বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

ব্লগ মডারেটরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

আমি না নিজের, না অন্যের পোস্টে মন্তব্য করতে পারছি।
যখনই মন্তব্য করতে যাই স্ক্রিনে এই লেখাটা ভেসে ওঠে।
আমি এর কারণ জানতে চাচ্ছি।

সাহিত্যে মৌলিকত্ব // রুকশানা হক

সাহিত্যে মৌলিকত্ব বিষয়টি সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের মান বিবেচনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্য সাধনা করতে হয় গবেষণাধর্মী মন নিয়ে। সেখানে একজন বড় লেখকের লেখাকে অনুকরণ নয় বরং তার বাইরে এসে আত্মপ্রকাশ করতে হয়, সাহিত্যে নতুনত্ব আনতে হয়। আর নতুন ধারা উদ্ভাবন একজন সাহিত্যিকের মৌলিকত্ব নিশ্চিত করে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথাকথিত কিছু সাহিত্যিকের নির্লজ্জ অনুকরণপ্রিয়তা খুবই দৃষ্টিকটু। এখানে এর চর্চা হয়ে থাকে নির্ভয়ে। কারণ এ মাধ্যমে যাতায়াতকারীদের অধিকাংশই সাহিত্যবিমুখ বলে বড় লেখকদের লেখা সম্বন্ধে একেবারেই অনভিজ্ঞ। তাই অনুকরণকারীকে সৎ পরামর্শ দেবার লোকের বড় অভাব। কেউ যদিও বা বুঝতে পারে সেও চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যায়। এটা আমাদের চরম দীনতা।

সাহিত্য, সংস্কৃতির মৌলিকত্ব হচ্ছে বিশ্বজুড়ে ঐ সাহিত্য কতটুকু নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। সব দেশের সাহিত‌্যিক তাই তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তথ্য প্রবাহের অবাধ প্রেক্ষাপটে অনুকরণপ্রিয়তার কারণে এই স্বকীয়তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কবি সাহিত‌্যিকদের লেখায় নতুনত্ব, অভিনবত্ব সৃষ্টি করা অসম্ভব রকম চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সত্য। তাই বলে আরেকজনের লেখাকে দু’চার শব্দ পাল্টে দিয়ে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া? এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে? যার লেখার ক্ষমতা রয়েছে তাকে কেনো এমন দীনতা পেয়ে বসে আমার বোধগম্য হয়না।

অনেকেই বলে থাকেন এডগার এ্যালেন পোর “টু হেলেনের” কথা, যে কবিতা জীবনানন্দকে “বনলতা সেন” লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এখানে জীবনানন্দ স্বকীয়তা বিসর্জন দেননি। তিনি ভারতীয় নারী চরিত্রের সকল আয়োজন ঘটিয়েছিলেন তাঁর বনলতায়। অতএব কবির কাছে টু হেলেন ছিল প্রেরণা, অনুকরণ নয়।

বাংলাদেশের বড় লেখকদের কিছু বিখ্যাত কবিতা ও গল্প রয়েছে যেগুলি তাঁদের যত্নে গড়া এক একটি মহীরুহের মতো। এসব কবিতাকে যখন সাহিত্যিক (?) নামধারীগণ শব্দ রদবদল করে কবিতা বা গল্পের আকার দিয়ে ফেলেন তখন করুণা করা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা। কবি সাহিত্যিকের তো আপন মনের কিছু ভাবনা থাকেই, তাকে কেনো অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় আমার বোধে আসেনা।

আসুন আমাদের সাহিত্যকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করে তুৃলি নিজেদের স্বকীয়তার মাধ্যমে। অন্যের ভাবনাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া লজ্জাজনক। এভাবে নিজেকেই অসম্মান করা হয়।

স্বপ্নের তাজমহল…

স্বপনের তাজমহল…………….

ওই সাদা ও কালোর চিরন্তন সত্য আজও রইলো অজানা
চারদিকে অন্ধকার আলো ছায়ার খেলা চলে সারা রাত,
হাসনাহেনা কুঞ্জে বেজে ওঠে অলৌকিক সুরভি তরঙ্গ
আর উন্মুক্ত আকশের বুক হতে ঝরে বিন্দু বিন্দু হিমকণা,
নিশিপুষ্পের গন্ধ ছড়িয়ে যায় চারদিকে,
না তুমি পার করেছ কোনো সীমান্ত রেখা না আমি ও গিয়েছি ডিঙিয়ে কোনো নৈসর্গিক কল্পনা,
শুধু মুহুর্ত গুলো মধ্যে ছিল খুশির দীর্ঘ অভিলাষের তৃপ্তি,
কিন্তু বিশ্বাস করো মনের খুব গভীরে তুমি আছো মিশে
শিকড় জালের মত অদৃশ্য কিন্তু বাস্তবিক রূপে,
কেন তুমি ডাক দিয়ে যাও অজানা কোনো এক সাগরমুখী নদীর তীর হতে,
আর আমি যথারীতি হয়ে উঠি অস্থির যেন তীরে বাঁধা নৌকা,
খুলে দিতে চাই সমস্ত শৃঙ্খল অদৃশ্য তোমার প্রেমের জলোচ্ছ্বাসে,
দীর্ঘস্থায়ী কিছুই নয় জানা সত্তেও হৃদয় প্রতি মুহুর্তে গড়ে যায় স্বপনের তাজমহল,
এখানেই হয়তো জীবনের সার্থকতা খুঁজে হৃদয়,
রোদ ছায়ার মধ্যখানে লুকিয়ে রয় তোমার আমার হারানো হাসির ঝিলিক,
সেটা প্রেম হোক কিংবা স্বপ্ন !
আশার কিরণ যেন কখনো না যায় মুছে………….

— ফারজানা শারমিন
২৪ – ১০ – ২০১৯ ইং

অগোছালো শোক

সেদিন সকালটা বেশ আলসে ছিলো। দেরী করে উঠে বাসি মুখেই ব্লগে আসি, কমেন্টের রিপ্লাইগুলো দেই। মোবাইলটা রাতে কোথায় ফেলে ঘুমিয়েছি মনে নেই। নতুন প্রজেক্ট নিয়ে এলোমেলো আরকি। বাথরুম চাপলে মোবাইল খুজতে গিয়ে দেখি অনেক গুলো ম্যাসেজ, কল। ফ্রেশ হয়েই জানতে পারলাম বাংলাদেশ সময় দুপুর দুটোয় মা মারা গেছেন। কিছুক্ষন স্তব্ধ, নিথর হয়ে বসেছিলাম। দিনটা স্পস্ট মনে আছে, জুলাইয়ের ২৬ তারিখ; তাপমাত্রা ২৮ হলেও উত্তর পুর্ব দিকে মৃদুমন্দ হাওয়ায় পরক্ষনেই শরীর জুড়িয়ে যায়, আকাশটা ছিলো নীল ক্যানভাস। জানালা বেয়ে হুড়মুড় করে বাতাস ঢুকে উড়িয়ে নেবার তোড়জোড়।

ডায়ালাইসিস নেবার পর মাসল ক্রাম্প সহ নানা রকম যন্ত্রনায় মা কাতরাতেন। একবার এমন হলো তার প্রেসার নেমে গেলো ৪০/৮০ যেখানে একজন মানুষের স্বাভাবিক প্রেসার থাকে ৮০/১২০। সবাই ভেবেছিলো বাঁচবে না। সেবার ঠিকই উতরে গেলেন হাসপাতালে। কিন্তু সেদিন ব্যাথা উঠতেই বাবাকে বলে নিজেই নীচে নামলেন, গাড়ীতে উঠলেন। হাসপাতালে গিয়ে যন্ত্রনা নিয়েই নার্সকে সব বললেন। নার্স ব্যাথানাশক ওষুধ সহ স্যালাইন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। কে জানতো এটাই তার শেষ ঘুম! শেষ ডায়ালাইসিস করাবার আগের দিন ঘন্টাখানেক কথা বললাম। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, হাসিনা-খালেদা নিয়ে তর্ক, আমার বিয়ের জন্য কেমন পাত্রী হওয়া উচিত এসব নিয়েই চললো কিছুক্ষন। আব্বার দাড়ি নিয়ে হাসাহাসি করলাম। বাবা পাশে বসে শুনছিলেন।

বোনের জামাই তার মৃত্যুসংবাদ ম্যাসেজ করেছিলাম। বাবা বোন কারো সাথেই ফোনে কথা হলো না, কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। লিসবনে ফোন দিয়ে টিকেটের খোঁজ নিয়ে জানলাম ১ সপ্তাহের মধ্যে ইকোনমি ক্লাসে কোনো টিকেট নেই, সব বিজনেস ক্লাস খালি। চাইলে যেতে পারি। স্টকহোমে ফোন দিতেই টিকেট পেয়ে গেলাম, বেশ সস্তাতেই। শর্ত একটা পরের দিন দুপুরের ফ্লাইট ধরতে হলে রাতেই স্টকহোমে যেতে হবে, এবং সেটা করতে হলে আমাকে সন্ধ্যার আগে লিসবন এয়ারপোর্টে পৌছাতে হবে। তাও অনেক ঝামেলা, ট্রানজিট হবে দুটো জায়গায়: জার্মানী ও তুর্কি।৩০ ঘন্টার জার্নি।

অনেক শখ ছিলো দেশে গিয়ে মা কে নিয়ে ভারত ঘুরে আসবো। সেভাবেই সব প্লান ছিলো। মা এর অপারেশনটা হলে রামপাল, রূপপুর গিয়ে ওখানকার পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখে আসবো। তার সাথে দিনাজপুরের যে অববাহিকায় ইউরোনিয়াম পাওয়া গিয়েছিলো, খনিজ মন্ত্রনালয়ের অফিসেও একটু ঘুরে আসবো ডিটেইল কিছু তথ্যের জন্য। কিন্তু এভাবে যে যেতে হবে বুঝতে পারিনি। যখন বাসায় পৌছালাম তখন ফরিদপুর, মুন্সিগন্জ, রংপুর, নারায়ন গন্জ থেকে আগত আত্মীয় স্বজন ফিরে যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে আরেকবার কান্নাকাটির রোল শুরু হলো। তখন ছিলো আছরের সময়। কাকা বললেন ইমামতি করতে। ইসলামী তরিকা অনুযায়ী আমার ফরজ গোসল দরকার, নতুবা অজু হবে না। ফরজ গোসলও যে শেষ কবে করেছি খেয়াল নেই। মন থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে অনেক আগেই কিন্তূ এই পরিস্থিতিতে বিনা অজুতেই ইমামতি করতে হলো। মা এর কবর জিয়ারত বেশ সহী ভাবেই করলাম। কাকা ভেবেছিলেন আমি সব ভুলে গেছি হয়তো। কিন্তু আমার তেলাওয়াত শুনে বেশ অবাক হলেন। বললেন তার ছেলে হাফেজী পাশ করেছে কিছুদিন আগে। মৌলানাতে ভর্তি হয়েছে। পরীক্ষা সামনে বলে ফরিদপুর চলে গেছে। যাবার আগে মা এর জন্য কোরান খতম দিয়েছে। তার হাতে গড়া মাদ্রাসাটা ঘুরে দেখার আমন্ত্রন জানালো। যদিও তাকে বলেছিলাম দেশে আসলে একটা কম্পিউটার ল্যাব দেবো ওদের, কিন্তু সেটা নিয়ে আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলো না।

আম্মা মারা যাবার আগে কিছু কাজ দিয়ে গেছেন। প্রতি সন্ধ্যায় “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বি ই্যানি ছগীরা” পড়তে হবে। বিয়ে করতে হবে, পছন্দ হোক বা না হোক, সংসারী এ বেলায় হতেই হবে।আমাকে দেশে ফিরতে বারন করেছেন আর আমি যেনো কোনো অপরাধবোধে না ভুগি।

ইসলাম নিয়ে লেখালেখির কারনে বাসায় নানা রকম লোকজন আসতো, বাইরে ভীড় করতো। তিনি অসুস্থ থাকা সত্বেও জঙ্গিদের নির্যাতন বেশ চরমেই ছিলো ধরা যায়। একবার বাসায় এক মহিলা এসে মাকে সরাসরি বলেন আমি যেনো লেখালেখি বন্ধ করি নতুবা তিনি পুলিশ কেস করবেন। তার পরের দিন ডায়ালাইসিস করাবার ডেট ছিলো। স্বভাবতই সেদিনটা ছিলো কস্টের। আম্মা তাকে সরাসরি বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আব্বাকে থানায় পাঠান। আব্বা থানায় গিয়ে ঐ মহিলার ব্যাপারে জিডি করতে চাইলে দারুস সালাম থানার ওসি তাকে শান্ত করেন। বললেন নেক্সট টাইম এমন করলে শুধু ফোন করলেই চলবে। সাধারন ডায়েরী করে চলে আসেন।

আব্বা যখন এ কথাগুলো বলছিলেন, বুকের ভেতর বড্ড শূন্যতা কাজ করছিলো। আম্মাকে বাড়ীর কাছেই কবর দেয়া হয়েছে। আব্বা আর এখান থেকে যাবেন না। বোনকে বললাম বোঝাতে, সে শুনলো না।

মামা তাবলীগ করেন প্রায় ১ যুগ ধরে। তিনি বললেন,”তুমি কি সত্যি তার জন্য মন থেকে দোয়া করবা না? তার আত্মা শান্তি পেতো।”

তার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলাম। তার সাথে আমি অনেক কিছুই শেয়ার করি,”মামা, আমাদের আত্মার মধ্যে কি এমন গুন আছে যে মৃত্যুর পর তারা এমন উড়ে উড়ে বেড়াবে? আমাকে একটা কারন বলেন!”

সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আমি বলতে থাকলাম,”পর্তুগীজ দার্শনিক ইউরি ডি কস্তা ক্যাথলিক পরিবারে জন্মালেও দর্শনের সংস্পর্শে এসে তিনিও এমন প্রশ্ন করলেন। আত্মা এমন কি জিনিস, যেটা আমাদের মৃত্যু হলে দেহ ছেড়ে উড়ে যাবে। সে একসময় রাব্বিনিক ইহুদী মতাদর্শে বিশ্বাস করা শুরু করেন যারা মনে করতেন মানুষের আত্মা বলে কিছু নেই। মানুষ মরে গেলে তার সত্বারও মৃত্যু হয় এবং সে তখন বেচে থাকে তার কর্মে, গুনে, মানুষের স্মৃতিতে। যদিও পরে তিনি সেই ইহুদী ধর্মও ত্যাগ করেন দর্শনের খাতিরে।”

মামা মাথার টুপি খুলে হাত বুলালেন,”কিন্তু এত দিনের বিশ্বাস, এক দুইজনের কথায় তো ভুল হতে পারে না।” আমি হাসলাম,”জরূরী নয় যে সবাই এক পথে চললে আপনাকেও সে পথে চলতে হবে। মা মারা গেছেন, সত্যি বলতে সে হারিয়ে গেছে। তার কাছে অনেক কিছু বলার ছিলো, সে অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলেন। সেগুলো আর বলা হবে না, শোনা হবে না। যেটা শিক্ষা হলো, যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি আমার কর্তব্যটুকু পরিপূর্নভাবে পালন করা, তাদের সেবা করা। ভালোবাসা মন থেকে। আমার শরীরটা মায়েরই দেহের একটা অংশ। ৯ মাস তার দেহের একটা অংশ ছিলাম, তারপর পৃথিবীর আলো দেখেছি, এত বড় হয়েছি। মা এর একটা অংশ আমার মধ্যেই এখনো বেঁচে আছে। যদি কোনো অনৈতিক বা অযৌক্তিক কাজ করি, তাহলে মাকেই অসম্মান করা হবে। এই যে এত মানুষের ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, সবাইকেই অপমান করা হবে।”

মামা আর কিছু বললেন না। আমি বাসা থেকে বের হলাম। তিলোত্তমা ঢাকা শহর কিভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সেটা অনুধাবন করার চেস্টা করলাম। অট্টালিকার অরন্যে আমরা নিজেদেরকে শেকল বন্দী করে মৃত্যুকেই ডেকে আনছি এটা সবাই জানে, বুঝে, তবুও মানুষ সে কাজগুলো করেই চলেছে। দেশের মানুষ এমন গোয়াড় রকমের আত্মঘাতী কেন ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।

অদ্ভুত দমবন্ধ পরিবেশ অস হ্য লাগতে শুরু করলো। মোবাইলটা বের করে নেক্সট ফ্লাইট ঘাটতে লাগলাম….।

বানানো ঘটনাঃ চন্ডিদাসত্রয়

-হারিকেনের সলতে কমাইয়া দিলি ক্যান?
রাশেদ কিছুটা রাগান্বিত স্বরে মাজহারকে বললো।
-নদির পাড় থেইক্যা যারা দেখবে তাদের কাছে এইটাই ভালো লাগবে; তাই কমাইয়া দিলাম।
-মানে?
-ঐ দেখ, মশালের মতো কিছু একটা জ্বালাইয়া মানুষ জন যাইতাছে। ওরা হয়ত অনেক দূর পথ এইভাবে আলো জ্বালাইয়া যাবে। হাতের ঐ মশালটা নিভবার আগেই পথের আশপাশ থেইকা পাটের খড়ির মতো কিছু জোগাড় কইরা ওরা আরেকটা মশাল বানাবে। কাছে গেলে বুঝতি, ওরা পথের দিকে একমনে তাকাইয়া তাকাইয়া যাইতাছে। ওদের কেউ যদি এদিকে একবার তাকায় তাইলে কী হবে জানিস?
-কি?
-ওরা সবাই দেখবে, মাঝ নদিতে একটা নৌকা হারিকেনের অল্প আলোয় জাইগা আছে। তখন ওরা ক্ষণিক থামবে এবং ভাববে, “জেগে থাকাই সবচে বেশী জরুরি”।
-কেমনে বুঝলি?
-আমি জানি। যারা রাতের পথিক তারা সাধারণত দার্শনিক হয়। ওরাও তাই।
-আর?
-আর নদির কাছে এলে সকল পুরুষ প্রেমিক হয়! আমি কুড়ি রাত জাইগা জাইগা সিদ্ধান্তে পৌঁছাইছি যে, চন্ডিদাসের কোনই দোষ ছিলনা।

হঠাৎ শিয়ালের ডাকে মাজহার ওর কথা থামালো। পরপর আরও কয়েকটা শিয়াল ডেকে ওঠলো। প্রথম ডাকটার ক্যাসকেইড ইফেক্টের মতো অন্য ডাকগুলি যেনো।

-এখন কী মাঝরাত?
-হুম। গাও গেরামে মাঝরাতের ঘণ্টি ওই হুক্কা-হুয়া ডাক।
মাজহার বিজ্ঞের মত করে রাশেদের প্রশ্নের জবাব দিল।
-কিন্তু আমরা তো সবেমাত্র একটা মাছ ধরছি ! ছোট্ট একটা ইছা মাছ। আমাদের মধ্যরাতের নদি-ডিনারের কী হবে?
রাশেদ গলায়, চোখে-মুখে বেশ হতাশা!

-ঐ যে আলো মিটমিট করতাছে ওটা জেলে পাড়া। তোরা যাবি?
জাহানগীর প্রস্তাব করলো। সে নৌকার অন্য গলুইয়ে চুপচাপ বড়শির ছিপ ধরে বসে ছিল।
-ক্যান যামু সেইটা আগে ক;
রাশেদ জানতে চাইলো।
-ঐ পাড়ায় জাবু নামে একজন জেলে আছে। আমার বাবার আমলের লোক। তার ভারী সুন্দর একজন মেয়ে আছে।
-তাকে তোর পছন্দ?
-না। তারে আমি একবারই দেখছি। মাধুরী দীক্ষিতের চেয়েও সুন্দরী। ওখানে গেলে আমরা মাছ পাইতে পারি।

কারো সম্মতির অপেক্ষা না করে মাজহার জোরসে বৈঠা ধরলো। পাড়াটাতে যেনো তাকে যেতেই হবে। জাহানগীর আর রাশেদও জলে পা নামায়ে দিলো বৈঠার বিকল্প হিসেবে।

হেঁইয়ো হেঁইয়ো আওয়াজ তুলে ওরা জেলে পাড়ার দিকে যাচ্ছে। এনাটমির ডিসেকসন হল পালিয়ে মধ্যরাতের ঝিনাই নদিতে তখন তিন যুবক; জাবু কন্যার তিন চন্ডিদাস !

ভালোবাসার অঙ্গীকার………….

আকাশ জুড়ে জোছনার উৎসব
শান্ত চাঁদ, নারকেল গাছের ফাঁকে ফাঁকে তাঁরাদের মেলা
এই জ্যোৎসনায় সমুদ্রের হাওয়া কি যে মিষ্টি !
আমার শাড়ীর আঁচল সাগরের বেলায় বাতাসে উড়ছিল,
তুমি আর আমি সাগরের বালিয়াড়িতে হাঁটছিলাম।
তুমি আমার হাতটা ধরলে,
বললে চিরদিন আমায় এমন করে ভালোবাসবে তো ?
এই সমুদ্র এই আকাশ বাতাস চাঁদ কে সাক্ষী রেখে চিৎকার করে বললাম আমাদের ভালোবাসা চিরদিনের ভীষণ ভলোবাসি তোমায়,
চিরদিন তোমায় ভালোবেসে যাবো এই আমার তীব্র অঙ্গীকার,
মনে হলো তুমি আমি ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিলাম
ততক্ষণে তুমি আমাকে তোমার বাহুর আলিঙ্গনে বন্ধি করলে,
খুব কাছে একেবারে নি:শ্বাসের ও কাছাকাছি
চুম্বনে চুম্বনে প্রণয়সিক্ত হই দুজন দুজনে,
বুকের ধমনি শিরা উপশিরা হৃদয় পর্যন্ত ছুঁয়ে দাও তুমি,
কামনার শিহরণ জাগে প্রতিক্ষণে
জড়িয়ে নাও ওগো মায়ার বাঁধনে,
সবটুকু সুখ তোমায় দিয়ে হারিয়ে যেতে চাই তোমার মাঝে,
ভালোবেসে আমায় রূপান্তরিত করো সদ্য ফোঁটা আগুনের গোলাপে,
যেন তুমি নি:শ্বাসে ছুঁয়ে দিলেই ফুটবে কবিতা,
কখনো বা রূপান্তরিত করো ভোরের শিশির ভেজা শিউলি ফুলের স্নিগ্ধতা,
কখনো হৃদয়ে ঘটাও বজ্রপাত ঘর্ষণ বৃষ্টি ভীষণ উথাল পাথাল ঢেউ,
এ কেমন জলস্রোতের মায়ার লহর
আহ্ —
নিশিথে ভালোবেসে তুমি করাও জোছনায় স্নান,
তোমার প্রেমের অমিয় সুধা পান করে পৌঁছে গেছি সাগরের মোহনায়,
আমার অস্তিত্ব জুড়ে কেবল শুধুই তুমি……………

— ফারজানা শারমিন
১৭ – ১০ – ২০১৯ ইং

শ্রী শ্রী লক্ষ্মীদেবীর পাঁচালি পাঠ সংগ্রহকর্তা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শ্রী শ্রী লক্ষ্মীদেবীর পাঁচালি পাঠ
সংগ্রহকর্তা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর আবাহন

এস মা লক্ষ্মী, কমল বরণী, কমলালতিকা দেবী কমলিনী-
কমল আসনে, বিরাজ কমলা, কমলময়ী ফসলবাসিনী।।
কমল বসন, কমল ভূষণ, কমনীয় কান্তি অতি বিমোহন।
কোমল করে, শোভিছে কমল, ধান্যরূপা, মাতঃ জগৎপালিনী।।
কমল কিরিটি মণি মনোহরে, কমল সিঁদুরে শোভে দেখি শিরে।
কোমল কন্ঠে কমল হারে, কোমল বদন দেখি যে সুন্দরে।।
কমল চরণে কমল নূপুর, কমল অলক্ত মরি কি সুন্দর।
দীন মধুসূদনের সন্তাপ হর তুমি নারায়ণী শান্তিপ্রদায়িনী।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর বরণ

তুমি মাগো লক্ষ্মীদেবী কমল বরণী।
কমললতিকা কৃপা কর নারায়ণী।।
সাজায়ে রেখেছি মাগো ধান্য-গুয়া-পান।
আসিয়া মাগো কর ঘটেতে অধিষ্ঠান।।
ঘরেতে ধূপ ধূনা আর ঘৃতবাতি।
হৃদয় কমলে ওমা করহ বসতি।।
পদ্মাসনে পদ্মদল রাখি থরে থরে।
শঙ্খ বাদ্যে বরণ করি তোমা ছরে।।
সবে করি লক্ষ্মীপূজা অতি সযতনে।
আশিস করহ মাতঃ আমা সব জনে।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর বারমাসি পাঁচালী

বছরে বৈশাখ মাস প্রথম যে হয়।
পূজা নিতে এস গো মা আমার আলয়ে।।
জৈষ্ঠ্য মাসে ষষ্ঠী পূজা হয় ঘরে ঘরে।
কৃপা করি এস ওমা পূজা যে বা করে।।
আষাঢ়ে আসিতে মাগো নাহি কর দেরী।
পূজা হেতু রাখি মোরা ধান্য-দূর্বা ধরি।।
শ্রাবণের ধারা দেখ চারিধারে পড়ে।
পূজিবারে শ্রীচরণ ভেবেছি অন্তরে।।
ভাদরের ভরা নদী কূল বয়ে যায়।
কৃপা করে এস গো মা যত শীঘ্র হয়।।
আশ্বিনে অম্বিকা সাথে পূজা আয়োজন।
কোজাগরী রাতে পুনঃ করিব পূজন।।
কার্তিকে কেতকী ফুল চারিধারে ফোটে।
বসো এসে মাগো মোর পাতা এ ঘটে।।
অঘ্রাণে আমন ধান্যে মাঠ গেছে ভরে।
লক্ষ্মীপূজা করি মোরা অতি যত্ন করে।।
পৌষ পার্বণে মা গো যে মনের সাধেতে।
প্রতি ঘরে লক্ষ্মী পূজি নবান্ন দানেতে।।
মাঘমাসে মহালক্ষ্মী মহলে রহিবে।
নতুন ধান্য দিয়া পূজা করি মোরা সবে।।
ফাল্গুনে ফাগের খেলা চারিধারে হয়।
এস গো মা বিষ্ণুজায়া পূজিব তোমায়।।
চৈত্রেতে চাতকসম চাহি তব পানে।
এস ওমা পদ্মালয়া অধিনী ভবনে।।
লক্ষ্মীদেবী বারমাসি হৈল সমাপন।
দীন ভক্তজন দুঃখ কর নিবারণ।।
কাতরে ডাকিছে যত ভক্ত সন্তান।
ভক্তজন মাতা হয়ে করহ কল্যাণ।

লক্ষ্মীদেবীর ধ্যান মন্ত্র

ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।।
গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষিতাম্।
রৌক্‌নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মী স্তোত্রম্

ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে।
যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা।।
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া।
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পদ সৃষ্টি শ্রীপদ্মধারিণী।।
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত।
স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারারদিভিংসহ।।
(তিন বার পাঠ করতে হবে)

পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর প্রণাম মন্ত্র

ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তু তে।।

শ্রী শ্রী লক্ষ্মীদেবীর পাঁচালি গ্রন্থ থেকে পাঁচালি পাঠ

দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল আকাশ । ধীরে ধীরে বইতেছে মলয় বাতাস ।। বৈকুন্ঠেতে একাসনে লক্ষ্মী নারায়ন । করিতেছে কত কথা সুখে আলাপন ।। সৃষ্টিতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব কত কথা হয় । শুনিয়া পুলকিত হয় দেবীর হৃদয় ।। অকস্মাৎ দেবর্ষি নারায়ন স্বরে । আসিলেন ভক্তি চিত্তে বৈকুন্ঠ নগরে ।। প্রনাম করি দেবর্ষি বলেন বচন । মর্ত্যে দুর্ভিক্ষ মাগো কি ভীষন ।। ঋষি বলে মা তুমি চঞ্চলা মন । সর্বদা ঘোরো ভবন হতে ভবন ।। তাই মর্ত্যবাসী কষ্ট কত পায় । দেখি তাহা কেমনে মম প্রানে সয় ।। অন্নাভাবে লোকে কত কষ্ট ভোগে । মরিতেছে অনাহারে কৃশকায় রোগে ।। ধর্মাধর্ম লোকে সবে ত্যাগ করি দেয় । স্ত্রী কন্যা বিক্রি করে ক্ষুধার জ্বালায় ।। দুর্ভিক্ষে হইলো শেষ মরে জীবগন । দয়া করে মাগো তুমি করো নিবারন ।। এই দুর্দশা দেখি প্রানে নাহি সয় । করো নিবারন মাগো হইয়া সদয় ।। নারদের বাক্য শুনি কহেন হরিপ্রিয়া । বিশ্বমাতা আমি দেবী বিষ্ণুজায়া ।। যে যেমন করে সে তেমন পায় । সে দোষে কর্মফল, করে হায় হায় ।। মহামায়ার স্বরূপে নারী সত্যবচন । মর্ত্যবাসী না মানে এই কথন ।। সদাচার কুল শীল দিয়া বিসর্জন । ঘরের লক্ষ্মীকে করে সদা বর্জন ।। এমন মনুষ্যজাতি মহাপাপ করে । কর্ম দোষে লক্ষ্মী ত্যাজে তাহারে ।। নারীর পরম গতি স্বামী ভিন্ন কেবা । ভুলেও না করে নারী পতি পদসেবা ।। যথায় স্বেচ্ছায় ঘুরিয়া বেড়ায় । গুরুজনে নানা কটুবাক্য শোনায় ।। সর্বদা হিংসা করে না মানে আচার । হিংসাতে তার মজে সংসার ।। ছড়া নাহি দেয়, প্রভাতকালে । লক্ষ্মী সে স্থান ছাড়িয়া চলে ।। অতিথি যদি উপস্থিত হয় দ্বারে । দূর দূর করি তারায় তাহাড়ে ।। যেবা গুরু, ব্রাহ্মণ দেখি ভক্তি নাহি করে। মম নিবাস কভু নহে সেই ঘরে ।। এঁয়োতির চিহ্ন সিঁদুর শাখা না দেয় । বাসী কাপড়ে যথা তথা বেড়ায় ।। স্নান নিত্য নাহি করে যে মনুষ্য গণ । ত্যাজিয়া তাহারে, করি অন্যত্র গমন ।। তিথি ভেদে যেবা নিষিদ্ধ দ্রব্য খায় । হই না কভু তার ওপর সহায় ।। যে মনুষ্য ভক্তিভাবে একদশী না করে । কদাপি নাহি থাকি তাহার ঘরে ।। উচ্চহাসি হাসিয়া যে নারী ঘোরে । গুরুজন দেখি ঘোমটা না টানে ।। বয়োজ্যেষ্ঠ দেখি যারা প্রনাম না করে । সন্ধ্যাকালে ধূপ দীপ নাহি দেয় ঘরে ।। ঠাকুর দেবতা আদি কভু না পূজে । সাধু সন্ন্যাসী দেখি হাসাহাসি করে ।। এমন নারী যে গৃহেতে বসতি রয় । লক্ষ্মী ত্যাজে তাহাকে জানিবে নিশ্চয় ।। এত বলি লক্ষ্মী দেবী বলেন মুনিকে । কর্মদোষে মনুষ্য নিজ ফল ভোগে ।। ঋষি বলে মাগো তুমি জগতজননী । সন্তান কে করো ক্ষমা হে সনাতনী ।। দূর করি দাও মা ভীষন মহামার । বর দিয়ে জীবেরে করহ নিস্তার ।। এই বলি বিদায় হইলেন মহামুনি । চিন্তিত হইয়া কহেন নারায়নী ।। কহ কহ কৃপাময় প্রভু নারায়ন । কিরূপে নিস্কৃতি পাইবে জীবগণ ।। লক্ষ্মীদেবীর কথা শুনি কহেন জনার্দন । শুন দেবী মন দিয়া আমার বচন ।। তুমি যে পরমা প্রকৃতি দেবী ভগবতী । তোমার কৃপায় দূর হইবে অনাসৃষ্টি ।। যে জন গুরুবারে লক্ষ্মী ব্রত করে । সুখে জীবন কাটাইবে তোমার বরে ।। লক্ষ্মী কভু নাহি ছাড়িবে তাহারে । জীবনান্তে আসিবে সে বৈকুন্ঠ নগরে ।। মর্ত্যে গিয়া কর এই ব্রত প্রচার । তোমার কৃপায় দূর হইবে অনাচার ।। গমন করেন দেবী শুনি হরির কথা । পেঁচকে মর্ত্যে আইলেন জগতমাতা ।। অবন্তী নামক নগরী পাশে এক বন । তথা আসি মা কমলা উপস্থিত হন ।। হেথায় ছিল ব্যবসায়ী ধনেশ্বর রায় । অগাধ ধন, চৌদ্দ কূল বসি খায় ।। পত্নী সুমতি ছিল সাত কুমার । সংসার ছিল তার লক্ষ্মীর ভান্ডার ।। যথাকালে ধনেশ্বর করিল গমন । বিধবা হইলো পত্নী- ভাগ্যের লিখন ।। সর্বদা কলহ করে সপ্ত বধূ গণ । মারমার কাটকাট হইত সর্বক্ষণ ।। সংসার রচিল যে যার মতো যার । সুখের পরিবার হইল ছারখার ।। এই দুঃখে ধনেশ্বর পত্নী ভীষন শোকে । বনে গমন করিল জীবন ত্যাজিতে ।। সেই বনে বৃদ্ধা বসি করে হায় হায় । এই বুঝি লেখা ছিল বিধাতার খাতায় ।। এই দেখি হরিপ্রিয়া বৃদ্ধা রূপ ধরে । ছদ্দবেশে দেখা দিলেন ধনেশ্বর ভার্যারে ।। দেবী কহেন কে তুমি দাহ পরিচয় । কোথা হতে আসিলে বলোহ আমায় ।। স্থান বড় ভয়ানক নির্জন বন । হেথা হোথা নানা জন্তু করে বিচরণ । বুড়ি বলে মাগো পোড়া কপাল আমার । ভয় আমি করি না আর মরিবার ।। এত বলি বৃদ্ধা সব কথা কন । শুনিয়া দুঃখিত হইলো কমলার মন ।। বৃদ্ধা প্রতি বিষ্ণুপ্রিয়া কহেন বচন । আত্মহত্যা মহাপাপ শাস্ত্রের লিখন ।। যাও তুমি গৃহে ফিরি করো লক্ষ্মী ব্রত । অবশ্যই আসিবে সুখ পূর্বের মতো ।। গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এঁয়োগন । ব্রতের সকল কিছু করিবে আয়োজন ।। আসন পাতি তাহে লক্ষ্মী মূর্তি বসাইবে । আম্র পল্লব, গোটা ফলে ঘট সাজিবে ।। বিবিধ পুস্প, বিল্বপত্র নৈবদ্য সকল । দিবে কলা, শর্করা আতপ তণ্ডুল ।। একটি করে মুদ্রা রাখিবে লক্ষ্মী ঘটে । একমুষ্টি তণ্ডুল জমাইবে লক্ষ্মী ভাঁড়ে ।। আম্র পল্লবে করিবে সিঁদুর তৈলে গোলা। চাল বাটি লক্ষ্মী সম্মুখে দিবে আলিপনা ।। ধূপ দীপ জালি সম্মুখে রাখিবে । আসন পাতি লক্ষ্মী পূজায় বসিবে ।। একমনে পূজা দিবে লক্ষ্মী নারায়ন । পূজাশেষে ব্রত কথা করিবে পাঠন ।। না করিয়ো পূজায় ঘণ্টা বাদন । পূজান্তে উলু দিবে মিলি এঁয়োগন ।। এই ভাবে যেই জন লক্ষ্মী ব্রত করে । কোন দুঃখ তার আর নাহি রহিবে ।। শুনিয়া বৃদ্ধা কহিল আনন্দিত মনে । কে মা তুমি কহো পরিচয় দানে ।। এই শুনি লক্ষ্মী দেবী স্ব মূর্তি ধরে । ভক্তি চিত্তে বৃদ্ধা কাঁদে ভূমি ওপর পড়ে ।। লক্ষ্মী বলে যাহ তুমি নিজের ভবন । গুরুবারে আমাকে পূজিবে নিয়ম মতোন ।। এত বলি বিদায় লইল সাগর নন্দিনী ( মা লক্ষ্মী সাগর রাজার কন্যা ) । ঘরে ফিরি আসিল ধনেশ্বর পত্নী ।। বধূ গনে কহিল লক্ষ্মীর ব্রতের কথন । গুরুবারে লক্ষ্মী ভজে সপ্ত বধূ গণ ।। ধীরে ধীরে হইল সুখের ভবন । যেমন আছিল ঘর পূর্বের মতোন ।। সপ্ত ভাই মিলে মিশে কলহ বিসর্জন । সংসার হইলো যেন স্বর্গের দেবভবন ।। এই দেখি এক রমণী পূজা মানত করে । স্বামী চিররোগী, উপার্জন হীন সংসারে ।। ভক্তি ভরে সেই নারী লক্ষ্মী দেবী ভজে । হরিপ্রিয়ার কৃপায় তাহার দুঃখ সকল ঘোচে ।। রোগ ছাড়ি তার স্বামী সুস্থ হইল। এই ভাবে সকল দুঃখ তার ঘুচিল ।। আনন্দে দিনে জন্মিল তাঁহাদের সুন্দর নন্দন । লক্ষ্মীর কৃপায় তার বাড়িল ধন জন ।। এই ভাবে লক্ষ্মী ব্রত ছড়ায় দেশ দেশান্তরে । সকলে শুনি লক্ষ্মী দেবীর পূজা করে ।। লক্ষ্মী কৃপায় সকলের দুঃখ চলি যায় । কমলার কৃপা সকলের ওপর বর্ষায় ।। একদিন লক্ষ্মী পূজা করে বামাগন । আসিল এক বনিক তাঁহাদের সদন ।। বনিক কহে কোন দেবী কি পরিচয় । করিলে পূজা দেবীর, কি ফল হয় ।। বামারা বলে ইনি লক্ষ্মী দেবী জগত জননী । লক্ষ্মী কৃপায় সুখে রহে ব্রতিনী ।। গুরুবারে যে জন লক্ষ্মী পূজা করে । অবশ্যই থাকিবে সুখে কমলার বরে ।। এই বাক্য শুনে হাসে বনিক মহাশয় । মানিনা এই সত্য তব কথায় ।। কপালে যদি না থাকে ধনের লিখন । কিরূপে দিবে লক্ষ্মী বর-ধন- জন ।। শুধু শুধু লক্ষ্মী পূজা করি কি হয় । বৃথা কাটাইতেছো কমলা পূজায় ।। গর্বে ভরা বাক্য লক্ষ্মী সইতে নারে । ধীরে ধীরে মা কমলা ছাড়িল তাহারে ।। ঝড় উঠি তার নৌকা জলে ডোবে । ধন জন আদি গেলো নানা রোগে ভোগে ।। মড়কে রোগে তার গৃহ হইল ছারখার । ভিখারী হইয়া বনিক ঘোরে দ্বারে দ্বার ।। এককালে সে থাকিত রাজার হালে । আজ সে ভিখারী, পথে কষ্টে চলে ।। এই ভাবে বহু দেশ ঘোরে সদাগর । একদিন আইলো সে অবন্তী নগর ।। সেই স্থানে ব্রত করে যতেক বামাগনে । বসি তারা মন দেয় লক্ষ্মীর ভজনে ।। এই দেখি পূর্ব কথা হইলো স্মরণ । এই স্থানে দেবীরে করিছে অবমানন ।। সেই পাপে সব ধ্বংস হইলো তার । ভূমিতে লোটাইয়ে সদাগর কান্দে বারবার ।। এই স্থানে করেছি মাগো বহু অহঙ্কার । সেই পাপে সব কিছু হইলো ছারখার ।। ধন গর্বে মত্ত হয়ে করিনু অবহেলা । সেই অপরাধে মা তুমি মোরে ত্যাজিলা ।। ক্ষুধার জ্বালায় মাগো ঘুরি দেশ দেশান্তরে । ধন-জন- আত্মীয় গেলা আমাকে ছেড়ে ।। তুমি মাতা দয়াময়ী বিষ্ণু বক্ষ বিলাসিনী । তুমি মাতা ভগবতী জগত পালিনী ।। তুমি যারে রক্ষা করো কিসের তার ভয় । তুমি যারে ত্যাজি যাও, সে সব হারায় ।। তুমি যারে কৃপা কর, সেই ধন্য হয় । তোমার আশিসে মাগো সর্ব সিদ্ধি হয় ।। এই ভাবে সদাগর লক্ষ্মী স্তব করে । কমলার কৃপা দৃষ্টি বনিকের উপর পড়ে ।। লক্ষ্মীর কৃপায় বনিক সব ফিরি পায় । গৃহে ফিরি মন দেয় লক্ষ্মীর পূজায় ।। লক্ষ্মীর কৃপায় তাহার ধন জন বাড়ে । এই ভাবে ব্রত প্রচার হয় দেশ দেশান্তরে । এই ভাবে সকলে লক্ষ্মী পূজা করে । ধনে জনে বাড়িল কমলার বরে ।। খাদ্য ধন জন বাড়িল লক্ষ্মীর কৃপায় । হরি হরি বল তুলিয়া হস্ত দ্বয় ।। যেই জন ভক্তি ভরি লক্ষ্মী পূজিবে । অবশ্যই তাহার দুঃখ সকল ঘুচিবে ।। যে পড়ে ব্রত কথা, আর যেবা করে শ্রবন । অবশ্যই পাইবে সে মা লক্ষ্মীর চরণ ।। ব্রত কথা শুনিবে অবশ্যই ভক্তি মনে । লক্ষ্মীর কৃপায় বাড়িবে ধনে জনে ।। জয় জয় ব্রহ্মময়ী, মা নারায়নী । তোমার কৃপায় শেষ করিনু গ্রন্থখানি ।

কিছু ইংরেজি শব্দের মজার তথ্য না জেনে থাকলে জেনে নিন

► 80 কে letter marks বলা হ্য় কারণ L=12, E=5, T=20, T=20, E=5, R=18 (অক্ষরের অবস্থানগত সংখ্যা) সুতরাং 12 5 20 20 5 18= 80

► ইংরেজি madam ও reviver শব্দকে উল্টো করে পড়লে একই হবে।

► “a quick brown fox jumps over the lazy dog” বাক্যটিতে ইংরেজি ২৬টি অক্ষর আছে।

► “i am” সবচেয়ে ছোট ইংরেজি বাক্য।

►”Education” ও “Favourite” শব্দে সবগুলো vowel আছে।

► “Abstemious ও Facetious” শব্দে সবগুলো vowel আছে।
মজার ব্যাপার হল শব্দের vowel গুলো ক্রমানুসারে ( a-e-i-o-u) আছে।

► ইংরেজি Q দিয়ে গঠিত সকল শব্দে Q এর পরে u আছে।

► একই অক্ষরের পুনরাবৃত্তি না করে সবচেয়ে দীর্ঘ শব্দ হল Uncopyrightable।

► Rhythm সবচেয়ে দীঘ ইংরেজি শব্দ যার মধ্যে vowel নাই।

► Floccinaucinihilipilification সবচেয়ে বেশি vowel সমৃদ্ধ শব্দ যাতে ১৮টি vowel আছে।

► vowel যুক্ত সবচেয়ে ছোট শব্দ হল A (একটি) ও I (আমি)।

► vowel বিহীন সবচেয়ে ছোট শব্দ হল By।

► গুপ্তহত্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Assassination মনে রাখার সহজ উপায় হল গাধা-গাধা-আমি-জাতি।

► Lieutenant শব্দের উচ্চারণ লেফট্যান্যান্ট বানান মনে রাখার সহজ উপায় হল মিথ্যা-তুমি- দশ-পিঁপড়া।

► University লেখার সময় v এর পরে e ব্যবহৃত কিন্তু Varsity লেখার সময় v এরপরে a ব্যবহৃত হয়।

► “Uncomplimentary” শব্দে সবগুলো vowel আছে।
মজার ব্যাপার হল শব্দের vowel গুলো উল্টো ক্রমানুসারে ( u-o-i-e-a) আছে।

►”Exclusionary” ৫টি vowel সমৃদ্ধ এমন একটি শব্দ যার মধ্যে কোন অক্ষরের পুনরাবৃত্তি নাই।

► “study, hijak, nope, deft” শব্দগুলোর প্রথম ৩ টি অক্ষর ক্রমানুসারে আছে।

► “Executive ও Future”এমন দুটি শব্দ যাদের এক অক্ষর পর পর vowel আছে।

► Mozambique এমন একটি দেশের নাম যাতে সবগুলো vowel আছে।

► A1 একমাত্র শব্দ যাতে ইংরেজী অক্ষর ও সংখ্যা আছে।

*(সংগৃহিত)

হাইটেক টিনস

পশ্চিমা চিন্তা চেতনায় টিন এজাররা দারুন ভাবে মগ্ন।
ইলেক্ট্রো মিডিয়ার বদৌলতে হয়েছে সব বাহু লগ্ন।
সাজ সজ্জা চাল চলনে এসেছে আমুল পরিবর্তন।
ফ্যাশন জগতে এসেছে ল্যান্ড মার্ক প্রবর্তন।
হাই টেক বিট ছাড়া তাদের ঘুম আসেনা।
মিউজিক ছাড়া লেখাপড়া মাথায় ঢোকে না।
ধুড়ুম ধাড়াক্কা রকের সাথে নৃত্যে ভাসিয়ে গা।
অবহেলায় সরিয়ে রাখে পল্লী গীতি পল্লী সোনার গাঁ।
আনন্দ বিনোদন হয়না সারা রঙ্গিন পানীয় ছাড়া।
হ্যাসিস হেরোইনের নীল নেশায় তারা মাতোয়ারা।
মোবাইল ইন্টারনেট এনে দিয়েছে বাড়তি এক্সেস।
উত্যাক্ত করতে ইভ টিজার এর দারুন ইজি প্যাসেজ।
অবক্ষয়ের দিকে তরুন সমাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
মরণ ছোবল নেশা আর এইডসের শিকার হচ্ছে।
সুযোগ সন্ধানিরা বসে নেই টু পাইস কামাচ্ছে।
গড্ডালিকা ভাসিদের শেষ পিনটি মারতে উঠে পড়ে লেগেছে।

সাধনা

সত্য কথা যতই হোক শিকারীর বান।
অকাট্য যুক্তি যতই অপ্রিয় হোক জ্বলবে অনির্বান।
ধুলি ধুসরিত মণি মানিক্য সাগরের নোনা জলে।
অাহরিত হয় যৎকিঞ্চিত সাধনার জালে।
সাধনার ধন কুক্ষিত নয় বিলাবে আজলা ভরি।
হর্ষ ধ্বনি তুলবে সবাই তোমায় স্মরণ করি।

শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন প্রথম পর্ব- পূজোর কবিতা-১

শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন
প্রথম পর্ব- পূজোর কবিতা-১
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা। নদীতীরে দুইধারে সাদা কাশের ফুল শোভা দেয়। পূজো এসে গেল। এসে গেল খুশির রঙে মন রাঙিয়ে নেবার দিন। শারদীয়া দুর্গাপূজা জাতীয় জীবনে সর্বাঙ্গীন। তাই এই উত্সবে আমরা সাজিয়েছি শারদ-অর্ঘ-১৪২৬। এই কবিতা সংকলনে প্রতিদিন একটি করে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর এক কবিতা প্রকাশিত হবে। আমার এই কবিতাগুলি পাঠক ও কবিমনের কতটা কাব্যপিপাসা মেটাবে তা সঠিক ভাবে বলতে পারি না। তবে চেষ্টা করেছি যথাসম্ভব সেগুলিকে ছন্দে ও ভাষায় হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে।

বাংলা কবিতার আসরের জয় হোক, বাঙালির জয় হোক, বাংলার জয় হোক। বাংলার কবিগণের জয় হোক। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। কবিতা পাঠ করুন, কবিতা লিখুন
আর চোখ রাখুন, এবারের শারদ অর্ঘ-১৪২৬ আমার এক পূ্‌জোর কবিতা সমগ্র।
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন
প্রথম পর্ব- পূজোর কবিতা-১
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শিউলি ঝরানো শারদ প্রভাতে
পাখিদের কোলাহল,
সুনীল আকাশে সাদা মেঘেদের
আনাগোনা অবিরল।

কাশের বনে ফুল ফুটেছে
পূজো এসে গেল কাছে,
শিউলি ফুলের গন্ধ মেখে
হৃদয় আমার নাচে।

টগর বকুল জুঁই চামেলি
মাধবী মালতী লতা,
আঙিনাতে তুলসীতলায়
সুনীলা অপরাজিতা।

সাদা মেঘের আনাগোনা
সোনালি রোদ ঝরে,
গাছে গাছে পাখিরা ডাকে
পরাণ পাগল করে।

কমল কাননে মধু আহরণে
ছুটে আসে মধুকর,
অজয়ের চরে সোনারোদ ঝরে
কাশফুল মনোহর।

শারদ আকাশে সাদামেঘ ভাসে
পূজোর আনন্দে মাতি,
মা আনন্দময়ীর শুভ আগমনে
ঢাকী ঢাকে দেয় কাঠি।

বিপথে গিয়েছে যে, আম ছালা তার সবই যাবে

জন বল্টন, আমেরিকান যুদ্ধবাজ কূটনীতিবিদ এবং সামরিক উপদেষ্টা। সামরিক ভাবে দূর্বল দেশগুলোতে সামরিক হামলা, গৃহযুদ্ধ লাগানো, গণহত্যা, নাশকতা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ, অন্যের খনিজ সম্পদ লুট। আরো কত কূটবুদ্ধি, অসুস্থ চিন্তা, কাপুরোষচিত পরিকল্পনা তার মাথায় আসতো তার বর্ণনা একমাত্র সেই দিতে পারবে। কিন্তু শেষ ভালো হলো না, বরখাস্ত হয়ে নিজেই ফানি ক্যারেকটার বা উপহাসের পাত্র হয়ে গেলো।

তার জন্য একটা কথা বলি, “বিপথে গিয়েছে যে, আম ছালা তার সবই যাবে।”