নিষ্ফলা লজিং মাস্টার

gtry

রাত বাড়ছে, বিদঘুটে অন্ধকার, আলোর চুকেছে পাঠ;
মাস্টার, ও মাস্টার—
তোমার উপরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট।
হা হা হা …
বাতাসে আসে বিদ্রুপের ধ্বনি,
অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে; চারদিকে শব্দের খিল খিলানি।

ভেসে উঠে এক নারীর ছায়া
পিছনে তাড়া করে বেড়ায় অতীত স্মৃতি,
কণ্ঠটি বড়ই চেনা
হাতছানি দেয় নিষ্ঠুর নিয়তি।
সেই যে, পড়ার টেবিলে—
ছাত্রীটি— বীজ গণিত, পাটি গণিতের ফাঁকে,
অংক কষে সংসার জীবনের, রঙিন স্বপ্ন আঁকে।
‘যেখানে শোভা পাবে— একটা ছোট ঘর, সন্তানাদি
বাড়ির আঙিনা জুড়ে শিউলি ফুল আর মেঝেতে শীতল পাটি,
যাতে আসন পেতে মধ্যমণি হবে সামনে বসে থাকা মানুষটি।

হাতে হাত, মননে, প্রণয়ে, সঙ্গমের স্বপ্ন করে যতন,
জ্যামিতির কাটায় দৈর্ঘ্য—প্রস্থে মাপে সংসারের আয়তন।

এটা বয়সের আবেদন, আবেগী মনের বাসনা
নয়ন যুগল হয় স্বপ্নভাসি,
বইয়ের পাতায় বড় বড় অক্ষরে ভাসে
মাষ্টার ‘তোমায় ভালবাসি’।

টেবিলে শব্দ হয় ঠকঠক করে, সম্বিত ফিরে পায়—
‘মনযোগ দাও হে’ বইয়ের পাতায়,
সে যে বুঝে না, যাকে ঘিরে এত সব আয়োজন
সে কি না ব্যস্ত নিয়ে অন্যকিছু; মেকি যা তা’য়।

এত পানসে কেন? রঙ রস কিছুই কি স্পর্শ করে না!
মনে মনে আওড়ায়— ‘বড়ই বেরসিক! কিছুই বুঝে না,’
যাও, যাও আজ ছুটি!
সমাধান করে দিব অন্য কোনদিন, শরীরটা আজ ভাল যাচ্ছে না।

ছাত্রীর মাঝেও যে কিছু চলছে; সেটি বুঝতে হয় না বাকি,
শারীরিক অক্ষমতা; সেটা প্রকাশ করার নয়
ভালভাল কেটে পড়ি; মায়ার বন্ধন দিয়ে ফাঁকি।

কিছুদিন পর খবরে আসে ‘সুইসাইড’
দাগ কেটে যায়; এতসব খবরের ভীড়ে,
চাওয়া ছিল— ‘তাতে কি আসে যায়, সে সুখী হউক
অন্য কোথাও, অন্য কোন নীড়ে।’

এই মৃত্যুর জন্য কি আমি দায়ী? নিছক ছেলে মানুষি বৈকি!
শূন্যতাকে করে আপন,
বুকে খা খা করে একাকিত্ব, বড়ই পীড়া দেয় যাযাবর জীবন যাপন।

হৃদয় পোড়া আঘাত
আজ হয়েছে ভীষন ক্ষত,
কামনা বাসনা ছাড়া নিরাশ এই জীবন সংসার
নিষ্ফলা, অকেজো বৃক্ষের মত।

ভারতের মেট্রো বা পাতালরেলে চড়ার আনন্দ অভিজ্ঞতার গল্প

nit

একসময় ভারতের মাটিতে পা রেখেছিলাম, ১৪০০ বঙ্গাব্দ। তখন বৈশাখমাস। বাংলাদেশ থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে দালাল মারফত অতি কষ্টে সীমান্ত পেরিয়ে বনগাঁ রেলস্টেশন পৌঁছেছিলাম। আমার সাথে ছিল, আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ওর দুই বোন। যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, জীবনটাকে একটু পরিবর্তন করার। কিন্তু না, জীবন তো পরিবর্তন করতে পারি-ই-নি, বরং ওখানে প্রায় দেড়বছর অবস্থান করে শেষাবধি শূন্য হাতে আবার ফিরে আসতে হলো। এরমধ্যে লাভ হয়েছিল, বিশাল ভারত-সহ ভারত ঘেঁষা ভুটানের কয়েকটা জায়গা দেখা হয়েছিল। তো যাক সেকথা, আসা যাক পোস্টের মূল কথায়।

ভারত যাবার পর আমার বন্ধু বাসায় অবস্থানের পর, আমার যেন কিছুই ভালো লাগছিল না। ভালো না লাগার কারণ ছিল, বাংলাদেশে ফেলে রাখা স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চিন্তা। সেই চিন্তা মনের ভেতরে রেখেই কাটিয়ে দিলাম চার-পাঁচদিন। চার-পাঁচদিন পর একদিন সকালবেলা আমার বন্ধু কানাই বলল, “চল দুইজনে টাউনে গিয়ে ঘুরে আসি।”
জিজ্ঞেস করলাম, “কোথায় যাবি?”
কানাই বলল, “আজ তোকে মেট্রো ট্রেনে চড়াব। আর সময় পেলে হাওড়া, তারামণ্ডলও দেখাবো।”

এ-তো খুশির খবর! কিন্তু খুশির বদলে আমার কান্না আসতে লাগল! চিন্তা শুধু একটাই, তা হলো এখানে আসলাম বেশ কিছুদিন হয়ে গেল। অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না, হচ্ছে শুধু টাকা খরচ! এভাবে ঘুরে বেড়ালে কি হবে? আমার তো কিছু একটা করতে হবে। ভাবছি, কানাইর সাথে যাব কি যাব না! না গেলেও হয় না। শেষমেশ জামাকাপড় পড়ে কানাইর সাথে বের হলাম।

কানাই’র বাসা থেকে একটা অটো (সিএনজি) চড়ে গেলাম ধর্মতলা। এই ধর্মতলায় কোলকাতা শহরের বড় একটি বাসস্ট্যান্ডও আছে। আছে কোলকাতার বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার ট্রাম ও বাস সার্ভিস। অটো থেকে নেমে একটা চা দোকানে গিয়ে চা-বিস্কুট খেলাম। দোকান থেকে বের হয়ে ফুটপাতের দোকান থেকে সিগারেট কিনলাম। সিগারেট জ্বালিয়ে ফুঁকছি, আর হাঁটছি। এদিক-ওদিক তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখছি। একসময় একটা রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি দুইজনে। দেখছিলাম, দুইটা দোকানের মাঝখানে মাটির নিচে যাওয়ার জন্য অনেক চওড়া জায়গা। নিচে যাওয়ার সুন্দর সিঁড়িও আছে।

কানাইকে জিজ্ঞেস করলাম, “নিচে কী?”
কানাই বলল, ”এটি হচ্ছে কোলকাতা শহরের ভূগর্ভস্থ পাতাল রেলস্টেশন। যাকে বলে পাতাল রেল বা মেট্রো ট্রেন বা মেট্রোরেল। তাই অনেকে বলে, মেট্রো ট্রেনস্টেশন।

বললাম, “তা হলে আমরা কি এখন এই স্টেশনেই যাচ্ছি?” কানাই বলল, ”হ্যাঁ, তোকে তো বাসা থেকে বাইর হবার আগেই বলেছি। এখন চল, নিচে স্টেশনের ভেতরে যাওয়া যাক। গেলেই বুঝতে পারবি, পাতাল রেল কাকে বলে!”

সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নিচে নামতে লাগলাম। যতই নিচে যাচ্ছিলাম, ততই স্টেশনের ভেতরকার সৌন্দর্য দেখে অবাকও হচ্ছিলাম! এই মেট্রো ট্রেন হলো, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতা পরিবহণ সেবার মধ্যে একটি। এটির পরিসেবা কোলকাতা শহরের পার্শ্ববর্তী উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা পর্যন্ত। দ্রুত পরিবহন সেবা প্রদানকারী পরিবহণ ব্যবস্থাও বলা যায়।

জানা যায়, কোলকাতা মেট্রো ট্রেনের পথ ২৭.২২ কিলোমিটার। এই ২৭.২২ কিলোমিটার পথে ২৩টি মেট্রো স্টেশন রয়েছে। যার মধ্যে ১৫টি স্টেশন ভূগর্ভস্থ আর বাদবাকিগুলো উড়াল। এই পরিবহন সেবা চালু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে এবং এটিই ভারতের প্রথম মেট্রো রেল পরিসেবা। এরকম পাতাল রেল সার্ভিস নাকি ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও আছে।

আমরা দু’জন নিচের দিকে নামছিলাম, যত নিচে যাচ্ছি ততই সুন্দর! ঝকঝকা আলো আর লোকে লোকারণ্য। স্টেশনের ভেতরে গার্ডের সাথে পুলিশও আছে। তাদের ডিউটি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা। কে কী করছে, কোথায় যাচ্ছে এগুলো ফলো করা। মূল স্টেশনে প্রবেশ করতে হলে, চাই টিকিট।

কম্পিউটারে টিকিট শো করলেই গেইট খুলবে, যাত্রী প্রবেশ করবে। এ ছাড়া আর প্রবেশ করার মতো কারোর সাধ্য নেই। কানাই কাউন্টার থেকে দুটা টিকিট কিনে আনল। আমরা যাব, ধর্মতলা থেকে টালিগঞ্জ। টিকিটের দাম নিল, ৫ টাকা করে ১০ টাকা। দুটো টিকিটই একসাথে, মানে একটা টিকিট। টিকিটের গায়ে লেখা আছে টু ম্যান।

ট্রেন আসার সময় হয়েছে। হুইসেল শোনা যাচ্ছে। কানাই বলল, ”শিগগির আয়।”

আমরা কম্পিউটার সিস্টেম গেইটের সামনে গেলাম। কানাই গেইটের পাশে থাকা বক্সে টিকিট ঢুকাল। টিকিটখানা শোঁ করে বক্সের পেছনে চলে গেল। আমরা গেইট পার হলাম, টিকিটখানা হাতে নিলাম। গেইটখানা ধরে আমি একটু ট্রাই করে দেখলাম! গেইট আর একটুও নড়ে-চড়ে না। টিকিটের গায়ে দুইজন লেখা। ঠিক দুইজন পার হওয়ার পরই গেইট বন্ধ। ট্রেন স্টেশনে এসে থামল। যাত্রিরা ট্রেন থেকে নামল। আমরা ট্রেনে ওঠার জন্য রেডি হয়ে সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।

ট্রেন থেকে মাইকে বলছে, “টালিগঞ্জ যাওয়ার যাত্রিগণ ট্রেনে ওঠে আসন গ্রহণ করুন।” আমরা-সহ সব যাত্রী ট্রেনে ওঠে সিটে বসার পর ট্রেন থেকে আবার মাইকিং। বলা হচ্ছে, “যাত্রীদের অবগতির জন্য বলা হচ্ছে যে, আপনারা ট্রেনের দরজা ও জানালা থেকে দূরে থাকুন।” এর পরপরই ট্রেনের সব দরজা ও জানালা একসাথে শোঁ করে লেগে গেল! বুঝলাম, দরজার সামনে যদি কেউ দাঁড়ানো থাকত, তা হলে মৃত্যু অনিবার্য। তাই আগে থেকেই যাত্রীদের হুশিয়ার করে দেওয়া হয়, যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে।

ট্রেন ছুটল দ্রুতগতিতে! জানালা দিয়ে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ট্রেন যাচ্ছে মাটির নিচ দিয়ে। কিছু দেখা যাবে কী করে? শুধু একটু শব্দ শোনা যাচ্ছে, শোঁ শোঁ শব্দ। ১০ মিনিটের মতো বসে থাকার পর আবার মাইকিং।
বলা হচ্ছে, “আমরা টালিগঞ্জ পৌঁছে গেছি! ট্রেন থেকে নামার জন্য প্রস্তুত হোন।”

কানাই বসা থেকে ওঠে দাঁড়াল, সাথে আমিও ওঠলাম। ট্রেন থামল। ট্রেন থেকে আমরা নেমে স্টেশনের বাইরে আসলাম। কিছুক্ষণ ঘুরেফিরে চা-বিস্কুট খেয়ে তৈরি হলাম, ধর্মতলা আসার জন্য। এবার ট্রামে চড়ে আসব ধর্মতলা। ট্রাম দেখা হবে আর চড়াও হবে। তারপর ট্রাম দেখা হলো, ট্রামে চড়াও হলো। মেট্রোরেল বা পাতালরেলে চড়ার গল্পও শেষ হলো।

জলের আঙুর


এক বর্ষায় সব পালটি খেয়ে গেছে হুতাশন।
পাতায় পাতায় এমন প্রফুল্ল গাঁট
সমস্ত পাখির মুখ খুলে গিয়ে;
নারকোলডাঁটির দুপাশে ঘন দুর্গাভুরু তোলা,
তাতে জলকুহেলি।
এমন নবরত্ন কারাদণ্ড সবুজ চেপে ধরেছে
আমাদের…
গাছই উচ্চারণ করছে আর পল্লব সহ্য করব না।
এই বর্ষার পেছন পেছন এল উদ্দালক
খুনের হুমকি থেকে বেঁচে;
মনের মধ্যেও ফের আরম্ভ চালু শুরু, ভাই,
জলের মোড়লি; আর তাতে পাছা-উবদি হাঁস


মাতাল-বিরক্ত পথ, টর্চ হাঁটছে
এক্কা-দোক্কা লাফ দিয়ে দিয়ে
কচি-শসা রাস্তাটায় বৃষ্টির লবন মাখানো

সব উঠোনে ঘুরে গেছে সবুজ প্যারামবুলেটার
সাদা ফুলতোলা ফ্রকের জলশিশু
তার মধ্যে আধ-শোয়া

ভেজা, হিম, ভিতু কাক হয়ে
এডাল-ওডাল উড়ে বসছে প্রেম


মনসিজ পানির ভেতরে বৃষ্টির আচ্ছন্ন ফুল
কোমর পর্যন্ত অতিকায়

ছাদ তুলতে ওস্তাদ মিস্তিরি ত্রিপলের নীচে
বালিতে পাথরকুচি — চালের উদরে ডাল —
ঠেসে দিয়ে হাভাতে ইঁটের ছোট হিল্লে করে দিল

একবার আটচালা ছেড়ে, মাটির গৌরাঙ্গ, তুমি
উঠোনে দাঁড়াও। কত আস্ত থাকে দেখি
চোখ, চূড়া, দুটি ছিচরণ!

.
(‘নবরত্ন কারাদণ্ড সবুজ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে)

তালমিটার

যাকে হারিয়েছো ভেবে এত কান্না
তুমি তো জানোনা তারও মনে
ঢুকে বসে আছে কিছু গভীর অন্ধকার
তুমি দুই হাতে সরাচ্ছো শুকনো পাতা
অরন্যের বুক থেকে চাইছো বইয়ে দিতে ঝর্ণা
অন্যদিকে সেও করছে পরিখা খনন
বন্দুকের গুলিগুলো পুরনো হয়ে আসে তারও
অথচ তোমার কথা ভাবলেই বৃষ্টি মনে আসে
মনে উঠে আসে ছবি ছেলেবেলার স্বপ্নগুলোর
যার সমাপন মিশে যেত আজানের সুরে

তুমি ছুটে যাচ্ছো কান্নার নগরীর দিকে
অদ্ভুত কত ছায়া ঘিরে থাকে বড়আপুর সন্তুর
তার সাথে তোমার আর দেখা হয়না
রাঁধুনি খালা বলেছিল, নদীতে নদীতে দেখা হয়
তবু বোনে বোনে দেখা হয়না
তুমি কি এখন বোন হয়ে গেছো তবে?
উজিরপূত্র, নাজিরপূত্রের সাথে যুদ্ধ শেষে
যেমন নামে বেহেশতি নীরবতা
তোমার প্রেমও ক্রমশঃ বোন হয়ে যায়
চুমুগুলো মেঘ সেজে বৃষ্টি নামায় চোখে।

দূরে এঁকেবেঁকে তখন মিলিত হতে থাকে দীর্ঘশ্বাসেরা।

চাহনীর দূরমালা

আজকাল আমার, আমাকেই মনে পড়ে খুব-
আর মনে পড়ে সেই সড়ক, যে তার নাম ভুলে
গেছে অনেক আগেই। সবুজ শুশ্রূষা পেয়ে সেরে
উঠেছে যে নগর, তার চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে একাকী
বেহালা বাজায় যে বিবাগী বাউল,মনে পড়ে তার
চাহনীর দূরমালা,কীভাবে স্পর্শ করে আকাশের মেঘ।

আজকাল নিজের নাম লিখে বর্ণিল অক্ষরে সাজাই তার
চারপাশ। রঙ দেখে চিনি আলোর ইন্ধন। লাল – কালো
রূপের তপস্যা। দেখি খুব কাছেই নোঙর ফেলছে নতুন,
আত্মকেন্দ্রিক ভোরের ছায়া। আর পুরাতন বিকেলগুলো
কিছুই পারেনি ভেবে ক্রমশ হারিয়ে যেতে চাইছে পূবের
দিগন্তে। ভাবি, মানুষও তো এমনিভাবে হারায় নিজেকে,
ভুলে যায় নিজ নাম। তারপর স্মরণের বেলায়, পোষে পাখি
নাম শিখিয়ে, উড়িয়ে দেবে বলে।

কবিতায় জেগে উঠি

আজকাল নিজের থেকে নিজেই যখন পালিয়ে বেড়াই
তখন দেখি হাঁচি লুকানোর মত জায়গাও নেই..
অথচ সবকিছু আগে যেমন ছিল, এখনো সেই!

তবুও শুন্যতা দিয়ে শুন্যতা ভরাই…
তেলাপোকার মতো নিজেকে সান্ত্বনা দিই
নিজেকে ছাড়া আমি আর কাকে ডরাই!

তথাপি মাঝে-মধ্যে কবিতায় জেগে উঠি
রাতদুপুরে নিজেই চেপে ধরি নিজের টুটি!
তখন অভিধানের সব অপয়া শব্দেরা হাসে
তবে কি
ওরাই কেবল এই আমাকে ভালোবাসে?

শান্তির পায়রা হবি আমার

choo

তুই কি হবি শান্তির পায়রা
বসবি এসে মনের শাখে
দিবি সাড়া সকাল সাঝে
তুই কি পায়রা আমার ডাকে?

মনের বাড়ী বিষণ্ণতা
উড়ে নিত্যা বৈরী হাওয়া
একটু শান্তি আসবি নিয়ে
এটুক ছিল আমার চাওয়া।

হবি নাকি পায়রা আমার
মনের শাখে খাবি কি দোল
তোর ডানাতে নিয়ে উড়বি
হেথায় সেথায় ভুলে বেভোল?

সাদা পায়রা শান্তির প্রতীক
আমার শান্তি যা হয়ে যায়
একটুখানি স্বস্তি দিতে
আমার পাশে যা রয়ে যা।

উড়বি ঘুরবি মন আকাশে
স্বাধীন পাখি ইচ্ছে মতন
তোকে নিয়ে স্বপ্ন হাজার
পুষবো না হয় বুকে যতন।

একটি শাখে দুটি পাখি
আমিও কি হবো পায়রা
দে পরিয়ে এসে না হয়
মাথায় আমার প্রেমের টায়রা।

তুই কি হবি শান্তির পায়রা
মনের শাখে বসবি এসে
আমায় নিয়ে দূর কোথাও
ডানায় করে যাবি ভেসে?

সজীব বয়ান

একটি রণ বাহিনীর গোড়াপত্তন চলছে। শুরু হয়ে গেছে যাবতীয় কলা কৌশল আয়ত্ত করন প্রক্রিয়া। অচিরেই মাঠে নামবে সোমত্ত জোয়ান।যাদের অন্তরে দীর্ঘকালের লালিত বাসনা, রক্তে লহরিত সুর, তীব্র তারানা; বলয়ের সম্মোহিত ছন্দে তারা উঠে আসছে মহান দর্পণে!

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাঞ্জল শ্লোগানে। সমুচ্চারে। শৌর্যের গানে…।
যাবত কালের নিবিষ্ট ক্ষুধা থেকে, বারবার উপেক্ষিত সুন্দরের প্রস্তাবনা থেকে, পতিত অশ্রু বান- প্রেমের নৈবদ্য থেকে ছুটে আসছে নিবিড় এক প্রলয়। সুধা মাখা তীর,পুষ্পিত ধনুকে।
পরাগের গোলায়। হৃদয়ের সমস্ত মমতা মেনে মেখে শাণিত হচ্ছে সৈনিকের চোখ-দুর্জয় দৃষ্টি।

যেখানে ডেকেছে রংধনু কুৎসিত মেঘে, যেখানে পুড়েছে ফুলের স্নায়ু হিংস্র আগুনে, যেখানে ডুবেছে কবি নির্মম বিষাদে, যেখানে রুদ্ধ পথ- শৃঙ্খলিত শিল্পের চরণে। সেখানেই হবে শুদ্ধি
অভিযান! সজীব বয়ান। নতুন এক সংবিধান প্রণীত হবে কবিতা আর গানে।

প্রতিদিন উদযাপিত হবে সুরভী সন্ধ্যা- জ্যোৎস্না উদ্যানে। মহুয়ার বাগানে প্রজাপতির নৃত্য।
সু ঘ্রাণে মোহিত পৃথিবী আপন অক্ষে বয়ে বেড়াবে এক অভিন্ন নদী…

নাকফুলের অভিজ্ঞান

সন্ধ্যায় ডালিমদানার সাক্ষাতে সেসব হাসছে
কবিতার কাগজে মোড়ানো শীতল শিরোনাম
আর তুমি স্থির জমে থাকা রক্তজবা ব্যঞ্জনায়
নাকফুলের অভিজ্ঞানে পড়েই চলেছ।

কাউতালি শব্দ কখন ট্রেন হয়ে ছুটে যাচ্ছে
ঈশ্বরদী জংশন-পথের গায়ে ভাঙাচোরা গ্রাম-
শাদাকালো টিভির এন্টেনা ঘোরানো হাত
সুতোর ববিনে ঘুড়ি উড়তে থাকা সহজিয়া দিন
বোধহয় নিজের যত্ন ভুলে সন্তপ্তয় চেপে বসেছ
তুমি জানো না,আমাদের শিরার গহিনে খেলা
বেশুমার নদীর পিঠ বয়ে এনেছিল পিছুটান-
লুকোচাপা সম্পর্ক, তাতে জন্মেছে বাদামবন।

দেশদ্রোহী

মা, ওরা এখনো টিকে আছে যত্রতত্র, ভালো মানুষের বেশে-
সুযোগ পেলে তোমার সর্বনাশ করার স্বপ্ন দেখে নীরবে নিভৃতে
এখনো বেহায়ার মতো সুযোগ বুঝে তোমার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ে
‘‘এমন দেশে তো এমনই ঘটনা ঘটবে! জানে, সর্বজনেই জানে।’’

তোমার আলো-বাতাস কি তারা ভোগ করছেনা কভু!
তোমার বুকের দুগ্ধ স্রোতরূপী জলে কি তার তৃষ্ণা মিটেনি মৃদু!
তোমার বুকের রাশি রাশি সোনালি ধানে কি তার জুটেনি আহার!
তোমার শ্যামলিমার অপরূপে কি তার চোখে জাগেনি বিস্ময় অপার!

ওরা ছিলো ভিনদেশি শত্রু, অঙ্গার করেছিলো তোমার বুক
বাংলার বুক শ্মশান করতে উদ্যত ছিলো সদা উন্মুখ!
বারুদে বন্দুকে যত্রতত্র খই ফুটিয়েছিলো হায়েনার দল
এরাও তো খই ফোটাচ্ছে কথার ধুম্রজালে, রচেছে মিথ্যে ছল।

মা, তোমার কোনো সন্তান যদি হয় পথের বিবাগী; চলে ভুল পথে
সে দোষ তো মায়ের নয়! পার যদি লড়ে যাও তার সাথে
ঝোপের আড়াল হতে হুক্কাহুয়া রবে বোল বলোনা শেয়াল শয়তান
রুখে দিতে আছে এখনো বেঁচে দেশপ্রেমিক লড়াকু মন।

মায়ের বদনে কালিমা মেখে, পরিচিত হইও না জাতীয় কুলাঙ্গারে
বাংলার জল, বাংলার ফল আর শ্যামলিমা পেয়েছি বিধাতার আশির্বাদের তরে।

মনের দৌড়

rt

মনের যত দৌড়
আকাশ সীমা-
রঙ ছুঁয়ে যায়
মাটির কায়া;

মেঘের ঝড় বৃষ্টি
চোখে নেই মায়া!
বট বৃক্ষ, বাঁশ
চাটাই বুঝে না-
কার কেমন ছায়া;

রঙধনু জোছনা রাত
প্রেম যমুনায়
আসে না চাঁদ-
চাঁদের গায়ে রঙিন বাড়ি
শূন্য মনে কত আড়ি;
কার কি এসে যায়-
মাটির স্পর্শ ছোঁয়া;

১৭ শ্রাবণ ১৪২৯, ০১ আগস্ট ২৩

না, আমার বলার কিছু ছিলো না

জরুরী প্রয়োজনে পেনসিল আর কাটার কিনতে হবে, স্টেশনারিজ আইটেমের পরিচিত দোকানে ঢুকেছি। কাউন্টারে দাঁড়ানো নতুন সেলসম্যান, এক মাস আগেও তাকে দেখি নাই।

নতুন সেলসম্যানের কাছে এক প্যাকেট পেনসিল আর কাটার চাইলাম, সে অতি দ্রুততার সাথে হাসিমুখে এক প্যাকেট স্টেনসিল পেপার এগিয়ে দিলো।

এমন অবস্থা দেখে তাকে ভেঙে ভেঙে বললাম, প্রথমে এক প্যাকেট পেনসিল দিন, তারপর পেনসিল কাটার, যাকে শার্পেনারও বলে, তা দিন।

সেলসম্যান হাসিমুখে বলল, প্রথমেই বুঝছিলাম আপনে পেন্সিল কাটার চাইছেন, তবু টেনসিল পেপার (স্টেনসিল তার কাছে টেনসিল) দিয়া শিওর হইলাম।

সেলসম্যানের স্মার্টনেসে মুগ্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনে আগে কোথায় জব করেছেন?

সে হাসিমুখে উত্তর দিলো ‘কেজিবি’তে ছিলাম। গত মাসে এখানে জয়েন করছি।’ সেলসম্যানের উত্তর শুনে যতটা বিস্মিত হলাম, জায়েদ খান হেলিকপ্টার চালিয়ে আমার মাথায় ল্যান্ড করলেও ততটা বিস্মিত হতাম না।

সেলসম্যানের বয়স পঁচিশ কি ছাব্বিশ বছর হবে। এদিকে পরাক্রমশালী রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি বন্ধ হয়ে এফএসবি চালু হয়েছে, সেও প্রায় তিন দশকের বেশী হয়ে এলো। অথচ মেঘমেঘ দুপুরে উপশহরের স্টেশনারিজ স্টোরে কেজিবি’র এক তরুণ স্টাফের মুখোমুখি কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।

ঘোর কাটিয়ে জানতে চাইলাম, আপনি কেজিবি’তে ছিলেন? কিন্তু কেজিবি তো ত্রিশ বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।

দোকান কাঁপিয়ে হেসে উঠলো সেলসম্যান, হাসতে হাসতে বললো, ভাই, আমাদের কেজিবি মানে কিশোরগঞ্জ ব্রাঞ্চ চালুই তো হইছে চাইর বছর আগে, আপনে এইটা কি কইতাছুন!

না, আমার বলার কিছু ছিলো না।

লাগাতার সন্ধ্যার আয়তন

ক্রমশ আইসিইউ তে চলে যাচ্ছে গোটা বাংলাদেশ!
দীর্ঘতর সন্ধ্যায় গালে হাত দিয়ে বসে আছেন মা,
একটি গামছা দিয়ে জড়িয়ে ছোটবোন’টিকে নিয়ে-
হাসপাতালের দিকে ছুটছেন অগ্রজ!
এম্বুলেন্স ছুটছে,
সাইরেন বাজানো ভুলে গিয়ে শুধুই
আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন চালক ;
ঠাঁই নাই – ঠাঁই নাই
ক্লিনিকের করিডোরে কাঁদছে বিষণ্ণ কাক!

মৃত্যু ছাড়া আর কোনো সংবাদ মাইকে
প্রচার করতে পারছেন না মসজিদের
মোয়াজ্জিন। মন্দিরের উপাসক-
দু’হাত তুলে প্রার্থনা করছেন প্রভুর কাছে,
পাখিরাও ওড়াওড়ি ভুলে গিয়ে-
যাপন করছে বিষাদ-বিলাপ!

সন্ধ্যার আয়তন বেড়ে গেলে দীর্ঘ হয়
রাতের পরিধি!
কিন্তু হায়! মানুষ কতোটা মেনে নিতে পারে
আঁধারের আয়ু! কতোটা বিপন্ন হয়ে
জানান দিতে পারে নিজের অসহায়ত্ব!

আমি নির্বাক চেয়ে আছি।
আমি নিজের সাথেই সারছি সংলাপ।
একটি প্রভাতের জন্য আমি আরাধনার
ডালি সাজিয়ে বলছি…
মহান শক্তিধর হে!
তুমিই তো বলেছ- তোমার ক্ষমা থেকে
কোনো প্রাণই বঞ্চিত হয় না!
#

বৃত্তরেখা

বৃত্তের বাইরে আসতে কড়িকাঠ পুড়িয়েছি
ঘোলা করেছি কতো কতো জল
পরিণামে কিছুমাত্রও ভয় পাইনি
তবুও ক্ষণে ক্ষণে বেড়েছে কেবল সাধের অনল!

কবিতার হাত ধরে চায়ের স্টলে উড়িয়েছি ঘুড়ি
তবুও ধোঁয়ার আস্তর ভেদ করে হয়েছে মন চুরি
দিনশেষে দেখি ঝিঁঝিঁ ডাকে ভারিভুরি!

তবুও পাইনি কাঁহাতক বৃত্তরেখার নাগাল
তবে কি আর সবার মতো আমিও অধরা প্রেমের কাঙাল..?

আমি তোমাদের কেউ নই

dau

নতুন করে প্রমান হলো
আমি তোমাদের কেউ নই, আগেও ছিলাম না
এখনো নই.. কখনো হবো কি-না; জানি না!
যেভাবে জ্যোৎস্না পেরুতে পারে না রাত
অথবা গোধূলি অমানিশার..

নদীও তো বয় শব্দ, রাশি রাশি পদাবলী
তবুও নদী তো কবি নয়,
কবি – নিরবধি
বয়ে বেড়ায় খরস্রোতা নদী! অন্তর্জাল
কলকল ধ্বনি- বর্ণীল কথোপকথন…

আমি কারোই কেউ নই
তোমাদের দলের নই
তোমাদের মতের নই
বর্নের নই
গোত্রের নই;
নই কারো ইচ্ছের নর্তক!..
কেউ নেই, যে-
আমাকে বাধতে পারো, পুষতে পারো, বুঝতে পারো…

নিত্য খবরে জানান দেয়া
সবুজের কান্নায় অশ্রুত ভোরের বার্তা
ঘাসের কেশরে স্ফটিক শিশির বিন্দু কারো নয়!

শত সহস্র অনাহুত কান্না
নিত্য ঝরে যায় নৈশব্দের অক্ষিকোটরে
অজস্র পাখিরা নৈবদ্য অভিসারে
চিৎকার করে ঘোষণা করে –
আমি তাদের কেউ নই!…