বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

ঘাসগল্প

কিছুটা গৌরবগরজ নিয়ে আছি। কিছুটা রক্তাক্ত রাতের শরীরে মিশিয়ে শরীর।
এভাবে থেকে যেতে হয়। বিনয়ের কবিতা পড়ে শিখেছি বিনয়।
আর শক্তির কাছ থেকে ধার নিয়ে শক্তি, খুঁজেছি নির্জনতার ছায়া।

শনাক্ত করতে পারলে বুঝা যায় জলভাষা। দৃষ্টির দিগন্ত ছুঁলে ধরা যায়
বৃষ্টিবর্ণ। প্রতিবেশী প্রেমিকাকে ঘাসগল্প শুনিয়ে ঘুরা যায় নক্ষত্রনগর।

কিছুটা মৌনতা নিয়ে আছি। গৌণ ভুলগুলোর চূড়ায় গোলাপ পাপড়ি
সাজিয়ে বার বার হয়েছি বশ্য। পারলে দিয়ে যেতাম এর অধিক কিছু।
এই শৌর্যের সন্ধ্যাতারার মেলায়, ভার্চুয়াল জোসানারা যেমন ভাসে দ্যোতনায়।

দ্বিচারিণী

যতটা অনুসন্ধানী হওয়া গেলে তোমার অন্তরাত্মার খবর জানা যেতো
ততটা অনুসন্ধানী হতে পারেনি সেই যাযাবর; সুদূর অতীতে-
তোমার ভেতরে বহুমাত্রিক রূপ বিরাজমান
কতকটা অত্যুজ্জ্বল, কতকটা বেশ কদাকার!
অত্যুজ্জ্বল রঙের ছটায় মানুষ বিমোহিত
পাড়ার সদ্যপ্রসূত জীবন মিয়া থেকে
জীবন সন্ধিক্ষণের কদম আলীও-
ওরা তোমার বাইরের রুপটা দেখে শুধু
বহুমাত্রিক অন্তরাত্মার খবর পায়নি কোনোদিন!
তোমারও বেশ ভালো লাগে তাদের বিমোহিত হতে দেখে
রঙের তালে তালে ওরা বেশ নাচতেও জানে বটে;
তুমিও নাচাতে বেশ পটু হয়েছো ইদানিং!
অথচ যে তোমার ভেতরের খবর পেয়ে গেছে
সে আজ অন্ধকার গলিতে ধুকে ধুকে পা বাড়াচ্ছে মৃত্যুর দিকে-
হয়তো সে অচিরেই মুক্তির স্বাদ পেয়ে যাবে!
তোমারও বাইরের রঙের-ছটা ম্লান হবে একদিন
অবশিষ্ট রবে শুধুই কদাকার প্রতিচ্ছবি
তখন অত্যুজ্জ্বল রবি কিরণের মাঝেও তুমি-
শুধুই কদাকার আর কদাকারের প্রতিমূর্তি!

মন কথনিকা

মন কথনিকা-৪৯৫৯
নাস্তিকতা মনের মাঝে রেখে জীবন চালাও
তেলবাজিতে সেরা বাপু বিপদ দেখলে পালাও,
স্বার্থপর সব মানুষের বাস শহর নগর গায়ে,
ঋণ খেলাপী হয়ে কেহ ভাসে পাপের নায়ে।

মন কথনিকা-৪৯৬০
ঘুরি ফিরি ইচ্ছে তবু মনে লাগে ভয়
ভয় পারি না করতে আমি যুদ্ধ করে জয়
একা গেলে যাই হারিয়ে এ ভয় মনে রয়,
বিতৃষ্ণার সাথে তাই একা রোজ বাড়াই প্রণয়।

বৃষ্টির দিন

বৃষ্টির দিন মন কেমন করে। ঘুমঘুম পায়। যদি ঘুম ভাঙে এমন দিনে, বৃষ্টির শব্দ শিহরণ জাগায়। মনে হয় মায়াবী সুরে কেউ পিয়ানো বাজায়! উঁকি দিলে আধখোলা জানলায়, দেখা যায় পদ্ম টলমল। অদূরে ঘাসের জমি ভিজে জবজব। কাঁপছে বন্দী গোলাপ বারান্দায় টবে। শামুক হাঁটতে চায় জিহ্বা লেলিয়ে। যদি খোলা হয় ঘরের দুয়ার। এলোমেলো হবে সব মাতাল বাতাসে। এলোকেশী তখন শুনতে পাবে মেঘের নাদ। কতবার যে বিজলী চমকাবে! পাহাড় দুলবে সে ঝড়ে।

বৃষ্টি হচ্ছে বহুদিন পর। এমন বৃষ্টি চেয়েছে চাতক!

জলবৃষ্টি

জানালার ওধারে অদূরের হিজল গাছ

মধ্যরাতের এক নকশাল হাওয়া এসে
মৃত জোনাকির ছায়া তলে ক্ষয়ে যাচ্ছে
একটা বিস্ময়চিহ্ন, দেখতে আকাশ, মেঘ-

বৃষ্টির সঙে তোমার ছায়া ঘুরে বেড়ায়
তুমি ভিড়ে যাচ্ছ জলের ভেতর;
এই রাতে-পাখির ডানা ঝাপটানো শব্দ
গাছগুলোর পিঠাপিঠি পলাতক
শাদা ঘোড়ার পাশে
অন্যরা সব একে অপরের বুকেপিঠে
দোল খাচ্ছে।ক্রীতদাসী রাত, জলবৃষ্টি!

.
২১ জুলাই ২০২৩

বোলপুর

এই বোলপুরে
নাইন্টিথ্রি-ফোরে
বাড়িঘর অর্ধেকও ছিল না
চাদর নয়, ডানলোপিলো না
এক হেঁড়ে তক্তপোষে মাদুর বিছিয়ে শুতাম
ফরসা ফরসা বাদুড় ঝুলত ছাদ থেকে
মাঝরাতে হাত বাড়িয়ে তাদের তলপেট ছুঁতাম

.
(“ছোটলেখকি” বইয়ের ছড়া)

নির্জীবতা

দরজার নিচ দিয়ে ঢুকছে হাওয়া। এবার শীতকাল দীর্ঘ হচ্ছে মনে হয়। হোক। তাতে কার কি! পাতাঝরা দিনে ভালো হয় পাতার উৎসব। যদি থাকে মুঠোভরতি সাদা হাওয়া। পুড়িয়ে দেয়া যাবে নিশ্চিন্তে এ শব। যেভাবে উড়িয়ে নিচ্ছে স্বপ্নগাঁথা। আবার ছুড়ে ফেলছে অদ্ভুত বাস্তব। তবু কুয়াশা আসে জানলায়। ফিসফিস করে বলে কথা। একদিন পালিয়ে যাবার অপেক্ষা। সে জানে না কতবার মন পলাতক!

আরো শীতলতা নিয়ে বৃষ্টি আসছে। আসছে তুষার। কুকুরকুণ্ডলী হয়ে থাকতে হবে আর কত?

রয়ে যাবে কিছু

nit

যদি বলি জীবনের গল্প
হবে নাতো বলা শেষ
কিছু রয়েই যাবে,
যদি শুরু করি লেখা
কাগজ ফোরাবে হবেনা শেষ
কলমের কালিও ফোরাবে।

তবুও থেকে যাবে কিছু-না-কিছু
কথা আর জীবনের গল্প
মানুষের কাছে অজানা,
হবেনা বলা আর লেখা
হবেনা গাওয়া জীবনের গান
মনের কামনা বাসনা!

ছিটমহল

ছড়িয়ে আছে পাথরদানা। জানা- অজানার বনভূমি ছুঁয়ে শিশুরা খেলে
যাচ্ছে সাপ-লুডু খেলা। বেলা দাঁড়িয়ে দেখছে জীবনের গমনদৃশ্যরূপ।
চুপ করে থাকি। আঁকি আমিও সম্প্রসারিত ভুলের কোলাজ। আওয়াজ
দেবার কথা ছিল যাদের, তারাও ছিটমহলের বাসিন্দা এখন। দ্রবণ
শেষ হলে প্রেমও কি তবে ছিটকে পড়ে পরাকাশের, প্রান্তে অবশেষে!
ভালোবেসে মাটির মরম, দেখে যেয়ো … জমাট পাথর বাঁধা বুকের প্রদেশে।
।।।।।।।।

বৃষ্টি থেমে গেলেই আকাশ হয় স্বচ্ছ

chh

তুমি কি দেখেছো কভু, বৃষ্টি থেমে গেলে সে আকাশ?
বৃষ্টির ঝরে গেলেই সে আকাশে স্বচ্ছ মেঘের বসবাস
তুমি বৃষ্টির পরেই হেঁটেছিলে ভেজা পথে কখনো
হাঁটলে কি বেজেছিলো বুকের তারে সুখের বেণু।

মেঘ গুড়গুড় মেঘলা দিনে থেকেছিলে কখনো একা?
মন আকাশে কালো মেঘের দিয়েছিল দেখা?
ভেবেছিলে বৃষ্টি থেমে গেলেই প্রকৃতি ছুঁবে
ভেজা পাতাদের সাথে আনমনে কথা ক’বে?

তোমার ভাবনাতে কি আছে? কখনো যে বললে না,
বৃষ্টিতে ভিজতে কখনো আমার সাথে চললে না!
তুমি কি এক অনুভূতিহীন লোক
ভেতর বাড়ীতে উল্লাস নেই, নেই ব্যথার শোক!

কি জানি ভাবো, মনের আকাশজুড়ে কোন সে মেঘ?
সাদা না কালো, ইশ ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে তোমার আবেগ
তুমি আকাশ দেখো না, লেখো নি কবিতা কখনো,
তোমার মন আকাশে দেয় নি উঁকি বুঝি রঙধনু।

নিরামিষ কি তুমি, নাকি পাথর মানুষ
মন আকাশে উড়াও নি বুঝি কখনো ইচ্ছে ফানুস?
তোমাকে বুঝা, সাধ্য আমার নেই
তোমার মন পড়তে গিয়ে হারাই মুহুর্মুহু খেই।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)

আলোকৎপাত

কখনো কখনো ঘুরে দাঁড়ানো জরুরী
এই যে – বিদগ্ধ ইতিহাসে সম্মুখে
মুখ তাক করে চেয়ে আছি নগ্নভাবে
এটি কিভাবে সভ্যতার মধ্যে পড়ে?
জানিনা।
আছি তো, তবুও
যদিও জানি-
ঘুরে দাঁড়ালেই প্রতিপক্ষের মাথায় আকাশ ভাংবে!
তারা তাদের নিত্যকার উলঙ্গপনাকে বলে বিলাসিতা..
তাদের দু’হাতে কলঙ্কের কালি
রক্ত ঘামে একাকার ইতিহাসের বলী দিয়ে
ওরা রচনা করে উত্তরাধুনিক রাজনীতি!
কে জানি বল্লো-
আমাদের ঐতিহ্য উজ্জ্বল সোনালী চাঁদ
অথচ টিকে থাকার লড়াইয়ে
একটি রণবীর সূর্যের খুব দরকার ;
অথবা ঝলসে দেয়ার মতো আলোকৎপাত!

ঘোর অমানিশা নামার পূর্বে
বিবেকের পূর্বাকাশে উদয় হোক নতুন সূর্য!

প্রগতির টিয়ে

একদিন মাটিতে বোধের শক্ত দেয়াল ছিলো
সেই দেয়ালে কোনো শেওলা ছিলো না
সচেতন ঘাস, লতাগুল্ম আনমনেই বড় হতো
সেই দেয়ালটি এখন কোথায় গেলো..?

উড়োচিঠিতে যে মেয়েটি ভালোবাসি লিখেছিলো
সামনাসামনি দেখা হতেই সে লজ্জাবতী লতা হলো
তখন সামাজিক দালান বোধ চীনের প্রাচীর ছিলো!

এখন একদিনে প্রেম হয়, দুইদিনে বিয়ে
তিনদিনে ভালোবাসা নিয়ে যায় প্রগতির টিয়ে!!

নদী দুষণ

আমাকে কখন চিনতে হচ্ছিল
এতসব লতা-পাতা, সাপ-বিচ্ছু, বিষ বিবিধ?
আমি তো ‘এক্সিট পয়েন্ট’ চিনতে চাইছিলাম
ফুস মন্তরে উবে যেতে চেয়েছিলাম পৃথিবীর দিকে।

কোলাহলের ভেতর খুঁজেছিলাম প্রাণ
চোখ বন্ধ সুফীজমের শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে,
নেশা ধরা প্রেয়সীর চোখে শেষকৃত্য দেখব আশায়
নেমে গিয়েছিলাম আগুনের ঠোঁট কাটা হাসির গুল্মে।

চারপাশে দেখা মানবিকতা চুর্নির গোলকধাঁধায়,
শেষতক পৃথিবীটা ঈশ্বরের চূড়ান্ত বিজয় মেনে
এজিদের পরাজিত বুকে ঠাঁই নেবার পর
‘নো এক্সিট’ ঠোকর খাচ্ছে মগজের সোনালী লাভায়।

শ্রাবণ জল

hj

আজ শুধু শ্রাবণের প্রথম দিন
নরম ঘাস পালঙ্ক ভেজে গেলো-
গোলাপের মন আনন্দে বাসর রাত!
অথচ এখানে বর্ষার রাস্তা ঘাট
জলে থৈ থৈ; শ্রাবণ তুমি কদম
ছুঁইলে কেন? নাকি অন্যকিছু-
যুগে যুগে কালো মেঘ বজ্রপাত
কলঙ্কের জল শ্রাবণে একাকার;
তবু রঙধনু মেঘ দেখে না আর-
যুগ যুগান্তর ভাসালে শ্রাবণ জল।

০২ শ্রাবণ ১৪২৯, ১৭ জুলাই ২৩

ঘোড়া

একটা মাকড়শা মাতাল ঘরে ঘুরে বেড়ায়
ওঠা-নামা করে সারা দুপুর-দূরের রোদ
জঙ্গলের আড়াল হতে তিরতির গান আসে
শুনছিল আলমারি থেকে শাদা কাপড়
তাতে জমেছিল নীল নির্জনের গত শতাব্দী।
যখন ওম দিচ্ছিল ভাঙনের শেষ মুহূর্তকাল
পাতার গায়ে লেগে যাচ্ছিল ফুল, আযান-
জেব্রাসারি নারকেল বাগানের পথ-শুক্রবার

কলপাড়ের শব্দ নিলামে ওঠে, জলের রেণু
ছোট বাচ্চাদের হাতে ঘাই খেতে থাকে
দূর বসন্ত ঠিক চলে যাবার আগে বুঝে নেয়
শীতের বালিহাঁস এখানে ঘোড়া হয়েছিল!

.
১৭ জুলাই ২০২৩