শ্রেয়। তাদের সাথে প্রয়োজনের বাইরে যখনই আপনি কোন কথা বলতে যাবেন তখনই তারা তাদের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে পড়ে এবং একটা সময় আপনি আপনার অস্তিত্বকে অনুপস্থিতির দাঁড়া অনুভূতি শূন্য হৃদয় খুঁজে পাবেন। সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগ এর সমাহার অত্যন্ত দীর্ঘ। এই মানুষেরা সারা জীবন নিজেদের ভেতরে যা কিছু রয়েছে তার সবটুকু আত্মত্যাগের মাধ্যমেই অতিবাহিত করে এদের কষ্টের সীমা অসীম হলেও এদের কোন দুঃখ অনুশোচনা হারানোর ব্যথা জাগ্রত হয় না।

কারণ তারা জানে তার সামর্থ, তারা জানে তাদের কি করতে হবে তারা জানে তাদের জীবন কিভাবে পরিচালনা হবে এবং তারা জানে তাদের জীবনকে কিভাবে অন্যের মাঝে টিকিয়ে রাখতে গেলে বন্টন করতে হবে।
তারাই প্রকৃত মানুষ প্রকৃত মানুষরা কখনোই সমাজের আলোড়িত ব্যক্তির মধ্যে ওঠা বসা করতে পারেনা এই মানুষেরা লোকচক্ষুর আড়ালেই নিজেদেরকে রাখতে অভ্যস্ত তাই তাদের মানুষ সমাজে খুব কমই উপলব্ধি হয়। বস্তুতঃ তাদের দেবতুল্য জীবনকে খন্ডন করা যেতে পারে।

আমাদের এই অস্তিত্বশীল জীবনে কষ্ট মানুষকে দুর্দান্ত কিছু নরক যন্ত্রণার উপহার দেয়। আমি ইহকাল অনুভব করি না পরকাল। আমি অনুভব করি আজ এবং আগামীকাল। আজও আগামীকাল সেটি অন্যের ও হতে পারে।
এ দু এর মাঝখানে ইহকাল এবং পরকাল বিদ্যমান। আজ এবং আগামীকাল আপনি যদি সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত হন নিজের বিবেকের মাধ্যমে নিজেকে নিজের অস্তিত্বের তারা পথ দেখান তবেই আপনি আপনার ইহকাল এবং পরকালকে সুশোভিত করতে পারেন।

আত্মসম্মান ও ভালোবাসা, টাকা পয়সা অর্থ-সম্পদ ধন-দৌলত এ সবকিছু নিজের ক্ষমতাবলে করায়ত্ত করা যায় তবে জীবনে এমন কিছু জিনিস রয়েছে যে জিনিস একবার যদি হারিয়ে যায় একবার যদি চলে যায় একবার যদি হাতছাড়া হয়ে যায়। একবার যদি প্রতারণা মাধ্যমে তা নিজের থেকে দূরে চলে যায় আর তাকে যদি ভালবাসার গভীর মসনদটি তার নামেই দিয়ে দেয়া হয় তার পরেও সে যদি সেই জীবন থেকে সেই মানুষটার নিকট থেকে চলে যায় তাহলে তার জীবন যাপনের সব সৌন্দর্য নিমিষের মধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধুলোর সাথে মিশে যায়। কিন্তু সেটা যদি আপনজনদের নিকট থেকে পাওয়া কষ্ট যন্ত্রণা হয় তাহলে আরও কঠিন থেকে কঠিনতর জীবন যাপনের পথ উন্মোচিত করে যা আর কখনো সুন্দর স্বচ্ছ ও সোজা পথ তৈরি করতে পারে না।

মানবজীবনে অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকে থাকতে গেলে আপনাকে অবশ্যই বিবেকের পথে বিচক্ষণতার সহিত হাঁটতে হবে এগিয়ে যেতে হবে যার কোন বিকল্প নেই। মানুষ অমর হতে পারে না তার কর্মগুণ অমর হয় অমর করে দেয় অমর করে রাখে যে কারণে মৃত্যুর হাজার বছর পরেও মানুষ টিকে থাকে পৃথিবীর এই বৈভবে যে সমৃদ্ধ সুনীতি তিনি তৈরি করে গেছেন এই মসনদের তিনিই হোন একমাত্র রাজা।

প্রার্থনা

হে মহান প্রভু
জীবনের অর্ধেকটা পথ অতিক্রম করে এসেছি
আজও তোমার দেখা পাই নি।
একজন মানুষ বলেছেন, তিনি তোমার প্রেরিত রাসুল
তিনি বলেছেন, তোমার সাথে তাঁর যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে,
তিনি আরও বলেছেন, তুমি তাঁর উপরে কিতাব নাজিল করেছো।

হে মহান সৃষ্টিকর্তা,
সেই মানুষের নাম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ),
তিনি বলেছেন,তুমি আল্লাহ আর তোমার মনোনীত ধর্ম ইসলাম,
যেহেতু তিনি তোমার কথা বলেছেন তাই আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি।

হে মহান আল্লাহ,
তাঁর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করেছি কেননা তুমি আমাকে মুসলিম ঘরে পাঠিয়েছো।
তুমি আমাকে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টান ঘরে পাঠালে আমি তাই বিশ্বাস করতাম।

হে মহান আল্লাহ,
আমি জানি না আমি ভুল পথে নাকি সঠিক পথে আছি,
তবে যেহেতু আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি
তাই আমাকে বিশ্বাসীদের তালিকায় স্থান দাও।
শুধু আমাকে নয়,
ঈসা মুসাও বলেছেন তঁদের সাথে তোমার যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে
এবং অনেকে তাঁদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করেছে
স্মৃতি শ্রুতি থেকেও অনেকে বিশ্বাস স্থাপন করেছে
গৌতম বুদ্ধের কথাতেও অনেকে বিশ্বাস স্থাপন করেছে
যে যেই ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করেছে সবাইকে তুমি বিশ্বাসীদের তালিকায় স্থান দাও,
যেহেতু তুমি অন্তর্যামী তাই তুমি জানো কার অন্তরে কি আছে।

সব ধর্মে ভেক ধরা মানুষ আছে,
বহুরূপী মানুষ আছে,
সে অন্তরের খবর তুমিই জানো,
তাই অবিশ্বাসী হয়েও যারা বিশ্বাসীদের মতো আচরণ করে,
যে সব অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত করে,
তাদের খবর তুমিই জানো এবং তার বিচার তুমিই জানো।

আর যারা তোমাকে মনে মনে এবং প্রকাশ্যে অস্বীকার করে,
তোমাকে অজ্ঞেয়বাদ বলে অবজ্ঞা করে,
তাদের তুমি ক্ষমা করে দিও,
কারণ তারা যা বুঝেছে তাই বলেছে
এবং তারা তোমাকে বুঝতে পারে নি,
তারা আর যাই বলুক তারা মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে না।
তুমি তাদের ক্ষমা করে দিও।

কথা অকথা

মাঝে মধ্যে কথা বলার খুব ইচ্ছে করে। এমনিতে সবার সঙ্গে বসে জমিয়ে গল্প করতে আমি কোনদিনই দক্ষ নই। অনেকে বসে থাকলে অন্যদের কথা, গল্প শুনি। আর মাঝেমধ্যে টুকটাক বলি। গল্প শুনতে বেশি ভালো লাগে। কিন্তু কথা বলার সব ইচ্ছে চাগিয়ে ওঠে এরকম রাতে।

বাইরে গত রাত্রি থেকেই কখনো বেশি কখনো কম নাগাড়ে বৃষ্টি পড়ে চলেছে। রাত্রি ঘন হচ্ছে। সারাদিন পুজো প্যান্ডেলে যারা হপিং করেছে তারা সারারাত জেগে থৈথৈ করার শত ইচ্ছে সত্বেও বাইরে থেকে বাড়িতে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়েছে। আর সারাদিনের ক্লান্তি তাদের ঘুমের রাজত্বে টুপ করে ঢুকিয়ে ফেলেছে। এরকম রাতে যখন প্রকৃতি কথা বলতে শুরু করে, তখন আমি তার একমাত্র শ্রোতা। তার একমাত্র প্রেমিক। গরম দুধে সর পড়ার মত পরতের পরে পরত পরে সুস্বাদু হচ্ছে রাত্রি।

বাইরে খুব সূক্ষ্ম স্বরে একটানা ঝিঁঝি ডেকে চলেছে। ভেতরে মাথার ওপরে মানুষের তৈরী নকল হাওয়ার শব্দ। আশ্চর্য এই বৃষ্টির রাত্রিগুলোতে পথ কুকুরের দল কোথায় যায়, কি করে কে জানে! এরকম মগন সময়ে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে। বলি, নিজের সঙ্গে নিজেই বলি। নিঃশব্দ উচ্চারণে একের পর এক কখনো না বলা কথারা, অস্ফূট না বলা চাওয়া বা না পাওয়ার কথা, বিধিনির্দেশ বেড়াজাল ভেদ করে বেরোতে না পারা কথার দল, হিম ভয়ে জমে যাওয়া শিশু কথারা এই সময়ে স্কুল ছুটির পরে হৈচৈ করে বেরিয়ে পড়ে। নির্বাক সিনেমার মত তাদের হৈহৈ বোঝা যায় অনুভূতির একান্ত কোনো ধমনীতে। কথারা কথা বলে, কথারাই শোনে।

কথারা ঝগড়া করে, যুক্তির পরে যুক্তি শানায়। কথারা ভালবেসে নিজেদের আদর করে। রাত্রি ভিজে যায় অসময় শেষ আশ্বিনের অঝোর বৃষ্টির জলে। এক সময়ে রাত্রি কনসিভ করে। ত্বরিৎ গতিতে তার প্রসব বেদনা ওঠে। কথারা পারদর্শী ধাত্রীর হাতে প্রসব করায় কিছু অনুভবী শব্দ। তাকে কবিতা ভাবলে কবিতা, গদ্য ভাবলে গদ্য, কান্না ভাবলে কান্না, পিরীতিপুরের ঝুম গান ভাবলে তাই। কথা শেষ হলে রাত্রির কোল জুড়ে স্বপ্ন নেমে আসে।

দিন শেষে এ শহরও কি একা?

একাকিত্ব থেকে পালিয়ে বেড়ানো কতোটুকু সম্ভব? একটা বয়সে নিজেকে একাকিত্বের সাথে লেপটে নেওয়াটা বাদ্ধতামূলয়ক হয়ে উঠে। এই বাদ্ধতার সথে শুরু হয় তখন লড়াই। ইতিমধ্যে জীবন তখন বেশ খানেক যুদ্ধের বিজয়ী তো কয়েক খানেকের সাথে লড়াইরতো বাসনাময়ী সৈনিক। কারণ মাখানো আমাদের জীবনটা শুধু একটু হাসির সন্ধান করে। প্রশ্ন হলো আপনাকে হাসানো কি খুব কঠিন? না, তবে যে কারো দ্বারা সম্ভব নয় আপনার মনটাকে হাসানো।

যখন আপনার মন তার কাঙ্ক্ষিত বিষয় থেকে বঞ্চিত হয় ঠিক তখন থেকেই মনকে সুযোগ করে দিলেন সেই বিষয়টা নিয়ে নিরত থাকার। এখানে মনটা এতোটা ব্যস্ত হয়ে পরে যে আপনাকে ঘেরা মানুষগুলো আপনার চোখে সাক্ষাৎ বিরক্ত রূপ ধারণ করে। চোখ লজ্জায় মানুষ গুলোকে বলাও যায় না,” আমাকে একটু একা থাকতে দাও”। বয়সটা যখন আপনার কবলে, অধিকারটা তখন বড্ড অভাবী। আবার এই বয়সই সময়ের খেলায় আটকে পড়ে বলতে বাধ্য হয়,” আমাকে একা রেখো না”।

যে শহরটা দিনের আলোয় আপনার চোখে জনবহুল সে শহরটাও কিন্তু দিন শেষে একাকিত্বের বিরহ আঁকে। এ বিরহ আপনার চোখের আড়াল আর তাই বলে এ বিরহ তার একার। তাই বলে কি এ বিরহ সে নিজের মধ্যে বেড়ে উঠতে দিবে? নাকি একটা নতুন আশা বুনবে! একটা সুন্দর আশা যার মধ্যে থাকবে আধার অভিভূত করতে পারার আকাঙ্ক্ষা, একটা আলোময় নতুন দিন ফিরে পাবার স্বপ্ন। আর তাই হয়তো প্রতিটা দিন এই শহর গুলো দিন শেষে একাই লড়াই করে যার সত্তগাতে সে ফিরে পায় আবার সঙ্গতা।

নিজেকে কিছুটা মেনে নেওয়ার শক্তি সম্পূর্ণ করে নিতে সমস্যা কি? আপনি যত এই শক্তি দ্বারা নিজেকে আসক্ত করে নিতে পারবেন ততো বেশি এই একাকিত্বকে বিদায় জানাতে পারবেন। এটা কোনো শারীরিক শক্তি নয় যে বয়স ক্রমে হারিয়ে যেতে থাকবে। বরং বয়স বর্ধনের সাথে সাথে আপনি নিজেকে এতোটা বেশি এ শক্তি দ্বারা গুছিয়ে নিতে পারবেন। তখন এই গুছানো জীবন আপনাকে পেছনে তাকাতে দিবে না। আর যদি পেছনে তাকাতেও হয় তখন আপনি আর জীবন মিলে একটা অট্ট হাসি হাসতে সক্ষম হবেন।

নিজেকে একাকিত্বের কোলে তুলে দেওয়ার মাঝে সব থেকে বড় হাতটি থাকে আপনার। একাকিত্বকে ভালোবাসলে জীবনকে ঘৃণা করা শুরু হয়। একাকিত্ব কখনো নিজেকে পুনরুদ্ধারের পথ হতে পারে না। এটি শুধু নিজেকে হারিয়ে ফেলার একটি মাধ্যম। হারিয়ে ফেলা বিষয় কখনো ফিরে পাওয়া যাবে নাকি না তার কখনো নিশ্চয়তা থাকে না। একাকিত্বের সাথে প্রণয় না ঘটিয়ে জীবনের সাথে ভালোবাসা গড়াটা কি বেশি উত্তম নয়?

0B8C4
PC credit: Jon Anders Wiken – stock.adobe.com
Copyright: ©Jon Anders Wiken – stock.adobe.com

আগমনী

24331114_n

শরতের পেঁজা তুলোর মতো মেঘেদের সাথে, সোনাঝুরি রোদগুলো যেন ভিতরে বাইরে লুকোচুরি খেলছে। ওই যে দূরে নীলাম্বরের নীল সরোবরে কতগুলো সাদা মেঘ, মনে হয় যেন সাদা হাঁস, মনের আনন্দে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। চারিদিকে ঝলমল করছে অথচ পোড়াচ্ছেনা মনটাকে।

একটা সুন্দর অনুভুতিতে মাখিয়ে রাখছে। শরৎ রানীর আগমনে সোনালি রোদ, পেঁজা তুলোর মতো মেঘেদের সাথে মিশে দখিনা বাতাসকে সাথে নিয়ে গান গাইছে। কয়েকদিন আগেই বৃষ্টিরা এসে পরিপাটি করে ধুয়ে মুছে দিয়েছে মাঠ, ঘাট, প্রান্তর। শিউলি, ছাতিম, কাশ তাদের ফুলের ডালি সাজিয়ে অপেক্ষায়। রাত পোহালেই তিনি আসছেন যে। তাই দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে তার আগমন বার্তা।

মকাইশা দিন

কখনো কখনো দুপুরকে অসহ্য মনে হয়। মনে হয় বিলুপ্ত ফড়িংয়ের প্রতি যদি আরেকটু মায়া দেখানো যেত, ভয়ে লুক্কায়িত শালিকের প্রতি আরেকটু মানবিক হাত বাড়ানো যেত; তাহলে দুপুরগুলো এত অসহ্য হতো না।

আমাদের রাজত্বে সবারই নাভিশ্বাস। কুদালি ছড়ার তীর ঘেঁষে যে জনপদ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে; আমরা তার একচ্ছত্র সম্রাট। আমাদের অনুমতি ব্যতিরেকে কেউ শ্বাস ফেলতে পারে না। এই যে দুপুরের খাবার খেতে মতিউর শিকদার আসছেন; আমরা তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। আমাদের অতিক্রম করতে হলে দু টাকার চকলেট তাকে দিতেই হবে। আমাদের চাহিদার বিপরীতে তিনি অসহায়, পাড়ার বুক চিরে যে রাস্তা তাকে বাসায় পৌঁছায় সেই রাস্তার মহারাজারা দাঁড়িয়ে আছে। রাজাদের সেলামি পরিশোধ না করলে দুপুরের খাবার অসমাপ্ত থেকে যাবে।

এমন না যে প্রতিদিনই আমরা রাজাগীরি ফলাতে যাই বরং অধিকাংশ দিন রাস্তার কিংবা জনপদের দখলত্ব আমরা ভুলে যাই। আমরা ব্যস্ত থাকি ফড়িং দিনে, কিংবা গুগলির নিশানায় শালিক দিনে।

যখন আমাদের কোনো কাজ থাকে না, যখন দুপুরগুলো কচ্ছপে পরিণত হয় তখন আমরা সম্রাট আওরঙ্গজেবের মত গর্দান খসাতে থাকি। আমরা চরম স্বৈরাচারী হয়ে উঠি।

গ্রীষ্মের দীর্ঘ ছুটিতে কোন কোন দুপুর আমাদের জন্য আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয়। আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুপুরের নিরানন্দ জংলা পাড়ি দেয়া। আমরা স্কুলে ফিরে যেতে মরিয়া হয়ে উঠি, অথচ স্কুল আমাদের পছন্দ নয়। স্কুলে আমাদের রাজত্ব চলে না; পাঁচ দিনের মধ্যে তিনদিনই ক্লাসের বাইরে নীলডাউন করে ঘণ্টা পার করতে হয়। তবুও বন্ধ্যা দুপুরের আতঙ্ক থেকে বাঁচতে স্কুলের জন্য প্রাণ আনচান করে।

স্বৈরাচারীত্ব মনে জ্বালা ধরাচ্ছে, বিনা প্রশ্নে আদেশ মেনে নিচ্ছে, উঠতে-বসতে সবাই সেলাম ঠুকছে। এসবই ফিকে লাগছে। সবাই যখন আমাদের তোষামোদিতে ব্যস্ত আমরা তখন মৃত ফড়িং কে ঘিরে কান্না করছি। তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। লুকিয়ে থাকা শালিকের কাছে মিনতি করছি অভিশাপ ফিরিয়ে নেয়ার। নিজেদের রাজত্বের বিনিময়ে আতঙ্কের দুপুর থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য কান্না করছি।

আমাদের প্রার্থনা যখন বিলাপে পরিণত হচ্ছে, কাকুতি শোনার গরজ দেখাচ্ছে না কেউ তখন ত্রাতা হয়ে সামনে আসে ‘মকাইশা’ দিন। আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে, মনে হয় আমরা শীঘ্র পৌঁছাব।

‘মকাইশা’ দিনের জন্য নিজেদের বিক্রি করতে রাজি ছিলাম তার কাছে রাজত্ব বা রাজমুকুট তুচ্ছ। আমাদের রাজত্বে সাকুল্যে পাঁচটি চাপকল ছিল, প্রতিটি চাপকলের জন্য বরাদ্দ ছিল বিশ মিনিট। ‘মকাইশা’ মাথায় তারা অর্ঘ্য দিত। প্রথম চাপকল থেকে পরবর্তী চাপকলে যেতে সময় লাগত দশ মিনিট, এই দশমিনিট আমরা তার শিষ্য। সেনাপতির পিছনে সারিবদ্ধ সৈনিক দল, যুদ্ধ জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা।

একটু আগেই দুপুরের আতঙ্ক যে কান্না করছিলাম, নিমিষে কান্না উধাও। অনিন্দ্য সুখ ধারায় আমাদের মন প্রফুল্ল, সুখী নৃপতির মত পালকের আসনে বসে উপভোগ করতে থাকি কাঙ্ক্ষিত ‘মকাইশা’ দিন। ‘মকাইশা’ আনন্দের ফল্গুধারা, আতঙ্কের দুপুরে সুউচ্চ পাহাড় ফুড়ে প্রবাহিত মুক্ত ঝর্ণা।

(সত্তর আশির দশকে ‘মকাইশা’ নামে একজন লোক মৌলভীবাজারে ছিলেন, শহরের বিভিন্ন পাড়ায় হঠাৎ দেখা দিতেন। তার অদ্ভুত এক ব্যাতিক ছিল, চাপকল দেখলেই মাথে নীচু করে পানি ঢালতেন। শৈশবে তার মাথায় পানি ঢালার চেয়ে আনন্দের আর কিছুই ছিল না। তাকে কেউ বলত পীর কেউ পাগল। আমাদের কাছে তিনি ছিলেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা)।

নিজের মূল্যবোধকে জাগিয়ে তুলুন …

আপনি তখনই অস্তিত্ব অনুভব করতে পারবেন যখন আপনার অস্তিত্ব সম্পর্কে সুন্দর ধারণা থাকবে। জীবনের চূড়ান্ত সত্য হল সর্বদা সোজা পথে থাকা। ভালোকে গ্রহণ করা মানে খারাপকে উপেক্ষা করা। রহস্যময় সত্য দ্বারা পৃথিবীর সমস্ত কদর্যতা অনুভব করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অহংকার, ক্রোধ, বিরক্তি, অন্যায় তাড়না আমাদের মানুষের জীবনে অন্ধকার নিয়ে আসা কর্মগুলির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ;

এই জিনিসগুলো মানুষের জীবনে কোন মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। এই সমস্ত বিষয়ে জড়িত না হয়ে অপেক্ষা করা একটি উন্নত জীবনের পথ সুগমনের জন্য। কিন্তু আপনি আপনার কর্মজীবনের সঠিক পথ বেছে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অধ্যবসায় ব্যবহার করতে পারেন। অন্যথায় জাগতিক জীবনে এটি ব্যবহার করার কোন উপায় নেই।

যদি আপনি তা করেন, আপনার চারপাশের পরিবেশ এবং এমনকি আপনার সুন্দর জীবন একটি অসম্ভব অদ্ভুত আচরণের দ্বারা জটিল অন্ধকারে ফিরে আসবে যেখান থেকে বের হওয়া সত্যিই কঠিন। এই জীবনের মাধ্যমে মনস্তাত্ত্বিক অস্তিত্বের দিকে পরিচালিত করবে। অতএব, সঠিক কর্ম মূল্যায়ন করুন। এখানে আপনার মূল্যহীন জীবন রচিত। তাই আমি বলি সুন্দর সময় বেছে নিন। সমস্ত সৌন্দর্য উপলব্ধি করুন। সুন্দর সময়টিকে অবহেলা না করে এই সময়টিকে বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করুন এবং যেভাবে চলছে সেভাবে এগিয়ে যান।

মনে রাখবেন যে আপনি চাপের মধ্যে যাই করুন না কেন, আপনি যাই করেন না কেন, কোন সন্দেহ নেই যে একদিন তা নানান উপায়ে উপলব্ধি করা হবে। এই সময়ে আপনার জীবনে সেই কর্মের দ্বারা ভাল বা মন্দ যাই হোক না কেন, আপনি কখনই মুক্তি পাবেন না। আপনি আপনার নিজের পথ বেছে নিতে পারেন বিবেক বুদ্ধি জ্ঞান ও সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গির দাঁড়া। এখানে আপনার অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত হবেন এখানে আপনার জীবন সম্পর্কে ধারনা পাবেন এখানে আপনার পদ সম্পর্কে অবগত হবেন এখানে আপনার যাত্রা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। এখানে আপনার জীবনের কর্ম ও অনবদ্য অনুসরণীয় অভাবনীয় সকল মনস্তাত্ত্বিক জাগতিক ব্যবহারিক অব্যবহারিক ভালো-মন্দ দর্শনকে উপলব্ধি করতে পারবেন। যা আপনার যাবজ্জীবনের প্রত্যয় সাফল্য অসফল বা কিছু রয়েছে তার তাৎপর্যপূর্ণ গুরুত্ব বহন করবে।

অতএব, এখনই সময়; ধৈর্য ধারণ করুন, হিরো স্থির হোন, ক্রোধকে দমন করুন, জেদকে উপেক্ষা করুন অশান্ত মনের কর্ম বাসনাকে প্রশমিত করুন অসন্ত মনের চাহিদাকে সংবরণ করুন অযাচিত ভাবনাগুলোকে উপেক্ষা করুন। যে সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি ফেরানোর জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের জায়গাকে নির্বাচন করুন। নিজের অবস্থানকে মূল্যায়ন করুন; নিজের মূল্যবোধকে জেগে তুলুন, জাগিয়ে তুলুন নিজের অস্তিত্বকে; ভাবতে পারেন এখানে ছাড়া আপনার কোন নতুন জগৎ নেই যেখানে নতুন করে কোনো কিছুর সৃষ্টি করতে পারবেন এখানে যা মূল্য দেবেন সেখানে তারই মূল্য পাবেন। এখানেই আপনার জীবনের পরম পাওয়া এখানে আপনার জীবনের চরম চাওয়ায় এখানে আপনার জীবনের সকল সাফল্য অর্জিত হবে।

অবোধ অবস্থায় জটিল-কঠিন অন্ধকারে যদি আপনি সফলতা অর্জন করে পৃথিবীতে আগমন করে থাকেন তাহলে আপনার চোখ কান নাক মস্তিষ্ক জ্ঞান সবই রয়েছে। এখানে আপনাকে চিরস্থির হতেই হবে এখানে আপনাকে নিজের বিবেক দ্বারা নিজের সত্যকে নির্বাচন করতে হবে নিজের অস্তিত্বকে অনুধাবন করতে হবে। নিজের জগৎ সম্পর্কে অবগত হতে হবে। নিজের চাওয়া সম্পর্কে পাওয়া সম্পর্কে বুঝতে হবে নিজের সুন্দর ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনাকে সকল ধরনের পদ নির্ণয় করতে হবে যা আপনার জীবনে আপনার অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য পৃথিবীর সকল পথকে সুগম করবে।