বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

কথা শূন্যতা

resiz

সব বক্তব্য এক একে হারিয়ে যাচ্ছে
কথাশূন্যতা গ্রাস করেছে
দূরের ওই শাল্মলী বৃক্ষকে
আমার উন্মুক্ত দুটি চোখ দেখে
তোমার সদরে চলে যাওয়া
আমারই বুক মাড়িয়ে
নীল বিষে ভোরে গেছে
পরিত্যক্ত ক্লান্ত রাত,
আর ফিরো না –
অচঞ্চল এগিয়ে যাও।

আমার পরিপূর্ণ সম্মতি রইল
এত ঘৃণায় ভরা ভালোবাসা
না হয় নাই বা দিলে ?

দেবী মণিকা

Scr

দেবী মণিকা তোমায় ভাবি প্রতি ক্ষণে ক্ষণে
তুমি বাস করছো কেন আমার মনে?
দেবী মণিকা তোমার রূপের আলোয়
ঝলসে যাচ্ছে চোখ
মনে সৃষ্টি হয়েছে ভালবাসার রোগ?

দেবী মণিকা তোমার সঙ্গে হারিয়ে
যাওয়ার ইচ্ছে ছিল খুব!
ধর্ম আর কাঁটা তার মনে দিল দুঃখ।
তোমার লম্বা কেশের সুঘ্রাণ নিতাম
তোমার গোলাপী ঠোঁটে ভালবাসার ভোট দিতাম।
আরো মনে ছিল কত্ত কিছু
ভালবাসার পারমিশন নেই
পিছে যে আমার ধর্মের বিচ্ছু।

দেবী মণিকা তোমাকে নিয়ে
এখন ভাবতে লাগে ভয়,
যদি মন হয়ে যায় তুমিময়
তবে হবে আমার ক্ষয়
ধর্ম, কাঁটাতার সব কিছুর হবে লয়।

দেবী মণিকা তুমি হয়তো
অন্য কারো মনে করো বাস,
হয়তো অন্য কারো
দেশে ভালবাসা করো চাষ।
আর আমি পাগল তোমাকে
পাবার করি আশ…..?

অতীত যত সব কিছুতে গল্প হয়ে ভাসে

বিস্তীর্ণ মাঠ হৃদয় মাঝে/ দূর হতে যে নুপুর ধ্বনি শুনি
দেয়াল গাঁথা শব্দগুলো প্রতিধ্বনি হয়/অপেক্ষাতে তোমার প্রহরগুনি।

বুঝতে পারি এসব আবেগ/তোমার বিবেকে নয়
ভালোবাসায় দিতে পারো বাঁধা/করতে পারো তুমি যে নয় ছয়।

তবুও মন মানে না কোন বাঁধা/মিথ্যা জ্বালাও তোমার প্রেমের আলো।
অতীত যত সব কিছুতে গল্প হয়ে ভাসে/একটু না হয় বাসতে পারো ভালো।

কালো চশমার ফাঁক ফোকর

202

সেই থেকে তোমার দেশে শরৎকাল আসলে
আমার দেশে বর্ষার প্লাবন আসে।
শরতের পর শীতকাল তখন তুমি দামী
কম্বলের উষ্ণতায় ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলাও।

আমি তখন প্রকৃতির সাথে লড়াই করি
ভাগ্য বদলে দিগভ্রান্ত হয়ে ছুটে বেড়াই
প্রকৃতির মত মানুষগুলিও হয়তো মজা পায় ।

আমার প্রতি তোমার মোহ কমতে শুরু করেছে
আগেই আমাকে জানাতে পারতে
আবেগ দিয়ে প্রেম ভালোবাসা হয়
শরতের কাশফুলে ভ্রমর হওয়া যায় না।

এই চোখ উঠার জটিল সময় আমি কালো
চশমা পরে পথ চলি
সত্যিই বলছি এটা কেনো আভিজাত্য নয়
তোমার নজর হতে বেঁচে থাকার ব্যর্থ প্রয়াস মাত্র।

.
ছবি# মাইশা। (আর্ট, আমার বড় মেয়ে)

আমার দেশ, সাম্যের দেশ

CYM

বাংলাদেশ, সাম্যের দেশ
এখানে বেজে উঠে একসাথে
যীশুর ঘন্টা, ঠাকুরের উলু, মুয়াজ্জিনের আজান,

রামের ঘরে রহিমের আসা যাওয়া
যোসেফের সাথে ভিক্ষুর বন্ধন
এইভাবে বেঁচে আছে বাংলার প্রাণ,

আমি বেদব্যাসের ভগবত গীতা
ঈসার বাইবেল, বৌদ্ধার ত্রিপিটক
মুহাম্মদ(সঃ)’র পবিত্র আল কোরআন।

আমি দূর্গা পূজা, বড়দিন
ঈদের খুশি ভাগ করি
শর্মা, সৈয়দ, ক্যাথেলিন

নাস্তিকের চেয়ে আস্তিক বেশি
অমান্যকারী সংখ্যায় ঠাসাঠাসি
তবুও সম্পর্ক গাড়ো নয়তো মলিন।

আল্লাহ, যীশু, ঈশ্বর, ভগবান
একসাথে, একসুরে থাকুক বাংলার গান।

১০ঃ০০
৩রা সেপ্টেম্বর-২০২২ইং

নগদ জলের বৃত্তান্ত

জীবন থেকে হররোজ যতটা জল খসে খসে পড়ে
কে জানে না…? চন্দ্রবিন্দু, খন্ড ত, অনুস্বার..
সে জল আর কোনোদিন ফিরে না আপন নীড়ে!
তবুও নিয়ত বায়ুর মতোন নিয়ত বন্দনা করি
পড়ি, মরি করে আবারও সে জলকেই স্মরি
বিষাদ থেকে আলাদা হয় কয়েকটি মাত্র বিন্দু
যে ডুবুরি সেও কি জানে কতটা গভীর এই সিন্ধু?

অথচ হ্যালোসিনেশন বলে অভিধানে আছে কিছু
জলের মতো কালও ঘুরে সদাই চক্রের পিছু পিছু
বোটার গর্ভে ক’দিনই বা বেঁচে থাকে শিশু ফল
এখানেও নাক-চোখ-মুখ-খিঁচিয়ে হেসে উঠে জল..!
জানি তবুও ইতিবৃত্ত হয়নি নগদ জলের বৃত্তান্ত
মাছির চোখের মতোন সেই জলও যে সর্বত্র সম্ভ্রান্ত!

প্রকাশিত সূর্যরাষ্ট্র

ধরো—আজ বৃষ্টি হবে না
সবপাখি ঘরে আসবে ফিরি
কেউই পথ ভুলে নদীতীরে যাবে না আর—
দুপুরের সাথে প্রকাশিত সূর্যরাষ্ট্র করবে না লুকোচুরি
কেউ দেখবে না কারও মুখ বলে,
প্রতিজ্ঞা করেছিল যারা,
ফিরে আসবে তারাও এই জলভেলা মাখা তুমুল বর্ষায়
লেনাদেনা সেরে মাঝিও নৌকোর গলুইয়ে বসে
গাইবে মহাজনী গান—
শান্ত ঢেউ যেমন মাঝে মাঝে চোখের দেখা পায়।
তুমি কি সেদিনও ছবি আঁকবে বসে এই নির্জন সূর্যের
রঙের সমাহারে—
উড়িয়ে দেবে আলো, বাঁশির ভুবনে
যেখানে কিছুই প্রকাশিত নয়—
তোমার হস্তছাপ মাখা মগ্ন অরণ্যের।

যাবার তাড়া

309

যাবার যখন এতই ছিল তাড়া
আসলে কেন বাঁধার পথ মাড়িয়ে
আপন করে নিবার ছলে তুমি
শূন্যে বুকে কেন দিলে তাড়িয়ে।

নিথর হৃদয় ছুঁয়ে গেলে তুমি
দূর আকাশের অচিন কোনো পথে
চোখের মাঝে চোখ বসিয়ে শুধু
একলা আমি তোমার অপেক্ষাতে।

হৃদয় খাঁচায় কষ্ট বিলাস-গীতি
শূন্য এখন বুক জমিনের ছোট্ট ঘর
মেঘের পাড় ভেঙে বৃষ্টি নামে
জানালা দিয়ে আসে স্মৃতি নামের ঝড়।

মনের দুয়ারে আগল দিয়ে চুপিচুপি
জ্বাললে কেন এমন প্রেমের আলো
স্বপ্নে বাঁধানো আকাশ ছেড়ে তুমি
যাবেই যদি তবে বাসলে কেন ভালো।

বসবাস

শহরের শাদা বাড়িটায় আমার বসবাস
সুন্দরময়ী গোলাপের স্নান দেখে
কামার্ত পরীর প্রেমে শান্তি শাসন করি

কেশরহীন জোনাকির মতো
আলোর রাইফেলে শয্যা পাতানো
সবুজ কিশোরীর অনিদ্রা জবা রং,
চৈতির ধূসরে আর সন্ধ্যা কল্লোলে
তন্দ্রাহীন পালাগানের এস্রাজ নিয়ে
অতীত থেকে তুলে আনি প্রণয়-
কিবোর্ডে লিখে লিখে পোস্ট করি
হায়! দূর মফস্বলের মেয়ে, নৈঃশব্দ
কবে দেখা হবে ছেঁড়া আকাশ ফাঁকে
সঙ্গীতের হাই নিয়ে এমন আসর!

লাল পানির সরোবর

d132

কয়েক জন প্রেম সন্ন্যাসী
গলা ভরে লাল পানি গিলে গিলে
হৈ হুল্লর আনন্দ করে- করে
ঢেউ তুলে যায় বিসর্জন দেহ!

কি এমন মায়ায় স্রোতে ডুবে মরল!
ভাবে না কয়েক জনের ভবিষ্যৎ-
তবু লাল পানির তাতে কি আসে গেলো
ধর্ম কর্মের চিহ্ন মাটিতেই মিশে থাকল-

নিঃশ্বাসে বড় ধন, বাতাসে বয়ে যায়
মাতাল উৎসবমুখর কোন ধর্মের কর্ম নয়
চাঁদ তারার মতো আকাশে শুধু অভিনয়!
এভাবেই ঘটে যায় লাল পানির সরোবর।

২৫ আশ্বিন ১৪২৯, ১০ অক্টোবর ’২২

আত্মানুভব

আত্মানুভব (২)

images (36)

আকাশের কোন পাখিকে ধরে এনে
তাকে যদি দামী সুস্বাদু খাবার দিয়ে
সোনার খাঁচায় রেখে লালন পালন করা হয়
তবু সে সুখী হয়না, হতে পারেনা;
তেমনি আমারা মানুষের বেলায়ও,
মানুষ চৈতন্যভরা মহা জীবাত্মা,
স্রষ্টা সমর্পণ ও একাত্মতা প্রকাশেই যার
আসল সাফল্য ও পরমানন্দের সন্ধান মেলে!

অন্যথা সে যতোই সম্পদশালী হোন
ধনবান হোন
প্রকৃত পক্ষে সে ভিখারির চেয়েও অধীক অভাবগ্রস্থ ও অস্থির চিত্ত!
যা শুধু স্রষ্টায় সমর্পিত মানুষই অনুধাবন করতে সক্ষম।

Scre

দাউদুল ইসলাম
৯/১০/২২

নতমুখ মেয়েটি

mys

মেয়েটি বসে থাকে নতমুখে
বাইরে থেকে তির্যক আলো
এসে তার মুখের ওপর এক
আলো আঁধারি ঢেউ তোলে।

তার কোঁচকানো সাটিন জামায়
কিছু মনের অব্যক্ত অভিব্যক্তি
হাত দুটি কোলের ওপর ন্যস্ত
মাথায় পড়া মেপল পাতার টুপি
এক পাশে হেলে আছে অযত্নে
মাঝে মাঝেই দাঁত দিয়ে সে তার
ঠোঁটের ওপর ছোট্ট কামড় দেয়।

অনেক অজানা কথা লুকিয়ে আছে
চোখের তারায় কাজলের লেপনে।

কম্পনের প্রথম পদ্ধতি

নদীটা কাঁপছে। পাশে, দাঁড়িয়ে আছো নারী
শিখে নিতে কাঁপনের প্রথম পদ্ধতি
আমি এঁকে যাচ্ছি সেই ভোরের বিনয়
আর একঝাঁক বালিহাসের উড়ার গতি……..

আঁকছি মেঘ, মোহর,আর মমির বাসর
যে বাসরে একান্তে, ডুবে থাকে রক্তজবা রাত
কিছু পাখি ঘুমিয়ে থাকে, কিছু পুষ্প
নুয়ে নুয়ে অপেক্ষায় সাজায় প্রভাত।

কখন নুয়েছো প্রথম, মনে পড়ে? কার হাত ধরে
পেরিয়েছো ঘাটবৃত্ত, পরনদী- প্রণয়ের জল
আকাশ দেখবে বলে কার ছায়া পথে পথে ফেলে
একদিন একা রাতে, সাজিয়েছো হেমন্তমহল।

আমি তো ছিলাম পাশে, সে মহলের পাহারাদার
ডাহুকীর ছবি আঁকা রুমালের, প্রণীত সুতোর বাহার।

কিসের টানে

রাতের বেলা করছে খেলা
আকাশ তলে তারা,
দিনটা হলে যায় যে চলে
না মেলে আর সাড়া।

জোনাক দলে সন্ধ্যা হলে
আলো জ্বেলে জ্বেলে,
কেনো তারা পাগলপারা
ঘোরে ডানা মেলে ?

সুরুজ মামা তার নেই থামা
সাতসকালে জাগে,
তাও প্রতিদিন কী বিরামহীন
ভারি অবাক লাগে !

ধরার বাগে শশী জাগে
কী সুন্দর তার হাসি,
ওই আসমান মাটি তার প্রাণ
ছোঁয় তাই নিচে আসি।

ছুটছে নদী নিরবধি
অথৈ সাগর পানে,
আমরা মানুষ হারিয়ে হুঁশ
ছুটছি কই কি টানে ?

মাত্রাবিন্যাস : স্বরবৃত্ত – ৪+৪/৪+২