বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

ঘ্রাণ_অণুগল্প

কখনো যদি টেলিফিল্ম বানাই, এই গল্পটিকে বানাবো। আমার উপন্যাস (অসমাপ্ত) ‘আগন্তুক’ এর একটি পর্ব ‘ঘ্রাণ’।

আবার শেয়ার করছি:
________________________________
কিছুক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। সাগরপারের যে হোটেলটিতে রাহেলা উঠেছে, কক্সবাজার এলে সে এখানেই ওঠে বরাবর। কেন যে উঠে সেটা কখনো মন জানতে চায়নি; সে ও মনকে জানায় নাই। কিসের এত ঠ্যাকা পড়েছে! মন কি কখনো নিজের খারাপ-ভালো অবস্থার কথা ওকে জানায়?

এই হোটেলের নিজস্ব সৈকত রয়েছে। হোটেলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘সাগর-স্নানের’ ব্যবস্থা থাকায় সৌখিন ভ্রমণ পিপাসুরা এখানেই রুম বুকড করে রাখে।

দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছে সে একা একা। সামনে অন্তহীন সাগর। উপরে মহাকাশ অসীম ব্যপ্তি নিয়ে মাথার ওপরে ছায়া দিয়ে আছে। হঠাৎ এক সাগরকন্যার মন খারাপের দরুন আকাশবালিকারাও গাল ফোলানো গম্ভীরতায় নিজেদের শুভ্রতাকে বিসর্জন দিয়ে আঁধারে ডুবে যায়। এরপর নিঃসঙ্গ রাহেলা নামের এক সাগরকন্যার কষ্টগুলো অনুভব করেই ওরা কেঁদে ওঠে। টানা কেঁদে চলে ঘন্টাখানিক। এরপর শকের প্রাথমিক ধাক্কা কেটে গেলে একটু শান্ত হয়। কিন্তু নিজেদের আভরণ সেই আঁধারেই ঢাকা থাকে। পূর্বের শুভ্র উজ্জ্বলতা মাঝে প্রিয় আকাশী রঙে ফিরে আসতে ওদের আরো কিছুটা সময় লেগে যাবে।

এই প্রাইভেট সৈকতে আর ভালো লাগে না রাহেলার। যদিও নিরিবিলি থাকাটা ওর বেশী পছন্দের। কিন্তু এই পর্যটন নগরে অচেনা রঙিন মানুষদের মাঝে থেকে নির্জনতার স্বাদ নিতেই চেয়েছে সে এবার। ভেজা কাপড়ে বের হবে, না রুমে গিয়ে শুকনা কাপড় পরে বের হবে? পলকের দ্বিধায় একটু বিচলিত হলেও শেষে ভেজা কাপড়েই যাওয়াটা স্থির করে মনের সাথে। অবুঝ মন! সব বুঝে, কিন্তু কিছু-ই বুঝে না।

এ কেমন অনুভব! কেন এমন উপলব্ধি! এই নিঃসঙ্গতা কেন?
ভেবে ভেবে হেঁটে হেঁটে লাবনী পয়েন্টকে ছাড়িয়ে কখন এসেছে খেয়াল-ই নেই। সুগন্ধা পয়েন্টের দিকে আগায়। ভেজা বালু রোদবিহীন আলোক স্বল্পতায় ও কেমন চকচক করছে! আদৌ কি করছে, না এটাও ওর খেয়ালী মনের কল্পনা? শুধুমাত্র এই কল্পনার কারণে-ই নাকি বিগত দিনগুলিতে একজন মানুষকে কেন্দ্র করে ওর কাছের প্রিয় দুজন মানুষ অনেক দূরে সরে গেছে। যে মানুষটিকে রাহেলা দেহ-মন-প্রাণ সব-ই দিয়ে নির্ভার হতে চেয়েছিল, সে নাকি বাস্তবে আসলে কেউ না। সব ওর মনের কল্পনা। দেশের এবং বিদেশের নামকরা সব সাইক্রিয়াটিস্ট ও একই কথা বলেছে। বলেছে এটা রাহেলার মুডের সমস্যা… এক ডিস্টার্বড ভিশন ওর ভেতরে হঠাৎ করেই জন্ম নিয়েছে। তাই ওর অবচেতন মনের চেতন অংশ অচেতন অংশের সাথে সংঘর্ষে জড়ানোর কারণেই যত সব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু এদেরকে কিভাবে রাহেলা বুঝাবে যে, এটা ওর ভেতরের কোনো ডুয়াল ক্যারেক্টারের অনুভবের কিংবা মুডের সমস্যা নয়। সে যা দেখতে পায়, সেটা ওর দৃষ্টি বিভ্রম নয়। সে ঘ্রাণও পায়। ভালোবাসার ঘ্রাণ.. ঘৃণার ঘ্রাণ.. ঘ্রাণের ঘ্রাণ- এসবই সে সেই নির্দিষ্ট মানুষটিকে সামনে পেলেই পায়। বিভ্রমের সময়েও কি আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় এরকম তীব্রতর ভাবে নিজেকে প্রকট করায়? হয়ত… হয়ত না।

কোনো ভাবেই কোনো কাজ না হওয়ায় ওর বাবা নিজের মত করে একটা জীবন ওকে উপহার দিলেন। ওর কাছে কেউ কিছু জানতে চাইবে না। ওকে জবাবদিহি করতে হবে না কারো কাছে। শ্রেফ নিজের জন্য এক আলাদা ভূবনের একমাত্র সম্রাজ্ঞীর এক পোষ্ট-ই বাবা ওকে দিলেন। শর্ত একটা-ই। বাবার সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। সেটা সেলফোনের দ্বারা-ই হোক, কি জিপিএস এর মাধ্যমে প্রযুক্তির উচ্চতর ব্যবহারের দ্বারা-ই হোক। একভাবে হলেই হলো। এটা ছিল বাবার শর্ত।

রাহেলা ও বাবাকে ওর নিজের শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করিয়েছিল। ওর পেছনে কোনো মানুষকে বাবা নজরদারী করতে লাগাবেন না। বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে সেটা ও মেনে নিয়েছিলেন। তবে এই একটা ব্যাপারে বাবা যে তাঁর কথা রাখবেন না, সেটা রাহেলা বেশ ভালো-ই বুঝেছিল। অন্তত আর কাউকে না হোক, সবুর চাচাকে বাবা অবশ্যই নজরদারির এই কাজে লাগাবেন-ই। ছেলেবেলা থেকেই ওকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন সবুর চাচা। আর বাবা না বললেও সবুর চাচা ঠিকই তাঁর দীর্ঘদিনের দায়িত্ব পালন করেই যাবেন।

সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ! এদের ভেতরে যে কেউ সবুর চাচা হতে পারেন। নিজের ভোল পাল্টাতে ওনার মত দক্ষ এই সময়ে হয়ত আর কেউ-ই নেই। আশেপাশের সবার দিকে অসহ্য অলস গতিতে রাহেলা চোখ বুলিয়ে যায়। অতি পরিচিত মুখের আসল জিনিস দুটি একবার দেখলেই সে চাচাকে চিনতে পারবে। অসম্ভব উজ্জ্বল সবুর চাচার চোখ। বাঘের মত। এই বয়সেও বাঘের ক্ষিপ্রতায় চলাফেরা করেন।

আনমনে হেঁটে হেঁটে কখন যে সুগন্ধা বিচও পার হয়ে এসেছে রাহেলার খেয়াল নেই। ধীরে ধীরে মানুষজনের ভিড়টা হাল্কা হয়ে আসাতে সাগরের নির্জনতা টানা গর্জনের ভেতরেও কেমন এক সুরেলা মৌণপ্রহরের কোমল ছুঁয়ে যাওয়ায় রাহেলাকে উদ্দীপ্ত করে! আরো কিছু দূর এগিয়ে গিয়েই বেশ দূরে একজনকে ট্রেইল রেখে ধীরে ধীরে হেঁটে যেতে দেখে। পেছন থেকে এই অচেনা পুরুষটিকে কেন জানি কাছে-দূরের অনুভবে অনুভবক্ষম ওর বড্ড চেনা কারো মত লাগে। একপলকে মনে হয়, ‘সে না তো!’ আর যখনই তাঁর কথা ওর মনে হয়, ওকে পেছনে ফেলে পায়ের ছাপ রেখে এগিয়ে যাওয়া মানুষটির সেই চিরপরিচিত ঘ্রাণ পায় সে! চিত্তে স্বেচ্ছা-বিসর্জনের করুণ রাগিনী মুহুর্তে ভেতরের স্নায়ুদের প্রহ্লাদ নৃত্যে কেমন যেন মাতোয়ারা করে তোলে রাহেলাকে! আকাশ-বাতাস-পাতাল জুড়ে কেবল একজনের আগমনী ধ্বনি বেজে চলে। মহাসাগরের মহাতল থেকে নিষিদ্ধ সৌরভে আশপাশটা ভরে যেতে থাকে। এ এক নিষিদ্ধ লোবান! সবাই এই ঘ্রাণে উদ্দীপ্ত হলেও রাহেলার জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সৌরভের শুরু প্রান্তেই ওর জন্য এক বিশাল সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে, ‘নো-ট্রেসপাসিং!’

তাই থমকে যেতে-ই হয়। আর যখন-ই সে থেমে যায়, পেছন থেকে অতীত এসে ওকে ঘিরে ধরে। এক সুদর্শণ অনুভবে-কল্পনায় ওর সামনে দাঁড়ায়। কল্পনার চরিত্রটি তাঁর বাস্তব হাত দিয়ে রাহেলাকে ইচ্ছেমত ছুঁয়ে দিয়ে যায়! শীৎকারে চীৎকারে অনুভবের তীব্রতর কম্পনে একা এক সাগরতীরে এক যুবতী বেঁকে যেতে থাকে। আশেপাশে কোথায়ও কেউ নেই। আর থাকলেও এমন নিঃসঙ্গ পরিবেশে এক একেলা নারীর অসহায় মুহুর্তের সুবিধা না নেবার মত দৃঢ় মানসিকতার পুরুষ আজকাল কোথায় পাওয়া যায়? তবে রাহেলার এই মুডের গন্ডগোলের তীব্রতর সময়ে অযাচিতভাবে মেঘবালিকারা আবারো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। টানা বর্ষণে ক্রমশঃ শীতল হতে হতে একসময় সে বেলাভূমে বালির ওপর লুটিয়ে পড়ে। গলায় ঝোলানো মোবাইলে রিং হতে থাকে। একজন বাবা ফোন করেছেন তাঁর প্রিয় কন্যার খোঁজ জানার জন্য।

পৃথিবীর বৃহত্তম সাগরপারে অবিন্যস্ত লেপ্টানো পোষাকের নিচে এক হৃদয় আরেক হৃদয়ের ঘ্রাণে আপ্লুত হতে চেয়ে বিবশ হতে থাকে। চেতনা লুপ্ত হলেও ভেতরের প্রাণ তো আর লুপ্ত হয় না। তাই বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে এক হৃদয়… ভিজতে থাকে ভিতরে বাহিরে সব দিকেই.. সব ভাবে।

#ঘ্রাণ_অণুগল্প।

মা


আমার নানার চার মেয়ে ও দু’ছেলের মধ্যে আমার মা ছিলেন সবার বড়। নানা আমার মাকে খুব ভালোবাসতেন। আমাদের বাড়ি থেকে নানার বাড়ি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। গ্রামের নাম চরবাড্ডা মির্জাচর। সবুজ গাছপালা বেষ্টিত গ্রামটি খুবই চৎমকার। মাঝে মাঝে আমার মাকে দেখার জন্য নানা আমাদের বাড়িতে আসতেন। আসার সময় নানা মায়ের জন্য কাঁঠাল, আম, কলা, আনারস, বেদানা, আঙুর আরো কত কি যে নিয়ে আসতেন তার কোন হিসেব নেই। নানা যখন চলে যেতেন, তখন মা প্রায়ই কাঁদতেন আর আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতেন। তখন প্রিয় বাবা চলে যাওয়ায় নিজের মধ্যে শূন্যতা অনুভব করতেন।
নানাকে দেখার সুভাগ্য আমার হয়নি। আমি দুনিয়াতে আসার পূর্বেই আমার নানা এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। নানার মৃত্যুতে আমার মা একদম পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। সেই মৃত্যুর শোক আজও আমার মা ভুলতে পারেননি। এখনও নানার কথা মনে হলে কেঁদে কেঁদে চোখ ফোলায়। নানার কথা চিন্তা করে আমিও মাঝে মাঝে কাঁদি। আমি দুনিয়াতে এসে নানার স্নেহ, ভালোবাসা হতে বঞ্চিত হলাম। মনভরে নানাকে ডাকতে পারলাম না। তবে নানীর কাছ থেকেই নানার সমস্ত আদর ভালোবাসা পেয়েছি।
আমার বাবা একজন সাধারণ শ্রমিক। আমার জন্মের পরই আমাদের সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। তখন মা মাঝে মাঝে নীরবে বসে কী যেন চিন্তা করতেন। আর দুচোখের জল ফেলতেন।
আমরা তিন ভাই, এক বোন। এর মধ্যে আমি বড় সন্তান। বাড়ির সমস্ত কাজ আমার মায়ের একা করত হতো। কারণ মায়ের কোন জা ছিল না। বাবা সারাদিন কাজ করার পর রাতে বাড়িতে ফিরতেন। তখন আমার মা বাবার পাশে বসে তাল পাতার পাখায় বাতাস করে ভাত খাওয়াতেন। আর তখন সংসারের সুখ দুঃখ নিয়ে আলোচনা করতেন। কিভাবে আমাদেরকে বড় করবেন তা নিয়ে ভাবতেন। রাতে খাওয়ার পর মা আমাকে সুন্দর সুন্দর গল্প বলে ঘুম পড়াতেন। আমি অসুস্থ্য হলে মায়ের চিন্তার শেষ থাকত না। আমার রোগ মুক্তির জন্য সারাক্ষণ খোদার কাছে প্রার্থনা করতেন। সারা রাত আমার পাশে বসে আমার সেবা যত্ন করতেন। আমার প্রতি একটুও বিরক্ত দেখাতেন না।
আমি যখন একদম ছোট, তখন এক কান্ড ঘটেছিল। আমার মা বাহিরে চুলোয় রুটি খোলা দিচ্ছেন। তখন বাবা ও আমরা চার ভাই-বোন পিঁড়ি নিয়ে চুলোর পাশে বসলাম। মা একে একে সবাইকে ভাগ করে তিনটি করে রুটি দিলেন। আমি তখন রুটি নিয়ে একটু দূরে বসেছিলাম। আমি একটি রুটি খেয়ে অন্য একটি রুটি খেতে যাব এমন সময় একটি কুকুর এসে আমার বাকী রুটিটা নিয়ে দিল দৌঁড়। আমি তখন রুটি আনার জন্যে দৌঁড়ে গিয়ে কুকুরের গলায় জড়িয়ে ধরলাম। ভাগ্যিস কুকুর তখন আমাকে কামড় দেয়নি। কুকুর তৎক্ষনাত রুটি ফেলে চলে গেল। আর তখন আমি কুকুরের কাছ থেকে রুটিটি উদ্ধার করে মায়ের ভয়ে কাঁদতে লাগলাম। আমি ভাবছি মা বুঝি আমাকে মারবে। কিন্ত না আমার মা লক্ষী আমাকে মারেনি বরং আদর করে বুকের কাছে টেনে নিয়ে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে বললেন, ‘তুই আমার লক্ষী ছেলে কাঁদিস না। এটা তোর দোষ না। আর এ রুটি খাসনে। মুরগীকে দিয়ে দে। আমি এক্ষুনি আবার রুটি বানিয়ে দিচ্ছি।’
মা আমাকে তখন আবার রুটি বানিয়ে দিলেন।
সারাদিন কাজ করার পর সন্ধ্যা হলে মা আমাকে পড়াতেন। আমি মায়ের সাথে বসে অ, আ, ক, খ পড়তাম আর মায়ের মুখের দিকে চেয়ে থাকতাম। আমি যখন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম তখন থেকেই মায়ের কাজে একটু একটু সাহায্য করতাম।
ঈদ এলে আমাদের এলাকায় পিঠা বানানোর ধুম পড়ে। বিশেষ করে ঈদ-উল ফিরত এর সময় চাঁদ উঠার একদিন পূর্বে প্রতি ঘরে ঘরে পিঠা বানানো হতো। বাড়ির আশের সবার মতো আমার মাও পিঠা বানাতেন। মা গায়িল, সায়িট দিয়ে গুড়ি কুড়তেন। তারপর পানি সিদ্ধ করে মাধা তৈরি করতেন। পরে পিঠা বানাতেন। আমি তখন আমার মাকে পিঠা বানানোর কাজে সাহায্য করতাম। আমি লতি বানিয়ে দিতাম। মা তখন নিপুণ হাতে সুন্দর করে পিঁড়ির উপর হাত ঘুরিয়ে সেয়ুই বানাতেন। মায়ের সব কাজই আমার খুব ভাল লাগে। মা ঈদের দিন সকালে গুড় দিয়ে সেয়ুই পাক করতেন। ভাই-বোন সবাই মিলে সেয়ুই খেতাম। ঈদগাহে যাওয়ার সময় বাবা আমাকে টাকা দিতেন। মা আদর করে আমাকে জামা কাপড় পড়িয়ে দিতেন। সুন্দর করে আমার চুলগুলো আঁচড়িয়ে দিতেন।
আমি পরিবারের বড় ছেলে তাই বাবা-মার অনেক স্বপ্ন আমাকে নিয়ে। লেখাপড়া করে একদিন অনেক নামি-দামী ব্যক্তি হব। সেই স্বপ্নে বিভোর আমার পিতা-মাতা। মাঝে মাঝে দেখতাম আমার মা পাক ঘরে বসে কাঁদতেন আর কি যেন এক শূন্যতা ‍অনুভব করতেন। আমি তখন মাকে বলতাম, ‘মা তুমি কাঁদছ কেন?’
মা আমাকে দেখে সাথে সাথে আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে মুখে হাসির রেখা টেনে বলতেন, ‘কই কাঁদিনাতো।’
আমার জন্মের পর থেকেই আমার মায়ের দুঃখ বেড়েছ। প্রায়ই মা আমাকে দুঃখের কাহিনী শুনাতেন। মাঝে মাঝে মা আমাকে নিয়ে নানার পুরানো ইতিহাস বলতেন। এত কষ্টের পরও আমার লক্ষী মা আমার বাবা ও ভাই-বোনদের প্রতি একটুও বিরক্তবোধ করতেন না। শত কাজের মাঝেও পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিকমত আদায় করতেন।
মমতাময়ী মা তাঁর সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বড় করছেন। তাইতো আমার মাকে দেখলে মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত দুঃখ, কষ্ট ভুলে যাই। জগতের শ্রেষ্ঠ মায়েদের মধ্যে আমার মা একজন। আমার মায়ের মত এমন মা কয়জন আছে এ পৃথিবীতে? মাগো, তুমিই আমার প্রাণ লক্ষী মা তুমি।
রচনাকাল-জুন-১৯৯৯খ্রিস্টাব্দ।
[জলছবি বাতায়ন নববর্ষ সংকলন ১৪২১ বাংলা এ প্রকাশিত]

অমীমাংসিত লেফাফা ৪

অমীমাংসিত লেফাফা ৪

আমি নদীর জল দুই হাতে তুলে নিজের ছায়া দেখতে চেয়েছি,
ধীরে খুব ধীরে কাঁপন ধরা আর্শীতে যখনি নিজেকে
দেখবো বলে ঝুঁকি, আঙ্গুলের ফাঁক গলে হারিয়ে যায়
সব তরল সৌন্দর্য্য। আর নিজেকে খুঁজে পাইনা।
নদীর বুকে সপাং সপাং শব্দ তুলে, যে মাঝি
নদীকে দুই ভাগ করে তার কাঠের বৈঠা দিয়ে
তারও একটা সুর থাকে, লয় থাকে কিংবা
গন্তব্যে পৌছানোর তাড়া। আমার তেমন কোন টান নেই,
তাড়া নেই, সুর নেই কিন্তু সেই ভাঙ্গনের শব্দ ঠিকই আছে
যেমন থেকে যায় কষ্ট ভুলতে আকণ্ঠ সুরা পান করা
মানুষের মনে ভুলতে না পারার জ্বালা। আসলে হিসেবি মানুষই
সবথেকে বেহিসেবি হয় ঠিক যেমন খুব চেনা মানুষ গুলো
অচেনা রং হয়ে ফিরে আসে।

কোন দিন তোমার কোন কিছুই আমার কাছে
অচেনা-আজানা ছিলোনা বলেই তোমাকে আজো
জানতে পাড়লাম না, বুঝতে পারলাম না জীবনের
কোন ভাঁজ কোন সুর কোন রং এর সূতোয় বেঁধে
টেনে তুলতে হয়। জীবনের সকল দায় স্বপ্নের কাছে
বিক্রি হবার জন্য নয়, জীবনের সব দেনা শোধ করার জন্য নয়,
জীবনের সমস্ত প্রাপ্তি উপভোগ করার উপায় নেই কোন,
আর সকল কষ্ট ভুলে সুখ পাওয়া যায় না,
তাই স্মৃতির ফ্রেমে আটকে থাকা প্রতিবিম্ব
সময়ের প্রলোভনের উল্লাসে হারিযে যেতে দেইনি বলেই
আজো নিজেকে দেখতে পাই পারদবিহীন আয়নায়
যেখানে নিজেকে উল্টো করে তুলে ধরতে হয় না
ভালোবাসাকে শুদ্ধো করতে।

এটা কোন কবিতা নয় এটা কুবিতা।

অমীমাংসিত লেফাফা ৩

অমীমাংসিত লেফাফা ৩

বিবেকে দুয়ারে দাঁড়িয়ে যে উচাটন মনোভাব তোমাকে
নীল দংশন করছে, তাকে তুমি ভুল করে অতৃপ্তি ভাবছো।
আমাদের গতানুগতিক জীবন ধারায় যে ভালোবাসা
শুধুই হৃদয় ছুঁয়ে যায়; তাকে তুমি অন্য কোন কিছু
ভেবে নিজেকে প্রতারিত করছো, আর ছোট করে ফেলছো
নিজের তুলনামূলক বিশ্লেষণ। কোন দিন কোন ভালোবাসা
যদি শুধুই শরীর সর্বস্ব হয় তাকে ভালোবাসা না ভেবে
বিনিময় বলা যায়। মানুষ মাত্রই আবেগী কিন্তু
প্রতিটি মানুষের আবেগেরও ভিন্ন ধরন থাকে,
তোমার মত যারা তারাই শুধু স্বপ্নীল আবেগে
ধীরে ধীরে খুঁজে যায় জ্বলন্ত চিতায় সাজানো বাগান,
গোছানো ঘর, সুখের আলমিরা, শীতের শিশির
আর চৈত্রের বিরান বাতাস। আমি তো তেমন মানুষ;
যার জন্য ফুলের সাজানো বিছানায় জড়িয়ে থাকে
কষ্টের রেটেল স্নেক, যাকে বেঁচে থাকার জন্য
শব্দ নিয়ে বসে থাকতে হয় কিন্তু মাড়িয়ে যাওয়াটা বোধয়
সহজ নয়। আসলে অনেক উপরে দাঁড়িয়ে থাকা
মানুষের মন সত্যি পৃথিবীর সবুজ গাছ গুলোকে
অনেক ছোট করে দেখে। জীবনে ম্লান চাঁদের আলোয়
সুখের পারস্পরিক গহীন প্রস্রবন আমার জানা আছে খুব,
তাই আজো সর্ম্পক এর অন্তরালে, রক্ত মাংসে তৈরী
কোন মানবী নয় শুধুই ভালোবাসা খুঁজি,
শুধুই ভালোবাসা।

এটা কোন কবিতা নয় এটা কুবিতা।
ছবিঃ নেট থেকে নেয়া

নোটঃ সময়ের অভাবে ব্লগে আসা হয় কম তাই দুটো পোষ্ট একসাথে দিলাম, এ্যাডমিন যদি মনে করেন বিষটি অনিয়মে পর্যায়ে পরছে সে ক্ষেত্রে একটি মুছে দিতে অনুরোধ থাকবে।

স্বর্গীয় আরণ্যক-৭

স্বর্গীয় আরণ্যক-৭

আরণ্যক তোর রক্তের মাঝে যে স্বভাব আছে
আরাধনা করে তা কি দূর করা সম্ভব?
তোর স্বভাব কিছু দিনের জন্যে ঘুমিয়ে যেতে পারে
যখন স্বভাব আবার ঘুম থেকে উঠবে
তখন তুই কি করবি?

আরণ্যক তুই যা জানিস
তা ছোট একটা বাচ্চাও জানে
প্রতিদিন তুই যা ধ্যান করে জেনেছিস
তা আগে থেকেই জানত অনেকে
আরণ্যক তুই যেখানে আত্মনিয়ন্ত্রণ করে ভাল থাকিস
সেখানে অনেকেই স্বাভাবিকভাবেই তোর চেয়ে ভাল আছে
তুই যে ভাল কাজগুলো করিস অনেক যত্মে
সে কাজগুলো অনেকেই করে যাচ্ছে অবলিলায়
তোর ভুলগুলো ভুল-ই রয়ে গেল
ওগুলো অবলা শিশুরাও করবে না
তুই যে মন্দ গুলো করিস
সেগুলো আর কেউ না করুক,তুই-ই তো করিস
প্রতিদিন তোর কষ্ট করে ভাল থাকা
প্রতিদিন তুই সত্য বলার অভ্যাস করিস
দেখ অনেকেই স্বাভাবিক ভাবেই তোর চেয়ে সত্য বলে
প্রতিদিন তোর চেষ্টাকরেও পাপ ছাড়ার অভ্যাস গেল না
ছোট শিশুদেরর কাছে যাস ,মূর্খ কিংবা দূর্বলদের কাছে যাস
তাদের কাছ থেকে কিছু শিখে নিস
দেখিস তুই যা আরাধনা করে শিখেছিস
তোর চেয়েও বেশী জানে শিশুরা,মূর্খরা ও দূর্বলেরা।

আপন দোসর

আপন সাজাই, আপন ভাবাই, আপন নিয়ে কান্নাকাটি
আপন ভূবন দুয়ার খুলে স্মৃতি নিয়ে ঘাটাঘাটি।
আপন মানুষ, আপন ফানুস, আপন চোখের জল
আপন নিয়ে রঙ্গ মঞ্চে সাজাই আপন ঘর।
আপন সুজন, আপন উজান, বুকে আপন ভার
আপন থেকে আপন হতে দুঃখ কুড়াই তার।
আপন হাতে আপন চুড়ি, অনেক আপন সুখকে চুরি,
আপন মাঝে ডুবতে গিয়ে আপন বিষয় খুব মামুলি।
আমি আপন, তুমি আপন, অভীমানের ঝড়,
ভাবতে আপন খুব গোছানো তুমি এখন পর।
জামা আপন, রুমাল আপন, আপন গলার ফাঁস
আপন নিয়ে ভাবতে বসে আপন হা হুতাস।
তবু আজো আপন ভাবি, তুমি আপন কার
গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজায় আপন এর কারবার।
সেই তো আপন মাটির পুতুল
তার সংঙ্গে বিয়ে।
সোনার খাঁচায় আপন সাজাই
আপন সোহাগ দিয়ে।

এইটা কোন কবিতা না এটা কুবিতা, কবিতা ভেবে পড়লে সেই দায় আমার না।

আসুন নজরুল সঙ্গীত শুনি

কোন কথা নয়, সরাসরি গানে

করুন কেন অরুন আঁখিঃ

পরদেশী মেঘ যাওরে ফিরেঃ

যেদিন লব বিদায় ধরা ছাড়িঃ

আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলামঃ

আমি জানি তব মনঃ

জনম জনম তব তরেঃ

আজো ফোটেনি কুঞ্জে মম কুসুমঃ

করুন কেন অরুন আঁখি (খিলখিল কাজীর কন্ঠে)ঃ

এক পেত্নীর আত্মকথা

এক পেত্নীর আত্মকথা

গণ ভবন নয়
গণ কবরস্থান
তার পাশের নদীর ধারে শ্মশানঘাট…
ঐ যে দেখা যায় উজ্জ্বল পতিত জমিনটা
তার পিছনেই এক পেত্নীর বসবাস
অল্পদিনের খুব প্রিয় একজন হয়ে উঠেছে
একাকিত্বে তার অনুপস্থিতি খুব অনুভব করি
যদিও সে কখনোই আমার নয়, তবুও…

তারও দুঃখ আছে, আছে সুখানুভবের অনুভূতি
রাত গভীর হলেইসুখ আর দুঃখের আলাপ করতে
চলে আসে, কখনো জানালার ওপাশে কখনো শিথানে
তাকে কেউ ভালোবাসে না, তার এজগতের কেউ না
বেঁচে থেকে যদি ভালোবাসা পাওয়া না যায় তবে নাকি
অন্য জগতের কেউ ভালোবাসে না, অতীত কর্ম টেনে আনে বারংবার
উঠবস থাকা খাওয়া সব কিছুতেই নাকি বৈষম্য,
এই যে পতিত জমি এখানে নির্বাসিত সে,
আজ সে আনন্দিত, উল্লাসিত, সে শুধু একটি কথাই বলে
পৃথিবীর ভালেবাসা ছাড়া কোনো জগতেই সুখ নেই।

আড্ডা হল, হল আরো অনেক কিছুই

বহু দিন আড্ডা দিইনি এমন জমজমাট। যদিও আড্ডার স্থান ছিল টিএসসি, শেষ মুহুর্তে আমরা সবাই টিএসসি থেকে চলে যাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ঘাসের উপর বসেছি বহুদিন হয়ে গেল। সেই কবেকার পরে আবার আমরা গতকাল বসলাম ঘাসের ডগায়। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে যাওয়ার পথে পথে কতদিক দিক থেকে আমরা কত দিকে যে আমরা চলে গেলাম। অনেকদিনের জমানো অনেক কথার ঝাঁপি খুলে ধরি আমরা সবাই। মনের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন আমাদের কবি মোকসেদুল ইসলাম, চারু মান্নান। আর তাদের সাথে সাথে কবি আনিসুর রহমান। ব্যক্তিগত, অব্যক্তিগত, সামাজিক রাজনৈতিক আলাপে আমরা কই থেকে কই কই হারিয়ে গেলাম, সেটা যারা না উপস্থিত ছিলেন তাদের বুঝিয়ে বলা যাবে না।

আলোচনায় এলো প্রকাশক আর প্রকাশনা, এলো সাম্প্রতিক বন্যা, এলো শব্দনীড়। আমাদের সাহিত্যে প্রকাশকদের ভূমিকা কতটুকু, লেখক প্রকাশকদের সম্পর্ক, সাহিত্য ও ব্যবসা এইসব আলোচনা হল। কবি মোকসেদুলের সাম্প্রতিক প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ অদ্ভুত মানুষগুলো নিয়ে আলোচনা হল অনেক। তেমনি আলোচনা হলো আনু আনোয়ারের গল্প নিয়ে, লেখালেখি নিয়ে। আনু আনোয়ার আলোচনা করলেন জাদুবাস্তবাদ ও বাংলাসাহিত্যে জাদুবাস্তববাদের প্রয়োগ নিয়ে। আলোচনায় এলেন গ্যাব্রিয়েলা গার্সিয়া মার্কেজ। বন্যা ও ত্রাণকার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করলেন চারুমান্নান।

আড্ডা শেষে আমরা কিছু সিদ্ধান্তও নিইঃ

১। আমরা প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে মিলিত হব এই আড্ডায়।
২। আমরা একটা লিটল ম্যাগ নিয়ে আসতে চাই। সেই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে সেপ্টেম্বরের আড্ডা।

আমাদের আড্ডা যেন শেষ হতেই চায় না, কিন্তু সোহরাওয়ার্দীতে সাতটার পরে থাকার নিয়ম নেই। তাই সেখান থেকে আমরা দলবেঁধে চলে গেলাম হাকিম চত্বরে। হাকিম চত্ব্বর থেকে সবাই যে যার মত চলে যাই।

যারা আসেননি বা আসতে পারেননি নিঃসন্দেহে অনেক মিস করেছেন। পরবর্তী আড্ডার আমন্ত্রন জানিয়ে আজ শেষ করছি।

স্বর্গীয় আরণ্যক-৩

——
প্রিয় আরণ্যক খোদার দেওয়া কষ্টগুলো
আশীর্বাদ ভেবে ভালবাসিস
প্রতিদিন তুই কষ্টগুলো সহ্য করার
অভ্যাস করিস

দেখ খড় ও শুকনো পাতাগুলো উড়ে যাই
নিজের চাওয়াগুলো ওভাবে উড়িয়ে দিয়ে
কষ্টগুলো বুকে তুলে রাখিস

প্রতিদিন তোর বাড়ির পাশের নদী দিয়ে স্রোত চলে যাবে
বাতাস ভেসে যাবে
মেঘ ভেসে যাবে
প্রতিদিন খোদার দেওয়া পৃথিবীটাকে
দুচোখ খুলে , বুক ভরে দেখিস
প্রতিদিন জীবনটাকে হাল্কা করে দেখিস

প্রতিদিন ব্যথাগুলোকে ঠুনকো মনে করিস
প্রতিদিন সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলিস
প্রতিদিন স্বাভাবিক হয়ে আনন্দে থাকিস
প্রতিদিন খোদার দেওয়া কষ্টগুলো
সহ্য করে থাকিস,খোদাকে ভালবাসিস।

চাকর ও আয়কর

আপনার বাড়িতে যে কাজ করে, সে আপনার চাকর। আর আমরা যারা সরকারী চাকরী করি তারা সরকারের চাকর। আর সরকার যেহেতু জনগনের টাকায় চলে, সেহেতু জোর গলায় বলা যায়, যারা সরকারের চাকর, পক্ষান্তরে বা সত্যিকারে তারাই জনগনের চাকর।

কানাকে কানা বলতে নেই। এই সূত্রে চাকরকে সেবক বললে তারা মনে মনে খুব সুখ পায়। মনটা গর্বে ফুলে উঠে। চেহারার রশনাই বেড়ে যায়। এ দেখে জনগন মিটি মিটি হাসতেই পারেন।

তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, চাকর সর্বদা চাকরই। তারা ছ-পোষা মানুষ। মাস আনে, মাস খায়। শেষ সপ্তায় অসহায়। এই অসহায় চাকরদের বেতনের বেশ একটা অংশ কেটে নেয়া হয় আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স এর নামে।

আমার ধারনা, ট্যাক্স দেবেন স্বচ্ছলগন। ট্যাক্স দেবেন যাদের আয় উপার্জন ভালো। মনের কো একটা প্রশ্ন বার বার উকি দেয়। প্রশ্নটি হলো দেশে এত স্বচ্ছল টাকার কুমির থাকতে চাকর কেন ট্যাক্স দেবে ?
চাকর মাস গেলে বেতন পাবে, বেতন পেয়ে ছা- পোষবে, রোগ বালাইয়ের চিকিতসা নেয়ার জন্য ঔষধ কিনবে। যৌবন শেষে পেনশন পাবে, পেনশনের টাকার টেনশন দূর করার জন্য কেউ মক্কা যাবে, কেউবা যাবে গয়া বা কাশি। চাকর ট্যাক্স দেবে কোত্থেকে ?

হ্যা দেবে, দিতে তাকে হবেই। বহুল প্রচলিত একটা গল্প মনে পড়ে গেলোঃ
মুনিব – ঈমান আলী, মার কেমন সইতে পারিস ?
চাকর – হুজুর, মোটেই পারি না।
মুনিব – ভেবে দেখ, যদি বেধে মারি ?
চাকর – হুজুর, তবেতো আপনার যত ইচ্ছা …

শব্দনীড় আড্ডা

আপনারা সবাই জানেন আড্ডা দেয়ার আহবানে গত ১২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে একটা পোস্ট দিয়েছি। তাতে সাড়া মিলেছে প্রচুর। অনেকে মন্তব্যের মাধ্যমে সাড়া দিয়েছেন। অনেকে ইনবক্স করেছেন। ফোন করেছেন কেউ কেউ। আমি অভিভূত। বুঝা যাচ্ছে আড্ডায় আগ্রহীদের উৎসাহ চরম। সকলের এই উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রেক্ষিতে আগামী ২৫ আগস্ট, ২০১৭ (শুক্রবার) বিকেল ৪:৩০ এ শব্দনীড় আড্ডার সময় চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবাই মিলিত হব টিএসসি, ঢাবি তে। আড্ডায় স্বরচিত কবিতা/গল্প পাঠ করা হবে। একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।
অংশগ্রহণকারীগণ কবিতা/গল্প/প্রবন্ধের উপর আলোচনা করবেন।

আপনার ব্যস্ত সময়ে ক্যালেন্ডার মার্ক করে রাখতে পারেন এই তথ্যগুলোঃ
শব্দনীড় আড্ডা
তারিখঃ ২৫ আগস্ট ২০১৭
সময়ঃ ৪ঃ ৩০ মিনিট
স্থানঃ টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যোগাযোগের জন্যঃ
আনু আনোয়ার ০১৭১১৬৩৭৮১১
মোকসেদুল ইসলাম ০১৫১৬৭৭৫৪০৪
আনিসুর রহমান ০১৭৬৬৬৯৮১৫২

সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের বন্ধুত্বকে দৃঢ়তর করবে এটাই প্রত্যাশা।

স্বর্গীয় অারণ্যক -২

স্বর্গীয় আরণ্যক-২
———-

ঠুনকো এক টুকরো মেঘের মত
আরণ্যক তুমি হারিয়ে গেলে
বলিষ্ঠ গোলাপের মত তুমি ফুঁটেছিলে
এখন তোমাকে পাওয়া যায় না খুঁজে

হেটে হেটে চলে গেলে আমাদের শহর ও গ্রাম থেকে
প্রতিদিন তোমার জন্য প্রিয়সী পথ চেয়ে থেকে

লোকালয় ও শহর ঘুরে ঘুরে
তোমার মত পাগোল একখান জোটেনি বলে
প্রিয়সি তোমার রয়ে গেল একা বসে

চারা গাছের মত মরে গেলে আরণ্যক
অকালে একটুকু পানি পাওনি বলে
নদীর মত চলে গেলে বেঁকে বেঁকে

প্রতিদিন তোমার কথা ভেবে ভেবে
আমাদের একখানি মেয়ে এখনো গসুল করেনি
খায়নি –আমরা তাকে পাগলি বলে ডাকি মাঝে মাঝে
জান আরণ্যক তোমার জন্য এখানে ভালবাসা আছে
চলে গেছ সময় মত মূল্য পাওনি বলে
অকালে একটু যত্ন পাওনি বলে

চলে এসো আরণ্যক আমাদের একখানি
পাগলি মেয়েটির কাছে।

তোমার জন্যে

তোমার জন্যে

আমি না হয় সকাল বেলার শিশির ভেজা ঘাসফুল হবো
কিংবা ঘন কুয়াশায় ভারি চাদর হয়ে তোমার গায়ে লেপ্টে রবো।
না হয় আমি কৃষ্ণপক্ষের রাতে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ হবো
দখিনা জানালা খুলে আমায় তুমি দেখে নিও।
কার্তিকের ক্ষুধার দিনে আমি না হয় নবান্নের ধান হবো
হেমন্তের সজীব হাতে কোমল পরশ বুলিয়ে দিও।

আঁধার রাতে ভয়ের বেলায় না হয় আমি ছোট্ট ঝিঁ ঝিঁ পোকাই হলাম
নিয়ম-রীতি ভেঙ্গে না হয় বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলাম।
না হয় তোমার দুঃখের দিনে দু’ফোঁটা আনন্দের অশ্রু হলাম
বিবাগী রাতের বেলায় না হয় একই বিছানায় ঘুমিয়ে নিলাম।

তোমার আঁধার কেশের খোঁপায় না হয় রঙিন দুটি গোলাপ হবো
সকালের পাখি হয়ে জানালার কার্নিশে বসে দুটি গান শুনিয়ে দিবো।
আমি না হয় চৈত্রের দিনে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হবো
বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ তুলে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে যাবো।
কাঠফাটা রোদ্দুরে না হয় তোমার মাথার ছাতা হবো
রুষ্ট প্রকৃতির সাথে না হয় যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে যাবো।

সম্মোহন বিদ্যা নাইবা জানি তবুও তোমায় পাওয়ার তরে
না হয় আমি সন্ন্যাসী হলাম
কল্পনার অলীক রাজ্যে না হয় তোমায় নিয়ে বাসর সাজালাম।
তবুও যদি তুমি না হও আমার
কাফনের কাপড় পড়ে এই আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম।

অন্তরের চাহিদার কোন দাম নেই

এই এক-ই আকাশের নীচে থাকি তুমি ও আমি
প্রতিদিন তোমার বাড়ির প্রায় কাছাকাছি রাস্তা দিয়ে যায়
যে বাতাসগুলো তোমাকে স্পর্শ করে
সেগুলোও হয়ত আমাকে স্পর্শ করে
আচ্ছা প্রীয়সি পৃথিবী আমাদের এত আপন করে
এ ভাবে ফেলে দিল কেন?
সীমানা পেরুলো আইন লঙ্ঘন হয় কেন?
দেখ ইশ্বরের সৃষ্ট নৃশংস মানুষগুলো দেহ ও ভালবাসাগুলো
কিভাবে পাহারা দিচ্ছে,দখল করছে
খুব সাধ করে ইশ্বরের পৃথিবীতে তোমাকে একবার
স্পর্শ করে আসি,সম্ভব নয়
দেখ নোংরা দেহখানি কত দামি?
অন্তরের চাহিদার কোন দাম নেই।