বিভাগের আর্কাইভঃ আড্ডা

শব্দনীড় আড্ডা স্থগিত প্রসঙ্গে

আজকের শব্দনীড় আড্ডা স্থগিত প্রসঙ্গে

খুব ইচ্ছে ছিল সবার সাথে দেখা হবে, কথা হবে। প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা নেই অনেক দিন ধরে। বাদাম খাবো, আর আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চলবে চা। আমরা এমনটাই ভাবছিলাম।

কিন্তু মানুষ যা ভাবে মাঝেমধ্যে তার উল্টাটা ঘটে। তাই অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের আড্ডার প্রধান উদ্যোক্তা, প্রিয় ব্লগার, গল্পকার আনু আনোয়ার ভাইয়ের আব্বা এবং তার ছোটভাই হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিতব্য নির্ধারিত আড্ডা স্থগিত করা হলো।

আড্ডারর পরবর্তী দিন তারিখ শীঘ্রই জানানো হবে। যারা সাথে থাকতে চেয়েছিলেন আশা রাখি তাদেরকেও পরবর্তীতেও পাবো। আমরা সবাই আনু আনোয়ার ভাইয়ের আব্বা এবং ছোটভাইয়ের জন্য দোয়া এবং দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

আড্ডা হল, হল আরো অনেক কিছুই

বহু দিন আড্ডা দিইনি এমন জমজমাট। যদিও আড্ডার স্থান ছিল টিএসসি, শেষ মুহুর্তে আমরা সবাই টিএসসি থেকে চলে যাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ঘাসের উপর বসেছি বহুদিন হয়ে গেল। সেই কবেকার পরে আবার আমরা গতকাল বসলাম ঘাসের ডগায়। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে যাওয়ার পথে পথে কতদিক দিক থেকে আমরা কত দিকে যে আমরা চলে গেলাম। অনেকদিনের জমানো অনেক কথার ঝাঁপি খুলে ধরি আমরা সবাই। মনের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন আমাদের কবি মোকসেদুল ইসলাম, চারু মান্নান। আর তাদের সাথে সাথে কবি আনিসুর রহমান। ব্যক্তিগত, অব্যক্তিগত, সামাজিক রাজনৈতিক আলাপে আমরা কই থেকে কই কই হারিয়ে গেলাম, সেটা যারা না উপস্থিত ছিলেন তাদের বুঝিয়ে বলা যাবে না।

আলোচনায় এলো প্রকাশক আর প্রকাশনা, এলো সাম্প্রতিক বন্যা, এলো শব্দনীড়। আমাদের সাহিত্যে প্রকাশকদের ভূমিকা কতটুকু, লেখক প্রকাশকদের সম্পর্ক, সাহিত্য ও ব্যবসা এইসব আলোচনা হল। কবি মোকসেদুলের সাম্প্রতিক প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ অদ্ভুত মানুষগুলো নিয়ে আলোচনা হল অনেক। তেমনি আলোচনা হলো আনু আনোয়ারের গল্প নিয়ে, লেখালেখি নিয়ে। আনু আনোয়ার আলোচনা করলেন জাদুবাস্তবাদ ও বাংলাসাহিত্যে জাদুবাস্তববাদের প্রয়োগ নিয়ে। আলোচনায় এলেন গ্যাব্রিয়েলা গার্সিয়া মার্কেজ। বন্যা ও ত্রাণকার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করলেন চারুমান্নান।

আড্ডা শেষে আমরা কিছু সিদ্ধান্তও নিইঃ

১। আমরা প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে মিলিত হব এই আড্ডায়।
২। আমরা একটা লিটল ম্যাগ নিয়ে আসতে চাই। সেই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে সেপ্টেম্বরের আড্ডা।

আমাদের আড্ডা যেন শেষ হতেই চায় না, কিন্তু সোহরাওয়ার্দীতে সাতটার পরে থাকার নিয়ম নেই। তাই সেখান থেকে আমরা দলবেঁধে চলে গেলাম হাকিম চত্বরে। হাকিম চত্ব্বর থেকে সবাই যে যার মত চলে যাই।

যারা আসেননি বা আসতে পারেননি নিঃসন্দেহে অনেক মিস করেছেন। পরবর্তী আড্ডার আমন্ত্রন জানিয়ে আজ শেষ করছি।

শব্দনীড় আড্ডা

আপনারা সবাই জানেন আড্ডা দেয়ার আহবানে গত ১২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে একটা পোস্ট দিয়েছি। তাতে সাড়া মিলেছে প্রচুর। অনেকে মন্তব্যের মাধ্যমে সাড়া দিয়েছেন। অনেকে ইনবক্স করেছেন। ফোন করেছেন কেউ কেউ। আমি অভিভূত। বুঝা যাচ্ছে আড্ডায় আগ্রহীদের উৎসাহ চরম। সকলের এই উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রেক্ষিতে আগামী ২৫ আগস্ট, ২০১৭ (শুক্রবার) বিকেল ৪:৩০ এ শব্দনীড় আড্ডার সময় চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবাই মিলিত হব টিএসসি, ঢাবি তে। আড্ডায় স্বরচিত কবিতা/গল্প পাঠ করা হবে। একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।
অংশগ্রহণকারীগণ কবিতা/গল্প/প্রবন্ধের উপর আলোচনা করবেন।

আপনার ব্যস্ত সময়ে ক্যালেন্ডার মার্ক করে রাখতে পারেন এই তথ্যগুলোঃ
শব্দনীড় আড্ডা
তারিখঃ ২৫ আগস্ট ২০১৭
সময়ঃ ৪ঃ ৩০ মিনিট
স্থানঃ টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যোগাযোগের জন্যঃ
আনু আনোয়ার ০১৭১১৬৩৭৮১১
মোকসেদুল ইসলাম ০১৫১৬৭৭৫৪০৪
আনিসুর রহমান ০১৭৬৬৬৯৮১৫২

সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের বন্ধুত্বকে দৃঢ়তর করবে এটাই প্রত্যাশা।

শব্দনীড় ব্লগকে প্রাণবন্ত করতে আমার কয়েকটি প্রস্তাব

আমি শব্দনীড়ের একজন পুরাতন সদস্য ছিলাম। নতুন করে শব্দনীড় চালু হওয়ায় আবার নতুন রূপে শব্দনীড়ে আসছি। ইদানিং শব্দনীড়কে আগের মতো প্রাণবন্ত দেখছি না। বর্তমানে ব্লগারকে মধ্যে তেমন কোন আন্তরিকতা দেখছি না। আমি লক্ষ্য করে দেখছি দুয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই কিছুক্ষণের জন্য ব্লগে প্রবেশ করে একটি কবিতা পোস্ট করে কয়েকদিনের জন্য গায়েব হয়ে যায়! ওনি নিজেতো অন্যের পোস্টে মন্তব্য করেনই না, এমনকি নিজের পোস্টের মন্তব্যেরও প্রতি উত্তর দেন না। এই বিষয়টা আমার কাছে খুবই দুঃখজনক মনে হলো। যেখানে শব্দনীড় একটা সময় ব্লগারদের পদচারণায় মুখরিত ছিল সেখানে এমন করুণ অবস্থা হবে তা আমি ভাবতে পারি না। এভাবে নিষ্প্রাণ হয়ে ব্লগ চলতে পারে না। ইদানিং অনেক ব্লগই বন্ধ হয়ে গেছে। শব্দনীড়ও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শব্দনীড় পূনরায় সচল হয়েছে। এমন অবস্থায় শব্দনীড় নতুন রূপে পুনরায় আসতে পারায় ব্লগারদের জন্য আশার আলো হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাস্তবে তা দেখছি না।

শব্দনীড় আমার প্রাণের ব্লগ। সারাদিন কাজের ফাঁকে যখনই সময় পাই তখনই শব্দনীড়ে ঢু মারি। তাইতো দিন যতই যাচ্ছে ততই শব্দনীড়ের প্রতি আমার দায়িত্ব বেড়ে যাচ্ছে। সেই দায়িত্ব থেকে শব্দনীড়কে আরো প্রানবন্ত করতে কয়েকটি প্রস্তাব দিচ্ছি।

১। ‍প্রতি মাসে একজন সেরা মন্তব্যকারী ও একজন সর্বোচ্চ মন্তব্যকারীকে পুরস্কার প্রদান। সেই পুরস্কার হতে পারে বই বা অন্যকিছু। যাহা ফলাফল ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে কুরিয়ার করে পুস্কার প্রাপ্ত লেখকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে।

২। বৎসরে অনন্ত একবার সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা। (সেটা ফেব্রুয়ারি মাসে হলে ভালো হয়।)

২। প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর ঢাকাতে নির্দিষ্ট স্থানে ব্লগারদের আড্ডা ও মত বিনিময়ের ব্যবস্থা করা।

৩। প্রতি বছর শীত অথবা বর্ষাকালে শব্দনীড়ের সদস্যদেরকে নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করা।

৪। বছরে দুই ঈদ ও বাংলা নতুন বছরে ই-ম্যাগাজিন বের করা।

আশা করি উপরোক্ত প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করলে শব্দনীড় আগের মতো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। শুভ ব্লগিং।

সাহিত্য আড্ডা-৬ (আবৃত্তিঃ বনলতা সেন)

বনলতা সেন

জীবনানন্দ দাশগুপ্ত বা জীবনানন্দ দাস ছিলেন প্রকৃতির কবি, নিসর্গের কবি, নিস্তব্ধতার কবি, নীরবতার কবি, নিঃশব্দের কবি, বিষন্নতার কবি। তাকে বাংলাভাষার “শুদ্ধতম কবি” বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তাঁর ঘরোয়া নাম ছিল মিলু। মিলু ছিলেন আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) কবিতার রচয়িতা কুসুমকুমারী দাশের জ্যেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু জীবদ্দশায় কথাসাহিত্যিক হিসাবে জীবনানন্দের কোনোও পরিচিতি ছিল না। তিনি ছিলেন বিবরবাসী মানুষ। তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাস-গল্পের পাণ্ডুলিপির খাতাগুলো আবিষ্কার হয়। কবিতায় যেমনি, কথা সাহিত্যেও তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের থেকে আলাদা, তাঁর সমসাময়িকদের থেকেও তিনি সম্পূর্ণ আলাদা।

জীবনানন্দ কবিতা ও কবিদের নিয়ে তাঁর ‘কবিতার কথা’ প্রবন্ধে বলেছিলেন –

“সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি ; কবি—কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সারবত্তা রয়েছে, এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু’ সকলকে সাহায্য করতে পারে না ; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় ; নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।”

নিজের প্রবন্ধের এই কথাগুলো যেন কবি হিসেবে তার নিজের জন্যই সবচেয়ে বেশী প্রযোজ্য।

তার রচিত বনলতা সেন কবিতাটি আজ আপনাদের উপহার দিচ্ছি আবৃত্তিকার লেনিন জামান-এর দরাজ কণ্ঠে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতাটির এই সুন্দর আবৃত্তিটি শোনার পর আপনাদের মতামত জানাতে কার্পণ্য করার কোন চেষ্টা থাকবে না এই আশা তো করতেই পারি। তাই না ?

www.youtube.com/watch?v=Y8J1Q9t2aiw

বনলতা সেন – জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

সাহিত্য আড্ডা-৫ (আবৃত্তিঃ নির্মলেন্দু গুনের কবিতা)

তোমার চোখ এত লাল কেন ?

প্রথম কয়েক পর্ব কয়েকটি গান আপনাদের সাথে শেয়ার করার পর মনে হল এবার কবিতার সময় । গান শোনার ক্ষেত্রে মানুষের রুচির তারতম্য অনেক বেশি । আমার প্রিয় গানের মধ্য থেকে আমি কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে শব্দনীড়ের জন্য গান নির্বাচন করতে যেয়ে নিজেই যেন সাগরে পড়ে গিয়েছিলাম। শব্দনীড়ে যেহেতু কবিতাই বেশী প্রকাশিত হয় সেহেতু কবিতা বন্ধুরা অনেক বেশী পছন্দ করবেন বলে আমার ধারনা।

কবি নির্মলেন্দু গুন, যাকে তার কাছের মানুষেরা গুন দা বা গুন্ডা বলে ডাকেন। বাংলাদেশের বর্তমান কবিদের মধ্যে নির্মলেন্দু গুন’কে আমারা জানি সময়ের সেরা কবি হিসেবে। তার অন্যান্য অনেক পরিচয়ের মধ্যে নারীপ্রেমের বিষয়টা মুখ্য । এই সময়ের সেরা ও জনপ্রিয় আবৃত্তিকারদের একজন মাহিদুল ইসলামের কণ্ঠে আমরা শুনবো তার সম্ভবত এই সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় প্রেমের কবিতা – তোমার চোখ এত লাল কেন ?

তোমার চোখ এত লাল কেন ?

www.youtube.com/watch?v=JzqQy5tDgCQ

আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক ,
শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য ভিতর থেকে দরজা খুলে দিক
কেউ আমাকে খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গি না হোক
কেউ অন্তত আমাকে জিজ্ঞেস করুরঃ
“তোমার চোখ এত লাল কেন ?”

-নির্মলেন্দু গুন

সাহিত্য আড্ডার আগের পর্ব গুলোঃ
সাহিত্য আড্ডা-১
সাহিত্য আড্ডা-২
সাহিত্য আড্ডা-৩
সাহিত্য আড্ডা-৪

সাহিত্য আড্ডা-৪ (বৃষ্টি কথন)

বৃষ্টি কথন

আজ বৃষ্টি বিলাসের দিন !!!

শ্রাবণের এমন ইলশে গুড়ি খিচুড়ি বৃষ্টির দিনে আমার মত যারা অফিস করছেন তাদের প্রতি সমবেদনা ! গান শুনতে ভীষণ ইচ্ছে করছে, কিন্তু অফিসে বসে নয়। তাহলে কোথায় ? ভাবতে ভাবতে মনে হল নদীতে ছৈ ওয়ালা নৌকায় চুপটি করে বসে বসে গান শুনতে পাড়লে ভালো লাগতো ভীষণ । আফসোস, কি আর করা ?

আপনাদেরও কি আফসোস হচ্ছে আমার মত ? কে কিভাবে বৃষ্টি উপভোগ করলেন আড্ডায় সবার সাথে শেয়ার করতে পারেন। জানাতে পারেন বৃষ্টি দিনে আপনার দুর্ভোগের কথা। অথবা বৃষ্টি দিনে আপনার পছন্দের খাবারের কথা। অথবা যে কোন কিছু !

আর বাড়তি কথা শুনতে নিশ্চয় কারো ভালো লাগছে না। তাহলে আসুন কিঞ্ছিত বিনোদিত হই বৃষ্টির গানে।

শ্রাবণী সেন- এর কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত এমনও দিনে তারে বলা যায় !

www.youtube.com/watch?v=6vYJeMqhMZ0

অসাধারণ সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও সাধারণের সাহিত্য

অসাধারণ সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও সাধারণের সাহিত্য

হুমায়ুন আহমেদ-এর একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শুরু করি ।

“পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।”

আর এই খুব কম মানুষদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি পেরেছেন। শুধু পেরেছেনই না, তিনি অনেক ভালোভাবেই পেরেছেন। কারন তিনি শুধু নিজের মধ্যকার ঘুমন্ত দৈত্যকেই জাগিয়ে তুলেননি। জাগিয়ে তুলেছেন সাহিত্য বুঝেন না এমন সাধারণ মানুষের মনে সাহিত্যের বোধ। হুমায়ূন পূর্ববর্তী যুগে বাংলা সাহিত্য ছিল উচ্চ শিক্ষিত ও বোদ্ধা শ্রেণীর মানুষদের দখলে। সাহিত্য চর্চা ছিল একই সাথে অহংকার ও বিলাসিতা করবার মত বিষয়। হুমায়ূন সাহিত্যকে তুলে দিয়েছেন স্বল্প শিক্ষিত ও সাধারণ মানুষের হাতে। এই দখল মুক্তির প্রচেষ্টা সহজ ছিল না নিশ্চয়। কিন্তু এই কঠিন কাজটাই হুমায়ূন করেছেন অত্যন্ত সহজ ভাবে। কারন তিনি ছিলেন জাদুকর। সাহিত্যের জাদুকর। তিনি যেমন সাহিত্যকে করে তুলেছেন সাধারণ মানুষের মানবীয় অনুভূতিতে পরিপূর্ণ তেমনি অতি সাধারণ মানুষকেও করে তুলেছেন সাহিত্যের রস আস্বাদনে উন্মুখ, আলোচক ও সমালোচক। মোট কথা সাহিত্যকে তিনি সাহিত্য হিসেবে নয় বরং মানুষের জীবনানুভূতি হিসেবে তুলে ধরেছেন।

আমার মতে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন অনুভূতি কেন্দ্রিক দার্শনিক। কোন দার্শনিকের প্রশংসায় হয়তো “অনুভূতি কেন্দ্রিক” এমন বিশেষণ ব্যবহার করা হয় না। তবে আমি এখানে একটু ভিন্ন ভাবে বলছি কারন দর্শন বলতে যা বুঝায় সেই মাপকাঠিতে তিনি ব্যতিক্রম। তার দর্শন, জীবন দর্শন। জীবনকে তিনি শুদ্ধতা ও নৈতিকতার আলোকে ব্যাখ্যা করেননি শুধুমাত্র। দায়িত্ব ও কর্তব্য ভাঁড়ে জর্জরিত করেননি জীবনের স্বল্প সময়কে। উন্নতির মাপকাঠিতে জীবনকে যান্ত্রিক ও নিষ্প্রাণ করে তুলেননি তার লিখনিতে। বরং জীবন যেমন, জীবন আসলে তেমন ভাবেই সুখের এই কথাই আড়ম্বর করে বুঝিয়েছেন বারংবার তার লিখনিতে। বুঝিয়েছেন জীবনকে আসলে মূল্য দিতে হয়। উপভোগ করতে হয় নিজের মত করে। সাজাতে হয় সাধ্যের মধ্যে পছন্দের উপকরন দিয়ে।

জ্যোৎস্না বিষয়ক লেখকের দুটি লেখাংশ দিয়ে এই বিষয়টাকে আমার মনে হয়েছে আপনাদের কাছে সবচেয়ে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব।

“প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই। গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে? বালিকা ভুলানো জোছনা নয়। যে জোছনায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে বলবে – ও মাগো, কি সুন্দর চাঁদ। নব দম্পতির জোছনাও নয়। যে জোছনা দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে স্ত্রীকে বলবেন – দেখো দেখো চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর। কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাতে জোছনা নয়। যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে। কবির জোছনা নয়। যে জোছনা দেখে কবি বলবেন – কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাঁদ। আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি। যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে। ঘরের ভিতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর। প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব- পূর্ণিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে। চারদিক থেকে বিবিধ কণ্ঠে ডাকবে-আয় আয় আয়।”

এখানে কবি এক গভীর জ্যোৎস্না বিলাশে মগ্ন। জ্যোৎস্নার মত এমন একটা বিমূর্ত সৌন্দর্যের বিষয়কে লেখক তার অতি প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনার মধ্য দিয়ে এমন মূর্ত করে তুলেছেন যেন একমাত্র গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নাই পারে একজন মানুষকে তার জীবনের প্রকৃত সুখের সন্ধান দিতে। যে সুখ জীবনে একবার পেলে একজন মানুষ গৃহত্যাগী হয়েও পেতে পারে ত্রিভুবনের সমগ্র সৌন্দর্য ও সুখের দেখা। তার আর জীবনে চাওয়ার বা পাওয়ার কিছুই যেন অবশিষ্ট থাকেবে না যেন। যদিও এমন হয়তো কেউ কোনদিন পায়না। তবুও সেই গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার জন্য অপেক্ষার যে অনন্ত সময় তা সত্যি সুখের নিশ্চয়ই !

অন্য আরেকটি লেখাংশে সেই অপূর্ব জোছনায় সাড়া দিতে না পাড়ার কষ্ট থেকে তিনি লিখেছেন-

“কোন কোন রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোন যোগ নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতার সর সর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে উঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কি বিপুল বিষণ্ণতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।”

এখানে লেখকের বিষণ্ণতা পাঠকের মনকে নাড়া দেয়। কিন্তু কি এক জাদুকরী শক্তিতে পাঠক তার নিজের অনুভুতিগুলিকে হারিয়ে অথবা নিজের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট গুলিকে হারিয়ে ধারন করেন জ্যোৎস্নার মত মায়াময় এক অপার্থিব সৌন্দর্যের অধরা হাতছানি এবং শূন্যতার অনুভূতি। এবারও পাঠক ভুগতে থাকেন ভিন্ন রকম এক সুভ্র সৌন্দর্যের সুখের অসুখে। এটাকে পাঠক যেভাবেই উপলদ্ধি করুক না কেন, তা প্রকৃত অর্থে সুখেরই।

(পোস্টের কলেবর বড় হয়ে যাওয়ায় এই লেখাটা এখানে অসম্পূর্ণ, আরও পর্ব হতে পারে)

হুমায়ূন আড্ডা

হুমায়ূন কিংবদন্তী লেখক। তাঁর ভক্ত যেমন অজস্র তেমনি সমালোচকও কম না। ভক্ত হোক আর সমালোচক হোক সবাই তাঁর পাঠক। না পড়লে সমালোচনা করব ক্যামনে? আজ তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী। শব্দনীড়ের পক্ষ থেকে হুমায়ূনকে অন্যভাবে স্মরণ করতে চাই। আসুন তাঁকে নিয়ে আড্ডা দিই।

১। তাঁর কোন বইটি ভাল লাগে তা লিখুন। কোন গল্প বা উপন্যাসের বিশেষ উক্তি যদি পছন্দ হয়ে থাকে সেটা উল্লেখ করুন। ভাললাগাগুলো কেন ভাল লাগে সেটাও বলতে ভুলবেন না।
২। হিমু ও মিসির আলী নিয়েও আলোচনা করি। কার কাকে বেশি ভাল লাগে?হিমু না মিসির আলী?
৩। কথা চলুক তাঁর চলচ্ছিত্র ও নাটক নিয়েও। আলোচনায় আসুক বাকের ভাই।
৪। বারবার পড়া কোন গল্প বা উপন্যাস যদি থাকে সেই নিয়েও কথা বলি।
৫। আলোচনা চলুক ব্যক্তি হুমায়ূনকে নিয়েও। তাঁর ব্যক্তি জীবন, বিভিন্ন সাক্ষাৎকার।
৬। তাঁর বইয়ের সমালোচনাও করতে পারেন। বুঝিয়ে বলুন কেন আপনি হুমায়ূনের লেখার কঠোর সমালোচক।
৭। বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেগুলো নিয়ে আলোকপাত করা যায়।
৮। কারো যদি হুমায়ূনের সাথে ব্যক্তিগত কোন স্মৃতি থাকে সেটাও জানতে চাই।
৯। সর্বশেষ হুমায়ূনের পড়া বই নিয়েও কথা বলতে পারেন। অথবা এই মুহূর্তে যদি কোন বই পড়ছেন সেটাও আলাদের জানান।
এক কথায় হুমায়ূনকে নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই। মনখুলে যে কোন কথা, যে কোন আলোচনা। তো আসুন শুরুকরি হুমায়ূনকে নিয়ে আজকের আড্ডাবাজি।

কিছু মােটিভেশনাল কথা

*👉“ আমি ব্যর্থতা কে মেনে নিতে পারি কিন্তু আমি চেষ্টা না করাকে মেনে নিতে পারিনা॥* ” –—মাইকেল জর্ডান।

*👉“ যে নিজেকে অক্ষম ভাবে, তাকে কেউ সাহায্য করতে পারে না॥* ” –—জন এন্ডারসন।

*👉“ আমি বলবনা আমি ১০০০ বার হেরেছি, আমি বলবো যে আমি হারার ১০০০ টি কারণ বের করেছি॥ ”*
—টমাস আলভা এডিসন।

*👉সফলতা সুখের চাবিকাঠি নয় বরং সুখ হল সফলতার চাবিকাঠি। আপনার কাজকে যদি আপনি মনে প্রানে ভালবাসতে পারেন অর্থাৎ যদি আপনি নিজের কাজ নিয়ে সুখী হন তবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন॥* __মাইকেল জর্ডান

*👉সংগ্রহে…………*
*👉হাফেজ মাসউদ*

*🌹Thank You🌹*

সাহিত্য আড্ডা-৩


যেতে যেতে পথে হল দেরী

সাহিত্য আড্ডা‘র প্রথম দুইটা পোষ্টে এমন সাড়া পাবো এটা আমি কখনো ভাবিনি। নাম যদিও সাহিত্য আড্ডা কিন্তু এখানে আমরা ততোটা সাহিত্য বিষয়ক গুরুগম্ভীর আলোচনা করছি না। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে সাহিত্য আড্ডা নামকরন কি ঠিক হল ? আসলে আমার মনে হয় আমাদের সম্পূর্ণ জীবনটাই সাহিত্য । জীবনের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়ই সাহিত্যের উপকরন। শব্দনীড়ে তো সবাই অনেক গুরুগম্ভীর লেখা প্রকাশ করেন । কিন্তু মন্তব্যের ঘরে দেখি আড্ডাটা ঠিক জমে উঠছে না । কবিতা পড়তে পড়তে যখন মাথা ঝিম ধরে যায় তখন এই আড্ডায় যদি আমরা একটু প্রিয় কিছু গান শুনে নেই তবে কেমন হয় ? অথবা কবিতা আবৃত্তি ? অথবা যে কোন কিছু ? যে কোন কিছু, যা আমাদের নিজস্ব সাহিত্য রচনা নয় কিন্তু আমরা পড়তে বা শুনতে ভালোবাসি ?

তবে আপনারা চাইলে আমরা এখানে মৌলিক বাংলা সাহিত্য নিয়ে গঠনমূলক, বস্তুনিষ্ঠ ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনাও করতে পারি । সাহিত্য আড্ডা নামটা ঠিক রেখে এর ক্রম অনুসারে আপনিও আপনার মত করে আড্ডার আহ্বান জানাতে পারেন । অথবা আপনার মত করে অন্য কোন শিরনামে। অন্যের আড্ডায় সাড়া দিতে পারেন মন্তব্য করে। আর যদি এর কোনটাই আপনার ভালো না লাগে তবে শুধু দেখে যান, পড়ে যান, শুনে যান । তবুও সাথে থাকুন।

আমার বিশ্বাস এক সময় আপনারও ভালো লাগবে । লাগুক না ! একটু ভালো লাগলে দোষ কি ? ক্ষতি তো নাই তাতে কোন !

আপনাদের জন্য আমার আজকের নিবেদন সন্দীপন-এর কণ্ঠে বর্ষা দিনের গান যেতে যেতে পথে হল দেরী

www.youtube.com/watch?v=99awnc0IgfQ

যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
ভুল বুঝে তুমি চলে গেছ দূরে
ক্ষমা পাব আশা ছাড়িনি
আশা ছাড়িনি
আশা ছাড়িনি -আশা ছাড়িনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো

আকাশ ভেঙে তখন
বৃষ্টি নেমেছিল
পায়ে যে পথ থেমে ছিল
থেমে ছিল -থেমে ছিল
আমি গিয়ে দেখি তুমি নেই একী
হার মেনে তবু হারিনি
হারিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো

চলে যে গেছ তুমি
আসিনি আমি দেখে
দাড়িয়ে থেকে থেকে ওগো
চলে গেছ -চলে গেছ
বুকে কাঁটা লয়ে
ব্যথা তবু সয়ে
মুখ থেকে হাসি করিনি করিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো

সুন্দর এই বাংলাদেশটা

আফগান থেকে এক কাবুলিওয়ালা এদেশে বেড়াতে এসেছিল। এক মিষ্টির দোকানদার মিষ্টি সামনে নিয়ে বসে আছে অথচ খাচ্ছে না দেখে সে নিজেই দুই হাতে মুখে পুরতে লাগলো। দোকানদার ছুটে এসে তাকে ধরে ফেললো। লোকটি কাবুলী ভাষায় বলতে লাগলো, “নিজেও খাও না আবার অন্যকেও মিষ্টি খেতে দাও না, এ কেমন মানুষ তুমি ?”
কিন্তু দোকানদার তার ভাষা বোঝে না। সে হৈ চৈ করতে লাগলো। ছেলের দল জমা হয়ে পড়লো। সবাই তাকে নিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে দিল।
পুলিশ দেখলো, লোকটি একজন বিদেশী। এদেশের ভাষা এবং হাব-ভাব সে কিছুই বোঝে না। সুতরাং এই ছোট একটি ব্যাপারে তাকে হাজতে চালান দেওয়া ঠিক হবে না। বরং লোকটিকে মাথা ন্যাড়া করে একটি গাধার পীঠে বসিয়ে সারা শহর ঘোরাতে হবে। ছেলের দল পিছনে পিছনে ঢোলক বাজিয়ে মিষ্টি চোর বলে প্রচার করতে থাকবে।
সুতরাং বিপুল আয়োজনে ছেলের দল এইরূপই করলো।
লোকটি যখন দেশে ফিরে গেল তখন সবাই আসলো তাকে দেখতে, ‘বল ভাই, বাংলাদেশ কেমন দেখলা ?”
বললো, “বাংলাদেশ খুব ভাল দেশ। সেখানে বিনা পয়সায় মিষ্টি, বিনা পয়সায় চুল কাটা, বিনা পয়সায় গাধার পীঠে ভ্রমণ, বিনা পয়সায় ছেলেদের বাহিনী আর বিনা পয়সায় ঢোলের বাজনা বাজিয়ে সম্বর্ধনা। সুন্দর এই বাংলাদেশ।

……………
হাফেজ মাসউদ

সাহিত্য আড্ডা-২

বর্ষা বন্দনা

বর্ষা আমার প্রিয় ঋতু। শুধু প্রিয় বললে বর্ষার প্রতি আমার অনুভূতি যথাযথ তীব্রতা নিয়ে প্রকাশ পায় না। বর্ষা আমার ভালোলাগা ঋতু, ভালোবাসার ঋতু। জীবনের প্রতিটা দিনের সাথে আমি বর্ষার এক গভীর সম্পর্ক খুজে পাই। প্রতিটা মুহুর্ত যেন বর্ষার একেকটা রুপ নিয়ে আমার কাছে ধরা দেয়। বর্ষা যেন মিশে আছে আমার অস্তিত্বের সাথে একাত্ম হয়ে।

আমার মনে হয় যে কোন সাহিত্য প্রেমী বা প্রকৃতি প্রেমী মানুষেরই বর্ষার সাথে রয়েছে এক সুগভীর অনুভুতির সম্পর্ক। কখনো তা এক ঘন কাল মেঘে ঢাকা থমথমে আকাশের মত এক বুক কষ্টের। কখনো তা আবার গুচ্ছ গুচ্ছ হাল্কা শ্বেত শুভ্র মেঘলা আকাশের মত শুদ্ধতার। কখনো সারাদিন গুড়ি গুড়ি করে ঝরে পড়ার মত বিষণ্নতার। কখনো অঝোর ধারায় ঝরে পড়ার মত অভিমানের। আবার কখনোবা প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাতের মত ধ্বংসের। কিম্বা শিলা বৃষ্টির মত অভিশাপের।

আমি সারা বছরই বর্ষার গান শুনি। তবে বর্ষায় বৃষ্টি নামলে যে গানগুলো আমি সবচেয়ে বেশী শুনি তার মধ্য থেকে একটি আপনাদের আজ উপহার দিচ্ছি। আপনাদের প্রিয় বর্ষার গান গুলির লিংক মন্তব্যে দিলে আমরা সবাই তা শুনতে পারবো। বর্ষা নিয়ে আপনার ভাললাগার অনুভূতিও আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে
www.youtube.com/watch?v=hi-C4kD6G9Y

আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে
মনে পড়লো তোমায়
অশ্রু ভরা দুটি চোখ
তুমি ব্যথার কাজল মেখে
লুকিয়েছিলে ঐ মুখ।।

বেদনাকে সাথী করে
পাখা মেলে দিয়েছো তুমি

কত দূরে যাবে বলো।
তোমার পথের সাথী হবো আমি।।

একাকিনী আছো বসে
পথ ভুলে গিয়েছো তুমি

কোন দূরে যাবে বলো।
তোমার চলার সাথী হবো আমি।।


শিল্পী: নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী
সুর: লাকী আখন্দ
কথা: কাওসার আহমেদ চৌধুরী

সাহিত্য আড্ডা-১

শব্দনীড় বাংলা সাহিত্য ব্লগ ! আসুন আমরা সাহিত্য নিয়ে একটু আড্ডাবাজি করি !

আমরা যদি ভাবি, শব্দনীড়ে আমরা শুধু আমাদের স্বরচিত লেখা প্রকাশ করবো এবং অন্য সবাই আমার লেখা পড়বে ও মন্তব্য করবে কিন্তু আমার অত সময় নেই অন্যের লেখা পড়ার বা মন্তব্য করার; এমন ভাবলে ব্লগ জমবে কিভাবে ? ব্লগিংকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য দরকার একে অন্যের লেখাকে মূল্যায়ন করা এবং সুন্দর পরিশীলিত মন্তব্যের মাধ্যমে পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলা । আমার মনে হয়, আমরা তখনি কোন একটি ভালো লেখার নির্জাস নিজের মধ্যে ধারন করতে পারি যখন আমরা তার উপর যথাযথ মন্তব্য করতে সমর্থ হই । আপনি কি মনে করেন ?

আড্ডার ছলে অনেক বিরক্তিকর কথা কি বলে ফেললাম ?
তাহলে শব্দনীড়ের বন্ধুদের বিনোদিত করতে আমার অনেক প্রিয় একটি গান আপনাদের সাথে শেয়ার করি ! আপনাদের ভালো লাগলে পরবর্তীতে আবারো আসবো আরও কোন প্রিয় গান নিয়ে !

আলগা করো গো খোপার বাঁধন

– কাজী নজরুল ইসলাম

www.youtube.com/watch?v=LuWCrG-1idk&list=RDLuWCrG-1idk

আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
বিনোদ বেনির জরিন ফিতায়
বিনোদ বেনির জরিন ফিতায়
আন্ধা ইশক মেরা কাস গায়ি
আন্ধা ইশক মেরা কাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি

তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায় আসিলো লোভী আমার মন
তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায় আসিলো লোভী আমার মন
বেহুঁশ হো কার গির পারি হাথো ম্যায়
বেহুঁশ হো কার গির পারি হাথো ম্যায়
বাজু বান্ধ ম্যায় বাস গায়ি
বাজু বান্ধ ম্যায় বাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি

কানেরও দুলে প্রাণ রাখিলে বিধিয়া
আঁখ ফিরা দিয়া চোরি কার নিন্দিয়া
কানেরও দুলে প্রাণ রাখিলে বিধিয়া
আঁখ ফিরা দিয়া চোরি কার নিন্দিয়া
দেহেরও দেউরীতে বেড়াতে আসিয়া .
দেহেরও দেউরীতে বেড়াতে আসিয়া
অউর নেহি ওহ ওয়াপাস গায়ি
অউর নেহি ওহ ওয়াপাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
বিনোদ বেনির জরিন ফিতায়
আন্ধা ইশক মেরা কাস গায়ি
আন্ধা ইশক মেরা কাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি

সহীহ আধুনিক রোজার সহজ তরিকা

রোজার ইতিহাস গুরুত্ব ইত্যাদি নিয়ে মওলানা সাহেবদের দিনরাত সবক শুনতে শুনতে যারা বিরক্ত হয়ে উঠেছেন অথবা বিরক্ত হওয়ার মত শোনার সময় যাদের নাই তাদের জন্য আমার সাড়া এই কিছু তরিকা আছে যাতে করে আপনি আধুনিক কায়দায় সহি রোজা রাখতে পারবেন।

সেহরির কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে উঠবেন। উঠেই ফেসবকে লগইন করুন। সেহরি বিষয়ক স্ট্যাটাস দিন। বিশেষ কোন বান্ধবী/ বান্ধব যদি থাকে তাকে জাগিয়ে দিন। জাগিয়ে দিয়ে ঘন্টা খানেক কথা বলুন। রোজা রেখে খালি পেটে দিনের বেলা কথা বলে আরাম নেই। তাই এই সময়টি কাজে লাগান। ফজরের আগে রোজা শুরু হয় না। সুতরাং এই সময় মনের দুয়ার, মুখের লাগাম সব খুলে কথা বলুন। সব থেকে ভাল হয় সারারাত না ঘুমালে। রাতের খাবার খেয়ি ফোনালাপ শুরু করুন। নতুন নতুন বান্ধবী খুঁজে বের করুন। তাদের ইফতারির দাওয়াত দিন। সেহরির দাওয়াতও দিতে পারেন। আধুনিক রোজা সংস্কৃতির বিশেষ অনুষঙ্গ সেহরি পার্টি। তাই সেহরি পার্টী আয়োজনে ভুলবেন না। ঘুমিয়ে পড়লে পার্টি মিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই রাতে ফেসবুক, সিনেমা, পার্টি এসবে ব্যস্ত থাকলে সেহরি পার্টীতে অংশগ্রহন সুনিশ্চিত। আধুনিক সহীহ রোজার তরিকায় সেহরি পার্টির স্থান অনেক উঁচুতে। সেহরিতে চিকেন ফ্রাই, লবস্টার, ম্যাগি নুডলস, হরলিক্স মিশ্রিত দুধ, বিফকারি রাখতে পারেন। সেহরি পার্টিতে সেলফি তুলতে কোন ভাবেই ভুলবেন না। পার্টির ফাঁকে ফাঁকে সেহরি পার্টির সেলফি ফেসবুকে আফডেট করুন। খাবার কতটুকু ইয়াম্মি ছিল সে স্ট্যাটাস দিতে ভুলবেন না। সিগারেটের অভ্যাস থাকলে শেষবারের মত সিগারেট খেয়ে নিন।

সেহরি পার্টি শেষে ঘুমিয়ে নিন। রোজার অজুহাতে বেশ একটু দেরিতে অফিসে যেতে পারেন। অফিস না থাকলে বারোটার আগে ঘুম থেকে উঠার দরকার নেই। বারোটায় ঘুম ভাঙলে সাথে উঠে পড়বেন না যেন, নিদেন পক্ষে একটা পর্যন্ত গড়াগড়ি দিন। উঠে গোসল সারুন। গোসল করে পাঞ্জাবি পরে মুখে রোজাদার রোজাদার ভাব নিয়ে বের হম। পকেটে একটা টুপি রাখতে ভুলবেন না। ইফতারির সময় কাজে লাগবে। বিভিন্ন মার্কেটে যান। বন্ধু বান্ধবিদের ফোন দিয়ে তাদেরকে আসতে বলুন। বিভিন্ন মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে ক্ষুধা লেগে গেলে, কোন একটা ফুডকোর্টে বসে খেয়ে নিতে পারেন। আর সহ্য করতে পারলে ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

সেহরি পার্টি না থাকলে বাসায় জেগে থাকাই উত্তম। ছোট রাত, না ঘুমিয়ে একেবারে সেহরি খেয়ে ঘুমদিন। সেহরির সময় টিভি চ্যানেল গুলো একবার ঘুরে আসতে পারেন। বিরক্ত লাগলে দরকার নাই। ঘুমানোর আগে অবশ্যই বান্ধবী/ বান্ধবীদের সাথে ফোনালাপ সেরে নিবেন। এই সময় আলাপ না হলে বান্ধবী রাগ হতে পারে না। রোজা অবস্থায় কাউকে রাগানো বুদ্ধিমানের কাজ না। যাদের একাধিক বান্ধবী আছে তারা এই রাতকে কাজে লাগান। ইফতারের পরে, মাঝরাতে, সেহরির আগে-পরে এভাবে শিডিউল করে সকলের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখুন। বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির মত সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয় এই নিয়ম মেনে চলুন। তবে আপনার বান্ধবীর তালিকায় ভারতের মত কেউ থাকলে আপনাকে বিশেষ সাবধানে থাকতে হবে। এই ঈদে কাকে কি গিফট দিবেন সেটা ভেবে রাখুন। আপনি যদি বিশেষ চালাক প্রকৃতির হোন তাহলে কোন কোন গার্ল ফ্রেন্ডের কাছ থেকে গিফট আদায় করতে পারবেন। এমনকি আপনার গার্লফ্রেন্ড অন্য বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে পাওয়া উপহার আপনার হাতে তুলে দিয়ে বলবে, এটা আমি শুধু তোমার জন্য নিজের হাতে কিনেছি (নিজের হাতে বানিয়েছিও বলে ফেলতে পারেন)। সবই নির্ভর করে আপনি তাদের কিভাবে ম্যানেজ করতে পারেন তার উপর।

আধুনিক রোজায় ফেসবুকের গুরুত্ব অপরিসীম। সেহরি পার্টি ইফতার পার্টি এসবের খবরা-খবর, সেলফি তো আছেই তাছেড়া এই মুমিন বান্দার জন্য কয়টা লাইক? আমীন না বলে যাবেন না কেউ, মুমীন বান্দারা শেয়ার করুন মার্কা প্রচুর স্ট্যাটাস, ছবি আসে। এইগুলোতে লাইক কমেন্ট শেয়ার করতে পারেন। নিজেও এসব পোস্ট দিতে পারেন। না হলে আপনি প্রকৃত রোজাদার ফেসবুকার না।
বিভিন্ন ব্যাংক, ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ইফতারিতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। চেষ্টা করুন এর প্রত্যেকটী অফার গ্রহন করতে। ইফতারি বিষয়ক স্ট্যাটাসে অবশ্যই ইফতারির দাম লিখতে ভুলবেন না। কত দামী ইফতারি খেলেন তা জাতিকে জানানোর দরকার আছে। আর যেদিন ইফতার পার্টি থাকবেনা বাসায় জম্পেশ ইফতারির ব্যাবস্থা করুন। বিভিন্ন টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে দেখে ইফতারির আইটেম তৈরি করুন। ইফতারিতে গাজরের হালুয়া, ম্যাগি নুডলস, পুডিং, স্টার হালিম/মামা হালিম, ট্যাং/রুহ আফজা থাকা বাঞ্চনীয়। টিভি’র আজান শুনে ইফতার শুরু করুন। ইফতার এশার নামাজের আগে শেষ হওয়া সমীচীন নয়। ইফতারির সময় মাথায় টুপি থাকলে ভাল দেখাবে। মেয়েরা সারাদিন বেপর্দা ঘুরাঘুরি করলেও ইফতারির সময় মাথায় কাপড় দিন।

সারাদিনে শরীরে অনেক ধকল গেছে এবারে বিশ্রাম নিন, ফেসবুকে লগইন করুন।