বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

অতঃপর অন্ধকারে………..

আমার নি:শব্দে কান্না কি তোমার কর্ণকুহর ভেদ করেছে ?
তোমার দৃষ্টিসীমা থেকে যোজন যোজন দূরে থাকা
এই আমার বেদনার নীলচে আলোকরশ্মিটা কি তোমার কর্ণিয়া ভেদ করেছে ?
হৃদয় জুড়ে নেমেছে শ্রাবণ বইছে অঝোরধারা,
তোমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে কি ছুঁয়েছে আমার দীর্ঘশ্বাস ?
তুমি কি বুঝতে পারো আমার ব্যথা বেদনা ?
মনের উঠোনে ভরে আছে এক সমুদ্র ঢেউ জোয়ার ভাটা
তুমি কি তা দেখতে পেয়েছো ?
তারপরও ক্লান্তহীন সামনে চলা পৃথিবীর রথে
প্রতিনিয়ত যুদ্ধরত জীবনের সাথে নিয়তির নিষ্ঠুর বিষাক্ত ছোবল জ্বালা ধরায় বুকে,
স্নিগ্ধ ভোরের আলোয় কুয়াশার ফাঁকে দেখি তোমাকে ,
অস্পষ্ট আল্পনায় ভালবাসার সাঁঝে
ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে ছুটে চলি অফুরন্ত দিগন্তের মাঝে,
ছটফটে অবুঝ মন আমায় তাড়া করে ভালবেসে যাকে কখনো দেখিনি চোখে তারই আহ্বানে,
অথচ তোমার বুকের গভীরে নিস্পাপ প্রেমের মৃত্যু দেখেছি অগণিতবার,
আমাকে আর আকৃষ্ট করো না তোমার প্রেমে,
নিষ্ঠুর তুমি, তুমি হৃদয়হীন পাষাণ,
আমার মনি মুক্তা খচিত জীবনে চাইনি চাঁদ সূর্য ,
চেয়েছিলাম শুধু তোমার সান্নিধ্য,
যদি আমায় উপলব্ধি করতে তাহলে বুঝতে আমার হৃদয়ের গহীনের শব্দ,
শুনতে পেতে আমার হৃদয়ের হৃদ স্পন্দন যেখানে শুধু তোমার বিচরণ,
খুঁজে পেতে কারনে অকারনে অঝর শ্রাবণ বুঝে নিতে,
কতো গভীর ভালোবাসায় এই হৃদয়ে করেছি তোমাকে ধারন,
নিষ্ঠুর তুমি, তুমি হৃদয়হীন পাষাণ,
আমারই হয়তো সব ভুল ছিলো
আমি বেমালুম হেরে যাই নিয়তির স্বার্থপরতার কাছে
অত:পর অন্ধকারে সমর্পণ করি আমি নিজস্ব সত্ত্বাকে…………

— ফারজানা শারমিন
২৫ – ১১ – ২০১৯ ইং

হেমন্ত

স্বগ থেকে খসে পড়া হিম বুড়ী
হিমেল পরশ বুলিয়ে দেয় সবুজ গালিচায়।
পাহাড় গীরি কন্দর স্নাত হয়
সিক্ত হয় তরু লতা বাগ বাগিচায়।

শান্ত হয় উত্তাল সাগর নদী
হিমের আবেশে।
তারা ভরা জোছনা ঝরা
ভরা প্রকৃতি অফুরন্ত আমেজে।

অতিথি পাখিদের গুঞ্জরনে
টুটে নিশীথের সুপ্তি।
হাওর বাওর বিলে কল কাকলীতে মুখরিত
সকাল সন্ধ্যা ব্যাপ্তি।

নতুন ফসলের মৌ মৌ গন্ধে
ভরে উঠে গ্রাম।
গোলা ভরা ধানে সুখের স্বপনে
ভরে উঠে প্রাণ।

নবান্নের উৎসবে নতুন রসে
স্বাদে ভরপুর হেমন্ত।
নতুন কুটুমে টুক টুকে আঁচলে
জেগে আছে অনন্ত।

প্রাচীন ঘুম

আমি জেগে আছি প্রাচীন কাল থেকে; আমি জেগে আছি এ পৃথিবীর কোল জুড়ে,
ইসরাফিলের বাসির অপেক্ষাতেই যেন আমি নির্ঘুম জেগে আছি অনাদিকাল ধরে।
আমার চোখে এখন রাজ্যের ঘুম; বিষণ্নতার ছোঁয়া যেন আমার সারা শরীর জুড়ে,
নরম চোখ নিয়েই এখনো জেগে আছি আমি কালো আঁধারের শরীরে ভর করে।
চোখের গভীরে তামাম পৃথিবী পোড়ানোর ক্রোধাগ্নি নিয়ে আমি ঘুমাই কি করে ?

সিঁদুর সঙ্গী………

হে সন্ন্যাসী আমাকে নদীর মোহনা পেরিয়ে সমুদ্রে স্নানে নিয়ে যাবে ?
আমি তোমাকে প্রেমের কবিতা শোনাতে চাই,
সাগরের গর্জন গভীর জলের সুরেলা সংগীত তোমাকে শোনাতে চাই,
সমুদ্র ও আকাশ আমাদের ভালোবাসার গল্প বলে,
ঝাউবনে উদাসী বাতাস বয়ে যায় আনমনে,
জ্যোৎস্নাভেজা রাত স্বপ্নের জাল বোনে,
আজ তোমাকে অনেক নামে ডাকতে ইচ্ছে করছে
আমি স্বপ্নের দ্বার খুলে দিয়ে তোমার কথা ভাবি
স্বপ্নে জোছনায় তোমার হাত ধরে হাঁটি ,
তুমি আমার প্রেম আমার সকল সুখের দিনরাত্রি
জীবনের সব লেনদেন সেরে স্মৃতিরা সব স্বপ্নে ফেরে,
স্বপ্ন গুলো বুকে সোনালী খাঁচায় তোমাকে আগলে রাখি,
শত কাজের মাঝেও আমি আবার একটা দিনের শেষ প্রহরের দিকে আনমনে চেয়ে থাকি,
তুমি এসে কথা বলে মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসে যাও,
ভোর হলে স্বপ্ন বাতাসের ঢেউয়ের মতো মিলিয়ে যায়,
যাবার আগে বলে যাও তুমি
তুমিই আমার অবাধ্য প্রেমের একমাত্র নারী প্রেমিকা জাফরানী মৌচাক সিঁদুর সঙ্গীনী,
আমিও তোমাকে সীমাহীন আকাশের মতো ভালোবাসি
সমুদ্রের বিশালতার মতো গভীর ভাবে তোমাকে ভালোবাসি,
প্রণাম করি তোমায় চরণ ছুঁয়ে
হে সুপ্রিয় সিঁদুর পড়িয়ে দাও
ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দাও এ সিঁথি……………

— ফারজানা শারমিন
২৩ – ১১ – ২০১৯ ইং

স্বপ্নের ডানা

দুঃখ দেবে ?
দাও
আরো কাঁদাবে ?
কাঁদাও
অক্সিজেন পাই আমি তোমার তিরস্কারে
তোমার হিংসেমির বা নষ্ট ভাবনায়
বুকের কষ্ট গুলো উঠে আসে আমার কবিতায়
আমি তোমাকে বলছিনা, তুমি আমায় একটা ফুল এনে দাও
একবারও বলছিনা, আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও
তোমার প্রতারণার গল্প আমি কক্ষনো কাওকে করবোনা

আমার কাছে জীবন এখন ভরা নদীর মত পূর্ণ যৌবনা
চোখ তুলে সামনে তাকালে, আগের মতো ভয় করে না
আমি একজীবনে কত বার মরেছি, না না সে দুঃসময়ের গল্প আজ করবোনা
কত দিন, কত রাত মৌনতায় ডুবে ছিলাম, আজ সেসব কিছুই বলবোনা

জানো, প্রতি ভোরে মৃত্যুকে ভাবতাম
এত সহজে সেও যে আসবেনা জানতাম
রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত হৃদয় নিয়ে
আমি কাঙ্গালের মতো প্রতিদিন তোমাকে ফিরে পাবার অপেক্ষায় ছিলাম
মৃত্যু আসেনি, তুমিও আসোনি
সুখের খোলসে ঝাঁকে ঝাঁকে কষ্টরা বিদ্ধ করেছে হৃদয়।

নীরবে সে কষ্টের বিরহ ভূমিতে আমি পুড়ে পুড়ে রত্ন খুঁজেছি
সে পোড়া গন্ধে আমি আমার মৃত আত্মার সৎকার করেছি
একদিন হঠাৎ দেখলাম প্রেম দেবদূতকে
আমাকে আর পায় কে
জীবনের সে স্বর্গীয় আমেজে
নতুন আমিকে আমি ভীষণ ভালোবেসে ফেললাম
বিরহ জল করেন না টলমল
আমার সুখী হৃদয় মিষ্টি অনুভূতিতে আনন্দে ঝল মল

আমি গল্প লিখি, আমি স্বপ্ন ফেরি করি
আমি দিবানিশি আনন্দে মেতে উঠি
আমার অতীত আমার কবিতার প্রাণ
আমার বর্তমান জোছনার আলোয় আলোকিত যৌবন অনুসন্ধান
আমি আর আগের মতো স্বপ্নের আর্তনাদ শুনে কেঁদে উঠিনা
আমি বিষাক্ত নিকোটিন জীবন থেকে বাদ দিয়েছি
বিবর্ণ সে দিন গুলো কবিতায় বিলিয়ে দিয়েছি

এখন আমার চিত্ত জুড়ে আলোর ঝলকানি
এখন আমি স্নিগ্ধ সুন্দর নদীর একবিন্দু পানি
তোমাকে ভুলিনি
আমার বিষাক্ত ভালোবাসা ডানা মেলেছে
ছুটছে তেপান্তর জুড়ে শুধু তোমারি জন্য
তাই তোমাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।

ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা মুরুব্বীর জন্য সকলের কাছে দৃষ্টি আর্কশন

বন্ধুরা
স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা এবং শব্দনীড় ব্লগ মডারেটর আমাদের সবার প্রিয় আজাদ কাস্মীর জামান( মুরুব্বী) গত কয়েক দিন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন। তিনি আজ সকলের দোয়াতে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। ব্লগের সকল বন্ধুদের কাছে তিনি দোয়া চেয়েছেন যেন আতি দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আবার সরব হতে পারেন।
আমি ভেবে অবাক হয়েছি তিনি এই শারিরীক অবস্থার মধ্যেও শব্দনীড়ে আসতে না পারার জন্য দু:খ প্রকাশ করে যে কথা বলেছেন আমরা তার সেই ইচ্ছার, সেই চিন্তা চেতনার কতটা কাছে আসতে পেরেছি।
আপনাকে সেলুট মুরুব্বী বস্ । সেই সাথে সকলের কাছে আন্তরিক অনুরোধ থাকবে এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা সবাই তার জন্য একবার দোয়া করি।

প্লিজ পোষ্ট আপনার ভালোবাসার অবদানটুকু রাখবেন আশাকরি, যেন তিনি বুঝতে পারেন শব্দনীড় তার পাশে আছে ও থাকবে।

ধন্যবাদ সকলকে।

অন্ধজনে দেহ আলো স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি

দেখিনু সেদিন অফিস যাওয়ার পথে,
ছোট খুকি এক মাগিছে ভিক্ষা বাটি ধরে হস্তেতে।
একটি পয়সা দাও গো বাবু সারাদিন খাইনি কিছু,
শত ছিন্ন তার হাত কাটা ফ্রক লজ্জায় মাথা নীচু।

দুই চক্ষু ভরিয়া আসিল জলে,
এমনি করিয়া ভিক্ষা চায় ওরা সহস্র জনতার কোলাহলে।
রাজপথে কত ছুটিছে বাইক, বাস মোটর চলিছে জোরে,
ট্যাক্সি থেকে নামি মেমসাব তারে ফেলে দিল ধাক্কা মেরে।

মুদ্রা ক’টি তার বাটিতে নাই আর, পথে গড়াগড়ি যায়,
কপাল কাটিয়া, রুধির ঝরিছে, বহিছে অঝোর ধারায়।

ট্যাক্সিতে চড়ি, মেমসাব এবার তার গাড়িতে স্টার্ট দেয়,
রাজপথে পড়ি কাঁদে ছোট খুকি বল কেবা খোঁজ নেয়?
কান্না শুনিয়া আসিল ধাইয়া অন্ধজন এক লাঠি ধরে,
স্বহস্তে ধরিয়া উঠাইল তাহারে কতই না যতন করে।

চক্ষু থাকিতে দেখিতে না পায় কি হবে সে চক্ষু দিয়ে?
অন্ধের কাজ অন্ধে করিল একা, নিজ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে।
চক্ষুস্মানের কাজ করে দৃষ্টিহীনে বিবেকের চক্ষু দিয়ে।
ভগবান তুমি কি সুখ পাও ওদেরই দৃষ্টি কেড়ে নিয়ে?

https://www.youtube.com/watch?v=FcKFXtgCjk4

মুরুব্বীর নীড়

শব্দনীড় প্রাণের নীড়
উপচে পড়া
কলোকাকলির ভিড় ।

মুরুব্বির ঐকান্তিকতায়
মায়ায় ভালবাসায়
গড়া এই নীড়।

সুচিন্তিত মতামতে
সেতু বন্ধনে রচিত
রঙ্গিন নীড়।

নতুন পাতার সুবাসে
রঙ তুলির আঁচড়ে
সাজলো হৃদয় আকাশে ।

হাযার প্রাণের মেলা
সৃজন আর মননে
মিলনের অপরূপ মেলা।

নীড়ের পাতা মুরুব্বির অভাবে আজ ম্রিয়মান
মুরুব্বীকে সুস্হতা দান করুন রহম করুন হে মহান।

আজাদ কাশ্মীর জামান (মুরুব্বী) দাদা’র আশু আরোগ্য কামনায়

শ্রদ্ধেয় আজাদ কাস্মীর জামান। যিনি ছদ্মনামে মুরুব্বী হয়ে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। শ্রদ্ধেয় মুরুব্বি দাদা’র আরেকটা পরিচয় আছে। তিনি এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা এবং শব্দনীড় ব্লগ মডারেটরও। শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী দাদা’র সাথে আমার প্রথম পরিচয় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত, ফেসবুক থেকে। তারপর শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী দাদা’র সহায়তায় এই স্বনামধন্য শব্দনীড় বাংলা ব্লগে আমার রেজিষ্ট্রেশন করা। এরপর থেকেই আমি শব্দনীড় ব্লগে লেখালেখি শুরু করি।

প্রতিদিন শব্দনীড়ে যখনই লগইন করে ভেতরে প্রবেশ করতাম, তখনই শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী দাদা’কে ব্লগে দেখতাম। শব্দনীড় ব্লগে যে কারোর পোস্ট প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে সেই পোস্টে সম্মানিত মুরুব্বী দাদা’র সুন্দর গঠনমূলক একটা মন্তব্য দেখতে পেতাম। কিন্তু হঠাৎ করে আজ দুইদিন ধরে শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী দাদা’র কোনও সাড়াশব্দ পাচ্ছিলাম না। তাই আজ সকাল ১১টার সময় শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী দাদা’র মোবাইল নাম্বারে একটা কল করেছিলাম। তার-ও কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে মেসেজের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ করলাম, “শ্রদ্ধেয় দাদা, আপনি কোথায়? ব্লগে দেখছি না কেন? কোনও সমস্যায় আছেন?”

এর কিছুক্ষণ পর আমার নাম্বারে শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী দাদা’র একটা মেসেজ আসলো, “My heart is not working. There r 2 blocks. Last night I have admited to cardiac hospital in Bogra. CCU unit. Pls pray for me.”

মেসেজ পেয়ে বুঝতে পারলাম উনি অসুস্থ! এতে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই কষ্ট পেয়েছি। ভাবছি প্রতিদিন প্রতিক্ষণ যেই মানুষটির পদচারণায় আর সুন্দর মন্তব্যের শব্দে শব্দনীড় ব্লগ প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠতো। সেই হাস্যোজ্বল হাসিখুশি মানুষটি আজ দুইদিন ধরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে।

তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মহান ঈশ্বরের কাছে আমার প্রাণপ্রিয় মুরুব্বী দাদা’র আশু আরোগ্য কামনা করছি। সেইসাথে শব্দনীড় বাংলা ব্লগের নিবন্ধিত সকল লেখক/লেখিকার কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী দাদা’র সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করবেন। যাতে শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী দাদা দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার আমাদের সকলের মাঝে ফিরে আসে।

শ্রদ্ধেয় আজাদ কাশ্মীর জামান (মুরুব্বী) দাদা’র আশু আরোগ্য কামনায়, আমরা শব্দনীড় ব্লগের সকলে।

নদী দূষণ নিয়ে দেশি-বিদেশি ভাবনা

দুইজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু! কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারে না। কেউ কাউকে কয়েক ঘণ্টার জন্য না দেখলে অস্থির হয়ে ওঠে। কারণ ছোটবেলা থেকে ওঁরা দুইজন একই স্কুলে লেখাপড়া। একসাথে আসা-যাওয়া। একসাথে খেলা-ধুলা। একসাথে চলা-ফেরা। একসাথে ঘোরা-ফেরা। একসাথে খাওয়া-দাওয়া। একসাথে ওঠা-বসা করে বড় হয়েছে। দুইজনই সমান বয়সী। হঠাৎ এক বন্ধু চলে গেলো দেশের বাইরে। মানে বিদেশ যাকে বলে।
আরেক বন্ধু থেকে গেলো নিজের দেশেই। নিজ দেশে থেকে যাওয়া বন্ধুটির বাড়ি শীতলক্ষ্যা নদী ঘেঁষা এক এলাকায়। তাই সে সবসময়ই নদী নিয়েই বেশি ভাবে। কারণ, কোনোএক সময় এই শীতলক্ষ্যা নদীতে গোসল করতে। ছাঁকিজাল দিয়ে মাছ ধরতো। শীত মৌসুমে নদীর পাড়ে লাউয়ের চারা, কুমড়া চারা, টমেটো চারা-সহ আরও অনেক রকমের চারা রোপণ করতো। বর্তমানে নদীর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ার কারণে সেসব আর করা হয় না। তবু সে প্রতিদিন সকাল বিকাল নদীর পাড়ে গিয়ে ঘোরাঘুরি করে। চিরচেনা নদীর বর্তমান করুণ অবস্থা দেখে মনখারাপ করে বসে থাকে।

এদিকে ৩০ বছর পর বিদেশ থেকে বন্ধুটি দেশে আসলো। দেশে এসে ছোটবেলার খেলার সাথি বন্ধুটির বাড়ি গিয়ে দেখা করে বললো, ‘কেমন আছিস দোস্ত?’
দেশি বন্ধুটি বললো, ‘ভালো আছি! তো তুই কেমন আছিস?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘আমিও বেশ আছি!’
দেশি বন্ধুটি জিজ্ঞেস করলো, ‘এতদিন কোন দেশে ছিলি?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘বিশ্বের এক উন্নত দেশ আমেরিকায়।’
দেশি বন্ধুটি জিজ্ঞেস করলো, ‘সে-দেশের নদীগুলোর কী অবস্থা? তা কি আমাদের দেশের নদীগুলোর মতো?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘আমি অনেক বছর পর দেশে এসেছি। শহরের আশে-পাশে থাকা নদীগুলো না দেখে কিছুই বলতে পারছি না। তবে সে-দেশের নদী এবং নদীর পানি আয়নার মতো পরিস্কার।’
দেশের বন্ধুটি বললো, ‘তাহলে চল, একদিন ঘুরে দেখে আসি শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী নদী।’
দুই বন্ধু মিলে একদিন শীতলক্ষ্যা, একদিন বুড়িগঙ্গা, একদিন তুরাগ, একদিন ধলেশ্বরী নদী ঘুরে দেখতে গেলো। চারদিন রাজধানী ঢাকার আশ-পাশে থাকা চারটি নদী ঘুরে দেখলো।
এরপর দেশি বন্ধু বিদেশি বন্ধুটিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘দোস্ত আমাদের দেশের নদীগুলো কেমন দেখলি?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘দেখে তো এলাম রাজধানী ঢাকার আশ-পাশের নর্দমাগুলো।’
দেশি বন্ধুটি বললো, ‘কী বললি! শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী এগুলো কী নদী না?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘দেখে মনে হয় এগুলো নদী না!’
দেশি বন্ধুটি জিজ্ঞেস করলো, ‘তাহলে এগুলো কী?’ বিদেশি বন্ধুটি বললো, এগুলো মনে হয় রাজধানী ঢাকার বড়সড় নর্দমা!’
দেশি বন্ধুটি বললো, ‘নদীকে তুই বলছিস নর্মদা? কিন্তু কেন?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘নদীর পানিতে মিশ্রিত বিষাক্ত কেমিক্যাল। এই পানি তো মনে হয় পান করা যায় না! এমনকি কোনও ফসলী জমিতেও মনে হয় দেওয়া যায় না। তাই বললাম, এগুলো নদী না। এগুলো হচ্ছে, একেকটা নদী শহরের একেকটা ঢাকনা বিহীন বিশালাকার ড্রেন। এছাড়া আর কিছুই না।’
দেশি বন্ধুটি জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা দোস্ত, বিদেশে এসব বড় বড় ঢাকনা বিহীন ড্রেনগুলো কি এভাবেই নদীর স্রোতের মতো বয়ে চলে?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘তা বলতে পারছি না। কারণ, বিদেশে এসব বড় বড় খোলা ড্রেনগুলো কারোর চোখেই পড়ে না। এসব বড় আকারের ড্রেনগুলো থাকে মাটির নিচ দিয়ে।’
দেশি বন্ধুটি আক্ষেপ করে বললো, ‘এসব নদীগুলোর এরকম অবস্থা যে কারা করলো, তা আমার মাথায় খেলছে না। তুই কি দোস্ত বলতে পারিস, আমাদের দেশের নদীগুলোকে ড্রেন বানাচ্ছে কারা?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘যাঁরা পারে তাঁরা! মানে, বড় বড় শিল্পপতিরা।
দেশি বন্ধুটি জিজ্ঞেস করলো, ‘তা কীভাবে করছে?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘ক্ষতার বলে আর দাপটে। শিল্পপতিদের টাকার কাছে প্রশাসন তো সবসময়ই দিশেহারা!
দেশি বন্ধুটি আক্ষেপ করে বললো, ‘একসময় বাংলার নদীগুলোর পানি ছিল পরিস্কার টলটলা! শুনেছি বাংলাদেশের নদীর পানি দিয়ে বিদেশিরা ঔষধে ব্যবহার করতো। আর এখন সেই নদীর পানি আর স্বচ্ছ টলটলা আয়নার মতো পরিস্কার নেই! নদীর পানি এখন কালো কুচকুচে। পানের অযোগ্য। পানিতে পচা দুর্গন্ধ। পানির পচা গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণেই শহরবাসী রোগে ভুগে প্রাণ হারায়! তাহলে দোস্ত এখন উপায়?’
বিদেশি বন্ধুটি বললো, ‘উপায় হলো যেসব শিল্পপতিরা মনের আনন্দে নদীতে বিষাক্ত কেমিক্যালের পানি ফেলছে, সরকারের উচিৎ হবে তাঁদের কাছ থেকে লিটার প্রতি হিসাব করে জরিমানা আদায় করা। এরজন্য সরকার তাঁদেরকে লিটার প্রতি একটা দাম নির্ধারণ করে দিবে। এরপর সেসব শিল্পপতিরা যতখুশি তত বিষাক্ত পানি নদীতে ছাড়বে বা ফেলবে।

‘তারপর তাঁরা প্রতিদিন যত লিটার বিষাক্ত কেমিক্যালের পানি নদীতে ফেলবে, সরকারের কাছে তার একটা হিসাব থাকবে। প্রতি মাসে ঠিক তত লিটার পানির ন্যায্য দাম সরকারকে বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে। সরকার সেই টাকা দিয়ে ভুক্তভোগী মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। যেমন: নদীতে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে মাছ নেই। জেলেরা জাল ফেলে মাছ পাচ্ছে না। কৃষকরা নদীর পানি ফসলী জমিতে দিতে পারছে না। তাই আগের মতো জমিতে ফসল হচ্ছে না। নদীর দূষিত পানি শোধন করার পরও পানিতে দুর্গন্ধ থেকে যায়। সেই পানি পান করে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। নদীর দূষিত পানির কারণে নদী এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে গাছপালা মরে যায়। পানির দুর্গন্ধে নানারকম রোগব্যাধির সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যার জন্যই সরকার শিল্পপতিদের কাছ থেকে লিটার প্রতি জরিমানা আদায় করবে। আদায়কৃত সেই অর্থ সরকার যদি এসব ভুক্তভোগীদের মাঝে খরচ করে, তাহলেই কিছুটা সমস্যার সমাধান হতে পারে। তা না হলে শত চিল্লাচিল্লি করেও কোন লাভ হবে না। শিল্পপতিরা ক্ষেপে গেলে, আরও বেশি করে বিষাক্ত কেমিক্যালের পানি নদীতে ফেলবে। তাহলে সামনে আরও বিপদ হবে।’
দেশি বন্ধুটি বললো, ‘আমাদের দেশের সরকার কি কখনো এরকম নীতিমালা তৈরি করবে? মনে হয় না, দোস্ত! তারচেয়ে বরং এবিষয়ে আর কোনও কথা না বলে, চুপচাপ থাকাই ভালো মনে করি!’

নক্ষত্রের গোধূলি-২০

৩১।
রাশেদ আর ফিরোজ একই স্কুলে পড়েছে। স্কুল ছাড়ার পর এই প্রথম দেখা। লন্ডন আসার দিন ঠিক হবার পর কামরুলের কাছ থেকে ফিরোজের ফোন নম্বর, মেইল ঠিকানা নিয়ে যোগাযোগ করেছিলো। প্রায় ত্রিশ বছর পর দেখা। খেতে বসে আরও আলাপ হলো। শেফালি ভাবী একটা ড্রাইভিং স্কুল চালায়। মনিরা যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। মনিরা জানে ওর সব বন্ধুরাই এমন। একেক জনের সাথে বিশ, পঁচিশ বা ত্রিশ বৎসর পরে দেখা হলেও কারো ভাব দেখে বোঝার উপায় নেই যে এতো দিন পর দেখা হয়েছে, এমনকি এর মধ্যে এদের কারো সাথে কোন যোগাযোগও নেই তবুও কেও কাউকে কোন অবহেলা করে না ভুলে যায় না। সবাই একই রকম, আন্তরিকতায় কেও কম না। আনন্দে, কৃতজ্ঞতায়, পাগল স্বামীর প্রতি ভালোবাসায় মনিরার চোখ ভিজে উঠলো।
-সত্যিই ভাবী আমি যে এখানে এসে এমনটা পাব তা কল্পনাও করতে পারিনি। মনে হচ্ছে আপনি আমার কত দিনের চেনা, কত আপন, বলেই শেফালিকে জড়িয়ে ধরল।
-না ভাবী আপনার ভাই শুধু বলেছে ওর অনেক দিনের পুরনো এক বন্ধু বৌ নিয়ে আসছে। আমাকে আর কিছু বলেনি।
-মনিরা বলে উঠলো তাহলে দুইজনে একই রকম?
-শেফালি বললো তা না হলে বন্ধুত্ব হবে কি করে?
মনিরার চোখ এর পরে আর পানি সামলাতে পারেনি ফোটা ফোটা করে গড়িয়ে পরছে।
তাই দেখে ফিরোজের মা বললো
-ওকি মা তুমি কাঁদছ কেন? আমি তো জানতাম না যে তুমি আমাদের আপন জন। ফিরোজ আমাকেও কিছু বলেনি। আমি জিজ্ঞেস করাতে শুধু বলেছিলো তোমাদের পাশের গ্রামেই।
-তা বলত মা গ্রামের কি অবস্থা, কে কেমন আছে, কোথায় কি হচ্ছে, কৌড়ির ব্রিজটা কি হয়েছে, ঢাকা থেকে ঝিটকা যেতে এখন রাস্তার কি অবস্থা? এরকম আরও নানা কৌতূহল। তোমার ছেলে মেয়ে কজন, বাড়িতে কে কে আছে, তোমার বাবা চাচার কি অবস্থা?
-আমার বাবা তো অনেক আগেই চলে গেছেন ফুফু, চাচাও এইতো কয়েক বৎসর হলো। কাসেম চাচাকে কিছু দিন আগে দেখেছিলাম, আমাদের বাড়ি এসেছিলো। আমিও ফুফু আম্মা আপনার মতই প্রায়, দেশে থেকেও গ্রামে খুব একটা যেতে পারি না
-আচ্ছা চলো শুয়ে পর আজ আর না কাল গল্প করব, এতদিন পর গ্রামের মেয়ে পেলাম আমার যে কি ভালো লাগছে মা। আজ তোমরা ক্লান্ত, যাও বিশ্রাম নাও।
-ভাবী চলেন। এখানে কিন্তু আপনাদের ঢাকার মত বড় বড় ঘর নেই। ছোট ঘর, শীতের দেশে ঘর গরম রাখতে গেলে বড় ঘরে অনেক খরচ হয় তাই সবাই ছোট ছোট ঘর বানায়।
-কি যে বলেন ভাবী, ছোট আর বড়। আমি যে কি দুশ্চিন্তায় ছিলাম, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কোথায় থাকবো আমি তো আসতেই চাইছিলাম না। শুধু ওর পাগলামির জন্য আসা।
-এসে ভালো করেছেন, এর পরে আপনি যে কোন সময় আসতে পারবেন।

৩২।
মনিরা আর রাশেদ সাহেব আপাতত সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উপরে তাদের ঘরে চলে এলো। ছোট্ট একটা ঘর, সিঙ্গেল একটা খাট। এর মধ্যেই তাদের দুজনকে থাকতে হবে। রাশেদ সাহেব বাঙ্গালির স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে একটু বেশি লম্বা বলে দেশের বাজারে যে মাপের খাট তৈরি হয় তাতে শুতে পারে না। নিজে কাঠ কিনে এনে বাড়িতে মিস্ত্রী ডেকে তার নিজের মাপ মত খাট বানিয়ে নিয়েছেন। আজ এই ছোট্ট খাটে দুজনকে শুতে হবে। মনির দিকে চেয়ে হেসে বললেন কি করবে, এর মধ্যেই শুয়ে পর। লম্বা জার্নি করেছ তুমি ক্লান্ত। খাটের দিকে চেয়ে লাভ নেই। এখানে যা পেয়েছ তাতেই শোকর কর। না হলে এতক্ষণে ভিক্টোরিয়া স্টেশনের কাছা কাছি বা হোয়াইট চ্যাপেলের কাছে কম দামের ‘বেড এন্ড ব্রেক ফাস্ট’ খুঁজতে হতো। অনেক পেয়েছি এখানে।
দেখেছ, ফিরোজের বোন, বোন জামাই আমাদের জন্য এই ঘর ছেড়ে অন্য বাসায় গিয়ে থাকছে। এদেশে যার যার নিজের যতটুক দরকার ততটাই ঘর কিনে। এতো বড় ঘর দিয়ে কি করবে? এটাই এই লন্ডনের জীবন। দেশের মানুষ যেমন ভাবে যারা লন্ডন থাকে তারা না জানি কত সুখে আছে আসলে তা নয়। হ্যাঁ রোজগার ভাল কিন্তু জীবনের অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত থাকতে হয় এখানে। ক’দিন থাক দেখবে, এখানকার জীবন কেমন।
এই যে এই জানালা দেখছ দেখ এতে মোটা দুইটা কাঁচ লাগানো রয়েছে, এর নাম হচ্ছে ডাবল গ্লেজিং যাতে শীতের তাণ্ডব দ্বিতীয় কাঁচ ভেদ করে ঘরে ঢুকতে না পারে। শীত বল আর গরম বল কখনোই জানালা খুলে রাখতে পারবে না। আমাদের দেশের মত বারান্দায় বসা কাকে বলে এরা জানেই না। কাল দিনে দেখবে বাড়ি ঘর একেকটা একেক দিকে মুখ করা। দক্ষিণ মুখী হতে হবে নয়তো একান্ত পূর্ব মুখী না হলে বাতাস এসে দেহ মন জুড়িয়ে দিবে এদের এমন ভাবনা নেই। আরও দেখবে, এখানে কেও কারো নয়। কেও কাউকে এক কাপ চাও খেতে বলে না নিতান্ত কোন উদ্দেশ্য না থাকলে। তবুও যা করেছে আমি ভাবতেও পারিনি। সেই কবে স্কুল ছেড়ে আসার পর আর দেখা হয়নি, জানা না থাকলে ওকে দেখে হয় তো চিনতেও পারতাম না। ও যা করেছে সে ঋণ আমি কোন দিন শোধ করতে পারব কিনা জানি না। ওর বৌ যদি এমন না হতো তাহলে হয়ত ফিরোজের পক্ষে এতটা সম্ভব হতো না।

সবই আল্লাহর ইচ্ছা নয়তো এমন জামাই আদর? অসম্ভব। আমি তো ভাবতেই পারিনি, শুনেছি এদেশের মেয়ে তাই ভেবেই নিয়েছিলাম সাদা কেও হবে, এতো দিন তাই মনে করেছি। নিজের আপন ভাই তো রয়েছে তাকে তো জানাতেও পারিনি। যাক কাল থেকেই সব দেখতে পাবে। এখন শুয়ে পর, আমরা তো আর হানিমুন করতে আসিনি বা সখ করে বেড়াতে আসিনি। আমাদের ভাগ্য টেনে নিয়ে এসেছে এখানে।
ভোরে সেহরি খাবার জন্য উঠেছিলো, কোন রকম সেহরি খেয়েই আবার ঘুম। সকালে ঘুম ভেঙ্গেছে অনেক দেরীতে। ভাবী বা ফিরোজ কেও ইচ্ছা করেই ডাকেনি।
মনিরার সাড়া পেয়ে ভাবী উপরে এসে জিজ্ঞেস করলেন -কি ভাবী ঘুম হয়েছে?
-হ্যাঁ ভাবী দুই দিন পথে থেকে ভীষণ টায়ার্ড ছিলাম শোবার সাথে সাথেই ঘুম কোথা দিয়ে এত বেলা হয়েছে বুঝতেই পারিনি।

নিচে নেমে সবাই গল্প করছে। চলো দেখি তোমাদের জায়গাটা কেমন দেখায়। ঘরের বাইরে বের হলো, প্রচণ্ড শীত, গরম কাপড় গায়ে তবুও কাঁপুনি লাগছে। ওর বাড়িটা বেশ সুন্দর। সামনে একটু ফুলের বাগান, এখন শীত বলে কোন ফুল নেই শুধু গাছ গুলি দাঁড়িয়ে আছে। তারপরেই বাচ্চাদের খেলাধুলার একটু জায়গা। আবার তার পরেই রাস্তা। কাল যে গাড়িতে করে এসেছে সেটা রাস্তার পাশেই ওর বাড়ির সামনে রেখেছে। ফিরোজ বললো ওটা শেফালির।
-তোমার কোনটা?
-ওই তো ওর পিছনের টা।
শীত সহ্য করতে না পেরে মনি ভিতরে চলে এলো। বাড়ির পিছনে শাক সবজি করার মত খানিকটা মাটি, চারদিকে কাঠের বেড়া দেয়া। এক কোনায় একটা আপেল গাছ। নীচ তলায় বসার ঘর, রান্না ঘরে আবার ছোট একটা খাবার টেবিল পাতা আছে, ছোট একটা টয়লেট আর একটা ঘর যেখানে ওর মা থাকে। উপরে দোতলায় দুইটা ঘর, বাথরুম টয়লেট, তিনতলায় চিলে কোঠার মত একটা ঘর। বেশ ছিম ছাম করে সাজানো। সারা বাড়িতে মোটা কার্পেট বিছানো। এমনকি বাথরুমেও। বাথরুমের এক পাশে পর্দা ঘেরা বাথ টাব। এখানে আমাদের দেশের মত ঘরে ঘরে জনে জনে একটা করে বাথরুম নেই। অতিরিক্ত কোন ঘর নেই। এখানে একটা বাড়ি আছে এই যথেষ্ট। বিলাসিতা করার মত বা অনর্থক খরচের বোঝা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। শীত কালে বাড়ি গরম রাখার জন্য যথেষ্ট গ্যাস বিজলী খরচ হয়ে যায়। এর নাম লন্ডন শহর। সারা দিন কাজ আর কাজ, বাড়িতে কতক্ষণই থাকার সুযোগ পায়। রাতে কোন রকমে শরীরটাকে একটু বিছানায় ফেলে দেয়া।
বাড়িতে সেন্ট্রাল হিটিং চলছে তবুও বসার ঘরে আলাদা একটা হিটার চলছে। নভেম্বরের প্রথম, এর মধ্যে লন্ডন শহরে আর কেও জায়গা পাক আর না পাক শীত মহোদয় তার আসন পেতে নিয়েছে। ফিরোজের মা মনিকে ডেকে পাশের রান্না ঘরে গেলো।

ঔষধ বাকি নাই

রুগী: ডাক্তার বাবু আছেননিও দোয়ানে আম্নে?
ডা: কি অইছে আম্নের, না কইলে বুঝি ক্যামনে!
রুগী: কইতাছি তাত্তাড়ি কইরা আহেন এট্টু সামনে।
ডা: আইছি আমি, এলা কন সমস্যাডা কোনানে?

রুগী: আমার শৈলডা খালি কাঁপে, মাথাডাও ঘুরে!
ডা: ওহ্ বুজ্জি বুজ্জি, আম্নেরে জ্বরে ধরছে জ্বরে!
রুগী: মনে অয় জ্বরের লগে এট্টু এট্টু ঠান্ডাও আছে!
ডা: তাইলে ত আম্নেরে এক্কারে ভালা ধরাই ধরছে!

রুগী: অহনে কি এই অসুখের ভালা ওষুধ আছে?
ডা: থাকতো না ক্যা? ভালা বিদেশি ওষুধই আছে!
রুগী: ঠান্ডা জ্বরের লগে কইলাম কাশিও আছে!
ডা: তায়লে ত আম্নেরে এইবার ধরার মতনই ধরছে!

রুগী: কন কিও ডাক্তার? তায়লে এইডার ব্যবস্থা?
ডা: খারন দেহি, দেইখা লই আম্নের শৈল্লের অবস্থা!
রুগী: কি দেখলেন ডাক্তার বাবু? অবস্থা কি ভালা?
ডা: অবস্থা সুবিধার না, জ্বর অইয়া গেছেগা কালা!

রুগী: হায়! কন কি? শেষমেষ কালাজ্বরে ধরছে?
ডা: হ, হেডাই ত দেখতাছি, পরীক্ষায় ধরা পড়ছে!
রুগী: তয়লে ওষুধ দেন, টেকা কইলাম দিমু পরে!
ডা: হালার রুগী আমার, তয়লে মর তুই কালাজ্বরে!

পর্যবেক্ষণ যখন শ্রেয়

যখন কোন ঘটনা সংঘটিত হওয়া এবং না হওয়ার সমান সম্ভাবনা হয়; তখন হতে পারে বা নাও হতে পারে ধরে নিয়ে বিচার করাটায় শ্রেয় যদি সি বিষয়টি আপনি নিজে প্রত্যক্ষ করে না থাকেন। তার মানে যেহেতু আমি ঘটনাটা প্রত্যক্ষ করিনি সেহেতু, হয়েছে অথবা হয়নি ধরে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করায় শ্রেয়। প্রায়শই দেখা যায় অসামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত খবর কেউ হয়তো শেয়ার দিয়েছে, আর যদি সেটা আমার বিশ্বাস করতে স্বাচ্ছন্দ লাগে তাহলে আমাার বিশ্বাসের পক্ষে আমি এমনটিই প্রচারমূলক ভূমিকা রাখি যে, মনে হয় ঘটনাটা আমার সামনেই ঘটেছে। কিন্তু এহেন স্বাচ্ছন্দমূলক বিপরীত ভূমিকা রাখার সমান সম্ভাবনার ঘটনাট পক্ষ নিয়ে বা বিপক্ষতার পক্ষ নিয়ে আমরা হয়তো অনেক মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছি অথবা সত্যকে মিথ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছি। অতএব, নিরপেক্ষভাবে ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করার চেয়ে শ্রেয় আর কোন ভালো বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয়। আমাদের বিশ্বাস কারও যাতে অনিষ্ঠ না করে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চয় সাজগ দৃষ্টি রাখবো।