বিভাগের আর্কাইভঃ দেশ

অজ্ঞতা নাকি ভন্ডামী

আমাদের ধর্ম পালন দেখে খুবই দুঃখ লাগে। নিজের সুবিধার্থে ইসলামকে আমরা ব্যবহার করছি। যেমন, জ্বিল হজ্জ মাসের প্রথম তারিখ থেকে কোরবানী ঈদ উপলক্ষ্যে অনেকে দাঁড়ি-গোঁফ কাটেনি। আমি তাদের প্রশ্ন করলাম, কেন তারা কাটেনি? উত্তরে আমি বিব্রত হই। এই সময়ে দাঁড়ি-গোঁফ কাটলে আল্লাহ নাকি গোনাহ দিবে। এই কেমন যৌক্তিরে ভাই? হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, এক মুঠো সমপরিমান দাঁড়ি রাখতে, আর যদি দাঁড়িতে ক্ষুর লাগানো হয় তাহলে নবী (সঃ) গলায় ক্ষুর বসানো সমান গোনাহ হবে। অথচ বর্তমানে ধর্ম কে নিজের মত সাজিয়ে যুক্তি দিয়ে নিজেকে মুসলমান দাবী করছে। আপনি আল্লাহর হুকুম পালনে নামাজ পড়ছেন কিন্তু হিন্দু নাপিত দিয়ে দাঁড়ি চাটাই করে উনার বন্ধু নবী করীম (সঃ) কে অপমান করছেন। এইটা কি আপনাদের অজ্ঞতা নাকি আল্লাহর সাথে ভন্ডামীর পরিচয়?

পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের মুসলমান মনে করতো না। কারণ বাঙালিদের আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি বিধর্মীদের সাথে মিল। তাই তারা পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে ছিল। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানীরা চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, খুন ধর্ষণ তথা যত অপকর্ম ইসলামে নিষেধ করেছে সে সকল অপকর্মের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল আর নিজেদের মুসলমান দাবী করে পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছিল। বর্তমানেও ঠিক বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ সকল অপকর্ম করবে আর তখনই তাদের মুসলমানিত্ব দেখাবে আপনি যখন যৌক্তিক প্রতিবাদ করবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামীন সমাজে নামাজ পড়া মানুষগুলোকে আমরা ভালো মনে করি, কিন্তু অন্তরালে তার কুৎসিত চরিত্রটা আমরা দেখি না। শুধু নামাজ পড়লেই যদি সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করানো যেত তাহলে কোরআন-হাদিসে এতো বিধিনিষেধ নাজিল হতো না। আর মানুষেরও মৃত্যু হতো না।

কিছু লোক আছে যারা নামাজ পড়ে আমি ভালো হয়ে গিয়েছি প্রমাণ করার জন্য। আর কিছু লোক আছে বয়স হয়েছে আর কত! তাই। আল্লাহকে ভয় করে যদি নামাজ পড়তো তবে আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ সকল অপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখতো।

আপনি বা আপনারা তো নামাজ পড়েন, তাহলে কয়েকটা জিনিস থেকে আপনারা নিজেদের বিরত রাখতে পারেন কি-না দেখি। যেমন, লোভ-লালসা, হিংসা-পরশ্রীকাতরতা, গীবত-পরনিন্দা, সামাজিক অন্যায় বিচার এবং অন্যের অনিষ্ট সাধন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

স্যার আপনারা হিরো ছাত্রদের জীবনে স্মরণীয় স্মৃতি বরণীয় আজও

গোপাল স্যার আমার বাবার ক্লাসমেট এবং আমার শিক্ষক। উনি লেমুয়া বাজারের দিন অনেক লোকের সামনে আমাকে গালে চড় মেরে ছিলেন। আমি তখন (নব্বই দশকে) একটা ছাত্র সংগঠনের লেমুয়া ইউনিয়নের পদে ছিলাম। গোপাল স্যারকে এলাকায় অনেকে চিনে না কিছু লোক চিনে মরণ বাবুর ভাই হিসাবে। বাজারে রটে গেল মহীকে হিন্দু এক লোক মারছে। আমি চড় খেয়ে লজ্জায় হতবুদ্ধি হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছি। অনেক লোক জমা হয়ে যাওয়ায় স্যারও লজ্জা পেলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে চায়ের দোকানে ভিতরে নিয়ে গেলেন। পরে সবাই জানলো উনি আমার শিক্ষক। স্যার আরেক হিন্দু নিখিল বাবুর শশুরের কাছে বেশ কিছু টাকা পাবেন। এই টাকার জন্য লেমুয়া বাজারে অনেক বৈঠক হয়েছে। যারা বৈঠক করে সব দলের প্রভাবশালী মদখোর আর জুয়াচোর। এক বছরেও সমাধান না হওয়ায় আমি কিছু ছেলে নিয়ে গিয়ে পাওনাদারকে দমক দিয়ে আসি।

সেই পাওনাদার পরের দিনই গোপাল স্যারকে ধরলেন। এবং কি বলেছে আমার আজও জানা হয়নি। তবে স্যার আমাকে টাকা নিয়ে দিতে বলেনি। আমিই নিজে বলেছি সেই লোককে। চায়ের দোকানে আমি মাথা নিচু করে বসে থাকি। চা খেতে খেতে স্যার বললেন তুই আমার ছাত্র। তোকে দিয়ে টাকা আদায় করলে নিজের বিবেক মরে যাবে। স্কুলে আমি তোকে নিজের ছেলে পরিচয় দিতাম। বাবা হয়ে থাপ্পর মারলাম।

কর্ম জীবনের প্রথমেই এক লোকের মারফতে একটা সোনালী রংয়ের সিটিজেন ঘড়ি পাঠাই গোপাল স্যারের জন্য। কিছুদিন পর লোকটা ঘড়ি ফেরত দিয়ে বলে স্যার মারা গিয়েছেন। যে স্যার ক্লাস সিক্স হতে টেন পর্যন্ত প্রাইভেট পড়িয়ে একটা টাকাও নেন নাই সেই স্যার মরে গেল। কিন্তু ভালো লোক এত তাড়াতাড়ি, কেন মরবে আজও আমি বুঝি না। দুই / এক বার কিছু টাকা দিয়েছি মাত্র উনার ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য। আমার বাবা মরণ বাবুসহ গিয়ে (মরণবাবু ফালিজপুর কাদেরী হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক) যখন ম্যামকে টাকা দিতেন তখন নাকি ম্যামের মুখটা একটা স্বর্গ হয়ে যেত। আজ উনার সন্তানেরা বড় হয়েছে। কিন্তু একজন সৎ শিক্ষকের অকালে মরে গেলে পরিবারটা কত অসহায় হয় ভুক্তভোগী বুঝে। স্যার, বাবার যে চিঠি পড়ে আপনার মন খারাপ হয়ে ছিলো সেটা আমার কথার কারণে। আমি অংকে নাম্বার কম পেয়ে বাবাকে বলেছি স্যার পড়ায় না। আপনি কখনো কোন ছাত্রের প্রতি অনীহা প্রকাশ করেনি। স্বর্গে আপনি ভালো আছেন বলে আমার প্রচণ্ড বিশ্বাস।

আমরা পরীক্ষার ভালো ফল চাই কিন্তু ভালো শিক্ষক চাই না। ঘুস নিয়ে মাস্টার বানাই। শিক্ষকদের নিশ্চিত জীবন চাই না। শিক্ষককে লাথি উষ্ঠা মারি। আরে ভাই আমি নেতা সালিশ করে, নদীর বালু বিক্রি করে, মাদকের দালালি করে, স্কুলের পরিচালক হয়ে টাকা পাই। সেই টাকায় সংসার চালাই। এইটা খেয়ে আমার পোলা কেমন করে জিপিএ পাঁচ পাবে। আমারতো নীতিই নেই আর আমি পোলারে বলি বেটা পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হইবি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এখন স্কুল কলেজের সভাপতি হয়। এরা এতই প্রভাব দেখায় এদের নজর এড়িয়ে ধুলাও নড়চড় হয় না। পুরা পরিচালনা কমিটি রাজনৈতিক লোক দিয়ে করার কারণে শিক্ষকগণ জ্বী জ্বী করে উনাদেরকে (এইসব পরিচালক একই শিক্ষালয়ের ও শিক্ষকের সাবেক ছাত্র)। অবাধ্য হলে নেমে আসে অপমান অপবাদ। যার কারণে গ্রামের স্কুলে পাশের হার অত্যন্ত খারাপ। জেলা শহরে কয়েকটা স্কুল কলেজে লেখাপড়ার মান খুবই ভালো। যেমন ফেনীতে সরকারি পাইলট হাই স্কুল, সরকারি গার্লস হাই স্কুল, ফেনী ক্যাডেট স্কুল এবং কলেজ ও শাহীন একাডেমি (জামাত পরিচালিত)।

মীর স্যার আপনি মেধা সততা দিয়ে স্কুলকে আকাশের চাঁদ বানিয়ে ছিলেন। আশি নব্বই দশকে ( আমাদের সময় ) করৈয়া হাই স্কুল ফেনী জেলায় পাশের হারে শহরের স্কুলকে পিছনে ফেলে দিতো আর আজ সেই স্কুল মৃতপ্রায় হাতি। দশম শ্রেনীতে উঠে রাস্তার ঐপারের একটা হলুদ পাখি (মেয়েটা কোথায় আছে কেমন আছে জানি না ) ধরতে গিয়ে আপনার হাতে মার খেয়ে জ্বর হয়ে ছিল। ভয়ে বলি নাই আপনি মেরেছেন। প্রধান শিক্ষক হিসাবে আপনার ব্যক্তিত্ব সুনাম করৈয়ার মাটি বয়ে বেড়াবে পৃথিবীর শেষ অবধি।

ছবিঃ ফেসবুকের স্কুল গ্রুপ হতে নেওয়া। (মীর স্যার সাবেক প্রধান শিক্ষক)।

হিন্দুদের বিয়ের নিয়ম ও সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য

আমি বিবাহ করেছি, ১ আষাঢ় ১৩৯৩ বঙ্গাব্দ। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি, মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদি খাঁন থানাধীন তালতলার দক্ষিণে এবং সুবচনী বাজারের পশ্চিমে নয়াবাড়ি গ্রামের এক গরিব পরিবারের মেয়ের সাথে। বিবাহ করেছি নিজের ইচ্ছেতে। প্রথমে বছর দুয়েক প্রেম প্রেম খেলা। তারপর মা এবং বড়দা’র সম্মতি ক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে। বিয়ে করেছি বর্তমানে ৩৪ বছর গত হতে চললো। কিন্তু বর্তমান করোনা দুঃসময়ের কারণে এবার নিজের বিবাহবার্ষিকীর কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। নিজের মন থেকে ভুলে গেলেও মনে করিয়ে দেওয়ার জীবনসঙ্গী এখনো সাথে আছে বলেই, তিনি গত ক’দিন আগে আমাদের বিবাহবার্ষিকীর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বললো, “পহেলা আষাঢ় কিন্তু আমাদের বিবাহবার্ষিকী।”

জীবনসঙ্গী বা সহধর্মিণীর মুখে বিবাহবার্ষিকীর কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম যে, আমাদের হিন্দুদের বিবাহের বা বিয়ের নিয়মকানুনগুলো যদি শব্দনীড় ব্লগে লিখে সবার মাঝে শেয়ার করা যায়, তাহলে মনে হয়ে ভালোই হয়! সেই ভাবনা থেকেই আমার আজকের লেখার শিরোনাম দিলাম, “হিন্দু বিয়ের নিয়ম ও সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য”। এই সাত পাক ঘোরে হিন্দু ভাই-বোনদের সবারই বিয়ে হয় ঠিকই, কিন্তু অনেকেই জানেন না এর কী মাহাত্ম্য। তাই আজ আমার লেখার শিরোনামের শেষের শব্দটাই হলো ‘মাহাত্ম্য’।

আমরা অনেকেই জানি যে, হিন্দু ধর্মের এক ছেলের সাথে এক মেয়ের বিবাহ বা বিয়ে হয়ে গেলে তা ভাঙ্গার বা অস্বীকার করার মতো ক্ষমতা কারোরই নেই। আর কেউ অস্বীকার করেও না। অনেকেই বলে, হিন্দু বিয়ে সাত পাকে বাঁধা বলেই কেউ অস্বীকার করতে পারে না; আবার কেউ অতি সহজেও বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারে না।

হিন্দুদের বিয়েতে শুধু সাত পাকে বাঁধা এটাই শুধু নিয়ম নয়, হিন্দুদের বিয়ের আগে পরে এমন আরও অনেক কঠিন কঠিন নিয়ম বাঁধা রয়েছে। যার কারণে খুব সহজে কেউ বিবাহ বা বিয়েকে অস্বীকার করতে পারে না। সংসার জীবনে যত দুঃখ আর যত ঝামেলাই আসুক-না-কেন, কোনমতেই ঝটপট আরেকটা বিয়ে করতে পারে না। এ হলো হিন্দু ধর্মের ছেলেদের বেলায়। আর মেয়েদের বেলায় তো আরও কঠিন নিয়মকানুনে বাঁধা থাকে। তাহলে জেনে নিন আমাদের হিন্দুদের বিবাহ বা বিয়ের আগে পরের এবং বিয়ের দিন সাত পাক ঘোরার মাহাত্ম্য কী?

এমনও তো হতে পারে যে, আর ক’দিন পরই আমাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোনও-না-কোনও ভাই-বোনের শুভ বিবাহের দিন ধার্য্য করা রয়েছে। তাহলে আগে থাকতেই তো এবিষয়ে জেনে নেওয়া ভালো। কারণ, একথা স্বীকার করতে পারবেন না যে, হিন্দু বিয়ের কঠিন সব মন্ত্রের মানে আমরা অনেকেই জানি। যাঁদের জানা নেই, তাঁদের জন্যই আমার বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে আজকের এই লেখা।

বিবাহ কথাটর প্রকৃত অর্থ হলো পরিণয়। আবার পরিণয় কথার অর্থ হলো বিবাহ। মানে দুটি মনের চিরবন্ধন। তাও সাত জন্মের জন্য বাঁধ। হিন্দু বিবাহে শুধু দুটি শরীরই এক নয়, এক হয় দু-দুটো পরিবার। আবার বিয়ের সময় চন্দ্র, সূর্য, অগ্নি, বাতাস, জল, ফল, ধান, দূর্বা, লতা, পাতা, ফুল, চন্দনকে সাক্ষী রেখে স্বামী স্ত্রী সাত পাক ঘুরে যেই সাতটি প্রতিজ্ঞা করেন, তা তাদের দুজনকে সাত জন্মের জন্য এক করে দেয়া। বিবাহের দিন পুরোহিতের মন্ত্র দ্বারা হাতের উপর হাত রাখা, মালাবদল, অগ্নিতে খই পোড়ানো, সিঁদুরদান-সহ নানাবিধ নিয়ম পালন করার পর একটি বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন হয়।

আগেই বলে রাখা ভালো যে, হিন্দু ধর্মে থাকা বিভিন্ন জাত গোত্র ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্নরকম নিয়মে ভারত-সহ বাংলাদেশি বাঙালি হিন্দুদের বিয়ের নিয়মগুলোতে অনেকরকম অমিল দেখা যেতে পারে। তবে যে যেই নিয়মেই বিয়ের কার্যসম্পাদন করুক-না-কেন, প্রতিটি বিয়েতেই সাত পাক ঘোরার নিয়ম রয়েছে। এই সাত পাক ঘোরার নিয়ম কোনও জাত গোত্র বা কোনও সম্প্রদায় বাদ দিতে পারে না। ছেলে/মেয়েকে বা বর কনে একসাথে সাত পাক ঘুরতেই হবে।

আমি বাঙালি। তাই আমার দেশের হিন্দুদের বিয়ের নিয়মগুলো নিয়ে আলোচনা করছি। আমাদের দেশে যেকোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে/মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে ছেলের বাড়ির নিয়ম মেনেই বিবাহ বা বিয়ের কার্যসম্পাদন শেষ হয়ে থাকে। এই নিয়মেই বেশিরভাগ হিন্দুদের বিবাহ বা বিয়ে হয়ে থাকে। তবে আমার বিবাহ বা বিয়ের কার্যসম্পাদন হয়েছে মেয়ের বাবার বিড়িতে। এর কারণ হলো, আমি তখন নারায়ণগঞ্জ শহরের নন্দিপাড়ায় মাকে নিয়ে ছোট একটা বাসা ভাড়া করে থাকতাম। ওই বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান করার তেমন কোনও জায়গা ছিল না, তাই। এবার জেনে নিন হিন্দুদের বিয়ের নিয়মগুলো।

১। পাকা দেখা বা পাটিপত্র ও আশীর্বাদ:
পাকা দেখা বা পাটিপত্র হলো, বিয়েতে ছেলে পক্ষ এবং মেয়ে পক্ষের কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা এবং আরও বেশ কয়েকজন মুরুব্বি সাক্ষী রেখে একজন পুরোহিত দ্বারা সাদা কাগজে অথবা ১০০(একশো) টাকা মূল্যের দলিলে লিপিবদ্ধ করে রাখার নামই হলো; পাটিপত্র। যাকে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের কাবিননামা বলা হয়ে থাকে। এদিন পাকাকথা এবং দলিল লেখা হয়ে গেলে ছেলে পক্ষ থেকে মেয়েকে মিষ্টিমুখ করে সোনার আঙটি অথবা অন্যকোনো গয়না পরিয়ে দিয়ে মেয়েকে আশীর্বাদ করা হয়। এরপর উপস্থিত বয়ষ্ক মহিলারা উলুধ্বনি দিয়ে পাড়াপ্রতিবেশিকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, অমুকের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।

ছেলে পক্ষ মেয়ের বাড়িতে কথা পাকাপাকি করে ছেলের বাড়িতে এসেও একইরকম উলুধ্বনি দিয়ে ছেলে বাড়ির পাড়াপ্রতিবেশিদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এখানেও উপস্থিত থাকা সকলে মিষ্টিমুখ করে থাকেন। তবে আমার বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ আমার ভাড়া বাসায়। মেয়ের বাবা একজন পুরোহিত সাথে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ এসে আমার বাসায় বসে বিয়ের দিন-তারিখ-সহ আরও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সাদা কাগজে শর্তগুলো লিপিবদ্ধ করেন এবং আমাকে একটা সোনার আংটি দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। তারপর ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত উপস্থিত মহিলারা উলুধ্বনি দিয়ে সকলের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন।

২। আইবুড়োভাত:
আইবুড়ো অর্থাৎ এখনও অবিবাহিত বা সবার চেয়ে বড়। তাঁর হাতে রাঁধা ভাত। এই নিয়মটা আমাদের বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে অনেক জাত গোত্র ও সম্প্রদায়ের মধ্যে মানা হয়, আবার অনেকেই নিয়মটা মানেন না বা করেন না। এই নিয়মটা হলো, উভয়পক্ষের। বিয়ে পাকাপাকি হয়ে গেলে ছেলের অনেক আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব ডেকে খাওয়ানোর একটা অনুষ্ঠান। আবার মেয়ের পক্ষেও তেমনই করতে হয়। খাবারের আয়োজনে থাকে অনেক রকমের মাছের তরকারি। মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘণ্ট। মাছের ঝোল বা ঝাল, মাংস, চাটনি সহ নানা পদ হয় এই আইবুড়োভাত অনুষ্ঠানে। যিনি আইবুড়ো তিনি এসব তরকারি দিয়ে ভাত মেখে প্রথম গ্রাস ছেলে অথবা মেয়েকে খাইয়ে দেন। এরপর এই মাখা ভাত খেতে উপস্থিত অনেক অবিবাহিত ছেলে/মেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এতে অনেকেই বিশ্বাস করে এই মাখা ভাত বর অথবা কনের হাতে যাকে খাওয়ায় তার বিয়েও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। ফলে অনেকের মধ্যেই এই ভাত খাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যায়। তবে আমার আত্মীয়স্বজনের মাঝে এমন কোনও আইবুড়ো ব্যক্তি ছিল না বিধায়, আমার মা এই নিয়মটি বাদ রাখে। বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়ের বাবার বাড়িতে ছিল একইরকম অবস্থা।

৩। শাঁখা পলা পরা:
বিয়ের ঠিক আগের দিন। যেই দিনটাকে বলে অধিবাস। এই দিন বিকালবেলা বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়েকে নিয়ে তার মা বা বাড়ির বড়রা নিকটস্থ কোনও মন্দিরে যায়। তারপর মন্দিরে থাকা মাটির তৈরি দেবমূর্তি ও পুরোহিতের আশীর্বাদ নিয়ে মেয়ের মা অথবা কাকীমা, জেঠিমা বা অন্য বড় কেউ মেয়েকে শাঁখা আর লাল পলা পরিয়ে দেয়। শাঁখা হলো শাঁখ থেকে তৈরি, আর পলা হয় লাল রঙের। এই সাদা লালের জুটি হল এয়োস্ত্রী বা গৃহলক্ষ্মীর চিহ্ন। এই নিয়মটা শুধু মেয়ে পক্ষেরই নিয়ম।

৪। জল সইতে যাওয়া বা জলভরা:
বিয়ের দিন ভোরবেলা ছেলের ও মেয়ের মা এবং আরও কয়েকজন বিবাহিত মহিলা বাড়ির আশেপাশে থাকা কোনও পুকুর অথবা নিকটস্থ কোনও নদীতে জল সইতে যায়। জল সইতে যাওয়া বিবাহিত মহিলারা তামার পাত্রে বা পিতলের কলসিতে জল ভরে এনে রাখা হয়। বর্তমানে অনেকে এই নিয়মটা সকালের পরিবর্তে বিকালবেলা করে থাকে।

গায়ে হলুদ মাখার পর এই জল দিয়েই ছেলে ও মেয়ের যাঁর যাঁর বাড়িতে স্নান করানো হয়। জল সইতে বা জল ভরতে যাওয়ার সময় গান গাওয়ার রেওয়াজ আছে। বর্তমানে ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করে এনে বাজনা বাজিয়ে বাজনার তালেতালে নেচে-গেয়ে জলভরার আয়োজন করা হয়। তবে আমার বিয়ের সময় এই নিয়মটা ছিল ঠিক ভিন্নরকম। মানে, আমি বিয়ের আগের দিন অর্থাৎ অধিবাসের দিনই আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে মেয়েদের বাড়িতে চলে যাই। এর কারণ ছিল, নারায়ণগঞ্জ নন্দিপাড়া ভাড়া বাসার বাড়িওয়ালা এতো ঝামেলা করতে দেয়নি বলেই, আমি বিয়ের আগের দিন মেয়ের বাড়িতে হাজির হই। আমার পক্ষ থেকে নিয়মগুলো মেয়ের বাড়ির মুরুব্বীরা সমাধান করেছিল।

৫। গায়ে হলুদের নিয়ম:
তাজা হলুদ শিলপাটায় বেটে তার সঙ্গে সরষের তেল দিয়ে মাখা হয়। প্রথমে ছেলের মা ও বিবাহিতা আত্মীয়রা এই হলুদ ছেলের বা বরের শরীরে মুখমণ্ডলে মেখে দেয়। জল সইতে বা জল ভরতে গিয়ে পুকুর থেকে অথবা নদী থেকে যে জল আনা হয়েছিল, সেই জল দিয়ে ছেলেকে স্নান করানো হয়। বেঁচে যাওয়া হলুদ কাঁসার বাটিতে করে ছেলের বাড়ির আত্মীয়স্বজনরা মেয়ের বাড়ি নিয়ে যেতে হয়। এই হলুদের সাথে মেয়ের গায়ে হলুদের সাদা লালপেড়ে শাড়ি, আর সিঁদুরের ফোটা লাগানো গোটা একটা রুই মাছ এবং অন্যান্য উপহার নিয়ে যান ছেলে পক্ষের আত্মীয়রা। এই হলো হিন্দুদের বিয়ের আগে গায়েহলুদের নিয়ম।

৬। দধি মঙ্গল:
দধি মানে দুধের তৈরি দই, আর মঙ্গল মানে শুভ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দইকে খুব শুভ মনে করে। অনেকেই সেইজন্য দইয়ের ফোঁটা লাগিয়ে পরীক্ষা দিতে বা যেকোনো শুভ কাজে রওনা হয়। বিয়ের দিন খুব ভোরবেলা অর্থাৎ পূর্বাকাশে সূর্য না উঠতে ছেলে ও মেয়েকে দই, চিঁড়ে, কলা ও সন্দেশ দিয়ে মেখে খেতে দেওয়া হয়। তারপর সারাদিন অর্থাৎ বিয়ের দিন তারা উভয়ই উপোস করতে হয়। বিয়ের কার্যসম্পাদন শেষ হলে তবেই তারা খেতে পারে, এর আগে আর কোনও পানাহার করা যায় না। এই নিয়মটাও আমি মেয়ের বাড়িতেই সেরেছিলাম।

৭। বৃদ্ধি পুজো:
ছেলে ও মেয়ের বাড়িতে আলাদা করে এই পুজো করা হয়। ছেলে ও মেয়ের বাবা বা পিতৃতুল্য কেউ যদি থাকে, যেমন: কাকা, জ্যাঠা, মামা, বড়দাদা এরা এই পুজো করেন। পুরোহিতের বলা সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে যার বিয়ে হচ্ছে তার সাত পুরুষের উদ্দ্যেশে এই পুজো করা হয়। এখানে স্বর্গত পূর্বপুরুষের কাছে ছেলে ও মেয়ের মানে বর ও কনের জন্য আশীর্বাদ চাওয়া হয়। এই পূজোটা বিয়ের দিন বিয়ের আগে যেকোনো সময়ই করা যায়। কিন্তু বাধ্যতামূলক করতেই হবে। আমার বিয়ের সময় বিয়ের আগে মেয়ের বাড়িতেই এই বৃদ্ধি পূজার কার্যসম্পাদন করেন আমার বড়দাদা।

৮। বরযাত্রীদের আদর আপ্যায়ন ও বরকে বরণ:
ছেলে বা বর মাকে প্রনাম করে বিয়ে করতে যায়। সাথে যাঁরা থাকেন, তাঁদের বলে বরযাত্রী। মেয়ে বা কনের বাড়িতে যাওয়ার সাথে সাথেই বরযাত্রীদের সাদর আপ্যায়ন করা হয়। মেয়ের মা অথবা মেয়ের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে থাকা বিবাহিত একজন মহিলা একটা কুলোয় হলুদ, পানের পাতা, সুপুরি ও প্রদীপ নিয়ে বরকে বরণ করে থাকে। তারপর মেয়ে পক্ষের সকল বিবাহিত অবিবাহিত মেয়েরা বাড়ির গেইটে লাল ফিতা টেনে বরযাত্রীদের আটকে রাখে। গেইটের ফিতা কাটার জন্য বর পক্ষকে কিছু অর্থদণ্ড করা হয়। তারপর বরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে ব্যান্ডপার্টির বাজনা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে বিয়ে আসরে নিয়ে যাওয়া হয়। বরের সাথে তো বরযাত্রীরা থাকেই।

৯। বিয়েতে ছেলে বা বরের পোশাকাদি:
বিয়ের সময় ছেলের পোশাক বলতে সাধারণত ধুতি পাঞ্জাবী হয়ে থাকে বা পরতেও হয়। ছেলে বা বরের কপালে সামান্য চন্দনের ফোটা লাগানো হয়। চন্দন মানে মঙ্গলের প্রতীক। মাথায় পরে টোপর বা মটুক। এই টোপর বা মটুক বানানো হয়, একপ্রকার জলজ উদ্ভিদ নরম গাছ দিয়ে। এসব গাছ বর্ষাকালে বাংলাদেশের অনেক গ্রামের ফসলের ক্ষেতে জন্মায়। দেখতে একরকম লম্বা ধনচা গাছের মতো। ওই গাছের ভেতরের অংশ দিয়েই হিন্দুদের বিয়ের মটুক বা টোপর বানানো হয়। এই মটুকই বর এবং কনের মাথায় পরা থাকে। তবে ছেলের মাথার মটুক বা টোপর এবং মেয়ের মাথার মটুক বা টোপর দুটোই দুরকম। এছাড়াও বরযাত্রী মেয়ের বাড়িতে আসে, তখন অনেক বরের গলায় বিভিন্নরকমের ফুলের মালা থাকে। বরের হাতে থাকে একটি পিতলের বস্তু। এটা দেখতে ছোট হাত আয়নার মতো। একে বলা হয় দর্পণ। বিয়ের সময় বরকে অবশ্যই অবশ্যই পরে আসা পোশাক পাল্টে মেয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া ধুতি পাঞ্জাবি বা পট্টবস্ত্র পরতে হয়।

১০। বিয়েতে মেয়ে বা কনের সাজগোছ:
আমাদের বাঙালি মেয়ে বা কনের সাজ খুব সুন্দর হয়। যেভাবে দুর্গা প্রতিমা একটু একটু করে সাজিয়ে তোলা হয়, ঠিক সেভাবেই বাঙালি মেয়ে বা কনেকে খুব যত্নসহকারে করে সাজানো হয়। বেশিরভাগ মেয়েরা বিয়েতে লাল বেনারসি পরে থাকে। কেউ কেউ লাল কাতান শাড়িও পরে থাকেন। বর্তমানে অনেক মেয়ের বা কনের মাথায় ওড়নাও থাকে। আর সোনা গয়নার অলঙ্কার তো থাকেই। কনের কপালে চন্দন বাটা দিয়ে অনেক কারুকার্য ও ডিজাইন করা থাকে। মেয়ে বা কনের মাথায়ও মুকুট বা টোপর পরা থাকে। বিয়েতে ছেলে বা বরের হাতে যেমন দর্পণ থাকে, তেমনি মেয়ের হাতেও থাকে একটা কাঠের বস্তু। এটাকে বলে গাছকৌটো। এই গাছকৌটার ভেতরে থাকে সিঁদুর, আর রুপোর এক টাকা। বর্তমান সময়ে রুপোর টাকা নেই, তাই এক টাকার একটা কয়েন থাকে। মেয়ের হাতে থাকা গাছকৌটা থাকার মানে হলো, মা লক্ষ্মীর হাতে থাকা একটা বস্তু।

১১। সোনা কাপড়:
এই সোনা কাপড় মানে হলো, সোনার গয়নার সাথে মেয়ের পরিধানের কাপড়-সহ স্নো, পাউডার, আলতা, সাবানসহ সাজগোজের যাবতীয় জিনিশপত্রকে সোনা কাপড় বলে। এটা ছেলে পক্ষ থেকে মেয়ে বা কনেকে দিতে হয়। এই অনুষ্ঠানটি বিয়ের ঠিক আগমুহূর্তে বিয়ের আসরেই হয়ে থাকে। কেউ কেউ ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ের আগেও সোনা কাপড় মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

১২। মালাবদল ও শুভ দৃষ্টি:
বিয়ের সময় ছেলের পক্ষ থেকে মেয়েকে যেমন সোনা কাপড় দেওয়া হয়, তেমনই মেয়ের পক্ষ থেকে ছেলে বা বরকে সোনা-সহ কাপড় দিতে হয়। মেয়ের পক্ষ থেকে ছেলেকে ধুতি পাঞ্জাবী ও সোনার শ্রী আংটি দেওয়া হয়। বিয়ের আসর থেকে একটু আড়ালে গিয়ে বর মেয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া ধুতি পাঞ্জাবী পরে আসে। মেয়ে পক্ষ থেকে যিনি কন্যা সম্প্রদান করবেন, তিনি আগে একটা পুজো করেন পুরোহিতের সাহায্যে। ছেলে বা কাপড় পরে এলে কনেকে পিঁড়িতে বসিয়ে নিয়ে আসা হয়, বরের সামনে। তখন মেয়ে বা কনের মুখ পান পাতা দিয়ে ঢাকা থাকে। মেয়ের পক্ষের লোকেরা মেয়েকে পিঁড়ির উপরে বসিয়ে বরের চারপাশে সাতবার মেয়েকে ঘোরানো হয়। তারপর কনেকে পিঁড়ি থেকে নামানো হয়। এরপর মেয়ে বা কনে মুখ থেকে পান পাতা সরিয়ে বরের দিকে তাকায়। একে শুভদৃষ্টি বলে। এরপর হয় মালাবদল। মানে একে অপরের গলায় মালা পরিয়ে দেয়। এসময় অনেকক্ষণ পর্যন্ত মালাবদলের পালা চলতে থাকে। সাথে বাজতে থাকে ব্যান্ডপার্টির বাজনা। বাজনার তালেতালে সবাই নাচতে থাকে সাথে ছেলে মেয়েকে মালা পরিয়ে দেয়, মেয়েও ছেলেকে মালা পরিয়ে দেয়। একেই বলে মালাবদল। এসময় উপস্থিত বিবাহিত অবিবাহিত মেয়েও মহিলারা উলুধ্বনির সাথে শাঁখ বাজিয়ে পাড়াপ্রতিবেশিদের জানিয়ে দেয়।

১৩। কন্যা সম্প্রদান:
যেখানে বিয়ের আসর করা হয়েছে, সেখানে ডেকোরেশনের কর্মী দ্বারা অনেকে সুন্দর করে একটা মঞ্চ তৈরি করা হয়। এই বিয়ের মঞ্চটাকে বলা হয় বিয়ের কুঞ্জ। বর ও কনে মুখামুখি পিঁড়িতে বসা থাকে। যিনি কন্যা দান করবেন, তিনি ছেলের হাতের উপর হাত রেখে কন্যা সম্প্রদান করবেন। যিনি সম্প্রদান করছেন, পুরোহিত একটি পবিত্র সুতো দিয়ে তাঁর হাত বেঁধে দেন।

১৪। হোম:
এরপর বর ও কনে পাশাপাশি বসে এবং পুরোহিত আগুন জ্বেলে হোমযজ্ঞ (আগুনের কুন্ডলী) করেন এবং মন্ত্র পাঠ করেন।

১৫। সপ্তপদী:
পুরোহিত কনের শাড়ি ও বরের পট্টবস্ত্রের সাথে বেঁধে দেন এবং বর-কনে ওই যজ্ঞের চারপাশে সাত পাক একসঙ্গে ঘোরে। তার সাথে সাথে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণ ও বিয়ের প্রতিজ্ঞা করেন।

১৬। কুসুমডিঙা বা খই পোড়ানো:
এরপর মেয়ে বা কনে কুলোয় করে আগুনে খই দেয় আর ছেলে বা বর কনের হাত দুটো পিছন থেকে ধরে থাকে।

১৭। সাত পাকের সাত প্রতিজ্ঞা:
১৭-১। প্রথম প্রতিজ্ঞা:
স্বামী ও স্ত্রী চান বাড়িতে কখনও খাদ্য বা ধন সম্পত্তির অভাব যেন না হয়। স্বামী স্ত্রীকে খুশি রাখার এবং স্ত্রী দায়িত্বপালনের প্রতিজ্ঞা।

১৭-২। দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা:
স্বামী স্ত্রী দুজনে দুজনকে সমর্থন করার এবং শরীরে মনে একাত্ম হওয়ার প্রতিজ্ঞা।

১৭-৩। তৃতীয় প্রতিজ্ঞা:
স্বামী ও স্ত্রী ধন সম্পত্তি সামলে রাখার তাকে বৃদ্ধি করার প্রতিজ্ঞা করেন। তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ই প্রতিজ্ঞা করেন সন্তানের সঠিক দেখাশোনা করার প্রতিজ্ঞা।

১৭-৪। চতুর্থ প্রতিজ্ঞা:
সদ্য বিবাহিত দম্পতি প্রতিজ্ঞা করেন তারা পরস্পরের পরিবারকে সম্মান জানাবেন। তাদের দেখাশনার দায়িত্ব নেবেন এবং তাদের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেবেন।

১৭-৫। পঞ্চম প্রতিজ্ঞা:
তারা ঈশ্বরের কাছে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান সন্তানের প্রার্থনা করেন। তারা প্রতিজ্ঞা করেন সন্তানের সুশিক্ষার ব্যাবস্থা তারা করবেন।

১৭-৬। ষষ্ঠ প্রতিজ্ঞা:
ষষ্ঠ প্রতিজ্ঞায় সুস্বাস্থ্য ও রোগবিহীন জীবন কামনা করেন দুজনে।

১৭-৭। সপ্তম প্রতিজ্ঞা:
সপ্তম ও শেষ প্রতিজ্ঞা হল এই সম্পর্ক যেন স্থায়ী ও মজবুত হয় তার জন্য দুজনেই সচেষ্ট থাকবেন।

১৮। সিঁদুরদান:
বর কনের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেয়। সিঁদুর পরানো হয়ে গেলেই কেউ একজন কনের মাথায় একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। একে বলে লজ্জাবস্ত্র। সিঁদুর পরানর ক্ষেত্রে একেক বাড়িতে একেক রকম নিয়ম করা হয়। কেউ রূপোর টাকা, কেউ আংটি আর কেউ দর্পণ দিয়ে সিঁদুর পরায়। যেহেতু রুপোর টাকা এখন আর নেই, সেহেতু দর্পণ দিয়েই এই নিয়মটা বেশি করে থাকেন।

বিয়ের কার্যসম্পাদন শেষ হলে বর ও কনেকে একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সাথে থাকে ছেলে বা বরের বন্ধুবান্ধব এবং মেয়ে বা কনের বান্ধবীরা। এখানে বর ও কনের জন্য কিছু পরীক্ষামূলক খেলার আয়োজন থাকে। যেমন: পাশা খেলা, চাউল ছড়ানো ও উঠানো খেলা। জলকেলি খেলা। পাশা খেলায় যে জিতবে সেই সংসার পরিচালনায় দক্ষ ও চালাক হবে। একটা ঘটে কিছু চাউল থাকে। সেই চাউলগুলো বর বিছানার উপর ছিটিয়ে দিবে। কনে সেই চাউলগুলো আস্তে আস্তে কাচিয়ে কাচিয়ে ঘটে ভরবে। এমনভাবে ভরতে হবে, যাতে কোনও শব্দ না হয়। শব্দ হলেই বুঝে নিতে হবে যে, এই মেয়ের সব কাজেই শব্দ হবে। মানে অলক্ষ্মীর ভাব। এভাবে তিন তিনবার চাউল ছিটানো হবে, তিনবার উঠানো হবে। ছেলেও তিনবার, মেয়েও তিনবার। এরপর জলকেলি খেলা।

এই খেলায় একটা পিতলের অথবা মাটির সানকির প্রয়োজন হয়। এই সানকিতে জল থাকে। জল হাত দিয়ে নেড়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর মেয়ের মাথার মটুক থেকে সামান্য একটু বস্তু, আর ছেলের মাথার মটুক থেকে সামান্য একটু বস্তু নিয়ে সেই ঘোরানো জলে আগে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। জল ঘুরতে থাকে, সাথে ছেলে /মেয়ের মাথার মটুকের ছেঁড়া অংশও ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে, মেয়েরটা আগে, নাকি ছেলেরটা আগে দৌড়াচ্ছে। যদি মেয়েরটার পেছনে ছেলেরটা থাকে, তাহলে সবাই বলে, “মেয়ে খুবই অভিমানী!” আর যদি ছেলেরটার পেছনে মেয়েরটা থাকে, তাহলে সবাই বলে, “ছেলে তো খুবই দেমাগি!” এভাবে একসময় দুটোই একসাথে মিলে গিয়ে জড়াজড়ি হয়ে যায়। তখন উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে আনন্দে হৈচৈ শুরু করে দেয়। এরপর শুরু হয় বর কনের খাওয়াদাওয়ার পালা। খাওয়াদাওয়ার মাঝেও ছেলের বন্ধুবান্ধব ও মেয়ের সখি ও বান্ধবীরা সাথে থাকে।

১৯। বাসর ঘর:
বিয়ে শেষ হলে বর ও কনেকে ঘুমানোর জন্য দুইজনকে আলাদা এক ঘরে দেওয়া হয়। এসময় বর ও কনের ভাই বোন ও বন্ধুরা সবাই মিলে সারা রাত বিয়ের আসরে বসে আড্ডা দেয়। গান বাজনা হয়। একে বলে বাসর ঘর। তারপর হয় বাসি বিয়ে।

২০। বাসি বিয়ে:
অনেক বাঙালি বাড়িতে নিয়ম আছে। তবে বাসরঘর থেকে আসার কারণে আর বিয়ের রাত শেষ হয়ে যাওয়ার কারণেই, এই বিয়েটাকে বাসি বিয়ে বলে থাকে। অনেক জায়গায় বাসি বিয়ের পরই সিঁদুরদান করে থাকে। এই বাসি বিয়েতে একজায়গার চারকোণায় চারটে কলাগাছ রোপণ করে রাখা হয়। এখানেও বর কনে একসাথে কনের কাপড়ের আঁচলের সাথে বরের ধুতি অথবা গায়ের চাদরের কোণা গিঁট বেঁধে কলাগাছের চারদিকে সাত পাক ঘরতে হয়। কলাগাছের চারদিকে সাত পাক ঘোরার পর এখানেও একটা মজার পরীক্ষামূলক খেলা থাকে। এটা হলো আংটি খেলা। কলাগাছের মাঝখানে একটা ছোট গর্ত করা হয়। সেই গর্তটা জল দিয়ে ভরে রাখা হবে। তারপর বর তাঁর হাতের আংটি ঐ গর্তে লুকিয়ে রাখবে, কনে সেই আংটি জল ভর্তি গর্ত থেকে খুঁজে বের করতে হবে। এভাবে উভয়ই তিনবার করে। যে তিন বারের মধ্যে একবার খুঁজে বের করতে পারলো না, সেই খেলায় হেরে গেলো। যে জিতল, সেই বুদ্ধিমানের পরিচয় দিলো।

২১। কনের শ্বশুরঘর যাত্রা:
বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন হলো। পাড়াপড়শি সবাই এসে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করেন। বর ও বরযাত্রীরা কনেকে নিয়ে কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় বিদায়বেলায় মেয়ে বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হয়।

২২। বধূ বরণ ও কালরাত্রি:
বরের বাড়ি পৌঁছলে বরের মা কনেকে বরণ করে ঘরে তোলেন। দুধ আর আলতায় পা ডুবিয়ে ঘরে ঢুকতে হয়। নতুন বউকে ওথলানো দুধ দেখাতে হয়। যাতে সারাজীবন দুধভাত খেয়ে যেতে পারে। চাল ভর্তি পাত্র দেখাতে হয়। যাতে সারাজীবন সংসার চালের অভাব না হয়। এবং একটা পাত্রে থাকা জীবিত মাছ ধরতে বলা হয়। যাতে সারাজীবন এই সংসারে মাছভাত পরিপূর্ণ থাকে। সেদিন স্বামী ও স্ত্রী আলাদা আলাদা শয়ন করেন। একে বলে কালরাত্রি।

২৩। বউ ভাত ও ফুলশয্যা:
বিয়ের একদিন পরে হতে পারে বউভাত অনুষ্ঠান। এটা করা হয় যাঁর যাঁর সাধ্যমতো। এদিন বউয়ের হাতে ভাতের থালা ও কাপড় তুলে দেয় বর। বলে আজ থেকে তমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব আমিই নিলাম। এরপর নতুন বউ শ্বশুরবাড়ির সব গুরুজনদের খাওয়ার পাতে ঘি-ভাত দিতে হয়। এই অনুষ্ঠানে অনেকে অনেক ধরণের আয়োজন করে থাকে। কেউ হাজার হাজার লোকের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। এদিন রাতে হয় ফুলশয্যা।

২৪। অষ্টমঙ্গলা বা আট নায়রি:
বিয়ের আট দিনের মাথায় বর ও কনে একসাথে মেয়ের বাড়ি যায়। নারায়ণ পুজো করে বিয়ের দিনে পুরোহিতের বেঁধে দেওয়া হাতের সুতো খুলে দেওয়া হয় এবং মেয়ের মা ওই সাত পাকের জোরের গেঁট খুলে দেয়।

সবশেষে ঘরসংসার:
এরপর থেকে চলতে থাকে সাংসারিক জীবন। কারো-কারোর বেলায় বছর দুয়েক পরই সংসারে আসে নতুন অতিথি। একসময় তাঁরা বুড়ো হয়ে যায়। নতুন আগতরা বড় হয়ে সেই সংসারের হাল ধরে। এভাবেই চলতে থাকে জীবনের পর জীবন। আমাদের জীবনও এভাবেই চলছে। সমাপ্তি।

করোনায় সবচাইতে লাভবান দেশ ভিয়েতনাম

২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসে কুপোকাত হয়ে গিয়েছিল ভিয়েতনাম। এবার যখন ভিয়েতনামে করোনা ছড়ালো, পূর্বাভিজ্ঞতা থাকায় তারা সে করোনা খুব ইফেশিয়েন্টলি হ্যান্ডল করলো। ফলাফল করোনায় ভিয়েতনামে একটা লোকও মারা যায়নি। ভিয়েতনাম একদিনের জন্যও তাদের দেশের কলকারখানা বন্ধ করেনি। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে তারা চলে গিয়েছে সেই ২০১৯ এর নভেম্বরেই। এদিকে করোনায় ধাক্কা খাওয়ার পর চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ও মার্কিনীদের তৎপরতা দেখে নড়েচড়ে বসেছে জার্মানীও।

জাপান অলরেডী তাদের কারখানাগুলো চায়না থেকে সরাতে ২৩.৫ বিলিয়ন ইউয়ানের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত পশ্চিমারা। Trump যদি আবারো ক্ষমতায় আসে তবে চীনের সাথে মার্কীনীদের দ্বন্দ্ব আরো বাড়বে। চীনের উপর আরোপিত শুল্কারোপের সময় আরো লম্বা হবে। এসব বিবেচনায় জাপান, নেদারল্যান্ড এবং জার্মানী ইতোমধ্যে তাদের চায়না থেকে কারখানা সরিয়ে সেগুলো প্রতিস্থাপনের বিকল্প খোঁজা শুরু করেছে। এবং তাদের দৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো ভিয়েতনাম। ইতোমধ্যে জাপানের টয়োটা, মার্কিন প্যানাসনিকসহ ২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রায় কনফার্ম করেই দিয়েছে তাদের পরবর্তী গন্তব্য ভিয়েতনাম। শ্রমিকের সহজলভ্যতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, চায়নার বর্ডার, স্মুথ কাস্টম প্রসেস থাকার কারণে ভিয়েতনামই হচ্ছে চায়নার অন্যতম বিকল্প।

কিন্তু আমরা কী করব? আমাদের চার দশকের বেশি বয়স্ক এই পোশাক শিল্প কী এই বিদেশী ব্র্যান্ডের দয়ায় টিকে থাকার চেষ্টা করবে? আমাদের স্কিলড ওয়ার্কার আছে, আছে উপযুক্ত প্রযুক্তিও, আছে স্বনামধন্য ফ্যাশন ডিজাইনার। সবকিছু থাকার পরেও চার দশকে আমাদের কোন আন্তর্জাতিক ব্র‍্যান্ড নেই। এমনকি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কোন প্রচেষ্টাও নেই। বিদেশী ব্র্যান্ডের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর তিন কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা টিকে থাকতে পারেনা। এখনই যদি এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য বিকল্প চিন্তা না করা হয় তবে অচিরেই এই শিল্প এদেশ থেকে ভ্যানিশ হবে। কারণ পাকিস্তান, কম্বোডিয়া আর মায়ানমারের মত দেশগুলো এই শিল্পে আমাদের ঘাড়ের উপর ইতিমধ্যে প্রতিযোগীতার নি:শ্বাস ফেলছে।

এত এত কারখানা ভিয়েতনামে যাওয়ার ঘোষণাতেও ভিয়েতনাম হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারা মনোযোগ দিচ্ছে তাদের বর্তমান প্রধান আয়ের উৎস পোশাক শিল্পের দিকে। তারা দেখছে বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো কোটি কোটি ডলারের প্রোডাক্ট নিয়ে গিয়ে পেমেন্ট না দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করছে। ফলে তারা আর পেমেন্ট পাচ্ছেনা। এথেকে বুঝতে পেরেছে আসলে অনন্তকাল ধরে অন্য ব্র্যান্ডের অর্ডারকৃত পোশাক বানিয়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবেনা। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিজেদের ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে হবে।তাই ভিয়েতনাম ঘোষণা দিয়েছে আগামী ১০ বছরে তারা অন্তত ২০টি আন্তর্জাতিক ব্র‍্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। এবং এই ব্র‍্যান্ডগুলো প্রতিষ্ঠায় যেখানে যে ধরণের সহায়তা দেয়া দরকার ভিয়েতনাম শিল্পমন্ত্রণালয় তার সবধরণের সহায়তা করবে। ভিয়েতনামীরা বীরের জাতি। দীর্ঘ এক দশক মার্কিনীদের সাথে লড়াই করে তারা তাদের দেশ মুক্ত করেছে। গত শতকে মার্কিনীরা একমাত্র ভিয়েতনামীদের কাছেই মুখোমুখি যুদ্ধে পরাস্ত হয়েছে। অতএব ভিয়েতনাম দশ বছরে অন্তত ১০ টা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বে। আর আমরা ঘোষণা দিয়েছি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের । প্রশ্ন হল কোথায় গেল জনগণের রক্ত পানি করা প্রণোদনা । কোথায় গেল শ্রমিকের লাঞ্চনা গঞ্জনা ।

সূত্রঃ LinkedIn

ছবিঃ ন্যাট।

সুকৌশলে বিনষ্ট হওয়া দেশের কর্ণধার সম্প্রদায়

-> বাংলাদেশ। নামটি শুনলে হৃদয়ে যতটা প্রেম জাগ্রত হয় তা মনে হয় সেই বহুকাল পূর্বের কোন এক সময় এর কাল্পনিক কোন এক শ্রুতি বাক্য। মনে প্রশ্ন জাগে, সেই প্রেম কি ১৭৫৭ সালের সিরাজ-উদ-দৌলা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল? এখনো কি সেই প্রেম বর্তমান আছে আমাদের মাঝে? নাকি আমরা তথাকথিত দেশপ্রেম নিয়ে মাতামাতি করি!! সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া বড্ড দায়।

-> ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হল। আহা! দেশ স্বাধীন হল। আমার দেশ। আমাদের দেশ। নতুনভাবে শুরু হল পথচলা। সেই পথচলার ৪২ বছর পরে এলো নতুন এক অধ্যায়। নাম আধুনিকতা। আহ! আধুনিকতা শব্দটা তো গেঁয়ে শব্দের বিপরীত। এখন তো আর এসব শব্দ চলে না। বলা উচিত আধুনিকতা শব্দটা তো ব্যাকগ্রাডেড শব্দের বিপরীত। তো কি সেই আধুনিকতা? সামাজিক যোগাযোগ এর যুগান্তকারী উপাদান ফেসবুক। আধুনিক হতে গেলে ফেসবুকসহ অন্যান্য একাউন্ট থাকাটা অলিখিত দলিল।

-> বুয়েট থেকে পাশ করা ছেলেটা আজ আমেরিকা চলে গেছে। সে নাকি বছরখানেক আগে সেখানে সরকারি স্কলারশিপ পেয়েছিল। তারপর শোনা গেল সে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এর খুব ভাল পদে চাকরি পেয়েছে একজন দক্ষ কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তার পরিবারকেও নিয়ে গেছে। তার তো কোন চিন্তা নাই। ভাল চাকরি, ভাল বেতন, সাহিত্য বিশারদদের মতানুসারে ছান্দিক সুখময় সুখের সংসার।

-> দুর্নীতি। তিনি সরকারি চাকরি করেন। উচ্চ পদে আছেন। নিশ্চিত তিনি দুর্নীতিবাজ। নাহলে কি তিনি উচ্চ পদে থাকতে পারতেন? কখনই না। সংবিধান এ এরকম কোন লিখিত সংজ্ঞা আছে বলে তো মনে হয় না।

-> আহা! কত আনন্দের খবর। পরিবারে নতুন শিশু এসেছে। বছর ৩ না ঘুরতেই ছেলেটা ৬ মিনিটে ১০০ শত্রু সেনা খতম করতে ওস্তাদ। আমাদের দেশের সেনারা যে কি করে!! এসব ওস্তাদ, মহাভারতের ভীম এর ন্যায় ক্ষত্রিয়দের থেকে কিছু শিখলেও তো পারে। বলছিলাম পাবজি এক্সপার্ট ভীম এর ন্যায় যোদ্ধাদের কথা।

এই কথাগুলো আমার কথা না। এই কথাগুলো হল হীমাদ্রি নদীর তীরে বসে থাকা একজন দেশপ্রেমিক সত্বার আক্ষেপ এর কথা। তার নাম সুকুমার। জন্ম হয় হীমাদ্রি নদীর মাঝে কোন এক স্রোতের ওপর। অবিরাম পথচলার মাধ্যমে স্রোতের মত সেও পুরো দেশ ঘুরে বেড়ায়। লোকে বলে পথিক সুকুমার। তার বয়স আনুমানিক সহস্র বছর।

বিজ্ঞসমাজের গুরু সুকুমার একবার কথা শুরু করলে আর থামতেই চায় না। তো তার সাথে যখন সাক্ষাত হল নদীর তীরে তখন বললাম, আপনার সাক্ষাত এর অপেক্ষায় কত ঘুরেছি। আজ দেখা হল; অনেক কথা বলব আজ আপনার সাথে।
প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কেমন আছেন? বলে কি সে নাকি ভাল নাই। কারন জিজ্ঞাসা করায় সে বলে কিভাবে ভাল থাকা যায়!! দেশের মানুষের মাঝে দেশপ্রেম এর যে স্বল্পতা, তরুন সমাজ এর যে ভঙ্গুর দশা, আধুনিকতার নামে যে করুন দশা তাতে কি ভাল থাকা যায়?? মহাশয় আমি বুঝছি না। একটু বিস্তারিত বলেন। তিনি বললেন,শোন তাহলেঃ-
১৭৫৯ সাল। সিরাজ এর মৃত্যুর বছর পার হয়েছে। মীর জাফর বোঝা শুরু করেছে শাসন এর পুরো ক্ষমতা ব্রিটিশদের হাতে। সে শুধু নামমাত্র রাজা। তখন সে আফসোস ছাড়া আর কোন কাজ করার সময় সুযোগ পেত না। তো সেই যে শুরু হল আফসোস সেটা এখন প্রতি বাঙ্গালির নিজস্ব সম্পদ। একটা কাজ শুরু করবে একজন। আহ! আজ না। কাল থেকে শুরু করব। কাল আর আসে না কখন। আফসোস। একটা ব্যবসা শুরু করতে হবে। পরিকল্পনা আগে করতে হবে। সেই পরিকল্পনা শেষ হলে দেখা যায় সেটা অন্য দেশে ২০ বছর আগে হয়ে গেছে। আফসোস। এত এত আফসোস !! ধুর! ভাল লাগে না। ইন্টারনেট অন, লগ ইন, শুরু স্ক্রলিং।

->বুয়েট থেকে পাশ করল। ভাল কথা। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এ কাজ করার সুযোগ পাইল। পরিবার নিয়ে চলে গেল। ২৫ বছর দেশের সম্পদ ব্যবহার করল। অথচ সে দেশের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা করল না। কি দরকার। আপন প্রান আগে। বেঈমান।

->অন্যকে দুর্নীতিবাজ বলার আগে নিজে চিন্তা করো নিজে দুর্নীতিবাজ কি না। একজন ছাত্র যদি ঠিকমত বিদ্যা না অর্জন করে তাহলে কি সেটা দুর্নীতিবাজ না? সেটা তো আর বড় দুর্নীতি। কারন ছাত্র নিজের কর্তব্য এর সাথে বিরোধিতা করল। কিসের ছাত্রত্ব, দুর্নীতিবাজ।

->ছোট বাচ্চা। খেলবে। প্রকৃতির সাথে থাকবে। প্রকৃতি দেখবে,প্রকৃতি তাকে শিখাবে সব। তাকে যুদ্ধ করতে বলেছে কে?সেই যুদ্ধগুলো সে যদি মোবাইল বা কম্পিউটারে না খেলে বন্ধুদের সাথে গিয়ে মাঠে খেলত তাহলে সে যেমন সামাজিকতা শিখত তদ্রুপ শারীরিক উন্নতি হত। কিন্তু পাবজি যোদ্ধা হওয়ার কারনে সে আজ সময় অপচয় করার কৌশল শেখা ছাড়া কিছুই শিখছে না। নষ্ট হচ্ছে একটা সম্ভাবনাময় বীজ যে বীজ একসময় দেশের হাল ধরতে পারত।

নাহ আমি তো বিপদে পরেছি মনে হচ্ছে। সুকুমার এর থেকে এত সব শুনতে থাকলে আমার মগজ ধোলাই হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। কিন্তু সুকুমার একবার যেহেতু বলা শুরু করেছে তাহলে সে শেষ না করে আর থামবে না। অগত্যা। শুনতেই হবে।
হীমাদ্রি নদীর সুপেয় পানি আর প্রকৃতির ফল আমরা ভাগাভাগি করে খাওয়ার পর আবারও সুকুমার শুরু করল কথা বলা। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে মনে হয় কেঁদে দিবে এখুনি। কথা বলার সময় সে বারবার থেমে যাচ্ছিল। কণ্ঠ ভেজা ভেজা মনে হচ্ছিল। আমি শুধু দেখছিলাম। তাছাড়া এই পদ্মভূষিত লোকালয়ের আমি সত্বার বাসিন্দার কিছুই করার ছিল না।

একটা শিশু জন্ম গ্রহন করল। পৃথিবী আনন্দিত হল। নতুন প্রানের আগমন হল। প্রকৃতি এই বীজ রোপণ করল কারন প্রকৃতি জানে এইটা সেরা বীজদের মধ্যে অন্যতম।এই যোগ্য,এই সেরা। দেশ তাকে বড় করা শুরু করল। দেশ তার আলো, বাতাস, খাদ্য দিয়ে তাকে বড় করা শুরু করল। তার মনোরঞ্জনের সকল ব্যবস্থা গ্রহন করল। তাকে খেলার জায়গা দিল। তার সকল অপূর্ণতা পুরন করল। কারন দেশ যে তার মা। মা কি সন্তানের জন্য সকল খুশির যোগান না দিয়ে পারে? শিশুটা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকল। সে অনেক বড় হয়ে গেল। কতটুকু বড়? মা এর কাছে সন্তান কি কখন বড় হয়? সে তো মা এর কাছে সেই আগের মত ছোটই আছে। মা তখনও তাকে লালন পালন করছে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কি মা দেশ মা তাকে লালন পালন করবে না? মা কি কখনও বলবে আজ থেকে সন্তানকে আর দেখাশোনা করবে না? সুকুমার আর বলতে পারল না। তার কান্না দেখে মনে হল প্রকৃতি স্থির হয়ে গেছে। পাখিরা ওড়া ভুলে গেছে। নদীতে আর স্রোত চলছে না। সবাই শুধু সুকুমারকেই দেখছে।
কান্না থামিয়ে সুকুমার আবার বলা শুরু করল।ওই শিশুকে দেশ মা যে বড় করল, তার কি বিন্দুমাত্র দায়িত্ব নাই মা এর ওপর? এটাকে দায়িত্ব বলা ভুল হবে। মা এর ওপর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। তাকে কে অধিকার দিল দেশের সাথে প্রতারনা করার?সুকুমার কে দেখে এবার একটু গর্জিত মনে হচ্ছিল। চোখে রক্তের আভা। সে এবার যা যা বলছে সব যেন হৃদয়ে বিদ্ধ হচ্ছিল। তার কথাগুলো ছিল এরুপঃ

শিশু জন্ম নিল। তার শুরু হল নতুন পথচলা। যখন সে একটু বড় হল তখন তার স্কুলে যাওয়ার কথা। বন্ধুদের সাথে মাঠেখেলার কথা। সে শুধু শিখবে।প্রকৃতি তাকে শেখাবে। সে কেন মোবাইল হাতে নিয়ে বন্ধ রুমে বসে গেম খেলবে? এটা কি সময় এর অপচয় ছাড়া আর কিছু? এটা থেকে সে কি শিখবে? মনোরঞ্জন? কেন প্রকৃতি তার মনোরঞ্জনের জন্য কোন ব্যবস্থা করেনি? গাছ,নদী,পশুদের বৈচিত্র্য এসব দেখতে গেলে তার জীবন এর অন্তিমকাল চলে আসবে অথচ এসব বৈচিত্র্য দেখা শেষ হবে না!! অথচ সে কোন ভ্রান্ত পথের মধ্যে থেকে নিজের জীবনের সোনালি সময় গুলোকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে? এটা কোন ধরনের আধুনিকতা?

ছাত্র অবস্থায় সে কি করবে? বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র। এই কবিতা তো আজ মান্ধাতার। আধুনিক না। তাই এর মর্ম বুঝতে না পেরে ছাত্র ভুলে যায় তার কর্ম সম্পর্কে। সে আজ ব্যস্ত কম্পিউটার নিয়ে। গেম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত যাতায়াত!! হায়রে আধুনিকতা! অথচ কখনো কি পায়ে হেঁটে সেই ছাত্র খোঁজ নিয়েছে তার বাড়ির পাশের বৃদ্ধলোকটি হাঁটতে পারছে না, তার কি অবস্থা এখন? প্রচণ্ড জ্বরে কাতরানো তার বন্ধু ২ দিন স্কুলে যায়নি,তার কি অবস্থা এখন? ইদের দিন নতুন পোশাক কিনতে না পেরে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা তার গরীব বন্ধুর জন্য কি করা যায়, সবাই মিলে একটা নতুন পোশাক উপহার দেয়া যায় কি না? নাহ এটা তো বাকগ্রেডেড চিন্তা, আধুনিক হও,ইন্টারনেট অন, লগ ইন, শুরু স্ক্রলিং। আধুনিক সামাজিকতার যুগে প্রবেশ।

বুয়েট থেকে পাশ করা ছেলেটা তো দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্বান সন্তানদের একজন। সে আরো বিদ্যা অর্জনের জন্য বিদেশ গেল। তারপর ভাল চাকরি পেল। সেখানেই সে বাকি জীবন অতিবাহিত করার মনোনিবেশ করল। সে কি একবারও চিন্তা করতে পারল না সে দেশের একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান, তাকে দেশের কত প্রয়োজন। সে এই প্রয়োজন এর প্রয়োজনীয়তা বুঝল না? দেশ তাহলে কিভাবে সানে যাবে? দেশকে নেতৃত্ব দিবে কে?দেশের সেরা সন্তান তো আজ নিজের লাভের জন্য বিদেশ পরে আছে। দেশ মাএর যা হওয়ার হবে। অন্যজন দেখবে দেশ।আমার কি? হায়রে সন্তান!! কি সব আধুনিকতা!!

দুর্নীতি। নিজের ক্ষমতার অপব্যহারই তো দুর্নীতি। এটা কতক সরকারি কর্মচারীদের মাঝেশুধু সীমাবদ্ধ।আরে বোকা!! তাদের চেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ তো আপনি নিজে। লেখাপড়া করা, সেটা ঠিকমত করা হয় না, ছাত্র দুর্নীতি। লেখক, সংকীর্ণ মনের লেখা, পাঠকদের সাথে দুর্নীতি। চালক, লাইসেন্স নাই, যাত্রীদের সাথে দুর্নীতি। দারোয়ান, ঘুমিয়ে পরে পাহারা দেয়ার সময়,মালকিনের সাথে দুর্নীতি। আরো কত উদাহরন!! সরকারি কোন কর্মচারী দুর্নীতিবাজ হলে নিজ দায়িত্বে অবহেলা করা এসব জনগন, ছাত্ররা হল দুর্নীতির জনক। সুতরাং আগে নিজে ঠিক হওয়া উচিত। পরে অন্যের দোষ খোঁজ করা উচিত। নিজের কাজে সচেতন হলেই তবেই দেশ এর উন্নতি এর আশা করা উচিত। সবাই অন্যের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত।এটা তো দেশ শিক্ষা দেয় নি। ভুলে গেছিলাম, এসব তো মান্ধাতার, ব্যাকগ্রেডেড, আসো আধুনিকতাই। ইন্টারনেট অন, লগ ইন, শুরু স্ক্রলিং।

এত সব কথা শুনে মনে হচ্ছিল আমার যদি ডানা থাকত তাহলে উড়ে যেতাম। এসব শুনতে থাকলে মগজ ধোলাই হবে নিশ্চিত। সুকুমার তো কোন ভাবেই থামছে না। আরও কিছু বলতে যাবে সুকুমার… এমন সময়উচ্চ আওয়াজ… ক্রিং ক্রিং ক্রিং…ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে মনে হল মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙল না। ঘুম ভাঙল আধুনিক অ্যালার্ম নামক মোরগ এর ডাকে। তারপর কি যেন মনে হল, আরে সুকুমার এর কথা ভেবে লাভ কি… ওই সব সোশিয়ালিস্টিক কথা। স্বপ্নের কথা। ওইগুলো অন্য কেও ভাববে্‌, আমার কি দরকার!! ইন্টারনেট অন, লগ ইন, শুরু স্ক্রলিং……

একটি ফুল নিয়ে আত্ম ভাবনা

ফুলের ছবিটি আমারই তোলা সেটা থেকে জুম করে এই অংশটুকু নেওয়া হয়েছে। ফুলটির সাথে আমাদের জীবনের বেশ কিছু সামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছি। নিচে সেগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরছি।

১. ব্যক্তি স্বাতন্ত্র: লক্ষ্য করুন ফুলের প্রত্যেকটি পাপড়িই আলাদা রকমের। একটার সাথে আরেকটার মধ্যে কোন না কোন পার্থক্য আছেই। আমাদের সমাজেও প্রত্যেকটি মানুষ একে অন্যের থেকে আলাদা।

২.পারষ্পরিক সহযোগিতা: লক্ষ্য করুন নিচের দিকের একটি পাপড়ির মাথাটা ভেঙে গেছে। আর তাকে সাপোর্ট দিয়ে রেখেছে পাশের পাপড়ি। যার জন্য অন্যান্য পাপড়ির মতো সেটিও স্বাভাবিকের মতই দাঁড়িয়ে আছে। এটাকে যদি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত কিংবা প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে তুলনা করা হয় তবে সমাজের সুস্থ, সাবলম্বী মানুষদের সাহায্য সহযোগিতায় অস্বাভাবিকরাও মূলধারায় আসতে পারে।

৩. একই সমাজে বিভিন্ন গোত্র: লক্ষ্য করুন ফুলগুলো মধ্যে ডানপাশে ৩টা, তার নিচে চারটা এবং তার উপরেই পাঁচটি ও শেষে একটা মিলে ফুলটি গঠিত। অর্থ্যাৎ মতাদর্শ কিংবা সমাজের অন্য কোন প্রভাবকের ফলে একই প্রজাতির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র দলের সৃষ্টি হয়।

৪. সমাজ নিয়ন্ত্রক: দেখুন ফুলগুলোর পাপড়ির থেকে উচ্চ স্থানে আছে ফুলের গর্ভধারণ প্রয়োজনীয় উপাদান। পাপড়িগুলো সরাসরি প্রজননে কাজ করে না। পরাগায়নের জন্য সাহায্য করে মাত্র। এটা এমন ভাবে হতে পারে যে, আমাদের সমাজের একটা উচ্চ শ্রেণি থাকে যারা সকল কাজ পরিচালনা করে। সাধারণ মানুষ সেখানে কেবল প্রভাবক মাত্র। নিজে থেকে কোন কাজ করতে পারে না। আবার এভাবে যদি ভাবা যায় ফুলের পাপড়িগুলোই গর্ভাশয় সহ প্রয়োজনীয় উপাদানকে নির্বাচিত করেছে প্রধান অংশ হিসেবে যারা সকল কাজ করবে। এটাকে গণতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত করা যেতে পারে যেখানে পাপড়িগুলো না থাকলে পরাগায়নই হবে না। অর্থাৎ মানুষ ছাড়া গনতন্ত্র সম্ভব নয়।

৫. ফুলের রং: দেখুন ছবির ফুলটির রং হলুদ। এই ঝোপের সব ফুলই হবে হলুদ। আবার অন্য ঝোপের সব ফুল হয়তো আবার অন্য রংয়ের। ফুলের ঝোপটিকে একটি দেশ/ মহাদেশ বা বৃহত্তর কোন অঞ্চল ভাবলে দেখা যাবে এক একটা অঞ্চলের মানুষের গায়ের রং আলাদা, কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ মিশ্র।

৬. সমাজে মানুষ: দেখুন প্রতিটি পাপড়ি আলাদা আলাদাভাবে নিজে সুন্দর না। কেউ লম্বা কেউ বেঁটে, কেউ ভাঙা… অথচ সবাই মিলে একটি সুন্দর ফুল। অর্থাৎ সমাজের একত্রে সবাই মিলে গঠিত হয় একটি আদর্শ সমাজ। সামগ্রিকভাবে সবাই সুন্দর।

৭. প্রতিটি মানুষ সম্ভাবনাময়ী: এই ফুলটি নতুন বংশধর সৃষ্টির জন্য জন্মগতভাবে প্রস্তুত। অথচ বাহ্যিক প্রভাবক ঝড় বৃষ্টি, ফুল ছিড়ে ফেলা ইত্যাদি কারণে সকল সম্ভবনার সমাপ্তি ঘটতেই পারে। মানুষও তো একইভাবে সম্ভাবনাময়ী।

৮. জীবনে দাঁড়ানো: ফুলটি শক্তিশালীভাবে দাড়িয়ে থাকতে তার মজবুত ভিত্তি প্রয়োজন হয়েছে যা সেই নিজেই গড়ে তুলেছে। একটা মানুষকেও জীবনের দাঁড়িয়ে উঠতে হলে নিজেই জীবনকে গড়ে নিতে হয়; অন্য কেউ তা করে দেয় না।

৯. মানুষের ফোকাসড হওয়া: ফুলটি তার সমগ্র সৌন্দর্য, তার ক্ষমতা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যার লক্ষ্য সমাজে সবার সামনে ফোকাসড হওয়া। মানুষ ও সেই ভাবেই চাই সব জায়গায়তে ফোকাসড হতে।

এগুলো আমার নিছকই ভাবনা। কিন্তু আমার কাছে জিনিসগুলো বেশ অর্থপূর্ণ মনে হয়েছে।


শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ধর্ষন: কিছু মিথ -১

৭৭ এর দিকে মিশেল ফুকোঅদ্ভুত একটা যুক্তি দিলেন। নারী পুরুষের যৌনপ্রক্রিয়া কখনোই অপরাধতুল্য হতে পারে না। কারন এটা একটা আদিমতম জৈবিক প্রক্রিয়া যা স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু ধর্ষন অবশ্যই অপরাধতুল্য কেননা এটা জোর করে তার ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনেকটা এমন যে আপনি কাউকে সাকার পাঞ্চ বা সজোরে মুস্টিবদ্ধ ঘুষি মারলেন। সেভাবে কারো জননাঙ্গের ভেতরে জোর করে নিজের যৌনাঙ্গ প্রবেশ করা অবশ্যই সেরকম একটা উদাহরন ধরা যেতে পারে কিন্তু আপনি যখনই সেটা শুধু মেয়েদের জননাঙ্গ হিসেবে তুলে ধরবেন যা সুরক্ষা করা দরকার (যেমন টাকা পয়সা ইত্যাদির মতো বিশেষ লিঙ্গের জননাঙ্গকে অস্পৃশ্য মনে করা), বস্তুত আপনি তখনই ট্যাবুতে নিয়ে গেলেন। আসলে এটা তা না, এটা হলো একধরনের সহিংসতা। তার এই যুক্তিটি তৎকালীন নারীবাদের মেইনস্ট্রিমের সেক্সিট জনপ্রিয় ধারার থেকে সমালোচিত হয়। ফুকোর এই বক্তব্য অনুযায়ী আধুনিক সময়ে যৌনতাকে ট্যাবু হিসেবে দেখার যে ভ্রান্তি এবং তা থেকে সুযোগ নেয়া সুবিধাবাদীদের আঁতে বেশ ঘাঁ দিতে এখনো সক্ষম। হয়তো ২০২০ এর দিকে #MeToo এর সেকেন্ড ওয়েভে ধর্ষক বা নীপিড়কদের উল্টো প্রতিবাদী হয়ে ওঠা অথবা বাংলাদেশে সুবিধাবাদী সুশিল ধর্ষকদের কন্ঠে পুরুষ নির্যাতনের যে বুলি শোনা যায় এটা তারই ফল।
দ্বাদশ শতকে রোমানরা ধর্ষনকে অপরাধ গন্য করে সংজ্ঞায়িত করে এভাবে যে যৌনমিলন হোক বা না হোক নারীর ওপর ধর্ষনের উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ করা হলেই সেটা ধর্ষন বলে গন্য হবে। সম্প্রতি এফবিআই তাদের ধর্ষনের সংজ্ঞাকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে যার মাধ্যমে ভিক্টিম শুধু নারী হতে পারেন না, একটি শিশু, হিজড়া অথবা একজন পুরুষ বা সমকামী অথবা বিবাহিতা স্ত্রীও (যদি তার স্বামীর দ্বারা ধর্ষিত হন) হতে পারেন।

তারপরও ধর্ষন থেমে নেই। ধর্ষন কেন হয় সেটা নিয়ে একটা ব্লগ লিখেছিলাম চাইলে এখানে পড়ে আসতে পারেন। পুরোটাই মানসিক বিকৃতি সংশ্লিস্ট ব্যাপার।

ধর্ষন নিয়ে যখনই কোনো আলোচনা হয় তখন এর দুটো দিক নিয়ে কথা হয় সেটা হলো ধর্ষিতা নারী সাহসী হয়ে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জনসম্মুখে বলবে যাতে সবাই সচেতন হন এবং এটা যে আসলেই কত খারাপ সেটা নিয়ে সবাই ভাবতে পারে, এর মূল উদঘাটনে ডিসকোর্স হতে পারে। আরেকটি দিক হলো প্রশাসনিক যারা মূলত ধর্ষনের কোনো ঘটনা ঘটলে তার তদন্ত, আসামী পাকড়াও, ভিক্টিমের পুনর্বাসন এবং তার উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন।কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ হচ্ছে না, মূল সমস্যা যেখানে সেটা হলো ধর্ষনের সংজ্ঞা একেক দেশে একেক রকম। আমেরিকার এফবিআই ধর্ষনকে যে সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করেছে, মুসলমান দেশগুলো সেভাবে সংজ্ঞায়িত করে না কারন সেখানে দাসী আর স্ত্রী ধর্ষন হুদুদ আইনেই বৈধতা দিয়ে দিয়েছে এবং হ্বদের ধারায় ধর্ষনকে কোনোভাবেই সুস্পস্টরূপে ব্যাখ্যা করে নাই। আবার অনেক দেশে সমকামীরা নিজেদের পরিচয় জানালেই তাদের মৃত্যু অনিবার্য, আবার বাচ্চাবাজী ও বাল্যবিবাহের নামে শিশুধর্ষন বা স্টাচুয়ারী র‌েপ রাস্ট্রিয় ভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

১) সুইডেন ধর্ষনে এত উপরে কেন?

যদি আমরা ধর্ষনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে সুইডেনের অবস্থান পাবো ষষ্ঠ স্থানে। প্রশ্ন আসতে পারে সভ্যতার ধারক বাহক বলে খ্যাত এবং শান্তির দেশ হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয় তাদের সমাজ ব্যাবস্থা এত খারাপ কেন! তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
এর কারন হলো সুইডেনের অতিরিক্ত উদ্বাস্তু থাকার কারনে সেখানে যে সামাজিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত ধর্ষনের সংজ্ঞার পরিবর্তন।
বিশ্বের নানা জায়গায় যুদ্ধবিগ্রহ,অযাচারের কারনে উদ্বাস্তুরা যেসব উন্নত দেশে নিরাপদে থাকার অনুমতি পায় তাদের মধ্যে সুইডেন শীর্ষস্থানীয়। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে এসভিটির তথ্যমতে ধর্ষনকারীদের ৫৮ শতাংশের জন্মই সুইডেনের বাইরে যার ৪০ শতাংশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বর্বর মুসলমান দেশগুলো থেকে। বাকীরা আফগানিস্তান আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপ থেকে। আর বাকী যারা সুইডেনে জন্মেছে তাদের ৮০ ভাগ এসেছে ইমিগ্রান্ট ফ্যামিলির থেকে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, আফগানিস্তানের যুদ্ধের কারনে চলে আসা উদ্বাস্তুদের জন্য তার দুয়ার খুলে দেয়ার ফলে গত এক দশকে সুইডেনে বেড়েছে ৮০ শতাংশের ওপরে। ।

এখন আসি ধর্ষনের সংজ্ঞাতে তাদের কি বিবর্তন হয়েছে।ত্রয়োদশ দশক থেকেই স্টাচুয়ারী রেপ অর্থাৎ শিশু বা কিশোরের সাথে যেকোনো প্রকারের সহবাসকে ধর্ষন হিসেবে গন্য করে আসছে এবং সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এর শাস্তি মৃত্যুদন্ড ছিলো। ১৯৬৫ সালে সুইডেন বিশ্বে সর্বপ্রথম ম্যারিটাল রেপ অর্থাৎ স্ত্রীর অনুমতি ব্যাতিত সহবাসকে ধর্ষন হিসেবে গন্য করা শুরু করে। সমকামী এবং লিঙ্গ নিরপেক্ষ সংজ্ঞাকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করে ১৯৮৪ সাল থেকে। অজ্ঞান অবস্থায় কারো সাথে সহবাস করলে তা সে স্ত্রী হোক অথবা গার্লফ্রেন্ড সেটাকেও ধর্ষন হিসেবে গন্য করা শুরু করে ২০০৫ সাল থেকে। সুইডিশ পুলিশের ওয়েবসাইট অনুযায়ী বর্তমানে ধর্ষনের সংজ্ঞা অনেকটা এমন:

যেকেউ যদি কাউকে শক্তির মাধ্যমে যৌনক্রিয়া করা হুমকি দিলে যদি ভিক্টিম অপমানিত বোধ করেন তাহলে তাকে ধর্ষনের দায়ে ২ থেকে ৬ মাসের জেল খাটতে হবে।ধর্ষনের জন্য জেল কখনোই চার বছরের নীচে এবং ১০ বছরের ওপরে হবে না

যৌনক্রিয়া, হতে পারে তা সহবাস, কিন্তু অন্যান্য যৌনক্রিয়া ও এর তালিকাভুক্ত এবং তার জন্য যদি কাউকে হুমকি বা ঝগড়ার মাধ্যমে বাধ্য করা হয় বা তার চেস্টা করা হয় তাহলে সেটাও ধর্ষনের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি অরাধী কাউকে ড্রাগ, মানসিক প্রতিবন্ধী বা মাতাল অথবা অন্যান্য মাদকের মাধ্যমে তার দুর্বলতার সুযোগ নেয় তাহলে তাকে ধর্ষনের দন্ডে দন্ডিত করা হবে।

২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে স হবাস বা পেনিট্রেট যেকোনো অবস্থাতে করলেও সেটা ধর্ষন বলে গন্য করা হবে।
সুইডেনে ধর্ষনের পরিসংখ্যান এমন ভাবে করা হয় যে যখনই উপরোক্ত সংজ্ঞানুসারে কোনো অভিযোগ রিপোর্ট করা হয় তখনই সেটা পরিসংখ্যান বিভাগে চলে যায়। পরে যদি কেসটা অপ্রমানিত বা ডিশমিশ হয়ে যায় তাতেও সে পরিসংখ্যানে কোনো প্রভাব পড়ে না যেটা অন্যান্য ইউরোপীয়ান দেশে হয়ে থাকে। আবার কোনো স্ত্রী যদি অভিযোগ করেন যে তার স্বামী মাসে প্রতিদিন তাকে ধর্ষন করে তাহলে সেখানকার পুলিশ তা ৩০ বার হিসাব করে।
আরো একটি কারন না বললেই নয় যে ২০০০ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ভিক্টিম সার্ভের তথ্যানুযায়ী ধর্ষনের মতো ঘটনা সুইডেনের পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ গোপনীয়তা এবং ভিক্টিমের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এবং শূন্য দুর্নীতি থাকায় সেখানে ধর্ষিতা বা অভিযোগকারীর সন্তুষ্টি বেশ ভালো কারন লিঙ্গ সাম্যতায় সুইডেন বিশ্বে শীর্ষস্থানে আছে।

ইউএনওডিসির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১ লক্ষ জনে ৬৫ জন ধর্ষনের অভিযোগ করে যেখানে ১২৯ টা দেশের মধ্যে ৬৭ দেশে ধর্ষনের কোনো ডাটাি পাওয়া যায় না। এর অন্যতম প্রধান কারন সেসব দেশের দুর্নীতি, প্রশাসনের ওপর অনাস্থা। আবার এই ৬৭ টা দেশের ৯০ ভাগ দেশই হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আবার অনেক দেশে ধর্ষন নামে কোনো টার্ম নাই কারন কোরানে ধর্ষন নামের কোনো শব্দ নাই যেমন মিশর। মিশর এটাকে শারিরীক আঘাতের তালিকাভুক্ত করে। এমনকি বাংলাদেশ চায়নার মতো দেশে গত দশকে ধর্ষনের হিসাবটাও ঠিক মতো পাওয়া যেতো না। সৌদিআরবের ঘটনা আরো ভয়ঙ্কর

যাই হোক উদ্বাস্তু সমস্যার কারনে গত ৫ বছরে তাদের দেশে ধর্ষনের পরিমান ভয়াবহ পরিমানে বেড়েছে। এবং শাস্তি প্রদানের হার ১৩% যা অন্যান্য নরডিক দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন। এ নিয়ে এয়ামনেস্টি ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে তারা। আরো ভয়াবহ ব্যাপার হলো ২০১৩ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এত কিছুর পরও প্রায় ৮০শতাংশ ধর্ষনের ঘটনাই রিপোর্টে করা হয় না।

সে হিসেবে বলা যেতে পারে প্রশাসনিক সততা স্বচ্ছতা ও পরিপূ্র্ন সংজ্ঞায়িতকরন এবং উন্নত সমাজ ব্যাবস্থার সাথে বর্বরতম জঙ্গী সভ্যতার অসততাই দায়ী সুইডেনের এমন উচ্চ পরিসংখ্যানের পিছে।

২) বাংলাদেশ ধর্ষনে ভারত থেকে পিছিয়ে।

২০১৯ সালে ধর্ষন পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ তম যেখানে সুইডেনের অবস্থান ৬। ভারতের অবস্থান হলো ৯১ তম। পরিংখ্যানে বলা হয় বাংলাদেশে ভারতের থেকে ৫ গুন বেশী ধর্ষন হয়। শুধু ধর্ষনই নয়, সার্বিক অপরাধচিত্র কতটা ভয়াবহ ভারতের তুলনায় সেটা এখানে ক্লিক করলেই বোঝা যাবে। তাই কেউ যদি বলে ভারতের থেকে বাংলাদেশে ধর্ষন কম হয়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন সে একজন জ্ঞানপাপী মিথ্যুক বা অজ্ঞ। যে দেশে বাল্যবিবাহকে সুন্নত হিসেবে দেখা হয় এবং ইসলামী স্কলাররা শিশুধর্ষনের চর্চায় মত্ত তাদের কাছ থেকে সত্য কখনো জানবেন না।

চলবে……

ধর্ষন কেন বাড়ছে

এভাবে ভয়াবহ ভাবে ধর্ষন বাড়ছে কেন?
সম্ভাব্য কারণগুলি হতে পারে এরকম
১। আশে পাশে অসংখ্য রেপ ঘটছে, সব নজরে আসে না,মেয়েরাও কাউকে কিছু জানায় না, এভাবে নিরবে নিভৃতে যখন ঘটনা ঘটছে তখন রেপিস্ট ভাবছে এটাও কারো নজরে আসবে না।
২। রেপিস্টের জন্য এটাই প্রথম ঘটনা নয়।এরকম কুকর্ম সে প্রতিনিয়ত ঘটিয়ে যাচ্ছে, দু একটা জনসম্মুখে আসছে
৩।তথ্যের অবাধ প্রবাহ, ইন্টারনেট সার্চ দিলেই বেরিয়ে আসছে হাজার হাজার পর্ণ এর টুকরো টুকরো ছবি অথবা ভিডিও
৪। মেয়েদের জোর করাকে সে ভাবছে পৌরুষ,
মেয়েরা রাজি না, তারা ভাবে এই যে তার অসম্মতি এ আসলে বাহানা, সে আদতে সংগ চায় —
৫। সিনেমাগুলোতে সব সময় দেখানো হয় নারী রেপড হচ্ছে, হিংস্র উল্লাস করছে পুরুষ, নিজেদের সেজায়গায় ভেবে উল্লসিত হচ্ছে
৬। লজ্জাহীনতা, মেয়েরা ভাবছে সম্ভ্রম হারাচ্ছে, তার লজ্জা সারা দুনিয়ায়, সমাজে আর পুরুষ একে গৌরব অথবা বীরত্ব ভাবছে, যেমন প্রভাকে ছি ছি করেছে সবাই বিপরীতে রাজিব বীরপুরুষের মত বুক ফুলিয়ে চলেছে

৭। রেপ ঘটছে সমাজের উপরতলা থেকে নীচতলা। তবে একটা ভালো পরিবারে ছেলেমেয়েরা শেখে নীতি এবং নৈতিকতাবোধ।শিশু প্রথম পাঁচ বছরে তার জীবনের মূল শেখাটা শিখে যা তার অবচেতন মনে স্থায়ী হয়।পরিবারে মানুষের প্রতি সম্মানবোধ, আত্মমর্যাদাবোধ তার মধ্যে গ্রো না করলেও সে অন্যকে সম্মান করতে শেখে না।রেপিস্টের আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে এই বোধ তার মধ্যে না জাগাটাও রেপিস্টের রেপিস্ট হয়ে ওঠার কারণের মধ্যে পড়ে।
৮।সমাজের নিন্মবিত্ত শ্রেণীর যারা রাস্তায় বেড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে কি বোধ জাগার আশা করা যায়?
৯। বস্তিগুলোতে ছোট্ট একটা রুমে পরিবারের ৬/৭ জন থাকছে, রান্না করছে, ঘুমাচ্ছে, জীবনের ন্যুনতম চাহিদা যেখানে পূর্ণ হয় না তাদের কাছে কি আশা করা যায়?
১০। কাজ নাই।বেকার। অলস মস্তিষ্ক।

১১। এমন একটা দেশ যেখানে টাকার মূল্য মানুষের মূল্যের চাইতে বেশি হয়ে উঠেছে –
১২। বিনোদন বলতে বোঝায় হিন্দি সিরিয়াল,
নাটক হচ্ছে হাউকাউ, চিল্লাফাল্লা এক অবস্থা।
একসময় চমৎকার কাহিনী সমৃদ্ধ সিনেমা আজ আর নেই।সেই প্রেম আর প্রেম পাবার জন্য মরিয়া হওয়া!!

১৩। ইয়াবা, গাঁজা, ড্রাগে ছেয়ে গেছে দেশ।
১৪। হুজুর, স্কুল কলেজের শিক্ষক কম বেশি অনেকেই লাইমলাইটে আসছেন নারী লোভের কারণে,
এক্ষেত্রে যাদের আদর্শ মানা হয়েছিল এতোকাল তাদের এই অধপাতের বিষয় প্রভাবিত করছে মানুষকে

কোনটা প্রেম আর কোনটা ক্রাশ?/অরুণিমা মন্ডল দাস

আধুনিক জীবন যাপনে “প্রেম” শব্দটা প্রায়শই শোনা যায় – গ্রামেগঞ্জে শহরে সব জায়গায় প্রেম ভালোবাসা উপচে ঝোপে ঝাড়ে মেট্রো ,ট্রেনে কাপলদের দেখলেই বোঝা যায় \–ঠিক কতটা পরিমান প্রেম উথলে উথলে পড়ছে? বিয়ের আগে কতকিছু সোনা মোনা ডার্লিং আরো কিছু থাকলে বলতে শোনা যায় বিয়ের পরে বাচ্চার টয়লেট পরিষ্কার করতে করতে ই মেয়েদের যৌবন কেটে যায় !

সে যা হোক আসলে প্রেম কি? ক্রাশ কি? সেটাই বুঝে উঠতে পারলাম না/ আজকাল সুন্দর ছেলে সুন্দরী মেয়ে বিশেষ করে সিঙ্গেলদের ক্রাশ” বল আর প্রেম বল কোনকিছু র অভাব নেই /অভাব শুধু প্রকৃত ভালোবাসার /ভালো লাগল পেতে হবে না হলে বাঁচব না”—ঠিক এটাকে প্রেম বলা যায় কি? আবার ভালো লাগল জ্যাকেট পরেছে হিরো স্টাইলে ফিদা তাই”! –এটা শুধুই ক্রাশ! আপনি ছেলেটির বা মেয়েটির পোশাক চুল শরীর কে পছন্দ করেন মনকে নয়? তাই নয়কি? যে ভালোবাসবে সে আপনার শরীর কে নয় চামড়ার রংকেও নয় আপনার আত্মা” কে ভালোবাসবে!/ সবকিছু কেই ভালোবাসবে ভালোদিককে ভালোবাসবে আবার খারাপ দিককেও ভালোবাসবে/

প্রেম” বিবাহিত এনগেজ ইন আ্য রিলেনশিপ এইসব আগাছা কে মানে না /আসলেই সবাই সবার মনের মতো হয় না/আর সবকিছু প্রকৃতির নিয়মে ঘটবে সেটা আশা করা ও যায় না/ সুশৃঙ্খল ব্যক্তিকেও অনেক সময় অনেক কিছু মেনে নিতে হয় / ব্যাপারটা ঠিক এরকম সবাইকে সবার ভালো লাগে না ? সাইকোলজি লি মন থেকে যাকে যার পছন্দ যার সংগে মেন্টালিটি ম্যাচ করবে তাঁর সংগে ই সম্পর্ক সম্ভব সে যে হতে পারে /সে বিধবা বিবাহিত যেকেউ এটা কোন ফ্যাক্ট /আমি জোর গলা য় বলতে পারি কোন রিলেশান ই” প্রেম বা বিয়ের ক্ষেত্রে পারফেক্ট” থাকে না বা থাকতে পারে না /

এক মা ছেলের সম্পর্ক ছাড়া কোন সম্পর্ক ই পারফেক্ট হতে পারে না/অন্য ব্লাড রিলেশান /অন্য পরিবারের মেয়ে ছেলে !/ কি করে পুরোপুরি ম্যাচিউরড পারফেক্ট পাবেন বলুন? সব সম্পর্কেই “গিভ আ্যন্ড টেক” পলিশি কাজ করে মাত্র !

ঠিক সেই কারনেই খুব প্রেম অমর প্রেম এইসব ফালতু ছাড়া কিছুই না /মোহ জিনিসটা তীব্র মাত্রায় কাজ করলে কিছু একটা হয় /তীব্র আ্যট্রাকশান বলা যেতেও পারে /ক্রাশ জিনিসটা তিনমাসের বেশী থাকে না /সুন্দর সিনারী র মতো /ভালো লেগেছিল আবার দেখলে কিছু কিছু হতে পারে / মনের নাগাল পেতে অনেক দেরী? মনের পেট খারাপের হদিশ ক্রাশেদের” নজরেই আসবে না! উরা সুবিধাবাদী প্রেমিক /কষ্ট হলে চোখ জল এলে প্রেমটাকে দুমড়ে মুচড়ে কুঁড়ি থেকে ফোটা ফুলটাকে গঙ্গায় ছুড়ে মেরে পালাবে/ এদের মন থাকে না রূপ দেখেই পাগল হয় মাত্র !

প্রেম সত্যিকারের হলে পর মনে তাঁর ছাপ সারা জীবন থেকে যায় /একজন প্রেমিক প্রেমিকার আই কনটাক্ট ই তাঁদের হার্টবিট বাড়িয়ে দেয় মন নিঙড়ে নেয় সম্পূর্ণভাবেই দুজনের আত্মার খবর দুজনের মধ্যেই প্রতিস্থাপিত হয় / এখনকার প্রেম প্রেমিকদের মধ্যে তো দূর ,বিবাহিত লিভ ইন দের মধ্যেই দেখা যায় নি/ জীবনটা একটা নিয়মে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে/ সকালের চা দুপুরের খাওয়া রাতের খাওয়া ”—এটাই কি জীবন? এর জন্যই কি আমরা বাঁচি/ মাঝেমধ্যে উড়ো গার্লফ্রেন্ড বৌয়ের ঝামটা বরের মারধর চিমটিকাটা ঝগড়াঝাঁটি?/ এটাই জীবন? ভালোবাসাহীন জীবন/সবাই আমরা এরকম ই বেঁচে আছি/সংসারের দাস/
প্রকৃতির দাস / প্রেম করছি শরীর দেবে না তা হয় তখন ভাববেন ডালমে কুছ কালা হ্যায় যে প্রেম বাঁচাতে আপনি ঝোপেঝাড়ে শুয়ে পড়লেন দেখবেন কিছুদিন পর সেই প্রেমিক বোর হয়ে যাচ্ছেন/ দূর শুতে ভালো লাগছে না? ছেলেরা অবশ্যই কিছু ছেলেরা এতো লোভী সুন্দরী বৌ তাতে তাঁদের মন ভরছে প্রেমের নাটক করে শুচ্ছে/ আবার বলছে দূর ভালো লাগছে না? এদের নিচের অংশে আলাদীনের গুহা” অর্ডার দিলেও মনে হয় না এদের শান্তি মিলবে আর মেয়েদের ক্ষেত্রে কিছু মেয়েদের ?এটা কি প্রেম? ভালোবাসা?

এদের কোথায় শান্তি আর কোথায় ভালো লাগবে বলে দিতে পারবেন?

তাই জোর গলায় আবার ও বলতে পারি কোন বিবাহিত কাপল ই সুখী নয় জাস্ট লোকদেখানো সেলফি তে জীবনযাপনে নাটক করে মাত্র! কজন বিবাহিত পুরুষ বা মহিলা প্রকৃত ভালোবাসা পেয়েছেন বলতে পারেন!কেউ ই নয়? সব নাটক মাত্র আর কমপ্রো র পাহাড় ?

….ধন্যবাদ। নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই সবাইকে। আমার কিছু তীক্ষ্ণ সত্য বাক্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। অনেক দিন পর এলাম কিছু শব্দ ভালো না লাগলে বাদ দিতে পারেন।

পাপ শপাংকের সাতকাহন-১

এ্যারিস্টটলের মতে মানুষ কোনো পাপ কাজ করতে পারে না, সে যাই করে তার নিজের জন্যই করে। তখনকার গ্রীক দার্শনিকরা পাপকে আক্রাশিয়া নাম দিয়েছিলেন। প্লেটো এ্যারিস্ট টল যতই পাপের অস্তিত্ব অস্বীকার করুক না কেন, আকিনাস, দেকার্ত সবাই এই আক্রাশিয়ার অস্তিত্বের ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখেছিলেন। কেউ কেউ নিজের বিবেকের বিপরীতে কিছু করাকেই পাপ বলতেন, কেউ কেউ খোদ বিবেকের উৎস এবং তার পঠন পাঠন নিয়েই প্রশ্ন তুলতেন।

তখন আমাদের ভার্সিটির গেটের সামনে বাঁচা বাবা নামের একটা রেস্টুরেন্ট ছিলো। রান্নায় তেমন বাহারী স্বাদ না থাকলেও হলের একই রকম খাবার থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমাদের একমাত্র উপায় ছিলো এই রেস্টুরেন্ট টি। কারো জন্মদিন, বা কোনো বান্ধবী প্রপোজ করেছে অথবা সেমিস্টার ফাইনালে টপ করলেই চল বাঁচা বাবা। পাশ করে বের হয়ে জবে ঢুকলাম, ওর বেশ কয়েকবছর পর কনভোকেশনের ডাক পেলাম। তখনও গিয়ে দেখলাম দিব্যি গম গম করছে বাঁচা বাবা। কনভোকেশনের বিশাল ভূড়িভোজের পরেও বাঁচা বাবাতে বসে চা বা পরোটার সাথে এক বাটি সব্জি এখনো স্মৃতির মানসপটে। যেসব ৯-১০ বছরের ছেলেগুলো কাজ করতো তারা তখন জোয়ান। আর যারা যুবক ছিলো, অনেকেই বিয়ে শাদী করেছে, রেস্টুরেন্টের পাশেই একটা ঘর করে সংসার জাকিয়ে বসেছে। ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে যখন দেশ জুড়ে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের আয়োজন চলছিলো, সেসময় রাঙ্গুনিয়ার সেই ছোট্ট রেস্টুরেন্ট টির ওপর বুলডোজার পড়ে। এরপর সেখানে রেস্টুরেন্ট টি দাড়াতে পারেনি। জানি না যারা ওই প্রতিষ্ঠান ঘিরে নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলো, তারা এখন কেমন আছে।

তখন পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বুঝলাম, হঠাৎ করে দুর্নীতি যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে প্রায় কয়েক কোটি সংগ্রামী মানুষ পথে বসে যাবে। যদিও একসময় মানুষ ঠিকই মানিয়ে নেয়, কিন্তু মানুষ না খেয়ে বেচে থাকতে পারে মাত্র তিনদিন। আর একটা ঘুনে ধরা সিস্টেম ঠিক হতে লাগে বছরের পর বছর। তখন আরো একটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেলো পাপ আসলে কি জিনিস? আসলেই কি এর অস্তিত্ব আছে?

এই যে এতগুলো সংগ্রামী মানুষ, তারা চুরি করছে না, হত্যা রাহাজানী ডাকাতি করছে না। তারা খুব সাধারন ভাবেই ব্যাবসা করছে সিস্টেমের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। কারন এটা তাদের জন্য সস্তা এবং তার চেয়ে বড় কথা সাধ্যের নাগালে। রাস্ট্র পারেনি বলেই তারা বেচে থাকার এরকম সৎ পথ বেছে নিয়েছে। এটা কিভাবে পাপ হতে পারে?

তাহলে পাপ বলে কি কিছু নেই? সেটা কিভাবে হয়? হত্যা খুন ধর্ষন এগুলো পাপ, তাই না?

মধ্যযুগের লেখক অগাস্টিনের মতে আমরা পাপ করি যখন কোনো কিছু করার সদিচ্ছা যদি দুর্বল হয়। প্রায় সমসাময়িক একিউনাস বিশ্বাস করতেন আমরা পাপ করতে পারি কারন আমাদের ইচ্ছাগুলো কল্পনা রং এ মেশাতে পারি এবং তাকে যুক্তি সংগত করতে পারি যাতে করে আমাদের মনে হয় এটাই ছিলো সর্বোত্তম যার ফলে নিজেকে বোঝাতে পারি যে আমি এটাই করতে চাই।

তার মানে পুরো ব্যাপারটাই নিজের স্বার্থে ভাবা বা নিজের জন্য করা। যখন মানুষ অপরের জন্য না ভেবে নিজের স্বার্থে কিছু করে তাহলেই কি পাপ হবে?মনে হয় না, যখন কারো কোনো ক্ষতি করে বা কোনো কিছু ক্ষতি হয় তাহলেই পাপ বলে ধরে নেয়া যায়, তাই না? কিন্তু যদি এমন হয় যে পরের ভালো করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি হয় তাহলে সেটাই বা কেমন বুদ্ধিমানের কথা?

তখন প্রশ্ন আসতে পারে কোনো কিছু বিচার করার অধিকারটা কার আছে? ঈশ্বর?

সেক্ষেত্রে পাপ ব্যাপারটাকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধ যেটা কিনা মানুষ সম্পূর্ন স্বাধিনভাবে বিচার করতে পারে এবং যার ফল সবার জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে, যদি তা নাও হয়, তাহলে ক্ষতি করবে না। একে নৈতিক পাপাচার বা দর্শনগত পাপ। ধর্মীয় পাপের ব্যাপারটা পুরোপুরি ঈশ্বর বা তার প্রদত্ত পথপ্রদর্শক বা ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে নৈতিক পাপাচারের অনেক কিছু ধর্মীয় পাপাচারের লিস্টে থাকে না। এই যেমন দাসপ্রথা, শিশুকাম, বাল্যবিবাহ, লুট, ধর্মের নামে হত্যা ইত্যাদি।

ব্যাক্তিগতভাবে পাপের কনসেপ্টটা একটা হাস্যকর কৌতুক মনে হয়। একটা শিশুর সামনে আপনি দুটো মুস্টিবদ্ধ হাত ধরলে তাকে কিছু বলার আগেই সে একটা হাত বেছে নিয়ে তা খোলার চেস্টা করবে। সেটাতে কিছু না থাকলে আরেকটা হাত ধরে বসবে। আপনি যদি আবার আগের হাতটি মুস্টিবদ্ধ করেন সে আবার ওটা ধরবে। তখন তার কাছে ব্যাপারটা অভ্যাসগত খেলায় পরিনত হয়। যতক্ষন না টডলার পরিপক্ক হবে তার সামনে প্রতিদিন এই মুস্টিবদ্ধ হাত ধরুন, সে আনন্দের সাথেই খেলবে।

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মানুষ এমনই। মানুষ এত বিশ্বাসী কেন এটা ভাবতে গিয়ে দেখলাম দর্শনের চাইতে এর সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারে নিউরোসায়েন্স বা এনাটমি। মানুষের মাথার ডানে ভেন্ট্রোলেটারাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশটির জন্য মানুষ বিশ্বাসী হয়। তাহলে ধর্মের উৎপত্তী এত পড়ে আসলো কেন? এর প্রধান কারন যখন নিয়েনডার্থালরা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতো অর্থাৎ মানুষের বিবর্তন শুরু হয়নি, তখন তারা ছিলো বেশ ক্ষিপ্র এবং পঞ্চইন্দ্রিয় সমূহ খুব শক্তিশালী কারন তাদের মস্তিস্কের এই অংশগুলো বেশ বড় ছিলো। তারা খুব শিকারী ছিলো, এবং মাথার পেছনের দিকটা অপেক্ষাকৃত বড় হওয়ায় তারা বুদ্ধিমান ছিলো। তাদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এতটা উন্নত না থাকায় তারা মৃত সৎকারের আচারেই সীমাবদ্ধ ছিলো। ঈশ্বরের কনসেপ্ট তাদের মধ্যে আসেনি। মানুষের ঐশ্বরিক ধারনা অনেক পরে আসে যখন নিয়েনডার্থালরা বিলুপ্ত হতে থাকে এবং মানুষ সমাজবদ্ধ হতে থাকে। সমৃদ্ধির ফলে তখন মৃত ব্যাক্তির সৎকারের সাথে সাথে আত্মা, মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করে।

আর ঠিক এমসয়টাতেই প্রচলন হয় সভ্যতার কুৎসিত দাসপ্রথা। বলা হয়ে থাকে বর্নবাদ, জাতিগত বিদ্বেষ থেকে শুরু করে হানিকারক বিষয় সমূহের উৎপত্তি ঠিক এখান থেকেই।

চলবে….

খালি হাতে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরা শ্রমিকদের দিন কাটবে কিভাবে?

সৌদি আরব সরকারের ব্যাপক ধরপাকড় অভিযানের মুখে খালি হাতে বুধবার রাতে দেশে ফিরেছেন ২১৫ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। স্বজনদের কাছে তারা ফিরে গেছেন এক বুক হতাশা নিয়ে। জমি জমা বিক্রি করে এবং ঋণ নিয়ে তারা সৌদি আরব গিয়েছিলেন পরিবারের মুখে এক টুকরো হাসি ফোটাতে৷ অথচ সেই স্বপ্ন এখন বিরাট দুঃস্বপ্ন। এই শ্রমিকদের সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে তা নিয়ে তারা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ।তাদের চোখেমুখে রাজ্যের হতাশা।

বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও ব্রাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম জানাচ্ছে, নভেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে ১৫৬১ জন কর্মী দেশে ফিরেছেন। আর এ বছর সৌদি আরব থেকে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন । এই শ্রমিকদের বেশিরভাগেরই আকামা অর্থাৎ কাজের অনুমতিপত্র ছিল।

কাজের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও সৌদি পুলিশ এই শ্রমিকদের গ্রেফতার করে। এরপর জেল জুলুম শেষে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।অনেকের অভিযোগ তাদের ঠিকমতো খাবারও দেয়া হয়নি। উপরন্তু মানসিক নির্যাতন করা হয়৷

ফিরে আসাদের একজন বাহার উদ্দিন। তিনি সৌদি আরবে কন্সট্রাকশনের কাজ করতেন। দীর্ঘ ২৬ বছর সেখানে ছিলেন।

এয়ারপোর্টে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “অনেক বছর সৌদি আরবে ছিলাম। জীবনে এমন পরিস্থিতি কখনো সৌদি আরবে দেখিনি। সেখানকার পুলিশ বেপরোয়া হয়ে গেছে। বৈধ-অবৈধ দেখছে না। রাস্তা থেকে ধরে সোজা জেলে। এরপর পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে।”

ফিরে আসা শ্রমিকদের আরেকজন সিলেটের ইলিয়াস আলী। তিনি জানান,সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে সৌদি আরব যান। দালাল তাকে সেখানে ভালো কাজ পাবার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “যে কোম্পানিতে কাজ করার কথা ছিল তাদের দেখা মেলেনি। ফলে এখানে সেখানে কাজ করেছি। আকামা হয়নি। আকামার জন্য দুই দফায় টাকা দিয়েছি ২১ হাজার রিয়াল। এরই মধ্যে মাস ছয়েক আগে ডান পা অবশ হয়ে গেল। চলাফেরা করতে পারি না। যে জায়গায় কাজ করি সেই নিয়োগকর্তা বললেন আকামা করতে ২৭ হাজার রিয়াল লাগবে। এই পা নিয়ে আমি এখানে থেকে কি করব। পরে ধরা দেই। শেষমেষ খালি হাতেই আমাকে ফিরতে হলো দেশে।”

কিশোরগঞ্জের সোহরাব পরিবারের দুঃখ দুর্দশা ঘোচাতে বছর দুয়েক আগে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি গিয়েছিলেন।কিন্তু সাম্প্রতিক ধরপাকড়ে তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়। আসার সময় মাথায় জড়ানো মাফলার আর পরিহিত জামাকাপড় ছাড়া কিছুই সঙ্গে আনতে পারেননি। যেখানে তিনি থাকতেন সেই রুম থেকে ধরে ফেরত পাঠানো হয়।

সৌদিতে বর্তমানে এক বড় প্রতারণার নাম ফ্রি ভিসা। এর মাধ্যমে শ্রমিক বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন এবং একসময় কূল কিনারা না পেয়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরেন।

বছর দুয়েক আগে ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ভোলার ফুয়াদ হোসেন। ছয় লাখ টাকা খরচ হয় তার। কিন্তু সেখানে টিকতে পারেননি। টাকার বিনিময়ে আকামার ব্যবস্থা হলেও মেয়াদ শেষে সেই অর্থ ওঠেনি। ফলে পরবর্তী আকামা হয়নি। সেখানে তিনি অবৈধ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় কাজ করতে থাকেন এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ফলে খালি হাতে দেশে ফিরতে হয় তাকে।

সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলছেন, ফ্রি ভিসা মূলত একটা প্রতারণা। তার ভাষ্য – “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফ্রি ভিসা বলতে আসলে কিছু নেই। এখানে কাজ করতে হলে আকামা থাকতে হবে এবং নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে হবে। এর বাইরে গেলে অবৈধ হয়ে যেতে হয়। তখন মেয়াদ থাকলেও ফেরত পাঠানো হবে।”

তার মতে ফ্রি ভিসার বিষয়টি এভাবে কাজ করে – “সৌদি আরবের কোনো ছোট কোম্পানি, তাদের সক্ষমতা নেই লোক নিয়োগের, কিন্তু সে কয়েকজন লোকের চাকরির অনুমোদন নেয়। তখন তার নামে শ্রমিকদের জন্য ভিসা ইস্যু হয়। এরপর ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আকামা নিয়ে শ্রমিকরা অন্য জায়গায় কাজ করে।”

বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কেউ সৌদি আরব যেতে চাইলে সঠিক তথ্য জেনে বুঝে যেতে হবে,এমনটাই পরামর্শ অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস এর মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরীর ভাষ্য – শ্রমিক পাঠানোর আগে তাদের সঠিক ওরিয়েন্টেশন দরকার। ওরিয়েন্টেশনের অভাবে অনেকে ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে বিপদে পড়ছে।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান এর মতে, শ্রমিকদের কাউকে যেন শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য যাবার পূর্বে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।

বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনায় সৌদি আরব বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হতভাগ্য শ্রমিকরা সৌদি আরব গিয়েছিলেন নিজ সংসারের অভাব দূর করে স্ত্রী সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। অথচ তারা এখন হতাশার বৃত্তে বন্দি।

যারা হতে পারতেন আশাজাগানিয়া রেমিট্যান্স যোদ্ধা তারাই আজ জানেন না সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে। তাদের চোখে আজ কোন স্বপ্ন নেই,আশা নেই। যারা দেশের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হতে পারতেন তারাই এখন অন্ধকারে। সমাজ এবং সরকার তাদের পাশে দাঁড়ালে এই অন্ধকার কেটে যাবে। মানবিক দিক বিবেচনা করে চলুন তাদের পাশে দাঁড়াই। চলুন তাদের বলি,ভয় পেওনা,পাশে আছি। নতুন সকাল আসবেই।

মামুন রণবীর
১৫/১১/১৯

সমাজ সচেতনতা

সমাজ সচেতনতা।
নভেম্বর ৭, ২০১৯ সকাল ৭ টা ৪০ মিনিট
দীর্ঘদিন হাসপাতালের কারাগারে থাকার পর ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে।

পারিবারিক জীবন হলো সবচেয়ে সুশৃংখল, এখানে যতই ভুল করেন যত অপরাধ করেন সাত খুন মাফ, পারিবারিক বন্ধন হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধন যেখানে স্নেহ-মমতা মায়া ভালোবাসার উৎপত্তিস্থল।

আপনি যতটাই হতাশাগ্রস্থ হন পরিবারের কাছে আসলে হতাশা দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যায়। এজন্যই পারিবারিক জীবনের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য বন্ধন ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরী।

পরিবার না থাকলে বেঁচে থাকাটাই দুঃস্বপ্নের হয়। আপনি যতই অর্থ সম্পদ উপার্জন করেন পরিবারের বৃত্ত বৃত্তের সুশৃংখল ভালবাসায় তার মোর ঘুরিয়ে দেয় সাহস যোগায় যা কখনো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে না।

এখানেই আপনার সমস্ত সুখ নির্ণীত হয়। এখানে প্রত্যেককে কারো সুখে সুখী কারো দুখে দুখী। আপনার জীবন থেকে অনেকেই চলে যাবে অনেকেই আসবে কিন্তু পরিবারের একজন মানুষ ছুটে গেলে সারা জীবন আপনি বলতে পারবেন না।

এইজন্যই পারিবারিক বন্ধন অতি দ্রুত হয়। কাছের মানুষ যেভাবে চলে যায় সেভাবে পারিবারিক বন্ধনের একজন মানুষ চলে যাওয়াটা অত্যন্ত কষ্টের যন্ত্রণার বেদনার।

আপনার জীবন থেকে বন্ধুবান্ধব চলে যেতে পারে তাতে হয়তো কোনো যায় আসে না। জীবন চলার পথে মানুষ কত বিপদসঙ্কুল মুহূর্তের সম্মুখীন হয় কেউ উদ্ধারের জন্য এগিয়ে না আসলেও পরিবারের মানুষ সবার আগে এসে হাজির।

আমরা সমাজবদ্ধ জাতি হলেও আমরা অনেকেই পশুর চেয়েও অধম, বনের নেকড়ের চেয়েও নিকৃষ্ট। আমরা কখনও কখনও জানোয়ারের রূপ ধারণ করি যা আমাদের জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ আমাদের পরিবারের জন্য বিপদজনক আমাদের সমাজ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এই পরিস্থিতির জন্য পরিবার (… ) দায়ী না থাকলেও এ পরিস্থিতির জন্য পরিবার ও বিপদসঙ্কুল মুহূর্তের সম্মুখীন হয়। সেজন্যই আপনি যা করবেন সেটা পরিবার কখনো কখনো নির্ধারণ করে দেয়।

পরিবারের বাইরে কোন কিছু করাটা সত্যিই বোকামি আপনি যদি ভালো কিছু করতে চান পরিবারের লোক ই সাহস যোগায় যা আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য একধাপ এগিয়ে নেয়। পরিবারের সে মানুষরা সুখী হয় ভালো ফিল করে আপনার গর্বে গর্বিত হয়।

তাই জীবন চলার পথে আপনি যা কিছুই করেন পরিবারের বন্ধন ভেঙ্গে দিয়েন না পরিবারের বন্ধন নষ্ট করবেন না একটা পরিবারের বন্ধন হাজার কোটি টাকার মূল্যের চেয়েও সম্পদশালী যা কোন অর্থে সাথে বিনিময়ে তৈরি করা যায় না।

যা কোন জীবনের সাথে বিনিময় করা যায় না যার কোন মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। এটাই হল পরিবার; দুনিয়ার অন্য কোন কিছু না পেলেও এখানে এসব কিছুই পাবেন আপনি।

তাই আমি আপনাদের প্রতিনিয়ত বলবো পরিবারকে ভালবাসুন পরিবারের কাছাকাছি থাকুন পরিবারের মানুষকে সুখে রাখুন এটাই আপনার জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত তার পাশাপাশি আপনার চারপাশের মানুষ কেউ ভালোবাসার মধ্য দিয়ে জীবন প্রবাহিত করুন।

আমরা কতদিনই বা বেঁচে থাকব আমরা চারপাশের মানুষকে যদি ভালো না বাসতে পারি তাহলে সেই জীবন সাফল্যমণ্ডিত হয় না। লোভ ক্ষোভ হতাশা দিয়ে কোন কিছুর সাফল্য আসে না।

পরিবারের সাথে সাথে আপনার চারপাশে মানুষের মন জয় করা উচিত। মানুষের ভালোবাসা, মানুষের দোয়া মানুষের সুন্দর দৃষ্টি আপনার জীবনকে করে তুলবে আরো আনন্দদায়ক আরো সুন্দর আরো সাফল্যময় হোক প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের নতুন অধ্যয়ন।

নারী কারো মা কারো বোন কারো স্ত্রী সবচেয়ে বড় কথা হল নারী হচ্ছে মায়ের জাত

নারী, নারী কারো মা, কারো বোন, কারো স্ত্রী, সবচেয়ে বড় কথা হল নারী হচ্ছে মায়ের জাত একজন পুরুষের চেয়ে নারী কোন অংশে কম নয়, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা মানুষ হিসেবে যদি চিন্তা করি তাহলে আমরা সমানে সমান কেউ কারো কোন অংশেই কম না বেশি ও না।

শুধুমাত্র নারীর শারীরিক গঠনের জন্য যে একজন দুর্বল আর একজন শক্তিশালী এই বিষয়টি বর্তমান আধুনিক যুগে নেহায়েতই অন্যায় একটি প্রবচন আমরা দাসত্বের চিন্তাভাবনা ছাড়া কখনোই তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না বলেই আমরা আজ এখনো নারীকে সঠিকভাবে বুঝতে শিখিনি।

আমাদের এই শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা এতটাই শোচনীয় যে আমরা নারীর মূল্যায়ন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা রাখিনা নারীকে ছোট করে দেখাও এক ধরনের অন্যায়।

নারীরা জেগে উঠেছে এটি যদি আপনি অস্বীকার করেন তাহলে আপনি এখনো পিছিয়ে আছেন সভ্য সমাজ ব্যবস্থা থেকে। আর এটা যদি আপনি ভুল ভাবেন ভুল বোঝেন তাহলে বলবো যে আপনি আজ থেকে চৌদ্দশ বছরের সেকেলে চিন্তার ভেতরে আবদ্ধ আছেন।

নারী ছাড়া কোন পুরুষ পৃথিবীতে আগমন করতে পারেনি। ধর্মীয় ব্যাখ্যায় যদি যাই ঈসা আলাইহিস সালাম জিব্রাইলের মাধ্যমে তার মায়ের গর্ভে আসে জাস্ট একটা ফুলের সুগন্ধ তার নাকে শ্রবণের মাধ্যমে।

একজন পুরুষ কখনোই নারীর মতো সমৃদ্ধ এবং সম্মানিত হতে পারবে না, একজন নারীর ভেতরে যে গুন আছে একজন পুরুষের ভেতরে সেই গুণগুলো নেই যা নারীকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যায়, সেই বিষয়গুলোই নারীকে অনেক সম্মানিত করেছে। আমাদের সমাজে একজন নারীর অপরাধের জন্য আর সকল নারীকে খারাপ ভাবা ঠিক নয়, অপমান অপদস্থ করা করা ঠিক না।

নারীকে সম্মান করুন, শ্রদ্ধা করুন রেস্পেক্ট করুন, নারীর প্রতি আপনার যে ভালবাসা যে দায়িত্ববোধ যে সহনশীল আচরণ করা দরকার তার প্রতি যে ধ্যানধারণা পোষণ করা বাধ্যতামূলক সেটা আপনার নৈতিক আদর্শ থেকেই তৈরি করা উচিত।

এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা নারীকে ক্ষুদ্র কীট এর চেয়েও জঘন্য ভাবে, এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা নারীকে শুধু একটা যন্ত্র ভাবে উৎপাদনশীল মেশিন হিসেবে।

এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা শুধু নারীকে ঘরে বন্দী করে রাখতে চায় এক শ্রেণীর মানুষ ভেবেই থাকে যে নারীকে তৈরি করা হয়েছে পুরুষের জন্য, এক শ্রেণীর মানুষ ধরেই নিয়েছে নারীকে তৈরি করা হয়েছে পুরুষের সেবার জন্য। এক শ্রেণীর মানুষ ধরেই নিয়েছে যে নারী হচ্ছে পুরুষের দাসী! এই শ্রেণীর মানুষ গুলো ভেবে নেই যে পুরুষ ব্যতীত বাইরে কোন নারী যাবে না নারীর দায়িত্ব ঘর পর্যন্ত।

স্বামীকে সেবা করা, সন্তান উৎপাদন করা, স্বামীর চাহিদা মেটানো ইত্যাদি ইত্যাদি। ওই সব শ্রেণীর মানুষের এই যদি চিন্তা ধারা হয় তাহলে কিভাবে এমন ভেদাভেদ করে স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে সৃষ্টি করতে পারলেন “নারীকে”। সেই পুরুষ সমাজ জানেনা কি তুমি যাদের বিরুদ্ধে আজ কথা বলছো সেই সমস্ত নারীরাই হচ্ছে তোমার মায়ের শ্রেণি, তোমার মায়ের গর্ভে তুমি যদি না আসতে তাহলে তুমি কখনোই পৃথিবীর এই আলো বাতাস দেখতে পেতে না উপভোগ করতে পেতে না আর আজকের এই চিন্তাধারা ও করতে পেতে না।

আমাদের এই ভঙ্গুর সমাজে ভঙ্গুর রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নারী এবং পুরুষকে নিয়ে যে ভেদাভেদ তৈরি হয়েছে সেখানে যদি দুইটি শ্রেণীকে সামনে রাখা যায় তবে সেখানে নারীর চেয়ে পুরুষই অত্যাধিক জঘন্য চরিত্রহীন বলে অনুমেয় হয় বর্তমানে আমাদের এই আধুনিক যুগে কোথায় কি ঘটনা কিভাবে ঘটছে তা মিনিটের ভিতরে চলে আসে এবং জানা যায়।

এবং চলার পথে আমরা যা নিজের চোখ দিয়ে দেখি সেটাকেই বিশ্বাস করা যায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থায় যা চোখে পড়ে তার ওপর ভিত্তি করেই আমার বিশ্বাস জন্মেছে যে পুরুষরাই সবচাইতে বেশি অপরাধী সেটা চরিত্রগত হোক আর ক্ষমতার দিক দিয়ে হোক প্রভাবের দিক দিয়ে হোক।

আজকের আমাদের এই ধর্মীয় সমাজ প্রকৃত জীবন ব্যবস্থার ওপর শিক্ষা না নিতে পারলেও কিংবা পাশ্চাত্যের কালচার থেকে শিক্ষা না নিতে পারলেও ধর্মীয় দীক্ষা থেকে ভালো কিছু কখনোই শিখতে পারিনি যা আমাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করতে শেখায় আমরা অন্যের চরিত্র নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারি কিন্তু আমরা নিজেদের চরিত্র নিয়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণ মুখ ফস্কে কাউকে কিছু বলি না।

এটাই যদি একজন মানুষের মানসিক অবস্থা হয় তাহলে একজন প্রকৃত মানুষের দায়িত্ব জ্ঞান কি সেটা আমরা কখনই বুঝতে পারব না এমনকি জানতেও পারব না।

বখতিয়ার শামীম।
4 অক্টোবর 2019

রোহিঙ্গারা আধিপত্য বিস্তার করবে- সেদিন বেশি দূরে নয়

গত দুইবছর আগে মিয়ানমার রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গারা যখন সেদেশের নিরাপত্তার উপর হামলা করেছিল, তখন এর পাল্টা জবাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীও রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু করে দিলো। ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করলো। এভাবে পালাক্রমে দলেদলে আসতে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখেরও বেশি। যা আমাদের ছোট্ট একটা দেশের জন্য বিরাট একটা বোঝা। আমাদের মাথায় ঋণের বোঝা থাকলেও আমরা কিন্তু অতিথিপরায়ণ। আমাদের মানবতা একটু বেশি। কারোর দুঃখ দেখলে আমাদের দরদ উথলে পড়ে। কারণ মানবতার দিক দিয়ে আমরা পৃথিবীতে সেরা, তাই। আমাদের আরকিছু না থাকুক, কিন্তু মানবতা আছে।

এই মানবতার কথা ভেবে একসময় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুতুপালং গেলেন। নিজের চোখে রোহিঙ্গাদের সমস্যা দেখলেন। রোহিঙ্গাদের সমস্যা দেখে কাঁদলেন। সমাবেশে আমাদের দয়াময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বুকে টেনে নিয়ে বলেছিলেন, “আমরা ষোল কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে আরও লাখ দশেক রোহিঙ্গাকে আমরা খাওয়াতে পারব।” দয়াময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর সারাবিশ্ব থেকে পেলো বাহাবাহা। রোহিঙ্গারা পেলো বেঁচে থাকার আশ্বাস। শুরু হলো মানবতার মহামানবদের প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ। অংশগ্রহণের মূল লক্ষ্য ছিল অসহায় রোহিঙ্গাদের সাহায্য করা।

সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন আমাদের দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। এগিয়ে গেলেন বিভিন্ন মানবতার সংঘটন। সবাই নিজ নিজ সাধ্যমতো বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কুতুপালঙের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। দেশের অনেক মসজিদে মসজিদে শরনার্থী রোহিঙ্গাদের জন্য চাঁদা উঠাতে শুরু করলেন। কেউ টাকা, কেউ পয়সা, কেউ জামাকাপড়, কেউ খাবার, কেউ বাসনপত্র সাহায্য হিসেবে দিতে শুরু করলেন। সেসব ত্রাণসামগ্রী ট্রাকে ভরে ভরে কুতুপালং নিয়ে রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছিল।

সেসময় এমনও দেখেছি, নিজের প্রতিষ্ঠানের গরিব দুঃখীদের দুই টাকা সাহায্য সহযোগিতা করে না, সেসব মালিকরা দশ থেকে পনেরো দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট বানিয়েছে। সেসব প্যাকেটে ছিল চিড়ামুড়ি, দুধ, চিনি, মিঠাই, পাউরুটি, চালডাল, তেল, লবণ, লুঙ্গি, গেঞ্জি-সহ আরও অনেককিছু। অথচ নিজের প্রতিষ্ঠানেই খেয়ে-না-খেয়ে যাঁরা চাকরি করে, তাঁদের জন্য একটি প্যাকেটও জুটেনি।

সেই প্যাকেট ট্রাকে ভরে সামনে “রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে ত্রাণসামগ্রী” লেখা ব্যানার টাঙিয়ে নিয়ে গেলেন রোহিঙ্গাদের জন্য। দিলেন তাঁদের। রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে গেলেন বিভিন্ন এনজিও সংস্থা-সহ মানবাধিকার সংস্থাও। আসলেন বিদেশিরাও। আসলেন নোবেলজয়ী কয়েকজন সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ। সরকার জায়গা দিলেন। দিলেন বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি। বানিয়ে দিলেন থাকার ঘরদোর। রোহিঙ্গাদের দেখভাল ও নিরাপত্তার জন্য দিলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনছার-সহ শতশত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দিলেন এইজন্য যে, তাঁরা রোহিঙ্গারা নিরুপায় অসহায় বলে। সরকারের উদারতায় বাংলার প্রতিটি মানুষও সেসময় খুশি ছিলেন। বাংলার মানুষ ভেবেছিল ওঁরা আর থাকবেই বা ক’দিন? থাকুক! কিন্তু এই থাকা যে চিরস্থায়ী থাকা হবে, তা বাংলার খুব কম মানুষেই জানতো। বেশিরভাগ মানুষেই জানতো তাঁরা অসহায়। কিন্তু এখন আর রোহিঙ্গাদের মাঝে অসহায় বলতে কেউ নেই। রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের চেয়েও ভালো অবস্থায় আছে। বিশেষ করে কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালং সহ এর আশপাশের স্থানীয় মানুষের চেয়ে খুবই ভালো আছে।

তাই এখন আর বাংলার মানুষ কেউ রোহিঙ্গাদের জন্য ভাবে না। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যায় না। মসজিদে মসজিদে রোহিঙ্গাদের জন্য চাঁদা ওঠায় না। অনেকে রোহিঙ্গাদের নামও শুনতে চায় না। রোহিঙ্গা নামটি এখন এদেশের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। গণমানুষের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের নাম। ভবিষ্যৎ বিপদের নাম এখন রোহিঙ্গা। তাই বলে রোহিঙ্গাদের কিছুই আসে যায় না। ওঁরা রোহিঙ্গারা এখন এদেশের কাউকে তোয়াক্কা আর জমা-খরচের হিসাব-নিকাশও দেয় না। ওঁরা রোহিঙ্গারা চলছে ওঁদের নিজের মত করে স্বাধীনভাবে।

তাঁদের এখন মানুষের দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর প্রয়োজন হয় না। লাগেও না। তাঁদের ঘরদোর আছে। টাকাপয়সা আছে। কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালঙের স্থানীয় বাসিন্দাদের যা না আছে, রোহিঙ্গাদের তা আছে। থাকে শুধু সরকারি শরনার্থী শিবিরে। তাতে দোষের কিছুই নেই। এই শরনার্থী শিবিরে থেকে ওঁরা রোহিঙ্গারা বিদেশ যাবার পাসপোর্টও সংগ্রহ করছে। বিদেশেও যেতে পারছে। চুরি ডাকাতি ছিনতাই খুনখারাপি সবই করতে পারছে। খুন তো সময় সময় করেও থাকে। ওঁদের এখন অনেক শক্তি। ওঁদের অত্যাচারে স্থানীয় বাসিন্দা সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

রোহিঙ্গারা গতবছরও বেঁচে থাকার আকুতি-মিনতি করেছিল। আজ ওঁরা স্থানীয় নেতাদের গুলি করে মেরে ফেলে। ওঁদের সাহায্য সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকা এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরাও প্রতিনিয়ত ওঁদের হাতে মার খাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের হাতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও মার খাচ্ছে। ওঁরা রোহিঙ্গারা এখন হয়তো নতুন করে ঘোষণা দিতে পারে স্থায়ীভাবে থাকার। কারণ ওঁরা এখন মিয়ানমার থেকে ভালো আছে। সুখে আছে। এই সুখ ওঁরা কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইবে না। হাতছাড়া করবেও না। ওঁরা এই দেশ থেকে কখনোই স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে না।

ওঁরা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকা অবস্থাও এমন করেছিলো। কিন্তু সেখানে ওঁরা সফল হতে পারেনি। মিয়ানমার সরকারও ওঁদের নাগরিকত্ব দেয়নি। ওঁদের নাগরিকত্ব ছিলও না। সেই ক্ষোভে রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্বকে জানান দিয়েছিল, আমরা রোহিঙ্গা মুসলমান। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এবং মিয়ানমারের সব নাগরিক জানতো, ওঁরা রোহিঙ্গারা বিষাক্ত প্রজনন। এখনো মিয়ানমারের অনেক নাগরিক রোহিঙ্গাদের জংলি জানোয়ার বলেই মনে করে থাকে। ওঁদের ব্যবহারিক ভাষাকে মিয়ানমারের নাগরিকরা জংলি ভাষা হিসেবে মনে করে। আরও অনেককিছুর কারণেই, মিয়ানমার সরকার থেকে ওঁরা নাগরিকত্ব আদায় করতে পারেনি। পারেনি শান্তি বজায় রেখে সেদেশে থাকতে। এ-সবকিছু আমাদের জানা থাকতেও আমরা ওঁদের সাদরে গ্রহণ করে বুকে টেনে নিয়েছি। আদর-সমাদর করেছি। খাবার দিয়েছি। থাকার জায়গা দিয়েছি। জামাকাপড় দিয়েছি। বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। ওঁদের দুঃখ দুর্দশা সেরে ওঠার সুযোগ দিয়েছি। বিনিময়ে ওঁরা এখন আমাদের দিচ্ছে বাঁশ।

ওঁরা এখন সুর উঠিয়েছে। ওঁরা বলছে, মিয়ানমার সরকার ওঁদের নাগরিকত্ব সহ আরও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা না দিলে ওঁরা আর মিয়ানমার ফিরে যাবে না। রাখাইনে ওঁদের যেমন নেতা ছিল, এখানে ওঁদের নেতাও আছে। রোহিঙ্গাদের নেতারা এখন সমাবেশের ডাক দিয়ে মনের আনন্দের দুইবছর ফুর্তি উদযাপন করে। লক্ষলক্ষ রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে মিছিল মিটিং করে। এতে কী বোঝা যায়? এতে বোঝা যায় আর কিছুদিন পরই ওঁরা এদেশের নাগরিকত্ব চাইবে। ন্যাশনাল আইডি কার্ডে হাতে পাবার জন্য আন্দোলনে নামবে। আরও দশজন নাগরিকের মতো ওঁরাও নাগরিকত্ব সুযোগসুবিধা ভোগ করতে চাইবে। বিশ্বের কাছে বেঁচে থাকার অধিকার চাইবে।

যদি তা-ই হয়, তাহলে কি আমাদের মানবতার সরকার ওঁদের সেই চাওয়া পূরণ করতে পারবে? না করতে পারলেই হবে মহাবিপদ। রোহিঙ্গা দ্বারা আগামীতে ঘটবে এমন বিপদগুলো বর্তমানে কিছু কিছু রূপধারণ করতে শুরু করেছে। বর্তমানে রোহিঙ্গারা নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গত দুই বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৪৭১টি মামলাও হয়েছে। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪৩টি৷ রয়েছে ধর্ষণ, অপহরণ, মাদক চোরাচালানের অভিযোগও৷ হয়তো আর কিছুদিন পর রোহিঙ্গারা আরও ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তখন আর কিছুতেই ওঁদের দমানো যাবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আমাদের মানবতার সরকারকে এখনই ভেবে দেখা উচিৎ বলে করি। নাহয় অবস্থা হবে আরও ভয়াবহ। আরও বেগতিক। একসময় রোহিঙ্গারা কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালং সহ এর আশ-পাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের জায়গাজমি জবরদখল করে নিবে। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে, এঁরাই আধিপত্য বিস্তার করতে থাকবে। সেদিন বেশি দূরে নয়, অতি নিকটেই।

পাশে আছি কোলকাতা

পাশে আছি কোলকাতা

কিছুক্ষণ আগে (০৪.০৯.১৮) কোলকাতায় একটা ফ্লাইওভার ধ্বসে পড়েছে। আশংকা করা হচ্ছে, নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন অনেক মানুষ। এমন শিরোনাম দেখে আমরা বাংলাদেশীরাও গভীর ভাবে মর্মাহত হয়েছি। আমরা নিহত, তাঁদের পরিবার এবং কোলকাতারবাসীর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এই সংকট উত্তরণে সৃষ্টিকর্তা তাঁদের পাশে থাকুন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের উপর কুখ্যাত হেলমেট বাহিনী ও পুলিশের বর্বর হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল কোলকাতার ছাত্রভাইয়েরাও। স্লোগান দিয়েছিলঃ “চলুক গুলি টিয়ারশেল, পাশে আছি বাংলাদেশ”

দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম ছাড়া ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার অন্য কোন কারণ থাকতে পারেনা। এসবের ভুক্তভোগী শুধু কলকাতা নয়, ঢাকাও। এখন থেকে দুই বাংলার ছাত্রসমাজ একসাথে লড়বে সন্ত্রাস, অরাজকতা, দুর্নীতি, লুটপাট অনিয়মের বিরুদ্ধে।

আজ আমরা বাংলাদেশীরাও বলছি, “পাশে আছি কোলকাতা”।

আসিফ আহমেদ
৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮