বিভাগের আর্কাইভঃ জীবন

ইচ্ছা

শৈশবে গাছ হওয়ার ইচ্ছা ছিল। রবী-ঠাকুরের বলাই পড়ে এমন বৃক্ষপ্রেম জেগেছিল যে মনে হত গাছ জীবনই সার্থক। আমাদের পাড়ার এক কোনে মন গাছ ছিল; প্রতিদিন তার নিচে বসে থাকতাম। তার সাথে আলাপ করার চেষ্টা করতাম; জানতে চাইতাম কিভাবে সে বৃক্ষ হল। তার কি কোন দুঃখ ছিল, কোন অপ্রাপ্তি থেকে কি সে বৃক্ষ হয়েছে। এ ব্যাপারে সে কিছুই বলতো না, ব্যক্তিগত প্রশ্নে সে নিশ্চুপ। তার কাছ থেকে স্পষ্ট কোন ধারণা না পেয়ে আমার গাছে রূপান্তর হল না। সে ভাসা ভাসা যা বলেছিল সেটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি, তার কথা হচ্ছে গাছে রূপান্তরের প্রাথমিক প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রচুর বসে থাকা, এবং বৃক্ষ সংগে থাকা। তার ছায়ায় যদি দিনে কয়েক ঘন্টা বসে থাকি তবেই ধীরে ধীরে শিকড় গজাবে। প্রথম প্রথম তার কথা সত্য মনে করে তাই করেছি, দিনের অধিকাংশ সময় মন বৃক্ষের নীচে বসে থেকেছি। কয়েক মাসেও যখন শিকড়ের কোন আলামত দেখা গেল না তখন সন্দেহ হল, এভাবে কি সত্যি বৃক্ষ হওয়া যায়। বুঝলাম মন আমাকে মিথ্যা বলছে, বসে থেকে শিকড় গজানোর সম্ভাবনা নেই। বুঝলাম মন আসলে নিঃসঙ্গ, সঙ্গের কাঙাল। আমার সঙ্গের লোভে মিথ্যা বুঝিয়েছে। ধীরে ধীরে বৃক্ষ প্রেম ফিকে হতে থাকল, তবু মনের মায়া ত্যাগ করতে পারলাম না। সময় পেলেই তার সাথে খাজুরে আলাপে মেতে উঠতাম।

কৈশোরে সহপাঠিনীর ওড়না হতে চাইতাম। লাজুক হিসাবে আমার খ্যাতি ছিল। তোৎলামি আমার স্বভাবে ছিল না কিন্তু কোন সহপাঠিনী দশ সেকেন্ডের কথাবার্তায় আমাকে তোৎলা ঠাওর করতো। সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর আমি দিতে পারতাম না, তাই কোন সহপাঠিনীর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি। আমার কোন মেয়ে বন্ধু হবে না নিশ্চিত হলে আমি তাদের ওড়না হয়ে গলায় ঝুলে থাকতে চাইতাম।

যৌবনে পেয়ে বসেছিল পাহাড় প্রেম, দিগন্তে হারিয়ে যেতে ভাল লাগতো। আমাদের পাড়া থেকে নিকটবর্তী পাহাড় দুই মাইল দূরত্বে, প্রতিদিন একবার পাহাড় মাড়াতে না পারলে দিন পূর্ণাঙ্গ হত না। এখন ফিরে গেলে দেখি পাহাড় প্রেমের অন্য কারণ বিদ্যমান। পাহাড়ের পাদদেশে সাদামাটা এক কুঠির ছিল, কুঠিরে সাদামাটা এক তরুণী ছিল। কৈশোরের তোৎলামি অসুখ যখন ধীরে ধীরে সুস্থতায় রূপান্তরিত হচ্ছে তখন টিয়া রঙের এক তরুণী সামনে এসে হাজির। কলেজের কৃষ্ণচূড়ায় একঝাঁক টিয়া আস্তানা গেড়েছে; তাদের কিচিরমিচির, হট্টগোলের মাঝে টিয়া রঙের ওড়না মন কেড়ে নিল। পরবর্তী কালে কলেজের পাশের ক্যাফেতে পাশাপাশি চেয়ারে টিয়া রঙের উৎস জানতে চাইলে তরুণী আমাকে পাহাড়ের পাদদেশে আমন্ত্রণ জানায়। সেই থেকে আমার পাহাড় প্রেম।

সংসারে প্রবেশের মুখে নদী আমাকে মাতিয়ে রেখেছিল, স্ত্রীর নাম নদী তার শখ ছিল নদী ভ্রমণের। তাকে নিয়ে নৌকায় ঘুরে বেড়িয়েছি অনেক, নদী প্রেম এখনো আমাকে জড়িয়ে রেখেছে। টিয়া রঙের উৎস শেষ পর্যন্ত জানতে পারনি। অন্য জেলার শালিক টিয়া কে উড়িয়ে নিয়ে গেছে, কিছুদিনের জন্য তোৎলামি ফিরে এসেছিল কিন্তু নদীসঙ্গে তা পুরোপুরি মিটে গেছে।

এখন আমার ইচ্ছা সমুদ্রে মিলানোর। আমি আর নদী হাত ধরাধরি করে ছুঁয়ে দিচ্ছি সাগরের জল। ঢেউ এসে টলোমলো পায়ের আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। নদী আমাকে টেনে তুলছে, মুমূর্ষু আমাকে দিচ্ছে সঞ্জীবনী চুম্বন।

কাক ও আকাশ

আমার এক চিলতে জানালায় চোখ রাখলে আকাশ দেখা যায়। দৃষ্টি আকাশে পৌঁছানোর আগে গোটা কয়েক শিমুলের ডাল। শীতের প্রস্তুতি চলছে, ডালগুলো পাতাশূন্য হতে শুরু করেছে। মাসখানেকের মধ্যে মরুভূমি বৃক্ষে পরিণত হবে। আজ আকাশের মতিগতি ভাল না, রাগের আভরণে নিজেকে অন্ধকার করে রেখেছে।

প্রতিদিন সকালে আমি আকাশের দিকে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করি। মন খারাপ থাকলে ভালো করার চেষ্টা করি, একটু ঠাট্টা তামাশা। বাজার চলতি কৌতুক গুলো তাকে শোনানোর চেষ্টা করি। আকাশের রসবোধ ঠিক উচ্চাঙ্গের নয়, প্রায়শই সে হাসে না। মুখ গোমরা করে রাখে। নিজ পরিবেশিত কৌতুক শুনে; নিজেই হেসে লুটোপুটি খাই। কখনো কখনো আনন্দের আতিশয্যে চোখে জল এসে যায়।

আজ বন্ধুর মন খারাপ। গতকাল ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘুঁটে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি, শোনানোর মত মজার কোন কৌতুক আজ ছিল না। তবু যা ছিল তা শোনাতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম, আমার কৌতুক শুনে আকাশ আরো অন্ধকারে ছেয়ে গেল।

শিমুল ডালের দিকে চেয়ে পুনরায় চেষ্টা করতে গেলাম, দেখলাম এক কাক এসে বসেছে। অহেতুক কা-কা আওয়াজে বিষণ্ন সকালকে বিষণ্ন্নতর করে তুলছে। আকাশকে বাদ দিয়ে আমি কাকের প্রতি মনোযোগী হলাম। তাকে যদি খুশি করা যায়, আমার কৌতুক শুনে তার কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। সে আগের মত কা-কা আওয়াজ ছাড়তে থাকলো। সেটা আনন্দের আতিশয্যে না গভীর বিরক্তিতে বুঝতে না পেরে বিভ্রান্ত হলাম। বস্তা পঁচা অন্যান্য কৌতুক একে একে শুনিয়ো কোন ফায়দা হলো না, কাক কাকের মতই ব্যবহার করতে থাকলো।

শেফিল্ডের আজকের সকাল অন্ধকারাচ্ছন্ন, কাকান্ধকারে ছেয়ে আছে। ডাকঘরের অমলের মত দইওয়ালা কে ডাকছি, আমার ঘরের জানালায় এসে উঁকি দেবে। দই ওয়ালা এলেই পাখা গজাবে; আকাশে উড়বো, চাই কি; কাককেও উড়বার সাথী করে নেব।

কখনো কখনো মনে বিষণ্ন্নতা ভিড়; করে উদার আকাশও সে বিষণ্নতা দূর করতে পারে না। কোন কারন ছাড়াই আজ বিষণ্ন মন।

পরিবেশ-পরিস্থিতি দ্বারা সময়ের মূল্যায়ন করা উচিত

24272

অযথা চিন্তা ভাবনা ও উদ্যত আচরণ মানুষকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয় তাই বলবো পরিবেশ-পরিস্থিতি দ্বারা সময়ের মূল্যায়ন করা উচিত। সুস্থ চিন্তা সুস্থ মস্তিষ্ক সুস্থ ভাবে চলতে মানুষকে সারাক্ষণ সহযোগিতা করে আমাদের জগৎ জীবনে সুস্থ্য ও সাবলীল চিন্তারাম মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই নগণ্য। আমাদের জীবন যাপনের প্রত্যেকটি মুহূর্তের সময় জ্ঞান ও পরিবেশ পরিস্থিতির দ্বারা কিভাবে মূল্যায়ন করা উচিত! আমরা কি কখনো ধীর স্থির হতে পারি না?

সেই ক্ষেত্রে যদি নিজেদের রাগ, জেদ, ক্ষোভ কিংবা উত্তেজিত মনোভাবাপন্ন বিষয় গুলোকে চিহ্নিত করি, হঠকারিতা সিদ্ধান্তকে নিজেদের মস্তিস্ক জ্ঞানে সংযম করি, সংযত করি, প্রশমিত করি পরিশেষে তার পরবর্তী সিদ্ধান্তকে সঠিকভাবে পরিমাপ ও মূল্যায়ন করি তবে অনেক ভুল বুঝা বুঝির অবিবেচিত অভিযোগ বোধগুলো খুব সুন্দর ভাবে অবসান ঘটে। কিন্তু আমরা তা না করে যদি বারংবার নিজেদের ভেতরের রাগ-ক্ষোভ দ্বারা একটি সুন্দর পরিবেশকে বিশৃঙ্খলা রূপ দেই তবে তার ফলাফল অত্যন্ত কঠিন জটিল ও খারাপ পর্যায়ে ধাবিত হবে কোন সন্দেহ নেই।

তাই বলব আমরা আমাদের জীবনে যা কিছু করি না কেন তা অবশ্যই সময় ও সেই পরিস্থিতি দ্বারা মূল্যায়ন করতে হবে। যে মূল্যায়ণটি সঠিক ও নিরপেক্ষ অথবা তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে পরিগণিত হবে। যে কোন সমস্যার জটিল পরিস্থিতিকে হঠকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অবোধ সম্পন্ন চিন্তাধারায় ভঙ্গুর দশার দিকে নিয়ে যাওয়ার আগে ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থন করা অত্যন্ত জরুরি তা না করে কোনো ভাবেই জটিল পরিস্থিতি ঘোলাটে করা কোনোভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

আমরা আপাদমস্তক ভাবে যে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করছি তা অবশ্যই বিবেক ও নিজের বিচক্ষণতার দ্বারা পরিমাপ করার পরেই তার পূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে কোন নির্দোষ মানুষকে সেই দোষে দোষী করে প্রদর্শিত করা নিতান্তই একজন মানবীয় গুণাবলীর মানুষ দ্বারা অপরাধ বলেই সাব্যস্ত হবে বলে মনে করি। যা একটি অপরাধ ঘটার পর আরেকটি অপরাধ ঘটার শামিল বলে মনে করি। তবে একটি কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেকটি বুদ্ধিমান সম্পন্ন মানুষ ভুল করে, অপরাধ করে আমরা মানুষ বলেই আমাদের ভেতরে এই ধরনের অপরাধের সূচনা হয় বাস্তবায়ন হয় সূচিত হয়।

কিন্তু জেনে বুঝে যে মানুষ ভুল করবে সেটা কখনো ভুল হিসেবে গৃহীত হয় না। সেটি অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। ভুল আর অপরাধ এক নয় বলেই অপরাধের শাস্তি অবশ্যই গ্রহণ যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হয়। আমাদের অস্তিত্বশীল জীবন জুড়ে তাই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভুল/অপরাধ গ্রহণযোগ্য নয় (বড় ধরণের) মানুষের জীবনের যেকোনো সমস্যা সৃষ্টি করার অনেক পথ রয়েছে কিন্তু সমাধানের পথ বের করা বিচক্ষণতার দ্বারাই সম্ভব। তাই সমাধানে আসতে বিবেকের বিচক্ষণতা কে গ্রহণ করি না কেন তবেই না একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সমাধানের পথ সুগম হয়।

আমরা কি পারিনা নিজেদের জেদ রাগ-ক্ষোভ কে সংযম করতে, প্রশমিত করতে, অধৈর্য চিন্তাভাবনার রুপরেখা থেকে বেরিয়ে এসে ধৈর্যধারণ করতে, ধৈর্যের সাথে যেকোন জটিল ও কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে?
তবে আমরা সবই পারি চাইলে সবকিছুই আমাদের দ্বারা সম্ভব। কিন্তু আমরা যা চিন্তা করিনা সেটাই যখন একজন মানুষ তার উদ্যত অবিবেচিত অবোধ সম্পন্ন নির্বুদ্ধি পরায়ণ মস্তিষ্ক দ্বারা অনুভব করে তবে সেটা নিতান্তই দুঃখজনক ও অপরাধমূলক কর্ম।

এই চিন্তা ভাবনা মানুষকে অনেক কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়। যা কোনো সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ কোনভাবেই করতে পারে না কিংবা অন্য কেউ সেই মানুষ দ্বারা এমন জঘন্যতম কাজকে সমর্থন করবে না অথবা আশা করে না। তবে আমরা কি সমস্যা সমাধানের চেয়ে জটিলতর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে বা সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে না বসে সেটিকে ত্বরান্বিত করতে ভালোবাসি? আমার মনে হয় এই শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি যা সমাজ পরিবার ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গ্রথিত। আমাদের এই সমাজ ও পারিবারিক জীবনে এমন পরিবেশ তৈরি করার লোকের সংখ্যা যদি অত্যন্ত বেশি হয় তবে যেকোন সমস্যার শেষ পরিণতি ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে খারাপের দাঁড়ায় শেষ হতে পারে।

এখানে কোন কিছু ঘটার আগে ভালো হতে পারত কিন্তু সেই সমাপ্তিটা যদিও অনেক কিছু ঘটে যাওয়ার আগেই উদঘাটন করা যেত তবে কারো মাঝে কোনভাবেই ভুল বোঝাবুঝির পরিবেশ সৃষ্টি কখনোই হতো না। তাই বলব ভেবে দেখুন উশৃংখল পরিবেশ তৈরির পূর্বে আমরা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা কোনো অঘটন ছাড়াই সমাধানের পথ খুঁজে পেতে প্রত্যেকের জানমালের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে আমাদের জীবন ব্যবস্থায় সমস্যা আছে থাকবে যেখানে সমস্যা সেখানেই সমাধান এই সহজ ব্যাপারটা আমরা যদি না বুঝিয়ে তবে কোনো ভাবেই সেই মানুষটি বোধসম্পন্ন বলে বিবেচিত হয় না।

যে কোনো নতজানু পরিস্থিতি সমাজ ও পরিবারের বিশাল একটি ঝড় হিসেবে স্থাপিত হয় কিন্তু সেই ঝড়ে যদি আমরা সাঁতার ব্যাবহার না করি তাহলে সেই ঝড়ের সাথে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
কোন উশৃংখল পরিবেশ তৈরি হওয়ার পর যদি সেখানে জান ও মালের ক্ষতি হয় তবে সেখানে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টির অশনিসংকেত দেখা দেয় যে কোন ভাবেই কোন হৈহুল্লোড়ে শরীরকে ভাসিয়ে না দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টির ব্যবহার করুন এতে সমস্যার সমাধান সূচিত হয়।

হাত ও পায়ের ব্যবহার নিয়ে নানা কথা

p2018

আমরা মানুষ, স্রষ্টার প্রেরিত শ্রেষ্ঠ জীব। আমরা মাতৃগর্ভ থেকেই দু্ই হাত, দুই পা নিয়ে জন্মেছি। আমরা মরণশীল। মৃত্যু আমাদের দৈনন্দিন জীবন চলার মাঝে যেকোনো সময়। জন্মের পর থেকেই আমরা নানারকম কুমন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে পড়ি। আবার কেউ কুমন্ত্রণাকে বধ করে স্রষ্টার ধ্যানেই মত্ত থাকে। কেউ জপে হরি নাম, কেউ করে জিকির-আজকার। স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কেউ করে মূর্তিপূজা, কেউ আবার মসজিদে গিয়ে পড়ে নামাজ। আবার কেউ যায় গির্জায়, কেউ যায় বুদ্ধুদেবের মঠে।

আমাদের সমাজে আছে অবিচার, অত্যাচার কুসংস্কার। আছে সুবিচার, সুবিচারক ও সুন্দরভাবে জীবন গড়ার কৌশল। আগেকার সময়ে মানুষের শিক্ষার হার ছিল কম, কুসংস্কারে মানুষ ছিল বেশি বিশ্বাসী। মনগড়া কথা একবার প্রচার করতে পারলেই হলো। সেটা বিধান মনে করে অনেকেই পালন করতো। এখনও অনেক অনেক মানুষেই, কুসংস্কারকে ধর্ম বাক্য মনে করে। যা গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে যেখানে সেখানে এরকম দেখা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অনেকরকম কুসংস্কার আছে। তবে আমাদের দেশেই কুসংস্কার কথাগুলো বেশি পালন করে থাকে। বলছিলাম, আমাদের দুই হাত আর দুই পা নিয়ে কিছু কথা।

কিছুদিন আগে সকালবেলা এক চা-দোকানে বসে চা পান করছিলাম। এমন সময় এক লোক দোকানদারকে চা এর মূল্য দিচ্ছে। লোকটার ডানহাতে চা-এর কাপ। বামহাতে ৫ টাকার একটা কয়েন। দোকানদারকে বলছে, ‘চায়ের দামটা রাখেন।’ লোকটা বামহাতেই ৫ টাকার একটা কয়েন দোকানদারকে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু দোকানদার ওই লোকের দেওয়া ৫ টাকার কয়েনটা আর নিচ্ছে না। কাস্টমার লোকটা যতবার ৫ টাকার কয়েনটা দিতে চাচ্ছে ততবারই দোকানদার না দেখার ভ্যান করছে। একপর্যায়ে কাস্টমার কয়েনটা দোকানদারের সামনে ফেললো। মুহূর্তেই লেগে গেল হট্টগোল, রাগারাগি, গালাগালি।

কারণ, বাম হাত বলে যতো কথা। বাম হাত মানেই হচ্ছে অশুচি আর অপবিত্র বা নাপাক। বামহাতে দেওয়া কোনকিছু নাকি গ্রহণ করতে নেই। গ্রহণ করলেই ভাগ্যের উপড় অলক্ষ্মী ভর করে বসবে। তাই দোকানদার কাস্টমারকে বলেই ফেললো, ‘এই মিয়া, আপনের কি ডান হাত নাই? বা’হাতে টেকা দিলেন কেন? টেকাডা উডান কইতাছি? সকালবেলাই কুফা লাইগা গেলগা।’

লোকটা মুহূর্তেই থ’ বনে গেল। দোকানদারের কথা শুনে, লজ্জায়, পড়ে লোকটা আবার কয়েনটা উঠায়। তারপর ডানহাতে কয়েনটা দোকানদারকে দেয়। ডানহাতের টাকা পাবার পরও দোকানদার বকবক করতে করতে বলছে, ‘লেহাপড়া হিগছে? আচার-বিচার কিচ্ছু জানে না। মাইনষের কাছে কয়, আমি শিক্ষিত!’

দোকানদারের এসব কথা শুনে আমিও অক্কার মা ঠক্কা হয়ে গেলাম। কিন্তু লোকটির পক্ষ নিয়ে কিছুই বলতে পারিনি। কারণ, দোকানদারকে এসব বুঝানো বড় মুশকিল হবে, তাই কিছু বলিনি।

এসব কুসংস্কার কথা বহু আগে থেকেই আমাদের সমাজে প্রচলিত। যা অহরহ, নিত্যদিনের ঘটনা রটনা। আমাদের এই বঙ্গদেশে বাম হাতটা যেন একটা অভিশাপ। বামহাত দিয়ে আমাদের মলদ্বার পরিষ্কার করি বা ধোয়ামোছা করি। এজন্যই আদি যুগ থেকেই আগেকার বুড়োরা আমাদের নানান কথা শিখিয়ে গেছেন। বামহাত দিয়ে এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। যা আমরা এখনও সেসব কথা ঘরে বাইরে সবাই মেনে চলি। কিন্তু কেউ এর সত্য মিথ্যা যাচাই করে দেখে না। যেমন কথায় আছে, ‘চাঁদে একটা বটগাছ আছে। সেই বটগাছের নিচে এক বুড়িমা বসে বসে সূতো কাটছে।’ আবার অনেকেই বিশ্বাস করছে, ‘পৃথিবীটা একটা গরুর শিঙের উপরে আছে। কিছুদিন পরপর, এক শিং থেকে আরেক শিঙে অদলবদলও করে থাকে। এই অদলবদল করার সময়ই নাকি পৃথিবীতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।’ আরও অনেক বানানো কথা আমাদের সমাজের মানুষ এখনও বিশ্বাস করে বসে আছে।

এখন কথা হলো, ডানহাত কার, আর বামহাতটাই-বা কার? আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে, তারা বামহাতি। পবিত্র ডানহাত থাকতেও তারা বামহাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। খাদ্য খাওয়া থেকে আরম্ভ করে দৈনন্দিন জীবনের সব কাজই বামহাতেই করে থাকে। আবার ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কবলে কারোর অঙ্গহানিও হয়ে যায়। তখন বামহাতই তার জীবন চলার একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে সঙ্গী হয়ে থাকে। যা-ই করুক, এই বামহাত দিয়েই তাকে করতে হয়। এ ছাড়া আর তার কোনও উপায় নেই বলে আমার বিশ্বাস। যা-ই হোক, এবার আসল কথায় আসি।

আসল কথা হলো আমি একজন মানুষ। ডানহাত বামহাত নিয়েই আমি জন্মেছি। কোনও পবিত্র কাজে যেমন দু’হাত ব্যবহার করি, তেমনি অপবিত্র কাজেও দু’হাতই ব্যবহার করি। যেমন: আমি যদি কোনও মন্দিরে গিয়ে জোড়হাত করে প্রণাম করি, তাহলে কি আমার সেই প্রণাম করা বিফলে যাবে? সম্মানিত মুসলমান ভাইয়েরা দু’হাত তুলে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করে। তাহলে এখানে বামহাত ছাড়া কি মোনাজাত হবে? যার একহাত নেই বা বামহাত নেই তার হবে। আর যার দু’হাতই আছে, তাদের কি হবে? তখন কেন এই অপবিত্র বামহাত নিয়ে কথা ওঠে না? আমি যখন আমাদের পুরোহিত বা গুরু-মহাগুরুদের প্রণাম করি, তখন কেন তারা আমার প্রণাম গ্রহণ করে? তারা তখন বলতে পারে না, বামহাত নামিয়ে প্রণাম করো? যখন আমি মন্দিরে দেবতার বিগ্রহে দু’হাত ভরে ফুল দেই, তখন মন্দিরে থাকা পুরোহিত বাধা দেয় না কেন? এসব প্রশ্ন শুধু করেই গেলাম, সদুত্তর পেলাম না। পাইনি এর কোনও লিখিত শাস্ত্র বিধান। অথচ এইরূপ কুসংস্কারাচ্ছন্ন নিয়ম-কানুন নিয়ে ঘটে যায় কত অঘটন!

আবার ডান পা, আর বাম পা নিয়েও আমাদের সমাজে বহু নিয়ম বলবত আছে। এই রীতি দেখা যায়, একজন পিতা তার ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে গেলে। ছেলের সাথে থাকা সবাই প্রথমে মেয়ের পায়ের দিকেই তাকায়। মেয়ের ডান পা, না বাম পা আগে চলে, সেটা সবাই ফলো করে। পায়ের ঘটন মোটা না চিকন, সেটাও দেখে। এই পায়ের সাথে নাকি লক্ষ্মীশ্রী সংযুক্ত? মেয়েদের বেলা বাম পা নাকি লক্ষ্মীবান? ছেলেদের বেলায় ডান পা হলো লক্ষ্মীবান। মেয়েদের পায়ের গোড়ালি (গোছা) মোটা হলেও মহা বিপদের আশংকা আছে। সেই মেয়ে নাকি অলক্ষ্মী। আসলে এসব কিছুই না, সবই আগের দিনের মানুষের মনগড়া কথা। যা আমরা এখনও অক্ষরে-অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি। কিন্তু বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির দুনিয়ায়, একটু সত্য-মিথ্যা যাচাই করে দেখি না। কুসংস্কার কথার নিয়মের একটু হেরফের হলেই, লেগে যায় খটকা। হয়ে যায় মারামারি, হাতাহাতি। ভেঙ্গে যায় একজন অসহায় পিতার মেয়ের বিয়ে, ভেঙ্গে যায় স্বপ্ন।

p2018i

অনেক সময় হাত ও পায়ের আঙুল নিয়েও নানান কথা শোনা যায়। কারোর হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের সাথে ছোট একটা আঙুল থাকলেই, সে ভাগ্যবান। তাকে বলে, ‘একুশ আঙুলা’। দু’হাতে দুটো আঙুল বেশি থাকলে বলে, ‘বাইশ আঙুলা’। যার এরকম আঙুল আছে, তিনি নাকি মহা-ভাগ্যবান ব্যক্তি। মেয়েদের বেলায় থাকলে তো আর কথাই নেই। ওই মেয়ে পরের ঘরে গিয়ে নাকি মহা-লক্ষ্মী বনে যাবে। কাউকে আবার রাগ করে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখালেই সর্বনাশ! সাথে সাথেই একশন, রিঅ্যাকশন। হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল নাকি ঝগড়া বাঁধায়? আবার দেখা যায়, হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মানুষকে সন্তুষ্টিও করে। কেউ আবার বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে, সঠিক বলে মনের ভাবও প্রকাশ করে। তাহলে আমরা এখন কোনটা বিশ্বাস করবো? আর কোনটা অবিশ্বাস করবো? কোনটা মানবো, আর কোনটা মানবো না? প্রশ্ন শুধু প্রিয় পাঠকের কাছেই রেখে গেলাম।

বৃষ্টি ভেজা শব্দেরা

242250

মাঝেমধ্যে মনে হয় নিরপেক্ষ ব্যবচ্ছেদ হোক। সময়ের আবর্তনে মনের গলি বড় ক্লান্ত। আকাশ আজ উপচে পড়ছে। এক ফোঁটা-দু ফোঁটা, তারপর মুষলধারে আঙুল বেয়ে, চিবুক ছুঁয়ে, হাতের পাতায়।

একা একা বন্ধ ঘরে নিজের সঙ্গে তর্কে কখনো হেরে যাই, কখনো জয়ী। মাঝরাতে দেখি একটা একটা করে তারা জমায় আকাশ, কখনো আধখানা, কখনো বা পুরো চাঁদ অপেক্ষায় থাকে। কতকিছুই যে আবোল তাবোল ভেবে চলি! এই ভাবনাটুকুই সম্বল। মাঝেমধ্যে স্বপ্নগুলো কাছে টেনে মুহূর্তে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া মন্দ লাগে না।

আবার শব্দেরা যখন ছেড়ে যায়, ঠিক তখনই ইচ্ছে করেই নিজেকে আঁকড়ে ধরি। বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় দাগ কাটে কাচ রঙা চোখে, সোঁদা গন্ধে ধুয়ে যায় চুল, সবুজ হাওয়া এসে মন টেনে নিয়ে যায় শরীরের আবরণ ফেলে কোনো কাশবনে।

আমার কথারা

24588_n

ওই নীল আকাশে আছে আমার জমানো যত কথা। কিছু তবুও থেকে যায় অনুক্ত। কিছু নিজের কাছে আগলে রাখি। আর ওই যে টুকরো টুকরো স্বাধীন মেঘ, তাদের মাঝে লুকিয়ে রাখি কিছু ব্যথা। তারা ভেসে চলে নিজেদের মতো। আমার ভালোবাসাও তো আকাশের মতোই বিশাল। তবুও আমি যতবার কেঁদেছি সেই কান্না ওই স্বাধীন মেঘেদের থেকে নরম বৃষ্টি হয়ে ঝরেছে।

বৃষ্টির রিমঝিম সুরে কিছু কথা শুধু চোখের জলকে বলি। তখন শরতের খুব সকালে নরম রোদের আদরের মতো জড়িয়ে থাকি নিজেকে। তবুও কিছু কথা একা একা আছড়ে পড়ে বুকের গভীরে উচ্চারিত শব্দের পায়ে পায়ে। অনেক কথা এড়িয়ে চলি।

আমার নিঃসঙ্গ ছায়ারা যতবার ঠিকানা খুঁজে ফিরেছে ততবারই স্বপ্ন হেসে উড়িয়ে দিয়েছে কিছু না বলা কথা। কিছু আগুনে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবুও মনের কুলুঙ্গিতে জমিয়ে রেখেছি এক আকাশ রঙিন মেঘেদের। এখনও যখন মন খারাপেরা ভীষণ ভাবে ঘিরে ধরে, আকাশের দিকে তাকাই। কিছু কথারা তখন বিদ্রোহ করে। মাথার ভেতরে বেজে চলে রণ দামামা। যন্ত্রণায় গুটিয়ে যাই।

নিজেকে লুকিয়ে রাখতে রাখতে বলি – পুরো আকাশটাই তো আমার! ওই সাদা কালো ধূসর রঙিন সব মেঘেরা?
– আমারই তো?

ফরমালিন মুক্ত মটরশুঁটির ভিন্ন স্বাদ

p20180311-192059

ফরমালিন মুক্ত টাটকা মটরশুঁটি। ছবিটি নিজের বাসায় তোলা।

স্রষ্টা মানুষ সৃষ্টির অনেক আগে থেকে নাকি গাছ সৃষ্টি করেছেন। তাই গাছ ছাড়া এই সুন্দর পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকা মুশকিল। গাছ শুধু দুর্যোগ মোকাবেলাই করে না, গাছ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনও তৈরি করে। গাছ আমাদের ফল দেয়, ফুল দেয়, জ্বালানি দেয়, দুর্যোগ হতে রক্ষা করে। আবার বাসস্থান তৈরি করার উপযোগী কাঠও দেয়। গাছ থেকেই ফুল, ফুল থেকে ফল। সব গাছ থেকেই আমরা শতভাগ খাঁটি ফল ও খাদ্যশস্য পেয়ে থাকি।

কিন্তু কিছু অসাধু মানুষের কারণে গাছ থেকে পাওয়া খাদ্যশস্য শতভাগ খাঁটি থাকে না। শতভাগ খাঁটি খাদ্য শস্যগুলো বিষ মিশিয়ে করে ফেলে বিষাক্ত। বর্তমানে সবকিছুর মধ্যেই ফরমালিন নামের একপ্রকার বিষ মেশানো। কি ফল, আর কি তরিতরকারি, বাদ নেই কোনোটাই। এমনকি বাজারে গুড়া মাছের মধ্যেও ফরমালিন মেশানো থাকে। যেই ফরমালিনের সাহায্যে কচিকলাও পাকিয়ে ফেলে, সেই ফরমালিন সবকিছুতেই। বর্তমানে এমন কোনও খাদ্যশস্য নেই যে, ফরমালিন ছাড়া। বিক্রেতারা যতই বলুক না কেন, যে এটা ফরমালিন ছাড়া। তবু কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ ব্যাপারে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।

আমার মতে বাজারে তরিতরকারি, শাকসবজি, ফলফলারি আর খাদ্যশস্যের মধ্যে অনেককিছুই ফরমালিন মুক্ত আছে। তারমধ্যে একমাত্র ফরমালিন মুক্ত হলো ‘মটরশুঁটি’। এই মটরশুঁটি একশোতে একশো পার্সেন্ট খাঁটি এবং ফরমালিন মুক্ত। এই মটরশুঁটি বিভিন্নরকম তরকারিতে ব্যবহার করা হয়। কেউ মাছে, কেউ খিচুড়ীতে, কেউ পোলাউ-বিরিয়ানিতেও ব্যবহার করে। এই মটরশুঁটি যখন নতুন বাজারে আসে, তখন দামও থাকে খুব চড়া। তখন প্রতি কেজি মটরশুঁটি ১২০ টাকা থেকে শুরু করে ১৩০/৪০ টাকায়ও বিক্রি হয়। তবু মানুষে কিনে নেয়, খায়। তবে খুব কম মানুষেই জানে তরকারি ছাড়া মটরশুঁটি কীভাবে খাওয়া যায়।

আগে অনেক মানুষকে মটরশুঁটি ভেজে খেতে দেখেছি, সেদ্ধ করে খেতে দেখেছি। ছোটবেলা অনেকভাবে নিজেও খেয়েছি এই মটরশুঁটি। এখনো বাজারে গেলে অন্তত আধা কেজি মটরশুঁটি আগেই কিনতে হবে, তারপর অন্যকিছু।

আগেকার সময়ে মটরশুঁটি হাট-বাজারে বিক্রি হতো না। যা হতো তা শুধু গৃহস্থরা ক্ষেতেই পাকিয়ে ঘরে আনতো। কাঁচা বা কচি মটরশুঁটি ক্ষেত থেকে নিজেদের জন্য কিছু তুলে আনতো। এখন সেই মটরশুঁটি স্বাদের তরকারির মধ্যে যেন প্রথম স্থান অর্জন করে নিয়েছে। কেউ সংসারের বাজার সদাই করলে, আগে কিনে থাকে মটরশুঁটি। এই মটরশুঁটির ভিন্ন স্বাদ ভিন্নভাবে কেউ গ্রহণ করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। এই মটরশুঁটি সেদ্ধ করে খাওয়া মানে দুনিয়ার সবচাইতে সুস্বাদু খাবার খাওয়া। কীভাবে খাবেন তা জানিয়ে দিচ্ছি।

p20180311-192115

সেদ্ধ করা মটরশুঁটি। একটা একটা করে ধরুন, আর হালকা চাপ দিন। দেখবেন মটরগুলো বেরিয়ে আসছে। এরপর আরামে বসে বসে খেতে থাকুন।

প্রথমে আধা কেজি মটরশুঁটি ভালো করে বেছে নিন। সময় সময় এই মটরশুঁটিতে অনেকপ্রকার পোকামাকড় থাকে। সেগুলো ভালো করে দেখে নিন। এবার মটরশুঁটিগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করুন। পরিমাণ মতো পানি দিন, যাতে ভালো করে সেদ্ধ হতে পারে। চুলায় বাসানোর আগে পরিমাণ মতো লবণ দিন, স্বাদ বাড়বে। চুলায় বসানোর পর আধাঘণ্টা অপেক্ষা করুন। দেখবেন ভাত রান্না করার সময় যেভাবে টগবগ করে উতলায়, ঠিক সেভাবেই উতলাচ্ছে। আধাঘণ্টা পর চুলা থেকে পাত্র সহকারে নামিয়ে ফেলুন। এবার গরম পানি থেকে মটরশুঁটিগুলো ছেঁকে নিন। ঠাণ্ডা হতে সময় লাগতে পারে, তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তৈরি হয়ে গেল বিকালবেলার একটা সুন্দর টিফিন। এবার ছিলুন আর খেতে থাকুন আরামে। কেউ খেতে চাইলে তাকেও দিন। ভালো লাগলে আরও মানুষকে শেখান। প্রচার করুন ফরমালিন মুক্ত সেদ্ধ মটরশুঁটির ভিন্ন স্বাদ।

রূপকথা মন

1706431

সারাদিনের প্রখর তাপের পরে বিকেলে যখন সূর্য পশ্চিমে হেলে যায়, আর সারা আকাশ সোনালি রঙের ঘোমটা টেনে নেয় ঠিক তখনই আমি অপলক তাকিয়ে থাকি সেই কনে দেখা আলোর দিকে। আমি দেখি আস্তে আস্তে আলো নেমে আসে ওই দূরের নারকোল গাছের পাতা থেকে আমার মনের উঠোনে। তারপর সেই উঠোন পেরিয়ে, বারান্দা পেরিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে আমার ঘর, পড়ার টেবিল, আর মনের কুলুঙ্গিতে রাখা রংচটা ছবিগুলো, সবশেষে ছাদের কার্নিশ। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি মা পাখিরা দিনান্তে ফিরে আসছে, অনন্ত ক্লান্তি আর অফুরান হাসি নিয়ে তাদের বাসায় আর ভরিয়ে দিচ্ছে ছানাদের পালকের ওমে।

আকাশের গা থেকে যখন সোনালি চাদর খসে পড়বে বিকেলের মন-কেমনিয়া রূপকথার মতো। আর একটু একটু করে আকাশের গায়ে ঝিলিমিলি জেগে উঠবে, শান্ত অথচ স্নিগ্ধ হাওয়ার মতো ঘিরে ধরবে মায়া। তখন কিছুতেই আর সন্ন্যাসে ফিরতে পারবে না মন। অতি ধীরে পরাজিত সম্রাটের মতো মিলিয়ে যাবে মন খারাপেরা। আমাকে জড়িয়ে নেবে স্বপ্ন বা স্বপ্নের মতো জাদুকাঠি। জানি এ আমার শুধুই কল্পনা। বাস্তব থেকে অনেক দূরে।

আসলে চাতকের হাহাকার থেকে আকাশ শুধু ছুড়ে দেবে পরিহাস, ব্যাঙ্গ করবে পরিজন। আমি সবকিছু তাচ্ছিল্য করে শুধু দেখবো, গ্রীষ্ম পেরিয়ে অভিমানী আকুল বর্ষা একটু একটু করে ভরে তুলছে নদী, পুকুরে, ধুয়ে দিচ্ছে পথঘাট, পরম মমতায় স্নান করিয়ে দিচ্ছে গাছেদের। এঁকে দিচ্ছে প্রাচীন সেই সব গাছেদের শরীরে বৃষ্টির আলপনা। ধীরে ধীরে শহরে নেমে আসছে সন্ধ্যা। পরিযায়ী স্বপ্নেরা ডানায় করে বয়ে আনবে মায়াবী রাত। জোনাকির ডানা থেকে ঘুম ভাঙবে এক একটা তারার। আকাশ জুড়ে কেউ বিছিয়ে দেবে রুপোলি শামিয়ানা। আর এক আকাশ অযুত কোটি টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়বে আমার রূপকথা মন। খুঁজে নেবে কিছু অর্থহীন বেঁচে থাকার রসদ, ততদিন মনখারাপের আর বাড়ি ফেরা হবেনা।

ভালবাসা

4058_n

ভালবাসা। খুব ঝামেলার জিনিস, সে তুমি যাকেই ভালোবাসো না কেন। যে পেয়ে যায় ( বলে মনে করে) তার কাছে ভালবাসা ঘর কা মুরগী, ইচ্ছে হলেই জবাই যোগ্য। এভরিথিং টেকেন ফর গ্রান্টেড।

মানুষ নিজের প্রয়োজনে নিজে ভালবাসে। প্রায়শঃই একতরফা।

প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে, হয়ও, দুদিকে খোল দিব্য বাজছে। খোলের ছাউনি যোগাতে প্রাণান্ত।

সবচেয়ে বড়ো যন্ত্রণা ‘আগলানো’। যে ভালবাসে, সে ভাবে, ভাবতে ভালবাসে, সে আমার, কেবলই আমার।পৃথিবীর সব কিছুর মতোই এই আগলবেড়াও ভঙ্গুর। তখন ভাঙা বেড়া আগলে, হ্যাঁ আগলেই, মুখে রক্ত উঠে প্রাণ যায়,পর পিরিতী ন যায়। কী ঝামেলা!!!

মানুষ ছেড়ে পশু পাখী গাছপালা যাকেই ভালবাসবেন, তাকে নিয়ে ঘোর অশান্তি। মনে হয়,আমার প্রাণের বিনিময়ে হলেও ওরা বেঁচে বর্তে আনন্দে বাঁচুক। হয় ঠিক উল্টোটা। ভালবাসা যখন তুঙ্গে, তখনই খসে যায় কেউ না কেউ। কী অশান্তি, কী যন্ত্রণা… শুধুই ভালবেসে যেচে সেধে আনা কান্নার পাহাড়।

নির্জীব কাউকে ভালবাসবেন? পেন, পেন্সিল, কি একটা খাতা? সেই ক-বে প্রাণ দিয়ে আগলে রেখেছিলাম দুটো পেন, উইনসাঙ্ আর কিংসিং। কালো বডি সোনা মোড়া মাথা। তার একটা গেলো চুরি হয়ে। ওই নির্জীব পেনটার জন্য কেঁদেকেটে সাগর বইয়ে দিয়েছিলাম। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে বকুনি খেয়েছি মায়ের কাছে।

রইলো বাকি এক। সবেধন নীলমনি আমার। বুকে আঁকড়ে রাখা যক্ষের ধন। একটা একটা করে পরীক্ষা পাশ করেছি, আর ভালবাসা দৃঢ় হয়েছে ততো। ইলেভেনে উঠে ঠিক করে নিয়েছিলাম, বিয়ের রেজিষ্ট্রেশনের সইটা এই পেন দিয়েই সারবো। আগলাতে চেয়ে প্রাণপাত করেছিলাম তো। সেটাও পারিনি।

ভালবাসা সৃষ্টিই হয় বিচ্ছিন্ন হবার জন্য, যে কোনো প্রকারে।
তবু ভালো না বেসে তো এই তেপান্তর পার হওয়াও দুষ্কর।

.
ছবি : ফেবু থেকে নিয়েছি, ডঃ আদিত্য মুখোপাধ্যায়ের তোলা।

জানালার ঝাউগাছটি

অপরূপ দেহভঙ্গিমায় সারাদিন দুলে দুলে
বাতাসের কানে কানে কথা কয় জানালার ঝাউগাছটি। পাখিরা তার ডালে ডালে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ায়। পড়া ভুলে একটি বালক নির্নি্মেষ তাকিয়ে রয় তার দিকে।
প্রখর সূ্র্যালোকেও কিছু অন্ধকার লেগে রয় তার পাতার ফাঁকে ফাঁকে। যেন অজানালো্কের কোন্ এক আলো আঁধারির রহস্য খেলা করে।

কাজের অবসরে এই ঝাউগাছের দিকে
মাঝে মাঝে তাকিয়ে থেকে মন এক অনাবিল প্রশান্তিতে ভরে উঠে। হে বনঝাউ, তোমার পেছনে দাড়িয়ে
থাকা নীল আকাশ যেন তোমার অবয়ব বুকে ধারণ করে আরো বেশী নীল হয়ে উঠে। তোমার বহু বছরের বেড়ে ওঠার স্বাক্ষী এই আকাশ।

ছোট্ট চারাগাছ থেকে জীবন শুরু করে আজ তুমি পূর্ণ যুবতী এক বৃক্ষ। তোমার পাতার গোলাকার বিস্তার থেকে হঠাৎ বেড়ে ওঠা দুটি বিশালাকার ডাল যেন কোন
অপরূপা পরীর মেলে দেয়া দুটি ডানা।
তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
কেবলই মনে হয়—–তো্মার-আমার এই জীবন যেন অসীম অনন্ত, মহাকালের বিলীন গতিতে যেন কোনদিন শেষ হয়ে যাবার নয়, যেন ধরনীর বুকে চির যৌবনা।

পাড়ি দিতে চাই অনন্তকাল

23884752

পৃথিবীর মুক্ত আকাশ পানে চেয়ে আছি,
কোন একটি পথ আমাকে অতিক্রম করতেই হবে।
যে পথ বেয়ে পৌঁছে যেতে পারব
আমার আপনার অস্তিত্বের দিকে।
পৃথিবীর সুসুপ্ত সেই পথ ধরে
মুক্ত সেই আকাশ পানে তাকিয়ে
বলতে পারবো, এইতো সেই কাঙ্খিত স্থান
যেখানে আমার আপনার জগৎ
উজ্জ্বলতায় পরিপূর্ণ হয়ে
সাজিয়ে দিয়েছে নতুন একটি বার্তা
আমি সেই বার্তার দীপজ্যোতি নিয়ে
পাড়ি দিতে চাই অনন্তকাল।

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র

MG_16057

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৪৬তম পর্ব।


আসসালামুলাকুম আন্টি। কেমন আছেন।
আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো নাহিদ। যাক, জামিন হলো শোকর আল্লাহর ।
জ্বি আন্টি জামিন পেলাম।
যাও ফ্রেশ হয়ে নাও আমি খাবার দিচ্ছি।
ঠিক আছে আন্টি। আম্মু এবং শিউলীর কথা খুব মনে পড়তেছে।
আল্লাহ মেয়েটাকে জান্নাতবাসী করুণ। শিউলী জীবিত থাকলে তোমার জামিনে অনেক খুশি হতো। তোমার বাসায় জানে তুমি জেল হতে বের হয়েছো।
জ্বি, আম্মুকে ফোন দিয়ে কথা বলেছি।
আম্মু আপনি নাহিদকে খেতে দিবেন নাকি কথাই বলবেন।
আরে সুজন আমি খেতে পারছি ।
ঠিক আছে তোমরা খাও, কিছু লাগলে বলিও।
কি লাগবে বল নাহিদ।
সামনে সব আছে লাগলে আমি নিবো।
ভেরি গুড়।

কোন কিছুই ভালো লাগছে না সুজন, প্রচণ্ড অস্থির লাগছে মনটা । এইভাবে শিউলী আমাকে ছেড়ে চলে গেল। ইস! সে হয়তো আমাকে আমৃত্যু অভিশাপ দিয়ে গেল। আমি তাকে ভালো খাওয়াতে পারিনি ভালো পরাতে পারিনি। সে আমার প্রকৃত পরিচয়ও জানতে পারলো না শুধু জানতো আম্মু কিছু টাকা পাঠাতো যাহা দিয়ে চলতেও কষ্ট হতো।
এখন আর এইসব চিন্তা করে কোন লাভ হবে না।
তা ঠিক সুজন কিন্তু মনকে বুঝাতে পারছি না।
এখন কি তুই কোথায় থাকবি কি করবি ভেবে দেখ। দেখি সোবহান মিয়া কি বলে, তারপর সিদ্ধান্ত নিবো। জীবন তুমি আমাকে এমনভাবে ধাক্কা দিলে চলার পথে সব কিছু তছনছ হয়ে গেল।
একটা টিকটিকি দেয়ালের উপরে কোনায় বসা । বুকের মাঝামাঝি জায়গায় চামড়াটা টিকটিক করে উঠানামা করছে। কখনো কখনো দৌড়ে এসে লাইটের উপর বসা ছোট পোকামাকড় ধরে খায়। তবে বসে থাকে না আবার ফিরে যায় নিজের জায়গায় সেই কোনায়টায়।
আমি ঘুম যাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু ঘুম আসে না। চোখ বন্ধ করলেই শিউলীর মায়াবী নিষ্পাপ মুখটা ভেসে উঠে। মনে হয় যেন বলতে চায় ভালোবাসি বলে ভালোবাসি। খুব ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে কপালটায় একটা আদর করি কিন্ত পারি না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুম আসে কখন বলতেই পারি না।

চাচা কি বাসায় আছে?
জ্বি আছে, বসেন ডেকে দিচ্ছি।
ঠিক আছে, বলবেন নাহিদ এসেছে দেখা করতে।
আরে নাহিদ মিয়া তুমি কবে ছাড়া ফেলে জেল হতে। একটু ফোন দিলে না, একটু খবর দিলে না । আমি জেল গেইটে যেতাম নিয়ে আসার জন্য আচ্ছা থাক এইসব কথা, এখন বলো কেমন আছো, কি খাবে? চাচা আমি আমি ভালো আছি , চা হলে ভালো হয়।
তোমার বাসায় তালা মারা , আমার ভাড়া দিলো না এবং বললোও না তোমার বউ চলে গেল কাজটা কি ঠিক হলো বাবা! আমাকে বলে যেত পারতো সে।
চাচা আমার বউ কিছু দিন আগে বাস দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে আপনি জানেন না?
ইন্নারিল্লাহ। আহারে, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। খবরে দেখেছি ঢাকাগামী একটা বাস অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।
জ্বি সেটাই। আমি জেলে যাওয়ায় সব শেষ হয়ে গেল। এখন তুমি আমার বাসায় থাকবে নাকি মা বাবার বাসায় থাকবে। তুমি এখানে থাকলে আমার কোন আপত্তি নাই , টাকা পয়সা লাগলেও বলতে পারো।আমি আপনার এখানে থাকতে চাই এবং আপনার সাথেই কাজ করতে চাই, যদি আপনি সুযোগ দেন ।আমার দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা।
আরেকটা কথা বলবো চাচা।
আরে বলো কি বলতে চাও।
আগামী কাল আমার কিছু টাকা লাগবে। আমি আমার শুশুর-শাশুড়ীর সাথে দেখা করতে যাবো।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি তিন হাজার টাকা দিবো যাও দেখা করে আসো। আমি তোমার জামিনের জন্য সরকারি পিপি কে অনেক বার ফোন করে বলেছি ভালোভাবে চেষ্টা করতে। কিন্তু তোমার বন্ধু সুজন কোন দিন দেখাও করলো না আমার সাথে তাই খবরাখবর জানতে পারি নাই। একটু রাগও ছিলো, এখন তুমি আসছো সব পুরাতন কথা ভুলে নতুনভাবে শুরু করো । তোমার সব কিছু আমি দেখবো।
ধন্যবাদ চাচা।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র।
৪৭তম পর্ব।

সোবহান মিয়ার সাথে কথা বলেছি সুজন।
ভালো হয়েছে, কি বললো উনি ?
এইসব লোক হল খুবই চতুর। এরা মিথ্যাভাষণে পটু এদেরকে বিশ্বাস করা আর নরকে বাস করা সমান কথা। তবে ভালোই বলেছে তার বাসায় থাকতে বলেছে টাকা পয়সা নিয়ে সমস্যা হবে না বলেছে। আমি শিউলীদের ওইদিকে যেতে চাই তুই যাইবি ঘুরতে। আর সকালে আমি সোবহান মিয়ার সেই বাসায় চলে যাব, আপতত সেখানে থাকি।
শিউলীর মা বাবা তোকে দেখে রাগ করে কিছু বললেও তুই মন খারাপ করবি না। আমার সময় হবে না যাওয়ার , না হয় গিয়ে দেখে আসতাম। টাকা পয়সা কোথায় হতে যোগাড় করবি আমার একদম হাত খালি এখন তবুও দেখি কি করা যায়।
ওহ হ্যাঁ, সোবহান মিয়া তিন হাজার টাকা দিবে বলেছে দেখি আরেকটু বেশী নিতে পারি কিনা।
তিন হাজার টাকায় হবে না তোর ।
সন্ধ্যায় দুইজনে চা নাস্তা না করে বাহিরে চলে গেলে। এখন চা দিবো নাকি তোমাদেরকে ?
দাও আম্মু, চা পান রত আলাপে মজা লাগবে।
আন্টি কাজের মেয়ে কোথায়?
তোমার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করো বাবা। সুজন বলে ছোট বাচ্চা মেয়ে দিয়ে কাজ করানো অমানবিক । আর বড় মেয়েরা চুরি করে, মান সম্মানের ভয়ে কিছু বলাও যায় না।
আম্মু আমি তোমার যদি কলিজার টুকরা হই অন্যের সন্তানও তাদের কাছে সেই রকম এইটা কেউ না বুঝলে আপনি আমার মা হয়ে এইটা বুঝবেন। বিভিন্ন কারণে মানুষ ছোট মেয়েদের অন্যের বাসায় কাজে দেয় সেখানে তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করে অমানবিক খাটুনি খাটায়। এর পরও একটু এদিক সেদিক হলে অকথ্য নির্যাতন চালায় যা খুবই দুঃখজনক। এর চেয়ে ভালো আপনি আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছেন কাজ করছেন। গৃহকর্মীর কাজের টাকা প্রতি মাসেই দুইজনকে পড়ালেখা করতে দিচ্ছি আর আমি বস্তিতে গিয়ে বাচ্চাদের লেখাপড়া দেখিয়ে দিচ্ছি এইটাই আমার কাছে ভালো লাগে। আর সমস্যা হলে আমি আপনাকে কাজ সাহায্য করবো।

চা নাও তোমরা ।
আন্টি আপনি সুজনের মা হয়ে গর্বিত। তার জন্যই আমি জেল হতে বাহির হতে পেরেছি।
এইভাবে আমাকে উপরে উঠাতে হবে না শেষে পড়ে আমার কোমর ভেঙ্গে যাবে, নাহিদ।
হাঃ হাঃ হাঃ (সবাই হেসে উঠে)।
“মা তুমি আমাকে দুনিয়ায় এনেছো
আমি তোমাকে দুনিয়া দেখাবো”।
সুজন কবিতা বলে মাকে জড়িয়ে ধরে। নাহিদ সেই দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে। আস্তে আস্তে নাকি সব ঠিক হয়ে যায়? অথচ প্রিয়জনের স্মৃতি মনে পড়লে মানুষ কাঁদে? কারণ মনের অগোচরে সব রয়ে যায়! শুনেছি মানিয়ে নিলেই নাকি সব ঠিক হয়ে যায়। তবে কেনো সংসার ছেড়ে মানুষ বৈরাগী হয়। তবুও কেনো মানিয়ে নিতে নিতে লোক চরমভাবে হেরে যায় জীবনের কাছে!

পরিবারের জন্য ভালোবাসা ত্যাগ দেওয়া কি ঠিক? নাকি ভালোবাসা আগলে রেখে সময়ের সঙ্গে চলা উচিত? কিন্তু মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে খুশি করতে চাইলে, তাকে শুধুই ভালো রাখা যায়, ভালোবাসা হয়না! তাই হয়ত ভালোবাসা মানে ভালো রাখা হলেও ভালো রাখা মানেই ভালোবাসা নয়। আম্মু আমাকে ভালোবাসা দিয়ে বুকে আগলে ভালো রাখতে চেয়ে ছিল কিন্তু হয়নি আমি ভালোবাসা দিয়ে শিউলীকে ভালো রাখতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু পারিনি।নিয়ম করে কোন কিছু হয় না কিংবা চলে না। জীবন চলে জীবনের আপন নিয়মে মানুষকে শুধু শক্ত হাতে হাল ধরতে হয় না এলোমেলো হওয়ার সম্ভবনা থাকে।সাগরে পাল তোলা নৌকার মত মাঝি শক্ত হাতে বৈঠা না ধরলে ঝড় আসলে উল্টে যায় নৌকা জীবনও ঠিক তাই। জানি না আমার জীবনে কোন ভুলের প্রভাব পড়লো। আব্বুর অতিরিক্ত শাসন আম্মুর অতিরিক্ত আদর ভালোবাসা এই দুইটির প্রভাবে জীবনের মাঝ সাগরে ডুবন্ত জাহাজ আমি। এই ঝড়ের মাঝো শিউলী যাত্রী হয়ে সাগরের তলদেশে যেখান হতে আর কখনো ফিরে আসার পথ নেই। ক্ষমা করো শিউলী তোমার স্বর্গময় বিচরণ হতে। শুনেছি – “মানুষের জীবনে সব কিছুই ছোট ছোট হয়, জীবন ছোট, ভালোবাসার দিন ছোট, শুধু দুঃখের কাল বড়”। দেখা যাক আমার বেলায় কেমন হয়।

আমি সকাল সকাল যেতে হবে, না হয় সোবহান মিয়াকে পাবো না পরে গেলে, বাসাটাও দেখে আসবো। সব ঠিকঠাক মতো আছে কিনা দেখবো। টাকা হলে আগামী কাল রওয়ানা হবো শিউলীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কয়েক দিন থাকবোও সেখানে । ঠিক আছে নাহিদ।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র।
৪৮তম পর্ব।

চাচা আরো এক হাজার টাকা বেশী দিলে ভালো হয়। কিন্তু কেন এত টাকা দরকার তোমার। থাকবে আমার এখানে খাবে হোটেলে, দরকার হলে হোটেলে আমি বলে দিব। তুমি কি কোথায়ও যাবে?
জ্বি চাচা আমি আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি যাবো কয়েক দিন সেখানে থাকবো তাই টাকা একটু বেশী দিতে বলতেছি , এছাড়া অন্য কোন কারণ নাই।
ফিরে আসবে এখানে ?
হ্যাঁ চাচা অবশ্যই ফিরে আসবো, মাত্র কয়েকটা দিন। দেখো আবার আমাকে বেকুব বানানোর চেষ্টা করো না। তুমি এখানে ফিরে আসবে আশা করি। এই নাও পাঁচ হাজার টাকা দিলাম ।
ধন্যবাদ চাচা, অবশ্যই আমি ফেরত আসবো চার/পাঁচ দিন পর।
ঠিক আছে যাও। আসার পর একটা কাজ করতে হবে।
কি কাজ চাচা।
তোমাকে মন্ত্রীর সাথে ভালো করে পরিচয় করে দিতে হবে। তুমি আমাদের জন্য কাজ করো তা মন্ত্রী জেনে রাখা ভালো হবে।
উনি এলাকায় আসবে কখন চাচা?
এখনো তারিখ সিউর করা হয়নি। তাই বলছি তুমি এলাকায় থাকলে ভালো হয়।
আচ্ছা চাচা অচিরে ফেরত আসবো।

আমারও ইচ্ছা ছিল মন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়া এই সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না। সোবহান মিয়া তোমার হতে বাঁচতে পালাতে গিয়ে আমার বউ কবরে। আমি তা ভুলি কেমন করে চাচা সোবহান মিয়া। যে দল ক্ষমতায় আছে সরকারে আছে সেই দলেই আমি আছি। অচিরে আপনাকে একটা ধাক্কা দিবো আমি তখন থানা পুলিশকে ঠাণ্ডা রাখতে বড় লোকের টেলিফোন খুব দরকার হবে। সহজ সরল সুন্দর মনের মানুষ পৃথিবীতে বেশী কিন্তু অল্প কিছু অসুন্দর ও কুলষিত মনের মানুষের কাছে পৃথিবীটা অসহায়। সুজন কিংবা শিউলী কারোই ক্ষমতা কিংবা টাকা পয়সায় কাছে দাঁড়ানোর সাহস নেই হবেও না। সুজনকে চুপ থাকতে হচ্ছে নিজের জীবনের ভয়ে আর শিউলীকে জীবন বাঁচাতে গিয়ে জীবনের অবসান হয়েছে। অথচ সোবহান মিয়ার কিছুই হয়নি হবেও না তাহাছাড়া মানুষ জানবেও না আর জানলেও বিশ্বাস করবে না কারণ উনি সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষ। উনার নামের আগে আছে বিশেষণ সবাই জানে উনি দানশীল ও জনদরদী । আর আমি জানি উনি চোরাচালানকারী, মাদক কারবারী, ভূমিদস্যু ও নারীর দেহ লোভী। উনার কথার প্রভাব আছে কোট-কাচারি, থানা এবং অফিস আদালতে।

বাসার ভিতরে সব কিছু সাজানো গুছানো আছে শুধু নেই শিউলী। আমি বিপদে পড়ে সোবহান মিয়ার পিছনে হাটতে হচ্ছে কিন্তু আমার দম বন্ধ হয়ে যেতে চায়। জানি না কবর হতে শিউলী আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে কিনা তারপরও বলবো যদি পারো ক্ষমা করো।জীবনের তাগিদে সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয় অনেক সহ্য করতে হয় নাহিদ।
তাই করছি সুজন।
নিম পাতাকে যতই মিষ্টি রসে ভিজিয়ে রাখো সে তিতা থাকবেই। সেই রকম কিছু মানুষও আছে, তাদেরকেে তুমি যতই ভালো উপদেশ দাও তারা লোভী থাকবেই।
তা ঠিক, সোবহান মিয়া সেই রকম একজন মানুষ। আমি তোকে কোন উপদেশ দিবো না তোর মনে যে কাজ করতে চায় তা মেজাজ দিয়ে বিবেচনা করে তারপরে করবে যা ভালো হয়। আবেগী হয়ে কোন কিছু করাটা উত্তম নয়। আর যখনি বাসায় থাকবি বই পড়তে চেষ্টা করবি, ভালো ক্ল্যাসিক্যাল বই, বড় বড় মনীষিদের জীবনী, ভ্রমণ কাহিনী পড়তে চেষ্টা করবি। দেখবি ভালো লাগবে অনেক কিছু জানা হবে, মন উৎফুল্ল থাকবে।
ঠিক আছে চেষ্টা করবো তোর কথা রাখতে।
ধন্যবাদ তোকে নাহিদ।

কুটুমনগর ভারতের সীমান্তবর্তী ছোট ছোট টিলা আর গাছ পালায় সৌন্দর্যময় এলাকা। রাস্তা কিংবা টিলা সবখানে নানা জাতের কাঠের গাছ লাগানো দেখতে এলাকাটা নয়ন জুড়ানো তবে শিউলীদের গ্রাম থেকে একটু দুরে। বিকাল বেলায় বিভিন্ন গ্রাম হতে কুটুমনগরে দলবেঁধে ঘুরতে আসে সব বয়সী নারী পুরুষ। ।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র।
৪৯তম পর্ব।

এই সীমান্তবর্তী এলাকাটি মাদক চোরা কারবারীদের
স্বর্গ রাজ্য। ওপার হতে শুধু মাদক নয় আসে কাঠ, কাপড়, ঔষধ ও মসলা। এপার হতে যায় ইয়াবাসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এতে জড়িত বড় বড় রাঘববোয়াল যাদের নাম নিলে রাষ্ট্র আমাকেই অস্বীকার করবে যে আমি বাংলাদেশের নাগরিক। সারি সারি মেহগনি আকাশী সেগুন গাছের বাগান দেখতে খুব ভালো লাগে। শীত মৌসুমে বাগানে কিশোরী মেয়েরা দল বেঁধে পাতা কুড়ায এইসব পাতা রান্নার কাজে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে গ্রামের হত দরিদ্র পরিবারগুলি। এই ছোট ছোট মেয়েদের সাথে কথা বলে মজা করতে আমার কেনো জানি খুব ভালো লাগে। কুটুমনগর আসা যাওয়ার পথে শিউলী আমার নজরে পড়ে আর প্রথম দেখায় আমি তাঁর গভীর প্রেমে পড়ে যাই। অথচ শিউলীর গায়ের রং সাদাও না। শ্যামলা ছিপছিপে লম্বা মায়াবী নেত্র আমাকে আকৃষ্ট করে তাই দেখতে দেখতে আমি তার নেত্রজলে ডুবে যাই। কুটুমনগরের টিলায় টিলায় ঘুরে বেড়াতে শিউলী ছিলো আমার সঙ্গী, মনে হয় সেইসব দুই/একটা দিন যেন জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার বিধাতার।

কেউ হারিয়ে যাওয়া কিংবা হারিয়ে ফেলা মানুষ গুলোর কেবলই শারীরিক উপস্থিতি হারায়। চায়ের দোকানের তুমুল সংলাপে কিংবা মধ্যরাতের দীর্ঘশ্বাসে থেকে যায় স্মৃতি চিহ্ন। তারা সরব থাকে রেখে যাওয়া ছোঁয়া কিংবা চলার পথের তিক্ততায়।
বর্তমান পুরাতন হয়ে যায়, নতুনের সুর আসে কথা হয় বহুপথ একসাথে চলার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে। তারপরও কখনো কখনো আসে ক্লান্তির ছাপ। আশ্রয় নেয় এবং আধিপত্য বিস্তার করে ছোট ছোট শত শত অভিযোগ। আমি সব অভিযোগেও “তোমায় ভালোবাসি”। আর এই কথা বলতে না পারার অভাবে মরে যায় কত নিবিড় সম্পর্ক। মিষ্টি শব্দের স্রোত থেমে যায় নিষিদ্ধ চাওয়ার আকুতিভরা আবদারে। “আমি তোমায় অকৃত্রিম ভাবে নিঃস্বার্থ ভালোবাসি” এইটা তো কথার ফুলঝুরি। কিন্তু শিউলী তুমি অকৃত্রিম ও নিঃস্বার্থ ভালোবেসেছো এইটা ধ্রুব ও সাদা সত্য। এই সত্য অস্বীকার করা যাবে না কখনো।

অনেক দিন পর আবার দুরের কোথায়ও বেড়াতে বের হলাম। বাসে জানালার পাশে সিট নিয়ে বসে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলাম। বাসও ঠিক টাইমে ছেড়ে দিলো। বাস ছাড়ার সাথে সাথে একটা ভয় দপ করে এসে হৃদয়টাকে মোচড় দেয়। ভয়টা যেন একদম দৃশ্যমান দানবের মত আমেকে চেপে ধরে বার বার অদৃশ্য আওয়াজ অ্যাক্সিডেন্ট অ্যাক্সিডেন্ট করে। পাশে বসা ভদ্র লোক বুঝতে পারলো আমার অস্বস্তি তাই তাড়াতাড়ি পানি পান করতে দিলো।
আপনি এমন কেন করছেন ভাই?
আসলে কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে।
লোকটি হেসে উঠে বলে ওহ আচ্ছা, ভয় পাওয়ার কি আছে।
আসলে কিছু দিন আগে রোড় অ্যাক্সিডেন্টে আমার স্ত্রী মারা গিয়েছেন আমি তখন——।
খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সত্যিই দুঃখিত।
এখন তাঁর মা বাবার সাথে দেখা করবো। এবং তাঁর জন্যও দোয়া করবো।
আমিও দোয়া করি আপনার স্ত্রীর জন্য। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুণ।
আমিন। ধন্যবাদ ভাইজান।

থেমে থেমে লোকটার সাথে টুকটাক কথা বলে ভালো লাগলো। কিন্তু উনি একটু পরেই ঘুমিয়ে যায় আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বাসের জানালার পর্দা একটু টেনে আমি প্রকৃতি উপভোগ করি। আসলে আমি বাস ভ্রমনে জানালার পাশেই বসতে ভালোবাসি কারণ জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে খুবই আনন্দ লাগে। জানালা খোলা থাকলে হু হু করে যে বাতাস ঢুকে তাও খুব উপভোগ্য।

(চলবে)।

এই ঘরে এক দুপুরে একবারই তুমি এসেছিলে!

02260043

বই গুলোর ভাগ্যে কি ঘটেছিল!

কিছু সাথে নিয়ে এসেছিলাম। ঠিক এক বছর পর ফিরে গিয়ে দেখি কিছু পোকার আক্রমনের মুখে, কিছু বেহাত। বইয়ের চেয়ে বেশি খারাপ লাগছে কিছু চিঠির জন্য। বইগুলো ইচ্ছে করলেই আবার সংগ্রহ করা যাবে অবশ্য সেই রকম ইচ্ছে নেই।

বইয়ের চেয়েও যা হারিয়েছি তা হলো, ‘চিঠি’। আমাকে লেখা অনেকেরই চিঠি ছিল। তোমারও থাকতে পারে। সেই চিঠি গুলোর ভাগ্যে কি ঘটেছিল জানি না। অবশ্য অনেকেই বলেন, তুমি তো রবীন্দ্রনাথ না যে তোমার মৃত্যুর পর তা নিয়ে বই বের হবে! আসলেই তাই। আমি তো রবীন্দ্রনাথ নই, কিন্তু আমি যে আমি। চিঠির মতো ভালো কিছু হতে পারে তা আমি মনে করি না।

আমার যৌবনে ম্যাসেঞ্জার, এস এম এস ছিল না। কতো কিছুই বলা যায় চিঠিতে, যা মুখে বলা যায় না।যে কখনো চিঠি লিখে নাই, চিঠি পায় নি সে কতো কিছু থেকে বঞ্চিত তা যদি বুঝতো! এক বিছানায় এক ছাদের নিচে থাকার পরও আমরা দুই জনও চিঠি লিখেছি একে অন্যকে! পৃথিবীতে অনেক কিছুই আছে, থাকে। সেই চিঠিতে ভালোবাসা ছিল, কান্না ছিল। আনন্দ ছিল। বিচ্ছেদ ও ছিল। কারো সাথে সম্পর্ক ভেঙে যাবার পেছনেও চিঠিরও বড় ভূমিকা ছিল, অবশ্য তিনি কখনোই বুঝতে পারেননি, এখনও নয়।

সে প্রসঙ্গ থাক। বইগুলো চাইলেই তোমাকে দিতাম। এতোদিন পর বললে ..

এখন আর বই সংগ্রহে রাখি না। পড়া শেষ হলে কাউকে দেই। অথবা বইটা শেষ করার পর সেখানে রেখে আসি, কারো ভালো লাগলে নিতে পারে। এখন একটা ভাবনার মধ্যে থাকি যা পছন্দ করে আলমারি ভর্তি করছি, চলে যাবার পর অন্যের আগ্রহ না থাকলে তা শুধু বোঝাই হবে তাদের জন্য। তা বইই হোক আর ফুল ই হোক।

এখনো অনেকের সাথে ম্যাসেঞ্জার বা এসএনএস এ অনেক কথা হয়, কি জানো আমি তা মুছে ফেলি না। একটা মজার কথা বলি, একজনের সাথে আমি বছরের পর বছর চ্যাট, ফোন এ কথা বলেছি। আমাদের দুজনের মধ্যে কম করে হলেও বিশ বছরেরও বেশী বয়সের পার্থক্য ছিল। অবশ্য আমি কখনো তার বয়স জানতে চাইনি, তিনিও। দুই জন দুই জনকে তুমি সম্বোধন করতাম। একদিন সে প্রেমে পড়ে গেল, তারপর তার সাথে বিয়ের আগে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ হলো..

বাবা যে কথাটা আমাকে বলেছিলেন তা নিজের মতো করে বলেছিলাম। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবটুকু যখন নিজের কাছে থাকে এর দায়ও নিজেই নেবে। সবাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তুমি পারছো। তোমাকে অভিবাদন।

তারও পরে সে আমাকে বলেছিলো, আমি তোমার সাথে চ্যাট গুলো মুছে ফেলতে চাই না। আমি তোমাকে ‘আপনি’ করে লিখবো। তুমি করে বললে বা লিখলে কেউ যদি অন্য কিছু মনে করে! শুধু ‘তুমি’ দিয়েই দুই জন মানুষের সম্পর্কের পরিমাপ করা যায় না। আমার মা র মতো কতো মানুষই স্বামীকে ‘আপনি’ সম্বোধন করেই এক একটা জীবন চালিয়ে দিয়েছেন বা দিচ্ছেন।

যে কথাটা তাকে বলিনি –
‘তুমি উদার বলেই যে তিনিও হবেনই এমন তো কোন গ্যারান্টি নেই। ভালোবাসা যে সব সময় ঔদার্য দেয় এমনও নয়। অনেক সময় মানুষকে তা সংকীর্ণ, ঈর্ষাকাতর করে তোলে। সেটা প্রেমিক প্রেমিকার দোষ নয়, ভালোবেসেও পজেসিভ না হওয়াটা অত্যন্ত উচ্চ মার্গের স্ত্রী পুরুষের পক্ষেই সম্ভব।’

তোমাকেও একই কথাটি বলতে চাই।
তোমাদের দুই জনের সম্পর্কটা কিভাবে গড়ে উঠেছে, জানি না।

প্রিয় ফেসবুক বন্ধুরা সাবধান!

23674

সকালে ঘুম থেকে ওঠে মোবাইলটা অন করে প্রথমেই ফেসবুকে টু মারা হলো, অনেকেরই দিনের প্রথম কাজ। তারপরই অনলাইনে থাকা আরও আরও সামাজিক সাইটে আনাগোনা-সহ নিজের দৈনন্দিন কাজ শুরু করেন অনেকেই।

কিন্তু নিজের দৈনন্দিন কাজ কোনদিন গোল্লায় গেলেও ফেসবুকটাকে কেউ গোল্লায় যেতে দেয় না। কারণ বর্তমান সময়ে ফেসবুকটা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বুকের মধ্যিখানে কাঁঠালের আঠার মতো সবসময়ের জন্য লেগেই আছে।

তাই অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে সপ্তাহে দু-একদিন প্রবেশ করলেও কারোর কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু মোবাইলে এমবি নামের ইন্টারনেট অথবা ওয়াইফাই সংযোগ থাকলেই ফেসবুক দর্শন করতে হয় খুব সকাল থেকেই।
এর কারণ বর্তমান সময়ে ফেসবুক হলো বিশ্বের জনপ্রিয় এক যোগাযোগমাধ্যম। তা-ও আবার একেবারে সস্তা দরে। যেমন সস্তা আনন্দের বিনোদন। তেমনই সস্তা একে অপরের সাথে খুবই শর্টকাটে যোগাযোগ করার সুযোগ। তা হোক কলে বা মেসেঞ্জারে বা ভিডিও কলে।

তাই বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম হলো এই ফেসবুক। এই ফেসবুক যোগাযোগ মাধ্যমে আছে অনেককিছু। আছে আনন্দ, নিরানন্দ, হাসি-কান্না, জয় এবং ভয়-সহ সবকিছুই।

আনন্দের কারণ হলো, একজন মানুষ নতুন একটা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল বাজার থেকে কিনে প্রথমেই ফেসবুকে সাইন আপ করে ফেলে। তারপর লগইন। লগইন করা সম্পন্ন হলেই ফেসবুক নিজে থেকে কিছুসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর তালিকা দেখায়। সেই তালিকায় বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই থাকে নিজ এলাকার এবং ঘনিষ্ঠ পরিচিত ব্যক্তিবর্গ। তখন নতুন লগইন করা ফেসবুকার নিজ এলাকার মানুষের তালিকা দেখে খুশিতে টগবগিয়ে বেছে বেছে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টে টাচ্ করে। কিছুক্ষণ পর রিকুয়েষ্ট পাওয়া ব্যক্তিও স্বাচ্ছন্দ্যে রিকুয়েষ্ট গ্রহণ করে। হয়ে গেলো বাল্যবন্ধু বা চিরবন্ধু বা ফেসবুক বন্ধু।

তারপর নতুন ব্যবহারকারী নিজের প্রোফাইলে একটা ছবি আপলোড করে। সেই ছবিটা হোক নিজের, নাহয় হোক গাছপালা বা তরুলতার। ছবি যেটা বা যে রকমই হোক না কেন, ছবিটা আপলোড করার সাথে সাথে ছবিতে কেউ-না-কেউ লাইক দেয়, কমেন্ট বা মন্তব্য লিখে। যেমন: Nice, Good, Beautiful এরকম।

সেই লাইক-কমেন্ট দেখে নতুন ব্যবহারকারী আনন্দের জোয়ারে ভাসে। সেই আনন্দ থেকেই মহানন্দে দিন শেষে রাত জেগে ফেসবুকে একের-পর-এক ছবি আপলোড করা-সহ সারাক্ষণ ঢুঁ মারতেই থাকে। সাথে মাঝেমধ্যে দু’একটা শব্দ লিখে ছোট বড় আকারের স্ট্যাটাসও দিতে থাকে। যাকে বলে পোস্ট। সেই পোস্টে পড়তে থাকে লাইক-কমেন্ট। ব্যবহারকারীও পেতে থাকে ভীষণ আনন্দ। একসময় নিরানন্দেও কাঁদতে থাকে, যেকোনো একটা স্ট্যাটাস বা যেকোনো মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে। তখন আনন্দের জায়গায় নেমে আসে নিরানন্দ!

নিরানন্দের কারণ হলো, আপত্তিকর ছবি বা বিপত্তিকর স্ট্যাটাস বা পোস্ট। যদি হয় কোনও ধর্মগুরু বা কোনো দেবদেবী বা কোনও মহাপুরুষের বিকৃত ছবি, আর যদি হয় ধর্ম অবমাননাকর কোনও স্ট্যাটাস; তাহলেই বাঁধলো বিপত্তি ক্যাঁচাল। সেই ক্যাঁচালে ক্যাঁচালে মনের আনন্দ হারাম হয়ে নিরানন্দে রূপ নেয়। রূপ নেয়া নিরানন্দে পোস্ট দাতা নিজেও কাঁদে, তার সাথে তার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীরা কাঁদে। কেউ আবার মনের আনন্দে শেয়ারের পর শেয়ার করে হাসতে থাকে।

হাসা হাসির কারণও আছে। সেগুলো হলো, ছবি বা কোনও মজার হাসির লেখা পোস্ট। কেউ যদি একটু অঙ্গি-ভঙ্গি করে একটা সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে, তার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বন্ধুরা হাহা হিহিহি করে হেসে হেসে মন্তব্য লিখে। কেউ আবার মন্তব্যের ছোট বক্সে হাসির ইমোজি স্টিকারও সেটে দেয়। আবার কেউ যদি একটা মজার কৌতুক লিখে পোস্ট করে, তাহলেও তার ফ্রেন্ড বা বন্ধুরা হাসাহাসি করেই লাইক-কমেন্ট করে লিখে, ‘দারুণ লিখেছেন বন্ধু! আপনার লেখা পড়ে হাসতে হাসতে জীবন যায় যায় অবস্থা।’

এই হাসির মাঝেও দুঃখকষ্ট ও কান্নার উত্তাল ঢেউ লক্ষণীয়। তা হলো, কারো কারোর পোস্টে মৃত্যুর খবরে কেউ কেউ মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে মৃতব্যক্তির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শোক প্রকাশ করে। আবার কারো কারোর পোস্টে দুঃখের খবর শুনে ব্যতীত হয়। কেউ আবার কেঁদে কেঁদে মন্তব্যের ছোট বক্সে লিখে, “আপনার পোস্ট করা লেখা বা ছবি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।”

কারো কারোর পোস্ট আবার ভাইরাল হতে হতে ভাইরাসও হয়ে যায়। শেষাবধি সেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশের শহর-বন্দর গ্রাম-গঞ্জের পাড়া-মহল্লায়। আর সেই ভাইরাল থেকে রূপ নেয়া ভাইরাস কেউ-না-কেউ জয় করে ফেসবুকে রাতারাতি হিরো বনে যায়।

কারোর আবার ক্ষয়ও হয়। তা হয়, যদি আপত্তিকর পোস্ট কোনও অশ্লীল পোস্ট একবার ভাইরাস হয়। তখনই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সেই আতঙ্কে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পোস্টদাতার মনে লাগে ভয়! ভয় মানে ভীষণ ভয়!
এই ভয়ের কারণ হলো, কারও কারও ব্যতিক্রমী কিছু পোস্ট ও বন্ধুত্বের ভালোবাসার আবেগে নিজের অসতর্কতাবশত কিছু মন্তব্য। আরও দশজন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মতো সবারই ফ্রেন্ড লিস্টে কিছু বন্ধু থাকতে পারে, যারা সময় আর সুযোগ বুঝে আপত্তিকর একটা পোস্ট দিয়ে বিপত্তিকর কিছু তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটাতে পারে।

আর সেই ঘটা থেকে তেলেসমাতি ঘটনার সূত্রপাতও হতে পারে নিঃসন্দেহে। যদি কিছু ঘটেই যায়, তাহলেই ভীষণ ভয়ের কারণ হতে পারে। আমি ঠিক সেই ভয়ের কথাই বলছি। আর ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে এতএত ফ্রেণ্ডের মধ্যে ওইরকম দু-এক জন সুযোগসন্ধানী ফ্রেন্ড যে থাকবে না তা-ও কিন্তু নয়! থাকাটাও স্বাভাবিক!

কারণ বর্তমানে ফেসবুকে যেমন সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর মনের মানুষ আছে, তারচেয়ে বেশি আছে অসাধু হীনম্মন্যতা মানুষিক প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীও। সুন্দর মনের মানুষগুলো থাকে জ্ঞানচর্চার সাধনায়, আর অসাধু অমানুষিক প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীরা থাকে গুজব রটানোর সুযোগে আর নিজের স্বার্থ হাসিলের ধান্দায়!

এসব অসাধু অমানুষিক প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে ঘুপটি মেরে বসে থাকে। এদের নাম ঠিকানা-সহ নিজের প্রোফাইল ছবিটিও থাকে দুই নম্বরি। এরা সহজে ফেসবুকে কোনও পোস্ট করে না। যদিও মাঝেমধ্যে দু’একটা পোস্ট করে, সেটা থাকবে অশ্লীল বা ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট। সেই পোস্ট এরা আরও দশ থেকে পঞ্চাশ জনকে ট্যাগ করে বিপদে বা ফাঁসানোর চেষ্টা করে। তা-ও যদি না করে, তাহলে তারা সবসময়ই ওদের ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বন্ধুদের পোস্টের উপর রাখে বাজপাখির দৃষ্টি। সেই দৃষ্টি মোটেও সু-দৃষ্টি নয়! সেই দৃষ্টি একেবারে শয়তানের কু-দৃষ্টি!

তাদের সেই কুদৃষ্টির আড়ালে থাকে তেলেসমাতি রটানোর সুযোগ। মানে গুজব যাকে বলে। তাদের সেই সুযোগটা কাজে লাগায় পোস্টদাতার অসাবধানতাবশত ধর্মের নামে আপত্তিকর পোস্ট বা স্ট্যাটাস শেয়ার করার মাধ্যমে। তাদের টার্গেট থাকে নিজ এলাকার একজন সম্মানিত ব্যক্তি, আর নাহয় একজন নিরীহ ব্যক্তি; আর নাহয় তাদের নিজ স্বার্থসিদ্ধি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য।

এসব লক্ষ্য নিয়েই কিছু-কিছু ফেসবুকার ইদানীংকালে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে ফেসবুকের একটা স্ট্যাটাস শেয়ার করে অথবা একের-পর-এক ফেসবুক মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। অথচ নিজের ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা প্রিয় বন্ধুটির ভুলবশত করা পোস্ট সংশোধন করার জন্য পোস্টদাতাকে একটিবারও মেসেজ দিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করার উপদেশ দেয় না। বরং আরও আরও শখানেক বন্ধুদের মাঝে বিপত্তিকর স্ট্যাটাস বা পোস্টখানা শেয়ার করে হুলুস্থুল সৃষ্টি করে।

এসবের কারণে যেমন ধর্মকে টানতে হচ্ছে গ্লানি, তারচেয়ে বেশি টানতে হচ্ছে সমাজের বেশকিছু অসহায় মানুষকে কষ্টের বোজা! এই কষ্টের বোজা টানতে টানতে অনেক সুখের সংসার দিন-দিন দুখের সাগরের তলদেশে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সাথে আপত্তিকর পোস্টদাতার পোস্টের কারণে তার নিজ এলাকাটা মুহূর্তে পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। তা হচ্ছে কেবল ফেসবুকে থাকা কিছু অসাধু অমানুষিক প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীদের জন্য। তাই নিজে ভয়ে থেকেও অন্যকে সাবধানে থাকার অনুরোধ করতে হচ্ছে।

অনুরোধ করছি এই কারণে যে, এসব হীনম্মন্যতা অসাধু পরিচয়হীন বন্ধুরা কোনও সময়ই আপনার ভালো চাইবে না। বরং বর্তমান যুগের সেরা সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে আপনার ভুলবশত করা একটা স্ট্যাটাস বা একটা পোস্টকে কেন্দ্র করে আপনার নিজ এলাকায় তেলেসমাতি ঘটিয়ে দিবে। এতে এদের একটু বিবেকে বাঁধবে না বরং এরা দূর থেকে আনন্দই পাবে।

তাই সাবধানে থাকুন! এদের থেকে দূরে থাকুন! ভয়কে জয় করুন এবং এদের চিহ্নিত করে আপনার ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে এদের বিদায় করুন। নিজে নিরাপদে থাকুন। নিজে ভয়মুক্ত থাকুন। অন্যকেও শান্তিতে থাকতে দিন এবং সুন্দরভাবে বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করুন, অন্যকেও সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে দিন।

নিয়ে নাও

203555_n

তুমি যদি আমার হৃদয়টা চাও
নিতে পারো…
এখানে পবিত্রতার ছুয়ে যাবে
রাত্রি রুপালি চাঁদ;

এখানে বিশ্বাস নিয়ে
কদাচিৎ রচনা করতে পারো
আরাধ্যতার প্রার্থনাগাঢ়;

আমি বহুকালের সোনালী বরফদ্বয়
সূর্যের তাপে রচনা করি তোমারই সৌন্দর্য
সূর্যের ঢ’লে পড়ায়
যে পিদিম রিফ্লেক করে
পশ্চিমের আকাশে জাজ্বল্যমান
একছত্র সোনালী মেঘ।

আমার অবয়ব জুড়ে রয়েছে
পৃথিবীর সৃষ্টি ও ধ্বংসের রহস্য
আমি সৃষ্টির প্রথম জীবাশ্ম
রেনু থেকে যেভাবে জেগে উঠেছি
বরং আজ তা আমাদের
শরীরের আঁকার;

এখানে
একটাই লাল গোলাপ
ফুটেছিল,
ভালোবাসার নিঃশ্বাস থেকে

অথচ একটি অন্ধকার
আর অবগুণ্ঠন রাত্রির মূর্ছিত লজ্জা
প্রলুব্ধকর জোসনাকে ঢেকে দিয়ে
গভীর সমুদ্রে নিক্ষেপ করে
জীবনের সব রঙ;

সব ভাবনা,
সব বাক্য একেকটি শব্দ
এই বিচ্ছিন্নতার স্বভাব রহস্যে ঢাকা!

অস্পষ্ট জীবনের শূন্যতা ছুঁয়ে
বিস্তৃত করেছে শুদ্ধতার পথ।

আমি এখন
নিরানন্দ গল্প ছাড়া কিছু নয়;
সকাল আর বিকেলের সমুদ্রের
বুকে, ছুটে চলা শঙ্খচিল
আমি এখন সাগরের ঝড়, বুঝি।

ঝড়ের পূর্বাভাস
আমাকে শিখিয়ে দেয়
সমুদ্রের শূন্যতা ও
অধিষ্ঠিত হওয়ার সময়।

তাই সবকিছু ছেড়ে
জীবনের নির্জনতায় নিজেকে
সঁপে দিয়ে কাছে নিয়েছিলাম
একেকটি বিদগ্ধ শূন্যতা…

যেখানে জীবনের কোন শুরু
আর প্রান্ত বেলা নেই, ছিলনা
তবুও কোথায় থেকে যেন

একটি জীবনের মোহর এসে হঠাৎ করেই
জেগে তুলল নতুন এক অস্তিত্বের কলরব।

যেখানে সুদূর হতে ভেসে আসা,আশা।
বিলীন থেকে উঠে আসা
প্রেমের উত্তাপ আবার নতুন করে
সঞ্চারিত করে নতুন কোন অস্তিত্ব

কিম্বা কোন শূন্যতার মাঝে
স্টার ফল! মনে হয়
কোনো এক নীহারিকার
সংকোচনে সৃষ্টি হয়েছে
নতুন একটি সভ্যতার।

এখানে নিয়মের কাঠখর পুড়ে
জীবনের রঙ বদলে
শুরু হয় নতুন অস্তিত্বের লেহন

নতুন একটি নক্ষত্র…
যা আমাদের কপাল ছুঁয়ে
চুম্বনের মতোই ঘুরতে থাকবে
যেখানে জন্ম নিবে নতুন সৌরমণ্ডল

যে স্বপ্নগুলো নীরব কাফনে
মোড়ানো ছিল দীর্ঘকাল
তা সোনালী স্মৃতির মাঝে আবার
জেগে উঠবে,

সভ্যতার এই অভূতপূর্ব অভ্যুদয়ে
যেখানে তুমি আর আমি
নিশিযাপন এর শেষ মুহূর্তটি ও
কখনোই হবে না সঙ্গীহীন।

তুমি যদি আমার হৃদয়টা চাও
নিতে পারো;
যেখানে তুমি মাথা রেখে
দিবসরজনী রচনা করবে’

সেটা তোমারি থাক
তুমি যদি আমার ভুবন চাও
নিতে পারো;
এখানে তো আমরা সবাইকে বাদে
নিজেদের করেছি অস্বীকার!

তবুও কখনো ফেরাতে পারিনি মুখ
চোখ বুজে যত কষ্টের চুমু
নিজেকে করেছে দহন
নিজেকে পুড়িয়ে আবার পড়েছে
কাফনের কাফন।

তবে কেন ভয় কেন সংশয়
তবে দ্বারাও জ্যোতিষ
একটু দিয়ে যাও মত
কোন মুল্লুকে গিয়ে শেষ হবে পথ।

আমিতো সময়ের আঁধার ঘেরে
বন্দী ছিলাম অনন্তকাল
আমাকে বলে যাও জীবনের মানে
বলে যাও সৌন্দর্যের মধুমিতা

যেন নতুন গৌরবে নিতে পারি
সৃষ্টির নতুন রহস্য
যেন নিতে পারি সময়ের উত্তাপে জ্বলে
উত্থাপিত জীবনের নতুন উদ্যান।

যেখানে ফুল ফুটবে
মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হবে
অস্তিত্বের সকল সত্য;

দুঃস্বাপনিক সময়ের সেই
বেড়াজাল ছিন্ন করে
আর দুর্বোধ্য সেই অন্ধকার ভেদ করে
উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে
আমাদের জগৎজ্যোতি।

তুমি আর আমি যেখানে আকারহীন
থেকে আকার দেবো
ভবিষ্যতের রুদ্রতাপে
রৌদ্রস্নাত সলোক বেলা।