বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

কবিতা

শব্দটিকেট কেটে নিয়ে, বাক্স-প‌্যাঁটরা লোটা কম্বল,
ব্যাংকজমা জমিজমা কানন আঙিনা যা কিছু সম্বল
ব্যর্থ কথোকতা, প্রনান্ত সফলতা ফেলে
কবিতা ট্রেনে চেপে বসেছি হেলেদুলে

ভোঁ, কু ঝিক ঝিক, কবিতা ট্রেন চলে ভোঁ
ভোঁ, কু ঝিক ঝিক, কবিতা ট্রেন চলে ভোঁ

এই যাত্রায় নির্লিপ্ত এক যাত্রী আমি,
স্মৃতির পুকুরে সাতার কেটে তাকিয়ে দেখি-
সামনের সীটে সুন্দরী এককাহন হাসি নিয়ে
সাতকাহন বক বক যাচ্ছে করে খিলখিলিয়ে।

কুয়াশা কাটাবার প্রকৃতির খামখেয়ালীপনার
এক টুকরো রোদ্দুরের ঝিলিক যেন, হারাবার!
তারপর যোজন যোজন সময়ের পারাপার
কোথাও সেই ঝিলিক দেখি না আর!

এইসব হৃদয়ের ব্যাথাগুলি- এইসব
ঢের ব্যাথাগুলি বাক্স-প‌্যাঁটরা লুকিয়ে অনুভব
আজ আনন্দ ধারায় মেতে উঠেছি
শব্দটিকিট কেটে কবিতা ট্রেনে চেপে বসেছি-

কবিতা জীবন, কবিতা হৃদহরণ, আনন্দ সফর
কবিতা শব্দ শব্দ খেলা, ছন্দে দোলা, আবেগী ঝড়
কবিতা স্বাধীনতা, ছাদহীন ঘরে মুক্ত খোলা হাওয়া
কবিতা সুন্দরীর প্রত্যাখান কষ্ট বেদনা ভুলে যাওয়া।

ভোঁ, কু ঝিক ঝিক, কবিতা ট্রেন চলে ভোঁ
ভোঁ, কু ঝিক ঝিক, কবিতা ট্রেন চলে ভোঁ

মানুষ

কতটুকু উদাস হলে মানুষকে কবি বলা যায়
কতটুকু দেশপ্রেম হলে মানুষকে নেতা বলা যায়
কতটুকু তাত্ত্বিক মানুষকে কমিউনিস্ট বলা যায়
কতটুকু ধুতি জড়ালে মানুষকে বাঙালি বলা যায়
ফকির মালেক ভেবে কয়
কতটুকু মানুষ হলে মানুষকে মানুষ বলা যায়!

কতটুকু সম্পদ হলে মানুষকে ধনী বলা যায়
কতটুকু ক্ষমতা পেলে মানুষকে মহামান্য বলা যায়
কতটুকু দান করলে মানুষকে দান বীর বলা যায়
কতটুকু চতুর হলে মানুষকে ব্যবসায়ী বলা যায়
ফকির মালেক ভেবে কয়
কতটুকু মানুষ হলে মানুষকে মানুষ বলা যায়!

কতটুকু শিক্ষিত হলে মানুষকে পন্ডিত বলা যায়
কতটুকু ডিগ্রি নিলে মানুষকে ডক্টর বলা যায়
কতটুকু সুরেলা হলে মানুষকে গায়ক বলা যায়
কতটুকু অভিনেতা হলে মানুষকে নায়ক বলা যায়
ফকির মালেক ভেবে কয়
কতটুকু মানুষ হলে মানুষকে মানুষ বলা যায়!

কতটুকু ঈমান হলে মানুষকে পরহেজগার বলা যায়
কতটুকু শরীর ঢাকলে মানুষকে পর্দাশীন বলা যায়
কতটুকু বড় পাঞ্জাবী হলে মানুষকে সুন্নতি বলা যায়
কতটুকু ‘বালেগাল ওলা’ বললে আশেক বলা যায়
ফকির মালেক ভেবে কয়
কতটুকু মানুষ হলে মানুষকে মানুষ বলা যায়!

শাসন

স্কুলে বেত থাকবে না তা কখনও হয়। স্কুল হচ্ছে মানুষ তৈরির কারিগর। শাসন ছাড়া কেউ কখনও মানুষ হয়? বেত হাতে টহল দিতেন আমাদের প্রধান শিক্ষক মহাশয়। আমরা সবাই ভয়ে কাঁপতাম।
ভয়ে কাঁপতাম তিনি মারবেন বলে নয়, ভয়ে কাঁপতাম পড়া জিজ্ঞেস করলে পারব না তাই। ক্লাস চলাকালীন দুষ্টুমি করলে ঠিক চোখে পড়বে তাই। নিয়মিত স্কুলে আসি না তাই। মিথ্যে বাহানা ঠিক ধরে ফেলতেন তাই। পড়া বলা শুরু করলেই ঠিক বুঝতে পারতেন দায়সারা পড়া পড়ে এসেছি তাই।
যারা সত্যিকারের ছাত্রছাত্রী। পড়া করত। পড়া বুঝত। নিয়মিত পড়ত। তাদের কাছে বেতের কোন ভয় ছিল না। কিংবা বেতের জন্য আমরা অনেকেই ছাত্রছাত্রী হয়ে গিয়েছিলাম।
সুশীলবাবু গৌরবাবু অনিলবাবু সতীশবাবু মন্মথবাবু বিষ্ণুবাবু যার হাতে বেত থাক না কেন সবাই চিনতেন কে ছাত্রছাত্রী আর কে ছাত্রছাত্রী নয়। তৃতীয় নয়ন দিয়ে ঠিক চিনতেন কে কে ‘ছাত্রানাং অধ্যয়ন তপ’ হিসেবে স্কুলে আসছে আর কে আসছে না।
তুমি স্কুলে আসবে আর ওই তো একটু আধটু পড়লেই হল কিংবা না পড়লেই হল অথবা ছাড় তো পড়ে আর কি হবে এবং কত আর পড়ব পাশ করলেই হল বা ঠিক স্টেজে মেকাপ দিয়ে দেব কিংবা পড়ার জ্বালায় জীবনে আর থাকল কি এ রকম ভাবলে কিংবা মানলে চলবে না। জীবনের এই সময়টা শেখার সময় তাই স্কুলে এসে পড়তেই হবে। ‘ছাত্রানাং অধ্যয়ন তপ’ হতেই হবে। এই ব্যাপারটা আমাদের শিক্ষক মহাশয় বেত হাতেই বুঝিয়ে দিতেন।
শিক্ষক হিসেবে স্কুলের বেতের সাথে সাথে সেই ভাবনাটিও পোষণ করতেন। তাই আমাদের কাছে বেত বা শাসন ছিল মানুষ হওয়ার অবস্থান। আমরা বেতের দু চার ঘা খেলে বাড়িতে বলতেই পারতাম না। কিংবা বললে আরো দু চার ঘা খেতে হত।
একদিন দুদিন পড়া না করে গেলেই যে তুমি বেতের মার খাবে তা কিন্তু নয়, পড়া করে গেলে কিন্তু তোমার বুদ্ধিতে অত ভাল পড়া বলতে পারলে না তার জন্য যে শাস্তি পাবে তা কিন্তু নয়, পড়াশুনার সাথে সাথে যদি তুমি দুষ্টুমি কর তাহলে দুষ্টুমির জন্য তুমি শাস্তি পাবে তা কিন্তু নয়।
কোন শিক্ষা সে পারিবারিক হোক বা সামাজিক হোক কিংবা বোধ বুদ্ধির অথবা খেলাধূলার সেখানে শাসন থাকা খুব জরুরী। মনে আছে ‘দঙ্গল’ ছবির কথা। বাবা যখন মেয়েদের চুল কেটে দিচ্ছে, মেয়েদের ভোর পাঁচটার সময় ঘুম থেকে তুলছে, ছেলেদের সাথে কুস্তি করাচ্ছে তখন কিন্তু সেই বাবা জানত না তার মেয়ে দেশের হয়ে সোনার মেডেল আনবে। যদি মেয়েরা মেডেল আনতে না পারত তা হলে ঐ বাবা নিষ্ঠুর প্রমানিত হত। শুরুতে সবাই তাই বলেছিল। বাঘা যতীন যখন একবার পুকুরের ঝাঁঝিতে পায়ে আটকে গিয়েছিল তখন পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে তার বাবা বলেছিল – তোমাকে নিজেকেই বিপদ কাটিয়ে উঠে আসতে হবে। বাঘা যতীন উঠে এসেছিল।
তবেই না তাঁরা বরেণ্য।
আমাদের ক্লাসে অলক ফার্স্ট হত। কিন্তু স্যাররা তিন চার সাত আট রোল নম্বরের পার্থ নিমাই কিংবা সুরেশকে পছন্দ করত। কেন না স্যাররা জানতেন কার মধ্যে কি আছে। এবং সত্যি সত্যি পরবর্তীতে অলক কেবল ক্লার্ক। কিন্তু পার্থ নিমাই অরূপ সাধন এরা কেউ বিজ্ঞানী কেউ ডাক্তার কেউ আধিকারিক। এই উপলব্ধি স্যারেদের মধ্যে ছিল বলেই না বেত নিয়ে ক্লাসে এলেও স্যারেদের খুব মানাত।
সেইসব দিন পেরিয়ে এসে, সেই সব বেত দেখে ভয়ে ভয়ে কেঁপে ওঠা একজন শিক্ষার্থীও বলবে না যে সেদিনের সেই বেত, স্কুলের বেত, বেত হাতে ক্লাসে প্রবেশ করা স্যার ভুল ছিল।
শাস্তি নয় শাসন। শাসন থাকা খুব জরুরী। শাসন না থাকলে শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না।
আমাদের ক্লাসে বিনয় একেবারেই পড়া পারত না। অঙ্ক টুকটাক পারত কিন্তু ইংরেজীতে একেব্বারে কাঁচা। স্যার বলতেন – তোর বাড়িতে ইংরেজীর চাষ হয় যে নিজের মত ইংরেজী বলছিস?
তো সেই বিনয়কে কোন স্যার মারত না। বরং স্কুলের সব কাজে স্যারেরা বিনয়কে ডাকত। স্কুলের কোন অনুষ্ঠানে চেয়ার বেঞ্চি বয়ে দেওয়া খাওয়ার এনে দেওয়া তদারকি করা সব কাজে বিনয়। এমন কি বেত এনে দেওয়াটাও বিনয় করে দিত। সেই বিনয় এখন বড় হোলসেল বিজনেস করে। আমাদের গ্রামের বেশ বর্ধিষ্ণু নাগরিক। বকাটে উচ্ছন্নের দলে নাম লেখায় নি। স্কুল থেকে বেত উঠে গেল। বেতের সেই চোখ চলে গেল। কত ভাল স্কুলে দিয়ে টাকা পয়সা খরচ করেও ফটাফট ইংরেজী বলা বিনয়ের ছেলে মেয়ে বকাটের দলে উচ্ছন্নের দলে ভিড়ে গেল। বিনয় দুঃখ করে।

লেখকের বিড়ম্বনা

আমি কোন লেখক বা সাহিত্যিক হবার জন্য হাতে কলম ধরিনি বা এই বিজ্ঞানের যুগে যেহেতু কলম দিয়ে লেখার প্রচলন উঠেই গেছে তাই বলা যায় কম্পিউটারের কি বোর্ডে হাত দেইনি। তবে মনের গোপন কোণে যে এমন একটা সাধ সুপ্ত নেই সে কথাও জোর দিয়ে বলতে চাই না। নিতান্তই চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সময় কাটাবার জন্য বিশেষ করে কারো মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার চেষ্টা বা দলিল, নোট জাল করা বা কাউকে গুম করে মুক্তিপণ আদায় করা বা ডাহা মিথ্যে সাক্ষী দেয়া কিংবা কারো মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবার চিন্তা কিংবা কি করে মানুষের খাবারের সাথে ইট পাথরের গুড়ি কিংবা কাপড়ে দেয়ার রঙ কিংবা নর্দমার পানি বা নিদেনপক্ষে মানুষের খাবার অযোগ্য পদার্থ মেশানোর চিন্তা গুলি মাথায় এসে ভর না করে আমাকে রাতারাতি কোন বিখ্যাত আধুনিক মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী না করে ফেলতে পারে সেই চেষ্টা করতে চাই।

ফরমালিন এবং কার্বাইড দিয়ে পচা খাবার তাজা রাখা এবং ফলমূল পাকিয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরার মহান চেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্যেই এই কাজে হাত দিয়েছি। আটা ময়দা দিয়ে এন্টিবায়োটিক বানানো, খড়ি মাটি দিয়ে স্যালাইন বানাবার প্রক্রিয়া শেখার আগ্রহ যাতে আমার মাথায় চেপে বসতে না পারে সেই অপ চেষ্টা করার জন্যেই এই কাজে রত থাকার চেষ্টা করি। এগুলি নাকি আধুনিকতা। তা ভাই আমি কিন্তু এত আধুনিক হতে চাই না সে কালের মানুষ সেকেলে থাকতে পারলেই ভাল। আমার যুগে আমার চাচাত ভাইকে দেখেছি ঝিটকার হাটে পাঁচ টাকায় একটা আধ মনি খাসি বিক্রি করে আট আনার রসগোল্লা কিনে এনেছিল তখন একশ টাকায় গরু পাওয়া যেত। আমি নিজেও আট আনা কেজি গরুর মাংস কিনেছি। যাক সেসব কথা, ওগুলি বললেতো বিশ্বাস করবেনই না উলটা আমাকে পা কিংবা মাথা গোল মনে করে সন্দেহের চোখে তাকাবেন তাই কি দরকার সেকালের কাহিনী গাইবার? নিজেই লিখি নিজেই পড়ি এসব কিছু করি আর সময় গুলা বেশ তর তর করে চলে যায়। ব্যাস আর কি?

আগে আমরা কলম দিয়েই লিখতাম কিন্তু মেয়েদের দেখতাম ওরা কি সুন্দর করে কি বোর্ড চেপে চেপে নানা কিছু লিখে ফেলছে। তাই দেখে দেখে ভীষণ লোভ হচ্ছিল ইশ আমিও যদি এমনি করে লিখতে পারতাম! ওদিকে লজ্জায় কাওকে বলতেও পারছিলাম না আবার শেখার ইচ্ছেটাকেও দমিয়ে রাখতে পারছিলাম না তাই একদিন নিজের ছোট মেয়েটাকেই বললাম আমাকে একটু এই কি বোর্ড চালানো শিখিয়ে দিতে পার মা? মেয়ে তার মনের মত ছাত্র পেয়ে মহা খুশি।

এসো বাবা আমি তিন দিনেই তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি, তুমি সবই পারবে। তোমাকে প্রথমে কম্পিউটার অন অফ করা থেকে শুরু করব পরে ওয়ার্ডে কাজ করা শেখাব তারপরে ইন্টারনেট ব্যবহার করা, নানা কিছু সার্চ করে ইন্টারনেট থেকে দেখে নেয়া, ই মেইল করা এগুলি আস্তে আস্তে সব শিখিয়ে দেব।
বাহ! মনের আনন্দ চেপে রাখা কষ্ট হলেও কিছু করার ছিল না তাই চুপচাপই রইলাম। মেয়ে তার কাজ শুরু করে দিল। অনেক কিছুই শেখাল আমিও শিখলাম। ফল যা হল তা একেবারে মন্দ বলার উপায় নেই।
কি বোর্ড চেপে চেপে, ছড়া, পদ্য, গল্প এমনকি উপন্যাস পর্যন্ত লিখতে পারছি। আমার শিক্ষা গুরুও খুশি আমিও মহা খুশি। ক্রমে ক্রমে আমার নিজের ওয়েব সাইট, ব্লগ বানানো শিখে ফেললাম।

এই যে এতক্ষণ ভরে সাতকাহন গীত গাইলাম সে যে কেন গাইলাম তা কি কিছু বুঝতে পেরেছেন? এটা হল মাত্র ভূমিকা এবার শোনেন আসল ঘটনা। একটা কথা কানে কানে বলে যাই, দেখবেন কাওকে বলবেন না, আমি কিন্তু আমার প্রিয়তমা পত্নী দেবীকে মোটেই ভয় পাই না। (সত্য না মিথ্যা জানি না)।

সেদিন এমনি করে কি বোর্ডের বোতাম চেপে চেপে একটা গল্প লিখছি আর প্রিয়তমা এসে বললেন
এই, দোকান থেকে নুডলস নিয়ে এসো বিকেলে রান্না করব। লেখা ছেড়ে উঠে গিয়ে পাশের দোকান থেকে এনে দিলাম। ফিরে আবার বসেছি তখন
এই, যাওতো দেখ রান্না ঘরের জানালাটা খোলা আছে কিনা দেখে এসো খোলা থাকলে বন্ধ করে দিও মাছ ভেজে রেখেছি বিড়াল ঢুকলে সব খেয়ে ফেলবে যাও এক্ষণই যাও।
আমি গল্পের নায়িকাকে নৌকা ডুবি থেকে বাচাতে গিয়ে জানালা বন্ধ করার কথা ভুলে গেলাম আর অমনি একটু পরেই আবার তাড়া
কি হল জানালা বন্ধ করে এসেছ?
না ভুলে গেছিলাম
যাও এক্ষণই যাও। সারাদিন বসে বসে কি কর? তোমাকে দিয়ে কোন কাজ হয় না। তোমার কম্পিউটার বন্ধ করবে নাকি আমাকে উঠতে হবে?
ভয়ে আমার প্রাণ পাখি প্রায় খাঁচা ছেড়ে যাবার উপক্রম হল কিন্তু অনেক সাহস করে বললাম
আহা রাগ করছ কেন অন্তত কিছু অন্ন ধ্বংস তো হচ্ছে
হ্যাঁ শুধু তাই হচ্ছে , যাও কথা না বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করে এসো
অগত্যা উঠে গেলাম। জানালা বন্ধ করে দেখি পানির ফিল্টার থেকে পানি লিক করে ডাইনিং স্পেসের মেঝে ভেসে যাচ্ছে। গিন্নিকে বলার সাহস না পেয়ে (বললেও সে আমাকেই মুছতে বলবে) ঘর মোছার ন্যাকরা আর বালতি কোথায় জিজ্ঞেস করলাম আর অমনি তিনি রেগে এক ঝারি দিয়ে বললেন ঘুমটা মাত্র লেগে আসছিল দিলেতো ভেঙ্গে! কি হয়েছে?
কাঁচুমাচু করে ওগুলির ঠিকানা জানতে চাইলাম
এগুলি দিয়ে এখন কি করবে?
কাহিনী শোনালাম।

যাও দেখ রান্না ঘরের সিংকের নিচে ন্যাকরা আর বাথ রুমে কাল বালতি আছে, দেখবে লাল বালতি কিন্তু নিও না।
আমার মনে কিন্তু তখন গল্পের নায়ক নায়িকা এখন কি করবে কোথায় যাবে তাই নিয়ে একটু ভাবনা কাজ করছে আর আমি ভুলে গিয়ে বাথরুম থেকে বিপদ জনক রঙ লাল মনে করে লাল বালতি আর ন্যাকরা নিয়ে ফ্লোর মুছে ওখানেই রেখে চলে এসে আবার মাত্রই কি বোর্ডের সামনে বসেছি আর গিন্নি তখন বাথরুমে যাবার জন্য উঠেছেন। তিনি রুম থেকে বের হয়ে লাল বালতিতে ঘর মোছার ন্যাকড়া দেখে তেলে বেগুনে ঝাঁজ করে উঠলেন
করেছ কি এটা, এই কাপড় ধোয়ার বালতি এখানে কেন?
নিজে ভুল করেছি এখন স্বীকার না করে উপায় নেই। সাহস করে অকপটে (সত্যের নাকি জয় হয়) বললাম ওটায় ফ্লোর মুছে রেখেছি!
সারা দিন কি কর? একটু চোখেও দেখ না যে কাল বালতিতে ঘর মুছে? কর কি? (ঘর মোছার বালতির দিকেও আমাকে নজর দারি করতে হবে কখনও কি ভেবেছিলাম?)
হ্যাঁ তাইতো ভুল হয়ে গেছে। আচ্ছা আবার হলে এমন হবে না এবার একটু থাম। ওদিকে নায়কের যাবার কথা ছিল পার্কে কিন্তু এই হাঙ্গামায় তাকে নিয়ে গেলাম নদীর পাড়ে। যা হবার তাই হল। কাহিনীর বিভ্রাট। আবার সেখান থেকে নতুন করে লিখতে হল।

সন্ধ্যার পর লিখতে বসেছি আর তিনি টিভি দেখছেন। আমি বললাম কি দেখ আমি তোমার এক মাত্র সোয়ামী, আমি একটু আধটু লিখালিখি করে মনের সুখ পাবার চেষ্টা করি, আমি যখন লিখতে বসি তখন দয়া করে আমাকে কিছু বল না। লিখতে লিখতে গল্পের ক্লাইমেক্সে এসে পড়েছি একটু পরেই শেষ হবে এমন সময় খোঁচা দিয়ে বলল
কি হয়েছে চশমাটা চাইছি না?
আচ্ছা চশমাটা এগিয়ে দিলাম। আবার লেখা শুরু করেছি লেখার গভীরে চলে গেছি আবার এক ধমক
কি হল সাউন্ড কমিয়ে দিতে বলছি শুনছ না।
সাউন্ড কমিয়ে দিয়ে এবার মধুর সুরে বললাম ওগো প্রিয়তমা, তুমি হলে আমার ঘরের সু গৃহিণী আমার প্রিয়তমা রমণী, জানত সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে
হুম, বুঝলাম কিন্তু এত মধুর কথা কিসের জন্যে?
দেখ তোমার একমাত্র সোয়ামী একজন লেখক, কত কি লিখছে তুমিতো আর এগুলি পড়ে দেখ না কাজেই বুঝতে পার না কত কি অমূল্য লিখা লিখছি, কাজেই বলছিলাম কি লেখার সময় অন্তত আমাকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকলে ভাল বৈ মন্দ হবে না। জান না, মাইকেল মধুসূদন দত্ত যখন লিখতেন তখন তার স্ত্রী ডরোথি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমার মাইকেলের কাগজ বা কলমের কালি ফুরিয়ে যায় তাহলে কে এনে দিবে? ও যে সারা রাত ধরে সাদা কাগজে লিখে যাবে! ভয়ে বসত না যদি ঘুমিয়ে পড়ে!
হুমায়ুন আহমেদের কুসুম কুমারি শাওন বলেছিল “একজন লেখক লিখছেন, তার থেকে পবিত্র দৃশ্য আর কিছু হতে পারে না।”

তাই বলছিলাম কি একজন লেখককে একটু সাহায্য কর! বলা যায় না দেখবে আমি হয়ত একদিন হুমায়ুন আহমেদ হয়ে যাব তখন কি হবে? ভেবে দেখেছো? ভাবতো একবার, সবাই যখন আমার প্রশংসা করবে, অটোগ্রাফ নেয়ার জন্যে বাড়িতে লাইন পড়ে যাবে, টিভিতে আমার ইন্টারভিউ নিবে তখন গর্বে অহংকারে তোমার পা মাটিতেই পড়তে চাইবে না!
তোমাকে কত কি কিনে দিব তার কি কোন হিসেব আছে? হুমায়ুন আহমেদ শাওনকে সেন্ট মার্টিনে বাড়ি করে দিয়েছিল আর আমি তোমাকে কাশমীরে বাড়ি করে দিব, তুমি মনের সুখে পায়ের উপরে পা রেখে সামনের ঝুর ঝুর করে ঝরা তুষার দেখবে আর কফি খাবে!
হ্যাঁ বুঝেছি, এখন যাওতো আধা কেজি কাঁচামরিচ নিয়ে এসো।
হাত থেকে চিনামাটির পেয়ালা পাকা মেঝেতে পড়ে যেমন খান খান হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায় আমার লেখক হবার সাধ বাসনাও তেমনি করে ভেঙ্গে গেলো।
লেখকের এমন বিড়ম্বনা সইবার কোন উপায় আছে কি না তার কোন সন্ধান দিতে পারেন কেও?
এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় বলতে পারেন? অন্তত সবাই মিলে একটু চেষ্টা করেই দেখুন না!

কি যে করি?

কয়দিন যাবত শরীলডা কেমন কেমন লাগতেছে মাথায় ঝিম ধইরা থাকে, খালি খাই খাই ভাব কিন্তু দাতে ধার নাই তাই কিছু চাবাইতে পারিনা, চোখে সব সময় সইরষা ফুল দেহি, হাত পাও নিতে চাই একদিকে চইলা যায় আর এক দিকে। কি মসিবত!

এক দোস্ত কইল কবিরাজের কাছে যাও। ভাবলাম এইডা বুঝি সৎপরামর্শ তাই গেলাম। বিশেষজ্ঞ কবিরাজ হাত পাও, মাথা, গলা, নাক, চোখ, পেট, বুক সব টিপা টুপা দেইখা কইল রক্ত পরীক্ষা করতে হইবে।

নেন কত রক্ত লাগবো
বেশি না এক লিটার হইলেই হইবো
আচ্ছা নেন আমার শরীলে টনকে টন রক্ত আছে , নেন যা লাগে
রক্ত মক্ত পরীক্ষা কইরা কইলো আপনের সারা শরীলের রক্ত দূষিত হইয়া গেছে।
তাইলে এখন কি করুম?
রক্ত বদলাইতে হইবো, এ ছাড়া আর কোন উপায় নাই
ভাল রক্ত কই পামু?
আরে মিয়া আপনে নিজেইতো একজন দুষিত মানুষ, আপনের বাইচা থাকার দরকারটা কী? আপনে আবার ভাল রক্ত দিয়া কি করবেন? যান, ভাগেন মরেন গিয়া!
কন দেহি এইডা একজন বিশেষজ্ঞ কইবরাজের মত কথা হইলো?

তেলা পাখি

জানেন তো আমি বিজ্ঞানী হইতে চাই বলে সব সময় নানা রকম ভাবনা আমার মাথায় দৌড়াদৌড়ি করে। সেদিন বিকেল বেলা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটু একটু চুমুক দিচ্ছি আর ভাবছি, মানুষে তেলাপোকা বলে কেন? তাকে তেলাপোকা বলে অসম্মান কেন করে? তাহাকে তেলা পাখী বলে সম্মান করা উচিত নয় কি?
সেতো পক্ষীকুলের সদস্য, তাহার পাখা আছে, সে ইচ্ছা করলেই এক জায়গা থেকে উড়ে আর এক জায়গায় যেতে পারে তবে যখন এরোসল স্প্রে করা হয় তখন একটু বেশীই উড়তে পারে।
লোকে বলে পিপীলিকার পাখা উঠে মরিবার তরে। তাই বলে কি তেলা পাখিরও তাই নাকি? তেলা পাখি সারা বিশ্বে ভ্রমণ করতে পারে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জাতি, ইচ্ছা করলেই বিশ্বে যে কোন ব্যাংকে লক্ষ কোটি হিরা মনি মানিক স্বর্ণ ইত্যাদি তার প্রয়োজন মত সঞ্চয় করতে পারে। তাহার দেহ আহা কতই না সুন্দর দেখলেই ওয়াক আসিতে চায়বলে একতা সুন্দর ছবিও দিতে পারছি না। কি জানি লোকে আবার লাঠি নিয়ে আমাকে তাড়া করে যদি!
আমার মনে হয় এখন থেকে তাকে তেলা পাখি বলা উচিত। এটা একটি ভাবনার বিষয় নয় কি?

লেখাপড়া

কয়দিন যাবত ভাবতেছি শব্দ নীড়ে বা ফেস বুকে কিছু লেখুম না আবার ভাবি তাইলে যদি লেখাপড়া ভুইলা যাই!
কি এক দোটানায় পরলাম! এই কূলে না ওই কূলে যাই? কার কাছেই বা বুদ্ধি চাই তাও বুঝতেছি না। আইজ কাইল কেউ কেওরে সুবুদ্ধি দেয় না খালি কুবুদ্ধি দেওয়ার পায়তারা করে। আপনেগো মইদ্ধে কেউ আছেন যিনি আমার একটু খানি সুবুদ্ধি দেবেন?

আকাশচারী

করোনার ডরে ঘরবন্দী থাকতে থাকতে মাথার ঘিলুতে ভূমিকম্পের মতন থরথরি ঝাকুনি শুরু হইলো বইলা সেদিন আকাশে গেলাম একটু পায়চারি করার জন্যে। যাইতেছি যাইতেছি হঠাত মাইকের শব্দ পাইলাম। এদিক সেদিক খোজাখুঁজি কইরা ওই দূরে দেখলাম বিশাল জমায়েত। আরে এইখানে আবার এরা আইলো কইত্তিকা? আস্তে আস্তে ডরে ডরে কাছে গেলাম।
তাগো বাউন্ডারির কাছে গেছি আর ওমনেই এক উর্দি পরা পালোয়ান জিজ্ঞাসা করিল ” এই তোমার পাশ কই?”
আমারতো পাশ নাই!
ভাগ ব্যাটা!
কেন যামু?
হট্টগোল শুইনা দেখি ২/৪ জন এইদিকে আগাইয়া আসতেছে। কেমন জানি চেনাজানা মনে হয়! হ, তাই! পপলার আফা, সাগরানি আফা, রানী দিদি, নবরুল ভাই, মোরকাদুল সাহেব, সাহিদার ভাই, বিপ্রতীপ কাহা এই সব গুনি জনের মিটিং।
উর্দিওয়ালা একজনরে কইলো দে খেদাইয়া।
কওয়ার সাথে আমার কলার ধইরা ঘারে ধাক্কা দিয়া কইল “যা ব্যাটা ভাগ” এইহানে গুনি সমাবেশ হইতেছে দেহনা? হালায় কাংগালি আইছে।
তয় ভাগ্য ভাল বেশী জোরে ধাক্কা দেয় নাই বইলা বাড়ির ছাদেই পরছিলাম , একটু জোরে দিলে কই পরতাম আবার রিকশা ভাড়া দিতে হইতো।

সুখের দাম ১০০০ কোটি টাকা

কয়েকদিন আগে সুইস ব্যাংক সহ কয়টা বিদেশি ব্যাংকে গিয়া কইলাম ১ কেজি সুখ দেন ভাই। বেটারা কইলো আমাগো কাছে যত সুখ ছিল সবতো আপনেগো দেশের গরীব মানুষেরা নিয়া গেছে।
তাইলে কি করা যায় ভাই, আমার অন্তত ১কেজি সুখের খুব বেশি দরকার, রাইতে ঘুম হয়না দাতে ধার নাই কিছু খাইতে পারিনা, কি করি?
আপনেরে আমাগো লাস্ট স্টক থেকে কিছু দিতে পারি।
কি দর ভাই?
দাম বেশি না, মাত্র ১০০০ কোটি টাকা কেজি।
থাক ভাই এত সস্তার সুখ আমার লাগবোনা।
হায়রে সুখ! তোর জন্যে কত খুন, ব্যাভিচার, অনাচার, অবিচার!

মাছ চাই না বড়শী চাই

একটা জনপ্রিয় চাইনিজ ছোট গল্প। ছেলে মাছ খেতে চাইলো। সরাসরি মাছ দিলে, সে একবারই মাছ খাবে। সাময়িকভাবে খুশি হবে। বাবা তাকে সেই সুযোগ দিলেন না। মাছ না দিয়ে ধরিয়ে দিলেন একটা বড়শি। মাছ ধরা শিখিয়ে দিলেন। ছেলের প্রথম কয়েকটা দিন কষ্টে কাটলো।
কিন্তু মাছ ধরার কৌশলটা জানার কারণে সে সারা জীবন মাছ খেতে পারলো।
আপনি কী চাইবেন? মাছ? না কী মাছ ধরার কৌশল?
১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল জাপান। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি কোনো অবকাঠামোই তো অবশিষ্ট ছিল না। ছিল না তেমন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা ধার নিলো। সেই টাকা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি করলো। শিনকানসেন (পৃথিবীর দ্রুততম ট্রেন) টানলো, বড় বড় শহরগুলোকে হাইওয়ে দিয়ে কানেক্ট করলো। শত শত ফ্লাইওভার তৈরি হলো, পাহাড়ের ভেতরে সমুদ্রের নিচে টানেল তৈরি হলো। মজার ব্যাপারটি হলো- বিদেশ থেকে কোনো শ্রমিক আমদানি করলো না।

কোম্পানিগুলোর ম্যানেজার বাইরে থেকে আনলো না। টয়োটা, হোন্ডা, তোসিবা, সনি, হিটাচি এমন শত শত কোম্পানি কাজ করে দিলো নিজেদের লোক দিয়ে। সিইও থেকে শুরু করে ম্যানেজার, শ্রমিক সবই জাপানি। নিজেদের কর্মদক্ষতা বাড়লো, অভিজ্ঞতা বাড়লো। এই কোম্পানিগুলো কোথাও টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে বা কোনো কর্মচারী চাকরিতে আবেদন করলে কেউ বলতে পারবে না- যাহ তোদের অভিজ্ঞতা নেই, আগে অভিজ্ঞতা নিয়ে আয়, তারপর চাকরি।
জিডিপি হু হু করে বাড়তে লাগলো। ধারের টাকা ফেরত দিয়ে ২০ বছরের মাথায় আমেরিকাকে, বিশ্বব্যাংকে উল্টো ঋণী করে ফেললো। শুরু থেকেই জাপান বাইরে থেকে কোনো প্রডাক্ট কেনেনি। টেকনোলজি আমদানি করেছে।
ধরুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকলাপ ধারণ করার জন্য ক্যামেরা লাগবে। ওনারা তিনজন নয় ছয়জন লোক পাঠাবেন। ক্যামেরা যাচাই বাছাই করার জন্য নয়। ক্যামেরা কিভাবে বানাতে হয় সেই টেকনোলজি শিখে মগজে ভরে আনার জন্য। যেন দেশে এসে শুধু প্রধানমন্ত্রীর জন্যই নয়, সাধারণ জনগণ ও এফোর্ড করতে পারে এমন ক্যামেরা বানাতে পারেন। নিজ দেশে কাজে লাগলে অন্য দেশেও কাজে লাগবে। রপ্তানি করো, আরো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করো। জিডিপি বাড়াও।
মাছ চাইলেই মাছ নয়, মাছ ধরার কৌশলটা শিখিয়ে দাও।

২. মালয়েশিয়ার মাহাতির মুহম্মদ জাপানে পড়াশোনা করেছেন। ক্যাপাসিটি বিল্ড করার জাপানিদের এই কৌশলটি শিখে গেলেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে স্ট্রাটিজিক্যালি দলে দলে মালয় গোষ্ঠীকে বিদেশে পাঠালেন। পড়াশোনার জন্য। স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য। আমেরিকা, ইউরোপ আর জাপান। বিদেশ থেকে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই সেই বিদ্যা কাজে লাগানোর মতো জায়গায় সেট করে দিলেন। প্রোডাক্টিভিটি বাড়লো, আয় বাড়লো। ম্যানেজার শ্রেণির লোক তৈরি হলো। বিদেশ থেকে যা আমদানি করলো তা হলো শ্রমিক শ্রেণির লোক। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি হলো। নিজের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ালেন। এখন আর মালয় ছাত্রদের তেমন বিদেশে যেতে হচ্ছে না। বরং বাইরে থেকে মালয়েশিয়াতে বিদেশি ছাত্র আসা শুরু করেছে। চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে না।
জাপানি কোম্পানিগুলোকে ইনভেস্ট করার উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করে দিলেন। জাপানিরা ইনভেস্ট করলেন। গাড়ি কোম্পানি, হোম ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানি। মাহাতির এর দল স্ট্রাটিজিটা এমনভাবে করলেন যাতে টেকনোলজিটা ট্রান্সফার হয়। স্কিল ডেভেলপমেন্ট হয়। ৫০ বছরে জাপান যা টেকনোলজি ডেভেলপ করেছে তা যেন পাঁচ বছরে ট্রান্সফার হয়। তার ফলাফল দেখেন। ’৮৫-র দিকে মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ডের প্রোটন সাগা (মিতসুবিশি জয়েন্ট ভেঞ্চার) গাড়ি বাজারে এলো।

আর আমরা আমাদের মন্ত্রী, এমপিদের জন্য বিনা ট্যাক্সে কিভাবে গাড়ি আমদানি করতে পারি সেই পলিসি বানিয়ে দিলাম। অথচ আমাদের প্রগতি, র‌্যাংগস বা সদ্য ওঠা ওয়ালটন দিয়ে গাড়ির ১০% জিনিস ও তৈরি করে শুরুটা করলে কেমন হতো? ইতিমধ্যে মেইড ইন বাংলাদেশ একটা ব্র্যান্ড বেরিয়ে আসতো না? কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতো না? টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট হতো না? সেই শুরুটা আজো সম্ভব। বেটার লেইট দ্যান নেভার।
ক্যামেরা থেকে শুরু করে হোম-ইলেক্ট্রনিক্সের এমন কোনো জাপানি প্রোডাক্ট নেই যাতে মেইড ইন মালয়েশিয়া লেখা নেই। একবার ম্যানচেস্টার থেকে জাপানি ফ্লাইটে করে জাপান ফিরছি। মুসলিম হালাল ফুড অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। দেখি বাক্সে হালাল একটা সিল দেয়া। লেখা Certified by MHCTA (Malaysian Halal Consultation and Training Agency)। কত জায়গায় এদের বিচরণ।

৩. ২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশের একজন নামকরা অর্থনীতিবিদ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। জেমস ওয়াট নামের যে বৈজ্ঞানিক স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন ইন্সট্রুমেন্ট মেকার ছিলেন। গ্লাসগো শহরটা ঘুরিয়ে দেখালেন। শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ওয়াটার সাপ্লাই, পার্ক, টাউন হল ইত্যাদি। গ্লাসগো সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনটা তৈরি হয়েছে ১৮৭৯ সালে। অন্যান্য অবকাঠামোগুলোও একই সময়ের তৈরি। বৃটিশ সরকার আমাদের দেশগুলো থেকে ট্যাক্স কালেক্ট করেছেন আর ব্যয় করেছেন জনস্বার্থে। অর্থনীতিবিদ বললেন, আর আমাদের অবস্থা দেখেন- শাহজাহান সাহেব আমাদের অবকাঠামোতে মনোযোগ না দিয়ে বানালেন তাজমহল, নিজের জন্য। জনগণের জন্য নয়। শায়েস্তা খাঁ টাকায় আট মণ চাল খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। যারা কিনলো তাদের উপকার হলো, কিন্তু যে চাল তৈরি করলো সেই কৃষকের বারোটা বাজলো। আট মণ চাল মানে ১৪ মণ ধান। ১৪ মণ ধান বিক্রি করে মাত্র এক টাকা আয় হতো। গরিব কৃষক গরিবই রয়ে গেল।

১৯৯৬ সালের কথা l ভারতে আইটি সেক্টরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বেড়েই চলছে। ভারতের সরকার বড় তিনটি কোম্পানির প্রধানদের ডাকলেন। ইনফোসিস, টাটা আর আজিম প্রেমজির উইপ্রোকে। ডেকে বললেন, দেশের উন্নতির জন্য আপনাদের কন্ট্রিবিউশন অনেক। সরকারের কাছে কী আপনাদের কিছু চাওয়ার আছে? তিন কোম্পানিই অবাক হলেন। বললেন, আমাদের একমাস সময় দেন। আমরা একটা লিস্ট দেব। ওনারা এক সপ্তাহ পরেই একটা উইশ লিস্ট দিলেন। তিন কোম্পানির তিন দাবি- (ক) Stay away from us (খ) Stay away from us (গ) Stay away from us।
জাপানের জাইকা আমাদের অনেক সাহায্য করেন। আমরা খুশি।

এই খুশিটাকে স্বল্পমেয়াদী না করে দীর্ঘমেয়াদী করা চাই। শুনে থাকবেন বছর দুই আগে জাপানি সরকারের সঙ্গে আমাদের ৬০ বিলিয়ন ইয়েন এর একটা চুক্তি সই হয়েছে। বলেন তো দেখি এই টাকা কী সাহায্য? না কী ধার? ধার নিচ্ছে কে ফেরত দিচ্ছে কে? আমরা যদি ধারই নিয়ে থাকি, তাহলে এই টাকাটা কন্ট্রোল করছে কে? প্ল্যান করছে কে, ইমপ্লিমেন্ট করছে কে? কত টাকার প্রোডাক্ট কিনছি? কত টাকার টেকনোলজি কিনছি? কতটাকার স্কিল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে? টাকাটা ফেরত দিচ্ছি কবে?

জাপান আমাদের একটা বন্ধু দেশ। প্রোডাক্ট না চেয়ে টেকনোলজি চাইলে ওনারা ‘না’ করবেন না। আমরা মাছ চাচ্ছি না কি মাছ ধরার টেকনোলজি চাচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।

লেখা ও ছবিঃ সংগ্রহ করা।

আমার জীবনে লেখা প্রথম গান,

মিষ্টিমণি ও আমার মিষ্টিমণি
তোর হৃদয়ে পেলাম খুজে, ভালবাসার খনি(২)
প্রথম দেখায় তোরে আমি, ভালবেসেছি
তোর চোখেরি চাহনিতে মন দিয়েছি(১)

মিষ্টিমণি ও আমার মিষ্টিমণি
সবার থেকে তোরে আমি, আপন বলে জানি(২)

তোর মুখেরি হাসির মাঝে, সুখ খুজেছি
এই হৃদয়ে তোর জন্য, জমিন রেখেছি(২)
তোরে নিয়ে স্বপ্ন দেখি, বাধি ভালবাসার ঘর
সেই ঘরেতে থাকবো দুজন, সারাজনম ভর(১)

মিষ্টিমণি ও আমার মিষ্টিমণি
সবার থেকে তোরে আমি, আপন বলে জানি(২)

এই হৃদয়ের ভালবাসা, দিলাম তোরে উজাড় করে
রাখিস তারে যতন করে, ভালবাসার গোপন ঘরে(২)
দুটি মনের স্বপ্ন যদি, একীভূত হয়
বিধাতাও জানি তারে, সত্যি করে দেয়(১)

মিষ্টিমণি ও আমার মিষ্টিমণি
সবার থেকে তোমায় আমি আপন বলে জানি।।

তেঁতুল গাছ

কোনো নিশানা নেই
তবু
গাঁয়ের গোরস্থানের পাশে নিরবে
একবেলা দাঁড়িয়ে থেকে
ফেরার পথে
বর্ষীয়ান তেঁতুল গাছটার তলে এসে দাঁড়ালেন
পূব দিকের বড় ডালটা মরে গেছে
এখান থেকেই সেই কবে
রাস্তাটা উত্তর-দক্ষিণে দুই ভাগ হয়ে গেছে
গাছটা কি জানে তার কারণ
‘গাছ, তোকে জিজ্ঞেস করা বারণ?’

ভণিতা না করেই

ভণিতা না করে যা বলব সত্য বলব বলে গোপলা মানে আমি, খুব রেগে মেগে জ্বলে পুড়ে জ্বলে উঠেও কিছু করতে পারি না। কারণ ও চুপচাপ ঘরের কাজ নিজের আত্মভোলা মনে করতে লাগল। আমি যত বলি, এটা কি একটা সংসার কেউ কারো কথা শোনে না। যত সব অনিয়মে ঘর বাঁধতে গেলে সংসার কিন্তু ভেসে যাবে। ও হাসল। বলল – চা দেব। পেট গরম হয়েছে।
সমস্যায় পড়লে বিকৃত মুখ করে বসে থাকি। বলব নাকি বলব না। ভাবতে ভাবতে বলে ফেলি। ও সব শুনে টুনে এত সহজ সরল এবং প্রাঞ্জল সমাধান করে দেয় যা এক কথায় বললে বলতে হয় এক্সসেলেন্ট। যা শুনে আমি বুঝলাম ভালোবাসা কারে কয়।
ও রান্না করতে কিছুতেই পছন্দ করে না। কিন্তু যখন সামনে পরিবার এসে পড়ে। বলে, নিজের ছেলে, নিজের স্বামী, নিজের মা, নিজের বাবা তখন তারা কি খাবে সকালে কি খাবে বিকালে কি খাবে ইত্যাদি ভেবে ভেবে নিজের হাতে রোজ রান্না করে। আমি কিছু সাহায্য করি। অবে তা নামমাত্র। তখন কোন কষ্ট কোন রাগ কোন অভিমান থাকে না। বরং রান্নার মধ্যে মিষ্টতা ঝরে পড়ে।
সন্তান মানুষ করার ব্যাপারে ওর সমস্ত দায় দেখে আমি অবাক হই। কেন না একটানা পেছনে লেগে পড়াশুনা কিভাবে ছেলেকে করাতে হয়। কিভাবে পড়াশুনা করিয়ে নিতে হয় তা আমি বার বার শিখি। যা আমার পক্ষে কখনই সম্ভব হত না। তবু তার মাঝে সন্তানের প্রতি মাতৃত্বের বিন্দুমাত্র ভালোবাসা কম হয় না।
এর পর আসি কিছু না না। রেগে গেলে চুপ করে থাকা যে মানুষের এক বৃহৎ গুণ এবং তার ফলে ফল সন্তোষজনকভাবে নিজের দিকে এসে পড়ে তা আমার অর্ধাঙ্গিনীর কাছ থেকে আমি শিখেছি। ফলে ও নিজে রাগলেও যেমন পরিস্থিতি অনুকূল হয় তেমনি আমি রাগলেও তাও অনুকূল হয়। কিন্তু রাগ ষোলআনা থাকে।
আমি বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে তবু ইত্যবসরে বলে ফেলাই ভাল যে বিয়ের পরে প্রেমই আসল প্রেম। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমার ও। সংসারে পা দিয়ে তারপর একসাথে পায়ে পায়ে চলার নাম প্রেম।
ও, আর একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি পড়াশুনায় কিন্তু বি সিরিয়াস। নিজের এবং অন্যের। অফিসে যখন যায় তখন ঘর পরিপাটি করে নিরাপদের দরজা জানলা খোলা রেখে তবে যায়। আর অফিসে কারো আঙুল তোলার পর্যন্ত সুযোগ দেয় না। আসলে যে পারে সে সব পারে। বিন্দাস পরিপাটি চুল বাঁধতে পারে আর ঘরে বাইরে সামলাতেও পারে। এমনি কি দ্রৌপদীর মত রাঁধতে।
রমণীর গুণ আমি আমার মাকে দেখেছি এবং পত্নী রূপে তেমনি পেয়েছি।
এ পর্যন্ত ও ও করেই শুরু এবং শেষ করলাম। কেন না শুধু লেখা হোক বা সাহিত্য। ঘরের কথা যেমন বাইরে বলতে নেই তেমনি বাইরের লোকের কথায় আমিও সাহিত্য করতে রাজি নই। তাই যা বলব তা বলার জন্য বললাম। এ আমি নয় আর ও ও নয়। ঠিক আছে? হয়তো বা সবাই ঠিক নেই শুধু আমি ঠিক আছি।

শোকাবহ আগষ্ট……………..

শোকাবহ আগষ্ট……….

মৃত্যুতেই সব শেষ হয়ে যায় না
চিত্ত যদি হয় অফুরান
আকাশ বাতাস সবই তো তোমার অবদান
হে জাতির পিতা তুমি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তুমিহীন এই বাংলা আজ ভুতুড়ে শ্মশান,
গভীর খাঁদে আটকে গেছে স্বদেশের ঢাকা
কোথাও কোন উদাস বিকেল নেই,
স্নিগ্ধ ভোর নেই
রাত্রির সৌন্দর্য বিলীন,
বৃষ্টিহীন প্রান্তর দাউ-দাউ পুড়ছে তোমার বাংলার সবুজ বৃক্ষরাজি,
তুমিহীন পিতা সর্বত্র-ই ধ্বংসের ঘনঘটা
পিতা, তুমি ছাড়া জাতি আজ
কাণ্ডারীছিন্ন জাহাজের মতো দিশেহারা।
আজ রাজাকার আর স্বৈরাচার সব মিলে একাকার,
স্লোগানের নামে ভুরিভোজের আয়োজন
শোকের আয়োজনে ঘটা করে শোক তো দেখিনা
উৎসব , দেখি উৎসব !
নষ্ট সমাজের নগ্নতার কদার্য্যে,
আজ জর্জরিত ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত কঠিন নগ্ন অভিশাপে,
তুমিহীন এই বাংলা আজ ভুতুড়ে শ্মশান,
গভীর খাদে আটকে গেছে স্বদেশের ঢাকা।
আগস্ট মাস বাঙালি জাতি গভীর শোকের মাস,
নির্মমতার এক কালো অধ্যায়।
ঘৃণা ও ধিক্কার জানাই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকারীদের,
হে জাতির পিতা —
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো ?
আমি সর্বক্ষণ দেখতে পাই তুমি শুয়ে আছো
বাংলার বিশাল মানচিত্র জুড়ে,
মৃত্যুতেই সব শেষ হয়ে যায় না
চিত্ত যদি হয় অফুরান
আকাশ বাতাস সবই তো তোমার অবদান
হে জাতির পিতা তুমি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান…………

— ফারজানা শারমিন
১৪ – ০৮ – ২০১৯ ইং