বিভাগের আর্কাইভঃ দেশ

লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু

FB_IMG_1659650469838

রাজায় রাজায় যুদ্ধে রাজার কোনো ক্ষতি হয় না। মরে শুধু উলু খাগড়ার দল।

সামনে নির্বাচন। কে জিতবে, কে হারবে, তা বড় ব্যাপার না। বড় ব্যাপার হচ্ছে, আপনি বা আপনারা তথা কর্মীরা নির্বাচনকালীন সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে রাতদিন পরিশ্রম করে প্রার্থীকে জয়ী করেন। অতঃপর প্রার্থী বিজেতা হয়ে রাক্ষস বনে যায়। হোক সে নৌকার সমর্থনে জয়ী কিম্বা ধানের শীষ বা দাঁড়িপাল্লা সমর্থনে বিজয়ী।

রাক্ষস বনবে না কেন? গরুচোর, সাইকেল চোর, চাঁদাবাজ, আর ধর্ম ব্যবসায়ীরা যখন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয় তখন সামাজিক মর্যদা বাড়ানোর জন্য বড় বড় নেতাদের ডোনেশন দিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়। আর এইসব মানুষদের কাছে আমরা সামন্য কিছু অর্থের বিনিময়ে গোলাম বনে যাই।

তথাকথিত নেতারা তাদের নিতম্বে ফেবু নামক তেল মর্দন উপভোগ করেন। আর সে মর্দনের তেলসমতিতে জনগনের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে মিষ্টি কোঁয়া চুষুন করে হাসতে হাসতে স্বাদ উপভোগ করেন।

আমরা সাধারণ পাবিলক যারা আছি তারা সবাই নিজ স্বার্থের কথা চিন্তা করি। কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্র বা জাতির কথা একটুও ভাবি না। আমাদের চিন্তা এমনই, দেশ যাক রসাতলে আমাদের কি, আমি তো নেতার চামচামি করে আমারটা পাচ্ছি। আর এই স্বার্থন্বেষী লোভের কারণে হাজারো পরিবার না খেয়ে মরে।

সরকার জনগনের উপকারের জন্য যেসব কাজে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন, নেতা নামক টেন্ডারবাজরা ঐসব বরাদ্দের ৭০% যদি সম্পূর্ণ করতো তাহলে বাংলাদেশ সোনার বাংলায় রুপান্তরিত হতো।

সোনার বাংলায় অযোগ্যরা নেতা হয় আর যোগ্যরা ঐসব নেতার আমলা বনে বলে দেশের সাধারণ জনগণ কখনোই স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলতে পারিনি, পারবেও না। আর এই জন্য দায়ী আমরা সাধারণ জনগনই। কারণ আমরা সব্বাই হিপোক্রেট।

ঋতুস্রাব এবং আমাদের মস্তিষ্ক

মেয়েটির পিরিয়ডের আজ দ্বিতীয় দিন। তার আজকে পায়ে হাঁটার মতো শক্তি নেই, তার ঊরুগুলো পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। মেয়েটি পেটের ব্যথা ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে এবং সেই যন্ত্রণায় মেয়েটি কাঁদছে। মেয়েটি দাঁতের উপরে দাঁত দিয়ে প্রচন্ড ব্যথা সহ্য করে আছে। ফার্মেসি ভর্তি মানুষগুলোর নিথর চোখের মাঝেও গতকাল মেয়েটি যখন সাহস করে ফার্মেসিতে গিয়ে প্যাডের নাম ফিসফিস করে বলছিল, দোকানদার তাকে একটা কালো ব্যাগে প্যাডটি এমনভাবে মুড়িয়ে দিল যেন মেয়েটি এমন কোন কিছু চেয়েছে যা নিষিদ্ধ এবং তা সমাজ বা রাস্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এবং মেয়েটিকে সেই প্যাড লুকিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অথচ দেদারসে বিড়ি সিগারেট মাদক প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।

আজ মেয়েটির সমস্ত শরীরে নেশার মতো করে ব্যথা আঁকড়ে ধরে আছে। এমনকি মেয়েটি আজ তার অফিসে চেয়ারে দু’দন্ড স্থির বসে থাকতে পারেনি।

প্রতি মাসের এই পাঁচ দিনের রুটিনে মেয়েটি কখনো ছুটি নেননি শুয়ে থাকেননি। আজকে তার সহকর্মীরা তার দিকে আঁড় চোখে তাকিয়ে আছে, এবং মাঝে মাঝে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, অন্যদের সাথে কথা বলে কিন্তু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই গল্প তোলে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গতকালের অসমাপ্ত কাজের জন্য মেয়েটিকে যাচ্ছে তাই বলে তিরস্কার করে অথচ মেয়েটি তার সকল কাজেই পারদর্শী কিন্তু গতকাল থেকে সে পিরিয়ডের ব্যাথায় কাতর।

গতকালের অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত শেষ করে টেবিলে দিতে বলেন অথচ মেয়েটির গত পঁচিশ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা বেমালুম ভুলে যায়। মেয়েটিকে ধমকের সুরে বলে দিলো কাজটা দ্রুত শেষ করার জন্য। মেয়েটির মুখের ফ্যাকাশে, ক্লান্তি আর শরীরের অলসতা-দুর্বলতা চলতেই থাকে। কয়েক দিনের মধ্যে মেয়েটি কোন কাজে মন বসাতে পারেনি। মেয়েটি তার কেবিন ছেড়ে উঠতে পারেনি তার মনে ক্রমশ অস্বস্তির একটা ঢেউ উঠেছিল।
না এটা অন্য কোন উদ্বেগ ছিল না তার পোশাকের পেছনে কোনো ‘দাগ’ ছিলনা উঠতে বসতে মেয়েটি স্বস্তিতেই ছিল কারন আটটি প্যাড যে সে আশি টাকায় কিনেছে। সে এই ভেবে অস্বস্তিতে ছিল যে এখন পর্যন্ত তার পেছনে সেই নোংরা চোখগুলো পড়েছিল এবং কানাকানি করছিল আর হাসছিল।

ওহে পুরুষ! সেই মেয়েটি কি করে তোমার ভাবনায় ? পুরুষগুলো বেমালুম ভুলে যায় তার মায়ের, বোনেরও প্রতিমাসে পিরিয়ড হয় এবং তারাও অসহ্য রকম যন্ত্রণা সহ্য করে। পিরিয়ডের মতো একটা স্বাভাবিক ঘটনাই জানিয়ে দেয় আমাদের মন মানসিকতা কোন পর্যায়ে আছে।

মাসিকের ব্যথা থেকে মেয়েটি শিক্ষা নেয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তাই তাকে নিয়ে হাসবেন না যখন সে এই যন্ত্রণার দ্বারা যন্ত্রণাদায়ক অবস্থায় থাকে কারণ এই ঋতুস্রাবেই কারনেই ‘ভ্রুণ’ তৈরির মাঠ তৈরি হয়।

“টিপে” এতো সমস্যা কেন?

images

গরমের নাভিশ্বাস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রমজানের সাওম, সবকিছুকে পেছনে ফেলে গত কয়েকদিন ধরে যে বিষয়টা টক অব দ্যা কান্ট্রি তা হলো “টিপ”। টিপ দেওয়াকে কেন্দ্র করে একজন শিক্ষিকার সাথে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে গেলো তা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনা আজ আমাদের মানবিকতা, ধার্মিকতা এবং অসাম্প্র্রদায়িক চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

টিপ পরাকে কেন্দ্র করে যে মৌলবাদী সুড়সুড়ি সারা দেশকে উসকে দিচ্ছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এই টিপ আজ দেশকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। তাই টিপ পরা এবং না পরা নিয়ে কোথায় কার কী সম্মতি এবং আপত্তি আছে তা আমাদের সকলের দৃষ্টিগোচর হওয়া উচিত।

শুরুতেই বলতে হচ্ছে, শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকার সাথে যা ঘটেছে তার জন্য জাতি হিসাবে আমরা লজ্জিত। তিনি একজন মা এবং একজন শিক্ষাগুরু। তাঁর সাথে এমন আচরণ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ঐ পুলিশ যে দৃষ্টিকোণ থেকে ঐ শিক্ষিকার সাথে এমন আচরণ করেছেন, সেই আচরণের অধিকার কেউ তাকে দেয়নি। আমাদের রাষ্ট্র কিংবা ধর্ম কোনো অবস্থান থেকেই কোনো সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু কারো সাথেই এভাবে লাঞ্চিত করার কোনো অনুমতি নেই।

অভিযুক্ত পুলিশ যে দৃষ্টিভঙ্গিতে এই আচরণ করেছে, সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মুসলিম সমাজের অনেকেই পোষণ করে। যা আপাত ধর্মীয় দৃষ্টিতে অপরাধ না হলেও অযৌক্তিক জায়গায় প্রয়োগে ধর্মীয় যথেষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেননা ইসলাম কাউকেই (হোক মুসলিম বা বিধর্মী) সরাসরি হেনস্তা করার অধিকার কাউকে দেয়নি। সুতরাং টিপ নিয়ে যা ঘটেছে তা অবশ্যই অযৌক্তিক এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আমরা জাতিগতভাবে বাঙ্গালী। তাই আমাদের সংস্কৃতিতে বাঙ্গালিয়ানা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই সংস্কৃতির উপর কোনো বাঁধাই আমরা মেনে নিতে পারি না। যে নিজেকে বাঙ্গালী বলে পরিচয় দিতে চায় তাকে কেউই তার সংস্কৃতি থেকে আলাদা করতে পারবে না। এমনকি ইসলামও তাকে বাঁধা দেওয়ার কথা বলে না। তাহলে এই অধিকাংশ মৌলবাদীদের সমস্যা কোথায়?

যেসব মুসলিম নিজেদের বাঙ্গালি পরিচয়ের চাইতে মুসলিম পরিচয়কে বড় করতে চায়, তাদের জন্য তখন সংস্কৃতির চাইতে ধর্মটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর তখনি মুসলিম জাতীয়তাবাদের সাথে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সংঘর্ষ বাঁধে। কেননা ইসলাম বিজাতীয় সংস্কৃতি ধারণ কারার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,

“তোমরা কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবে না।” ( সূরা আহযাব: ৪৮)
অর্থাৎ যে নিজেকে মুমিন মুসলিম দাবি করবে সে কখনোই কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, বৌদ্ধ-মজুসী, বেদ্বীন-বদদ্বীন ইত্যাদি বিভিন্ন কোনো ধর্মাবলম্বীদেরই অনুসরণ করতে পারবে না। তার জন্য বিজাতীয় ধর্মীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করা হারামের অন্তর্ভুক্ত।

অনুসরণ অনুকরণ বিষয়ে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বাণী হলো,

হযরত ইবনে উমার রাঃ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে,সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৪০৩১)

অর্থাৎ কেউ ইসলামের আদর্শের বাইরে গিয়ে অন্য কোনো আদর্শ বা সংস্কৃতিকে পছন্দ করে লালন করতে পারবে না। যদি কেউ এমন করে তাহলে সে ঐ দলের বা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। উপরোক্ত কুরআন এবং হাদিসের আলোকে ইসলামে কোনো মুমিন মুসলিম এমন কোনো বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ করতে পারে না। যেসব সংস্কৃতি বিধর্মীদের ধর্মীয় আচার কিংবা তাদেরকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেয়।

উপমহাদেশে টিপের ইতিহাস যদি আমরা জানার চেষ্টা করি, তাহলে জানতে পারবো যে, টিপ সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা হিন্দুদের ধর্মীয় একটি আচার এবং প্রথা। যা বাঙ্গালী হিন্দুরা যুগ যুগ ধরে মেনে আসছে। টিপের সম্পর্ক হিন্দু নারীদের সিঁদুরের সাথে। যে সিঁদুর হিন্দু বিবাহিত নারীরা তাদের স্বামীদের মঙ্গল কামনায় কপালে ধারণ করেন। শুধু নারী নয় সনাতনী পুরুষরাও তাদের বিভিন্ন পূজার্চনায় টিপ বা তিলক পরিধান করে থাকেন। অনেক সনাতনী গোষ্ঠীর নারী পুরুষ উভয়ই লম্বা তিলক দিয়ে থাকেন। যা উপমহাদেশে ইসলাম আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করে আসছে।

ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশে ইসলাম আবির্ভাবের পরে যারা ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলামে প্রবেশ করে তারাও তাদের আগের সংস্কৃতি থেকে সরে আসেনি। সেই সাথে কুরআন হাদিসের সঠিক চর্চা এবং ধর্মীয় জ্ঞানের সংকীর্ণতার কারণেও অধিকাংশ মুসলমান জানতে পারেনি বিজাতীয় সংস্কৃতি ইসলামে ধারণ করা নিষিদ্ধ। যার ফলে এখনো মুসলিম বাঙ্গালীরা জানে না- টিপসহ আরও অন্যান্য যেসব সংস্কৃতি আছে, যা সরাসরি বিধর্মীদের নিদর্শন তা ইসলামে নিষিদ্ধ।

অতএব, যারা নিজেদেরকে মুসলিম ধর্মীয় পরিচয়ে পরিচয় দিতে চায় তাদের জন্য ইসলামী সংস্কৃতির বাইরে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সংস্কৃতি নিষিদ্ধ। আর যারা নিজেদের বাঙ্গালী পরিচয় দিয়ে চলতে চায়, তাদেরকে কেউ ধর্মের ধোঁয়া তুলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাবে না। কেননা ইসলাম কখনোই কারো টুঁটি চেপে ধরার শিক্ষা দেয় না। অতএব উপরোক্ত ঘটনার মতো ইসলামকে ব্যবহার করে ধর্মকে কলঙ্কিত করা যাবে না।

যেসব মুসলমানরা এই ঘটনায় ঐ পুলিশের ইসলামী দৃষ্টিকোণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। তাদের জন্য সত্য হলো, দ্বীন প্রচার প্রথমে নিজ ঘর থেকেই শুরু করতে হয়। যারাই আজ টিপ বিরোধী তাদের উচিত নিজ নিজ মা বোনসহ সকল মুসলিম আত্মীয়স্বজনদের সামনে টিপের ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। সেই সাথে যারাই টিপের পক্ষপাতি তাদেরকে এড়িয়ে চলা। কেননা ইসলাম জোর করে ধর্ম পালনে বাধ্য করে না। সেই সাথে কোনো বিধর্মীকে জোর করে লাঞ্চিত অপদস্থ করার অধিকার ইসলাম কখনোই কাউকে দেয় নি

আর যারা নিজেদের মুসলিম এবং বাঙ্গালী উভয়ই দাবি করতে চান। তাদের জন্য নীতি বাক্য হলো, কখনোই দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না। আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে বাঙ্গালী বলে পরিচয় দিতে পারেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার বাঙ্গালিয়ানা আপনার ইসলামে আঘাত না আনে। যদি বাঙ্গালিয়ানার কোনো কিছু ইসলামে আঘাত আনে তাহলে তা আপনার ঈমানে আঘাত আনবে। আর আপনার ঈমান আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া মানেই আপনি ইসলাম থেকে বেরিয়ে হয়ে যাওয়া।

সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত সঠিক ইসলাম জানার চেষ্টা করা। অহেতুক বিচ্ছিন্ন ঘটা ঘটিয়ে ইসলামকে কলুষিত করা কখনোই কারো উচিত নয়। সবারই উচিত আগে নিজের পরিবার পরিজনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। তারপর সুন্দর আচরণের দ্বারা অন্যান্যদেরও ইসলামের দাওআত দেওয়া। যাতে আমরা সত্যিকারের প্রকৃত মানুষ এবং মুমিন হতে পারি।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

লাল-সবুজ টিপ

কপালে লাল-সবুজ টিপ
লাগছে বেশ!
যেন সারা বিশ্বের বুকে
একটি বাংলাদেশ।
ঝড়ো হাওয়ায় যদি কখনো
নিভে যায় দীপ,
অশনির আলোয় অন্ধকারে
দেখি যেন ঐ টিপ।
হে নারী, উন্নত শিরে
পরো লাল-সবুজ টিপ,
আসুক যতই ফিরে ফিরে
ভিন্ন সময় ভীষণ বিপ্রতীপ।

পরিমনি: যত দোষ নন্দ ঘোষ

Sc211052_1

সম্রাট আর পরিমনিই কি শুধু দোষী! নেপথ্যে যারা, তারা কারা?

মদ হারাম। মদ পান শাস্তিমূলক অপরাধ। দণ্ডবিধিতে মদপানের শাস্তি ২৪ঘন্টা থানা হাজত অথবা ১০টাকা জরিমানা। মানলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম না তাই জানতে চাই, বাংলাদেশে এতো মদের বার কেন? বিদেশী মদ আসে কোথায় থেকে? কে বা কারা ইমপোর্ট করে?

আমরা বেশ্যা বলি। দেহব্যবসায়ী বলি। সমাজে নষ্টা বলি। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে আমরা পুরুষরাই তাদের ভোগ করি। আমি বেশ্যাদের সম্মান করি কারণ তারা তাদের জীবিকার তাগিদে তুমি পুরুষের শয্যাশায়ী হয় কিন্তু যারা প্রেম-ভালবাসার নামে অবৈধ মেলামেশা করে তাদের কি বলবেন?

বাংলাদেশে যদি টাকার বিনিময়ে সেক্স করাকে নিকৃষ্ট মনে করা হয় তাহলে ৯৫ভাগ যুবক-যুবতী প্রেমের নামে রাসলীলায় লিপ্ত হয় তাদের যৌনাচারকে আপনারা কি বলবেন? আমার দৃষ্টিতে সবাই বেশ্যা এবং চরিত্রহীন পুরুষ।

কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা সংবিধান বর্হিভূত। কেউ যদি অপরাধ করে তাকে আদালতে অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করবে এবং শাস্তি প্রদান করবে অথচ আমাদের দেশে পুলিশ প্রশাসনের বরাতে মিডিয়া যে কাউকে মাদক কারবারী, রাতের রানী উপাধিতে ভূষিত করেন, এইটা কি সংবিধান বর্হিভূত নয়? কোন আইন বলে বাকস্বাধীনতা হরণ করে?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কত শতাংশ নেতা-কর্মী মদ পান করে না! আমার তো মনে হয় ৯৫শতাংশই মদপান করে থাকেন। বিশ্বাস হচ্ছে না? চলেন বিভাগীয় শহরগুলোর নামী-দামী হোটেল গুলো ঘুরে আসি তাহলে দেখতে পাবেন, কে বা কারা মদ খায়। বোট ক্লাবে বসে মদ খাওয়া যাবে কিন্তু বাসায় রেখে খাওয়া যাবে না এইটা কোন ধরনের আইন?

যে সমাজ বলে পরিমনি বেশ্যা, সম্রাট ক্যাসিনো ব্যবসায়ী আমি তাদের বলি, কষ্ট করে আপনি আপনার নিজের কথা ভাবুন আপনি কতখানি সৎ, আপনার বন্ধু-বান্ধব কতজন সৎ, আপনার সমাজে কতজন সৎ? তাহলে বুঝতে পারবেন, যত দোষ নন্দ ঘোষ।

আমরা পরিবর্তন চাই, আমরা সংস্কার চাই। কিন্তু যখনই পরিবর্তনের কথা বলা হয় তখনই নাস্তিক, মাদকাসক্ত, মাদক কারবারী, বেশ্যা কলঙ্ক নিয়ে জেল হাজতে যেতে হয় কিংবা নির্বাসিত হতে হয়। তবে কেন?

রাজনৈতিক নিছক স্বার্থের জন্য আমরা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমনকি হলুদ সাংবাদিকদের জালে আমরা বন্দি। মুক্তি চাই। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন দেশে সাধারণ নাগরিক হিসেবে সজীব নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচতে চাই।

পরিশেষে বলতে চাই, মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন ঘটানোর প্রয়োজন তাই প্রগতিশীল হওয়ার আহ্বান রইল।

বাঁশের বাশি এবং

কী দুরন্তপনায়ই না কেটেছে আমাদের শৈশব! স্পষ্ট মনে আছে, একবার বাঁশের গুলতির বায়না ধরেছিলাম বাবার কাছে। বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কাটা হলো, বাঁশ থেকে খাপ বানানো হলো। তিন সূতার পাটের দড়ি পাঁকানো হলো। খাপের দুই পাশে দড়ি টানিয়ে ধনুক আকৃতির গুলতি তৈরি করা হলো। অতঃপর রঙ-বেরঙের মার্বেলের গুলিতে পাখি শিকার বেড়িয়ে পড়া ! আহা কি আনন্দ!

স্কুল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে একটা রিকসা ফ্যাক্টরী ছিলো। স্কুল ছুটি হলে এর সামনে দাঁড়িয়ে রিকসা বানানো দেখতাম। সেই বাঁশ কেটে খাপ বানানো, দড়ি টানা দিয়ে বাঁকানো খাপে হুড বানানো, হুডের ঢাকনায় রঙ করা, ব্যাকপ্লেটে নীতিবাক্য লেখা ইত্যাদি। আমার খুব ভালো লাগতো।

তখন বর্ষাকাল। আমরা প্রায় প্রতিদিন ছাতা মাথায় পায়ে হেঁটে স্কুলে যাই। একবার আমার এক সহপাঠী এঁটেল মাটির রাস্তায় পা পিছলে আলুর দম। হাড় দু’টুকরা হয়ে গেলো। আমরা তাকে কোলে করে বাড়ি নিয়ে গেলাম। কবিরাজের ডাক পরলো। তিনি এসে গাছের শিকড় প্যাচিয়ে পায়ে শক্ত ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন। কিছুদিন পর হাড় জোড়া লেগে গেলো। কিন্তু হায়! সে সোজা হয়ে হাঁটতে পারলো না। শহরে বড় ডাক্তারের কাছে নেয়া হলো। এক্সরে করা হলো। দেখা গেলো, জোড়া খাপে খাপ হয়নি, হাড়ের উপর হাড় পাশাপাশি জোড়া লেগে গিয়েছিলো। ব্যাপারটা অপারেশনে গড়িয়েছিলো। তারপরও কি এই পা সেই পা হয়!

আমাদের গ্রামে প্রতি শনি ও বুধবারে হাট বসতো। হাটবারে রাস্তার পাশে একটি কুঁজো ছেলে ভিক্ষে করতো। আমরা স্কুলে যাওয়া আসার সময় দেখতাম, সে সুর করে ভিক্ষা চাইতো। একদিন পাশের গ্রামে ফুটবল খেলতে গিয়ে দেখলাম, আসলে ছেলেটি কুঁজো নয়। কিন্তু সে এই ব্যবসা চালিয়ে গেলো। আমি মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে, কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। বহুদিন আর ছেলেটির সঙ্গে দেখা নেই। হঠাত একদিন দেখি সত্যি সত্যি সে কুঁজো হয়ে গেছে …

আজ প্রায় শেষ বয়সে উপনীত হয়েছি। চাকুরী থেকে অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। হাতে সময় জমা হলে বসে বসে অতীত রোমন্থন করি আর ভাবনার সমুদ্রে হাবুডুবু খাই – টেনে বেঁধে রাখলে কেমন করে বাঁশ বাঁকা হয়ে যায়, হাড় অসমানভাবে জোড়া লাগে, অভ্যাসে পিঠ কুঁজো হয়, এমনি আরো কত কি?

আমাদের শিশুরা বড়ই অনুকরণপ্রিয়। তাদেরকে আপনি যা শিখাবেন তাই শিখবে। শিখন অভ্যাসে পরিণত হবে একদিন। আর তারা যখন পুর্ণাংগ মানব/মানবী হয়ে উঠবে তখন আর অভ্যাস বদলানো যাবে না। তাই আমাদের এখনই ভাবতে হবে, আমাদের সন্তানদের আমরা কি শেখাবো; সত্যি না মিথ্যে? অভিনয় না বিনয়? নির্বিচারে বাঁশ ঢোকানো, বাঁশের কেল্লা বানানো, নাকি বাঁশ দিয়ে বাঁশি বানানো?

আমাদের ছেলে মেয়েরা কি শিখছে ? কি অভ্যাস করছে ? ভালো কিছু শিখলে/ অভ্যাস করলে, আলহামদুলিল্লাহ্। কিন্তু আল্লাহ না করুন, নেগেটিভ কোন অভ্যাস গড়ে উঠলে, সেটা পারমানেন্ট কুঁজে পরিণত হবে – এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়: আকাঙ্ক্ষা বনাম বাস্তবতা

images-1

অনেক উচ্চ আকাঙ্খা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাবার পর শিক্ষক হবার স্বপ্ন নিয়ে আসা ছেলেটা কোথায় যেন গিয়ে একটু খেই হারিয়ে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে গিয়ে প্রথম দিকে প্রতিটা ক্লাস সিরিয়াসলি করা ছেলেটাও কোথাও গিয়ে যেন ভাবতে শুরু করে আমার পক্ষে এগুলো সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মানে স্বাধীন জায়গা। পুরো ক্যাম্পাসটাই আমার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রোগ্রামে অ্যাটেন্ড করার পর একঘেয়ে লাগতে লাগতে একসময় পুরো ক্যাম্পাসটা নিজের করে নিতে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল জগতে এসে স্বাধীনতার সুখ পেতে নিজের ডানা মেলতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার আগ পর্যন্তও যেই ছেলেটা নিয়মিত লেখাপড়ার কাজে সময় দিতো, সেই ছেলেটা ও কেন যেন একটু এলোমেলো হয়ে পড়ে… বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বন্ধু, সিনিয়র ভাই -আপু এগুলো নিয়ে এক জগৎ গড়ে ওঠে। জগতটাতে নেই কোনো বাঁধা। দেখবার, বলবার মত কেউ নেই। সারাজীবনে একটা সিগারেটে টান না দেওয়া ছেলেটাও এখানে এসে হয়ে যায় চেইন স্মোকার!

মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রতিটি মানুষই চায় নিজেকে সুপিরিয়র পজিশনে নিয়ে আসতে; যখন সে অনুভব করতে থাকে পলিটিক্যাল পার্টির দিকে গেলে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা যায়, ক্ষমতা দেখানো যায়, তখন সে নিজেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হয়ে যায়। দেশপ্রেমের জায়গা থেকে রাজনীতি সেটি কিন্তু নয়। স্রেফ ক্যাম্পাসে নিজের অাধিপত্য বিস্তার, নিজের বন্ধুদের ওপর ফাঁপরবাজির জন্য!

আবার আস্তে আস্তে পরিচিত হতে থাকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইদের সাথে যারা ঠিক একই পন্থায় জীবনের অর্ধেক অংশ হারিয়ে ফেলেছে কোন গন্তব্য ছাড়াই। চলতে থাকে আড্ডা,তাস ঘোরাঘুরি। পড়া বলে কিছু একটা জিনিস ছিলো সেটি মনে পড়ে পরীক্ষার আগের রাতে! কিছু ছেলে নিজেকে শাহরুখ খান, সালমান খান ভাবা শুরু করে… ঠিক এভাবেই কাটতে থাকে বছর… বছর পেরোলে তার জুনিয়র আসে জুনিয়রকে নিয়েও একই পথের দিকে এগুতে থাকে।

মুদ্রায় ওপিঠটাতেও ঘটে আরো অনেক কিছু। কোনরকমে ভর্তি পরীক্ষাতে পাশ করা ছেলেটাও ভালো করতে থাকে। অনেকক্ষেত্রে নিজ ধর্মের প্রতি অনেক বেশী মনোযোগী হয়ে যায়। নিজের পরিবারের দিকে তাকিয়ে দু তিনটে টিউশনি করিয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্যের দিকে এগুতে থাকে। জীবন সংগ্রাম তো এদেরই।

আস্তে আস্তে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করতে করতে কাজের এক্সপেরিয়েন্সটা অর্জন করে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজ করে দেশ, সমাজের জন্য। জীবনে বিতর্ক না করা ছেলেটি, জীবনে কোনদিন বক্তৃতা না দেওয়া ছেলেটিও নিজের জীবন গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছু অর্জন করে নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে!

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা বড়ই অদ্ভুত। কেউ সেই জীবনটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের জীবন বদলে ফেলে। আবার কেউ কেউ আবার তার জীবনটাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাজনীতি চর্চা হওয়া চাই সুস্থ রাজনীতির চর্চা। নিজের দেশপ্রেমের জায়গা থেকে দেশকে ভালোবাসার জায়গা থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা আনাচে-কানাচেতে যে জ্ঞান ছড়ানো থাকে তা অন্বেষণ হওয়া উচিৎ একজন ভার্সিটির পড়ুয়া স্টুডেন্টের কাজ। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ি তাদের একটা বড় অংশই থাকি আমরা মধ্যবিত্তরা। যাদের পরিবার তাকিয়ে থাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সন্তানটির ওপর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষে আপনি কোথায় যাবেন সেটা নির্ভর করছে আপনার ওপর।কথায় বলে না, ছুরি দিয়ে ফল কেটেও খাওয়া যায় আবার মানুষ হত্যাও করা যায়!

প্রতিবেশী কি শুধুই মুসলিম ধর্মাবলম্বী?

Scre

বিভেদ নয়, ইসলাম সম্প্রীতি ধারণ করে। এই সম্প্রীতির চমৎকার প্রমাণ প্রতিবেশীর হক আদায়ের নির্দেশনা। ইসলামে প্রতিবেশী বলতে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলকে বুঝায়। উল্লেখ্য, মুসলিম ও আত্মীয় প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর হক আদায়ের পাশাপাশি মুসলমানের প্রতি মুসলমানের আর আত্মীয়ের প্রতি আত্মীয়ের হকও আদায় করতে হবে। কিন্তু প্রতিবেশীর হকে ভিন্নধর্মাবলম্বী এবং অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেও পালন করতে হবে।

‘ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।’ মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ২৬৯৯; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ১১২)। প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক, সে কষ্টে থাকলে তুলনামূলক স্বচ্ছল প্রতিবেশীদের কষ্ট লাঘবের দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিবেশীর পরিধি কতটুকু এ বিষয়েও ধারণা দেওয়া হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের ডানে-বামে, সামনে-পেছনে চল্লিশটি বাড়ি পর্যন্ত প্রতিবেশীর আওতার অন্তর্ভুক্ত। (বোখারি: /২৯০১)

প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা অভাবে আছে তাদের সম্পর্কে আমাদের জানা থাকে। তবে এমনও অনেকে আছে যারা তাদের দুরবস্থা বাইরে প্রকাশ করেনা, সঙ্কোচে কারো কাছে সহায়তাও চায় না। পবিত্র কুরআনে এদেরকে ‘মাহরূম’ অর্থাৎ বঞ্চিত হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, “এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও মাহরূমের (বঞ্চিতের) হক।” (সূরা যারিয়াত : ১৯) মাহরুম তথা বঞ্চিতদের কাছে এমন পন্থায় সহায়তা (যাকাত, দান) পৌঁছতে হবে যেনো তারা অপমানিত বোধ না করেন।

মসজিদে দান করুন, মাদ্রাসায় দান করুন কিন্তু এর আগে নিশ্চিত হোন প্রতিবেশীর হক আদায় করা হয়েছে কি না। সুরম্য মসজিদে দান করে এসির হাওয়ায় নামাজ আদায় করছেন, মাদ্রাসায় দান করেছেন আর ওই মাদ্রাসায় আপনার জন্য দোয়া হচ্ছে কিন্তু প্রতিবেশীর হক আদায় করা হয়নি- এটি সাধারণ বিবেচনাতেই নীতিগত অপরাধ, আর মুসলিম হিসেবে ধর্মের বিধিবিধানের অবমাননা। আমরা যেনো মনে রাখি কোরআন মজীদের একাধিক সুরায় সালাত আদায় না করার সাথে প্রতিবেশীর হক আদায় না করাকে যুক্ত করে শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে, আরও মনে রাখি যে, হযরত মুহম্মদ (সা:) বলেছেন, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!!! সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, সে কে হে আল্লাহর রাসূল? রাসূ্লুল্লাহ (সা.) বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৬)।

একই সাথে মনে রাখি প্রতিবেশীর হক আদায়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা অবিশ্বাসী প্রতিবেশীরাও সমানভাবে গণ্য হবেন। বাড়ির পাশের প্রথম বাড়িটি যদি হয় একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা নাস্তিকের আর সে যদি থাকে প্রচণ্ড ক্ষুধায় বা অভাবে তবে প্রতিবেশীর হক আদায়ের ক্ষেত্রে সেই অগ্রাধিকার পাবে।

ইসলামে সামাজিক সম্প্রীতিকে গভীর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অথচ বর্তমানে সম্প্রীতির পরিবর্তে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এক শ্রেণির আলেম (আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন) শুধু যে বিদ্বেষই ছড়ান তা নয়, তারা ওয়াজে বা আলোচনায় বসে নির্ধারণ করে দেন কে বেহশতে যাবে, কে দোজখে, কে মুমিন আর কে কাফের। ইসলামের মূল আদর্শের সাথে এদের যোজন যোজন দূরত্ব।

সামাজিক সম্প্রীতি বজায় থাক, রমজান থেকেই শুরু হোক সম্প্রীতি পালনের চর্চা।

সব্বাইকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা

১৯৭১ থেকে ২০২১ এর ২৬ শে মার্চ-

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এর আজ সূবর্ণ জয়ন্তী। বাঙালি জাতির জীবনে অনন্যসাধারণ একটি দিন। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় দিনটি। তাইতো স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই সময়টি জাতি নিবিড় আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে। স্বাধীনতা এক অমূল্য উপহার যা আমাদের দিয়েছে বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম ও ৩০ লক্ষ শহীদের মহান আত্মত্যাগ এবং অযুত মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের দেশ পেয়েছে একটি স্বাধীন লাল সবুজ পতাকা। স্বাধীনতার এই সুবর্ণ জয়ন্তীতে স্মরণ করি মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই সকল বীর সেনানীদের। তাঁদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

স্বাধীনতা দিবসে আমরা কত আয়োজন করি। কিন্তু কজন জানি স্বাধীনতার মর্মকথা! নীচে স্বাধীনতা সম্পর্কিত কয়েকটি উক্তি উল্ল্যেখ করলাম যে গুলো আমাদের স্বাধীনতা কি তা উপলব্ধি করতে লেখায়।

“এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে যেদিন বাংলার কৃষক মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে।”
-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

“এখন যদি কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, তাহলে সে স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য মুজিব সর্বপ্রথম তার প্রাণ দেবে।”
-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

”স্বাধীনতা মানুষের প্রথম এবং মহান একটি অধিকার।“
– মিল্টন

“স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে মৃত্যু বরণ করা পরাধীনতায় সারাজীবন কাটানোর থেকে অনেক ভালো।’
– বব মার্লে

“আমি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক এর চাইতে বড় গৌরব আর কিসে হতে পারে ?”
– জে. আর লাওয়েল।

“নিজের ইচ্ছামত বাঁচা ছাড়া স্বাধীনতার অর্থ আর কিই বা হতে পারে।”
– অ্যাপিকটিটাস।

“স্বাধীনতা ছাড়া একটি জীবন মানে আত্মা ছাড়া শরীর।”
– কাহলিল জিবরান।

“স্বাধীনতা একটি সুযোগর নাম যার মাধ্যমে আমরা যা কখনই হতে পারার কল্পনা করতে পারি না তা হতে পারি।”
– ড্যানিয়েল যে ব্রুস্টিন।

‘আমি তোমার কথার সাথে বিন্দুমাত্র একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার কথা বলার অধিকার রক্ষার জন্য আমি জীবন দেবো৷‘
– ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার।

“যখন সত্যকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয় না, স্বাধীনতা পূর্ণ হয় না।” – ভ্যাকলাভ হাভেল।

“স্বাধীনতার পক্ষে সবচেয়ে বড় হুমকি সমালোচনার অনুপস্থিতি।” – ওলে সোইঙ্কা।

“সত্যিকারের স্বাধীনতার জন্য আইন ও ন্যায়বিচারের শাসন এবং একটি বিচার ব্যবস্থা প্রযোজ্য, যেখানে অন্যের অধিকার অস্বীকার করে কারও কারও অধিকার সুরক্ষিত হয় না।” – জোনাথন স্যাকস।

“চিন্তার স্বাধীনতা ব্যতীত জ্ঞানের মতো কিছুই হতে পারে না – এবং বাকস্বাধীনতা ছাড়া জনস্বার্থের মতো কিছুই হতে পারে না।” – বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলি।

“যখন তাদের শাসনকর্তাদের লেনদেন তাদের কাছ থেকে গোপন রাখা যায় তখন কোনও মানুষের স্বাধীনতা কখনই ছিল না এবং কখনও নিরাপদ থাকবে না।” – প্যাট্রিক হেনরি।

“বেশিরভাগ মানুষ সত্যই স্বাধীনতা চায় না, কারণ স্বাধীনতার মধ্যে দায়বদ্ধতা জড়িত এবং বেশিরভাগ লোকেরা দায়বদ্ধতায় ভীত।”
– সিগমন্ড ফ্রয়েড।

“স্বাধীনতা মানুষের মনের একটি খোলা জানলা, যেদিক দিয়ে মানুষের আত্মা ও মানবমর্যাদার আলো প্রবেশ।”
– হার্বার্ট হুভার।

উপরের উক্তি গুলো আমরা সকলেই জানি বটে কিন্তু প্রায় কেউই মন থেকে বিশ্বাস করি না৷ স্বাধীনতা মানেই আমরা বুঝি স্বেচ্ছাচারিতা। ভিন্নমত মানেই আমাদের কাছে অপরাধ৷ আমরা শুধু সহমত সহ্য করি, ভিন্নমত নয়৷ ভিন্নমতের জন্য জীবন দেয়া তো দূরের কথা, সুযোগ থাকলে ভিন্নমতের জীবন নিতে চাই আমরা৷

সকলের প্রতি আহবান জানাই আসুন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, মান-সম্মান যেন আরও বৃদ্ধি পায়, সব সময় যেন অক্ষুণ্ণ থাকে আমাদের পতাকার সম্মান, সকল ভেদাভেদ ভৃলে আজকের এই মহান দিনে সবাই মিলে নতুন সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার গ্রহণ করি……
যে দেশে ঘৃণার কোন স্থান থাকবে না, ভালবাসাই হবে মানুষের একমাত্র ধর্ম….।

সব্বাইকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

অসাম্প্রদায়িকতা নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হোক আমাদের লক্ষ্য

223

সাম্প্রদায়িকতা এক দুরারোগ্য ব্যাধি। এই ব্যাধির জীবানু জাতির জীবনে গভীরে প্রোথিত। শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার কঠোরতার মধ্যেই এর সমাধান-সূত্র নেই। তরুন শিক্ষার্থীরাই হল দেশের সবচেয়ে আদর্শপ্রবণ, ভাবপ্রবণ অংশ। ছাত্র-সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ, জাতির কান্ডারী। তাদের মধ্যে অফুরাণ প্রাণশক্তি। পারস্পরিক শ্রদ্ধার মনোভাব, আন্তরিক মেলামেশা, ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় হবে এক নতুন প্রজন্মের। এরই মধ্য দিয়ে ছাত্ররা নতুন করে অনুভব করবে মানবতার উদার মহিমা। গড়বে মহামিলনের মন্ত্র। ছাত্রাবস্থায়ই সাম্প্রদায়িকতার রাহু মুক্তির শফথ নিতে হবে। সম্প্রীতির মহাব্রত অনুষ্ঠানের তাদেরই হতে হবে প্রধান পুরোহিত। শুধু পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া নয়, সুকুমার বৃত্তিগুলো যথাযথ বিকশিত করতে হবে তবেই শিক্ষার পূর্ণতা, সার্থকতা। মনুষত্বের অধিকার অর্জনই হোক প্রতিটি শিক্ষানুশীলনের পরম প্রাপ্তি। শিক্ষার নিবেদিত প্রাঙ্গণে নতুন করে উপলব্দি করতে হবে সবার উপরে মানুষ সত্য, তবেই মানুষে মানুষে প্রীতি-বন্ধন সৃষ্টিতে হবে শেষ কথা।

সমাজবদ্ধ মানুষ নানা ধর্ম সম্প্রদায়ে বিভক্ত। কিন্তু ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা এক নয়। সকল ধর্মের মূল কথা – প্রেম, মৈত্রি, শান্তি ও সম্প্রীতি। কিন্তু বর্তমান সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবলে সৃষ্টি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় উগ্রতা। আমরা সবাই জানি মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই আমাদেরকে হতে হবে মানবতাবাদী। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা যেন সমাজের জন্য অমঙ্গল হয়ে দেখা না দিতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সমাজ প্রগতির পথকে রুদ্ধ না করতে পারে সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। কারণ কোনো ধর্ম, কোন আদর্শই পৃথিবীতে এ সর্বনাশা ভেদবুদ্ধিকে সমর্থন করে নি। পবিত্র কোরআনে বলা আছে” ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই”।

গতিশীল জীবনে সমাজ উন্নয়নের চাবিকাঠি প্রগতির পথ পাড়ি দিতে আমাদরকে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে সামজিক জীব হিসেবে আমাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট সমাজ গঠনের দৃষ্টান্ত করতে হবে। আমাদের জাতীয় জীবনে গঠনমূলক কাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাষি, জেলে, কামার, কুমার, মুচি, ডোম এবং ধনী-গরীব সকলকে কাঁধ মিলিয়ে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করে জাতির উন্নয়নের জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

” জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে/ সে জাতির নাম মানুষ জাতি।
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত/ একই রবি শশী মোদের সাথী। ”

কবির এই ছন্দের ভাবার্থ সঠিক উপলব্দি করতে পারলেই তবে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হবে।

টমাস পাইল বলেছেন- ‘ পৃথিবীটা আমার দেশ, সমস্ত মানব জাতি আমার ভাই এবং সবার ভালো করাই আমার ধর্ম’। এই নীতি সৃষ্টি করুন দেখবেন আপনার সাথে সাথে সমাজের নীতিবাচক কোলাহলও পাল্টে গিয়েছে।

ধর্মভেদ, বর্ণবেদ, সাদা-কালোর দম্ভ ধ্বংস করে জীবনে সঠিক শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করেই পৃথিবীতে শান্তি ও প্রগতি স্থাপন সম্ভব।

” হে চিরকালের মানুষ, হে সকল মানুষের মানুৃষ
পরিত্রাণ করো ভেদচিহ্নের তিলক পরা/ সংকীর্ণতার ঔদ্ধত্য থেকে”।

কবির উক্ত লাইনের মর্ম হৃদয়ের আঙিনায় রোপণ করে সর্বজনীন চেতনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই আমরা বিশ্বের বুকে একটি সভ্য ও আদর্শ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাবো।

অবশেষে কবি নজরুলের কন্ঠে উচ্চারিত-
” হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞেস কোন জন
কান্ডারী! বলো, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মোর’।

মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা…..

মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ রক্ষ শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আত্মদানকারী দুই লক্ষ মা-বোনদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা…. সকল শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ/ খুশির হাওয়া ঐ উড়ছে/ বাংলার ঘরে ঘরে/ মুক্তির আলো ঐ ঝরছে’
মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জয়যাত্রা অব্যহত।
“রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ
মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ”
জয়বাংলা।

2020

তৈল মর্দন নয়: দেশকে ভালবাসুন

FB_IMG_1607

আবেগ দিয়ে সংগঠন হয় না, বাস্তবতা আর দেশপ্রেম দিয়ে একজন ব্যাক্তি হয়ে উঠে সাংগঠনিক। যার মাঝে দেশপ্রেম নেই, সেই সামান্য রাজনৈতিক পদবী নিয়ে অহংকার আর দেমাগে কর্মী কিংবা সাধারণ মানুষকে বিচ্ছিন্নকরণ করে। পদ বড় নয়, বড় ব্যাপার আমি বা আমরা দেশের জন্য কি করছি? ৫২’র ভাষা আন্দোলনে, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলো তারা নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দেশ রক্ষা করেছে। তাদের কোনো রাজনৈতিক পদ ছিলো না, পকেট ভর্তি অর্থ ছিলো না। তাদের একটি পরিচয় “আমি বাঙ্গালী”।

বাঙ্গালি জাতির পিতা কি চেয়েছিলো? সাধারণ মানুষদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করে মুক্তি দিতে। অথচ ১৫ই আগস্ট ঘাতকরা তাঁকে নির্মম ভাবে খুন করলো। ১৪ই ডিসেম্বরে খুন হওয়া বুদ্ধিজীবীরা দেশের কথা ভাবতেন বলেই তৈল মর্দনে তৈলাক্ত রাজনৈতিক খেকরা তাঁদের বাঁচতে দেয়নি।

জহির রায়হান বা নুর হোসেন দেশের জন্য নিজের মায়া ত্যাগ করছেন। বছরে একটি দিন আসলে তাদের আমরা স্বরণ করি অথচ তাদের পরিবার বাকী ৩৬৩দিন ঠিক মত খাচ্ছে কি-না তা আমরা তলিয়ে দেখি না।

আমার জানাশুনা কিছু রাজনৈতিক কর্মী দেখেছি যারা সামান্য পদবী নিয়ে নিজেকে মনে করে স্বাধীন বাংলার প্রধান কিন্তু দেশের জন্য ঘোড়ার ডিম। তারা পদ পায় নেতার চামচি করে, দেশের জন্য নয়।

দেশকে যদি ভালোবাসতো তবে নিপীড়িত মানুষের পাশে, বস্তিতে, রেললাইনে, ফুটপাতে পড়ে থাকা মানুষকে নিয়ে ভাবতো। ধনীদের এক রাতের ডিনারের টাকা দিয়ে ১০জন বস্তির ছেলে মেয়েকে পড়ানো যায়। যে বস্তির ছেলেগুলো শিশু বয়স থেকে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে দেশ ও জাতির জন্য হুমকি হয়। এখন রাজনীতি পুরো তৈল মর্দনের রাজনীতি। তাই আমি রাজনীতি থেকে বহুদূরে। তবে মনের ভিতর কাঁদে নিপীড়িত, অবহেলিত মানুষের জন্য, তবুও কিছু করার নেই কারণ কিছু করতে গেলে তখন হাইব্রীড নেতাকর্মীদের ঘা জ্বলে যে এই ছেলে দেশের জন্য কিছু করতে গিয়ে আমাদের ডিঙিয়ো যাচ্ছে। ধিক্কার তোদের মত রাজনৈতিক কর্মীদের।

আমি বৃহৎ বাগানের কোনো এক কোণে পড়ে থাকা ছোট্ট একটি ফুল। সুঘ্রাণ হয়তো কেউ অনুভব করে, হয়তো কেউ করে করে না। আমার কেউ না থাকুক, কলম আছে।

আসুন, নেতাদের তৈল মর্দনের তৈল নর্দমায় ফেলে দিয়ে নিজগুণে দেশকে ভালবেসে দেশের নিপীড়িত আর অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াই। আর নেতাদের বলছি, আপনারা যাদের দিয়ে নেতা হয়েছেন দৈনিক তাদের সাথে দেশের স্বার্থে আধ-ঘন্টা সময় দেন, দেখবেন দেশ কত দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।

ভাস্কর্য বনাম জ্বী হুজুর

15801820425292_S-1

দেশের সবচেয়ে আলোচিত টপিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি বা ভাস্কর্য।
এমনিতেও দেশের যেকোন ইস্যু ঘষামাজার ফলে ঘটনার চেয়ে কথা বেশ বড় হয়ে যায়…
ঠিক তেমনি ভাস্কর্য ইস্যু একশ্রেণীর মানুষের কাছে নাপাক-নাপাক হয়ে তা দ্রোহের মতো যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব তাদের আচরণে!
কিন্তু কেন?
কারণ, ভাস্কর্য তৈরী শির্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনি যদি চিন্তা করে দেখেন পৃথিবীতে কিভাবে শির্কের সূচনা হয় তবে দেখবেন,
এর একমাত্র কারণ হলো নেককার লোকদের নিয়ে বাড়াবাড়ি-
তাদের যা মর্যাদা তার চাইতে বেশী তাদের সম্মান করা।

শুধু কি মূর্তি বা ভাস্কর্যই শির্ক আর কিছু নেই?

আছে, কবর ও মাজারের মাধ্যমে।
কবর পূজারীদের কেউ কেউ বলতে পারে,
তোমরা আমাদের উপর বেশী বাড়াবাড়ি করছ।
আমরা তো কোন মৃতের ইবাদত করিনা,
ভাস্কর্যকে সম্মান দেখাই না-
কবরে এ সমস্ত ওলী-আউলিয়া নেককার লোক।
আল্লাহর কাছে তাদের সম্মান রয়েছে, তারা আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারেন!
জবাবে আমরা বলব, এটাই ছিল কুরাইশ কাফেরদের কথা তাদের মূর্তি সম্পর্কে।
পাথর পূজা আর কবর পূজার মধ্যে কি পার্থক্য আছে?
কি পার্থক্য আছে সেই ব্যাক্তির মাঝে,
যে মূর্তির কাছে নিজ প্রয়োজনের কথা বলে আর যে গলিত মাঠি মিশ্রিত হাড্ডির কাছে যায়!
কোনই পার্থক্য নেই।

”আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা এমন বস্তুর উপাসনা করে যা তাদের কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারে না এবং বলে এরা আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী।
তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহর এমন বিষয়ে অবহিত করছ;
যে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন আসমান ও যমীনের মাঝে?
তিনি পুত:পবিত্র ও মহান সে সমস্ত থেকে যাকে তোমরা শরীক করছো।”
(সূরা ইউনুস [১০]:১৮)

অতএব, শুধু ভাস্কর্য নয় একজন মুসলিম হিসেবে উচিৎ কবর বা মাজারের বিরোধিতা করা।

এখন আসা যাক বর্তমান সময়ের মূর্তি বিরোধী আলেমসমাজদের ব্যাপারে।
আলেমদের কাজ প্রথমে নিজের ধর্মের যাবতীয় অনাচার থেকে ধর্মকে সঠিক পর্যায়ে নিয়ে এসে তা অনুসারীদের কাছে সঠিক পথে পৌঁছে দেওয়া-
দেশে সেই শাহ জালাল (রহঃ) মৃত্যুর পর থেকে যে পরিমাণ শির্কের কারখানা মাজার প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা কি তারা চোখে দেখেনি?
তারা দেখেনি যে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর পবিত্র নামের বিকৃত জিকির করে তালে তালে ছন্দে নারী-পুরুষের অবাধ যৌন উন্মুক্ত গাঁজা খোরের নাচন!!

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য হচ্ছে সম্প্রতি সময়ে,
আশার কথা হলো-
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে কেউ পূজা দেয়নি সন্তানের জন্য উনার ভাস্কর্যের নিচে গড়াগড়িও খায়নি এমনকী সন্তান লাভের প্রলোভনে কেউ খাদেম বা পীর দ্বারা ধর্ষণ হওয়ার সুযোগ নেই।
কিন্তু ইসলামের নাম ভাঁঙিয়ে দরগাহ মাজারে বড়বড় ওয়াজ ও জিকিরের আয়োজন করা শির্কবাদীদের দ্বারা ধর্মের চরম ক্ষতি হচ্ছে –
সে বিষয়ে ভাস্কর্য বিরোধী আলেমসমাজ চুপচাপ-খামোশ।
ওসব ধর্মের কথা বলে তাই না!

ফাজলামির একটা সীমা থাকা উচিৎ-
নিজের ধর্মের ভিতর শির্কের কারখানা খোলা রেখে একজন মহান নেতার তর্জনী উঁচু হাতের ভাস্কর্যের বিরোধীতা কতটা যৌক্তিক?
ভাস্কর্য বিরোধীতার ফতোয়া দেওয়ার আগে ফতোয়া দিন মাজার নামক ভন্ডদের বিরুদ্ধে।
ভাঙতে হলে প্রথমে ভাঙুন মাজার গুলো,
বুল্ডুজার চালিয়ে গুড়িয়ে দিন প্রতারক ধোঁকাবাজ বাটপার গুলোর বেহায়াপনার আর্থিক উপার্জনের আস্তানা।

কিন্তু তা না করে আপনার হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নিচে!
একটা গনতান্ত্রিক দেশে কে আপনাদের ধর্মীয় নীতিমালা প্রয়োগ করতে প্রমোট করলো?

“ভোট”এর ব্যাথা

ও ভাই আমার সরকার!
মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছাড়া কি কোন নেই কর্ম আর?
কোন সালে সেই খুলেছ বদন তোমা অতি কাল হলো,
কত গড়েছ মৃত্যু মিছিল, আজ ভোল গো মোহ ভোল!
কর্কশ শব্দে ভরেছ দেশ, যেন মম মালিক গেছে ঘুমে।
হাজার হস্ত ছেড়েছে মম, বিদায় নিছে মাতৃভূমি চুমে!
দেখ গো হেথায়, ভোটার হাঁপাই, অশান্তি মাগিছে ছুটি!
দেশে ধ্বংসের গন্ধ, কর গো বন্ধ, মোহের লোটা লুটি!

মনে নাহি পড়ে, মালিকের গড়ে,কি ছিলাম আমি ভোরে?
তুমি বুঝালে সুঝালে সিধে বাঁকা গোল লম্বা চৌকা করে!
কভু হিংসা বিদ্বেষ, কভু সম্প্রীতি শেষ, কভু বা নম নম,
কভু মিথ্যে ফুঁৎকার-এ জড়িয়ে দিলে অসচ্ছ দাপ মম।
গঞ্জে গঞ্জে, অতি রঞ্জে, উড়িয়ে পুড়িয়ে মিটালে মম সাধ।
মোহের টানে, সম্প্রীতির প্রাণে, আজ জন্মে দিলে তুমি উন্মাদ!
আমার মালিক যারা, হয়ে পাগলপারা, অহর্নিশে তারা,
মোহের ঢিপে, দিলে গলা টিপে করে তাদের আত্মহারা!

গলির কোণে, মালিকের মনে,তুমি ধরিয়ে চুলা চুলি,
ঘন ঘন ঘন, পরিবর্তনে তোমার মোহের ফুঁৎকার তুলি।
তোমার মিথ্যা ফুঁৎকারে জনের কর্ণব্যাধিতে আমি নিরুপায়!
সেই হেতু গড়ে সেতু পড়েছি তোমার গর্দানে আমি ভাই।
যা হওয়ার ন্যায় হোক না, প্রবল করিয়াছি প্রতি বাদ;
আমায় ন্যায্য মূল্যে গড়িলে ভরিয়া যাবে কত মন স্বাদ।
তোমার ওই মরা দেহেতে আজ যারা ঢেলে দিলো প্রাণ,
তাদের হারায় গেল সবকিছু, অসহায়, নেই কোন ত্রাণ!

মালিকদের অন্তঃ অন্তঃ সুঘ্রাণ দিয়ে আমি, বেঁকে বসি যদি!
দেখো কি হবে তোমার তাঁবেদারি? কোথায় রবে
তোমার গদি?
তোমার যারা শ্বাসপ্রশ্বাস, তোমার ঘরের আলোক বাতি,
তারা আজ অজানা অচেনা, তাদের পেটে প্রতি দানে লাথি!
আমার কিছু মালিক আছে তাদের জন্ম যেন কুকুরের কাছে!
না বুঝে চাতুরী, তোমার বিষ্ঠার কোন সে স্বাদে ঘুরে পাছে
পাছে?

ও ভাই আমার সরকার!
রাখিবো কাহাকে সাক্ষী? কাহার কাছে করিবো বিচার?
তুমি শয়তান দেখেও কেন দেখোনা অমৃত সব কূল?
আমি যে অমর,আমার মালিকের দ্বারা আমিই তোমার মূল!
কত শত মস্তক আর হস্তে পদে তোমায় গড়ে দিয়েছি মতি।
তুমি ছিলে কোন অচেনা আবাল, আজ তোমায় দিয়ে জ্যোতি!
তুমি না থাকিলে মোর মালিকদের কিবা হতো তাতে ক্ষতি?
কৃতজ্ঞতা কি এই পাঠাইছো হিংসা বিদ্বেষ দাঙ্গা লড়াই আর অশান্তির মারফতি?

দেশ ও দশকে তুমি, ধ্বংসের ভেলা চুমি, করিয়ে দিলে ছারখার!
মরণের পরে হায়! হবে কি উপায়? পাইবে কি তারা মম ন্যায্য অধিকার?

শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে নিজ পরিবারের দুর্নীতি এবং ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ

শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে নিজ পরিবারের দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। ১৯৭২ সালে মুজিব ক্ষমতায় যাওয়ার পর মুজিব পরিবারের প্রত্যেক সদস্য ঘুষ-দুর্নীতির চুরি ডাকাতি রাহাজানি ছিনতাই হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে বেগম মুজিব বাড়িতে বসে ঘুষ নিয়ে সবার কাজ করে দেন লাইসেন্স পারমিট ডিলারশিপ প্রভৃতি কাজের জন্য বেগম মুজিব এই ঘুষ গ্রহণ করতেন।

বেগম মুজিব মন্ত্রণালয়ে নির্দেশ দিতেন এই কাজের জন্য পাঠালাম কাজটা ঠিক মত করে দিও। শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল ছিল বখাটে যুবক। তার ছিল এক বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। শেখ কামাল শত্রুদের হত্যা করতো, সুন্দরী যুবতী ধর্ষণ করতো, দিনে-দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতি করে আসার পথে পুলিশের গুলিতে আহত হন। শেখ কামাল এক সুন্দরী যুবতীকে জোরপূর্বক তুলে এনে বিবাহ করে।

বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী ভারতের ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রাতারাতি ধনী হয়ে যান এবং একমাত্র ক্ষমতার মোহে ধরাকে সরা জ্ঞান ভাবতে শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে পরেরদিন এই পৃথিবী থেকে তাকে বিদায় নিতে হতো। এভাবে তার ত্রাসের রাজত্ব শুরু। সে একজন সেনা কর্মকর্তার সুন্দরী স্ত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করতে একটুও বিচলিত হননি। সেই সেনা কর্মকর্তা শেখ মুজিবের কাছে নালিশ নিয়ে গেলে উল্টো চাকরি হারান। “”সম্ভবত এটাই সেই মেজর ডালিমের কথা বলা হচ্ছে”।

শেখ মুজিবের ছোট ভাই শেখ নাসের সুন্দরবনের কাঠ চুরি করে বাজারে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করতো। ঠিকাদাররা কাজ পেতে হলে শেখ নাসের’কে কমিশন দিতে হতো। অন্যথায় কাজ পেতনা। অথবা কাজ শেষে বিল পেতনা। শেখ নাসের, বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী ভারতে পাচার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রাতারাতি বিশাল ধনী হিসেবে পরিচিত লাভ করে। যশোহর থানার ওসি একবার না জেনে শেখ নাসেরের ১২ ট্রাক চাউল আটক করায় ওসিকে থানার ভিতরে থাপ্পর মেরে তার ইউনিফর্ম খুলতে বাধ্য করে, পরে সে চলে যায়।

ফজলুল হক মনি শেখ মুজিবের ভাগ্নে। ফজলুল হক মনির বাড়ি বরিশাল। বংশ পদবী মোল্লা। কিন্তু তার বাবা ঘরজামাই থাকতেন। টুঙ্গিপাড়ায় স্ত্রীর ভাগের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করতেন। মনির বাবা কোনদিনও বংশ পদবী বলেননি সকলে তাকে ইন্দু মিয়া বলতো। শেখ মুজিবের ভায়রা শেখ মুসা মনির বাবাকে ইন্দুনিয়া বলতো শেখ মনি ছিল দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। শেখ মুজিবকে কোন মূল্য দিতেন না।

রাজধানী ঢাকায় জমি জালিয়াতি করে দখল করা, ব্যাংক ডাকাতি, দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকা অফিস, জায়গা বাড়িসহ দখল করা, এসবই ছিল শেখ মনির কাজ। শেখ মনির নিজস্ব একটি বাহিনী ছিল। রাজনীতিতে শেখ মনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মনি, শেখ মনি, শেখ মুজিবকে সবসময় প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে চলতেন।

টুঙ্গিপাড়া থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মুজিবের সম্মুখে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি হতে ঘাড় ধরে বের করে দেয় ফজলুল হক মনি। শেখ মুজিব নিজের জীবন বাঁচাবার জন্য নিজ কন্যা শেখ হাসিনাকে বিবাহ দিতে চেয়েছিলেন মনির সঙ্গে আর বেগম মুজিব চেয়েছিলেন তার ভাগ্নে শেখ শহীদের সঙ্গে কন্যা হাসিনাকে বিবাহ দিতে। পারিবারিক দ্বন্দ্বে ফজলুল হক মনি শেখ শহীদকে শেখ মুজিবের সামনে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি হতে চরম অপমান করে বের করে দেন। শেখ মুজিব ভয়ে কোন প্রতিবাদ করেননি। শেখ মুজিব মনিকে খুব ভয় পেতেন। শেখ মুজিব ভাবতেন। মনি’ শেখ মুজিবের চরম ক্ষতি করবে, অন্য কেউ সাহস পাবে না। কথাটি বাস্তবে ঘটেছিল যার প্রমাণ পরবর্তীতে জানতে পারবেন।

শেখ মো: মুসা শেখ মুজিবের ভায়রা। একই বাড়ি একই ভিটা একই উঠান। শেখ মো: মুসা শিক্ষকতা করতেন। বঙ্গবন্ধু তার আপন ভায়রা হওয়ার কারণে বহু লোককে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা পয়সা আত্মসাৎ করেছে। বহুদিন ঘুরাঘুরি করে চাকরি না পেয়ে চাকরিপ্রার্থীরা যখন টাকা ফেরত চাইলেন তখন পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে বিভিন্ন মামলায় জরাবার ভয় দেখাতেন। মামলায় যাবার ভয়ে পরে কেউ আর টাকা ফেরত চাইতো না।

শেখ মো: মুসা একবার গোপালগঞ্জ হতে টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে যাচ্ছিলেন স্পিডবোটে বর্ণী গ্রামের বাওর পার হয়ে যখন খালে প্রবেশ করে তখন সাত বছরের একটি অবুঝ ছেলে বরই গাছে ঢিল মেরে বরই পারবার চেষ্টা করছিল। সাত বৎসরের অবুঝ বাচ্চার একটা ঢিল স্পিডবোটে গিয়ে পড়ে। স্পিড বোর্ড এর কোনো ক্ষতি হয়নি এমনকি কারো গায়ে লাগেনি অথচ শেখ মো: মুসা স্পিডবোর্ড তীরে ভিড়িয়ে সেই সাত বছরের অবুঝ বাচ্চাকে প্রকাশ্য দিবালোকে অসংখ্য মানুষের সামনে পায়ের তলায় পিষে হত্যা করে। সাত বৎসরের অবুঝ শিশু বাঁচার জন্য অনেক কাকুতি-মিনতি করেছিল। বাচ্চার মা বাবাও পা ধরে সন্তানের প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল কিন্তু পাষাণ হৃদয় গলায় কে?

৭ বছরের অবুঝ শিশু ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তক্ষরণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ভয়ে কেউ ঠেকাতে আসেনি। কারণ তিনি শেখ মুজিবের ভায়রা। শেখ মোঃ মুসার সঙ্গে রক্ষীবাহিনী ছিল। এই নির্মম হত্যার বিচার চাইতে গিয়েছিল থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে। আর সেই বিচারের উত্তরে সেদিন পেয়েছিল থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে চরম লাঞ্ছনা।

সেদিন শেখ মুজিবের সম্মুখে তারই ভাগ্নে ফজলুল হক মনি থানা কমান্ডারকে রাজধানীর ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল এবং বলেছিলো “শেখ পরিবারের লোকেরা এরকম দু’চারটা পায়ের তলায় পিষে ফেললে কিছুই যায় আসে না”। শেখ মুজিব পরে থানা কমান্ডার এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন অথচ মনিকে টু শব্দও করতে সাহস পাননি।

শেখ মুজিবের ভায়রা শেখ মুসার আরো একটি ঘটনা এলাকায় সবাই জানেন। টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিব তার মায়ের নামে শেখ সাহেরা খাতুন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল তৈরি করেন। হাসপাতালের এক হিন্দু সুন্দরী যুবতী নার্স ছিল সুন্দরী নার্সকে শেখ মো: মুসা বাড়িতে ডেকে পাঠান হাসপাতালের ডাক্তার নার্সকে নির্দেশ দেন মুসা সাহেবের বাড়ি গিয়ে সেবা-যত্ন করার জন্য। শেখ মো: মুসা সুন্দরী নার্সকে রুমের ভেতর জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

নার্স আত্মহত্যা করার হুমকি দেয়। অবশেষে মান-সম্মানের চিন্তা করে সে ডাক্তারের সহযোগিতায় বুঝাতে চেষ্টা করেন যে সে যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তবে তাকে বিবাহ করবে। যদি সে অন্য কোন চিন্তা করেন বা ব্যাপারটা প্রকাশ করে তবে তার বাবা মা ভাই বোনদের হত্যা করা হবে। এই হুমকির ভয়ে বাবা মা ভাই বোনদের কথা চিন্তা করে নার্স শেখ মো: মুসার প্রস্তাবে রাজি হয়।

শেখ মো: মুসা পরবর্তীতে এই কিছুদিন পর তোমাকে বিবাহ করব, কিছুদিন পর ঢাকায় নিয়ে বিবাহ করব ইত্যাদি বলতে বলতে বছর গড়িয়ে যায়। এর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। শেখ মো: মুসা তখন বিবাহের দিন ধার্য করে কথা মতো নির্দিষ্ট তারিখে মুসা সাহেব’কে বিবাহ করার জন্য তার সঙ্গেই স্পিডবোটে ঢাকার উদ্দেশ্যে টুংগীপাড়া ত্যাগ করে কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, সে নার্স আর কোনদিন ফিরে আসেনি। মধুমতি নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়।

এলাকাবাসীর নদীতে লাশ পেয়ে শেখ মুজিবের নিকট ঘটনাটি জানায় কিন্তু শেখ মুজিব ভায়রার অপরাধ চাপা দেয়। এই ঘটনা যারা শেখ মুজিবকে জানিয়েছিলেন তাদের শেখ মুজিব এবং বেগম মুজিব অর্থ দ্বারা মুখ বন্ধ করে দেন। ঘটনা ওই পর্যন্ত চাপা পড়ে যায়।

শেখ মুজিবের শ্যালক শেখ আকরাম শেখ আকরাম টুংগীপাড়া থানার ওসিকে থানায় ঢুকে স্যান্ডেল দিয়ে পেটান ওসি মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু না বলে বদলি হয়ে যায়। গোপালগঞ্জ মহকুমার এসডিও সাহেবকে বহু লোকের সামনে তারই সরকারি অফিসে ঢুকে চুলের মুঠি ধরে থাপ্পড় মারেন। মান-সম্মানের ভয়ে এসডিও সাহেব কোন উচ্চবাচ্য করেননি। প্রশাসনের লোক আলোচনা সমালোচনা করেন। ঘটনাটি শেখ মুজিবের কাছে পৌঁছে যায়। অথচ শেখ মুজিব এরও কোন বিচার করেন নি।

অবশেষে লজ্জায় এসডিও সাহেব চাকরি থেকে পদত্যাগ করে বিদেশ চলে যান। এরূপ অসংখ্য অন্যায় কাজ করে গেছেন শেখ পরিবারের লোকেরা। আর পার পেয়ে গেছেন শুধুমাত্র শেখ মুজিবের কারণে। অথচ একটি অন্যায়ের বিচার ও শেখ মুজিব করেননি। মানুষের অভিশাপ শেখ পরিবার এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন পাপের পালা, ক্রমে ক্রমে ভারী করে তুলেছিল। পাপ কোনদিন ক্ষমা করেনি, করেও না। সত্য প্রকাশ পাবেই, তবে সত্যের জয় দেরিতে হলেও হবে। এটাই নিয়ম এটাই সত্য।

এ. আর. ভূঁইয়া
গণতন্ত্রের কবর
বইটির স্বত্বাধিকারী নিজ। বইটি বিক্রির জন্য নহে।
বইটির প্রথম প্রকাশ আজ থেকে ৩৩ বছর আগে।
Translate by Shamim Bakhtiar.